কিরে! শুনলাম তুই নাকি আবার পুরুলিয়ার #অযোধ্যা পাহাড়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিস!
হ্যারে! ঠিকই শুনেছিস,সামনের মাসেই যাবো ভাবছি! একই জায়গায় যেতে তোর একঘেয়েমি লাগে না?কি পাশ বার বার একই জায়গায় গিয়ে? তোকে কি করে বোঝাই বল!তোরা সব আলো ঝলমলে বড়বড় শহরে ঘুরতে যাস! "পিন্দারে পলাশের বন পালাবো পালাবো মন" :::::::::::::::::: আমি যাই ঐ নিবিড় জঙ্গল,শাল,সেগুন,পলাশ,মহুয়ার বনে! তার মাঝেমাঝে উঁচু নিচু টিলা,এবড়ো খেবড়ো পাহাড়ি রাস্তায়,বনপথে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দটাই আলাদা!!আর আমার মত সাধারণ মানুষের মনটা যখন বাইরে যাওয়ার জন্য আকুলি বিকুলি করে তখন হাতের কাছেই সাধ ও সাধ্যের মধ্যেই তো অপার সৌন্দর্যের আকরভূমি পুরুলিয়া,বাঁকুড়া, মেদিনীপুর কিছুটা এগিয়ে ঝাড়খণ্ড আছে। তবে সময় সূযোগ পেলে অন্য কোথাও যাই না তা বললে ভুল বলা হবে। তোকে তো আগের বারও বলেছিলাম যাবার জন্য।যাবি নাকি এবার? জানিস! পুরুলিয়ায় থাকা অনেক পাহাড়ের মধ্যে সমতল থেকে ২০০০ফুট উচ্চতার দলমা পাহাড়ের অংশ অযোধ্যার সৌন্দর্যের কোন তুলনাই হয় না। গতবারের মতো এবারও সোজা যাবো পুরুলিয়া।ওখান থেকে সিকারাবাদ হয়ে শাল,সেগুন,পলাশ,মহুয়ার পাহাড়ের জঙ্গলের বেষ্টনীর পাকদন্ডী ধরে সোজা হিলটপ!! অন্য দিক মানে বলরামপুর হয়ে বাঘমুন্ডী দিয়েও পাহাড়ে ওঠা যায়। পাহাড়ে ওঠার রাস্তাটা অন্য অনেক পাহাড়ে ওঠার মত আঁকা বাঁকাই।একদিকে খাদ তো অন্য দিকে উচু পাহাড়!তবে জায়গা ও জলবায়ু অনুযায়ী পাহাড় পর্বত বিশেষে গাছপালা অন্যরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই নয় কি? পথে তোর সাথে দেখা হবেই মাথায় বিশেষ পদ্ধতিতে কাঠের বোঝা নিয়ে ওঠা বা নামার পথে স্হানীয় আদিবাসী রমনীদের সাথে। দেখা হতে পারে রাখাল বালক বা কোনো বয়স্ক মানুষের সাথে যে একপাল ছাগল অথবা গরু নিয়ে এই পথে উঠছে বা নামছে। এই পথে তাদের দেখা বা কোন সময় হ্যাট হ্যাট করে সেই গরুর পাল ছাগলের দলকে রাস্তা থেকে সরানোর অনুভূতিই অন্যরকম। অতি সাধারণ অথচ খুবই কঠিন এখানকার সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার লড়াইটা, একেবারেই অন্যরকম।আজ যদিও আপাত শান্ত,তবু কান পাতলেই শুনতে পাবি ঝাড়খণ্ড,উড়িষ্যা লাগোয়া একসময়ের মাওবাদী অধ্যুষিত অনেক ঘটনার সাক্ষী এই এলাকার সেই বেঁচে থাকার বিচিত্র সব রৌমহর্ষক কথা। হিলটপে অনেক গুলো থাকার জায়গাও আছে। গতবার আমি ছিলাম নিহারিকাতে,এছাড়া এখন কিছু গেষ্ট হাউসও হয়েছে। আর আছে সুন্দর বাগান নিয়ে ভারত সেবাশ্রমের থাকার জায়গা। হিলটপ থেকে মাত্র এক ডের কিলোমিটারের মধ্যেই "ময়ূর পাহাড়"! আমরা যখন দিনের শেষে পাহাড়ের মাথা থেকে নিচের বনভূমি ও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনুভব করছি,সেই সময়ই আলাপ হলো "পাহাড় সিং" এর সাথে। "পাহাড় সিং" নামটা কি অদ্ভুত না! ওর বাঁশির সুর সন্ধ্যার পর শুনলাম,পাহাড়ের নিস্তব্ধতার মধ্যে অসাধারন সে সুর,যেন পাহাড় গান গাইছে।আর তার সাথে যদি শুনতে পাস আদিবাসীদের মাদলের "দ্রিম দ্রিম" আওয়াজ তাহলে তো কথাই নেই। কিছু মানুষের সাথেও ওখানে আলাপ হয়ে ছিলো,তারা পাহাড়ি ঐ সব গরীব মানুষদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সাহায্য নিয়ে আসে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে। নিহারিকার পাশেই একটা পুলিশের ক্যাম্প ছিল। ভোরবেলা ওদের প্যারেড দেখে টিফিন খেয়ে চললাম "বামনী ফলস্","আপারড্যাম","লোয়ার ড্যাম","চড়িদা গ্রাম" হয়ে "খয়েরবেড়া ড্যাম" দেখতে। যেখান থেকে "আপার ড্যাম" যাওয়ার রাস্তাটা বাঁক নিচ্ছে তার ঠিক আগেই ডান দিকে একটা রাস্তা সোজা নিচের দিকে জঙ্গলের পথে এগিয়ে গেছে।এখানেই মার্বেল পাথরের একটা পরিত্যক্ত খাদান যা এখন সুবৃহৎ জলাশয় "মার্বেল রক" নামে পরিচিত।আরও একটু নিচের দিকে নামলে সেই "বামনী ফলস্"।ঐ "বামনী ফলস্" এর জলকে বাঁধ দিয়েই তৈরী করা হয়েছে "আপার ড্যাম"। ঝরঝর করে "বামনী" তার জলধারা কে নিচে ছুড়ে ফেলেছে,পাথুরে ঐ জঙ্গলের মধ্যে এর একটা আলাদা সৌন্দর্য। বর্ষায় নাকি এর রূপ ভয়ানক হয়,সে তো হতেই পারে!মনে পড়ে সেই ঘটনার কথা?যেখানে কয়েকটা জীবনহানির ঘটনা ঘটেছিল।এই "বামনী ফলস্" ট্রেকিং রুটেই "হরপা বানে" ঘটে ছিল সেই ভয়াবহ দূর্ঘটনা। "আপার ড্যামে" পৌঁছে মনে হলো আমি যেন অন্য কোন দেশে এসে পৌঁছেছি। জাপানি সহযোগিতায় এই "#হাইড্রোলিক #প্রোজেক্ট"।ড্যামের জল একটা নির্দিষ্ট সময় টানেলের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় এখানে।জল পৌঁছায় "লোয়ার ড্যামে"। আবার পাম্পের সাহায্যে সেই জলকে ওপরে তুলে নিয়ে আসা হয়। জায়গাটা সত্যিই খুব সুন্দর। বিশ্বাস কর ! চারিদিক পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, ওখান থেকে নিচের দিকে তাকালে মনে ভোরে উঠতে বাধ্য। টানেলের প্রবেশও করা যায় বিশেষ অনুমতি থাকলে। আমার সেই সৌভাগ্য হয়নি।এবার একবার দেখবো চেষ্টা করে। "আপার- লোয়ার ড্যাম" দেখে চলে এলাম "চড়িদা" গ্রামে।সেই বিখ্যাত "গম্ভীর সিং মুড়া"র গ্রামে। "ছৌ" নাচের মুখোশ তৈরির গ্রাম। কাগজের মন্ড আর মাটির ছাঁচ দিয়ে কি সুন্দর সুন্দর মুখোশ তৈরি করেন ওখানকার শিল্পীরা। ওনার নাম শুনেছিস নিশ্চয়ই। "পদ্মশ্রী" উপাধি লাভ করেন "ছৌ" নাচের জন্য,অনেক বার বিদেশেও যান। যদিও এত বড়মাপের বিখ্যাত মানুষটির শেষ জীবন খুবই অভাবে ও কষ্টের মধ্যেই কেটেছিল জেনে কষ্টই পেলাম। "চড়িদা" ঘুরে আমরা এগিয়ে চললাম গ্রামীণ জনপদ ছাড়িয়ে "খয়েরবেড়া ড্যাম" দেখতে। চারদিকে সবূজ আর কোন কোনো জায়গায় ধূসর পাহাড় ঘেরা কাকচক্ষু জলাশয় "খয়েরবেড়া"। কিছুক্ষন সেই অপার সৌন্দর্যের মুখোমুখি হয়ে ঐ জলের হাত পা ভিজিয়ে মাথায় জল হাত বুলিয়ে ফিরে চললাম।স্হানীয় গ্রামের কাছে প্রচুর কুল বাগান লক্ষ করলাম।একজন সহৃদয় মানুষ কিছু কুল আমাদের পেড়ে দিলেন। আবার একই পথ ,"বাঘমুন্ডী"তে দুপুরের খাবার প্রায় বিকেলে খেয়ে ফিরে এলাম সেই "হিলটপে"। সন্ধ্যা নেমে আসছে হিলটপে মূড়ি আর জিলিপির মত প্যাঁচানো এক তেলেভাজা "ভাবড়া" তাই দিয়ে সান্ধ্য জলযোগ সহ ক্লান্ত দেহটাকে পৌঁছে দিলাম নিহারিকাতে। জানিস,বারবার দেখলেও যেসব জায়গা কোনদিনই পুরোনো হয় না তার মধ্যেই পরে এই অযোধ্যা পাহাড় ও তার আশপাশের এলাকা। শোন! তোর বর্ননা শুনে আমার যাওয়ার ইচ্ছেটা প্রবল ভাবে হচ্ছে রে! তোদের গাড়িতে যায়গা হবে ?এবার নিবি আমাকে!! ""'"'''"""""""""
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |