এই আরতি দেখা একটি অপূর্ব অভিজ্ঞতা । আশাকরি সকলের এটা ভালো লাগবে ।
আরতি শেষ হয়ে যাবার পর আমরা ঘাটে অনেকক্ষণ বসে রইলাম । ছট পূজোর জন্য আসা ভক্তের দল আজ রাতটা এই ঘাটেই থাকবে । আগামীকাল পূজো দিয়ে তারপর বাড়ি ফিরবে । প্রশাসনকে বেশ সজাগ ও সতর্ক মনে হলো । ঘন ঘন মাইকে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় ঘোষণা করেই চলেছে । এরইমধ্যে এমন একটা ঘোষণা শুনলাম যাতে মন একেবারে ভারাক্রান্ত হয়ে গেল । একটি আনুমানিক একমাসের বাচ্চাকে কে বা কারা ওখানে রেখে চলে গেছে । ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত বলেই বোধ হলো । জানি না তারপর সেই বাচ্চাটির কি হলো । আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে গোধূলিয়া মোড়ে গিয়ে জলখাবার রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম । পরেরদিন ঘোরার প্রোগ্রামও ঠিক করে নিলাম । বারাণসীর প্রথম দিনের ঘোরা শেষ হলো । আগামীকাল আমরা যাবো, দূর্গা মন্দির, বিড়লা মন্দির, সঙ্কট মোচন মন্দির, তুলসী মানস মন্দির, রামগড় ফোর্ট, সারনাথ, চোখুন্ডী স্তুপ, ধামেকা স্তুপ, আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম ।
সে বলল বাকিটা আপনারা নিজেরাই দেখে নিতে পারবেন । তাছাড়া সে আমাদের ড্রাইভারকেও বলে দিয়েছে সব । কড়কড়ে ১০০ টাকা নিয়ে সে চলে গেল । যদিও এখানে গাইড নেবার কোনো দরকারই ছিল না । যদিও নেন তবে ঘোরা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে থাকতে বলবেন ।
এরপর আমরা শ্রী দিগম্বর জৈন টেম্পল দেখলাম । তারপর গেলাম মিউজিয়াম ও ধামেক স্তুপ দেখতে । মিউজিয়াম দেখার দক্ষিণা পাঁচ টাকা আর ধামেক স্তুপের পুরো জায়গাটা দেখার দক্ষিণা পঁচিশ টাকা । এবার শুরু হলো আরেক খেলা । আমাদের টোটোর ড্রাইভার বেঁকে বসল । বলল যে আমরা নাকি অনেক ঘোরাঘুরি করছি । এই টাকা মানে ৬০০ টাকাতে তা হবে না । কমপক্ষে ১০০০ টাকা লাগবে । তখন সময় আড়াইটা আর ওর সাথে আমাদের কথা হয়েছিল পাঁচটা পর্যন্ত । সে তখন এসব কিছুই শুনবে না । বলল, 'আপনারা যতক্ষণ খুশি থাকুন, দেখুন । আমাকে ছেড়ে দিন । আমি চলে যাব ।' হোটেলের মাধ্যমে এই বুকিং হয়েছিল বলে হোটেলকে জানালাম আর আমরা টিকিট কেটে ধামেক স্তুপ দেখতে চলে এলাম । ধামেক স্তুপ ও তাকে কেন্দ্র করে এক বিরাট অঞ্চলে অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন এক কথায় অতুলনীয় ও চমকপ্রদ । সারনাথের এই অত্যাশ্চর্য স্হাপত্য ও ভাষ্কর্য মুলত ইঁট ও বেলেপাথর দিয়ে তৈরি । এজন্যই আমি আগে বলেছিলাম এখানে না এলে একটা আপশোষ থেকে যেত । মিনিট পঁয়তাল্লিশ ঘোরাঘুরির পর এখান থেকে যখন বের হলাম তখনো মনে হচ্ছে অনেক কিছুই যেন দেখা হলো না । আরও অনেকটা সময় থাকতে পারলে যেন ভালো হতো । এবার আমরা এলাম মিউজিয়ামে । এখানে মোবাইল, ক্যামেরা সব জমা দিতে হলো । ছবি তোলা যাবে না । এই মিউজিয়ামটাও দারুণ । এদের সংগৃহীত সামগ্রী এক কথায় অতুলনীয় । এখান থেকে বেরিয়ে আমাদের ড্রাইভারকে ডেকে গাড়িতে উঠে পড়লাম । আরো একশত টাকা বেশি দিতে হবে । অর্থাৎ সাতশো পড়বে । ফেরার পথে চৌখন্ডী স্তুপ পড়ল । সকলেই তখন পরিশ্রান্ত । কেউ আর গাড়ি থেকে নামতে চাইল না । অগত্যা আমি একা নেমে গেটে দাঁড়িয়ে গোটা কয়েক ছবি তুলে ফিরে এলাম । সারনাথ দেখা শেষ করে ফিরে এলাম । ফেরার সময় একটু বেশি সময় লাগল রাস্তায় জ্যাম থাকার ফলে । ড্রাইভারকে ছেড়ে দিয়ে প্রথমে রেস্টুরেন্টে ঢুকে খেলাম । এরপর গেস্টহাউসে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম । সন্ধ্যেবেলায় আবার আরতি দেখতে যাব । এদিকে আমাদের ফ্লোরে খালি দুটো ঘরে দেখলাম লোক এসে গেছে । অনেক লোক । পরে জেনেছিলাম যে সব মিলিয়ে ওরা সাতজন, দুটো ঘরে থাকবে । ছ'টার কিছু পরে দশাশ্বমেধ ঘাটে পৌঁছে গেলাম আরতি দেখব বলে । আজ ছট পূজোর লোকজনের ভিড় নেই । তবুও তিলধারণের জায়গা নেই । আজ আর নৌকো থেকে নয়, পাড়ে বসে আরতি দেখব ঠিক করেছিলাম। অনেক চৌকি পাতা আছে যাতে সতরঞ্জি বা চাদর বিছানো । এছাড়া নিচে ফ্লোরের ওপরেও সতরঞ্জি-চাদর পাতা । তাতেও অনেকে বসে আছে । আমরা চৌকির ওপরে বসে পড়লাম । আরতি শুরু হয়ে গেল । একজনকে দেখা গেল ইচ্ছুক তীর্থ যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন । আসলে যারা দান করতে চান তাদের থেকে উনি সংগ্রহ করছেন । আরতি একসময় শেষ হলো । আমরা আজ আর বসলাম না । সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে শরীর ক্লান্ত । তাছাড়া আগামীকাল আবার সকালে বের হতে হবে । রাতের খাবার প্যাক করে নিয়ে গেস্টহাউসে ফিরে এলাম । আগামীকাল আমরা চুনার ও বিন্ধ্যাচল যাব। গাড়ি ঠিক করা হয়েছে । সুইফট গাড়ি । দু হাজার টাকা নেবে । সাড়ে আটটায় বের হতে হবে । (ক্রমশঃ) ------------------------------------------------- হোটেলের বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন । এখানে বলে রাখি যে এটা একটি পেয়িং গেস্টহাউস । মন্দিরের পাশেই প্রায় এটা অবস্হিত । ৪০০-৫০০ মিটারের মধ্যে গোধূলিয়া মোড় ও দশাশ্বমেধ ঘাট । কিন্তু এটাকে ঠিক আদর্শ থাকার জায়গা বলব না । কারণগুলো হলো, ক) কমোড নেই, ইন্ডিয়ান স্টাইল খ) অ্যাটচড বাথরুম নেই, কমন বাথরুম । দোতলায় চারটি রুমের জন্য একটি আর নিচে তিনটি গেস্টরুমের জন্য একটি বাথরুম । গ) দোতলার বাথরুমে গিজার আছে কিন্তু নিচেরটিতে নেই । ঘ) রুমও ছোট বড় । যেমন ওপরের রুম যেটিতে আমি ছিলাম সেটা বেশ বড়, কিন্তু একই ভাড়ার নিচের রুম ছোট । ঙ) ঘরের বাইরে কমন এরিয়ায় আপনাকে ভেজা কাপড় জামা শুকোতে দিতে হবে, কারণ ঘরে সম্ভব নয় । শুকোতে দেবার পর আমার নতুন গামছাটা চুরি হয়ে গেল । চ) হোটেলে ঢোকার এন্ট্রান্সটা যেমন সরু তেমনি নোংরা । সেই নোংরা ডিঙিয়ে আপনাকে যাতায়াত করতে হবে ছ) খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই । চা পর্যন্ত আপনি এখানে পাবেন না । জ) ঘরে কোনো আলমারি বা হ্যাঙ্গার নেই যাতে আপনি জামা-কাপড় রাখতে বা ঝোলাতে পারবেন । ঝ) ভাড়াও কম নয় । ট্যাক্স নিয়ে এই অফ সিজনে প্রতিদিনের জন্য ৯০০ টাকা করে পড়েছে । এছাড়াও আরও অনেক কিছু আছে যা মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয় । তাই বলছি, ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়া ভালো । গেস্টহাউসের নাম উমা গঙ্গা পেয়িং গেস্ট হাউস । --------------------------------------------------
বেনারস ও প্রয়াগরাজ ঘোরার ডায়েরি (৩য় পর্ব)
৩য় দিন(১৫/১১/১৮) সকাল সাড়ে আটটায় গাড়ি আসার টাইম - গোধূলিয়া মোড় । যথাসময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গাড়ির ড্রাইভার পন্ডিতজিকে ফোন করে জানলাম সে দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে । পনেরো মিনিট পরে ফোন করে বলল যে রাস্তা বন্ধ তাই গোধূলিয়া মোড়ে সে আসতে পারছে না । কোনো মিনিস্টার আসার কথা, তাই রাস্তা বন্ধ । আমাদেরকে আগের মোড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠতে হবে । আগের মোড় মানে গির্জা ঘর চৌরাহা ৫০০ মিটার দূরে । হেঁটে এসে গাড়িতে বসলাম । গাড়ি ছুটে চলেছে চুনার দুর্গের উদ্দেশ্যে । বেনারস শহরের রাস্তার করুণদশা দেখে একটু অবাক হলাম । পন্ডিতজিকে দেখলাম রাস্তা নিয়ে গজগজ করছে । এখানকার প্রশাসন যে শহরের উন্নতির জন্য কিছুই করছে না তা এই দুদিনে বেশ বুঝে গেছিলাম । শহর ছাড়ানোর পর রাস্তা খুব সুন্দর । ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া । বেশ লাগছে । আজ প্রথমে চুনার দুর্গ দেখব । এরপর যাবো বিন্ধ্যাচল । গোধূলিয়া মোড় থেকে চুনার দুর্গের দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার । সকালের জলখাবার খেয়েই বেরিয়েছি তাই মাঝে কোথাও দাঁড়ানোর নেই । বেলে পাথরের চুনার দুর্গ একটা ছোট পাহাড়ের ওপর । উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুট । গাড়ি পাহাড়কে পাক খেতে খেতে উঠে এল, দুর্গের গেটের কাছে । গেটের বাইরে রাস্তার ডান দিকে গাড়ি পার্ক করিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকলাম । সময় তখন দশটা । এক ঘন্টার কিছু বেশি সময় লাগল আসতে । এ স্হানটা একটু বেশি ঠাণ্ডা । সকালের শীতল ঠান্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে । শোনা যায় উজ্জয়িনীরাজ বিক্রমাদিত্যের ভাই ভতৃহরি এখানে কঠিন তপস্যা করেন ও জীবন্ত সমাধি নেন । এই দুর্গটি রাজা বিক্রমাদিত্যই প্রথম নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গকে কেন্দ্র করে মুঘল ও পাঠানদের মধ্যে অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছর মুঘলদের অধীনে থাকার পর একটা সময় এটি ইংরেজদের হাতে চলে আসে । প্রথমেই আমাদেরকে খাতায় এন্ট্রি করতে হলো । কোনো টিকিট লাগে না । এরপর সিঁড়ি দিয়ে উঠে দুর্গের কাছে আসতেই একটি অল্পবয়সী ছেলে এল । সে নিজেকে গাইড বলে পরিচয় দিল । ১০০ টাকায় তাকে ঠিক করা হলো । প্রথমেই আমরা একটা বিশাল পাথরের কুয়ো দেখলাম । জল আছে কিন্তু অনেক নীচে । পাশ দিয়ে একট রাস্তা নেমে গেছে, কিছুটা অংশে সিঁড়ি আছে । যেটা দিয়ে কুয়োর জলের কাছে চলে যাওয়া যাবে । আমরা কিছুটা নেমে ফিরে এলাম । দুর্গের অনেকটা অংশই এখন সামরিক বাহিনী ও পুলিশের হাতে । বাকি অংশ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত । একটু এগিয়ে কয়েদখানা দেখলাম । রয়েছে ফাঁসীর মঞ্চ, রয়েছে পাতাল ঘর, যেখানে অপরাধীদের আটকে রাখা হতো । ভতৃহরির সমাধি, মন্ডপ ইত্যাদি দেখা হলো । মন্দিরের ঠাকুরমশাই এ স্হানের ইতিহাস বললেন । এখানে থেকে একটি গোপন সুরঙ্গপথ ছিল যা গঙ্গা পর্যন্ত চলে গেছে । পরবর্তী কালে সেই সুরঙ্গটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । দুর্গের পাশ দিয়ে গঙ্গা বয়ে গেছে । নদীর বেশিরভাগ অংশেই চরা পরে গেছে । দুর্গের থেকে নদী ও আশপাশের দৃশ্য অপূর্ব । গঙ্গার গতিপথ এখানে অনেকটা ইংরাজি S অক্ষরের মতো । এখানে তেমনভাবে লোকজন আসে না । আগে বিশেষ কেউ জানত না বলে আসতও না । অনেক সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের শুটিং হওয়ার জন্য এটির প্রতি সাধারণ পর্যটকের আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়ছে । এর নির্জনতা অনেকেরই ভালো লাগবে । আবার অনেকে হতাশও হতে পারেন তেমন কিছু নেই বলে । দশটা পঞ্চাশে এখান থেকে বেরিয়ে এবার আমরা চললাম বিন্ধ্যাচল । প্রথমে অষ্টভূজার মন্দির । বারোটার সময়ে পৌঁছে গেলাম । কিন্তু মন্দিরে ঢোকা গেল না । মন্দির তখন বন্ধ । খুলবে আবার একটার সময় । তাই আমরা সীতাকুণ্ড দেখবো ঠিক করে নীচের দিকে নামতে লাগলাম । পাহাড়ের গা বেয়ে সিঁড়ি নেমে গেছে । অনেকটাই যেতে হলো । মাঝে একটা চায়ের দোকান পেয়ে চা খেলাম । চা'টা দারুণ বানিয়ে ছিল । সীতাকুণ্ডে পূজো দিয়ে আমরা ফিরে এলাম অষ্টভূজার মন্দিরে । কিন্তু বিরাট লম্বা লাইন দেখে মাথা ঘুরে যাবার মতো অবস্থা । লাইনে দাঁড়িয়ে পূজো দিতে কেউ রাজি হলো না । উপায় একটা বের হলো । ভারতবর্ষের অধিকাংশ ধর্মীয় স্হানে যা হয় এখানেও সেটাই চলছে । যারা লাইন সামলাছিল গেটে দাঁড়িয়ে তাদেরই একজন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে জেনে নিল যে আমরা ভগবান দর্শন করতে ইচ্ছুক কিনা । জানাল যে সে ব্যবস্থা করে দিতে পারে । লাইন দিতে হবে না । এক একজনের ১৫০ টাকা করে চার জনের ৬০০ টাকা লাগবে । টাকার অঙ্ক শুনে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি দেখে বলল অন্তত ১০০ টাকা করে ৪০০ টাকা দিলে সে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারে । আমরা তাও রাজি না হওয়ায় সে এবার আরো নামতে লাগল । একটু দূরে একজন পান্ডা বসে ছিল । সুন্দর দেখতে ঐ যুবক পান্ডার সাথে আলোচনা করে ১৫০ টাকাতে চারজনকে ঢোকাতে রাজি হলো । আরও অনেকে এই ভাবে টাকা দিয়েই ঢুকে যাচ্ছে । দরদামও কিছু করছে না । যা চাইছে তাই দিচ্ছে । এবার বুঝলাম লাইনটা কেন এগোচ্ছে না । যাইহোক মাথা নিচু করে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হলো । সেখানেও পান্ডারা রয়েছে যারা আপনার মাথা জোর করে ভগবানের পায়ে ঠুকে দিয়ে ইচ্ছে মতো অর্থ নিতে ব্যস্ত । অতএব এ ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে । এখানে পাতাল ভৈরবী ও আরও দু একটা দেবতার স্হান দর্শন করে চললাম বিন্ধ্যবাসিনীর মন্দিরের উদ্দেশ্য । এখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এখন সময় দেড়টা । বেলা অনেক হয়ে যাবার জন্য প্রথমে লাঞ্চ করে নিলাম বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরের কাছেই । । তারপর বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরের উদ্দেশ্য হেঁটেই রওনা দিলাম । সরু ঘিঞ্জি গলি । দুপাশে দোকান, মাঝখান দিয়ে রাস্তা । মন্দিরের সামনে আসতেই একজন সুন্দর সুঠামদেহী যুবক এগিয়ে এসে বলল যে সে দেবতার দর্শন একদম সামনে থেকে করিয়ে দেবে । ৪০০ টাকা লাগবে । আমরা নিজেরাই লাইন দিয়ে ভগবান দর্শন করবো শুনে সে চলে গেল । যাইহোক আমরা লাইনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তবেই দর্শন পেলাম । এটা সতীর একান্নপীঠের অন্যতম এক সতীপীঠ । পুরাণমতে দেবী সতীর বাম পায়ের আঙ্গুল এখানে পড়েছে। এবার ফেরার পালা । ফেরার সময়েও আমাদেরকে গির্জা ঘরের ওখানেই নামতে হলো রাস্তা বন্ধ থাকার জন্য । এখন রাস্তা বন্ধ গঙ্গা আরতির জন্য । রাতের বেলায় আমরা বাবা বিশ্বনাথের দর্শন পাবার জন্য বের হলাম । মোবাইল, ক্যামেরা কিছুই নিয়ে যেতে দেবে না তাই ওগুলো গেস্টহাউসে রেখে পাজামা-পাঞ্জাবী ও প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । এখন কোনো লাইন নেই । আঁটসাঁট নিরাপত্তার বেষ্টনী পেরিয়ে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলাম । এখানে একটা কথা বলা দরকার । মন্দিরের বাইরে দোকানগুলোতে পূজো দেবার জন্য যা কিছুই কিনুন না কেন ওরা ইচ্ছে মতো দাম নেয় । আমরাও এর শিকার হয়েছি যা পরের দিন অন্য দোকানে কিনতে গিয়ে বুঝতে পারি । দারুণ সুন্দর মন্দির । মন্দিরের ওপরের চূড়া সোনার তৈরি । একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে দর্শন করলাম । আরতি দেখলাম । বাবার পায়েস ভোগ খেলাম । পৌনে এগারটা পর্যন্ত মন্দির প্রাঙ্গণে থেকে বেরিয়ে অন্নপূর্ণার মন্দিরে গেলাম । এটাও দারুণ সুন্দর । যেমন মন্দির তেমনি মা অন্নপূর্ণার বিগ্রহ । একেবারে ভিড় না থাকায় দুটি মন্দিরে খুব ভালো করে দেবতাকে দর্শন করতে পেলাম । এগারোটায় গেস্টহাউসে ফিরে এলাম । রাতের খাবার আগেই এনে রেখে ছিলাম । অতএব খেয়ে এবার শুতে হবে । কাল সাড়ে সাতটায় বের হতে হবে । যাব প্রয়াগরাজ বা এলাহাবাদ । আজকের গাড়িটাই যাবে । ভাড়া নেবে ২৪০০ টাকা ।
0 Comments
ছুটির ওপর নির্ভর করে ভ্রমণ সূচী। একদিনের ছুটি তে কাছে পিঠে কয়েক ঘণ্টা কাটানো যায়। ৩/৪ দিন সময় পেলে আর একটু দূরে কুউউউ ঝিকঝিক করে ২/৩ রাত্রি যাপন করে বাড়ি ফেরা। আর বেশি সময় পাওয়া গেলে (৬ থেকে ৭ দিন ) যাওয়া যেতে পারে বেনারস। কোলকাতা থেকে এক রাতের যাত্রা পথ। দর্শনীয় স্থান বলতে সারনাথ, চুনার ও রামনগর ফোর্ট, বিন্ধ্যাচলে বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির,কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও গঙ্গারতি। গাড়ি ভাড়া নিয়ে এইসব জায়গায় যাওয়া যায় ।কোন মন্দিরে ই ছবি তুলতে দেয় না।ফোর্ট গুলো র বেশী র ভাগ অংশ মিলিটারি দের দখলে। ঐতিহাসিক স্থান গুলো বেড়াতে ভালো লাগবে আশা করি। Post By-Itika Jana
ভোরবেলা দশাশ্বমেধ ঘাটে খুব ভোরে উঠে আমরা দশাশ্বমেধ ঘাটের দিকে চললাম। এখনও চারদিকে আলো ভালো করে ফোটেনি। প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল এবার বেনারসে এসে খুব ভোরবেলা ঘাট দর্শনে যাব, আমাদের হোটেল থেকে পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। দশাশ্বমেধ ঘাটে পৌঁছে ভালো লাগায় মনটা ভরে গেল।তখনও সূর্যের আলো ফোটেনি। কালকের নৌকাগুলো যেগুলো করে কাল আমরা ঘুরে বেড়িয়েছি সেগুলো সব ঘাটে বাঁধা। দূরে দূরে ছোট ছোট আলোর বিন্দু দেখা যাচ্ছে। আলো আঁধারিতে গঙ্গা এক মায়াময় রূপ ধারণ করেছে। সিঁড়িতে বসে বেশ কিছু সময় সেদিকে তাকিয়ে রইলাম! এত সকালবেলাতেও ঘাটে কিন্তু বেশ লোকজন! একজন পন্ডিত কে দেখলাম বড় ছাতার তলায় বসে পূজোর আয়োজন করছেন। এক বাবাজী বহুরূপী সেজে বসে আছেন। একজন অল্প বয়স্ক পন্ডিত পূজায় মগ্ন! বেশ কিছু লোক এই ভোরবেলাতেই নেমে পড়েছেন গঙ্গার বুকে স্নানের উদ্দ্যেশে! এক বিদেশিনীকেও দেখতে পেলাম গঙ্গার উদ্দ্যেশে পূজা নিবেদন করছেন! এক ফুলওয়ালী মেয়ে কে দেখলাম ঝুড়িতে ফুল আর প্রদীপ সাজিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, কেউ যদি কেনে। ঘাটে বসে বসে এইসব দেখতে লাগলাম,এক অবর্ণনীয় ভালো লাগায় মনটা ভরে যাচ্ছিল। পূবের আকাশ আস্তে আস্তে আলোকিত হচ্ছিল, গঙ্গার বুকে অন্ধকারের রহস্যময়তা কাটছিল! নৌকাগুলো গঙ্গার বুকে চলতে শুরু করছিল, তাদের ঘিরে উড়ছিল ঝাঁকে ঝাঁকে পাখীর দল! এই জায়গার এমন মাহাত্ম যে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতে ইচ্ছে করে। রোদ চড়া হচ্ছিল, বাধ্য হলাম উঠে পড়তে। এক অপার্থিব ভালো লাগায় মনটা কানায় কানায় ভরে উঠল! Post By:- Sutapa Dutta
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |