যারা আমার এইরকম লেখা পড়ে গাল দেবেন বলে ঠিক করেছেন তাদেরকে আগে থেকেই আমার জাদু কি ঝাপ্পি। আর যারা ভুল করে প্রশংসা করবেন বলে ভাবছেন তাদের বলছি আমি আপনার মতো ভালো মানুষ জীবনে দেখিনি। মাইরি বলছি, থ্যাংকিউ। আয় আয় কে যাবি আয় কে মন হারাবি এক মুঠো রোদ ধরতে------------ এই এটা কে রে, যে দেশে বারো মাসের মধ্যে এগারো মাস গ্রীষ্মকাল সেখানে একমুঠো রোদ ধরার নেমন্তন্ন কার্ড বিলিয়ে বেরোচ্ছে। ব্যাটা নির্ঘাত পাগলা না হয় নেশা করেছে। সত্যি বলছি আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে আমিও ঠিক এই রকমটাই ভাবতাম। কিন্তু কি করবো বলুন আজ যে জায়গার গল্প শোনাব সেখানে এই একমুঠো রোদই ইনফিনিটি স্টোনের সমান শক্তি যোগাতে পারে। গল্প শোনাব তিনচুলে, সিলারিগাও, সাংসীর এর। আরে দুর মশাই যারা একটু ফেসবুকে ট্রাভেল গ্রুপে ঘাঁটাঘাঁটি করে তারা সবাই তিনচুলে, সিলারিগাও নিয়ে রিসার্চ করে ফেলেছে । হুম তাও বটে, কিন্তু সাংসীর ? হলো তো, সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন চলে এলো তো। চিন্তা নেই নতুন চ্যাপ্টার মুখস্থ করিয়ে দিচ্ছি। তার আগে পুরোনো চ্যাপ্টার গুলো একটু ঝালিয়ে নিতে হবে। তিনচুলে দাদাদের বলছি, স্কুল লাইফের সেই হাতুড়ির বাড়ি মনে আছে? সেই আপনি যখন সবে বারো ক্লাসে উঠেছেন আর পাড়ার মেয়ে তিন্নি টেনে। সরস্বতী পুজোর দিন প্রথম বার তিন্নিকে শাড়ি পরে খোলা চুলে দেখলেন। তিন্নির সেই হঠাৎ বড়ো হয়ে ওঠা রূপ আপনার বুকে যে হাতুড়ির বাড়ি মেরেছিল, প্রকৃতি প্রেমিদের বুকে সেই একই রকমের ভালো লাগার হাতুড়ির বাড়ি মারবে এই তিনচুলে। দার্জিলিং, গ্যাংটকে যেখানে হোটেল আর দোকানের ভিড়ে পাহাড়টাকেই ঠিকমতো খুঁজে পাওয়া যায় না, তিনচুলেতে আজও সেই পাহাড়ের বড়ো হয়ে ওঠা রূপটা দেখতে পাবেন। আমরা উঠেছিলাম রাই রিসর্টে। তিনচুলেতে মাত্র তিন চারটে থাকার জায়গা। আমার মতে রাই রিসর্টের লোকেশন সব থেকে ভালো। রাত্রি বেলায় রিসর্টের বারান্দায় দাড়িয়ে দূরের পাহাড় গুলোতে তারার মতো আলোক বিন্দু আর আকাশের তারাদের একসাথে মিলে যাওয়া স্মৃতির মণিকোঠায় সারা জীবনের জন্য স্থান করে নেবেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় বের হয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। সামনে এ কি দেখছি, দৌড়ে গিয়ে সব ঘর থেকে বাকিদের ডেকে নিয়ে আসলাম। মনে হচ্ছিল হাত বাড়িয়ে এক মুঠো কাঞ্চনজঙ্ঘা ধরে নিতে পারবো। আকাশ টাও যেন পশ্চিমবঙ্গের ব্রান্ড কালার নীল সাদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আমাদের পাঁচ দিনের জন্য বুকিং করা গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লামাহাটা, গুম্বা দাড়া, তাক্দা সাইট সিইং এর উদ্দেশ্যে। প্রতিটা জায়গাই অসাধারণ। আর হ্যাঁ, তিন্নি কে প্রেম নিবেদন করার পর ওর বাবা যখন আপনার বাবাকে তার বাবার নাম ভুলিয়ে দিয়ে গিয়েছিল তখন আপনার উপর কি প্রভাব পরেছিল মনে আছে? সাত দিন যেখানেই বসতে যান উড়ি বাবাগো মাগো। সে ব্যথা নস্যি মনে হবে পরের দিন আমারা যা ব্যথা পেলাম তার কাছে । আগের দিন কাঞ্চনজঙ্ঘার ওই রূপ দেখে উত্তেজিত হয়ে সকাল চারটে থেকে বারান্দায় চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছি, কিন্তু তোমার দেখা নাই গো তোমার দেখা নাই। সকাল দশটায় আমরা বের হলাম আমাদের গন্তব্য সিলারিগাও এর দিকে। আবার এক চমক আমরা গাড়ীতে উঠতে যাবো ঠিক সেই সময় রাই পরিবারের মহিলারা আমাদের প্রত্যেকের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে বিদায় সম্বর্ধনা জানালো। শুরু হলো আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা।তিনচুলে থেকে সিলারিগাও যাওয়ার পথে আমরা গিয়েছিলাম বড়া মাংওয়া। অপূর্ব এক হার্বাল গার্ডেন আর অরগানিক ফ্রুট জুস ফ্যাক্টরি দেখে আমরা পৌছালাম সিলারিগাও। রাই রিসর্টের যোগাযোগ মোবাইল - 9733242876 / 8436513757 / 9733281506 ই মেল - [email protected] সিলারিগাও দিদিদের বলছি, ধরুন না আপনিই সেই তিন্নি। রাকেশের সাথে পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর একদিন বাড়িতে জানাজানি, দেখা সাখ্যাৎ পুরো বন্ধ এক মাস ধরে। এই সময় এক বান্ধবীর জন্মদিনে যাওয়ার নাম করে ধাঁ। ব্যারাকপুরের গান্ধী ঘাটে গঙ্গার ধারে বেঞ্চের উপর একে অপরের হাতে হাত রেখে রাকেশের বুকে মাথা রেখে বসে যে পরিতৃপ্তি অনুভব করেছিলেন, সিলারিগাওয়ের নির্মলা হোমস্টের বাইরের উঠানে বসে আপনি যখন ওই উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন সেই দিনের কথা মনেপড়ে যাবে। নির্মলা হোমস্টে এখানের সবথেকে উঁচুতে অবস্থিত এবং সবথেকে বড় আর সুন্দর হোমস্টে। এ যেন এক মেঘের দেশ। আমরা শহরের মানুষরা পাহাড়ের চূড়ায় যখন মেঘ ভেসে যেতে দেখি তখন মনে হয় আহা যদি ওই মেঘটাকে ছুঁতে পারতাম , সিলারিগাও আপনাকে সেই দিবা স্বপ্ন পূরণ করে দেবে। ঘরের বাইরে বিশাল খোলা চত্বরে যতবার এসে দাঁড়িয়েছি কোথা থেকে মেঘ ভেসে এসে সারা শরীরে চুম্বন করে যাচ্ছে। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা হয়তো এক মুঠো রোদ ধরার জন্য ছটফট করে কিন্তু আমারা শহুরে জীবনের লোকেরা এই এক আকাশ মেঘের শরীরে স্পর্শ অনুভব করতে নিজের থেকে নিজেকে মুক্ত করে দিতেও তৈরি। মাত্র বত্রিশটি পরিবার নিয়ে তৈরি এই সুন্দর ছিমছাম সিলারিগাও। নির্মলা হোমস্টেতে এক রাত কাটিয়ে আমরা পরের দিন চললাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সাংসীর এর উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে আমরা গিয়েছিলাম রামধুরা, ইচ্ছে গাও, ডেলো হয়ে। প্রত্যেকটা জায়গা পাহাড় এক একটা ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে হাজির। নির্মলা হোমস্টে মোবাইল- 9635005318 / 7063303741 সাংসীর অ্যা.. বুড়ো বয়সে রস উথলে পরছে। বলি কাল অফিস থেকে ফেরার পথে আটা আর নুন নিয়ে আসতে বলে ছিলাম সেকথা মনে আছে। বিয়ের পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত, জীবন টা শুধু ওই আটা আর নুন এতেই আটকে গেছে, রোম্যান্স টোম্যান্স সব হাওয়া। এই সময় যদি আপনি আপনার জীবনটাকে ফিরে পেতে চান তাহলে একবার আসতেই হবে এই সাংসীর জায়গাটিতে। এই নির্জন নিস্তব্ধতা আপনাকে নিজেকে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। কে কে হোমস্টে এখানকার একমাত্র হোমস্টে। আমাদের এই সফরের সেরা আবিষ্কার। আমদের বহু সময় পাহাড়ে যেতে যেতে মনে হয় পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা ওই ছোট্ট বাড়িগুলোতে যদি কয়েকদিন থাকতে পারতাম। এই কে কে হোমস্টে আপনার সেই মনের আশা পূরণ করে দেবে। এখানকার মালিক সরিফ রাইয়ের পছন্দের বাহবা দিতেই হবে। পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা সুন্দর একটা হোমস্টে, একটা সুন্দর ফুল ও ফলের বাগান। আমরা পৌছাবার সাথে সাথেই মালিকের পোষা জার্মান সেফার্ড কুকুর শিম্বা আমাদের গাড়ীর দরজায় লাফ দিয়ে উঠে এলো আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে। আমরা গাড়ী থেকে নামতেই সে আনন্দে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি শুরু করলো। এই প্রথমবার পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে কাশার থালায় বাগানের শাক, কুমড়ো ফুলের বড়া, বাগানের ঝিঙের তরকারি, নিজের বাগানের টমেটো দিয়ে তৈরি মাংস এসব খেতে পেলাম। প্রথম বার বাথরুমে গিয়ে তোয়ালের বদলে গামছা দেখলাম। ভগবান মনে হয় অনেক সময় নিয়ে নিজের হাতে এই সাংসীর জায়গাটাকে সাজিয়েছে। এখানেও সিলারিগাওয়ের মতো মেঘের অবাধ আনাগোনা লেগেই থাকে। রাতে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ আরো রোমান্টিক হয়ে উঠে ছিল। পরের দিন সকালে ফেরার সময় দেখি সিম্বা মুখ ঘুরিয়ে উপরে উঠে বসে আছে। ডাকলেও সারা দিচ্ছে না। মালিক জানালো গাড়ীতে ব্যাগ উঠাতে দেখে ও বুঝতে পেরেছে আমরা চলে যাচ্ছি। টুরিস্টরা চলে যাওয়ার সময় ও নাকি এইরকমটাই অভিমান করে। যারা একটু অফবিট জায়গা ঘুরতে পছন্দ করেন অবশ্যই এই জায়গাটাকে লিস্টে রাখবেন। কে কে হোমস্টে মোবাইল- 8906103700 / 7031048087 এন জি পি তে নামার পথে আমরা গিয়েছিলাম বেঙ্গল সাফারিতে। সেবক রোডের ধারে এই জায়গাটা 2014 সালে উদ্বোধন হয়। অন্যান্য জঙ্গল সাফারির মতোই এখানে আমরা গাড়ীর ভিতরে আর হরিণ, ময়ূর, চিতা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এরা বাইরে। তার সাথে আছে এলিফ্যান্ট সাফারি। পশ্চিমবঙ্গের অথবা সিকিমের কোন জায়গায় ঘুরতে গেলে ফেরার পথে অবশ্যই লিস্টে রাখতে পারেন এই বেঙ্গল সাফারি। Post By-Sandip Dutta
0 Comments
দিন কয়েক আগে যাওয়া হয়েছিল পাহাড়ি গ্রাম তিঞ্চুলে তে...সত্যি বলতে চরম ব্যস্ততা ভরা এই শহুরে জীবন থেকে অনেকটাই দূরে প্রকৃতির কাছাকাছি ফরেস্ট আর চাবাগানে ঘেরা শান্তির দেশ এই তিঞ্চুলে...প্রচুর আড্ডা,ঘরোয়া পাহাড়ি খাবার, মনেস্ট্রির মন্ত্রধ্বনি, কেভ পয়েন্ট ট্র্যেক সবকিছু নিয়ে দারুণ কাটলো একটা দিন ... leopard দেখতে পাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু হরিণ দেখার সান্তনা পুরস্কারই আমাদের কপালে জোটে...রিউনিয়নে এরপর এখানেই ফিরবো ঠিক করেই মেঘের দেশ থেকে ফিরলাম... Post By:- Satadeep Singha Roy
Off-beat Destination : Tinchuley & Kolakham Tinchuley: Altitude: 5800 Ft., 3 Km. above from Takdah Distance: 73 Km. from NJP, 35 Km. from Kalimpong & 32 Km. from Darjeeling Kolakham: Altitude: 6000 Ft., 1200 Ft. down than Lava Distance: From NJP, 123 Km via Kalimpong & 117 Km. via Gorubathan Distance between Tinculey to Kolakham is 61 Km. via Rishop & Lava Post By:- Alok Chitro
Post By:- Shuvradip Akash
তিনচুলেতে ত্রিরত্ন – বাইক, বৃষ্টি ও বন্ধু:::::::----- ২০১৫ সাল, কয়েক বছরে প্রথমবার পুজোয় কোথায় ঘুরতে যাবো প্ল্যান করা হয়নি। দায় মূলত আমার। নিজে তখন PhD নিয়ে চাপে, আগস্ট মাসের পর কি করব নিজেই জানি না এই অবস্থায় কি ভাবেই বা ঘুরতে যাওয়ার কথা ভাবা যায়। যাই হোক, চাকরিটা হয়ে গেল। আগস্টে যোগ দিলাম চাকরিতে।ততদিনে পুজোর সব বুকিং শেষ। মনে হচ্ছিল কোথাও যাওয়া হবে না। পুজোর সময়, মনে হয় পঞ্চমীতে বন্ধুর পাম্পে আড্ডা দিতে দিতে মনে হল দেখায় যাক না কোথাও যদি একটি ঘরও ফাঁকা পাওয়া যায়। শুরু হল ইন্টারনেট ঘেটে ফোন করা। প্রায় সব জায়গায় যখন নাকচ করে দিল, হঠাৎ মনে পরে গেল অঞ্জন দত্তর ‘চলো লেটস গো’ সিনেমার গান। ফোন লাগলাম তিনচুলেতে অভিরাজ homestay তে। ভাগ্য সহায় ছিল। একটা ছোট ঘর খালি ছিল, তাতে চার জন কোনোরকমে হয়ে যাবে। বরাবরের সঙ্গী সৌম্য তখন চাকরি সূত্রে দিল্লীতে। আমি, বিপ্লব, যুবরাজ আর সৌমেন যাবে ঠিক হল। সৌমেনের সেই প্রথম যাওয়া আমাদের সাথে। ঠিক হল আমরা গাড়িতে নয় বাইকে যাব, তাতে যেমন একটা আলাদা এডভেঞ্চার হবে আর পয়সাও কম খরচ হবে। তিনচুলে নামটি এসছে তিনটি চুলা বা উনুন থেকে। তিনটি পাহাড় তিনটি উনুনের রূপ ধরেছে এখানে। শিলিগুড়ি থেকে ঘুম হয়ে বা সেবক, তিস্তাবাজার, তাকদা হয়েও যাওয়া যায়। আমরা ঠিক করলাম সেবক হতে যাব আর ঘুরপথে ফিরে আসব। বিপ্লবের পালসার আর সৌমেনের avenger নিয়ে রওনা দিলাম। মাঝেমধ্যে দু-একটা ছোটখাটো চা বিরতি বাদ দিলে প্রথম দাড়ালাম lovers meet point এ। তিস্তা আর রঙ্গিতের মিলন এত সুন্দর ভাবে আর কোথাও দেখা যায় না। এর আগে ত্রিবেণী পিকনিক স্পটে এরকম মিলন দেখেছি, তবে সেটা একদম সামনে থেকে আর এখানে ওপর থেকে পাখির চোখের মত দেখার অনুভব আলাদা। প্রায় কয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত তিস্তা আর রঙ্গিত দেখা যায় এখান থেকে। তারপর শুরু হল পেশক রোড ধরে যাত্রা। এসে পৌছালাম পেশক চা বাগান।আমার দেখা পাহাড়ে অন্যতম সুন্দর চা বাগান। পাহাড়ের ঢালে চা বাগানের বুক চিরে চলে যাওয়া এক বাঁকা রাস্তা আরও সুন্দর করে তুলেছে সেই দৃশ্যপট। ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা যায় এখানে। কিন্তু প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা কেই বা বুঝতে পারে। হঠাৎ করে ঘন মেঘের ঝাপটা লাগলো আমাদের গায়ে, বুঝলাম বৃষ্টি শুরু হতে আর বেশি দেরি নেই। ওখান থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার ওপরে তিনচুলে যেতে যেতেই শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। যেহেতু বৃষ্টি তে আর কিছু করার নেই তাই খেয়ে বিশ্রাম নেবার মনস্থির করলাম। অভিরাজের নিজের বাগানের সবজি দিয়ে ওর মায়ের হাতের তৈরী খাওয়ার, যে কারও মুখে লেগে থাকবে। গিয়ে মনে হয়নি যে আমরা টাকা দিয়ে থাকতে এসেছি। মনে হচ্ছিল যেন কোনো এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেছি অবাক দিন পর যাকে একটু কম চিনি হয়ত। নিজেদের বাগানেই ওরা কোয়াশ, রাই শাক, বেগুন, বাধা কপি, গাজর, বিনস, আদা, এলাচ এমনকি চা পর্যন্ত চাষ করে। হ্যা, ওদের একটি ছোট্ট চা বাগানও আছে বাড়ির সাথেই। খাওয়ার পর বৃষ্টি একটু কমলে আমরা ঘুরে দেখলাম বাগান। ঘন মেঘের মধ্যে তিনচুলে রাস্তা তখন চেনা মায়াবী রূপ ধারন করেছে। দিনের বেলাতেও গা ছমছমে ব্যাপার। বেশ খানিকটা হেটে এসে বৃষ্টির দয়ায় আবার ঘরে চলে এলাম। ঘরটা ছোট হলেও ঠিকঠাক ছিল। শুধু বাথরুমটা বাইরে, যা শীতের জায়গায় একটু নয় অনেকটাই চাপের। অলস ভাবে শুয়ে বসে বৃষ্টি, ঝি ঝি পোকা, পাখির ডাক শুনতে শুনতে সন্ধ্যা কেটে গেল। অবিশ্রান্ত বৃষ্টি মনে হচ্ছিল আমাদের পিছু ছাড়বে না। ঘরে শুয়ে বসে আরাম করে, তাস খেলে রাতটাও ভালই কাটছিল শুধু ওই ঠাণ্ডায় বাইরে বাথরুম যাওয়া ছাড়া। পরদিন সকালে এক বুক আশা নিয়ে অ্যালার্ম দিয়ে উঠলাম যদি সূর্যোদয় দেখা যায়। ঘুম ভাঙলে বুঝলাম আর যাই হোক বৃষ্টি টা কমেছে। হালকা আলোতে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম ওদের উঠোন ঠেকেই দেখা যায় সূর্যোদয়, ঠিক সামনের কালিম্পং শহরের পেছন থেকে। আকাশে মেঘ কেটে গেছে তবে মেঘ গুলো কেমন যেন নিচে থিতিয়ে গেছে। তখনও বুঝতে পারছি না আদৌ কিছু দেখতে পাব কিনা। ইতিমধ্যে যুবরাজ আর সৌমেন ঠাণ্ডার চাপে ঘরে ফিরে গেছে। আরও মিনিট পনেরো পরে সূর্যি মামা দেখা দিলেন। তখন জানতে পারলাম কাছেই কেতা ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তখনই বিপ্লবকে পাকরাও করে বাইক নিয়ে ছুটলাম। ওখানে গিয়ে যা দেখলাম তাতে সত্যি মুখ হা করে শুধু চুপ করে দুচোখ ভরে দেখতে হয়। আগেই বলেছি, তিনচুলে মানে তিনটি চুলা। সেই তিন পাহারের মাঝের নিচু জায়গায় সাদা ঘন তুলোর মত মেঘ গুলো জমে আছে। যেদিকে তাকাই সেইদিকেই একই দৃশ্য। একদিকে কালিম্পং ডেলো অন্যদিকে সিকিমের নামচি । আর চারিদিকে শুধু সাদা মেঘ, মেঘের ওপরে আমরা। ঠিক যেমন প্লেন থেকে জানলা দিয়ে দেখা যায় ঠিক তেমন ই তবে প্লেনের মত অত ছোট জানলা নয়, চারিদিক দেখা যাচ্ছে মেঘ আর মেঘ। ফিরে এসে প্রাতরাশ করে আমরা এলাম লামাহাটা। অপেক্ষাকৃত নতুন এই জায়গা। পাহাড়ের কোলে সুন্দর একটি পার্ক। অনেক রকম ফুলের সমাহার, আর সাথে হালকা ট্রেকিং করে ওপরে উঠে একটি সমান জায়গায় সুন্দর একটি লেক, চারিদিকে গাছ। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। সেইসব দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে রওনা দিলাম ঘুমের উদ্দেশ্যে। ঘুম থেকে কাছেই বাতাসিয়া লুপ। বাতাসিয়া লুপে গিয়েই দেখা পেলাম বিখ্যাত খেলনা ট্রেন, ষ্টীমের ধোঁয়া উড়িয়ে চলা অল্প কিছু ট্রেনের মধ্যে এটিই অন্যতম। সেখানে মোমো খেয়ে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম লেপচাজগত, সুখিয়াপোখরি হয়ে ঘুর পথে। লেপচাজগতের মত পাহাড়ি গ্রাম গুলোয় রাত্রিবাস না করলে ঠিক সৌন্দর্য উপভগ করা যায় না। তাই ওই সব জায়গায় খুব বেশি সময় নষ্ট না করে আমরা বরং রাস্তায় ফিরতে ফিরতে যে সব জায়গায় দাড়িয়ে প্রকৃতির মজা নিলাম যেখানে কখনই হয়ত যাওয়া বসা হবে না। সীমানা বস্তিতে দাড়িয়ে পাহাড়ের অপর থেকে নেপাল দেখতে দেখতে চা, মোমো খাওয়ার মজা কি আর সব জায়গায় পাওয়া যায়। এরকম ভাবে বাইকে নিয়ে সুন্দর রাস্তা, ততোধিক সুন্দর পাহাড়, চা বাগান উপভগ করতে করতে ফিরছি আর মনে মনে ভাবছি আর একটু পর ঘরে পৌঁছে যাব, তখনই ঘটল বিপত্তি। সবে মিরিক বাজার পার করেছি, মিরিক লেক তখনও আসেনি সৌমেনের বাইকের পেছনের চাকায় পাঙ্কচার দেখা গেল। বিপত্তিটা একটু বেশি কারন অতা টিউবলেস টায়ার ছিল না আর আমাদের সাথেও লিক সারানোর কিছু ছিল না। আবার ফিরে গেলাম মিরিক বাজার,গিয়ে দেখি দশেরার জন্য সমস্ত গ্যারাজ বন্ধ। আমাদের তো শিরে সংক্রান্তি অবস্থা তখন। কি করব কিছু মাথায় আসছে না। যুবরাজ অভয় দিল আমরা তিনজন বিপ্লবের বাইকে নেমে যাই আর ও, ওই বিকল বাইকেই নামতে থাকবে কোথাও গ্যারেজ পেলে সারিয়ে নেবে। কিন্তু, বিপ্লব পাহাড়ি রাস্তায় তিনজন নিয়ে নামার সাহস পেল না। অতএব ঠিক হল, আমি আর সৌমেন একটি জিপ করে গারিধুরা যাব, বিপ্লব বাইকে করে আর যুবরাজ ওই বিকল বাইকে আসবে। যুবরাজ কোনরকমে সামনের দিকে নিজের সমস্ত ওজন দিয়ে নামছিল। দুর্ভাগ্যবশত, রাস্তায় কোনও গ্যারাজ পাওয়া যায় নি। আবার চারজন গারিধুরায় একত্রিত হলাম, বাইকের টিউব ছিঁড়ে একাকার। ওই অবস্থায় বাইক ঠেলে নিয়ে যাওয়া ছাড়া আর উপায় নেই। আমি আর যুবরাজ ওটাকে প্রায় ৪-৫ কিমি ঠেলে আসলাম রোহিণী মোড়ে, যেখানে একটি গ্যারাজ পাওয়া গেল।কিন্তু সেখানে টিউব ছিল না। বিপ্লব ছুটল বাইক নিয়ে টিউব আনতে। প্রায় ১০-১২ কিমি দূরে গিয়ে অবশেষে টিউব নিয়ে ফিরে এল বিপ্লব। আর আমরা ঘরে ঢুকলাম প্রায় রাত তখন দশটা। সবকিছু মধুরেন সমাপয়েত হয় না, কিন্তু অনেক দিন পরে এসে এই সব ঘটনা গুলোই বারবার মনে পরে। Post By:- Suvankar Chakraborty
II তিনচুলে ও সিটং II ............................ সম্প্রতি ঘুরে এলাম উত্তর বঙ্গের তিনচুলে আর সিটং I তিনচুলে বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমশ জনপ্রিয় টুরিস্ট ডেস্টিনেশন হয়ে উঠেছে I সিটং কিন্তু সে তুলনায় নবীন I প্রথমে তিনচুলের কথায় আসি I তিনচুলে থেকে দার্জিলিং প্রায় ৩০ কিমি আর NJP প্রায় ৭৫ কিমি I এখানে আসতে হলে শিলিগুড়ি বা NJP থেকে একটা গাড়ি ভাড়া নিয়েনিলেই ভালো I কারণ শেয়ার গাড়ি নিলে অনেক ঘুর-পথে জোড়বাংলা অথবা তিস্তা বাজার হয়ে আসতে হবে I এখানে হোটেল কিছু নেই, সব হোমস্টে I আগে থেকে হোমস্টে তে বলা থাকলে ওরাই গাড়ি পাঠিয়ে ব্যবস্থা করে দিতে পারে I থাকা খাওয়া সব হোমস্টে তে I ওরাই আপনার সব দেখভাল করবে I আপনার কাজ হলো শুধু দুচোখ ভোরে প্রকৃতির রূপ , রস, গন্ধ অনুধাবন করে নিজেকে হারিয়ে ফেলা I আকাশ পরিষ্কার থাকলে বন্ধুবর্গের সাথে চায়ে চুমুক দিয়ে হোমস্টে র ঝুল বারান্দায় অথবা ছাদে রোদে বসে কাঞ্চঞ্জঙ্ঘা দেখার যে অপার্থিব সুখ আছে সেটা একবার এখানে থেকে পরখ করেনিতেই পারেন i তারপর যদি আপনি ভাবেন হোমস্টের আশেপাশে হেটে আসবেন তবেতো সেটা আরো ভালো I তবে চড়াই আর উৎরাই টা এখানে একটু বেশি I সকালে হোমস্টে তে একটু ভারী জলখাবার খেয়ে আপনি বেরিয়ে পড়বেন I দেখার অনেক জায়গা I একটা গাড়ি নিয়ে নেবেন I যাবেন লামাহাটা, ছোট মাঙবা, বড়া মাঙবা , তাকদা ক্যান্টনমেন্ট, রঙ্গলী টি গার্ডেন , মনাস্ট্রি , ত্রিবেণী , পেশক টি গার্ডেন .....ও আরো কিছু জায়গা I তবে আমি বলি কি একটা দিন এখানে হাতে রাখুন শুধুই পায়ে হেটে ঘোরার জন্য I পাহাড়ের বাঁকে দাঁড়ান, নিচের নির্জন সবুজ উপত্যকার দিকে তাকান, দেখুন চাষের জমি, ক্ষেতের ফসল I এখানে সন্ধ্যের পর ব্যাগ ভর্তি করে শপিং এর কোনো অবকাশ নেই I তাই সেই সময়টা আপনাকে হোমস্টে তেই গল্পে, গানে বা টিভি দেখে কাটিয়ে দিতে হবে I এবার বলি সিতং এর ব্যাপারে I তিনচুলেয় থেকে সিতং আসাযায় মংপু হয়ে I আর NJP থেকে কার্শিয়ং হয়ে অথবা রামভি হয়ে I অপরূপ সুন্দর পাহাড়ি গ্রাম এই সিতং I একটা উপত্যকা I চারিদিকে কমলা লেবুর বাগান I সাথে অন্যান্য চাষ ও হয় I সিতং থেকে আপনি যাবেন আহালদারা , সেল্পু হিল , নামথিং পোখরি , লাটপাঞ্চার , মংপু সিঙ্কোনা গার্ডেন I সিতং এ রাঙ নদীর পারে অনেক টা সময় কাটাতে পারেন I ছোট নদী , কিন্তু তার ভারী রূপ I নদীর পার ধরে হাঁটবেন I নদীর একদিকে সিতং আর অন্য দিকে মংপু I সকালের দিকে মংপু যাওয়ার কিছু লোকাল গাড়ি পাওয়া যায় I মংপু গিয়ে রবীন্দ্র ভবন আর অর্কিড গার্ডেন ঘুরে আসতে পারেন (আমরা সময়ের অভাবে যেতে পারিনি) I তবে হাটতে হাটতে কমলা লেবুর বাগান ঘুরে দেখতে কিন্তু ভুলবেন না I এই দুই জায়গা তেই ২ রাত ৩ দিনের প্ল্যান করতে পারেন I তবে যাওয়ার আগেই ওখানে কোনো হোমস্টের সাথে যোগাযোগ করে রাখবেন I এখন ইন্টারনেট-এ সব যোগাযোগ সম্ভব I Per Person Per Day হিসাবে খরচ ধরা হয় I তার মধ্যেই থাকার সঙ্গে সমস্ত খাওয়ার হিসাব ধরা থাকে I এই দুই জায়গার কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম I Post By:- Abhijit Banerjee
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |