শিমুলতলা বললেই বাঙালিরা নস্টালজিক হয়ে পড়ে। তা সে 'চেঞ্জে' যাওয়া হোক বা হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়া কোনো বাংলা সিনেমা বা গল্পের প্লট হোক। বাঙালির পশ্চিমে ছড়িয়ে আছে উশ্রী নদীর ঝর্না, প্রফেসর শঙ্কুর গিড়িডির বাড়ি, বিভূতিভষণের জঙ্গল, দাদার কীর্তি সিনেমার টুকরো ছবি।
সেই ব্রিটিশ রাজ থেকে বিহারের হ্যামলেট শিমুলতলা প্রভৃতি জায়গাগুলো হওয়া বদলের এক ঠিকানাতে পরিণত হতে শুরু করে। পরবর্তী কালে অভিজাত বাঙালি সম্প্রদায় এখানে প্রাসাদোপম ভিলা তৈরি করে নিজেদের অবসর যাপনের জন্য। শুধু কি তাই, ভ্রমণপিপাসু বাঙালিরা নেহাতই স্বাস্থ্য রক্ষায় এসে মাসের পর মাস থেকে যেতে শুরু করে এই অঞ্চলে। তবে পেটের দায় বড় দায়। এক সময় অর্থ উপার্জন হয়ে ওঠে নগর কেন্দ্রিক আর বিভিন্ন রাজনৈতিক চড়াই উৎরাই বেয়ে চলতে গিয়ে শিমুলতলা হয়ে পড়ে জনশূন্য। পড়ে থাকে বাড়িগুলো। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। কিন্তু কেউ আর ঘরে ফেরে না।
'বেশ তো, তোমরা সবাই গরমের ছুটিতে শিমুলতলা থেকে ঘুরে এসো না? ওখানে কেয়ার টেকার বাবুলাল আছে। খুব ভালো রান্নার হাত তার। তোমাদের কোনো অসুবিধে হবে না।' শুধুমাত্র এই লাইন গুলো দিয়েই শুরু হয়েছে কত গল্প। টেনিদার চার মূর্তি অভিযান । মনে পড়ে? শুরু হলো নতুন প্রবাদ, টিলা টিলা শিমুলতলায় ভিলা ভিলা ঘর।
আজকের শিমুলতলা অনেক পাল্টে গেছে। কিছু পুরনো বাড়ি হাত বদলে স্কুল, হোটেলে পরিণত হয়েছে। তবে বাকিগুলোর দশা করুন। ডাল পালা আর শিকড় বাকরে জর্জরিত বাড়ীগুলো যেনো শিমুলতলার বয়স বাড়িয়ে তুলেছে আরো অনেক। আমার মতই আপনারা যারা ভিটে মাটি ছেড়ে বিদেশ বিভুইয়ে ছড়িয়ে আছেন, হাজার চেষ্টা করেও পারছেন না ঘরে ফিরতে। এই বাড়ীগুলো দেখে হইতো কান্না পাবে। ছোটবেলার অনেক খুনসুটি মনে পরে যাবে। আর যারা অনেক বছর আগে শিমুলতলা ঘুরে গেছেন, তারা দেখুন তো কোনো স্মৃতি ভেসে ওঠে কিনা। আজও শিমুলতলার জলে মিরাকল আছে যা সব হজম করে দেয়। বাবুলালরা আজও দুর্দান্ত রান্না করে। লাট্টু পাহাড় থেকে সূর্য ডোবা আজও ভালো লাগে। আসুন না একবার। ঘুরে যান। সপ্ন দেখি সেই দিনের, যেদিন সব বিশ্বের সমস্ত পরিযায়ীরা তাদের বাড়ি ফিরেছেন। সেবছর দুর্গাপুজোয় দশমীতে কোনো কান্না থাকবেনা।
0 Comments
শিমুলতলার গল্প শোনাতে বসলে রাজবাড়ী আর লাট্টু পাহাড়ের কথা বলতেই হয়। ঢেউ খেলানো উপত্যকায় ইতি উতি ছড়িয়ে থাকা বন জঙ্গল। আর চারিদিকে যতদূর চোখ যায় সেই দিগন্ত রেখায় টিলা পাহাড়ের ধুমায়মান নীলচে উপস্থিতি। পাখির কলরবের সাথে তাল মিলিয়ে যখন পালকের মত মেঘ গুলো সরে গিয়ে সূর্যদেব কে একটু জায়গা করে দেবে, তখন সেই স্নিগ্ধ আলোয় লাট্টু পাহাড় শিমুলতলার ক্যানভাসে ফুটে উঠবে। সেখান থেকে ঈশান কোনের দিকে চোখ ফেললেই দেখতে পাবেন সেই অভিমানী রাজপ্রাসাদটিকে। ইতিহাস হয়তো আছে কিছু, তবে আমার মনে হয়েছিল যেনো কোনো এক রূপকথার দেশে এসে পড়েছি আর ওরা কোনো এক চুপকথার গল্প বলতে জড়ো হয়েছে।
আঁধার থাকতেই ভোরবেলায় বেরিয়ে পড়েছি পায়ে হেঁটে। গত রাতে বৃষ্টি হয়েছে। মাটির রাস্তা। জল কাদা ভেদ করে এগিয়ে চলেছি। প্রায় জনশূন্য পথ। পালভিলার নেমপ্লেটে বাংলা হরফ দেখে মনটা ভরে গেলো। পাখিগুলো ডেকে চলেছে। বউ কথা কও, টিয়া, শালিক। দুপাশের ঝোপে হলুদ সবুজের ফিউশন। বুনো ফুলের গন্ধ। রাস্তাটা একটু বাঁক নিয়েছে। আর সামনেই দেখি পাহাড়ের কোলে সুজ্জিমামা উঁকি মারছে। ঠিক যেনো ছোটবেলায় আঁকা ছবি। অনেকক্ষণ তন্ময় হয়ে চেয়ে রইলাম। লাট্টু পাহাড়ের কোলে সূর্যদয়! সূর্যোদয় দেখে গুটি গুটি এগিয়ে চললাম রাজবাড়ীর দিকে। সোজা পথে না গিয়ে কিছু পুরনো বাড়ি ঘুরে সবুজ মাঠের শিশির মাখতে মাখতে গিয়ে পড়লাম রাজবাড়ীর দিকে। স্থানীয় কিছু লোক শরীর চর্চা করছে। আর সামনে প্রকণ্ডকায় সেই রাজবাড়ী। অভিমান করে যেনো স্বেচ্ছায় বনবাস নিয়েছে। একসময় যার একদিকে থাকতো হাউস অব লর্ডস, আর অন্য দিকে হাউস অব কমনস্। আজ সে নিজেই যেনো কোণঠাসা। জানলা দরজা কিছু নেই। ফোকলা বুড়ো। কেউ এলো কি গেলো, কোনো তোয়াক্কা করেনা। অনেকটা সেই জলসাঘর সিনেমার বৃদ্ধ ছবি বিশ্বাসের মত ঠুনকো অহংবোধ। আমি বলবো ভিতরে না যেতে। কারণ সেদিনের সেই হাসিকান্না গুলো উপর থেকে ছাদ ভেঙে ইটের শক্ত কবরে হারিয়ে গেছে। আমি আর কবর খোঁড়ার চেষ্টা করিনি। প্রতিদিন একটা একটা করে পাকাচুলো ঝড়ে পড়ছে। যদিও নিজে ভিতরে গিয়ে এক দেওয়ালকে আলিঙ্গন করে জিজ্ঞেস করে এসেছি 'বুড়ো আর কতদিন?'
এবার ওকে বিদায় দিন। শুনেছি ঢাকার কোনো এক রাণীমা সাধের এই শিমুলতলায় এই প্রাসাদটি বানিয়েছিলেন। তারপর তো ব্রিটিশদের সাথে চোখ রাঙানি, খাজনা না দিতে পেরে রাজত্ব গেলো পাটে। রইলো পড়ে বাড়িটুকু। তারপরে এই বুড়ো বাড়িটি ভারত পাকিস্থান দেখলো। পরে বাংলাদেশও তৈরি হলো। কিন্তু নতুন বা পুরাতন কেউ আমরা এইসব বাড়ীগুলো নিয়ে ভাবিনি। না আমি আর আপনাদের সেন্টিমেন্টে আঘাত দেবো না। রাজবাড়িটির অনেক বয়স হলো। আমার আপনার সাধ্যের বাইরে ক্ষয়িষ্ণু এক মারণ ক্যান্সার। হয়তো মেরেকেটে আর পাঁচটি বছর। পারলে মাঝে গিয়ে একটা সেল্ফি তুলে আসুন ব্যাকগ্রাউন্ডে বাড়িটিকে রেখে, সেটাই হয়ে থাকুক বাকি জীবনের পাথেয়।
লাট্টু পাহাড়ের নীচে এসে যখন দাঁড়ালাম, মনটা তখন হঠাৎ ভালো হয় গেল। শিমুলতলার প্রত্যেকের বয়স বেড়েছে, বাড়েনি শুধু লাট্টু পাহাড়ের। ছোট ছোট সিমেন্টের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে এলাম। একেবারে পাহাড়ের টঙে সেই মন্দিরটা আজও মায়াকারা। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ, তাই আকাশ মেঘলা। এই পাহাড়ের বিশেষত্ব হল, চোখের সামনে চারিদিকে দিগন্ত খোলা সমস্ত উপত্যকা উদ্ভাসিত। যেদিকে খুশি তাকিয়ে থাকুন। দূরে বন জঙ্গলের সারি, তারও দূরে টিলা টিলা শিমুলতলা। ফুরফুরে হওয়ার সাথে ফিরে আসতে বাধ্য সেই হারানো শৈশব। তবে একলা যাবেননা। গেলে পুরনো বন্ধুদের সাথে নিয়ে ঘুরে আসুন। কোনো এক পাথরের উপর চেপে দূরের প্রেক্ষাপট দেখতে দেখতে আপনার মনে পড়ে যাবে ছেলেবেলার কথা। একটা কথা বলে রাখি, হয়তো দেখবেন পাহাড়ের নীচে দিয়ে কেউ হয়তো পি এন পি সি করতে করতে এগিয়ে আসছে, আপনি স্পষ্ট শুনতে পাবেন। এতটাই শান্ত নিরিবিলি সে জায়গা। তবে খবরদার, আপনি যেনো ভুলেও কোনো মন্তব্য করে বসবেননা, কারণ নীচে থেকেও আপনার কথা পাহাড়ের গা বেয়ে ওদের কানেও পৌঁছতে বেশি সময় লাগবে না। শিমুলতলা স্টেশন থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার। আর হাওড়া থেকে শিমুলতলা ডাইরেক্ট ট্রেনও আছে। দুদিনের প্ল্যানে ঘুরে আসুন প্রকৃতি আর নস্টালজিয়া পরখ করতে। দূর্গেশ গড়ের গুপ্তধন-এর ক্লাইম্যাক্স আর সূর্য ডোবা সিনেমার সূর্যাস্ত দুটিই নাহয় শিমুলতলায় বসেই দেখে নেবেন।
"টিলায় ভিলায় শিমুলতলায়"
।। আরোগ্য নিকেতন।। """""""""'"'""""" "এই ওঠ!-ওঠ!-ওঠ!-আর বলবেন না!! এই ভাবেই আমাকে রোজ ওকে ওঠাতে হয়"!!! ----না, না এটা আমার কথা নয়।আমি বলছি সেই মহাপুরুষ "বিরিঞ্চি বাবা"র কথা! এখনো মনে পরলো না!তাহলে একটু খোলসা করেই বলি। ১৯৬৫সালে সত্যজিৎ রায় যে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন"মহাপুরুষ"সেই বিরিঞ্চি বাবা। তিনি রোজ সূয্যি মামাকে এই ভাবেই ঘুম ভাঙ্গিয়ে তুলতেন।সেই চলচ্চিত্রের সুটিং হয়েছিল এই শিমুলতলাতেই। আজ আমার কলমে বাঙ্গালীর সেই বিখ্যাত পশ্চিম শিমুলতলার কথাই বলতে এসেছি। ছবি তোলার নেশা সেই সময় আমার ছিল না বললেই চলে। তাই ছবি সেরকম দিতে পারলাম না।কয়েকটা সংগ্রহ করে তাই দিয়ে দিলাম। কিন্তু ঘোরার নেশা ওই যে কথা আছেনা! ---- "উঠলো বাই তো কটক যাই"। এই বাক্যটিকে যৌবনে একেবারে আপ্তবাক্য মেনে চলতাম। ব্যাগ প্রায় গোছানোই থাকতো,শুধু মনের মত সঙ্গী পাওয়ার অপেক্ষা।পেলেই ওয়ান-টু-থ্রী। সেবার পাঁচজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম হোলিটা এবার কাটাবো শিমুলতলায়।ব্যাস!নির্দষ্ট দিনে ট্রেন ধরে ফেললাম।রেল কলোনীর ছেলে হওয়ার সুবাদে চালক থেকে গার্ড,টিকিট পরীক্ষক সবাই কাকু। ওনারাও আমাদের এই বাউন্ডুলেপনাকে একটু বেশিই প্রশ্রয়ও দিতেন। গার্ডভ্যানে চেপে প্রায় অন্ধকার থাকতে থাকতেই পৌঁছে গেলাম শিমুলতলা। সূর্য তখনও উঠেনি।আধো অন্ধকারে ডুবে ছোট্ট ষ্টেশনের বাঁ দিকে একটা জায়গায় কয়েকজন লোক আগুন তাপছে। আমাদের মধ্যে এক বন্ধু আগে এখানে এসেছিল,সেই নিয়ে চললো। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আস্তে আস্তে জেগে উঠতে শুরু করেছে শিমুলতলা।একটা বড় মাঠের মত জায়গা,শেষ মাথায় দূরে একটা স্কুল বাড়ি। রেল গেটের কাছে চা এর দোকানে চা খেয়ে পাশের ডেকরেটারের দোকানে পৌঁছে বন্ধু খোঁজ চাইলো "বিরিঞ্চি"র। না,না,এই "বিরিঞ্চি" সেই "বিরিঞ্চি" নয়!! এ এক বাংলোর কেয়ারটেকার।যথাসময়ে তাকে পাওয়া গেল,ডেকোরেটরের দোকানে প্রয়োজনীয় লেপ কম্বল, হ্যাজাক,বাসন কোসন এর অর্ডার দিয়ে চললাম "বিরিঞ্চির" সাথে। শাল ,সেগুন,মহুয়া,পলাশ, শিমুল ঘেরা লাল মোড়ামের পথ ধরে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। ওরে বাবা!এতো দেখছি পেল্লায় বাংলো। বড় গেট,উঁচু পাঁচিল ঘেরা,কয়েক বিঘা জায়গা জুড়ে। রয়েছে হরেক রকমের ফল ফুলের গাছ। আর একটা বড় পাড় বাঁধানো গভীর কুয়ো। এর জলেই খাওয়া রান্না মায় স্নান করা। আপাতত স্নান করেই রাতের ক্লান্তি মিটিয়ে নিলাম। সারা রাতই প্রায় ঘুম হয়নি,ডেকোরেটরের মাল পোঁছাতেই একটু গড়িয়ে নেওয়ার ইচ্ছে হোলো। বিরিঞ্চিও চলে গেলো টিফিন ও বাজার আনতে। রান্না বান্না সব ওই করবে।চারদিকে এই রকম আরও কয়েকটা পেল্লায় পেল্লায় বাংলো। কোনো কোনো টার ভেতরে মানুষের সারা পেলাম,একটাতে দেখলাম দুটো বাচ্চা ছেলে ব্যাটমিনটন খেলছে।ঘোরার লোক ঐআমাদেরই মত আর কি!! এই বাড়ি গুলো সব কলকাত্তাইয়া বাবুরা স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য এক সময় তৈরি করেছিলেন। উনিশ শতকে ১৮৫৪ সালে হাওড়া--রানীগঞ্জ ট্রেন চলাচল পরেই কলকাতার বাবুদের স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য পশ্চিমে যাওয়ার তাগিদ থেকেই মধুপুর-গিরিডি-শিমুলতলায় যা একসময় সাঁওতাল পরগনাই ছিল,সেইসব জায়গায় এই বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন। ইংরেজরা যদি দেরাদুন-মুসৌরি-ডালহৌসি যেতে পারে তাহলে সেই সময়ের বাঙালি বাবুরাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন! স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য যেমন এখানকার জল ও জলহাওয়া উপযোগী,তেমনই ছিল "ড্যাম চিপ"এখানকার সব জিনিসপত্র। সেই ড্যাম চিপ কথা থেকেই হয়তো "ড্যাঞ্চি বাবু" কথাটার প্রবর্তন। এক সময় এই সব জায়গা কে বাঙ্গালীর "আরোগ্য নিকেতন"ও বলা হোতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও দেখার মধ্যে এখানে আছে নলডাঙ্গার রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। পাথরের ওপর দিয়ে তির তির কোরে বয়ে চলা চলা সুন্দর সুন্দর পাহাড়ি ঝোড়া।খুব সুন্দর লাগবে যখন আপনি লাট্টু পাহাড়ের ১০০০ফুট উচ্চতায় ওপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখবেন। পূর্নিমার চাঁদ উঠেছে! আমরা চাদর পেতে সামনের বারান্দায় গিয়ে বসলাম টিফিন সহযোগে,ওদিকে হ্যাজাক জ্বালিয়ে রাতের খাবার তৈরিতে ব্যাস্ত বিরিঞ্চি,ঘরে ঘরে মোমবাতি।দুরের গ্রাম থেকে ভেসে আসছে হোলির গানের সুর আর বাজনার আওয়াজ।হোলি যে এসে গেছে দোরগোড়ায়। মনে পরে গেল এই শিমুলতলাতেই সুটিং হওয়া তরুন মজুমদারের সেই বিখ্যাত ছবি "দাদার কীর্তি"তে শক্তি ঠাকুরের গাওয়া সেই গান:- "এলো রে এলো রে এলো হোলি এলো রঙ্গে রঙ্গে মন প্রান রাঙ্গা রাঙ্গা হোলো রে" শুনেছিলাম শিমুলতলায় ভুত আছে। রাতে খেতে বসে বিরিঞ্চি কে জানতে চাইলে ও বললো :- "ইহা ভুত ক্যাহা রহেগা,আদমী রহেনে কে লিয়ে জায়গা কম পর রাহ্যা হয়,তব্ হ্যাঁ! জঙ্গল পার্টি জরুর হ্যায়,আপ লোগ ফিকর মত কিজিয়েগা ,হ্যাম হ্যায় না"।। পরের দিন ভোরবেলায় উঠে চলে এলাম ঐ পাহাড়ি ঝোড়াটার কাছে,পা ভিজিয়ে ওকে বন্ধু কোরে এগিয়ে গেলাম বিরিঞ্চিদের গ্রামে। সারাদিন বাংলোর বারান্দায় ও সামনের রাস্তায় হোলির আনন্দে মেতে মনটাকেও সেই রঙ্গে রঙ্গিন করে রাতে আবার ট্রেন ধরলাম। বিদায় শিমুলতলা।
বাঙালি আর শীত শব্দদুটি অনেকটা নলেন গুড়ের মতোই আঁঠালো । আর এসবের সাথে যদি ছুটি যোগ হয় তাহলে অজৈব রসায়নের নিয়ম মাফিক তৈরী হয় ভ্রমণ পিপাসা । অগত্যা ভাবনা চিন্তা শুরু করতেই হলো যে এবারের ভ্রমণ বৃত্তান্তে কি যোগ করা যায়। চিন্তা শুরু করলেই তো হলোনা, আমাদের মতো বাঙালিদের জন্যই আজ কোথাও যাওয়ার ৪ মাস আগে থেকে পরিকল্পনা শুরু করতে হয়। কপালে ভাঁজ নিয়ে গরু খোঁজা শুরু। কোথাও ওয়েটিং লিস্ট সেঞ্চুরি করেছে তো কোথাও হাত তুলে দিয়ে বলছে আর নিতে পারবনা বস, ক্ষেমা দাও । ইন্টারনেট , ভ্রমণ , মগজ সব মিলেও যখন একটি ঘোরার মতো জায়গা আর irctc থেকে দুটি টিকিট জোগাড় করতে পারা যাচ্ছে না তখন হটাৎ ঘুমের মধ্যে অশরীরীর আনাগোনা উপলব্ধি করা গেলো । আর দেরি না করে তড়িঘড়ি রওনা দিলাম গয়া । ও কি, গয়া বলতেই মনের মধ্যে পিন্ড , প্রেত এসব এলো নাকি? এর বাইরে গয়ার একটা পরিচয় আছে। অদ্ভুত সুন্দর বিহারের এই জায়গাটির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে মৌর্য, গুপ্ত ও কুষান যুগের ইতিহাস। চলুন এবার জেনেনি আমাদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত।
১) গন্তব্যস্থল : বুদ্ধগয়া (Bodhgaya) ২) কেন যাবেন : অলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস , হাড় কাঁপানো শীত , ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট , নানা রঙে সাজানো আন্তর্জাতিক মন্দির , কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় লামা , চারিদিকে বুদ্ধের স্ত্রোত্র পাঠ আর গরম গরম তিবত্তী থুকপা যদি আপনাকে আকৃষ্ট করে, তো যেতে পারেন বুদ্ধগয়া।বিশেষ করে ডিসেম্বর আর জানুয়ারী মাসে এখানে দলায় লামার [উপস্থিতি থাকে বলে দেশ বিদেশ থেকে অগুনতি ভক্তের ভিড় দেখা যায়। তার সাথে পাল্লা দিয়ে আসে নানা রকম দোকান। কোথাও খাবার তো কোথাও হস্তশিল্প। ৩) কিভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে গয়া যাওয়ার ট্রেনের অভাব নেই। দিল্লিগামী সব ট্রেন গয়ার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। একরাতের যাত্রায় একদম কাকভোরে আপনি পৌঁছে যাবেন গয়া। সবথেকে ভালো ট্রেন হাওড়া যোধপুর এক্সপ্রেস। রাত ১১.৩৫ এ ছেড়ে গয়া পৌঁছে দেবে সকাল ৬.৩০ এ। স্টেশন এ নেমে একটু এগোলেই দেখতে পাবেন অটো আছে। এখানে রিসার্ভ বা শেয়ার দুটো বিকল্পই আছে। অনেকে শেয়ার নেয় আর মাঝের চারটে সিট এর টাকা দিয়ে ৩ জন বসে। তবে এটা তখন ই করা যাবে যখন আপনার luggage কম থাকবে। গয়া থেকে বুদ্ধগয়া যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট। শেয়ার অটো ভাড়া নেয় ৩০ টাকা প্রতি সিট আর রিসার্ভ নেয় ৩৫০-৪০০। অটোগুলো আপনাকে নামিয়ে দেবে পোস্ট অফিসের সামনে কারন অক্টোবর ২০১৮ থেকে main মন্দির (মহাবোধি ) এর সামনে গাড়ি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। তাই পোস্ট অফিস থেকে আপনাকে টোটো (লোকালে বলে e - রিকশা ) নিতে হবে। টোটো ভাড়া প্রতিজন ১০ টাকা। ৪) কোথায় থাকবেন : থাকার জন্য আপনি ফ্রি থেকে দিনপ্রতি ৫০০০ টাকার হোটেল পাবেন। হোটেল নেয়ার সময় চেষ্টা করবেন main মন্দিরের কাছাকাছি নেওয়ার কারণে সিটি থেকে দূরে নিলে ফেরার রাস্তা রাতে বেশ ফাঁকা হয়ে যায়। তাই আপনি মহাবোধি মন্দিরের রাতের সন্ধ্যা আরতি দেখতে পারবেন না। থাকার ভালো জায়গা হচ্ছে দামির মধ্যে সিদ্ধার্থ ইন্টারন্যাশনাল আর মঝারির মধ্যে satiya guest house . সাঁথিয়া গেস্ট হাউসের সুবিধা হলো এখান থেকে সব কটা মন্দির হাটা পথে দেখা যায়।বিহার ট্যুরিজমের তিনটি হোটেল আছে এখানে তবে একটু দূরে। ৫) কি দেখবেন : একের পর এক সুন্দর কারুকার্য করা মন্দিরে সাজানো বুদ্ধগয়া। এখানে পাবেন থাইল্যান্ড , বাংলাদেশ , চীন , জাপান , কম্বোডিয়া , ভুটান আরো অনেক দেশের মন্দির। সঙ্গে পাবেন ৮০ ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি। তবে সবথেকে বেশি নজর কাড়বে এখানকার সংগ্রহশালা। বুদ্ধগয়া খনন কালে যত শিল্পকর্ম পাওয়া গেছে সবই প্রায় এখানে আছে। এই সংগ্রহশালা শুক্রুবার বাদে রোজ খোলা থাকে। ৬) ফেরা : ফেরার জন্য গয়া হয়ে ফিরতে পারেন বা পাটনা হয়ে। বুদ্ধগয়া থেকে শেয়ার অটো গয়া স্টেশন অবধি পাবেন না। আপনাকে কাছারি মোড়ে গিয়ে স্টেশনের অটো নিতে হবে। অথবা শিকারিয়া মোড় থেকে পাওয়া যায়। খরচ একই ৩০ টাকা প্রতি সিট। গয়া থেকে পাটনার memu ট্রেন আছে। দিনে ৪ জোড়া সময় লাগে ৩.৩০ ঘন্টা। ৭) আনুসাঙ্গিক ঘোরাঘুরি : পুরো প্ল্যান টা এরম হলে সবচেয়ে ভালো হয় Day ১: গয়া সকালে পৌঁছে হোটেল এ পৌঁছে যান। একটু বিশ্রাম নিয়ে পায়ে হেটে ঘুরে নিন সব মন্দির। রাতে মহাবোধি মন্দিরে আরতি দেখুন day ২: সকালে গাড়ি নিয়ে চলে যান রাজগীর। বাসে যেতে চাইলে আপনাকে আগে গয়া যেতে হবে। গয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে আপনি বাস পাবেন। রাজগীরে হোটেল এ একটু বিশ্রাম নিয়ে টাঙ্গা তে করে ঘুরে নিন, রোপওয়ে চড়ুন। পরের দিন সকালে গাড়ি নিয়ে চলে যান নালন্দা আর পাওয়া পুরি জলমন্দির। বিকালে ট্রেন ধরুন বখতিয়ার পুর স্টেশন থেকে। ৮) আনুসাঙ্গিক তথ্য : i) গয়া থেকে বুদ্ধগয়ার রাস্তার অনেক বদনাম আছে। রাত্রে যাওয়া একদম avoid করবেন। ii) মহাবোধি মন্দিরে মোবাইল ফোন জমা রাখতে হয়। জমা রাখার দুটো কাউন্টার আছে। একটা মন্দির কতৃপক্ষের সেটাতেই ভিড় বেশি থাকে। সেটাতেই রাখার চেষ্টা করবেন iii) ক্যামেরা ব্যবহার করার জন্য কুপন নিতে হবে। ১০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ iv) বিহারে বাস খুব আস্তে চলে। যতটা পারবেন ট্রেনে যাতায়াত করবেন। v) শীতকালে দিল্লি থেকে আসা সব ট্রেন বেশ লেট করে। তাই ফেরার সময় গয়া দিয়ে না ফিরে পাটনা থেকে দুরন্ত নিতে পারেন। পাটনা অনেক বড়ো আর safe station গয়ার থেকে। vi) এর বাইরে দেখার অনেক জায়গা আছে যেমন গয়া তে বিষ্ণুপাদ মন্দির , সূর্য মন্দির , পাটনাতে কুমারহর। গয়া পুরো ঘুরতে একদিন লাগে , পাটনা দুদিন বৈশালি একদিন, বুদ্ধগয়া একদিন , রাজগীর দু দিন । vii) এটি ঐতিহাসিক জায়গা শুধু নয় , এটি একটি প্রবিত্র ধর্মস্থান ও। তাই নিজের পোশাক ব্যবহারে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। জায়গাটি খুব পরিষ্কার সেটাও রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। viii) বিহারের স্থানীয় বাসিন্দারা খুব helpful , দরকার হলে সাহায্য নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না এক একটা ট্রিপ এ মন শুধু প্রকৃতি খুঁজতে চায় না । চায় কিছু জীবন কে ছুঁতে । যেমন কিছু স্কুল ফেরত ছেলেপুলের চিৎকার, কুলফিওয়ালার ঘণ্টার আওয়াজ বা পাঁচিলের গায়ে ইতিহাস বই এর পাতার গন্ধ । এবারের গন্তব্য রাজগির | ট্রেন থেকে নেমেই যে উদ্যেশ্য সফল হবে সেটা ঠিক বুঝতে পারিনি । বখতিয়ারপুর জংশন স্টেশন থেকে বেরিয়েই প্রথমে দুটো জিনিস চোখে পড়লো। আনারসা এবং লাই নামে দুটি মিষ্টি চোখ কাড়লো সকলের । বিহারী বন্ধুদের সাথে আলাপ নেহাত কম নেই । তবু এই দুটি মিষ্টির নাম তো শুনিনি । খেতে বেশ ভালই। আনারসা - বাইরের দিকটা তিল দিয়ে বানানো, ভেতর টা নারকেলের পূর দেয়া মিষ্টির মত, একটু ভেজে নেওয়া । খেতে বেশ ভালই । লাই নামক মিষ্টি টা খুব একটা পশালো না । খুব ই হালকা ওজনের, বোধয় সাবু দিয়ে বানানো । যাই হোক, খেয়ে দেয়ে রিপন ডাস্টবিন খুঁজছে কাগজের ঠোঙ্গা টা ফেলবে বলে । আওয়াজ এলো - ইয়ে বিহার হ্যায় ভাই, দিল্লি থোড়ি না হ্যায়, কাহিপে ভি ফেক দিজিয়ে । নাহ্ ! ভাইয়া ভুল কিছু বলেনি । সত্যি ই বুঝেছি "ইয়ে বিহার হ্যায় ভাই" ;) ~ক্রমশঃ ... Post By:- Pradipta Gure
গিরিডি পরেশনাথ মধুবন ট্রিপ গাইড A] গিরিডি: ------------- "উশ্রী নদীর ঝর্ণা দেখতে যাবো/ দিনটা খুব বিশ্রী" - ছোটবেলায় সহজপাঠে পড়া সেই কথা । সেই উশ্রী নদী আর ঝর্ণা (জলপ্রপাত) সত্যি আছে বাস্তবে - প্রোফেসর শঙ্কুর দেশ গিরিডিতে । আর দিনটি যদি বিশ্রী না হতে হয় মানে যৌবনারত উশ্রীঝর্ণা দেখতে হলে যেতে হবে বর্ষাকালে , যখন বৃষ্টির জলে জলপ্রপাত স্বয়ংসম্পূর্ণা ।বর্ষাতে হলুদজল আর তেমনি তার স্রোত । প্রচন্ড জল আর গতিবেগ । উচ্চতা খুব বেশী নয় কিন্তু জল আছড়ে পড়ছে । গিরিডি থেকে ১২ কিমি দূরে উশ্রী জলপ্রপাত । গিরিডিতে আর আছে খাণ্ডলী ডাম, ট্যুরিজম পার্ক। খান্ডলী ডাম, লেক কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ট্যুরিজম পার্ক । পাশেই আছে খান্ডলী পাহাড় । গিরিডি থেকে ১৫ কিমি দূরে এই খান্ডলী ট্যুরিজম পার্ক । টয়ট্রেন থেকে ওয়াটার স্পোর্টস সবকিছু আছে । শীতকালে পিকনিক করার খুব ভালো জায়গা। এছাড়া গিরিডি থেকে দেখে নেওয়া যায় : ১) হরিহর ধাম : অন্যতম বৃহৎ শিবলিঙ্গ । গিরিডি থেকে হাজারীবাগ পথে ৬০ কিমি দূরত্বে। ২) সূর্য্য মন্দির : পুকুরের মধ্যে পদ্ম আকৃতির সুন্দর মন্দির জামুয়া দেওঘর যাওয়ার পথে গিরিডি থেকে ৪৫ কিমি দূরত্বে । ৩) ঝাড়খন্ডি ধাম : হাজারীবাগের পথে ঝাড়খণ্ডের সবচেয়ে পুরানো শিব মন্দির । ৪) তোপচাচি লেক : ধানবাদের পথে পরেশনাথ পাহাড়ের পাদদেশে কৃত্রিম লেক । B] মধুবন পরেশনাথ : -------------------------- গিরিডি থেকে ২৯ কিমি দূরে জৈনদের শ্রেষ্ঠ তীর্থক্ষেত্র মধুবন পরেশনাথ । পরেশনাথ পাহাড়কে ঘিরে এই তীর্থক্ষেত্র । জৈনদের ২৪ জন তীর্থংকরের মধ্যে ২৩ জন তীর্থংকর নির্বাণলাভ করেন পরেশনাথ পাহাড়ে । ২৩ তম তীর্থংকর স্বামী পার্শ্বনাথ মোক্ষলাভ করেন পাহাড়ের শীর্ষে । পরেশনাথ পাহাড়ের উচ্চতা প্রায় ৪৫০০ ফুট । পাহাড়ের শীর্ষে দুধসাদা মার্বেলের মন্দির আছে স্বামী পার্শ্বনাথের স্মৃতির উদ্দেশ্যে । মন্দিরের ভিতর স্বামীজীর পদচিহ্ন পূজিত হয় । (মন্দিরের মধ্যে ছবি তোলা যায়) পরেশনাথ পাহাড়েই ২৪ জন তীর্থংকরের মন্দির সহ জলমন্দির আছে । জৈন তথা হিন্দুদের পূর্ণতীর্থ হল এই পরেশনাথ মন্দির । নিচে মধুবন হলো বেস পয়েন্ট । এখন থেকেই যাত্রা শুরু হয় । মধুবনে প্রচুর জৈন মন্দির । এবং ধর্মশালাও আছে । মধুবন থেকে পায়ে হেটে ট্রেকিং পথ ৯+৯= ১৮ কিমি । ঘন্টাছয়েক সময় লাগে উঠতে । রাতে ভোরের দিকে ট্রেকিং শুরু করে বিকেলের মধ্যে মন্দির দর্শন করে নেমে আসা শ্রেয় । যারা হেঁটে উঠতে পারেন না, তাদের জন্য ডুলি সার্ভিস আছে । ৮৯ কেজি পর্যন্ত ডুলি ভাড়া জনপ্রতি ৪৫০০ টাকা । ৯০ কেজি হয়ে গেলে সেই ভাড়া ৬৫০০ টাকা। আর আছে সবচেয়ে সহজ বাইক সার্ভিস । দুবছর হলো চালু হয়েছে । বাইকের রাস্তা আলাদা । ১৭+১৭=৩৪ কিমি ঘুরপথে বাইকে করে পাহাড়ের উপরে মূল মন্দিরের এক কিমি আগে পর্যন্ত বাইক যায় । এর পরের পথ সিঁড়ি বাঁধানো । বাইক ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ এর মধ্যে । দরদাম করার উপর নির্ভর করে । কিভাবে যাবেন : ----------------- গিরিডি থেকে পরেশনাথ মন্দিরের বেসপয়েন্ট মধুবন ২৯ কিমি এবং পারশনাথ স্টেশন থেকে মধুবন ২৬ কিমি । তাই দুদিক থেকেই মধুবন পারেশনাথ আসা যায় । তবে পারসনাথ হলো হাওড়া দিল্লি মেন লাইনে ধানবাদের পর । তাই অনেক ট্রেন এই লাইনে । দিল্লি/ মোগলসরাই গামী সব ট্রেন পারসনাথ স্টেশনে দাঁড়ায় । ( সবচেয়ে ভালো ট্রেন রাতে হাওড়া মুম্বাই মেল ভায়া এলাহাবাদ) এছাড়া কলকাতা থেকে সরাসরি গিরিডি যাওয়ার এক্সপ্রেস ট্রেন আছে । কলকাতা পাটনা এক্সপ্রেস গিরিডি লিংক । মধুপুর পর্যন্ত কমন লাইন, তারপর গিরিডি লিংক এক্সপ্রেস ভোরবেলা গিরিডি স্টেশন পৌঁছে দেয় । রাতে ফেরার ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা । কোথায় থাকবেন : --------------------- মধুবন এবং গিরিডি তে প্রচুর হোটেল, ধর্মশালা আছে । এদিকে ধর্মশালার প্রচলন বেশী । কম টাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘর পাওয়া যায় । গিরিডি স্টেশনের পাশেই মোদী ধর্মশালাতে আমরা ছিলাম । পরিস্কার পরিচ্ছন্ন । ২০০ টাকায় attached বাথরুম সহ ঘর । আরো কমে ১০০ টাকায় কমন বাথরুম সমেত ঘর । (যোগাযোগ : ৯৫৭০০৯২২৭৬) এরকম অনেক ধর্মশালা গিরিডি এবং মধুবনে আছে । Post By:- Subhojit Tokdar
বুদ্ধগয়াতে শান্ত ও মনোরম পরিবেশে বোধিলাভের সন্ধানে অফিসের কাজের ফাঁকে কয়েকদিন ধরে কোনো শান্ত ও ধর্মীয়স্থানে যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছিল। সেই ইচ্ছা থেকেই হটাৎ আমি (সুমন) ও সৌরভ এক শুক্রবারে রাত 11.48 তে হাওড়া স্টেশন থেকে যোধপুর এক্সপ্রেসে উঠে পরেরদিন সকাল 6.30 তে গয়া স্টেশনে নামলাম। জলযোগ করে একটা অটো নিয়ে ঘন্টাখানেকের মধ্যে পৌছালাম 30 কিমি দূরে ছিমছাম শহর বুদ্ধগয়াতে। বিহার ট্যুরিজমের হোটেল সিদ্ধার্থ বিহার আগে থেকেই বুকিং ছিল। সেখানে সুপার ডিলাক্স রুমে (ভাড়া 1500 প্লাস ট্যাক্স) স্নান সেরে হেঁটে দেখতে বেরোলাম নিকটবর্তী 25 মিটার বুদ্ধমূর্তি ও বাংলাদেশ মনেস্টরি। এখানে অনেকগুলি মনেস্টরি আছে যেখানে পরিবেশ খুবই সুন্দর এবং প্রত্যেকটির মধ্যেই সাজানো গোছানো সুন্দর বুদ্ধমূর্তি আছে। দুপুরে মধ্যাহ্নভোজ সেরে অল্প ঘুমিয়ে বিকালে দেখতে বেরোলাম নেপালি মনেস্টরি ,ভুটানি মনেস্টরি , সিকিম মনেস্টরি , ফুলের বাগান হয়ে একদম মহাবোধি মন্দিরে যা বুদ্ধগয়ার মূল আকর্ষণ। সম্রাট অশোকের তৈরি এই মন্দিরের গঠনশৈলী ও সৌন্দর্য আপনাকে স্তম্ভিত করে দেয়ার পক্ষে যথেষ্ট। মূল মন্দিরে অপূর্ব বুদ্ধমূর্তি ছাড়া পিপুল বৃক্ষ, যার নিচে বসে ভগবান বুদ্ধ বোধিলাভ করেছিলেন সেটি এবং আরো কয়েকটি ছোট ছোট মন্দির রয়েছে যা দেখতে ভালো লাগবে, এছাড়া রয়েছে মুছলিন্দা লেক। মন্দিরে বসে ধ্যান করলে কোথা দিয়ে যে সময় কেটে যায় বোঝা যায় না। কিছু সময় পর বেরিয়ে পাশেই বাবা রেস্টুরেন্টে ডিনার করে আমরা হোটেলে গিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো বিহার ট্যুরিজমের অপর একটি হোটেল আছে পাশেই, সুজাতা বিহার। সেখানে ডর্মিটরির সুব্যবস্থা আছে। আর বুদ্ধগয়াতে বেশ কিছু দারুন তিব্বতি ও থাই খাবারের দোকান আছে। ঝাল মসলায় আপত্তি না থাকলে ভালো লাগবে। ট্রাই করতে পারেন ।পরেরদিন ভোরবেলা উঠে জলযোগ করে আমরা গেলাম সুজাতা লেক, আর্কিওলজিকাল মিউজিয়াম , থাই মনেস্টরি , চাইনিজ মনেস্টরি , তিবেটিয়ান মনেস্টরি,ভিয়েতনাম টেম্পল, বার্মিজ টেম্পল। এরপর মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটা করে হোটেল থেকে লাঞ্চ প্যাক করিয়ে নিয়ে অটো করে রওয়ানা দিলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। 11.28 এর লালকুয়ান এক্সপ্রেসে চড়ে সন্ধ্যা 7 টাই পৌছালাম হাওড়া। পিছনে রেখে এলাম মনমুগ্ধকর কিছু স্মৃতি। Post By:-Suman Datta
রাজগির-নালন্দা-পাওয়াপুরী ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল বুদ্ধগয়া থেকে ফেরার পর থেকেই রাজগির যাওয়ার ইচ্ছা অনেকদিনের। সেইমতো এক শুক্রবার রাতে আমি (সুমন) ও সৌরভ শালিমার থেকে রাত 10 টার সময়ে পাটনা দুরন্ত এক্সপ্রেসে চেপে পরেরদিন সকাল 6.30 টার সময়ে পাটনা পৌছালাম। সিঙ্গারা ও কচুরি দিয়ে স্বল্প জলযোগ করে 7.15 তে লোকাল ট্রেনে চেপে রাজগির পৌছালাম 10 টা নাগাদ। স্টেশনে নেমে টাঙ্গা নিয়ে হোটেল রাজগির পৌঁছে স্নান সেরে টাঙ্গা করেই বেরিয়ে পড়লাম Sight-seeing এর উদ্দেশ্যে। প্রথমে গেলাম জাপানি মন্দির হয়ে জৈন মিউজিয়ামে। মহাবীর জৈন এর জীবনী খুব সুন্দর ছবি ও পুতুলের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা আছে। এরপর গেলাম উষ্ণ প্রস্রবণ ব্রহ্মকুন্ড দেখতে। সেখান থেকে পরপর গেলাম জরাসন্ধের কুস্তির আখড়া, বিম্বিসারের স্বর্ণভান্ডার গুহা, জৈন তীর্থক্ষেত্র মানিয়ার মঠ, রাজা বিম্বিসারের তৈরি বুদ্ধের আবাসস্থল বেনুবন বিহার ও বিম্বিসারের জেলের ধ্বংসাবশেষ যেখানে তিনি পুত্র অজাতশত্রুর দ্বারা বন্দি ছিলেন। পথিমধ্যে দই চিড়ে ও ফলাহার করে গেলাম জরাসন্ধের রথের চাকার দাগ ও জীবকের আমবাগান দেখতে যেখানে ভগবান বুদ্ধ জীবকের কাছে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর গেলাম জাপানের বৌদ্ধসংহ নির্মিত বিশ্ব শান্তি স্তুপ দেখতে যা মোট 80 টি বৌদ্ধ শান্তিস্তুপের মধ্যে অন্যতম। রত্নগিরি পাহাড়ের উপর অপূর্ব গঠনশৈলীর এই স্তুপ 400 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। স্তুপের 4 দিকের 4 টি শিল্পকলা বুদ্ধের জীবনের 4 টি অধ্যায় জন্ম, বোধিলাভ, ধর্মপ্রচার ও মৃত্যুকে নির্দেশ করে। এখানে একটা ঘন্টাঘর ও সুন্দর মঠ রয়েছে। রোপওয়ে তে করে গেলে 60 টাকা করে টিকিট লাগে। তবে হেঁটে গেলে পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য্য দেখা যায় যা আমরা উপলব্ধি করেছিলাম। এখান থেকে বেরিয়ে দিগম্বর জৈন মন্দির দেখে একটা ধাবাতে রুটি তড়কা খেয়ে ক্লান্ত শরীরে হোটেলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে রাজগিরে ঘুরতে টাঙ্গাই সবথেকে ভালো বাহন। আমাদের সারাদিন ঘুরতে 1000 টাকা নিয়েছিল। পরেরদিন সকালে উঠে একটা ট্রেকার গাড়ি (যাওয়া আসা নিয়ে ভাড়া 1500 টাকা) নিয়ে গেলাম নালন্দা ইউনিভার্সিটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে। 427 খ্রিস্টাব্দে কুমারগুপ্ত নালন্দা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ শিক্ষক ও ১০,০০০ এর মত ছাত্র ছিল। সারাবিশ্ব থেকেই ছাত্ররা এখানে পড়তে আসত, তার মধ্যে ছিল কোরিয়া, জাপান, চীন, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, পার্শিয়া এবং তুরস্ক। নালন্দা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের গবেষণা ও ধর্মচর্চার জন্য নির্মিত হলেও ওখানে পড়ানো হতো হিন্দু দর্শন, বেদ, ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা, ব্যকরণ, ভাষাতত্ত্ব, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের আরো অনেক বিষয়। প্রাচীন ভারতের আর্কিটেকচার জানতে হলে নালন্দাকে দেখতেই হবে। সেইসময়ের পুরুষ ও মহিলা একক কক্ষ হোস্টেল, পয়প্রণালী, রান্নার ঘর, প্রার্থনার ঘর, মন্দির, বাগান, ছাদ ও লাইব্রেরির গঠন স্তম্ভিত করে। পাশেই মিউজিয়ামে রাখা আছে সেই সময়ে ব্যাবহার করা বিভিন্ন জিনিস ও খনন করে পাওয়া মূর্তি। এরপর কুণ্ডলেস্বর মন্দির ও দিগম্বর জৈন বিহার দেখে সরকারি ক্যান্টিনে লাঞ্চ করে চলে গেলাম পাওয়াপুরী জৈন জলমন্দিরে। মহাবীর জৈন এর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল এই স্থানে। জলের মধ্যে দ্বীপের মতো ছোট সুন্দর মন্দির। ভিতরের ছোট কক্ষে উনার চিতাভস্ম রাখা আছে তবে তা দেখা যায়না। মহাবীরের পদচিহ্ন ও ওখানেই আছে। সেখান থেকে হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে । বখতিয়ারপুরের বাসে চেপে ঘন্টা দুয়েক বাদে পৌছালাম স্টেশনে। সেখানে অল্প ঘুরে ডিনার করে রাত 9 টার সময়ে গরিব রথে চেপে পরদিন সকালে 5.30 এ কলকাতা স্টেশন পৌছালাম। সাথে নিয়ে এলাম অসাধারণ কিছু স্মৃতি। হোটেল রাজগিরে কোনো অনলাইনে বুকিং হয়না। যে কোনো টাঙ্গাওয়ালা কে বললেই নিয়ে যাবে। রুম ভাড়া ডবল বেড 500 টাকা । ডরমিটরি সিস্টেম ও রয়েছে।বেশ সুন্দর ছিমছাম ঘরোয়া। রেস্টুরেন্ট আছে সাথেই। Post By:-Suman Datta
সিমুলতলা নামটা শুনলেই কেমন একটা গা ছমছমে ব্যাপার মনে আসে, তাই না!? লোকমুখে প্রচলিত, বিহারের এইখানে নাকি তেনাদের দর্শন পাওয়া যায়, সেই দর্শনের আশায়, গত 15 তারিখ রাতে আমরা আট জন মিলে হাওড়া থেকে রাত 11:10 এর মোকামা প্যাসেঞ্জার এ চেপে বসলাম, লেডিস কোটায় 4 টে টিকিট কনফার্মড আর বাকি 4 টে ছিলো ভগবান ভরসা, তবে ভগবান ভরসাই শুধু দেননি শোবার জায়গাও করে দিয়েছিলেন.. সকালে যখন সিমুলতলা স্টেশনে ট্রেনটা থামলো, তখন ঘড়িতে প্রায় 8টা। আমাদের থাকার জায়গা তেমনভাবে ঠিক ছিল না, বাড়ি খুঁজতে গিয়ে খোঁজ পেলাম যশোদা ধাম এর, স্টেশন থেকে দু কিলো মিটারের মতন দূরত্বে এটা একটা বড় বাগান বাড়ী যা কিনা ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। সামনে আম বাগান এর মাঝখান দিয়ে মোরাম রাস্তা পেরিয়ে, বিশাল বাড়ী, বড় বড় ঘর, থাকা, খাওয়া, রান্না করার জায়গা সব মিলিয়ে খুবই মনোরম একটা পরিবেশ। সকালে পৌঁছে স্টেশনের কাছে স্থানীয় বাজার থেকে বাজার করে রান্না আর স্নান খাওয়া সেরে, 3টে নাগাদ সবাই মিলে বেরিয়ে পড়লাম ধারারা ফলস, রামকৃষ্ণ মঠ, লাট্টু পাহাড়, আর রাজবাড়ীর দিকে.. সব দেখে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে। পরদিন চলে গেছিলাম ঝাঁঝা স্টেশন এর দিকে, দুপাশে ঘন বন এর মাঝ দিয়ে সুন্দর পাকা মসৃণ রাস্তা, জঙ্গল শেষ হলে শুরু হয় পাথুরে ছোট ছোট টিলা, মাঝে কোনো এক নাম না জানা গ্রামের ভেতর দিয়ে হঠাৎ করে কোনো ছোট ঝর্নার দেখা পেয়ে যেতেই পারেন। ছোট্ট একটা ছুটি হাতে থাকলে অবশ্যই ঘুরে আসতে পারেন এখানে। ভূত না দেখলেও প্রকৃতি যে তার নানার পসরা সিমুলতলার আসেপাশে ছড়িয়ে রেখেছে সেগুলো আপনাকে চমকে দেবেই। কিছু ইনফরমেশন যা আপনাদের সাহায্য করবে - হাওড়া থেকে সিমুলতলা : মোকামা এক্সপ্রেস (হাওড়া থেকে ছাড়ার সময় রাত 11টা) সিমুলতলা থেকে কলকাতা : পাটনা-কলকাতা এক্সপ্রেস (সিমুলতলা থেকে ছাড়ার সময় রাত 10:50) যশোদা ধাম (বজরং) : 09006813334 রুমরেন্ট 500 টাকায় 2টো রুম রান্না করতে চাইলে যাবতীয় সরঞ্জাম গ্যাস এই সব নিয়ে মোটামুটি 100-200 টাকা আটো (বাসুদেব) : 09631501254 অটোতে 10 জন যেতে পারে , দু দিনে 1000 টাকায় হয়ে গেছিলো, তবে একটু দাম দস্তুর করে নিতে হয়। Post By:- Tamal Goswami
যারা চার-পাঁচ দিনের জন্য ঘুরতে যেতে চান তাদের জন্য একটা planning. রাজগীর নালন্দা পাওয়াপুরী বোধগয়া ঘুরে আসতে পারেন।প্রথম দিন:রাজগীর পৌঁছে lunch করে নালন্দা পাওয়াপুরী দেখে নিলেন।দ্বিতীয় দিন:কাকোলাত falls.রাজগীর থেকে2.30 ঘন্টা।তৃতীয় দিন:গয়া আর বোধগয়া।এখানে সারা দিন সময় দিতে হবে। বোধগয়া য় দেখার অনেক কিছু আছে।চতুর্থ দিন:রাজগীরের local sight seeing করে রাতে train ধরুন। Post By:- Nandita Mitra
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |