সাত সকলে পাটনি টপের ঠান্ডায় গরম গরম ফুলকো লুচি সহযোগে আলুর তরকারি দিয়ে সকালের খাওয়া সেরে আমরা রেডি হয়ে নিলাম পরবর্তী গন্তব্যস্থল পহেলগাঁও যাবার জন্য। এতো সুন্দর একটা হোটেল আর ততোধিক সুন্দর একটা জায়গা ছেড়ে আসতে মন না চাইলেও যেতে হবেই, তাই মনোকষ্ট নিয়েই উঠে পড়া বাসে। প্রায় ঘণ্টা আটেকের একটা লম্বা জার্নি কিন্তু আশপাশের সৌন্দর্যের কারনে সেটা আমরা সবাই বেশ উপভোগ করছিলাম। রাস্তায় পড়লো কুখ্যাত অনন্তনাগ, গাইড বলছিলেন এই সময় আমরা যেন একটু সাবধানে থাকি আর বাস থেকে যেন ছবি না তুলি। দেখছিলাম যে শহরটা কিন্তু খুব সুন্দর আর বর্ধিষ্ণু। চওড়া রাস্তা, বাড়ি ঘরগুলো ভীষণ সুন্দর আর প্রতিটাই আলাদা আলাদা রকমের, তবে দোতলা তিনতলার বেশী উঁচু কোনো বাড়ি বিশেষ চোখে পড়লো না। কোনো গন্ডগোলের চিহ্নও দেখতে পেলাম না, সেটা আমাদের জন্য ভালোই হোলো। এবার রাস্তার ধারে পড়তে লাগল মাথায় বরফের সাদা টুপি পড়া নাম না জানা সব পর্বতশৃঙ্গ, বাসের মধ্যে তখন কে কিভাবে সেই সব দৃশ্য ক্যমেরাবন্দি করতে পারে তার উত্তেজনা। যত গাড়ি এগোচ্ছে তত পাহাড়গুলো কাছে চলে আসছে। এবার রাস্তার অন্য পাশে দেখা দিলো লিডার নদী, সূর্য্যের আলোয় চিক চিক করছে তার জলধারা আর সে চলেছে তার নিজের ছন্দে লাফাতে লাফাতে। ছবি কি পারে এ দৃশ্য ধরে রাখতে, তবে চেষ্টা করতে তো আর কোনো দোষ নেই। এদিকে বাসের মধ্যে আমরা ব্যতিব্যস্ত সবার সেই চেষ্টার চোটে। এক দিকে পাহাড় আর অন্য দিকে নদী দেখতে দেখতে আমরা পৌছে গেলাম পহেলগাও। এই হোটেলটা আগেরটার মতন ভালো না হলেও একদম লিডার নদীর ধারে আর সামনেই বিরাট পাহাড়, জানলার পর্দা সরালেই অপূর্ব দৃশ্য। রাস্তায় নামার আগেই আমরা ঘেরাও হয়ে গেলাম শালবালা আর আখরোটবালাদের ভীড়ে এরা আমাদের জন্য হোটেলের নিচে অপেক্ষা করছিল আমরা বাস থেকে নামা ইস্তক। এতো সস্তায় এতো ভালো মাল যে আর কোথাও পাওয়া সম্ভব নয় সেটা আমাদের বুঝিযেই ছাড়বে। তবে সামনেই আছে অনেক দোকান, সবার নামের শেষে "শাল ফেক্ত্রী"। মেয়েদের আর রাখে কে, শুরু হয়ে গেলো কেনাকাটা। অতএব রাস্তায় নামা, কিন্তু সামনের চৌমাথায় পৌছানোর আগেই দেখি আকাশের মুখ ভার। কালো মেঘ জমছে সাদা পাহাড় চূড়ার আশেপাশে। নেমে গেলো ঝিরঝিরে বৃষ্টি। আমরা কোনোরকমে দৌড়ে হোটেলে ফিরলাম। রাস্তা ঘাট ফাঁকা হয়ে গেলো, ঠান্ডাও পড়তে লাগল জাঁকিয়ে। পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জানলার পর্দা সরাতেই আমরা মন্ত্রমুগ্ধ। সামনের পাহাড়টার পুরো মাথাটা ঢেকে রয়েছে বরফে, অবিস্ম্ণরণীয দৃশ্য। আজ আকাশ পরিস্কার, আস্তে আস্তে আলো ফুটতে শুরু করলো, বরফের উপর সেই আলো পড়তে মনে হলো যেন পাহাড় গুলোর মাথায় আগুন ধরে গেছে। এ জিনিস আগে কখনও দেখি নি। সকালের ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা আলাদা গাড়ি নিয়ে বেরোলাম ঘুরতে প্রথমে আরু ভ্যালী - সবুজ মখমলের মতন ঘাসে ঢাকা বিরাট এক প্রান্তর, একদিক ঘেরা চীনার গাছে আর অন্য দিকে দাঁড়িয়ে বিরাট পাহাড় যার মাথা ঢাকা সাদা বরফে, শুনতে পেলাম এখানে শুটিং হয়েছে প্রচুর জনপ্রিয় হিন্দী ফিল্মের। ছবি তোলা সাঙ্গ করে সেখান থেকে বেরিয়ে পাহাড় পেরিয়ে আমরা পৌঁছালাম বেতব ভ্যালি। এখনেই শুটিং হয় বেতাব সিনেমার। জায়গাটা কিন্তু অপূর্ব, সবুজ ভ্যালির মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে লিডার নদী। দূরে দেখা যাচ্ছে বরফে মোড়া পাহাড়শ্রেণী, সিনেমার শুটিং হয়েছিল বা এখনো হয় বলে এখানে রয়েছে বেশ কয়েকটা কাঠের বাড়ি। সেগুলো দেখতেও যত সুন্দর আবার নদীর ধারে সবুজ ঘাসের উপর সেগুলো হয়ে উঠেছে আরো মনমুগ্ধকর। ঘুরে বেরিয়ে 100/- টাকা টিকিটের পুরটাই উসুল। তাই ফেরার রাস্তাতেও গাড়ির মধ্যে থেকেও চললো ছবি তোলার পর্ব। এরপরের গন্তব্যস্থল চন্দন বাড়ি। অমরনাথ যাত্রার হাঁটা পথের শুরু এখান থেকে। পাথুরে রাস্তায় একটু এগিয়েই চোখে পড়লো বরফ। এই ট্যুরে আমাদের এই প্রথম বরফ দর্শন, যদিও ধুলোয তাতে ছোপ পড়েছে কিন্তু তাতে কি বরফতো। চললো দৌড়া দৌরি আর একটু উঠেই নামার সময় সব পড়তে লাগলো ধপাধপ। গুঁড়ো বরফ দারুন পিছল হলেও আছাড় খেয়েও উৎসাহের কোনো কমতি নেই কারো। এখান থেকে আমাদের ফেরা হোটেলে আর তারপর দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে বের হলাম বাজার করতে। শুনতে পেলাম যে এখানে জিনিষ পত্রের দাম শ্রীনগরের তুলনায় কিছুটা সস্তা। ফলে জা হওয়ার তাই হোলো, সব দোকান বন্ধ হবার পর সবাই ফিরল হোটেলে। আগেরবার যেখানে ছিলাম সেটা খুঁজে না পেলেও স্মৃতি কিছুটা সাথ দিচ্ছিলো মনে পড়ে যাচ্ছিলো অনেক কিছু। তবে পহেলগাঁও এক কথায় অসাধারণ। রাতটা এখানে কাটিয়ে এবার যেতে হবে শ্রীনগর॥ সেটা জানাব এর পরের তৃতীয় পর্বে ....
পহেলগাঁও থেকে প্রায় ঘন্টা পাঁচেকের বাস জার্নি করে পৌছলাম শ্রীনগরে। রাস্তায় পড়লো সদ্য চালু হওয়া চোদ্দ কিলোমিটার লম্বা সেই সুড়ঙ্গ পথ যেটা উদ্বোধন করেন আমাদের PM। এতে আমাদের চলার রাস্তা কমে গেলো বেশ খানিকটা। রাস্তা অপূর্ব পাহাড় আর নদীতে মেলানো। হু হু করে গাড়ি চলেছে মখমলের মতো সমান রাস্তা দিয়ে। প্রচন্ড রোদ কিন্তু এখানের নিয়মে বাসের জানলায় পর্দা দেওয়া যাবে না তাই বাসের জানলায় সঙ্গের শাল টাঙ্গিয়ে কোনো রকমে সামাল দেওয়া গেলো ওই কড়া রোদের। বাসথেকেই দেখতে পেলাম এক জায়গায় প্রচুর লোক রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্রিকেট ব্যাট বিক্রি করছে, গাড়ি দেখতে পেলেই এগিয়ে আসছে জানলার কাছে, জানলাম এখানেই এগুলো তৈরি হয়। সারা রাস্তায় প্রচুর মিলিটারি পাহারা দিচ্ছেন কিন্তু কেউ আমাদের অহেতুক বাস থামিয়ে বিরক্ত করলেন না, একবারে গিয়ে বাস দাঁড়ালো পামপুরের একটা বড় দোকানের সামনে। শুনেছিলাম এইখানেই চাষ হয় কেশরের, দোকানে অবশ্য পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন রকমের ড্রাই ফ্রুট সঙ্গে কেশর আর শীলাজীত। ওরা জানালেন যে কেশরের ফুল ফোটে oct - nov মাসে। অতএব কেনা হোলো ডিবেতে প্যাক করা কেশর, দাম প্রতি গ্রাম 250/-।
শ্রীনগরের হোটেলটা একেবারে ডাল লেকের পাশেই কিন্তু ঘরের জানালা দিয়ে ডাল লেক দেখা যায়না। আমরা অক্লান্ত তাই এতটা জার্নির পরেও মাল পত্র রুমে রেখেই ওই দুপুর রোদে আমরা সোজা ডাল লেকের সামনে। ঝালিয়ে নিচ্ছিলাম প্রায় 40বছর আগে দেখা স্মৃতির ডাল লেক। দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে প্রচন্ড রোদের মধ্যেই আমরা দর দস্তুর করে উঠে পরলাম একটা শিকরাতে। শিকরায রাজোর মতন বসে ভেসে চললাম ডালের ভেতর, সঙ্গে সঙ্গে চললো পুরনো স্মৃতি রোমন্থন। আশে পাশে চলে আসছে লোকাল শিকারায ভেসে বেড়ানো দোকান, তাতে পাওয়া যাচ্ছে তাজা ফুল, ঠান্ডা আইসক্রিম, পোড়ানো ভুট্টা, কেশর প্রভৃতি। আমরা কিনব না আর বিক্রেতারাও নাছোড়, চলেছে আমাদের পাশাপাশি। আমাদের আগেই বলে দেওয়া হয়েছিল কারুর সঙ্গে কড়া কথা না বলার জন্য, তাই আমরা হাঁসি হাঁসি মুখেই ওদের প্রত্যাখ্যান করছিলাম। আমাদের শীকারার মাঝিও ততক্ষণে আমাদের ব্যপারটা বুঝে গিয়ে ছিল তখন সেও তার লোকাল ভাষায় এই প্রত্যাখ্যানে আমাদের সাহায্য করছিলো। হটাৎ সে বোট দাঁড়করালো লেকের মাঝে একটা বড় বোটের গায়ে, কিনলো চায়ের মতো কি একটা। জিজ্ঞাসা করে জানলাম ওটা কাশ্মিরী চা ''কাবা", শুনে আমার গিন্নীও নিলেন এক কাপ। আমাদের সামনেই জাফরান, বাদাম ও কিছু মশলা মিলিয়ে তৈরী হোলো কাবা আর সেটাতে চুমুক দিয়ে বৌ -মেয়ে দুজনই ফিদা। আমরা যেখান থেকে শীকারায উঠলাম সেটা ডাল ক্যানাল আর তার পরের বিরাট অংশটা হচ্ছে ডাল লেক। জলে কিন্তু একটা পঁচা দূর্গন্ধ আর জলের তলায় প্রচুর শ্যেওলা। তবে শুনতে পেলাম যে সরকার দুটো বিরাট বিরাট মেশিন চালিয়ে লেকের শ্যাওলা পরিষ্কার করছেন। কাজ শেষ হলে লেকটি বেশ পরিষ্কার হয়ে যাবে। লেকের ধারে ও মাঝে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নানা ধরনের হাউস -বোট আমরা চললাম সেগুলোর ফাঁক দিয়ে দিয়ে চারদিক দেখতে দেখতে। কিছু কিছু জায়গায় জলে নোংরা এতো বেশী যে তোর ওপর চাষ আবাদ হচ্ছে, তাকে নাম দেওয়া হয়েছে hanging garden। রয়েছে মিনা বাজার, যেখানে বড় বড় হাউস বোটের উপর তৈরি হয়েছে দোকান আর সেখানে বিক্রি হচ্ছে কাশ্মিরী কাজের নানা জিনিষ পত্র, দাম কিন্তু একটু বেশীই। সব ঘুরে ফিরতে ফিরতে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা, তখন ডালের আরেক রূপ। নিকষ কালো লেকের জলে তখন ঝলমল করছে হাউস বোটের আলো তৈরি করেছে এক অপার্থিব আলো ছায়া। এই সব কিছু ধরে রাখলাম মনের মিণিকোঠায় আর চেষ্টা করলাম তার কিছু ধরে রাখতে ছবির মাধ্যমে॥ পরের পর্ব আবার পরে
আজ 02-06-2018 শ্রীনগর বন্ধ, কিন্তু আমরা আমাদের প্ল্যান অনুযায়ী বাসে উঠে চললাম শোনমার্গ। গন্ডগোলের কথা মাথায় রেখে একটু সকাল সকালই বেরিয়ে পড়লাম, রাস্তা ঘাট একদম ফাকা ফলে গাড়ি ছুটলো সাঁই সাঁই করে। প্রায় ঘণ্টা চারেকের জার্নি, মাঝে দু-এক বার গাড়ি থামলেও কিছু টহল দেওয়া মিলিটারী ছাড়া কিছুই চোখে পরে নি। বেলা বারোটা নাগাদ পৌছালাম শোনমার্গ। চারিদিক সবুজে সবুজ এমনকি বাড়িগুলোর মাথাও সবুজ, পাহাড়ী ঢালে বাড়ি গুলাকে লাগছে খুব সুন্দর। মাথার উপর কটকটে রোদ, শুনলাম বরফ পেতে গেলে যেতে হবে '0' পয়েন্ট। সেটার জন্য ভারা নিলাম লোকাল জীপ। জীপ উঠতে লাগল পাহাড়ের উপরে, একদিকে সবুজ পাহাড়ী ঢাল আর তারপরেই বরফে ঢাকা পাহাড়। রাস্তায় যে বরফ ঢাকা পিক গুলো দেখতে পাচ্ছিলাম আস্তে আস্তে সেগুলো চলে এলো একেবারে হাতের মুঠোয়। আর তারপর রাস্তার দুধারে শুরু হোলো বরফের আস্তরণ। জমে থাকা বরফে পড়েছে ধুলোর প্রলেপ ফলে আমরা ব্যপারটা বুঝতেই পড়ছিলাম না। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে চালাতেই হাতের মুঠোয় ওই বরফ তুলে আমাদের হাতে দিতেই আমাদের হইচই শুরু। তখন কারুর যেন আর তর সইছে না গাড়ি থেকে নামার জন্য। তবে আর একটু এগিয়েই জীপ এসে দাঁড়ালো পাহাড়ের নিচের একটা ফাঁকা প্রান্তরে, সামনে সাদা বরফের রাজ্য। গায়ে গরমের জামা চাপিয়ে পায়ে গামবুট পরে সবাই নেমে পড়লাম বরফে। কি মজা, এর জন্যেই তো এতো দূর আসা। পায়ের তলায় ঠান্ডা বরফ আর মাথার উপর গনগনে রোদ, সে এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। ঘেমে ভিজে যাচ্ছি কিন্তু গরম জামা রাখতে যেতে হবে সেই জিপের কাছে। অতটা সময় নষ্ট করতে মন চাইছে না, তাই অত গরমেও গায়েই রইল সব কিছু। ঘণ্টা খানেক বরফে কাটিয়ে ড্রাইভারের ডাকে আসতে মন না চাইলেও ফিরে আসতে হোলো জিপে। তারপর আবার শ্যোনমার্গএ ফিরে এসে দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা ধরলাম ফেরার রাস্তা। আজ কিন্তু বরফ দেখে মন ভরে গেছে। ফেরার পথে বাসের ড্রাইভারকে অনেক জপিযে ঘুরে নিলাম হজরত বাল মসজিদ, এখানে রাখা আছে পয়গম্বর হজরত মহম্মদের একটা চুল যেটা মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। আমরা যখন ওখানে পৌঁছেছি তখন ওখানে চলেছে নামাজ পাঠ, তাই আমাদেরকেও ঢুকতে হোলো রুমাল দিয়ে মাথা ঢেকে। ওখান থেকে বেরিয়ে সোজা হোটেল, তখন পড়ন্ত বিকাল। যাওয়া ও আসার দুই বারই বাস গিয়েছিল ডাল লেকের গায়ের রাস্তা ধরে তাই প্রাণ ভরে দেখে নিলাম ডালের রূপ। কালকের ঘটনার জেরে আজ শ্রীনগর বন্ধ কিন্তু কাপড় জামার বাজার বসেছে ডাল লেকের গায়ের রাস্তা বরাবর, যদিও নেটও বাজার দুটোই বন্ধ রয়েছে। কাল শ্রীনগরে আমাদের শেষ দিন, বাকি আছে মোঘল গার্ডেনগুলো ঘুরে দেখা আর বাজার করা। এগুলো জনাবো পরের পর্বে
কাশ্মীর ভ্রমণের শেষ অংশটা আর সময় মতো লেখা হোলো না কেবল মাত্র নিজের অলসতায়। যাইহোক সেই ব্যাপারে এখন জানাচ্ছি। শ্রীনগরের শেষ দিনের সকালের জল খাবার খেয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম মোঘল গার্ডেন গুলো ঘুরতে। ডাল লেকের পাশের রাস্তা দিয়ে চলার শুরু। তবে কিছুটা গিয়েই বাস ডানদিকের একটা রাস্তা ধরে পৌঁছালো চশ্মেশাহীর সামনে। এখন সব মোঘলগার্ডেনে ঢোকার জন্য টিকিট লাগে, তাই টিকিট কেটেই লম্বা সিঁড়ি দিয়ে উঠে লাল পাথরের গেট পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম বাগানে। সুন্দর ফুলে ঘেরা সাজান বাগান, দেখে মন জুড়িয়ে যায়। কত যে সিনেমার শুটিং হয়েছে এই সব বাগানে তার আর ইয়ত্তা নেই। এখানে একটা জলের উৎস আছে যাতে সেরে যায় অনেক পেটের অষুখ, আমরা অবশ্য সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা করিনি। মাথার উপর তখন গনগনে সূর্য্য, অনেকেই ঘুরছেন ছাতা মাথায়। তাতেও পুরো বাগানটা ঘোরা প্রায় অসম্ভব তাই কিছুটা ঘুরে বেরিয়েই নেমে এসে বাসে বসে বিশ্রাম নিলাম। দেখলাম বয়স্ক যাত্রীদের অনেকেই একই পথের পথিক। এর পর নিষাদ বাগ, শালিমার বাগ ঘুরে হেঁটে হেঁটে আর সিঁড়িতে ওঠা নামা করে করে আমরা প্রচন্ড ক্লান্ত হয়ে ফিরে এলাম হোটেলে। সব বাগান গুলোই বিরাট বিরাট আর ফুলের গাছ দিয়ে সুন্দর করে সাজান আর সব বাগানের মাঝ বরাবর আছে একটা জলের ধারা আর তাতে রয়েছে অগুন্তি ফোয়ারা। এগুলো এমন ভাবেই তৈরি যে সবসময় জল বয়েই চলেছে। বিকালটা রাখা ছিল কেনাকাটার জন্য। ডাল গেটের বাজারটাও অবশ্য আমাদের হোটেলের কাছে, আর হোটেলের পাশেই রাস্তার ধারে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বসে যায় জমজমাট বাজার পাওয়া যায় কাশ্মিরী কাজ করা শাল, কাজ করা গরম কাপড়ের সালোয়ার পিস, সোয়েটার, জ্যাকেট প্রভৃতি। চলে দর দস্তুর, মেয়েদের আবার তাতেই আনন্দ। ফলে সহজেই যোগ হয়ে গেলো আর একটা বাড়তি লাগেজ। দলের কয়েকজন ওখান থেকেই প্লেনে ফিরে গেলেন কলকাতা কিন্তু আমরা যাব কাটরা হয়ে, voishna devi দর্শন করে। পরের দিন সকালে ঘণ্টা আটেকের বাস জার্নির শেষে আমরা পৌছালাম কাটরা, এবার চিন্তা পাহাড়ে উঠে দেবী দর্শনের। দেখেছিলাম ওখানে হেলিকপ্টার সার্ভিস আছে আর তার টিকিট পাওয়া যায় অনলাইনে, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সেটা ম্যানেজ করতে না পেরে চিন্তা ছিলো আমার গিন্নীকে নিয়ে কেননা ওর হার্টের অপারেশান হয়ে গিয়েছে আর আমাদের কারুরই অতটা হাঁটার অভ্যাস নেই। যদিও অনলাইনে দেবী যাত্রার ছবি দেখে দেখে হেঁটে ওঠার জন্য কিছুটা সাহস সঞ্চয় করেছিলাম। তবুও মনে ভয় একটা ছিলই। কাটরার হোটেলটি খুব আরামদায়ক, ac গুলোও ভালো কাজ করছে কিন্তু আমরাতো রাত্রে হাঁটবো তাই ওদিকে আর তাকাচ্ছিলাম না। আমি কলকাতার থেকে অনলাইনে আমাদের সবার যাত্রা পরচি নিয়েছিলাম কিন্তু সেটা কোনো কাজে আসলো না, তাই আমাদের সবাইকে হেঁটে গিয়ে ছবি তুলিয়ে নতুন পরচি নিতে হোলো। একটু কম খেয়ে রাত নটা নাগাদ হোটেল থেকে অটো নিয়ে পৌছালাম বানগঙ্গা চেকপোস্টে, অত রাতেও প্রচুর লোক চলেছেন দেবী দর্শনে। পরচিতে ছাপ মাড়িয়ে আমরা হেঁটে উঠতে লাগলাম দেবী দর্শনে, আর ঘোড়াবালারা দর হাঁকচে ঘোড়া প্রতি দুহাজার করে কেবল যেতে। ওরা এতই বদমাইশ যে বলার কথা নয়, আমাদের সঙ্গে এঁটে আছে এটুলির মত। কিছুক্ষন চলার পর রাস্তার দুদিকে শুরু হোলো বিভিন্ন জিনিষের দোকান, পাওয়া যাচ্ছে খাবার দাবার, লাঠি ইত্যাদি। আমরাও সবাই একটা করে লাঠি নিয়ে নিলাম, চলতে চলতে সেই লাঠিতে ভর দিয়ে একটু জিরিয়ে নেওয়া যায়। বেশ চলছিল এই ভাবেই। হটাৎ একটা বাচ্চা মেয়েকে পিঠে নিয়ে একটা ঘোড়া খেপে গিয়ে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দৌড়ে এসে পেছন থেকে ধাক্কা মারল গিন্নিকে, আর সে পপাত ধরণীতলে। এতো জোর লেগেছিলো যে আমরা দৌড়ে গিয়ে ধরা সত্তেও উঠে বসতে পারছিল না। আশেপাশের দোকানদাররাও ছুটে এলেন ওর সাহায্যের জন্য। ধরাধরি করে কোনরকমে ওকে বসান হোলো ওই দোকানের একটা বেঞ্চে, ভাবলাম যে আমাদের যাত্রা বোধহয় এখনেই শেষ। কিন্তু দেবী চাইলে কি না হয়, কিছুক্ষণ বসার পর গিন্নী আস্তে আস্তে সুস্থ্য হতে লাগলেন আর হাত ও পায়ের ওই রকমের যন্ত্রণা সহ্য করেও আস্তে আস্তে আবার উঠে দাঁড়ালেন। এবার আর রিস্ক নেওয়া গেলো না, দর দস্তুর করে প্রত্যেকে উঠে পড়লাম আলাদা আলাদা ঘোড়ায়। অর্ধকুমারী পর্যন্ত নিয়ে যাবে বলে কথা থাকলেও নামিয়ে দিলো তার অনেকটা নিচের একটা আস্তাবলে। এর পরের রাস্তা বেশ খাড়াই হলেও আমরা তখন নিরুপায়। কষ্ট হলেও উঠছি আস্তে আস্তে, লঠিতে ভর করে। ডানদিকে পড়লো একটা ছোট্ট হাসপতালের ঘর, রাত্রি বলে তার সামনের ফাঁকা জায়গায় সপরিবারে শুয়ে আছেন অনেক ভক্ত। তাদের মাঝখান দিয়েই সাবধানে কাটিয়ে কুটিযে ভেতরে ঢুকেই দেখা পেলাম এক ডাক্তারবাবুর, সব শুনে একটা কাগজে একটু ব্যাথা কমার মলম লাগাতে দিলেন আর দিলেন একটা খাবার বড়ি। তিনি অভয় দিলেন এতেই হেঁটে হেঁটে দেবী দর্শনে যাওয়া যাবে। ওষুধ খেয়ে, লাগিয়ে আর ডাক্তারের অভয় পেয়ে গিন্নী তখন একটু চাঙ্গা হয়ে উঠেছেন। অর্ধকুমারীর কাউন্টারে আমাদের সময় দেওয়া হোলো যে দর্শন হবে চার দিনের পর যেটা সম্ভব নয়। তাই দূর থেকেই অর্ধকুমারীর মন্দিরের মা কে প্রণাম জানিয়ে পায়ে পায়ে আমরা এগিয়ে চললাম মূল মন্দিরের দিকে। এবার রাস্তা কিন্তু বেশ ভালো, পরিষ্কার আর ঘোড়ার উৎপাত বিহীন। জানতে পারলাম যে ঘোড়া চলে অন্য রাস্তায়, তবে এই রাস্তায় আছে পালকি আর বাচ্চাসহ প্রম। দিনের বেলায় এই রাস্তায় অটো চলে, কিন্তু রাতে সে সব বন্ধ। কি আর করা যায়, আমরা ধীর পায়ে এগিয়ে চললাম আমাদের গন্তব্যের দিকে, রাতের অন্ধকারে দূরে দেখা যাচ্ছে ভবনের আলো। পাহাড়ের অনেক উপরে উঠে গেছি বলে একটু ঠান্ডার আমেজও পাওয়া যাচ্ছে । আমরা একটু চলছি, বসছি রাস্তার পাশের চেয়ারে। কখনো বিশ্রাম নিচ্ছি দাঁড়িয়ে, লাঠিতে বা রাস্তার ধারের লোহার বিমের উপর ভর দিয়ে। কত মানুষ, কাচ্চা বাচ্চা, বুড়ো বুড়ি সবাই চলেছে "মা" এর দর্শনে। রাস্তা যেন আর শেষ হয় না, দেখতে পাচ্ছি সাপের মতন এঁকে বেঁকে চলেছে রাস্তা, রাস্তা ভর ঠাকুরের নাম গান হয়ে চলেছে মাইকে চলেছে নানা রকমের ঘোষণাও। হটাৎ দেখি রাস্তার ধারের ডানদিকে রয়েছে জুতো রাখার লোহার তাক, তবে তার কাছে যাওয়া যাচ্ছেনা কারন সেখানে জনগণ ঘুমাচ্ছে পরম নিশ্চিন্তে। যাইহোক মন্দিরে ঢোকার ঠিক আগে একটা তাকে জুতো রেখে আমরা এগিয়ে গেলাম দেবী দর্শনের লাইনের দিকে, কেননা আমরা মোবাইল, ক্যমেরা, দেশলাই প্রভৃতি সব কিছুই রেখে এসেছিলাম হোটেলে। নাহলে ওসব জমা রাখতেই চলে যেতো আরো এক-দেড় ঘণ্টা। মন্দিরে ঢোকার পর লাইনটা চলেছে উঠে নেমে আর মাঝেই মাঝেই মিলিটারিরা চেকিং চালাচ্ছে দর্শনার্থীদের। আমার হাতে একটা জলের বোতল ছিলো, ফেলে দিতে হোলো সেটাও আর তার আগেই ফেলে দিতে হয়েছিলো আমাদের সাহায্যকারী সেই লাঠিটাকে। লাইন দিয়ে চলতে চলতে দেখি মন্দিরের মাথার থেকে ঝোলানো অনেক পিতলের ঘণ্টা আর লাইনের লোকজন তা বাজানোর জন্য লাফা লাফি শুরু করে দিয়েছেন। না বুঝেই সেই ঘণ্টা বাজালাম আমরাও আর তারপর পৌছালাম একটা ফাঁকা জায়গায়, সামনেই পাহাড়ের গায়ে একটা গুহা আর লাইনটা ঢুকে গেছে সেই গুহার ভেতরে। কিছুটা এগিয়েই ডানদিকে আলোয় ঝলমলে রঙ্গীন দেবী মূর্তি আর বাঁদিকে সোনার সিংহাসনে উপবিষ্ট আসল দেবীরা। তেনাদের সামনেই বসে এক পুরোহিত, যদিও এখানে পূজা দেওরার কোনো উপায় নেই তাই দেবী দর্শনেই মুক্তি। এখানে একই সঙ্গে অবস্থান করছেন দেবী দূর্গা, লক্মী আর সরস্বতী। দর্শন শেষে লাইনের ভিড়টা একটু হাল্কা হোলো, আমরা বেরিয়ে এলাম সেই ফাঁকা জায়গায়। নামার সময় ঠিক করেই নিয়েছিলাম যে ঘোড়াতেই নামব পুরোটা, তাই প্রথমেই ঘোড়ার পিঠে উঠে পড়লাম। ঘোড়া নামতে লাগলো ঘুরে ঘুরে voiro ঘাঁটি হয়ে। হাতি মাথা ঘুরে এই রাস্তাটা খুব চড়াই (ওঠার সময়) .যদিও আমাদের নামতে হচ্ছে নিচের দিকে। রাস্তাটা এতটাই ঢালু যে নামতে গেলে পায়ে ব্যাথা হওয়া অবসম্ভআবি। ঘোড়াতে করেও নামতে আমাদের লাগলো প্রায় পাঁচ ঘণ্টা, কোমরে ব্যাথা হয়ে গেছে আর হেঁটে নামলে যে কি হতো বুঝতে পারছি না। নিচে নেমে অটো ধরে হোটেলে পৌছে বুঝলাম, ac রুমের উপকারিতা। ঠান্ডা সরবৎ আর সকালের বানানো কচুরী খেয়ে সেই যে ঘুম দিলাম সে আর ভাঙ্গতেই চায় না। অনেক ডাকাডাকির পর উঠে কোনরকমে একটু নাকে মুখে গুঁজে আবার আমরা বিছানায়। আমাদের ফেরার ট্রেন ছিলো রাত্রি নটা নাগাদ কাটরা স্টেশান থেকে । অপূর্ব স্টেশনটা, গোটাটাই মাটির নিচে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঠিক যেন বিদেশী ছবিতে দেখা রেল স্টেশান। ঘোরা শেষে এবার ঘরে ফেরার পালা ... ...
Post By-Debasis Singha
0 Comments
কাশিমবাজার রাজবাড়ি, বহরমপুর রাজবাড়িতে রাত কাটানোর খুব ইচ্ছে হয়েছিল। অনেক খুঁজে ওভারহাইপিড অপশনগুলো বাদ দিয়ে পেলাম কাশিমবাজার রাজবাড়ি। মুর্শিদাবাদে। ছবি দেখে মনেও ধরে গেল বেশ, কারণ, এখানে থাকা-খাওয়ার সঙ্গে উপরি পাওনা হিসেবে হাজারদুয়ারি, মতিঝিল-সহ আশপাশের জায়গাগুলো ঘুরে দেখা যাবে। অর্ক মানে আমার বর ল্যাদখোর হলেও বেড়াতে এসে শুধু শুয়ে-বসে থাকার প্ল্যান ঠিক পছন্দ করে না। রাজবাড়ির গেস্ট হাউসের নম্বর জোগাড় করে বুকিং সেরে ফেমলাম তড়িঘড়ি। তবে কলকাতা ও সংলগ্ন রাজবাড়িগুলোর মতো এখানে বুকিং নিয়ে মারামারিটা এখনো নেই। পৌঁছে চেক আউটের সময় পেমেন্ট করা যাবে জেনে খুশি হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারছিলাম না। কিন্তু ম্যানেজার মশাই নিজেই বারদুয়েক ফোন করে আশ্বস্ত করলেন। অনেকদিন পর উইকেন্ড ট্রিপ। আমার বর অর্ক আর আমার সঙ্গী দিদিভাই আর ছোট্ট বনঝি নানু। বেরলাম এক শনিবার সকালে সাড়ে ছ'টা নাগাদ। ভেবেছিলাম তাড়াতাড়ি স্টার্ট করব। তবে উইকেন্ড-এর ভাবা তো! ঘুমের ভিতর হারিয়ে যায়। বারাসাত-এ পৌঁছেই দাঁড়াতে হল লম্বা লরির লাইনের পিছনে। টুক টুক করে এগিয়ে সেই জ্যাম কাটাতে লেগে গেল প্রায় 45 মিনিট। তারপর NH34-এ উঠে হুহু করে গাড়ি ছুটিয়ে চলা শুরু। রানাঘাট-এ দাঁড়িয়ে একটু বিস্কুট, কোলড্রিঙ্ক নিয়ে নিলাম। টার্গেট ছিল 11 টার মধ্যে ঢুকব, তাই রাস্তায় বেশি দাঁড়াবার ভাবনা আগেই বাদ দিয়েছিলাম। শুধু কৃষ্ণনগর-এ পৌঁছে একটু সরভাজা, সরপুরিয়া না খেলে পাপ হয় তাই সে সুযোগ থেকে নিজেদের বঞ্চিত করলাম না। তারপর আবার ছুটল গাড়ি। রোড ট্রিপ-এর মজা হল নানান ধরণের মানুষের দেখা পাওয়া যায়। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী পাল্টে যেতে থাকা মানুষ, অনেক গাছপালা, রাস্তার পাশে নুয়ে পড়া কৃষ্ণচূড়া, নানা শেড-এর সবুজ মনটা ফুরফুরে করে দেয়। রাস্তা বেশ ভালো, খানা-খন্দের দেখা প্রায় নেই বললেই চলে, বেশ কয়েকটা রেলগেট-এ আটকা না পড়লে মোটামুটি 5 ঘন্টার বেশি ড্রাইভ না। বারাসাত যদিও খানিকটা টাইম হাইজ্যাক করে নেবে সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। আমরা বহরমপুর পৌঁছে জিপিএস-এর ওপর আস্থা রেখে ও গাড়ি থেকে মুখ বাড়িয়ে দু-একজনকে জিগ্যেস করে পৌঁছলাম ছোট রাজবাড়ি ওরফে রূপকথা গেস্ট হাউজ। এই নামেই রাজবাড়ির কিছুটা অংশ গেস্ট-দের থাকার জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। বাড়িটা দেখেই ড্রাইভের ক্লান্তি এক নিমেষে পালিয়ে গেল। সামনের সিঁড়ি বেয়ে ঢুকলাম নাচঘরের মধ্যে দিয়ে। উপর থেকে ঝুলছে নানান ধরণের ঝাড়বাতি। বিশাল লম্বাটে ঘর, দুদিকে বিশাল আয়না, ওপর থেকে ঝোলানো পাখা, লম্বা ডাইনিং টেবিল, প্রচুর আসবাব, বিখ্যার শিল্পীদের পেন্টিং, মডেল-এ সাজানো এই নাচঘর। এই জায়গাটি টুরিস্ট-দের জন্য খোলা থাকে বলে আসবাবপত্রগুলো প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা। নাচঘর পেরিয়ে আমরা বারান্দা সংলগ্ন সিঁড়ি দিয়ে নেমে ঢুকে পড়লাম ভিতরের দালানে। ওপরে খোলা আকাশ, মাঝে থাম ও বসার জায়গা। এখান থেকে ডানদিকের অংশে হেঁটে গিয়ে আমাদের ঘরে যাওয়ার পথ। সেদিকেই এগনো গেল। সিঁড়ি দিয়ে একটু উঠে গিয়ে লম্বা লন, উপর থেকে ঝুলছে বাহারি আলো। ঘরের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে চোখ জুড়িয়ে গেল। সামনেই বসার জায়গা, নাচঘরে যেমন চেয়ার দেখেছিলাম তেমন চেয়ার, রাউন্ড টেবিল, গ্রামোফোন রেকর্ড, শো-কেস-এ সাজানো বেশ কিছু এন্টিক জিনিস। বসার ঘরের পর্দা সরিয়ে বেডরুম। আমরা 4 জন বলে 4 বেডরুমই নিয়েছিলাম, দুটো পাশাপাশি কাঠের কাজ করা বেড, পুরোনো দিনের খাট হওয়ায় চারদিকে কাঠের বার আছে। গোটা ঘর কাঠের আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, দেরাজ দিয়ে সাজানো, বেডরুমের জানলা দিয়ে দেখা যায় বাগান, পুকুর ঘাট। শান্ত স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ। রুমের দাম জিএসটি নিয়ে মোটামুটি 6 হাজারের মধ্যে। ডবল বেডগুলো 4 হাজারের কাছাকাছি। আগে থেকেই ফোন-এ জানিয়ে দিয়েছিলাম লাঞ্চ-এ কী খাব। খাবার জায়গায় যাওয়ার আগে ঘুরে দেখলাম আশপাশটা। জানলাম 1740 খৃস্টাব্দে পেশায় ব্যবসায়ী দীনবন্ধু রায় ও তাঁর বাবা অযোধ্যা রাম রায় এই প্রাসাদোপম বাড়িটি তৈরি করেন। তখন মুর্শিদাবাদে রাজত্ব চলছে নবাব আলিবর্দি খাঁ-এর। দীনবন্ধু রায়ের পুত্র জগবন্ধু রায় মুর্শিদাবাদে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির দেওয়ান হলেও বেশিদিন সে কাজ না করে অন্য জায়গায় চলে যান। এই পরিবারের লোকজনের সাধারণ মানুষের প্রতি দয়াশীল মনোভাব দেখে পরিবারের সদস্য আশুতোষ নাথ রায়কে ব্রিটিশ সরকার রাজা উপাধি দেন। তাঁর পরবর্তী প্রজন্ম এই বাড়িতে থাকলেও অতো বড় বাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের ব্যায়বহন সম্ভব ছিল না তাই তাঁরা জমিদারি বন্ধ করে দেন। কিন্তু বাড়িটি ছিল। 90-এর দশকে উত্তরাধিকাররা বাড়ির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন। বাড়ির কিছুটা অংশ নিয়ে অতীত ঐতিহ্য বজায় রেখে পরিবারেরই উদ্যোগে ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য চালু হয়েছে রূপকথা গেস্ট হাউস। এই পরিবারের পুত্রবধূ শ্রীমতী সুপ্রিয়া রায় সুগার এন্ড স্পাইস চেনটি শুরু করেন, তিনি তাঁর এই উদ্যোগের জন্য ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন। এই গেস্ট হাউজের লাগোয়া সুগার এন্ড স্পাইস-এর একটি শপিং মল রয়েছে, এখানে মুর্শিদাবাদি সিল্ক, গরদের শাড়ি পাওয়া যায়। বর্তমানে বাড়ির সদস্যরা কলকাতাতে থাকলেও প্রতি বছর পুজোর সময় এখানে আসেন। পরিবারের লোকজনকে নিয়ে চন্ডীমণ্ডপে হয় পুজোর আয়োজন। পুজোর সময়ও এখানে থাকা যায়, পুজোর আনন্দে অংশ নেওয়া যায় রায় পরিবারের সঙ্গে। আমরা বড় বড় দালান দেখে নাচঘরের ভিতর দিয়ে গিয়ে সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছলাম উপরের ডাইনিং হল-এ। ডাইনিং হলের জানলা দিয়ে নিচে তাকালে দেখা যায় লম্বা দালানদুটো। এখানেই আছে ট্যুরিস্টদের থাকার আরও 3-4টি ঘর। আমিষ-নিরামিষ মিলিয়ে খাবার আয়োজন ছিল অসাধারণ। মাছ বা চিকেন মিল নিলে দাম মাথাপিছু 300, মটন হলে 400। নিরামিষ বা ডিম 200 টাকা। স্যালাড, ভাত, ডাল, বেগুন ভাজা, পাঁচমিশালি তরকারি, মাছ, মটন, আমের চাটনি আর চিনিপাতা মিষ্টি দই, লোভে পরে বেশ বেশিই খেয়ে ফেললাম। রান্না ঘরোয়া এবং বেশ সুস্বাদু। স্থানীয় দুই মহিলাই রান্না করেন। আর বাড়ির কেয়ারটেকার ছেলেটি খুব যত্ন করে খাওয়ায়। রাজবাড়ি থেকে ডানদিক নিলে রেলগেট পেরিয়ে হাজারদুয়ারি যাওয়ার রাস্তা। এখানকার গ্রাম্য লোকেদের সবই কাছে মনে হয়, তাই রাজবাড়ি থেকে 5 কিলোমিটার দূরত্ব শুনে বেরিয়েও গুগল ম্যাপ-এ দেখলাম প্রায় 10 কিমি যেতে হবে আমাদের। 20 মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম হাজারদুয়ারি। তখন চড়া রোদ। যাওয়ার পথে দেখলাম ওয়াসিফ মনজিল। গাড়ি পার্ক করে বেশ খানিকটা হেঁটে যেতে হয় টিকিট কাটতে। টিকিট মাথাপিছু 20 টাকা। ক্যামেরা, মোবাইল নিয়ে ঢোকা নিষেধ, তাই সব জমা দিয়ে গাইড-এর সঙ্গে এগলাম। হাজারদুয়ারির ইতিহাস আমাদের অনেকেরই জানা। তাই বিস্তারিত আলোচনায় যাচ্ছি না। বাইরে ঘড়িঘর, ইমামবাড়া, মদিনা দেখে আমরা হাজারদুয়ারির ভিতরের মিউজিয়ামে ঢুকে পড়লাম। ভিতরের বিভিন্ন ঘরে যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, কামান, সৈনিকের পোশাক, তৎকালীন পরাধীন নবাব ও ব্রিটিশ শাসকের অয়েল পেন্টিং, গল্পে শোনা সেই বিখ্যাত আয়না ও ওষুধ দিয়ে সংরক্ষিত কুমির, হাতির দাঁতের সামগ্রী, নবাবী সিংহাসন, নবাবপুত্রকে রানী ভিক্টরিয়ার উপহার দেওয়া বিশাল ঝাড়লণ্ঠন, বন্দিদের বিচারকক্ষ দেখে বেরিয়ে এলাম। এরপর মোতিঝিল। পার্কে ঢোকার টিকিট 20 টাকা, লাইট এন্ড সাউন্ড দেখলে ভিতরে ঢুকে আলাদাভাবে সেই টিকিট কাটতে হয়। এখানে গত কয়েক বছরে বিউটিফিকেশন হয়েছে। অনেকটা কলকাতার ইকোপার্কের মতো সাজানো। ভিতরে কলমের আম বাগান, নানা রঙের গোলাপে ভরা গোলাপ বাগান, লাইন দিয়ে সূর্যমুখীর সারি, বাচ্চাদের খেলার পার্ক, জায়গায় জায়গায় টুরিস্টদের বসার জন্য সুদৃশ্য নানা নামের সিটিং এরিয়া। ট্যুরিস্ট-দের জন্য ভিতরে থাকার জায়গাও রয়েছে। এখানে সবচেয়ে ভালো লাগল মতিঝিলে ফুটে থাকা রাশি রাশি পদ্ম। এত পদ্মফুল আগে কখনো এভাবে দেখা হয়নি। লাইট এন্ড সাউন্ড গরমকালে শুরু হয় 6.30 টায়। ওদিকটায় হেঁটে যেতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে। তাই আমরা হেঁটে চারপাশ দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম টিকিট কাউন্টারে। টিকিট কেটে লাইন দিয়ে ঢুকে মনের মতো জায়গা পেয়ে বসলাম। 6.30-এ টাইম হলেও ভিড় জমে আর অন্ধকার নেমে শো শুরু হতে হতে প্রায় 7 টা বাজল। সিরাজের সঙ্গে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কাহিনি, স্বয়ং মুর্শিদাবাদ-এর জবানিতে। শো দেখে আমরা গল্ফ কার্ট-এ চড়ে ঝিলের পাশ দিয়ে পৌঁছে গেলাম মতিঝিল-এর মেন গেট এ। সেখান থেকে বেরিয়ে রাজবাড়ি ফেরার আগে সিল্ক শাড়ির সন্ধানে একটু খাগড়া বাজারের দিকে যাবার প্ল্যান ছিল। কিন্তু গাড়ি নিয়ে সে রাস্তায় ঢুকে খুবই অসুবিধায় পড়তে হল। গুগল তখন সরু গলি পেলেও সেখান দিয়ে ফেরার রাস্তা দেখাচ্ছে, আর রাস্তার লোকজন ডান-দিক বাঁদিক করে আরও গুলিয়ে দিচ্ছে। কী কুক্ষণেই যে লোভী মাথায় শাড়ির কথা এসেছিল! গুগল ততক্ষণে পুরো ঘেঁটে গেছে, এক ঘণ্টা ঘুরপাক খেয়ে অবশেষে কিছু সহৃদয় মানুষের সাহায্যে রাস্তা বুঝে ফেরা গেল। রাজবাড়ি ফিরলাম প্রায় 9 টায়। মূল দরজা দিয়ে না ঢুকে এবার ডানপাশ দিয়ে ঢুকলাম। এখান দিয়ে আমাদের থাকার ঘরটা একেবারেই কাছে। ঘরের সামনে ঝাড়বাতি জ্বলছে, পিলারগুলোয় জ্বলা আলো এক অন্যরকম আবহ তৈরি করেছে। সেখানে বসে একটু আড্ডা দিয়ে ঘরেই সেরে নিলাম ডিনার। রুটি, আলুভাজা, সবজি, চিকেন, পাঁপড় ভাজা আর কালোজাম। আর একটা ভালো খবর, এখানে মদ্যপান করতে চাইলে ঘরে কেউ আটকাতে আসবে না। খানিকক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমরা সবাই বিছানা নিলাম। রবিবার সকালের রোদে বাড়িটা কি অপূর্ব দেখাচ্ছে। খানিক পরেই ফিরতে হবে সেইটা মানতে ইচ্ছে করছিল না মোটেই। আমরা গেলাম বাইরের বাগানের দিকে। পুকুরটা মজে গেলেও বাঁধানো পাড়টায় গাছের ছায়ায় বসতে বেশ লাগে। আর একটু ডানদিকে গেলে বিশাল নাগকেশর গাছ, থোকা থোকা কুঁড়ি আর ফুলে ভরে আছে, চারপাশটা ফুলের গন্ধে ম ম। আমাদের কেয়ারটেকার এখান থেকে নিয়ে গেল গোবিন্দ মন্দিরে। দরজা দিয়ে ঢুকে ভিতরে নাটমন্দির, ভোগের ঘর, দালান ও মন্দির। এখান থেকে এগোলাম চন্ডীমণ্ডপের দিকে। ঢোকার আগে অনেকে মিলে বসে ঠাকুরের ভোগ খাবার জায়গা। এই চন্ডীমণ্ডপেই দুর্গাপুজো হয়। ওপর থেকে ঝুলছে নানা মাপের নানা ধরণের ঝাড়লণ্ঠন। উপরের কাঁচের জানলা দিয়ে আসছে মিঠে রোদ্দুর। সুসজ্জিত থামে লাগানো সাবেকি আলো, কয়েক ধাপ সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাঁধানো মণ্ডপ। মণ্ডপের দুপাশে ওপর থেকে ঝুলছে দুটো রঙিন কাঁচের তোতাপাখি। ধুলোর হাত থেকে বাঁচাতে ঝাড়বাতি ও থামগুলো প্লাস্টিকে ঢাকা থাকে, খোলা হয় পুজোর সময়। গোটা বাড়িটিতে এত দিকে এত জায়গা যে এখানে হারিয়ে যাওয়াটা খুব সোজা। চন্ডীমণ্ডপ থেকে বেরিয়ে আমরা গেলাম ব্রেকফাস্ট করতে। ঘড়ি বলছে 10 টা। চেক আউট টাইম 10 টা হলেও লোকজন না থাকায় কোনও তাড়াহুড়ো ছিল না। কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট-এ ছিল গরম গরম লুচি, কালো জিরে, কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দিয়ে চচ্চড়ি, ডিম সেদ্ধ, কলা, চা/কফি। এমন সাবেকি পরিবেশে রবিবাসরীয় ব্রেকফাস্ট হিসেবে লুচি, চচ্চড়িটা জমে গেল। আমাদের এখানে আসা থেকেই প্রচুর গাছ ভর্তি আম দেখে ভীষণ আম পাড়া এবং আম বাগান ঘোরার ইচ্ছে হয়েছিল। রাস্তাঘাটে গাছে হাত দিলে জরিমানা দিতে হবে তাই আমরা কেয়ারটেকারকে বলে রেখেছিলাম আম বাগানে নিয়ে যেতে। খাওয়া-দাওয়ার পর যাওয়া হল পাশেই রাজবাড়ির নিজস্ব আমবাগানে। আড়াইশো বিঘা জমির ওপর এই বাগান। সব গাছে নানা সাইজের আম ঝুলছে। কোনো কোনো গাছে উঁচুতে আম, কোনোটায় আবার আমসমেত ডাল মাটিতেই নুইয়ে পড়েছে। বাগানটা রাজবাড়ির হলেও এখন ইজারাদারদের দেওয়া আছে। তাই আম পাড়ার জন্য ইজারাদারদের অনুমতি প্রয়োজন। এখানে পাকা আমের সময় বাগানে গিয়ে আম পেড়ে সেই আম কেনা যায়। অনুমতি পেয়ে দু-তিনটে আম পেড়ে আমরা মহানন্দে ফিরলাম রাজবাড়িতে। এরপর বিল মিটিয়ে বাড়ি ফেরার পালা। খুব থেকে যাবার ইচ্ছে হলেও, গাড়ির কাছে লাগেজ নিয়ে এসে দাঁড়াতেই হল। সঙ্গে নিলাম দালান জোড়া রোদ, গাছের ছায়ার আরাম, জামায় লেগে থাকা ধুলো, আর আগলে রাখার মতোন ভালোলাগা। Post By-Aditi Laha
ডাউড়ি খাল, বাঘমুন্ডি পুরুলিয়া : একটি পূর্ণাঙ্গ গাইড (অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণের পূর্ণতাপ্রাপ্তি) ২০০৬ সাল । তখন না ছিলো ফেসবুক, না ছিলো ইউটিউব বা স্মার্ট ফোন । প্রিন্ট মিডিয়া আর ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মধ্যে ২৪ ঘন্টা আর এবিপি আনন্দ ই শুধু ছিলো । এর মধ্যেই একটা খবর খুব চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রছাত্রী পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডির কাছে অযোধ্যা পাহাড়ে হরপা বানে ভেসে গিয়ে আর জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারেনি । অনেক দূরে পাওয়া গিয়েছিল তাদের প্রাণহীন দেহ । সেই সময়, সেই অচেনা, অজানা অথচ ভয়ঙ্কর জায়গাটা নিয়ে বিরাট কৌতূহল তৈরী হয়েছিল জনমানসে । খবরের কাগজ আর দুটো টিভি মিডিয়া থেকেই আমরা স্বাতী, অরুন্ধতীদের সেই বিফল অভিযানের মাধ্যমে ডাউড়ি খালের কথা জেনেছিলাম । ডাওরি খাল কুখ্যাত হয়ে গিয়েছিল ঐ একটা দূর্ঘটনা ঘটিয়ে । তখন থেকেই ইচ্ছা ছিলো ডাউড়ি খাল অভিযানের । কিন্তু সত্যি বলতে ডাউড়ি খাল অযোধ্যা হিলের আর পাঁচটা ট্যুরিস্ট স্পটের মধ্যে পড়ে না । কিন্তু আলাদা, অজানা এবং অবশ্যই ভয়ঙ্কর সুন্দর । এবং সত্যি বলতে অযোধ্যা পাহাড় ভ্রমণ যেন পূর্ণতা পায় ডাওরি খাল অভিযান সম্পূর্ন করেই । তাই এর আগে তিনচার বার অযোধ্যা হিলটপে গেলেও অযোধ্যা ভ্রমণ পূর্ণতা পাচ্ছিল না । এবারের বর্ষার শেষে হঠাৎ সুযোগ এলো বহুদিনের সেই অপূর্ণতা পূরণের । হ্যা বর্ষাতেই ডাউড়ি খাল অভিযান । খুবই ভয়ঙ্কর এবং ঝুঁকিপূর্ণ অভিযান । কখন যে হরপা বান আসবে কেউ জানবে না । আর হরপা বান এলে ..... না থাক সে কথা । পাহাড়ী জঙ্গল রাস্তায় (রাস্তা কি বলা যায় কিনা সেটা একটা কথা !) বর্ষায় পিচ্ছিল পাথর, শ্যাওলা, কাটা গাছ, ঝুরো মাটি আর পাশেই গভীর খাদ । একটা অসাবধানে পা হরকালেই সোজা নিচে পাথরের মাঝে । গাইড নিয়ে ডাউড়ি খাল, কুমিরের হাঁ দেখলাম। যেমন সুন্দর তেমনি ভয়ঙ্কর । যদি সাহসী হন গাইড নিয়ে একবার ঘুরে আসতে পারেন ডাউড়ি খাল । কিভাবে পৌঁছাবেন : ---------------------- হাওড়া থেকে পুরুলিয়া কিম্বা বরাভূম স্টেশন এসে (বরাভূম সুবিধাজনক) বাঘমুন্ডি পেরিয়ে অযোধ্যা হিল টপের নিচে লহরিয়া শিব মন্দির । ওখান থেকে ২ কিমি গেলে কুদনা গ্রাম । গাইড নিন এই কুদনা গ্রাম থেকেই । এরপর ধানজমি, নালা নর্দমা, পাহাড়ী জঙ্গল রাস্তা পেরিয়ে অনেকখানি দুর্গম পথ ট্রেক করে, পাহাড় চড়ে কুমীরের হাঁ পর্যন্ত যেতে পারবেন । গাইড নিয়েই যেতে হবে । গাইড ছাড়া রাস্তা খুঁজে পাওয়া অসম্ভব । গাইড গ্রামের লোকেরাই হয় । ১০০/২০০ টাকার বিনিময়ে তারা আপনাকে যেমন রাস্তা চিনিয়ে নিয়ে যাবে তেমনি দুর্গম পথ পেরোতে প্রচন্ড ভাবে সাহায্য করবে । থাকা : -------- অযোধ্যা হিল টপ ভ্রমণের সাথে একদিন জুড়ে নিন। হিলটপে এবং নিচে বাঘমুন্ডিতে প্রচুর লজ, হোটেল আছে । গুগুল , ফেসবুক সার্চ করলেই সন্ধান পাওয়া যাবে । শেষে দুটো কথা : ------------------- ১) অতিরিক্ত সাহসী হয়ে একা একা নিজেরা যাবেন না । লোকাল গ্রামবাসীদের গাইড করে তাদের সাহায্য নিয়ে চলুন । ২) বর্ষাতে চারিদিক সবুজ খুবই ভালো লাগবে । কিন্তু বর্ষার বৃষ্টিতে রাস্তা খুবই পিচ্ছিল আর বিপদজনক । সাথে হরপা বানের ভয় আছে । তাই বর্ষাকাল পারলে এড়িয়ে যান । বাকী সময় (গরমকালে নয় -বিশাল গরম) তো আছেই পড়ে ডাউড়ি খাল অভিযানের জন্য । হরপা বানের খবর গ্রামবাসীদের কাছে জেনে নিয়ে সাবধানে যাবেন । হঠাৎ হরপা বান চলে এলে....পালানো বা আশ্রয়ের কোনো উপায় নেই । তাই গাইড নিয়ে অভিযানে যান আর তাদের কথা শুনে চলুন । কিন্তু একবার সফল অভিযান করলে বুঝবেন - ডাউড়ি খাল কত সুন্দর আর সাথে কত ভয়ঙ্কর । Post By-Subhojit Tokdar
..... আমার শহর আমার ঐতিহ্য ছোট্টো প্রচেষ্টা 🌟🌟🌟 ️কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির ঐতিহ্যময় দুর্গোৎসব 🌟🌟🌟 💞🔯💞🔯💞🔯💞🔯💞🔯💞🔯💞🔯 মুর্শিদাবাদের বনেদিবাড়ির পূজোগুলির মধ্যে অন্যতম কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়িরর পূজো। সেই রাজাও নেই, নেই সেই রাজ্যপাঠ। তবে রয়ে গেছে ঐতিহ্য ও পরম্পরা। সেই ঐতিহ্যই বাঁচিয়ে রেখেছে কাশিমবাজারের রায় বাড়ির পূজোকে। ১৭৪০ সালে রেশমের ব্যাবসায়ী শ্রী দীনবন্ধু রায় অধুনা বাংলাদেশের ফিরজপুর থেকে ব্যবসার জন্য এসেছিলেন কাশিমবাজারে। পরে এই কাশিমবাজারেই বসবাস করতে শুরু করেন তিনি। ব্রিটিশ সরকার শ্রী দীনবন্ধু রায়কে রেশম কুটিরের প্রধান হিসেবে ঘোষনা করেন। ব্রিটিশ সরকারের আনুকুল্যে ফুলে ফেঁপে ওঠে সেই ব্যবসা। ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ সরকার রায় পরিবারকে জমিদারির স্বত্ব দেয়। মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়িতে তারপর থেকেই শুরু হয় দুর্গাপূজো। ওবাড়ির উত্তরসূরিরা এখন শহর নিবাসী। কিন্তু বছরের এই সময়টা জেগে ওঠে সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকা এই জমিদার বাড়ি। রায়বাড়ির উত্তরসূরিদের তত্ত্বাবধানে সাজোসাজো রব পড়ে যায় পূজোর কটা দিন। পরিবারের সদস্যেরা সপরিবারে এই রাজবাড়িতেই কাটান পূজোর কটা দিন। রথের দিন কাঠামো পূজোর মধ্যে দিয়ে পূজোর সূচনা হয়। ওই দিনই প্রতিমা তৈরির কাজে হাত দেন শিল্পীরা। চতুর্দশীর দিন প্রতিমার গায়ে রং লাগে। মহালয়ার দিন বেদীতে তোলা হয় মাকে। শুক্লা পঞ্চমী থেকে প্রতিপদ পর্য্যন্ত ছ'জন পুরোহিত পূজো করেন। ষষ্টির দিন আমন্ত্রণ, অধিবাস, ও বোধন হয়। সপ্তমীর দিন সকালে নবপত্রিকা গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে স্নান করানো হয়। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও সন্ধিপূজো অনুষ্ঠিত হয়। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী সপ্তমী থেকে নবমী পর্য্যন্ত, তিনদিনই এখানে কুমারী পূজো হয়, যা রাজবাড়ির মহিলারা করেন। দশমীর দিন হয় অপরাজিতা পুজো। আগে এই পূজোতে বলি দেওয়ার প্রথা থাকলেও এখন আর বলি হয় না। মাকে ভোগে মাছ-মিস্টি নিবেদন করা হয়। লুচি-পায়েস থেকে পোলাও-ইলিশ। ভোগের আয়োজনে এখনও রাজকীয় মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি। রাজকীয় ভোগের আয়োজন শুরু হয়ে যায় প্রতিপদ থেকেই। ষষ্ঠী পর্যন্ত লুচি, বোঁদে, মিষ্টি, সন্দেশ, পায়েস, আনারস, নাসপাতি, সরবতি আলু, আপেল আখ, পেয়ারা, বাতাবি লেবুর মতো ফল দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। রাতে লুচি, পায়েস, সুজি ও ক্ষীরের শীতল ভোগ। শুরুর এই আয়োজন সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর এলাহি ভোগের সলতে পাকানোর ব্যবস্থা মাত্র। এলাহি ভোগের মেনুতে থাকে পোলাও থেকে সাদা ভাত, পাঁচ তরকারি থেকে পাঁচ রকমের ভাজা— বেগুন, কুমড়ো, আলু, পটল, ডালের বড়া। তরকারির মধ্যে ফুলকপির ডালনা থেকে মোচার ঘণ্ট, লাউ-চিংড়ি, মুগের ডাল। অবশ্যই থাকে ইলিশ মাছের ঝোল আর রুই মাছের কালিয়া। শেষ পাতে টমেটোর চাটনি। কোনও দিন গোবিন্দভোগ চাল আর সোনামুগের ডালের উপাদেয় খিচুড়িভোগ রান্না করা হয়। সন্ধিপুজোর জন্য পৃথক ভোগের বন্দোবস্ত থাকে। রাজবাড়ির প্রধান পুরোহিত সৌমেশ্বর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সপ্তমী থেকে নবমীর ভোগকে বলা হয় বাল্যভোগ। প্রতিদিন এই ভোগ দেবীর পদতলে নিবেদন করার পর প্রসাদ হিসাবে ভক্তকুলের মধ্যে বিলি করা হয়। নবমীর দুপুরে পংক্তি ভোজন।’’ সপ্তমী থেকে নবমীর বিশাল আয়োজনের ভার চার জন ঠাকুর আর ছ’জন সহযোগীর কাঁধে। পুজোপাঠের দলও নেহাত ছোট নয়। সেই দলে থাকেন সাত জন। প্রধান পুরোহিত নদিয়ার দেবগ্রাম নিবাসী ৬৮ বছরের বৃদ্ধ সৌমেশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে তিন জন পুরোহিত চণ্ডীপাঠে ব্যস্ত থাকেন বাকি তিন জন পুরোহিত থাকেন দুর্গানাম জপে মগ্ন। সৌমেশ্বরবাবুর প্রধান সহযোগী পুরোহিত গোপাল রায় জানিয়েছেন, রাজত্বের সঙ্গে অবলুপ্ত হয়েছে সামন্ত যুগের পুজোর বেশ কিছু প্রথা। বর্তমান রানিমা সুপ্রিয়াদেবী আর রাজা প্রশান্ত রায়ের কল্যাণে ফের টিকেও আছে ঐতিহাসিক আমলের কিছু নিজস্ব ঐতিহ্য। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে কুমারী পুজোর পাশাপাশি সধবা পুজো হয় কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়িতে। বেদিতে শাড়ি, শাঁখা, লোহা, সিঁদুর দিয়ে সধবা বসানোর পর তাঁর পুজো করা হয়। আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে পশুবলি ও সন্ধিপুজোয় তোপ দাগার মতো প্রাচীন প্রথা। পশুবলি বন্ধের কাহিনিটা শোনালেন সৌমেশ্বরবাবু। সেটা ১৯৮৪ সাল। তখন বেঁচে ছিলেন রাজা কমলারঞ্জন রায়। নিয়ম, এক কোপে বলি দিতে হবে। কিন্তু সে বার পরপর দু’টো ছাগবলির ক্ষেত্রেই দু’কোপ দিতে হয়েছিল। সেই থেকে রাজা কমলারঞ্জন রায় পুরোহিতের নিদান মেনে পশুবলি বন্ধ করে দেন। বিকল্প হিসাবে এখন উৎসর্গ করা হয় রুই মাছের ঝোল ও কাঁচা সন্দেশ। বলি প্রথা বাতিল হলেও স্বমহিমায় বিরাজ করছে কয়েকশো বছরের প্রাচীন তুলোট কাগজে হাতে লেখা ৪৫ পাতার পুঁথি। রাজপুরোহিত জানালেন, ওই পুঁথি লেখা হয়েছে কালিকাপুরাণ, বৃহৎ নান্দি কেশর ও দেবীপুরাণের সমন্বয়ে। প্রাচীন এই পুঁথি থেকে চণ্ডীপাঠ করে রাজবাড়ির দেবীদুর্গার আরাধনা হয় বরাবর। যেমন, রাজার আমলের পেল্লাই সাইজের পিতলের হাঁড়িতে ভোগ রান্নার রেওয়াজ চলছে এখনও। কিছু বছর আগেও এই বাড়িতে নীলকন্ঠ পাখী ওড়ানো হত। কিন্তু কালের নিয়মে এখন সেসব অতীত। সকলের রইলো সাদর আমন্ত্রণ........। ছবি :- সংগৃহিত Post By-Ritam Dev Roy
যারা আমার এইরকম লেখা পড়ে গাল দেবেন বলে ঠিক করেছেন তাদেরকে আগে থেকেই আমার জাদু কি ঝাপ্পি। আর যারা ভুল করে প্রশংসা করবেন বলে ভাবছেন তাদের বলছি আমি আপনার মতো ভালো মানুষ জীবনে দেখিনি। মাইরি বলছি, থ্যাংকিউ। আয় আয় কে যাবি আয় কে মন হারাবি এক মুঠো রোদ ধরতে------------ এই এটা কে রে, যে দেশে বারো মাসের মধ্যে এগারো মাস গ্রীষ্মকাল সেখানে একমুঠো রোদ ধরার নেমন্তন্ন কার্ড বিলিয়ে বেরোচ্ছে। ব্যাটা নির্ঘাত পাগলা না হয় নেশা করেছে। সত্যি বলছি আপনাদের জায়গায় আমি থাকলে আমিও ঠিক এই রকমটাই ভাবতাম। কিন্তু কি করবো বলুন আজ যে জায়গার গল্প শোনাব সেখানে এই একমুঠো রোদই ইনফিনিটি স্টোনের সমান শক্তি যোগাতে পারে। গল্প শোনাব তিনচুলে, সিলারিগাও, সাংসীর এর। আরে দুর মশাই যারা একটু ফেসবুকে ট্রাভেল গ্রুপে ঘাঁটাঘাঁটি করে তারা সবাই তিনচুলে, সিলারিগাও নিয়ে রিসার্চ করে ফেলেছে । হুম তাও বটে, কিন্তু সাংসীর ? হলো তো, সিলেবাসের বাইরের প্রশ্ন চলে এলো তো। চিন্তা নেই নতুন চ্যাপ্টার মুখস্থ করিয়ে দিচ্ছি। তার আগে পুরোনো চ্যাপ্টার গুলো একটু ঝালিয়ে নিতে হবে। তিনচুলে দাদাদের বলছি, স্কুল লাইফের সেই হাতুড়ির বাড়ি মনে আছে? সেই আপনি যখন সবে বারো ক্লাসে উঠেছেন আর পাড়ার মেয়ে তিন্নি টেনে। সরস্বতী পুজোর দিন প্রথম বার তিন্নিকে শাড়ি পরে খোলা চুলে দেখলেন। তিন্নির সেই হঠাৎ বড়ো হয়ে ওঠা রূপ আপনার বুকে যে হাতুড়ির বাড়ি মেরেছিল, প্রকৃতি প্রেমিদের বুকে সেই একই রকমের ভালো লাগার হাতুড়ির বাড়ি মারবে এই তিনচুলে। দার্জিলিং, গ্যাংটকে যেখানে হোটেল আর দোকানের ভিড়ে পাহাড়টাকেই ঠিকমতো খুঁজে পাওয়া যায় না, তিনচুলেতে আজও সেই পাহাড়ের বড়ো হয়ে ওঠা রূপটা দেখতে পাবেন। আমরা উঠেছিলাম রাই রিসর্টে। তিনচুলেতে মাত্র তিন চারটে থাকার জায়গা। আমার মতে রাই রিসর্টের লোকেশন সব থেকে ভালো। রাত্রি বেলায় রিসর্টের বারান্দায় দাড়িয়ে দূরের পাহাড় গুলোতে তারার মতো আলোক বিন্দু আর আকাশের তারাদের একসাথে মিলে যাওয়া স্মৃতির মণিকোঠায় সারা জীবনের জন্য স্থান করে নেবেই। সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় বের হয়ে হতবাক হয়ে গেলাম। সামনে এ কি দেখছি, দৌড়ে গিয়ে সব ঘর থেকে বাকিদের ডেকে নিয়ে আসলাম। মনে হচ্ছিল হাত বাড়িয়ে এক মুঠো কাঞ্চনজঙ্ঘা ধরে নিতে পারবো। আকাশ টাও যেন পশ্চিমবঙ্গের ব্রান্ড কালার নীল সাদার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আমাদের পাঁচ দিনের জন্য বুকিং করা গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লামাহাটা, গুম্বা দাড়া, তাক্দা সাইট সিইং এর উদ্দেশ্যে। প্রতিটা জায়গাই অসাধারণ। আর হ্যাঁ, তিন্নি কে প্রেম নিবেদন করার পর ওর বাবা যখন আপনার বাবাকে তার বাবার নাম ভুলিয়ে দিয়ে গিয়েছিল তখন আপনার উপর কি প্রভাব পরেছিল মনে আছে? সাত দিন যেখানেই বসতে যান উড়ি বাবাগো মাগো। সে ব্যথা নস্যি মনে হবে পরের দিন আমারা যা ব্যথা পেলাম তার কাছে । আগের দিন কাঞ্চনজঙ্ঘার ওই রূপ দেখে উত্তেজিত হয়ে সকাল চারটে থেকে বারান্দায় চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছি, কিন্তু তোমার দেখা নাই গো তোমার দেখা নাই। সকাল দশটায় আমরা বের হলাম আমাদের গন্তব্য সিলারিগাও এর দিকে। আবার এক চমক আমরা গাড়ীতে উঠতে যাবো ঠিক সেই সময় রাই পরিবারের মহিলারা আমাদের প্রত্যেকের গলায় উত্তরীয় পরিয়ে বিদায় সম্বর্ধনা জানালো। শুরু হলো আমাদের পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা।তিনচুলে থেকে সিলারিগাও যাওয়ার পথে আমরা গিয়েছিলাম বড়া মাংওয়া। অপূর্ব এক হার্বাল গার্ডেন আর অরগানিক ফ্রুট জুস ফ্যাক্টরি দেখে আমরা পৌছালাম সিলারিগাও। রাই রিসর্টের যোগাযোগ মোবাইল - 9733242876 / 8436513757 / 9733281506 ই মেল - [email protected] সিলারিগাও দিদিদের বলছি, ধরুন না আপনিই সেই তিন্নি। রাকেশের সাথে পাঁচ বছর চুটিয়ে প্রেম করার পর একদিন বাড়িতে জানাজানি, দেখা সাখ্যাৎ পুরো বন্ধ এক মাস ধরে। এই সময় এক বান্ধবীর জন্মদিনে যাওয়ার নাম করে ধাঁ। ব্যারাকপুরের গান্ধী ঘাটে গঙ্গার ধারে বেঞ্চের উপর একে অপরের হাতে হাত রেখে রাকেশের বুকে মাথা রেখে বসে যে পরিতৃপ্তি অনুভব করেছিলেন, সিলারিগাওয়ের নির্মলা হোমস্টের বাইরের উঠানে বসে আপনি যখন ওই উন্মুক্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবেন সেই দিনের কথা মনেপড়ে যাবে। নির্মলা হোমস্টে এখানের সবথেকে উঁচুতে অবস্থিত এবং সবথেকে বড় আর সুন্দর হোমস্টে। এ যেন এক মেঘের দেশ। আমরা শহরের মানুষরা পাহাড়ের চূড়ায় যখন মেঘ ভেসে যেতে দেখি তখন মনে হয় আহা যদি ওই মেঘটাকে ছুঁতে পারতাম , সিলারিগাও আপনাকে সেই দিবা স্বপ্ন পূরণ করে দেবে। ঘরের বাইরে বিশাল খোলা চত্বরে যতবার এসে দাঁড়িয়েছি কোথা থেকে মেঘ ভেসে এসে সারা শরীরে চুম্বন করে যাচ্ছে। এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা হয়তো এক মুঠো রোদ ধরার জন্য ছটফট করে কিন্তু আমারা শহুরে জীবনের লোকেরা এই এক আকাশ মেঘের শরীরে স্পর্শ অনুভব করতে নিজের থেকে নিজেকে মুক্ত করে দিতেও তৈরি। মাত্র বত্রিশটি পরিবার নিয়ে তৈরি এই সুন্দর ছিমছাম সিলারিগাও। নির্মলা হোমস্টেতে এক রাত কাটিয়ে আমরা পরের দিন চললাম আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সাংসীর এর উদ্দেশ্যে। যাওয়ার পথে আমরা গিয়েছিলাম রামধুরা, ইচ্ছে গাও, ডেলো হয়ে। প্রত্যেকটা জায়গা পাহাড় এক একটা ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়ে হাজির। নির্মলা হোমস্টে মোবাইল- 9635005318 / 7063303741 সাংসীর অ্যা.. বুড়ো বয়সে রস উথলে পরছে। বলি কাল অফিস থেকে ফেরার পথে আটা আর নুন নিয়ে আসতে বলে ছিলাম সেকথা মনে আছে। বিয়ের পঁচিশ বছর অতিক্রান্ত, জীবন টা শুধু ওই আটা আর নুন এতেই আটকে গেছে, রোম্যান্স টোম্যান্স সব হাওয়া। এই সময় যদি আপনি আপনার জীবনটাকে ফিরে পেতে চান তাহলে একবার আসতেই হবে এই সাংসীর জায়গাটিতে। এই নির্জন নিস্তব্ধতা আপনাকে নিজেকে খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। কে কে হোমস্টে এখানকার একমাত্র হোমস্টে। আমাদের এই সফরের সেরা আবিষ্কার। আমদের বহু সময় পাহাড়ে যেতে যেতে মনে হয় পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা ওই ছোট্ট বাড়িগুলোতে যদি কয়েকদিন থাকতে পারতাম। এই কে কে হোমস্টে আপনার সেই মনের আশা পূরণ করে দেবে। এখানকার মালিক সরিফ রাইয়ের পছন্দের বাহবা দিতেই হবে। পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা সুন্দর একটা হোমস্টে, একটা সুন্দর ফুল ও ফলের বাগান। আমরা পৌছাবার সাথে সাথেই মালিকের পোষা জার্মান সেফার্ড কুকুর শিম্বা আমাদের গাড়ীর দরজায় লাফ দিয়ে উঠে এলো আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে। আমরা গাড়ী থেকে নামতেই সে আনন্দে এদিক ওদিক ছোটা ছুটি শুরু করলো। এই প্রথমবার পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে কাশার থালায় বাগানের শাক, কুমড়ো ফুলের বড়া, বাগানের ঝিঙের তরকারি, নিজের বাগানের টমেটো দিয়ে তৈরি মাংস এসব খেতে পেলাম। প্রথম বার বাথরুমে গিয়ে তোয়ালের বদলে গামছা দেখলাম। ভগবান মনে হয় অনেক সময় নিয়ে নিজের হাতে এই সাংসীর জায়গাটাকে সাজিয়েছে। এখানেও সিলারিগাওয়ের মতো মেঘের অবাধ আনাগোনা লেগেই থাকে। রাতে এক পশলা বৃষ্টি হওয়ায় পরিবেশ আরো রোমান্টিক হয়ে উঠে ছিল। পরের দিন সকালে ফেরার সময় দেখি সিম্বা মুখ ঘুরিয়ে উপরে উঠে বসে আছে। ডাকলেও সারা দিচ্ছে না। মালিক জানালো গাড়ীতে ব্যাগ উঠাতে দেখে ও বুঝতে পেরেছে আমরা চলে যাচ্ছি। টুরিস্টরা চলে যাওয়ার সময় ও নাকি এইরকমটাই অভিমান করে। যারা একটু অফবিট জায়গা ঘুরতে পছন্দ করেন অবশ্যই এই জায়গাটাকে লিস্টে রাখবেন। কে কে হোমস্টে মোবাইল- 8906103700 / 7031048087 এন জি পি তে নামার পথে আমরা গিয়েছিলাম বেঙ্গল সাফারিতে। সেবক রোডের ধারে এই জায়গাটা 2014 সালে উদ্বোধন হয়। অন্যান্য জঙ্গল সাফারির মতোই এখানে আমরা গাড়ীর ভিতরে আর হরিণ, ময়ূর, চিতা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এরা বাইরে। তার সাথে আছে এলিফ্যান্ট সাফারি। পশ্চিমবঙ্গের অথবা সিকিমের কোন জায়গায় ঘুরতে গেলে ফেরার পথে অবশ্যই লিস্টে রাখতে পারেন এই বেঙ্গল সাফারি। Post By-Sandip Dutta
অনাঘ্রাতা দাড়িংবাড়ি : প্রথম পর্ব
--------------------------- এমন কিছু মানুষ আছেন বেড়ানো যাদের রক্তে। এক দেড় মাস কাটলেই শহর জীবনে হাঁপিয়ে ওঠেন। মনে হয় ছুটে যান় প্রকৃতির কোলে। প্রকৃতির রঙ রূপ গন্ধ স্বাদ আস্বাদন করে বেঁচে থাকবার কিছুটা অক্সিজেন সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। হ্যা। তাদের জন্যেই প্রকৃতি তার অপার রুপ মেলে ধরে বসে আছে উড়িষ্যার কাশ্মীর দারিংবাড়ি তে। আমাদের একটা ছোট্ট গ্রুপ বেড়াবার। যত রাজ্যের অফবিট জায়গা যেখানে কোন জনমুনিষ্ষির দেখা পাওয়া যায় না সেখানেই আমাদের আনাগোনা। অনেকদিন ধরেই নাম শুনেছিলাম দারিংবাড়ির। কুড়ি সেপ্টেম্বর বেরিয়ে পড়বার দিনক্ষণ ঠিক হল। একটা মজার বিষয় যখনই আমরা বেড়াতে যাই প্রকৃতি দেবী উত্তাল হয়ে ওঠেন। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রবল সাইক্লোনের ভ্রুকুটি সঙ্গী করে রওনা দিলাম ম্যাড্রাস মেলে। গন্তব্য ব্রহ্মপুর বা বেহরামপুর। আমরা যে ডিজিটালাইজেশন যুগের মানুষ প্রমাণ পেলাম ট্রেন ছাড়বার মুহূর্তে। যে গাড়িতে আমরা গন্তব্যে পৌঁছাই সেই গাড়ির (বোলেরো) নাম্বার, ড্রাইভার এর নাম, ফোন নাম্বার সাধারণত আমরা আগে পেয়ে অভ্যস্ত। এবারে উপরিপাওনা ড্রাইভার এর সেলফি। মেঘে ঢাকা বৃষ্টিস্নাত সকালে চিলকা কে বা পাশে রেখে ট্রেন ছুটে চলল গন্তব্যের দিকে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা ব্রহ্মপুর এ ট্রেন থেকে নামলাম। স্টেশনের বাইরে বেরোতেই হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহু। আমাদের সারথি কাম গাইড (ফোন নাম্বার# 9090532252)। সদাহাস্যময় অত্যন্ত সদালাপী এবং সৎ চরিত্রের এই ভাইটি গোপালপুর অন সি পর্যন্ত আমাদের সঙ্গী ছিলেন। ব্রহ্মপুর থেকে দারিংবাড়ি (১২০ কি.মি.) এবং দারিংবাড়ি থেকে ব্রহ্মপুর গাড়ি ভাড়া ৫৪০০/। গাড়ি ছুটে চলল। এবারে আমাদের প্রথম লক্ষ প্রাতরাশ। চিত্তরঞ্জন আমাদের একটি দক্ষিণ ভারতীয় রেঁস্তোরার সামনে নামালেন। খুব সস্তায় অত্যন্ত উচ্চমানের দক্ষিণ ভারতীয় খাবার এখানে পাওয়া যায়। জানতে পারলাম গ্রামটি উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রীর জন্ম গ্রাম। গ্রামের নাম মনে নেই এই মুহূর্তে। (এখানে একটি বলবার কথা আছে। যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত দয়া করে ব্রহ্মপুর থেকে তাদের স্টক তুলে নেবেন। দারিংবাড়ি তে দাম অত্যন্ত বেশি।) প্রাতরাশ পর্ব শেষ হবার পর শুরু হল আমাদের আবার চলা। গাড়ি যতই এগোচ্ছে প্রকৃতি যেন একটু একটু করে হাসতে শুরু করেছেন। দু দিকে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। কোথাও ধান কোথাও বা অন্যান্য সবজির খেত। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সোরাদা ড্যাম। ডান হাতে রুশিকুল্যা নদী বয়ে চলেছে। সেদিকে তাকালে শুধুই সাদা। ঘন সাদা কাশফুলের বন রুশিকুল্যা নদীকে অপরূপা করে তুলেছে। রুশিকুল্যার দুই পার এবং চড় শুধুই কাশবন। NH 59 ধরে বেশ কিছুটা চড়াই উঠবার পর নামলাম আমরা সোরাদা ড্যামে। কিছুক্ষণ সময় সেখানে অতিবাহিত করে আবার শুরু আমাদের চড়াই উঠবার পালা। উড়িষ্যার কন্ধমাল জেলা আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল একটু একটু করে। চকচকে পিচ রাস্তা ধরে গাড়ি কিছুটা উঠবার পর দেখা দিল মেঘের রাশি। মেঘের রাজ্য ভেদ করে অবর্ণনীয় নৈসর্গিক দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললো আমাদের গাড়ি আরো ওপরে। একটা জায়গায় চিত্তরঞ্জন গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলল একটু নেমে দেখুন। দাশিং নদী এখানে পাগলাঝোরা। এখানেই দেখা মিলল আমাদের পূর্বপুরুষদের। সন্তান সন্ততি নিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন তারা আমাদের দারিংবাড়ির পথে। বহুচর্চিত deer's ইকো হোম এ আমরা ঘর পাইনি। Hotel Midtown (ফোন নাম্বার# 9337335835 )বুক করা ছিল। রিসেপশন এ দীপক আমাদের সমস্ত ফরমালিটি শেষ করে নিজেদের ঘরে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করলেন। এই হোটেলে রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে খাবার এনে দেওয়া হয়। ডবল বেড ১০০০/ ট্রিপল বেড ১২০০/। বেশ বড় একটি ডরমিটরি আছে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০০/।খাবার খরচ জনপ্রতি ৪০০/। হোটেলটি নতুন এবং ঝা চকচকে। এবারে দারিংবাড়ি। Coordinates: 19.9°N 84.133333°E উচ্চতা ৯১৪.৪ মিঃ.(৩০০০ ফুট). জেলা কন্ধমাল। পরাধীন ভারতে দারিং (Daring saheb)সাহেব এই জায়গাটি আবিস্কার করেন এবং ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা তার হাতে এই জায়গার ভার অর্পণ করে। পরবর্তীকালে তাঁর নামানুসারেই এই জায়গার নাম হয় দারিংবাড়ি। অনেক চেষ্টা করেও এই দারিং সাহেবের প্রকৃত নাম অথবা তার বাড়ির কোন হদিস আমরা বের করতে পারিনি। মধ্যাহ্নভোজন শেষ করে কিছুটা বিশ্রাম এর পর সন্ধের সময় বেরোলাম পদব্রজে। হোটেলের উল্টোদিকে একটি পুরনো রাধাকৃষ্ণ মন্দির হয়েছে। মন্দিরটি ঘুরে দেখতে পারেন বেশ ভালো লাগবে। সামনে একটি বাঁধানো পুকুর। নৈসর্গিক দৃশ্য অসাধারণ। প্রধান পুরোহিতের সাথে আলাপ বেশ জমলো। সন্ধে ছটায় সন্ধ্যারতি দেখে চললাম দারিংবাড়ি কে আবিষ্কার এর আশায়। এখানে দোকানপাট খুব বেশি নেই। একটি খাবারের দোকানে আলুর চপ এবং ছানাপড়া এবং চা খেয়ে ফিরে আসলাম হোটেলে। সন্ধে সাড়ে সাতটাতেই দারিংবাড়ির রাস্তাঘাট জনশূন্য। তখনি বেশ ঠান্ডা।ভাগ্যিস গায় উইন্ডচিটার টা চড়িয়ে নিয়েছিলাম। পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো দারিংবাড়ির নাইন পয়েন্টস ভ্রমণ এবং আরও কিছু তথ্য ও ছবি নিয়ে। (বানান এবং লেখার ভুল মার্জনা করবেন) (ক্রমশ) মনে হয় অলৌকিক ...! ! ! উড়িষ্যা চন্দ্রভাগাসী বীচ কোনারক আন্তর্জাতিক বালু শিল্প উত্সব (International Sand Art Festival) সত্যি কথা বলবো , বেলন চাকী নিয়ে একদম ঠিকঠাক একটা গোল রুটিও আমি বেলে উঠতে পারিনা - হয়তো আমি কেন , আপনাদের মধ্যেও অনেকে তা পারেন না - সেখানে এরকম দুঃসাহস ? ভাবা যায় ? আজ্ঞে হ্যাঁ , আমি কথা বলছি বালু-শিল্পীদের - অজানা অচেনা কিছু বিভিন্ন বয়সী মানুষ , যাঁরা তাঁদের কল্পনা কে এঁকে ফেলেন বালি দিয়ে । উড়িষ্যার চন্দ্রভাগা সী-বীচে কোনারক আন্তর্জাতিক বালু শিল্প উত্সবে যাঁরা চুপচাপ তামাম দুনিয়াকে দেখিয়ে দিলেন আজকের যুগের কিছু পাগল (?) এখনো আছেন , যাঁরা সমকালীন সেলফি, সারকাজম আর শো-অফের বাইরে বেরিয়ে কিভাবে শুধুমাত্র নিজেদের প্যাশনকে আঁকড়ে ধরে কল্পনা কে শিল্পের মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করেন । অতি সাধারণ অতি সামান্য কিছু হাতিয়ার - গোটা কতক খুরপি , কয়েকটি ব্রাশ আর ওয়াটার স্প্রেয়ার - ব্যস ; সমুদ্রের ধারের ঝুরঝুরে বালি কয়েক ঘন্টায় বেঁচে ওঠে গৌতম বুদ্ধ এর রূপ নিয়ে , গড়ে ওঠে তাজমহল , গড়ে ওঠে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি । পাঁচ দিন ব্যাপী এই উত্সবে রোজ আলাদা আলাদা থিম । সকাল থেকে শুরু করে শেষ দুপুরের মধ্যে এনারা গড়ে ফেলেন দুরন্ত কিছু মূর্তি - রাত অবধি চলে দর্শকদের আনাগোনা । পরের দিন ঐ স্থানেই শুরু হয় নতুন সকালে নতুন ভাবে শুরু হয় নতুন থিমের নতুন মূর্তি তৈরী । না , সেভাবে লোকের ভিড় নেই । ঢালাও প্রশংসা নেই - না আছে অতি উচ্চ অর্থ-মূল্য , বা বিখ্যাত সেলিব্রটি হওয়ার চটজলদি সুযোগ । শুধু আছে একটু প্যাশন আর সেটাকে বাস্তব রূপ দেওয়ার অনেকটা ইচ্ছে । সমুদ্রের হু হু হাওয়া তে যখন চুল সামলানো মুশকিল , তখনই এঁরা এক মনে ইঞ্চি ইঞ্চি বালি সাজিয়ে এঁকে চলেছেন মনের ভেতরে থাকা ছবিটি । চার পাঁচটি স্থানীয় মেয়েদের একটি দলও ছিল । মন দিয়ে বালি ঘাঁটতে থাকা একটি মেয়েকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম , "এটা কি নেশা না পেশা ?" মিস্টি হেসে মেয়েটি উড়িয়াতে উত্তর দিল , "ভালো লাগে তাই করি..." আর কি জিজ্ঞাসা করবো ? আমার সব প্রশ্নের উত্তর তো এক বাক্যেই দিয়ে দিলো ... শুধু এদেশের নয় , বিদেশীও ছিলেন বেশকিছু । এক জার্মান শিল্পীর সাথে কথা বলতে উনি জানালেন , বিগত তিন বছর ধরে নিয়মিত আসছেন । ওঁদের দেশে নাকি সুযোগ আছে , অর্থ আছে কিন্তু এত সুন্দর পরিবেশ নেই । মেক্সিকোর টাক মাথা ভদ্রলোক কে যখন জিজ্ঞাসা করলাম , কেন আসেন ঐদেশের নীল বালির বীচ্ ছেড়ে ? হেসে বালি মাখা হাত মাথায় বুলিয়ে বললেন , "ইউ আর লাকি টু বি অ্যান ইন্ডিয়ান ..." মনে মনে ভাবলাম, হায় ! আমরাও যদি সে কথা সত্যিই বুঝতাম ...! ! ! প্রতি বছর সপরিবারে নিয়ম করে পুরী ঘুরতে তো যানই নিশ্চয় ; এবছর যদি পারেন তো দেখে আসবেন - পৃথিবীর থেকে হারিয়ে গিয়ে কিছু মানুষ কি সুন্দর পৃথিবীর ছবি আঁকছেন । Post By-Pavel Sen
সব ধাম একবার, মায়াপুর বারবার.. কবিগুরু ঠিকই বলেছেন - 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের ওপর একটি শিশির বিন্দু।' কবি গুরুর কথা স্মরণ করে বেরিয়ে পড়লাম কল্যাণী থেকে আশি কিলোমিটার দূরে মায়াপুর, The International Society for Krishna Consciousness (ISKCON) এর উদ্দেশ্য। রবিবার ছুটির দিনে ঠিক করা হল, সঙ্গী হিসেবে পেলাম ক্রিস কে। উদ্দেশ্য একটাই iscon এ পুজো দেওয়া আর তারই দৌলতে ঘুরে আশা।. কল্যাণী স্টেশন এ চলে এলাম সকাল সাতটায়। টিকিট কাটলাম কৃষ্ণনগর স্টেশন। ভাড়া 15 টাকা। ট্রেন এর টাইম 7.25, যথারীতি ট্রেন এ উঠলাম, মেঘলা আকাশ, আর শীতল হওয়ার স্রোত কে উপেক্ষা করে ট্রেন এগিয়ে চললো কৃষ্ণনগর এর উদ্দেশ্য। রবিবার হলেও ট্রেন এর ভিড় ছিল মোটামুটি, তার উপর কৃষ্ণের জন্মদিন বলে কথা, তাই সিট না পেয়ে, গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। ট্রেন ছুটে চলেছে, রানাঘাট পেরোতেই দেখতে পেলাম লাইনের দুই দিকে কলা গাছের জঙ্গল। " ভালোই লাগছিল প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে করতে যাওয়ার মজাই আলাদা। 8.35 এ আমরা কৃষ্ণনগর এ নেমে চলে গেলাম অটো ধরতে, স্টেশন এর পাশেই অটো স্ট্যান্ড, ওখানে মায়াপুর ঘাটের অটো ধরলাম, অটো চললো ভাঙা রাস্তার উপর দিয়ে। ফাঁকা রাস্তার উপর দিয়ে ছুটে চলেছে, রাস্তার পাশে অনেক পুরোনো খিরিস গাছ রাস্তা টাকে ছাতার মতো আগলে রেখেছে। 9. 14 am এ আমরা পৌঁছে গেলাম মায়াপুর ঘাট এ। ঘাট এর এক কোণে ছোট্ট একটা টিকিট কাউন্টার, যেখানে এই অকাল এর দিনেও এক টাকার টিকিট পাওয়া সত্যই গর্বের বিষয়। টিকিট কেটে উঠে গেলাম নৌকো তে, ছোট্ট নদী, নাম জলঙ্গি। শান্ত নদী, নীল জল তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে । ঘাট পেরিয়ে মায়াপুর এলাম, এখান থেকে iskon মন্দিরে যাওয়ার জন্য toto বাস সর্বদা মজুত। আমরা পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেলাম iskon এর দিকে। মাঝে অনেক গুলো আশ্রম এ ঢুকে দেখতে দেখতে iskon এ ঢুকলাম। iskon এ ঢুকতে চোখ এ পরবে এক কোণে non stop হরিনাম এর একটা কুটির, এর উল্টো দিকে রয়েছে, প্রভুপাদ পুষ্প সমাধি। তার উল্টো দিকে রয়েছে বিশাল iskon মন্দির যা এখনো কাজ চলেছে, যার রূপের ছটায় জগত বিখ্যাত। তার এই পাশে মেন রাধা কৃষ্ণের মন্দির। আমরা একের পর এক মন্দির দর্শন করতে লাগলাম। এরই ফাঁকে দুপুরের খাওয়ার এর টিকিট কাটলাম। এখানে খাওয়ারের টিকিট তিন রকম এর পাওয়া যায়। এক 30 টাকার, যেখানে খিচুড়ি সাদা ভাত এর মধ্যে পরে, দুই 50 টাকার, তিন 70 টাকার। আমরা 70 টাকার দুটি টিকিট করলাম, খাওয়ার মেনু গুলো ছবি তে আপলোড করে দেবো। এর পর আমরা মেন মন্দির এ ঢুকলাম, রাধা কৃষ্ণের অপরূপ সৌন্দর্য যে কোনও মানুষের মনে ভক্তি সঞ্চার করার সাহস রাখে। এখানে পুজো দেওয়ার জন্য কাউন্টার আছে, এখান থেকে পুজো জন্য টাকা দিতে হয়, সঙ্গে নাম গোত্র দিতে হয় । পুজো 101 টাকা দিয়ে শুরু, বিভিন্ন রকম এর আছে, কুপন করার পর নির্দিষ্ট ডিস্ক থেকে, নির্দিষ্ট টাইম এ সেটা collect করতে হয়। আমি পুজো দেওয়া পর দেখলাম প্রসাদ হিসেবে রয়েছে গোটা ফল, যেমন আপেল,বেদনা, কলা, laddu, Sasha ইত্যাদি। এর পর ওখান থেকে বেরিয়ে গেলাম গোসালার উদ্দেশ্যে। এখানে যেটা অবাক লাগে যে প্রতিটি গরু র একটি particular নাম আছে, আর গরু কে প্রতিপালন করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে পাওয়া যায় ঘি, মাখন, মিষ্টি, আরো অনেক কিছু। এর পর গেলাম গদা ভবন এ এখানে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, চেয়ার টেবিলে বসে, fried rice খাওয়ার মজাটাই আলাদা। সংক্ষিপ্ত বিবরণ এ এইটুকু বলবো iskon কে অনুভব করতে গেলে যেতে হবে, আর একদিন এর ট্যুর হলে iskon কে পছন্দের তালিকায় রাখা যেতেই পারে, সকাল থেকে সন্ধ্যা হলেও iscon কে দেখে শেষ করা যাবে না, আর iskon এর সন্ধ্যা আরতির কথা বললাম না। দেখতে হলে যেতেই হবে মায়াপুর। Post By-Soumen Maity
লাটপান্চার ভ্রমন এবার আমাদের গন্তব্য ছিল লাটপান্চার, উদ্দেশ্য পাখী দেখা আর ছবি তোলা। টিকিট তো কাটাই ছিল আগে। গত শুক্রবার আমরা দার্জিলিং মেল ধরে শনিবার সকাল 8 টায় পৌছলাম New Jalpaiguri তবে এবার আর ব্যাচেলর ট্রিপ করা যায় নি। গাড়ি নিয়ে সোজা সেবক, breakfast সেরে 1 ঘন্টায় লাটপান্চার পৌছলাম। পথে বেশ কিছু কমন species পেলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে লান্চ সেরে গেলাম Mahananda Wildlife Sanctuary। ঘন জংগল চারদিকে, শুনশান, কিছু পাখির আওয়াজ ছাড়া কোন শব্দ নেই। গাড়ি যেখানে থামল তার পর থেকেই গভীর জংগল। আনন্দ সহকারে হাটা শুরু করতেই ড্রাইভার আর গাইড এর সতর্কবানী বেশিদূর যাওয়া যাবে না কারন ওটা কোর এরিয়া। আগের দিন নাকি রাস্তায় হাতি দেখা গেছে। BDO সাহেবকে তাড়া করেছিল। বেশ মনমরা হয়ে পড়লাম। আমার ছেলে (3 years) এর মধ্যে গাড়িতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল, আর আমরা আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। যদিও ভাল কোন ছবি পাওয়া গেল না, ঘন জংগল এর কারন এ। পরদিন ভোরবেলা আমাদের আবার জংগল যাত্রা শুরু হল, তবে শুধু ছেলেরা। উদ্দেশ্য Rufous Necked Hornbill ( Endangered) ক্যামেরাবন্দি করা। অনেক টিম ছিল সেদিন, প্রত্যেক টিম এর সাথে আলাদা আলাদা গাইড, কারন গাইড ছাড়া ওদের ডেরা খুজে পাওয়া সম্ভব না। গ্রাম ছাড়িয়ে পাহাড় বেয়ে অনেক নীচে নামার পর ঘন জংগল এর মধ্যে এক জায়গায় বসলাম। সব টিম ই জড়ো হল ওখানে। এরপর শুরু হল অনন্ত প্রতীক্ষা, কখন যে তেনারা আসবেন কেউ জানে না। কিন্তু বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না, একটা পাখী এসে বসল গাছের ডাল এ। তারপর আর একটা, তারপর আর একটা, মোট 4 টে পাখির দেখা পেলাম। সবাই মনের আনন্দে ছবি তুললাম। দুপুরে লান্চ এর পর আবার সবাই মিলে বের হলাম। মেন রাস্তা ধরে হাটতে লাগলাম। ছোট্ট গ্রাম টা শেষ হতেই গাছপালা শুরু হল। পাখিও পেলাম বেশ কিছু। এদিকে হোটেলে ফেরার পর সবার খুব খিদে পেয়ে গেছিল। ঠিক করলাম মোমো খাব, জিগেস করে জানা গেল একটাই দোকান আছে কিন্তু প্রায় 1 কিমি দুরে। তাতে কি, আমরা হেটেই বেরিয়ে পরলাম। চারদিক ঘুঠঘুটে অন্ধকার, টর্চ নিয়ে হাটছি, সন্ধ্যা 7 টায় মনে হচ্ছে মাঝরাত, কোনো লোকজন নেই রাস্তা ফাকা। দারুন পরিবেশ, উপরি পাওনা ঝকঝকে চাঁদের আলো, দূরে পাহাড় এর লাইট দেখা যাচ্ছে। এই 1 কিমি হাঁটা টা অনেকদিন মনে থাকবে। পরদিন সকালে আমারা আবার ছেলেরা মিলে অন্য দিকে গেলাম। উদ্দেশ্য অন্য angle থেকে ছবি তোলা। কিন্তু এদিন আর তাদের দেখাই পেলাম না কাছ থেকে। মাথার অনেক ওপর দিয়ে কিছুক্ষন ওড়াউড়ি দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হল। সেদিন রাতে আমাদের থাকার কথা ছিল অহলদাড়া, যেখান থেকে 360 degree view পাওয়া যায়, একদিকে কান্চনজন্ঘা রেন্জ আর অন্য দিকে তিস্তা। কিন্তু বেলা থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমরা রাত্রিযাপন এর প্ল্যান ক্যানসেল করলাম, গাড়ি নিয়ে ঘুরতে গেলাম কিছুক্ষন এর জন্য। পথে নামথিং লেক দেখলাম। অহলদাড়া যখন পৌছলাম তখন বেশ বৃস্টি হচ্ছে, চারদিক সাদা, প্রচন্ড ঠান্ডা হাওয়া। বেশিক্ষন ওখানে কাটানো গেল না। পরদিন আমরা ব্রেকফাস্ট করে একদম চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম গেলাম Shivkhola Adventure Camp, মনমুগ্ধকর জায়গা। অপরূপ নদীর সৌন্দর্য্য। চারদিকে উঁচু পাহাড়। কিছু সময় কাটিয়ে আমরা লান্চ সেরে New Jalpaiguri দিকে রওনা হলাম। ফেরার ট্রেন ধরতে হবে যে। Post By-Soumik Sett
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |