লেখার অভ্যেস কোনোদিন ছিল না ....এই গ্রূপে বন্ধুদের পরিবার পরিজন নিয়ে মন্দারমনী ট্রিপ সম্পর্কে লিখে কিছুটা সাহস পেয়েছি..... দীর্ঘ সময়ের কাজের চাপ, স্ট্রেস আর নানা ঝামেলা থেকে মুক্তির সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে ভ্রমণ। যদিও সময় কম। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করতে থাকি, কোথায় যাওয়া যায়। ভ্রমণ পাগল সজল জানায় পুরুলিয়ার বড়ন্তি যাওয়া যেতে পারে। তবে আমরা সিঙ্গেল যাবো, ফ্যামিলি যাচ্ছে না । বন্ধু মহলে অনেককেই জানানো হয়েছিল কিন্তু কারো কাছে সময় নেই,ঠিক হলো আমরা চারজন যাচ্ছি আমি, সজল, প্রকাশ আর কৌশিক।কিন্তু একটু চিন্তায় পড়লাম যে একা ঘুরতে যাওয়ার ব্যপারে হোম মিনিস্টারের অনুমতি পাওয়াটা কঠিন ব্যপার। বাড়ীতে জানালাম, মেয়ে আর বৌ প্রথমে রাজি নয়, ওদেরকে রেখে যাওয়া চলবে না যাইহোক অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম এই শর্তে পরের ট্রিপে আমরা একসাথে যবো। পরদিন ভোরবেলায় বেড় হতে হবে। একটা ছোট্ট পিঠব্যাগে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিলাম। ভোর চারটের সময় ফোন করে সজল জাগিয়ে দিলো। ঘুম থেকে আস্তে আস্তে উঠে রেডি হতে লাগলাম বিনা শব্দে কেননা মেয়ে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে বলে রেখেছিলো ভোরবেলায় বেড়নোর সময় ওর ঘুমের কোনো ব্যাঘাত না করা হয় জানি মেয়ে রেগে আছে। এরমধ্যে প্রকাশ আর কৌশিকের একবার করে ফোন রেডি কি না।ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে সবার মধ্যেই প্রচণ্ড উত্তেজনা। ঠিক 04:55 নাগাদ প্রকাশ নিজের সুইফট ডিজায়ার গাড়ি নিয়ে হাজির। আমি গাড়িতে চড়ে বসলাম, সোজা কৌশিকের বাড়িতে, ওখানে এক কাপ চা খেয়ে ভোর 05:10 নাগাদ আমারা মছলন্দপুর থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।ভোর ভোর যাত্রা শুরু হল । আমাদের এখানে সবাই তখন আধো ঘুমে আচ্ছন্ন। পথে বিরাটি থেকে সজলকে তুলে নিলাম।গন্তব্য বড়ন্তি। যাত্রা শুরু স্কুলে ক্লাস ফাইভ থেকে একসাথে পড়া চার বন্ধু মিলে, ঠিক করলাম এবার “জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা”র বাংলা ভার্শন করতেই হবে।কথায় বলে চল্লিশ বছর বয়স নাকি জীবনের দ্বিতীয় অর্ধের শৈশব,তা আমাদের সেই শৈশব এ জাষ্ট পদার্পণ। কোনা এক্সপ্রেস হয়ে দূর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে দিয়ে শক্তিগড়।পরিকল্পনা ছিলো শক্তিগড়ে ব্রেকফাস্ট করব কিন্তু পরিকল্পনা ভেস্তে যায় কারণ আমাদের কারো তখন ব্রেকফাস্ট করার ইচ্ছা নেই।গাড়ি আসানসোলের দিকে হুহু ছুটতে শুরু করল। গতি ঘণ্টায় একশ,একশ চল্লিশ কিমি। যেহেতু প্রকাশ ড্রাইভ করছে, আমরা নিশ্চিন্ত। এখানে আমরা রাস্তা ভুলে কিছুটা এগিয়ে যাই, আবার ব্রেক করি আমাদের যেতে হবে দুর্গাপুর থেকে আসানসোলের মধ্যে দিয়ে নিয়মতপুর। নিয়মতপুর থেকে বাঁদিকে বেঁকে ডিসেরগড় ব্রীজ পেরিয়ে সোজা বরাকর–পুরুলিয়া রোড ধরতে হবে। এদিকে খিদেতে আমাদের পেট চুঁই চুঁই করছে সবার আর নয় এবার দাড়াও।বরাকর–পুরুলিয়া রোডে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম, ডিমটোস্ট ও ঘুগনি খেয়ে পেট শান্ত করে আবার গাড়ি স্টার্ট ।এই রাস্তা ধরে আমাদের মুরাডি যেতে হবে।ভোর 5 টায় বেরিয়েছি মছলন্দপুর থেকে। পথ চিনতে ভরসা গুগল ম্যাপ , আর স্থানীয় মানুষ বরন্তী গ্রামের কাছাকাছি যতই এগোই, ততই মন ভরে যেতে থাকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে।চারিদিকে পিয়াল,মহুয়া, পলাশ গাছে ভরা,ছোট ছোট পাহাড়, টিলা আর পলাশ ফুল দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম বড়ন্তি ওয়াইল্ডলাইফ নেচার স্টাডি হাট রিসর্টে তখন বেলা 12টা 30 । বুকিং সজল আগে থেকে করে রেখেছিল। (বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ 9830085483,9874887046,9433077951) আমাদের রিসর্টের জায়গাটা বেশ নিরিবিলি অনেকটা খোলামেলা জায়গা নিয়ে তৈরি যেমনটা আমরা চেয়েছিলাম। গেট দিয়ে ঢুকেই গাড়ি রাখার জায়গা ।আশেপাশে আরো কয়েকটা রিসর্ট আছে সেগুলোও বেশ শান্ত পরিবেশের মধ্যেই। ঘরে গিয়ে স্নান সেরে নিলাম, দুপুরের খাবারের অর্ডার আগেই দেয়া ছিল, রিসর্ট কম্পাউন্ডে এক পাশে ডাইনিং রুমে খেতে গেলাম। ভাত,ডাল, বেগুন ভাজা,অসাধারণ আলু পোস্ত, টাটকা রুই মাছ ,পাঁপড়, চাটনি ও মিষ্টি সহযোগে দুপুরের লাঞ্চ সারলাম। রান্নাটা অসাধারণ হয়েছিল,খেয়ে ঘরে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে 3 টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম লেকের ধারে,গাড়ি দাড় করিয়ে কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে চল্লাম জয়চণ্ডী পাহাড়ের পথে। পথে যেতে দেখলাম রাস্তার পাশেই একটা ছোট্ট হাট বসেছে। গাড়ি দাড় করে হাটে গেলাম চার জন ।এই হাটে চাষিরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষেত থেকে সদ্য তুলে এনেছে তরতাজা টাটকা সবজি , আছে দেশি মুরগি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি , সব জিনিসই টাটকা।গ্রামের মানুষের আনাগোনাই বেশি।বেশ মাটি মাটি একটা গন্ধ আছে এই হাটে। ক্রেতা, বিক্রেতা সবাই সবাইকার চেনাজানা ।ঝুড়িতে পরপর সজনে ডাঁটা, ঢেঁড়স, বাধাকপি,টমেটো,ফুলকপি, বেগুন, বিভিন্ন ধরনের শাক।সব টাটকা সবজি,দেখে মনটা ভরে গেল,আমরা কিছু টাটকা সবজি কেনাকাটা করলাম অনেক কম দাম আমাদের ওখান থেকে। সবজি গুলো গাড়ির ডিকিতে রেখে চল্লাম জয়চণ্ডী পাহাড়ের উদ্দেশ্য (‘হীরকরাজার দেশে’ ছবির কিছু দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছিল এখানেই), জয়চন্ডী পাহাড়ে কিছু সময় কাটিয়ে,জয়চন্ডী মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে চললাম গড় পঞ্চকোট এর পথে।এই সময় হাল্কা বৃষ্টি হওয়াতে, সুন্দর একটা আবহাওয়া পাওয়া গেল।বড় রাস্তায় এসে কিছুটা হাইওয়ে দিয়ে গিয়ে একটি সরু রাস্তা নিলাম। গড় পঞ্চকোট এর পাহাড়ি রাস্তা এঁকে বেঁকে চলেছে, শোভা বাড়িয়েছে দুই ধারের পলাশ। সবুজের ওপর সাদায় লেখা ” পিন্দারে পলাশের বন, পালাব পালাব মন”।আমাদের চার চাকার যান পৌঁছে গেল গড় পঞ্চকোট । সবুজ প্রকৃতির মধ্যে ঢুকে পড়লাম আমরা,এক দিকে পুরোনো কেল্লা, অন্য দিকে নির্জন পাহাড়। শুনেছি কেল্লা বা গড় স্থাপিত হয়েছিল সিংহ দেও রাজাদের আমলে। অন্য মতে এই কেল্লা আরও অনেক প্রাচীন। সম্ভবত ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি। পুরোনো ভাঙা মন্দিরও আছে কয়েকটা। স্থাপত্যের স্টাইল দেখে মনে হয় নানা রাজার রাজত্বের সাক্ষী গড় পঞ্চকোট। শেষ বিকেলের আভা এসে পড়ছে পাহাড়ের গায়ে, ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে বেরিয়ে পড়া পাঞ্চেত বাঁধের উদ্দেশে । জঙ্গলের বুক চিরে পিচকালো রাস্তা গিয়েছে বেঁকে, শুনশান রাস্তা জনমানবহীন আমাদের গাড়ি যখন পাঞ্চেত ডাম পৌছালো তখন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। দৈর্ঘ্যে বেশ লম্বা এই বাঁধ, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখা যায় না। এখান থেকে এবার ফেরার পালা রিসর্টে ফিরে আসার কিছুক্ষন পরেই এসে গেল মুড়ি আর ভেজপকোড়া।এটা রিসর্টে মাথাপিছু দিনপ্রতি Rs.350/- টাকার খাবার প্যাকেজ এর মধ্যেই পরে।আমরা অতিরিক্ত চিকেন পকোড়া অর্ডার করেছিলাম। চার বন্ধুর জমাট আড্ডা। রাজনীতি, খেলাধুলা,ছোটবেলার গল্প কোন কিছুই আর বাদ থাকলো না, আর সঙ্গে অবশ্যই প্রকাশের গলায় গান।চলতে থাকলো দেদার আড্ডা।রিসোর্টটি খালি ছিলো না , ট্যুরিস্টে ভরা ছিলো।আমরা সবার শেষে ডিনার এ বসলাম।গরম গরম রুটির সাথে চিকেন কষা বেশ ভালই লাগলো। সন্ধ্যেবেলা খুব এনজয় করে শুতে শুতে দেরি হয়ে গেল। ভোর থেকে সজল উৎপাত শুরু করলো একবার লাইট অন করে, তো একবার পাখা অফ করে। ভোর পাচটা থেকে ডাকা শুরু করলো সবাইকে,আর শুয়ে থাকা গেলো না, বেরিয়ে পড়লাম আদিবাসীদের গ্রাম ঘুরে আবার লেকের ধারে পৌছালাম।গ্রামের বাচ্চাদের হাতে তৈরি পাতা দিয়ে বানানো ফুল কিনে রিসর্টে ফিরে এলাম। সকালের জলখাবার খেয়ে তৈরী হয়ে একেবারে চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লাম। আজ ফেরার পালা। রওনা দিলাম মাইথন ড্যামের দিকে। বরাকর নদীর ওপর এই বাঁধটি তৈরী করা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই বাঁধে ১২টি লক গেট তৈরী করা হয়েছে। অসাধারণ সৌন্দর্য্য চারপাশের পাহাড় মাঝে বড় মনোরম পরিবেশ মাইথন লেকের। এর একধারে রয়েছে ঝাড়খন্ড আর একধারে রয়েছে পশ্চিমবাংলা। প্রচুর ট্যুরিস্ট এর জনসমাগম মাইথন লেকের ধারে। এখন থেকে পৌঁছে গেলাম কল্যানেশ্বরী মন্দির। ৫০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস এই মন্দিরে। শক্তি রূপে আরাধ্যা দেবী কল্যানেশ্বরী খুবই জাগ্রত হিসেবে খ্যাত।কল্যানেশ্বরী মন্দির থেকে বেরিয়েই রওনা দিলাম বাড়ির পথে। ফিরতি পথ , গাড়িতে করে একইভাবে ফেরা। সব ছবি মোবাইলে তোলা। আমি লেখক নই। যা মনে এলো লিখলাম । Post By:- Tapas Mitra
0 Comments
2017 সালের নভেম্বর মাসের শুরুতে, কোলকাতায় যখন সবে ঠান্ডা পরছে তখন বাঙালির পূজোর রেশটা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে।আর মনটাও খুঁজছে এক নিরিবিলি নির্জনের আনন্দ।ঠিক এই সময় আমার ভাই ওরফে শালা একদিন চা-সিগারেট সহযোগে গল্প করতে করতে বললো "বরন্তি"।"বরন্তি"? আমিও উচ্ছাসের সঙ্গে বললাম হ্যাঁ এবার আমরা "বরন্তি"। ঠিক এই ঘটনার দশ দিন পর আমরা যাত্রা শুরু করলাম।অর্থাৎ তেরোই নভেম্বর। ছয় জন মানুষের ছ'টা আলাদা আলাদা অনুভুতি,উতফুল্লতা নিয়ে।হাওড়া স্টেশান থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন নিদিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর ফাইনাল হুইসেল দেয়ার সাথে সাথে শীতের প্রথম ঠান্ডা হিমেল হাওয়া শূণ্য শরীর আর মনকে ছূঁয়ে গেল। শুরু হলো নিত্য জীবন যাপনের বাইরে একটা নতুন তিন দিনের জীবন যাত্রা। ন'টা চল্লিশ...অনেক নাম না জানা গ্রাম অনেক শহর পেরিয়ে আসানশোল।সঠিক সময়ে ট্রেনের সাথে আমরাও।স্টেশানের লোককোলাহল থেকে বেরিয়ে এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে প্রকৃতির রুপে বিলিন হওয়ার ইচ্ছা সকলের চোখে মুখে তখন পরিষ্কার একটা রঙ নিয়েছে। দশটা কুড়ি নাগাদ পূর্ব নির্ধারিত গাড়ি আমাদের নিয়ে রওনা হলো প্রকৃতি সুন্দরী "বরন্তির" উদ্দেশ্যে।চারিদিক তখন সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে আমাদের মনে।এরপর ঘন্টা দেরেকের যাত্রা পথের বর্ণনা নিজের চোখে না দেখলে,বর্ণনা দেওয়ার বাক্য আমার নেই। এগারোটা চল্লিশ...."মহুলবন রিসর্ট বরন্তি"একটু নিজেদের মত সময় কাটিয়ে সটান দুপুরের খাবারের টেবিলে।অসাধারন আতিথেয়তা এবং খাবার।প্রথম মুগ্ধ হলাম বরন্তিতে।আশা বারলো আরো মুগ্ধ হওয়ার ইচ্ছায়। এবার পালা "বিহারিনাথ","শুসুনিয়ার" ডাকে সারা দেওয়া।বরন্তি লেকের গা ঘেঁষে আমাদের গাড়ি উঁচু -নিচু পথ দিয়ে বরন্তি লেক টাকে ডানদিকে রেখে আপন গতিতে হেলতে দুলতে হাতির মত এগিয়ে চলছে বিহারিনাথ এর দিকে।হটাৎ গাড়ি ব্রেক মারল,ছ'জোরা চোখ গাড়ির সামনে এক সাথে দেখলাম সর্পরাজ রোদ পোহাতে ব্যাস্ত।সর্পরাজ নিজেও ইতিমধ্যে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজের গতিতে লেকের জলে গা ডুবিয়ে লুকিয়ে পরলেন।অবশেষে আমরাও মজা করতে করতে,গান শুনতে শুনতে,গল্প করতে করতে গ্রামিন জঙলি পথ অতিক্রম করে বিহারিনাথ পৌছেছি। বিহারিনাথ কে বিদায় জানিয়ে এখন শুসুনিয়ার পথে ছবি তুলতে ব্যাস্ত এমন সময় আমাদের চালক সাহেব জোরে আমার হাত চেপে ইঙ্গিত করলো হাত দশেক দূরের লতা-পাতা গাছ গুলোকে,আমিও সে দিকে তাকিয়ে চোখ রাখলাম ক্যামেরায়,দূরের দৃশ্য ফ্রেম বন্দির ধান্দায়।চালক সাহেব আরো একবার আমায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে বলায় ব্যাপারটা আমি বুঝলাম।লতা-পাতা গাছ গুলোর মাথায় লতা-পাতার মতো করেই এক জোরা লাউডগা মাথা উঁচিয়ে বসে।বোধায় আমাদেরই দেখছিল আর ভাবছিল "শহুরে বাবু এই প্রকৃতি আমাদের,আর আমরাই এর যোগ্য "।তাকেও বিদায় বলে আমাদের গন্তব্য শুসুনিয়া পৌছলাম।পরন্ত বিকেলে ঠাণ্ডাটা বেশ লাগছে।এক ভাঁড় করে চা নিয়ে ধীর গতিতে হাঁটা শুরু করলাম,যেখানে ভাঁড় ফেললাম নিচের দিকে সেখান থেকেই উঠতে হবে আমাদের উপরে।শুসুনিয়ার পাথর খচিত পথ হাতছানি দিয়ে ডাকছে।শুরু হলো পথ চলা।মোটামুটি হেঁটে,বিশ্রাম না নিয়ে পয়তাল্লিশ মিনিটে যতটা উঠলাম সেখান থেকে বহুদূর বিস্তৃত নিচের গ্রাম গুলো অসাধারন এক মায়া সৃষ্টি করেছে। গাড়ি চলতে শুরু করলো অন্ধকার নিকশ কালো রাস্তা ভেদ করে মহুলবন রিসর্টের আঙ্গিনায়। হাত -মুখ ধুতে গিয়ে হাঁক পরলো অর্ধাঙ্গীনির,জলখাবার।তরিঘরি বেড়িয়ে দেখি বাঙালি শ্রেষ্ট মুরি,গরম পেঁয়াজি,চা আমাদের অপেক্ষায়। অনেকটা গাড়ি চরার পর মনে হচ্ছিল পায়ে হেঁটে বিশ-তিরিশ হাত দূরের ঔ বরন্তি পাহারটা ছূঁয়ে আসি,ভাবনা যখন ভালো,নির্ভেজাল তখন আর দেরি কেনো!!ঘড়ি,মোবাইল না থাকায় রাতের খাবারের ডাক পরতে বুঝলাম রাত হলো,তবে চলো। ও মা ঠিক দেখছিতো??নিজেকেই বিশ্বাস হচ্ছে না,ঘড়ি/মোবাইল দু'জনই বলছে রাত সারে ন'টা। কিন্তু খিদে যে পাইনি তাওতো নয়,বুঝলাম নির্ভেজাল প্রকৃতিতে শরীর মন দুই নির্ভেজাল হয়ে উঠেছে। আর এর সঙ্গে আরো নির্ভেজাল রিসর্টের গরম রুটি,কষা দেশি মুরগির কারি,পেঁয়াজ,কাঁচা লঙ্কা। আমি আজও বিশ্বাস করি সেই শ্বাদ অনবদ্য। পাখিদের ডাক...দরজা খুলে দেখি সূর্য চোখ মেলে তাকাছে,বরন্তি পাহার কে মা এর মত জরিয়ে রেখেছে ঘন সাদা একরাশ কুয়াশা। এ দৃশ্য আমার মনে চিরকালের মত এক অন্য অনুভুতি। সকালের চা,জলখাবারের পর্ব শেষ। নতুন পর্বে গাড়ি এসে দাঁড়ালো "গড়পঞ্চো কোট"কাশিপুর রাজাদের এসস্টেট।পাহাড়ে লুকিয়ে রাখা তাদের রাধা-গোবিন্দ মন্দির দর্শন আর পাঁচটা মন্দিরের থেকে রোমহর্ষক কাহিনি কে হার মানাবে। শান্ত শীতল পরিবেশ,গাছের সমারহ মনকে শীতল আর নিস্বার্থ করে তুললো।আর ঠিক পরমূহুর্তে লোভ এলো মনে,হীরের লোভ। রাশি রাশি হীরে। একটু গেলেই সেই দেশ,যে দেশের রাজা হীরক দেশের রাজা বলে পরিচিত,আর রাজ্যটি হীরক রাজ্য বলে। পাথরের উপরে পাথর রেখে কেউ যেন সাজিয়েজে "হীরক রাজার দেশ জয়চন্ডি পাহাড় "গোটা পাহাড় টাতে এক সুন্দর শিল্প এক কাল্পনিক রেখায় একেঁ দিয়েছে কোনো এক শিল্পী,আর কোল বেয়ে উঠে যাওয়া সিঁড়ি সেই শিল্পীর দেখানো রাস্তা। পানঞ্চেত এসে বুঝলাম খিদে পেয়েছে।খানিকখন থেকে আইসক্রীম খেতে খেতে নৌকা বিহার শূরু করলাম মাইথনের জলে। এবার বাকি মা কল্যাণেশ্বরির আর্শিবাদ "জয় মা"। পরদিন সকাল দশটা পয়তাল্লিশ আসানশোল স্টেশান থেকে ফাইনাল হুইসেল,ট্রেন চলতে শুরু করলো হাওড়ার দিকে। হাতে বরন্তির গ্রামবাসীর হাতে তৈরী টাটকা খেঁজুর গুর। Post By:- Suranjit Ghosh
পাঞ্চেত,বারন্তী:- =========== গতকাল যেখানে শেষ করে ছিলাম আজ শুরু করলাম তার পরবর্তী অধ্যায়,গড়পঞ্চকোট থেকে আমাদের গাড়ি ছুটলো পাহড়ীপথের বিভিন্ন বাঁক ঘুরে ঘন জঙ্গলের বুক চিরে পান্চেত জলাধারে র উদ্দেশে, ঝাড়খন্ডের ধানবাদ জেলায় ১৯৫৯সালে দামোদর নদীর উপর তৈরী দামোদর ভ্যালি করপোরেশন এর বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য উপযোগী একটি কাজ।এর দৈর্ঘ্য ৬৭৭৭মিটার বা ২২১৫৫ফুট,উচ্চতা ১৩৪ফুট।নীল জলরাশি এখানে দীগন্ত ছুয়েছে ,গাড়িকে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়তে বলে পায়ে পায়ে এগিয়ে চললাম ফুটপাথ ধরে জলরাশির দিকে চোখ রেখে,দূরে মাছধরার নৌকোগুলো দেখা যায় ।নিচে কিনারায় সার বাঁধা নৌকাগুলো জলের সঙ্গে যেন খেলা করে আর তৈরী হয় অদ্ভুত এক শব্দমালা ছলাৎ ছলাৎ। এখানে একটা পার্ক আছে,সময়ের অভাবে এবার আর যাওয়া হলো না,আমরা গাড়ি ঘুরিয়ে বাংলার দিকে এসে মাটির ঢালু রাস্তা দিয়ে নেমে এলাম দামোদর এর কাছে।,একটা কথা বলা হয়নি এই বাধের একদিক বাংলা অন্য দিক ঝাড়খন্ড এবং সব জায়গাটাই সি.আই.এস.এফ র নজরাদারি র মধ্যে। দামোদরের বুকে বাঁধের গভীর জলে নৌকায় চাপার মজাই আলাদা, চুটিয়ে সেই আনন্দ উপভোগ করে কাছাকাছি একটা হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার চলা শুরু,পরবর্তী গন্তব্য মুরারডী লেক যাকে সবাই বারন্তী নামেই চেনে।কাছের রেলওয়ে স্টেশন মুরারডী,বারন্তী এক ছোট্ট গ্রাম,রাজচন্দপুর ইরিগেশন প্রকল্পের আওতায় একটি জল প্রকল্প,পান্চেত থেকে দুরত্ব২২কি.মি। দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্হানে অপরূপ নয়নাভিরাম বারন্তী,একদিকে মুরারডী অন্য দিকে বারন্তী পাহাড়।সূর্য অস্ত যাবার দৃশ্য দেখা অসাধারণ,যা বর্ননা করা আমার মতো কলমচির পক্ষে অসম্ভব।লেকের টলটলে জলের উপর তার ছায়ার খেলা দেখতে দেখতে কখন যে ঝুপ করে আঁধার ঘনিয়ে এল বুঝতেই পারলাম না।আবার বাড়ি ফেরার তাগাদা,বিদায় বারন্তী,আবার আসবো কথা দিলাম। Post By:- Chandan Dutta Roy
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |