সবার দার্জিলিং বা সিকিম ঘুরতে যাওয়ার হিড়িক দেখে একটু কাছাকাছি অথচ অন্যরকম কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে প্ল্যান করে ফেললাম ঝাড়গ্রামে যাওয়ার। 'উঠলো বাই তো ঝাড়গ্রাম যাই' - খানিকটা এভাবেই আমাদের ঝাড়গ্রাম যাওয়া আসার টিকিট কাটা, ঘোরাঘুরির প্ল্যান সব ঠিক হয়ে গেল। বাবার এক বন্ধুর ওখানে চেনাজানা, তাঁর সূত্রেই ওখানে হোটেল আর গাড়ির ব্যবস্থাও খুব সুন্দরভাবে হয়ে গেল।
দেখতে দেখতে বেরোনোর দিন চলে এলো। বিকেল সাড়ে পাঁচটার টাটা-হাওড়া ফেস্টিভাল স্পেশাল ট্রেনে (আপাতত ইস্পাত এক্সপ্রেসের নতুন নাম) চড়ে বসলাম। আটটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম ঝাড়গ্রামে, সেখানে গাড়ি অপেক্ষা করছিল। স্টেশন থেকে মিনিট দু তিনেকের রাস্তা 'ডুলুং গেস্ট হাউস' অর্থাৎ আমাদের হোটেলের। ট্রেনে উঠে ফোন করে রাতের খাবারের কথা বলে দেওয়া হয়েছিল, তাই রাতে গরম গরম খাবার পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি। খেয়েদেয়ে লম্বা ঘুম দিলাম, পরেরদিন সকাল থেকে প্রচুর ঘোরাঘুরি করতে হবে যে.. প্রথম দিন: প্রথম দিন সকাল নটা নাগাদ গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম গড়রাসিনী(গাড়রাসিনীও বলে) পাহাড় দেখতে, বেশ খাড়াই পাথুরে পথ। ওখানে বাসুদেব মন্দির, শিব মন্দির আর একটা ছোট গুহা রয়েছে (ঢোকা যায়না যদিও)। পাহাড়ের মাথা থেকে আশেপাশের দৃশ্য দারুণ উপভোগ্য। এরপর একে একে দেখলাম খান্ডারানি ড্যাম, ঘাঘরা নদী আর তারাফেনি ব্যারেজ। একেকটা জায়গা একেকরকম ভাবে সুন্দর। ঘোরাঘুরি সেরে সন্ধের মধ্যে হোটেলে ঢুকে পড়লাম। তারপর এমনি বেরিয়ে কাছাকাছি মার্কেটে একটু ঘুরে বেড়িয়ে এলাম। সেদিনের মত ঘোরা শেষ। দ্বিতীয় দিন: দ্বিতীয় দিন প্রথমে ঘুরতে গেলাম ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, যেখানে 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন' মুভির শুটিং হয়েছিল। পারমিশন ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হয়না, তাই বাইরে থেকে দেখেই মন ভরাতে হল। এরপর গেলাম চিল্কিগড়, সেখানে একে একে দেখা হল কনকদুর্গা মন্দির, ডুলুং নদী আর চিল্কিগড় রাজবাড়ি। প্রত্যেকটা জায়গাই অপূর্ব! চিল্কিগড় রাজবাড়িতেও দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন মুভির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল। চিল্কিগড়ের পাট চুকিয়ে রওনা দিলাম বেলপাহাড়ি। একে একে দেখে নিলাম জঙ্গলমহলের ঘন জঙ্গল, তপোবন (বাল্মীকি আশ্রম, তিলক পাহাড় আর সীতানালা), অতি প্রাচীন রামেশ্বর মন্দির আর সুবর্ণরেখা নদীর তীর হাতিবাড়ি এলাকা। এই জায়গাটা ওড়িশার বর্ডার এলাকার মধ্যে পড়ে, যদিও দেখে বিশেষ বোঝা যায়না। সেদিনের ঘোরাঘুরি এতটাই বেশি ছিল যে কেন্দুয়া পাখিরালয় দেখার আগেই সন্ধে নেমে গিয়েছিল, তাই যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সেদিনের মত ঘোরাঘুরি সাঙ্গ করে হোটেলে ফিরলাম। তৃতীয় দিন: তৃতীয় দিন একটু বেলা করে বেরিয়ে টোটো বুক করে দেখতে গেলাম কংসাবতীর তীর সাতপাটি। কি সুন্দর জায়গা! ফেরার পথে ডিয়ার পার্ক বন্ধ থাকায় (বৃহস্পতিবার করে বন্ধ থাকে) বাইরে থেকেই দেখে চলে আসতে হল। এরপর গেলাম কন্যাডুবি তারা মায়ের মন্দির আর তার সংলগ্ন নার্সারি দেখতে। অপূর্ব জায়গা! সবশেষে গেলাম সাবিত্রী মন্দির দেখতে, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির আরাধ্যা দেবী। পিছনেই আছে একটা জলাশয়, সেখান থেকে নাকি মল্লরাজাদের আমলের বহু পুরোনো নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। সাবিত্রী মন্দির পাঁচটায় খোলে, তাই অপেক্ষা করতে গিয়ে কৃশ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান দেখা হয়নি, সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। পরেরদিন সকালে সাড়ে সাতটার টাটা-হাওড়া ফেস্টিভাল স্পেশাল ধরেই হাওড়া এলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। বিঃ দ্রঃ ১. ঝাড়গ্রাম দেখতে গেলে যাওয়া আসা মিলিয়ে চার পাঁচ দিন হাতে নিয়ে আসবেন। ২. স্নিকার বা পাম্প শু পরতে পারলে সবচেয়ে ভালো, না থাকলে কিটো। একদম ফ্ল্যাট স্যান্ডেল না পরাই ভালো। ৩. বেলপাহাড়িতে খাবারের দোকান একেবারেই তেমন ভালো না। মন খুঁতখুঁত করলেও উপায় নেই, ওখানেই লাঞ্চ করতে হবে। ৪. কিছু কিছু জায়গা খুবই ফাঁকা, তাই সাথে শুকনো খাবার আর জল অবশ্যই রাখবেন। ৫. বেলপাহাড়ি আর তপোবন যাওয়ার পথে সেভাবে কোনো টয়লেট নেই, পেট্রোল পাম্পের টয়লেটই ভরসা। নইলে জঙ্গলে কাজ সারা ছাড়া উপায় নেই। ৬. তারাফেনি ব্যারেজের উল্টোদিকে একটা খড়ের চালা দেওয়া ঝুপড়িতে খেজুর গুড় আর পাটালি বিক্রি হয়, বেশ ভালো খেতে। চাইলে কিনতে পারেন। বেলপাহাড়িতেও পাওয়া যায়, তবে তার স্বাদ অতটা ভালো না। ৭. কৃষ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান ঘুরতে বেশ সময় লাগে, তাই ওইদিন দূরে যাওয়ার প্রোগ্রাম রাখবেন না। আর যদি যান তাহলে কৃষ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান দেখে বেরোবেন। ৮. কনকদুর্গা মন্দিরে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা প্রতিজন।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |