গঙ্গাসাগর বলতেই একটা বিশাল ভিড় গেরুয়া ধারী সাধু সন্তদের কথা সামনে ভেসে ওঠে। তবে বাস্তব হলো মকর স্নানের আগে ও পরে ওই 2 /1 মাসের গ্যাপ টা বাদ দিলে প্রকৃতির কোলে নিজেকে সপে দেওয়ার একটা নিশ্চিন্ত আশ্রয় স্থল। গতবছর আগস্ট এর প্রথম দিকে গেছিলাম, কোনও প্লান ছাড়াই, বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছিলাম বকখালি যাবো ভেবে, সকালের টিকেট কাটতে গিয়ে দেখা গেল সিট নেই, কতদূর দাঁড়িয়ে যাবো এই ভেবে সেই বাস ছেড়ে দিলাম। পাশের কাউন্টার এ কাকদ্বীপ গামী সরকারি বাসের রুট তা জানা ছিল, যদিও যায়নি। সোজা টিকিট কাটলাম লট ন ৮ এর। এবার আস্তে আস্তে কলকাতার জ্যাম বেহালার মেট্রো জটের বেহাল দশা কাটিয়ে ধীরে ধীরে জোকা পার করে গেলাম হালকা বৃষ্টিও হয়ে যাওয়াতে বেশ একটি ফুরফুরে হাওয়া লাগছে। পৈলান, আমতলা, রাজারহাট, শিরাকল, সরিষা, ডায়মন্ড, কুলপি রায়দিঘি পার করে লট ন ৮ এর কাছে নামিয়ে দিল। সেখান থেকে মোটর চালিত ভ্যান এ করে সোজা জেটি। প্রথমে ভেবেছিলাম এটা গঙ্গা না স্থানীয় রা বলল এটা বুড়ি গঙ্গা। যায় হোক টিকিট কেটে ভেসেলে চাপলাম। একটু পটিয়ে মাস্টারের ক্যাবিনেও চলে গেলাম মই বেয়ে উঠে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য না দেখলে বুঝিয়ে বলা যাবে না। র আবহাওয়া যেন স্বাগত জানাচ্ছে। 30 মিনিট পর কচুবেরিয়া পৌঁছলাম, সেখান থেকে 120 টাকা share এ সাগরদ্বীপ অবধি পৌঁছে গেলাম। ড্রাইভার একটা পরামর্শ দিল, থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করাতে, বলল VIp gate এর রাস্তা দিয়ে সোজা গেলে ওঙ্কারনাথ আশ্রম আছে সেখানে গেলে ঘর পাওয়া যায়। না পেলে ভারত সেবাশ্রম এর ডর্মিটোরি আছে। এটা এখন অফ season তাই ঘর নিয়ে খুব একটা হয়রান হতে হবে না এটা নিশ্চিত করল। সেই মতন খুঁজে খুঁজে গেলাম । ওঙ্কারনাথ আশ্রমে এসে অফিসে কথা বললাম, ঘর পেয়েও গেলাম 250 টাকা প্রতিদিন হিসেবে। নিয়ম কানুন ও সময় মেনে ঢোকা বেরোনো সব বলে দিলেন। তবে খাওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই সেটাও স্পষ্ট করে দিলেন। কোথায় গেলে খাবার পাব সেগুলি বলে দিলেন। এরপর রুম এ গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় বসে সমুদ্র কে দেখতে থাকলাম, সামনে একটা ঝাউবন, অন্য দিকে দিগন্তরেখা পর্যন্ত বিস্তৃত সাদাবালির beach। আর সমুদ্রের গর্জন। তখন বেশ দুপুর হয়ে গেছিল পেটে খিদেও ছিল, বাসস্ট্যান্ড এ গিয়ে হোটেলে খাবার খেয়ে একটা গোটা ডাব খেয়ে রুমে এসে রেস্ট। বিকেলে বীচে মাছ ধরার ট্রলাররর ভিড়, কত রকমের মাছ এবং জেলেদের ধরে আনা মাছের নিলাম দেখার মতন বিষয়। এসব দেখে সন্ধে বেলা চা মুড়ি খেতে খেতে আশ্রমে এসে সন্ধ্যারতি দেখলাম। খুব সুন্দর লাগল। এরপর একটু বেরিয়ে কপিলমুনি মন্দির ঘুরে রাতের খাবার কিনে ঘরে চলে এলাম। ঘরে বসে খাওয়া দাওয়া সেড়ে সোজা ঘুম সমুদ্রের হাওয়া খেতে খেতে। ভোর রাতে ওঠা অভ্যাস আছে তাই উঠে সোজা বীচে, সেখানে চায়ের দোকান থেকে গরম চা খেতে খেতে ভোর হওয়া দেখা ও মাঝিদের আবার কোন দূর স্রোতে ভেসে যাওয়া দেখতে দেখতে কখন রোড ঝলমলে সকাল হয়ে গেল। জলের রং রুপোলি হয়ে গেল। সকালে মুড়ি ঘুগনি খেয়ে আস্তে করে নেমে পড়লাম জলে। দোকানদার একটা সাবধান বাণী দিয়েছিলেন, কোমর জলের বেশি যেন না নামি। সব সময় কোমর জল টা যেন থাকে। স্নান সেরে যথারীতি খিদে পেয়ে গেল। চায়ের দোকান দার এর সাথে সেইদিন অনেক কথা হল, সেটা যে কখন দুপুরের নিমন্ত্রনে পরিণত হলো জানিনা। নিমন্ত্রণ রক্ষায় চলে গেলাম। সেদিন আকাশ বেশ পরিষ্কার, বিকেলের লাল আভা যুক্ত আকাশ সে ও মনে রাখার মতন। সুদিন ভালো করে পূজো দিলাম কপিল মুনির মন্দিরে কারণ পর দিন সকালে রওনা দেব। সেদিন বেশ মন খারাপ ও লাগছিলো। ফিরতে হবে বাস্তব জীবনে রাতে আশ্রমের পাওনা গন্ডা মিটিয়ে দিলাম, ঘুমালাম, সকালের কোলাহলে ঘুম ভেঙে যায় আপনা আপনি। আবার সেই চায়ের দোকান গরম চা। খেতে খেতে সমুদ্র উপভোগ। করে ঘরে এসে স্নান সেরে রওনা সেই এক ভাবেই। নিরিবিলি বিচ সমুদ্রের ঢেউ সব ই পাওয়া যায় এই সাগরদ্বীপে। আবারও যাবো কোনও একসময়ে। Post By:-Roy Caravan Biley
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |