গত ১৯শে অক্টোবর দুপুরে শিমলায় যখন পৌঁছলাম, তখন বেশ মনোরম পরিবেশ, করোনার আতংক নেই, তবে সবাই সদা সতর্ক, মুখে মাস্ক ঠিক করে পরা, হাতে স্যানিটাইজার দিচ্ছে যেখানে ঢুকতে হচ্ছে। সন্ধেবেলা মল-এ গিয়ে ঘুরছি, ফটো তুলছি, হঠাৎই একটু ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করল, সূর্যাস্তের ছবি তুলতে তুলতেই ঠাণ্ডায় হাত-পায়ে অস্বস্তি! গুগলে দেখলাম ১২ ডিগ্রি, সময় সাড়ে ছটা! খোলা জায়গায় থাকতে না পেরে আলফা রেস্তোরাঁয় মোমো খেতে ঢুকলাম, বেরোলাম যখন তখন ১১ ডিগ্রি। হোটেল ফিরে রাতে দেখি ৯ ডিগ্রিতে নেমে গেছে! কম্বলের তলায় ঢুকে পড়লাম রাত ৯টায়। ভোরে কলকাতা, সকাল সাতটায় চণ্ডিগড়, আর দুপুর বারোটায় শিমলা! যদিও ট্রেন চলছে না বলে বাঙালি ট্যুরিস্ট কম, পাঞ্জাবি কিছু ট্যুরিস্ট চোখে পড়ল মল এ। আগামী ২১ তারিখ থেকে কালকা শিমলা টয় ট্রেন চালু হচ্ছে। এটাই ভালো খবর!
অনেক ছোটবেলায় শিমলা এসেছিলাম, ততটা মনে নেই। গতকাল এসে যা দেখে শুনে বুঝলাম, কলকাতায় অনেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে যান যখন আমরা শিমলায় থাকার জন্য অপশন খুঁজি! ১) শিমলা পুরোটাই চড়াই উতরাই। শুধুমাত্র মল রোডে চার্চ থেকে মেয়র অফিস অবধি সমতল। এবার যারা কলকাতা থেকে ট্রেনে কালকা এসে টয় ট্রেনে শিমলা আসবেন এবং সস্তায় কালীবাড়ি থাকার কথা ভাবেন, তাদের সবিনয়ে জানাই মালপত্র নিয়ে ও বয়স্ক আত্মীয় স্বজন নিয়ে কালীবাড়ি অবধি যাওয়া খুবই কষ্টকর! এই ৪৫ ডিগ্রি চড়াই ওঠার অভ্যেস আমাদের নেই, আর গুগল ম্যাপে যা দেখছেন সেখানে উচ্চতার তারতম্যের কথা লেখা নেই, এটাই বাঁশের! শিমলা মলের বহু আগে থেকেই গাড়ি প্রবেশ নিষেধ, তাই বাড়িতে প্রতিদিন ৫০০টা সিঁড়ি ওঠানামা করার অভ্যেস থাকলে তবেই পারবেন। আমার স্ত্রীকে তো হুইল চেয়ারে করে তুলতে হল মল ঘোরাতে, কেননা সাম্প্রতিক অসুস্থতা ও পায়ের সমস্যায় ওর পক্ষে এত চড়াই অসম্ভব! ২) অনেক হোটেলই বেসমেন্টে ঘর দেয় সস্তায় যা আসলে জেলখানার মতো, কোনো রুম ভিউ নেই, তাই কিছুটা সস্তা। শিমলায় এসে খাটে শুয়ে পাহাড় দেখতে যদি না পান তো কলকাতায় নিজের খাটে শোয়ার থেকে তফায় কী হল! ৩) চণ্ডীগড় থেকে পরওয়ানু অবধি রাস্তা ভালো, তারপর NHAI রাস্তা বানাচ্ছে, ধুলো, গর্ত, জিগজ্যাগ আঁকাবাঁকা পথে ঝাঁকুনি প্রচুর। অনেকেই গাড়িতে আসতে চান, টয় ট্রেন বেশি সময় নেয় বলে, অন্তত আগামী ৩ মাস রাস্তা এরকমই থাকবে। ৪) শিমলা হোটেলে জল, গরম জল সবসময় নাও পেতে পারেন, এখানে জলের সমস্যা হতে পারে। আসার আগে যে হোটেলেই বুকিং করুন এই কথাগুলো মনে রাখলে ভালো!
২০ শে অক্টোবর ভোর তিনটেয় ঠাণ্ডায় ঘুম ভেঙে গেল, গুগল বলছে ৭ ডিগ্রি, কিছুক্ষণ পর ৬ ডিগ্রি। বাপরে, ঐ ঠাণ্ডায় শুয়ে থাকাই দায়। সকালে ৮টা নাগাদ বেরোলাম কুফরির উদ্দেশে। পথে গ্রীন ভ্যালিতে রাস্তায় থামা। দেবদারু গাছের ঘন জঙ্গল! ভালুক, চিতাবাঘের আগাগোনা জঙ্গলের ভেতরে! সাধারণত কেউ যায়না এই জঙ্গলের ভেতরে। দিনের বেলাতেও নাকি অন্ধকার এত ঘন গাছ। কুফরি পৌঁছে ঘোড়ায় চড়ার ইচ্ছে ছিল না, তাই আরেকটু এগিয়ে নিউ কুফরি অ্যামিউজমেন্ট পার্কে ঢুকলাম কিছু ইন্ডোর গেমস যা আমাদের বয়সে করতে পারি।
প্রথমে ঢুকলাম মিরর মেজ-এ। ছোটোবেলায় দেখা এন্টার দ্য ড্রাগন সিনেমার কথা মনে পড়ল! সেই চারিদিকে আয়না আর ব্রুস লী ঘুরে ঘুরে খুঁজছে! আমিও নিজেকে ব্রুস লী ভেবে আয়না হাতড়ে বেরোবার রাস্তা খুঁজতে গিয়ে ঘেঁটে ঘ!! অবশেষে বেরোতে পারলাম, যাক এবার গিয়ে ঢুকলাম ইনফিনিটি রুমে। দেখে মনে হচ্ছে কোথায় এলাম এর শেষ কোথায়? শুধু আলো আর আয়নার ভ্রম সৃষ্টি! তারপরে গ্যালাক্সি টানেল। ওরে বাবা, সব গ্রহ তারা নক্ষত্রের দল আমার দিকে ছুটে আসছে আর আমাকে একটা ব্রিজ পেরিয়ে যেতে হবে। ১০ সেকেন্ডেই কুপোকাত! মাথা ঝিমঝিম করায় পাশ দিয়ে বেরিয়ে হাঁপ ছাড়লাম! দুজনের জন্য ৬০০ টাকা লাগল। ওখান থেকে জাখু মন্দিরে এলাম। রাস্তা খুব সরু আর চড়াই? সে তো ৬০ ডিগ্রি উঁচু খাড়াই! বাপরে, কী রাস্তা! মন্দিরের সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বোঝালাম যতই হাঁপাও, ওপরে যেতেই হবে। ১০৮ ফুটের হনুমান মূর্তি পৃথিবীতে আর কোথাও নেই! অবশেষে উপরে উঠে মহিলা পুলিশ IR thermometer দিয়ে চেক করে নাম, মোবাইল নং লিখে ঢুকতে দিল। ইস, হনুমানের সাইড ভিউ! তাও একটা ছেলেকে পাকড়াও করে আমার ফটো তুললাম। চশমা গাড়িতেই রাখা, বাঁদরের ভয়ে। তবে আমায় বিশেষ ঝামেলায় পড়তে হয়নি! স্ত্রী অসুস্থতার কারণে গাড়িতেই অপেক্ষায় ছিল। এরপর গেলাম ভাইস রিগ্যাল হাউস! পুলিশ ঢুকতে দিল না। এখনো বন্ধ! অগত্যা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ফটো তোলা হল। দুপুরে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে আবার শিমলা মল-এ লক্কর বাজারের দিকে গেলাম। একটা নতুন জিনিস কেনা হল। অমৃতসরের ফুলকারি ডিজাইনে হিমাচলি শাল। বেশ বড়ো সাইজ, গরম হবে। দাম মাত্র ৪০০ টাকা। বেরিয়ে চিকেন মোমো, স্যুপ খাওয়া হল। তারপর সন্ধে নামতেই হোটেলে ফিরলাম। ঠাণ্ডা ঝপ ঝপ করে পড়ছে। ২১.১০.২০২০ সকাল আটটায় শিমলাকে টাটা করে বেরিয়ে পড়লাম মণিকরণের দিকে। পথে সুন্দর নগর লেক, মাণ্ডি, পান্ডোহ ড্যাম, অট টানেল, হানোগি মাতা মন্দির, ভুনতার হয়ে মণিকরণ পৌঁছাতে সাড়ে আট ঘণ্টা লাগল! দূরত্ব কিন্তু ২২৫ কিমি। আসলে রাস্তা এতই খারাপ যে অনেক সময় ২০ কিমি স্পীডেই নাচতে নাচতে গাড়ি যাচ্ছিল। হোটেল একেবারে পার্বতী নদীর পাশেই! পরের পোস্টে আরো ভ্রমণ বৃত্তান্ত থাকবে, সঙ্গে থাকবেন!
২২.১০.২০২০
গত সন্ধেতে শিমলা থেকে মণিকরণ এসে পৌঁছেচি। হোটেল একেবারেই পার্বতী নদীর পাশেই। ঘরের মধ্যে থেকে নদীর গর্জন শোনা যাচ্ছে। সাড়ে আট ঘণ্টা জার্নি করার পর তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। আজ ২২ তারিখ সকালে মণিকরণ মন্দির ও গুরুদ্বারা দেখতে গেলাম। ফুট ব্রিজ পেরিয়ে প্রথমে পড়ল রাম মন্দির, তারপর ভগবতী নয়না দেবী মন্দির, রাধাকৃষ্ণ মন্দির। উষ্ণ প্রস্রবণের মধ্যে আলুর বস্তা রাখা, টগবগে ফুটন্ত জলের মধ্যে। শিব মন্দির ও গুরুদ্বারা যেতে এত সরু গলি দিয়ে যেতে হয় কী বলব। কোনোদিন কেউ ইউটিউবে বা ফেসবুকে বলেইনি যে কী নোংরা এই গলিপথ। বেশি নোংরা, গোবর থাকায় দূর থেকেই প্রণাম করে চলে এলাম। দুপুর ১১ টায় ঘর ছাড়ার কথা হোটেলে। ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কুল্লুর উদ্দেশে। ইচ্ছে কুল্লুর শাল, সোয়েটার, জ্যাকেট কেনার। কেনাকাটা শেষে নাগগর ক্যাসেলে এসে পৌঁছাই দুপুর তিনটেয়। hptdc র হেরিটেজ হোটেল হিসেবে এই নাগগর ক্যাসেলের ঘর হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানের বিখ্যাত ট্রাউট মাছ খেলাম। বেশ ভালো! ক্যাসেলটা পুরো পাহাড়ের চুড়োয়, তাই দূরের গ্রাম, রাস্তা সব ছোট্টো ছোট্টো দেখাচ্ছে। রাজা না হতে পারি, কিন্তু একদিনের জন্যও তো বৌকে কেল্লায় রাখতে পারলাম, এটাই বড়ো কথা! দুর্গাপূজার উপহার!
২৩.১০.২০২০
সকালে নাগগর ক্যাসেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে গেলাম ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরে। কাঠ আর পাথরের স্ট্রাকচারে মন্দির বানানো। মন্দিরের খুব কাছেই রোয়েরিখ আর্ট গ্যালারি ও মিউজিয়াম। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাশিয়ান চিত্রশিল্পী রোয়েরিখের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ওনার পুত্রবধূ, বলিউডের প্রথম সুপারস্টার নায়িকা দেবিকা রাণী ও তার স্বামী (রোয়েরিখের পুত্র) এই সংগ্রহশালা তৈরি করেন। এরপর আমরা রওনা দিই মানালির উদ্দেশে। মানালি দুপুরে পৌঁছে লাঞ্চ সেরে হিড়িম্বা মন্দির, দুর্গা মন্দির, মল, বনবিহার, ক্লাবহাউস দেখলাম।
হিমাচল ভ্রমণ -- পর্ব ৫
২৪.১০.২০২০ অটল টানেল ভ্রমণ সকালে মানালি থেকে সোলাং, বুর্ব, ধুন্দি হয়ে অটল টানেলের সাউথ পোর্টালে ঢুকে সোজা গিয়ে বেরোলাম লাহুলের সিসসুতে। ৯.০২ কিমি এই টানেল ১০০০০ ফুট উচ্চতায় পৃথিবীর দীর্ঘতম টানেল। এটি ডবল ডেকার টানেল, মানে নীচে এক লেনের এমারজেন্সি টানেল, ওপরে ২ লেনের মেইন টানেল। সুরক্ষা ব্যবস্থা অনন্য! ১২ মিনিটের আনকাট ভিডিও এত বড়ো যে এখানে আপলোড হচ্ছে না, তাই এডিট করে ছোট করে দিলাম। আজ আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন! ফেরার পথে নেহরু কুণ্ড ও বশিষ্ঠ মন্দির গেলাম। করোনার কারণে বশিষ্ঠ মন্দিরের উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করার লোক নেই বললেই চলে! আমরা বেশ শান্তিতেই ঘুরে বেড়াচ্ছি, ভীড় একেবারেই নেই!
২৫.১০.২০২০
সকাল আটটায় মানালি থেকে বেরিয়ে পড়লাম, এবার যাবো ম্যাকলয়েড গঞ্জ! ধরমশালা নীচে, ম্যাক পাহাড়ের ওপরে। পথে বৈজনাথ শিব মন্দির পড়ল একেবারে রাস্তার ধারেই। পুলিশ মাস্ক পরে নাম, ঠিকানা, ফোন নং, IR thermometer চেকিং করছে। বৈজনাথ শিব মন্দির অনেক পুরোনো, তবে গুটিকয়েক স্থানীয় লোক ছাড়া কোনো ভীড় নেই! এরপর পালামপুর টী গার্ডেন, রাস্তার ধারেই সব চায়ের বাগান। মাঝে রাস্তার ধারে একটা নিরামিষ ভোজনালয়ে হিমাচলি থালি নিয়ে দুজনে ভাগ করে খেলাম। দীর্ঘ যাত্রায় দুজনেই শ্রান্ত, ক্লান্ত! কতক্ষণে পৌঁছবো! ম্যাকলয়েড গঞ্জ এলাম প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ। গাড়ি ধীরে সুস্থে ৪০-৫০ কিমি স্পীডে এসেছে। ম্যাক এ গাড়ি পার্কিং একটা সমস্যা, আর বেশির ভাগ রাস্তা একমুখী, নয়ত ঘুরে যেতে হবে। কোথায় আর যাবার মতো শরীরের অবস্থা নেই। হোটেলেই ডিনার সেরে বিশ্রাম নিলাম।
২৬.১০.২০২০
সকালে ঘুম ভাঙল ১০° ঠাণ্ডায়! খাটের পাশেই জানলার পর্দা সরিয়ে শুয়ে শুয়ে পাহাড় দেখছি। এটাই কলকাতার সঙ্গে তফাৎ! চিরকাল পাশের বাড়ির দেয়াল দেখে ঘুম ভাঙে! সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম ডাল লেক যাবো বলে। কিছুটা গিয়ে দেখি রাস্তা সারানো হচ্ছে, খুবই খারাপ চড়াই, তাই রিস্ক নিলাম না, গেলাম না। ওদিকে নড্ডি পয়েন্ট থেকে ধৌলাধার পাহাড়ের দৃশ্য আরো মনোরম দেখা যায়, হল না আজ! এবার গেলাম ১৮৬২ সালে বানানো উত্তর ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন চার্চ সেন্ট জন্স ইন দ্য ওয়াইল্ডারনেস-এ। এখানে লর্ড এলগিনের কবর আছে, উনি ১৮৬৩ তে মারা যান। এছাড়াও অনেক ব্রিটিশদের কবর রয়েছে। এরপর গেলাম ম্যাক এর মেইন স্কোয়ারে। সামনেই কালচক্র মন্দির। এখানে নন-টিবেটানদের এখন ঢুকতে অনুমতি দিচ্ছে না। বাইরে থেকেই ছবি/ভিডিও নিলাম। এখান থেকে প্রায় এক কিমি হেঁটে দলাই লামার মনেস্ট্রি গিয়ে দেখি ঐ একই অবস্থা! নন-টিবেটানদের ঢুকতে দিচ্ছে না! মনটা খারাপ হয়ে গেল। এরপর গেলাম ধরমশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পুরো বন্ধ কোভিডের কারণে। ধুর, আসাটাই মাটি হল! ফেরার পথে ধরমশালা ওয়ার মেমোরিয়ালে গেলাম। যদিও খোলা ছিল তবুও বেশি ভেতরে যাইনি, প্রচুর রোদ উঠে গেছে। ম্যাক মেইন স্কোয়ারে লাঞ্চ খেলাম, সেটার আলাদা পোস্ট দেবো। এরপর ভাগসু নাগ মন্দির দর্শনে অনেকটা হেঁটে উঠলাম মন্দিরে। পাশে স্নানের কুণ্ড আছে কিন্তু স্নান করার অনুমতি নেই কোভিডের কারণে! শুনলাম বাকি সব টিবেটান মনেস্ট্রিতেও ট্যুরিস্ট ঢুকতে দিচ্ছে না। এখানে যে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না --- সে খবর কিন্তু কোনো লোকাল ইউটিউব চ্যানেলে বলছে না! আগে থেকে জানলে আসতামই না! কাল যাবো ডালহৌসি-খাজ্জিয়ার।
২৭.১০.২০২০
সকালে ম্যাকলয়েড গঞ্জ থেকে ৯টা নাগাদ রওনা দিই ডালহৌসির উদ্দেশে। রাস্তা বেশ ভালো, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে উঠছি-নামছি। ম্যাকের ধৌলাধার পর্বতশ্রেণী থেকে পীরপাঞ্জাল রেঞ্জ ডালহৌসিতে, তবে কুয়াশা থাকায় দূরের ভিউ স্পষ্ট নয়! আমরা সুভাষ চকে হোটেলে উঠলাম। সামনেই দেবদারু গাছের সারি, প্রখর রোদ্দুরে আমরা খাজ্জিয়ারের দিকে রওনা দিলাম লাঞ্চের পর। রাস্তা ভালো নয়, ঘন জংগল! কালাটপ, বাখরাকোটার জংগল পেরিয়ে এক ঘণ্টা বাদে পৌঁছাই খাজ্জিয়ারে। মিনি সুইজারল্যান্ড নামে বিখ্যাত এই খাজ্জিয়ারের চারপাশে বড়ো বড়ো গাছ, আর মাঝে ছোট্ট জলাশয় ও উপত্যকা। ফেরার পথে গান্ধী চক ও চার্চ দেখে হোটেলে ফিরলাম।
হিমাচল ভ্রমণ --- পর্ব ৮
২৮.১০.২০২০ সকাল সাড়ে নটা নাগাদ ডালহৌসি ছেড়ে রওনা হলাম অমৃতসরের দিকে। ডালহৌসি থেকে চাক্কি মোড় অবধি ২ লেন পাহাড়ি রাস্তাকে বিদায় জানিয়ে পাঠানকোটের আগে ৪ লেন হাইওয়ে ধরে অমৃতসরে দুপুরে পৌঁছালাম। পথে লাঞ্চ ব্রেক আধঘন্টা। অমৃতসরে হোটেলে ঢোকার আগে আমরা ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত বাল্মিকী রামতীর্থ মন্দিরে গেলাম। মহর্ষি বাল্মিকীর আশ্রমে সীতাকে রেখে যাওয়া হয়েছিল, এখানেই লব কুশের জন্ম হয়। বিরাট ক্ষেত্র জুড়ে এই মন্দির। সাথে সরোবর তো আছেই। মন্দিরের ভেতরে বাল্মিকী রামায়ণ লিখছেন এই ভঙ্গিমায় মূর্তি রয়েছে। নামকীর্তন চলছে। বেশ ভক্তিপূর্ণ পরিবেশ। পাশেই লাল দেবী মন্দিরে বিভিন্ন মূর্তি রয়েছে। ওখান থেকে অমৃতসর শহরে ফিরে হোটেলে উঠি। আমাদের কিছু শর্ত ছিল হোটেল বুক করার। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় কোনো সিঁড়ি উঠবে না, হোটেলে ড্রাইভারকে ফ্রিতে গদি দিতে হবে রাতে শোয়ার জন্য, বাথরুম ব্যবহার করতে দিতে হবে এবং হোটেলের দায়িত্বে গাড়ি পার্কিং রাখতে হবে। এইসব শর্ত মেনে ১০০০ -- ১২০০ টাকায় আমরা হোটেল পেয়েছি অনলাইন বা স্পট বুকিং। সাথে সাথে হোটেল থেকে হুইল চেয়ারেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঘোরার জন্য। তাই কোনো ট্যুর অপারেটরের ভরসা করিনি। নিজে হোটেল বুক করেছি, গাড়ি বুক করেছি। এ ব্যাপারে শিমলার মেয়ে Pratiksha Sharma আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছে ও সঠিক উপদেশ, টিপ্স দিয়েছে। গুগল ম্যাপ অনেক সময়েই পাহাড়ে ভুল তথ্য দেয়, যা শিমলায় গিয়েই টের পেয়েছি। তাই ড্রাইভার শুভম ও প্রতীক্ষা দুই শিমলাবাসীর কথামতো চলেছি। একটা কথা বলা প্রয়োজন ফোনে হোটেল বুক করার সময় কাউকেই কোনো টাকা দিইনি, একমাত্র নাগগর ক্যাসেল hptdc কে ছাড়া। গাড়ি বুকিং মাত্র ৫০০ টাকা প্রতীক্ষাকে গুগল পে করে অগ্রিম করা, তারপর দিন প্রতি ২২৫০ টাকা (ডিজেল ৭০.৩৫ / লিটার) এই রেটে। ডিজেল কার্ডে নিয়েছি, ডাইভারকে অল্প টাকা দিয়েছি, খাবার জন্য। অন্য একটি গ্রুপে পরিচিত মুখ একজন ট্যুরের আগে থেকে অগ্রিম টাকা চেয়ে শর্ত দেন যে না গেলে সে টাকা আর ফেরৎ দেবেন না। এমন শর্তে সতর্ক হয়ে সরে গেছি তার সংস্পর্শ থেকে! এর সমস্ত whatsapp প্রমাণ আমার কাছে আছে, তাই যে কোনো সময়ে তা ফেসবুকে দিতে পারি ও মুখোশ খুলে দিতে পারি! অতএব সাধু সাবধান!
২৯.১০.২০২০
সকালে উঠে আমরা প্রথমে যাই দুর্গিয়ানা মন্দিরে। হুইল চেয়ার জোগাড় করতে ১০-১৫ মিনিট লাগল। গাড়ি পার্কিং বেসমেন্টে, সেই জায়গা থেকে মন্দির অনেকটা হাঁটাপথ, অসুস্থ স্ত্রীকে হুইল চেয়ারে নিয়ে চলা শুরু হল। স্বর্ণ মন্দিরের আদলে তৈরি দুর্গিয়ানা মন্দিরের ভেতরে ছবি/ভিডিও তোলা নিষেধ। তাই বাইরের ছবি/ভিডিও তুললাম। বেশ খিদে পেয়েছে কিন্তু কোথাও খাবারের দোকান খোলা পাইনি, তখন হুইল চেয়ার যে ছেলেটি এনেছিল সে বলল, পাশেই গরম গরম কচুরি, ছোলার তরকারি পাওয়া যায়। আমরা এতটাই ক্ষুধার্ত ছিলাম যে আর না করিনি। এরপরের টার্গেট স্বর্ণ মন্দির। হেরিটেজ ওয়াকের ওপারে গাড়ি যেতে দেয় না। স্বর্ণ মন্দিরের কার পার্কিঙে একটা ই-রিক্সা ভাড়া করে স্বর্ণ মন্দিরের কাছ অবধি যাওয়া গেল। একটা দোকানের ভেতরে চেয়ারে স্ত্রীকে বসিয়ে আধার কার্ড ও নিজের মোবাইল বন্ধ করে, দুটো জিনিস ডিপোজিট করে হুইল চেয়ার পাওয়া গেল শনি মন্দিরের পাশ থেকে। কোনো টাকাপয়সা নেয় না, নিতেও চায় না, কিন্তু মোবাইল / ড্রাইভিং লাইসেন্স / গাড়ির চাবি ও আধার কার্ড জমা রাখতেই হবে। এক সর্দারজি উপস্থিত হুইল চেয়ার ঠেলে সাহায্য করতে। আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম। জুতো জমা রাখা হল। রোদ্দুর প্রচুর, লোকের ভিড়ও অনেক। আমরা ধীরে সুস্থে লোকজনের ভিড় এড়িয়ে চলা শুরু করলাম। জলে পা ধুয়ে গেট পেরিয়ে সরোবরের চারদিকে প্রদক্ষিণ করা শুরু করলাম। এখানে দুখভঞ্জন বেরি গাছ রয়েছে। সরোবরে নারী পুরুষ বাচ্চা সবাই স্নান করছে। জামাকাপড় বদলানোর সুব্যবস্থা রয়েছে। সরোবরের চারদিক প্রদক্ষিণ করতেই প্রায় ৫০ মিনিট লেগে গেল। মূল মন্দিরের প্রবেশপথে যা লাইন, প্রায় তিন ঘণ্টা লাগবে, আর সেখানে হুইল চেয়ারের অনুমতি নেই, তাই দূর থেকে প্রণাম করেই বেরিয়ে এলাম। জালিয়ানওয়ালাবাগ বন্ধ, সারানোর কাজ চলছে। শুনলাম প্রায় এক বছর বন্ধ রয়েছে। হেরিটেজ ওয়াকের মহাজন স্টোর থেকে অমৃতসরের বিখ্যাত আম পাপড়, মশালা পাপড়, রান্নার মশলা, বড়ি কেনা হল। প্যাকেটের ওজন দেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম! ফ্লাইটে হ্যান্ডব্যাগ ৭ কেজির বেশি নিতে দিচ্ছে না! আর কত কিছু যে এই ১১ দিনে কেনা হয়েছে!! হোটেলে দুপুরে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধেবেলা আমি নিজে একা হাঁটতে হাঁটতে গেলাম হেরিটেজ ওয়াকের আলোকসজ্জা দেখতে! সত্যি অপূর্ব লাগছে রাতের আলোয়। অমৃতসরী কুলচার খোঁজে ব্রাদার্স ধাবায় গেলাম। পার্সেল করে হোটেলে এসে ডিনার সারলাম। আগামীকাল কলকাতা ফেরার ফ্লাইট! এরপরে অন্তিম পর্ব লিখব বিভিন্ন তথ্যসমেত, সাথে থাকবেন।
৩০.১০.২০২০
আজ অমৃতসর থেকে ফেরার পালা। ইন্ডিগোর ফ্লাইট সকাল ৯.৪০এ। সকাল ৭টায় এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। তাই ওলা ডাইভারকে প্রি-বুকিং করা ছিল। অমৃতসর এয়ারপোর্টের দূরত্ব হোটেল থেকে ১৮ কিমি। তাই ভোর ৬টায় ট্যাক্সি এল। ড্রাইভার খুবই সজ্জন ব্যক্তি। আমার স্ত্রী বেশি চলাফেরা করতে পারছে না দেখে নিজেই ট্রলি এনে সব মালপত্র নিয়ে সিকিউরিটি পর্যন্ত পৌঁছে দিল। গেট থেকে ঢুকেই ইন্ডিগো কাউন্টারে বলতে ২ মিনিটে হুইলচেয়ার চলে এল। ১৫ কেজি করে দুজনের ৩০ কেজি মালপত্র বরাদ্দ, ওজন হল ২৯.৩ কেজি। সিকিউরিটি চেকিং করে গেট ২বি থেকে বাসে উঠে প্লেন পর্যন্ত হুইলচেয়ার এল। ইন্ডিগোর যে গ্রাউন্ড স্টাফ আমাদের সাথে সাথে ছিল তার সাহায্য ভোলার নয়! প্লেনে যেহেতু পাশাপাশি বসব তাই আমাকে PPE kit পরতে হল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনটে সীটের একটা খালিই ছিল। আমার স্ত্রীর বোর্ডিং পাস-এ স্পেশাল স্টিকার দেওয়া ছিল তাই দমদমেও ইন্ডিগো স্টাফ আমাদের হুইলচেয়ার সেবা প্লেন থেকে উবের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত দিয়েছে। এবার আসি খরচের হিসাবে। আমি ফোন, ইমেইলে যোগাযোগ করে শিমলার গাড়ি বুকিং করি অগ্রিম ৫০০ টাকা গুগল পে করে। এ ব্যাপারে শিমলার মেয়ে প্রতীক্ষা শর্মা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে! কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়, এত আন্তরিকতা পেয়েছি। শিমলা হোটেলে এসে আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বার বার আশ্বস্ত করেছে হুইলচেয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে। আমিও কিছুটা নিশ্চিন্ত ছিলাম স্থানীয় সাহায্য পেয়ে। শিমলায় ছিলাম হোটেল ডালঝিলে। এ জি চক পর্যন্ত গাড়ি যায়, বাকি ১০০ মিটার আমি হেঁটে গেছি, স্ত্রী প্রথমে চেয়ারে বিশ্রাম নিয়ে হেঁটেছে, পরে হুইলচেয়ার ওয়ালা লখীরাম সারাক্ষণের সঙ্গী ছিল। মণিকরণে হোটেল শিবালিকে ছিলাম। সেখানেও হুইলচেয়ার ব্যবস্থা আছে। নাগগর ক্যাসেলে hptdc প্রি বুকিং শুধু করেছিলাম। পরে 40% discount + free breakfast পেয়েছি! মানালিতে হোটেল রয়াল ভিউ কটেজ, হিড়িম্বা দেবী টেম্পল রোডে, দুর্গা মন্দিরের পাশে। ম্যাকলয়েড গঞ্জে হোটেল আকাশদীপ ওয়ো হোটেলে ছিলাম ভাগসু নাগ মন্দির রোডে। ডালহৌসিতে হোটেল নিউ মেট্রোতে। অমৃতসরে হোটেল মোমেন্টস ইন। সর্বত্র আমাদের যে শর্ত ছিল --- মিনিমাম ২-৩ টে সিঁড়ি, রিসেপশনের পাশেই ঘর, কমোড, গিজার, ড্রাইভারকে গদি ফ্রি দিতে হবে ও বাথরুম ব্যবহার করতে দিতে হবে, হোটেল হুইলচেয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। শুধু নাগগর ক্যাসেলে ঘরটা রিসেপশন থেকে ১ মিনিটের হাঁটা ও গোটা ছয়েক সিঁড়ি ছিল। হোটেলে থাকা বাবদ ১৫০০০ টাকার অল্প কম খরচ হয়েছে। হুইলচেয়ার ভাড়া ঘণ্টা প্রতি ২৫০/-. আমরা কী খাবো সেটা কোথায় ছিলাম, সারাদিন ঘোরাঘুরির পর শরীরের অবস্থার ওপর নির্ভর ছিল। পাহাড়ে লং জার্নিতে (শিমলা -- মণিকরণ, মানালি -- ম্যাকলয়েড গঞ্জ) ডার্ক চকোলেট, ড্রাই ফ্রুটস অল্প অল্প খেয়েছি। নো লাঞ্চ। সকালে বমি নিরোধক ondem md 4 mg ডাক্তারের পরামর্শে খেয়েছি। অটল টানেল, সিসসু ১০০০০ ফুট উচ্চতায় বলে বমি নিরোধক ওষুধ খেতে ভুলিনি, যদিও মাত্র দেড় ঘণ্টায় ঘুরে এসেছি। ভীড় ছিল না। হিমাচলের স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাদের অন্তরিকতা মন ছুঁয়ে গেছে। হোটেল + গাড়ির প্যাকেজ চাইলে শিমলার মেয়ে প্রতীক্ষা শর্মার সাহায্য নিতে পারেন, ইমেইল আইডি পরে জানিয়ে দেবো। আর শুধু গাড়ি চাইলে টয়োটা ইটিয়সের ড্রাইভারের ফোন নং দিতে পারি। এখন ডিজেল লিটার প্রতি ৭০.৩৫, তাই গাড়ি দিন প্রতি ২২৫০/-। এতে সমস্ত ট্যাক্স, টোল, পার্কিং, ড্রাইভারের খাওয়া ধরা আছে। গুগল পে, ক্রেডিট কার্ড চলে। ফোন পে, পেটিএম পাওয়া যায় সর্বত্র। কেউ ৬ মাস বাদে গেলে রেট তফাৎ হতে পারে। হোটেলের সীজন / অফ সীজন রেট আলাদা। ট্যুর অপারেটর অনেক বড়ো বড়ো কথা, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে শেষে শর্ত দেয় যে অগ্রিম টাকা না গেলে কোনোভাবেই ফেরত পাবো না। তাই ওইসব জোচ্চোরদের এড়িয়ে নিজে ফোনে হোটেল বুকিং করেছি কোনো টাকা না দিয়ে বা স্পট বুকিং। শুধুমাত্র নাগগর ক্যাসেলের রুম hptdc কে অনলাইন পে করেছি। সরকারি হোটেল, তাই নিশ্চিন্ত ছিলাম। আপাতত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। হিমাচলে আবার যাবো। কিন্নর কল্পা, স্পিতি চন্দ্রতাল লেক বাকি আছে যে! দেবভূমি হিমাচল ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা, আন্তরিকতা মনে থাকবে চিরদিন!
বেড়াতে এসে ভুরিভোজ (১)
হিমাচল ঘুরতে এসে স্পেশাল যা যা খাওয়া হয়েছে, ছবিসহ শেয়ার করছি। ১) হিমালয়ান ট্রাউট মাছ -- দুবার খাবার সৌভাগ্য হয়েছে। নাগগর ক্যাসেলে ও মানালিতে চপস্টিক রেস্তোরাঁয়। দুটোই অনবদ্য! গ্রীল্ড ট্রাউট মাছ, স্যালাড সহ, সাথে টারটার স্যস বা মেয়নিজ! আহা, জিভে স্বর্গের অনুভূতি! লোভ দেবেন না, আপনারাও সময় সুযোগ করে চলে আসুন! ২) হিমাচলি পোলাও --- বাসমতি চালের পোলাও তাতে কাজু, আখরোট, মাখনা স্পেশালি দেওয়া! চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে স্যাটাস্যাট সাঁটিয়ে খান নাগগর ক্যাসেলে! ৩) আনারদানা মুর্গ --- বেদানা বেটে নরম মুরগির মাংসের সঙ্গে মাখোমাখো স্পেশাল আইটেম! আহা, চুপচাপ পাহাড় দেখতে দেখতে প্লেট খালি হয়ে গেল! বড্ডো ভালো আইটেম, পরের দিন বিল মেটানোর সময় নাগগর ক্যাসেলের শেফকে ডেকে পাঠিয়ে নমস্কার করে এলাম। করোনার কারণে হ্যান্ডশেক করা বারণ, তাই! ৪) কোথে --- মানালি মল-এ চপস্টিক রেস্তোরাঁয় খেলাম। চিকেন বা মটন মোমো একদিকে স্টিম করা, অন্যদিকে লালচে ব্রাউন টোস্ট করা! ১০ টায় এক প্লেট, দুপ্লেট খেলেও মন ভরবে না। বৌ বকবে তাই মাত্র হাফ প্লেট মানে পাঁচটা বরাদ্দ! ইস, ভালো জিনিস বোধহয় ভাগ্যে কম পাওয়া যায়! ৫) চিকেন থেন্তুক --- মানালি চপস্টিকে আরেক তিব্বতি রান্না, অনেকটা স্যুপি, ওয়ান্টন স্যুপের খুড়তুতো ভাই, সঙ্গে চিকেন তো আছেই! বৌয়ের ভয়ে ওয়ান বাই টু অর্ডার! ইস, পুরো এক বাটিও পেলাম না! ৬) টুনা সুশি --- মানালি চপস্টিকে এক প্লেটে আট পিস টুনা মাছ, গাজর, আদা কুচি দিয়ে সুশি বানানো, সাথে কালো স্যস, আদা কুচি! এটা মনের আনন্দে আহ্লাদে আটখানা হয়ে আটটাই খেয়েছি! ৭) ফিন ট্রান্সপারেন্ট ন্যুডলস -- রাইস ন্যুডলস, কিন্তু স্বচ্ছ। কলকাতায় কখনও দেখিনি, খাইনি! এক প্লেটে এত দেয় যে ৮টা সুশি খাবার পর ওপরের কাঠের সিলিং দেখতে দেখতে খেয়েছি! চপস্টিক জিন্দাবাদ! ৮) হট জিঞ্জার লেমন হানি --- গরম জলে আদা সরু লম্বা কুচি কুচি করে সেদ্ধ করে পাতিলেবুর রস, মধু দিয়ে বড়ো এক গ্লাস পানীয়। এই ৯° ঠাণ্ডায় খুব দরকারি পানীয়! মানালিতে দেখছি সবাই খাচ্ছে। ৯) মিনি হট গুলাব জামুন --- মানালি মলে ৩০ টাকায় ১০টা গরমাগরম গুলির সাইজের মিনি গুলাব জামুন। আমি একা খাবো বলে কিনলাম, বৌ প্রায় সব খেয়ে ফেলল! অগত্যা আবার আরেক প্লেট অর্ডার দিয়ে দূরে গিয়ে পুরোটা সাঁটিয়ে খেলাম, পাছে আরো চায়! না দিলে তো আমায় খেয়ে ফেলবে, কী জ্বালা!
বেড়াতে গিয়ে ভুরিভোজ ২
এবার যে যে খাবারগুলো মনে ধরেছে, পেটে হজম হয়েছে চটপট জানিয়ে দিই --- ১) ড্রাই থুকা --- দেখতে চাউমিন বা নুডলসের মতনই। কিন্তু এটা থুকপার শুষ্ক সংস্করণ! নামটাও থুকপা নয়, থুকা! খেলাম ম্যাকলয়েড গঞ্জে মেইন স্কোয়ারে টিবেট কিচেনে! ২) শা ভাকলাব --- মটন কিমার রসালো পুর করে বেশ বড়ো সাইজের ডাম্পলিংকে ফ্রাই করা। কামড়ালে ঠোঁটের পাশ দিয়ে মটন কিমার রসালো জ্যুস গায়ে পড়বেই! আহা, আবার কবে খাবো?! ৩) টিং মো --- তিব্বতি পাউরুটি, কিন্তু গোল বলের মতো, আর লাচ্চা পরোটার মতো থাকে থাকে মোড়া। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, আমরা কলকাতায় যে পাউরুটি খাই, তার চারদিক ব্রাউন করে বেক করা। কিন্তু টিংমোতে এই ব্রাউন বেকড লেয়ার নেই। পুরোটাই নরম তুলতুলে খরগোসের মতো নরম। শুনলাম হাতে তৈরি পাউরুটি টিংমো! আমরা কি তাহলে পা দিয়ে ঠেসা পাউরুটি রোজ খাই কলকাতায়!! ৪) কুংপো চিকেন --- চীনেবাদাম, কাজুবাদাম, সয়া স্যসে বোনলেস চিকেন দিয়ে লা জবাব স্বাদ! আহা, চুমেশ্বরী পার্ফরমেন্স টিবেট কিচেনের শেফের! উপরের সব খাবার টিবেট কিচেন, ম্যাকলয়েড গঞ্জে। ৫) অমৃতসরী ফিস কাবাব, মাখখন ফিস, মাজিতা রোড --- এই রেস্তোরাঁ পৃথিবী বিখ্যাত অমৃতসরী ফিস কাবাবের জন্য। স্থানীয় মাছ সাঙ্গারা ও শোল মাছ এই দুটোর ফ্রাই, কাবাব পাওয়া যায়। আমরা শোল মাছের কাবাব অমৃতসরী স্টাইলে খেলাম। এই প্রথম দেখলাম বৌ নির্দ্বিধায় মেনে নিল যে এরকম রান্না আগে কখনও খায়নি! যাক বাবা, বৌয়ের রান্নার থেকেও ভালো কিছু হয়, এটা জানা গেল! আমি তো চুপচাপ টুপটাপ কাবাব খাচ্ছি! আর দেখছি বৌকে, এই আইটেমের দরাজ প্রশংসা করতে! ইস, আমার প্রশংসাও যদি কখনো করত!! ৬) মটন কিমা নান উইথ গ্রেভি --- নানের ভেতর মটন কিমার পুর, সাথে কিমার গ্রেভি, মানে সাদা বাংলায় কিমার থকথকে ঝোল! কিন্তু মশলার গুণে ঐ কিমার ঝোলও হাপুস হুপুস করে খেয়ে ফেল্লাম! বড্ডো ভালো খেতে! কলকাতায় পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখতে হবে। www.makhanfish.com এদের ওয়েবসাইট। দেখলে হবে? খরচা আছে বস, ফ্যামিলি নিয়ে চেটেপুটে খেয়ে আসতে হবে, তবেই না ভোজনরসিক বাঙালি!!
0 Comments
প্রধানমন্ত্রী যখন অটল টানেল উদ্বোধন করলেন, সেই দিন থেকেই ওটা দেখার ইচ্ছা ৷ বিশেষত এর আগেও আমি লাহুল, স্পিতি কভার করে কাজা হয়ে কুনজুম পাস, রোটাং পাস পারকরে মানালি এসেছিলাম গাড়ি চালিয়ে ৷ ফলে রাস্তাটা চেনাই ছিল ৷ লোভ সম্বরণ করা সম্ভব হল না ৷ পূজাতে তো কোথাও ঠাকুর দেখা যাবে না. I চললাম তাই ৷ প্রথম দিন কাণপুরের আগে ফতেহপুর এ রাত্রি যাপন করলাম ৷ পরের দিন সোজা আগ্রা হয়ে যমুনা এক্সপ্রেস ওয়ে ধরলাম ৷ দিল্লি না ঢুকে এক্সটারনাল পেরিফেরিয়াল এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে সনিপথ হয়ে সোজা চন্ডিগড়ে রাত কাটান ৷ পরের দিন সকালেই সিমলা পৌছান গেল ৷ ঝকঝকে আকাশ, সোনালী সূর্য্যালোকে পাহাড়ের মনোরম পরিবেশ মনমুগ্ধ করে দিল ৷ যাই হোক কলকাতা থেকে এসেছি শুনে কি প্রকার অতিথেয়তা অপেক্ষা করে আছে তাই ভাবতে লাগলাম ৷ তবে বিরূপ কিছু ঘটল না ৷ হোটেলে কেবল আমরাই আছি। এখানে তেমন কোভিডের ভয় ও করছে না. সন্ধ্যাতে গেলাম সিমলা কালিবাড়িতে ৷ ম্যাল এ তো একদম বন্ধের চেহারা ৷ থমথমে পরিবেশ৷ কলিমন্দিরে কিছুক্ষন থাকা হল ৷ তারপর ফিরলাম হোটেলে ৷ এবার কিন্তু শান্ত পাহাড়ি পরিবেশটা বেশ লাগল ৷ মন মানিয়ে নিতে শুরু করল ৷ রাতে ঘরের জানালা দিয়ে কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখলাম বেশ ঝক্ঝকে চাঁদের আলোয় পাহড়ের ছবি ৷ আলোর বন্যা বইছে ৷ দূরে জোনাকি পোকার মত বিন্দু বিন্দু আলো জ্বলছে ঘরে ঘরে | হালকা ঠান্ডা ৷ মায়াবী পরিবেশের সাথে একাত্ম হতে ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিলাম ৷
দ্বিতীয় দিনে সকাল সকাল চললাম সারাহানে উদ্দেশ্যে ১৬৫ কিমি রাস্তা যেতে ৫ ঘন্টা মত লাগবে ৷ পাহাড়ি পাকদান্ডি বেয়ে মসৃন ভাবে আমরা এগিয়ে চললাম ৷ পথে নরকন্ডা তে খাবার খাওয়ার জন্য দাড়ালাম৷ বেশ জনবসতি আছে ৷ মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি পারিবেশে প্রথম ধাক্কা খেলাম রেস্টুরেন্টে ঢুকতে গিয়ে ৷ হিমাচলের লোক ছাড়া কিছুতেই ঢুকতে দিতে চায় না ৷ শেষে রাজি হল ৷ এখান থেকে তুষার মোড়া পর্বত রাজি দেখাদিল ৷ খুবই উপভোগ করলাম ৷ রামপুর হয়ে জিওরি আসলাম ৷ এখান থেকে ডানদিকে আরো ১৭ কিমি পাহাড়ে চড়তে হবে সারাহান পৌছানোর জন্য ' | চললাম আবার ৷ বরফ আবৃত তুষারশৃঙ্গর সাথে লুকচুরি খেলতে খেলতে সারাহান পৌছে গেলাম ৷ সামনেই ভীমাকালিমন্দির ৷ ডানদিকে বাঁক নিয়ে হোটেল শ্রী খন্ড . | HPTDC র হোটেল ' 40% ছাড় দিচ্ছে এখন ৷ আমরা ছাড়া কোনো টুরিষ্ট নেই ' | এখানে করনার ভয়ও নেই ৷ হঠাৎ মুক্তির স্বাদ পেয়ে আমাদের বিহ্বল অবস্থা ৷ সম্মুখে শ্রীখন্ড চূড়া ৷ এই হোটেলর অবস্থান অনবদ্য 'সামনে বিস্তীর্ণ শৈলশিরা, চূড়াগুলি বরফাবৃত ৷ মন চায় শুধু তাকিয়ে থাকতে ৷ সূর্যাস্তের পরে ঠান্ডা পড়তে শুরু করল ৷ ভালোই ঠান্ডা এখানে৷ মন্দির দর্শন সেরে হোটেলে ফিরলাম ৷ অস্তাচলে সূর্যদেব ৷ লাল আকাশের রং পাহাড় চুঁইয়ে পড়ছে ৷ ধীরে ধীরে রাত নামছে পাহাড়ে ৷
পরের দিন যাওয়ার কথা কল্পা, সাংলা, ছিটকুলও যাব | এখন কল্পাতে আপেল পাড়া শুরু হয়েছে খবর পেলাম, কিন্তু বিধিবাম ৷ ওখানে থাকার অনুমতি পাওয়া গেল না ৷ লোকাল গাড়ির ড্রাইভার রা যেতে বারণ করছে ''৷ ফলে যাত্রা পথের অভিমুখ পরিবর্তিত হল এ যাত্রা।
ফিরে চললাম রামপুরের দিকে ৷ রামপুর পার করে সুতলেজ নদীর ধার বরাবর পাহড়ি রাস্তা বেয়ে এগিয়ে চলেছি ৷ জালোরি পাস অতিক্রম করে মানালি পৌছাব ৷ রাস্তা এখানে সংকীর্ণ ও খুবই খাড়া তবে পাথের সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই ', প্রকৃতির এই মনমুগ্ধকর রূপে আমরা বিমহিত ৷ কি অপূর্ব সুন্দর এই প্রকৃতি , মনে হয় সারাটা জীবন এখানেই কাটিয়ে দিই । কি অপূর্ব দৃশ্য ৷ বাদামী পাহাড়ের কোল আলো করে রয়েছে সবুজ বনানী ৷ দূরে নীল আকাশ ৷ এই রাস্তায় গাড়ি চালান বেশ সময সাপেক্ষ .কারন দূর্গম পাহাড়ি পথ এছাড়া পথের অবস্থাও ,তথৈবচ। ধীরে ধীরে গাড়ি এগোচ্ছে ৷ দৃশ্যাবলী খুবই সুন্দর জালোরী পাসে পৌছাতেই বিকেল হয়ে এলো ৷ খুব সুন্দর জায়গা ৷ পাহাড়ের উপর থেকে তিনদিকই দেখা যায়। যতদূর চোখযায় বিভিন্ন উচ্চতার শ্রেণীবদ্ধ পর্বত রাজি আর আকাশের মেঘের সমাহার ৷ কিযে ভালো লাগছে. | দুপুরের যাওয়া এখানেই সারা হল । এখানে একটা মন্দির রয়েছে ৷ বেশিক্ষন দেরি করতে পারলাম না ৷ কারন পাহাড়ে হঠাৎ সন্ধ্যা নামে আর গা বেয়ে নেমে আসে মেঘ ৷ অচেনা রাস্তায় অন্য গাড়ির দেখা পাওয়া দুষ্কর৷ কিন্তু সেই সন্ধা নামল রাস্তাতেই ৷ সংকীর্ণ রাস্তার ডানদিকে একটি গাড়ি উল্টে গেছে ৷ যেদিকে খাদ সেখান থেকে কোনো রকমে আমাদের গাড়ি টা বের করলাম আবার চলা ৷ মানালি পৌছাতে ৮ ঘন্টা লেগে গেল হোটোলে. রাত্রি বাস, পরদিন সকাল সকাল অটল টানেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু ৷ সোলাং ভ্যালিতে প্যারাগ্লাইডিং দেখলাম কিছুক্ষন, এখানেই কিছু খেয়ে এগিয়ে চললাম অভিষ্টের পানে ৷ দুপাশের দৃশ্যাবলী বর্ণনাতীত . | বরফ চূড়া আমাদের অতি নিকটে চলে এসেছে ৷ নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে সবুজ জল, পাশে পাশে সবুজ পাইন বনে ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে ৷ কী যে আনন্দ হচ্ছে ৷ একটু পরেই অটল টানেলে প্রবেশ করলাম ৷ প্রশস্ত রাস্তা , সুন্দর আলোক সজ্জা, এটা পার হতে প্রায় ১৫ মিনিট লাগল ৷ গাড়ি চালানোর সময় কখনোই মনে হয়নি ১০ হাজার ফুট উঁচুতে কোনো গহ্বরের মধ্যে গাড়ি চালচ্ছি ৷ বরং যেকোনো শহরের রাস্তাকে লজ্জাবনত করতে সক্ষম৷ ওপারে পৌঁছে রাস্তা দুভাগে ভাগ হয়েছে ৷ ডানদিকে চলে গেছে কাজা ' | বাদিকে রাস্তা সোজা লাদাখ ৷ ঐ দিকেই বেশ কিছুটা অগ্রসর হলাম ৷ একদিকে পথপাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সকলে উন্মুক্ত প্রান্তারে এসে দাঁড়ালাম ৷ মনে হল পৃথিবীতে যদি স্বর্গ খুঁজি ,তা এখানে ৷ দু পাশে বৃক্ষহীন ধূসর পাহাড়ের নীচে সশব্দে বয়ে চলেছে পান্না রং এর নদী উপরে গাড় নীল আকাশ ৷ গাছের সব পাতাই হলুদ হয়ে নীচে ঝরে পড়েছে ৷ জনমানবশূন্য ধূ ধূ প্রান্তর ৷ মনে হতে লাগল প্রকৃতির যে সুর সেটাই শুধু একলা বসে শুনি ৷জীবনে যদি কিছু পাওয়ার থাকে সেটাএই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ৷
২০১৯ এর অক্টোবর মাসে পুজোর ছুটিতে 14 দিনের লাহুল স্পিতি বেড়ানোর গল্প নিয়ে আমার প্রথম নিবেদন।
(চন্ডিগড় - সিমলা - কুফরি - ফাগু - সারাহান - সাংলা - ছিটকুল - কল্পা - খাব - হাংরাং ভ্যালি ও পু ব্লক - নাকো - টাবো - ধানকার - পিন ভ্যালি - কাজা - হিক্কিম - লাঞ্জা - কোমিক - চিচাম ব্রিজ - কিয়াটো - লোসার - কুঞ্জুম পাস - রোটাং পাস - মানালি) হিক্কিম ধুসর পাহাড়িয়া রাস্তার বাঁক বেয়ে , হিমেল হাওয়া মেখে, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস থেকে রং বেরং এর পিকচার পোস্ট কার্ডে মনের কথা আর ভালোলাগার অনুভূতি প্রকাশ করতে চান? এর জন্য আপনাকে কিন্তু বিদেশ ভ্রমণ করতে হবে না। ভারতবর্ষের হিমাচল প্রদেশের লাহুল স্পিতি জেলার হিক্কিম গ্রামেই রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস। ৪৪৪০ মিটার উচ্চতায়। কাজা থেকেই সেরে নেওয়া যায় এই ভ্রমণ। হিক্কিম উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের লাহুল ও স্পিতি জেলার একটি গ্রাম। হিক্কিম, কাজার নিকটে অবস্থিত। ৪৪০০মিটার উচ্চতায় সারা বছর মানুষজন বসবাস করেন, ভারতের এমন জনবসতির অন্যতম গ্রাম হিক্কিম। গিরিবর্ত্মগুলিতে অত্যধিক তুষারপাতের কারণ হিক্কিম বছরের অর্ধেক সময়, অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। স্থানীয় মানুষ ঘর বানানোর জন্য পাথর প্রচুর ব্যবহার করেন। তাংগিউদ গুম্ফা বৌদ্ধবিহার এখান থেকে কাছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ ভোটদান কেন্দ্র হিক্কিম । এটি লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে ও নথীবদ্ধ আছে। হিক্কিমের ডাকঘর বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত ডাকঘর। পিন কোড ১৭২১১৪।
রিনচেন শেরিং- হিক্কিম গ্রামের এই ডাকঘর টিকে ভারতীয় ডাক বিভাগের স্থায়ী কর্মী হিসাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই ১৯৮৪ সাল থেকে। তুষারপাত, তুষার ঝড় সহ নানা প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করে। মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের সংযোগ ছাড়াই আজও সমানতালে চালু এই ডাকঘর। হিক্কিম গ্রামে শেরিং এর ছোট্ট বাড়িটি কেই ভারতীয় ডাক বিভাগ স্থায়ী পোস্ট অফিস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
যেখান থেকে পরিচালিত হয় ডাকবিভাগের সমস্ত কাজকর্মও। এখান থেকেই মিলে যায় কোমিক মনাস্ট্রির নামে প্রেরিত মঙ্কদের পাসপোর্ট। স্থানীয় কৃষকদের গচ্ছিত টাকাপয়সাও জমে এই ডাকঘরে। এই মুহূর্তে পাহারঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যকে সঙ্গী করে স্পিতি উপত্যকার বুকে রমরমিয়ে চলছে বিশ্বের সর্বোচ্চ ডাকঘর। তাই বিশ্বের সমস্ত পর্যটকদের কাছে স্পিতি ভ্যালির এই সর্বোচ্চ ডাকঘরটি এক অনন্য আকর্ষণ। সুতরাং প্রিয়জনকে মনের কথা লিখে, পিকচার পোস্টকার্ডে ভাসিয়ে দেবার জন্য হিক্কিম পোস্ট অফিসে আপনাকে স্বাগত। একাই চালান এই পোস্টঅফিস। তার সঙ্গে দেখা হয়নি আমাদের। কারণ তিনি তখন কাজায় গেছিলেন পোস্টাল ষ্ট্যাম্প আনতে। তাই বাধ্য হয়ে পাশের এক মহিলার কাছে আমাদের বাড়ির ঠিকানা লেখা পোস্ট কার্ড গুলি রেখে আসলাম পোস্টাল টিকিটের দাম সহ। পোস্টকার্ডের দাম ছিল 30 টাকা আর পোস্টাল স্ট্যাম্পের দাম 6 টাকা মোট 36 টাকা খরচ করে আমরা সবাই নিজের নিজের বাড়ির ঠিকানায় চিঠি পোস্ট করেছিলাম। জানিনা সেই চিঠি আদেও আমাদের বাড়িতে এসে পৌঁছাবে কিনা? কারণ আমরা শুনেছিলাম যে এই চিঠি অধিকাংশই নাকি হারিয়ে যায়। তবুও অনেক আশা নিয়ে আমরা এই চিঠি পোস্ট করেছি। চিঠি, হিক্কিম থেকে পায়ে হাঁটা পথে যায় কাজা; সেখান থেকে রেকং-পিও হয়ে সিমলা। সিমলা থেকে ট্রেনে কালকা, সেখান থেকে বাসে দিল্লি। তারপর সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে চিঠিপত্র। আশাকরি এই একই পথে আমাদের বাড়িতেও এসে পৌঁছবে বিশ্বের উচ্চতম পোস্ট অফিসের স্টাম্প লাগানো রঙিন পোস্টকার্ডের সেই চিঠি। আমাদের গ্রুপের দুজন মেম্বারের ঠিকানায় সেই চিঠি এসে পৌঁছালে ও আজ পর্যন্ত বাকী সদস্যরা আশা করে আছি যে এই বুঝি আমাদের বাড়ীতে ও চিঠি আসব। কিন্তু "আশায় মরে চাষার" মতোই আমাদের হাল।
দেবভূমি হিমাচল প্রদেশের সিমলা কুফরি ট্যুর গাইড
হিমাচল প্রদেশে তিনটে সার্কিট - সিমলা কুলু মানালী কিংবা সিমলা সারাহান কলপা কিন্নর অথবা চাম্বা খাজিয়ার ডালহৌসি যে রুটেই যাওয়া হোক না কেনো সিমলা আপনাকে আসতেই হবে । (তবে তৃতীয় সার্কিট চাম্বা খাজিয়ার ডালহৌসি পাঠানকোট দিয়েও যাওয়া যায়) । সিমলা সত্যিই দেবভূমি । দার্জিলিং, শিলং, গাংটকের মতো সিমলা বাঙালির এক প্রিয় রোমান্টিক শৈল শহর । সিমলা ম্যাল রোডে কালী বাড়ী দর্শন না করলে বাঙালীর হিমাচল দর্শনই অসম্পূর্ণই রয়ে যায় । আজ আলোচনা করি দেবভূমি সিমলা এবং তারসাথে কুফরী ফাগু নিয়ে । সিমলা কালী মন্দিরের ডানদিকে মঙ্গলচন্ডী, বামে শ্যামলা মা । এই শ্যামলা কালী মা থেকেই শহরের নাম সিমলা । কিভাবে যাবেন : ----------------------- কলকাতা বা দিল্লি বা যেকোনো জায়গা থেকে কালকা, চন্ডীগড়, আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে গাড়ীতে কমবেশী ঘন্টা তিনেকের জার্নিতে পৌঁছে যাবেন সিমলা । যারা কালকা স্টেশনে নেমে সিমলা যাবেন তারা কালকা সিমলা হেরিটেজ টয় ট্রেন চড়ে বিভিন্ন টানেল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে যেতে পারেন । শিবালিক টয় ট্রেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য । এই ট্রেনের টিকেট পাওয়া বিশাল চাহিদার । এই ট্রেন ছাড়াও আরো অনেক টয় ট্রেন কালকা স্টেশন থেকে আছে । এছাড়া দিল্লি থেকে ভলভো এসি বাসে ঘন্টা দশেকের যাত্রাতেও সিমলা সরাসরি পৌঁছানো যায় । সিমলা তে কি কি দেখবেন : ----------------------------------- যেদিন ট্রেন থেকে নেমে গাড়ী বা টয় ট্রেনে সিমলা পৌঁছাবেন সেদিন বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাবে । ওইদিন সিমলা ম্যাল রোড ঘুরে দেখার জন্য রেখে দিন । ওইদিন ছাড়াও মিনিমাম আরো দুদিন দরকার পুরো সিমলা এবং তারপাশের চেল, নালদেহরা, কুফরী, ফাগু ঘুরে দেখার জন্য । সিমলা শহরে যে গুলো প্রথমেই দেখবেন সেগুলো আলোচনা করা যাক : ১) সিমলা ম্যাল রোড, সিমলা কালী বাড়ী, ক্রাইস্ট চার্চ : সিমলা একমাত্র শৈল শহর যেখানে পাহাড়ের উপরে উঠতে লিফট সিস্টেম আছে । একদিকে সিমলা কালী বাড়ী আর অন্যদিকে ক্রাইস্ট চার্চ । চার্চের দিকেই লিফট । মাঝখানে পুরো এরিয়া তাই হলো সিমলা ম্যাল রোড । যেকোনো একদিক দিয়ে প্রবেশ করুন । এক এক করে পায়ে হেঁটে দেখে নিন সিমলা কালী বাড়ী, ম্যাল রোড, চার্চ । মার্কেটিং করতে পারেন । তবে সিমলায় দাম তুলনামূলক বেশী । মনে রাখবেন, সিমলা ম্যাল রোডে কোনো গাড়ী চলে না । ২) জাখু মন্দির : সিমলা ম্যাল থেকে রোপওয়ে (প্রতিজন ভাড়া আপ ডাউন ২৫০ টাকা) করে পৌঁছে যান সিমলা শহরের সবচেয়ে উঁচু জায়গা জাখু মন্দিরে । রোপওয়ে করে না গিয়ে নিজেদের গাড়ী ভাড়া থাকলে সেই গাড়িতেই জাখু মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন । এটি একটি হনুমান মন্দির । বিশাল হনুমান মূর্তি আছে । জীবন্ত হনুমান থেকে সাবধান থাকবে । ওরা মানুষের চশমা সানগ্লাস দেখলেই আক্রমন করে চশমা সানগ্লাস খুলে নেয় । জাখু মন্দির ম্যাল থেকে ৩ কিমি দূরে, ৮০০০ ফুট উপরে অবস্থিত । এটাই সিমলার সবচেয়ে উঁচু স্থান । অপরূপ সিমলার ভিউ পাওয়া যায় । ৩) হেরিটেজ আর্মি মিউজিয়াম এবং সিমলা গল্ফ কোর্স : সিমলার অন্যতম সুন্দর সাইটসিন স্পট হলো আর্মি মিউজিয়াম । ভারত পাকিস্থান কিম্বা ভারত চিন যুদ্ধের অনেক তথ্য, সেনাবাহিনীর দ্রষ্টব্য জিনিস এই মিউজিয়ামে আছে । অনেক বড় এই মিউজিয়াম ভালো ভাবে দেখতে ঘন্টা দুয়েক সময় নেবেই । আর্মি মিউজিয়ামের পাশেই আছে সিমলা গল্ফ কোর্স । এটাও ঘুরে দেখা যায় । ৪) ভাইসরয় লজ বা সিমলা রাষ্ট্রপতি নিবাস: সিমলা ম্যাল থেকে ৪ কিমি দূরে অবজারভেটরি হিলে অবস্থিত ভাইসরয় লজ বা সিমলা রাষ্ট্রপতি নিবাস । ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন গরমকালে থাকতে এটি নির্মাণ করে । ভারত ভাগের চুক্তি (সিমলা চুক্তি) এইখানেই হয়েছিলো । এখন এটি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউশন অফ এডভান্স স্টাডিজ সেন্টার এবং সিমলায় রাষ্ট্রপতি নিবাস । বিশাল গার্ডেনের মাঝে এই বিল্ডিং টা । ভাইসরয় লজের পাশেই সিমলা হিমালয়ান বার্ড পার্ক । এটাও ঘুরে নেওয়া যায় ।
৫) চেল রাজপ্রাসাদ
আমরা যারা থ্রী ইডিয়টস সিনেমা দেখেছি তারা চেল রাজপ্রাসাদ দেখেনিয়েছি । এটি বর্তমানে হিমাচল ট্যুরিজমের হোটেল । পাঞ্জাবের রাজা ভূপিন্দর সিং এই রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন । সিমলা থেকে ৪৫ কিমি দূরে সাল, পাইন, দেবদারু, ওক গাছের মনোরম পরিবেশে এই চেল রাজপ্রাসাদ । সিমলা ভ্রমণে চেল রাজ প্রাসাদ অবশ্যই দর্শনীয় স্পট । প্রতিজনের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা । ৬) কুফরী ফাগু : চেল থেকে ২৬ কিমি এবং সিমলা থেকে ১৬ কিমি দূরে অপরূপ জায়গা কুফরী । এটি সিমলা থেকে অনেক উঁচু জায়গা । শীতকালে এখানে তুষারপাত হয় । স্কি খেলার আসর বসে । গরমের সময় একটু শিলাবৃষ্টি হলেই বরফের মতো জমে যায় কুফরী । কুফরী থেকে আরো ৬ কিমি হলো ফাগু । দুটো জায়গায় ভ্যালির ভিউ, আপেল বাগান ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত । কুফরী তে ফান জোন বা ফান পার্ক ট্যুরিস্টদের কাছে খুব আকর্ষণীয় । এডভেঞ্চারস এবং আমাউসমেন্ট দুইরকম স্পোর্টস এই পার্ক গুলো তে আছে । টিকিট মূল্য ৭০০ টাকা করে । দুটোয় খেললে ১০০০ টাকা প্রতিজন । পার্কের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। এটি কুফরী ভ্রমণের অন্যতম জনপ্রিয় স্পট । কুফরী থেকে ঘোড়ায় চড়ে চার কিমি উপরে ভ্যালি এবং ফাগু যাওয়া যায় । ঘোড়ার ভাড়া প্রতিজন ৫০০ টাকা । এছাড়া কুফরী তে মিনি জু, গ্রীন ভ্যালি, নেচার পার্ক আছে । সেগুলো ঘুরে দেখা যায় । ৭) নালদেহরা : হাতে সময় থাকলে সিমলা থেকে গাড়িতে ঘুরে আসতে পারেন গল্ফ কোর্স, ভ্যালি, পাহাড়ী ভিউ এলাকা নালদেহরা । ২/৩ রাত সিমলায় কাটানোর পর এবার বেরিয়ে পড়ুন কুলু, মান্ডি হয়ে মানালী পথে অথবা নারকান্দা, সাহারান হয়ে কলপা, কিন্নর । হোটেল : --------- সিমলা শহরে থাকার হোটেলের অভাব নেই । তবে পিক সিজনে হোটেলের বিশাল ডিমান্ড । এপ্রিল মে মাস পিক টাইম । ওদিকে পূজার সময় অক্টোবর মাসেও ভালো ভিড় হয় । এইসময় হোটেল বুক করেই আসা ভালো । মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড হোটেল ভাড়া ১৫০০ টাকা । বাকি সময় অফ টাইমে অনেক কম ভাড়ায় স্পট বুকিংয়ে হোটেল পাওয়া যায় । গুগল ওয়েবসাইট সার্চ করলেই হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইট এড্ড্রেস পাওয়া যাবে । এছাড়া অনেক হলিডে হোম ও আছে । উদাহরণ স্বরূপ এলাহাবাদ ব্যাংক কর্মচারী সংগঠনের হলিডে হোম হোটেল পঙ্কজ নাম করা যায় । হোটেল পঙ্কজ নিজেও হোটেল ভাড়া দিয়ে থাকে । (এটি শুধুমাত্র উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করলাম) আর একটি কথা উল্লেখ করা যায় গাড়ীর ব্যাপারে । হিমাচল প্রদেশ যে সার্কিটেই ট্রিপ করা হোক না কেনো ৭/১০ দিন পুরো ট্রিপের জন্য স্টেশন থেকে স্টেশন গাড়ী বুক করে নেওয়া ভালো । দিন প্রতি ৩০০০-৩৩০০ টাকা হিসাবে গাড়ি ভাড়া পাবেন বর্তমান রেটে ।
রেকংপিও থেকে কল্পা আসার পথে গাছপালা ও বাড়ি ঘরের ফাঁক ফোকর দিয়ে দেখা যায় কিন্নর কৈলাস, কল্পায় এসে ধরা দেয় একদম হাতের মুঠোয়।বরফে মোড়া পাহাড়ের সারি অন্যদিকে চোখ সরাতে দেয় না, চারপাশের তুষার মোড়া পর্বত শৃঙ্গের মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছয় হাজার পঞ্চাশ মিটারের কিন্নর কৈলাস শৃঙ্গ।
হিমালয়ের গভীরে বেশ কয়েকটি কৈলাস রয়েছে। তারমধ্যে তিব্বতের মানস সরোবরের উপরে যে কৈলাস রয়েছে - তার নামডাক ও খ্যা তি সর্বাধিক। তবে সেটা তো আমরা হাত বাড়ালেই পাইনা তাই ভারতে স্হিত ত্রি কৈলাস কে নিয়ে আমরা বেশির ভাগ সন্তুষ্ট থাকি। ভারতে স্হিত ত্রি কৈলাস হলো - মনি কৈলাস, মিনি কৈলাস ও কিন্নর কৈলাস। এদের মধ্যে কিন্নর কৈলাস সব থেকে জনপ্রিয়। কিন্নর কৈলাস পর্বত শ্রেণীর নামটিও সুন্দর - রুলডুং ( Ruldung) পর্বত শ্রেনী। কথিত আছে আঠেরো হাজার ফুট উচ্চতা সন্পন্ন কিন্নর কৈলাসের পাহাড় চূড়ায় প্রহ্লাদ পৌত্র বলিমহারাজের জ্যে ষ্টপুত্র বানাসুর দীর্ঘ তপস্যার পর এই পাহাড়ের উপর মহাদেবের সাক্ষাৎ পান। তিনি এরপর সেই স্মৃতিকে অম্লান রাখতে কৈলাসের শিখরে একটি ৭৩ ফুট উচ্চতা সন্পন্ন বিশালাকার শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করে পূজা সমাপন করেন। চারপাশে তুষার মোড়া পর্বত শৃঙ্গের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে কিন্নর কৈলাসের শৃঙ্গের ডানদিকে খানিকটা নীচেই বিখ্যাত শিবলিঙ্গ টি দেখা যায়। আকাশ মেঘমুক্ত থাকলে কল্পনার সমস্ত অঞ্চল থেকে দেবাদিদেব কে দেখা যায়। শিবলিঙ্গটি তে সূর্য কিরন সারা দিন বিচ্ছুরিত হয়ে নানা রঙের প্রতিফলন সৃষ্টি করে নিত্যর নতুন মায়াজাল বিস্তার করে আমাদের তার দিকে আকর্ষিত করে। মানস কৈলাসের মত কিন্নর কৈলাসকেও পরিক্রমার নিয়ম আছে।অত্যেন্ত বিপদ সঙ্কুল পথ। হিমালয়ে পরিভ্রমণে অভ্যস্ত সাধুসন্ত এবং দুঃসাহসী ট্রেকাররা এই পরিক্রমায় অংশ নেন। তবে আমরা যারা সেই পরিক্রমায় অংশ নিতে পারিনা তারা দূর থেকে তৃষিত নয়নে এবং বিস্ময়াবিষ্ট হৃদয় নিয়ে দেখি নীল আকাশের বুক চিরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন রাজাধিরাজ কৈলাস গিরি শিখর। চারিদিকে পুঞ্জীভূত মেঘের আনাগোনা। কুন্ডলীকৃত মেঘ যেন আমাদের মনের বেদিতে ডালি দেওয়া ষোড়শ উপাচারে পূজা সহ ধূপধুনার কুন্ডলীকৃত সৌগন্ধটুকু পরমেশ্বরের চরণে উৎসর্গ করছে।দেখে দেখে আশা মিটতে চায় না। সারা দিন তাকিয়ে বসে থাকি, আর সূর্য কিরনের খেলা দেখি কিন্নর কৈলাস জুড়ে।
“মায়াবী মানালি”
জঙ্গলে গিয়ে বাঘ পেলাম কিনা আর পাহাড়ে গিয়ে বরফ পেয়েছি কিনা, বেড়িয়ে এসে এই অস্বস্তিকর প্রশ্ন দুটোর সম্মুখীন হতে খুব খারাপ লাগে। বাঘ ছাড়াও শুধু জঙ্গল টাও যে উপভোগ করা যায় তা এবার ফেব্রুয়ারী মাসে নর্থ বেঙ্গল ঘুরে এসে বেশ বুঝেছি। বাঘ দেখতে পাওয়া অবশ্যই উপরি পাওনা। যাই হোক , এবারে আমাদের গন্তব্য শুধুই ‘মানালি’ আর তাকে ঘিরে কাছাকাছি দু একটা জায়গা।হ্যাঁ, বরফের লোভে মার্চ মাসটাকে ই বেছে নিয়ে ছিলাম। কোলকাতা থেকে অমৃতসর এয়ার পোর্টে পৌঁছলাম প্রায় দেড় টা নাগাদ। ওখান থেকে গাড়ী তে মানালি প্রায় বারো ঘন্টা। অহেতুক strain এড়াতে আমরা ‘মান্ডি’ তে night stay রেখেছিলাম।২৯০ কিমি পৌঁছতে প্রায় সন্ধে পেরিয়েই গেল।এই মান্ডি জায়গাটা নিয়ে দু এক কথা বলতেই হয়। পরদিন সকালে সত্যিই অবাকই হলাম। খুব ছোট্ট শহর এই ‘মান্ডি’ কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।দূরের পাহাড় গুলো সব বরফ দিয়ে ঢাকা। শান্ত, স্নিগ্ধ ছোট্ট একটা হিল স্টেশন।শুধু মান্ডি তে এসে অনায়াসে দু একদিন কাটিয়ে দেওয়া যায়।পরদিন খুব বেশীক্ষণ আর ‘মান্ডি’র সৌন্দর্য উপভোগ করা গেল না। নটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়তে হল মানালির উদ্দেশ্যে।জায়গাটা ছেডে আসার সময় একটু হলেও মন কেমন করছিল বৈকি। রাস্তা সব জায়গায় খুব ভাল না থাকায় ১১০ কিমি দূরে মানালি পৌঁছতে প্রায় ছ ঘন্টা লেগেই গেল। তবু দিনের বেলায় পাহাড়ী রাস্তায় চলতে বেশ ভালই লাগে।প্রতিটি বাঁকে বাঁকে যেন নতুন নতুন সৌন্দর্য , নতুন কিছুর আবিষ্কার। নতুন কোন অজানা অচেনা ফুল দেখতে পেয়ে তাকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে হঠাৎ নেমে গিয়ে তার বেশ কিছু ছবি তুলে ফেলা, দল বেঁধে যাওয়া কিছু স্কুল student দের সরল হাসির সাথে হাত নাড়া, এ সব কিছুর মধ্যেই এক অদ্ভুত ভাললাগা যাত্রার একঘেয়েমি কাটিয়ে দেয়।আর আছে পাশ দিয়ে সাথে সাথে চলতে থাকা ‘বিয়াস’ নদী। এক এক কোণ থেকে এক এক রকম রূপ তার।সে রূপ ক্যামেরা বন্দী করতে কার না মন চায়! কার ছবি টা বেশী ভাল সে নিয়ে তর্ক চলতেই থাকে।যত মানালির দিকে এগোচ্ছি , বরফে ঢাকা পাহাড় গুলো তত যেন হাতের কাছে চলে আসছে । অবশেষে প্রায় তিনটে নাগাদ মানালি পৌঁছে হোটেলে চেক ইন করে ব্যালকনির দরজা টা খুলতেই যে অপরূপ দৃশ্য সামনে এল তাতে যাত্রার সব ক্লান্তি এক নিমেষে কেটে গেল।দুধ সাদা বরফে ঢাকা বিশালকায় পর্বত শৃঙ্গ গুলো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে। পাঁচজনের মনের কথা তখন একই। লান্চ তো রোজই সময় মত করি, আজ না হয় এই দৃশ্যটাই আরেকটু ক্ষণ চেটেপুটে খাই। সেদিন সন্ধে টা ম্যালের মার্কেট টাই ঘুরে কাটালাম।
পরদিনের গন্তব্য ‘সোলাং ভ্যালি’।রোটাং পাসের রাস্তা বন্ধ থাকায় এখন এটাই আকর্ষণ।সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম । যত এগোচ্ছি তত বিস্মিত আর মুগ্ধ হচ্ছি । দুপাশে বরফ ঢাকা পাহাড় আর মাঝখান দিয়ে রাস্তা। মাঝে এক জায়গায় নেমে একটা দোকানে waterproof dress আর গামবুট পরে নিতে হল।নিজেকে কেমন যেন তুষার মানবের মত লাগছিল।কিছুদূর পরেই গাড়ী ছেড়ে নেমে পড়তে হল আমাদের।আমরা পাঁচজন বরফের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি খুবই সতর্ক হয়ে। একটু দাঁডিয়ে চারপাশ টা একবার চোখ ভরে দেখে নিচ্ছি, আবার হাঁটছি। কারো মুখে কথা নেই। প্রতিটি মুহুর্ত প্রাণ ভরে উপভোগ করতে করতে চলেছি। আমার ছোট্ট বন্ধুর সরল প্রশ্ন, “আচ্ছা , সুইজারল্যান্ড কি এর থেকেও সুন্দর ?” উত্তর দিতে পারিনি।অবশেষে চারিদিক বরফে ঢাকা একটা সমতল ভূমি তে এসে পড়লাম। বিভিন্ন ধরনের sports event চলছে সেখানে। paragliding এ সাহস পেলাম না। কিন্তু কিছুক্ষণ observe করার পর মনে হল ski টা চেষ্টা করাই যেতে পারে।প্রথমে adjust করতে একটু সময় লাগলো বটে, তারপর কিন্তু ব্যাপার টা বেশ মজার।তবে সমতল ভূমি বলেই এটা সম্ভব হোলো, ঢালু থাকলে risk নিতাম না। আমার ছোট্ট বন্ধু ও অনায়াসে এটা করে ফেলল।এরপর ropeway করে সবাই আরো এক ধাপ ওপরে চলে এলাম।এখানে এসে তো রীতিমতো চমৎকৃত হবার পালা।এ কোথায় এলাম! চারপাশে গাছগুলো সব সাদা, মাঝে মাঝে দু একটা সবুজ পাতা দেখা যাচ্ছে । চতুর্দিকে শুধু গুঁড়ো বরফ, পা ঢুকে যাচ্ছে । সবাই একসাথে বসে পড়লাম ।আরো বেশ কিছু ট্যুরিস্ট ওখানে আগেই চলে এসেছিল। এ কোন বরফের রাজ্যে চলে এলাম। এতো বরফ একসাথে কখনো দেখেছি বলে মনেই করতে পারছিনা।আট থেকে আশি সবাই তখন একদল শিশু তে পরিণত হয়েছে।কেউ বরফের তাল নিয়ে আরেকজন কে ছুঁড়ে মারছে, কেউ বা বরফের গোলা পাকিয়ে আকাশের দিকে ছুঁড়ে মারছে, আবার কাউকে দেখছি গ্লাভস্ সহ হাত দুটো বরফের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বসে আছে, কেউ বা বেমালুম চুপ করে শুয়ে পড়েছে । সে এক অদ্ভুত ভাললাগায় আমরা তখন আচ্ছন্ন। আমার এক বন্ধুর বাড়ীর পরিচারক একবার আমায় বলেছিল,” কি যে এতো বরফ বরফ করেন দাদা বুঝিনা বাপু, ফ্রীজ খুললেই তো কত বরফ দেখা যায়।” তাকে কি করে বোঝাই দুই বরফের তফাত ।কিছুতেই ফিরতে ইচ্ছে করছিল না ওই জায়গা ছেড়ে । কতক্ষণ যে বসেছিলাম খেয়াল নেই। হঠাৎ ই শুরু হোল snowfall আর মুহুর্তে পরিবেশ গেল পাল্টে। সবাই চিৎকার করছে আনন্দে। সবার মাথায়, মুখে, গায়ে বরফের গুঁড়ো তুলোর মত উড়তে উড়তে এসে পড়ছে । প্রকৃতির হঠাৎ এই পরিবর্তন কে তখন অবাক বিস্ময়ে উপভোগ করছি আর ভাবছি আজও এ জিনিস দেখার ভাগ্য আমার ছিল। শেষ দেখেছিলাম ছাংগু লেকে, বেশ কয়েক বছর আগে।তার ও আগে ১৯৭৯ সালে অমরনাথ যাবার সময় মহাগুনাস্টপ এ।যাইহোক কতক্ষণ যে ওখানে ছিলাম জানিনা। রোপওয়ে করে নেমে এসে বাকী পথ টা হেঁটে আবার এসে গাডীতে।হোটেলে ফিরতে ফিরতে প্রায় সন্ধে ।
পরদিন মানালির local sightseeing. হিডিম্বা মন্দির, club house, বনবিতান সবই দেখলাম বটে কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে মনের মধ্যে তখন একটাই নাম ‘সোলাং ভ্যালি’।
পরের দিন চললাম ‘পালামপুর’। মানালি থেকে চার ঘন্টার রাস্তা। বেশ জমজমাট একটা হিল স্টেশন। ওখানকার ‘হোলি উৎসব’ সম্বন্ধে কিছুটা আগে থেকেই জানা ছিল। সেদিন পৌঁছে ওখানে ‘চামুন্ডা মন্দির’ আর ‘ধৌলাধার’ নেচার পার্ক দেখে নিলাম।আর পরদিন ওখানে হোলি উৎসব টা ওদের মত করেই উপভোগ করলাম। বিশাল একটা মাঠ। সেখানে সবাই সবার মত করে আবির খেলছে। একধারে বিরাট মেলা, সেখানে live function চলছে বিশাল এক মন্চে। পান্জাবী ভাষায় গান, নাচ সবই। কোন রং এর ব্যাপার নেই, শুধুই আবির। এ ওকে আবির মাখিয়ে রঙীন করে দিচ্ছে আর নিজেও রঙীন হচ্ছে ততোধিক।কোন বিশৃঙ্খলা নেই, কোন জোর জবরদস্তি নেই, কোন মাত্রা ছাড়া ব্যাপার নেই।সবটাই আন্তরিকতা আর ভালবাসায় মাখানো। জায়গায় জায়গায় লঙ্গরখানা, কোথাও হালুয়া, কোথাও লস্যি , কোথাও খিচুড়ি বিতরণ চলছে।ওদের এই কালচার কে খুব সম্মান করতে ইচ্ছে হল। বেশ কিছুক্ষণ ওখানে কাটিয়ে অবশেষে হোটেলে ফেরা।
পরদিন ওখান থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে সোজা চন্ডীগড় । প্রায় বিকেল হয়ে গেল পৌঁছতে । ওখানে ‘রক গার্ডেন’ টা দেখলাম। বেশ নতুনত্ব লাগলো পুরো পরিকল্পনা টাতে।চন্ডীগড়ে থাকা টা শুধু মাত্র পরদিন সকালের ফ্লাইট টা ধরবো বলে। পরদিন যথাসময়ে উড়ান ধরে সোজা কোলকাতা । দু থেকে আড়াই ঘন্টার journey, conveyer belt এ luggage এর জন্য অপেক্ষা করা, গাড়ী করে জ্যাম পেরিয়ে বাড়ী ফেরা, কোন কিছুই আর মনের মধ্যে অস্থিরতা তৈরী করছে না একেবারেই কারণ তখন মনের সবটা যে দখল করে ফেলেছে একটাই ছবি ‘সোলাং ভ্যালি’। হ্যাঁ এবার ফিরে গিয়ে কোন প্রশ্ন কেই আর অস্বস্তিকর মনে হবে না। পরিশেষে, অভিজ্ঞতা থেকে দু একটা জরুরী উপদেশ। ১) মানালির পক্ষে মার্চ মাস টাই বোধহয় উপযুক্ত সময়। ২)অনলাইনে গাড়ী fix না করে গাড়ী টা দেখে নিয়ে বুক করাই ভাল, বিশেষ করে টায়ার এর condition , চলতি ভাষায় যাকে বলে গুটি। ৩)ড্রাইভার খুব অল্প বয়সী ছেলে ছোকরা না হওয়াই বান্ছনীয়। ৪)সিমলা, কুলু, মানালি র তথাকথিত tour plan থাকলে আলাদা কথা, অন্যথায় হোলি উৎসব না থাকলে পালামপুরের থেকে ‘মান্ডি’ দু একদিন কাটানোর পক্ষে আদর্শ জায়গা। ৫)পাহাড়ে রাতের journey খুব boring. সময় বেশী লাগলেও দিনের বেলার journey সবসময় exciting. ৬)সোলাং ভ্যালি তে যাবার সময় waterproof পোশাক আর গামবুট একটু ভাল standard এর দোকান থেকেই নেওয়া উচিত কারণ তা না হলে ভেতরের পোশাক পুরো ভিজে যেতে পারে। ৭)পাহাড়ে খাওয়া দাওয়া টা একটু simple রাখাই ভাল।
এবার পূজোর পর গেছিলাম হিমাচল প্রদেশ,দুরাত ট্রেনের পর গাড়িতে সিমলা পৌঁছলাম,সিমলায় এক রাত ,সারাহানে একরাত,সাংলা একরাত,ছিটকুল একরাত,ও কল্পা দুরাত , রামপুর একরাত ,এইছিল আমাদের বেড়ানোর(রাত কাটানোর) থাকার জায়গা,
কিছু ছবি আমার পছন্দের যা আপনাদের জন্য দিলামা হয়তো আপনাদের ভালো লাগতে পারে, **************************** ট্রেনে চলে যান কালকা ,চন্ডিগড়, বা আম্বালা , আমরা আম্বালা থেকে সিমলা গেছিলাম 120 কিঃমিঃ 5-6 ঘন্ঠা,একরাত সিমলা ,পরের দিন জলখাবার খেয়ে কুফরি দেখে সারাহান গেলাম , সিমলা থেকে সারাহান 175 কিঃমিঃ সাত ঘন্টার একটু বেশি,পরের দিন সারাহানে ভিমকালি মন্দির দেখে দুপুরে খাবার খেয়ে বের হলাম সাংলার পথে ,সংলা 95কিঃমিঃ প্রায় পাঁচ ঘন্টা, অনেকেই সাংলা থেকে ছিটকুল দেখে আসেন ,(আমরা ছিটকুলে একরাত ছিলাম)আমরা পরের দিন সাংলা থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে চললাম ছিটকুল ,দুঘন্টা মত সময় লাগল,(ছিটকুলে সবাইকে থাকার অনুরোধ করবো,না থাকলে ছিটকুলকে উপভোগ করতে পারবেন না ),পরের দিন সকালটা ছিটকুলেই কাটালাম ,ঘুরে দেখলাম সেখানকার গ্ৰাম ,এক কথায় অসাধারন ছিটকুল , ছিটকুল থেকে এবার যাব কল্পা,কল্পার 75 কিঃমিঃ 3 ঘন্টার একটু বেশি সময় লাগলো, কল্লায় দুরাত থাকবো তাই বিকালটা হটেলের বাইরে বসেই কাটালাম ,পরের দিন সকালে গেলাম নারয়ন মন্দির ও সুসাইট পয়েন্ট দেখে হটেলে আসার পর হটেলের পেছনে আপেল বাগানে ,যদিও বাগনে প্রবেশ করা নিষেধ ,পথেই কত আপেল পড়ে আছে যা আমরা কুড়িয়ে নিলাম কযেকটা, সন্ধ্যা থেকেই শুরুহল বৃষ্টি ম্যানেজর দাদা বললো রাতেই বরফ পড়বে,(Snow Fall) ,শুনে খুব ভালো লাগলো ,সত্যিই রাত তিনটে থেকে বরফ পড়া শুরু হলো ( দাদর কথা অনুযাই ), ভোর পাঁচটায় জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই চারিদিক সাদা বরফে মোড়া পেলাম ,আর কি ঘরে থাকা যায় ,সবাই মিলে বের হলাম বাইরে ,মেতে গেলাম বরফ নিয়ে খেলা ,তবে বেশি সময় পারলাম না ,কারন প্রচন্ড ঠান্ডা , আজ নিচে নামবো ,থাকবো রামপুরে 140 কিঃমিঃ ,সাত ঘন্টা লাগলো ,রামপুররে রাত কাটিয়ে পরের দিন 240 কিঃমিঃ এসে আম্বালা থেকে ট্রেন ধরে বাড়ির পথে, হিমাচল মন ভরিয়ে দিয়েছে , আপনাদের ও মন ভরিয়ে দেবে , (শেষে একটা ভিডিও আছে দেখুন ভালো লাগবে,) ছবির পাশে কোনটা কোথায় জায়গার নাম লেখা আছে,
জাকু হিলস - সিমলা
সিমলার সর্ব্বোচ্চ পাহাড় চূড়া জাকুহিলস। এই পাহাড়েই শ্যামলাদেবী (সিমলা কালী) আবিস্কৃত হয়েছিলেন। এই পাহাড় এর গল্প আমরা রামায়নে পেয়ে থাকি। রামায়নের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে যখন লক্ষ্মন আহত হয়েছিলেন তখন লঙ্কার বৈদ্য সুসেন মৃতসন্জীবনী আনার কথা বলেছিলেন। হনুমান তখন হিমালয়ে আসেন মৃত্যসন্জীবনী খুঁজতে। কোনটি সঠিক বুঝতে না পেরে তিনি গন্ধমাদন পর্বত তুলে লঙ্কার পথে যাত্রা করেন। সেই গন্ধমাদন পর্বত নিয়ে আকাশ পথে যাওয়ার সময় ক্লান্ত হনুমান এই জাকুপাহাড়ে ক্ষনিকের বিশ্রাম নেন। এখানে তাই হনুমানের পায়ের ছাপ ও রয়েছে। সেই স্মৃতিকে জাগ্ৰত রাখতে জাকুহিলসের চূড়ায় সুন্দর একটি মন্দিরের নির্মান করা হয়। সাথে বর্তমানে স্হাপিত করা হয়েছে সঙ্কটমোচনের ৩৩ মিটার উঁচু একটি বিশাল মূর্তি। যা সিমলার যেকোনো প্রান্ত থেকেই দেখা যায়। এই এলাকার শাখা মৃগেরা জানে যে এটা তাদের পূর্ব পুরুষের প্রতি শ্রদ্ধায় এই মন্দির। যার জন্য এই এলাকাটি পুরোপুরি তাদের দখলে। সঙ্কটমোচনের এখানে তাই এনারা পর্যাটকদের জন্য একটি সঙ্কট তৈরি করে রেখেছেন। এখানে এসে তাই খুব সাবধানে না থাকলে যে কোন সময় যেকোনো জিনিস তাদের হস্তাগত হতে পারে। মন্দিরে বাইরে একটি ঘন্টা লাগানো আছে। ভক্তদের মতে এই ঘন্টি বাজালে পরবর্তী সময় ভালো কাটে। জাকু পাহাড় চারপাশের শ্বেতশুভ্র বরফে সূর্য এর চিকমিকানি হাসি নয়নাভিরাম। এখানে থেকে সূর্যাস্ত রমনীয়। সিমলার শহরো সুন্দর দৃশ্যমান জাকু পাহাড় থেকে।
Ei group e eta Amar prothom post. Koek din age ghure Elam Manali-Kullu theke. 20th Oct Burdwan theke rat r Kalka mail dhore Delhi pouchalam. 22nd Oct Delhi theke Volvo dhore rouna holam Manali r uddesse. 23rd Sokal e Manali pouchalam. Hotel e pouche fresh hoe e berie porlam Local sightseeing r jonno.
Day 1- 1st e Hirimba Temple tarpor Van Bihar natural park hoe last e Local market ghure rat e hotel e fire Elam. Day 2- Sokal e Rohtang pass.. osadharon jaiga jeno mone hochhilo puro borof r desh e chole esechi.. onek khon borof e somoi katanor por okhan theke Solang valley te pouchalam. 1st time mountain bike e chapar experience holo... Darin thrilling experience... Sondhe Bela hotel e fire ese night stay.. Day 3- Kullu Nagar e Veshno Temple, art gallery, ei gulo dakhar por Manali ferar pothe Vashisth Temple dekhe hotel e firlam... Day 4- Sokal theke R beroi ni kotho.. hotel r as pas ta ektu dekhe Bikal e 5 tai Abar Volvo dhore fire Elam Delhi r uddesse... 2 din Delhi te theke Lotus temple dekhe 29th e Poorva exp dhore Bari fire Elam.. Post e Kichu vul truti thakle khoma korben
কিন্নরের পথে পথে কল্পা সাংলা ছিটকুল
দ্বিতীয় পর্ব :- আগের পর্বে শেষ করেছিলাম সারাহানের সূর্য উদয় পর্যন্ত। তারপর আমরা কল্পার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবার প্রস্তুতি সুরু করলাম। হোটেল শ্রীখন্ডের ম্যানেজার এর সহায়তায় একটি মারুতি জেন গাড়ি ২২০০ টাকার বিনিময়ে আমাদের কল্পা পৌঁছানোর জন্য ঠিক করা হল। সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার , ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ও তৎসহ হিমেল হাওয়ায় জুনের প্রথম সপ্তাহেও কাঁপূনি ধরিয়ে দিচ্ছিল। কোনক্রমে স্নান ও প্রাতরাশ সেরে মা ভীমাকালির চরনে প্রনাম করে উঠে বসলাম গাড়িতে। গাড়ি সারাহান থেকে জেওরি নামল অতীব খারাপ প্রায় কাঁচা একটি রাস্তা দিয়ে।কারন প্রধান রাস্তা সতদ্রুর উপর নির্মীয়মান অর্ধসমাপ্ত সেতুর জন্য বন্ধ।রাস্তার দুই পাশে আপেল বাগানের মধ্যে দিয়ে অবতরণ করে যখন NH 5 এ পৌঁছল আমাদের গাড়ি তখন সূর্যদেব আবার সমহীমায় উজ্জ্বল হয়ে উঠল। গাড়ি ছুটে চললো পাহাড়ের বুক চিরে তৈরি করা মসৃণ রাজপথ ধরে,আর সঙ্গে চললো খরস্রোতা শতদ্রু কয়েকশো ফুট নিচে গভীর গিরিখাতের মধ্যে দিয়ে। চতুর্দিকের অতীব সুন্দর পরিবেশ মনের মধ্যে এক অনাবিল আনন্দের সৃষ্টি করছিল। দূরে তুষার শুভ্র কিন্নর কৈলাস এর চূড়ায় মেঘ রোদ্দুর এর খেলা প্রত্যক্ষ করতে করতে পৌঁছে গেলাম কারচম। এখানেই শতদ্রু ও বসপা নদীর মিলনস্থলে তৈরী এক বিশাল নদী বাঁধ । অতীব সুন্দর সেই স্থানকে ডান দিকে রেখে আমরা এগিয়ে চলেছি কল্পার দিকে। খুব শীঘ্রই পৌঁছে গেলাম রেকংপিও যা কিন্নরের জেলা সদর। এখানেই ড্রাইভারের কথা মত ATM থেকে প্রয়োজনমত টাকা তুলে নিতে হলো কারন ওপরে কল্পাতে ATM থাকলেও টাকা নাও থাকতে পারে। ধীরে ধীরে আমাদের গাড়ি যত আর ও উপরে উঠতে লাগল ততই পরিস্কার হতে লাগলো তুষার শুভ্র কিন্নর কৈলাস। পৌঁছে গেলাম আমাদের ঠিকানা HPTDC HOTEL KINNAUR KAILASH. অনবদ্য অসাধারণ অসামান্য ইত্যাদি কোন বিশেষন ই উপযুক্ত নয় এই স্থানের সৌন্দর্যের বর্ণনায়। সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত হোটেল এর ঘর সত্যিই প্রশংসনীয়। ভাড়া ও খুব বেশি নয় , সমস্ত রকম কর সমেত ২৭৫০ টাকা/দিন (৩ বেড) । যাইহোক বৈকালিক চা স্নাকস্ শেষ করতেই হোটেল এর ঠিক উল্টো দিকে বরফাবৃত কিন্নর কৈলাস রেঞ্জ এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জোরকানডেন (৬৪৭৩ মিটার) , ঠিক পাশেই কিন্নর কৈলাস (৬০৫০ মিটার) বা সুউচ্চ রালডাং চূড়ায় তখন শুরু হয়েছে সূর্যাস্তের রক্তিম আলোর খেলা , স্বগতোক্তি নবকুমার এর মতো "আহা যাহা দেখিলাম তারে জন্মজন্মান্তরে ভুলিবার নয়"।আর সত্যি ই এত কাছ থেকে এত সুউচ্চ শৃঙ্গ দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের আগে হয় নি। এরপর ধীরে ধীরে সম্পুর্ন অন্ধকার গ্ৰাস করল আর চন্দ্রালোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল চতুর্দিক , সৃষ্টি করল এক অপার্থিব সৌন্দর্যের। আজ এই পর্যন্তই থাক। To be continued...
Post By:- Avijit Chowdhuri
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |