অনাঘ্রাতা দাড়িংবাড়ি : প্রথম পর্ব
--------------------------- এমন কিছু মানুষ আছেন বেড়ানো যাদের রক্তে। এক দেড় মাস কাটলেই শহর জীবনে হাঁপিয়ে ওঠেন। মনে হয় ছুটে যান় প্রকৃতির কোলে। প্রকৃতির রঙ রূপ গন্ধ স্বাদ আস্বাদন করে বেঁচে থাকবার কিছুটা অক্সিজেন সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। হ্যা। তাদের জন্যেই প্রকৃতি তার অপার রুপ মেলে ধরে বসে আছে উড়িষ্যার কাশ্মীর দারিংবাড়ি তে। আমাদের একটা ছোট্ট গ্রুপ বেড়াবার। যত রাজ্যের অফবিট জায়গা যেখানে কোন জনমুনিষ্ষির দেখা পাওয়া যায় না সেখানেই আমাদের আনাগোনা। অনেকদিন ধরেই নাম শুনেছিলাম দারিংবাড়ির। কুড়ি সেপ্টেম্বর বেরিয়ে পড়বার দিনক্ষণ ঠিক হল। একটা মজার বিষয় যখনই আমরা বেড়াতে যাই প্রকৃতি দেবী উত্তাল হয়ে ওঠেন। ঝড়-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে প্রবল সাইক্লোনের ভ্রুকুটি সঙ্গী করে রওনা দিলাম ম্যাড্রাস মেলে। গন্তব্য ব্রহ্মপুর বা বেহরামপুর। আমরা যে ডিজিটালাইজেশন যুগের মানুষ প্রমাণ পেলাম ট্রেন ছাড়বার মুহূর্তে। যে গাড়িতে আমরা গন্তব্যে পৌঁছাই সেই গাড়ির (বোলেরো) নাম্বার, ড্রাইভার এর নাম, ফোন নাম্বার সাধারণত আমরা আগে পেয়ে অভ্যস্ত। এবারে উপরিপাওনা ড্রাইভার এর সেলফি। মেঘে ঢাকা বৃষ্টিস্নাত সকালে চিলকা কে বা পাশে রেখে ট্রেন ছুটে চলল গন্তব্যের দিকে। নির্ধারিত সময়ের আগেই আমরা ব্রহ্মপুর এ ট্রেন থেকে নামলাম। স্টেশনের বাইরে বেরোতেই হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন শ্রী চিত্তরঞ্জন সাহু। আমাদের সারথি কাম গাইড (ফোন নাম্বার# 9090532252)। সদাহাস্যময় অত্যন্ত সদালাপী এবং সৎ চরিত্রের এই ভাইটি গোপালপুর অন সি পর্যন্ত আমাদের সঙ্গী ছিলেন। ব্রহ্মপুর থেকে দারিংবাড়ি (১২০ কি.মি.) এবং দারিংবাড়ি থেকে ব্রহ্মপুর গাড়ি ভাড়া ৫৪০০/। গাড়ি ছুটে চলল। এবারে আমাদের প্রথম লক্ষ প্রাতরাশ। চিত্তরঞ্জন আমাদের একটি দক্ষিণ ভারতীয় রেঁস্তোরার সামনে নামালেন। খুব সস্তায় অত্যন্ত উচ্চমানের দক্ষিণ ভারতীয় খাবার এখানে পাওয়া যায়। জানতে পারলাম গ্রামটি উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রীর জন্ম গ্রাম। গ্রামের নাম মনে নেই এই মুহূর্তে। (এখানে একটি বলবার কথা আছে। যারা মদ্যপানে অভ্যস্ত দয়া করে ব্রহ্মপুর থেকে তাদের স্টক তুলে নেবেন। দারিংবাড়ি তে দাম অত্যন্ত বেশি।) প্রাতরাশ পর্ব শেষ হবার পর শুরু হল আমাদের আবার চলা। গাড়ি যতই এগোচ্ছে প্রকৃতি যেন একটু একটু করে হাসতে শুরু করেছেন। দু দিকে চোখ জুড়ানো সবুজের সমারোহ। কোথাও ধান কোথাও বা অন্যান্য সবজির খেত। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য সোরাদা ড্যাম। ডান হাতে রুশিকুল্যা নদী বয়ে চলেছে। সেদিকে তাকালে শুধুই সাদা। ঘন সাদা কাশফুলের বন রুশিকুল্যা নদীকে অপরূপা করে তুলেছে। রুশিকুল্যার দুই পার এবং চড় শুধুই কাশবন। NH 59 ধরে বেশ কিছুটা চড়াই উঠবার পর নামলাম আমরা সোরাদা ড্যামে। কিছুক্ষণ সময় সেখানে অতিবাহিত করে আবার শুরু আমাদের চড়াই উঠবার পালা। উড়িষ্যার কন্ধমাল জেলা আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল একটু একটু করে। চকচকে পিচ রাস্তা ধরে গাড়ি কিছুটা উঠবার পর দেখা দিল মেঘের রাশি। মেঘের রাজ্য ভেদ করে অবর্ণনীয় নৈসর্গিক দৃশ্যের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললো আমাদের গাড়ি আরো ওপরে। একটা জায়গায় চিত্তরঞ্জন গাড়ি দাঁড় করিয়ে বলল একটু নেমে দেখুন। দাশিং নদী এখানে পাগলাঝোরা। এখানেই দেখা মিলল আমাদের পূর্বপুরুষদের। সন্তান সন্ততি নিয়ে অভ্যর্থনা জানালেন তারা আমাদের দারিংবাড়ির পথে। বহুচর্চিত deer's ইকো হোম এ আমরা ঘর পাইনি। Hotel Midtown (ফোন নাম্বার# 9337335835 )বুক করা ছিল। রিসেপশন এ দীপক আমাদের সমস্ত ফরমালিটি শেষ করে নিজেদের ঘরে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করলেন। এই হোটেলে রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই। বাইরে থেকে খাবার এনে দেওয়া হয়। ডবল বেড ১০০০/ ট্রিপল বেড ১২০০/। বেশ বড় একটি ডরমিটরি আছে। ভাড়া জনপ্রতি ৪০০/।খাবার খরচ জনপ্রতি ৪০০/। হোটেলটি নতুন এবং ঝা চকচকে। এবারে দারিংবাড়ি। Coordinates: 19.9°N 84.133333°E উচ্চতা ৯১৪.৪ মিঃ.(৩০০০ ফুট). জেলা কন্ধমাল। পরাধীন ভারতে দারিং (Daring saheb)সাহেব এই জায়গাটি আবিস্কার করেন এবং ব্রিটিশ শাসন ব্যবস্থা তার হাতে এই জায়গার ভার অর্পণ করে। পরবর্তীকালে তাঁর নামানুসারেই এই জায়গার নাম হয় দারিংবাড়ি। অনেক চেষ্টা করেও এই দারিং সাহেবের প্রকৃত নাম অথবা তার বাড়ির কোন হদিস আমরা বের করতে পারিনি। মধ্যাহ্নভোজন শেষ করে কিছুটা বিশ্রাম এর পর সন্ধের সময় বেরোলাম পদব্রজে। হোটেলের উল্টোদিকে একটি পুরনো রাধাকৃষ্ণ মন্দির হয়েছে। মন্দিরটি ঘুরে দেখতে পারেন বেশ ভালো লাগবে। সামনে একটি বাঁধানো পুকুর। নৈসর্গিক দৃশ্য অসাধারণ। প্রধান পুরোহিতের সাথে আলাপ বেশ জমলো। সন্ধে ছটায় সন্ধ্যারতি দেখে চললাম দারিংবাড়ি কে আবিষ্কার এর আশায়। এখানে দোকানপাট খুব বেশি নেই। একটি খাবারের দোকানে আলুর চপ এবং ছানাপড়া এবং চা খেয়ে ফিরে আসলাম হোটেলে। সন্ধে সাড়ে সাতটাতেই দারিংবাড়ির রাস্তাঘাট জনশূন্য। তখনি বেশ ঠান্ডা।ভাগ্যিস গায় উইন্ডচিটার টা চড়িয়ে নিয়েছিলাম। পরবর্তী পর্বে ফিরে আসবো দারিংবাড়ির নাইন পয়েন্টস ভ্রমণ এবং আরও কিছু তথ্য ও ছবি নিয়ে। (বানান এবং লেখার ভুল মার্জনা করবেন) (ক্রমশ)
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |