একদিকে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। অন্যদিকে তার মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছে লোহিত নদী, খেরকোটিয়া নদী ও সুবনসিরি নদী। এর মাঝেই অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম নদী দ্বীপ - মাজুলী দ্বীপ।
এই মাজুলী দ্বীপেই প্ৰাচীন উপজাতি, মিসিং দের বাস। আদতে তাঁরা ছিলেন মিরি উপজাতি। "মিসিং" উপাধিটা ইংরেজদের থেকে পাওয়া। এক মিসিং উপজাতির যুবকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম - এনাদের আদি বসবাস ছিল তিব্বতে। সেখান থেকে ওনারা আসেন অরুনাচল প্রদেশ। তারপর এই মাজুলী দ্বীপে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রর রোষে প্রতি বছরই একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে মাজুলী। এই মিসিংরাও একই সাথে বারবার হয়েছেন ভিটে মাটি ছাড়া...এর থেকেই তাঁদের নামকরণ মিসিং ( Missing ) as they are missing their lands every time. মাটি থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে বাঁশের ঘর বাঁধেন এই মিসিংরা বন্যার থেকে রক্ষা পেতে। মাজুলীর পাথুরিচক গ্রামে এমনই এক মিসিং পরিবারের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর সৌভাগ্য আমার হলো। বাঁশের বানানো সিঁড়ি ( মই বলাই ভালো) বেয়ে ঘরে ঢুকতেই অভ্যর্থনা পেলাম বাটিতে তাঁদের রাইস বিয়ার দিয়ে। অসাধারণ সেই স্বাদ। মিসিং ভাষায় এর নাম 'আপঙ'। এই আপঙ কিন্তু তাঁদের জীবনে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে - যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠান, এমনকি মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও এই 'আপঙ' নিয়ে যাওয়ার প্রচলন আছে।
আমিষ নিরামিষ সবই খান তারা, তবে পুরোটাই সেদ্ধর উপর - তেল, মশলা বা হলুদের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে।
মিসিং উপজাতিদের ভাষা আছে কিন্তু লিখিত কোন বর্ন নেই। বাঁশের তৈরি ঘরের মেঝের উপর বসানো মাটির চৌকোনা উনন। গৃহকর্ত্রী তখন ব্যস্ত রান্নায় - মাছের ঝোল রান্না হচ্ছে। এই উনন ওনাদের খুবই পবিত্র স্থান। তাঁদের বিশ্বাস তাঁদের পূর্বপুরুষের আত্মা উনুনের মাটির কাঠামোতে বিরাজিত। ঘুম থেকে উঠে সকালে তাই সর্ব প্রথম কাজ হলো এই উনুনকে পরিষ্কার করে নিকানো। আবার রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও এটাই শেষ কাজ। একই ঘরে পরিবারের সকলে মিলে রান্না, খাওয়া, শোয়া এবং থাকা। বিবাহের পরই শুধুমাত্র আলাদা ঘর বানানো হয় পারটিশন দিয়ে। ১) কিভাবে যাবেন? ২) কোথায় থাকবেন? ৩) কত খরচা?
এই সমস্ত এবং আরো অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন আমার এই ডিডিওটিতে:
0 Comments
একঘেয়েমি জীবনের স্বাদ বদল করতে চলুন ঘরে বসেই মানস ভ্রমণ করে আসি।
আমার স্মৃতি রোমন্থন আর আপনাদের ক্ষনিকের মধুর মুহুর্ত যাপন। প্রতি বছরই বাক্সপ্যাঁটরা গুঁছিয়ে ইতিউতি ছুটে বেড়াই। যাকে বলে পায়ের তলায় সর্ষে। আমার পছন্দের তালিকায় সর্বাগ্রে স্থান পায় জঙ্গল। তার নিস্তব্ধতা, তার অপার শান্তি আমায় নিশির ডাকের মত হাতছানি দেয়। সেই ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য আমার নেই। অতএব সেই নিশির ডাকের বশবর্তী হয়ে গন্তব্য নির্বাচিত হলো আসামের মানস জাতীয় উদ্যান। ছবির মত ছোট্টো স্টেশন নিউ বঙাইগাঁও থেকে আমাদের যাত্রা হল শুরু। এপ্রিল মাসের প্রথম দিক, প্রকৃতি অতি মনোরম, সবুজে মোড়া গ্রাম, ছোট ছোট নদী, চারপাশের দৃশ্যাবলী যেন পটে আঁকা ছবি। চেটে পুটে নিচ্ছিলাম প্রকৃতির রূপ। আর মনে মনে ভাবছিলাম---মিলন হবে কত ক্ষণে, আমার মনের মানসেরও সনে। ভাবনায় ছেদ পড়ল, পৌঁছে গেছি বাঁশবাড়ি--- এই যায়গা থেকেই মানসের জঙ্গলে ঢোকার অনুমতি পত্র সংগ্রহ করতে হবে বন দপ্তরের কার্যালয় থেকে। গাড়ি থেকে একটু নামলাম বাঁশবাড়ির সৌন্দর্য কে আরএকটু নিবিড় ভাবে উপলব্ধি করার উদ্দেশ্যে। ছোট্ট এক লোকালয়, চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ, চা বাগানের সমাবেশ।ঐ যায়গাটির প্রাকৃতিক শোভা ভাষায় প্রকাশ করা আমার মত আনকোরা লেখিকার পক্ষে অসম্ভব। আমার মত কংক্রিটের জঙ্গলে সীমাবদ্ধ দৃষ্টিধারীদের চোখে ঘোর লাগায় এই আদিগন্ত সবুজের সমারোহ। সেই ঘোর লাগা চোখ, ঘোর লাগা মন নিয়ে এগিয়ে চলেছি সমুখ পানে। পিছে পড়ে থাক সকল বাঁধন, পিছে পড়ে থাক পুরাতন নতুন পথের হাতছানিতে হরিৎ ক্ষেত্রে হারাক এ মন। ঘোর কাটলো স্থানীয় এক মহিলার ডাকে। আমায় আর অগ্রসর না হতে বলার কারণ হিসেবে তিনি বললেন গতকালই চা বাগানে চিতা বাঘের আর্বিভাব ঘটে ছিল। ফিরে এলাম আপন জগতে। ততক্ষণে কাগুজে নিয়মকানুনও সাঙ্গ। এবার জঙ্গলে প্রবেশ এবং আমার মনের মানসের সাথে মিলন। জঙ্গলের একটা আলাদা গন্ধ আছে। সেই গন্ধ মন কেমন করা, উদাস করা। মন ভাবছে কত কি, চোখ দেখছে সবুজ বনানীর অপূর্ব রূপ। হঠাৎ গাড়ির চালক বললেন একটু সাবধানে বসুন সবাই। গাড়ি একটু জোরে ছোটাতে হবে কারণ সামনেই হস্থীযূথ। বাঁ দিকে তাকাতেই সম্মুখ সাক্ষাৎ। খানিক উত্তেজিত দলের সর্দার। ভাবখানা এমন যেন আমাদের অভ্যর্থনা করার জন্যই ওনাদের আগমন।কিছু দূর গাড়ির পেছন পেছন আবার এগিয়েও দিয়ে গেলেন। সুন্দর সুন্দর ভাষা প্রয়োগের মাধ্যমে সেই মুহুর্তের বর্ননা যতই কাব্যিক শোনাক মোদ্দা কথা হল হাতির তাড়া খেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে ছিলাম। সে এক অভিজ্ঞতা বটে।
অবশেষে পৌঁছোলাম আমাদের তিন দিনের আস্তানা 'মাথানগুড়ি বন বাংলোতে'। এক কথায় অনবদ্য বাংলোটির অবস্থান। সামনে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মানস নদী। পরম মমতায় বাংলোটি কে আগলে রেখেছে সুবিশাল বৃক্ষরাজি, ফুলের গাছ। পাখিদের কলকাকলিতে, বাঁদরের বাঁদরামিতে সরগরম আমাদের আস্তানা। বাংলোর কাঠের বারান্দায় গিয়ে বসলাম। মানস নদীর অপর পাড়ে ভূটানের রয়্যাল মানস জাতীয় উদ্যান। নদীর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছিল সময় থমকে যাক্, এই নিস্তব্ধতা, এই সবুজ বনানী, ঐ অনুচ্চ পাহাড়, নদীর জলতরঙ্গের মাঝে। সকল চাওয়া পাওয়া, অভাব অভিযোগ কে জলাঞ্জলি দিয়ে এক নতুন মানবজীবন প্রাপ্ত হোক। ভাবের জগৎ থেকে ফিরতে হল বাস্তবতায়। দ্বিপ্রাহরিক আহারের সময় হল।
পেট পুজোর পর জঙ্গল ভ্রমণের পালা। জঙ্গলে ভ্রমণ কালে সর্বদা যে জীবজন্তুর সাক্ষাৎ মিলবে এমন কিন্তু নয়। এই জঙ্গল তাদের চারণভূমি, আমরাই অনুপ্রবেশকারী। তাই তাদের বিন্দু মাত্র বিরক্ত না করে জঙ্গলের নিজস্বতাকে উপভোগ করাই বাঞ্ছনীয়। জঙ্গলের বাসিন্দাদের সাথে সাক্ষাৎ উপরি পাওনা মাত্র। ছায়াঘেরা বনপথ,উন্মুক্ত প্রান্তর, নীলাকাশ, নেপথ্যে হরেক রকম বন্য সুর মনকে এক অনন্য প্রাপ্তির পথে পরিচালিত করছিল। মনের গতি পথ দৃষ্টি পথকে অনুসরণ করে বাধাপ্রাপ্ত হল। আবার সাক্ষাৎ হস্তীবাহিনীর সাথে। ৩০/৩৫ জনের দল। নিজেতেই মগ্ন তারা। কাদা মাটি নিয়ে ক্রীড়া মগ্ন কেউ ,কেউ আবার আহারে ব্যস্ত। দলের কনিষ্ঠ সদস্যটি কেবল দস্যিপনায় মাতিয়ে রেখেছে চারপাশ। তাদের বিরক্ত না করে আমরা এগিয়ে চললাম। চলার পথে জলক্রীড়া রত গন্ডার যুগলের সাথে কনে দেখা আলোয় দৃষ্টি বদল ও হলো। আজকের মত সময় শেষ। সাঁঝের বেলায় বাংলো পথে গাড়ি ছুটলো। "জোনাকি কী সুখে ওই ডানা দুটি মেলেছো,আঁধার সাঁঝে বনের মাঝে উল্লাসে প্রাণ ঢেলেছো। বাংলোর বারান্দায় বসে জোনাকির আলোর নাচন দেখছিলাম। মিঠে বাতাস, নদীর জলধারার শব্দ, আহা! এই তো পরম প্রাপ্তি। পরের দু দিনও এ বেলা ও বেলা জঙ্গল আর জঙ্গলের রূপ আস্বাদন চলল সাথে পরম প্রাপ্তি হরেক রকম পাখি, ভাল্লুক, ভারতীয় গাওরের দর্শন। এরই মাঝে ঘুরে আসলাম ভারত ভূটান বর্ডার পেরিয়ে রয়্যাল মানস জাতীয় উদ্যানের অন্তর্গত পাহাড়ি পথে ভূটানের প্রথম গ্রাম (বর্ডার সংলগ্ন) পানব্যঙ।পথে যেতে যেতে চোখে পড়লো একাধিক হর্নবিল। চোখ জুড়িয়ে গেল পাখিটির রূপ দেখে। আসামে যে নদী মানস নামে পরিচিত, ভূটানে তারই নাম ড্রাঙমে চু।পাহাড়ি পথের ওপর থেকে দেখা নদীর রূপ অবর্ণনীয়। আরেক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হল মানস নদী তে রিভার রাফটিং এর সৌজন্যে। নদী বক্ষে জলযানের লম্ফঝম্ফ, হৃদয়ে ঘটাচ্ছিল হৃদকম্প। শেষের রাতটিকে প্রাণ ভরে উপভোগ করার জন্য মধ্য রাত পর্যন্ত বসেছিলাম বারান্দায়। মনের মানসকে মনের মধ্যে বন্দী করে এবার ফেরার পালা। ভ্রমণ হল জীবনের এস্কেলেটর, যা জীবনকে এক স্বপ্ন রাজ্যের উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। নতুন নতুন অভিজ্ঞতায় জীবন পরিপূর্ণ হয়। আমার আছে একটা আকাশ সবুজ পাহাড়, উতল বাতাস, আর আছে এক মন দৈনিকতায় হাঁপিয়ে ওঠে, স্বপনলোকে বেড়ায় ছুটে ভ্রমণ মাঝেই মুক্তি খোঁজে, রোজনামচায় সেই মুক্তি সুখের অনুরণন।.....
কামাখ্যা, বিভিন্ন সতীপীঠের মধ্যে একটি। অসমের রাজধানী গুয়াহাটি শহর থেকে মাত্র দশ কিমি দূরে নীলাচল পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই বিশ্ব বিখ্যাত ও সিদ্ধ মন্দির 'কামাখ্যা'।
মূল মন্দিরটি ষোড়শ শতকে মুসলিম আক্রমনে বিনষ্ট হয়ে গেলেও , বর্তমানে মন্দির টি 1665 সালে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ন তৈরি করেন।মৌচাকের ঢঙে শিখর- প্রাচীন অহোম স্থাপত্যের নিদর্শন এই মন্দির। গর্বগৃহে দেবী এখানে 'কামাখ্যা' অর্থাৎ কালী রূপে পূজিতা। 51 সতীপীঠের একপীঠ এই মন্দির।অম্বুবাচীতে এর বাৎসরিক উৎসব। তবে তখন তিন দিন বন্ধ থাকে মন্দিরের দরজা। বর্তমানে প্রাচীন গর্বগৃহ টিকে তেমন রেখেই মন্দিরটিকে নতুন ভাবে সাজানো হচ্ছে। মন্দিরের আর একটি বিশেষ আর্কষন এর ভোগ। প্রতিদিন দুপুরে এখানে সকল কেই ভোগ খাওয়ানো হয়ে থাকে, এর জন্য কোনোই মূল্য নেওয়া হয় না। তবে দানপাত্রে যে যা পারে দিয়ে সাহায্য করে থাকে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি আমি আজ পর্যন্ত যতো স্থানে ভোগ প্রসাদ গ্রহন করেছি সব থেকে আলাদা এখানের ভোগ। অবশ্যই এখানে গিয়ে একদিন ভোগ গ্রহনের চেষ্টা করবেন। কামাখ্যা মন্দির থেকে কিছু দূরেই পাহাড়ের শৃঙ্গে অবস্থিত ' ভুবনেশ্বরী মাতা'। রাতের দিকে এখান থেকে কামাখ্যা শহর টিকে দেখা এক অতিরিক্ত আকর্ষন। মনে হয় যেন হাজার তারার মালায় সাজানো কোনো শহর। এই দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব ও চিরস্থায়ী। যাত্রাপথ: আমরা 35 জনের একটি ছোটো দল লক্ষ্মীপূজার দিন ' সরাইঘাট এক্সপ্রেস ' যেটি হাওড়া থেকে 3:50 ছেড়ে পরের দিন সকাল দশটার মধ্যেই পৌছে দিয়েছিল গুয়াহাটি। সেখান থেকে লোকাল বাসেই আমরা পৌছাই 'কাছারী' নামক একটি স্থানে। গুয়াহাটির কোর্ট অবস্থিত বলেই হয়তো স্থানটির নাম কাছারী। সেখান থেকে আবার একটি লোকাল বাস ধরেই পৌছে যাই কামাখ্যা মন্দির।
গুয়াহাটি শহরের প্রানকেন্দ্র নেহেরু পার্কের বিপরীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত কাছারী প্রাঙ্গন। আর এই কাছারী অর্থাৎ আদালতের বিপরীতেই ব্রহ্মপুত্রের মাঝে গড়ে উঠেছে 'উমানন্দ পাহাড়' বা ' পীকক আইল্যান্ড'।
1664 সালে তৈরি হওয়া এই মন্দিরের উপাস্য দেবতা হলেন 'মহাদেব শিব' যিনি এখানে 'উমানন্দ' নামে অধিষ্ঠিত। প্রতি শিবরাত্রি তে এখানে খুব ধূমধাম করে পূজা ও উৎসব পালিত হয়ে থাকে। উমানন্দ ছাড়াও বর্তমানে এখানে আরো কিছু দেবতা স্থান পেয়েছেন , যেমন - সিদ্ধিদাতা গনেশ, হনুমান ও মাতা অন্নপূর্না। কাছারী ঘাট থেকে নৌকা দ্বারা যেতে হয় উমানন্দ পাহাড়ে। যাত্রী প্রতি ভাড়া 20 /-। ব্রহ্মপুত্র এখানে বিশাল ভাবে বিস্তার লাভ করেছে আর তার গর্ব থেকে ছোটো বড়ো নানান দ্বীপ জাগ্রত। তবে এর প্রাকৃতিক দৃশ্য অতীব সুন্দর। এখান থেকে আমাদের গন্তব্য ছিল 'নবগ্রহ মন্দির'। চিত্রাচল পাহাড়ের উপর এই মন্দিরে অতীতে নাকি জ্যোতিষশাস্ত্রের চর্চা হতো। আর এই জ্যোতিষ্যশাষ্ত্র থেকেই অতীতে এর নাম হয়েছিল প্রাগ্ জ্যোতিষপুর। তবে বর্তমানে এখানে শ'য়ে শ'য়ে হনুমান আর বাঁদরের বাস। এদের অতীষ্টে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও বিরক্ত। আমরা যখন পৌছাই দেখে কিছু পুরোহিত ডান্ডা হাতে এদের তারাতেই ব্যস্ত। মন্দিরের নীচে থাকা দোকানদার দের সঙ্গে কথা বলেও জানতে পারি এখানে এদের ই দাদাগিরি চলছে। তবে বস দোকানদার ই এদের জন্য একটা করে শক্ত ডান্ডা মজুত রেখেছেন দোকানের সামনেই। এরপরেই আমাদের দ্রষ্টব্য স্থান ' বশিষ্ঠ মুনীর আশ্রম'। শহর থেকে মাতূর 12 কিমি দক্ষিনে অবস্থিত । লোকশ্রুতি মতে মহর্ষি বশিষ্ঠ দেবের তপোবন ছিল এখানে। আশ্রমের পাশ থেকেই বয়ে চলেছে সন্ধ্যা, ললিতা আর কান্তা এই তিন পাহাড়ী নদী।আর এই তিন নদী মিলিত হয়েছে এই আশ্রমে আর সুন্ধর এক প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে এই আশ্রম টিকেও আরো সুন্দর করে গড়ে তোলার কাজ চলছে। সূর্য প্রায় অস্তাগামী, শরীর চাইছে বিশ্রাম আর পেট চাইছে গরম ভাত। কিন্তু আমাদের গাড়ির চালকের অনুরোধে আমরা এসে পৌচ্ছালাম গুয়াহাটির 'বালাজী মন্দির'। সত্যিই মন্দির আমাদের ক্লান্তি, ক্ষিধে কোথায় দূর করে দিল জানি না। অপূর্ব মন্দির, সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা একটি মন্দির ও তাকে কেন্দ্র করে একটি সুন্দর পার্ক। তবে সব থেকে আকর্ষিত যদি কিছু থাকে তবে এখানে গর্বগৃহে সাজিয় রাখা 'বালাজী' দেবের মূর্তি। আহা মনে হয় যেন ঘন্টার পর ঘন্টা তার দিকেই তাকিয়ে থাকি। কী অপূর্ব তার শোভা, আর তার থেকে বেড়িয়ে আসা এক দ্রুতি। selfi এর জামানায় এমন একটি জায়গায় 'নিজস্ব চিত্র' না নিলে বালাজী প্রভুও হয়তো পাপ দেবেন। তাই আমরা সকলেই পথের ক্লান্তি ভুলে আবার নতুন উদ্যোমে লেগে গেলাম 'নিজস্ব' খিঁচনে। এরপর আবার গাড়ি, আর আজকের মতো শেষ, এবার হোটেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা। কাল আবার লক্ষ্য ' মেঘালয়'।
অসম - মেঘালয়।
তৃতীয় পর্ব........ শিলং:- মেঘেদের আলয়= মেঘালয়। মেঘেদের স্বর্গরাজ্য ও এই মেঘালয়। সত্যিই অতীব সুন্দর একটি দেশ এই মেঘালয়। আমাদের 35 জনের একটি ছোট দলের ভ্রমনের তৃতীয় দিনের যাত্রা ছিল 'শিলং' এর উদ্দেশ্যে। অসম ছেড়ে মেঘালয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এর প্রাকৃত শোভা আমাদের সকলকেই মুগ্ধ করে। তবে চতুর্থ দিনে আমাদের যাত্রা ছিল শিলং এর বিভিন্ন আঞ্চলিক সৌন্দর্য কে উপভোগ করার দিন। তাই চতুর্থ দিনে আমরা খুব ভোর ভোর থাকতেই বেড়িয়ে পরেছিলাম শিলং এর সৌন্দর্য কে উপভোগ করতে। সত্যি বলতে ' পাহাড় আর তার কখনো মাথায় কখনো বা তার গায়ের থেকে ভেসে বেড়ানো সৌন্দর্য আমাদের সকলকেই মুগ্ধ করে তোলে। সবুজ সবুজ পাহাড়, পাহাড়ের কোলে ব্যাসল্ট বা গ্রানাইটের ধাপ আর আকাশে ভেসে বেড়াছে শ্বেত শুভ্র তুলোর মতো মেঘ। গৃহদেবতা সাইলং থেকে সাইলং পীক কালে কালে নাম নিয়েছে শিলং। ভারতের শৈল শহর গুলির মধ্যে শিলং পাহাড়ের আকর্ষন আজ অন্যতম। 1496 মিটার উচুঁতে অবস্থিত এই পার্বত্য শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতোই মনোরম এর জলবায়ু। বরফ না পরলেও গ্রীষ্মেও গরমের তেমন আধিক্য থাকে না। তবে বেড়াবার শ্রেষ্ট সময় মার্চ থেকে অক্টোবর। আমরা তো বাঙালী, যার পায়ের তলায় সর্ষে। তাই ইচ্ছা করলেই বেড়িয়ে পরতেন পারেন। শিলং এ আমাদের তৃতীয় দিনের প্রথম দর্শনীয় স্থান ছিল 1. ' living root brige'. গ্রামবাসীদের দ্বারাই তৈরি এই ব্রীজটি। গ্রামবাসীরাই এর রক্ষনাবেক্ষন করছে, তাই এরজন্য জন প্রতি 10 টাকা দর্শনীয় দিতে হয়। বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের নীচে না নামাটাই শ্রেয়। কারন এবড়ো খেবড়ো অনেকখানি পাথর দ্বারা নির্মিত পথ দ্বারা অনেকখানি নীচে নামতে হয়। তার উপরে পথটি বেশ পিচ্ছিল। নামা টা সহজ হলেও ব্রীজ দেখে আবার ফিরে আসতে যুবকদের ও বেশ কষ্ট হয়ে যায়। ব্রীজের নীচ থেকে পাথরের উপর থেকে বয়ে গেছে একটি ক্ষীনস্রোতা নদী। বেশ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। 2. Mawphlong Village. গ্রাম বলতে আমাদের হয়তো চোখের সামনে ভেসে উঠবে 'মাটির বাড়ি, চাষের ক্ষেত, কাঁচা রাস্তা আর হয়তো গরুর গাড়ি , গোয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা গরু। কিন্তু এই গ্রাম সব থেকে ব্যতিক্রম। সুন্দর, সুন্দর অতীব সুন্দর। কী ভাবে বর্ননা করব এই গ্রেমের সৌন্দর্য কে সেটা আমি ভাষায় বর্নন করতে পারছি না। এক কথায় অনবদ্য। যেমন সুন্দর প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে একটি করে সুন্দর বাগান, আহা আর সেই সব বাগানে কতো যে নাম না জানা বা জীবনে আমার না দেখা কতোই না ফুলের গাছ। উফস, স্বপ্ন যেন । নাম না জানা এতো সুন্দর সুন্দর ফুল ফলের গাছ দ্বারা সাজানো এই গ্রামখানি যে গ্রাম ভেবে যারা একবার শিলং এসেও এখানে আসে না তারা কেমন মূর্খামি করে ( যেমন হয়তো আমিও প্রথমটা ভেবেছিলাম)। সব থেকে আশ্চর্য হবেন এখানের পথঘাট দেখে। এতো পরিস্কার, আর এতো ভদ্র এখানকার মানুষজন। এখানে এসে আমরা বন্ধুরা বারবার বলছিলাম কলকাতা বাসী এক সপ্তাহ থাকলে কি বানিয়ে চলে যাবে এইগ্রামটিকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যারা সত্যিই মন ভরে উপভোগ করতে চান, শিলং গেলে একবার এখান থেকে নিশ্চয়ই ঘুরে আসবেন। 3. Nohkalikai Falls... শিলং এ ঘোরার পথে অনেকই প্রস্রবন পরবে। তাই আলাদা করে বলার কিছুই নেই। মন ভরে উপভোগ করুন। পাহাড়ের কোল থেকে লাফিয়ে পরা প্রস্রবন, চারিদিকে নিরক্ষীয় অরন্য আর আকাশে মেঘের ঘনঘটা। একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো দৃশ্যটি কেমন? অপূর্ব। সুন্দর। যেন শিল্পীর আঁকা কোন চিত্রের মতো। 4.Umiam Lake. শিলং এর আর একটি বিশেষ দর্শনীয় স্থান হলো এই লেক। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, জলে মাছেদের জলকেলি আর বিশেষ আর্কষন বোটিং এর ব্যবস্থা। লেকের চারপাশ থেকে ঘন জঙ্গল। আর আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা।
অসম- মেঘালয়
অন্তিম পর্ব..... আজ 30 অক্টোবর। আমাদের অসম- মেঘালয় ভ্রমনের আজ অন্তিম পর্ব। শিলং ছেড়ে আজ আমরা চলেছি চেরাপুঞ্জীর পথে। চেরাপুঞ্জী তে থাকা আর কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আমরা এবারের মতো পাহাড় কে 'good bye' জানিয়ে সমতলের উদ্দেশ্যে নিচে নেমে আসব। শিলং থেকে 54 কিমি দূরে 1300 মিটার উচুঁতে চেরাপুঞ্জী ---- শিলং ভ্রমনার্থীদের এক দিনের ভ্রমন তালিকায় উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে। চেরা বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বসতি। শিলং থেকে আধাআধি পথ পেরুতেই সবুজের গালচে মোড়া পাহাড় চুড়ো মরালের ন্যায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।বাস চলবে এই পাহাড়ের কাধেঁই ভর দিয়ে। চলার পথের নয়নাভিরাম নৈসর্গিক দৃশ্যের তুলনা হয় না। আকাশ ও আপনাকে নিরাস করবে না তার অপরূপ সৌন্দর্য কে উপভোগ করা থেকে। সূর্যের আলো আর মেঘ সর্বদাই যেন এখানে লুকোচুরি খেলে চলেছে। পৃথিবীর সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয় এই চেরাপুঞ্জীতেই। ঐতিহাসিক রেকর্ড রয়েছে এর। কমলালেবু যেমন প্রচুর ফলে তেমনই পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে কয়লা ও চুনাপাথর। চেরাপুঞ্জীর প্রধান কেন্দ্র চেরা বাজারের এক কিমি আগেই রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম। ভ্রমনার্থীরা একবার ঘুরে আসতেই পারেন এখান থেকে। 1924 সালে সেলাতে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও 1931 সালে এটি চেরাপুঞ্জীতে স্থানান্তরিত করা হয়। পাঁচ শতাধিকের ও অধিক পড়ুয়া পাঠ নিচ্ছে এই আশ্রমের বিদ্যালয়ে। এছাড়া রয়েছে পল কালিকাই ফলস ( এর ছবি আমি আগের পর্বেই পোষ্ট করেছিলাম)। চেরাপুঞ্জী কে আরো আকর্ষনীয় করতে বর্তমানে একটি Eco park তৈরি করা হচ্ছে। অনেকখানি বিস্তার এই পার্কের। মাথাপিছু কুড়ি টাকা দর্শনী দিয়ে এর মধ্যে প্রবেশ করলে আপনি আপনার ছোটোবেলা কিছুক্ষনের জন্য হলেও খুঁজে পাবেন। এছাড়া এখান থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। পথেই পরবে 'seven sister falls'. সাতটি প্রস্রবন এক সঙ্গে ঝড়ে পরছে, সাত বোনের মতোই। এর থেকেই এরূপ নাম দেওয়া হয়েছে । তবে এই সময় আমরা কেবল দুই বোনের ই দর্শন পেয়েছিলাম। শুনলাম সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে বর্ষাকালে সাতটি ধারাই বইতে দেখা যায় পাহাড়ের চুড়া থেকে উপত্যকার উপর। এর পরেই ছিলো আমাদের আর এক অপূর্ব দর্শনীয় স্থান। 'Elephanta Falls'. পাহাড়ের উপর থেকে তিনটি ধাপে নেমে এসেছে এই বিশাল প্রস্রবন। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী মহাশয় ও এখানে এসে দর্শন করে গেছেন এই প্রশিদ্ধ প্রস্রবনটিকে। হাতির শুড়ের মতো দেখতে ছিলো বলে এই ঝরনার নাম ইংরেজ রা দিয়েছিলো ' elephanta falls'.।তবে আপনি এখন আর একে হাতির শুড়ের সঙ্গে মেলাতে যাবেন না। বারংবার ভূমিকম্পের ফলে এর ভূ-প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।
নীলাচল পর্বতের ওপর ভারতের ধর্মীয় ও পৌরাণিক স্হান ৫১ সতীপিঠের অন্যতম কামাখ্যা।
ধর্মীয় ব্যাখ্যা অনুসারে দেবাদিদেব মহাদেবে যখন সতীর মৃতদেহ নিয়ে ভৈবর নৃত্য করছিলেন সেইসময় সেই নৃত্যের কারনে যে প্রলয়ের সৃষ্টি হয় তার থেকে জগৎ সংসারকে রক্ষা করার জন্য বিষ্নু সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করেন এবং স্তব্ধ করেন মহাদেবের প্রলয় নৃত্য। সেই ছিন্নভিন্ন দেহাংশের মধ্যে সতীর যোনি এখানে পতিত হয়। সেই থেকেই কামাখ্যা হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান। আমার কামাখ্যা ভ্রমণ প্রথম বাবা মায়ের হাত ধরেইতখন আমি একপ্রকার পরিনত না হলেও বালকই বলা চলে। আমার এক মামা L.IC র কর্মচারী হওয়ার সুবাদে ছিলাম ব্রহ্মপুত্রের ধারে তার আবাসনে। ম্মৃতির পাতায় সেই সময়ের যেটুকু ধরা আছে তা হলো কামাখ্যা মন্দির যাওয়ার রাস্তাটি জঙ্গলাকীর্ণ। ব্রহ্মপুত্র অতি মনোরম নদ। পরবর্তী কালে আমি পুনরায় আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আসাম সহ মেঘালয় ভ্রমনের সময় আবার যাই কামাখ্যায়।সেই স্মৃতি আমার ডাইরী আর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে আজকের এই লেখা। তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান এই কামাখ্যা।সম্ভবত এই মন্দিরের নির্মাণ কাল ১৫৬৩-১৫৬৪সাল। ঐ জায়গায় পুরাতন একটি মন্দির তার বহুকাল পূর্বেই ছিল।সম্ভবত ৩৫০-৬৫০খৃষ্টাব্দ পূর্বে এই জায়গাকে কামরূপ রাজ্য বলা হোতো এবং সেই রাজবংশ ছিলো বর্মন রাজবংশ।তখন এখানে দেবী পুজিত হতেন অব্রাহ্মন কিরাত বা ব্যাধ সম্প্রদায়ের আরাধ্য দেবী হিসাবে। কথিত আছে,কোচ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহ এই মন্দির পুনপ্রবর্তন করেন এবং তার পুত্র নরনারায়ন ১৫৬৫ খীষ্টাব্দেএই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।পরে আহোম রাজ্যের রাজা তাকে আরো সমৃদ্ধ করেন। জনশ্রুতি আছে সুলেমান কিরানির রাজত্বকালে (১৫৬৬-১৫৭২) তার সেনাপতি কালাপাহাড় এই মন্দির ধ্বংস করেন। তবে ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী জানা যায় আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ১৪৯৮ খৃষ্টাব্দে কামতা রাজ্য আক্রমণ করলে এই মন্দির ধ্বংস হয়। অহম রাজা জয়ধ্বজ সিংহ আসাম জয় করেন ১৬৫৮খিষ্টাব্দে এবং তারই উদ্দোগে মন্দিরের সংস্কার হয়। পরবর্তী রাজা রূদ্র সিংহ(১৬৯৬-১৭১৪) যখন বৃদ্ধ হন তখন তিনি দীক্ষা গ্রহণ করতে চান কিন্তু অসুবিধা তিনি ছোট হয়ে যাবেন এই ভাবনায় রাজ্যের কোনো ব্রাহ্মনের কাছে মাথা নত করতে পারবেন না। সেই কারনেইএই সময় আহ্বান জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের মালিপোতার বিশিষ্ট শাক্ত ব্রাহ্মন কৃষ্ণরাজের। কিন্তু কৃষ্ণরাজ শর্ত দেন বিনিময়ে তাকে কামাখ্যা মন্দিরের দায়িত্ব দেওয়ার। এই হিসাবেই কৃষ্ণরাজের হাতে আসে কামাখ্যা মন্দিরের দায়িত্ব।রাজা রূদ্র সিংহের মৃত্যুর পর তার পুত্র শিব সিংহ কৃষ্ণরাজকে কামাখ্যা ও তার সংলগ্ন ভূখন্ড দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে প্রদান করেন। কৃষ্ণরাজ ও তার বংশধরদের পার্বতীয়া গোঁসাই বলা হোতো। কামাখ্যাকে বলা হয় জাদুটোনার,তন্ত্র সাধনার দেশ। অরণ্যের নির্জন পাকদন্ডীর পথে এখানে নাকি দেখা মেলে ভুত পেত্নী,ডাকিনি যোগিনীর। না!আমার নজরে তন্ত্র সাধনার কিছু সাধু ছাড়া তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। গুয়াহাটি থেকে কামাখ্যা মন্দির যাওয়া যায়। নিলাচল পর্বতের ৮০০মিটার উঁচুতে এই মন্দির। দশ মহাবিদ্যার মন্দির বলা হয় এই মন্দিরকে। এখানে আছে"ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা,তারা,মাতসী, ভৈরবী,বগলামূখী,ধূমবতী,কালী,কমলা, ত্রিপুরেশ্বরী"এই দশ দেবীর মন্দির। মূল মন্দিরের তিনটি প্রকোষ্ঠ আছে,গর্ভগৃহের শেষে সিঁড়ির শেষ ধাপের পর এক যোনির আকৃতির পাথরের ফাটল থেকে অবিরাম জলের ধারা প্রবাহিত হয়। এই মন্দিরকে ঘিরে নানারকমের জনশ্রুতি ও প্রবাদ রয়েছে।তবে হিন্দু ধর্মের অন্যতম একটা জায়গা হিসাবে এর পরিচিতি। অম্বুবাচী,দূর্গাপূজা ও কালীপূজার সময় এখানে বিশেষ মেলা বসে। এখানে বলিদান প্রথা চালু আছে। আমরা কামাখ্যা মন্দিরের আগেই একটা সমতল জায়গায় গাড়ি থেকে নেমে ঐ ঝোপঝাড় ও জঙ্গুলে চড়াই রাস্তা দিয়েই গেছিলাম। বহু ধরনের সাধূ সন্যাসীদেরও দেখেছিলাম। পাশেই আরেকটি পাহাড়ি চুড়া আছে ,তার নাম বশিষ্ট পাহাড় । সেই বশিষ্ট পাহাড়,আর সেই পাহাড়ের নিচে তার কোল দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্রকে অনেক খানি উপর থেকে দেখা আর দেখা ঐ দুরের পাহাড়ের মাথায় ছবির মতো সাজানো ঘরবাড়ী দেখার অনুভূতিই আলাদা। ফেরার পথে ঐ ব্রহ্মপুত্রের ওপর এক ভাসমান রেষ্টুরেন্টে বসে চা টিফিন সহযোগে টলটলে জলের ঢেউ তোলা নদীকে দেখা আর তার বুকে ভেসে বেড়ানো নৌকাকে দেখার মধ্যেও ছিলো এক অন্য ধরনের সুখকর অনুভূতি।
Post By-Chandan Dutta Roy
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |