এই আরতি দেখা একটি অপূর্ব অভিজ্ঞতা । আশাকরি সকলের এটা ভালো লাগবে ।
আরতি শেষ হয়ে যাবার পর আমরা ঘাটে অনেকক্ষণ বসে রইলাম । ছট পূজোর জন্য আসা ভক্তের দল আজ রাতটা এই ঘাটেই থাকবে । আগামীকাল পূজো দিয়ে তারপর বাড়ি ফিরবে । প্রশাসনকে বেশ সজাগ ও সতর্ক মনে হলো । ঘন ঘন মাইকে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় ঘোষণা করেই চলেছে । এরইমধ্যে এমন একটা ঘোষণা শুনলাম যাতে মন একেবারে ভারাক্রান্ত হয়ে গেল । একটি আনুমানিক একমাসের বাচ্চাকে কে বা কারা ওখানে রেখে চলে গেছে । ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত বলেই বোধ হলো । জানি না তারপর সেই বাচ্চাটির কি হলো । আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে গোধূলিয়া মোড়ে গিয়ে জলখাবার রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম । পরেরদিন ঘোরার প্রোগ্রামও ঠিক করে নিলাম । বারাণসীর প্রথম দিনের ঘোরা শেষ হলো । আগামীকাল আমরা যাবো, দূর্গা মন্দির, বিড়লা মন্দির, সঙ্কট মোচন মন্দির, তুলসী মানস মন্দির, রামগড় ফোর্ট, সারনাথ, চোখুন্ডী স্তুপ, ধামেকা স্তুপ, আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম ।
সে বলল বাকিটা আপনারা নিজেরাই দেখে নিতে পারবেন । তাছাড়া সে আমাদের ড্রাইভারকেও বলে দিয়েছে সব । কড়কড়ে ১০০ টাকা নিয়ে সে চলে গেল । যদিও এখানে গাইড নেবার কোনো দরকারই ছিল না । যদিও নেন তবে ঘোরা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে থাকতে বলবেন ।
এরপর আমরা শ্রী দিগম্বর জৈন টেম্পল দেখলাম । তারপর গেলাম মিউজিয়াম ও ধামেক স্তুপ দেখতে । মিউজিয়াম দেখার দক্ষিণা পাঁচ টাকা আর ধামেক স্তুপের পুরো জায়গাটা দেখার দক্ষিণা পঁচিশ টাকা । এবার শুরু হলো আরেক খেলা । আমাদের টোটোর ড্রাইভার বেঁকে বসল । বলল যে আমরা নাকি অনেক ঘোরাঘুরি করছি । এই টাকা মানে ৬০০ টাকাতে তা হবে না । কমপক্ষে ১০০০ টাকা লাগবে । তখন সময় আড়াইটা আর ওর সাথে আমাদের কথা হয়েছিল পাঁচটা পর্যন্ত । সে তখন এসব কিছুই শুনবে না । বলল, 'আপনারা যতক্ষণ খুশি থাকুন, দেখুন । আমাকে ছেড়ে দিন । আমি চলে যাব ।' হোটেলের মাধ্যমে এই বুকিং হয়েছিল বলে হোটেলকে জানালাম আর আমরা টিকিট কেটে ধামেক স্তুপ দেখতে চলে এলাম । ধামেক স্তুপ ও তাকে কেন্দ্র করে এক বিরাট অঞ্চলে অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন এক কথায় অতুলনীয় ও চমকপ্রদ । সারনাথের এই অত্যাশ্চর্য স্হাপত্য ও ভাষ্কর্য মুলত ইঁট ও বেলেপাথর দিয়ে তৈরি । এজন্যই আমি আগে বলেছিলাম এখানে না এলে একটা আপশোষ থেকে যেত । মিনিট পঁয়তাল্লিশ ঘোরাঘুরির পর এখান থেকে যখন বের হলাম তখনো মনে হচ্ছে অনেক কিছুই যেন দেখা হলো না । আরও অনেকটা সময় থাকতে পারলে যেন ভালো হতো । এবার আমরা এলাম মিউজিয়ামে । এখানে মোবাইল, ক্যামেরা সব জমা দিতে হলো । ছবি তোলা যাবে না । এই মিউজিয়ামটাও দারুণ । এদের সংগৃহীত সামগ্রী এক কথায় অতুলনীয় । এখান থেকে বেরিয়ে আমাদের ড্রাইভারকে ডেকে গাড়িতে উঠে পড়লাম । আরো একশত টাকা বেশি দিতে হবে । অর্থাৎ সাতশো পড়বে । ফেরার পথে চৌখন্ডী স্তুপ পড়ল । সকলেই তখন পরিশ্রান্ত । কেউ আর গাড়ি থেকে নামতে চাইল না । অগত্যা আমি একা নেমে গেটে দাঁড়িয়ে গোটা কয়েক ছবি তুলে ফিরে এলাম । সারনাথ দেখা শেষ করে ফিরে এলাম । ফেরার সময় একটু বেশি সময় লাগল রাস্তায় জ্যাম থাকার ফলে । ড্রাইভারকে ছেড়ে দিয়ে প্রথমে রেস্টুরেন্টে ঢুকে খেলাম । এরপর গেস্টহাউসে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম । সন্ধ্যেবেলায় আবার আরতি দেখতে যাব । এদিকে আমাদের ফ্লোরে খালি দুটো ঘরে দেখলাম লোক এসে গেছে । অনেক লোক । পরে জেনেছিলাম যে সব মিলিয়ে ওরা সাতজন, দুটো ঘরে থাকবে । ছ'টার কিছু পরে দশাশ্বমেধ ঘাটে পৌঁছে গেলাম আরতি দেখব বলে । আজ ছট পূজোর লোকজনের ভিড় নেই । তবুও তিলধারণের জায়গা নেই । আজ আর নৌকো থেকে নয়, পাড়ে বসে আরতি দেখব ঠিক করেছিলাম। অনেক চৌকি পাতা আছে যাতে সতরঞ্জি বা চাদর বিছানো । এছাড়া নিচে ফ্লোরের ওপরেও সতরঞ্জি-চাদর পাতা । তাতেও অনেকে বসে আছে । আমরা চৌকির ওপরে বসে পড়লাম । আরতি শুরু হয়ে গেল । একজনকে দেখা গেল ইচ্ছুক তীর্থ যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন । আসলে যারা দান করতে চান তাদের থেকে উনি সংগ্রহ করছেন । আরতি একসময় শেষ হলো । আমরা আজ আর বসলাম না । সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে শরীর ক্লান্ত । তাছাড়া আগামীকাল আবার সকালে বের হতে হবে । রাতের খাবার প্যাক করে নিয়ে গেস্টহাউসে ফিরে এলাম । আগামীকাল আমরা চুনার ও বিন্ধ্যাচল যাব। গাড়ি ঠিক করা হয়েছে । সুইফট গাড়ি । দু হাজার টাকা নেবে । সাড়ে আটটায় বের হতে হবে । (ক্রমশঃ) ------------------------------------------------- হোটেলের বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন । এখানে বলে রাখি যে এটা একটি পেয়িং গেস্টহাউস । মন্দিরের পাশেই প্রায় এটা অবস্হিত । ৪০০-৫০০ মিটারের মধ্যে গোধূলিয়া মোড় ও দশাশ্বমেধ ঘাট । কিন্তু এটাকে ঠিক আদর্শ থাকার জায়গা বলব না । কারণগুলো হলো, ক) কমোড নেই, ইন্ডিয়ান স্টাইল খ) অ্যাটচড বাথরুম নেই, কমন বাথরুম । দোতলায় চারটি রুমের জন্য একটি আর নিচে তিনটি গেস্টরুমের জন্য একটি বাথরুম । গ) দোতলার বাথরুমে গিজার আছে কিন্তু নিচেরটিতে নেই । ঘ) রুমও ছোট বড় । যেমন ওপরের রুম যেটিতে আমি ছিলাম সেটা বেশ বড়, কিন্তু একই ভাড়ার নিচের রুম ছোট । ঙ) ঘরের বাইরে কমন এরিয়ায় আপনাকে ভেজা কাপড় জামা শুকোতে দিতে হবে, কারণ ঘরে সম্ভব নয় । শুকোতে দেবার পর আমার নতুন গামছাটা চুরি হয়ে গেল । চ) হোটেলে ঢোকার এন্ট্রান্সটা যেমন সরু তেমনি নোংরা । সেই নোংরা ডিঙিয়ে আপনাকে যাতায়াত করতে হবে ছ) খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই । চা পর্যন্ত আপনি এখানে পাবেন না । জ) ঘরে কোনো আলমারি বা হ্যাঙ্গার নেই যাতে আপনি জামা-কাপড় রাখতে বা ঝোলাতে পারবেন । ঝ) ভাড়াও কম নয় । ট্যাক্স নিয়ে এই অফ সিজনে প্রতিদিনের জন্য ৯০০ টাকা করে পড়েছে । এছাড়াও আরও অনেক কিছু আছে যা মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয় । তাই বলছি, ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়া ভালো । গেস্টহাউসের নাম উমা গঙ্গা পেয়িং গেস্ট হাউস । --------------------------------------------------
বেনারস ও প্রয়াগরাজ ঘোরার ডায়েরি (৩য় পর্ব)
৩য় দিন(১৫/১১/১৮) সকাল সাড়ে আটটায় গাড়ি আসার টাইম - গোধূলিয়া মোড় । যথাসময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গাড়ির ড্রাইভার পন্ডিতজিকে ফোন করে জানলাম সে দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে । পনেরো মিনিট পরে ফোন করে বলল যে রাস্তা বন্ধ তাই গোধূলিয়া মোড়ে সে আসতে পারছে না । কোনো মিনিস্টার আসার কথা, তাই রাস্তা বন্ধ । আমাদেরকে আগের মোড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠতে হবে । আগের মোড় মানে গির্জা ঘর চৌরাহা ৫০০ মিটার দূরে । হেঁটে এসে গাড়িতে বসলাম । গাড়ি ছুটে চলেছে চুনার দুর্গের উদ্দেশ্যে । বেনারস শহরের রাস্তার করুণদশা দেখে একটু অবাক হলাম । পন্ডিতজিকে দেখলাম রাস্তা নিয়ে গজগজ করছে । এখানকার প্রশাসন যে শহরের উন্নতির জন্য কিছুই করছে না তা এই দুদিনে বেশ বুঝে গেছিলাম । শহর ছাড়ানোর পর রাস্তা খুব সুন্দর । ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া । বেশ লাগছে । আজ প্রথমে চুনার দুর্গ দেখব । এরপর যাবো বিন্ধ্যাচল । গোধূলিয়া মোড় থেকে চুনার দুর্গের দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার । সকালের জলখাবার খেয়েই বেরিয়েছি তাই মাঝে কোথাও দাঁড়ানোর নেই । বেলে পাথরের চুনার দুর্গ একটা ছোট পাহাড়ের ওপর । উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুট । গাড়ি পাহাড়কে পাক খেতে খেতে উঠে এল, দুর্গের গেটের কাছে । গেটের বাইরে রাস্তার ডান দিকে গাড়ি পার্ক করিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকলাম । সময় তখন দশটা । এক ঘন্টার কিছু বেশি সময় লাগল আসতে । এ স্হানটা একটু বেশি ঠাণ্ডা । সকালের শীতল ঠান্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে । শোনা যায় উজ্জয়িনীরাজ বিক্রমাদিত্যের ভাই ভতৃহরি এখানে কঠিন তপস্যা করেন ও জীবন্ত সমাধি নেন । এই দুর্গটি রাজা বিক্রমাদিত্যই প্রথম নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গকে কেন্দ্র করে মুঘল ও পাঠানদের মধ্যে অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছর মুঘলদের অধীনে থাকার পর একটা সময় এটি ইংরেজদের হাতে চলে আসে । প্রথমেই আমাদেরকে খাতায় এন্ট্রি করতে হলো । কোনো টিকিট লাগে না । এরপর সিঁড়ি দিয়ে উঠে দুর্গের কাছে আসতেই একটি অল্পবয়সী ছেলে এল । সে নিজেকে গাইড বলে পরিচয় দিল । ১০০ টাকায় তাকে ঠিক করা হলো । প্রথমেই আমরা একটা বিশাল পাথরের কুয়ো দেখলাম । জল আছে কিন্তু অনেক নীচে । পাশ দিয়ে একট রাস্তা নেমে গেছে, কিছুটা অংশে সিঁড়ি আছে । যেটা দিয়ে কুয়োর জলের কাছে চলে যাওয়া যাবে । আমরা কিছুটা নেমে ফিরে এলাম । দুর্গের অনেকটা অংশই এখন সামরিক বাহিনী ও পুলিশের হাতে । বাকি অংশ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত । একটু এগিয়ে কয়েদখানা দেখলাম । রয়েছে ফাঁসীর মঞ্চ, রয়েছে পাতাল ঘর, যেখানে অপরাধীদের আটকে রাখা হতো । ভতৃহরির সমাধি, মন্ডপ ইত্যাদি দেখা হলো । মন্দিরের ঠাকুরমশাই এ স্হানের ইতিহাস বললেন । এখানে থেকে একটি গোপন সুরঙ্গপথ ছিল যা গঙ্গা পর্যন্ত চলে গেছে । পরবর্তী কালে সেই সুরঙ্গটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । দুর্গের পাশ দিয়ে গঙ্গা বয়ে গেছে । নদীর বেশিরভাগ অংশেই চরা পরে গেছে । দুর্গের থেকে নদী ও আশপাশের দৃশ্য অপূর্ব । গঙ্গার গতিপথ এখানে অনেকটা ইংরাজি S অক্ষরের মতো । এখানে তেমনভাবে লোকজন আসে না । আগে বিশেষ কেউ জানত না বলে আসতও না । অনেক সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের শুটিং হওয়ার জন্য এটির প্রতি সাধারণ পর্যটকের আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়ছে । এর নির্জনতা অনেকেরই ভালো লাগবে । আবার অনেকে হতাশও হতে পারেন তেমন কিছু নেই বলে । দশটা পঞ্চাশে এখান থেকে বেরিয়ে এবার আমরা চললাম বিন্ধ্যাচল । প্রথমে অষ্টভূজার মন্দির । বারোটার সময়ে পৌঁছে গেলাম । কিন্তু মন্দিরে ঢোকা গেল না । মন্দির তখন বন্ধ । খুলবে আবার একটার সময় । তাই আমরা সীতাকুণ্ড দেখবো ঠিক করে নীচের দিকে নামতে লাগলাম । পাহাড়ের গা বেয়ে সিঁড়ি নেমে গেছে । অনেকটাই যেতে হলো । মাঝে একটা চায়ের দোকান পেয়ে চা খেলাম । চা'টা দারুণ বানিয়ে ছিল । সীতাকুণ্ডে পূজো দিয়ে আমরা ফিরে এলাম অষ্টভূজার মন্দিরে । কিন্তু বিরাট লম্বা লাইন দেখে মাথা ঘুরে যাবার মতো অবস্থা । লাইনে দাঁড়িয়ে পূজো দিতে কেউ রাজি হলো না । উপায় একটা বের হলো । ভারতবর্ষের অধিকাংশ ধর্মীয় স্হানে যা হয় এখানেও সেটাই চলছে । যারা লাইন সামলাছিল গেটে দাঁড়িয়ে তাদেরই একজন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে জেনে নিল যে আমরা ভগবান দর্শন করতে ইচ্ছুক কিনা । জানাল যে সে ব্যবস্থা করে দিতে পারে । লাইন দিতে হবে না । এক একজনের ১৫০ টাকা করে চার জনের ৬০০ টাকা লাগবে । টাকার অঙ্ক শুনে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি দেখে বলল অন্তত ১০০ টাকা করে ৪০০ টাকা দিলে সে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারে । আমরা তাও রাজি না হওয়ায় সে এবার আরো নামতে লাগল । একটু দূরে একজন পান্ডা বসে ছিল । সুন্দর দেখতে ঐ যুবক পান্ডার সাথে আলোচনা করে ১৫০ টাকাতে চারজনকে ঢোকাতে রাজি হলো । আরও অনেকে এই ভাবে টাকা দিয়েই ঢুকে যাচ্ছে । দরদামও কিছু করছে না । যা চাইছে তাই দিচ্ছে । এবার বুঝলাম লাইনটা কেন এগোচ্ছে না । যাইহোক মাথা নিচু করে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হলো । সেখানেও পান্ডারা রয়েছে যারা আপনার মাথা জোর করে ভগবানের পায়ে ঠুকে দিয়ে ইচ্ছে মতো অর্থ নিতে ব্যস্ত । অতএব এ ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে । এখানে পাতাল ভৈরবী ও আরও দু একটা দেবতার স্হান দর্শন করে চললাম বিন্ধ্যবাসিনীর মন্দিরের উদ্দেশ্য । এখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এখন সময় দেড়টা । বেলা অনেক হয়ে যাবার জন্য প্রথমে লাঞ্চ করে নিলাম বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরের কাছেই । । তারপর বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরের উদ্দেশ্য হেঁটেই রওনা দিলাম । সরু ঘিঞ্জি গলি । দুপাশে দোকান, মাঝখান দিয়ে রাস্তা । মন্দিরের সামনে আসতেই একজন সুন্দর সুঠামদেহী যুবক এগিয়ে এসে বলল যে সে দেবতার দর্শন একদম সামনে থেকে করিয়ে দেবে । ৪০০ টাকা লাগবে । আমরা নিজেরাই লাইন দিয়ে ভগবান দর্শন করবো শুনে সে চলে গেল । যাইহোক আমরা লাইনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তবেই দর্শন পেলাম । এটা সতীর একান্নপীঠের অন্যতম এক সতীপীঠ । পুরাণমতে দেবী সতীর বাম পায়ের আঙ্গুল এখানে পড়েছে। এবার ফেরার পালা । ফেরার সময়েও আমাদেরকে গির্জা ঘরের ওখানেই নামতে হলো রাস্তা বন্ধ থাকার জন্য । এখন রাস্তা বন্ধ গঙ্গা আরতির জন্য । রাতের বেলায় আমরা বাবা বিশ্বনাথের দর্শন পাবার জন্য বের হলাম । মোবাইল, ক্যামেরা কিছুই নিয়ে যেতে দেবে না তাই ওগুলো গেস্টহাউসে রেখে পাজামা-পাঞ্জাবী ও প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । এখন কোনো লাইন নেই । আঁটসাঁট নিরাপত্তার বেষ্টনী পেরিয়ে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলাম । এখানে একটা কথা বলা দরকার । মন্দিরের বাইরে দোকানগুলোতে পূজো দেবার জন্য যা কিছুই কিনুন না কেন ওরা ইচ্ছে মতো দাম নেয় । আমরাও এর শিকার হয়েছি যা পরের দিন অন্য দোকানে কিনতে গিয়ে বুঝতে পারি । দারুণ সুন্দর মন্দির । মন্দিরের ওপরের চূড়া সোনার তৈরি । একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে দর্শন করলাম । আরতি দেখলাম । বাবার পায়েস ভোগ খেলাম । পৌনে এগারটা পর্যন্ত মন্দির প্রাঙ্গণে থেকে বেরিয়ে অন্নপূর্ণার মন্দিরে গেলাম । এটাও দারুণ সুন্দর । যেমন মন্দির তেমনি মা অন্নপূর্ণার বিগ্রহ । একেবারে ভিড় না থাকায় দুটি মন্দিরে খুব ভালো করে দেবতাকে দর্শন করতে পেলাম । এগারোটায় গেস্টহাউসে ফিরে এলাম । রাতের খাবার আগেই এনে রেখে ছিলাম । অতএব খেয়ে এবার শুতে হবে । কাল সাড়ে সাতটায় বের হতে হবে । যাব প্রয়াগরাজ বা এলাহাবাদ । আজকের গাড়িটাই যাবে । ভাড়া নেবে ২৪০০ টাকা ।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |