২ বছর ধরে কত প্ল্যান যে কারনে, আজ তার সামনে বসে আছি। বাবা তুঙ্গনাথ এর সামনে।।
আচ্ছা শুরু থেকেই শুরু করা যাক । আমাদের ট্রেক গ্রুপ " Argonaut "এর সব সদস্য মিলে ঠিক করা হয়েছিল এবার যাবো "তৃতীয় কেদার বাবা তুঙ্গনাথ" এর কাছে।।।। সেই অনুযায়ী সময় মতো টিকিট হোটেল বুকিং সব করা হলো।। অবশেষে এলো ৪ঠা মে , যাত্রা শুরু এবং ৪ ঘন্টা ৪৫ মিনিট দেরি তে হরিদ্বার পৌঁছানো গেল ৬ ই মে।।। হরিদ্বার এ 2 দিন কাটিয়ে শরীরটাকে সইয়ে নেওয়া গেল আবহাওয়ার সাথে, তারপর ৮ই মে ভোর ভোর শুরু হলো আমাদের ট্রেকিং শুরু করার পয়েন্ট , " সারি গ্রাম "এর উদ্দেশ্যে যাত্রা।।।।। দীর্ঘ্য ৯ ঘন্টা শরীরের এর সব হাড় এর জায়গা পরিবর্তন ও অবশেষে বিকেল ৩ তায় সারি তে পৌঁছানো ।।। কিন্তু এখন ও যে আমাদের বিশ্রাম নেওয়ার সময় আসেনি, কারণ মুখে কিছু দিয়েই বেরিয়ে পড়তে হবে দেওরিয়া তাল এর উদ্দেশ্যে।। যা কিনা সারি থেকে ২.৫ কিমি ট্রেক করে পৌঁছতে হয়।।। দেওরিয়া তাল নাম হওয়ার কারণ এখানে নাকি দেবতারা স্নান করতে আসতেন।।।।। যাই হোক চারিদিকে রোডোডেনড্রোন এর শোভা দেখতে দেখতে ট্রেক শুরু হলো , ১ কিমি যাওয়ার পর পড়লো বাবা ওমকারেশ্বের এর মন্দির।।।।। সেখানে কিছু সময় কাটিয়ে আবার পথ চলা।।।। চরাই এর কষ্ট সামলে যখন শেষ একটা বাঁক নিলাম , মনে হলো এ সত্যি ই বুঝি দেবতাদের স্নানভূমি।। সামনে বিশাল সবুজ উপত্যকার মাঝে সবুজ টলটলে জল এ ভরা দেওরিয়া তাল, যার মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে শ্বেত শুভ্র " চৌখাম্বা "।।। চারিদিকে কত জানা অজানা পাখির কুজন।।।।। নিমেষে পৌঁছে গেলাম সব মানসিক চিন্তা ভাবনার উর্ধে।।।। আজ রাত টা আমরা তাঁবু তেই কাটাব।।ভিউ পয়েন্ট এ বসে সূর্যাস্ত উপভোগ করা জীবনের এক সেরা প্রাপ্তি।।।। এদিকে ঠান্ডা ও বাড়ছে।।। মুঠোফোনে দেখাচ্ছে তাপমাত্রা ৭ এ নেমেছে, যেটা কিনা রাতে আরো নামার চোখ রাঙানি দেখাচ্ছে।। তাড়াতাড়ি তাবু তে ফিরে গরম গরম রুটি দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে কম্বল এর নিচে সেটিয়ে যাওয়া। কারণ ভোর বেলায় যে সূর্যোদয় দেখতে ৫ টায় উঠতে হবে।।। অপূর্ব সূর্যোদয় দিয়ে দিনের শুরু করলাম পর দিন।।।। কিন্তু হাত এ যে কোনো সময় নেই তাড়াতাড়ি প্রাতঃ রাশ সেরে ১৪ কিমি ট্রেক করে পৌঁছতে হবে চোপতা , যা কিনা এশিয়ার " মিনি সুইটজারল্যান্ড " নাম এ পরিচিত।।। দীর্ঘ রাস্তা চরাই উৎরাই করে অবশেষে পৌঁছানো গেল " রোহিনী বুগিয়াল "।।।। আরো কিছু ট্রেক করে প্রায় ১০ ঘন্টা পর পৌঁছানো গেল চোপতা।। পৌঁছেই " জটায়ুর সেই উক্তি " মনে পড়ে গেলো " এ কোথায় এলাম মশাই , এ কোথায় এলাম "।। হোম স্টের বারান্দা থেকে সামনে তাকালেই হিমালয়ের বরফ ঢাকা সব বিখ্যাত শৃঙ্গ - কেদারনাথ, কেদার ডোম , নন্দা দেবী , নন্দা ঘুনটি আর পুরো যাত্রায় আমাদের সঙ্গ দেওয়া চৌখাম্বা।।।।।। আজ কের রাত তা চোপতাতেই কাটাব।।।। আসল ব্যাপারটাই বলা হয়নি এখনো।।। আমরা তুঙ্গনাথ ওঠার দিন ঠিক করেছিলাম ১০ই মে, যা কিনা এবার তুঙ্গনাথ মন্দির খোলার দিন ও।।।। ভাগ্যের এই সহায়তা আর কোনো দিন পেয়েছি বলে তো মনে পরে না।।।। যাই হোক তুঙ্গনাথ জি তো ৯ই মে ভক্ত দের কাঁধে ডুলি যাত্রা করে রাত ৮ টায় চোপতায় পৌঁছলেন , একদিন বিশ্রাম নিয়ে পর দিন নিজের বাড়ি তুঙ্গনাথ মন্দিরে যাবেন , এই উদ্দেশ্যে।।। পরদিন সকাল সকাল উঠে প্রস্তুত হওয়া তুঙ্গনাথ জির সাথেই তার বাড়ি যাওয়ার উদ্যেশ্যে (১২৮০০ ফুট) ।।।।।
সকাল ৯টায় শুরু হলো ডুলি যাত্রা, তুঙ্গনাথ জি চললেন ভক্তের কাঁধে চেপে, আর আমরা চললাম তার পিছে পিছে।।
চারিদিকে লাল, সাদা, বেগুনি, গোলাপি গুরাস এর দল আর মাঝে মাঝে সবুজ বুগিয়াল এর মাঝে মধ্যে দিয়েই চরাই পথ চলেছে।। পাশে পাশে চলেছে হিমালয়ের সব শৃঙ্গরা।।। অবশেষে ২.৩০ মিনিট ট্রেক করে পৌছালাম অভীষ্ট লক্ষে।।।। আজ রাত টা তুঙ্গনাথ এই কাটাব।।।। দিনের তাপমাত্রা এখানে ৬।। কিন্ত রাত এ সেটা নেমে দাঁড়ালো ২ এ।।।।। প্রচন্ড ঠান্ডা।।।।। কিন্তু আমাদের যে পরদিন ভোর ৪ টায় বেরোতে হবে আমাদের শেষ লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে " চন্দ্রশিলা " যার কিনা আসল নাম " রামচন্দ্রাশিলা "।।।।। যার উচ্চতা ১৪০০০ ফুট।।। ভোর ৪ টায় যাত্রা শুরু করে পৌঁছানো গেল ৫.১৫ তে।।। আমাদের পথ প্রদর্শক বললেন তাপমাত্রা এখন -১ ।।।কিন্তু কপাল মন্দ সূর্যোদয় এবার আর দেখা হলো না।।। সব বিখ্যাত শৃঙ্গ এবং সূর্যদেব মেঘের আড়ালে মুখ লুকিয়েছেন।।। যাই হোক কিছু সময় কাটিয়ে নেমে আসা আবার তুঙ্গনাথ এ।।।।। আজ ই আমরা চোপতা নামবো।। পরের দিন হরিদ্বার ।।।।। এবারের মতো যাত্রা এখানেই শেষ।।। আবার সেই একঘেয়ে শহুরে জীবন।।। তবে যান্ত্রিক ক্যামেরা ও মনের ক্যামেরায় যা যা তুলে নিয়ে এলাম টা দিয়ে পরের ট্রেক পর্যন্ত সময় কাটিয়ে দিতে পারব এই আসা নিয়ে চললাম ।।।।।।। কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য ------- হরিদ্বার থেকে সারি গাড়ির ভাড়া কম বেশি ৭৫০০/ চোপতা থেকে হরিদ্বার কম বেশি ৭০০০/ সবজান্তা গুগুল এর দয়ায় সবাই এখন সব কিছু জেনে নিতে পারেন।।। তাই তুঙ্গনাথ মন্দিরের ইতিহাস লিখে আর আপনাদের সময় নষ্ট করলাম না।।।।।
0 Comments
?স্বর্গের কাছাকাছি : কুমায়ুন ভ্রমণ ?
=========================== দূর্গা পুজোর পর আর ঠিক কালী পুজোর আগে বেড়িয়ে পড়লাম kumaon এর উদ্দেশে....স্বপ্নের দেশে. ?2.11.18 লালকুঁয়া এক্সপ্রেস ধরে পৌঁছে গেলাম লাল কুয়া.. সেখান থেকে গাড়ি বুক করে প্রথমে গেলাম নৈনিতাল, 2 night stay. সেখান থেকে কৌশানি, 1night stay. এরপর চৌকোরি 1night stay, পরদিন গেলাম পাতাল ভুবনেশ্বর হয়ে মুন্সিয়ারি.... 2 night stay.. এবং ফিরে এলাম আবার নৈনিতাল... টুকটাক শপিং করে 1 night রেস্ট নিয়ে 10. 11 এ আবার লালকুয়া থেকে ট্রেন ধরে পরদিন বাড়ি..... ?পাতাল ভুবনেশ্বর এই ট্রিপ এর সবচেয়ে বিশেষত্ব... আমাদের কাছে... আমি, আমার 8yrs এর ছেলে ও আমার husband আমরা সবাই কালী পুজোর পরদিন যেদিন পাহাড়ের laxmi পূজা থাকে সেদিন সবার প্রথমে প্রায় 8:30 নাগাদ পৌঁছে যাই... সেখানে গিয়ে গুফা খুলিয়ে 9:30 টা নাগাদ কেবল মাত্র আমরা তিন জন ই গাইড সহ সেখানে প্রবেশ করি....গুফা তে যা দেখলাম তা ভাষায় বলে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই... প্রকৃতি, বিজ্ঞান, পুরাণ সেখানে মিলেমিশে একাত্ম হয়ে গেছে... আমাদের একাগ্রতা ছিল এই দুর্গম গুফা তে প্রবেশ করার, সেটা আমরা অত্যন্ত সফলতার সাথে করতে পেরে সবচেয়ে বেশি খুশি... সত্যি দুর্গম গুফা, সকলের পক্ষ্যে সম্ভব নয়, তবুও যাদের সম্ভব, অবশ্যই এদিকে এলে গুফার নিচে চার ধাম দর্শন করে আসবেন... আত্মীক শান্তি লাভ হবেই, এটা অবশ্যম্ভাব্য...আমরা দর্শন করার পরই আবার তারা গুফা বন্ধ করে দেন... আর কোনো টুরিস্ট ছিল না বলে... পরে খুলেছিলো কিনা জানিনা...তবে প্রথমে গুফার তালা দেখে আমরা প্রচন্ড হতাশ হয়ে গেছিলাম. এত কাছে এসে এভাবে নিরাশ হতে হবে ভেবে, কিন্তু প্রকৃতি আর ভোলেবাবা আমাদের খালি হাতে ফেরায়নি... আমাদের সকল কষ্ট সার্থক... ?এই kumaon ট্রিপ এ মোবাইলে তোলা কিছু প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি শেয়ার করলাম, আশা করি ভালো লাগবে.... যদিও এই সুবিশাল প্রাকৃতিক শোভা ক্যামেরা বন্দি করা কখনই সম্ভব নয়... পাতাল ভুবনেশ্বর এর ছবি তোলা নিষেধ, তাই যাত্রা পথের ছবি দিলাম.... ?নৈনিতাল বাদে আমরা kmvn এ ছিলাম, ওখানেই লাঞ্চ, ডিনার, ব্রেকফাস্ট করেছি... গাড়ি ছিল kumaon এর ই... কোনো পার্টিকুলার একটাই গাড়ি বুক না করে যেখানে গেছি সেখান থেকেই গাড়ি বুক করেছিলাম পরবর্তী জায়গায় যাওয়ার জন্য.... ?কেনাকাটা করেছি নৈনিতাল mall থেকে.... খুব জমজমাট এই mall area... প্রচুর প্রচুর দোকান আর আছে সন্ধ্যে ভূটীয়া মার্কেট... ?mall জুড়ে প্রচুর ভালো ভালো রেস্টুরেন্ট.... প্রায় অনেকগুলোই try করেছিলাম, খাবারের মান বেশ ভালো ছিল... নানক রেস্টুরেন্ট, zooby's kitchen,sher e punjab, delhi darbar, embassy আরো অনেক... বাঙালি খাবার পাওয়া যায় মৌচাক বাঙালি হোটেল এ... মুন্সিয়ারি গেলে চউক এর কাছে সুমন দা র হাতের মটন ঝোল, গরম ভাত, ডাল, আলুভাতে খেতে ভুলবেন না.... মা এর হাতের স্বাদ মনে পরে গেছিলো... আর কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে নির্দ্বিধায় করতে পারেন.... যথাসম্ভব সাহায্য করতে চেষ্টা করবো... অ্যাডমিন সহ সকল মেম্বার দের অসংখ্য ধন্যবাদ... সবাই ভালো থাকবেন ? ঋষিকেশ
প্রাকৃতিক সোন্দর্যের বিবেচনায় ঋষিকেশ আমার খুব পছন্দের জায়গা। সবুজ বৃক্ষঘেরা পর্বতচূড়া আর গঙ্গাকে একসাথে উপভোগ করতে হলে ঋযিকেশকে আমার শ্রেষ্ঠ মনে হয়। আর এবার আমরা যেখানে ছিলাম সেই হোটেলের ঘর থেকে শুয়ে বসে গঙ্গা আর পর্বত চূড়ার মোহময় দৃশ্য উপভোগ করতে করতে কোথা দিয়ে যে দুটো দিন কেটে গেল বুঝতে পারলাম না! দশেরার দিন গেছিলাম তাই সন্ধ্যা হতেই দেখি লছমনঝুলা এক অপরূপ আলোক সজ্জায় সজ্জিত! গঙ্গার উল্টোপাড়ের মন্দিরটিতেও আলো জ্বলে উঠেছে, স্তোত্রপাঠ শুরু হয়েছে, তারপর আরতি হল। কী যে মায়াময় এক দৃশ্য! সেই রাতে যতক্ষন জেগেছিলাম বিছানায় শুয়ে জানলা দিয়ে এই ঐশ্বরিক সোন্দর্যের দিকে তাকিয়েছিলাম! সকালবেলা উঠে দেখি গঙ্গা, পর্বতচূড়া এক মমতাময়় রূপ ধারন করেছে! পাহাড়ের গায়ে, গঙ্গার বুকে নরম রোদের ছোঁয়া। লছমন ঝুলা দিয়ে লোকের যাতায়াত শুরু। চারদিকে এক অলস সকালের স্নিগ্ধতা! এক সকালে ঝুলা পেড়িয়ে ওদিকে যাই, মন্দিরে ঘুর়ে বেড়াই, গঙ্গার ঘাটে গিয়ে জলস্পর্শ করি। ফেরার সময় ঝুলার মাঝখানে দাঁড়িয়ে চারদিকের অপরূপ দৃশ্য আর নীচে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে থাকি কিছুক্ষন,খুব হাওয়া দিচ্ছে আর দারুন ভালো লাগায় মন ভরে যাচ্ছে!দুপুরবেলায় গঙ্গার দেখি আর এক রূপ! গঙ্গার বুকে তখন ছুটে যাচ্ছে রাফটিং আর স্পীড বোট। ঘাটে লোকজনের ব্যস্ততা। লছমনঝুলা দিয়ে লোকজন আর দুচাকা গাড়ীর অনবরত যাতায়াত। সারা দুপুর বিছানায় শুয়ে জানলা দিয়ে সেই দৃশ্য উপভোগ করতেও বেশ লাগে! দুটো দিনের শেষে দারুন ভালো লাগা নিয়ে যখন ফিরে এলাম তখনও যেন সেইসব মোহময় দৃশ্যের রেশ কাটতে চায় না! স্মৃতি_সততই_মধুর_হোক_না_যতই_ভয়ংকর# সালটা ১৯৯১, সদ্য কলেজের গন্ডি পেরোনো আট যুবক যার কনিষ্ঠতম সদস্য এই অধম হঠাৎ ঠিক করে বসলো কোথাও যেতে হবে আর সে পাহাড় ই হোক বা সমুদ্র । সুবাস ঘিসিং এর কল্যানে দার্জিলিং তখন অবরুদ্ধ , পুরীও বাবা মায়ের সাথে বেশ কয়েকবার যাওয়া হয়েছে দলের বেশির ভাগ সদস্যদের ই, তাই সেটাও বাদ অথচ এমন কোথাও যেতে হবে যাতে পকেটের চাপ ও খুব বেশি না হয়। তাই অনেক চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করা হলো নৈনিতাল এবং আলমোড়া, রানীক্ষেত ও কৌশানি। যদিও সেই সময়ে সমগ্ৰ ট্যুর যথেষ্ট খরচ সাপেক্ষ হওয়ার জন্য প্রায় বাতিল হয়ে যাচ্ছিল আর কি , কিন্তু মুশকিল আসান করে দিল আমাদেরই এক সদস্যের বন্ধু। যে খুবই কম খরচে নৈনিতালে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিল। তাই দেরি না করে অমৃতসর মেলে টিকিট কেটে ফেললাম লখনৌ অবধি সেখান থেকে মিটার গেজ ট্রেনে কাঠগোদাম ।দিনটি ছিল দূর্গা পূজার দশমীর দিন। যথারীতি নির্দিষ্ট দিনে আমরা যাত্রা শুরু করলাম জীবনে প্রথম বারের মত সম্পূর্ণ অভিভাবক মুক্ত হয়ে।আটবন্ধু একসাথে মুখোমুখি আটটা বার্থে। কিভাবে যে সময় কেটে গেল তা বলে বোঝানো যাবে না। পরেরদিন বৈকাল নাগাদ পৌঁছে গেলাম লখনৌ । ঐদিনই রাত্রি ১১ টা নাগাদ চেপে বসলাম কাঠগোদামগামি মিটারগেজ ট্রেন নৈনিতাল এক্সপ্রেসে। অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা। মাঝরাতে কোন এক অনামি অজানা ষ্টেশনে প্রায় বেশ কয়েক ঘণ্টা ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকল এবং যথারীতি বেশ কয়েক ঘণ্টা দেরি করে গন্তব্যে পৌঁছাল। কাঠগোদাম ষ্টেশনের ষ্টেশন মাষ্টার ছিল আমাদের এক বন্ধুর দাদা তাই আগে থেকেই জানানো ছিল । ষ্টেশনে ট্রেন পৌঁছানো মাত্রই মাইকে আমাদের নাম ঘোষণা করা হলো এবং সত্বর ষ্টেশন মাষ্টারের সাথে দেখা করার অনুরোধ জানান হলো। সত্যিই নিজেদের তখন কেউকেটা মনে হচ্ছিলো । তাই সোজা ষ্টেশন মাষ্টার এর ঘরে গিয়ে দাদার সঙ্গে দেখা করলাম এবং প্রাতরাশ করে তবে ছাড়া পেলাম। তবে দাদা অনেক বার আমাদের যেতে বারণ করেছিলেন নৈনিতাল এবং এও বলেছিলেন একদুদিন ওনার কাছে থেকে বাড়ি ফিরে যেতে এবং ফেরার টিকিট এর সম্পূর্ণ ব্যবস্থা উনি করে দেবেন। কিন্তু অতো দূর গিয়ে ফিরে আসার কোন ইচ্ছাই আমাদের তখন ছিল না। আবার নির্দিষ্ট কারনও বলেছেন না। তাই ওনাকে বিদায় জানিয়ে উঠে বসলাম নৈনিতালগামী বাসে। বিকেলের আগেই পৌঁছে গেলাম বহু কাঙ্ক্ষিত সেই নৈনিতালে। প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গেলাম সেই সিমের আকৃতির নীলাভ সবুজ জলের সরোবরের যার সৌন্দর্যের আরো বিকাশ করেছিল তিনকোনা রঙিন পালতোলা ছোট্ট ছোট্ট নৌকা যারা ইয়েট নামে পরিচিত। লেকের ধারে রাস্তা তার ঠিক পাশেই আমাদের হোটেল যার নাম আজ আর মনে নেই তবে লেকভিউ সেই হোটেল সত্যিই সুন্দর ছিল। হোটেলে চেকইন করার পর একটু ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম ডাইনিং রুমে। সেখানে হঠাৎ চোখ আটকে গেল টিভির নিউজে সেখানে তখন একটাই খবর চলছে Earthquake in Uttarkashi Garhwal region... Epicenter near Nainital .. Richter scale 7 ....1000 deaths..। শিরদাড়া দিয়ে হিমশীতল শিহরণ খেলে গেল এবং মাঝরাতে ট্রেনের দাঁড়িয়ে থাকা বা ষ্টেশন মাষ্টার দাদার বারনের কারন জলের মতো পরিস্কার হয়ে গেল। সেইসময় মোবাইল তো দূর অস্ত বাড়িতে বাড়িতে টেলিফোন ও ছিল না। ছুটলাম STD বুথের দিকে গিয়ে দেখলাম বিরাট লাইন, সবাই আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ করার আশায় দাঁড়িয়ে আছে। আমরাও দাঁড়িয়ে পরলাম এবং পাড়ার দোকানে যার কাছে সেইসময় ফোন ছিল জানালাম আমাদের নিরাপদ থাকার বার্তা। ওনার কাছে জানতে পারলাম আমাদের প্রত্যেকেরই বাড়িতে রিতিমত শোকের পরিবেশ তৈরি হয়েছে এবং লোকাল থানায় যোগাযোগ করা হয়েছে। যাইহোক উনি আমাদের নিরাপদ থাকার বার্তা খুব ই তাড়াতাড়ি প্রত্যেকের বাড়িতে জানিয়ে আশ্বস্ত করেন, এরজন্য এতবছর পর ও আমরা কৃতজ্ঞ। পরদিন সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে প্রাতরাশ করে বেরোলাম লেক বা তাল ভ্রমণে, উঃ প্রদেশ ট্যুরিজম এর বাসে। তখন ই ধীরে ধীরে বুঝলাম যে প্রাকৃতিক ধংসলীলা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।গ্ৰামের পর গ্ৰাম সম্পূর্ণ ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। যাইহোক আফটার শক তখন ও চলছে তাই বাস ড্রাইভার ও ধসপ্রবন এলাকা এড়িয়ে আমাদের যাত্রা কে সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছিলেন। আশপাশের লেক গুলোর মধ্যে এক ভীমতাল লেক ছাড়া আর কোনোটাই দেখার মত নয় বিশেষ করে নৈনিতাল লেকের তুলনায়। বিকেলে ফিরে সন্ধ্যায় নৈনি লেকের চারিদিকে ঘুরে বেড়ানো ও প্যাডেল বোটে ভ্রমণের স্মৃতি আজও মনিকোঠায় উজ্জ্বল। পরেরদিন সকালে পায়ে হেঁটে উঠলাম নৈনাপিক্। উঠার সময় আরো দু'বার আফটার শক।ভয়ে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হবার জোগাড় তবুও চেষ্টা ছাড়িনি। সবশেষে সেই কাঙ্খিত ভিউ পয়েন্ট, যেখান থেকে সমগ্ৰ নৈনিতাল শহরকে সীমের আকৃতির লেকের চারিদিকে অসাধারণ দৃশ্যপট সৃষ্টি করে। নতুন কেনা Olympus ও বন্ধুর Pentax SLR ক্যামেরা দিয়ে বেশ কিছু ছবি তোলা হলো। মনের সুখে বলতে পারছিনা কারন ৩৫ মিমি কোডাক, ফুজি বা কোনিকা প্রায় ১০০ টাকা আর মাত্র ৩৬ এক্সপোজার অথচ হোটেল ভাড়া ২০০ টাকা তাই ১০০ টাকার অনেক দাম আমাদের কাছে সেইসময়। উপরে তখন কিছু ই ছিল না কিন্তু উপরে উঠতে উঠতে কিছু যায়গা থেকে বরফাবৃত পর্বতমালার দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। পরেরদিন আলমোড়া হয়ে চলে এলাম রানীক্ষেত। সাইট সিয়িং এ গল্ফ মাঠ , ঝুলাদেবি মন্দির ,আপেল বাগান ও আরো কিছু জায়গা দেখে সেদিনের মত হোটেলে রাত্রি যাপন। পরেরদিন ভোরে কৌশানির উদ্দেশ্যে যাত্রা। কৌশানি পৌঁছে সোজা গান্ধী আশ্রম। কিন্তু গিয়ে হতাশ হতে হলো , কারন আমরা অবিবাহিত আর সংখ্যায় এতজন। বহু পীড়াপীড়ি করে অবশেষে একটা বড় ঘরে একরাতের জন্য থাকতে দিতে রাজি হয়েছিলেন আশ্রমের প্রধান পুরোহিত। যাইহোক কোনোক্রমে মাথাগোঁজার ঠাঁই পেয়ে আমারা যারপরনাই খুশি। বাক্স প্যাটরা নামিয়ে ছুটে চলে গেলাম গান্ধী আশ্রমের বিশাল চত্বরে যেখান থেকে ৩০০ কিঃমিঃ হিমালয়ের রেঞ্জ সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। সূর্যাস্তের রক্তিম আভায় প্রজ্জ্বলিত সমগ্ৰ পর্বতমালা। সেই স্বর্গীয় দৃশ্য আজও মনিকোঠায় উজ্জ্বল। যাইহোক এরমধ্যে একটা ঘটনা ঘটল যেটা এখানে না উল্লেখ করে পারছি না। ভাগ্যক্রমেই বলুন বা দূর্ভাগ্যক্রমে আশ্রমের প্রধান রাঁধুনি শারীরিক কারণে হঠাৎ অনুপস্থিত, অথচ সমগ্ৰ আশ্রমে ১৫০জনের বেশী ট্যুরিস্ট রয়েছেন, আশ্রম কতৃপক্ষের মাথায় হাত । তখন আমরা প্রধান পুরোহিত মহাশয়কে আশ্বস্ত করে সমগ্ৰ আশ্রমের রান্না ও খাওয়ানোর দায়িত্ব নিলাম সেই দিনের জন্য এবং তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালনো করলাম। পুরোহিত মহাশয় আমাদের কাজে এতই খুশি হলেন যে তারপর আরো দুই দিন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আশ্রমের সবথেকে ভালো ঘরে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। আমরা ভীষণ খুশি হয়ে আরো দুই দিন গোয়ালদাম ,বৈজনাথ ঘুরে বেড়ালাম। এবার ধীরে ধীরে পকেটে টান ধরায় ফেরার কথা চিন্তা করতে হলো।তখন আমরা ফেরার টিকিট না করেই বেরোতাম আর ফেরার টিকিট সহজে করাও যেত না এখনকার মতো। চিন্তা করুন সেই সময়ের বাবা মায়েদের কথা যারা তাদের সন্তানদের ছেড়ে দিত ফেরার দিন তারিখ না জেনেই, আর আমরা আজকে আমাদের সন্তানদের হাওড়া থেকে বর্ধমান যেতেই দশবার ফোন করি। যাইহোক ফেরার সময় কৌশানি থেকে আলমোড়া মারুতি ভ্যানে এসে সেখান থেকে বাসে কাঠগোদাম আর তারপর মিটার গেজ ট্রেনে লখনৌ। একদিন লখনৌ ভ্রমন করে পরেরদিন মোগলসরাই এবং সেখান থেকে ডিলাক্স ধরে বাড়ীতে ফেরা। আমাদের ১৩ দিনের ভ্রমন শেষ হলো মাথাপিছু ১৩০০ খরচে।সমগ্ৰ ভ্রমণের বেশিরভাগ ছবিই নষ্ট হয়ে গেছে, তারই মধ্যে কিছু ছবি দিলাম। Post By-Avijit Chowdhuri
কুমায়ুনের মুক্তেশ্বর ****************** বেশ কিছুদিন ধরেই নৈনীতালের কাছে কুমায়ুন হিমালয়ের সুন্দর নিসর্গে ঘেরা অপরূপ হিল স্টেশনটির কথা শুনে আসছিলাম। নভেম্বরের শুরুতে দিওয়ালীর ছুটিতে বেরিয়ে পড়েছিলাম মুক্তেশ্বর। দিল্লি থেকে গাড়িতে। আমরা দুটি দম্পতি। চাকরি সূত্রে আমি তখন দিল্লিতে। বাড়ি থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে ৩৫০ কিমি পথ পারি দিয়ে বিকেলের মধ্যেই মুক্তেশ্বর পৌঁছনোর পরিকল্পনা। এবারের বাহন ভাড়া করা একটা ইন্ডিকা। NH 24 ধরে গজিয়াবাদ, হাপুর, গড়মুক্তেশ্বর, জোয়া পার হয়ে মোরাদাবাদ অবধি ঠিকঠাক পৌঁছনো গেল। এখান থেকে ‘কুমায়ুনের গেটওয়ে’ হলদুয়ানি যাবার দুটি পথ। একটি মূল রাস্তা ধরে রামপুর, পন্থনগর হয়ে। অন্যটি টান্ডা, বাজপুর, কালাধুঙ্গি হয়ে। মাইলেজ কম ও করবেটের জঙ্গলের সান্নিধ্য থাকায় দ্বিতীয় রাস্তাটি আমার বরাবরের পছন্দের। কিন্তু সে রাস্তা ধরে কিছুটা এগোতেই বাধ সাধল খারাপ রাস্তা। কয়েক বছর আগেও এ রাস্তায় যাতায়াত করেছি, কিন্তু রাস্তার হাল এরকম হবে স্বপ্নেও ভাবি নি। পিচ বিহীন, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় টান্ডা থেকে বাজপুর অবধি ৩২কিমি পথ পেরোতে ৩ ঘণ্টার উপর লেগে গেল। এর মধ্যে একবার টায়ার পাংচারও জুটেছিল খারাপ রাস্তার কল্যাণে। এরপর হলদুয়ানি, কাঠগোদাম হয়ে পাহাড়ে চড়া যখন শুরু হল, তখন দিনের আলো নিভে এসেছে। ভীমতালের পাশ দিয়ে যাবার সময় উপর থেকে লেকের একটা ভিউ পাওয়া যায়। কিন্তু এখন সন্ধ্যে। পথেই ইন্টারনেট দেখে, রিভিউ পড়ে, একটি হোটেলে ফোন করে দিয়েছিলাম মুক্তেশ্বরে। হোটেল ওয়ালার নির্দেশিত পথে খাটাউলি থেকে ভাওয়ালি গামী মূল রাস্তা ছেড়ে, ডানহাতি উপরে উঠে যাওয়া একটি রাস্তা ধরলাম। এপথ একেবারে নির্জন, পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে অন্ধকার লেপ্টে আছে। সন্তর্পণে গাড়ি চালাচ্ছে চালক পদম সিং। হোটেল থেকে মিঃ নাগেন্দার সমানে ফোনে আমাদের পথের নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই মত চাষী, ধনচুলি হয়ে, আঁধার হাতড়ে, অবশেষে পৌঁছলাম মুক্তেশ্বরের ঠিক আগে পথের পাশে আলোক ঝলমলে একটি বড়সড় হোটেলের সামনে। আমাদের অভ্যর্থনা করতে জনা দুয়েক হোটেল কর্মী দাঁড়িয়ে গেটের বাইরে। Mukteswar Himalayan Resort। তিনতলার কোণার দিকে দুটি ভিউ ফেসিং রুম আমাদের দেওয়া হল। দিওয়ালীর সময় উত্তর ভারতে অফ সিজন। তাই এসময় আর গেস্ট না থাকায় ৫০% ডিসকাউন্টও মিলল। ডিলাক্স রুম ১০০০ টাকা। দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা যাত্রার পর রিসর্টের তোফা রুমের আরামকেদারায় বসে নিজেকে রাজার মত মনে হল। রিসর্টের সাজসজ্জায় মালিকের বেশ একটা রুচির পরিচয় মেলে। নভেম্বেরের শুরুতে পাহাড়ে কনকনে ঠান্ডা। ডাইনিং রুমে গিয়ে গরম গরম রুটি ও ডিমের কারি সহযোগে ডিনার সারা হল। পরদিন ভোরে সূর্যোদয় দেখার জন্য ৬টার অ্যালার্ম লাগিয়ে, দুগ্ধফেনিত বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম লেপ কম্বলে মুড়ে। ভোরবেলা ঘুম ভেঙে পর্দা সরিয়ে বিশাল কাঁচের জানলা দিয়ে পাহাড় শ্রেণী চোখে পড়ল। সামনের পাহাড়গুলির মাথায় রক্তিম আভা। কনকনে ঠান্ডায় কান মাথা মুড়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম। তিনদিকে পাহাড়, সামনে ভ্যালি, পিছনে রিসর্ট – সব মিলিয়ে ভোরের উদাত্ত পরিবেশে দারুণ লাগছিল মুক্তেশ্বরকে। সামনের পাহাড়ের আড়াল থেকে একটু একটু করে রক্তিম সূর্য উঠে এল। বাঁদিকের পাহাড়ের মাথার উপর আবছা দুটি বরফের চূড়া দৃশ্যমান। রিসর্টের এক কর্মী চলে এসেছে আমাদের আশপাশটা একটু ঘুরিয়ে দেখাতে। তাকে অনুসরণ করে, মিনিট দুয়েকের খাড়াই পথে উঠে গেলাম রিসর্টের পিছনের পাহাড়টির মাথায়। সামনে তাকিয়ে দেখি বাঁদিক থেকে ডানদিকে একে একে বরফে মোড়া হিমালয়ের পাহাড় চূড়া গুলি। ধীরে ধীরে কুয়াশার চাদর সরিয়ে তারা দিনের আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে। ত্রিশূল, নন্দাঘুন্টি, নন্দাকোট ও একেবারে ডানদিকে মানে পূর্বদিকে পঞ্চচুল্লী। বেশ কিছুক্ষণ এদৃশ্য দেখে নেমে চললাম রিসর্টে। লোকটি বলল জিরো পয়েন্ট থেকে আরো ভাল দেখা যায় বরফ চূড়াগুলি। বাঁদিকের পাহাড়টার মাথায় জিরো পয়েন্ট। এখান থেকে ৬কিমি। স্নান সেরে রিসর্টের সুসজ্জিত লনে চেয়ার টেবিল পেতে ব্রেকফাস্ট। মিঠে রোদে বসে আলু পরাঠা, অমলেট ও চা খেতে খেতে উপভোগ করছিলাম চারপাশের পাহাড়ের সৌন্দর্য্য। মুক্তেশ্বরে দেখার জায়গা বলতে 'জিরো পয়েন্ট', 'চৌলি কি জালি', মুক্তেশ্বর মহাদেবের মন্দির ও ভেটার্নারি ইনস্টিটিউটের বিশাল ক্যাম্পাস। প্রাতরাশের পর বেরোতে গিয়ে আরেক বিপত্তি। ড্রাইভার পবন সিং জানাল গাড়িটি বিকল হয়েছে। আমাদের মাথায় হাত। রিসর্টের মালিক নাগিন্দার জি আমাদের বললেন, যে আপনারা বেড়াতে এসেছেন, গাড়ির জন্য যাতে সময় নষ্ট না হয়, তাই তিনিই সাইট সিয়িং করিয়ে দেবেন। প্রথমে তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন গেটের বাঁদিকে একটু নিচে একটি পাইন ঘেরা মাঠে। এখান থেকে পঞ্চচুল্লীর দারুণ ভিউ পাওয়া যায়। তারপর আবার ফিরে এসে আমাদের গাড়ির জন্য মেকানিকের ব্যবস্থা করে, তাঁর নিজের গাড়িতেই আমাদের নিয়ে চললেন সাইট সিয়িং করাতে। এবার গেটের ডাইনে উপরের দিকের রাস্তা ধরে। খানিক চলে একটা তিন রাস্তার মোড়ে কিছু দোকানপাট। সোজা রাস্তাটি এসেছে ভাওয়ালি হয়ে নৈনীতালের দিক থেকে। আমরা চললাম ডানহাতি রাস্তায়। মুক্তেশ্বরের মূল টাউন শুরু এখান থেকে। প্রাকৃ্তিক সৌন্দর্য্যের ঘেরা, হিমালয়ের ৬৫০০ ফুট উচ্চতায়, শান্ত, নিরিবিলি এই জনপদ ব্রিটিশদের হাতে তৈরী। কিছু পুরনো আমলের বাড়ি, ছোট বাজার, বেশ কিছু হোটেল ও শহরের অনেকটা জুড়ে Indian Veterinary Institute এর প্রাচীর ঘেরা জমি, বাড়ি ও একরের পর একর পাইন-দেওদারের জঙ্গল। সুপ্রাচীন এই ইনস্টিটিউটের জন্য খ্যাতি মুক্তেশ্বরের। সব ছাড়িয়ে শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে জিরো পয়েন্টে নামিয়ে দিলেন নাগিন্দারজি। বললেন, দেড় দু কিমি ওয়াকিং ডিস্ট্যান্সের মধ্যেই আমরা ‘চৌলি কি জালি’ ও মন্দির সহ সব দেখে নিতে পারব। কথা হল যে সব ঘুরতে আমাদের ঘণ্টা দুয়েক সময় লাগবে, আর তার মধ্যেই গাড়ি সারিয়ে আমাদের ড্রাইভার চলে আসবে আমাদের পিক আপ করতে। কোন দিকে কি দেখার আছে, তা আমাদের গাইড করে দিয়ে নাগিন্দারজি বিদায় নিলেন। তুলনা নেই মানুষটির। এরকম অতিথিবৎসল ও হেল্পফুল হোটেলিয়ার এর আগে খুব কম দেখেছি। জিরো পয়েন্ট মুক্তেশ্বরের সর্বোচ্চ স্থল। জিম করবেটের আমলের প্রাচীন PWD বাংলো ও তার পিছনে খোলা একটা প্রান্তর। সে প্রান্তরে দাঁড়িয়ে যা দৃশ্য দেখলাম তাতে মুগ্ধ হয়ে গেলাম সবাই। ১৮০ ডিগ্রি জুড়ে দন্ডায়মান হিমালয়ের সব তুষাড় শৃঙ্গগুলি। বাঁদিক থেকে ডানদিকে যথাক্রমে চৌখাম্বা, নন্দাঘুন্টি, ত্রিশূল (পূর্ব ও পশ্চিম), নন্দাদেবী (পূর্ব ও পশ্চিম), নন্দাকোট, পঞ্চচুল্লী। একটি ফলকে শৃঙ্গগুলির নাম লিখে দিক নির্দেশ করা আছে। সামনের পাহাড়ে অনেকগুলি খেলনার মত বাড়িঘরে সাজানো আলমোড়া শহর ও তার মাথার উপর তিনটি তুষার শৃঙ্গ। শুনলাম বাঁদিকে, মানে উত্তর পশ্চিমের পাহাড়টির মাথায় শীতলাখেত ও শাহিদেবী মন্দির। বাইনকুলারে চোখ লাগিয়ে পাহাড়ের মাথায় মন্দিরটি দেখতে দেখতে স্মৃতি রোমন্থন করছিলাম। বছর তিনেক আগে গিয়েছিলাম কুমায়ুনের আরেক জনপদ শীতলাখেতে। চার কিমি খাড়াই রাস্তায় ট্রেকিং করে উঠে পাহাড়ের মাথায় ঐ শাহিদেবীর মন্দির দর্শন ছিল সেবারের এক দারুণ আভিজ্ঞতা। নির্মল আকাশে, হিমালয়ের এতগুলি বরফে মোড়া বিখ্যাত শৃঙ্গ এত স্পষ্ট – এ অনবদ্য দৃশ্য কুমায়ুনের অন্য কোথাও দেখেছি বলে মনে পড়ে না। বেলা বারোটা বাজে, এখনও মেঘের আনাগোনায় একটুও অস্পষ্ট হয় নি শৃঙ্গগুলি। অকল্পনীয় ভাবে খুব দামি জিনিস পেয়ে গেলে মানুষ আনন্দের আতিশয্যে যেমন আত্মহারা হয়ে যায়, আমাদেরও যেন কতকটা সেই অবস্থা। দুচোখ ভরে হিমালয়ের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করে, নানা অ্যাঙ্গেলে ও নানা পোজে তুষার শৃঙ্গ গুলির ছবি ক্যামেরাবন্দী করে, পার হয়ে গেল বেশ কিছুটা সময়। পিছনের শতাধিক প্রাচীন বাংলোটিতে একসময় জিম করবেট এসে থাকতেন। এই মুক্তেশ্বরেই করবেটের একটি বাঘ শিকারের কাহিনী আছে – ‘Man-eater of Kumayun’। এবার পরের গন্তব্য। রাস্তার ওপারে খাদের দিকে নেমে যাওয়া পথ ধরে পৌঁছলাম প্রকান্ড সব চ্যাপ্টা পাথর ছড়ানো প্রস্তরময় এক অদ্ভুত জায়গায়। এটিই ‘চৌলি কি জালি’। পাথর গুলো সব ঝুলে রয়েছে খাদের উপর। একটা পাথর খন্ডের উপর বসে নিচে অতলান্ত গভীর খাদের দিকে চেয়ে মাথা ঘুরে যায়। শুনলাম এটি নাকি সুইসাইড পয়েন্ট। কিছুটা সময় কাটিয়ে এবার চললাম মন্দিরের দিকে। সরু প্রস্তরময়, জঙ্গলে ঢাকা, খাড়াই একটি পথ বেয়ে খানিক চলার পর, পাহাড়ের উপর একটা চাতাল মত জায়গায় পৌঁছলাম। সামনেই সিঁড়ি উঠে গেছে মুক্তেশ্বর মহাদেবের মন্দিরে। জায়গাটিরও নামকরণ হয়েছে মুক্তেশ্বর মহাদেবের নামানুসারেই। মন্দির দর্শনের পর মোবাইলে যোগাযোগ করে ডাকা হল ড্রাইভার পবন সিংকে। রিসর্টে ফিরে খানিক বিশ্রাম ও তারপর সুন্দর কম্পাউন্ডের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ানো। ভিতরেই একটি মন্দির, নাগিন্দারজি ব্যস্ত উপাসনায়। নেটে ছবি দেখে ও ট্রিপ অ্যাডভাইসারে রিভিউ পড়ে এই রিসর্টটির যে ধারণা নিয়ে এসেছিলাম, বাস্তবে রিসর্টটি তার চেয়েও বেশি সুন্দর। ছেড়ে যেতে মন চাইছিল না এই মুক্তেশ্বর হিমালয়ান রিসর্ট। কিন্তু পথ চলাই ভ্রমণার্থীর ধর্ম। আমাদের এবার গন্তব্য সেই চেনা নৈনীতাল। লাঞ্চ সেরে, নাগিন্দারজি ও তার সুন্দর রিসর্টের সব স্টাফ ও বিশেষ করে তাঁর আতিথেয়তা ও সাহায্যের জন্য বারংবার ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম। মুক্তেশ্বরের অপার নিসর্গ ছেড়ে নিসর্গের মধ্যে দিয়েই এগিয়ে চললাম ভাওয়ালি গামী রাস্তায়, নৈনীতালের উদ্দেশে। শেষ বিকেলে পৌঁছে গেলাম নৈনীতাল। -SDG Post By:- Subhrangsu Dasgupta
বড্ডো যন্ত্রণা নিয়ে শেষ হলো আমার এই কুমায়ুন যাত্রা l এই যন্ত্রণা মনেতে , দেহ তে নয় l শুরু করেছিলাম ২৭ নভেম্বর ২০১৭ লালকুঁয়া এক্সপ্রেস চেপে l পরদিন সকালে ৪ ঘন্টা লেট করে পৌঁছে ছিলাম l স্টেশন থেকে ট্রাভেরা গাড়িতে রওনা হলাম , গাড়ি আগে থেকে বুক করা ছিল l সোজা কাঠগোদাম হয়ে রানীবাগ এ ফিয়েস্তা হোটেলে পৌঁছালাম , এটা পাহাড়ের উপরে অবস্থিত l ওখানে দুপুরে খাবার খেলাম ও নৈনিতাল এর উদ্দেশে রওনা হলাম l ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট জার্নি করে ৩২ কি মি ড্রাইভ করে নৈনিতাল লেকের উপর দাঁড়িয়ে থাকা খুব সুন্দর লোকেশন এ হোটেল শালিমার এ বিকেল ৫ টাতে পৌঁছালাম l লেকের উপর যেন হোটেল টা দাঁড়িয়ে আছে l ভাড়া ১২৫০ টাকা DAB l পরদিন নৈনিতালের সাইট সিন্ করে তৃতীয় দিন 120 কি মি অতিক্রম করে এলাম কৌশানি, এখানে শিভয় হোটেল ১২০০ টাকা প্রতি দিন প্রতি দুজনের হিসাবে থাকলাম l কৌশানির কথা আর কি বলবো, এখানকার সূর্যোদয় যে অতি মনোরম তা সকলেই জানে l আমি সকাল ৫-০০ নাগাদ আমার ছোট্ট ব্যাগটা পিঠে ঝুলিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, আমার সঙ্গী হলো হোটেলের রাতের চার পেয়ে প্রহরী "শেরু" l রাস্তা ঘাট সুনসান , একটা জনমানব রাস্তায় নেই, শুধু আমি আর শেরু l এর আগে গান্ধী আশ্রম থেকে সূর্যোদয় দেখেছিলাম এবার তাই ঠিক করলাম একটা নতুন জায়গা থেকে সূর্যের জেগে ওঠার মুহূর্ত গুলো ক্যামেরা বন্দি করবো. ৫.৩০ মানে পাহাড়ে অন্ধকার, ঠান্ডা বেশ ভালোই লাগছিলো, ব্যাগে ফ্লাস্কে চা ছিল, চা খেতে খেতে ভাবছিলাম, বছর ২৫ আগে এই কৌসানি তে যখন এসেছিলাম তখন এখানে কিছুই ছিলোনা. সেদিনের সেই হারিয়ে যাওয়া কলেজের বন্ধুরা আর আমার ছোট্ট ছেলেটা তাদের কথা মনে পড়ছিলো. ছেলেকে খুব মিস করছিলাম l ও আমার খুব ভালো বন্ধু l এখন বড় হয়েছে,অনেক দায়িত্বের কাজ করে তাই যখন তখন এই বুড়ো বুড়ির সাথে আসতে পারেনা l বাচ্চারা ছোট বয়সে যেমন অপেক্ষায় থাকে কখন বাবা অফিস থেকে বাড়ি আসবে তেমনি বৃদ্ধ বয়সে বাবা মা কেও অপেক্ষায় থাকতে হয় কখন সন্তান বাড়ি ফিরবে l এ এক অদ্ভুত প্রতিমুহূর্ত l এর মধ্যে পূর্ব আকাশ ফর্সা হলো আর উত্তরের আকাশে একটা সদ্য নিভে যাওয়া দেশলাই কাঠির বারুদের মাথার মতো একটু বড় আগুনের বিন্দু দেখতে পেলাম l এটাই হিমালয়ের বুকে দাঁড়িয়ে থাকা ত্রিশূল,কমেট ও পঞ্চচুল্লি এর রেঞ্জ l ধীরে ধীরে সব কটা চূড়া ভেসে উঠলো l হোটেল এ ফিরলাম l স্নান ও ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে পড়লাম চৌকোরির উদ্দেশে কৌশানি থেকে ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পড়লাম l বাগেশ্বর হয়ে ৮৬ কি মি পেরিয়ে ৫ ঘন্টায় চৌকোরি পৌঁছালাম l হোটেল শিখর রাজ্ এ উঠলাম l DAB প্রতি দিন ১২০০ টাকা. এখানে KMVN এর টুরিস্ট লজ টা ভীষণ সুন্দর l লন জুড়ে ৮ খানা কটেজ ও মূল লজেও অনেক গুলো রুম আছে l ভাড়া ২৩০০ থেকে ৪০০০ টাকা ঘর প্রতি, দিন প্রতি l বিকেল থেকে সন্ধ্যা অবধি লন এ চেয়ার এ বসে পকোড়া চা ও কফি নিয়ে জমিয়ে আড্ডা সাথে জমাট ঠান্ডা l আর হিমালয়ের সৌন্দর্য এর কথা কি আর বলবো আকাশ পরিষ্কার থাকায় সন্ধ্যাতেও মনে হচ্ছিলো কামধেনু যেন তার দুগ্ধ ধারায় হিমালয় কে স্নান করাচ্ছে l হিমালয় এ এর আগে এতো সাদা চেহারায় পাইনি l পরদিন সকালে ৩৫ কি মি ড্রাইভ করে দু ঘন্টায় পৌঁছালাম পাতাল ভুবনেশ্বর l ৯০ ফুট গভীরে ৮২ তা ধাপ পেরিয়ে পাতাল স্বর্গ l এখানে সত্যি নাকি ভগবান রা থাকেন l তিন থেকে চার ফুট সুড়ঙ্গ তে কি করে যে মানুষ নামে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয়না l আমি ওই সুড়ঙ্গে যেতে পারিনি তবে আমাদের টিমের দুই মহিলা সাথী নেমে ছিল l সত্যি সাহসী বটে এরা l পরের দিন ভোর ভোর বেরিয়ে পড়লাম মুন্সিয়ারির উদ্দেশে l রাস্তা প্রায় ১০০ কি মি থাল ও তেজাম হয়ে পথ গিয়েছে l খুব সরু ও খারাপ রাস্তা, পথে বৃথী ওয়াটার ফলস, দেখার মতো, খুব সুন্দর l ৫ ঘন্টা জার্নি করে বিকেল বিকেল মুন্সিয়ারি পৌঁছালাম l মুন্সিয়ারির ১৮ কি মি আগে একটা চায়ের দোকানে গাড়ি থামলো, এটা এই পথের উচ্চতম পয়েন্ট ৮৫০০ ফুট এর মতো, এখন থেকে যেন হিমালয়ের প্রথম চুম্বন টা অনুভব করলাম l হিমালয় যেন মুন্সিয়ারির মাথার ছাতা l এখান থেকে সবথেকে কাছের যে পাঁচটি পর্বত শৃঙ্গের শ্বাসপ্রশ্বাস এর শব্দ পাওয়া যায় তার নাম, পাঞ্চ চুলা l এই পাঞ্চ চুলা কে ভোর রাতে ধ্রুব তারার আলোয় দেখেছি, সকালের প্রথম সূর্যের ছটায় দেখেছি,দুপুরের হালকা কুয়াশায় ঢাকা অবস্থায় দেখেছি,গোধূলির সিঁদুরে আভায় দেখেছি আবার সন্ধ্যার পূর্ণ চাঁদের আলোয় দেখেছি l এতো গভীর ভাবে হিমালয়কে আগে কখনো দেখিনি l কুমায়ুনের কান্না part 3 এবার এলাম কাঁসার, এটা আলমোড়ার 20 কি মি আগে l রাত প্রায় ৯ টা তে প্রায় ১৬০ কি মি ড্রাইভ করে মুন্সিয়ারি থেকে এখানে এলাম l একটা হোমস্টে তে উঠলাম , ১০০০টাকা DAB রুম l রাতে বুঝিনি যে সকালে কি এক অপূর্ব ডালি সাজিয়ে রেখেছে এই কাঁসার l উত্তরের আকাশটা জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে দুধ সাদা হিমালয় যার প্রতিটা নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে আমার শরীরে l দুপুরে লাঞ্চের পরে রওনা হয়ে মুক্তেশ্বর পৌঁছালাম কাঁসার থেকে ৭০ কি মি পথ l ৭৫০০ ফুট উপরে মুক্তেশ্বর মন্দির ৩৫০ যার বয়স l এখন থেকে সূর্যাস্ত দেখা মানে এক জাগতিক রূপ দর্শন l নিচ থেকে বেশ অনেকটাই চড়াই ভেঙে এই মন্দিরে পৌঁছাতে হয় l দেবাদিদেব মহেশ্বর মহাকালেশ্বর এখানে থাকবেন নাতো আর কোথায় থাকবেন l এতো রূপ এতো নিঃশব্ধতা l ৬ টা তে রানীবাগ এ ফিয়েস্তা হোটেলে পৌঁছালাম l ভাড়া ১২০০ টাকা DAB l পরদিন সকালে ৮.৪০ এর সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেস ধরলাম দিল্লীর উদ্দেশে, এটা ট্রেন নয় যেন এক নরক গুলজার l দেখলাম দিনের ট্রেন এ কতটা নোংরামো করবার সাহস এই অঞ্চলের একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ করতে পারে l আমি এখনো আতংকিত l ওল্ড দিল্লী থেকে নিউ দিল্লি এসে কলকাতার ট্রেন ধরলাম l এবার আসছি আমার মন খারাপের কারণটা কি ছিল তা বলতে l সঞ্জু নামের ৩৮ বছরের এই যুবক টির জীবন নিয়ে একটা সিনেমার প্লট বানানো যায় ....... চলবে.......... কুমায়ুনের কান্না কথাটা যার জন্যে লিখেছি এবার এই ভ্রমণ কাহিনীর শেষে তার সম্মন্ধে কিছু না লিখলে আমার এই গল্পের সমাপ্তি হবেনা , তাই আমাদের এই ৯ রাত্রি সহঅবস্থান যার সাথে হয়েছিল সেই সঞ্জু নামের দামাল ছেলেটার কথা একটু লিখতে মন চাইছে l আমার কাছে এই গল্পের ও যেন মূল চরিত্র l প্রচুর বড়লোকের ছেলে ছিল, বাবার মৃত্যুর পরে আত্মীয় স্বজন রা সব সম্পত্তি আত্মসাৎ করে সঞ্জু কে ১৬ বছর বয়সে পথে নামান l মা এর কয়েক বছর আগে চোখ বুঝে ছিলেন, খুব ভালো গাড়ি চালাতো সঞ্জু, ওর নিজেরই ২ টো গাড়ি ছিল l তাই গাড়ি চানানোটাকে জীবিকা হিসাবে গ্রহণ করে l খুব ঠান্ডা মাথার ড্রাইভার এই সঞ্জু l একটাই দোষ , তা হলো ভীষণ নেশা করতো l দিনের বেলা ড্রাই নেশা আর রাত্রে তরল নেশায় ডুবে যেত l সঞ্জুর আসল নাম k p shing রাওয়াত l খুব ভালো কবিতা লেখে l ওর লেখা গান একটা বলিউড ফিল্মে টাইটেল সং হয়েছে l মুভিটার নাম young rider l ঈশ্বরকে বলবো সঞ্জুর প্রতি যেন উনি একটু সদয় হন l বাড়িতে স্ত্রী,এক ১৭ বছরের ছেলে ও ১০ বছরের মেয়ে l দুজনই লেখাপড়া করে l এই সঞ্জু মানুষটা বড্ডো ভালো l দোষ একটাই,৪ /৫ ঘন্টা অন্তর ড্রাই নেশা করতো , অথচ নেশা করে অসম্ভব শান্ত ভাবে গাড়ি চালাতো l সময়ে নেশা করতে না পারলেই অশান্ত ড্রাইভ করতো l ও যখন গাড়ি থামিয়ে নেশা করতে যেত, আমি তখন ওর সাথে থাকতাম l আমি অনেক নেশাড়ু দেখেছি জীবনে কিন্তু এই সঞ্জুর মতো নেশাড়ু এই প্রথম দেখলাম l আমি গাঁজা ও প্রক্সিভন ট্যাবলেট কে মদের চাট হিসাবে খেতে দেখেছি আর এখানে দেখলাম হেরোইন কে চাট হিসাবে খেতে সঞ্জুকে l ওকে দেখেছি smack ও snort নিয়ে তারপর xxx rum খেতে l হেরোইন এর অনেক রূপ ও অনেক নেশাকরার ধরণ l সাদা,ব্রাউন ও কালো ধরণের হেরোইন হয় কেউ smack কেউ snort কেউ সিগারেটে মিশিয়ে আবার কেউ জলে মিশিয়েও খায় l ৩৮ কেজি বডি ওজন নিয়ে সঞ্জু এই সব নেশার কাছে পরাজিত হয়নি l ওর এখন কিং কোবরার bite টাই জিভে নেওয়া বাকি l পরিবারের প্রতি ও খুবই দায়িত্বশীল প্রতি ঘন্টা অন্তর কাঠগোদামে বাড়িতে ফোন করে সবার খবর নিতো l ওর যেন এই সমাজের প্রতি একটা ঘৃণা একটা ক্ষোভ আছে l আইনের ওপর ভরসা করে ছিল, যে ওর পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পাবে কিন্তু টাকা ও ক্ষমতার কাছে আজ গরিবের বিচার বন্দি l রোজ রাত্রে সঞ্জু আমার কাছে কাঁদতো আর ওর যন্ত্রনা ভরা শায়েরি শুনাতো l অবশেষে সেই বিদায়ের দিনটা এলো , আমরা কাঠগোদাম ফিরে এলাম , আমরা দুজনেই চুপ করে ছিলাম লাগেজ হোটেলে নামানোর পর আমি সঞ্জু কে বিদায় জানালাম হঠাৎ ও আমাকেও বাচ্চা ছেলের মতো জড়িয়ে কাঁদতে লাগলো আমি ওকে বকা দিয়ে শান্ত হতে বললাম, ও আমায় নিয়ে বাজারে গেল আমার কিছু দরকারি জিনিষ কেনার ছিল l ১o দিন পরে বাড়ি যাচ্ছে তাই একটু বাজার করলো l যখন ফিরছি তখন ওর ফোনে খবর এলো আবার কাল সকালে কাঠগোদাম থেকে নতুন গ্রুপ নিয়ে আবার ১২ দিনের কুমায়ুন যাত্রা, ও বলেছিলো কালকে হালদোয়ানি যাবে পরিবার কে নিয়ে সবার জন্য মার্কেটিং করবে, কিন্তু আর হলোনা l পেটের টানে ওকে যে আবার গাড়ির স্টিয়ারিং ধরতেই হবে প্রাণ হাতে নিয়ে l পরদিন সকাল 11tay গুড মর্নিং বার্তা এলো নৈনিতাল থেকে প্রেরক সঞ্জু l কাঠগোদাম থেকে সম্পর্ক ক্রান্তি ট্রেন এর অসহ্য যাতনা সইতে সইতে ট্রেন ওল্ড দিল্লির দিকে এগোচ্ছিল l সঞ্জুর কথাই ভাবছিলাম l কে ও আমার? কেনইবা ওর জন্যে মনটা ভারী লাগছে? অনেক ট্যুর করেছি জীবনে, অনেক ড্রাইভার সাথে থেকেছে , তবু কেন ওর জন্য মনটা ভারী ? একটা পাহাড়ি বিছে , যা নাকি মারাক্ত বিষাক্ত l বৃথী ফলস এর কাছে আমি যখন এক মনে ১২০০ ফুট উঁচু থেকে ঝরে পরা তার রূপ দেখছিলাম তখন আমার মৃত্যু অপেক্ষা করছিলো আমার খাদিম থেকে কেনা এঙ্কেল সু এর উপরে l চামড়া থাকতে bite করতে পারেনি l হঠাৎ কোথা থেকে সঞ্জু এসে আমার জুতোর ওপর ওর জুতোটা চেপে ধরলো, পাহাড়ি বিচ্ছুর প্রাণ গেল আর আমি সে বিচ্ছুর দিকে তাকিয়ে ৮ ডিগ্রি তেও ঘাম ছিলাম l যথা সময়েই নিউ দিল্লী ১০ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে সন্ধ্যা ৭.৪০ এ শিয়ালদা দুরন্ত ছাড়লো l আবার এক নতুন মুখ নতুন মনের সাথে ১৭ ঘন্টার সফর শুরু হলো l বুঝলাম ট্রেনে বাঙালিদেরই আধিপত্য বেশি l খাওয়া দাওয়া চলছে সাথে হাসি, চিৎকার, ভয়ঙ্কর রাস্তার অভিজ্ঞতার বাড়াবাড়ি বর্ণনা l হটাৎ পাশের কূপের এক পাজামা পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোকের গর্বের উক্তি কানে এলো , উনি কাউকে বলছেন বাঙালিরা নাকি ট্যুরে বেরোলে খাবার থালায় কাঁচা পেঁয়াজ আর লঙ্কা চাই ই চাই আর পায়ে এদের স্পোর্টস সু অথবা কাপড়ের জুতো, পরনে ভুঁড়ির উপর জিন্স এর প্যান্ট আর মাথায় টুপি , এটাই নাকি ভ্রমণ পিপাসু বাঙালিদের ইউনিফর্ম l কথা গুলো শুনে খুব মর্মাহত হলাম, একজন নিজে বাঙালি হয়ে সেই বাঙালি সম্বন্ধে এমন হাসির খোরাক করছে যে তাকে দেখার ইচ্ছা হলো l ট্রেনের ওনার সহযাত্রীদের মধ্যে বেশির ভাগ বাঙালিকে দেখলাম ওনার কথায় বেশি হাসলো ও বাঙালি দের সমন্ধে আরও অনেক হেয় করা কথা বললো l সকালে উঠে দেখলাম সেই বাঙালি মাথায় একটা টুপি পরে ট্রেনের করিডোরে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছেন l মনে হচ্ছিলো এখুনি grp ডেকে ওনাকে ধরিয়ে দিই l তখন সত্যি সত্যি দুজন grp কোথাথেকে এসে হাজির , আর যায় কোথায় বাবাজি, ২০০ টাকা ফাইন, নয় হাজত শুনে ভদ্রলোক তো অস্থির হয়ে গেল, কত কাকুতি মিনুতি , ওনাকে মাফ করবার জন্য l rpf তো ছাড়ার পাত্র নয় ওনাকে গয়া স্টেশনে নামবেনিই l এবার উনি বলতে লাগলেন ট্রেন ৭ ঘন্টা লেট চলছে তাই সিগারেট খাওয়া অন্যায় নয় , এতে পুলিশ আরও রেগে গেল এবার নিরুপায় ভদ্রলোক আমাকে ধরলো পুলিশকে বোঝানোর জন্য l আমি পুলিশ কে বললাম হাঁ ইনহো নে সিগারেট পিয়া ইনকো জুরমানা ভরকে ছোড়দিজিয়ে l 200 টাকা ফাইন ও সিগারেটের প্যাকেট জমা দিয়ে উনি মুক্তি পেলেন ও সারা ট্রেনের বাকি সময় ঘোঁৎ ঘোঁৎ করে চললো l আত্ম সমালোচক এই বাঙালি কে তখন আমার বলতে ইচ্ছা করছিলো যে, হাঁ মশাই আমি বাঙালি,আমি গর্বিত, আমি গর্বিত তখন যখন এক ট্রেন দুরন্ত এক্সপ্রেসের নানা জাতের মানুষের মাঝে কোনো এক অবাঙালি পতি তার সদ্য বিবাহিতl স্ত্রী কে একা ট্রেন এ চাপিয়ে বলে যায় আঙ্কেল ইনকো খেয়াল রাখিয়ে গা , এই বিশ্বাস এই ভরসা শুধু বাঙালিরাই দিতে পারে তো সব জাতের মানুষ জানে, আর এই হলিডে হোম খোঁজা বাঙালিরাই ভারতীয় টুরিস্ট ডিপার্টমেন্ট কে বাঁচিয়ে রেখেছে l এই বাঙালিরাই ঘুরতে বেরিয়ে পেডং কালিম্পঙ কি কুমায়ুনের হোটেলের বেয়ারা বা দু সপ্তাহের পরিচিত ড্রাইভার এর ছেলে বা মেয়ের লেখা পড়ার দায়িত্ব এই বাঙালিরাই নিতে পারে l কুমায়ুন যাত্রা আমায় অনেক কিছু শিখিয়েছে , দেখিয়েছে, বুঝিয়েছে আর ভাবিয়েছে. যার কোনটা আনন্দের কোনটা হাসির কোনটা বেদনার ও কোনটা শিক্ষার ও বটে l পার্থময় চ্যাটার্জী Post By:- Parthamoy Chatterjee
aradale, Ramgarh, Uttarakhand. দিল্লি থেকে 325 km দূরে কুমায়ুন হিমালয়ের মেঘরাজ্যে উত্তরাখন্ডে এক পাহাড়ি জনপদ রামগড়। জনপদ বললেও জনমানসের বিশেষ দেখা মেলেনি বর্ষার পাহাড়ে। "Fruit Basket" নামে খ্যাত এই জায়গাটির বিশেষত্ব হলে peach, palm, apricot, apple আর pear orchids. আর রয়েছে পাইন, ওকে আর রোডোডেন্ড্রনে সাজানো অপরূপ মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী। মেঘ পিওনের ম্যাজিক উপরি পাওনা। এমন একটি সবুজ ঘেরা জায়গায় এক রাত কাটানোর অভিজ্ঞতা হল একটি হেরিটেজ কটেজে। নাম Tadadale. Aristrocat and Diplomat Major General Tara Singh Bal এর নাম থেকেই এই কটেজের নাম। তাঁর দ্বিতীয় প্রজন্ম দ্বারা সুসজ্জিত এবং সংরক্ষিত এই ইংরেজ কায়দায় বাস্তু মেনে নির্মিত কটেজ। "dale" কথাটিও যথার্থ। কটেজের প্রবেশ হাঁটা পথে প্রধান রাস্তা থেকে 5 মিনিটের উৎরাই বেয়ে। সে রাস্তাটা সত্যিই রূপকথার মত সবুজ ঘেরা সর্পিল। Taradale যেন এক সবুজ ঘেরা উপত্যকায় স্বপ্নের আস্তানা। কথিত আছে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি র কিছু অংশ রচিত হয়েছিল এই কটেজেই। Post By:- Shrima Banerjee
পাহাড়ী ঝর্ণা,পাহাড়ী রাস্তা আমায় ডাকে বারেবার।এক অমোঘ আকর্ষণে ছুটে যাই হারিদ্বারে,সাথে থাকে মা।হারিদ্বারের নাম শুনলেই মার চোখে-মুখে এক উজ্জ্বল দীপ্তি খেলে যায়।"যাবে নাকি এবার আবার হরিদ্বারে?-প্রশ্নটা শুনেই মা বলে ওঠে-"তোর ইচ্ছা।আমার তো ভয় ভয় করে যেতে।তবে শুধু ওখানেই থাকবো।" আমার মন তো চলে যায় দূরে--আরো দূরে। মা,যাবে বদ্রিতে?আমি তো আছি,কোনো অসুবিধা হবে না। - দেখ,ওখানে আমায় নিয়ে কোনো অসুবিধায় পরে যাবি না তো? - অসুবিধা!!আমার!কি যে বলো!! ওগো মা,তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে তৈরি হয়ে গেল যাওয়ার প্রস্তুতি।গাড়ি ভাড়া করে চললাম বদ্রিনারায়ণের পথে।আগের বছরও গিয়েছিলাম কিন্তু মার দর্শন হয়নি ভগবানকে।তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডুলি পাইনি।পায়ের ব্যাথার জন্য উঁচুনিচু পথ ভাঙতে অসুবিধা হচ্ছিল।যাইহোক,প্রথমে একদিন রাত্রিযাপন করলাম কর্ণপ্রয়াগে আর পরের দিন বিকালে পৌঁছালাম বদ্রিনারায়ণে।পৌঁছে শুনি এক মন্ত্রীর(VIP)জন্য অনেক আগে থেকে পথ বন্ধ করা হয়েছে-হেঁটে পৌঁছাতে হবে নইলে অপেক্ষা করতে হবে তার চলে যাওয়ার জন্য।তখনও সেই মন্ত্রী আসেননি।বুঝুন অবস্থাটা!!😢পুলিশ রক্ষকেরা কোনোমতেই যেতে দেবেন না।বয়স্কা মা আছেন বলতেও একটিই উত্তর--"না"।ভারত সেবাশ্রম যেটি মন্দিরের কাছে সেখানে গেলাম,ঘরও পেলাম।সুন্দর ব্যবস্থা।মহারাজ একজনকে ঠিক করলেন ডুলি বাহক হিসাবে।পরে জেনেছিলাম তিনি ছিলেন ওই আশ্রমের রাজমিস্ত্রির হেলপার।মাকে ঝুড়ি করে নিয়ে আসা হলো উঁচুনিচু পথ ধরে।মাথার উপর দড়ি দিয়ে মানুষকে পিঠে বসিয়ে পাহাড়ি পথ অতিক্রম করা চাট্টিখানি কথা নয়।আমি লোকটির অসীম মনোবল আর শারীরিক দক্ষতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।এত কষ্ট-এত যন্ত্রনা নিয়ে খেটে চলে এরা।মা প্রথমদিকে ভয়ে চোখ বন্ধ করে দিয়েছিল।--"ও মা,ভয় পাচ্ছ নাকি?দূর--ভয়ের কি আছে?"লোকটি বললেন"মাতাজি,ডরনে কা কোয়েই বাত নেহি,হাম হ্যায় না."--মনটা আনন্দে ভরে গেল ওনার ব্যাবহারে।আমার মাকে সেও মা বলে।পৌঁছে গেলাম ভারত সেবাশ্রমে।দক্ষিনা কত বলতে গিয়ে তিনি বললেন--"আপ পচাশু রুপিয়া দেনগে দাদা।"--পঞ্চাশ টাকা!!! আমি হতবাক।--"কাল মাতারানিকো হাম মন্দির দর্শন করায়েঙ্গে,আপ পানশো রূপয়ে দেনগে,জানে আউর আনেকে লিয়ে।"-আমার চোখের কোনে জলের আভাস পেলাম।..."আপকো মাতাকো হাম মাতাজি বোলা-আপকো মাতা মেরি মাতা জায়সা হ্যায়,ইসেলিয়ে... মারওয়ারী আদমি সে হাজার রুপিয়া লেতে হ্যায়।"::ভগবান, তুমি এদের মধ্যে এত সহিষ্ণুতা, দয়া, শ্রদ্ধা দিয়ে পাঠালে তবু কেন এদের এত পরিশ্রম করতে হয় দিনরাত? তুমি সুখ,তুমি শান্ত।তুমি হে অমৃতপাথার প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি,পরের দিন মার বদ্রি দর্শন ঘটেছিল আর প্রাপ্য স্বরূপ ওর থেকে বেশি অর্থ আমি দিয়েছিলাম।যদি আবারও আমি যাই তবে তার দেখা যেন পাই।মায়ের এই বদ্রি দর্শনে আমার মন ভরে গিয়েছিলো এক অপার্থিব আনন্দে।উপরি পাওনা ছিল এমন এক ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা।এখন আশ্রমের কাজ শেষ আর তারও স্ত্রী সহ সেখান থেকে চলে যাওয়া হয়েছে।সবই প্রভুর ইচ্ছা,মার দর্শন হলো বদ্রিনারায়ণ। মন রে ওরে মন,তুমি কেন সাধনার ধন পাইনে তোমায় পাইনে,শুধু খুঁজি সারাক্ষণ Post By:- Subrata Chakraborty
==== কেদারনাথের ডাইরি (পার্ট 2)=== ************************************** কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি, হবে কি করে? মোটা মোটা চালের ভাত, ডাল, নিরামিষ তরকারি 2 টো রুটি, গলা দিয়ে নামেনি, নিদেন পক্ষে একটা ডিম ভাজা হলে ভালো হতো. কিন্তু কি করা যাবে, তার ওপর কাল সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ভোর বেলা ওঠা অভ্যাস টা আমার কোনো দিনের নেই, সানরাইজ দেখা আমার কখনো হয়ে হয়নি, ঠান্ডায় লেপ মুড়ি দিয়ে মটকা মেরে পরে থাকা টা বুদ্ধি মানের কাজ বলে মনে হলো , কিন্তু সুমন সেই কখন উঠে পড়েছে, এক বার করে বাইরে যাচ্ছে, এক বার করে ঘরে আসছে, আর বলছে চলো না গো, সব লোক চলে গেল, বৃষ্টি থেমে গেছে, অতএব উঠতে আমাকে হলো, ফ্রেশ হয়ে সাড়ে আটটার সময় হোটেলের লকার রুমে ব্যাগ পত্তর রেখে, রওনা হলাম কেদারনাথের পথে , হালকা হালকা বৃষ্টির মধ্য শুরু পথ চলা, গৌরী কুন্ড থেকে কেদারনাথ পুরো রাস্তা টাই 99% খাড়াই, প্রথম পাঁচ কিলোমিটার আপনি গর্ গর্ করে চলে যাবেন, তারপর আস্তে আস্তে আপনার দেহ বিদ্রোহ শুরু করবে, বিশেষ করে,.... যারা আমার মতো... যারা জীবনে কোনো দিনও ফুটবল পায়ে মাঠে নামেননি... হাঁটা হাঁটি করেন না,.... বাড়ি থেকে বাজার, বাজার থেকে বাড়ি, গাড়ি ছাড়া চলেন না,.. সাইকেল চালান না,... রক্তে হালকা সুগার... তারা কখনোই এ পথে হেটে ওটার চেষ্টা করবেন না. ঘোড়াই একমাত্র অবলম্বন হতে পারে. যাইহোক দুই ধারের অপরূপ শোভা, দেখতে দেখতে আপনি কখন রাম্বারা এসে পৌঁছে যাবেন, আপনি বুঝতেই পারবেন না, এখানে আলুর পরোটা খুব বিখ্যাত সবাই খায় তাই আমিও খেলাম, সাময়িক ব্রেক, রেলিংয়ে ধার ধরে দাড়িয়ে দেখবেন, মাথার ওপর দিয়ে কেমন হেলিকপ্টার চড়ে মানুষ জন চলেছে, বাবা ভোলানাথের দর্শনে, আবার রাস্তায় কত অশীতিপর বুড়ো বুড়ির দল চলেছেন পেনিতে, ডুলিতে, এই pene জিনিস টা বেশ ভালো, যেমন আসামের চা বাগানের মহিলারা চা পাতা তোলে ঝুড়িতে, সেই রকম এক জন মানুষ কে ওই ঝুরির মধ্যে বসিয়ে পিঠে করে নিয়ে চলে আরো একজন মানুষ. এইসব দেখতে দেখতে কখন যে চলে এসেছি লিঞ্চলে মনেই নেই.... , কিন্তু পা আর চলল না. ভীষণ টান পড়লো পায়ে, মনে মনে ভাবছি আর কি যেতে পারবো না. হাওড়া থেকে হরিদ্বার 1650 km ট্রেন , হরিদ্বার থেকে সোনপ্রয়াগ 123 km বাসে এসে, এই 5 কিলো মিটার আর যেতে পারবো কিনা মনে সংশয়, আমার পাশ দিয়ে অনেকে চলে যাচ্ছে, ঠিক তখনি এক ঘোড়া ওলা বলে উঠলো"""" ভাইয়া জায়েগা,'' ' দর দাম করে উঠে বসলাম...... ঘোড়া চলল আমাকে নিয়ে মহাপ্রস্থানের পথে , এবার আসি একটু ইতিহাসের পাতায় সৌজন্যে গুগুল কাকু ebala. In কেদারনাথের মন্দির সুমুদ্রপার থেকে 3583 মিটার/(11755ft) উপরে, গাড়োয়াল হিমালয় রেঞ্জের মন্দাকিনী নদীর ধরে অবস্থিত. বারোটা জ্যোতির্লিঙ্গ এর মধ্যে সব থেকে শক্তিমান এই বাবা ভোলানাথ. মহাভারতের পান্ডব রা যুদ্ধে বহুমানুষের প্রাণ নিয়ে পাপ স্থলন করবার জন্য বৈশিষ্ট মুনির পরামর্শে এখানে মহাদেবের পুজোর আয়োজন করেছিলেন কিন্তু মহাদেবও ধর্মসঙ্কটে পড়েছিলেন, এত মানুষ হত্যা করে পুজো করলেই তিনি ক্ষমা করে দেবেন, এমন সোজা মানুষ তিনি নন.... তিনি করলেন পান্ডব দের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, একটা ষাঁড় সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন হিমালয়ের কোলে, ব্যাটা ভীম সবার আগে মহাদেব কে চিনতে পারে শেষ হয় লুকোচুরি খেলা. যাক আর বেশি ইতিহাস শোনাবো না নইলে আপনারা ভাববেন আমি গাজা খেয়ে ভুল ভাল বকছি,,,,, অবশেষে আমি বহু কষ্ট করে ঘোড়ার পিঠে চেপে পৌছুলাম কেদারনাথের দরবারে,,, মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম সন্ধ্যা অরুতি দেখে রাতে একটা তাঁবু তে ছিলাম, ব্যাবস্থা বেশ ভালোই , রাতে স্লিপন ব্যাগ দিয়েছিলো, ব্যাংকার ছিলো শোবার. খেতে ইচ্ছা ছিলো না সারা দিনের ধকলে, আর ভালো লাগছিলো না, সামান্য কিছু চিড়ে আর সন্দেশ খেয়ে শুয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি, অপেক্ষা করলাম এক নতুন ভোরের আসায়.... সকাল হতেই বেরিয়ে ধরলাম বাড়ি ফেরার পথ, সানরাইজ আর দেখা হয়নি মেঘলা থাকায়, কথিত আছে কেদারনাথের সানরাইজ দেখা নাকি ভাগ্যের কথা, সূর্যের প্রথম রশ্মি যখন হিমালয়ের পাহাড়ে পরে এক স্বর্ণাভ রূপের সৃষ্টি হয়, এই মুহূর্ত কে( গোল্ডেন মোমসেন্ট অফ হিমালয় বলা হয়.) আমরা যদিও এতটা সৌভাগ্যবান নই, দেখেছিলাম কিছুটা, ওতো সকালে ঘোড়া পাইনি, কিন্তু নামতে একটুও কষ্ট হয়নি, কারণটা আগেই বলেছিলাম, নামার পথে পুরোটাই তখন ঢালু, পিকের আমির খানের মতো বোম বম ভোলে বম বম ভোলে বলতে বলতে নিচে নেমে এলাম, গৌরীকুণ্ডের 2কিলোমিটার আগেই আমার স্মার্ট ফোন আর ক্যাবলা ফোনের টাওয়ার পেয়েগিয়েছিলাম,ততকাল কোটায় কেটে নিলাম বাড়ি ফেরার 2টো টিকিট কিন্তু বেলা 12tar সময় শোন্ প্রয়াগ নেমে কোনো বাস পাইনি, রাত্রিটা ওখানে কাটিয়ে পরদিন সাড়ে পাঁচটায় প্রথম বাস ধরে নেমে এলাম হরিদ্বারে, দুপুরে দাদা বৌদির হোটেলে ভাত ডাল আলুপটলের তরকারি পোস্ত সুক্তো আমের চাটনি পাঁপড় খেয়ে, হর কি পৌর ঘাটে অরুতি দেখে, গঙ্গায় চান করে রাতের ট্রেনে সোজা বাড়ি...... Post By:- Prasun Nandy
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |