হুগলী জেলার ইটাচুনার কথা আগেই লিখেছি। এই ইটাচুনা থেকেই মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের পাণ্ডুয়া থেকে একটু ঘুরে আসা যায়, ওখানকার একটি প্রাচীন মিনার আর সেই সঙ্গে একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ দেখে।
পাণ্ডুয়ার মিনার - একটি বিশাল চত্বরের মধ্যে একদিকে এই মিনার আর র তার একটু দূরেই ওই মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। প্রায় সাতশ বছরের পুরনো এই মিনার, আনুমানিক ১৩৪০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ তৈরি। পাঁচতলা এই মিনারটি প্রথমে ছিলো চল্লিশ মিটার উঁচু, পরে ১৮৮৬ সালের ভূমিকম্পে ওপরের কিছু অংশ ভেঙে পড়ায় এর উচ্চতা কিছুটা কমে দাঁড়ায় আটত্রিশ মিটার। মিনারটি নীচে থেকে ওপরের দিকে ক্রমশ সরু হয়ে উঠেছে, আর এর মাঝখানের তিনটি অংশ লম্বালম্বি ভাবে খাঁজকাটা বা grooved. মিনারের ওপরে ওঠার জন্য আছে ১৬১টি সিঁড়ি, যদিও ওপরে কাউকেই উঠতে দেওয়া হয় না। নীচের প্রবেশপথের দরজা চাবি দিয়ে বন্ধ, কিন্তু অবাক লাগে যখন দেখা যায় সেই দরজার দুপাশে কোন হিন্দু মন্দিরের কারুকাজ করা স্তম্ভ। শুধু তাই নয়, এই প্রবেশ পথের দুপাশে আরো আছে দুটি ছোট খিলানাকৃতি জায়গা, যার একটি শূন্য হলেও অন্যটির ভেতরে আছে কোনো হিন্দু দেবতার পাদপীঠের পাথর বা stone platform, যে ধরণের পাথরের ভিতের ওপরে সাধারণ ভাবে কোন মূর্তি দাঁড়িয়ে থাকে। আর এখানেই আসে এই মিনারের ইতিহাসের কথা। বলা হয়, ওই সময়ে এখানকার রাজা ছিলেন পান্ডুরাজা, তাঁর সঙ্গে সংঘাত বাঁধে দিল্লির সুলতানের - মোটামুটি ১২৯০ থেকে ১২৯৫ সালের মধ্যে। সুলতানের বাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে পান্ডুরাজার পরাজয় ঘটে। প্রবাদে বলা হয়, যে সেই পান্ডুরাজার রাজত্বে নাকি এক মন্ত্রপূত জলাশয় ছিল, যে জলের স্পর্শে মৃত ব্যক্তিও প্রাণ ফিরে পেত। সেই জলের গুণেই প্রথম দিকে সুলতানের বাহিনী যুদ্ধে সুবিধা করতে না পারলেও পরে কৌশলে সেই জলাশয়কে অপবিত্র করা হয়, এবং তার পরেই যুদ্ধে পান্ডুরাজার পরাজয় ঘটে এবং তিনি সপরিবারে গঙ্গায় ডুবে আত্মহত্যা করেন। সেই যুদ্ধেরই স্মারক হিসেবে এই মিনার তৈরি হয়, যা পরে পাশের ওই মসজিদের আজান মিনার হিসেবেও সম্ভবত ব্যবহার হতো। তবে মিনারের পাদদেশে ওই হিন্দু মন্দিরের কিছু নিদর্শন থাকার জন্য কেউ কেউ বলেন যে সেই যুদ্ধের পরে এই মিনার এখানকার প্রাচীন বিষ্ণু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপরেই তৈরি। বড়ী মসজিদ - পাণ্ডুয়ার ওই মিনারটির থেকে একটু দূরেই পাওয়া যায়, একটি বেশ বড় মসজিদের ধ্বংসাবশেষ। এই মসজিদ তৈরি হয় আনুমানিক ১৩০০ সাল নাগাদ। সামনের দিকে ২১টি আর পাশের দিকে তিনটি খিলানাকৃতি দরজা নিয়ে বিশাল এই মসজিদ, যদিও এই দরজাগুলিরও শুধু চিহ্নই আছে এখন। মসজিদের মাথার ছাত সম্পূর্ণই ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু এখানেও মসজিদের গায়ে গায়ে হিন্দু মন্দির স্থাপত্যের লক্ষণ স্পষ্ট। বিশেষভাবে যা চোখে পড়ে, তা হলো ধূসর রঙের ইঁটের তৈরি এই মসজিদের সমস্তটা জুড়েই প্রচুর কালো ব্যাসল্ট পাথরের স্তম্ভ, কোথাও দাঁড়িয়ে আছে আবার কোথাও হয়তো পড়ে আছে, কিন্তু সেই সমস্ত স্তম্ভেই সূক্ষ ফুল আর লতাপাতার কাজ, সেই সঙ্গে ছোট ছোট দেবদেবীর মূর্তির আভাস। ইঁটের তৈরি মসজিদের মাঝে এতগুলি কালো পাথরের স্তম্ভের উপস্থিতি হয়তো এখানে আরো প্রাচীন কোনো মন্দিরের উপস্থিতির সম্ভাবনাই নির্দেশ করে। তথ্যসুত্র -1) Pandooah - Rangan Dutta 2) Pandua - A Minar & Ruins of a Mosque - Anil Vohra 3) Wikipedia. ছবি - নিজস্ব ।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |