পুরুলিয়ার জয়চন্ডী পাহাড়ে যারা গিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন,পাহাড়ের মাথায় ওঠার মাঝখানে, সিড়ির পাশে ইটের তৈরি গোলাকার গম্বুজ। এটা কি?এই গম্বুজ নিয়ে নানা মত। কেউ বলেন ওয়াচ টাওয়ার,কেউ বলেন সিমাফোর টাওয়ার। তবে হ্যাঁ এটি সিমাফোর টাওয়ার।১৮৩০--৩৩ সালে তদানীন্তন ভারত সরকার খবর পাঠানোর জন্য কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম থেকে বোম্বাই (মুম্বাই) পর্যন্ত ৮ মাইল অন্তর অন্তর ১০০ ফুট উঁচু এই টাওয়ার গুলো তৈয়ারী করেছিলেন। টাওয়ার গুলো ফোর্ট উইলিয়াম থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম দিকে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলাকে অতিক্রম করেছে।
সিমাফোর পদ্ধতি হল, প্রথম টাওয়ার থেকে দৃশ্যমান সাংকেতিক নির্দেশ পাঠানো হতো দ্বিতীয় টাওয়ারে দ্বিতীয় টাওয়ার সেটা দেখে তৃতীয় টাওয়ারে, এই ভাবেই কিছুক্ষণের মধ্যেই সঠিক জায়গায় খবর পৌঁছে যেত। উন্নত প্রযুক্তির তারবার্তা প্রেরনের উপায়টি আবিষ্কার হলে, মাঝপথে এই প্রকল্প পরিত্যাক্ত হয়। এই টাওয়ার গুলোতে একটি টাওয়ার থেকে আর একটি টাওয়ারের ওয়াচ বা নজর রাখতে হতো,তাই এগুলোকে ওয়াচ টাওয়ার বা নজর মিনার বলা যেতেই পারে। তবে সিমাফোর ওয়াচ টাওয়ার বললে মনে হয় সঠিক। ধন্যবাদ।
0 Comments
পলাশ পার্বণ
প্রদীপ হাজরা অদ্ভুত একটা পালাই পালাই ভাব গ্রাস করে প্রতিবছর এই সময়টা এলেই । চারপাশে প্রকৃতির হোলি খেলা শুরু হয়ে যায় ফেব্রুয়ারির মধ্যভাগ থেকেই । প্রকৃতির একান্ত নিজস্ব এই রঙে রঙে রঙিন হয়ে ওঠা দেখতে হলে ব্যাগ গুছিয়ে পালাতেই হবে বাঁকুড়া-বীরভূম-পুরুলিয়া কিম্বা ঝাড়খণ্ড ওড়িশার ছোটোনাগপুর ঘেঁষা এলাকাগুলোতে । আমার বরাবরই পুরুলিয়ার প্রতি একটা আলাদা প্রেম , আলাদা ভালোলাগা রয়েছে । রুখুসুখু এই জেলার ভাণ্ডারে বিবিধ রতনের খোঁজ যারা একবার পাবেন , তাঁরা বারেবারেই ছুটে যাবেন পুরুলিয়ার আনাচে কানাচে । আমার সহপাঠী ডাক্তার পার্থসারথি নাগের মাধ্যমে আলাপ হয়েছিল পুরুলিয়ারই একজন বিশিষ্ট সরকারি আধিকারিক তাপস মাহাতো-বাবুর । এমন একজন নিপাট পরোপকারী ভালোমানুষের সান্নিধ্য কিম্বা সহযোগিতা পেলে যেকোনো গন্তব্যই হয়ে ওঠে রেশম মসৃণ । আমাদের হঠাৎ আবদারে সাড়া দিয়ে বাগমুণ্ডির টাটা হোটেলে থাকার সুবন্দোবস্ত করে দিলেন উনি । ব্যাস আর কি , দলবল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাতের আদ্রা চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ধরে । বরাভুম স্টেশন পেরিয়ে কিছুটা যাওয়ার পরেই দুপাশে শুরু হলো রঙের খেলা । ট্রেনে আসার পথে দুপাশে প্রচুর পলাশ দেখেছি ঠিকই , কিন্তু কাছে গিয়ে তার রঙ রূপ সৌন্দর্য অনুভব করার মধ্যে একটা আলাদা মাদকতা আছে । কিছুদুর গিয়েই তাই গাড়ি থামিয়ে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলল... পলাশ বনে ক্ষণিক হারিয়ে যাওয়া । দুপাশে চোখ মেলে তাকালেই লাল আবিরের আলিঙ্গন ! পলাশের সঙ্গী কুসুমও । এসময় কুসুম গাছে নতুন পাতা আসে... টুকটুকে লাল পাতা...দূর থেকে দেখে কৃষ্ণচূড়া বা পলাশ বলে ভ্রম হয় । এই এলাকায় কুসুমও অঢেল । ২০১৭ সালের পুজোর পরেই পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে গিয়েছিলাম । তাই এবার আর ট্যুরে অযোধ্যাকে রাখিনি ইচ্ছে করেই । আমাদের প্ল্যানই ছিলো গতবারে সময়ের অভাবে মিস হয়ে যাওয়া খয়রাবেড়া ড্যাম দর্শন আর বাগমুণ্ডির আশপাশের এলাকায় পলাশবনে ঘুরে বেড়ানো এবং নিখাদ ছুটি কাটানো । টাটা হোটেলের ঘরগুলো বেশ ছোটো ছোটো ,সদ্য চালু হওয়ায় অনেক পরিকাঠামোগত ভুলচুক আছে , কিন্তু হোটেলের মালিকের মন বেশ বড় আর উদার...সবসময় একটা মৃদু হাসি ঠোঁটে লেগেই আছে । আপনার যেকোনো সমস্যার কথা একবার জানালেই হল ! সঙ্গে সঙ্গে তৎপর হয়ে উদ্যোগী হবেন তার সমাধানে । আর খাওয়াদাওয়াও বেশ সস্তা এবং গুণগত মান খুবই ভালো । আমরা সন্ধ্যার দিকটা স্রেফ সময় কাটানোর জন্য পরপর দুদিন চিকেন আর মাটন রান্না করলাম নিজেরাই, এককথায় ভদ্রলোক অনুমতি দিয়ে দিলেন ! উনি সবই ব্যবস্থা করে দিলেন রুমের বাইরের করিডোরে ... গ্যাস , ওভেন , মশলাপাতি সবই । আর একজন স্টাফ সব ব্যাবস্থাপনা করে দিলেন আমাদের হাতে হাতে । বাগমুণ্ডির এই এলাকাটাতে পলাশ আর কুসুমের ছড়াছড়ি । হোটেলের সামনের উঠোনে , পাশের ফাঁকা মাঠে আর রাস্তার ওপারে অনেকগুলো পলাশগাছ দিগন্ত লাল করে রেখেছে সবসময় । গ্রামের শুরুতেই এই হোটেলের অবস্থান । সকাল হতেই একদল কচিকাঁচা আপনার দরজায় কড়া নাড়বে সদ্য ঝরা টাটকা একগাদা পলাশ নিয়ে সুপ্রভাত জানাতে । সামান্য দু- দশটাকা ওদের হাতে সেগুলোর বিনিময়ে তুলে দিয়ে দেখুন, একটা স্বর্গীয় হাসি উপহার পাবেন । হোটেলের রেস্টুরেন্টের পাশের ফাঁকা জমিটা ছাড়ালেই প্রথম বাড়িটাই গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যের । আমরা প্রথমদিনে বেড়াতে বেরিয়েই সাদর অভ্যর্থনা পেলাম । সদ্য পাকা কুলের ভারে ন্যুব্জ একটা কুলগাছ বাড়ির উঠানেই রয়েছে । আমাদের সঙ্গীসাথীরা একবার নাম কা ওয়াস্তে অনুমতি নিয়েই একগাদা কুল প্যাকেটবন্দি করে ফেললো । গ্রামের ভিতরের দিকে যতো এগোবেন পলাশের সংখ্যা ততই বাড়তে থাকবে । গ্রামের বাড়িগুলোর সীমানা ছাড়িয়ে ৫০ মিটার এগোলেই একটা বিশাল পলাশবন । চরাই উতরাই পেরিয়ে একটা উঁচু জায়গা আছে বনের মধ্যেই । সেখান থেকে দূর পাহাড়ের সীমা পর্যন্ত শুধুই পলাশ আর পলাশ গাছ । বেশিরভাগ গাছে সদ্য ফুল ফুটতে শুরু করেছে , কিছু গাছে এখনও কুঁড়ি আসেনি । সব মিলিয়ে মনে হবে কোনও স্বপনপুরিতে এসে উপস্থিত হয়েছেন । দুদিনে আমরা ঘুরে দেখলাম খয়রাবেড়া ড্যাম , পাখি পাহাড় , মাঠা পাহাড় , দুয়ারসিনি জঙ্গল , ছৌ নাচের গ্রাম চড়িদা এবং আদিবাসি অধ্যুষিত গ্রাম নিশ্চিন্তপুর । খুব বেশি দৌড়নোর ইচ্ছে নিয়ে আমাদের এই ট্যুরের পরিকল্পনা কড়া হয়নি , তাই একটু ধীরেসুস্থে সময় নিয়েই আমরা ছোটো এলাকার মধ্যে আমাদের ঘোরাঘুরি সীমাবদ্ধ করে রেখেছিলাম । তবে হাতে সময় থাকলে আর ইচ্ছে থাকলে অযোধ্যা পাহাড়ের পুরো এলাকা ঘুরে নিতে পারেন একটা গোটা দিন বরাদ্দ করে । আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পলাশ দর্শন... সেই উদ্দেশ্য আমাদের ২০০% পুরণ হয়েছে । থাকা ও খাওয়াঃ টাটা হোটেল ও শান্তি ট্যুরিসট লজ (৮৯৭২৫৩০৯৪৮ /৯৭৩৫৮৮০৫৪১ / ৯০৬৪৩০৩০২২) মা মঙ্গলা ট্যুরিসট লজ ( ৯৮০০৯৩৮৯৫৯ / ৯৫৭২৯৭০৮৮৪ ) এছাড়া বাগমুণ্ডি , চড়িদা , মাঠা পাহাড়ের আশে পাশে অনেকগুলো ছোটোখাটো হোটেল রিসোর্ট গরে উঠেছে । যাওয়া-আসাঃ রাতের আদ্রা চক্রধরপুর ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ধরে বরাভুম স্টেশনে নেমে ৫০০-৬০০ টাকায় গাড়ি নিয়ে ২৫ কিমি দুরের বাগমুণ্ডি ।। প্রদীপ হাজরা
ভ্রমণ এর নাম: ? উঠল বাই তো অযোধ্যা যায়?
??নিজেও জানতাম না যাবো!!?? গত 21/12/18 সকাল ১০:৩০ মর্নিং ডিউটি টাইম এ বন্ধুর ফোন এলো অযোধ্যা যাবে? ?জানতে চাইলাম কবে? বললো আজ রাতে ১০:৩০ বাস ছাড়বে। আমি বললাম না কাল ইভনিং ডিউটি। সে তো অনেক কথাবার্তা চলল, শেষমেষ বললো দেখো যদি কোনো ভাবে ছুটি ব্যবস্থা করা যায়..! একা এই ভাবে কোনো দিনই বাইরে যাইনি, ?? ভাবতে ভাবতে মন অযোধ্যা পৌঁছে গিয়ে ২ হাত তুলে উড়ছি হসপিটালেই ? শেষমেষ অন ডিউটি ডক্টর স্বাথী দি বললেন সুযোগে এসছে ঘুরে এসো....এটা শোনার পর আর ও উড়ছি ? ৩০ মিনিট ধরে ৩ জন স্টাফ দিদি কে এবং আমার সহকর্মী কে ফোন করে 22/12/18 ছুটি টা হয়ে গেল ?? ফোনে মাকে আর ছোটো বুনি কে বললাম অযোধ্যা যাচ্ছি... যাইহোক রাজী হলো একদিন এর ব্যাপার ?? সন্ধ্যা ৮ বন্ধুর বাড়ি পৌঁছলাম। একটু রেস্ট নিয়ে রাত ৯ টা বন্ধু আর বন্ধুগিন্নী সাথে আমি হালকা ডিনার সেরে রাত ১০:৩০ বাস পৌঁছলাম। (বাস উঠার আগে পর্যন্ত ভাবনা ছিল কাবাব মে হাড্ডি হচ্ছি নাতো)? ওদের ২ কে জন একসাথে বসিয়ে, আমি ৩ জন সিট একা নিয়ে বেশ ভালো করেই বসে গেলাম ?(মোটা বলে না,?দেদার জায়গা বলে)??। রাতে কিছুক্ষণ মজা করতে করতে শেষমেস ২২/১২/১৮ সকাল ৬:৪৫ বাস অযোধ্যা নিচে পৌঁছালো ?। নেমেই লিকার চা ? ফ্রেশ হয়ে সাজুগুজু ? তারপর সকাল ৮:৩০ মধ্যেই লুচি, দারুন ঘুগনি সাথে চকোলেটমিষ্টি? সকালের ব্রেকফাস্ট ভালই হোলো। সকাল ১০ টা ৯জন মিলে একটা সুমো ভাড়া করে ৩:২০ মধ্যে অযোধ্যার কিছু কিছু জায়গায় কভার হলো?(৩ ঘন্টা ২৫% বেশি সম্ভব না) সে যাই হোক দারুন হল্লোর, এক্সাইটমেন্ট ফটো সেশন # সাথে প্রকৃতির মনমুগ্ধকর অপূর্ব দৃশ্য দেখে দুপুর ১:২০ পিকনিক স্পট এসে একটু রেস্ট নিয়ে দুপুরের অসাধারণ রান্নার খাওয়া দাওয়া এবং স্নান সেরে.... রেডি হয়ে বাড়ির সবার জন্য এবং হসপিটাল কিছু স্টাফ দের জন্য টুকটাক কেনাকাটা করে বিকাল ৫ টাই বাস ছারলো.... সাথে পুরুলিয়ার মন ভরা আনন্দ নিয়ে গান শুনতে শুনতে বাস চললো তাঁর গন্তব্যে.... রাতের ডিনারটা প্যাকেট করেছিলেন ৮:৩০ মধ্যে দিয়ে দিলেন। তবে আমি রাতটা ব্রিটানিয়া দিয়ে কাটালাম। এই ভাবেই বাস রাত ১২:৪৪ এ শক্তিগড়ে এসে পৌঁছালো। শক্তিগড় এসে শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মিহিদানা, সীতাভোগ না নিয়ে কি ফেরা যাই। ?? রাত ১:৩০ বাস বন্ধুর বাড়ির সামনে নামালেন। তার সকাল ৮ ঘুম থেকে উঠে সকালে খাবার বন্ধুর বাড়ী সেরে হসপিটাল ১০-৪ ডিউটি সেরে পরে কবিগান খ্যাত শ্রদ্ধেয় অসীম সরকার মহাশয় এর কবিগান শুনে রাত ১১ বাড়ি ফিরলাম মা, কাকিমা, মামার সাথে(সাথে ২৪/১২ - ২৫/১২ ছুটি নিয়ে) ?? কী আমার ভ্রমণের গল্পের নাম সার্থক তো বন্ধুগন ?
কিরে! শুনলাম তুই নাকি আবার পুরুলিয়ার #অযোধ্যা পাহাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিস!
হ্যারে! ঠিকই শুনেছিস,সামনের মাসেই যাবো ভাবছি! একই জায়গায় যেতে তোর একঘেয়েমি লাগে না?কি পাশ বার বার একই জায়গায় গিয়ে? তোকে কি করে বোঝাই বল!তোরা সব আলো ঝলমলে বড়বড় শহরে ঘুরতে যাস! "পিন্দারে পলাশের বন পালাবো পালাবো মন" :::::::::::::::::: আমি যাই ঐ নিবিড় জঙ্গল,শাল,সেগুন,পলাশ,মহুয়ার বনে! তার মাঝেমাঝে উঁচু নিচু টিলা,এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি রাস্তায়,বনপথে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটাই আলাদা!!আর আমার মত সাধারণ মানুষের মনটা যখন বাইরে যাওয়ার জন্য আকুলি বিকুলি করে তখন হাতের কাছেই সাধ ও সাধ্যের মধ্যেই তো অপার সৌন্দর্যের আকরভূমি পুরুলিয়া,বাঁকুড়া, মেদিনীপুর কিছুটা এগিয়ে ঝাড়খণ্ড আছে। তবে সময় সূযোগ পেলে অন্য কোথাও যাই না তা বললে ভুল বলা হবে। তোকে তো আগের বারও বলেছিলাম যাবার জন্য।যাবি নাকি এবার? জানিস! পুরুলিয়ায় থাকা অনেক পাহাড়ের মধ্যে সমতল থেকে ২০০০ফুট উচ্চতার দলমা পাহাড়ের অংশ অযোধ্যার সৌন্দর্যের কোন তুলনাই হয় না। গতবারের মতো এবারও সোজা যাবো পুরুলিয়া।ওখান থেকে সিকারাবাদ হয়ে শাল,সেগুন,পলাশ,মহুয়ার পাহাড়ের জঙ্গলের বেষ্টনীর পাকদন্ডী ধরে সোজা হিলটপ!! অন্য দিক মানে বলরামপুর হয়ে বাঘমুন্ডী দিয়েও পাহাড়ে ওঠা যায়। পাহাড়ে ওঠার রাস্তাটা অন্য অনেক পাহাড়ে ওঠার মত আঁকা বাঁকাই।একদিকে খাদ তো অন্য দিকে উচু পাহাড়!তবে জায়গা ও জলবায়ু অনুযায়ী পাহাড় পর্বত বিশেষে গাছপালা অন্যরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই নয় কি? পথে তোর সাথে দেখা হবেই মাথায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাঠের বোঝা নিয়ে ওঠা বা নামার পথে স্হানীয় আদিবাসী রমনীদের সাথে। দেখা হতে পারে রাখাল বালক বা কোনো বয়স্ক মানুষের সাথে যে একপাল ছাগল অথবা গরু নিয়ে এই পথে উঠছে বা নামছে। এই পথে তাদের দেখা বা কোন সময় হ্যাট হ্যাট করে সেই গরুর পাল ছাগলের দলকে রাস্তা থেকে সরানোর অনুভূতিই অন্যরকম। অতি সাধারণ অথচ খুবই কঠিন এখানকার সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইটা, একেবারেই অন্যরকম।আজ যদিও আপাত শান্ত,তবু কান পাতলেই শুনতে পাবি ঝাড়খণ্ড,উড়িষ্যা লাগোয়া একসময়ের মাওবাদী অধ্যুষিত অনেক ঘটনার সাক্ষী এই এলাকার সেই বেঁচে থাকার বিচিত্র সব রৌমহর্ষক কথা। হিলটপে অনেক গুলো থাকার জায়গাও আছে। গতবার আমি ছিলাম নিহারিকাতে,এছাড়া এখন কিছু গেষ্ট হাউসও হয়েছে। আর আছে সুন্দর বাগান নিয়ে ভারত সেবাশ্রমের থাকার জায়গা। হিলটপ থেকে মাত্র এক ডের কিলোমিটারের মধ্যেই "ময়ূর পাহাড়"! আমরা যখন দিনের শেষে পাহাড়ের মাথা থেকে নিচের বনভূমি ও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুভব করছি,সেই সময়ই আলাপ হলো "পাহাড় সিং" এর সাথে। "পাহাড় সিং" নামটা কি অদ্ভুত না! ওর বাঁশির সুর সন্ধ্যার পর শুনলাম,পাহাড়ের নিস্তব্ধতার মধ্যে অসাধারন সে সুর,যেন পাহাড় গান গাইছে।আর তার সাথে যদি শুনতে পাস আদিবাসীদের মাদলের "দ্রিম দ্রিম" আওয়াজ তাহলে তো কথাই নেই। কিছু মানুষের সাথেও ওখানে আলাপ হয়ে ছিলো,তারা পাহাড়ি ঐ সব গরীব মানুষদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য নিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে। নিহারিকার পাশেই একটা পুলিশের ক্যাম্প ছিল। ভোরবেলা ওদের প্যারেড দেখে টিফিন খেয়ে চললাম "বামনী ফলস্","আপারড্যাম","লোয়ার ড্যাম","চড়িদা গ্রাম" হয়ে "খয়েরবেড়া ড্যাম" দেখতে। যেখান থেকে "আপার ড্যাম" যাওয়ার রাস্তাটা বাঁক নিচ্ছে তার ঠিক আগেই ডান দিকে একটা রাস্তা সোজা নিচের দিকে জঙ্গলের পথে এগিয়ে গেছে।এখানেই মার্বেল পাথরের একটা পরিত্যক্ত খাদান যা এখন সুবৃহৎ জলাশয় "মার্বেল রক" নামে পরিচিত।আরও একটু নিচের দিকে নামলে সেই "বামনী ফলস্"।ঐ "বামনী ফলস্" এর জলকে বাঁধ দিয়েই তৈরী করা হয়েছে "আপার ড্যাম"। ঝরঝর করে "বামনী" তার জলধারা কে নিচে ছুড়ে ফেলেছে,পাথুরে ঐ জঙ্গলের মধ্যে এর একটা আলাদা সৌন্দর্য। বর্ষায় নাকি এর রূপ ভয়ানক হয়,সে তো হতেই পারে!মনে পড়ে সেই ঘটনার কথা?যেখানে কয়েকটা জীবনহানির ঘটনা ঘটেছিল।এই "বামনী ফলস্" ট্রেকিং রুটেই "হরপা বানে" ঘটে ছিল সেই ভয়াবহ দূর্ঘটনা। "আপার ড্যামে" পৌঁছে মনে হলো আমি যেন অন্য কোন দেশে এসে পৌঁছেছি। জাপানি সহযোগিতায় এই "#হাইড্রোলিক #প্রোজেক্ট"।ড্যামের জল একটা নির্দিষ্ট সময় টানেলের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এখানে।জল পৌঁছায় "লোয়ার ড্যামে"। আবার পাম্পের সাহায্যে সেই জলকে ওপরে তুলে নিয়ে আসা হয়। জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর। বিশ্বাস কর ! চারিদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ওখান থেকে নিচের দিকে তাকালে মনে ভোরে উঠতে বাধ্য। টানেলের প্রবেশও করা যায় বিশেষ অনুমতি থাকলে। আমার সেই সৌভাগ্য হয়নি।এবার একবার দেখবো চেষ্টা করে। "আপার- লোয়ার ড্যাম" দেখে চলে এলাম "চড়িদা" গ্রামে।সেই বিখ্যাত "গম্ভীর সিং মুড়া"র গ্রামে। "ছৌ" নাচের মুখোশ তৈরির গ্রাম। কাগজের মন্ড আর মাটির ছাঁচ দিয়ে কি সুন্দর সুন্দর মুখোশ তৈরি করেন ওখানকার শিল্পীরা। ওনার নাম শুনেছিস নিশ্চয়ই। "পদ্মশ্রী" উপাধি লাভ করেন "ছৌ" নাচের জন্য,অনেক বার বিদেশেও যান। যদিও এত বড়মাপের বিখ্যাত মানুষটির শেষ জীবন খুবই অভাবে ও কষ্টের মধ্যেই কেটেছিল জেনে কষ্টই পেলাম। "চড়িদা" ঘুরে আমরা এগিয়ে চললাম গ্রামীণ জনপদ ছাড়িয়ে "খয়েরবেড়া ড্যাম" দেখতে। চারদিকে সবূজ আর কোন কোনো জায়গায় ধূসর পাহাড় ঘেরা কাকচক্ষু জলাশয় "খয়েরবেড়া"। কিছুক্ষন সেই অপার সৌন্দর্যের মুখোমুখি হয়ে ঐ জলের হাত পা ভিজিয়ে মাথায় জল হাত বুলিয়ে ফিরে চললাম।স্হানীয় গ্রামের কাছে প্রচুর কুল বাগান লক্ষ করলাম।একজন সহৃদয় মানুষ কিছু কুল আমাদের পেড়ে দিলেন। আবার একই পথ ,"বাঘমুন্ডী"তে দুপুরের খাবার প্রায় বিকেলে খেয়ে ফিরে এলাম সেই "হিলটপে"। সন্ধ্যা নেমে আসছে হিলটপে মূড়ি আর জিলিপির মত প্যাঁচানো এক তেলেভাজা "ভাবড়া" তাই দিয়ে সান্ধ্য জলযোগ সহ ক্লান্ত দেহটাকে পৌঁছে দিলাম নিহারিকাতে। জানিস,বারবার দেখলেও যেসব জায়গা কোনদিনই পুরোনো হয় না তার মধ্যেই পরে এই অযোধ্যা পাহাড় ও তার আশপাশের এলাকা। শোন! তোর বর্ননা শুনে আমার যাওয়ার ইচ্ছেটা প্রবল ভাবে হচ্ছে রে! তোদের গাড়িতে যায়গা হবে ?এবার নিবি আমাকে!! ""'"'''""""""""" |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |