ছোট্ট ভ্রমণ
"""""""" আমি তো জঙ্গল ঘুরতেই বেশি ভালোবাসি।আপনাদের মধ্যে জঙ্গল যারা ঘুরতে ভালোবাসেন ছোট্ট ছুটিতে কাছাকাছির মধ্যে ঘুরে আসতেই পারেন জয়পুর। বর্তমানে থাকার জায়গাও আছে সরকারি লিজে চলা বনলতা রিসর্টে। যদি ওখানে নাও থাকতে চান সামনেই কিছুটা দুরেই আছে পুরোনো ঐতিহাসিক টেরাকোটার কাজ যুক্ত মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর। একসাথে জয়পুর_বিষ্ণুপুর ভ্রমণও করতে পারেন। যদিও আমার এ পর্বে শুধুমাত্র জয়পুরের জঙ্গল। আরামবাগের দারকেশ্বর নদের ব্রীজ পেরেলেই রাস্তাটা দুদিকে ভাগ হয়ে গেছে,বাঁ দিকে সোজা কামারপুকুর। কামারপুকুর চটি থেকে বাঁ দিকের রাস্তা আরেক ছোট ভ্রমনের গড়মন্দারন হয়ে সোজা মেদিনীপুর। কামারপুকুর চটি থেকে সোজা রাস্তাটা কামারপুকুর-জয়রাম বাটি হয়ে বাঁকুড়ার দিকে চলে গেছে। আর দারকেশ্বরের ব্রীজ পেরোলেই ডানদিকের রাস্তাটা কোতলপুর-জয়পুর-বিষ্ণুপুর হয়ে বাঁকুড়ার দিকে। না আর এগিয়ে লাভ নেই,আপাততো থামলাম জয়পুরেই! অতি মনোরম এই জয়পুরের রাস্তা,দুধারে বড় বড় গাছ প্রায় সারাক্ষনই ছায়াঘন পরিবেশ তৈরি করে রাখে।মাঝে চকচকে পিচের রাস্তা অনেক দুর পর্যন্ত দৃষ্টি গোচর হয়। হয়তো এমন সময়ে আপনি গেছেন নজরে এলো হাতির দল রাস্তা পারাপার করছে! দুধারে দাঁড়িয়ে গেছে পথ চলতি মানুষ ও যানবাহন!! সেই চকচকে পিচের রাস্তার ডায়ে বাঁয়ে হঠাৎই হঠাৎ দেখবেন লাল মোরামের কাকুড়ে পথ ঐ সবুজ বনানীর মাঝখান ভেদ করে অরণ্যের গভীরে চলে গেছে। কোথাও কোথাও লম্বা খাল দুপাশের জঙ্গলের ধার দিয়ে বয়ে চলেছে।পথ অনেক জায়গায় উঁচু নিচু সরু হয়ে গেছে,সেই সরু রাস্তার পাশ দিয়েই হঠাৎ ঢালু পথ নেমে গেছে দুরের কোনো গাঁয়ের দিকে। প্রথমবার যখন এই জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করেছিলাম,তখন সত্যিই জানতাম না,কি মারাত্মক ভুল করেছিলাম! যেকোনো সময়েই বিপদের মধ্যে পরতে পারতাম,খুব একটা নজরদারিও ছিলনা তখন এই জায়গায়। রিসর্ট বা কোনো থাকার জায়গাও ছিল না,শুধু ছিল ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিস ও তাদের ব্যাবস্থাপনা। জঙ্গল অঞ্চল ঘোরা বা ভেতরে ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বা বুঝিয়ে বলারও কেও ছিলোনা। রাস্তার সাইডে গাড়ি রেখে মাথার থেকেও উঁচু ঘন ঝোপঝাড়ের জঙ্গলকে দুহাতে সরাতে সরাতে ঢুকে গেছিলাম ঐ বুনো পথে সঙ্গী কয়েকজন মহিলা। ভেতরে একটা খালি মতন জায়গায় টিফিনবক্সে আনা খাবার দাবার। ইচ্ছে বনের মধ্যে বনভোজন। এ জঙ্গল কিন্তু হাতির করিডর,হরিণ এখানকার সাধারণ আবাসিক। কখনও কখনও হাতির দল বা দলছুট হাতি থেকেও যায়।ময়ূর ও নানা ধরনের পাখির বাসভুমি এই জয়পুরের জঙ্গল। আক্রমনাত্মক মারাত্মক বনশূয়োরের থেকে সাবধান,ওরা কিন্তু এখানে স্বাভাবিক ভাবেই বিচরণ করে!আর ঐ ঝোপঝাড়ে বিষধর সাপ তো সাধারণ ব্যাপার।
যাই হোক ঢুকে যখন পড়েছি,ঐ ছোট্ট নদীর মত ক্যানেলের পারে খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে বসে গল্প করছি,হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে খরখর সরসর পাতা ও ডাল সরানোর আওয়াজ!ব্যাস সবাই সচকিত চোখে তাকিয়ে ,যদি খারাপ কিছু হয় আমাদের কিচ্ছু করার নেই!!অনেকক্ষণ পর একপাল শূয়োর!আরে না না বনশুয়োর না,ঘোঁত ঘোঁত করে সামনে আমাদের মত অচেনাদের দেখে চমকে উঠে থমকে দাঁড়িয়ে অবজ্ঞার সুরে পাশকাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেল !!
পেছনে জঙ্গল ঠেলে বেড়িয়ে এলো তাদের পরিচালক এক আদিবাসী মানুষ!!সামনের কোনো গ্রামের বাসিন্দা,জঙ্গলে শূয়োর চরাতে এসেছেন। ঐ মানুষটিই আমাদের সতর্ক করে জঙ্গল ছাড়তে বল্লেন,আমরা যেন আর একেবারেই দেরি না করে যে পথে এসেছি সেই পথ দিয়েই ফিরে যাই,এখন জঙ্গলে হাতি আছে! আর অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে ফিরে যেতে বলে এগিয়ে চলে গেলেন! সবকিছু তাড়াতাড়ি গুটিয়ে নিয়ে আবার সেই ঘন ঝোঁপঝাড় দুহাতে সরাতে সরাতে তাড়াহুড়ো তে বেশ কিছু কাঁটার আঁচরে গা হাত পা ছড়িয়ে রাস্তায় ফিরে এসে স্বস্তি বোধ করলাম। আজ যেখানে বনলতা রিসর্ট তার ঠিক কিছুটা আগেই ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিস! সেই অফিসের বাঁ দিকে মোরামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে একটা নালার ওপারে হরিণদের সাথে দেখা করে ফিরে চল্লাম। জয়পুরে ওয়াচ টাওয়ার আছে।আছে বহুদিনের পুরোনো একটা রানওয়ে। আর আছে জঙ্গলের ভেতরে কিছু স্হানিয় মানুষদের গ্রাম। যেতেই পারেন ছোট্ট একটা ঘোরার জন্য আদর্শ জায়গা এই জয়পুরে।।
0 Comments
২০১৯ এর অক্টোবর মাসে পুজোর ছুটিতে 14 দিনের লাহুল স্পিতি বেড়ানোর গল্প নিয়ে আমার প্রথম নিবেদন।
(চন্ডিগড় - সিমলা - কুফরি - ফাগু - সারাহান - সাংলা - ছিটকুল - কল্পা - খাব - হাংরাং ভ্যালি ও পু ব্লক - নাকো - টাবো - ধানকার - পিন ভ্যালি - কাজা - হিক্কিম - লাঞ্জা - কোমিক - চিচাম ব্রিজ - কিয়াটো - লোসার - কুঞ্জুম পাস - রোটাং পাস - মানালি) হিক্কিম ধুসর পাহাড়িয়া রাস্তার বাঁক বেয়ে , হিমেল হাওয়া মেখে, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস থেকে রং বেরং এর পিকচার পোস্ট কার্ডে মনের কথা আর ভালোলাগার অনুভূতি প্রকাশ করতে চান? এর জন্য আপনাকে কিন্তু বিদেশ ভ্রমণ করতে হবে না। ভারতবর্ষের হিমাচল প্রদেশের লাহুল স্পিতি জেলার হিক্কিম গ্রামেই রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পোস্ট অফিস। ৪৪৪০ মিটার উচ্চতায়। কাজা থেকেই সেরে নেওয়া যায় এই ভ্রমণ। হিক্কিম উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশের লাহুল ও স্পিতি জেলার একটি গ্রাম। হিক্কিম, কাজার নিকটে অবস্থিত। ৪৪০০মিটার উচ্চতায় সারা বছর মানুষজন বসবাস করেন, ভারতের এমন জনবসতির অন্যতম গ্রাম হিক্কিম। গিরিবর্ত্মগুলিতে অত্যধিক তুষারপাতের কারণ হিক্কিম বছরের অর্ধেক সময়, অন্যান্য অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। স্থানীয় মানুষ ঘর বানানোর জন্য পাথর প্রচুর ব্যবহার করেন। তাংগিউদ গুম্ফা বৌদ্ধবিহার এখান থেকে কাছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ ভোটদান কেন্দ্র হিক্কিম । এটি লিমকা বুক অফ রেকর্ডসে ও নথীবদ্ধ আছে। হিক্কিমের ডাকঘর বিশ্বের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত ডাকঘর। পিন কোড ১৭২১১৪।
রিনচেন শেরিং- হিক্কিম গ্রামের এই ডাকঘর টিকে ভারতীয় ডাক বিভাগের স্থায়ী কর্মী হিসাবে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সেই ১৯৮৪ সাল থেকে। তুষারপাত, তুষার ঝড় সহ নানা প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করে। মোবাইল ফোন আর ইন্টারনেটের সংযোগ ছাড়াই আজও সমানতালে চালু এই ডাকঘর। হিক্কিম গ্রামে শেরিং এর ছোট্ট বাড়িটি কেই ভারতীয় ডাক বিভাগ স্থায়ী পোস্ট অফিস হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
যেখান থেকে পরিচালিত হয় ডাকবিভাগের সমস্ত কাজকর্মও। এখান থেকেই মিলে যায় কোমিক মনাস্ট্রির নামে প্রেরিত মঙ্কদের পাসপোর্ট। স্থানীয় কৃষকদের গচ্ছিত টাকাপয়সাও জমে এই ডাকঘরে। এই মুহূর্তে পাহারঘেরা অপরূপ সৌন্দর্যকে সঙ্গী করে স্পিতি উপত্যকার বুকে রমরমিয়ে চলছে বিশ্বের সর্বোচ্চ ডাকঘর। তাই বিশ্বের সমস্ত পর্যটকদের কাছে স্পিতি ভ্যালির এই সর্বোচ্চ ডাকঘরটি এক অনন্য আকর্ষণ। সুতরাং প্রিয়জনকে মনের কথা লিখে, পিকচার পোস্টকার্ডে ভাসিয়ে দেবার জন্য হিক্কিম পোস্ট অফিসে আপনাকে স্বাগত। একাই চালান এই পোস্টঅফিস। তার সঙ্গে দেখা হয়নি আমাদের। কারণ তিনি তখন কাজায় গেছিলেন পোস্টাল ষ্ট্যাম্প আনতে। তাই বাধ্য হয়ে পাশের এক মহিলার কাছে আমাদের বাড়ির ঠিকানা লেখা পোস্ট কার্ড গুলি রেখে আসলাম পোস্টাল টিকিটের দাম সহ। পোস্টকার্ডের দাম ছিল 30 টাকা আর পোস্টাল স্ট্যাম্পের দাম 6 টাকা মোট 36 টাকা খরচ করে আমরা সবাই নিজের নিজের বাড়ির ঠিকানায় চিঠি পোস্ট করেছিলাম। জানিনা সেই চিঠি আদেও আমাদের বাড়িতে এসে পৌঁছাবে কিনা? কারণ আমরা শুনেছিলাম যে এই চিঠি অধিকাংশই নাকি হারিয়ে যায়। তবুও অনেক আশা নিয়ে আমরা এই চিঠি পোস্ট করেছি। চিঠি, হিক্কিম থেকে পায়ে হাঁটা পথে যায় কাজা; সেখান থেকে রেকং-পিও হয়ে সিমলা। সিমলা থেকে ট্রেনে কালকা, সেখান থেকে বাসে দিল্লি। তারপর সারা ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ে চিঠিপত্র। আশাকরি এই একই পথে আমাদের বাড়িতেও এসে পৌঁছবে বিশ্বের উচ্চতম পোস্ট অফিসের স্টাম্প লাগানো রঙিন পোস্টকার্ডের সেই চিঠি। আমাদের গ্রুপের দুজন মেম্বারের ঠিকানায় সেই চিঠি এসে পৌঁছালে ও আজ পর্যন্ত বাকী সদস্যরা আশা করে আছি যে এই বুঝি আমাদের বাড়ীতে ও চিঠি আসব। কিন্তু "আশায় মরে চাষার" মতোই আমাদের হাল।
এবারের গন্তব্য ছিল লখনৌ এর ব্রিটিশ রেসিডেন্সি।গোমতী নদীর ধারে হজরত বেগম পার্ক এর কাছেই এই ব্রিটিশ রেসিডেন্সি র ধ্বংসাবশেষ আজও ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে।1800 খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন আওয়াধ এর নবাব সাদাত আলী ব্রিটিশ শাসকদের তুষ্ট করার জন্য এই মহল গুলি বানিয়ে দিয়েছিলেন।ব্রিটিশ শাসক রা এখানে থেকেই তখন শাসন কার্য চালাতেন।তবে এই বাড়িটার ইতিহাস সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ1857 সালে।সে সময় সারা দেশ জুড়ে সিপাহী বিদ্রোহের দামামা বেজে উঠেছে।আর সেই সিপাহীরাই ক্রমান্বয়ে আঘাত হানতে থাকলেন এই রেসিডেন্সি র ওপর।চারিদিক থেকে বহু ইউরোপীয় আশ্রয় নিলেন এর ভিতরে।মারা গেলেন বহু ব্রিটিশ আধিকারিক।ভারপ্রাপ্ত জেনারেল মিঃ লরেন্স শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে গেলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্য রক্ষা করার জন্য।কিন্তু কর্তব্যরত অবস্হায় তিনি অবশেষে প্রাণ হারান ভারতীয় সেপাই দের গোলার আঘাতে।এমনকি চেয়ারে বসে থাকা অবস্থায় গোলার আঘাতে প্রাণ হারান শ্রীমতি সুসানে।আজও সারা বাড়িটিতে সেইসব গোলা গুলির দাগ স্পষ্ট বিদ্যমান।রয়েছে একটি খুব সুন্দর মিউজিয়াম।আমার রোমাঞ্চ হচ্ছিল এখানে এসে যখন সেই টেলিগ্রাফ গুলো দেখছিলাম যেগুলো তৎকালীন ব্রিটিশ আধিকারিকরা তাঁদের উর্ধতন কতৃপক্ষ কে সাহায্যের আর্তি জানিয়ে করছিলেন,আর বাইরে সমানে গোল বর্ষণ করে চলেছেন ভারতীয় সিপাই রা।নেতৃত্বে রয়েছেন নানা সাহেব,তাঁতিয়া টোপি, রানী লক্ষী বাই এই মতো ব্যক্তিত্ব রা।আর এই হুঙ্কার উঠেছিল এই বাংলা থেকেই মঙ্গল পান্ডের মতন মহান সিপাহীর কণ্ঠে।রেসিডেন্সি র ভেতরকার সাদা ব্রিটিশ মুখগুলো তখন ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গিয়েছে।প্রায় 3মাস ধরে চলেছিল এই লড়াই।
শুধু ভাবি সাফল্যের এত কাছে এসেও সিপাহী বিদ্রোহ সফল সফল হলোনা কেন।তাকি ভারতের অন্যান্য ছোট ছোট রাজাদের মধ্যে ঐক্য আর বোঝাপড়ার অভাব?নাকি তৎকালীন নবাবদের ব্রিটিশদের প্রতি তৈল মর্দন করার প্রবণতা?যাই হোক ইতিহাস সে উত্তর দেবে।আপাতত আবার ভ্রমণে ফিরে আসি।এখানে সাধারণ দর্শকদের জন্য সিপাহী বিদ্রোহের সময়কার ইতিহাদ নিয়ে তথ্যচিত্র দেখানো হয় হিন্দি ও ইংরেজী তে।সময় না থাকায় টা দেখতে পায়নি।সময় সূচি ছবিতে দিলাম।
এবারে পুরানো লখনৌ ছেড়ে গন্তব্য ছিল নতুন গড়ে ওঠা গোমতী নগর এ।এটাকে নতুন লখনৌ অনেকে বলেন।অনেকটা কলকাতায় যেমন নিউ টাউন,তেমন আরকি।এখানকার মূল আকর্ষণ ছিল গোমতী নদীর ধারে গড়ে ওঠা কয়েকটি পার্ক।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আম্বেদকর পার্ক ও জনেস্বর মিশ্র মেমোরিয়াল পার্ক।আম্বেদকর পার্ক টি হাতি দীর্ঘ নামেও পরিচিত।তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মায়াবতী জী র উদ্যোগে এই পার্ক তৈরি হয়েছে।হয়তো কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে এটা তৈরি করতে,কিন্তু এর মূল থিম টা যে কি সেটাই বুঝলাম না।নামে পার্ক হলেও মূলত এটাকে স্মৃতিসৌধ বলেই মনে হলো কয়েক জায়গায়।আবার কিছু জায়গায় থিম হলো হাতি।সারি দিয়ে শুধু হাতির মূর্তি।বিস্তীর্ণ এলাকা,কিন্তু কোথাও সবুজের ছিটেফোঁটা নেই।শুধু পাথর আর কংক্রিট।জনেস্বর মিশ্র পার্ক টি তুলনায় বেশ সবুজ।এছাড়া গোমতী নদীর ধার বরাবর পায়ে হাঁটার রাস্তাটিও বেশ সুন্দর।
কিন্তু যাকে ঘিরে এই সৌন্দর্যায়ন সেই তো এখানে অবহেলিত।গোমতী নদীর দুর্দশার কথা বলছি।মন খারাপ হয়ে গেল দেখে।একে তো বাঁধ দিয়ে নদীর গতি বেঁধে ফেলা হয়েছে, তার ওপর নদীর জল অবর্জনাময় ও পুতিগন্ধময়।সবথেকে সাংঘাতিক ব্যাপার যেটা দেখলাম... নদীর ওপর এর সেতুতে পরপর সবাই গাড়ি নিয়ে আসছে আর গাড়িতে ভর্তি করে রাখা আবর্জনা... যেমন পচা পুজোর ফুল,বাড়ির জঞ্জাল,হোটেলের উচ্ছিষ্ট খাবার,ড্রাম ভর্তি তরল পদার্থ... হতেই পারে কোনো রাসায়নিক.... সবাই নির্দ্বিধায় নদীতে ফেলে চলে যাচ্ছে।শহর এভাবেই মুখ বুজে সব দেখছে আর একটি নদীর মৃত্যুর নীরব সাক্ষী হচ্ছে ক্রমশ...
পাশের ঘর থেকে ব্ৰাহ্মণির কান্না শুনে, কুন্তী বিচলিত হয়ে পড়ে। কিছুদিন ধরে কুন্তী পাঁচ পুত্র সহ এই ব্ৰাহ্মণের এই গৃহেই আশ্রয় লাভ করেছেন। অজ্ঞাতবাস এর এই দিনগুলো এই ভাবেই হস্তিনাপুর থেকে দূরে দূরে লুকিয়ে লুকিয়েই তাদের জীবনযাপন। তাদের বর্তমান এই ব্ৰাহ্মণের গৃহের আশ্রয়টা একচক্রা গ্রামে। আজ তার বাকি চার পুত্র গ্রামে ভিক্ষা করতে গেছে, খালি ভীম রয়েছে কুন্তীকে দেখাশোনা করার জন্য। ব্ৰাহ্মণির কান্নার কারন জানতে কুন্তী তার আশ্রয়দাতা ব্ৰাহ্মণ এর কাছে গেলে ব্ৰাহ্মণ জানায়, সেই রাজ্যে বকাসুর নামে এক ভয়ানক রাক্ষস এর প্রভাব রয়েছে। সেখানকার রাজা সেই রাক্ষসকে শান্ত করতে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ খাবার দিয়ে একটা গরুর গাড়ি করে কোনো একজন প্রজাকে বকসুরের কাছে পাঠায়। বকাসুর সেই খাবার এর সাথে সাথে গরুর গাড়ির গরু এবং তার চালক সেই প্রজাটাকেও তার উদরোস্ত করে তার খিদে মেটায়। এই নিয়ম বহুদিন ধরে চলে আসছে। আজ ব্ৰাহ্মণের এক মাত্র ছেলের পালা সেই খাবার নিয়ে যাবার। তাই ছেলের আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় ব্ৰাহ্মণি কাঁদছেন। এই কথা শুনে কুন্তী কয়েক মুহূর্ত চিন্তা করে ব্ৰাহ্মণকে জানান যে ওঁর পাঁচ পুত্রের মধ্যে একজন যাবে আজ বকসুরের কাছে খাবার নিয়ে। মায়ের কথা মতন ভীম পাহাড় প্রমান খাবার নিয়ে গরুর গাড়ি করে বকসুরের কাছে যায় এবং রাস্তায় বকসুরের জন্য পাঠানো সব খাবার খেয়ে শেষ করে দেয়। বকসুরের কাছে পৌঁছলে সমস্ত খাবার শেষ দেখে বকাসুর ভীষণ রেগে যায়। এবং শুরু হয় ভীম আর বকসুরের ভীষণ যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে বকাসুরকে নিহত করে ভীম সমস্ত রাজ্যবাসীকে উদ্ধার করে। কথিত আছে, সেই যুদ্ধের ফল স্বরূপ শিলাবতী নদীর তীরের পাথুড়ে মাটি ভেঙেচুরে যায়। যা আজ গণগনি নামে পরিচিত। যদিও আজকের একচক্রা গ্রাম থেকে গড়বেতার গণগনি অনেকটা দূরে তবু লোককথা অনুযায়ী এইখানেই ভীম বকাসুর বধ করেছিলো।
মহাভারতের এই গল্প শুনে গড়বেতা যাবার ইচ্ছে বহুদিন ধরেই ছিল। শীততো এই বছরের মতন গেছেই, বসন্তটাও প্রায় যাই যাই করছে। তাই আর দেরি না করে গত রোববার সকালে সাতরাগাছি স্টেশন থেকে সকাল 6:25 রূপসী-বাংলা-এক্সপ্রেস (12883) ধরে রওনা দিয়েছিলাম গড়বেতার উদ্দেশ্যে। ঠিক 9:20 তে ট্রেন আমাকে গড়বেতা স্টেশনে নামিয়ে পুরুলিয়ার দিকে বেরিয়ে গেলো। ছোট্ট শান্ত স্টেশনটা, ট্রেন আসায় যেমন হটাৎ করে জেগে উঠেছিল, ঠিক তেমনি ট্রেন চার-পাঁচ জন যাত্রীকে নামিয়ে চলে যাবার পর আবার সে ঝুঁপ করে ঘুমিয়ে পড়লো। স্টেশন থেকে বেরিয়েই টোটো স্ট্যান্ড আর গুটিকয় অস্থায়ী খাবারের দোকান। অত সকালে বাড়ি থেকে কিছু খেয়ে বেরোইনি, পেটে ছুঁচোর প্যারেড টের পাচ্ছিলাম। তাই সোজা একটা দোকানে ঢুকে পেট পুরে লুচি, আলুর তরকারি আর চা দিয়ে প্রাতরাশ সারলাম। ফেসবুকের একটি ভ্রমণ গ্রূপের থেকে পেয়েছিলাম টোটো চালক শীতল এর নম্বর (9733709803)। ওকে আগে থেকেই ফোন করা ছিল। আমার খাওয়া শেষ হতেই সেও এসে হাজির। শীতল একজন অত্যন্ত ভদ্র আর শান্ত স্বভাবের মানুষ। প্রথমে সোনাঝুড়ি গেষ্ট হাউসে (9547514030) গিয়ে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম যথাক্রমে, শালবনের জঙ্গল, বারো-শিব-লক্ষী-নারায়ণ মন্দির আর সর্বমঙ্গলা মন্দির এর উদ্দ্যেশে। সব ঘুড়ে, দেখে, সর্বমঙ্গলা মন্দিরের সামনেই রাস্তার ধারে দেব হোটেল এ পঁয়ত্রিশ টাকায় সুস্বাদু নিরামিষ ভাত খেয়ে লাঞ্চ সেরে নিলাম। অতঃপর, গেস্ট হাউসে ফিরে একটু রেস্ট নিয়ে, ৩:৩০ নাগাদ আবার শীতলের সাথে বেরিয়ে পড়লাম গড়বেতার সব থেকে আকর্ষণীয় স্থান, গণগনি দেখতে।
এক সময়ের খরস্রোতা শিলাবতী নদী, তার দুই পরের ল্যাটারাইট মাটির মালভূমিকে ক্ষয় করে সৃষ্টি করেছে প্রকৃতির এই অপরূপ ভাস্কর্য। যাকে আমেরিকার বিখ্যাত গ্রান্ড ক্যানিয়ন এর সাথে তুলনা করা হয়ে থাকে। নব্বইটার মতন সিঁড়ি নেমে শিলাবতী নদী, যার স্থানীয় নাম শিলাই। এখানে নদী একটা সুন্দর বাঁক নিয়েছে যা এই দৃশ্যপটকে আরো সুন্দর করে তুলেছে। লাল পাথরের এই ক্ষয়ে যাওয়া মালভূমি যারা না দেখেছে, তাদেরকে এই স্থানের সৌন্দর্য ভাষায় লিখে বর্ণনা করা কঠিন। প্রকৃতি যে একজন কত বড় শিল্পী তা এই স্থানে গেলেই বোঝা যায়। পাথর ক্ষয়ে ক্ষয়ে কথাও যেন তৈরি হয়েছে শিবলিঙ্গ, কোথাও যেন পুরো পাহাড়টাই একটা রাজপ্রাসাদের সিংহদ্বার, আবার কোনো দিকে যেন একটা বিশাল দুর্গের রূপ বলে মনে হয়। দু-ঘন্টা ধরে যত দেখেছি তত অবাক হয়েছি। গণগনিতে সূর্যাস্ত দেখতে এতটাই বিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম যে গেস্ট হাউস থেকে ব্যাগ নিয়ে স্টেশন পৌঁছতে ফেরার ট্রেন মিস করলাম। অগত্যা সেই রাতটা সোনাঝুড়ি গেস্ট হাউসে থেকে গিয়ে, পরদিন সকাল 7:54 র হাওড়া সুপারফাস্ট এক্সপ্রেস (12828) ধরে ঘরে ফিরলাম।
সাথে নিয়ে ফিরলাম গ্রাম বাংলার এক রাশ রূপ-রস-গন্ধের স্বাদ আর সেখানকার মানুষদের অকৃত্তিম আতিথেয়তার সান্নিধ্য। মহাভারতের গল্পের সত্যতা হয়তো এখন আর কেউ প্রমান করতে পারবে না। কিন্তু গণগনি যে আপনাকে তার সৌন্দর্য দিয়ে মুগ্ধ করবেই করবে, সেটার গ্যারান্টি আমি অবশ্যই দিতে পারি।
বিশ্বজুড়ে আজ এক মহামারী ভাইরাস সমস্ত জীবনে এক ভয়ানক থাবা বসিয়েছে, সমস্ত ভ্রমণপ্রেমীরা আজ প্রচন্ড হতাশায়, কিন্তু আজ আমরা যদি সবাই সচেতন হই তাহলে এই মারণযজ্ঞ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবো কারন আমাদের বুকের মধ্যে হিমালয়ের আশীর্বাদ আছে....
আসুন চারপাশের মৃত্যু, কলহ, রোগের তীব্র আতঙ্কের পরিবেশ, গুজবের মিথ্যা প্রশ্রয় ছেড়ে চোখ বুজুন, আসুন আমার সাথে, হারিয়ে যান পাহাড়ের অপার স্নিগ্ধতায়....... চোখ খুলুন, দেখুন সাদা কুয়াশার পাকদন্ডী সামনের রাস্তায় তৈরী করেছে, সেই কুয়াশার রাস্তার দুধারে ধ্যানগ্রস্থ ঋষিদের মতো দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাইন গাছের সারি, সেই গাছের গা বেয়ে মেঘবালিকার অশ্রু ঝরে পড়ছে অঝোরধারায়, ভিজে পাইনের মাথায় মেঘেদের নির্লিপ্ত চাহনি যেন ভাসিয়ে দেবে কোন এক স্বপ্নের দুনিয়ায়.....আস্তে আস্তে এগিয়ে যাই পাইন বনের গভীরে, দূরে ফার্ন গাছের ভিজে জঙ্গলের মাঝে রাখা একটা শেওলা ধরা পুরানো বেঞ্চি তাতে বসে আছে কোটপ্যান্ট পরিহিত এক নেপালি বুড়ো, তার মুখের অজস্র বলিরেখা মিশে আছে তার সমস্ত শরীরে, গিয়ে বসলাম তার পাশে, সময় যেন থমকে আছে পাহাড়ের কোলে, সামনের দিগন্তবিস্তৃত সবুজ উপত্যকায় মেঘের দলের নৃত্য শুরু হয়েছে আমি আর আমার নেপালি বুড়ো দাজু মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম তার অভাবনীয় সৌন্দর্য্য.......
কিংবা ধরুন, হঠাৎ প্রচন্ড ঠান্ডা, এতো প্রবল শীত যেন সেই রাজপথের উপর উন্মত্ত প্রতিবাদের চিৎকার যেন বধিররাও শুনতে পায়, এতো স্পষ্ট যেন দৃষ্টিহীনরাও দেখতে পায়...... হিমাঙ্কের অনেক নিচের তাপমাত্রা আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরেছে সমস্ত শরীর, আমার নিজের উপস্থিতির প্রমান দিচ্ছে পায়ের নিচের জমাট নদীর নীল বরফের স্তর, চারপাশে অসংখ্য ধূসর পাহাড়ের সারি তার মাঝে বয়ে গেছে জান্সকারের শীতল রূপ যা মাঝে মাঝে চ্যালেন্জ ছুড়ে দেয় আন্টার্টিকার প্রবল প্রতিকূল পরিবেশকে.... আমি সব ভুলে চারপাশের জমাট জলপ্রপাত, জমাট নদীর ঢেউ পেরিয়ে বরফের সমুদ্র ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে চলি দিগন্তরেখার দিকে.......
কখনও চলে আসি এক পাহাড়ি ছেলের সাথে তার গরিব কুঁড়েঘরে সে বলে আজ মোমো খাবো একসাথে সাথে তার গিটারে বাজবে প্রেমের গান, আজ সে তার প্রেমিকাকে শুনাবে তার লেখা প্রথম গান, পায়ে পায়ে স্মৃতি, পাহাড়ি শৈশব ফেলে আমি তার সাথে চলে আসি পাহাড়ের খাদের ধারে যেখানে মেঘের দল অপেক্ষা করছে আমার জন্যে ভালোবাসায়, সেই ভালোবাসা খুব পবিত্র, সেই পবিত্রতার দাম না দিলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ নেই...... সকালবেলা তখনও কুয়াশার রেশ কাটেনি সমস্ত জঙ্গল যেন স্বাগত জানাচ্ছে নতুন ভোরকে, কান পাতলে শোনা যাচ্ছে পাহাড়ি নদী জয়ন্তীর জলোচ্ছাস, ভিজে ভিজে জঙ্গলে মাতাল করা বুনো ফুলের গন্ধ, সিক্ত পাতায় রোদের অলংকার, হটাৎ ঝোপের আড়াল থেকে একটা হরিণশিশু তার সরল চোখে তাকায় আমার দিকে, তার মায়াবী চোখের রুপোর জোস্নার মতন দৃষ্টি বলে পৃথিবীটা আজ কত সুন্দর, ভালোবাসা প্রেমে এসো আমরা নতুন করে জীবনের গল্প লিখি......
সন্ধ্যা নামছে আমার ভালোবাসার দার্জিলিংএ, আজ বেশ মেঘলা, রাস্তার আলোগুলোর তলায় মেঘের দল ভীড় করেছে, শেওলা ভেজা গলির ভিতরের জয়িস পাব থেকে বিয়ার পান করে আজ আমি ঈষৎ এলোমেলো, অদ্ভুত সুন্দর সন্ধ্যার ফ্লেবার বুকে নিয়ে মেঘের চাদর কেটে এগোতে লাগলাম ম্যাল রোডের দিকে, একটু এগিয়ে চোখে পড়লো রাস্তার কোনে বসা এক নেপালি আন্টি পিঠে তার ছোট বাচ্চা, সেই আন্টি আপনমনে ভুট্টা বিক্রি করছে, গিয়ে বসে পড়লাম তার পাশে, ভুট্টা খাবো আজ, কথায় কথায় জানলাম সেই আন্টির স্বামী অসুস্থ পঙ্গু, ঘরে তার এক ছেলে ছোট্ট, তার পিঠে এই 9মাসের পুচকি মেয়ে, তার উপরে পুরো সংসার, সকালে সে বাড়ি বাড়ি সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে সামান্য রোজগার করে আর সন্ধ্যায় ভুট্টা বিক্রি করে সংসার চালায়.... এক চা ওলার কাছ থেকে আমাকে বললো - আজ বহৎ ঠান্ডি হায়, থোরা চায় পিও ভাইয়া, ইয়ে চায় মেরা তরফ সে...... না সেদিন দুঃখে চোখে জল আসেনি বরং গর্বে আমার মাথা উঁচু হয়ে গেছিলো কারন আমি দশভুজা দুর্গাকে দেখিনি কিন্তু সেই আন্টিকে দেখেছিলাম যে এতো সমস্যা এতো দারিদ্রের মধ্যেও বলতে পারে i am ready, challange accepted....... এরা সবাই আমার অনুপ্রেরণা, আমাদের অনুপ্রেরণা... আজ দিন এসেছে আসুন সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ি এই ভাইরাসের সাথে, দারিদ্রের সাথে, হতাশার সাথে, আমি জানি আমরা হারবো না কারন আমাদের মাথার উপর হিমালয়ের আশীর্বাদ আছে.........
(হোমাগ্নি ঘোষ ).....
বর্তমান করোনা ভাইরাস এর কারণে সকলেই কম বেশি গৃহ বন্দি। তাই এখন ঘরে বসে স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়া গতি নেই। আজ আমি তেমন একটি জায়গার স্মৃতিরোমন্থন করবো। "ঘরের কাছে আরশি নগর" এর মত বর্ধমান শহর এর বুকে এক বেলার স্পট
সর্বমঙ্গলা_মন্দির। কয়েক সপ্তাহ আগে এক শনিবার ছুটির দিন করে ঘুরে এলাম একদিনের বর্ধমান সফর ! ঘরের কাছে কম খরচে এমন _ একবেলার ভ্রমণ আর কি বা হতে পারে বলুন !!! আর সেটা যদি হয় এই মা সর্বমঙ্গলা দর্শন, তবে তো কথাই নেই। সর্বমঙ্গলা_মাতার_মন্দির :- এটি একটি প্রাচীন দুর্গা মন্দির, মাতা সর্বমঙ্গলা ! খুব সুন্দর মন্দির চত্বর, একই মন্দির কমপ্লেক্স এ মূল মন্দির, তিনটি শিব মন্দির, ঠাকুর দালান এবং বাইরের দিকে আরো দুটি শিব মন্দির অবস্থিত !!! মাতা সর্বমঙ্গলার কোন মূর্তি নেই, সিংহাসন এর ওপর একটি পাথরের বেদি, তাকেই মাতা রূপে পুজো কড়া হয় !!! মন্দির প্রতিদিন সকাল 7:00টা থেকে বেলা 1:00 পর্যন্ত খোলা, আবার বিকেল 4:00 টে থেকে সন্ধে 7:00 টা পর্যন্ত খোলা থাকে !! প্রতিদিন মন্দিরে থাকে ভোগের বিশেষ ব্যবস্থা !! আমরাও আজ ভোগ গ্রহণ করেছি, খুব পরিচ্ছন্ন ভোগ, তবে সকাল 10:30 এর মধ্যে গিয়ে আপনাকে ভোগের কুপন সংগ্রহ করতে হবে ! কুপন মূল্য 40 টাকা, ভোগের মধ্যে পাবেন শাকভাজা, আলুভাজা, পোলাও, ভাত, সুক্ত, ডাল, ছোলা মটর, চাটনি, পায়েস... যথেষ্ট আয়োজন, আহার পরিতৃপ্ত, যথাযথ !!!
কিভাবে যাবেন :- খুব সহজ, বর্ধমান স্টেশন থেকে টোটো করে নিন, আপনাকে ঠিক জায়গায় নামিয়ে দেবে ! এটি কার্জন গেট থেকে কিছুটা এগিয়ে মূল রাস্তা দু ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, একটি সরু গলি ধরে এগিয়ে মিনিট 10 হাঁটা পথ ! সবাই চেনেন, প্রয়োজনে স্থানীয় লোককে জিজ্ঞেস করুন অথবা গুগল বাবার স্মরণ নিন !!!
সর্বমঙ্গলা মন্দিরে পুজো দিয়ে, ভোগ গ্রহণ করে আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম আমাদের পরের ডেস্টিনি তে, তবে সে কথা অন্য দিন জানাবো। বন্ধুদের সুবিধার্থে আমার তোলা জায়গাগুলির কিছু কিছু ছবি শেয়ার করলাম, আশা করি ভালো লাগবে !!! কারো কোন জিজ্ঞাসা থাকলে নির্দ্বিধায় কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন, যতটা পারি সাহায্য করার চেষ্টা করবো.... সকল বন্ধুদের অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা। আশা করি মা সর্বমঙ্গলার কৃপায় করোনা ভাইরাস এর মত অসুরের হাত থেকে সমগ্র বিশ্বকে আমরা রক্ষা করতে পারবো। ??? জয়_মা_সর্বমঙ্গলা তথ্য ঋণ :- বিভিন্য জনের কাছে যে সহযোগিতা পেয়েছি, তা বিনম্র চিত্তে স্বীকার করি, একাধিক ফেসবুক গ্রুপ যার মাধ্যমে জায়গার সন্ধান পেয়েছি সেই সকল পোস্ট দাতাদের জানাই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।
লাদাখের রিং পোঁচে বিমানবন্দরে যখন উড়োজাহাজের চাকা ছুলো তখন ঘড়িতে ঠিক সকাল ৭ টা ৩৫ মিনিট । দিল্লি থেকে লেহ শহরে আসতে সময় নিয়েছে প্রায় ১ ঘণ্টা। বিমানের ভেতর বসে শুনতে পেলাম বলছে বাইরের তাপমাত্রা ১৮ ডিগ্রী, তাই গায়ের টি শার্টের উপর চাপিয়ে নিলাম নরম জ্যাকেটটা আর বিমানের বাইরে আসতেই দূর ধূসর পাহাড়ের শীতল রুক্ষ হাওয়ায় কেঁপে গেল শরীর । যেদিকে চোখ যায় শুধু খয়েরী রুক্ষ ধূসর পাহাড়ের সারি যার মধ্যে সূর্যের প্রথম আলো মিশে তৈরি করেছে এক বিচিত্র পাহাড়ি নেশা। কনকনে হাড় হিমকরা শীতল রুক্ষ বাতাস, দিগন্তবিস্তৃত ধূসর পাহাড়ের সারি, মাথার উপর অসীম নীল আকাশে খণ্ড খণ্ড মেঘের ভেলা আর তার ছায়া এসে পড়েছে পাহাড়ের গায়ে, ভারতের সবচেয়ে উঁচু বিমানবন্দরে তথা লেহ শহরে আপনাকে স্বাগত ।
ব্যাগপত্র নিয়ে বাইরে বেরোতেই দেখি সারি সারি গাড়ী, তারমধ্যেই বেশ টিকালো নাক অনেকটা ওয়াসিম আক্রমের মত দেখতে গাড়িচালকের গাড়ীতে চললাম লেহ শহরের ভিতরে। আমার মত বোহেমিয়ানরা আগে থেকে কিছুই ঠিক করে রাখেনা এবারও তার ব্যাতিক্রম হয়নি এদিক ওদিক ঘুরে ঠাই হল ইরফান গেস্ট হাউসে। এখানে থাকার দুটো কারন পাশেই অনেক রেস্তোরাঁ তাতে অনেক বিদেশী খাবার পাওয়া যায় আর ঘরের ভাড়াও খুব সস্তা আর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু গেস্ট হাউসের ভিতরের একটা আপেল গাছ তাতে ছেয়ে আছে লাল টুকটুকে আপেল। ফ্রুট জুস, দই চিজ লেতুশপাতা দিয়ে তৈরি salad চিকেন কিমা দিয়ে বানানো sandwich সাথে পাঁঠার কলিজার ডিপ frayed কিমা, ডিমের পোঁচ, সাথে হট চকলেট। ইস্রায়েলি এই ডিশ শেষ করতে অনেকসময় লেগে গেল। যেহেতু দিল্লি থেকে লেহ মাত্র ২ ঘণ্টায় এসেছি এতটা উচ্চতায় তাই আজ বিশ্রাম পাহাড়ি বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে acclimatization. দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং বহু পাহাড়ে ট্রেক করে এইটা জেনেছি পাহাড়ে গিয়ে আপনাকে আগে তার পরিবেশ তার উচ্ছতার সাথে নিজের শরীরকে মানিয়ে নিতে হবে তারপর অন্য কাজ। আজ তাই লেহ শহরে একটু হাঁটাহাঁটি, দুপুরে লেহ প্রাসাদ এক্সপ্লোর আর বিকেলের দিকে শহরের মাঝে অবস্থিত মনাস্ত্রিতে নিজেকে মিশিয়ে দেবো পাহাড়ি আধ্যাত্মিকতার সাথে। কারন পরশু থেকে শুরু হবে মারখা ভ্যালি ট্রেক তার আগে কাল ইতিহাস প্রসিদ্ধ লেহ শহরের বিখ্যাত গুম্ফা গুলোকে আবিস্কার করার পালা। পরেরদিন সকালে জাসুং গাড়ীটা স্টার্ট দিয়ে বলল-today is your day man, Lets explore leh the city of castles.যাত্রা শুরু করার আগে সামনের বুদ্ধ মূর্তির দিকে তাকিয়ে নিজের মনকে একাগ্র করার চেষ্টা করছিলাম, সামনে দুজন বিদেশি ধ্যানে সম্মোহিত হয়ে হারিয়ে ফেলেছে কালের সিমা। মনে মনে বলছিলাম- অহংকার নয়,হিংসা নয়,ego নয়, মানুষকে ভালোবাসো প্রান খুলে পৃথিবীর উষ্ণতা নয় মনের উষ্ণতা বাড়ুক।
দাখকে বলা হয় city of gumphas বুদ্ধের দেশ,তাই লক্ষ্য ছিল ৩ টে অতি প্রাচীন শাশ্বত গরিবান্বিত হেমিস,থিক্সে আর সে গুম্ফা। প্রথমেই আমাদের গাড়ি ছুটল হেমিস monastryr পথে,পাশে দেখা হল সিন্ধু নদের সাথে। এগারো দশকের আগে স্থাপিত এই হেমিসের ইতিহাস আজও আমাদের স্তব্ধ করে দেয়, শোনা যায় প্রভু যীশুও এখানে এসে বৌদ্ধ ধর্মের শান্তির পবিত্রতায় নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। গুম্ফার ভিতরের মিউজিয়াম টা দেখতেই হবে, এছাড়াও প্রভু রিং পচেকে সম্মান করে সারা পৃথিবী খ্যাত হেমিস উৎসব অসাধারণ। লামাদের নৃত্য ও তাদের গভীর মন্ত্রোচ্চারণ আপনাকে পাহাড়ের বুকে প্রশান্তির বানী শুনাবে। বাইরে বেরিয়ে দেখি লাল বস্ত্র পরা সব লামারা ব্যাস্ত নিজেদের কাজে, যেহেতু নভেম্বরের শেষের দিক তাই বেশ টাণ্ডা হাওয়া দিচ্ছিল, হটাত শরীরে স্পর্শ করল স্নেহের পরশ। এক সৌম্যদর্শন বৌদ্ধ লামা আমাকে পরিয়ে দিল মোটা পশমের চাদর। শুনছিলাম প্রাচীন এই মনাস্ত্রি ১৬৭২ সালে রাজা সেন গে নেমেগাল নতুন করে এই গুম্ফা সংস্কার করেছিলেন। বিদায়ের পথে খয়েরী পাথরের বুকে সাদা হেমিস মনাস্ত্রি হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল।
Hemis monastery থেকে আমাদের গাড়ী ছোটা শুরু করলাম ২৫ কিলোমিটার দুরের থিক্সে মনাস্ত্রির পথে। লেহ শহরের গর্ব এই থিক্সে গুম্ফা প্রায়১১৯০০ ফুট উঁচুতে সিন্ধু নদের উপত্যকার গায়ে অসংখ্য স্তুপ, থাংকা,দেওয়ালে আকা প্রতিকৃতি নিয়ে তৈরি। ১৫ শতাব্দীর শেষের দিকে সংপা বলে একজন ধর্মগুরু তার এক অনুগামী সেরাব জাংপকে একটি আমিত্যর মূর্তি ও নিজের রক্ত দিয়ে সেই মূর্তিকে স্থাপন করতে বলেন, পরবর্তী কালে জাংপ সেই মূর্তি লাদাখের রাজাকে দান করলে রাজা খুশী হয়ে জমি দান করেন এবং সেখানেই এই থিক্সে গুম্ফার কাজ শুরু হয়। এই গুম্ফার প্রধান আকর্ষণ মৈত্রেয় বুদ্ধ। ৪৯ ফুটের এই বিশাল বুদ্ধ মূর্তি লাদাখের অন্যতম।
থিক্সে গুম্ফার ইতিহাস গায়ে মেখে আমরা ছুটলাম সে গুম্ফার পথে,লেহ শহরের দক্ষিণে ১৫ কিমি দূরে এই গুম্ফার স্থাপনকাল প্রায় ১৬৫৫ সাল। মানালি থেকে লেহ আসার পথে সড়কপথে এই গুম্ফা পরে। shey ছিল লাদাখের প্রাচীন রাজধানী কেউ কেউ বলে এই গুম্ফার বয়েস নাকি হেমিস গুম্ফার থেকেও বেশী। থিক্সে গুম্ফা থেকে ধুলোমাখা শীতল মরুভুমি আর তার মাঝে শ্বেতশুভ্র chorten পেরিয়ে অনেকে আসে সে গুম্ফাতে। লেহ শহরের প্রাচীন ইতিহাস বহন করে এই তিন গুম্ফা, ইতিহাসে বুঁদ হয়ে আমরা চললাম শান্তি স্তূপের পথে বিকেলের সূর্যাস্ত দেখতে। হোমাগ্নি ঘোষ । |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |