কিছুদিন আগে লিখেছিলাম মেদিনীপুর জেলায় বেলদার কাছে একটি বিস্মৃতপ্রায় দ্রষ্টব্য কুরুমবেড়া দুর্গ নিয়ে। আজ লিখতে বসেছি ওই কুরুমবেড়ার কাছেই আর একটি প্রত্নতাত্বিক স্থান মোগলমারী নিয়ে।
মোগলমারী মেদিনীপুরের দাঁতন ব্লকের অন্তর্ভুক্ত স্থান। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে এক বিরাট বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। সম্প্রতি বলছি এই কারণে যে, এখানকার বৌদ্ধবিহারটি প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো হলেও দীর্ঘদিন আগেই এটি চলে গিয়েছিল লোকচক্ষুর অন্তরালে। দাঁতনের কাছে এই জায়গাটিতে দীর্ঘদিন ধরে দেখা যেত একটি ঢিবি, যেটিকে অনেকে বলতেন সখী সেনার ঢিবি। এই অঞ্চলের এক সামন্ত রাজা বিক্রমকেশরীর কন্যা সখীসেনার নামেই তার নামকরণ, আর এখানেই নাকি ছিল তাঁর অধ্যয়নকেন্দ্র। কিন্তু জনশ্রুতির সেই কাহিনি অতিক্রম করে এই ঢিবির কাছ থেকেই বিভিন্ন সময়ে গ্রামবাসীরা পেয়েছেন বিভিন্ন ধরণের ইঁট, মূর্তি, মুদ্রা ইত্যাদি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই দাঁতনের এক শিক্ষক আর ইতিহাসপ্রেমী নরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের সাহচর্যে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ডঃ অশোক দত্ত এখানে খনন কাজ শুরু করেন আজ থেকে মাত্র বছর পনেরো আগে ২০০৩ সালে। প্রথম পর্যায়ে ২০০৩-২০০৪ সালের এই খনন শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সালে বিভিন্ন পর্যায়ে দফায় দফায় এখানে খনন কাজ হয়েছে ২০১৫-১৬ অবধি, আর সেই খননের সঙ্গে সঙ্গেই উঠে এসেছে এখানকার একসময়ের বিশাল এক বৌদ্ধবিহারের ধ্বংসাবশেষ। আর খননের সেই কাজ যতই এগিয়েছে ততই ধারণা করা গেছে এই বিহারটির বিশালত্ব সম্পর্কে। হিউয়েন সাং তাঁর ভারত ভ্রমণের সময়ে ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ, বাংলার প্রাচীন তাম্রলিপ্ত এলাকার ১০টি বৌদ্ধ বিহারের উল্লেখ করেছেন, যার মধ্যে এখনো অবধি শুধুমাত্র এই মোগলমারী বিহারই আবিষ্কৃত হয়েছে। আর সেই বিহারের বিশালত্ব দেখে মনে করা হয়, এখনো অবধি আবিষ্কৃত এটাই বাংলার সবচাইতে বড় বুদ্ধবিহার। তাই এটিকে শুধু বিহার নয়, মহাবিহারই বলা চলে। আর প্রথমে এই বিহারের নাম সঠিকভাবে জানা না গেলেও ২০১৩-১৪ সালের সপ্তম পর্যায়ের খননের সময় এখানে একটি নাম ফলক উদ্ধার হয়, আর তখনই জানা যায় এই বিহারটির নাম – “শ্রীবন্দক মহাবিহার”। তবেঁ, জায়গার নামানুসারে এটির সাধারণ পরিচিতি “মোগলমারী বুদ্ধবিহার” নামেই। অনেকে বলেন বৌদ্ধ ধর্মের গৌরবের সময় এই জায়গার নাম ছিলো অমরাবতী। পরে ধীরে ধীরে এখানে বৌদ্ধ প্রভাবের অবলুপ্তি ঘটে, জায়গাটিও চলে যায় বিস্মৃতির অন্তরালে। ১৫৭৫ সালে এই এলাকাতেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল পাঠানদের সঙ্গে মোগলদের।যুদ্ধে শেষ অবধি মোগলরা জয়ী হলেও, মৃত্যু হয়েছিল অনেক মোগল সেনার। হয়তো সেই ঘটনা থেকেই এই মোগলমারী নাম । ইতিহাসের এই তথ্যটুকু মাথায় রেখে এবারে আসি আমার দেখা মোগলমারী বুদ্ধবিহারের কথায়। এখানে প্রথমেই একটা কথা বলে রাখা ভালো। প্রত্নতাত্বিক আগ্রহ বা ইতিহাসের চোখ নিয়ে দেখতে গেলে কিন্তু এই বিহার দেখতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু সেই সময় অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের হাতে থাকে না। তাই দেখতে হয় কিছুটা ওপর ওপর। সেই দেখায় আমার মন ভরে না, ইতিহাসের ফেলে আসা দিনগুলোকে ছুঁতে গিয়েও তাই সেভাবে ছোঁয়া আমার হয়ে ওঠে না। তবু যেটুকু দেখেছি সেটাও তো কম কিছু নয়। এক ফেলে আসা ইতিহাসের সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারছি, কিছুটা অনুভব করার চেষ্টা করছি সেদিনের সেই বিশাল বৌদ্ধবিহারের প্রাণচঞ্চল অথচ ধ্যানগম্ভীর পরিবেশ। বর্তমানের একবিংশ শতাব্দী থেকে এক লহমায় পিছিয়ে যাওয়া সেই ষষ্ঠ শতাব্দীতে, তাও তো কিছু কম কথা নয়। রাস্তার ওপরেই বিহারে প্রবেশের দরজা। বর্তমানে এটি রাজ্য পুরাতত্ত্ব দপ্তরের অধীনে। ভেতরে ঢুকে তিনটি ভাগে জায়গাটিকে দেখা যায়। ভেতরে প্রবেশের পর বাঁদিকে মূল ধংসাবশের অংশ, যার বেশীরভাগটাই এখন মাটির তলায়। ওপর থেকে কিছুটা আভাস পাওয়া যায় সেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিহারের বিভিন্ন প্রকোষ্ঠের। কোথাও ভেতরে যাওয়ার রাস্তা, কোথাও ভেঙে পড়া সিঁড়ি, আর কোথাও বিভিন্ন প্রকোষ্ঠ, আর সেই সঙ্গে বিহারের প্রাচীর। ওপর থেকে দেখলে শুধু একটা ধারণা করা যায় এই বিহারের, কারণ এখনো বেশীরভাগটাই আছে মাটির তলায়। ওখানেই শুনলাম, এই মুহূর্তে খননের কাজ হচ্ছে না, যতটুকু হয়েছে, নীচের থেকে কিছু প্রত্ন নিদর্শন উদ্ধার করে, আবার মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে, কারণ তা না হলে, ওপরের খোলা আবহাওয়ায়, ঝড়ে জলে, রোদে, বৃষ্টিতে ভঙ্গুর সেই বিহার হয়তো আরও বেশী করে ধ্বংসের সম্মুখীন হবে। মাটির তলায় যে বিহার আছে, তার বেশ কয়েকটি তলা আছে আর সেগুলির নির্মাণকাল ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে শুরু করে পরবর্তী আরো কিছু শতাব্দী জুড়ে মোট তিনটি পর্যায়ে। একেবারে প্রথম যুগের নির্মাণ আছে সবচাইতে তলায়, সেগুলি উদ্ধার করে লোকচক্ষুর সামনে আনতে বহু সময়, ধৈর্য্য, প্রযুক্তি আর সাবধানতা দরকার। তাই ২০০২ থেকে শুরু করে ২০১৫ -১৬ সাল অবধি কাজ হওয়ার পর এখন কাজ চলছে খুব সতর্কতার সঙ্গে। তবে প্রবেশপথের বাঁ দিকে যে অংশটির কথা এতক্ষন বললাম, সেখানে নয়, হচ্ছে ওই রাস্তা ধরে সোজা গিয়ে আরেকটি অংশে। এবারে দেখা যাক সেই অংশটি। গেট দিয়ে ঢুকে মূল ধ্বংসাবশেষের জায়গাটিকে বাঁ দিকে রেখে সোজা এগিয়ে গেলে ফাইবারগ্লাসের ছাউনি দিয়ে পুরো ঘেরা একটি জায়গা। সেখানেই ঐ বিহারটির একটি অংশ মাটি খুঁড়ে বার করে অনেকটা পরিষ্কার করে রাখা হয়েছে। সেই ছাউনির মধ্যে ঢুকে মাটির সিঁড়ি বেয়ে একটু নীচে নামতে হয়, আর চোখের সামনে ফুটে ওঠে সেই বিশাল ভবনের একটি সামান্য অংশ। তাতে দেওয়ালে প্রোথিত কিছু মূর্তি, আবার কিছু জায়গায় মূর্তির জন্যে খোপ করা থাকলেও কোন মূর্তি সেখানে নেই। পাশেই বড় প্ল্যাকার্ডে ছবির মাধ্যমে দেখানো আছে এখানে পাওয়া বিভিন্ন মূর্তি আর খননের পর বিহারের বিভিন্ন অংশের ছবি।এই অংশটি উদ্ধার করে তার সংরক্ষণের কাজ যে হচ্ছে, তা জায়গাটি দেখলেই বোঝা যায়। কিন্তু এ কাজ প্রচুর সময়সাপেক্ষ আর অনেক ধীরে ধীরে সাবধানে তা করতে হয়। তবে এখানে এসে দাঁড়ালে বোঝা যায় যে, কি বিশাল বিহার ছিল এটি। বাইরের ধ্বংসস্তূপের জায়গাটি ধরেও তা সমস্ত এলাকার একটি অংশ মাত্র। আসলে, মনে করা হয় যে পুরো গ্রাম জুড়েই এই বিহারের ব্যাপ্তি, চোখের সামনে যা দেখা যাচ্ছে, তা তার ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। এবার এখানকার আরেকটি ভাগ - একটি ছোট্ট মিউজিয়াম। গেট দিয়ে ঢুকে ডানদিকে মোগলমারী তরুণ সেবা সঙ্ঘ বলে একটি পাঠাগার আছে, আর তার ভেতরেই একটি অংশে এখানকার মোগলমারী মিউজিয়াম। সেখানে এই খনন কাজ থেকে পাওয়া ইঁট, মূর্তি, বাসন, গয়না এসবের কিছু সংগ্রহ রাখা আছে। শুনলাম এখানে নাকি মোট বাহান্ন রকমের ইঁট পাওয়া গেছে, সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে প্রচুর মূর্তি, মুদ্রা, ফলক, এমনকি সোনার পাতও। এ ছাড়া রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাজের সময় এখানে একদিনে, একসঙ্গে ৯৫ টি ব্রোঞ্জ মূর্তি পাওয়া গিয়েছিল, যা প্রত্নখননের ইতিহাসে এক অত্যন্ত বিরল দৃষ্টান্ত। তবে সে সব মূর্তি আছে রাজ্য প্রত্নতত্ব বিভাগের হেফাজতে, মোগলমারী মিউজিয়ামে আছে তার মাত্র সামান্য কিছু নিদর্শন। একটি মাত্র ছোট ঘরে সেই মিউজিয়াম, তাও আমি যখন যাই, সে সময় কারেন্টও ছিল না, তাই খুব ভালো করে যে দেখতে পেরেছি তাও নয়। তবু, সব মিলিয়ে এ ভ্রমণ রোমাঞ্চকর বইকি। যুগ যুগ ধরে এই ইতিহাস থেকে গেছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। এখন খুব ধীরে ধীরে হলেও সে সামনে আসছে, নিয়ে আসছে নতুন নতুন আবিষ্কারের সঙ্গে নতুন নতুন রোমাঞ্চ। ক্লাব ঘরের ভিতরে ভগবান বুদ্ধের ধ্যানমগ্ন প্রসন্ন ছবি, যুগ যুগ ধরে তিনি ধ্যানস্থ, অপেক্ষায় আছেন কবে তাঁর অনুগামীদের মন্ত্রে মন্দ্রিত এই মহাবিহার আবার কথা বলে উঠবে, সামনে নিয়ে আসবে তার সেই হারানো দিনের অনেক না বলা ইতিহাসকে। ভ্রমণ সহায়ক ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার - ইতিহাস সন্ধানী ও ব্লগার - শ্রী অমিতাভ গুপ্ত তথ্য সূত্র - অতনু প্রধান, অনিরুদ্ধ সরকার, আনন্দবাজার, বর্তমান, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, উইকিপিডিয়া
0 Comments
গন্তব্য পুরী.....
পুরী নামের সাথে বাঙালীর হৃদয়ের যোগ আছে, যতবার যাই নাকেন মনে হয় আবার যাই ... তেমনই এবার হঠাৎই ঠিক করলাম 25th Decemberএর ছুটি টা পুরীতেই কাটাবো কিন্তু ভাবলেই তো হবে না কথায় অাছে যগন্নাথদেব না টানলে পুরী যাওয়া যায় না কিন্তু এই প্রচন্ড high time এও যখন ট্রেনের reservation , hotel booking সব সুন্দর ভাবে হয়ে গেল তখন নিশ্চিত হলাম যগন্নাথ দেব সত্যি টেনেছেন ? যাই হোক নির্দিষ্ট দিন 23rd Decemberএ খুব সকালে ধৌলী এক্সপ্রেস রওনা হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে পৌঁছলাম পুরী... চার দিন ছিলাম , পুরীতে গিয়ে সমুদ্র সৈকত , ঢেউয়ের সাথে মিলে অনাবিল আনন্দ , কোনারক, উদয়গিড়ি, খন্ডগিড়ি , ধবলগিড়ি দর্শন এই সব আর বাঙালী কে নতুন করে বলার কিছু নেই তবে একটা কথা বলার আছে দেব দর্শন মিলেছে মন ভোরে ... এটা আমার খুব শান্তির জায়গা কেন সেটা না বলাই থাক ... আজ পুরী সম্বন্ধে যেটা বলবো সেটা অনেকেরই হয়তো জানা আবার অনেকেই হয়তো জানেন না তাদের জন্য বলি Toshilla 5 star hotel এর একটি beach এ এবার গেছিলাম আমার অসাধারণ লেগেছে , নির্জনতা যাদের প্রিয় তাদের জন্য একেবারে আদর্শ হতে পারে , তার পাশেই রয়েছে অপুর্ব nature camp রয়েছে হরিণ পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নাম না জানা নদী... সত্যি এ যেন এক অন্য পুরী ❤ সব শেষে বলি তার কথা যা না বললে বাঙালীর বেড়ানো সম্পুূর্ণ হয় না তাহোলো খাওয়া ?ভালো খাওয়া তো অনেক জায়গাতেই হয় এখন তো পুরীতে ভজোহরিমান্না ও হয়ে গেছে যদিও সেখানে আমার একদমই ভালো লাগেনি কারণ ব্যবসা হচ্ছে বেশি ... যাক্ সে কথা আমি এক মিষ্টির দোকানের কথা বলবো অনেকেই জানেন হয়তো মন্দিরের দক্ষিন দরজার বাঁ পাশের রাস্তা ধরে কিছুটা হেঁটে গেলেই মিলবে এই দোকান , দোকানটি দেখতে সুদৃশ্য নয় কিন্তু খেয়ে দেখবেন এখানকার মিষ্টি মূলত রাবড়ি কথা দিলাম মন ভোরে যাবেই যাবে.. ?শেষ করলাম লেখা রইল কিছু ছবি... ?❤
হুগলী জেলার ইটাচুনার কথা আগেই লিখেছি। এই ইটাচুনা থেকেই মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের পাণ্ডুয়া থেকে একটু ঘুরে আসা যায়, ওখানকার একটি প্রাচীন মিনার আর সেই সঙ্গে একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ দেখে।
পাণ্ডুয়ার মিনার - একটি বিশাল চত্বরের মধ্যে একদিকে এই মিনার আর র তার একটু দূরেই ওই মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। প্রায় সাতশ বছরের পুরনো এই মিনার, আনুমানিক ১৩৪০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ তৈরি। পাঁচতলা এই মিনারটি প্রথমে ছিলো চল্লিশ মিটার উঁচু, পরে ১৮৮৬ সালের ভূমিকম্পে ওপরের কিছু অংশ ভেঙে পড়ায় এর উচ্চতা কিছুটা কমে দাঁড়ায় আটত্রিশ মিটার। মিনারটি নীচে থেকে ওপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে উঠেছে, আর এর মাঝখানের তিনটি অংশ লম্বালম্বি ভাবে খাঁজকাটা বা grooved. মিনারের ওপরে ওঠার জন্য আছে ১৬১টি সিঁড়ি, যদিও ওপরে কাউকেই উঠতে দেওয়া হয় না। নীচের প্রবেশপথের দরজা চাবি দিয়ে বন্ধ, কিন্তু অবাক লাগে যখন দেখা যায় সেই দরজার দুপাশে কোন হিন্দু মন্দিরের কারুকাজ করা স্তম্ভ। শুধু তাই নয়, এই প্রবেশ পথের দুপাশে আরো আছে দুটি ছোট খিলানাকৃতি জায়গা, যার একটি শূন্য হলেও অন্যটির ভেতরে আছে কোনো হিন্দু দেবতার পাদপীঠের পাথর বা stone platform, যে ধরণের পাথরের ভিতের ওপরে সাধারণ ভাবে কোন মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকে। আর এখানেই আসে এই মিনারের ইতিহাসের কথা। বলা হয়, ওই সময়ে এখানকার রাজা ছিলেন পান্ডুরাজা, তাঁর সঙ্গে সংঘাত বাঁধে দিল্লির সুলতানের - মোটামুটি ১২৯০ থেকে ১২৯৫ সালের মধ্যে। সুলতানের বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে পান্ডুরাজার পরাজয় ঘটে। প্রবাদে বলা হয়, যে সেই পান্ডুরাজার রাজত্বে নাকি এক মন্ত্রপূত জলাশয় ছিল, যে জলের স্পর্শে মৃত ব্যক্তিও প্রাণ ফিরে পেত। সেই জলের গুণেই প্রথম দিকে সুলতানের বাহিনী যুদ্ধে সুবিধা করতে না পারলেও পরে কৌশলে সেই জলাশয়কে অপবিত্র করা হয়, এবং তার পরেই যুদ্ধে পান্ডুরাজার পরাজয় ঘটে এবং তিনি সপরিবারে গঙ্গায় ডুবে আত্মহত্যা করেন। সেই যুদ্ধেরই স্মারক হিসেবে এই মিনার তৈরি হয়, যা পরে পাশের ওই মসজিদের আজান মিনার হিসেবেও সম্ভবত ব্যবহার হতো। তবে মিনারের পাদদেশে ওই হিন্দু মন্দিরের কিছু নিদর্শন থাকার জন্য কেউ কেউ বলেন যে সেই যুদ্ধের পরে এই মিনার এখানকার প্রাচীন বিষ্ণু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপরেই তৈরি। বড়ী মসজিদ - পাণ্ডুয়ার ওই মিনারটির থেকে একটু দূরেই পাওয়া যায়, একটি বেশ বড় মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। এই মসজিদ তৈরি হয় আনুমানিক ১৩০০ সাল নাগাদ। সামনের দিকে ২১টি আর পাশের দিকে তিনটি খিলানাকৃতি দরজা নিয়ে বিশাল এই মসজিদ, যদিও এই দরজাগুলিরও শুধু চিহ্নই আছে এখন। মসজিদের মাথার ছাত সম্পূর্ণই ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু এখানেও মসজিদের গায়ে গায়ে হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের লক্ষণ স্পষ্ট। বিশেষভাবে যা চোখে পড়ে, তা হলো ধূসর রঙের ইঁটের তৈরি এই মসজিদের সমস্তটা জুড়েই প্রচুর কালো ব্যাসল্ট পাথরের স্তম্ভ, কোথাও দাঁড়িয়ে আছে আবার কোথাও হয়তো পড়ে আছে, কিন্তু সেই সমস্ত স্তম্ভেই সূক্ষ ফুল আর লতাপাতার কাজ, সেই সঙ্গে ছোট ছোট দেবদেবীর মূর্তির আভাস। ইঁটের তৈরি মসজিদের মাঝে এতগুলি কালো পাথরের স্তম্ভের উপস্থিতি হয়তো এখানে আরো প্রাচীন কোনো মন্দিরের উপস্থিতির সম্ভাবনাই নির্দেশ করে। তথ্যসুত্র -1) Pandooah - Rangan Dutta 2) Pandua - A Minar & Ruins of a Mosque - Anil Vohra 3) Wikipedia. ছবি - নিজস্ব ।
বাঙালি আর শীত শব্দদুটি অনেকটা নলেন গুড়ের মতোই আঁঠালো । আর এসবের সাথে যদি ছুটি যোগ হয় তাহলে অজৈব রসায়নের নিয়ম মাফিক তৈরী হয় ভ্রমণ পিপাসা । অগত্যা ভাবনা চিন্তা শুরু করতেই হলো যে এবারের ভ্রমণ বৃত্তান্তে কি যোগ করা যায়। চিন্তা শুরু করলেই তো হলোনা, আমাদের মতো বাঙালিদের জন্যই আজ কোথাও যাওয়ার ৪ মাস আগে থেকে পরিকল্পনা শুরু করতে হয়। কপালে ভাঁজ নিয়ে গরু খোঁজা শুরু। কোথাও ওয়েটিং লিস্ট সেঞ্চুরি করেছে তো কোথাও হাত তুলে দিয়ে বলছে আর নিতে পারবনা বস, ক্ষেমা দাও । ইন্টারনেট , ভ্রমণ , মগজ সব মিলেও যখন একটি ঘোরার মতো জায়গা আর irctc থেকে দুটি টিকিট জোগাড় করতে পারা যাচ্ছে না তখন হটাৎ ঘুমের মধ্যে অশরীরীর আনাগোনা উপলব্ধি করা গেলো । আর দেরি না করে তড়িঘড়ি রওনা দিলাম গয়া । ও কি, গয়া বলতেই মনের মধ্যে পিন্ড , প্রেত এসব এলো নাকি? এর বাইরে গয়ার একটা পরিচয় আছে। অদ্ভুত সুন্দর বিহারের এই জায়গাটির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে মৌর্য, গুপ্ত ও কুষান যুগের ইতিহাস। চলুন এবার জেনেনি আমাদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত।
১) গন্তব্যস্থল : বুদ্ধগয়া (Bodhgaya) ২) কেন যাবেন : অলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস , হাড় কাঁপানো শীত , ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট , নানা রঙে সাজানো আন্তর্জাতিক মন্দির , কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় লামা , চারিদিকে বুদ্ধের স্ত্রোত্র পাঠ আর গরম গরম তিবত্তী থুকপা যদি আপনাকে আকৃষ্ট করে, তো যেতে পারেন বুদ্ধগয়া।বিশেষ করে ডিসেম্বর আর জানুয়ারী মাসে এখানে দলায় লামার [উপস্থিতি থাকে বলে দেশ বিদেশ থেকে অগুনতি ভক্তের ভিড় দেখা যায়। তার সাথে পাল্লা দিয়ে আসে নানা রকম দোকান। কোথাও খাবার তো কোথাও হস্তশিল্প। ৩) কিভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে গয়া যাওয়ার ট্রেনের অভাব নেই। দিল্লিগামী সব ট্রেন গয়ার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। একরাতের যাত্রায় একদম কাকভোরে আপনি পৌঁছে যাবেন গয়া। সবথেকে ভালো ট্রেন হাওড়া যোধপুর এক্সপ্রেস। রাত ১১.৩৫ এ ছেড়ে গয়া পৌঁছে দেবে সকাল ৬.৩০ এ। স্টেশন এ নেমে একটু এগোলেই দেখতে পাবেন অটো আছে। এখানে রিসার্ভ বা শেয়ার দুটো বিকল্পই আছে। অনেকে শেয়ার নেয় আর মাঝের চারটে সিট এর টাকা দিয়ে ৩ জন বসে। তবে এটা তখন ই করা যাবে যখন আপনার luggage কম থাকবে। গয়া থেকে বুদ্ধগয়া যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট। শেয়ার অটো ভাড়া নেয় ৩০ টাকা প্রতি সিট আর রিসার্ভ নেয় ৩৫০-৪০০। অটোগুলো আপনাকে নামিয়ে দেবে পোস্ট অফিসের সামনে কারন অক্টোবর ২০১৮ থেকে main মন্দির (মহাবোধি ) এর সামনে গাড়ি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। তাই পোস্ট অফিস থেকে আপনাকে টোটো (লোকালে বলে e - রিকশা ) নিতে হবে। টোটো ভাড়া প্রতিজন ১০ টাকা। ৪) কোথায় থাকবেন : থাকার জন্য আপনি ফ্রি থেকে দিনপ্রতি ৫০০০ টাকার হোটেল পাবেন। হোটেল নেয়ার সময় চেষ্টা করবেন main মন্দিরের কাছাকাছি নেওয়ার কারণে সিটি থেকে দূরে নিলে ফেরার রাস্তা রাতে বেশ ফাঁকা হয়ে যায়। তাই আপনি মহাবোধি মন্দিরের রাতের সন্ধ্যা আরতি দেখতে পারবেন না। থাকার ভালো জায়গা হচ্ছে দামির মধ্যে সিদ্ধার্থ ইন্টারন্যাশনাল আর মঝারির মধ্যে satiya guest house . সাঁথিয়া গেস্ট হাউসের সুবিধা হলো এখান থেকে সব কটা মন্দির হাটা পথে দেখা যায়।বিহার ট্যুরিজমের তিনটি হোটেল আছে এখানে তবে একটু দূরে। ৫) কি দেখবেন : একের পর এক সুন্দর কারুকার্য করা মন্দিরে সাজানো বুদ্ধগয়া। এখানে পাবেন থাইল্যান্ড , বাংলাদেশ , চীন , জাপান , কম্বোডিয়া , ভুটান আরো অনেক দেশের মন্দির। সঙ্গে পাবেন ৮০ ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি। তবে সবথেকে বেশি নজর কাড়বে এখানকার সংগ্রহশালা। বুদ্ধগয়া খনন কালে যত শিল্পকর্ম পাওয়া গেছে সবই প্রায় এখানে আছে। এই সংগ্রহশালা শুক্রুবার বাদে রোজ খোলা থাকে। ৬) ফেরা : ফেরার জন্য গয়া হয়ে ফিরতে পারেন বা পাটনা হয়ে। বুদ্ধগয়া থেকে শেয়ার অটো গয়া স্টেশন অবধি পাবেন না। আপনাকে কাছারি মোড়ে গিয়ে স্টেশনের অটো নিতে হবে। অথবা শিকারিয়া মোড় থেকে পাওয়া যায়। খরচ একই ৩০ টাকা প্রতি সিট। গয়া থেকে পাটনার memu ট্রেন আছে। দিনে ৪ জোড়া সময় লাগে ৩.৩০ ঘন্টা। ৭) আনুসাঙ্গিক ঘোরাঘুরি : পুরো প্ল্যান টা এরম হলে সবচেয়ে ভালো হয় Day ১: গয়া সকালে পৌঁছে হোটেল এ পৌঁছে যান। একটু বিশ্রাম নিয়ে পায়ে হেটে ঘুরে নিন সব মন্দির। রাতে মহাবোধি মন্দিরে আরতি দেখুন day ২: সকালে গাড়ি নিয়ে চলে যান রাজগীর। বাসে যেতে চাইলে আপনাকে আগে গয়া যেতে হবে। গয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে আপনি বাস পাবেন। রাজগীরে হোটেল এ একটু বিশ্রাম নিয়ে টাঙ্গা তে করে ঘুরে নিন, রোপওয়ে চড়ুন। পরের দিন সকালে গাড়ি নিয়ে চলে যান নালন্দা আর পাওয়া পুরি জলমন্দির। বিকালে ট্রেন ধরুন বখতিয়ার পুর স্টেশন থেকে। ৮) আনুসাঙ্গিক তথ্য : i) গয়া থেকে বুদ্ধগয়ার রাস্তার অনেক বদনাম আছে। রাত্রে যাওয়া একদম avoid করবেন। ii) মহাবোধি মন্দিরে মোবাইল ফোন জমা রাখতে হয়। জমা রাখার দুটো কাউন্টার আছে। একটা মন্দির কতৃপক্ষের সেটাতেই ভিড় বেশি থাকে। সেটাতেই রাখার চেষ্টা করবেন iii) ক্যামেরা ব্যবহার করার জন্য কুপন নিতে হবে। ১০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ iv) বিহারে বাস খুব আস্তে চলে। যতটা পারবেন ট্রেনে যাতায়াত করবেন। v) শীতকালে দিল্লি থেকে আসা সব ট্রেন বেশ লেট করে। তাই ফেরার সময় গয়া দিয়ে না ফিরে পাটনা থেকে দুরন্ত নিতে পারেন। পাটনা অনেক বড়ো আর safe station গয়ার থেকে। vi) এর বাইরে দেখার অনেক জায়গা আছে যেমন গয়া তে বিষ্ণুপাদ মন্দির , সূর্য মন্দির , পাটনাতে কুমারহর। গয়া পুরো ঘুরতে একদিন লাগে , পাটনা দুদিন বৈশালি একদিন, বুদ্ধগয়া একদিন , রাজগীর দু দিন । vii) এটি ঐতিহাসিক জায়গা শুধু নয় , এটি একটি প্রবিত্র ধর্মস্থান ও। তাই নিজের পোশাক ব্যবহারে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। জায়গাটি খুব পরিষ্কার সেটাও রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। viii) বিহারের স্থানীয় বাসিন্দারা খুব helpful , দরকার হলে সাহায্য নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না
Parmadon Bibhutibhusan abhayaronyo......
Kolkata theke 110 km dure ache Parmadon sanctuary jar bhalo nam holo Bibhutibhusan abhayaronyo. Jodio sthanio Lok eke Parmadon bolei besi chene. Siter sakale gari niye raona dilam 8 nagad , Pouche gelam 12.30 pm. Kasba theke Ultodanga, Barasat, Habra, Bongano hoye Parmadon gram. Bole rakha bhalo j Ashoknagar theke Habra er modhye 3 te level Xing pore jeta perotei 40/45 minutes time lagbe. R elaka ta bes congested. Kintu tarpor rasta bes bhalo bises kore Bongaon er por jokhan high road theke ses 10 km gram er rastay dhukben. Parmadon e 2 ti guest house thakleo forest department er tai chalu royeche r ekti bondhyo. Main gate diye dhukei dan dike royeche Icchamoti nodi. 100 taka bhara nebe 30 minutes ghorate. Tarpor motamuti 1 ghanta lagbe forest er charpas ghurte. Jodio Kichu honuman r chital harin chara kichui Dekha jay ni. Nodir onyo par e ache Neel kuthi ja ekti bhanga Bari aj. Baire Kichu bhat er hotel ache, apni forest e dhokar samay meal order kore gele tara ready kore rakhbe. Khabar maan o kharap noi. Tai picnic korar icche thakle ghure astei paren Parmadon Sanctuary.
জুন ২০১৮
রঘুরাজপুর এর কথা আমি কখনো কারুর কাছে শুনিনি। পুরী এসে things to do করতে গিয়ে TripAdvisor এ প্রথম জানলাম। বাকিটা অনুভব করলাম গ্রামে পৌঁছে। পুরী থেকে আধঘণ্টার drive. গ্রামটিতে একশো চল্লিশ থেকে একশো পঞ্চাশটা ঘর অর্থাৎ পরিবার। প্রত্যেকেই পেশায় পটচিত্রকার। পটচিত্র যা কিনা পুরাণকথা বর্ণনা করে থাকে। শুনলাম গোড়ার দিকে গোটা কুড়ি ঘর ছিল আদতে এই শিল্পী, মূলত যাদের পদবী মহারাণা, মহাপাত্র, বারিকি। পরে যখন গ্রাম heritage village এর মর্যাদা পেল আরো কিছু ঘর এসে যোগ দিল। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এরা পটচিত্রকে বাঁচিয়ে চলেছে। আমাদের সমস্ত গ্রামবাসী প্রায় ছেঁকে ধরেছে শুধু ওদের কাজ দেখানোর জন্য নয়...ওদের কথা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কারণ সরকার ওদের জন্য সেভাবে কিছুই করেনি। প্রচারের আলো এসে না পৌঁছলেও ওরা আঁকড়ে ধরে আছে দেড়শো-দুশো বছর পুরনো ঠাকুর্দার করা কাজ, বিশেষত পারম্পরিক পটচিত্র যা দেখে বাবা শিখেছে, আবার বাবার কাছে ছেলের হাতেখড়ি। অনেকেই বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী। তারপরেও কী আকুতি...কিনতে হবেনা, একটু দেখে যান, আমাদের ভালো লাগবে, একটু বলবেন তো, পরের বার আসবেন তো..... বিশদে বলতে গেলে সত্যি কথা হল দেখতে হবে স্বচক্ষে। তবে হ্যাঁ গ্রামের শেষ ঘর, সেখানে অভিমন্যু বারিকি বলছিল ওদের পরিবার জগন্নাথ মন্দিরে সেবা করে। অর্থাৎ স্নানযাত্রার সময় যখন প্রভুর পনেরো দিন জ্বর থাকে তখন পটেই পুজো হয়। অভিমন্যু দেখাল কীভাবে দুটো কাপড় আঠা দিয়ে জুড়ে পাথরে ঘষে ঘষে পট তৈরি হয়। Acrylic নয়, ওরা natural colour ব্যবহার করে। খণ্ডনীল পাথর থেকে নীল রঙ, শঙ্খ থেকে শাদা, হেঙ্গুর পাথর থেকে লাল, হরিতার পাথর হলুদ, গেরিমাটি থেকে খয়েরি এবং কাজল থেকে কালো রঙ। পাথর grind করে হয় মণ্ড, মণ্ড থেকে রঙ। কৎবেল গাছের আঠা ব্যবহার করা হয় রঙ যাতে fade না হয়। অভিমন্যু দেখাল রাজবেশে জগন্নাথ সুভদ্রা বলরাম। বছরে চার বার রাজবেশ পরানো হয়। ওদের এই পটচিত্র হল চান্দুয়া style এ...মণ্ডলাও বলে কারণ গোল গোল করে এঁকে তার ভেতরে আবার কোনো কাহিনীবর্ণন। বৃত্তের ওপরে পাঁচ নিচে পাঁচ এভাবে দশাবতার থাকে চান্দুয়া পটচিত্রে। রঘুরাজপুর গ্রাম সম্পর্কে আরেকটি উল্লেখ্য বিষয় হল এটি ওডিসি নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মস্থান। দেখলাম তাঁর ভাইকে যিনি একমনে এঁকে চলেছেন গোবর থেকে বানানো বাঘ হাতি ঘোড়ার গায়ে। বৃদ্ধ কানে শোনেন না, প্রথমে খেয়ালও করেননি আমাদের। হঠাৎ দেখতে পেয়ে নিজের ভাষায় কথা বলে উঠলেন...ভাই এর ছবি আগলে রেখেছেন পরম যত্নে...সেও দেখালেন। অনুরোধ সবাইকে...পুরী বেড়াতে গেলে রঘুরাজপুর অবশ্যই যাবেন। কিছু না কিনলে ওরা জোর করবেনা, খুশি হবে শুধু গেলেই।
ঝাড়খন্ড রাজ্যের ঘাটশিলা থেকে কম / বেশি প্রায় কুড়ি কিলোমিটার দুরে যাদুগোড়ার শ্রী শ্রী রঙ্কিনী দেবী মায়ের পূজো দিয়ে যখন ফিরছিলাম,, তখন আমাদের অটোরিকশা চালক দাদা নিয়ে এলো প্রায় জনমানবহীন একটি পাহাড়ের পাদদেশে।। পাহাড়টির নাম সিদ্ধেশ্বর পাহাড়।। সঠিক পথ নির্দেশ দিতে পারবোনা,, কিন্তু ঘাটশিলা সাইট সিনের মধ্যে এই পাহাড়টি নাকি পরে।। বেশ জঙ্গলে পরিপূর্ণ পাহাড়ি পরিবেশ।। আমরা অটো থেকে নেমে পাহাড় চড়াই শুরু করে দিলাম।। আমার ব্যাক্তিগত ভাবে পাহাড় চড়াই উৎরাই এর খুব একটা শখ বা নেশা নেই।। কিন্তু আমার বন্ধু সমীর পন্ডিত ও প্রীতম নন্দীর খুব ভালো লাগছিল।। কারণ ওদের ট্রেকিং ট্যুর করার নেশা আছে।। ওদের পাহাড়, পর্বত আরোহণের শখ আছে।। সে যাই হোক,, আমার খুব একটা যাওয়ার ইচ্ছা করছিল না,, কিন্তু প্রিয় সমীরের অনুপ্রেরণায় কষ্ট করে পাহাড়ের চূড়ায় চলে এলাম।। পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি ছোট শিবমন্দির।। এখানে অবস্থান করছেন শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বর মহাদেব।। একজন স্থানীয় লোক পাহাড়ের চূড়ায় পর্যটকদের জলপান করার ব্যবস্থা করেছেন।। সামান্য কিছু অর্থ দিলে মন ভরে জলপান করা যায়,, সেই জল শিবের মাথায় দিয়ে জলাভিষেক করাও যায়।। একচুড়া বিশিষ্ট মন্দির।। লোহার গ্রিল দিয়ে ঘেরা।। কলাপসিবল গেটের সামনে রয়েছে পাথরের নন্দী ষাঁড়ের মুর্তি ও ছোট এক তুলসীমঞ্চ।। মন্দিরের মাঝখান বরাবর একটি ছোট কালো শিবলিঙ্গ রয়েছে,,মেঝে লাগোয়া যোনিপট্ট।। আমি কিছু নয়নতারা ফুল ও জলের বোতল নিয়ে মন্দিরে ঢুকলাম।। সেই নয়নতারা ফুল ও জল দিয়ে বাবা মহাদেবের পূজা দিলাম।। পাহাড়ি চড়াইয়ের সমস্ত কষ্ট নিমেষে উধাও হয়ে গেল।। গাছগাছালির হাওয়ায় গায়ের ঘাম শুকিয়ে গেলো।। বেশকিছুক্ষণ ধরে শিব তান্ডব স্তোত্র পাঠ করে চলে এলাম নন্দী ষাঁড়ের কাছে,, ওনাকেও নমস্কার করে চোখ পড়লো চারিদিকের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দিকে।। দুরে দেখা যায় গালুডি বাঁধ ও সুবর্ণরেখা নদীর ধারা।। মন্দিরের পিছনে রয়েছে একটি ছোট বন্ধ ঘর।। জানতে পারলাম যে বাৎসরিক উৎসবের সময় ওখানে সিদ্ধেশ্বর মহাদেবের ভোগ রান্না হয়।। তারপাশে কতগুলো পাথর পর পর সারিবদ্ধভাবে সাজানো হয়েছে।। সেটার কারণ আমি ঠিক জানতে পারলাম না।।
চেনা জায়গার ছবিতে গল্প......
এই গ্রুপের অনেকেই ঘুরে এসেছেন, এক বা বহুবার । কিংবা অদূর ভবিষ্যতে যাবেন। নাম তো অবশ্যই শুনেছেন । সুতরাং, যাতায়াতের ও থাকার খবর না দিলেও চলবে । মুকুটমনিপুর ঘুরতে গেলে বাঁধের ওপর তৈরী চমৎকার চওড়া রাস্তাটার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত পর্যন্ত চক্কর দিলে কী কী সৌন্দর্য আপনার জন্য ডালি সাজিয়ে বসে আছে, তার বর্ননা দেওয়ার প্রয়োজন বোধহয় আর নেই । গাড়ি নিয়ে কিছু দূরে যে যে জায়গায় একবেলার মধ্যে ঘুরে আসা যায় যেমন ঝিলিমিলি, রাণীবাঁধ, সুতান, তালবেড়িয়া, ইত্যাদিও আপনাদের অজানা নয় । বিষ্ণুপুরের পুরাকীর্তির সাথে উপরি পাওনা 'পোড়ামাটির হাট' এর খবরও এই গ্রুপে পেয়েছেন আগেই । সেখানে প্রতি শনিবার বেলা ১টা থেকে গ্রাম্য কেনাবেচার সঙ্গে আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনাও আপনাদের জানা খবর । গত ৩ - ৫ই জানুয়ারী এইসব জায়গায় কিছু ভালোলাগা সময় কাটিয়ে এসে মনে হলো আপনাদের কাছে ছবির মাধ্যমে 'অধিকন্তু ন দোষায়' মার্কা বৃত্তান্ত তুলে ধরি । নিজের ভালোলাগাকে ভালোলাগার মানুষদের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে, সেই ভালোলাগাকে বাড়িয়ে নেবার একটু 'স্বার্থপর' প্রচেষ্টা, এই আর কী । আবার তীর্থযাত্রায়। আবার সেই বীরভূম। আজ নানুর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ঊচকরণ গ্রামের চারটি শিবমন্দির দেখে এলাম। আজও একবার পৌষমেলায় ঘুরে এলাম।
স্থানীয় ধনী পরিবারের হরেন্দ্রনাথ সরখেল কর্তৃক ১৭৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চারটি চারচালা মন্দিরের টেরাকোটার কাজ এককথায় অসাধারণ, আরও এই কারনে যে এই কাজগুলি খুব ভালো অবস্থায় আছে। কয়েকটি অসাধারণ টেরাকোটা ফলকের ছবি দেখাচ্ছি, পরে বিস্তারিত লিখবো। ১) হরিহর মূর্তি। ২) অর্ধনারীশ্বর (হরগৌরী)। ৩) ঢেকিতে উপবিষ্ট নারদ। ৪) শ্মশান কালী ও সিদ্ধেশ্বরী কালী পাশাপাশি। ৫) চার মাথা যুক্ত ব্রহ্মা (টেরাকোটায় সাধারণতঃ তিনটি মাথা দৃশ্যমান থাকে)। ৬) যুদ্ধরত রাবণের একটি মাথা তিরবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে (অনেকে দুটি মাথা বললেও দ্বিতীয় মাথাটি খুব সম্ভবতঃ রাবণের নয়, কারন রাবণের ঘাড়ে ৯টি মাথা দেখা যাচ্ছে)। ৭) টোপর পরা বর-বউ পাশা খেলছে (সম্ভবতঃ স্ত্রী-আচারের অংশ)। ৮) গরুড়ের পিঠে নারায়ণ (খগেন্দ্র রূপে)। ৯) ষড়ভূজ গৌরাঙ্গ। প্রথমে নানুর যান। বোলপুর থেকে কাটোয়া যাওয়ার রাস্তায় বোলপুর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নানুর (ওখানে গেলে চণ্ডীদাসের ভিটে ও বাশুলী মন্দির দেখতে ভুলবেন না)। নানুর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে উচকরণ গ্রাম। নানুর থেকে টোটো রিজার্ভ করে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো, কেননা গ্রামের মধ্যে ঢুকতে গেলে টোটোই সেফ অপশন। একটি ভ্রমণ গ্রুপে প্রথম গনগনি,বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সম্পর্কে জানতে পারি।লাল-কমলা-সবুজ মেশানো অদ্ভুত ভূমিরূপের প্রেমে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের গনগনির পথে পা বাড়িয়ে দিলাম। ২৭শে ডিসেম্বর,সকাল ৭টা ৫৫মিনিটে সাঁতরাগাছি থেকে আরণ্যক এক্সপ্রেসে চেপে আমারা আমাদের যাত্রা শুরু করি। যদিও আমাদের আরণ্যক এক্সপ্রেসে যাওয়ার কথা ছিল না,সকাল ৬টা ২৫ এর রূপসী বাংলা করে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু,ওলা ক্যাবের উপর অগাধ বিশ্বাস রাখার দরুণ আর সাঁতরাগাছি ব্রিজে ট্র্যাফিক জ্যামের জন্য আমরা ট্রেন মিস করি। আমরা সকাল ১১টায় গড়বেতা স্টেশনে নেমে টোটো ধরে(ভাড়া জনপ্রতি ২০টাকা) আগে থেকে বুক করে রাখা আপ্যায়ন লজে উঠি।হোটেলের রুম মোটামুটি পরিচ্ছন্ন (এসি ও গিজার আছে)।এরপর হোটেলে ভাত,ডাল,সবজি,মাছ,চাটনি খেয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ি গনগনির উদ্দেশ্যে (আমরা ছ'জন ছিলাম,সুমো ভাড়া নিই ৪০০টাকায়,এমনিতে টোটো ভাড়া ১০০-১৫০টাকা)। প্রথমে আমরা বিখ্যাত সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে যাই।মন্দিরে দুপুর ১টার মধ্যে ভোগ খাওয়ার (জনপ্রতি ৫০টাকা) আছে।ওড়িশার স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মন্দিরটি এবং মন্দিরের মাতার বিগ্রহটি অপূর্ব।বিগ্রহের ছবি তোলা নিষেধ। এরপর আমাদের গন্তব্য দ্বাদশ শিবালয় নামের একটি বহু প্রাচীন শিবমন্দির। মন্দিরে ১২টি শিবের পৃথক মন্দির,একটি জলাশয়(রক্ষণাবেক্ষণের অভাব পরিলক্ষিত) আছে। এরপর আমাদের গন্তব্য গনগনি।গনগনি পৌঁছে বুঝতে পারলাম কেন আমেরিকার অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সাথে গনগনির তুলনা করা হয়। শিলাবতী নদীর ক্ষয় কার্যের ফলে তৈরি প্রায় 70 ফুট নিচু গিরিখাত এক অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।লাল ল্যাটেরাইট পাথর আর মাটি বাতাস আর জলের ক্ষয়কার্যের ফলে নানারূপের প্রাকৃতিক ভাস্কর্য তৈরি করেছে। লালমাটি,শিলাবতী নদী,ইউক্যালিপটাস আর আকাশমনি গাছের জঙ্গল যেন শিল্পীর তুলির টানে পটে আঁকা সুন্দর ফ্রেম। যাওয়ার সময় লালমাটির আঁকাবাঁকা পথের দুদিকে ঘন জঙ্গল।গিরিখাত এর নিচে নামার জন্য রয়েছে আঁকা বাঁকা সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে একেবারে নদীর তটে পৌঁছে যেতে পারেন কিংবা হারিয়ে যেতে পারেন গিরিখাত এর গুহায়। চারপাশে শুধু গুহা,ভাঙা দুর্গ বা অদ্ভুত ভূমিরূপ।কথিত আছে,ভীম ও বকাসুরের যুদ্ধের সময় দুই যোদ্ধার পদচালনায় এখানের এইরূপ ভূমির প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হয়েছে। আমরা গনগনির সূর্যাস্তর লাল রং মেখে হোটেলে ফিরে এলাম।রাতে হোটেল থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথের দূরে একটি খাওয়ার হোটেলে(সস্তা কিন্তু ভালো গুণমানের)রাতের খাওয়ার খেলাম।
পরদিন সকালে টিফিন খেয়ে ভাড়ার গাড়ি(১৫০০টাকা;ওমনি নিলে ১২০০টাকা)করে বিষ্ণুপুরের দিকে রওনা দিলাম।প্রায় আধঘণ্টা লালমাটির রাস্তায় চলার পর আমরা পৌঁছলাম বিষ্ণুপুরে। প্রথমে গেলাম রাসমঞ্চে।ওখানে টিকিট কাটতে হলো।ঐ টিকিট দেখিয়ে সব মন্দিরে যাওয়া যাবে।
আমরা রাসমঞ্চ,রাধামাধব মন্দির,শ্যামরাই এর মন্দির,পাথর দরজা, মদনমোহন মন্দির, লালজী মন্দির,ছিন্নমস্তার মন্দির,দলমাদল কামান,মা মৃন্ময়ীর মন্দির,জোড় বাংলা মন্দির প্রমুখ মন্দির দেখলাম। প্রত্যক্ষ করলাম প্রতিটি মন্দিরের গায়ে টেরাকোটা শৈলীতে নির্মিত মহাভারত, রামায়ণ,বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন চিত্র। মধ্যাহ্নভোজন করলাম ছিন্নমস্তা মন্দিরের কাছের বিরিয়ানি হাউসে।পোড়া মাটির জিনিসপত্র কেনাকাটাও পথের পাশের দোকানে করলাম। বাঁকুড়ার মল্লরাজাদের তৈরি পোড়া মাটির টেরাকোটা শৈলীর ল্যাটেরাইট বা মাকড়া পাথরের অপূর্ব ভাস্কর্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেছিলাম ইতিহাসের পাতায়।আজ মল্লরাজারা নেই, কিন্তু তাঁদের সময়ে তৈরি সেই অপূর্ব ভাস্কর্য আজো দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।তবে তারা আজ বৃদ্ধ, জীর্ণ, জরাগ্রস্ত। সন্ধ্যার বিষন্নতা মেখে ফিরে এলাম আবার গড়বেতার হোটেলে।সেদিন রাতটা হোটেলে কাটিয়ে পরদিন সকাল ৭টা ৫০মিনিটের হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস গড়বেতা স্টেশন থেকে ধরে হাওড়া ফিরে এলাম আর সাথে নিয়ে এলাম একমুঠো গনগনি আর বিষ্ণুপুরের সুন্দর স্মৃতি। তবে গনগনিতে বহু থার্মোকলের ব্যবহৃত থালা,বোতল পড়ে থাকতে দেখলাম যা পরিবেশ দূষণ করছে। এসম্পর্কে আমাদের নিজেদের সচেতন থাকা উচিত।
কিভাবে যাবেন:
রেল বা সড়ক দুভাবেই গড়বেতা যাওয়া যায়। সাঁতরাগাছি থেকে রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস (সকাল 6.30), শালিমার থেকে( সকাল 7.45) আরন্যক এক্সপ্রেস এ চেপে গড়বেতা নামতে হবে । গড়বেতা থেকে টোটোতে দশমিনিটে গড়বেতা। যদি সেদিনই ফিরতে চান বিকেল ৩টে ২০তে আরণ্যক এক্সপ্রেস আছে গড়বেতা স্টেশন থেকে। গড়বেতা থেকে বিষ্ণুপুর ট্রেনে করেও যাওয়া যায়।ট্রেনে কুড়ি মিনিট সময় লাগে। থাকার ব্যবস্থা: গনগনিতে থাকার ব্যবস্থা নেই।গড়বেতাতে থাকতে হবে।সোনাঝুরি গেস্টহাউস (৯৫৪৭৫১৪০৩০),আপ্যায়ন লজ(৮৩৪৮৬৯৪৮০১), শ্যামভবন ধর্মশালা (৯৮৩২৭৪২২৯৩) এ থাকার ব্যবস্থা আছে।ভাড়া ৫০০/১০০০টাকার মধ্যে। |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |