শাক্তরাস নবদ্বীপের প্রধান উৎসব। শরৎকালে শারদোৎসবের পরেই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয় উৎসবের প্রস্তুতি এবং কার্তিকীপূর্ণিমায় নবদ্বীপের এই লোকায়ত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। শাক্তদেবীদের বিশাল মৃন্ময়ী মূর্তি নির্মাণ করে শক্তি আরাধনাই নবদ্বীপের রাসের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
রাস মূলত কৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয় ভাবধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। তবে নবদ্বীপের রাস প্রধানত শাক্ত রসাশ্রিত। তবে নবদ্বীপে এই একই দিনে মন্দির অভ্যন্তরে রাধাকৃষ্ণের চক্ররাস হয়, তবে তার জাঁকজমকপূর্ণতা শাক্তরাসের পাশে ম্রিয়মান। জনশ্রুতি প্রচলিত আছে, নবদ্বীপে চৈতন্যদেব রাধাকৃষ্ণের রাস উৎসবের সূচনা করেছিলেন। সেই হিসাবে ষোড়শ শতাব্দীর প্রারম্ভেই রাসের সূচনা হয়েছিল। তবে চৈতন্যদেবের সন্ন্যাস গ্রহণের পর নবদ্বীপের বৈষ্ণব আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। গৌরাঙ্গ-পরিজনেরা বাধ্য হয়ে নবদ্বীপ ত্যাগ করে স্থানান্তরে গমন করেন। ফলে বৈষ্ণবীয় উৎসব অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। দ্বিতীয় পর্যায়ে নবদ্বীপে যে রাস উৎসবের সূচনা হয় তা অভিনব এবং বাংলার ধর্মীয় ইতিহাসে তা অদ্বিতীয়।
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের (১৭২৮-১৭৮২ খ্রী) পৃষ্ঠপোষকতায় নবদ্বীপের শাক্ত রাসের প্রভূত উন্নতি হয়েছিল, সেই সময় রাজ পোষকতায় নানা পূজা হয় এবং রাজার নাম সংকল্প করা হত। সেই পুজোগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য বড় শ্যামা, চারিচারাপাড়ায় ভদ্রকালী ইত্যাদি৷ এছাড়াও এই বছরে রয়েল ক্লাব, ইয়ং ব্লাড ক্লাব, মুক্তিসূর্য্য ক্লাব ইত্যাদি পূজো মন্ডপ বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আমার নবদ্বীপ রাসযাত্রা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম।
0 Comments
একদিকে বয়ে চলেছে ব্রহ্মপুত্র নদ। অন্যদিকে তার মাটি ছুঁয়ে যাচ্ছে লোহিত নদী, খেরকোটিয়া নদী ও সুবনসিরি নদী। এর মাঝেই অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম নদী দ্বীপ - মাজুলী দ্বীপ।
এই মাজুলী দ্বীপেই প্ৰাচীন উপজাতি, মিসিং দের বাস। আদতে তাঁরা ছিলেন মিরি উপজাতি। "মিসিং" উপাধিটা ইংরেজদের থেকে পাওয়া। এক মিসিং উপজাতির যুবকের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম - এনাদের আদি বসবাস ছিল তিব্বতে। সেখান থেকে ওনারা আসেন অরুনাচল প্রদেশ। তারপর এই মাজুলী দ্বীপে। কিন্তু ব্রহ্মপুত্রর রোষে প্রতি বছরই একটু একটু করে তলিয়ে যাচ্ছে মাজুলী। এই মিসিংরাও একই সাথে বারবার হয়েছেন ভিটে মাটি ছাড়া...এর থেকেই তাঁদের নামকরণ মিসিং ( Missing ) as they are missing their lands every time. মাটি থেকে বেশ খানিকটা উঁচুতে বাঁশের ঘর বাঁধেন এই মিসিংরা বন্যার থেকে রক্ষা পেতে। মাজুলীর পাথুরিচক গ্রামে এমনই এক মিসিং পরিবারের সাথে কিছুটা সময় কাটানোর সৌভাগ্য আমার হলো। বাঁশের বানানো সিঁড়ি ( মই বলাই ভালো) বেয়ে ঘরে ঢুকতেই অভ্যর্থনা পেলাম বাটিতে তাঁদের রাইস বিয়ার দিয়ে। অসাধারণ সেই স্বাদ। মিসিং ভাষায় এর নাম 'আপঙ'। এই আপঙ কিন্তু তাঁদের জীবনে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে - যেকোন সামাজিক অনুষ্ঠান, এমনকি মৃত্যুর পর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানেও এই 'আপঙ' নিয়ে যাওয়ার প্রচলন আছে।
আমিষ নিরামিষ সবই খান তারা, তবে পুরোটাই সেদ্ধর উপর - তেল, মশলা বা হলুদের ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে।
মিসিং উপজাতিদের ভাষা আছে কিন্তু লিখিত কোন বর্ন নেই। বাঁশের তৈরি ঘরের মেঝের উপর বসানো মাটির চৌকোনা উনন। গৃহকর্ত্রী তখন ব্যস্ত রান্নায় - মাছের ঝোল রান্না হচ্ছে। এই উনন ওনাদের খুবই পবিত্র স্থান। তাঁদের বিশ্বাস তাঁদের পূর্বপুরুষের আত্মা উনুনের মাটির কাঠামোতে বিরাজিত। ঘুম থেকে উঠে সকালে তাই সর্ব প্রথম কাজ হলো এই উনুনকে পরিষ্কার করে নিকানো। আবার রাত্রে ঘুমোতে যাওয়ার আগেও এটাই শেষ কাজ। একই ঘরে পরিবারের সকলে মিলে রান্না, খাওয়া, শোয়া এবং থাকা। বিবাহের পরই শুধুমাত্র আলাদা ঘর বানানো হয় পারটিশন দিয়ে। ১) কিভাবে যাবেন? ২) কোথায় থাকবেন? ৩) কত খরচা?
এই সমস্ত এবং আরো অনেক তথ্য পেয়ে যাবেন আমার এই ডিডিওটিতে:
রবিবার সকালে হঠাৎ করে পরিকল্পনা করা হলো আমরা দুই পরিবার মিলে কোথাও থেকে একদিন এর জন্য ঘুরতে গেল কেমন হয়? সেই মতো বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুটি নতুন স্হানের উদ্দেশ্যে।
সকাল ৮ টায় আমরা বোলপুর থেকে রওনা দিলাম দুটি বাইক নিয়ে। প্রথমে বোলপুর থেকে নানুর গেলাম। ওখানে সকালের টিফিন সেরে ফুটিসাকো থেকে কাটোয়া রোড ধরলাম। আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল অট্টহাস সতীপীঠ। তাই নিরোল গ্রাম হয়ে পৌছে গেলাম অট্টহাস সতীপীঠ মন্দিরে। এই সময় পিকনিক এর মরসুম তাই খুব ভীড় ছিল। মন্দির টা ঘুরে নিলাম। বর্ধমান জেলার নিরোল গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ ডিহি গ্রামে অবস্থিত এই মন্দিরটি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সতীপীঠ। এখানে দেবীর অধঃ ওষ্ঠ (অধর / নিচের ঠোঁট) পতিত হয়। এখানে দেবীকে অধরেশ্বরী নামে পূজা করা হয়।এখানে আছে এক প্রাচীন শিলামূর্তি। মন্দিরের অষ্টধাতুর মূর্তিটি চুরি হয়ে গেছে। দোলের সময় এখানে বিশাল মেলা বসে। এখানে থাকার জন্য অতিথি নিবাস আছে। মন্দির থেকে ভক্তদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে বাইক নিয়ে আমরা রওনা দিলাম সোনারুন্দী রাজবাড়ীর দিকে। এখান থেকে রাজবাড়ীর দূরত্ব প্রায় ১০ কিমি মতো। পাচুন্দি থেকে বাঁদিকের রাস্তা ধরে এগিয়ে পৌছে গেলাম সোনারুন্দী রাজবাড়ী চত্বরে। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার একদম দক্ষিণ প্রান্তের একটি গ্রাম হলো সোনারুন্দি। কাটোয়া.. আজিমগঞ্জ লাইনে সালার স্টেশন এ নেমে ১০ কিমি পশ্চিমে গেলেই চোখে পড়বে সোনারুন্দি রাজবাড়ি চত্বর। প্রাচীন বঙ্গদেশে দন্ডী ছিল বণিক ও কায়স্থদের উপাধি। দন্ডী উপাধিধারী বণিকরা এই এলাকায় বসবাস করত ও এক একটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিল। তামা, লোহা, ও সোনার বণিকরা নিজ উপাধি অনুসারে তিনটি গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছিল।স্বর্নবনিকরা এইভাবে সোনারুন্দি গ্রাম এর প্রতিষ্ঠা করেছিল বলে মনে করা হয়।এই এলাকায় তাঁতীদের বাস এ বেশি এবং তাঁত বস্ত্রজাত কাপড়ের সুনাম ও খুব প্রাচীন। চৈতন্য পরবর্তী যুগে এই গ্রাম এর তাঁতীরা বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হয়। নিত্যানন্দ দেব বাহাদুর সোনারুন্দি গ্রাম এর পূর্ব প্রান্তে প্রায় ৫৪ বিঘা জমির উপর তার রাজবাড়ি ও মন্দির তৈরী করেন ।সেই সময় সোনারুন্দি , উদ্ধারণপুর,ও আশপাশ এর গ্রাম নিয়ে তার জমিদারি এলাকা ছিল প্রায় ৪০০০ বিঘা। সোনারুন্দি এলাকায় উচু প্রাচীর দিয়ে ঘিরে চারদিকে চারটে বিশাল তোরণ নির্মাণ করলেন।মূল রাজবাড়ির সংলগ্ন পশ্চিম অংশে কিশোরী বনওয়ারীলাল এর মন্দির নির্মাণ করলেন।প্রতিষ্ঠা করলেন রাধাকৃষ্ণ ও অষ্টসখীর মূর্তি।বৃন্দাবন এর অনুসরণ এ তিনি যুগল মূর্তির নাম দেন কিশোরী বনওয়ারীলাল।চারিদিকে বিশাল প্রাঙ্গণ।মাঝখানে নাট মন্দির।। মূল প্রাসাদ এ ১০০ র বেশি ঘর ছিল।বায়ু কোণে দাস দাসদাসি দের থাকার জন্য বাড়ি নির্মাণ করেছিলেন।মন্দির এর পাশেই কিশোরী সায়র পুকুর কেটে তার ঘাট এ স্নানাগার ও গোপেশ্বর শিব এর মন্দির নির্মাণ করলেন। রাজবাড়ির বাইরে ১২ টি কুঞ্জ নির্মাণ করলেন যেখানে রাস বা ঝুলন উৎসব এর সময় কিশোরী বনওয়ারীলালজি যেতে পারেন। উৎসবের সময় এই দেব মূর্তিগুলোকে নিয়ে যাওয়া হতো কুঞ্জ গুলিতে।প্রত্যেক কুঞ্জ তে একটি করে পুকুর ও সংলগ্ন মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।মূলত তিনি বঙ্গদেশে দ্বিতীয় বৃন্ধাবন নির্মাণ করেছিলেন।সুসজ্জিত এই চত্বর কে সকলে বনওয়ারীবাদ বলতো। বর্তমান এ রাজবাড়িটি ভগ্নপ্রায় ও অবহেলায় পড়ে রয়েছে। রাজবাড়ির পাশে বাইরে দেখতে পেলাম দুটি ভগ্ন কামান,অযত্নে পড়ে আছে, বাচ্চারা ওটার উপর চেপে খেলা করছে। ঠাকুর মন্দির সংলগ্ন একটি বড়ো দীঘি আছে। দীঘি তে খুব বড় বড় মাছ আছে। কাউকে মাছ ধরতে দেয়া হয়না। লোকমুখে শোনা যায় রাজকুমারদের আমলে মাছকে সিঁদুর ও নথ পড়িয়ে দীঘিতে ছাড়া হত। জনশ্রুতি আছে কেউ একজন জোর করে মাছ ধরে ছিল এই দীঘি থেকে।সেদিনই সে মুখে রক্ত উঠে মারা যায়। পর্যটকরা খাবার দিলে মাছগুলি এসে পর্যটকদের হাত থেকে বিস্কিট, মুড়ি ইত্যাদি খাবার খেয়ে যায়। রাজবাড়ির বেশ কিছুটা অংশ স্কুল ও কিছুটা অংশ অনাথ আশ্রম ও বৃদ্ধাশ্রম কে দেওয়া হয়েছে।রাজবাড়ির বেশ কিছু অংশ ভেঙে পড়ছে। এখনও যদি সংস্কার করা না হয় তাহলে খুব অল্পদিন এর মধ্যেই হয়ত এই ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি ধ্বংসের মুখে পতিত হবে। পশ্চিমবঙ্গের এই ধরনের রাজবাড়ী গুলি যদি সরকারের পর্যটন দফতর নিয়ে সংস্কার করে এবং পর্যটকদের থাকার ব্যবস্থা করা হয় (যেমন ইটাচূনা রাজবাড়ীর মতো করা হয়, যদিও ইটাচূনা রাজবাড়ীর সরকারের পর্যটন দফতর এর নয়) তাহলে এই পূরাতন রাজবাড়ী গুলি রক্ষা হবে এবং পর্যটকদের জন্য এলাকার মানুষের আর্থিক উন্নতি হবে। যদিও এটা আমার ব্যাক্তিগত মতামত। আসলে রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ থেকে মনে হলো যদি এই পূরাতন রাজবাড়ী গুলি কোনোভাবে রক্ষা করা যায়। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়ে আমরা বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। ফেরার সময় আমরা ফুটিসাকো - কির্নাহার - লাভপুর হয়ে বোলপুর ফিরলাম (কীর্নাহার এর বিখ্যাত মন্ডা কিনলাম ফেরার সময়) (কিছু লেখার উ়ৎস:- ইন্টারনেট)
3 দিনের জন্য একদম পারফেক্ট ট্যুর। বর্ধমান থেকে গিরিডি 5 ঘন্টার রাস্তা। গিরিডিতে থাকতে পারেন। কয়েকটা হোটেল আছে। আমরা ছিলাম রিসোর্ট উৎসব উপবন(ফোন নম্বর- 09263635810)। খুবই ভালো হোটেল কাম রিসোর্ট। ভাড়া 1500/রুম। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই আছে। আছে বারও। গিরিডিতে দেখার মতো জায়গা বলতে উশ্রী জলপ্রপাত, খাণ্ডলী লেক ও পাহাড়। উশ্রী বড় জলপ্রপাত নয়, তবে ভালো লাগবে। পরিবেশটা সুন্দর। খাণ্ডলী খুব সুন্দর জায়গা। লেক ও পাহাড় মিলিয়ে বেশ সুন্দর। পাহাড়ের ওপরে অনেকটাই ওঠা যায়। এরপর আসুন পরেশনাথ পাহাড়। গিরিডি থেকে মধুপুর হয়ে পরেশনাথ যাওয়ার রাস্তাটা বেশ সুন্দর। জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি রাস্তা। পরেশনাথ পাহাড়ের ওপরে বাইক নিয়ে উঠতে বারণ করবে স্থানীয় পুলিশ। হেঁটে উঠলে প্রায় 11 কিলোমিটার। তবে শুনেছি বাইক নিয়ে অনেকেই ওঠে। সেখান থেকে তোপচাঁচী পাহাড় ও ড্যাম 1 ঘন্টার রাস্তা। এই জায়গাটি অপূর্ব। বেশ সুন্দর লাগবে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়। হাতে আর একদিন সময় থাকলে চলে যান পত্রাতু ভ্যালি। প্রায় 180 কিলোমিটার। অসাধারণ জায়গা সেটাও।
#গন্তব্য_দার্জিলিং
#স্কুটি_রাইডিং #বাঁশবেড়িয়া-#রায়গঞ্জ #তারিখ-22/12/20 #পর্বঃ১ (আগাম ধন্যবাদ জানাই গ্রুপ আড্মিনিস্ট্রেশন কে, আমার পোস্ট ও আমাদের স্কুটি রাইডিং পাহাড় এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ভ্রমণ পিয়াসী বন্ধুদের কাছে তুলে ধরার জন্য) =============== "#অনেক_শক্তিমান_হাল_ছেড়ে_দেয় #হার_মানে_বহু_দ্রুতগামী #জীবন_যুদ্ধে_শুধু_তারাই_যেতে #যারা_ভাবে_জিতবোই_আমি" যদিও দার্জিলিং টুর কোন যুদ্ধ ছিলো না, বরং জীবনের দুর্দান্ত প্রাপ্তি, কিন্তু এক কথায় প্রতিকূলতা,বাধা,বিপত্তি,অনিশ্চয়তা, ভয়,নিষেধ,অসম্ভবনা কে জয় করা টাও একরকম যুদ্ধই বটে ।আর আমার মনে হয় সংঘর্ষ একটু আধটু জীবনে না থাকলে , জীবন টা বড় একঘেয়ে হয়ে যেত। ( 110 সিসি)পক্ষীরাজ কে নিয়ে দুজনের জার্নি বেশ মজাদার উপলব্ধি বটে, স্কুটি রাইডিং এ দার্জিলিং টুরের প্রতিটা ধাপে আমরা আনন্দ পেয়েছি,আমাদের কাছে এটা অসাধারন একটি টুর কেননা এতো সুদীর্ঘ সময়ের টুর এটাই প্রথম ছিলো, যা কিনা অন্যদের কাছে সাধারণ মনে হলেও হতে পারে আমাদের কাছে অনন্য । ভ্রমণ মানে জীবন বাঁচা, ভ্রমণ হলো এক বুক অক্সিজেন, এক একটি ভ্রমণ যেনো এক এক রকমের শিক্ষার আলোকে নিমজ্জিত করে মানুষকে। আমরা দুজনেই বরাবর একটু ব্যতিক্রমী।আমাদের টান টা একটু অসম্ভবনার দিকেই সর্বদা, মানে কঠিন টা করার মধ্যে বেশ একটা দারুণ মজা খেলে যায় ।একটা বাস্তব কথা বলি স্কুটি তে অনেকেই নাক সিটকায়, "ওহো! স্কুটি তে পাহাড়?হবে না বা পারবে না !বাইক নিয়েই যেতে যেখানে মানুষ কতবার ভাবছে সেখানে স্কুটি তাও দুজন এক গাড়িতে, অসম্ভব "। এভাবে একটু দমে যায় অনেকেই,আমি নিরাশ হইনি, বন্ধুও হয়নি ,আমরা আবার অন্য কথা বলি ,"পারবো না" বলে কিছু কথা আমাদের অভিধানে নেই। চেষ্টা ও মনোবল টাই আসল। অনেক সুদূরের স্বপ্ন দেখি আমরা দুই বন্ধু, অনেক কিছু অসম্ভব কে জয় করার স্বপ্ন দেখি দুজনেই, আরো যাবো এগিয়ে উৎসাহ নিরুৎসাহ সব কিছুকে পিঠে কোলে চাপিয়ে নিয়েই ছুটবো,কারণ এই দুইই মানুষের ভেতরকার শক্তি কে জাগ্রত করে তোলে।সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় শুধু। খুব ইন্টারেস্টিং গপ্পো আমাদের এই দার্জিলিং ভ্রমণ ,স্কুটি চালিয়ে আমি এই মজা জীবনে কখনও পেতাম না যদি পাহাড়ে রাইডিং না করতাম , চরম আনন্দ আমরা দুজনেই পেয়েছি রাইডিং করে, চড়াই এ ওঠার সময় গাড়ি উঠবে তো? তার ওপরে যখন ঢাল এ উঠে সামনে গাড়ি এলে বা জ্যাম এ পড়লে দাঁড়াতে হচ্ছিলো তখন হুরহুর করে গাড়ি নেমে যাবার সম্ভাবনা,ব্রেক যেখানে ধরছে না (ঢাল এ) গাড়ির হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে পা দিয়ে রাস্তা দৃঢ় ভাবে আটকে থাকা আর উতরাই এর সময় ব্রেক ধরতে ধরতে নামা উফ্ফ সেসব বেশ শিক্ষণীয়। সম্পূর্ণ টুর টাকে কয়েকটি পর্বে আনবো সকলের সামনে, স্কুটি নিয়ে দার্জিলিং টুরে যাবো আজ থেকে 4বছর আগে ধুর বছর কেনো চারদিন আগেও ভাবিনি ।রাইডিং আজকাল আমাদের পাগল করে তুলছে ।যারা স্কুটি নিয়ে দূরে রাইডিং করতে ভয় পাও তারা অবশ্যই পড়বে,উৎসাহ মিলবে। এমন এক রোমাঞ্চকর গল্পের শুরুটা কিন্তু অন্য ভাবে হয়েছিলো... প্রবল শীতের আমেজ, সময় টা ডিসেম্বর এর মাঝামাঝি ,বেশ জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা টা পড়েছে ।স্নান সেরে ছাদে বসে উষ্ণ রোদে গা শেঁকছি , এক আরামদায়ক মনোমুগ্ধকর স্পর্শ পিঠে আঙুল বুলিয়ে যাচ্ছে সুখের , হঠাত্ ফোন টা বেজে উঠলো,দেখি বান্ধবীর (চন্দনা),ফোন ধরতেই বললো "আমার সব প্যাকিং কমপ্লিট"..... আমি-কী? কিসের প্যাকিং? সকালে কথা হলো বলিস নিতো কোথাও যাবি... সে- কালকে দার্জিলিং যাচ্ছি । আমি- তাই? কার সাথে? সে-তোর সাথে, অবশ্য পক্ষীরাজ নিয়ে যাবে? । আমি-কী? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কালকে দার্জিলিং যাবি আজ দুপুরে বলছিস?এরপর না আমি ফোন করি তাকে আর না সে আমায়,কোন কথা হয়নি, দুপুরে জমিয়ে ঘুম দিলাম সব ভুলে গিয়ে শীত ঘুমে গেলাম?, সন্ধ্যায় হঠাত্ দরজায় কলিং বেল বাজলো, চোখ ডোলতে ডোলতে দরজা খুলে দেখি, পক্ষীরাজ দাঁড়িয়ে, সাথে তার মালকিন হাতে ব্যাগ...?? আমি-কী করেছিস ভাই? তুই সত্যি যাবি ভেবেছিস?? এরপর এতো গল্পে যাচ্ছি না, তবে কম সময়ের প্যাকিং কার্য আমি পারবনা জানি, তাই সে কাজের চাপ ও নিইনি,ওকেই দিলাম, ওই আমার ব্যাগ প্যাক করলো সাড়ে সাত থেকে সাড়ে নয়টা অবধি? এই লাগবে ওই লাগবে করে করে, তবে আমরা লাগেজ যত সম্ভব কম করতে চেয়েছি,হাতে গোনা সমস্ত কিছু, যতটা প্রয়োজন তার অধিক কিছুই নয় । ওর মুখে শুনলাম, দার্জিলিং প্রায় 700কিমি প্রায় 17/18ঘন্টার জার্নি বা তার অধিক । তখন আমি- হ্যাঁ? এতো কিমি? পুরুলিয়া এর অর্ধেক এর অর্ধেক ছিলো, যেটা কিনা অক্টোবর এ করে এসে।কিন্তু কোন প্লান ছাড়া পাহাড়? কোথায় থাকবো ?কী করবো?এতো কিমি রাইডিং তো আগে আমরা করিনি ।আসলে সে মনে মনে একটা প্লান ভেজেই এসেছিলো।সে জানে আমি পারবো,আর আমিও জানি সে যখন ভেবে নিয়েছে সেও পারবে, পাহাড় পাহাড় করে বহু সময় ধরে পাগলামী করছে, ওর পাহাড় প্রীতি আমাকেও পাহাড়ের প্রতি আবেগ প্রবণ করে তুলেছিল, পাহাড় কে এতো ভালবেসে ফেলবো বুঝিনি ।এরপর আমাদের পরিচিত অভিজ্ঞ দুই দাদার সাথে একটু আলোচনা করা হয় রাস্তা সংক্রান্ত বিষয়ে । আমার সাথেও কিছুটা আলোচনা করলো , আমার আবার রাইডিং এ অল্প বিস্তর দক্ষতা থাকলেও রাস্তা সংক্রান্ত যেকোন জ্ঞান চন্দনার বেশি , তাই সে যেভাবে বলে আমিও এগিয়ে যাই ।সময় তো কম এর মধ্যে খেয়ে ঘুমাতে হবে ভোর 5টায় বেরোনো, এতো ঘণ্টার রাইডিং, শরীর ক্লান্ত হলে চলবে না । এমন একটা রোমাঞ্চ কর টুরের উত্তেজনা তে আমি কিছু সময় ছটফট করেছি ঠিকই কিন্তু কখন যেনো ঘুমিয়ে গেছি, অল্যর্ম বাজার অনেক আগেই উঠে পড়লাম, রেডি হয়ে নিলাম দুজনেই সুরক্ষা কবজ গুলি পড়ে , ঠাকুর প্রণাম করে , পক্ষী রাজ কে ধূপ দেখিয়ে প্রণাম করে জয় গুরু বলে বেরিয়ে পড়লাম ।এ বিষয়ে বলে রাখা দরকার ডিসেম্বর এ দু বার ডাক্তার এর ঘরে সেবা নিয়েছে পক্ষীরাজ, ।ডাক্তাররা ছাড়পত্র দিয়েছিলো দূরের যেকোন যাত্রার জন্য ।আমরা যাত্রা শুরু করলাম বাঁশবেড়িয়া থেকে মগরা গুরাপ রোড ধরে ।কী যে একটা উন্মাদনা জাগছে যতবার ভাবছি দার্জিলিং আমাদের এবারের গন্তব্য ঠিক ততবারই । ঘন কুয়াশার চাদর এলিয়ে রাস্তা গুলো যেনো ঘুমোচ্ছে, বেশ অন্ধকারময় ও কুয়াশাময় । এগিয়ে যাচ্ছি ফগ লাইট ও হ্যাজার্ড লাইট জ্বালিয়ে । তখন জমিয়ে ঠাণ্ডা, কুয়াশায় ভিডিও করতে গিয়ে চন্দনা বেশ নাজেহাল ঠাণ্ডা তে, দস্তানা খুলতেই হাত ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলো ওর?,তবু আমার আবদারে ভিডিও করে সে ।এরপর দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে শক্তিগড়ে যখন ঢুকলাম সময় তখন প্রায় সকাল 6,30 মিনিট।সেখানে চায়ের দোকানে চা, বিস্কুট খাই ও ফ্রেশ হয়ে ,একটু হাত পা গুলো কে ,ও পক্ষীরাজ কে বিরাম দিয়ে আমরা বর্ধমানের দিকে এগিয়ে গেলাম, উল্লাস মোড় হয়ে এগোতে থাকলাম, এলো নতুন গ্রাম সেখানে পেট্রোল পাম্প এলে পক্ষীরাজ কে পেট ভরিয়ে তেল খাইয়ে , আমরাও একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম,ফুটি সাকোর জঘন্য রাস্তা সাথে অজস্র বাম্পার ডজ করতে করতে কুলি , উফ্ফ এটা কেমন রাস্তা? আমি ওকে বারবার জীগ্গেস করছিলাম এই রাস্তা ধরে মানুষ দার্জিলিং এর পথে যায়? হায় ভগবান, অন্য রাস্তা কী ছিলো না?ও জানায় হ্যাঁ এটা ধরেই যায়। আমি ভাবছিলাম ও নিশ্চই ভুল রাস্তায় ঢুকেছে । তাই বারবার বলছি কিরে ঠিক যাচ্ছি?ও বলছিলো হ্যাঁ রে ।যাইহোক দীর্ঘ সময় এমন খারাপ রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে শর্ষের ক্ষেত দেখলাম এরপর মোড় গ্রাম এর দিকে যাচ্ছি । মন প্রান ভরে গেলো, খারাপ রাস্তার তিক্ততা কাটিয়ে মনটা মুহুর্তেই ফুরফুরে হয়ে গেলো । এমন শর্ষের ক্ষেত সত্যি আগে কখনও দেখি নি । দূর দিগন্ত জুড়ে শুধু শর্ষের ক্ষেত, গভীর হলুদ রঙের । কী ভালো লাগছিলো মিঠে রোদ আর হলুদ শর্ষের ক্ষেত ।মোরগ্রাম ঢোকার আগে ফের খারাপ রাস্তা পেলাম, বড় বড় গর্ত রাস্তায়, যেগুলো বেশ চওড়া,সমগ্র রাস্তা যেনো খুঁড়ে খুঁড়ে রাখা হয়েছে, লরি, ট্রাক পাস যখন করছে তখন যেনো ধুলোর পাউডার কেউ বাতাসে মিলিয়ে দিচ্ছে কুয়াশার মত, এরই মাঝে সেই গর্তের মুখে একজন পঙ্গু মানুষ ভিক্ষে করছে, ধুলোয় তার শরীর আচ্ছাদিত, একটু অসাবধানতা তার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে, আমরা খুব আশ্চর্য হলাম, এমন বিপদ জনক খারাপ রাস্তার মাঝে বসে এভাবে ভিক্ষে করছে । যাইহোক এগোচ্ছি আমরা, এক ঘন্টা পর পর কিছু সময় আমায় বিরতি দিয়ে চন্দনা চালাচ্ছিলো, তবে আমি বেশি সময় পিলিয়ন হয়ে বসতে পারিনা, রাইডিং করার জন্য হাত পা বেশি কামড়াতে থাকে?,তবে অনেকেই ভাবেন পিলিয়নরা বেশ আনন্দেই যায়, আমার মনে হয় তাদের ঘাড় পীঠ, কোমর বেশি ধরে , আমি তো চালাতে চালাতে হাত, পা কোমর, মাথা নানান ভাবে সুবিধা মতো নেড়ে চেড়ে নিই, যাতে এক ভাবে বসে কোন অসুবিধা না হয়, তাই ব্যাথা যন্ত্রনা টা উপলব্ধি হয়না বা হচ্ছিলো না তখনও ।মোরগ্রাম পার করেই এন.এইচ এ উঠতেই একদম ঝকঝকে সুন্দর রাস্তা পেয়ে আমি মনে মনে আনন্দিত হলাম ও শান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম । এরপর ধূলিয়ান গঙ্গা হয়ে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে পাস করছি,অধিক জ্যাম থাকার দরুন , পক্ষীরাজ কে উড়িয়ে নিই ফুটপাত এর ওপরে, সেখান থেকেই এগোতে থাকি,সময় তখন প্রায় দুপুর 1টা, চন্দনার কাছে ওটা স্বপ্নের মত, ট্রেনে যেতে যেতে কখনও ভাবেনি সে এখান থেকে তার পক্ষীরাজ এ চড়ে যাবে কখনও ।আর আমি তখনও বিস্মিত, আচ্ছা এগুলো স্বপ্ন নয়তো, হঠাত্ কেউ ডাকবে আর ভেঙে যাবে ?সত্যি দার্জিলিং যাচ্ছি স্কুটি তে ?এ যেনো স্বপ্ন, বিশ্বাস হচ্ছিলো না । একটা চিমটি দে তো দেখি, ওরে সর্বনাশা চিমটি দিলো সে, ছোটবেলার রাম চিমটি শাম চিমটি মনে পরে গেলো? ।সেখান থেকেই এগোতে থাকি,সময় তখন প্রায় দুপুর 1টা,এরপর দাঁড়াই পেট্রল পাম্প এ, পক্ষী রাজ পেট ভরে তেল খায়, আমরাও ফ্রেশ হয়ে কেক ও জল খেয়ে নিই, ও চুইংগাম মুখে নিয়ে এগোতে থাকি পুনরায় ।
এরপর মালদা রায়গঞ্জ টোল ট্যাক্স পাস করে আমরা এগোচ্ছি তখন 3টে হবে। হঠাত্ সেখানে গাড়ির পেছনের টায়ার সমস্যা করলে মুহুর্তেই স্পীড কমিয়ে নিই ও বাঁ দিক চেপে দাঁড়িয়ে যাই, খারাপ রাস্তায় দীর্ঘ সময় চালিয়ে টায়ার বেশ ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছিলো, সৌভাগ্য বশত কয়েক পা দূরের গ্যারেজ থেকে টায়ার বদলে নতুন টায়ার লাগিয়ে নিই ।কারণ সম্পূর্ণ টুর টা নির্ঝঞ্ঝাট চাইছিলাম আমরা । বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয় গ্যারেজে , কারণ গ্যারেজ মালিক কে ফোন করে দূর থেকে ডেকে আনতে হয়, 2কিমি দূর থেকে টায়ার কিনে আনতে হয়, তাই অনেকটা সময় এখানে কেটে যায়। এর মাঝে তো বলতে ভুলে গেছি আমরা সকালের খাবার ,দুপুরের খাবার কিন্তু স্কিপ করে গেছি, পেট্রোল পাম্প গুলোতে দাঁড়িয়ে জল বিশ্কুট, কেক খেয়েছিলাম তাই খুব একটা ক্ষিদে ভাব টা ছিলো না ।দার্জিলিং যাবার আনন্দে ব্রেকফাস্ট ,লাঞ্চ সব মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে ।এদিকে ধীরে ধীরে দিনের আলো কমতে থাকে, সূর্য শর্ষের ক্ষেতে ধীরে ধীরে লুকোতে থাকে, এরপর আমরা রায়গঞ্জ ঢুকি বিকেল 5 নাগাদ। আমাদের দার্জিলিং টুর টা নিয়ে কাউকেই সেভাবে জানানো হয়নি, হাতে গোনা কয়জন ছাড়া, যার কথা না বললেই নয় রাজীব দা যিনি প্রথম থেকে দার্জিলিং টুর টা জানতে পেরে আমাদের সাথে একরকম জুড়েই ছিলেন । বার বার ফোন করে উৎসাহিত করা,বা আমরাও যখন পাম্প বা কোথাও দাঁড়িয়েছি, ওনাকে ফোন করেছি ঠিক সময় মত যাচ্ছি কিনা জানতে চেয়েছি, উত্তরে তিনি জানিয়েছেন দারুণ যাচ্ছি,হেব্বী টাইমিং, খুব ভালো লাগছিলো তখন, উনি খুব সুন্দর ভাবে আমাদের গাইড করছিলেন ।রাজীব দা জানান রায়গঞ্জ এ হোটেল ভেঙ্কটেশ এর কথা । সেখানে বাজেট ফ্রেন্ডলি রুম না থাকায়, সেখানের লোকাল মানুষের থেকে জানতে পারি কিছু ভালো হোটেলের নাম। একদম পুরোনো হোটেলে গিয়ে উঠি নাম নটরাজ । সব দেখে বুঝে সেফ লাগলো ও বাজেট আমাদের পকেট ফ্রেন্ডলি, আর গাড়ি রাখার সুব্যবস্থা আছে দেখে থেকে গেলাম ।এরপর রুমে এসে ফ্রেশ হতেই পেটের দুষ্টু ক্ষুধার্থ ইঁদুর গুলো চেচিয়ে গাল দিতে লাগলো?, বাধ্য হয়ে ছুট লাগলাম ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ও ডিনার টা একসাথে সারবো বলে?। পাশেই জীগ্গেস করে জানলাম ছোট একটি খাবারের হোটেল,এক কাকু রুটি করছেন, দূর থেকে এক ঝলক দেখে বুঝলাম তিনি বেশ পরিষ্কার কাজ করেন, দোকান টিও বেশ সাফ ,কাগজের থালা ব্যবহার হয়, বললাম চল ভালোই হবে খাবার । আমরা ভাত চিকেন ও মাছ নিলাম, সঙ্গে ছিলো আলুর চোকা ডাল ও সবজী, লেবু, পেয়াজ । বেশ সুস্বাদু খাবার । খেয়ে এরপর রুমে ঢুকে জিনিস পত্র গুছিয়ে রেখে দু-দণ্ড গপ্পো করে, পরের দিনের প্লান প্রোগ্রামিং করে শুয়ে পড়লাম জলদি ।পরের দিন রায়গঞ্জ এর জন্য বেরোবো । আমরা সেখান থেকে 5টার পরে বেরোবো ঠিক করি, কারণ অচেনা জায়গা, তারপর কুয়াশা হবে প্রচুর, তাই 6টায় বেরোবো ঠিক হয় । কিন্তু আলর্ম বাজার বহু আগেই ঘুম ভাঙে, ভোর 4টে, শুয়ে রইলাম চোখ বন্ধ করে । এরপর 5টা নাগাদ জানলা খুলে দেখি গভীর কুয়াশা । চন্দনা কে বললাম দেখ রাস্তা দেখা যাচ্ছে না, 6টা তেও এই কুয়াশা কাটবে বলে মনে হয়না, কুয়াশা আমাদের খুব না হলেও কিছুটা চিন্তায় ফেলে, তাতে আবার এমন অন্ধকার ।বারবার জানলা দেখি, এবং বুঝে যাই ঘন কুয়াশা তেই যাত্রা শুরু করতে হবে নাহলে উপায় নেই, পাহাড় ঢুকতে দেরী হয়ে যেতে পারে । আমরা তখনই উঠে রেডি হতে থাকি ,ভাবি ব্যাগ বেঁধে ফেলবো, কারণ ব্যাগ গাড়িতে বাঁধতে সময় লেগে যায় অনেকটাই , আমাদের দুটো ব্যাগ ছিলো, একটা পায়ের সামনে একটা গাড়ির সাইডে বাঁধতে হয় ।হোটেলের স্টাফ তখন গভীর ঘুমে, তাকে ডাক দিলে সে এই শীতে উঠে গায়ে মাথা শোয়টার মাফলার দিয়ে দু চারটে তালা খুলতে খুলতে প্রায় 5/10মিনিট কেটে গেলো,ফোনের আলো জ্বেলে গাড়িতে ব্যাগ বেঁধে দেখলাম ঘড়িতে তখন ভোর 5.45। আমরা গুরুদেব কে স্মরণ করে দুজনে হাসি মুখে করমর্দন করে ঘন কুয়াশার মাঝে পক্ষীরাজ এ সওয়ার হলাম। ক্রমশ প্রকাশ্য................................... @পুস্পিতা চক্রবর্তী
বেনাপুর চর বাগনান
২৭/১২/২০২০ দিন বদলের সাথে সাথে রঙ বদলায়। সূর্য মধ্যগগন থেকে ঢলতে ঢলতে যখন আগুনরঙ্গা বেশ বদলিয়ে মোহময়ী রূপ ধারণ করে দিনশেষের নির্ঘণ্ট জারি করে, প্রকৃতি তখন তার রূপের থালি উজাড় করে দেয়। সেই রূপের ছটা উপলব্ধি করতে কোনো উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে পৌঁছে যেতে হবে। নদীর তীরে পাতা সবুজ ঘাসের বিছানা থেকে অস্তমিত সূর্য্যের আভা যখন রূপনারায়ণের জলে ও তার মাঝে অনেকটা অংশে জেগে ওঠা চর-এর রূপ বদলাতে শুরু করে, এক অপরূপ সন্ধিক্ষণে মায়াবী পরিবেশের অবতারণা শুরু হয়, তার সাক্ষী হতে হলে আসতে হবে বেনাপুর চরে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ঘাসের আস্তরণ পেরিয়ে নদীর জলে পা ডুবিয়ে মাঝের চর পর্যন্ত হেঁটে বেড়ানো যায়। হাঁটুর থেকে কিছুটা নিচে অবধি পা ডোবাতে হবে শুধু। এক অনন্য অভিজ্ঞতা। শ্রীশ্রী_রাধামাধব_জীউ_মন্দির চর থেকে ফেরার পথে কয়েক পা এগিয়ে গেলে ইটভাটার পাশে রয়েছে শ্রীশ্রী রাধামাধব জীউর মন্দির। মন্দিরে রাধা-কৃষ্ণ ও জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা নিয়মিত পূজিত হন। মন্দিরের সামনে এক তুলসীমঞ্চ রয়েছে। বিঃ_দ্রঃ এখানে থাকা বা খাওয়ার মতো কোনো হোটেল নেই। দিনে দিনে ঘুরে আসার জায়গা। পথনির্দেশঃ --> হাওড়া থেকে ট্রেনে মেচেদাগামী লোকাল ধরে বাগনান স্টেশনে নেমে বেনাপুরের ট্রেকার চেপে মাথাপিছু ১৫ টাকা ভাড়া দিয়ে এখানে আসতে ৪০ - ৪৫ মিনিট সময় লাগে। --> বাসে বা গাড়িতে কলকাতা থেকে NH16 ধরে বাগনান মোড় এসে সেখান থেকে নুন্টিয়া মোড় হয়ে বেনাপুর চর।
৫ ই ডিসেম্বর ২০২০ সকালে হঠাৎ আমাদের মাথায় উঠলো বাই তো কংকালীতলা যাই। কয়েকদিন ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল আমাদের যে মোটর সাইকেলের হেলমেটে ক্যামেরা লাগিয়ে কোথাও গেলে কেমন হয়? আমার ৫ বছরের মেয়ের কৌতুহল সব থেকে বেশি ছিল। তাই ছোটো করে শুরু করে ফেললাম কংকালীতলা মন্দির ভ্রমণ।
বোলপুর স্টেশন থেকে ৯ কিলোমিটার (লাভপুর রোড হয়ে) অথবা ১১ কিমি (শ্যামবাটি- প্রান্তিক রোড হয়) দূরে কোপাই (শাল নদী) নদীর তীরে শক্তিপীঠ কঙ্কালীতলা মন্দির। আমরা সকাল ৮ টায় বোলপুর শান্তিনিকেতন স্টেশন থেকে বাইকে আমাদের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বোলপুর স্টেশন - বোলপুর চৌরাস্তা - শান্তিনিকেতন - শ্যামবাটী - প্রান্তিক হয়ে পৌছে গেলাম কংকালীতলা মন্দির। তন্ত্রচূড়ামনির মতে, এটি ২৮ নং সতীপীঠ। প্রাচীনকালে এই জায়গাটি কাঞ্চি নামে প্রসিদ্ধ ছিল। তন্ত্রচূড়ামনিতেও এই স্থানের উল্লেখ আছে। পীঠ নির্ণয়তন্ত্রে বলা হয়েছে এখানে দেবীর কংকাল পড়েছিল এবং এটি দেবীর একান্নতম পীঠ। কিন্তু ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ অনুযায়ী, বলা হয়েছে এখানে দেবীর কাঁখ বা কাঁকাল বা কটিদেশ পতিত হয় এবং এটি দেবীর আঠাশতম পীঠ। সম্ভবত: কাঁকাল থেকেই কংকালীতলা নাম হয়েছে। তবে এই শক্তিপীঠ নিয়ে শাস্ত্র ও জনগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এখানে দেবীর নাম "দেবগর্ভা"। কোপাই নদীর তীরে কুন্ডের মধ্যে দেবীর অধিষ্ঠান। কুন্ডের পাশের মন্দিরে দেবী পটে অর্থাৎ ছবিতে কালীরূপে পূজিতা হন। এখানে ভৈরবের নাম "রুরু"। মন্দির প্রবেশের আগেই লাইন দিয়ে পূজো দেওয়ার ডালা গ্রহনের জন্য অনেক দোকান আছে। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। এখান থেকে একটি দোকান থেকে পূজার ডালা নিয়ে লাইন দিল মা ও মেয়ে। সুন্দরভাবে পূজো দিয়ে কিছুক্ষণ মন্দিরের চারপাশ ঘুরে নিলাম। মন্দির চত্বরে এক বাউল বন্ধু সুন্দর বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন।
মন্দিরের পাশেই যে কুন্ড টি আছে, বলা হয় সেখানেই দেবীর কংকাল পড়েছিল। এখনও সেখানে কিছু পাথর আছে। ওগুলোকে দেবীর দেহাংশ মানা হয়। এই কুন্ডের জল কখনো নাকি শুকায় না। পাশেই শ্মশান আছে। এখানে নাকি গুপ্ত তন্ত্র সাধনা হয়। বর্তমানে এই শ্মশান টি ইলেকট্রিক চুল্লীতে পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এরপর মন্দিরের পাশে ভোগ মন্দির টি ঘুরে দেখলাম। এখানে ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয় ভক্তদের জন্য। সাধারণ দর্শনার্থীরাও ভোগের প্রসাদ পেতে পারেন কুপন স়ংগ্রহের মাধ্যমে। এর পাশেই বয়ে চলেছে কোপাই নদী বা শাল নদী। এরপর আমরা মন্দির থেকে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রান্তিক স্টেশন এ দেখি রেলগেট পড়ে আছে। অগ্যতা কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম। এই সুযোগে আমার মেয়ে লকডাউনের জন্য ভূলতে বসা রেলগাড়ির দর্শন করতে পারলো। ও কিন্তু খুব আনন্দ করলো এই করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত ধরনের সতর্কতা মেনে। আমার ছোট্ট মেয়ের বানানো ভ্লগটি কেমন লাগলো জানাবেন। ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও সাবস্ক্রাইব করবেন
পুরুলিয়ার জয়চন্ডী পাহাড়ে যারা গিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন,পাহাড়ের মাথায় ওঠার মাঝখানে, সিড়ির পাশে ইটের তৈরি গোলাকার গম্বুজ। এটা কি?এই গম্বুজ নিয়ে নানা মত। কেউ বলেন ওয়াচ টাওয়ার,কেউ বলেন সিমাফোর টাওয়ার। তবে হ্যাঁ এটি সিমাফোর টাওয়ার।১৮৩০--৩৩ সালে তদানীন্তন ভারত সরকার খবর পাঠানোর জন্য কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম থেকে বোম্বাই (মুম্বাই) পর্যন্ত ৮ মাইল অন্তর অন্তর ১০০ ফুট উঁচু এই টাওয়ার গুলো তৈয়ারী করেছিলেন। টাওয়ার গুলো ফোর্ট উইলিয়াম থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম দিকে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলাকে অতিক্রম করেছে।
সিমাফোর পদ্ধতি হল, প্রথম টাওয়ার থেকে দৃশ্যমান সাংকেতিক নির্দেশ পাঠানো হতো দ্বিতীয় টাওয়ারে দ্বিতীয় টাওয়ার সেটা দেখে তৃতীয় টাওয়ারে, এই ভাবেই কিছুক্ষণের মধ্যেই সঠিক জায়গায় খবর পৌঁছে যেত। উন্নত প্রযুক্তির তারবার্তা প্রেরনের উপায়টি আবিষ্কার হলে, মাঝপথে এই প্রকল্প পরিত্যাক্ত হয়। এই টাওয়ার গুলোতে একটি টাওয়ার থেকে আর একটি টাওয়ারের ওয়াচ বা নজর রাখতে হতো,তাই এগুলোকে ওয়াচ টাওয়ার বা নজর মিনার বলা যেতেই পারে। তবে সিমাফোর ওয়াচ টাওয়ার বললে মনে হয় সঠিক। ধন্যবাদ।
আজ বিশ্বকর্মা পুজো +মহালয়া 17.09.2020 ভোর সাড়ে চারটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে। আগের রাতে ভাত রুটি সব রেডি করে রেখেছিলাম। বাইকে 314 কিলোমিটার পেরিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে পৌঁছাতে সাড়ে এগারোটা।জীবনে প্রথম পাহাড়ে বাইক চালানো। সঙ্গে পুরুলিয়ার বন্ধু প্রণয় মাহাত । ঐ গাইড। ভাত খেয়ে চললাম upper dam এ। ছবি তোলা হল। পাশে কাশফুলের উপত্যকা আর চাঁদি ফাটা রোদ। গেলাম lower dam এ। একদম ফাঁকা। সারা পাহাড়ে মনে হয় শুধু আমরাই। কিছু লোকাল ছেলে বাইক নিয়ে ছুটোছুটি করছে। ওখান থেকে বহু প্রতীক্ষিত বামনী ঝর্না। সব ক্লান্তি দূর হল। শুধু আমরাই। তিনটে স্থানীয় ছেলে স্নান করছিল। শীতের সময় নাকি মেলার মত লোক হয়। গামছা উপরে ব্যাগে রেখে নেমে পড়েছিলাম। স্নান আর করা হলো না। যাই হোক ওখানেই দুটো বেজে গেল।ওখান থেকে মার্বেল লেক । এবার সীতাকুণ্ড, মাটির নিচে থেকে ধীর গতিতে অনবরত বরফ ঠান্ডা জল নির্গত হচ্ছে। ফিরতে হবে সময় কম।বাড়ির পথ ধরলাম।আহাড়রা নামক এক জায়গায় ঐ বন্ধুর মাসতুতো শালা কেজি দুই তিন আখের গুড় উপহার দিল। ও প্রথম থেকেই সঙ্গে ছিল। এবারে বাড়ির পথে। পুরুলিয়া টাউন থেকে বেরিয়ে সঙ্গে থাকা ময়দার রুটি আর কলা খেয়ে বাইক ছোটালাম,তখন পাঁচ টা।যেতে হবে 250 km . কিছু দূর যাওয়ার পরই টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। প্রায় দশ কিমি যাওয়ার পর রেনকোট পরে নিলাম। পানাগড় অবধি বৃষ্টি পেয়েছি। তখন রাত পৌনে নয়টা।প্রায় সাড়ে নটার সময় বর্ধমান এসে বুকে বল পেলাম।মিষ্টি কিনে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আস্তানায়। মোট 670 km . পায়ের মাংস পেশিতে খুব ব্যথা,ততোধিক আনন্দ।
মৌসুনী নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই, ইতিমধ্যে অনেকেই অনেক পোস্ট করেছেন।
কিছুটা লকডাউনের একঘিয়েমি থুরি একঘিয়েমি টা ঠিক আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যেহেতু আমি একজন সাস্থ্যকর্মী । সেই Covid এর শুরু থেকেই PPE, GLOVES, MASK, FACESHIELD পরতে পরতে একরকম হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাই শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দুর করতেই কাছেপিঠে মৌসুনীটাই বেছে নিলাম। আমাদের Booking ছিল Monk Backpackers এ কিন্তু শেষ মুহূর্তে যাবার দিন ট্রেনে চেপে খুব বাজে অভিজ্ঞতা হয়, ওনারা ফোন করে জানায় কটেজ দিতে পারবেন না। যাইহোক শেষমেশ আনন্দধারা ও আনন্দমহল আমাদের আতিথেয়তার কোনও এুটি রাখেননি। একদম Sea-Beach এর ধারেই মনোরম পরিবেশে অসাধারণ ক্যাম্প। আপনারাও দেখে আসতে পারেন। |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |