#গন্তব্য_দার্জিলিং
#স্কুটি_রাইডিং #বাঁশবেড়িয়া-#রায়গঞ্জ #তারিখ-22/12/20 #পর্বঃ১ (আগাম ধন্যবাদ জানাই গ্রুপ আড্মিনিস্ট্রেশন কে, আমার পোস্ট ও আমাদের স্কুটি রাইডিং পাহাড় এর ভ্রমণ বৃত্তান্ত ভ্রমণ পিয়াসী বন্ধুদের কাছে তুলে ধরার জন্য) =============== "#অনেক_শক্তিমান_হাল_ছেড়ে_দেয় #হার_মানে_বহু_দ্রুতগামী #জীবন_যুদ্ধে_শুধু_তারাই_যেতে #যারা_ভাবে_জিতবোই_আমি" যদিও দার্জিলিং টুর কোন যুদ্ধ ছিলো না, বরং জীবনের দুর্দান্ত প্রাপ্তি, কিন্তু এক কথায় প্রতিকূলতা,বাধা,বিপত্তি,অনিশ্চয়তা, ভয়,নিষেধ,অসম্ভবনা কে জয় করা টাও একরকম যুদ্ধই বটে ।আর আমার মনে হয় সংঘর্ষ একটু আধটু জীবনে না থাকলে , জীবন টা বড় একঘেয়ে হয়ে যেত। ( 110 সিসি)পক্ষীরাজ কে নিয়ে দুজনের জার্নি বেশ মজাদার উপলব্ধি বটে, স্কুটি রাইডিং এ দার্জিলিং টুরের প্রতিটা ধাপে আমরা আনন্দ পেয়েছি,আমাদের কাছে এটা অসাধারন একটি টুর কেননা এতো সুদীর্ঘ সময়ের টুর এটাই প্রথম ছিলো, যা কিনা অন্যদের কাছে সাধারণ মনে হলেও হতে পারে আমাদের কাছে অনন্য । ভ্রমণ মানে জীবন বাঁচা, ভ্রমণ হলো এক বুক অক্সিজেন, এক একটি ভ্রমণ যেনো এক এক রকমের শিক্ষার আলোকে নিমজ্জিত করে মানুষকে। আমরা দুজনেই বরাবর একটু ব্যতিক্রমী।আমাদের টান টা একটু অসম্ভবনার দিকেই সর্বদা, মানে কঠিন টা করার মধ্যে বেশ একটা দারুণ মজা খেলে যায় ।একটা বাস্তব কথা বলি স্কুটি তে অনেকেই নাক সিটকায়, "ওহো! স্কুটি তে পাহাড়?হবে না বা পারবে না !বাইক নিয়েই যেতে যেখানে মানুষ কতবার ভাবছে সেখানে স্কুটি তাও দুজন এক গাড়িতে, অসম্ভব "। এভাবে একটু দমে যায় অনেকেই,আমি নিরাশ হইনি, বন্ধুও হয়নি ,আমরা আবার অন্য কথা বলি ,"পারবো না" বলে কিছু কথা আমাদের অভিধানে নেই। চেষ্টা ও মনোবল টাই আসল। অনেক সুদূরের স্বপ্ন দেখি আমরা দুই বন্ধু, অনেক কিছু অসম্ভব কে জয় করার স্বপ্ন দেখি দুজনেই, আরো যাবো এগিয়ে উৎসাহ নিরুৎসাহ সব কিছুকে পিঠে কোলে চাপিয়ে নিয়েই ছুটবো,কারণ এই দুইই মানুষের ভেতরকার শক্তি কে জাগ্রত করে তোলে।সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় শুধু। খুব ইন্টারেস্টিং গপ্পো আমাদের এই দার্জিলিং ভ্রমণ ,স্কুটি চালিয়ে আমি এই মজা জীবনে কখনও পেতাম না যদি পাহাড়ে রাইডিং না করতাম , চরম আনন্দ আমরা দুজনেই পেয়েছি রাইডিং করে, চড়াই এ ওঠার সময় গাড়ি উঠবে তো? তার ওপরে যখন ঢাল এ উঠে সামনে গাড়ি এলে বা জ্যাম এ পড়লে দাঁড়াতে হচ্ছিলো তখন হুরহুর করে গাড়ি নেমে যাবার সম্ভাবনা,ব্রেক যেখানে ধরছে না (ঢাল এ) গাড়ির হ্যান্ডেল ঘুরিয়ে পা দিয়ে রাস্তা দৃঢ় ভাবে আটকে থাকা আর উতরাই এর সময় ব্রেক ধরতে ধরতে নামা উফ্ফ সেসব বেশ শিক্ষণীয়। সম্পূর্ণ টুর টাকে কয়েকটি পর্বে আনবো সকলের সামনে, স্কুটি নিয়ে দার্জিলিং টুরে যাবো আজ থেকে 4বছর আগে ধুর বছর কেনো চারদিন আগেও ভাবিনি ।রাইডিং আজকাল আমাদের পাগল করে তুলছে ।যারা স্কুটি নিয়ে দূরে রাইডিং করতে ভয় পাও তারা অবশ্যই পড়বে,উৎসাহ মিলবে। এমন এক রোমাঞ্চকর গল্পের শুরুটা কিন্তু অন্য ভাবে হয়েছিলো... প্রবল শীতের আমেজ, সময় টা ডিসেম্বর এর মাঝামাঝি ,বেশ জাঁকিয়ে ঠাণ্ডা টা পড়েছে ।স্নান সেরে ছাদে বসে উষ্ণ রোদে গা শেঁকছি , এক আরামদায়ক মনোমুগ্ধকর স্পর্শ পিঠে আঙুল বুলিয়ে যাচ্ছে সুখের , হঠাত্ ফোন টা বেজে উঠলো,দেখি বান্ধবীর (চন্দনা),ফোন ধরতেই বললো "আমার সব প্যাকিং কমপ্লিট"..... আমি-কী? কিসের প্যাকিং? সকালে কথা হলো বলিস নিতো কোথাও যাবি... সে- কালকে দার্জিলিং যাচ্ছি । আমি- তাই? কার সাথে? সে-তোর সাথে, অবশ্য পক্ষীরাজ নিয়ে যাবে? । আমি-কী? তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে? কালকে দার্জিলিং যাবি আজ দুপুরে বলছিস?এরপর না আমি ফোন করি তাকে আর না সে আমায়,কোন কথা হয়নি, দুপুরে জমিয়ে ঘুম দিলাম সব ভুলে গিয়ে শীত ঘুমে গেলাম?, সন্ধ্যায় হঠাত্ দরজায় কলিং বেল বাজলো, চোখ ডোলতে ডোলতে দরজা খুলে দেখি, পক্ষীরাজ দাঁড়িয়ে, সাথে তার মালকিন হাতে ব্যাগ...?? আমি-কী করেছিস ভাই? তুই সত্যি যাবি ভেবেছিস?? এরপর এতো গল্পে যাচ্ছি না, তবে কম সময়ের প্যাকিং কার্য আমি পারবনা জানি, তাই সে কাজের চাপ ও নিইনি,ওকেই দিলাম, ওই আমার ব্যাগ প্যাক করলো সাড়ে সাত থেকে সাড়ে নয়টা অবধি? এই লাগবে ওই লাগবে করে করে, তবে আমরা লাগেজ যত সম্ভব কম করতে চেয়েছি,হাতে গোনা সমস্ত কিছু, যতটা প্রয়োজন তার অধিক কিছুই নয় । ওর মুখে শুনলাম, দার্জিলিং প্রায় 700কিমি প্রায় 17/18ঘন্টার জার্নি বা তার অধিক । তখন আমি- হ্যাঁ? এতো কিমি? পুরুলিয়া এর অর্ধেক এর অর্ধেক ছিলো, যেটা কিনা অক্টোবর এ করে এসে।কিন্তু কোন প্লান ছাড়া পাহাড়? কোথায় থাকবো ?কী করবো?এতো কিমি রাইডিং তো আগে আমরা করিনি ।আসলে সে মনে মনে একটা প্লান ভেজেই এসেছিলো।সে জানে আমি পারবো,আর আমিও জানি সে যখন ভেবে নিয়েছে সেও পারবে, পাহাড় পাহাড় করে বহু সময় ধরে পাগলামী করছে, ওর পাহাড় প্রীতি আমাকেও পাহাড়ের প্রতি আবেগ প্রবণ করে তুলেছিল, পাহাড় কে এতো ভালবেসে ফেলবো বুঝিনি ।এরপর আমাদের পরিচিত অভিজ্ঞ দুই দাদার সাথে একটু আলোচনা করা হয় রাস্তা সংক্রান্ত বিষয়ে । আমার সাথেও কিছুটা আলোচনা করলো , আমার আবার রাইডিং এ অল্প বিস্তর দক্ষতা থাকলেও রাস্তা সংক্রান্ত যেকোন জ্ঞান চন্দনার বেশি , তাই সে যেভাবে বলে আমিও এগিয়ে যাই ।সময় তো কম এর মধ্যে খেয়ে ঘুমাতে হবে ভোর 5টায় বেরোনো, এতো ঘণ্টার রাইডিং, শরীর ক্লান্ত হলে চলবে না । এমন একটা রোমাঞ্চ কর টুরের উত্তেজনা তে আমি কিছু সময় ছটফট করেছি ঠিকই কিন্তু কখন যেনো ঘুমিয়ে গেছি, অল্যর্ম বাজার অনেক আগেই উঠে পড়লাম, রেডি হয়ে নিলাম দুজনেই সুরক্ষা কবজ গুলি পড়ে , ঠাকুর প্রণাম করে , পক্ষী রাজ কে ধূপ দেখিয়ে প্রণাম করে জয় গুরু বলে বেরিয়ে পড়লাম ।এ বিষয়ে বলে রাখা দরকার ডিসেম্বর এ দু বার ডাক্তার এর ঘরে সেবা নিয়েছে পক্ষীরাজ, ।ডাক্তাররা ছাড়পত্র দিয়েছিলো দূরের যেকোন যাত্রার জন্য ।আমরা যাত্রা শুরু করলাম বাঁশবেড়িয়া থেকে মগরা গুরাপ রোড ধরে ।কী যে একটা উন্মাদনা জাগছে যতবার ভাবছি দার্জিলিং আমাদের এবারের গন্তব্য ঠিক ততবারই । ঘন কুয়াশার চাদর এলিয়ে রাস্তা গুলো যেনো ঘুমোচ্ছে, বেশ অন্ধকারময় ও কুয়াশাময় । এগিয়ে যাচ্ছি ফগ লাইট ও হ্যাজার্ড লাইট জ্বালিয়ে । তখন জমিয়ে ঠাণ্ডা, কুয়াশায় ভিডিও করতে গিয়ে চন্দনা বেশ নাজেহাল ঠাণ্ডা তে, দস্তানা খুলতেই হাত ঠান্ডায় জমে যাচ্ছিলো ওর?,তবু আমার আবদারে ভিডিও করে সে ।এরপর দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে শক্তিগড়ে যখন ঢুকলাম সময় তখন প্রায় সকাল 6,30 মিনিট।সেখানে চায়ের দোকানে চা, বিস্কুট খাই ও ফ্রেশ হয়ে ,একটু হাত পা গুলো কে ,ও পক্ষীরাজ কে বিরাম দিয়ে আমরা বর্ধমানের দিকে এগিয়ে গেলাম, উল্লাস মোড় হয়ে এগোতে থাকলাম, এলো নতুন গ্রাম সেখানে পেট্রোল পাম্প এলে পক্ষীরাজ কে পেট ভরিয়ে তেল খাইয়ে , আমরাও একটু ফ্রেশ হয়ে নিলাম,ফুটি সাকোর জঘন্য রাস্তা সাথে অজস্র বাম্পার ডজ করতে করতে কুলি , উফ্ফ এটা কেমন রাস্তা? আমি ওকে বারবার জীগ্গেস করছিলাম এই রাস্তা ধরে মানুষ দার্জিলিং এর পথে যায়? হায় ভগবান, অন্য রাস্তা কী ছিলো না?ও জানায় হ্যাঁ এটা ধরেই যায়। আমি ভাবছিলাম ও নিশ্চই ভুল রাস্তায় ঢুকেছে । তাই বারবার বলছি কিরে ঠিক যাচ্ছি?ও বলছিলো হ্যাঁ রে ।যাইহোক দীর্ঘ সময় এমন খারাপ রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে শর্ষের ক্ষেত দেখলাম এরপর মোড় গ্রাম এর দিকে যাচ্ছি । মন প্রান ভরে গেলো, খারাপ রাস্তার তিক্ততা কাটিয়ে মনটা মুহুর্তেই ফুরফুরে হয়ে গেলো । এমন শর্ষের ক্ষেত সত্যি আগে কখনও দেখি নি । দূর দিগন্ত জুড়ে শুধু শর্ষের ক্ষেত, গভীর হলুদ রঙের । কী ভালো লাগছিলো মিঠে রোদ আর হলুদ শর্ষের ক্ষেত ।মোরগ্রাম ঢোকার আগে ফের খারাপ রাস্তা পেলাম, বড় বড় গর্ত রাস্তায়, যেগুলো বেশ চওড়া,সমগ্র রাস্তা যেনো খুঁড়ে খুঁড়ে রাখা হয়েছে, লরি, ট্রাক পাস যখন করছে তখন যেনো ধুলোর পাউডার কেউ বাতাসে মিলিয়ে দিচ্ছে কুয়াশার মত, এরই মাঝে সেই গর্তের মুখে একজন পঙ্গু মানুষ ভিক্ষে করছে, ধুলোয় তার শরীর আচ্ছাদিত, একটু অসাবধানতা তার মৃত্যু ডেকে আনতে পারে, আমরা খুব আশ্চর্য হলাম, এমন বিপদ জনক খারাপ রাস্তার মাঝে বসে এভাবে ভিক্ষে করছে । যাইহোক এগোচ্ছি আমরা, এক ঘন্টা পর পর কিছু সময় আমায় বিরতি দিয়ে চন্দনা চালাচ্ছিলো, তবে আমি বেশি সময় পিলিয়ন হয়ে বসতে পারিনা, রাইডিং করার জন্য হাত পা বেশি কামড়াতে থাকে?,তবে অনেকেই ভাবেন পিলিয়নরা বেশ আনন্দেই যায়, আমার মনে হয় তাদের ঘাড় পীঠ, কোমর বেশি ধরে , আমি তো চালাতে চালাতে হাত, পা কোমর, মাথা নানান ভাবে সুবিধা মতো নেড়ে চেড়ে নিই, যাতে এক ভাবে বসে কোন অসুবিধা না হয়, তাই ব্যাথা যন্ত্রনা টা উপলব্ধি হয়না বা হচ্ছিলো না তখনও ।মোরগ্রাম পার করেই এন.এইচ এ উঠতেই একদম ঝকঝকে সুন্দর রাস্তা পেয়ে আমি মনে মনে আনন্দিত হলাম ও শান্তির নিঃশ্বাস ফেললাম । এরপর ধূলিয়ান গঙ্গা হয়ে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে পাস করছি,অধিক জ্যাম থাকার দরুন , পক্ষীরাজ কে উড়িয়ে নিই ফুটপাত এর ওপরে, সেখান থেকেই এগোতে থাকি,সময় তখন প্রায় দুপুর 1টা, চন্দনার কাছে ওটা স্বপ্নের মত, ট্রেনে যেতে যেতে কখনও ভাবেনি সে এখান থেকে তার পক্ষীরাজ এ চড়ে যাবে কখনও ।আর আমি তখনও বিস্মিত, আচ্ছা এগুলো স্বপ্ন নয়তো, হঠাত্ কেউ ডাকবে আর ভেঙে যাবে ?সত্যি দার্জিলিং যাচ্ছি স্কুটি তে ?এ যেনো স্বপ্ন, বিশ্বাস হচ্ছিলো না । একটা চিমটি দে তো দেখি, ওরে সর্বনাশা চিমটি দিলো সে, ছোটবেলার রাম চিমটি শাম চিমটি মনে পরে গেলো? ।সেখান থেকেই এগোতে থাকি,সময় তখন প্রায় দুপুর 1টা,এরপর দাঁড়াই পেট্রল পাম্প এ, পক্ষী রাজ পেট ভরে তেল খায়, আমরাও ফ্রেশ হয়ে কেক ও জল খেয়ে নিই, ও চুইংগাম মুখে নিয়ে এগোতে থাকি পুনরায় ।
এরপর মালদা রায়গঞ্জ টোল ট্যাক্স পাস করে আমরা এগোচ্ছি তখন 3টে হবে। হঠাত্ সেখানে গাড়ির পেছনের টায়ার সমস্যা করলে মুহুর্তেই স্পীড কমিয়ে নিই ও বাঁ দিক চেপে দাঁড়িয়ে যাই, খারাপ রাস্তায় দীর্ঘ সময় চালিয়ে টায়ার বেশ ক্ষতি গ্রস্ত হয়েছিলো, সৌভাগ্য বশত কয়েক পা দূরের গ্যারেজ থেকে টায়ার বদলে নতুন টায়ার লাগিয়ে নিই ।কারণ সম্পূর্ণ টুর টা নির্ঝঞ্ঝাট চাইছিলাম আমরা । বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয় গ্যারেজে , কারণ গ্যারেজ মালিক কে ফোন করে দূর থেকে ডেকে আনতে হয়, 2কিমি দূর থেকে টায়ার কিনে আনতে হয়, তাই অনেকটা সময় এখানে কেটে যায়। এর মাঝে তো বলতে ভুলে গেছি আমরা সকালের খাবার ,দুপুরের খাবার কিন্তু স্কিপ করে গেছি, পেট্রোল পাম্প গুলোতে দাঁড়িয়ে জল বিশ্কুট, কেক খেয়েছিলাম তাই খুব একটা ক্ষিদে ভাব টা ছিলো না ।দার্জিলিং যাবার আনন্দে ব্রেকফাস্ট ,লাঞ্চ সব মাথার ওপর দিয়ে চলে গেছে ।এদিকে ধীরে ধীরে দিনের আলো কমতে থাকে, সূর্য শর্ষের ক্ষেতে ধীরে ধীরে লুকোতে থাকে, এরপর আমরা রায়গঞ্জ ঢুকি বিকেল 5 নাগাদ। আমাদের দার্জিলিং টুর টা নিয়ে কাউকেই সেভাবে জানানো হয়নি, হাতে গোনা কয়জন ছাড়া, যার কথা না বললেই নয় রাজীব দা যিনি প্রথম থেকে দার্জিলিং টুর টা জানতে পেরে আমাদের সাথে একরকম জুড়েই ছিলেন । বার বার ফোন করে উৎসাহিত করা,বা আমরাও যখন পাম্প বা কোথাও দাঁড়িয়েছি, ওনাকে ফোন করেছি ঠিক সময় মত যাচ্ছি কিনা জানতে চেয়েছি, উত্তরে তিনি জানিয়েছেন দারুণ যাচ্ছি,হেব্বী টাইমিং, খুব ভালো লাগছিলো তখন, উনি খুব সুন্দর ভাবে আমাদের গাইড করছিলেন ।রাজীব দা জানান রায়গঞ্জ এ হোটেল ভেঙ্কটেশ এর কথা । সেখানে বাজেট ফ্রেন্ডলি রুম না থাকায়, সেখানের লোকাল মানুষের থেকে জানতে পারি কিছু ভালো হোটেলের নাম। একদম পুরোনো হোটেলে গিয়ে উঠি নাম নটরাজ । সব দেখে বুঝে সেফ লাগলো ও বাজেট আমাদের পকেট ফ্রেন্ডলি, আর গাড়ি রাখার সুব্যবস্থা আছে দেখে থেকে গেলাম ।এরপর রুমে এসে ফ্রেশ হতেই পেটের দুষ্টু ক্ষুধার্থ ইঁদুর গুলো চেচিয়ে গাল দিতে লাগলো?, বাধ্য হয়ে ছুট লাগলাম ব্রেকফাস্ট লাঞ্চ ও ডিনার টা একসাথে সারবো বলে?। পাশেই জীগ্গেস করে জানলাম ছোট একটি খাবারের হোটেল,এক কাকু রুটি করছেন, দূর থেকে এক ঝলক দেখে বুঝলাম তিনি বেশ পরিষ্কার কাজ করেন, দোকান টিও বেশ সাফ ,কাগজের থালা ব্যবহার হয়, বললাম চল ভালোই হবে খাবার । আমরা ভাত চিকেন ও মাছ নিলাম, সঙ্গে ছিলো আলুর চোকা ডাল ও সবজী, লেবু, পেয়াজ । বেশ সুস্বাদু খাবার । খেয়ে এরপর রুমে ঢুকে জিনিস পত্র গুছিয়ে রেখে দু-দণ্ড গপ্পো করে, পরের দিনের প্লান প্রোগ্রামিং করে শুয়ে পড়লাম জলদি ।পরের দিন রায়গঞ্জ এর জন্য বেরোবো । আমরা সেখান থেকে 5টার পরে বেরোবো ঠিক করি, কারণ অচেনা জায়গা, তারপর কুয়াশা হবে প্রচুর, তাই 6টায় বেরোবো ঠিক হয় । কিন্তু আলর্ম বাজার বহু আগেই ঘুম ভাঙে, ভোর 4টে, শুয়ে রইলাম চোখ বন্ধ করে । এরপর 5টা নাগাদ জানলা খুলে দেখি গভীর কুয়াশা । চন্দনা কে বললাম দেখ রাস্তা দেখা যাচ্ছে না, 6টা তেও এই কুয়াশা কাটবে বলে মনে হয়না, কুয়াশা আমাদের খুব না হলেও কিছুটা চিন্তায় ফেলে, তাতে আবার এমন অন্ধকার ।বারবার জানলা দেখি, এবং বুঝে যাই ঘন কুয়াশা তেই যাত্রা শুরু করতে হবে নাহলে উপায় নেই, পাহাড় ঢুকতে দেরী হয়ে যেতে পারে । আমরা তখনই উঠে রেডি হতে থাকি ,ভাবি ব্যাগ বেঁধে ফেলবো, কারণ ব্যাগ গাড়িতে বাঁধতে সময় লেগে যায় অনেকটাই , আমাদের দুটো ব্যাগ ছিলো, একটা পায়ের সামনে একটা গাড়ির সাইডে বাঁধতে হয় ।হোটেলের স্টাফ তখন গভীর ঘুমে, তাকে ডাক দিলে সে এই শীতে উঠে গায়ে মাথা শোয়টার মাফলার দিয়ে দু চারটে তালা খুলতে খুলতে প্রায় 5/10মিনিট কেটে গেলো,ফোনের আলো জ্বেলে গাড়িতে ব্যাগ বেঁধে দেখলাম ঘড়িতে তখন ভোর 5.45। আমরা গুরুদেব কে স্মরণ করে দুজনে হাসি মুখে করমর্দন করে ঘন কুয়াশার মাঝে পক্ষীরাজ এ সওয়ার হলাম। ক্রমশ প্রকাশ্য................................... @পুস্পিতা চক্রবর্তী
0 Comments
পূজো ছুটি হোক কিংবা গরমের ছুটি, আবার কখনো এদিক ওদিক ম্যানেজ করা দুদিনের ছুটি।দার্জিলিং আমরা সবসময়ই যাই। আমাদের ভ্রমনপিপাসু মানুষের কাছে এ যেন ঠিক মামাবাড়ি। একদম নিজের। যখন তখন চলে যাওয়া যায়। আজকাল এই মামাবাড়ির আশেপাশে মেঝোমামা, সেঝোমামার মতন গড়ে হয়েছে হাজারো স্পট। যেখানে প্রকৃতি উজাড় করে দিয়েছে নিজের সৌন্দর্য। ঠিক তেমনই একটা জায়গা 'লামাহাটা ইকো পার্ক'। যেখানে সারাবেলা চলে মেঘ আর কুয়াশার খেলা। পাইন সারির মধ্যে দিয়ে আঁকাবাকা পাথরে বাধাঁই পথ দিয়ে উঠে যাওয়া যায় অনেকটা উঁচুতে। সেখানে শান্ত স্নিগ্ধ পুকুরের পাশে বসে কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাটা দিন। আলো-আধাঁরির এই পরিবেশে গিয়ে ভূলে যাওয়া যায় জীবনের সবটুকু। হারিয়ে যেতে হয় এক অন্য জগতে।
আপনি চাইলে দার্জিলিং বেরাতে এসেও এখানে কাটিয়ে যেতে পারেন একটি দিন বা দিনের কিছুটা সময়।আবার এখানে দুদিন থেকেও আশেপাশের দু-একটি জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। শিলিগুড়ি অথবা এনজেপি থেকে গাড়ি বুক করে নিতে পারেন। আবার দার্জিলিং এর শেয়ার গাড়িতে উঠে জোড়বাংলো নেমে লামাহাটার শেয়ার গাড়ি নিয়ে নিতে পারেন।অথবা দার্জিলিং থেকে আসার পথে জোড়বাংলোতে নেমে লামাহাটার গাড়ি নিতে পারেন। শিলিগুড়ি-জোড়বাংলো-২০০/- জোড়বাংলো-লামাহাটা-১০০/- ইকো পার্কের টিকিট-১০/-(জনপ্রতি)
অপরূপা শিবখলা
হারে রে রে রে রে,আমায় ছেড়ে দে রে,দে রে.. ভেবেছিলাম টয় ট্রেনে করে যাবো।নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি পৌছাব অটো ধরে।ওখান থেকে সকাল ৯:৩০ এর টয় ট্রেনে করে সুকনা -রংটন হয়ে পৌছাব শিবখলায়।রংটং এ নেমে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যাবো শিবখলায়।কিন্তু বিধি বাম,পেলাম না সংরক্ষিত টিকিট।তাই বাধ্য হয়ে ট্রেনে করে নিউ জলপাইগুড়ি আর ওখান থেকে শিবখলা। আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসি আমি উন্মনা হে হে সুদূর,আমি উদাসী এ যেন এক স্বর্গীয় ভূমি।জলের কলধ্বনি, পাখির কুজন আর এক অপার সৌন্দর্যে ভরপুর শিবখোলা।কাছেই একটা শিব মন্দির আছে।নেপালি ভাষায় খোলা শব্দের অর্থ নদী।তাই জায়গাটার নাম হয়েছে শিবখোলা।এখানে পৌঁছে গেলাম নদীর সাথে কথা বলতে।তার চোখের ইশারায় তার হাত ধরলাম।তার স্পর্শে শরীর জুড়িয়ে গেল-কলকল হাসে সে আমাকে এদিক ওদিক করে দিলো।প্রানভরে তার সাথে কথা বলে চলে এলাম ক্যাম্পে।--- সে কোন বনের হরিণ ছিল আমার মনে.. কে তারে বাঁধলো অকারণে। দুপুরের খাবার খেয়ে পায়ে পায়ে চলে এলাম নদীর ওপারে বিশ গাঁও তে.. এখন অবশ্য২০টি পরিবার নেই-বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬০টি পরিবারে।এক গ্রাম্য পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করলো।এখানে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে যার নামকরণ করা হয়েছে নেতাজির আই. এন.এ(ইন্ডিয়া ন্যাশনাল আর্মি)-র নামে।গ্রাম ঘুরে চলে গেলাম কাছের শিব মন্দিরে।এখানে সন্ধ্যা পুজোটা উপভোগ করতে পারলাম না কারণ চলে এলাম নুরবং ট্রি ফ্যাক্টরিতে।ফ্যাক্টরি বন্ধ ছিল তাই চা বাগানকে আশ মিটিয়ে দেখলাম।অজানা পোকারা মহাআনন্দে তাদের গান গেয়ে চলেছে।সন্ধ্যা নামছে আর তার সঙ্গে টিপ টিপ করে বৃষ্টিও পড়ছে।টেন্টয়ে পৌঁছাতেই ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।ওঃ--কি দারুণ!!নদীর কলধ্বনি আর বৃষ্টির উল্লাস মিলেমিশে এক হয়ে গেল। ..ও কি এল, ও কি এল না,বোঝা গেল না ও কি মায়া কি স্বপনছায়া,ও কি ছলনা.. অন্ধকার নেমে এলো।টেন্ট এর সামনে ঢাকা বারান্দায় বসে উপভোগ রাতের সৌন্দর্য।জোনাকি পোকা উড়ে চলেছি এদিন ওদিক আর আমরা চারজন-শুভজিৎ, বাবুলালদা, স্যামুয়েলদা আর আমি দেখে চলেছি রাতের সৌন্দর্য।এর মধ্যে চলেছে আমার মোবাইলে রবীন্দ্রসংগীত. "ভালোবাসি ভালোবাসি এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি "উফঃ!কি নিদারুন ভালোবাসায় পড়ে গেলাম এই অন্ধকারকে ঘিরে। "গহন ঘন ছাইল গগন ঘনাইয়া স্তিমিত দশ দিশি, স্তম্ভিত কানন সব চরাচর আকুল.." প্রসঙ্গত বলে রাখি দুই পোষ্য --একটি খয়েরিি আর একটি কালো কুকুর ভীষণ ভালোবাসল আমাকে।খয়েরিটা(সোনা-আমার দেওয়া নাম) তো মুখ দিয়ে কত কথা বললো আর কালোটা(বাবু-এটাও আমার দেওয়া নাম)-সে তো আমায় ছাড়বেই না। "ওলো সই ওলো সই আমার ইচছা করে তোদের মতন মনের কথা কই" টেন্টগুলো সব নদী মুখো আর মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ সংকটুয়ারীর ধারে।সেইজন্য পোকামারার ওষুধ ও মশার কয়েল অতি অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন--টর্চ ও সাথে থাকা প্রয়োজন।সকাল হতেই নদীর সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম আবার।ছোটবড় পাথরগুলোর মধ্যে ছোট পাথরগুলোকে বিশ্বাস করা ভালো।একটা ছোট্ট বাঁশের ব্রীজ সৌন্দর্যকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে।এখানে অনেক পাখিও দেখা যায়।ভাগ্য ভালো থাকলে বিরল রুফস নেকড হর্ন বিল দেখা যেতে পারে।এছাড়া আছে ইউহিনা, স্কেলি থ্রাস, উডপিকার,কালো বুলবুলি,ছাইরঙা স্রাইক,স্পটেড ঈগল, মাগপাই,মিনিভেট,মিনলা,ড্রনগো, কিংফিশার, রবিন..আরো কত কি!! আকাশের অবস্থা ভালো নয় কিন্তু এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে মন চায় না তবু যেতে হবে।তবে বলবো এখানে ২দিন অন্ততঃ থাকুন।সকালে সৌন্দর্য উপভোগ করে টেন্ট ছাড়লাম।যাবো এবার অহলদাড়া তে।ড্রাইভারজিকে 300/-টাকার চুক্তিতে মালদিরাম সানরাইজ পয়েন্ট এ নিয়ে গেলেও আকাশ কালো মেঘে ঢাকা ছিল বলে দেখতে পেলেন না সূর্য।।ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো বলে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গেলাম।গাড়ি চললো আরেক সুন্দর জায়গায়..অহলদারাতে। "গগন সঘন অব,তিমির মগণ ভব তড়িত চকিত অতি,ঘোর মেঘরব. যাওয়া..থাকা: আমরা NGP থেকে ১৮০০/-টাকার চুক্তিতে শিভাখলা পৌছাই।ব্যাবস্থা করে দেন শিবখলার টেন্ট মালিক D. P. Prodhan(7076012314/8388842341)।এখানে টেন্ট এর ভাড়া 900/-per day per head থাকা খাওয়া সমেত।এখানে বাঁশের তৈরি 2টি double bed room cottage আছে, সঙ্গে attached toilet আর 3টি চার বেডেড laxury tent, সঙ্গে attached toilet। প্রকৃতিপ্রেমী হলে আমি নিশ্চিত এই শিবখলার সৌন্দর্যে আপনি পাগল হয়ে যাবেন।এ যে এক অপার্থিব সৌন্দর্যের হাতছানি।..বিদায় শিবখলা..তোমাকে ভুলবো না। ..তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে...
বহুদিন পর একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচার জন্য গেছিলাম গুরদুম ও চিত্রে । আর ফেরার সময় ঘুরে এলাম আমার প্রিয় শহর দার্জিলিং। দার্জিলিং বহুবার গেছি তাই সেই নতুন কিছু বলছি না। তবে গুরদুম ও চিত্রে তে backpackers camp এ থাকার নতুন অভিজ্ঞতা মনে রাখার মতো। প্রথমে njp থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলাম গুরদুম। গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে বেশ খানিকটা রাস্তা চোরাই উঠে পৌছালাম এই ছোট্ট সুন্দর গ্রামে। ক্যাম্পটি দেখে অসাধারণ লাগলো। কিছু টেন্ট ও দুটো campers van । সাথে homestay এর ব্যবস্থাও ছিলো। আমরা ছিলাম homestay এর রুমে। চারদিকে সবুজে ভরা গাছ পালা , গাঁদা ফুল ফুটে রয়েছে, দূরে দেখা যাচ্ছে মেঘেদের মাঝে পাহাড়, আর আমাদের হোস্ট দের আতিথেয়তা , সব মিলিয়ে মন খুশি করে দেওয়া এক পরিবেশ। একটু সন্ধে হতে টেন্ট এর পাশে ক্যাম্প চেয়ার এয় বসে শুরু হলো barbeque । বেশ ঠান্ডার মধ্যে আগুন এর পাশে বসে চিকেন খেতে খেতে আর নগেন ভাইয়া ( ক্যাম্পের ইনচার্জ ও গাইড) এর ট্রেক এর গুল্প শুনতে শুনতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো বোঝা গেলো না। গুরদুম এ রাত টা কাটিয়ে পরেরদিন সকালে বেড়িয়ে পড়ি চিত্রে এর জন্য ৫কিমি ট্রেকে। সেটা নাহয় পরের পোস্ট এ লিখছি। আপাতত রইলো গুরদুম এর কিছু ছবি। কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্স এ জিজ্ঞেস করতে পারেন।
রাস্তায় প্ল্যান করলাম আজ লাভা যাবো। ব্যাস গরুবাথান পেরোনোর পর ডিসাইড করলাম লাভা যাবো সময় আছে হাতে কারণ বাড়িতে ফিরতে হবে সন্ধের মধ্যে। Dooars এর মানুষ হওয়াতে বহুবার লাভা যাওয়া হয়ে গেছে। তবে আজকের টা একটু বেশি ভালো লাগলো কারণ টা হয়তো বা প্ল্যান ছাড়া যাওয়া।আসলে প্ল্যান টা ছিল সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে সন্ধের মধ্যে বাড়ী ফেরা। সকাল 9 টায় বাড়ী থেকে বেরিয়ে ভাবলাম প্রথমে ঝাল্লং এর দিকে যাবো। তারপর কুমাই হয়ে লালিগুরাস। তারপর matteli তে লাঞ্চ সেরে বাড়ি ফিরব বিকেলে। খুনিয়া মোরে চা মোমো খেতে খেতে বাকিরা বলছে ঝালং যাবে না, অন্য কোথাও নিয়ে চলো, ঠিক করলাম gorubathan পেরিয়ে আম্বিয়ক টি গার্ডেন যাবো তারপর রিটার্ন করে যাবো। অ্যাকর্দিংলি গরাবাথান পেরিয়ে আম্বিওক পৌঁছে গেলাম তখন মাত্র 11.00 বাজে। ভাবলাম লাভা ঘুরে আসতেই পারি। ব্যাস একবার বলতেই সবাই রাজি আর কি উঠলো বাই তো কটোক যাই।
ভাবছি এক সপ্তাহ আগে দার্জিলিং থেকে এসে আবার পাহাড়ে যাবো টা ক্ষতি বা কি আছে। চলে গেলাম। মাত্র এক সপ্তাহ আগে লাভা ওপেন হয়েছে টুরিস্ট দের জন্যে। হতে গনা কিছু টুরিস্ট আর একদম ফাঁকা। বেশ ঘুরে সন্ধে 6.30 টায় বাড়ী পৌছে গেলাম। আজকের ঘোড়া টা সত্যি খুব এনজয় করেছি দুটো কারণে এক একদম প্ল্যান ছাড়া র দুই লাভা এতটা ফাঁকা খুব বেশি ভালো লাগলো। যদিও রিশপ কলাখাম এবার যেতে পড়লাম না, একবারে এতটাও হয় না
পর্ব -১ কোলকাতা থেকে লামাহাটা
এবছর পুজোতে আমরা বাইক নিয়ে চললাম নর্থ বেঙ্গলের উদ্দেশ্যে। লাগেজ বেঁধে ভোর ৫ টে নাগাদ বাইক স্টার্ট করলাম বাড়ি থেকে। কোলকাতা থেকে লামাহাটা প্রায় ৬৩৫ কিমি। আমরা দ্বিতীয় হুগলি ব্রিজ দিয়ে ডানকুনি পৌঁছলাম তখন প্রায় সানরাইজ হয়ে গেছে। সকাল ৭.৩০ নাগাদ আমরা শক্তিগড় পৌঁছলাম। শাক্তিগড় গেলাম আর ল্যা়ংচা খাবো না সেটা হতে পারে না তাই ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম। কোলকাতা থেকে শক্তিগড় ৯৫ কিমি হবে। তারপর আমরা বর্ধমান শহরের মধ্যে দিয়ে SH17 ধরলাম। বাদশাহী রোড ধরে আমরা খারগ্রাম, মোরগ্রাম পৌঁছে অবশেষে NH34 ধরলাম তখন দুপুর ১.৩০। এই SH17 রাস্তাটা প্রায় ১৪০ কিমি আর এই রাস্তা পার হতে অনেক সময় লাগে যেহেতু রাস্তা সিঙ্গেল লেন, গ্রামের মধ্যে দিয়ে আর রাস্তার অবস্থা খুব ভালো নয়। এরপর আমরা NH34 ধরে চললাম ফারাক্কার উদ্দেশ্যে দূরত্ব প্রায় ৫০ কিমি আর রাস্তা ভালো। ফারাক্কা পৌঁছলাম আমরা বিকেল ৪ টে নাগাদ যেহেতু আমরা বন্ধুর বাইক খারাপ হয়েগেছিলো। ফারাক্কা থেকে মালদা প্রায় ২০ কিমি। এখন আর মালদা শহর ঢুকতে হয় না মালদা বাইপাস হয়ে যাওয়ার জন্যে। তখন প্রায় বিকেল ৪.৩০ তাই ঠিক করলাম আরো যদি এগিয়ে যাওয়া যায় রায়গঞ্জের উদ্দেশ্যে। মালদা থেকে রায়গঞ্জ প্রায় ১০০ কিমি রাস্তা আর ফারাক্কা থেকেই রাস্তা খুব খারাপ। পৌঁছতে প্রায় সন্ধ্যে ৭ টা বেজে গেছিলো। রাতে বাইক চালাবো না তাই রায়গঞ্জে থাকবো ঠিক করলাম। পরের দিন সকাল ৭ টায় আবার যাত্রা শুরু আমাদের। রায়গঞ্জ থেকে বোতলবাড়ি প্রায় ১৬ কিমি আর রাস্তাও খারাপ যেহেতু রায়গঞ্জ বাইপাসের কাজ চলছে। বোতলবাড়ি থেকে ধানতলা প্রায় ৬০ কিমি আর রাস্তা খুব খারাপ আর সরু যেহেতু গ্রামের মধ্যে দিয়ে আর রাস্তায় হাঁস মুরগি ছাগল গরু যখন তখন চলে আসে তাই বাইক আস্তে চালাতে হয়েছিলো। ধানতলা যখন পৌঁছলাম তখন প্রায় সকাল ১০.৩০। ধানতলা থেকে রাস্তা আবার ভালো আমরা ইসলামপুরে একেবারে লাঞ্চ সেরে দুপুর ১২ টা নাগাদ আবার যাত্রা শুরু করলাম শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে। ইসলামপুর থেকে শিলিগুড়ি প্রায় ৭০ কিমি। রাস্তার ওপর বেশি বিশ্বাস করলে আবার বিপদ, মাঝে মাঝে রাস্তায় গর্ত। সাবধানে বাইক চালিয়ে আমরা শিলিগুড়ি পৌঁছনোর আগেই ঠিক করলাম আমরা নক্সালবাড়ি, পাঙ্খাবাড়ি দিয়ে কর্শিয়ং যাবো। এই রাস্তার প্রাকিতিক সৌন্দর্য্য অবর্নিয় দুপাশে শুধুই চা বাগান আর দুরে পাহাড়। প্রায় ৪০ কিমি বাইক চালানোর পর পাহাড় শুরু হয়ে গেলো আর জীবনের প্রথম পাহাড়ে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা অর্জন করা শুরু। পাঙ্খাবাড়ি থেকে কর্শিয়ং প্রায় ১০ কিমি আর রাস্তা অনবদ্য, শুধুই পাক খেয়ে আমরা পৌঁছলাম কর্শিয়ং। সেই বিখ্যাত টয় ট্রেন লাইনের পাশ দিয়ে বাইক চালানোর অভিজ্ঞতা লিখে বোঝাতে পারবো না, মনে হচ্ছে কোনো সিনেমার শ্যুটিং চলছে আর সেখানে আমি হিরো । কর্শিয়ং থেকে জোরবাংলো প্রায় ২৪ কিমি আর তারপর ডানদিকে তিস্তা বাজার রাস্তা ধরে আরো ৯ কিমি বাইক চালিয়ে 6th মাইল পৌঁছলাম আর রাস্তায় প্রচুর বৃষ্টি তাই কাকভেজা হয়ে homestay তে ঢুকলাম। লামাহাটা থেকে ২ কিমি 6th মাইল। এর পরের পর্বে 6th মাইলের প্রাকিতিক সৌন্দর্য্য আর হমেস্টের বিবরণ দেবো। ধন্যবাদ
যদিও আমি নিজে ঘুরতে যাইনি বলে ছবি নিজে তুলে দিতে পারলাম না, ছবি গুলো নেট থেকে সংগৃহীত, ভ্রমণ বৃত্তান্ত লেখা আমার একটা শখ। জানিনা, লেখাটি এই গ্রুপে অ্যাডমিন অ্যাপ্রুভ করবেন কিনা। অগ্রিম ধন্যবাদ।
Offbeat Destination সিত্তং - দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং মহকুমার একটি বৃহৎ জায়গা জুড়ে থাকা গ্রামগুচ্ছের মধ্যে একটি পাহাড়ি গ্রাম হলো সিত্তং। এই গ্রামগুচ্ছ সিত্তং খাসমহল নামে পরিচিত। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পাহাড়ের পথে সবচেয়ে কাছের ভ্রমণকেন্দ্র লাটপাঞ্চার, ৪২৭০ ফুট উচ্চতায় এই পাহাড়ি গ্রাম, যা মহানন্দা অভয়ারণ্যের সর্বোচ্চ স্থান। সিঙ্কোনা চাষের জন্য বিখ্যাত এই শান্ত - স্নিগ্ধ গ্রামের ৫ কিমি দূরে মহানন্দা অভয়ারণ্য। যেখানে শাল, পাইন, টিকের জঙ্গলে হরিণ, বন্য শূকর, চিতা, হাতি, ২৪০ প্রজাতির পাখির (যে কারণে একে পক্ষীপ্রেমিদের স্বর্গ বলে ) দেখা মেলে। মাঝে মাঝে গ্রামের মধ্যেও এই পশুরা চলে আসে। লাটপাঞ্চার থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অহলদারা ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা ও পাহাড় থেকে তরাই -এর দিকে বহমান তিস্তা নদী , দুই- ই দেখতে পাওয়া যায়। কাছেই রয়েছে ১৫০ বছরের পুরানো বৌদ্ধ মনাস্ট্রি। লাটপাঞ্চার থেকে ১৩ কিমি দূরে কমলালেবুর গ্রাম সিটং। রিয়াং নদীর তীরে সবুজ পাহাড়ের মাঝে এই সুন্দর লেপচা গ্রামের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার প্রতি বাগানেই কমলালেবুর চাষ হয়। শীতের সময় কমলা হলুদ বর্নে রঞ্জিত হয় এই গ্রাম। শুধু যে কমলালেবুর চাষ দেখার জন্য দর্শকরা আসেন তা নয়, এখানকার শান্ত, নির্জন অপরূপ প্রকৃতি - পাহাড় , পাহাড়ি নদীর ইতিউতি কুলুকুলু ধ্বনি সহযোগে বয়ে চলা, নাম না জানা নানা পাখির সুমধুর ডাক, পুরনো বাঁশের তৈরী সেতু, শতবর্ষ প্রাচীন বাঁশের তৈরি চার্চ, এখানকার অধিবাসীদের সহজ সরল জীবনযাত্রা, তাদের বন্ধুসুলভ আতিথ্য ভ্রমণার্থীদের বারবার এখানে আসার জন্য আকর্ষণ করবে। যদিও নব পরিচিত এই টুরিস্ট স্পটটি এখনো সেভাবে ভিড় হয়না, তাই যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন তাদের কাছে এই নির্জন শান্ত ছবির মত সুন্দর গ্রামটি সহজেই মন জয় করে নেবে। তিনচুলে - দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩২ কিমি দূরে একটি পার্বত্য গ্রাম এই তিন চুলে। তাকদা থেকে 3 কিমি দূরে প্রায় ৫৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত দার্জিলিং জেলার এই গ্রামটি। তিনটি ভিন্ন পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই গ্রাম। এই তিনটি পাহাড় চূড়া দেখতে লাগে তিনটি উনুনের বা চুলার মত। তাই এই তিন পাহাড় বেষ্টিত গ্রামটির নামকরণ হয়েছে তিন চুলে। ভ্রমণ কেন্দ্র রুপে সেরম পরিচিতি/ উন্নতি না হলেও স্থানীয় মানুষদের উৎসাহে তৈরী এই মডেল জৈব গ্রামে নেই কোনো কীট নাশকের ব্যবহার। ইকো ট্যুরিজম এই গ্রামে হোম স্টে - এর সুবন্দোবস্ত রয়েছে। এই গ্রাম থেকে দেখা যায় কালিম্পং, দার্জিলিং আর গ্যাংটক শহর। এখানকার তিন চুলে ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ পূর্ব হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গের অসাধারণ দৃশ্য, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মোহময়ী দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রি , সুদৃশ্য বেশ কয়েকটি চা বাগান, চা তৈরির কারখানা, যেগুলো দেখে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে চা পাতা তোলা থেকে চা তৈরি হয়। একটি tea estate গ্রামের কাছে সেটি হলো Runglee Rungliot . এছাড়া Peshok tea estate ঘুরে আসতে পারেন। সেই পথে আপনি দেখতে পারেন lover's meet point view. যেখান থেকে আপনি তিস্তা আর রঙিত নদীর সঙ্গমস্থলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পাবেন। সিত্তং থেকে তিন চুলে যাওয়ার পথে পড়বে নতুন আর একটি ভ্রমণ কেন্দ্র লামাহাটা। বৌদ্ধ লামাদের পরিধান থেকেই নামকরণ এই জনপদের। এখানে শেরপা, তামাং, ভুটিয়া, দুকপা সম্প্রদায়ের মানুষদের বসতি। ৫৭০০ ফুট উচ্চতায় কুয়াশাচ্ছন্ন পাইনের অরণ্য ঘেরা এই পাহাড়ি গ্রামের মধ্যে মেঘের আনাগোনা আর আলো আঁধারি প্রকৃতির খেলা, ৫০০ বছরের পুরানো বৌদ্ধ মনাস্ট্রি, চা বাগান, ভাগ্যে থাকলে (আবহাওয়া অনুকূলে হলে ) কাঞ্চনজঙ্ঘার শ্বেতশুভ্র মুকুট রাশি আর দূরে বহমান তিস্তা নদী দর্শনার্থীদের মন মাতোয়ারা করে দেবে। পায়ে হেঁটে এই গ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চল ভ্রমণ করে এক আলাদা অনন্য অনুভূতি আপনি পাবেন। লামাহাটার সবুজে মোড়া ইকো পার্কের নানারকম গাছ, অর্কিড, ফুলের সম্ভার আর পার্কের চারদিকে রং বেরং - এর পতাকা , হিমেল বাতাস আপনাকে এনে দেবে প্রশান্তি। এখানকার লোকের বিশ্বাস যে , এই প্রার্থনা পতাকাগুলি দিয়ে যখন বাতাস বয়ে যায় তখন এর চারপাশের প্রকৃতি আর মানুষের মনে পবিত্রতা আর শান্তি নিয়ে আসে এই বাতাস। এই পাইন জঙ্গল পথে ৮ কিমি ট্রেক করে পৌঁছে যাবেন তাকদা। তাকদা অর্কিড বাগানে নানা রকম অর্কিড ফুলের গাছ আর ফুল দেখে চোখে লাগবে রঙিন পরশ। লেপচাজগৎ - দার্জিলিং থেকে ১৯ কিমি দূরে ৬৯৫৬ ফুট উচ্চতায় লেপচা সম্প্রদায়ের মানুষদের জগৎ, এই ছোটো পার্বত্য গ্রাম - লেপচাজগৎ। দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ৪৫ মিনিট গাড়িতে করে গেলে আপনি প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এই ছবির মত সুন্দর গ্রামে পৌঁছে যাবেন। এই গ্রামটি পশ্চিম বঙ্গ সরকারের অধীন সংরক্ষিত বনের মধ্যে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি দেখাশোনা করে West Bengal Forest Development Corporation ( WBFDC). গগনচুম্বী পাইন, ওক, রডোডেনড্রন অরণ্যের মধ্যে মেঘের আনাগোনা, পাহাড়ী ফুলের সমাহার, পাহাড়ী ঝর্নার ঝিরিঝিরি ধারা সমারোহে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার এই লেপচাজগতে না এলে দার্জিলিং ঘোরা বৃথা। দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘার রোদে লাল হয়ে সোনার মত উজ্জ্বল রুপ ধারণ করার অবিস্মরণীয় দৃশ্য ভোলা যাবেনা। টাইগার হিল থেকে যারা কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালো করে দেখেননি তাদের লেপচা জগৎ নিরাশ করবে না। দার্জিলিং এর আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই লেপচা অধ্যুষিত সুরম্য পাহাড়ি ছোট্ট গ্রামটিতে। পাহাড়কে উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই এই জায়গায় আসতে হবে। নির্জন , নিস্তব্দ এই গ্রামে হোমস্টে - এর ব্যবস্থা আছে। সেখানে রয়েছে থাকা, খাওয়া আর পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত । পশ্চিম বঙ্গ সরকার পরিচালিত ফরেস্ট বাংলোর বুকিং সব সময় পাওয়া যায়না। অনেক আগে থেকে বুকিং করতে হয়, তবেই ভাগ্যে পাওয়া যায়। এই ফরেস্ট বাংলো থেকে 1 কিমি দূরে হাওয়াঘর জায়গাটি থেকে বরফাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘার 5 টি চূড়াই সুদৃশ্য, যদি আবহাওয়া রৌদ্রজ্জ্বল হয়। আরো একটি জায়গা থেকে তুষার শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখা যায় , সেটি হলো ঘুম রক। যেটি এই বন বাংলো থেকে ১.৫ কিমি দূরে। এখান থেকে বালসান উপত্যকার দৃশ্য অসাধারণ। ঘুম রক থেকে সূর্য উদয় দেখতেও লোকে ভিড় করেন। বনের পথে চলতে চলতে অনেক পাখির ডাক শুনতে পাবেন, দেখতেও পাবেন কত সুন্দর সুন্দর পাখি। পাখি প্রেমীদের স্বর্গ রাজ্যও বটে এই লেপচা জগৎ। এখানে এলে দিনের বেলায় প্রকৃতির রূপ উপভোগ করতে হবে, রাতে চারদিক নিস্তব্দ হয়ে যায়, কাছে পিঠে কোনো বাজার নেই, তখন ঘন বনের মাঝে ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে শুনতে , fire place - এর ধারে বসে, দার্জিলিং চা আর মোমো খেতে খেতে গল্পের বই পড়তে ভালোই লাগবে। © Mita Mondal
এবার একটু সামথার হয়ে যাক...
ঘাপটি মেরে চুপটি করে বসে ছিলাম জড়সড় ঘরে, যেন শীত ঘুম দিচ্ছিলাম লম্বা। তারপর পুজো পুজো গন্ধে গা ঝারা দিয়ে উঠতেই আমার আকাশ, আমার বাতাস। ঘুম ভাঙতেই গাড়ি ছুটল হু হু, মেঘ পিওনের ছুটির দিনে আকুল বইল তিস্তা, আর টুক করে তাকে টপকে গিয়ে বন পাহাড়ি রাস্তা। NJP থুড়ি নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বড়জোর ঘণ্টা দুই আড়াই, পাহাড়ি চড়াই ভেঙে আচমকা বাঁক ঘুরতেই, সাত সকালে হাই তুলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। যেতে যেতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে কাঠ পাথরের ছিমছাম দু কামরাগুলোর পিঠে চাক বাঁধছে honey bee আর মন কেমনের কাঁচা রোদে,পাহাড় মাথার চ্যাপ্টা জুড়ে something somewhere সামথার – না শোঁকা ফুলের কুঁড়ি। আমাদের ডাকছিল HOMECALLING Samthar, ঘর থেকে দূরে আর একটা নিজের সে, ছক ভাঙা Home Stay, যে আলসে সকালে হাত বাড়িয়ে টেনে নিল চেনা অচেনা পাখীর সুরে...”দিল সে রে...”। তারপর আর কি, আমি তুমি আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। না, একটু ভুল হোল, মাঝে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে রেখে এক মাথায় কুম্ভকর্ণ তো আর এক মাথায় পান্ডিম। আমি ভোর জাগলে কি হবে,ওদিকে বুদ্ধ শুয়ে ( Sleeping Buddha কি আর সাধে বলে) আর তাকে আদর বুলিয়ে দিচ্ছে লালচে কমলা প্রথম আলো। এক কাপ কফি, উঁকিঝুঁকি বুলবুল সিপাহী আর কোণঠাসা ধোঁয়া মেঘ, ব্যাস আর কি... আয় চুপ, তোর সাথে এলো পাহাড়ে ফুটফুটে মাখি। সূর্য ডুবুডুবু হলে পাম্বোদাড়া থেকে একদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার মাথায় রঙের খেলা, আর একদিকে শিলিগুড়িকে তালুতে রেখে শেষ বেলার তিস্তা। উঁকি মারলে দেখা যাবে, একপাশ জুড়ে কালচে সবুজে ডুয়ার্স।
সাত সকালে Homecalling এর চৌহদ্দিতে একা একেলা মন হেঁটে হেঁটে ঘুরল খানিক নিরিবিলি এমাথা থেকে ওমাথা। তারই ফাঁকে ফাঁকে তবু চলল এ কথা সে কথা গাছ চিনে চিনে, আশেপাশেই যখন কখনো এলাচ, মিলেট, স্কোয়াশ, ঝাড়ু, কখনো হাসি মুখ কমলালেবু। চেনা অচেনা পাখীর সাথে কতদিন বাদে লুকোচুরি খেলা শুরু। দিনে দিনে চাকা গড়ালে কখনো ছুঁয়ে দিলাম রেলি নদীর আদুর, দোল খাওয়া ঝোলা ব্রিজ, জল কিত কিত, কখনো বা চুনাভট্টির নুড়ি বুক, চাইলে পাশেই পাহাড় কোলে চারকোল বা কাফের এর জঙ্গল। Home এও আছে যজ্ঞেও আছে কর্তা কৌশিক দা,ভোর থাকতে ঘুম ভাঙাচ্ছে তো সন্ধ্যা গড়াতে চালে ডালে বসাচ্ছে, বিশাল দাজু হু হু রাতে বাইক হাঁকিয়ে ড্রাইভার তুলে আনছে চাঁদ মাখা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে ভিউ পয়েন্ট যেতে হবে যে, আর এইভাবে মুহূর্তরা তৈরি হচ্ছে তবু রাত মাহাত্ম্যে ঘোর ধরা চোখ দেখল কোজাগরী পূর্ণিমায় চাঁদ হাসছে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর ওর গলা জড়িয়ে ডায়মন্ড নেকলেস সেজে কালিম্পং শহর। মুনলিট ডিনারে মাংস খিচুড়ি আর পাঁপড় ভাজা... হয়ে বেশী, কারন জিভে নয়, স্বাদ যে লেগে থাকলো চোখে... এটাই তাজা খবর।
© সৌরীন ঘুম স্টেশন থেকে দেড় দু কিলোমিটার দূরে, মিরিকের দিকের রাস্তায় এই গ্রাম. এর আগে এর বিবরণ কোথাও পাইনি. ছবির মতো গ্রাম ছবি দেখার জন্যই ছেড়ে দিলাম. হোমস্টে তে না খাবার খেলে, হেঁটে ঘুম আসতে হবে. অভূতপূর্ব আবহাওয়ায় যারা শুধু বসে থেকে রেস্ট নিতে চান, এ জায়গা তাঁদের জন্যই. 3 থেকে 5 দিনে রেস্ট হয়ে যাবে. তবে নিস্তব্ধে একা লাগতে পারে, তাই একা যাবেন না. আবার ইনোভা বুকড হয়ে অনেকে যাবেন না. ভিউ এতো সুন্দর যে, রোমান্টিজম এর নতুন সংজ্ঞা তৈরি করতে পারবেন. আর ঘুম স্টেশন এর কাছের বুদ্ধিস্ট রেস্টুরেন্ট থেকে বীফ, পর্ক, চাউমিন, থুকপা, মোমো, সসেজ, ব্ল্যাক টি, ফিলেই, নেপালি রাইস থালি, খেতে ভুললে বড় ভুল করবেন. হোমস্টের এড্রেস দিয়ে দিলাম. আমি চুপচাপ একা গেছিলাম, অল্প নেশা করবো বলে. এমন জায়গা আগে পাইনি. পাহাড়ের রানী. প্রথম পৌঁছেই সেটা মনে হয়েছিল বিকাল 3টা তে. ঘুম স্টেশন থেকে যখন নিচের দিকে হেঁটে হোমস্টে যাচ্ছিলাম, মাঝে মাঝেই থমকে দূরের পাহাড়ী ঢেউ দেখে আনন্দে দু পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে যাচ্ছিলাম. হোমস্টে পৌঁছে কমপ্লিমেন্টারি ব্ল্যাক টি খেয়ে একটু রেস্ট নিলাম. খেয়েই ঢুকেছিলাম, তাই দেরি করে বেরোলাম. ঘুম স্টেশন এলাম. পথে পাহাড়ের সবুজ ঢেউ, সাদা মেঘের ডানা মেলা পাখনা স্বপ্নের ভিতরে আমাকে ঢুকিয়ে দিলো অনায়াসে. ঘুম স্টেশন এ SBI, AXIS, আরো দুটো atm দেখলাম. ওষুধের dokan, আরো অনেক দোকান আর কয়েকটা রেস্টুরেন্ট পেলাম. নেপালী, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, এবং ভেজিটেরিয়ান রেস্টুরেন্ট গুলোর মধ্যে বুদ্ধিস্ট রেস্টুরেন্ট বেস্ট. কি স্বাদ. সকালে মোমো, ব্ল্যাক দার্জিলিং টি তে অসাধারণ ব্রেকফাস্ট. দুপুরে নেপালী থালি, বিকালে চা, ফিলে বা সসেজ, রাতে থুকপা বা চাউমিন, অসাধারণ ভোজন. তবে বাঙালি খাবার খেতে হলে আট কিলোমিটার দূরে দার্জিলিং যেতে হবে. ফিরছিলাম যখন, রাতের আলোতে সমস্ত পাহাড় গুলো জোনাকির মতো আলোর রোশনাই তে ভোরে উঠেছে. অন্ধকারে পাহাড়ের রাস্তার ধারে, খাদের পাশে বসে পড়লাম. দুটো সিগারেট শেষ করে যখন উঠলাম, দৃশ্য সুখে চোখ ভিজে গেছে. ফিরে কম্বল চাপা দিয়ে ঘুম. সকালে হোমস্টের ছাদে নৈসর্গিক শোভা. কতক্ষন চুপচাপ বসে ছিলাম জানিনা. ব্রেকফাস্ট করে উপরের দিকে হেঁটে গেলাম. জোড়বাংলো ক্যান্টনমেন্ট এর রাস্তায় বড় বড় পাইন গাছের জঙ্গলে রাস্তার ধারে বসে পড়লাম. সবুজ গাছ, সাদা মেঘ পাগল করে দিলো. দুপুরের খাবার খেতে দেরি হলো. বিকালে দার্জিলিং mall এ গেলাম. আজ হোমস্টে তে ব্রেকফাস্ট করে লাঞ্চ অবধি ছাদে বসে রইলাম. ঘুমে গিয়ে লাঞ্চ করলাম. রাস্তাতে দাঁড়াচ্ছি বসছি, শুধুই অপরূপ দৃশ্য. লাঞ্চ সেরে রাস্তার ধারে বসে মানুষ জন, গাড়ি দেখলাম. স্নাক্স সেরে ডিনার নিয়ে হোমস্টে তে ফিরলাম. আজ ঠিক করে ছিলাম নিচের দিকে নামবো. খাবার খেয়ে লাঞ্চ নিয়ে নিচের দিকে হাঁটলাম. এক কিলোমিটার হাঁটতে দু ঘন্টা লেগে গেল. তারপর এক মন্দিরে গিয়ে বসলাম পাহাড়ের মাথায়. একদিকে অজানা পাহাড়ের সারি, অন্যদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর দার্জিলিং শহর. তিন ঘন্টা কেটে গেলো. এরপর ফিরলাম. পরের দিন গুলো শুধুই হারিয়ে যাবার পালা. 5 দিন স্বর্গে থেকে বাড়ি ফিরলাম. ফিরেই অর্ধাঙ্গিনী কে বললাম ওয়েস্টবেঙ্গল এর হিল স্টেশন এ বাড়ি করবো. রিটায়ারমেন্ট এর পর ওখানেই কাটাবো. এখনো স্বর্গের স্বপ্ন থেকে ফিরে আসিনি. গেলে ঠকবেন না.
মিরিক শব্দটির উৎপত্তি লেপচা ভাষার শব্দ Mir-yok থেকে। যার অর্থ আগুনে ঝলসে যাওয়া স্থান। কিন্তু বাস্তবে হয়তো তারপরের চিত্রটাই ধরা পড়ে মিরিকের সৌন্দর্য এবং তার চারপাশের পরিবেশ থেকে। ঠিক যেভাবে কোন জঙ্গলে দাবানল লাগার পরে আবার সবকিছু নতুন করে শুরু হয়। বৃষ্টির জলে ছোট ছোট নতুন গাছ জীবন্ত হয়ে ওঠে , সবুজের সমারোহে চারদিক ভরে যায়, মিরিকের চরিত্রটাও ঠিক সেইরকম।
মিরিক হলো পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার একটি মহকুমা।2017 সালের 30 মার্চ দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং মহকুমা এর অন্তর্গত পৌরসভা উন্নয়ন ব্লক নিয়ে এই মহাকুমা সম্পূর্ণভাবে গঠিত হয়। দার্জিলিং জেলার একটি মহকুমা হলেও মিরিকের স্বভাব দার্জিলিংয়ের শত ব্যস্ততার থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার পথে প্রায় ৫৮০০ ফুট উচ্চতায় মিরিকের অবস্থান। পাহাড়, হ্রদ আর ধুপিগাছের ও পাইনগাছের জঙ্গল দিয়ে ঘেরা রোমান্টিক জায়গা এই মিরিক। এক কিলোমিটারের বেশি লম্বা সুমেন্দু সরোবর মিরিকের প্রাণকেন্দ্র , যাকে আমরা মিরিক লেক বলেও জানি। শিলিগুড়ি এবং NJP দুই জায়গা থেকেই খুব সহজেই মিরিক যাওয়া যায়। শিলিগুড়ি থেকে মিরিক এর দূরত্ব প্রায় 52 কিলোমিটার। শিলিগুড়ির তেঞ্জিং নরগে সেন্ট্রাল বাস স্ট্যান্ড থেকে মিরিক যাওয়ার বাস ছাড়ে এবং সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘন্টা। এছাড়াও গাড়ি ভাড়া করে শিলিগুড়ি থেকে সরাসরি চলে আসতে পারেন। প্লেনে আসতে চাইলে মিরিকের সবচেয়ে কাছের বিমানবন্দর বাগডোগরার দূরত্ব প্রায় 55 কিলোমিটার। ট্রেনে করে আসলে নিউ জলপাইগুড়ি জংশন থেকে মিরিকের দূরত্ব সড়ক পথে প্রায় 56 কিলোমিটার। গাড়িতে করে আসতে সময় লাগবে প্রায় পৌনে দুইঘন্টা থেকে দু'ঘণ্টা। মিরিক আসার সবথেকে ভালো সময় হল অক্টোবর থেকে জানুয়ারি অথবা মার্চের মাঝামাঝি থেকে জুনের প্রথম সপ্তাহ। আমরা NJP দিয়ে গিয়েছিলাম এবং সময় টা ছিল এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে। নিউ জলপাইগুড়ি তে নেমে স্টেশনের বাইরে বেরোতে না বের হতেই দেখি চারপাশে অজস্র ছোট-বড় গাড়ির ভিড়। সবাই যে যার মত প্যাসেঞ্জার নেওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছে। আপনি চাইলে এখান থেকে পুরো গাড়ি ভাড়া নিতে পারেন অথবা শেয়ারে গাড়ি ভাড়া করতে পারেন। আমরা ছিলাম সব শুদ্ধ আটজন তাই আমরা একটা টাটা সুমো পুরোটাই ভাড়া নিলাম। মিরিক পর্যন্ত যেতে আপনার খরচ পড়বে কমবেশি দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা তবে সব সময় দরদাম করে নেবেন। গাড়িতে করে হোটেলে পৌছাবার সময় রাস্তার মাঝামাঝি এক জায়গায় আমাদের ড্রাইভার লাঞ্চের জন্য গাড়ি থামালেন। হোটেলটা দুইতলা। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। আশপাশের পরিবেশটা খুবই নির্জন এবং গাছপালায় ভর্তি। তবে দেখলাম আমরা ছাড়াও এখানে বহু পর্যটক লাঞ্চের জন্য গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে ভিড় করেছে।লাঞ্চ সেরে এবার আমরা হোটেল এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। যেতে যেতে দু'পাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দু চোখ ভরে উপভোগ করলাম।
মিরিকে আগে থেকেই আমাদের থাকার জন্য হোটেল বুক করা ছিল, হোটেলের নাম ব্লু লেগুন। হোটেলে পৌঁছে সবার আগে জামা কাপড় গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
এই হোটেলে খুব বেশি কর্মচারী নেই। মাত্র দুই থেকে তিন জন কর্মচারী। ওনাদের ব্যবহার এবং আপ্পায়ন খুবই ভালো। খুবই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অথচ নিস্তব্ধতার মধ্যে খুব সুন্দর এই হোটেল। আমাদের হোটেলের ঠিক সামনেই একেবারে মুখোমুখি কয়েক হাত দূরে লাঞ্চ এবং ডিনার করার জন্য একটি কাঠের তৈরী ঘর বানানো, এখানে সমস্ত গেস্ট কে লাঞ্চ এবং ডিনারের জন্য আপ্যায়ন করা হয়। তবে খুব দরকার থাকলে আপনি নিজের রুমেও লাঞ্চ এবং ডিনার করতে পারেন। খাবার জন্য যে ঘরটা বানানো হয়েছে সেটাও ছবির মত সুন্দর, শুধুমাত্র এই ঘরটাই নয়, আশেপাশে ছোট্ট ছোট্ট বেশ কয়েকটা লাঞ্চ বুথ বানানো রয়েছে, সেখানে বসেও আপনি নিশ্চিন্তে লাঞ্চ বা ডিনারের সারতে পারেন, তবে সেগুলি খুবই ছোট এবং তিন থেকে চার জনের জন্য উপযুক্ত। এগুলির পিছনে এদের ছোট একটা অর্গানিক বাগান রয়েছে, সেখানকার বহু সবজি প্রতিদিন রান্নায় ব্যবহার করা হয়। ভোরের আলো ফোটার আগেই অন্যান্য আমিষ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি যেমন ডিম অথবা মাংস এরা দূরের বাজার থেকে সংগ্রহ করে আনেন। জন্মগতভাবেই এরা প্রচণ্ড পরিশ্রমী। তবে এখানে মাছ পাওয়া প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। ফ্রেশ হতে না হতেই দশ মিনিটের মধ্যে ওনারা বিকেলের চা ও snacks ঘরে পৌঁছে দিয়ে গেলেন। বেশ কিছুক্ষণ বাদে খাওয়া-দাওয়া সেরে আমরা একটু আশেপাশের জায়গা ঘুরে দেখতে বের হলাম। আমাদের হোটেলের একেবারে সামনেই স্বচ্ছ টলটলে জলে ভরা মিরিকের প্রাণকেন্দ্র সুমেন্দু সরোবর অথবা মিরিক লেক। অনেকেই হয়তো মিরিক লেকের এই আসল নামটা কোনদিন শোনেননি। প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা জুড়ে কাঁচের মতন টলটলে স্বচ্ছ জল নিয়ে মিরিক লেক আর তার চারধারে লম্বা লম্বা আকাশছোঁয়া পাইন গাছ, ধুপিগাছ আর ফার্ণ এর জঙ্গল। ঘন সবুজ জঙ্গলের ছায়া পড়ে লেকের জলে মনে হবে সব সময় বাতাস খেলা করে চলেছে। যতটা পরিধি নিয়ে লেক আর তার চারপাশের জঙ্গল, ঠিক ততটাই রাস্তা বানানো রয়েছে লেকের চারদিকটা ঘুরে দেখবার জন্য। পুরো রাস্তাটা দৈর্ঘ্যে মোটামুটি সাড়ে তিন কিলোমিটার। এখানে মাঝে মাঝে বড় বড় গাছের নিচে ছোট ছোট বসার জায়গা করা আছে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। সেখানে ছাড়াও হ্রদের পাশে সবুজ ঘাসের মাঠে বসেই অলস সময় কেটে যাবে। টুরিস্ট সিজনে ঘোড়ায় চেপে পুরো পথ ধরে ঘুরে আসা যায় , ঘোড়ার ভাড়া নির্ভর করে পর্যটক সমাগম এর উপর। এছাড়া হ্রদের জলেও বোটিং করারও ব্যবস্থা আছে। যদিও বর্ষার সময় লেকের জল অতিরিক্ত পরিমাণে বেড়ে যাওয়ার জন্য বোটিং বন্ধ থাকে। হ্রদের এপাশ থেকে ওপাশ যাওয়ার জন্য ইন্দ্রানী পুল বা রংধনু সেতু নামে একটি ছোট্ট ব্রিজ রয়েছে । ব্রীজের এক পাশে যদি একটানা পাইন গাছের জঙ্গল আছে তো ব্রিজের অন্য পাশে গিয়ে দেখা যাবে মোটামুটি বড় একটা ফাঁকা জায়গা, এবং সেটা মাটির বদলে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো, সকাল এবং সন্ধ্যেবেলায় এটা মার্কেট হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। এখন চারপাশে ছোট ছোট দু চারটি দোকান, বেশকিছু আবাসিক হোটেল এবং ফুটপাতের কিছু খাবারের দোকান ছাড়া আর বেশি কিছু খোলা নেই। কয়েকটা ছোট ছোট গরম জামা কাপড়ের দোকানও আপনি এই জায়গায় পেয়ে যাবেন। এই জায়গায় এসে আমরা বেশ কিছুক্ষণ চারপাশের লাইন দিয়ে বাঁধানো বেঞ্চে বসে থাকলাম। সামনে দেখি বেশ কিছুটা দূরে জনাকয়েক লোকের জটলা। কাছে গিয়ে দেখলাম সেখানকারই কোনো লোকশিল্পী তাদের ভাষার অদ্ভুত সুন্দর গানে তালে তালে নেচে চলেছে, চারপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি ভুলে মগ্ন তালে তার সেই নাচ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।
এখনো সেই লোকশিল্পী নিজের মনে নিজের তালে নাচে উন্মত্ত, আমাদের ছোট্ট হিয়াও দেখতে দেখতে সেই সুরের তালে নাচতে শুরু করলো। আর শুধু আমরাই নই, সেখানে উপস্থিত অন্যরাও আমাদের ছোট্ট হিয়ার নাচ দেখে খুব খুশি।
বসে থাকতে থাকতে চোখের সামনে বেলা গড়িয়ে যাচ্ছিলো, কিন্তু এখানকার অসাধারণ সৌন্দর্য ছেড়ে কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছিল না। আমরা যেখানে বসে আছি তার ঠিক পিছনেই মিরিক লেক। কিছুটা গিয়ে সিঁড়ি নেমে গেছে লেক পর্যন্ত এবং সেখানে বেশ কিছু বোট বাধা রয়েছে টুরিস্ট নেওয়ার জন্য। আমরা শেষ পর্যন্ত আর লেকে বোটিং করিনি। আমরা সেখান থেকে আর কোথাও না গেলেও জানতে পারলাম এই লেকের পশ্চিম দিকের ঘাটে জঙ্গলের পরিবেশের মধ্যেই রয়েছে এক দুর্গা মন্দির, অনেকে আঞ্চলিকভাবে যেটাকে সিংহ দেবী মন্দির বলে জানেন। আরো কিছুক্ষণ সময় সেখানে কাটিয়ে, দু একটা দোকানে ওখানকার জিনিসপত্র দেখে প্রায় সন্ধের মুখে আমরা হোটেলে ফিরলাম। ঠিক করলাম পরদিন আশেপাশের জায়গা কোন একটা গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে দেখা যাবে। জানতে পারলাম এখানে আশেপাশের জায়গা ঘুরে দেখার জন্য কোন ধরনের কন্ডাক্টেড টু্র এর ব্যবস্থা নেই। গাড়ি ভাড়া নেওয়ার জায়গা লেকের ঠিক পাশেই, সেখানে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বেশ কিছু টাটা সুমো এবং ল্যান্ড রোভার গাড়ি। সেখানে গিয়েই নিজেদের উদ্যোগে দাম দর করে গাড়ি ভাড়া করতে হবে। গাড়ি ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে। যার মধ্যে আপনি দেখতে পাবেন মিরিক গুম্ফা, বোকার লিঙ মনাস্টারি, ডন বস্কো চার্চ, সৌরিণী চা বাগান, থার্বো চা-বাগান টিংলিং ভিউ পয়েন্ট ইত্যাদি। আমাদের প্রথম গন্তব্য হল ডন বস্কো চার্চ। স্থানীয় ডন বসকো স্কুলের সান্নিধ্যে গড়ে ওঠা এই চার্জ দার্জিলিং জেলার অন্যতম বৃহৎ রোমান ক্যাথলিক চার্চ। চার্জের শ্বেতশুভ্র প্রাসাদটি মিরিকের প্রায় অনেকটা এরিয়া থেকেই দেখতে পাওয়া যায় এমন কি লেক থেকেও। ডন বসকো স্কুল থেকে একটু উঁচু ঢালের দিকে এগোতেই চার্চের স্টাফ কোয়াটার চোখে পড়বে। আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন স্কুল কোন কারণে বন্ধ ছিল এবং তার সংলগ্ন চার্চও। কয়েকবার ডাকাডাকি করতেই স্টাফ কোয়ার্টার থেকে চার্চের কেয়ারটেকার বেরিয়ে এলেন। তার কাছে জানতে পারলাম স্কুল বন্ধ থাকার কারণে এখন দর্শনার্থীদের জন্য চার্চ খোলা যায় না। কিন্তু আমরা অনুরোধ করলে উনি শেষ পর্যন্ত শুধুমাত্র আমাদের জন্যই চার্চের গেট খুলে দেন। এখানে আমরা দেখতে পেলাম লাল রংয়ের রডোডেনড্রন ফুল। এই ফুল এখানে খুবই জনপ্রিয়। এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের মতে এই ফুল দিয়ে অনেক ঔষধ তৈরি করা হয় সেই জন্য এই ফুলের এখানেও প্রচণ্ড চাহিদা। গেট দিয়ে কয়েক পা এগোতেই দুদিকে দুটো পেঁচানো সিঁড়ি উঠে গেছে চার্চের মধ্যে। চার্চের ভিতরে কাঠের প্যানেল এর সুন্দর কাজ আর বিশাল লম্বা লম্বা রঙিন কাচের জানালা পরিবেশ টাকে এক অসাধারন গাম্ভীর্য এনে দিয়েছে। একতলায় এই কমপ্লেক্সের খুব সুন্দর করে মেন্টেন করা লন আর তার মধ্যে মাদার তেরেসার মর্ডান স্কাল্পচার এক নিস্তব্ধ এবং অসাধারণ পরিবেশের সৃষ্টি করেছে। আমাদের পরবর্তী গন্তব্যস্থলে লিঙ্ মনাস্টারি। এই মনাস্তেরিও মিরিক লেক থেকে দেখতে পাওয়া যায়। আর আপনি যদি এই মনাস্টারির ছাদ অব্দি পৌঁছে যান, তাহলে সেখান থেকেও মিরিক লেক এর অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাবেন। এটি সমতল থেকে একটি ছোট্ট পাহাড়ের মতো টিলার উপর অবস্থিত। এখানে প্রায় 500 জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী থাকেন এবং পড়াশোনা করেন। দার্জিলিং জেলার অন্যান্য মনাস্টারির মতন এটা ততটা পুরোনো নয়। শোনা যায় ১৯৮৪ সালে কাবজি বোকার রিপনচে নামক কোন ব্যক্তি এটির স্থাপনা করেন। অনেকটা চওড়া এবং ফাঁকা এরিয়া জুড়ে এই মনাস্টারি টি ছড়িয়ে রয়েছে। এর ছাদ এতটাই চওড়া যে এর ছাদে উঠে আপনি প্রায় পুরো মিরিকের প্যানোরামিক ভিউ উপভোগ করতে পারবেন। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ছোট বড় তৈরি প্যাগোডা রয়েছে। যার মধ্যে অবস্থিত এখানকার দুটি অন্যতম আকর্ষণীয় জিনিস হচ্ছে গোল্ডেন বুদ্ধা স্ট্যাচু এবং বিশাল বড় প্রায় ৮ থেকে ১০ ফুট উঁচু প্রেয়ার হুইল, যেটাকে একসঙ্গে চার থেকে পাঁচ জন মানুষ ঘোরাতে পারবে। এখানে ঘুরতে আসার সব থেকে উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে প্রার্থনার সময়। কোন প্রবেশমূল্য লাগবেনা। আমাদের এর পরের গন্তব্য স্থল মিরিকের বিখ্যাত চা বাগান। এখানকার স্বাস্থ্যকর আবহাওয়ার জন্য মিরিকের পাহাড়ে কিছু বিশ্ব বিখ্যাত চায়ের বাগান আছে। সবথেকে বিখ্যাত হচ্ছে Tharbo plantation, যা ব্রিটিশ আমলের সময় থেকে চলে আসছে, এখন এটি Goodricke brand অধিগ্রহণ করেছে। এটি হচ্ছে এখানকার সবচেয়ে পুরনো চা বাগান। এছাড়াও অন্যতম একটি বৃহত্তম চা বাগান হচ্ছে Okayti tea estate, স্থানীয় লোকজন এটিকে Rangdoo tea estate বলেও জানে। এটিও এখানে উনবিংশ শতক থেকেই রয়েছে। চা বাগানে গিয়ে আমরা বেশ কিছু ছবি তুললাম। চারিদিকে এত অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্য যে এখান থেকে সহজে যেতে মন চাইছিলো না। যেদিকেই তাকানো যায়, যেন কোন শিল্পীর হাতে তুলি দিয়ে আঁকা উঁচু-নিচু সবুজের ঢাল আর তার মাঝে দিয়ে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা পরিষ্কার পাথুরে রাস্তা। আমাদের কাছে আর খুব বেশি সময় ছিল না, তাই আমরা চা-বাগানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে আস্তে আস্তে নিজেদের হোটেলের দিকে ফিরে চললাম। কিন্তু হাতে সময় থাকলে কেউ ঘুরে দেখে নিতে পারেন মিরিকের আরো দু'তিনটি অসাধারণ জায়গা। মিরিক লেক থেকে মাত্র 2 কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত কমলালেবু, আর এলাচের অনেক বড় বড় ফার্ম। কম তাপমাত্রা এবং সুন্দর আবহাওয়ার জন্য এখানে খুব ভালো রকমারি প্রজাতির অর্কিডেরও চাষ হয়। মিরিকে আমাদের থাকার সময় এই টুকুই ছিল। অসাধারণ কিছু অভিজ্ঞতা স্মৃতিতে নিয়ে মিরিক থেকে আমাদের ফেরার পালা।। |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |