শাক্তরাস নবদ্বীপের প্রধান উৎসব। শরৎকালে শারদোৎসবের পরেই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি এবং কার্তিকীপূর্ণিমায় নবদ্বীপের এই লোকায়ত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শাক্তদেবীদের বিশাল মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মাণ করে শক্তি আরাধনাই নবদ্বীপের রাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
রাস মূলত কৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। তবে নবদ্বীপের রাস প্রধানত শাক্ত রসাশ্রিত। তবে নবদ্বীপে এই একই দিনে মন্দির অভ্যন্তরে রাধাকৃষ্ণের চক্ররাস হয়, তবে তার জাঁকজমকপূর্ণতা শাক্তরাসের পাশে ম্রিয়মান। জনশ্রুতি প্রচলিত আছে, নবদ্বীপে চৈতন্যদেব রাধাকৃষ্ণের রাস উৎসবের সূচনা করেছিলেন। সেই হিসাবে ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই রাসের সূচনা হয়েছিল। তবে চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণের পর নবদ্বীপের বৈষ্ণব আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। গৌরাঙ্গ-পরিজনেরা বাধ্য হয়ে নবদ্বীপ ত্যাগ করে স্থানান্তরে গমন করেন। ফলে বৈষ্ণবীয় উৎসব অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নবদ্বীপে যে রাস উৎসবের সূচনা হয় তা অভিনব এবং বাংলার ধর্মীয় ইতিহাসে তা অদ্বিতীয়।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের (১৭২৮-১৭৮২ খ্রী) পৃষ্ঠপোষকতায় নবদ্বীপের শাক্ত রাসের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল, সেই সময় রাজ পোষকতায় নানা পূজা হয় এবং রাজার নাম সংকল্প করা হত। সেই পুজোগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বড় শ্যামা, চারিচারাপাড়ায় ভদ্রকালী ইত্যাদি৷ এছাড়াও এই বছরে রয়েল ক্লাব, ইয়ং ব্লাড ক্লাব, মুক্তিসূর্য্য ক্লাব ইত্যাদি পূজো মন্ডপ বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমার নবদ্বীপ রাসযাত্রা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।
0 Comments
রবিবার সকালে হঠাৎ করে পরিকল্পনা করা হলো আমরা দুই পরিবার মিলে কোথাও থেকে একদিন এর জন্য ঘুরতে গেল কেমন হয়? সেই মতো বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুটি নতুন স্হানের উদ্দেশ্যে।
সকাল ৮ টায় আমরা বোলপুর থেকে রওনা দিলাম দুটি বাইক নিয়ে। প্রথমে বোলপুর থেকে নানুর গেলাম। ওখানে সকালের টিফিন সেরে ফুটিসাকো থেকে কাটোয়া রোড ধরলাম। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল অট্টহাস সতীপীঠ। তাই নিরোল গ্রাম হয়ে পৌছে গেলাম অট্টহাস সতীপীঠ মন্দিরে। এই সময় পিকনিক এর মরসুম তাই খুব ভীড় ছিল। মন্দির টা ঘুরে নিলাম। বর্ধমান জেলার নিরোল গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ডিহি গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সতীপীঠ। এখানে দেবীর অধঃ ওষ্ঠ (অধর / নিচের ঠোঁট) পতিত হয়। এখানে দেবীকে অধরেশ্বরী নামে পূজা করা হয়।এখানে আছে এক প্রাচীন শিলামূর্তি। মন্দিরের অষ্টধাতুর মূর্তিটি চুরি হয়ে গেছে। দোলের সময় এখানে বিশাল মেলা বসে। এখানে থাকার জন্য অতিথি নিবাস আছে। মন্দির থেকে ভক্তদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাইক নিয়ে আমরা রওনা দিলাম সোনারুন্দী রাজবাড়ীর দিকে। এখান থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব প্রায় ১০ কিমি মতো। পাচুন্দি থেকে বাঁদিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে পৌছে গেলাম সোনারুন্দী রাজবাড়ী চত্বরে। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার একদম দক্ষিণ প্রান্তের একটি গ্রাম হলো সোনারুন্দি। কাটোয়া.. আজিমগঞ্জ লাইনে সালার স্টেশন এ নেমে ১০ কিমি পশ্চিমে গেলেই চোখে পড়বে সোনারুন্দি রাজবাড়ি চত্বর। প্রাচীন বঙ্গদেশে দন্ডী ছিল বণিক ও কায়স্থদের উপাধি। দন্ডী উপাধিধারী বণিকরা এই এলাকায় বসবাস করত ও এক একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিল। তামা, লোহা, ও সোনার বণিকরা নিজ উপাধি অনুসারে তিনটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিল।স্বর্নবনিকরা এইভাবে সোনারুন্দি গ্রাম এর প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে মনে করা হয়।এই এলাকায় তাঁতীদের বাস এ বেশি এবং তাঁত বস্ত্রজাত কাপড়ের সুনাম ও খুব প্রাচীন। চৈতন্য পরবর্তী যুগে এই গ্রাম এর তাঁতীরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়। নিত্যানন্দ দেব বাহাদুর সোনারুন্দি গ্রাম এর পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৫৪ বিঘা জমির উপর তার রাজবাড়ি ও মন্দির তৈরী করেন ।সেই সময় সোনারুন্দি , উদ্ধারণপুর,ও আশপাশ এর গ্রাম নিয়ে তার জমিদারি এলাকা ছিল প্রায় ৪০০০ বিঘা। সোনারুন্দি এলাকায় উচু প্রাচীর দিয়ে ঘিরে চারদিকে চারটে বিশাল তোরণ নির্মাণ করলেন।মূল রাজবাড়ির সংলগ্ন পশ্চিম অংশে কিশোরী বনওয়ারীলাল এর মন্দির নির্মাণ করলেন।প্রতিষ্ঠা করলেন রাধাকৃষ্ণ ও অষ্টসখীর মূর্তি।বৃন্দাবন এর অনুসরণ এ তিনি যুগল মূর্তির নাম দেন কিশোরী বনওয়ারীলাল।চারিদিকে বিশাল প্রাঙ্গণ।মাঝখানে নাট মন্দির।। মূল প্রাসাদ এ ১০০ র বেশি ঘর ছিল।বায়ু কোণে দাস দাসদাসি দের থাকার জন্য বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন।মন্দির এর পাশেই কিশোরী সায়র পুকুর কেটে তার ঘাট এ স্নানাগার ও গোপেশ্বর শিব এর মন্দির নির্মাণ করলেন। রাজবাড়ির বাইরে ১২ টি কুঞ্জ নির্মাণ করলেন যেখানে রাস বা ঝুলন উৎসব এর সময় কিশোরী বনওয়ারীলালজি যেতে পারেন। উৎসবের সময় এই দেব মূর্তিগুলোকে নিয়ে যাওয়া হতো কুঞ্জ গুলিতে।প্রত্যেক কুঞ্জ তে একটি করে পুকুর ও সংলগ্ন মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।মূলত তিনি বঙ্গদেশে দ্বিতীয় বৃন্ধাবন নির্মাণ করেছিলেন।সুসজ্জিত এই চত্বর কে সকলে বনওয়ারীবাদ বলতো। বর্তমান এ রাজবাড়িটি ভগ্নপ্রায় ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। রাজবাড়ির পাশে বাইরে দেখতে পেলাম দুটি ভগ্ন কামান,অযত্নে পড়ে আছে, বাচ্চারা ওটার উপর চেপে খেলা করছে। ঠাকুর মন্দির সংলগ্ন একটি বড়ো দীঘি আছে। দীঘি তে খুব বড় বড় মাছ আছে। কাউকে মাছ ধরতে দেয়া হয়না। লোকমুখে শোনা যায় রাজকুমারদের আমলে মাছকে সিঁদুর ও নথ পড়িয়ে দীঘিতে ছাড়া হত। জনশ্রুতি আছে কেউ একজন জোর করে মাছ ধরে ছিল এই দীঘি থেকে।সেদিনই সে মুখে রক্ত উঠে মারা যায়। পর্যটকরা খাবার দিলে মাছগুলি এসে পর্যটকদের হাত থেকে বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খাবার খেয়ে যায়। রাজবাড়ির বেশ কিছুটা অংশ স্কুল ও কিছুটা অংশ অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রম কে দেওয়া হয়েছে।রাজবাড়ির বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়ছে। এখনও যদি সংস্কার করা না হয় তাহলে খুব অল্পদিন এর মধ্যেই হয়ত এই ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের এই ধরনের রাজবাড়ী গুলি যদি সরকারের পর্যটন দফতর নিয়ে সংস্কার করে এবং পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় (যেমন ইটাচূনা রাজবাড়ীর মতো করা হয়, যদিও ইটাচূনা রাজবাড়ীর সরকারের পর্যটন দফতর এর নয়) তাহলে এই পূরাতন রাজবাড়ী গুলি রক্ষা হবে এবং পর্যটকদের জন্য এলাকার মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে। যদিও এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত। আসলে রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ থেকে মনে হলো যদি এই পূরাতন রাজবাড়ী গুলি কোনোভাবে রক্ষা করা যায়। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। ফেরার সময় আমরা ফুটিসাকো - কির্নাহার - লাভপুর হয়ে বোলপুর ফিরলাম (কীর্নাহার এর বিখ্যাত মন্ডা কিনলাম ফেরার সময়) (কিছু লেখার উ়ৎস:- ইন্টারনেট)
বেনাপুর চর বাগনান
২৭/১২/২০২০ দিন বদলের সাথে সাথে রঙ বদলায়। সূর্য মধ্যগগন থেকে ঢলতে ঢলতে যখন আগুনরঙ্গা বেশ বদলিয়ে মোহময়ী রূপ ধারণ করে দিনশেষের নির্ঘণ্ট জারি করে, প্রকৃতি তখন তার রূপের থালি উজাড় করে দেয়। সেই রূপের ছটা উপলব্ধি করতে কোনো উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পৌঁছে যেতে হবে। নদীর তীরে পাতা সবুজ ঘাসের বিছানা থেকে অস্তমিত সূর্য্যের আভা যখন রূপনারায়ণের জলে ও তার মাঝে অনেকটা অংশে জেগে ওঠা চর-এর রূপ বদলাতে শুরু করে, এক অপরূপ সন্ধিক্ষণে মায়াবী পরিবেশের অবতারণা শুরু হয়, তার সাক্ষী হতে হলে আসতে হবে বেনাপুর চরে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ঘাসের আস্তরণ পেরিয়ে নদীর জলে পা ডুবিয়ে মাঝের চর পর্যন্ত হেঁটে বেড়ানো যায়। হাঁটুর থেকে কিছুটা নিচে অবধি পা ডোবাতে হবে শুধু। এক অনন্য অভিজ্ঞতা। শ্রীশ্রী_রাধামাধব_জীউ_মন্দির চর থেকে ফেরার পথে কয়েক পা এগিয়ে গেলে ইটভাটার পাশে রয়েছে শ্রীশ্রী রাধামাধব জীউর মন্দির। মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণ ও জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা নিয়মিত পূজিত হন। মন্দিরের সামনে এক তুলসীমঞ্চ রয়েছে। বিঃ_দ্রঃ এখানে থাকা বা খাওয়ার মতো কোনো হোটেল নেই। দিনে দিনে ঘুরে আসার জায়গা। পথনির্দেশঃ --> হাওড়া থেকে ট্রেনে মেচেদাগামী লোকাল ধরে বাগনান স্টেশনে নেমে বেনাপুরের ট্রেকার চেপে মাথাপিছু ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে এখানে আসতে ৪০ - ৪৫ মিনিট সময় লাগে। --> বাসে বা গাড়িতে কলকাতা থেকে NH16 ধরে বাগনান মোড় এসে সেখান থেকে নুন্টিয়া মোড় হয়ে বেনাপুর চর।
ময়নাগড় বাংলার আনাচে কানাচে কত মাণিক্য ছড়িয়ে আছে তা আমরা বাঙালিরাও বলতে পারবো না। লকডাউনের পরে আমরা তাই বাংলার এদিক ওদিক খুজে বেরিয়েছি, এবার ছিল ময়নাগড়।সেইমত প্ল্যান আর আবার আমরা নারী বাহিনী একসাথে,২৫ জন মিলে কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে সকাল সকাল গাড়িতে ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়েছি।কোলাঘাট হয়ে নন্দকুমার রাস্তা ধরে নিমতৌড়ি মোর থেকে ডানদিকে ২০ কিমি গেলে ময়নাগড়। ময়নাগড় বাংলার এক হেরিটেজ জায়গা কিন্তু অবহেলিত, দুটি পরিখা একে ঘিরে রেখেছে, মাঝের সেই দ্বীপে ৬/৭ পরিবারের বাস। আবার ধর্মমঙ্গল খ্যাত লাউসেনের এটি রাজধানী,জলদস্যুর হাত থেকে বাঁচাতে এই দুটি পরিখা কালিয়াদহ আর মাকরদহর সৃষ্টি হলেও একসময় জলদস্যুর কবলে যায় এই গড়। উড়িষ্যার রাজা মহীপাল এরপর এই দুর্গ দখল করেন আর বাহুবলীন্দ্র উপাধি পান,এখন যে কটা পরিবার বসবাস করেন, সবাই রাজপরিবারের অংশ এবং এই উপাধি বহন করছেন। চারপাশ টা নারকেল গাছে ঘেরা, একটা সুন্দর তোরণ, তারপর ভটভটি চেপে গড়ের পাড়ে। যেতে যেতেই দেখলাম সবার বাড়ির সামনে নিজস্ব নৌকা বাঁধা, নৌকা গোল করে পরিখার চারিদিকে ঘুরিয়ে দেবে, ভাড়া ২০/৫০ পার হেড সেটা কজন লোক, নৌকার সাইজ আর বিশেষ দিন হলে কম বেশি হয়। গড়ের মাঝে ৫০০ বছরের পুরনো লোকেশ্বর শিব মন্দির আর রাধেশ্যাম জিউর পঞ্চচূড়া মন্দির, সতীরাণী ঘাট আছে। প্রতিবছর ধূমধাম করে রাস হয়,মেলা বসে,তবে এবার তেমন কিছু হবে না। চারদিক গাছগাছালিতে ভরা, ভাঙা গড়ের দেওয়াল থেকে নতুন বাড়ির দেওয়াল তোলা হয়েছে।ফিরে এলাম আবার নৌকায়, নিত্য কাজের জন্য মেয়েরাও ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে এপার ওপার করছে। আমরা ক্রমশ দূরে যেতে লাগলাম ময়নাগড় কে ফেলে আর অনেক সুন্দর স্মৃতি নিয়ে।
প্রায় তিন মাস পড়ে হালকা শীতের আবহে মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে দুই বন্ধু চলেছি এক অনেক দিনের জানা, অনেকেরই না জানা এক Off-Beat জায়গায়। আজকে জায়গাটার নাম প্রথমেই বলে দিচ্ছি, সেটি হল “সবুজ দ্বীপ”। সেই ছোট্টো বেলা থেকে শূনে এসেছি, যাইনি কখনো। আর সত্যি সবুজ, প্রাণবন্ত সবুজে ভরা। তবে এই সবুজ দ্বীপ কিন্তু সেই কাকাবাবূ বা শোণ্টূর সবুজ দ্বীপ নয়। আর আমাদের সঙ্গে ছিলেন না কোন কাকাবাবুও। ছিলাম শুধু আমরা দুজন ভাইপো। কাদের ভাইপো আবার, আপনাদেরই ভাইপো। এবার চলে আসি আমাদের ভ্রমণ কাহিনীতে...
২২শে নভেম্বড়,২০২০ আমি আর আমার বন্ধু সম্রাট প্রায় তিন মাস পরে চলেছি এই সংসার থেকে বেড়িয়ে এক্টূ মুক্ত খোলা আকাশের হাওয়া খেতে। সকাল ৭ঃ৩০ টায় বেরলাম আমাদের বাড়ী থেকে। বেড়িয়ে প্রথমে বন্ধুটিকে বাইকে তুললাম তার বাড়ী থেকে। উঠলাম কল্যাণী রোডে, তেল ভরিয়ে হাইরোড ধরে এগিয়ে চললাম বলাগড়ের উদ্দেশে। বাড়ী থেকেই গুগুলে দেখে নিয়েছি কি ভাবে যাব। ঈশ্বরগুপ্ত সেতু পেড়িয়ে, কিছুটা গিয়ে ডানদিকে বেকে উঠলাম SH-6এ । এই রাস্তাই সোজা চলে গিয়েছে বলাগড়ে। নৈহাটি থেকে দূরত্ব দেখলাম প্রায় ৪০ কিমি। কিছু ঘিঞ্জি এলাকা বাদ দিয়ে আমরা চলেছি একদম ফাঁকা রাস্তা ধরে। চারপাশের মাঠ সবুজে সবুজ, চাষ হচ্ছে। হাওয়া যা দিচ্ছিল, শীতও লাগছিল বেশ। এই পথে আসতে আপনাদের কিন্তু মন জুড়িয়ে যাবে। কিন্তু আস্তে গেলে আবার ফিরতে দেরী হয়ে যাবে, এই ভেবে স্পীড একই রেখে এগিয়ে চললাম। এই ভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টা চলার পর, একজন স্থানীয় লোককে জিজ্ঞাসা করে নিলাম ডান দিকের মোড়, সামনেই রেলগেট। একদিকে বলাগড় অন্যদিকে সোমরা বাজার। এখানে কিছুক্ষণ থামলাম টিফিন করার জন্য। সদ্য ভাজা গরম গরম কচুরি ছোলার ডাল সহযোগে ৬ পিস সাঁটিয়ে দিলাম, সঙ্গে নিলাম ২ টো নলেন গুঁড়ের রসোগোল্লা।এরপর আরও ১৫ মিনিট মত এসে আমরা পৌছালাম জেটীঘাটে। সবুজ দ্বীপের কাছে জেটিঘাটে যখন আমরা পউছালাম তখন ঘড়িতে পৌনে ১০ টা বাজে। আপনাদেরকে একটা কথা বলি, এই সবুজ দ্বীপে সব লোকই আসে কিন্তু পিকনিক করতে, আবার অনেকে শান্ত পরিবেশে থাকতে। কিন্তু অনেক দিন না বেরোনোর জন্য মন ও ভালো ছিল না। তাই আমরা চলে এলাম সবুজ দ্বীপ ঘুরে দেখতে, একটু কাছ থেকে নিরবতা অনুভব করতে। পাশেই আছে দেখলাম থাকবার জন্য একটি ছোটো হোটেল, যদিও বন্ধ। স্থানীয় একটি বাড়ীতে বাইক রেখে এগিয়ে যেতেই একটি ছেলের সঙ্গে দেখা, বললাম সবুজ দ্বীপে যাব, নিয়ে গেল। কাঠের নৌকায় ইঞ্জিন লাগান, ভোটভোটী। কিছুটা এগোনোর পরই, তেল যাওয়ার লাইনে হাওয়া ঢুকে বন্ধ হয়ে গেল। কিছুটা টানল দাঁড় বেয়ে, বাকি কিছুটা হাতে টানা নৌকাতে। এখানে জেটী আছে, তবে আমরা নামলাম চড়ে। এখান থেকে হেঁটে দ্বীপে গেলাম। নৌকা থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, দ্বীপটা অনেকটা বড়। মাঝিকে জিজ্ঞাসা করাতে বলল জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হেঁটে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট মত। দ্বীপে নেমেই আমরা প্রথমেই উঠলাম সামনের ওয়াচ টাওয়ারে। আপনি যদি ভাবেন ভিতর দিকে অনেকটা দেখতে পাবেন তাহলে ভুল করছেন। একমাত্র নদীর দিক ও তার আশেপাশের দিকটাই একমাত্র দেখা যাচ্ছে। আর গাছ বড় থাকার জন্য ভিতরের দিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে একটা কথা প্রথমেই বলে রাখি, এখানে যা জঙ্গল, আর যা সবুজে সবুজ আপনার একটা বেলা নিশ্চিন্তে কেটে যাবে ঘুরে ঘুরে। এখানে নতুন করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, এদিক ওদিক বালি, সিমেন্ট সব ছড়ান। তাই আমরা ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে নদীর পাশ বরাবর দ্বীপেরই উঁচু জায়গা ধরে চলতে লাগলাম। যত এগচ্ছি জঙ্গল তত ঘন হচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু জায়গা বেশ ফাঁকা দেখতে পেলাম। আমরা চলেছি বাঁ দিক ধরে, একটা জায়গায় গিয়ে দেখলাম লোহা দিয়ে বাড়ীর structure তৈরি করা আছে, কিন্তু তৈরি আর হয়নি ঐ অবস্থাতেই রয়ে গেছে। তবে একটা জিনিষ দেখলাম, এখানে প্রত্যেকটি গাছে শামুকখোলের বাসা। আর কোন একটা আওয়াজ করলেই ঝাঁক ধরে উড়ে যাচ্ছে, আবার কিছুক্ষণ পর এসে ডালে বসে পড়ছে। আমরা এবার ডানদিকে এগলাম। একটা ফাঁকা জায়গার মধ্যে দিয়ে গিয়ে মানুষ যেখান দিয়ে চলাচল করে সেই রাস্তায় গিয়ে পড়লাম। এই জায়গাটা থেকে আবার সোজা চলে গেলে আরও গভীর জঙ্গল। আমরা এগিয়ে চললাম আরও গভীরের দিকে। যতদূর মনে হয় তেলাকুচের ফুল হলুদ রঙের হয়, এই ফুল সারা পথ জুড়ে ফুটে থাকে দেখা গেল। আর এর যে ফল সেগুল বেশ লাল লাল এবং বড়। আমরা অনেকটা ভিতরে ঢুকে গিয়ে দেখলাম এখানে আর একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে। কিন্তু পাশেই গাছে উঁচুতে মৌমাছির চাক, ভনভন করছে। ওয়াচ টাওয়ারে জং ধরে গেছে, লতায় পাতায় জড়িয়ে ধরেছে, তাও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যায়। আমরা দুই জন ছিলাম একসাথে উঠেছি, তবে আপনারা যদি যান দেখে শুনে উঠবেন। তবে বেশ শক্ত দেখলাম, ভেঙে যাওয়ার চান্স যদিও নেই। এখানেও এত জঙ্গল যে চারপাশে জংগল ছাড়া কিছু বেশি দেখা গেল না, পাশেই মৌমাছির চাকটা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছিল, অনেকটা বড়। একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন এখানে কিন্তু বেশ মশা আছে, ছোট ছোট কামড়ালে দেখলাম ফুলে যাচ্ছে। তবে এইটুকু বোঝা গেল এখানে শেয়াল আর ভামও আছে। আবার সেই জঙ্গল পথ দিয়ে আমরা ফিরে চললাম আমরা যেখানে এসেছিলাম সেইখানে। মাঝ পথে কিছুক্ষণের বিশ্রাম একটি দালানে। মাঝি ভাই আমাদের বলে দিয়েছিল ফেরত যাওয়ার ২০ মিনিট আগে আমাদের ফোন করতে, তাই করে দিলাম। আমরা জঙ্গলে ঢুকেছিলাম বাঁ দিক দিয়ে তাই ডান পাশে কাত গুলো ভাঙ্গাচোরা কটেজ আছে সেগুলো দেখা হয়নি। চললাম সেদিকে। এখানে উম্পুনের সময় অনেক গাছ ভেঙে পড়েছে, আবার অনেক জঙ্গলও হয়ে গেছে, সেগুলি পরিস্কার করার জন্য লোক লাগান হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম এই কটেজ গুলোতে আগে খাট ছিল কিন্তু এখন সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। এখানে সারিবদ্ধ ভাবে প্রায় ১০ টি মত কটেজ আছে, সব গুলোতে ওঠার পথ একদম ভেঙে গিয়েছে, আবার যেটাতে উঠা যাচ্ছে সেটাতে হয়ত বারান্দা ভাঙ্গা। এবার আমরা চললাম চড়ের দিকে। যেতে গিয়ে চোখে পড়ল হাতি আর জিরাফের statue। দোলনাও আছে। আর একটু এগোতেই দেখলাম মাঝি ভাই আমাদের নিতে এসেছে। আমরা যখন দ্বীপ ছাড়লাম তাখন বাজে প্রায় পৌনে ১২ টা। পাড়ে এসে মাঝির টাকা মিটিয়ে জানতে চাইলাম এখানে দেখার মত আর কিছু আছে কিনা। মাঝি ভাই বলল, কাছেই ২ মিনিট মত এগোলেই পড়বে সিদ্ধেশরি মন্দির। তার কথা মত বেশ কিছুটা এগিয়েই একটা পুকুরের পাড়ে পড়ল সেই মন্দির। এই মন্দিরের দুই পাশে ছোট ছোট ছটি করে মন্দির আছে। এই গুলির একটিতে আছেন গণেশ ঠাকুর, অন্য গুলিতে আছে শিব লিঙ্গ। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়েই পাশেই গেলাম একটি পুরানো রাজ বাড়িতে। যদিও কেও থাকে না এখন। দোতলা রাজবাড়িতে উপরের তলায় ঘাস, আগাছা জন্মে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু একতলায় সদর দরজার মুখোমুখি কোন পূজার প্রস্তুতি চলছে দেখলাম। মাঝ খানে আবার এক সময় হাড়িকাঠে বলি হত দেখলাম। এখান থেকে আমরা ধরলাম বাড়ীর পথ। শেষে একটা কথা বলি, এটি পিকনিক স্পট হলেও একসময় এখানে লোকে ছুটি কাটাতেও আসত। তাই অন্তত একবেলা এখানে কাটিয়ে গেলে খারাপ লাগবে না। মনটাও ফ্রেশ হয়ে যাবে। বাংলায় লেখার সময় ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
বাঁকিপুট : The Virgin Beach
লকডাউন এ বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, অতএব গন্তব্য দেশের বাড়ি (কাঁথির কাছে)। সেখান থেকে গুগল ম্যাপে হঠাৎই খোঁজ পেলাম বাঁকিপুট এর। দেখলাম, বেশি দূর নয় অতএব বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুই ভাইকে সঙ্গী করে। গুগল ম্যাপের নেভিগেশন ধরে প্রায় এক ঘন্টা যাওয়ার পরে আমরা পৌছে গেলাম বাঁকিপুট। আমরা এসেছিলাম রসুলপুরের দিক থেকে, আর আপনারা যারা কলকাতা থেকে আসবেন তারা কাঁথি হয় ঢুকলে সুবিধা হবে। কাছেই আরো কিছু tourist attraction আছে যেমন কপালকুণ্ডলা মন্দির, দারিয়াপুর লাইট হাউস, পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দর এছাড়া জুনপুট ও বগুড়ান জলপাই সমুদ্র সৈকত তো আছেই। বাঁকিপুট আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, অদ্ভুত সুন্দর নিরিবিলি শান্ত একটা সমুদ্র সৈকত.. এই পোস্টে কিছু ছবি দিলাম
সবার দার্জিলিং বা সিকিম ঘুরতে যাওয়ার হিড়িক দেখে একটু কাছাকাছি অথচ অন্যরকম কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে প্ল্যান করে ফেললাম ঝাড়গ্রামে যাওয়ার। 'উঠলো বাই তো ঝাড়গ্রাম যাই' - খানিকটা এভাবেই আমাদের ঝাড়গ্রাম যাওয়া আসার টিকিট কাটা, ঘোরাঘুরির প্ল্যান সব ঠিক হয়ে গেল। বাবার এক বন্ধুর ওখানে চেনাজানা, তাঁর সূত্রেই ওখানে হোটেল আর গাড়ির ব্যবস্থাও খুব সুন্দরভাবে হয়ে গেল।
দেখতে দেখতে বেরোনোর দিন চলে এলো। বিকেল সাড়ে পাঁচটার টাটা-হাওড়া ফেস্টিভাল স্পেশাল ট্রেনে (আপাতত ইস্পাত এক্সপ্রেসের নতুন নাম) চড়ে বসলাম। আটটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম ঝাড়গ্রামে, সেখানে গাড়ি অপেক্ষা করছিল। স্টেশন থেকে মিনিট দু তিনেকের রাস্তা 'ডুলুং গেস্ট হাউস' অর্থাৎ আমাদের হোটেলের। ট্রেনে উঠে ফোন করে রাতের খাবারের কথা বলে দেওয়া হয়েছিল, তাই রাতে গরম গরম খাবার পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি। খেয়েদেয়ে লম্বা ঘুম দিলাম, পরেরদিন সকাল থেকে প্রচুর ঘোরাঘুরি করতে হবে যে.. প্রথম দিন: প্রথম দিন সকাল নটা নাগাদ গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম গড়রাসিনী(গাড়রাসিনীও বলে) পাহাড় দেখতে, বেশ খাড়াই পাথুরে পথ। ওখানে বাসুদেব মন্দির, শিব মন্দির আর একটা ছোট গুহা রয়েছে (ঢোকা যায়না যদিও)। পাহাড়ের মাথা থেকে আশেপাশের দৃশ্য দারুণ উপভোগ্য। এরপর একে একে দেখলাম খান্ডারানি ড্যাম, ঘাঘরা নদী আর তারাফেনি ব্যারেজ। একেকটা জায়গা একেকরকম ভাবে সুন্দর। ঘোরাঘুরি সেরে সন্ধের মধ্যে হোটেলে ঢুকে পড়লাম। তারপর এমনি বেরিয়ে কাছাকাছি মার্কেটে একটু ঘুরে বেড়িয়ে এলাম। সেদিনের মত ঘোরা শেষ। দ্বিতীয় দিন: দ্বিতীয় দিন প্রথমে ঘুরতে গেলাম ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, যেখানে 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন' মুভির শুটিং হয়েছিল। পারমিশন ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হয়না, তাই বাইরে থেকে দেখেই মন ভরাতে হল। এরপর গেলাম চিল্কিগড়, সেখানে একে একে দেখা হল কনকদুর্গা মন্দির, ডুলুং নদী আর চিল্কিগড় রাজবাড়ি। প্রত্যেকটা জায়গাই অপূর্ব! চিল্কিগড় রাজবাড়িতেও দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন মুভির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল। চিল্কিগড়ের পাট চুকিয়ে রওনা দিলাম বেলপাহাড়ি। একে একে দেখে নিলাম জঙ্গলমহলের ঘন জঙ্গল, তপোবন (বাল্মীকি আশ্রম, তিলক পাহাড় আর সীতানালা), অতি প্রাচীন রামেশ্বর মন্দির আর সুবর্ণরেখা নদীর তীর হাতিবাড়ি এলাকা। এই জায়গাটা ওড়িশার বর্ডার এলাকার মধ্যে পড়ে, যদিও দেখে বিশেষ বোঝা যায়না। সেদিনের ঘোরাঘুরি এতটাই বেশি ছিল যে কেন্দুয়া পাখিরালয় দেখার আগেই সন্ধে নেমে গিয়েছিল, তাই যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সেদিনের মত ঘোরাঘুরি সাঙ্গ করে হোটেলে ফিরলাম। তৃতীয় দিন: তৃতীয় দিন একটু বেলা করে বেরিয়ে টোটো বুক করে দেখতে গেলাম কংসাবতীর তীর সাতপাটি। কি সুন্দর জায়গা! ফেরার পথে ডিয়ার পার্ক বন্ধ থাকায় (বৃহস্পতিবার করে বন্ধ থাকে) বাইরে থেকেই দেখে চলে আসতে হল। এরপর গেলাম কন্যাডুবি তারা মায়ের মন্দির আর তার সংলগ্ন নার্সারি দেখতে। অপূর্ব জায়গা! সবশেষে গেলাম সাবিত্রী মন্দির দেখতে, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির আরাধ্যা দেবী। পিছনেই আছে একটা জলাশয়, সেখান থেকে নাকি মল্লরাজাদের আমলের বহু পুরোনো নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। সাবিত্রী মন্দির পাঁচটায় খোলে, তাই অপেক্ষা করতে গিয়ে কৃশ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান দেখা হয়নি, সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। পরেরদিন সকালে সাড়ে সাতটার টাটা-হাওড়া ফেস্টিভাল স্পেশাল ধরেই হাওড়া এলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। বিঃ দ্রঃ ১. ঝাড়গ্রাম দেখতে গেলে যাওয়া আসা মিলিয়ে চার পাঁচ দিন হাতে নিয়ে আসবেন। ২. স্নিকার বা পাম্প শু পরতে পারলে সবচেয়ে ভালো, না থাকলে কিটো। একদম ফ্ল্যাট স্যান্ডেল না পরাই ভালো। ৩. বেলপাহাড়িতে খাবারের দোকান একেবারেই তেমন ভালো না। মন খুঁতখুঁত করলেও উপায় নেই, ওখানেই লাঞ্চ করতে হবে। ৪. কিছু কিছু জায়গা খুবই ফাঁকা, তাই সাথে শুকনো খাবার আর জল অবশ্যই রাখবেন। ৫. বেলপাহাড়ি আর তপোবন যাওয়ার পথে সেভাবে কোনো টয়লেট নেই, পেট্রোল পাম্পের টয়লেটই ভরসা। নইলে জঙ্গলে কাজ সারা ছাড়া উপায় নেই। ৬. তারাফেনি ব্যারেজের উল্টোদিকে একটা খড়ের চালা দেওয়া ঝুপড়িতে খেজুর গুড় আর পাটালি বিক্রি হয়, বেশ ভালো খেতে। চাইলে কিনতে পারেন। বেলপাহাড়িতেও পাওয়া যায়, তবে তার স্বাদ অতটা ভালো না। ৭. কৃষ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান ঘুরতে বেশ সময় লাগে, তাই ওইদিন দূরে যাওয়ার প্রোগ্রাম রাখবেন না। আর যদি যান তাহলে কৃষ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান দেখে বেরোবেন। ৮. কনকদুর্গা মন্দিরে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা প্রতিজন।
এবছর পুজোর পর বেরিয়ে পরেছিলাম বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে, 2 রাত 3 দিনের জন্য। অত্যন্ত দ্বিধার সাথেই স্বীকার করছি, সিকিম থেকে আন্দামান ইত্যাদি ঘুরে বেড়োলেও আমার অবস্থা ওই 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া'... শিশির বিন্দু না দেখা অবস্থা। সেই কারণে তো বটেই, আর তার সাথে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বেছে নিয়েছিলাম এই ট্রিপটা।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, গনগনি, মুকুটমণিপুর ইত্যাদি বাংলার মনিমুক্তার খবর তো সকলেই রাখে, কিন্তু এর সাথে আমরা জুড়ে নিয়েছিলাম একটি 'অফ-ট্রাক স্পট', বাঁকুড়ার বিকনা গ্রাম। প্রসঙ্গত এব্যাপারে আমি এই গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞ, কেননা এই গ্রামের কথা আমি এই গ্রুপেই জানতে পারি। ডোকরা শিল্পের প্রতি আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই, স্বাভাবিকভাবেই নিজের চোখে শিল্পীর শিল্পচর্চা দর্শনের সুযোগ ছাড়তে চাইনি। কিন্তু মুশকিল হল বিষ্ণুপুর পৌঁছেও যাকেই বিকনা গ্রামের কথা জিজ্ঞেস করি, আকাশ থেকে পরে। বুঝলাম পাঁচমুড়া গ্রামটি বেশ পরিচিত হলেও এখনও তেমন পরিচিতি পায়নি বিকনা। অগত্যা লাঞ্চ সেরে 'জয়বাবা গুগলনাথ' বলে বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে বিকনার উদ্দেশ্যে। বিষ্ণুপুর থেকে বিকনা যেতে সময় লাগলো ঘণ্টাখানেকের একটু বেশি। পিচঢালা রাস্তা থেকে তণ্বী রাঙ্গামাটির পথ খানিকটা গিয়ে মিশেছে তারই আরেক সহোদরার সাথে। তার দুই পাশেই গুটিকয়েক পরিবার বংশপরম্পরায় ধরে রেখেছে এই সুপ্রাচীন শিল্পকে। গালা আর মোমের সন্নিবেশে এবং দক্ষ হাতের কারসাজিতে আকার নিচ্ছে লকেট, বালা, পালকি, আদিবাসী, পেঁচা, ঘোড়া থেকে শুরু করে দেবদেবীর মূর্তি পর্যন্ত। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজের কারিগরি দেখতে দেখতে সময় কখনই যথেষ্ট মনে হবে না। সকলেই নিজেদের বাড়ির সামনে সাজিয়ে রেখেছেন তাদের শিল্পের পসরা, পড়ন্ত সূর্যের আলোয় যা সোনার মত ঝিলমিলিয়ে উঠছে। আমরাও সংগ্রহ করে এনেছি আমাদের সাধ্যমত কিছু, হাসিমুখগুলিকে কথা দিয়ে এসেছি পরেরবার বাঁকুড়া গেলে বিকনা গ্রামে আরেকবার পদার্পণ বাদ পরবে না। সাথে রইল কিছু ছবি আর অনুরোধ, বিষ্ণুপুর গেলে অবশ্যই যান একবার, নিরাশ হবেন না। প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা শুধু শিল্পীদেরই নয়, আমাদেরও সমান দায়িত্ব। ©Pallabi Saha
শাল মহুয়ার কোলে মাত্র তিনটি রুম নিয়ে ছোট্ট একটি জঙ্গলবাড়ি | ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে | মানিকপাড়া জঙ্গল এলাকার অন্তর্গত | এখানে থেকে একদিন ঝাড়গ্রাম লোকাল সাইটসিইং, একদিন বেলপাহাড়ি-কাঁকড়াঝর, একদিন হাতিবাড়ি-তপবন খুব সহজেই ঘুরে দেখে নেওয়া সম্ভব | গৃহ সুলভ আতিথিয়তা | ঘরোয়া খাওয়া-দাওয়া | প্রশস্ত বাগান, তাই চাইলে এক-দু'দিন শুয়ে বসে কাটিয়ে দেওয়াটাও মন্দ হবে না
সবার আগে সবাইকে কালীপূজা এবং দীপাবলির অনেক শুভেচ্ছা
আজ কালীপূজার দিনে আপনাদেরকে এক শ্বেতকালীর গল্প শোনাবো। বাংলার বুকে শ্বেতকালী!! তাও আবার ৫০০ বছর পুরনো!! শুনে হয়তো অবাক হবেন, তবে সেখানেই শেষ নয় এই মাকে দেখলে আশ্চর্য হবেন আরো। রাজবলহাট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের হুগলী জেলায় অবস্থিত। রাজবলহাট জায়গার নাম দেবী রাজবল্লভীর নামানুসারেই চিহ্নিত। এখানকার রাজবল্লভী কালীমন্দির একটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থান। অতীতের ভুরশুট রাজ্যের রাজধানী ছিল রাজবলহাট। শনিভানগড়ের মৎসজীবি রাজা, চতুরানন্দ নামক এক ব্যক্তির কাছে পরাজিত হন। চতুরানন্দের নাতি কৃষ্ণ রায় ভুরশুট রাজ্য স্থাপন করেন ১৫৮৩-৮৪ খৃষ্টাব্দে। তার বংশধর প্রতাপ নারায়ণ ছিলেন প্রজাপালক ও দাতা প্রকৃতির রাজা। তার পুত্র শিবনারায়ন, তস্য পুত্র নরনারায়ণ রায় ভুরশুটে রাজত্ব করেন। নরনারায়নের রাজত্বকালের শেষে বা তার মৃত্যুর অব্যবহিত পরে বর্ধমান রাজ কীর্তিচন্দ্র ভুরশুট রাজ্য দখল করে নেন। ভুরশুট রাজ্যের রাজধানী রাজবলহাটে তিনটি গড় বা দুর্গ ছিল যদিও বর্তমানে তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না। ৫০০ বিঘা জমিকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে দান করেছিলেন ভূরশুট রাজারা দেবী রাজবল্লভীর মন্দিরের সেবায়।
রাজবল্লভী কালীবিগ্রহ ছয় ফুট উচ্চ ও শ্বেতবর্ণা। গঙ্গামাটি দিয়ে বিগ্রহ নির্মিত। ত্রিনয়নী মুণ্ডমালিনী দ্বিভূজা বিগ্রহের ডানহাতে ছুরি ও বামহাতে রক্তপাত্র। কালীমূর্তির ডান পা শায়িত শিবের বুকের ওপরে এবং বাম পা বিরুপাক্ষের মস্তকে স্থাপিত। বিগ্রহটি শ্বেতকালিকা নামেও বিখ্যাত। এই মন্দির চত্বরে রাজবল্লভী দেবীর মন্দির ছাড়াও একাধিক মন্দির রয়েছে।
এই দেবীর মন্দির বর্তমানে সংস্কার করা হয়েছে। রাজবলহাটে একাধিক প্রাচীন টেরাকোটা মন্দির আছে যার মধ্যে আঠেরোশো শতকে তৈরী রাধাকান্ত, মতান্তরে রাধাগোবিন্দ মন্দির ও শ্রীধর দামোদর মন্দির অন্যতম। এছাড়াও রাজবলহাট তাঁতশিল্পের জন্য বিখ্যাত। |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |