পাহাড়ী ঝর্ণা,পাহাড়ী রাস্তা আমায় ডাকে বারেবার।এক অমোঘ আকর্ষণে ছুটে যাই হারিদ্বারে,সাথে থাকে মা।হারিদ্বারের নাম শুনলেই মার চোখে-মুখে এক উজ্জ্বল দীপ্তি খেলে যায়।"যাবে নাকি এবার আবার হরিদ্বারে?-প্রশ্নটা শুনেই মা বলে ওঠে-"তোর ইচ্ছা।আমার তো ভয় ভয় করে যেতে।তবে শুধু ওখানেই থাকবো।" আমার মন তো চলে যায় দূরে--আরো দূরে। মা,যাবে বদ্রিতে?আমি তো আছি,কোনো অসুবিধা হবে না। - দেখ,ওখানে আমায় নিয়ে কোনো অসুবিধায় পরে যাবি না তো? - অসুবিধা!!আমার!কি যে বলো!! ওগো মা,তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে তৈরি হয়ে গেল যাওয়ার প্রস্তুতি।গাড়ি ভাড়া করে চললাম বদ্রিনারায়ণের পথে।আগের বছরও গিয়েছিলাম কিন্তু মার দর্শন হয়নি ভগবানকে।তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডুলি পাইনি।পায়ের ব্যাথার জন্য উঁচুনিচু পথ ভাঙতে অসুবিধা হচ্ছিল।যাইহোক,প্রথমে একদিন রাত্রিযাপন করলাম কর্ণপ্রয়াগে আর পরের দিন বিকালে পৌঁছালাম বদ্রিনারায়ণে।পৌঁছে শুনি এক মন্ত্রীর(VIP)জন্য অনেক আগে থেকে পথ বন্ধ করা হয়েছে-হেঁটে পৌঁছাতে হবে নইলে অপেক্ষা করতে হবে তার চলে যাওয়ার জন্য।তখনও সেই মন্ত্রী আসেননি।বুঝুন অবস্থাটা!!😢পুলিশ রক্ষকেরা কোনোমতেই যেতে দেবেন না।বয়স্কা মা আছেন বলতেও একটিই উত্তর--"না"।ভারত সেবাশ্রম যেটি মন্দিরের কাছে সেখানে গেলাম,ঘরও পেলাম।সুন্দর ব্যবস্থা।মহারাজ একজনকে ঠিক করলেন ডুলি বাহক হিসাবে।পরে জেনেছিলাম তিনি ছিলেন ওই আশ্রমের রাজমিস্ত্রির হেলপার।মাকে ঝুড়ি করে নিয়ে আসা হলো উঁচুনিচু পথ ধরে।মাথার উপর দড়ি দিয়ে মানুষকে পিঠে বসিয়ে পাহাড়ি পথ অতিক্রম করা চাট্টিখানি কথা নয়।আমি লোকটির অসীম মনোবল আর শারীরিক দক্ষতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।এত কষ্ট-এত যন্ত্রনা নিয়ে খেটে চলে এরা।মা প্রথমদিকে ভয়ে চোখ বন্ধ করে দিয়েছিল।--"ও মা,ভয় পাচ্ছ নাকি?দূর--ভয়ের কি আছে?"লোকটি বললেন"মাতাজি,ডরনে কা কোয়েই বাত নেহি,হাম হ্যায় না."--মনটা আনন্দে ভরে গেল ওনার ব্যাবহারে।আমার মাকে সেও মা বলে।পৌঁছে গেলাম ভারত সেবাশ্রমে।দক্ষিনা কত বলতে গিয়ে তিনি বললেন--"আপ পচাশু রুপিয়া দেনগে দাদা।"--পঞ্চাশ টাকা!!! আমি হতবাক।--"কাল মাতারানিকো হাম মন্দির দর্শন করায়েঙ্গে,আপ পানশো রূপয়ে দেনগে,জানে আউর আনেকে লিয়ে।"-আমার চোখের কোনে জলের আভাস পেলাম।..."আপকো মাতাকো হাম মাতাজি বোলা-আপকো মাতা মেরি মাতা জায়সা হ্যায়,ইসেলিয়ে... মারওয়ারী আদমি সে হাজার রুপিয়া লেতে হ্যায়।"::ভগবান, তুমি এদের মধ্যে এত সহিষ্ণুতা, দয়া, শ্রদ্ধা দিয়ে পাঠালে তবু কেন এদের এত পরিশ্রম করতে হয় দিনরাত? তুমি সুখ,তুমি শান্ত।তুমি হে অমৃতপাথার প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি,পরের দিন মার বদ্রি দর্শন ঘটেছিল আর প্রাপ্য স্বরূপ ওর থেকে বেশি অর্থ আমি দিয়েছিলাম।যদি আবারও আমি যাই তবে তার দেখা যেন পাই।মায়ের এই বদ্রি দর্শনে আমার মন ভরে গিয়েছিলো এক অপার্থিব আনন্দে।উপরি পাওনা ছিল এমন এক ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা।এখন আশ্রমের কাজ শেষ আর তারও স্ত্রী সহ সেখান থেকে চলে যাওয়া হয়েছে।সবই প্রভুর ইচ্ছা,মার দর্শন হলো বদ্রিনারায়ণ। মন রে ওরে মন,তুমি কেন সাধনার ধন পাইনে তোমায় পাইনে,শুধু খুঁজি সারাক্ষণ Post By:- Subrata Chakraborty
0 Comments
শান্তিনিকেতন বাউলের মন ভোলানো সুর , কোপাই আর বাঁকা চলন আর শাল পিয়ালের ছায়া - এক কথায় এই হলো শান্তিনিকেতন | শান্তিনিকেতন এর সোনাঝুরি তে কাটানো একটা দিন কখন কেটে গেলো তা টের পেলাম না I আমরা সোনাজুরির হাটের সামনেই রাধে শ্যাম রিসোর্টে থাকায় বিকেলের হাট দেখার চিন্তা রইলো না I আমরা সকাল সকাল চলে গেলাম কঙ্কালীতলা মন্দির এ মায়ের পুজো দিতে I সেখানে দুপুরের ভোগ এর ও ব্যবস্থা ছিল সে দিন I পাশেই বাউল গান I কিছুক্ষন সেখানে থেকে আমরা চললাম মিউজিয়াম আর বিশ্ব ভারতী দর্শনে I এখানে উপাসনা গৃহ , তালুকদার বাড়ি, কলাভবন, সঙ্গীতভবন, মিউজিয়াম, নন্দন আর্টগ্যালারী অনেক কিছুই দেখা যায় তাই আলাদা করে এর গুরুত্ব বা সেই বিষয়ে কোনো তথ্য তুলে ধরার ধৃষ্টতা রাখছি না। সেখান থেকে গেলাম বল্লভপুর অভয় অরণ্য I বেশ কিছু হরিণ এর দেখা মিললো এখানে I সেখান থেকে সৃজনী শিল্প গ্রাম I এখানে এ আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম I এরপর টোটো ছুটে চলল কোপাই নদীর ধার দিয়ে I কাছেই রয়েছে পলাশবনি গ্রাম I ইতি মধ্যে বিকেল হয়ে যাওয়ায় আমরা সোনাঝুরির হাঁটে চলে এলাম I সেখানে ততক্ষনে প্রচুর মানুষ তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেনI রয়েছে বাউল গান ও I সন্ধ্যা হতেই সেই মেলা শেষ হয়ে গেলো I রয়ে গেলো শুধু বাউল এর সুর যা সব সময়ের জন্য মনে গেথে রইলো ** নিকটতম স্টেশন - প্রান্তিক Post By:- মৈত্রেয়ী সমাদ্দার
অচেনা খাম. ( বোলপুর ভ্রমণ )........ রবিবারের আড্ডায় হঠাৎ ঠিক হলো এই প্রথম শীতে ছোট খাটো ভাবে একটা winter camp হয়েযাক l অনেক মতামতের পরে স্থির হলো শান্তিনিকেতন যাওয়ার l এই সময় শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ট্রেন এ যে টিকেট হবে না তা এই ভ্রমণ নেশাগ্রস্ত মানুষ গুলো জানে, তাই train এর টিকেট গুলো হলো সিউড়ি এক্সপ্রেস এ যাবার ও বিশ্ব ভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এ ফেরার, দুটো গাড়িরই ভাড়া ২৯০ টাকা করে AC chair car . সকাল ৮.৩৫ এ সিউড়ি এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়লো এবং ১২ তার পরিবর্তে ১২.২৫ এ শান্তিনিকেতন পিছালো l স্টেশন থেকে দুটো টোটো নিলাম ভাড়া ২০ টাকা মাথাপিছু, গন্তব্য santiniketan international guest house l তিন কিলোমিটার পথ 20 মিনিটে পেরিয়ে যখন পৌঁছালাম তখন আমাদের সকলেরই বেশ খিদে ও ক্লান্তি লাগছিলো l এখানে এসে এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়লাম, জানতে পারলাম যে আমাদের book করা ঘর অন্য লোক কে দিয়ে দিয়েছে l আমাদের থেকে ভাড়া নিয়ে রশিদ দেবার পরেও কি করে অন্য ব্যক্তি কে সেই ঘর দিয়ে দেয় এটা আমরা বুঝতে পারলাম না l সারা ভারতবর্ষ ঘুরেছি, অনেক সরকারি গেস্ট হাউস এ থেকেছি কিন্তু এই বাংলায় এবং বিশ্ব ভারতীর মতো একটা সংস্থা ও সর্বোপরি যার নাম international guest house , সেখানে এমন বিশৃঙ্খলতা দেখে সত্যি সত্যি মর্মাহত হলাম l এটা বিশৃঙ্খলতা না অসাধু চক্রের শিকার তা বুঝলাম না l আমাদের গ্রুপ এর এক দাদা, ওনার নাম সুন্দর চৌধুরী, উনি আগেই এই বুকিং করেছিলেন l ভদ্রলোক খুব অপ্রস্তুত ও বিব্রত বোধ করছিলেন, ওনার স্ত্রী রিতু দিদি ও খুব লজ্জা পাচ্ছিলেন.কিন্তু আমরা একদমই সুন্দরদাকে দোষী ভাবছিলাম না l মনে মনে সকলে এই dirty system কে ধিক্কার জানিয়ে অনত্র থাকার জন্য প্রস্তুত হলাম l অবশেষে শ্যামবাটিতে Birbhum Guest House এ জায়গা পেলাম , ম্যানেজার অসীম বাবু আমার পূর্ব পরিচিত l অত্যন্ত ভদ্র ও ভালো প্রশাসক, ছোট্ট গেস্ট হাউসটাকে ভালো খাবার, সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ন্যায্য মূল্যের মধ্যে বেঁধে রেখেছেন l সামনেই বাজার , সকালের লোকাল মাছের মেলা বসে l আপনার মন চাইলে নিজের ইচ্ছা মতো মাছ কিনে হোটেলে দিলে ওরা অতি সামান্য খরচ নিয়ে আপনার মনের মতো পদ আপনাকে রেঁধে দেবে lএই শ্যামবাটির বৈশিষ্ট হলো, এখান থেকে খোয়াইয়ের হাট , কঙ্কালী তলা , কোপাই নদী, আমার kuthi সায়ার বীথি ও বিশ্ববাংলা হাট খুব কাছে l এখন শ্যাম বাটিতে অনেক হোটেল হয়েছে যেমন মালঞ্চ, মনোরমা , নটরাজ, শান্তিনিকেতন রিসর্ট ও স্টিল অথরিটি এর গেস্ট হাউস আছে l ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা DAB l বোলপুর স্টেশন থেকে ৩.৫০ কিমি আর প্রান্তিক স্টেশন থেকে ১.৫০ কিমি হবে lতবে খাবার দাবারের কোয়ালিটি ও টেস্ট ভালো বীরভূম গেস্ট হাউস এর l গনেশ নামের রাঁধুনির হাতে যেন জাদু আছে l দাম ও খুব সস্তা , যেমন মাছ বা চিকেন ভাত সাথে সবজি ভাজা,ডাল চাটনি ও পাঁপড় ১২০ টাকা পেট চুক্তি আর নিরামিষ ভাত ৭০ টাকা নিরামিষ রুটি ৬০ টাকা l তবে হাঁ খরচ একটু বেশি হলেও রাম শ্যাম রিসর্ট, সোনাঝুরি, এর খাবারের কোয়ালিটি অসাধারণ l এখন আর শান্তিনিকেতন থেকে ৭ কি মি ড্রাইভ করে বনলক্ষী যেতে হয়না l ১২০ টাকায় নিরামিষ থালা প্রায় ১১ পদে সমৃদ্ধ থাকে আর আমিষ থালায় ২৫০ থেকে শুরু l নিজেদের চাষের জৈব সার এর সবজি l ভারী সুন্দর এর পরিবেশ l কাঁসার থালা বাটি গ্লাস এ খাবার সাজিয়ে দেয় , আর থাকার ভাড়া ১৬০০ থেকে শুরু. ভুবন ডাঙ্গার একটা কাপড় জামার দোকান থেকে আজ এরা কত বড় জায়গায় পৌঁছেছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয়না l আরে এতক্ষন আপনাদের সাথে আমাদের এই winter camp এর সদস্যেরই পরিচয় হলো নাতো l এবার বলি আমায় নিয়ে আমাদের এই টীম এ ৮ জন ছিলাম l আমাদের ঘোরা পাগলদের একটা টীম আছে যা "Gang " নাম এ পরিচিত. এর ৪২ জন সদস্য ও সদস্যা l আজকের টীম -- "শ্রীলিপি দিদি , যার কথা শুরুতেই বলা উচিত , এই শ্রীলিপি দিদি অসম্ভব ভালো গান করেন ও গোটা টিমটাকে সর্বক্ষণ জমিয়ে রাখেন l কল্পনাদি, একটু গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ হলেও খুব ভালো মনের ও ভালো সুরেলা গলার l খুবই শান্ত মনের l সুন্দর দাদা, ওনার গান শুনলে মনটা যেন ভোরে যায় , সরলতা কাকে বলে তা ওনাকে দেখলেই বোঝা যায়, মানুষটা বড্ডো ভালো l ঋতুদি , খুব ঠান্ডা মানুষ , যেন শীতকালের ই একটা রূপ l ভালো গানের কণ্ঠ ও ভালো ভালো খাবার পরিবেশক l মেঘরাজ, খুব হাসি খুশি একটা চরিত্র, অবাঙালি হলেও রবিঠাকুর ওনার সারা মন জুড়ে, খুব ভালো সুরের দখল ওনার কন্ঠে l চূর্ণী দিদি , যেমন ওনার গানের গলা তেমন ওনার মিশুকে স্বভাব , এইবার আসছি শতদ্রু দিদি মানে আমি এনাকে ব্রাম্হনি বলে ডাকি,ভালো কবিতা লেখেন ও পাঠ করেন তার সাথে আছে ভারত নাট্টাম এর জাদু. তবে শুকনো পথেও আছাড় খান l বার বার যার কথা মনে হচ্ছে সে হলো গিয়ে দীপ , হাঁ ২০ বছরের একটি ছেলে, বিশ্বভারতী থেকে লেখা পড়া করে এখন টোটোর মালিক ও চালক l একেই বলাযায় সততার প্রতীক l আমার টাকার থলি ও ছাতা ওর টোটো তে ফেলে চলে এসেছিলাম, রাত্রি ১০.৩০ এ আমার হোটেলে এসে সব কিছু ফেরত দেয় l ফোন গুলো ওই ব্যাগে ছিল তাই ও যোগাযোগ করতে পারছিলো না l আমি ওকে টাকা দিয়ে ছোট করিনি , তবে হাঁ যখন ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম তখন বীরভূমের সেধো মাটির একটা সরলতার গন্ধ প্রানটাকে জুড়িয়ে দিলো l আমিও এই লালমাটির দেশের লোক তাই ভুলে যাওয়া মুছে যাওয়া লালমাটির ধুলো গুলো আমার সারা শরীর জুড়ে লেপ্টে গেল l পরেরদিন ওর বাড়িতে গেছিলাম, ওর দিদার হাতে চুপটি করে ৫০০ টাকা দিয়ে বললাম যে আপনাদের জন্য একটু ফল মিষ্টি আনার ইচ্ছা ছিল তাই এটা, যদি নেন আমার ভালো লাগবে l আমি পরে আবার দীপের কথায় আসছি l খোয়াই এর হাট এখন কেমন জানি দিনকেদিন একটা শহুরে রূপ নিচ্ছে l সোনাঝুরির এক কোনে পরে থাকা শুধু শনিবারের হাট এখন রোজের হাট এ পরিণত হয়েছে l হাটের ব্যাপ্তি দিনকেদিন বেড়েই চলেছে l আর সবথেকে খারাপ লাগে যখন দেখি সোনাঝুরির ক্যানেলের ধারের লালমাটির পথটা কালো পিচে মুড়ে গেছে l এখন বোলপুরের রাঙামাটির পথ দেখতে গেলে যেতে হবে আমার কুঠি যাবার রাস্তা বল্লভপুর জঙ্গলের সেই পথটাই পরে আছে l আমার কুঠির মনির দোকানের মনমাতানো চা এর টানেই আমি বোলপুর গেলে অবশ্যই মনির দোকানে যাই l প্রদীপ বাউল মারা গেলেন l ও হাঁ আপনারা প্রদীপ বাউল কে কি করে চিনবেন,তবে যারা বারে বারে বোলপুরে যায় তারা নিশ্চই এই প্রদীপ বাউলের নামে না হলেও ওনার মুখের ছবি দেখলে চিনতে পারবেন, যিনি আমারকুঠিরের সামনে খিরিশ গাছের নিচে বসে সকlল থেকে সন্ধ্যা অবধি একনাগাড়ে গান গেয়ে সকলের মনে আনন্দ দিতেন l ভোর রাত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিশব্ধে চলে গেল l সব থেকে দুঃখের বিষয় হলো যে এই বোলপুর শান্তিনিকেতনে এতো সনামধন্য মানুষজনের আসাযাওয়া ও বসবাস তবুও এখানে আজ অবদি কোনো বড়োসড়ো রোগের চিকিৎসা মেলেনা l বিশেষ করে হার্ট বা সেরিব্রাল নামক ভয়ঙ্কর অসুখের চিকিৎসা পাওয়া যায়না l এখানে যেভাবে হোটেল ব্যবসা ও ইমারত ব্যবসা প্রসারিত হচ্ছে , সেখানে একটা ভালো নার্সিং হোম বা হাসপাতাল হয়না কেন? বোলপুর শান্তিনিকেতনে এখন অনেক কিছুর রূপে রূপসী, যেমন আমাদের মন্দির, গুরুদেবের অস্তিত্ব যেখানে আজও প্রতি মুহূর্তে বিরাজ করেন l এই বিশ্বভারতী ছাড়াও হয়েছে বিশ্ববাংলা হাট , খোয়াইয়ের হাট , সায়ার বীথি,সৃজনী গ্রাম, কঙ্কালীতলা,আমার কুঠি, কোপাইয়ের পার , সোনাঝুরির পথ, প্রকৃতি ভবন ,বল্লভপুর জঙ্গলে eco park যেখানে সায়ার বীথির মতো জলকেলী করা যায়, আছে ডিয়ার পার্ক আর আছে সরলতায় ভরা আদিবাসী গ্রাম, প্রান্তিকের ধারের বাউল আখড়া l আবার যদি ভূতের বাড়ির ভুতুড়ে রূপ দেখতে চান তবে চলে আসুন রাইপুর গ্রামের পুরোনো জমিদারের বাড়ি l বহু বাংলা সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের শুটিং এখানে হয়েছে ও হয় l আমি তাই বলি "বারে বারে বোলপুর" l এবার শেষ করবো আমার লেখা, আমাদের ট্রেনের সময় ছিল সকাল ৬.২৬ এ তাই আগের দিন রাত্রে দীপ কে ফোন এ অনুরোধ করলাম সকাল পাঁচটায় আমাদের হোটেলে আসতে l ভাড়ার কথা চিন্তা করতে বারণ করলাম l ঠিক সকাল ৫টার সময় দীপ এসে হাজির আর ৫.৩০ এ স্টেশন l দীপ ও ওর বন্ধু আমাদের মালপত্র স্টেশন নামিয়ে দিলো , আমি ওকে ১৫০ টাকা করে আটো পিছু দিলাম কিন্তু ও ১২০ টাকা করে নিয়ে বাকিটা ফেরত দিয়ে চলে গেল l বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার 20 মিনিট দেরিতে স্টেশনে ঢুকলো. আমাদের কিন্তু এই ভর্তি ট্রেনেও কখনো মনে হলো না অন্যান্ন যাত্রীদের অপরিচিত l টুকটাক খাওয়া দাওয়া শুরু হলো সাথে গান সবাই যখন গান গাইছি তখন আমাদের পাশের আসনে বসা একটি ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে আমাদের অচেনা ভেবেও আমাদের সাথে গলা মিলিয়ে গাইতে লাগলো " কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া। চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি। ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের ... " দেখে খুব ভালো লাগলো. সরলতা এখনো মরে যায়নি l বোলপুরে বাপের বাড়ি, একটা মিষ্টি বাচ্চা কে নিয়ে কোলকাতায় ওর বরের কাছে যাচ্ছে. খুব মিষ্টি ওর কণ্ঠ ও সুরের দখল l ওর নামটা হচ্ছে পূর্বl মুখার্জী l এবার টিকিট চেকার এলেন, আমি আমার ব্যাগ থেকে টিকিট বার করতে গেছিলাম তখন বুঝলাম ব্যাগের মধ্যে একটা অচেনা খাম l চেকার যাবার পরে কৌতূহল বসতো ক্ষlম টা খুললাম , খুব অবাক হলাম , খামে ৫০০ টাকা আর একটা চিরকুট তাতে লেখা " কাকু মাফ করবেন টাকাটা নিতে পারলামনা কারণ কোনো অনুদান আমরা নিতে পারিনা , পদবীতে আটকে গেছে l কাকু আমাদের খিদে পায় আমরাও তো গরিব কিন্তু কেন বলুনতো সরকারি নিয়মে আমরা অনুদান পাবনা ? আমাদের সম্ভ্রান্তের তকমা লাগিয়ে বঞ্ছিত করা হচ্ছে নয় কি? পেটের জ্বালা তো সবাইকেই দিয়েছেন সৃষ্টি কর্ত্তা,তবে আমার খিদেটা কেন মূল্যহীন? যেদিন সরকারি ভাবে আমার দারিদ্রতা স্বীকৃতি পাবে সেদিন ই আমি অনুদান কে হয়তো দয়া মেনে নেবো না l স্বামীজী, মহাত্মাজী, গুরুদেব , কাজী সাহেব, রামমোহন রায় , বিদ্যাসাগর মহাশয় এনারা সমাজটাকে শ্রেণী বিভাজন মুক্ত করবার লড়াই করে ছিলেন,আর কারা যেন সেই সমাজকেই ধর্মে বিভাজন , জাতিতে বিভাজন ও পদবিটাতেও বিভাজন করলো l কাকু খিদে জিনিষটা তো সবার পেটে একই সুরে চিৎকার করছে , তবে আমাদের চিৎকার কেন গুরুত্বহীন বলতে পারেন."??? দ্বীপের কথা ভাবতে ভাবতে কখন হাওড়া পৌছালাম জানিনা l সবাইকে বিদায় জানিয়ে এই যাত্রাটা শেষ করলাম l যখন আমার গাড়ি এই শহরের ভিড়ে হারিয়ে গেল তখন আমি দীপের দেওয়া চিরকুটটা গাড়ির জানালা দিয়ে উড়িয়ে দিলাম ২ কোটি মানুষের এই শহরের শরীরে ll Post By:- Parthamoy Chatterjee
নামথাং দক্ষিণ_সিকিম সূর্যদয়ের_দেশ সিকিমের প্রবেশপথ রংপো থেকে মাত্র ২৫ কি.মি দূরে প্রায় ৪০৮৮ ফুট উচ্চতায় পাহাড়ের কোলে দক্ষিণ সিকিমের ছোট্ট গ্রাম নামথাং। স্থানীয়দের কথায় নাম কথার অর্থ 'সূর্য' আর থাং কথার অর্থ 'স্থান'। এখান থেকেই দিনের প্রথম সূর্যোদয় দেখা যায় তাই এটিকে সূর্যোদয়ের দেশও বলা হয়। অপূর্ব সুন্দর এই জায়গাটিতে এখনো সে ভাবে পা পড়েনি পর্যটকদের। এখানে নেপালী, ভুটিয়া ও লেপচা জন জাতির বাস। টেনগং হিলে ট্রেকিং রুট ছাড়াও রিভার রাফটিং,প্যারাগ্লাইডিং করার সুযোগ রয়েছে। যারা পাখি ভালোবাসেন তাদের কাছে এটি স্বর্গরাজ্য। এখানকার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ 'নাগি পোখরি' উৎসব। প্রতি বছর ৩১শে ডিসেম্বর থেকে ২রা জানুয়ারি তিন দিন ধরে অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানী শহর গ্যাংটক থেকে দূরত্ব ৬৫ কি.মি। নামচি থেকে দূরত্ব ২৪ কি.মি। শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব মাত্র ৯৮ কি.মি। আপনি গাড়ি ভাড়া করে ( ২৫০০-৩০০০ টাকা ) অনায়াসে পৌঁছে যেতে পারেন। এখানে রয়েছে সাধ্যের মধ্যে হোমস্টে-র ব্যবস্থা ( জন প্রতি ১২০০ টাকা )। Post By:- D Sarkar
লং ড্রাইভে শিবানী পীঠ xxxxxcccccc শিবানী পীঠ , ধর্মতলা থেকে ৩২ কি মি আর গাড়িয়া থেকে ১৬ কি মি দূরে বারুইপুর কুলপি রাস্তায় উপর মা কালির এই মন্দিরটি l বেশিদিনের কথা নয় ১৯৬৬ সালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয় l বারুইপুরের আদি ও অত্যন্ত সম্মাlনীয় ভট্টাচার্জি পরিবার এর শ্রী.দুর্গাদাস ভট্টাচার্জি এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন l এই পরিবারের প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত l ভারী সুন্দর এই মন্দিরের পরিবেশটা l ট্রেন এ শিয়ালদাহ থেকে বজবজ ,ক্যানিং বাদে সাউথ সেকশন এর যেকোনো ট্রেন এ বারুইপুর এসে অটোতে বা টোটো তে ১০ মিনিট l আর গাড়ির রাস্তা পুরোটাই অসম্ভব সুন্দর, বাইপাস দিয়ে এসে কামাল গাছি ফ্লাইওভার ধরে বারুইপুর বাইপাস রোড , যেটা গোবিন্দপুর পদ্মপুকুর মোর থেকে বা দিকে বেঁকে বারুইপুর কুলপি রোড ধরে বারুইপুর রেল ব্রিজ টপকে ৩ মিনিট শিবানী পিঠ গেছে l ডানহাতি রাস্তা আমতলা হয়ে ডায়মন্ড হারবার গেছে l কুলপি রোড ধরে একটু এগিয়ে বাঁ হাতি রাস্তা ধরে ক্যানিং সুন্দর বন চলে যেতে পারেন l আর সোজা গেলে পৌঁছাবেন জয়নগর নিমপীঠ , কুলপি,নামখানা বকখালি বা গঙ্গাসাগর l তাই হয়ে যাক একদিন খুব ভোর বেলায় বেরিয়ে আমাদের কলকাতার কোলে লুকিয়ে থাকা মিষ্টি মিষ্টি প্রকৃতির সন্তানদের যার কোনোটার নাম নিমপীঠ, বকখালি,,ডায়মন্ড হারবার, গঙ্গা সাগর,, রায়চক, ফলতা,সুন্দরবন, ঝড়খালি, গেঁওখালী l স্টেট হাইওয়ে গুলোর এখনকার অবস্হা দেখলে সত্যি মুগ্ধ হতে হয়, আমি বেশ দায়িত্ব নিয়েই বলছি যে আমাদের রাজ্যের পর্যটন দপ্তর অনেক অনেক ভালো কাজ করছে, রাস্তা ঘাট এখন যথেষ্ট ভালো, শুধু আমরা ভ্রমণ পিপাসু মানুষ গুলো একটা ছোট্ট আবদার রাখছে রাজ্য প্রশাসনের কাছে , যে আমাদের একটা নামখানা ব্রিজ দিন, কাজ হচ্ছে অনেকদিন ধরেই কিন্তু যাতে তাড়াতাড়ি এটা তৈরী হয় সে ব্যবস্থা করলে পর্যটন শিল্পে এই জেলার একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে l Post By:- Parthamoy Chatterjee
দিঘা থেকে অনেকেই এখন বিচিত্রপুর যাচ্ছেন। আমরাও বিভিন্ন গ্রূপ থেকে জানতে পেরে বিচিত্রপুর ঘুরে এলাম। দিঘা থেকে 30 মিনিট লাগে বিচিত্রপুর। গিয়ে প্রথমে বোট এর টিকিট কিনে নিলাম। ওয়েটিং টাইম দেড় ঘন্টা। ওই সময়ে আমরা ঘুরে এলাম ভুসন্দেস্বর শিব মন্দির। তারপর বোট রাইড। অপূর্ব দৃশ্য। কিছু ছবি দিলাম। Post By:- Kartick Mallick
সুন্দরী অযোধ্যা - - - অযোধ্যার নদী - পাহাড় - ঝর্ণা - দু বাহু বাড়িয়ে তার সবুজ আঙিনায় পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে চোখ টানে বৈচিত্র্যময় জনজীবন, লোক শিল্প - - - তাদের সংস্কৃতি, উৎসব। অযোধ্যার বিস্তৃতি এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে। প্রকৃতির অকৃত্রিম দানে সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। প্রতিটি ঋতু তে রূপ বদলাতে থাকে বর্ষায় সবুজের জয়গান, জলাধারের উপচে পড়া জলরাশি, শরৎ এ কাশ ফুলে আগমনী বার্তা, কনকনে শীতে বনভোজন, খেজুর রস ও গুড় এর সম্ভার, আর বসন্তে রাঙা হাসিতে পলাশ ফুলে জানানো হয় স্বাগত হে হেথা শুভ অতিথি । গাড়ির তুলনায় হেঁটে বেড়ানো তে আনন্দ অনেক বেশি। প্রকৃতির রূপ - রস - গন্ধ - বর্ন যেনো শরীর ও মনে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। তবে সময়ের অভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে না। জনপ্রিয় কিছু স্পট কিছুতেই মিস করা চলে না। তাদের নিয়ে দু এক কথা লেখার চেষ্টা করলাম। বামনী ঝরনা - - সমগ্র অযোধ্যার হৃদ পিন্ড বলা হয়। প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতা থেকে লাফিয়ে পড়ছে অবারিত জল রাশি। ধাপে ধাপে নীচে নেমে গেছে। পড়ি মরি করে ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যে। পাথর খণ্ডে আহত জল কণা মিশছে বাতাসে। তার শীতল স্পর্শে শরীরে চলে আসে এক অদ্ভুত সজীবতা। টাইগার হিল এর মত দূর থেকে দেখা রূপকথা নয়, দু হাত বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। সবুজের লালিত্যে পাখির কলতানে যেন এক খন্ড স্বর্গ রাজ্য। ঝর্ণা র জলে স্নান করার লোভ সামলাতে না পারলে নেমে পড়া যায়। নিমেষে মুছে যাবে সমস্ত ক্লান্তি ও মনের গ্লানি। টুরগা ফলস - - - বর্ষাকালে সৌন্দর্য কোনো অংশে কম নয়। প্রকৃত আস্বাদন পেতে গেলে নীচে নামতে হবে। পথ বিপদসঙ্কূল হলেও প্রাপ্তির ঝুলি টা অনেক বেশি। জলরাশিকে মনে হয় যেন আকাশ থেকে লাফিয়ে পড়েছে। পাথরের গায়ে প্রাকৃতিক খাদ সৃষ্টি হয়েছে। স্নান করার সুপ্ত ইচ্ছা টাও এখানে সেরে নেওয়া যায়। জল পথ ধরে নীচে অনুসরণ করে চললে আরও মনোরম দৃশ্য পাওয়া যায়। টুরগা ড্যাম এর সাথে মিলন স্থল আরও অপরূপ। বিস্তীর্ণ পাথরের গায়ে ছড়িয়ে ঝর্ণা র রূপ যেনো এক বিস্তীর্ণ ক্যানভাস। মার্বেল লেক - - - - বামনী ঝরনা থেকে কিছুটা উপরে রাঙা মোড়, সেখান থেকে বাঁ দিকে কিছুটা গেলেই পৌঁছে যাওয়া যায়। পাহাড় কেটে সেই পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আপার ড্যাম এর পাড়।সেই খাদে জল জমে তৈরী হয়েছে মার্বেল লেক বা ব্লু ড্যাম। গভীর খাদে র জল নীল দেখায় বলেই এরকম নামে অনেকে ডাকেন। আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘেদের ভেলার প্রতিচ্ছবি দেখতে দেখতে মন হারিয়ে যায় সুগভীর নীল সলিল রাশি তে। সূর্যাস্তের পড়ন্ত অলোকরশ্মি শ্বেতপ্রস্তরে প্রতিফলিত হয়ে সোনালী আলোকমালায় সেজে উঠে। মায়াবী আলোকে সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। মুরগুমা জলাধার - - - - মোহিনী মুরগুমা ।অযোধ্যা হিলটপ থেকে উত্তর দিকে ময়ূর পাহাড় দিয়ে মাত্র ১৬ কিমি দূরে। পাহাড় থেকে নামার পথে প্রতিটি বাঁকে দাঁড়াতে হয়। দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। পাহাড়ের খাঁজে জলরাশি ঢুকে সৌন্দর্যের মাত্রায় নতুন পালক যোগ করেছে। মাঝে পাহাড় কে ঘিরে জল রাশি কলকল করছে। পাড় দিয়ে হাঁটতে মনে হয় অন্য জগতে এসে হাজির হয়েছি। তাজা হাওয়া মন ভালো করে দেয়। ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায় পরিযায়ী পাখিদের খেলা। যে দিকে চোখ ফেরাবেন শুধু পাহাড়। মাঝের এই জলাধার যেনো তারই স্নেহ ধারা। সূর্যাস্তের নরম আলোকে কি যে মায়া জড়িয়ে আছে কে জানে! - - এটাই হয়তো মায়ার বাঁধন। তবে ভরা বসন্তে মুরগুমা সত্যি অপরূপা।জলাধার এ যেদিকে সাহারজোড় স্রোত মিশেছে সেদিকে কিছুটা গিয়ে একটা পাথরের উপরে উঠে যে দৃশ্য রূপ দেখেছি - - ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সারি সারি পলাশ ফুটে আছে। দূর থেকে মনে হয় কেও যেনো মুঠো মুঠো লাল আবীর ছড়িয়ে দিয়েছে। আর একটু এগিয়ে দ্বীপের মতো জায়গাটা তে পৌঁছানো যায়। সেখানে প্রকৃতির বিশাল সমারোহ। নিভৃতে, নিরিবিলি তে বসে এই সুন্দরতার যজ্ঞে সামিল হওয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা। যতদূর চোখ যায় শুধু জল আর জল। পাশেই এক ঘাটে দেখলাম এক মা তার ছেলেকে পরম স্নেহে স্নান করিয়ে দিচ্ছেন। সময় কখন কেটে যায় বুঝতেই পারা যায় না। এই আনন্দ মনের গহনে উৎসব এর সূচনা করে। হৃদয় জুড়ে বিরাজ করে শুধু প্রশান্তি। বন দেবতার কাছে বিনম্র চিত্তে জানালাম - - - এই অপার সৃষ্টির কাছে, সৌন্দর্য এর কাছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ নতজানু হয়ে থাকবে। আজ প্রথম পর্ব লিখলাম। আপনাদের ভালোবাসা পেলে উৎসাহ পাব আগামী লেখা তে। কমেন্ট বক্স এ মতামত দেবেন। চাইলে শেয়ার করতে পারেন। অহল্যা ভূমি পুরুলিয়া কে সকলের সামনে তুলে ধরার আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস।অগ্রিম ধন্যবাদ রইলো। ছবি ও লেখা - জনার্দন মাহাত। Post By:- Janardan Mahato
ইলোরা :: অজন্তা দেখার পরের দিনই সকালে একটা গাড়ি ভাড়া করে বেড়িয়ে পরলাম । ঠিক হলো ইলোরা দেখে ঔরঙ্গবাদ ঢুকবো। ঔরঙ্গবাদ শহর থেকে ৩০ কিমি দুরে ইলোরা গুহা। বলে রাখি প্রত্যেকটি গুহা দেখতে হলে অটো অবশ্যই ভাড়া করতে হবে।কারন একটা থেকে আরেকটা বেশ দুরত্বে। রাষ্ট্রকূট রাজবংশ এই স্থাপন কার্য করেছিল। এখানে ৩৪টা গুহা আছে। এই গুহা গুলো চরনন্দ্রী পাহাড়ের অভ্যন্তর থেকে খনন করে উদ্ধার করা হয়েছে। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ ও জৈন এই তিন ধর্মের মন্দিরের স্বাক্ষর রয়েছে।৫মথেকে ১০ম শতাব্দী তে এটি নির্মিত হয়।১২টি বৌদ্ধ,১৭টিহিন্দু ,৫টি জৈন । ইলোরার কৈলাস মন্দিরটি সবথেকে আর্কষণীয়। কৈলাস মন্দিরটি সাদা। এটি কৈলাস পর্বতের ধাঁচে তৈরী ।কৈলাস যেহেতূ শিবের স্থান সেহেতু মন্দিরের প্রবেশদ্বারে মন্দিরের ঐতিহ্য অনুযায়ী বিশাল পাথরের ষাড় নন্দী মূর্তি। একটি পাথর উপর থেকে কেটে এই মন্দির তৈরী। কৈলাস এর রং অনুযায়ী এর রং সাদা।প্রধান মন্দির নন্দী মন্ডপে লিঙ্গম অবস্থিত।নন্দী মন্ডপে ১৬টি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে।যার উচ্চতা ২৯.৩মি.। নন্দী মন্ডপে একটি বিশাল হাতির মূর্তি আছে। একটি পাথরের সেতু দিয়ে নন্দী মন্ডপে ও শিব মন্দিরে যোগাযোগ সাধিত হয়েছে। আনুমানিক ১০০বছর লেগেছিল এটি তৈরি করতে। শিব পার্বতীর বিবাহ, শিবের রুদ্র মূর্তি, শিব, পার্বতী কৈলাস একত্রে এই স্থাপত্ত এই মন্দিরে দেখা যায়। অন্যান্য হিন্দু মন্দিরের মধ্যে ২১নম্বর গুহা টি রামেশ্বর,যার প্রবেশ দ্বারের মুখে গঙ্গা, যমুনার মূর্তি আছে।২২নম্বর গুহা টি নীলকন্ঠ এখানে অনেক স্থাপত্য বিদ্যমান, ২৯নম্বরটি ধুমরলিনা যা মুম্বাই এর এলিফ্যান্টা দ্বীপ এর গুহার মতো। আরও গুহা আছে, ভিতরে অভূতপূর্ব ভাস্কর্য সমৃদ্ধ।দেখতে প্রায় চার,সাড়ে চার ঘন্টা লেগেছিলো।দেখা শেষে পুনরায় গাড়ীতে উঠে ঔরঙ্গবাদ এর পথে রওনা হলাম। Post By:- Madhumita Pal
ভোরবেলা দশাশ্বমেধ ঘাটে খুব ভোরে উঠে আমরা দশাশ্বমেধ ঘাটের দিকে চললাম। এখনও চারদিকে আলো ভালো করে ফোটেনি। প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল এবার বেনারসে এসে খুব ভোরবেলা ঘাট দর্শনে যাব, আমাদের হোটেল থেকে পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। দশাশ্বমেধ ঘাটে পৌঁছে ভালো লাগায় মনটা ভরে গেল।তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি। কালকের নৌকাগুলো যেগুলো করে কাল আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি সেগুলো সব ঘাটে বাঁধা। দূরে দূরে ছোট ছোট আলোর বিন্দু দেখা যাচ্ছে। আলো আঁধারিতে গঙ্গা এক মায়াময় রূপ ধারণ করেছে। সিঁড়িতে বসে বেশ কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে রইলাম! এত সকালবেলাতেও ঘাটে কিন্তু বেশ লোকজন! একজন পন্ডিত কে দেখলাম বড় ছাতার তলায় বসে পূজোর আয়োজন করছেন। এক বাবাজী বহুরূপী সেজে বসে আছেন। একজন অল্প বয়স্ক পন্ডিত পূজায় মগ্ন! বেশ কিছু লোক এই ভোরবেলাতেই নেমে পড়েছেন গঙ্গার বুকে স্নানের উদ্দ্যেশে! এক বিদেশিনীকেও দেখতে পেলাম গঙ্গার উদ্দ্যেশে পূজা নিবেদন করছেন! এক ফুলওয়ালী মেয়ে কে দেখলাম ঝুড়িতে ফুল আর প্রদীপ সাজিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ যদি কেনে। ঘাটে বসে বসে এইসব দেখতে লাগলাম,এক অবর্ণনীয় ভালো লাগায় মনটা ভরে যাচ্ছিল। পূবের আকাশ আস্তে আস্তে আলোকিত হচ্ছিল, গঙ্গার বুকে অন্ধকারের রহস্যময়তা কাটছিল! নৌকাগুলো গঙ্গার বুকে চলতে শুরু করছিল, তাদের ঘিরে উড়ছিল ঝাঁকে ঝাঁকে পাখীর দল! এই জায়গার এমন মাহাত্ম যে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে ইচ্ছে করে। রোদ চড়া হচ্ছিল, বাধ্য হলাম উঠে পড়তে। এক অপার্থিব ভালো লাগায় মনটা কানায় কানায় ভরে উঠল! Post By:- Sutapa Dutta
==== কেদারনাথের ডাইরি (পার্ট 2)=== ************************************** কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি, হবে কি করে? মোটা মোটা চালের ভাত, ডাল, নিরামিষ তরকারি 2 টো রুটি, গলা দিয়ে নামেনি, নিদেন পক্ষে একটা ডিম ভাজা হলে ভালো হতো. কিন্তু কি করা যাবে, তার ওপর কাল সারা রাত বৃষ্টি হয়েছে, এখনো হচ্ছে, ভোর বেলা ওঠা অভ্যাস টা আমার কোনো দিনের নেই, সানরাইজ দেখা আমার কখনো হয়ে হয়নি, ঠান্ডায় লেপ মুড়ি দিয়ে মটকা মেরে পরে থাকা টা বুদ্ধি মানের কাজ বলে মনে হলো , কিন্তু সুমন সেই কখন উঠে পড়েছে, এক বার করে বাইরে যাচ্ছে, এক বার করে ঘরে আসছে, আর বলছে চলো না গো, সব লোক চলে গেল, বৃষ্টি থেমে গেছে, অতএব উঠতে আমাকে হলো, ফ্রেশ হয়ে সাড়ে আটটার সময় হোটেলের লকার রুমে ব্যাগ পত্তর রেখে, রওনা হলাম কেদারনাথের পথে , হালকা হালকা বৃষ্টির মধ্য শুরু পথ চলা, গৌরী কুন্ড থেকে কেদারনাথ পুরো রাস্তা টাই 99% খাড়াই, প্রথম পাঁচ কিলোমিটার আপনি গর্ গর্ করে চলে যাবেন, তারপর আস্তে আস্তে আপনার দেহ বিদ্রোহ শুরু করবে, বিশেষ করে,.... যারা আমার মতো... যারা জীবনে কোনো দিনও ফুটবল পায়ে মাঠে নামেননি... হাঁটা হাঁটি করেন না,.... বাড়ি থেকে বাজার, বাজার থেকে বাড়ি, গাড়ি ছাড়া চলেন না,.. সাইকেল চালান না,... রক্তে হালকা সুগার... তারা কখনোই এ পথে হেটে ওটার চেষ্টা করবেন না. ঘোড়াই একমাত্র অবলম্বন হতে পারে. যাইহোক দুই ধারের অপরূপ শোভা, দেখতে দেখতে আপনি কখন রাম্বারা এসে পৌঁছে যাবেন, আপনি বুঝতেই পারবেন না, এখানে আলুর পরোটা খুব বিখ্যাত সবাই খায় তাই আমিও খেলাম, সাময়িক ব্রেক, রেলিংয়ে ধার ধরে দাড়িয়ে দেখবেন, মাথার ওপর দিয়ে কেমন হেলিকপ্টার চড়ে মানুষ জন চলেছে, বাবা ভোলানাথের দর্শনে, আবার রাস্তায় কত অশীতিপর বুড়ো বুড়ির দল চলেছেন পেনিতে, ডুলিতে, এই pene জিনিস টা বেশ ভালো, যেমন আসামের চা বাগানের মহিলারা চা পাতা তোলে ঝুড়িতে, সেই রকম এক জন মানুষ কে ওই ঝুরির মধ্যে বসিয়ে পিঠে করে নিয়ে চলে আরো একজন মানুষ. এইসব দেখতে দেখতে কখন যে চলে এসেছি লিঞ্চলে মনেই নেই.... , কিন্তু পা আর চলল না. ভীষণ টান পড়লো পায়ে, মনে মনে ভাবছি আর কি যেতে পারবো না. হাওড়া থেকে হরিদ্বার 1650 km ট্রেন , হরিদ্বার থেকে সোনপ্রয়াগ 123 km বাসে এসে, এই 5 কিলো মিটার আর যেতে পারবো কিনা মনে সংশয়, আমার পাশ দিয়ে অনেকে চলে যাচ্ছে, ঠিক তখনি এক ঘোড়া ওলা বলে উঠলো"""" ভাইয়া জায়েগা,'' ' দর দাম করে উঠে বসলাম...... ঘোড়া চলল আমাকে নিয়ে মহাপ্রস্থানের পথে , এবার আসি একটু ইতিহাসের পাতায় সৌজন্যে গুগুল কাকু ebala. In কেদারনাথের মন্দির সুমুদ্রপার থেকে 3583 মিটার/(11755ft) উপরে, গাড়োয়াল হিমালয় রেঞ্জের মন্দাকিনী নদীর ধরে অবস্থিত. বারোটা জ্যোতির্লিঙ্গ এর মধ্যে সব থেকে শক্তিমান এই বাবা ভোলানাথ. মহাভারতের পান্ডব রা যুদ্ধে বহুমানুষের প্রাণ নিয়ে পাপ স্থলন করবার জন্য বৈশিষ্ট মুনির পরামর্শে এখানে মহাদেবের পুজোর আয়োজন করেছিলেন কিন্তু মহাদেবও ধর্মসঙ্কটে পড়েছিলেন, এত মানুষ হত্যা করে পুজো করলেই তিনি ক্ষমা করে দেবেন, এমন সোজা মানুষ তিনি নন.... তিনি করলেন পান্ডব দের সঙ্গে লুকোচুরি খেলা, একটা ষাঁড় সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন হিমালয়ের কোলে, ব্যাটা ভীম সবার আগে মহাদেব কে চিনতে পারে শেষ হয় লুকোচুরি খেলা. যাক আর বেশি ইতিহাস শোনাবো না নইলে আপনারা ভাববেন আমি গাজা খেয়ে ভুল ভাল বকছি,,,,, অবশেষে আমি বহু কষ্ট করে ঘোড়ার পিঠে চেপে পৌছুলাম কেদারনাথের দরবারে,,, মন্দিরে গিয়ে পুজো দিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম সন্ধ্যা অরুতি দেখে রাতে একটা তাঁবু তে ছিলাম, ব্যাবস্থা বেশ ভালোই , রাতে স্লিপন ব্যাগ দিয়েছিলো, ব্যাংকার ছিলো শোবার. খেতে ইচ্ছা ছিলো না সারা দিনের ধকলে, আর ভালো লাগছিলো না, সামান্য কিছু চিড়ে আর সন্দেশ খেয়ে শুয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি, অপেক্ষা করলাম এক নতুন ভোরের আসায়.... সকাল হতেই বেরিয়ে ধরলাম বাড়ি ফেরার পথ, সানরাইজ আর দেখা হয়নি মেঘলা থাকায়, কথিত আছে কেদারনাথের সানরাইজ দেখা নাকি ভাগ্যের কথা, সূর্যের প্রথম রশ্মি যখন হিমালয়ের পাহাড়ে পরে এক স্বর্ণাভ রূপের সৃষ্টি হয়, এই মুহূর্ত কে( গোল্ডেন মোমসেন্ট অফ হিমালয় বলা হয়.) আমরা যদিও এতটা সৌভাগ্যবান নই, দেখেছিলাম কিছুটা, ওতো সকালে ঘোড়া পাইনি, কিন্তু নামতে একটুও কষ্ট হয়নি, কারণটা আগেই বলেছিলাম, নামার পথে পুরোটাই তখন ঢালু, পিকের আমির খানের মতো বোম বম ভোলে বম বম ভোলে বলতে বলতে নিচে নেমে এলাম, গৌরীকুণ্ডের 2কিলোমিটার আগেই আমার স্মার্ট ফোন আর ক্যাবলা ফোনের টাওয়ার পেয়েগিয়েছিলাম,ততকাল কোটায় কেটে নিলাম বাড়ি ফেরার 2টো টিকিট কিন্তু বেলা 12tar সময় শোন্ প্রয়াগ নেমে কোনো বাস পাইনি, রাত্রিটা ওখানে কাটিয়ে পরদিন সাড়ে পাঁচটায় প্রথম বাস ধরে নেমে এলাম হরিদ্বারে, দুপুরে দাদা বৌদির হোটেলে ভাত ডাল আলুপটলের তরকারি পোস্ত সুক্তো আমের চাটনি পাঁপড় খেয়ে, হর কি পৌর ঘাটে অরুতি দেখে, গঙ্গায় চান করে রাতের ট্রেনে সোজা বাড়ি...... Post By:- Prasun Nandy
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |