যারা আমার এইরকম লেখা পড়ে গাল দেবেন বলে ঠিক করেছেন তাদেরকে আগে থেকেই আমার জাদু কি ঝাপ্পি। আর যারা ভুল করে প্রশংসা করবেন বলে ভাবছেন তাদের বলছি আমি আপনার মতো ভালো মানুষ জীবনে দেখিনি। মাইরি বলছি, থ্যাংকিউ। আয় আয় কে যাবি আয় কে মন হারাবি এক মুঠো রোদ ধরতে------------ এই এটা কে রে, যে দেশে বারো মাসের মধ্যে এগারো মাস গ্রীষ্মকাল সেখানে একমুঠো রোদ ধরার নেমন্তন্ন কার্ড বিলিয়ে বেরোচ্ছে। ব্যাটা নির্ঘাত পাগলা না হয় নেশা করেছে। সত্যি বলছি আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে আমিও ঠিক এই রকমটাই ভাবতাম। কিন্তু কি করবো বলুন আজ যে জায়গার গল্প শোনাব সেখানে এই একমুঠো রোদই ইনফিনিটি স্টোনের সমান শক্তি যোগাতে পারে। গল্প শোনাব তিনচুলে, সিলারিগাও, সাংসীর এর। আরে দুর মশাই যারা একটু ফেসবুকে ট্রাভেল গ্রুপে ঘাঁটাঘাঁটি করে তারা সবাই তিনচুলে, সিলারিগাও নিয়ে রিসার্চ করে ফেলেছে । হুম তাও বটে, কিন্তু সাংসীর ? হলো তো, সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন চলে এলো তো। চিন্তা নেই নতুন চ্যাপ্টার মুখস্থ করিয়ে দিচ্ছি। তার আগে পুরোনো চ্যাপ্টার গুলো একটু ঝালিয়ে নিতে হবে। তিনচুলে দাদাদের বলছি, স্কুল লাইফের সেই হাতুড়ির বাড়ি মনে আছে? সেই আপনি যখন সবে বারো ক্লাসে উঠেছেন আর পাড়ার মেয়ে তিন্নি টেনে। সরস্বতী পুজোর দিন প্রথম বার তিন্নিকে শাড়ি পরে খোলা চুলে দেখলেন। তিন্নির সেই হঠাৎ বড়ো হয়ে ওঠা রূপ আপনার বুকে যে হাতুড়ির বাড়ি মেরেছিল, প্রকৃতি প্রেমিদের বুকে সেই একই রকমের ভালো লাগার হাতুড়ির বাড়ি মারবে এই তিনচুলে। দার্জিলিং, গ্যাংটকে যেখানে হোটেল আর দোকানের ভিড়ে পাহাড়টাকেই ঠিকমতো খুঁজে পাওয়া যায় না, তিনচুলেতে আজও সেই পাহাড়ের বড়ো হয়ে ওঠা রূপটা দেখতে পাবেন। আমরা উঠেছিলাম রাই রিসর্টে। তিনচুলেতে মাত্র তিন চারটে থাকার জায়গা। আমার মতে রাই রিসর্টের লোকেশন সব থেকে ভালো। রাত্রি বেলায় রিসর্টের বারান্দায় দাড়িয়ে দূরের পাহাড় গুলোতে তারার মতো আলোক বিন্দু আর আকাশের তারাদের একসাথে মিলে যাওয়া স্মৃতির মণিকোঠায় সারা জীবনের জন্য স্থান করে নেবেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় বের হয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। সামনে এ কি দেখছি, দৌড়ে গিয়ে সব ঘর থেকে বাকিদের ডেকে নিয়ে আসলাম। মনে হচ্ছিল হাত বাড়িয়ে এক মুঠো কাঞ্চনজঙ্ঘা ধরে নিতে পারবো। আকাশ টাও যেন পশ্চিমবঙ্গের ব্রান্ড কালার নীল সাদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আমাদের পাঁচ দিনের জন্য বুকিং করা গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লামাহাটা, গুম্বা দাড়া, তাক্দা সাইট সিইং এর উদ্দেশ্যে। প্রতিটা জায়গাই অসাধারণ। আর হ্যাঁ, তিন্নি কে প্রেম নিবেদন করার পর ওর বাবা যখন আপনার বাবাকে তার বাবার নাম ভুলিয়ে দিয়ে গিয়েছিল তখন আপনার উপর কি প্রভাব পরেছিল মনে আছে? সাত দিন যেখানেই বসতে যান উড়ি বাবাগো মাগো। সে ব্যথা নস্যি মনে হবে পরের দিন আমারা যা ব্যথা পেলাম তার কাছে । আগের দিন কাঞ্চনজঙ্ঘার ওই রূপ দেখে উত্তেজিত হয়ে সকাল চারটে থেকে বারান্দায় চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছি, কিন্তু তোমার দেখা নাই গো তোমার দেখা নাই। সকাল দশটায় আমরা বের হলাম আমাদের গন্তব্য সিলারিগাও এর দিকে। আবার এক চমক আমরা গাড়ীতে উঠতে যাবো ঠিক সেই সময় রাই পরিবারের মহিলারা আমাদের প্রত্যেকের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে বিদায় সম্বর্ধনা জানালো। শুরু হলো আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা।তিনচুলে থেকে সিলারিগাও যাওয়ার পথে আমরা গিয়েছিলাম বড়া মাংওয়া। অপূর্ব এক হার্বাল গার্ডেন আর অরগানিক ফ্রুট জুস ফ্যাক্টরি দেখে আমরা পৌছালাম সিলারিগাও। রাই রিসর্টের যোগাযোগ মোবাইল - 9733242876 / 8436513757 / 9733281506 ই মেল - [email protected] সিলারিগাও দিদিদের বলছি, ধরুন না আপনিই সেই তিন্নি। রাকেশের সাথে পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর একদিন বাড়িতে জানাজানি, দেখা সাখ্যাৎ পুরো বন্ধ এক মাস ধরে। এই সময় এক বান্ধবীর জন্মদিনে যাওয়ার নাম করে ধাঁ। ব্যারাকপুরের গান্ধী ঘাটে গঙ্গার ধারে বেঞ্চের উপর একে অপরের হাতে হাত রেখে রাকেশের বুকে মাথা রেখে বসে যে পরিতৃপ্তি অনুভব করেছিলেন, সিলারিগাওয়ের নির্মলা হোমস্টের বাইরের উঠানে বসে আপনি যখন ওই উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন সেই দিনের কথা মনেপড়ে যাবে। নির্মলা হোমস্টে এখানের সবথেকে উঁচুতে অবস্থিত এবং সবথেকে বড় আর সুন্দর হোমস্টে। এ যেন এক মেঘের দেশ। আমরা শহরের মানুষরা পাহাড়ের চূড়ায় যখন মেঘ ভেসে যেতে দেখি তখন মনে হয় আহা যদি ওই মেঘটাকে ছুঁতে পারতাম , সিলারিগাও আপনাকে সেই দিবা স্বপ্ন পূরণ করে দেবে। ঘরের বাইরে বিশাল খোলা চত্বরে যতবার এসে দাঁড়িয়েছি কোথা থেকে মেঘ ভেসে এসে সারা শরীরে চুম্বন করে যাচ্ছে। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা হয়তো এক মুঠো রোদ ধরার জন্য ছটফট করে কিন্তু আমারা শহুরে জীবনের লোকেরা এই এক আকাশ মেঘের শরীরে স্পর্শ অনুভব করতে নিজের থেকে নিজেকে মুক্ত করে দিতেও তৈরি। মাত্র বত্রিশটি পরিবার নিয়ে তৈরি এই সুন্দর ছিমছাম সিলারিগাও। নির্মলা হোমস্টেতে এক রাত কাটিয়ে আমরা পরের দিন চললাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সাংসীর এর উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে আমরা গিয়েছিলাম রামধুরা, ইচ্ছে গাও, ডেলো হয়ে। প্রত্যেকটা জায়গা পাহাড় এক একটা ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে হাজির। নির্মলা হোমস্টে মোবাইল- 9635005318 / 7063303741 সাংসীর অ্যা.. বুড়ো বয়সে রস উথলে পরছে। বলি কাল অফিস থেকে ফেরার পথে আটা আর নুন নিয়ে আসতে বলে ছিলাম সেকথা মনে আছে। বিয়ের পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত, জীবন টা শুধু ওই আটা আর নুন এতেই আটকে গেছে, রোম্যান্স টোম্যান্স সব হাওয়া। এই সময় যদি আপনি আপনার জীবনটাকে ফিরে পেতে চান তাহলে একবার আসতেই হবে এই সাংসীর জায়গাটিতে। এই নির্জন নিস্তব্ধতা আপনাকে নিজেকে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। কে কে হোমস্টে এখানকার একমাত্র হোমস্টে। আমাদের এই সফরের সেরা আবিষ্কার। আমদের বহু সময় পাহাড়ে যেতে যেতে মনে হয় পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা ওই ছোট্ট বাড়িগুলোতে যদি কয়েকদিন থাকতে পারতাম। এই কে কে হোমস্টে আপনার সেই মনের আশা পূরণ করে দেবে। এখানকার মালিক সরিফ রাইয়ের পছন্দের বাহবা দিতেই হবে। পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা সুন্দর একটা হোমস্টে, একটা সুন্দর ফুল ও ফলের বাগান। আমরা পৌছাবার সাথে সাথেই মালিকের পোষা জার্মান সেফার্ড কুকুর শিম্বা আমাদের গাড়ীর দরজায় লাফ দিয়ে উঠে এলো আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে। আমরা গাড়ী থেকে নামতেই সে আনন্দে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি শুরু করলো। এই প্রথমবার পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে কাশার থালায় বাগানের শাক, কুমড়ো ফুলের বড়া, বাগানের ঝিঙের তরকারি, নিজের বাগানের টমেটো দিয়ে তৈরি মাংস এসব খেতে পেলাম। প্রথম বার বাথরুমে গিয়ে তোয়ালের বদলে গামছা দেখলাম। ভগবান মনে হয় অনেক সময় নিয়ে নিজের হাতে এই সাংসীর জায়গাটাকে সাজিয়েছে। এখানেও সিলারিগাওয়ের মতো মেঘের অবাধ আনাগোনা লেগেই থাকে। রাতে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ আরো রোমান্টিক হয়ে উঠে ছিল। পরের দিন সকালে ফেরার সময় দেখি সিম্বা মুখ ঘুরিয়ে উপরে উঠে বসে আছে। ডাকলেও সারা দিচ্ছে না। মালিক জানালো গাড়ীতে ব্যাগ উঠাতে দেখে ও বুঝতে পেরেছে আমরা চলে যাচ্ছি। টুরিস্টরা চলে যাওয়ার সময় ও নাকি এইরকমটাই অভিমান করে। যারা একটু অফবিট জায়গা ঘুরতে পছন্দ করেন অবশ্যই এই জায়গাটাকে লিস্টে রাখবেন। কে কে হোমস্টে মোবাইল- 8906103700 / 7031048087 এন জি পি তে নামার পথে আমরা গিয়েছিলাম বেঙ্গল সাফারিতে। সেবক রোডের ধারে এই জায়গাটা 2014 সালে উদ্বোধন হয়। অন্যান্য জঙ্গল সাফারির মতোই এখানে আমরা গাড়ীর ভিতরে আর হরিণ, ময়ূর, চিতা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এরা বাইরে। তার সাথে আছে এলিফ্যান্ট সাফারি। পশ্চিমবঙ্গের অথবা সিকিমের কোন জায়গায় ঘুরতে গেলে ফেরার পথে অবশ্যই লিস্টে রাখতে পারেন এই বেঙ্গল সাফারি। Post By-Sandip Dutta
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |