"ভ্রমণ শুধুই ভ্রমন নয়"
গোলকুন্ডা দূর্গ:- """""""""""""'"'"""""""""" বর্তমান তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হায়দ্রাবাদ শহর থেকে ১১কিলোমিটার ও হুসেন সাগর থেকে ৯কিলোমিটার দুরে পৃথিবীর অন্যতম বিশ্ময়। যার পরতে পরতে আছে বৈচিত্র্য আর রহস্য সেই গোলকুন্ডা দূর্গ।যা এককালে মানকাল নামে পরিচিত ছিল। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে আর আমার শোনা ও জানা অভিজ্ঞতার মিশেলে আজ আপনাদের নিয়ে যেতে চাই সেই অতীতের কাছে। ইতিহাস:-আজ থেকে প্রায় ৯০০ বছর আগে এই জায়গাটিতে এক পাহাড়ের অবস্হান ছিল। "রাখাল ছেলের পাহাড়"বা "শেফার্ড হিল" নামেই পরিচিত ছিল।এক রাখাল ছেলের হাত ধরেই এই দূর্গের ইতিহাসের শুরু বলা যায়।ঐ রাখাল ছেলের দলের একজন মাটি খুঁড়ে একটি মুর্তি উদ্ধার করে।তা লোকমুখে প্রচার হলে তৎকালীন ঐ অঞ্চলের "কাকাতিয়া" বংশের রাজা ঐ স্হানটি পবিত্র মনে করে ১১৪৩ খৃষ্টাব্দে মাটির দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দেন। পরবর্তীতে ঐ বংশেরই আর এক রাণী "রুদ্রমা দেবী"তার ব্যাপ্তি ঘটান ও সংস্কার করেন।তারও পরে রাণী রুদ্রমার উত্তরাধিকারী ঐ বংশের রাজা #প্রতাপরুদ্রের তত্বাবধানে ঐ জায়গায় সংস্কার, পুনর্নিমান ও সুগঠন করা হয়। কাকাতিয়া রাজ বংশের পর "মুসুনবী নায়েক তুঘলকি"এই জায়গার দখল নেন।প্রতিষ্ঠিত হয় বাহামনী বাংশের।তখন এই জায়গার নামকরন করা হয় "মুহাম্মদ নগর"। তিনি ও তার বংশধরদের কিছু দিনের রাজত্বকালের শেষের দিকে ১৫০১ খৃষ্টাব্দে এখানে জায়গিরদার হয়ে আসেন"সুলতান -কুলি-কুতুব- উল-মুলুক"। বাহামনী সুলতান বংশের দূর্বলতার কারণে ১৫১৮খৃষ্টাব্দে মতান্তরে ১৫২১খৃষ্টাব্দে কুলি-কুতুব-উল-মুলুক" তেলেঙ্গানা কে স্বাধীন রাজ্য হিসাবে ঘোষণা করেন এবং নিজে শাহ্ উপাধি নিয়ে শুরু করেন "কুতুব শাহী" সাম্রাজ্য। ১৬৭৮ খৃষ্টাব্দে কুতুব শাহী বংশের শেষ রাজা আবুল-হসান- কুতুবের সাথে ঔরঙ্গজেবের এক ভয়ানক ভয়াবহ যুদ্ধে ঔরঙ্গজেবের সেনাপতি "কিলিচ খানে"র হাত উড়ে যায়। "ঔরঙ্গজেবকে" টানা ৯ মাস দূর্গ দখলের জন্য বাইরে অবস্থান করতে হয়। শেষে বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়েই তিনি দূর্গের দখল নেন এবং দূর্গে প্রবেশ করেন।দূর্গের মূল প্রবেশদ্বার কে তার বিজয় এর স্মারক হিসাবে "বিজয় তোরণ" নামে চিহ্নিত করা হয়। গঠন শৈলী:-এখানেও বিশ্ময়ের চিহ্ন বর্তমান। হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের রাজবংশের শাসকরা যেহেতু এখানে রাজত্ব করেছিলেন এবং গঠন,সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়ে ছিলেন তাই গঠন শৈলীতেও উভয় সম্প্রদায়ের সংস্কৃতির ছাপ বহন করে চলেছে এই দূর্গ। দূর্গের ওপর থেকে সব জায়গায় নিচে পর্যন্ত জল সরবরাহের এক নিজস্ব পদ্ধতি ছিল। "মঙ্গলাভরণ" পাহাড়ের মাথায় ৫ বর্গ কিলোমিটার জায়গায় ১২০মিটার উচ্চতা সম্পন্ন , চারদিকে পরিখা কাটা ৩ টি সুউচ্চ প্রাচীর ঘেরা দূর্ভেদ্য এই দূর্গ। সর্বমোট ৮টি তোরণ,বিভিন্ন স্থানে সুরক্ষায় জন্য চৌকি ঘর সঙ্গে কামান ছিল। কোনো অনাহুত আগন্তুক যদি দূর্গে প্রবেশ করে তাহলে সতর্কতা সংকেত হিসেবে তোরণদ্বারে এক নির্দিষ্ট জায়গায় হাতের তালির শব্দ ১ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওপরের নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা ছিল। অনুভূতি:- অতীত এইসব জায়গায় ফিসফিস কোরে কথা বলে,কান পাতলেই মনে হয় অনেক কথা শোনা যেতে পারে!বহু স্মৃতি বিজড়িত এই সব দূর্গে ইঁট,কাঠ,পাথর যদি কথা বলতে পারতো হয়তো অনেক কিছুই জানা যেত। জানা যেত সেই সময় কার সাধারণ মানুষ ,সৈনিক দের মর্মস্পর্শী অনেক কান্না ঘাম রক্তের কথা। জানা যেত অনেক বীর গাথা ও দুর্দশার কথাও। মিথ:-আপাতত আমি কুতুব শহি রাজ বাংশের দুজন বিখ্যাত রাজা ও তাদের প্রেমের কাহিনীই আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারছি। এই প্রেমের কাহিনীই এই দূর্গের রহস্যময়তা কে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। "মোহম্মদ-কুলু-কুতুব-শাহ" "ভাগমতী" নামে এক নারীর প্রেমে পোরে এই নগরীর নামকরন করেছিলেন "ভাগিনীগড়"। আরেক সুলতান পঞ্চম "আবদুল্লা-কুতুব-শাহ" "তারামতি" ও তার ভগ্নি "প্রেমামতি"র প্রেমে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে ছিলেন। এনারা দুজনাই ছিলেন সুন্দরী এবং নৃত্য,গানে অতীব দক্ষতা সম্পন্না। সুলতান কে নৃত্য গীত পরিবেশন করাই ছিল এনাদের কাজ। কুতুব শাহী তাদের দুজনকেই তার বিশেষ অতিথি শালায় স্হান দিয়েছিলেন। নৃত্য পটিয়সী প্রেমামতির জন্য তিনি নির্মাণ করেছিলেন"প্রেমামতি নৃত্য মন্দির"। আর গানের বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ভালোবাসার প্রেয়সী "তারামতির" জন্য নির্মাণ করেন"বাবদারী সঙ্গীত অডিটোরিয়াম"। যদিও এই প্রেমের পরিনতির কথা সঠিক ভাবে জানা যায়নি,তবে "তারামতি" ও "প্রেমামতি"র মৃত্যুর পর তাদের নশ্বর দেহ সুলতানী বংশের যে নিজস্ব কবরখানা আছে সেখানেই সমাহিত করা হয়। এই প্রেমের কাহিনীই এই গ্রানাইট পাথরের পাহাড় কেটে তৈরি করা দূর্গকে এক রহস্যের মোড়কে মুড়ে রেখেছে। প্রচলিত কথা "সন্ধ্যা রাত অন্ধকার নেমে আসার সঙ্গে সঙ্গে অতৃপ্ত আত্মা এখানে ঘোরা ফেরা করে।শোনা যায় নুপূরের ধ্বনি,গানের সুর,আর তার সাথে গোঙ্গানির আওয়াজ"। সকাল থেকে এখানে প্রবেশ করা যায়,কিন্তু সন্ধ্যা ৬টার পর এই দূর্গের অঞ্চলে প্রবেশ নিষিদ্ধ। সে যাই হোক ,আমি এসবের কিছুই প্রত্যক্ষ করিনি বা উপলব্ধিও করিনি।তবে এক ঐতিহাসিক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবেই এই জায়গাটিকে বোঝার চেষ্টা করেছিলাম। ভারতের প্রথম হীরের খনি এখানেই ছিল। পৃথিবী বিখ্যাত হীরা যা একসময় ইংরেজ রাজত্বের সময় বৃটেনে চলে যায় সেই "কোহিনূর"গোলকুন্ডারই। ইরানের বিখ্যাত"দরিয়া-ই-নূর"তাও এখানকার সম্পদ।জগৎ বিখ্যাত হীরা "দ্যা-হোপ"এখানকার মাটিরই সম্পদ। দূর্গের ওপর থেকে ছবির মতো সাজানো হায়দ্রাবাদ শহর দেখার অনুভূতিই অন্যরকম। অপরূপ সে সৌন্দর্যের সাক্ষী থাকতে পেরে অভিভূত হয়েছিলাম।
0 Comments
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |