কয়েকজন বন্ধু মিলে হঠাৎ বিকালে ঠিক করলাম শনি ও রবিবার কোথাও এক রাত্রের জন্য ঘুরতে যাবো। সেইমতো 16 ই জুন ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য গঙ্গাসাগর। শুধুমাত্র পূণ্য সঞ্চয়ের জন্য নয়,কর্মক্লান্ত দেহ ও মনকে প্রকৃতির ছোয়ায় প্রশান্তিতে ভরিয়ে তুলতে ঐ দ্বীপভূমিতে ছুটে যাওয়া। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতে রূপ পরিবর্তন হয় সাগরদ্বীপের। Post By:- Tapas Mitra
0 Comments
সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর এই নিয়ে তিন বার।(১৭.০৬.২০১৮) এক কাক ভোরে বন্ধুরা মিলে বেরিয়ে পরের সন্ধ্যায় ফিরে আসা এক নেশায় পরিনত হয়ে গেছে যেন।এবারো ঈদের দিন বন্ধুরা ছুটালাম পংখিরাজ।এক টানে কাকদ্বীপ। গাড়ি পার্কিং করে, প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা সেরে ভেসেলে উঠেই কচুবেড়িয়া।।এর আগে দুবার এসছি তবে মেলার সময়।।মেলার সময়ে জনতান্ডব দেখা আছে, সারারাত পায়ে হেটে ছোট্ট ভারতবর্ষ দেখা আছে।তখন গঙ্গাসাগর মেলা যেন এক টুকরো ছোট্ট ভারতবর্ষ।। অনেক দিন ধরেই মনের মধ্যে একটা ভাবনা পাক খাচ্ছিল।।যখন মেলা নেই, জন অরন্য নেই,যেদিকেই চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ... এই ব্যাপার গুলো যখন নেই তখন গঙ্গাসাগর দেখার ইচ্ছে দলা পাকাচ্ছিল মনের মধ্যে।আর সেই ভাবনা থেকেই আবার আসা কপিল দেভের রাজত্বে।কিন্তু কচুবেড়িয়া কে তো বড্ড অচেনা লাগছে।জনমানবশূন্য।। অল্প কিছু ট্রেকার,ম্যাজিক, টোটো ইঞ্জিন ভ্যান এসব।।মেলার সময় ছিটকে পড়তে পড়তে বেচে যাওয়ার রিস্ক নেই এই সময়।।দুলকি চালে পৌছালাম কপিল মুনির আশ্রম।। এত রোদ বাপের জম্মে দেখিনি।।নিজের গা দিয়েই পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম যেন।দূর থেকে আশ্রম চত্তর দেখলাম শুনশান।।মন্দিরের দিকে রোদ্দুরের চোটে যেতেই পারলাম না।।সটান ঢুকে গেলাম গঙ্গাসাগর টুরিস্ট লজের বাতানুকূল আরামে।। মন কিন্তু ছটফট করছিল কখন সমুদ্রতট এ যাব।।যাই হোক কিছু টা সময় রেস্ট নিয়ে সাড়ে তিন টে নাগাদ বীচে।।লোকজন খুব বেশী নেই।। তার মধ্যেই চান করতে করতে ভাবছিলাম মানুষ কেন দীঘা বা পুরী যায়? মাস খানেক আগেই দীঘা ঘুরে এলাম।। গা ঘিন ঘিনে ভীড়, বীচে নেমেই দেখি কম করে দেড়লাখ লোক। উফ দায়ে না পড়লে আর কোন দিন দীঘা যাব না। যাই হোক চান সেরে খেয়ে দেয়ে সন্ধ্যায় কপিলমুনির আশ্রমে সন্ধ্যারতি দেখলাম। তারপর পেলাম শ্যামল কে।। শ্যামল স্মার্ট ইয়ং এক্কেবারে জেন নেক্সট।। সাগরে টোটো চালায়।। ভদ্র এবং বিনয়ী। রাতেই ঘুরে ঘুরে দেখাল নির্মীয়মাণ ইস্কন মন্দির,ওনকার নাথের মন্দির, ভারত সেবাশ্রম, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ইচ্ছায় নির্মিত কাঠের বাড়ি, আদতে সরকারি গেস্ট হাউজ।। আগেও যতবার এসেছি দেখেছি এটা।। কিন্ত এবার ভুত বাংলো মনে হচ্ছিল।। রাতের গা ছম ছমে পরিবেশ,আলো আধারিতে গেস্ট হাউজ টা চেনাই যাচ্ছিল না।আশ পাশে একটাও মানুষ নেই।।একা একা দাঁড়িয়ে বিরাট অর্থব্যয়ে নির্মিত সুন্দর মনোরম এই বাংলো। এত্ত গরমে শ্যামল কে নিয়ে কোল্ড ড্রিংক্স খেয়ে ঘরে ফিরে ঘুম। শ্যামল কে বলে রাখলাম সকালে আসার জন্য।ও বলেছে সকালে লাইট হাউজ আর কালিবাজার দেখাতে নিয়ে যাবে। ভোর পাচটায় উঠে হাটতে হাটতে সমুদ্র। নিরালায় নিঃশব্দ সমুদ্রের গর্জন।।মানে মানুষের শব্দ নেই কিন্তু সমুদ্রের গর্জন আছে।। গ্রামের গরীব মহিলারা দেখলাম আকশি টাইপের জিনিস দিয়ে বালি হাচড়ে একটা শিল্পের মত করে ফেলেছে। পরে জানলাম পুর্নাথীদের ফেলে দেওয়া পয়সা নাকি ওরা রোজ এভাবেই কুড়ায়। জলে হাটু ডুবিয়ে অনেক ক্ষন দাঁড়িয়ে শেষে উঠলাম চা খেতে। এর মধ্যেই শ্যামল হাজির। এত মিশুকে আর হাসিখুশি ছেলে খুব কম ই দেখেছি আমি।প্রথমে গ্রামের মেঠো কিন্তু পাকা রাস্তা ধরে বহু সময় চলার পরে লাইট হাউজের পাশের বীচে নিয়ে গেল আমাদের।। এখানেই সবচে বেশী তৃপ্তি পেলাম আমরা।।কোন পর্যটক নেই, শুধু আমরা।।মুখোমুখি আমরা আর সমুদ্র।গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা সবই এই সমুদ্র কেন্দ্রিক।বোল্ডার দিয়ে সমুদ্রের পাড় বাধিয়েও আটকানো যায়না ভাঙন এখানে।।প্রকৃতির কাছে মানুষ বড় আসহায়।।তবুও সহজ সরল মানুষ গুলো কেউ বাগদার পিন ধরে, কাকড়া ধরে জীবন নির্বাহ করে।।সমুদ্রেই জীবন, আর সমুদ্রেই হয়ত মরন এদের।আমাদের দেখে এখান কার মানুষ জন অবাক হয়ে গেল কারন পর্যটক বড় একটা আসেনা এদিকে।ভার্জিন বীচ যাকে বলে আর কি।এখানেই নেমে পড়লাম, হাটলাম অনেক খানি।।কি যে অনুভুতি এরকম একটা বীচে হেটে বেড়ানোর যেখানে আর কেউ নেই... শুধু আপনি আর আপনার সামনে সমুদ্র। যাই হোক এখানেই অনেক টা সময় কাটিয়ে ফিরছি কালি বাজারের দিকে।।কালিবাজারে নাকি প্রচুর মাছ ওঠে।।যাই হোক কোন মাছ নেই।।এখনো ইলিশ ধরা শুরই হয়নি।।তবে ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।।তবে অনেক দিন পর আবার গঙ্গাসাগরে যেয়ে দেখলাম গঙ্গাসাগর অনেক পরিনত হয়েছে।। উন্নত হয়েছে অনেক তবে আরো বেশী পরিনত হয়েছে।। কি করে বুঝলাম? টোটোতে যেতে যেতেই শ্যামল কে জিজ্ঞেস করলাম ফেরার ভেসেল কটায় রে? ওর ছোট্ট উত্তর।।" দেখে নাও" আবার জিজ্ঞেস করতেও একই উত্তর।শেষে ও বল্ল গুগুলে gangasagar vessel time লিখে সার্চ মারো, তাহলেই সব টাইম পেয়ে যাবে। অবাক হয়ে গেলাম।।বুঝলাম গঙ্গাসাগর উন্নত তো হয়েইছে, তবে পরিনত হয়েছে অনেক বেশী। ( নিজের মনে যা আসে লিখি।। কারন অনাগত একাকী ভবিষ্যতে হয়ত এগুলো নিয়েই স্মৃতিচারন করতে হবে।। তখন এই মরচে ধরা ফেবুর পাতা উল্টিয়েই হয়ত আবার পেয়ে যাব সেই শ্যামল কে। হয়ত তখন আর চিনতে পারব না কারন তখন মিলিমিটার সেন্টিমিটার হয়ে যাবে যে) (পুনশ্চ) :আর আমার এইসব হাবি জাবি জাবর কাটা একান্তই আমার নিজের ভবিষ্যতের জন্য, পাঠকের মনে বিরক্তির উদ্রেক হলে তার দায় একান্তই পাঠকের Post By:- Sajal Mondal
গঙ্গাসাগর আর বকখালি। মোটামুটি সবারই এই দুই জায়গা সম্পর্কে জানা আছে । তাই আর বেশি কিছু বলব না। তবে বকখালি যাওয়ার সময় নামখানা থেকে ভেসেল এ গাড়ি সহ নদী পার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা খুব খারাপ বললেও কম বলা হবে । বেশির ভাগ গাড়ি লাইন maintain করাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে জায়গাটাকে খিচুড়ি করে ফেলেন । আর প্রশাসন সেই খিচুড়ি দিয়েই ভোজ সারছেন । আমরাও কিন্তু এই ভোজ থেকে বঞ্চিত হইনি । যাওয়ার ও আসার তিরিশ মিনিটের রাস্তা আমাদের ছয় ঘন্টায় পারাপার করতে হয়েছে । যাইহোক সব কিছুরই ভালো খারাপ থাকে । কিছু ছবি দিলাম । কেমন লাগলো জানাবেন ।। Post By:- Sumon Dasgupta
GANGASAGAR (7-8th July) ১ম পর্ব- ঘুরে এলাম গঙ্গাসাগর - একদিনের জন্য। ৭-৮ ই জুলাই। আমরা ক'জন মানে সব মিলিয়ে ১২ জনের একটি দল। ৭ জন চলে গেছিলাম এস্প্লেনেড-এ। SBSTC র বাসে চাপলাম কাকদ্বীপ যাবার জন্য। ৬ টা ৫০ মিনিটে বাস ছাড়ল। শুনলাম সাড়ে তিন ঘন্টা মতো নেবে কাকদ্বীপ যেতে। ভাড়া ৭০ টাকা। বাকি তিনজন ঠাকুরপুকুর ৩এ বাস স্ট্যান্ড থেকে আমাদের বাসটিতেই উঠল। আর দুজন গঙ্গাসাগরে আমাদের সাথে যোগ দেবে। ১০-৩০ মিনিটে আমরা বাস থেকে নেমে সাইকেল ভ্যানে চেপে lot no. 8, harwood point এ গেলাম। ১০ টাকা করে ভাড়া। সাড়ে ১২ টার আগে কোনো ভেসেল নেই, জোয়ার এলে ভেসেল যাবে আনুমানিক সাড়ে বারোটা নাগাদ। আমরা তাই দুপুরের খাওয়াটা সেরে ফেললাম। ইতিমধ্যে টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়ে গেছে। জোয়ার আসার পর ভেসেল এল। আমরা ভেসেলে উঠে পড়লাম । ৯ টাকা ভাড়া। ৪৫ মিনিট মতো লাগল ওপারে পৌঁছাতে । খুব ভিড় ছিল দিনের প্রথম ভেসেল ছিলো বলে। ওপারে কচুবেরিয়া পৌঁছে একটা ম্যাজিক গাড়ি ভাড়া করলাম, প্রত্যেকের ৩০ টাকা হিসাবে ভাড়া। সোজা ভারত সেবাশ্রম সঙঘ এ। এখন off-season, তাই ঘর পেতে কোনো অসুবিধে হলো না। আমাদের বাকি দুজনও এসে গেলো। ৬ বেডের রুম ২৫০ টাকা, দোতলায়। খাবার ব্যবস্হা একবেলার জন্য হতে পারে, তবে ৮-৮.৩০ মিনিটে সকালবেলায় জানিয়ে দিতে হবে । ১২ টা থেকে খাওয়া শুরু, ১২.৩০-১ টায় শেষ হয়ে যাবে। রাতের জন্য এদের ব্যবস্হা নেই। আমরা বাইরে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এখানে একটা কথা বলি। গেটের বাইরে বেড়িয়ে ডানদিকে একটা হোটেল আছে। সেখানে আমাদের খাওয়ার অভিগ্গতা একেবারেই ভালো নয়। তাই একটু দেখে নেবেন। আমরা খাবারের জন্য বলে চলে গেলাম সাগরে স্নান করতে। এখানে স্নানের আনন্দটা একেবারে ভিন্ন রকমের। দীঘা বা পুরীর মতো নয়। জলে বালির ভাগও বেশ কম। একসময় আশ্রমে ফিরে এলাম। এরপর বাইরের হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিলাম। কপিলমুনির মন্দিরের আরতি হয় সন্ধে ৭-১০ মিনিট থেকে ৮টা। আমরা ৭টায় মন্দিরে পৌঁছে গেলাম । পুরো আরতিটা দেখলাম । বেশ ভালো কাটল সময়টা। এরপর সমুদ্রের ধারে গেলাম । রাতের সমুদ্রের সৌন্দর্য আলাদা রকমের। ঘুটঘুটে অন্ধকারে sea beach e গিয়ে দাড়ালাম। মাথার ওপর পরিস্কার আকাশে শত শত তারার মেলা পরিবেশটাকে কেমন একপ্রকার মায়াবী করে তুলেছে। আসার সময় ভেসেলে ওঠার পর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিলো। কচুবেরিয়া পোঁছানোর আগেই বৃষ্টি থেমে গেছিলো। আকাশ এখন একেবারে পরিস্কার। তাই এখানে এসে এতো তারা দেখার সৌভাগ্য হলো। বীচে এখন লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। দিনের বেলা স্নান করতে এসে প্রচুর সারমেয় দেখেছিলাম, যারা পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়, খাবার সংগ্রহ করে তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে। ছোট ছোট স্টলও ছিলো যারা এদের খাবার মানে বিস্কুট বিক্রি করে তীর্থযাত্রীদের কাছে । এখন সেই দোকানও নেই, সারমেয়গুলোও নেই দু-একটা ছাড়া। একটা বিয়েবাড়ির দল টোটো ভর্তি লোক নিয়ে সামনে অনেকদূর চলে গেলো যাতে সমুদ্রের জল ছুতে পারে। আমরা মোবাইলের টর্চ জ্বেলে কিছুটা গেলাম, কিন্তু জল যে বহুদূরে, অগত্যা ফিরে এলাম। ফেরার পথে সাগর ফুড কোর্টে রাতের খাবারটা খেয়ে নিলাম। ভাত-রুটি, আমিষ-নিরামিষ সবই পাওয়া যায়। এদেরকে আগের দিন বলে গেলে ওরা আপনার পছন্দমতো খাবারও বানিয়ে দেবে। খাওয়া-দাওয়া সেরে আশ্রমে ঢোকার আগে মশা মারার কয়েল কিনে নিলাম। আশ্রম থেকে আপনি মশারী বা কয়েল কোনোটাই পাবেন না। মশা প্রচুর আছে। রাতে ঘরের বড় বড় তিনটি জানালা খুলে, কয়েল জ্বালিয়ে ও ফ্যান চালিয়ে শুয়ে পড়লাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে বৃষ্টিও হলো। তাই মশা বা গরম কোনোটাই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পাড়ল না। (পর্ব-১) চলবে। ২য় ও শেষ পর্ব এলার্মের আওয়াজে ৫টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঠিক ছিল ভোর বেলায় sea beach এ morning walk korbo। বাদ সাধল প্রকৃতি। সকলে তৈরি হয়ে যেই বেরোতে যাব ঠিক তখনি ঝম ঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। গতকালের বৃষ্টির রেশ এখনও কাটেনি। আকাশ এখনও গোমরা মুখ করে আছে। সাথে আমাদের সকলকেও গোমরা মুখো করে দিল। একটু পরে বৃষ্টি কমলে বেড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু কিছুটা যাবার পর আবার বৃষ্টি নামল, আমরা একটা দোকানের সামনে আশ্রয় নিলাম। কিছুটা সময় পর বৃষ্টি কমে গেলে আমরা আবার sea beach মুখো হলাম। জল এখন অনেক কাছে, রাতের মতো অভিমান করে দূরে সরে নেই। এখন সাড়ে ছ'টা। আকাশে মেঘ আছে তবে বৃষ্টি আর হচ্ছে না। beach ধরে আমরা হাঁটতে লাগলান। বা দিকে সারি সারি ঝাওবন। পরিস্কার beach। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এলাম, জেলেদের নৌকার সারি দেখা গেল। একেবারে ঝকঝকে বীচ। এখানে বীচে পা একটু ডেবে যাচ্ছে। একজন জেলেভাইকে জিগ্যেসাই করে ফেললাম, 'চোরাবালি আছে ?' সে বলল, 'না'। জল এখানে যেন আরো পরিস্কার। অনেকটা সময় ঘুরলাম। এরপর আশ্রমে ফিরে এলাম। ঠিক হলো যে ফেরা আমরা নামখানা দিয়ে করব। কারন ছিল দুটো। প্রথমতঃ আমরা একটু তাড়াতাড়ি বেরোবার plan করেছিলাম। অত তাড়াতাড়ি ভেসেল পাবো না। একটার আগে ভেসেল পাবার কোনো সম্ভাবনাই নেই, জোয়ারের উপর নির্ভরশীল পুরোপুরি । দ্বিতীয়তঃ নামখানা রাস্তাটাও জানা হয়ে যাবে। এখানে সারাদিন launch চলে। তবে একঘন্টা বা দেড় ঘন্টা পরে পরে। গতকালের ম্যাজিক গাড়ীর ড্রাইভারকে বলে দিয়েছিলাম। সে চলে এসেছিলো ১০টা নাগাত। ৩০ মিনিট মতো লাগে বেনুবন আসতে। বেনুবন যেতে ভাড়া ৩৫ টাকা এক একজনের। পুরো বুক করলে ৪০০ টাকা। টোটোও যায়। ওরাও ৩৫-৪০ টাকা করে নেয়, তবে একটু দরদাম করে নিতে হবে। বেনুবন থেকেই launch ছাড়ে নামখানার জন্য। ১১-৩০ মিনিটে পরের launch । ৩০-৪০ মিনিট বসতে হবে। তবে বসার ব্যবস্হা আছে । launch এ টিকিট কাটতে হবে। ভাড়া ২৫ টাকা। ১৫ মিনিট আগেই গেট খুলে দিলো। একঘন্টার জার্নি । দারুণ উওেজনাময় ও আনন্দদায়ক হলো। একসময়তো launch এতোটাই দুলছিলো যে কিছু মানুষের মুখ শুকিয়ে গেছিলো বলেই মনে হলো। তবে ভয়ের কোনো কারন নেই। স্হানীয় মানুষজন যারা আবার রেগুলার যাতায়াত করে তারাই এটা বলল। আমরা ১২-৩০ মিনিটে নামখানা পৌছালাম। দুপুরের খাওয়াটা ফেরিঘাটের কাছাকাছি একটা হোটেলে সেরেই নামখানা স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ১০ টাকা ভাড়া টোটো গাড়ির । ১-৩৩ মিনিটের মাঝেরহাট লোকালে উঠে বসলাম। ২৫ টাকা ভাড়া Tollygunge পর্যন্ত । ৪-১০ মিনিট নাগাদ Tollygunge স্টেশনে নামলাম। সব মিলিয়ে দারুণ আনন্দায়ক হলো। কারো কিছু জানার থাকলে জানাবেন, আমি যতোটা পারবো আপনাদের সাহায্য করব। (২য় ও শেষ পর্ব) Post By:- Samir Chakraborty
গঙ্গাসাগর বলতেই একটা বিশাল ভিড় গেরুয়া ধারী সাধু সন্তদের কথা সামনে ভেসে ওঠে। তবে বাস্তব হলো মকর স্নানের আগে ও পরে ওই 2 /1 মাসের গ্যাপ টা বাদ দিলে প্রকৃতির কোলে নিজেকে সপে দেওয়ার একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় স্থল। গতবছর আগস্ট এর প্রথম দিকে গেছিলাম, কোনও প্লান ছাড়াই, বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম বকখালি যাবো ভেবে, সকালের টিকেট কাটতে গিয়ে দেখা গেল সিট নেই, কতদূর দাঁড়িয়ে যাবো এই ভেবে সেই বাস ছেড়ে দিলাম। পাশের কাউন্টার এ কাকদ্বীপ গামী সরকারি বাসের রুট তা জানা ছিল, যদিও যায়নি। সোজা টিকিট কাটলাম লট ন ৮ এর। এবার আস্তে আস্তে কলকাতার জ্যাম বেহালার মেট্রো জটের বেহাল দশা কাটিয়ে ধীরে ধীরে জোকা পার করে গেলাম হালকা বৃষ্টিও হয়ে যাওয়াতে বেশ একটি ফুরফুরে হাওয়া লাগছে। পৈলান, আমতলা, রাজারহাট, শিরাকল, সরিষা, ডায়মন্ড, কুলপি রায়দিঘি পার করে লট ন ৮ এর কাছে নামিয়ে দিল। সেখান থেকে মোটর চালিত ভ্যান এ করে সোজা জেটি। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা গঙ্গা না স্থানীয় রা বলল এটা বুড়ি গঙ্গা। যায় হোক টিকিট কেটে ভেসেলে চাপলাম। একটু পটিয়ে মাস্টারের ক্যাবিনেও চলে গেলাম মই বেয়ে উঠে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য না দেখলে বুঝিয়ে বলা যাবে না। র আবহাওয়া যেন স্বাগত জানাচ্ছে। 30 মিনিট পর কচুবেরিয়া পৌঁছলাম, সেখান থেকে 120 টাকা share এ সাগরদ্বীপ অবধি পৌঁছে গেলাম। ড্রাইভার একটা পরামর্শ দিল, থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করাতে, বলল VIp gate এর রাস্তা দিয়ে সোজা গেলে ওঙ্কারনাথ আশ্রম আছে সেখানে গেলে ঘর পাওয়া যায়। না পেলে ভারত সেবাশ্রম এর ডর্মিটোরি আছে। এটা এখন অফ season তাই ঘর নিয়ে খুব একটা হয়রান হতে হবে না এটা নিশ্চিত করল। সেই মতন খুঁজে খুঁজে গেলাম । ওঙ্কারনাথ আশ্রমে এসে অফিসে কথা বললাম, ঘর পেয়েও গেলাম 250 টাকা প্রতিদিন হিসেবে। নিয়ম কানুন ও সময় মেনে ঢোকা বেরোনো সব বলে দিলেন। তবে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই সেটাও স্পষ্ট করে দিলেন। কোথায় গেলে খাবার পাব সেগুলি বলে দিলেন। এরপর রুম এ গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসে সমুদ্র কে দেখতে থাকলাম, সামনে একটা ঝাউবন, অন্য দিকে দিগন্তরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত সাদাবালির beach। আর সমুদ্রের গর্জন। তখন বেশ দুপুর হয়ে গেছিল পেটে খিদেও ছিল, বাসস্ট্যান্ড এ গিয়ে হোটেলে খাবার খেয়ে একটা গোটা ডাব খেয়ে রুমে এসে রেস্ট। বিকেলে বীচে মাছ ধরার ট্রলাররর ভিড়, কত রকমের মাছ এবং জেলেদের ধরে আনা মাছের নিলাম দেখার মতন বিষয়। এসব দেখে সন্ধে বেলা চা মুড়ি খেতে খেতে আশ্রমে এসে সন্ধ্যারতি দেখলাম। খুব সুন্দর লাগল। এরপর একটু বেরিয়ে কপিলমুনি মন্দির ঘুরে রাতের খাবার কিনে ঘরে চলে এলাম। ঘরে বসে খাওয়া দাওয়া সেড়ে সোজা ঘুম সমুদ্রের হাওয়া খেতে খেতে। ভোর রাতে ওঠা অভ্যাস আছে তাই উঠে সোজা বীচে, সেখানে চায়ের দোকান থেকে গরম চা খেতে খেতে ভোর হওয়া দেখা ও মাঝিদের আবার কোন দূর স্রোতে ভেসে যাওয়া দেখতে দেখতে কখন রোড ঝলমলে সকাল হয়ে গেল। জলের রং রুপোলি হয়ে গেল। সকালে মুড়ি ঘুগনি খেয়ে আস্তে করে নেমে পড়লাম জলে। দোকানদার একটা সাবধান বাণী দিয়েছিলেন, কোমর জলের বেশি যেন না নামি। সব সময় কোমর জল টা যেন থাকে। স্নান সেরে যথারীতি খিদে পেয়ে গেল। চায়ের দোকান দার এর সাথে সেইদিন অনেক কথা হল, সেটা যে কখন দুপুরের নিমন্ত্রনে পরিণত হলো জানিনা। নিমন্ত্রণ রক্ষায় চলে গেলাম। সেদিন আকাশ বেশ পরিষ্কার, বিকেলের লাল আভা যুক্ত আকাশ সে ও মনে রাখার মতন। সুদিন ভালো করে পূজো দিলাম কপিল মুনির মন্দিরে কারণ পর দিন সকালে রওনা দেব। সেদিন বেশ মন খারাপ ও লাগছিলো। ফিরতে হবে বাস্তব জীবনে রাতে আশ্রমের পাওনা গন্ডা মিটিয়ে দিলাম, ঘুমালাম, সকালের কোলাহলে ঘুম ভেঙে যায় আপনা আপনি। আবার সেই চায়ের দোকান গরম চা। খেতে খেতে সমুদ্র উপভোগ। করে ঘরে এসে স্নান সেরে রওনা সেই এক ভাবেই। নিরিবিলি বিচ সমুদ্রের ঢেউ সব ই পাওয়া যায় এই সাগরদ্বীপে। আবারও যাবো কোনও একসময়ে। Post By:-Roy Caravan Biley
লিখবো এবার গঙ্গাসাগর নিয়ে হঠাৎ ই ঠিক করাহোল গঙ্গাসাগর যাব, তাই সুযোগ সুবিধা মতো ঠিক করলাম শুক্রবার দুপুরে বেরিয়ে রবিবার ফিরব, সেইমত শুক্রবার বেলা 1:20 pm এর নামখানা লোকাল ধরলাম শিয়ালদা থেকে ,টিকিট কেটে নিয়েছিলাম সোদপুর থেকে ,ভাড়া 30 টাকা, প্রায় 3:45pm এ নামলাম কাকদ্বীপ স্টেশনে, সেখান থেকে টোটো(টুকটুক) নিয়ে 8 no গেট ,টোটো ভাড়া মাথাপিছু 20 টাকা,পৌঁছলাম জেটি ঘাট (15/20মিনিট), কচুবেরিয়ার টিকিট কাটলাম জনপ্রতি 8 টাকা, আধ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হলো কারণ আমরা আসা মাত্রই একটা ভেসেল ছেড়ে যায়, যাইহোক 45 মিনিটের ভেসেল যাত্রা মনে থেকে যাবে কারণ শয়ে শয়ে সাদা ধপধপে পরিযায়ী পাখী আমাদের পিছু নিল খাবারের আশায়, আমরাও খাবার ছুঁড়ে দিতে লাগলাম,45 মিনিট পর ভেসেল থামলো কচুবেরিয়ায়, ওখানে tata ম্যাজিক গাড়ী ঠিক করলাম গঙ্গাসাগর ভারত সেবাশ্রম পর্যন্ত, ভাড়া400 টাকা(8জন ছিলাম),ভারত সেবাশ্রম এ দুটি ঘর বুক করলাম,ডোনেশন চায় ঘর প্রতি 250 টাকা, তো আমরা নীচে দুটো ঘর পেলাম, দরজা খুলতেই বোঁটকা গন্ধে দম আটকে যাবার যোগাড়, বাথরুমে র হাল ও সেরকম, এদিক ওদিক আরশোলার ছুটোছুটি, মহারাজ কে বলে ঘর বদলে দো তলায় 14 এবং15 no ঘর নিলাম, ওটাও প্রায় একই শুধু বাথরুমে টাইলস লাগানো, এই যা। যাইহোক আমি রুম ফ্রেশনার নিয়ে গেছিলাম বলে কিছুটা রেহাই,আর হ্যাঁ, ওখানে চাদর দেয় তবে আমরা ডাবল বেড চাদর নিয়ে গেছিলাম (আপনারা গেলে এইজিনিস গুলো নিয়ে যাবেন) ,তাই অন্তত পরিস্কার চাদরে শুতে পাই।অতঃপর মন্দিরের কাছে গেলাম, হেঁটেই যাওয়া যায়।মন্দির তখন বন্ধ,কিছুক্ষণ বসে আবার চলে আসলাম, তবে মন্দিরের কাছে সাগর কটেজ আছে, সেটা খুব সুবিধা জনক ,রেট 500/600,। আশ্রমে ফিরে এসে আশ্রমে ঢুকতে বাঁ দিকের হোটেল টায় ডিনার করলাম, রান্না খুব ভালো না, সন্ধ্যে বেলায় ভারত সেবাশ্রমে আরতি হয়।সেদিন রাত টা কাটিয়ে পরদিন সকালে কপিল মুনির মন্দিরে গেলাম,ওখানেই যারা টিফিন করার করে নিলাম,8 am থেকে ভারত সেবাশ্রম এ দুপুরের ভোগের কূপন কাটতে হয়(rs 30/head, বাচ্চা দেড় লাগেনা) তাই আবার আশ্রমে ফিরে কূপন কেটে স্নানের জামাকাপড় নিয়ে চলে গেলাম মন্দিরের কাছে, সেখানে ইতি উতি ঘুরে 11 am নাগাদ সাগরে পুণ্য স্নান করে মন্দিরে গেলাম পূজো দিতে, পূজো ভালো ভাবেই দেওয়া গেল( বীচে মহিলাদের কাপড় ছাড়ার জায়গা আছে(rs10/head,চেয়ার ভাড়া 20 টাকা) ।মন্দিরের আগে অনেক সাধুদের কুঠিয়া আছে, নিজেদের খরচে বানাতে হয়।তো এরকমই এক সাধুর সাথে আলাপ করলাম(মন্দিরে ঢুকতে ডানদিকের row এর প্রথম সাধু, শিবের উপাসক) ।আমার বরাবরই সাধুদের প্রতি একটু টান আছে।তো জিগ্যেস করাতে বললেন উনি বাঙ্গালী, পূর্ব জীবনের কথা বলতে চাইলেন না, তবু কথা প্রসঙ্গে বললেন ওনার বাড়ী ছিল ফরিদপুর(আর আমাদের ঢাকা) ,বাড়ীর এক ছেলে,18 বছর বয়সে ঘর ছেড়েছে, আর এখন বয়স 104/105 বছর, (26 বছর অমরনাথে সাধনা করেছেন, )তবে দেখে বোঝার উপায়নেই, এনাদের ponds age মিরাকল লাগেনা, বা horlicks/bournvita ও খায় না।জীবনের অনেক প্রশ্নের সমাধান বলে দিলেন, কিছু ফল দিলে উনি সাথে সাথে পূজো দিয়ে আমাদের প্রসাদ দিলেন।এদিকে আশ্রমে ভোগের সময় হয়ে যাওয়ায় বিকালে আসব বলে বিদায় নিলাম।আশ্রমে12:30 pm থেকে ভোগ দেয়, ভোগ খেয়ে দু ঘন্টা বিশ্রাম করে 4 pm এ গেলাম সাইড সিন দেখতে গাড়ী ভাড়া করে,তেমন কিছু দেখার নেই,(লাইট হাউস, মিশন, দিদি এক কোটি টাকা দিয়ে বাংলো বানিয়েছে সেটা) এরপর মন্দিরের কাছে নেমে গেলাম,ওখানে সন্ধা আরতি দেখে সবাই যখন এদিক ওদিক ঘুরছে তখন আমি আবার সাধু বাবার কাছে, কাল চলে যাবো বলতে বললেন যাওয়ার আগে সকালে যেন দেখা করি, তো রাতে আবার আশ্রমের কাছে ফিরেএলাম, আজ আর আগের হোটেলে না খেয়ে হোটেল ক্ষণিকা তে খেলাম, রান্না বান্না ভালোই।পরদিন ফেরার পালা, রাতে ঘুম ভালোই হলো, যদিও আমি সব জায়গাতে থাকতে পারি তবু রুম ফ্রেশনার টা কাজে লেগেছিলো।পরদিন সকালে মন্দিরের পিছনে হেলিপ্যাড টা দেখতে গেলাম, দেখেএসে টিফিন করে নিলাম, আমি কিছু ফল কিনে আবার চলে গেলাম সাধু বাবার কাছে,আর একের পর এক প্রশ্ন করে চলেছি, ওনার কোন বিরক্তি নেই। উনি বললেন মাঝে মাঝে আসতে,আর গেলে যেন পূর্ণিমার আগের দিন গিয়ে পূর্ণিমার দিন স্নান করে পূজো দিই,যাইহোক ওনার আশীর্বাদ নিয়ে বিদায় নিলাম।আশ্রমে কূপন কেটে রেখেছিলাম।যথাসময়ে প্রসাদ খেয়ে ওনাদের চাদর, কম্বল বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলাম।গাড়ী আগেই বলে রেখেছিলাম(tata ম্যাজিক) বেনুবন যাব(ফেরি ঘাট নামখানা যাবার জন্য) কচুবেরিয়া গেলাম না কারণ ভাটা তে ভেসেল বন্ধ থাকে, বেনুবন থেকে ভুটভুটি তে উঠলাম ,ভাড়া25 টাকা, পুরো এক ঘন্টার জার্নি।নামখানা তে নেমে টোটো করে নামখানা স্টেশন rs10/head। 4:33 pm এ ট্রেন।যদিও বলে সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার ,তবু আমার আবার যাবার ইচ্ছে রইলো ।। Post By:- Soumen Das
॥ গঙ্গাসাগর ॥ ( Gangasagar )- - পূর্ণেন্দু ফাদিকার আমাদের গ্রামের বাড়ীটা ভারী অদ্ভুদ সুন্দর জায়গায়। তিন জেলার সঙ্গমস্থলে। একদিকে বয়ে চলেছে রূপনারায়ণ নদ তার সাথে এসে মিশেছে দামোদরের শাখা নদী মুন্ডেশ্বরী। এই নদীগুলিই তিন জেলার সীমানা তৈরি করেছে। রূপনারায়ণের এক পাড়ে মেদিনীপুর (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর)। এখানেই কৈজুড়ী গ্রামে আমার বাপ ঠাকুরদার আদি বাড়ী। মুন্ডেশ্বরী যেখানে রূপনারায়ণের সাথে মিশেছে তার উত্তর দিকটা হুগলি জেলার মাড়োখানা ও দক্ষিণ দিকটা হাওড়া জেলার উত্তর ভাটোরা গ্রাম। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায় হলেও মাঝে মাঝেই গ্রামের বাড়ী বেড়াতে যাই। অনেক ছোট বেলায় – কোনও এক শীত কালের ঘটনা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। তখন গঙ্গসাগর মেলা উপলক্ষে হুগলী জেলার তীরে মাড়োখানা থেকে বড় বড় কাঠের পাল তোলা নৌকা সারা মাসের সব রসদ নিয়ে পাড়ি জমাতো গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির মন্দিরে তীর্থ করতে। তখন দেখছিলাম যারা যাচ্ছে তাদের বাড়ির লোকজন অঝোরে কাঁদছে। আমার ছয় বছরের মনটা তখনও সবটা বুঝতে পারতো না। কেন সবাই কাঁদছ? কোথাও বেড়াতে গেলে তো খুব মজার ব্যাপার, তাও এরা কাঁদছে কেন? মাকে জিজ্ঞাসা করতে জানতে পারলাম যে গঙ্গাসাগরের পথ খুবই দুর্গম এবং বিপদসঙ্কুল। অনেক নৌকাই নাকি যাবার পথে বা ফেরার পথে ডুবে যায়। তাই ওরা সব পুণ্য অর্জন করে বাড়ী ফিরবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ছোট্ট মনটা তখনই ছ্যঁক করে উঠেছিল! আরে ঐ নৌকায় তো আমার বড় পিসিই পাড়ী দিচ্ছে। মাকে বলেছিলাম – ‘মা বড় পিসি ফিরবে তো?’ মা বলেছিলো ভগবানকে ডাক। তখনই জেনেছিলাম – ‘সব তীর্থ বারবার .... গঙ্গাসাগর একবার।’ না, কোনও রকম দুর্ঘটনা ঘটে নি। পিসি ভালো ভাবেই ফিরে এসেছিল। পরে পিসি কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম– কেমন বেড়িয়ে এলে? (তখনও আমি তীর্থযাত্রা মানে বেড়ানোই বুঝতাম!) পিসি সস্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল – বড় হয়ে তুইও যাবি। মাঝে ৩৫ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনও আমার গঙ্গাসাগর যাওয়া হয়ে ওঠেনি! এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়তো আগের মত দুর্গম নেই। তাই আপনার মন চাইলে গঙ্গাসাগর বার বার পাড়ি দিতেই পারেন। তবে সদ্য গঙ্গাসাগর ফিরে এসে আমার উপলব্ধি – আগের মত হয় তো এত বিপদ নেই। কিন্তু যাওয়াটা খুব সহজও নয়! অনেকগুলো যানবাহন পাল্টে পাল্টে আপনাকে ওখানে যেতে হবে। তার উপর আছে বেশ কিছু ঝক্কি! কারণ জোয়ার বা ভাটার উপর আপনাকে ভেসেল পারাপার নির্ভর করতে হবে। ছেলের গরমের ছুটি চলছে কিন্তু এদিকে আমারও বেশ কাজের চাপ। বেড়াতে যে যাবো, সে সময় নেই। গিন্নি আর ছেলে রোজই ঘ্যানর ঘ্যানর করেই চলেছে। ফেসবুকে কয়েকটা ট্রাভেল গ্রুপের মেম্বার হয়েও আমারও মনটা যেন কেমন কেমন করছে – সব সময়ই মনে হয় বেড়িয়ে পড়ি বেড়াতে। তাই সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠিক হল এক রাত্রি ও দুদিনের জন্য কোথাও ঘুরে আসি। প্রথমেই মাথায় এলো – দীঘা। কিন্তু কয়েকটা গ্রুপ মেম্বারদের পোস্ট দেখে সে আশা ছেড়ে দিলাম। ওখানে এখন প্রচুর ভীড় আর তাই লাগাম ছাড়া হোটেল ভাড়া। শুনলাম ওন্ড দীঘা থেকে নিউ দীঘাতে নাকি কলকাতার থেকেও বেশী ট্র্যাফিক জ্যাম হচ্ছে। এই সব ভেবে শেষ পর্যন্ত ঠিক হল ফাঁকায় ফাঁকায় ঘুরে আসি – গঙ্গাসাগর। মনে পড়ে গেল বড় পিসির কথা। ভাবলাম একটা নতুন জায়গা ঘোরাও হবে এবং সাথে সাথে কপিল মুনির আর্শিবাদ পাওয়া যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ 11-06-2018 তারিখে বেড়িয়ে পড়লাম গঙ্গাসাগরের উদ্দশ্যে। প্রথমে শিয়ালদহ থেকে লোকাল ট্রেনে প্রায় 3 ঘন্টা জার্নি করে কাকদ্বীপ স্টেশন। ট্রেন ভাড়া – 25 টাকা। ওখান থেকে 20 মিনিট টোটো চেপে লট নং আট এর ভেসেল ফেরী ঘাট। ভাড়া 20 টাকা। (আসল ভাড়া 10 টাকা, যেটা লোকাল লোকেদের জন্য! যেই বুঝবে আপনি পুণ্যার্থী বা গঙ্গাসাগর যাত্রী তাহলেই ভাড়া 20। আপনি দরদাম করে উঠতে পারেন)। পোঁছে তাড়াতাড়ি টিকিট কেটে উঠতে যাবো, জেটির গেট বন্ধ হয়ে গেলো। পরের ভেসেল এক ঘন্টা পর। লট নং আট থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত ভেসেলের ভাড়া ছিল 8টাকা। আজই (11-06-2018) ভাড়া বেড়ে হয়েছে 9 টাকা। গিন্নি ও ছেলেকে জেটির লাইনে দাঁড় করিয়ে আমি একটু এদিক ওদিকে ঘুরে এলাম এবং তথ্য সংগ্রহ করে এলাম। এটা নতুন জেটি। আগেরটা চড়া পড়ার জন্য আর ব্যবহার করা হয় না। দূরে একটা 1 নং জেটি আছে গাড়ী পারাপার করার জন্য। কেউ যদি কলকাতা থেকে নিজস্ব গাড়ী করে আসেন, তাহলে সেই গাড়ী করেই 1 নং জেটি দিয়েই গাড়ী পার করে সরাসরি গঙ্গাসাগর যেতে পারেন। আগে এলে আগে এই হিসেবে গাড়ি পার হয়। কেউ বাইক নিয়েও সাধারণ যাত্রী বাহী ভেসেলই বাইক পারাপার করতে পারেন। বাইকের জন্য মোট 8টি (আটটি) টিকিট কাটতে হবে। একটু ছবি তুলে ফিরে লাইনে জেটির লাইনে। প্রচুর লোকের লাইন। ভারতের দূর দুরান্ত থেকে অনেকেই এসেছে! উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাব এই সব লোকজনদের সাথে আমার আলাপ হলো। কিন্তু বাঙালী খুবই কম চোখে পড়লো। প্রায় নেই! যারা আছে লোকাল বাঙালী লোক! সময় হতেই জেটির গেট খুললো। ছোট্ট একটা দৌড় প্রতিযোগিতা হলো ভেসেলের বসার যায়গা পাওয়ার জন্য। সৌভাগ্যক্রমে আমরা তিনজনেই বসার জায়গা পেলাম। প্রায় 45 মিনিট ভেসেলে চেপে মুড়ি গঙ্গা পার পৌঁছে গেলাম সাগর দ্বীপের উত্তর প্রান্ত কুচবেড়িয়া ফেরীঘাট। ওখান একটু হেঁটে এগিয়ে গেলে পড়বে গঙ্গাসাগর যাবার বাসস্ট্যান্ড। ঘাট থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে যাবার পথে দুইধারে সারি সারি প্রাইভেট গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে দেখলাম। গাড়ীগুলি এখান (কচুবেড়িয়া) থেকে 30 কিমি দূরে গঙ্গাসাগরে নিয়ে গিয়ে কপিল মুনির মন্দির দর্শন করিয়ে আবার এখানেই ফিরিয়ে আনবে। বেশীরভাগ লোকই তাই করে। ভাড়া মোটামুটি 800 থেকে 1400 টাকা। গাড়ীর প্রকারভেদ অনুযায়ী। আমরা গঙ্গাসাগরে এক রাত্রি থাকবো তাই এইসব গাড়ী ভাড়া না করে বাসে যাবো বলে ঠিক করেছি। ভাড়া 20টাকা। সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা। স্ট্যান্ডে পোঁছে বাসে উঠতে যাবো, ঠিক সেই সময় এক ম্যাজিক ভ্যান এর ড্রাইভার বললো দাদা তিনজনে 300 টাকা দিন, আপনাকে কপিল মুনির মন্দিরে পৌঁছে দেবো। আমি বললাম – ‘না ভাই, আমি বাসে যাবো।’ ম্যাজিক ভ্যান এর ড্রাইভার – ‘দাদা 50 টাকা করে দিন।’ এইবারেও আমি তেমন একটা রাজি না হলেও ছেলে ও গিন্নি একবারে দৌড়ে দিয়ে ম্যাজিক ভ্যানে বসেই পড়লো। আমাদের তিন জনকে বসিয়ে এক্ষুনি আসছি বলে ড্রাইভার চলে গেলো। প্রায় মিনিট দশেক পর 6 জনের একটা পরিবারকে নিয়ে হাজির। সেই পাঞ্জাবী পরিবার যাদের সাথে জেটিতে আলাপ হয়েছিল। জানি না ড্রাইভার ওদের সাথে কত টাকার রফা করেছে। সাবাই মিলে চললাম গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির মন্দিরের কাছএ। উঠলাম মন্দিরের কাছেই সাগর কটেজে। এটা পঞ্চায়েত পরিচালিত একটা বিশ্রামাগার। অবস্থানটি খুবই মনোরম। কপিল মুনির মন্দির ও সাগর সী বিচের ঠিক মাঝে। থাকা একদম সাধারণ মানের – দুই ধরনের ঘর আছে – সাধারণ (Rs.400/-) এবং VIP (Rs600./-). নামেই VIP শুধু ঘরগুলি নতুন, 2015 সালে তৈরি। আমরা VIP রুমে উঠলাম। সবকটা ঘরই বাথরুম সংলগ্ন। সহযাত্রী পাঞ্জাবী ফ্যামেলিটিও এখানে দুটো ঘর বুকিং করলো। VIP ঘরগুলি সমুদ্রমুখী হবার জন্য প্রচুর হাওয়া। বারান্দাতে বসে থাকতেই ভালো লাগবে। তবে একটা অসুবিধা – খাটটি বড্ডই ছোট্ট। যাই হোক থাকবো তো এক রাত্রি তাই কোনও অসুবিধা হবে না এই ভেবেই থেকে গেলাম। তাড়াতাড়ি সমুদ্র স্নান করে গেলাম খেতে – কপিল মুনির মন্দিরের পাশেই সরকারী ফুড কোর্টে। দাম অনুযায়ী খবার মান বেশ ভালো। মিল সিস্টমে – ভাত, ডাল, আলু ভাজা, দুই ধরনের তরকারী, পাঁপড় ভাজা এবং চাটনি। এর আগে আমি বিভিন্ন পোস্টে দেখেছি দাম 40 টাকা বা 70 টাকা। কিন্তু আমাদের থেকে ভেজ থালি দাম নিল 50 টাকা ছেলের জন্য চিকেন থালির দাম 100 টাকা। AC রেস্তারায় জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করে বেশ কিছুক্ষণ বসে গল্পগুজব করলাম। বাইরে বেশ গুমট এবং ভ্যাবসা গরম। একটু পরে হোটেলে ফিরে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। সন্ধ্যার দিকে গেলাম সী বিচে। কিছুটা পা ভিজিয়ে চা সঙ্গে টা খেয়ে বীচ থেকে ভ্যানে চেপে একদম মন্দিরের সামনে। মাথা পিছু 10 টাকা ভাড়া। বীচ থেকে কপিল মুনির মন্দিরের দূরত্ব ভ্যান চালেকর তথ্য অনুসারে 1কিমি। গুগলের তথ্য অনুসারে 650 মিটার। আর আমার মতে দুটোর মাঝামাঝি। সন্ধ্যা 7টে 15 মিনিটে শুরু হল সন্ধ্যা আরতি। দারুণ ভালো লাগলো। মাঝে মাঝে বাজছিল অদ্ভুদ শঙ্খ ধ্বনি। শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়ল আর মনটা যেন কেমন হয়ে যায়। প্রায় 30 মিনিট ধরে চললো আরতি। পোস্টের সাথে আরতির ছোট্ট ভিডিও ক্লিপিং দিলাম। অবশ্যই দেখবেন। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি এই কপিল মুনির মন্দিরে ছবি তোলাতে এখনও পর্যন্ত কোনও নিষেধ নেই। এই মন্দিরের পুজারীরা কেউই বাঙালি পুরোহিত নয়! উত্তর ভারতের অযোধ্যার শ্রীরামানন্দী আখড়ার পন্ডিতজী মোহন্ত শ্রী জগন দাস জীব এবং অন্যান সব শিষ্যের দল। পূজোর প্রসাদ হিসেবে পাবেন নকুল দানা। পূজা সামগ্রী বিক্রি করার জন্য সামনেই অনেক গুলি স্টল সরকার থেকেই নতুন করে দেওয়া হয়েছে। আপনি চাইলে পূজো দিন না চাইলে শুধু প্রাণভরে দর্শন করুন। এখানে প্রণামীর জন্য কোনও জোরজুলুম নেই। ঐ দিন রাত্রে মন্দিরের সামনে বসে অন্যান অনেক যাত্রীদের সাথে কথা বলে কেটে গেলে কিছুটা সময়। এখানেও একদম বাঙালী চোখে পড়ল না। তারপর ফুড কোর্টে রাত্রের খাবার খেয়ে সাগর কটেজে। কটেজে একটা জিনিস ভালো প্রত্যেক ঘরে গুড নাইট মশা তাড়ানোর মিশিন এবং তেল দেওয়া আছে। বারান্দতে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলাম পাঞ্জাবী ফ্যামিলীর সাথে। ভদ্রলোর গুড়গাঁও তে হোন্ডা কোম্পনি তে চাকরি করেন। দুই ছেলে, বউ এবং মা ও শ্বাশুড়ীকে নিয়ে গঙ্গাসাগরে তীর্থ করতে এসেছেন। কিছুক্ষণ গল্প করার পর গেলাম ঘুমতে। ঘুম খুব একটা হল না। ছোট্ট খাটে তিনজনে গুতোগুতি করে কোনও রকমে কাটিয়ে দিলাম রাত্রিটা। পরদিন ফেরার কথা। ইচ্ছে ছিল দুপুরের লাঞ্চ করে তারপর কলকাতার দিকে ফেরার যাত্রা করবো – বেনুবন দিয়ে। প্রথমে টোটো বা অন্য গাড়ী করে বেনুবন লঞ্চ ঘাট (13 কিমি, টোটোতে ভাড়া মাথা পিছু 40টাকা। টোটোতে যেতে সময় লাগে প্রায় 35-40 মিনিট)। ওখান থেকে লঞ্চে এক ঘন্টা যাত্রা করে নামখানা এবং সেখান থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ। কিন্তু গতকাল রাত্রে বেশ ঝড় বৃষ্টি হয়েছিল এবং সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। বেনুবন থেকে যে লঞ্চগুলি (ভাড়া মাথা পিছু 25টাকা) চলে সেগুলি কাঠের লঞ্চ এবং ভেসেলের তুলনায় অনেক ছোট। একটু হাওয়া দিলেই লঞ্চ বেশ দোল খায় ফলে যাত্রাটা মোটেই সুখকর নয়। একদলের সাথে গতকাল আলোচনা হয়েছিল যারা নামখানা থেকে বেনুবন হয়ে এসেছে। তারাও তাদের আতঙ্কের কথা জানিয়েছিল। সেদিক থেকে কচুবেড়িয়া থেকে ভেসেল দিয়ে যাতায়াত অনেক সুবিধাজনক। সব কিছু ভেবে বেনুবন দিয়ে ফেরা বাতিল করলাম। কিন্তু ভেসেল জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে কচুবেড়িয়া থেকে লট নং আট যাতায়াত করে। আজ দুপুরে ভেসেল বন্ধ থাকবে। যাত্রা শুরু হবে বিকেল পাঁচটা পনেরো নাগাদ। তখন রওহনা হয়ে কলকাতা ফিরতে অনেক রাত্রি হয়ে যাবে, তাই ঠিক করলাম তাড়াতাড়ি ফেরার যাত্রা শুরু করবো। সকালে উঠে আর একপ্রস্ত সমুদ্র স্নান করে চললাম আবার মন্দির দর্শন করতে এবং পূজো দিতে। পূজো দিয়ে সামনের একটা হোটেল থেকে পেটাই পরোটা ও ঘুঘনি দিয়ে জলখাবার খেয়ে একটা ম্যাজিক ভ্যানে করেই কচুবেড়িয়া এগিয়ে চললাম। ফেরার সময় ড্রাইভার কিন্তু মাথা পিছু 100 টাকা নিলো। সাথে বলে নিলো রাস্তায় লোক পেলে সে কিন্তু তুলবে। না হলে পুরো রিজার্ভ করতে হবে। এখানে ম্যাজিক ভ্যান গুলি বাসের সাথে সাথেই চলে। গঙ্গাসাগর থেকে কচুবেড়িয়া লোকালদের ভাড়া 30 টাকা। মোট যাত্রী নেবে ড্রাইভার বাদে আরো 14 জন! আপনি রিজার্ভ করে পুরোটা যেতে পারেন। তখন মাঝে লোক তুলবে না। ভাড়া নেবে মোটামুটি 400 থেকে 450 টাকা। আমি ড্রাইভার কে বললাম। যে মাঝের সিটে আমরা তিনজনে বসবো, সেখানে যেন কেউ না ওঠে। সেটা ছেড়ে যে কোনও জায়গায় তুমি লোক তোলো আমার আপত্তি নেই। ড্রাইভার খুব খুশী। সাড়ে নয়টা গঙ্গাসাগর থেকে যাত্রা শুরু করে 10টা 15 নাগাদ কচুবেড়িয়া পৌঁছে গেলাম। তাড়াতাড়ি ভেসেলের টিকিট কেটে চড়ে বসলাম। ভেসেল ছাড়তে তখনও 10 মিনিট দেরী। এই ভেলেসের পর আজ সকালে আর একটাই ভেসেল আছে। যেতে যেতে দেখলাম একটা ভেসেলে করে অনেকগুলো গাড়ী পাড় হচ্ছে। নদীর উপর বিশাল বিশাল পোস্ট তৈরী করে মূল ভূখন্ড থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত বিদ্যুতের তার গেছে। এই সব দেখতে দেখতে সময় মত পৌঁছে গেলাম লট নাম্বার আট। আজ আমাদের ফেরার খুব একটা তাড়া নেই। সবে এগারোটা পনেরো। এখনই লাঞ্চ খাবার ইচ্ছে খুব একটা নেই। একটা দোকানে টুকটাক কিছু খেয়ে নিলাম। এরপর একটা টোটো ধরে কাকদ্বীপ বাজার বাসস্ট্যান্ড গেলাম। ফেরার সময় লোকাল ট্রেনে না ফিরে কাকদ্বীপ থেকে বাসে ধর্মতলা ফিরলাম। ভাড়া 60 টাকা। সময় লাগলো প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা। মাঝে বাসে বসেই দেখলাম ডায়মন্ডহারবারের গঙ্গার তীর, পৈলানের কাছে স্বামী নারায়ণ মন্দির। উপরি পাওনা আমতলার কাছে বিশাল ট্রাফিক জ্যাম! ধর্মতলা পৌঁছে যাবার পর ছেলে ও গিন্নি দুজনেই বললো একবার নিউ মার্কেট আশেপাশে ঘুরে এলে হয় না! তখন বেশ জোরে বৃষ্টি পড়ছে। অন্য একদিন আসবো বলে ওদের আটকালাম। তারপর গাড়ী ধরে সোজা বাড়ী। আমার এই ভ্রমণ হঠাৎ করে করা তাই বেশী কিছু সন্ধান করে উঠতে পারি নি। মন্দিরের ইতিহাস, পৌরাণিক গল্প এবং ওখানকার ভৌগোলিক অবস্থান জানার জন্য উৎসাহীরা Google করতে পারেন। আমি সেই সব লিখে পোস্টটিকে বড় করতে চাইলাম না। শুধুমাত্র যাবার জন্য কিছু বেসিক ধারনা এবং তথ্য দিলাম। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। শেষে কয়েকটি কথা – 1. যারা আরাম এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভ্রমণ করেন তাদের জন্য গঙ্গাসাগর উপযুক্ত জায়গা নয়। এখানে বিলাসবহুল কোনও হোটেল নেই। বেশীর ভাগই আশ্রম বা মঠ পরিচালিত থাকার জায়গা আছে। 2. আমি নিজে খোঁজ করে AC রুমসহ কোনও হোটেলই পাইনি। সরকারী সাগর কটেজ ছাড়াও ইয়ূথ হোস্টেল আছে থাকার জন্য। এছাড়া আছে কিছু বেসরকারী সাধারণ মানের হোটেল। হোটেল ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার আশ্রম আছে। কপিল মুনির মন্দির লাগোয়া মন্দিরের নিজস্ব আশ্রমে থাকার সুব্যবস্থা আছে। কলকাতায় ফিরে জানলাম ইয়ূথ হোস্টলের তিনটি কটেজ আছে যেগুলিতে AC আছে, কিন্তু অন্য ঘরগুলি online booking হলেও ওদের website-এ লিস্টে দেখতে পাইনি। আগ্রহীরা State Youth Centre,Moulali তে যোগাযোগ করতে পারেন। বর্তমানে কটেজগুলির ভাড়া 1950/- প্রতিদিন। 3. আশে পাশে যাবার জন্য টোটো বা ভ্যান পাবেন। ওঠার আগে দরদাম করে নেবেন। এখানে এগুলির একটু ভাড়া বেশী। 4. খাবার জন্য সরকারী ফুড কোর্টটি বেশ ভালো। দাম জেনে খাবার ওর্ডার করবেন। এখানে AC এবং Non AC দুইট জায়গা আছে। মনে হয় দামের তফাৎ আছে। আমি AC তে খেয়েছিলাম, সেই দামের কথা উপরে উল্লেখ করেছি। 5. গঙ্গাসাগরে গেলে সাথে অবশ্যই রাখবেন নিজস্ব বিছানার চাদর এবং বালিশের ওয়্যার (আমাদের খুব কাজে লেগেছিল!) এবং মশা তাড়ানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা। 6. আপনার যদি একটু কষ্ট সহ্য করে নেবের মানসিকতা থাবে অথবা তীর্থস্থানে ভ্রমণ করতে ভালো লাগে তাহলে একদিন বা দুইদিনের জন্য গঙ্গাসাগর আদর্শ জায়গা। 7. এখানে Arirtel 4G এবং Vodafone 4G চললেও কাকদ্বীপের পর জিয়ো মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না। তবে অনেক সময়ই Arirtel বা Vodafone এর ডেটা সার্ভিস কাজ করে না। শুধু মোবাইল ভয়েস কাজ করে। 8. ভেসেলের টাইম জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে। ফেরী সার্ভিসের ঘাটে ওই দিনের এবং একদিন আগের টাইম এর নোটিশ টাঙানো থাকে। স্থানীয় এক ছাত্র ভেসেল এর টাইম জানার জন্য একটা সুন্দর অ্যাপ বানিয়েছে – যা Google Play Store –এ পেয়ে যাবেন। আমি ব্যবহার করেছি। খুবই কাজের জিনিস। একটা কথা মনে রাখবেন এই অ্যাপটি Internet ছাড়া কাজ করে না। চাই যখন টাইম দেখবেন তখনই রেফারেন্স এর জন্য স্ক্রিন শট নিয়ে রাখবেন। 9. যত্রতত্র নোংরা করবেন না। সাগরে বা গঙ্গায় পলিথিন প্যাকেট ফেলবেন না। 10. আপনার গঙ্গসাগর যাত্রা শুভ হোক। Post By:- Purnendu Fadikar
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |