রঙচঙে কিছু ছবি থাকলেও এটা সেই অর্থে ঘুরতে যাওয়ার গল্প নয়। আবার হয়তো এটা আমার ঘুরতে যাওয়ার ই কথা। পাহাড় জঙ্গল সমুদ্র নয়, শুধুমাত্র শিকড়ের টানে।
অজয় নদীর তীরে ছোট্ট একটা অজানা গ্রাম আমাদের। বাবার জন্মভূমি। অনেক ছোটবেলায় যেতাম যখন তখন ব্রিজ বলে কিছু ছিলনা। পুরনো রাজদূত মোটরসাইকেল চড়ে নদী ঘাট, সেখান থেকে নদী পেরোতে ভরসা বুড়ো মাঝির লড়ঝরে নৌকা। নিদারুণ দারিদ্র্য তখন তো বুঝতাম না। এখনো হয়তো বুঝিনা। যে সয় সেই জানে। আমরা তো বেশিরভাগ ই আহা উহু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ফিলিং স্যাড পোস্ট দিয়েই খালাস। তথাকথিত শহর থেকে আসা আমরা তখন সবার ফিসফাস আর অবাক বিস্ময় চাহনির একচ্ছত্র মালিক। মোটরসাইকেলের ধুলো ধোঁয়ার পেছনে ছুটে চলা একগুচ্ছ ন্যাংটো বাচ্চা। শুনেছি দাদু নাকি পুরোহিত ছিলেন।তৎকালীন জমিদার বাবু কিছু জমি দান করেছিলেন। সেই সুবাদে আমরাও নাকি জমিদার। পুরনো প্রায় ক্ষয়ে যাওয়া মাটির বাড়িটার উঠোনে যখন গ্রাম বাংলা কেমন হয় দেখছি তখন একজন বেশ বয়স্ক ভদ্রলোক আমার কাছে এলেন। এই সময়টায় আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত থাকি। প্রণাম টোনাম আমার ছোটবেলা থেকেই আসেনা। আড়চোখে মার দিকে তাকাচ্ছি, টরে টক্কা তরঙ্গে কি নির্দেশ আসে। আমাকে অবাক করে ভদ্রলোক আমার পা এর দিকে ঝুঁকে পড়লেন। "ঠাকুর ভালো আছেন?" মনে হলো সপাট করে এক বেতের বাড়ি পড়লো যেনো পিঠে। একটু ভালো পোশাক, পা এ জুতো আর দুবেলা খাবার, আর একটু শহরের গন্ধ কি মানুষকে এতটা তফাৎ করে দেয়? যেখানে বয়সের ভেদ হার মেনে যায়? আমাদের গ্রাম এ তখনও বিদ্যুৎ আসেনি। স্কুল তো ছাড়, একটা প্রাথমিক চিকিৎসালয় অবধি নেই। এই নেই এর ফিরিস্তি বিশাল। রাস্তা নেই, চাষবাস ছাড়া উপার্জন নেই, মেয়েদের ন্যূনতম আবরণ কেনার সামর্থ নেই। রুগ্ন শরীরে প্রতি বছর সন্তান, হয়তো তাদের জন্য বুকে দুধ ও নেই। সন্ধ্যে নামলেই ঘুমোতে যাওয়ার তোড়জোড়। কারণ সূর্যের আলো ছাড়া দিনের অস্তিত্বই নেই । অবসর বিনোদনের একমাত্র আদিম নির্ভেজাল উপায় সম্ভোগ। ফলস্বরূপ প্রতি বছর সন্তান। কি খাবে না খাবে।বউটা সেই ধকল নিতে পারবে কিনা মারা যাবে সেসব ভাবারও সময় নেই। তবে ভাববেনা সবই নেই এর দিকে। কিছু কিছু জিনিষ আছে। প্রবল পরাক্রম এর সাথে আছে। অলিতে গলিতে দেশী মদ আর চোলাই মহুয়ার ঠেক আছে। নদীর ধারে জুয়া এর আসর আছে। জমি বাড়ি যেটুকু যা আছে সব বন্ধক দিতে হলেও পরোয়া নেই। আমি ভাবি তাহলে কেন একটা কোথাও যেন সূক্ষ্ম কিসের টান? বৃষ্টির পরে ওই সোঁদা মাটির গন্ধ? নাকি বুনো ফুলের ঝাঁঝালো গন্ধ? কোন টা আমায় টানে? নাকি সেই রাত্রে দুর থেকে ভেসে আসা বেসুরো কীর্তন? নাকি নদীর পাড়ের ওই স্মশান টা? গত বছর শীতকালে গেলাম যখন ঝটিতি সফরে, ফেরার সময় সান্তা কাকুর সাথে দেখা রাস্তায়। উনি ভাগ চাষী। নিজের জমি নেই।অন্যের জমিতে চাষ করে ভাগ দিতে হয় মালিক কে। এক ব্যাগ ভর্তি তাজা সবজি জোর করে গাড়িতে তুলে দিলেন।বলল "আমার নিজের বাগানের সবজি।একদম তাজা। ছেলে টা পড়াশোনা করে নিজের গ্যারেজ খুলেছে। বাড়িটা দোতলা করে নিচে একটা মিষ্টির দোকানও দিলাম। পরের বার আসো মিষ্টি খাওয়াবো প্রচুর। তখন কিন্তু থাকতে হবে কদিন।পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরবো।কেমন?" পান খাওয়া কালো ভাঙ্গা দাঁতের ফাঁকে অমলিন হাসিটা দেখলাম। একজন গর্বিত পিতা, একজন সফল খেটে খাওয়া মানুষ এর হাসি। হয়তো এটাই আসল "জমিদার" এর হাসি।
0 Comments
প্রায় বছর দশেক আগে একবার হঠাৎ করে ঝটিকা সফরে বকখালির বালুতটে পায়ের চিহ্ন এঁকে এসেছিলাম। সেই সময় দেখেছিলাম জনসমাগম আর আনন্দ জোয়ার। আজ যখন আবার ফিরে এলাম মহানগরের সব থেকে কাছের সমুদ্র তটে তখন কিন্তু কালো মাথার সংখ্যা অনেকটাই কম, অথচ আয়োজনের কোন খামতি নাই। এই দশ বছরে উন্নতি চোখে পড়ার মতো, তাই খুব সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায় ঘরের কাছে বকখালির নীল সমুদ্রে। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আবার বকখালির খালি সমুদ্রতটে। কপাল ভালো থাকায় বকের সারি সাথে আরও অনেক নাম না জানা পাখির সারি। দুপুর বেলায় মাছভাত আর হ্যাঁ এবার আর সমুদ্র স্নানের সুযোগ হয় নি। তবে সূর্যমামা পাটে না যাওয়া অবধি আমরা বকখালিকে আপন করেই রেখেছিলাম।
পুন:- এখন আর নদী পারাপারের চিন্তা নাই কাজেই উঠল হুজুক তো বকখালি যাই। তেমন ভীড়ভাট্টা নাই তাই মহামারির ভয়টাও নাই।
আমাদের পশ্চিমবঙ্গের খুব কাছেই শান্ত নির্জন সমুদ্র সৈকত উড়িষ্যার বালাসোর এর চাঁদিপুর । ছোট্ট করে কোনও একটা শনি রবি বা সপ্তাহের মাঝেই টুক করে ঘুরে আসা যেতেই পারে চাঁদিপুর। চাঁদিপুর থেকে ঘণ্টাখানেকের দূরত্বেই বেশ কিছু ঘোরার জায়গা আছে। বালাসোর শহরকে এককথায় মন্দির আর প্রকৃতির যুগলবন্দির শহর বলা যায়৷ ওড়িশার ঐতিহ্য মেনেই এ শহরে আছে একের পর এক মন্দির৷ স্থাপত্যের প্রতি যাঁদের আকর্ষণ আছে, তাঁরা নিঃসন্দেহে এখানে দেখার প্রচুর উপকরণ পাবেন৷ বালাসোর স্টেশন থেকে(১৫কিমি ) খুব কাছেই অসাধারণ স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত ইমামি_জগন্নাথ_মন্দির । এই মন্দিরটি পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অবিকল প্রতিরুপ বলে দাবি করা হয়। এই মন্দিরটি ইমামি গ্রুপ দ্বারা নির্মিত ও পরিচালিত। ২০০৯ সালে এই মন্দিরের নির্মাণের কাজ শুরু হয়, ২০১৫ সালে নভেম্বর মাসের এই মন্দিটির উদ্বোধন হয়। এটির নির্মাণে খরচ হয়েছিল ১৭ কোটি ভারতীয় মুদ্রা।
১১.৭ মিটার উঁচু এই মন্দিরের ১৬ টি কোনারক চক্র আছে। এই মন্দিরটি খুব ভালো ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। মন্দিরটির ছাদে ও দেয়ালে শ্রী কৃষ্ণের বাল্য লীলা, বিষ্ণুর ১০ অবতার ও আরো অনেক কিছু নিয়ে পট্টাচিত্র আঁকা আছে। এখানে সকল ও সন্ধ্যায় আরতি আয়োজিত হয়। এই মন্দিরটি না দেখলে আপনার বালাসোর ভ্রমণ অসুম্পূর্ণ থেকে যাবে। খুব সুন্দর ভোগ খেয়েছিলাম আমরা সেই অভিজ্ঞতা ভোলার নয় । মন্দির প্রাঙ্গনে একটি বড় হল ঘর আছে, সেখানে উপনয়ন, বিয়ে, অন্নপ্রাশন এবং কিছু সামাজিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। মন্দির কর্তৃপক্ষ সেগুলি ব্যবস্থা করে দেন। মন্দির প্রশাসনের একটি স্টল আছে সেখানে খাজা, মালপোয়া সহ বিভিন্ন মিষ্টি বিক্রি করে। রাতের আলোয় মন্দিরটির আলোকসজ্জা আপনাকে মুগ্ধ করবে।
বালাসোর কে কেন্দ্র করে চাঁদিপুর ছাড়া যে সব জায়গাগুলো আপনারা দেখতে পারবেন
১পঞ্চলিঙ্গেশ্বর ২ কুলডিহা_জঙ্গল (আলাদা পারমিশন লাগবে) ৩ নীলগিরি_প্যালেস ৪ দেবকুন্ড ৫ ইমামি_জগন্নাথ_মন্দির(ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা আছে Rs৫০) ৬ ক্ষীর_চোরা_গোপীনাথ_মন্দির এছাড়া এখান থেকে সিমলিপাল ভ্রমণ করতে পারেন। তবে আমি বলবো সিমলিপাল টা এর সাথে না করার জন্য। ওটা সিমলিপাল থেকে অথবা বাংরিপোসি থেকেও করতে পারেন। পথনির্দেশ কলকাতা থেকে সড়ক ও রেলপথে আপনি আসতে পারবেন বালাসোর। রেলপথে আসতে গেলে আপনাকে আসতে হবে বালেশ্বর, বালেশ্বর থেকে ইমামি জগন্নাথ মন্দির দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার।(এখান থেকে মন্দির যাওয়ার জন্য রিজার্ভ গাড়ি ভাড়া করতে পারবেন) কলকাতা থেকে সড়ক পথে দূরত্ব ২৬৪ কিমি, চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা লাগবে। মন্দির দেখে চলে আসুন বালাসোরের সমুদ্র সৈকত চাঁদিপুরে । রাত্রিবাসের_ঠিকানা উড়িষ্যা পর্যটন বিভাগের পান্থ_নিবাস হচ্ছে আদর্শ জায়গা।( https://panthanivas.com/hotel_details.php?id=27) এছাড়া প্রচুর প্রাইভেট হোটেল আছে । তথমিত্র অর্পিতা_বিচ_রিসোর্ট ৮৫৯৪৯১৬৪৭৪/৭৫০৪৮৩৮৮৮৪ হোটেল_শুভম ৯৪৩৮২১৪৬৪৯/ ৯৪৩৭৫৮৬৩০৪ ২০১৬ সালের ডিসেম্বর মাসে এখানে থেকেছিলাম দুদিন , হোটেল শুভম খুব ভালো অভিজ্ঞতা। অসাধারণ রান্না ওদের। চিলি ক্র্যাব এখনো আমার মুখে লেগে আছে । ব্যবহার ভালো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মন্দির কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট http://emamijagannathmandir.com/index.php ছবি মার্চ ২০২০ তথ্য ঋণ Google
প্রায় তিন মাস পড়ে হালকা শীতের আবহে মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে দুই বন্ধু চলেছি এক অনেক দিনের জানা, অনেকেরই না জানা এক Off-Beat জায়গায়। আজকে জায়গাটার নাম প্রথমেই বলে দিচ্ছি, সেটি হল “সবুজ দ্বীপ”। সেই ছোট্টো বেলা থেকে শূনে এসেছি, যাইনি কখনো। আর সত্যি সবুজ, প্রাণবন্ত সবুজে ভরা। তবে এই সবুজ দ্বীপ কিন্তু সেই কাকাবাবূ বা শোণ্টূর সবুজ দ্বীপ নয়। আর আমাদের সঙ্গে ছিলেন না কোন কাকাবাবুও। ছিলাম শুধু আমরা দুজন ভাইপো। কাদের ভাইপো আবার, আপনাদেরই ভাইপো। এবার চলে আসি আমাদের ভ্রমণ কাহিনীতে...
২২শে নভেম্বড়,২০২০ আমি আর আমার বন্ধু সম্রাট প্রায় তিন মাস পরে চলেছি এই সংসার থেকে বেড়িয়ে এক্টূ মুক্ত খোলা আকাশের হাওয়া খেতে। সকাল ৭ঃ৩০ টায় বেরলাম আমাদের বাড়ী থেকে। বেড়িয়ে প্রথমে বন্ধুটিকে বাইকে তুললাম তার বাড়ী থেকে। উঠলাম কল্যাণী রোডে, তেল ভরিয়ে হাইরোড ধরে এগিয়ে চললাম বলাগড়ের উদ্দেশে। বাড়ী থেকেই গুগুলে দেখে নিয়েছি কি ভাবে যাব। ঈশ্বরগুপ্ত সেতু পেড়িয়ে, কিছুটা গিয়ে ডানদিকে বেকে উঠলাম SH-6এ । এই রাস্তাই সোজা চলে গিয়েছে বলাগড়ে। নৈহাটি থেকে দূরত্ব দেখলাম প্রায় ৪০ কিমি। কিছু ঘিঞ্জি এলাকা বাদ দিয়ে আমরা চলেছি একদম ফাঁকা রাস্তা ধরে। চারপাশের মাঠ সবুজে সবুজ, চাষ হচ্ছে। হাওয়া যা দিচ্ছিল, শীতও লাগছিল বেশ। এই পথে আসতে আপনাদের কিন্তু মন জুড়িয়ে যাবে। কিন্তু আস্তে গেলে আবার ফিরতে দেরী হয়ে যাবে, এই ভেবে স্পীড একই রেখে এগিয়ে চললাম। এই ভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টা চলার পর, একজন স্থানীয় লোককে জিজ্ঞাসা করে নিলাম ডান দিকের মোড়, সামনেই রেলগেট। একদিকে বলাগড় অন্যদিকে সোমরা বাজার। এখানে কিছুক্ষণ থামলাম টিফিন করার জন্য। সদ্য ভাজা গরম গরম কচুরি ছোলার ডাল সহযোগে ৬ পিস সাঁটিয়ে দিলাম, সঙ্গে নিলাম ২ টো নলেন গুঁড়ের রসোগোল্লা।এরপর আরও ১৫ মিনিট মত এসে আমরা পৌছালাম জেটীঘাটে। সবুজ দ্বীপের কাছে জেটিঘাটে যখন আমরা পউছালাম তখন ঘড়িতে পৌনে ১০ টা বাজে। আপনাদেরকে একটা কথা বলি, এই সবুজ দ্বীপে সব লোকই আসে কিন্তু পিকনিক করতে, আবার অনেকে শান্ত পরিবেশে থাকতে। কিন্তু অনেক দিন না বেরোনোর জন্য মন ও ভালো ছিল না। তাই আমরা চলে এলাম সবুজ দ্বীপ ঘুরে দেখতে, একটু কাছ থেকে নিরবতা অনুভব করতে। পাশেই আছে দেখলাম থাকবার জন্য একটি ছোটো হোটেল, যদিও বন্ধ। স্থানীয় একটি বাড়ীতে বাইক রেখে এগিয়ে যেতেই একটি ছেলের সঙ্গে দেখা, বললাম সবুজ দ্বীপে যাব, নিয়ে গেল। কাঠের নৌকায় ইঞ্জিন লাগান, ভোটভোটী। কিছুটা এগোনোর পরই, তেল যাওয়ার লাইনে হাওয়া ঢুকে বন্ধ হয়ে গেল। কিছুটা টানল দাঁড় বেয়ে, বাকি কিছুটা হাতে টানা নৌকাতে। এখানে জেটী আছে, তবে আমরা নামলাম চড়ে। এখান থেকে হেঁটে দ্বীপে গেলাম। নৌকা থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, দ্বীপটা অনেকটা বড়। মাঝিকে জিজ্ঞাসা করাতে বলল জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হেঁটে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট মত। দ্বীপে নেমেই আমরা প্রথমেই উঠলাম সামনের ওয়াচ টাওয়ারে। আপনি যদি ভাবেন ভিতর দিকে অনেকটা দেখতে পাবেন তাহলে ভুল করছেন। একমাত্র নদীর দিক ও তার আশেপাশের দিকটাই একমাত্র দেখা যাচ্ছে। আর গাছ বড় থাকার জন্য ভিতরের দিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে একটা কথা প্রথমেই বলে রাখি, এখানে যা জঙ্গল, আর যা সবুজে সবুজ আপনার একটা বেলা নিশ্চিন্তে কেটে যাবে ঘুরে ঘুরে। এখানে নতুন করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, এদিক ওদিক বালি, সিমেন্ট সব ছড়ান। তাই আমরা ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে নদীর পাশ বরাবর দ্বীপেরই উঁচু জায়গা ধরে চলতে লাগলাম। যত এগচ্ছি জঙ্গল তত ঘন হচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু জায়গা বেশ ফাঁকা দেখতে পেলাম। আমরা চলেছি বাঁ দিক ধরে, একটা জায়গায় গিয়ে দেখলাম লোহা দিয়ে বাড়ীর structure তৈরি করা আছে, কিন্তু তৈরি আর হয়নি ঐ অবস্থাতেই রয়ে গেছে। তবে একটা জিনিষ দেখলাম, এখানে প্রত্যেকটি গাছে শামুকখোলের বাসা। আর কোন একটা আওয়াজ করলেই ঝাঁক ধরে উড়ে যাচ্ছে, আবার কিছুক্ষণ পর এসে ডালে বসে পড়ছে। আমরা এবার ডানদিকে এগলাম। একটা ফাঁকা জায়গার মধ্যে দিয়ে গিয়ে মানুষ যেখান দিয়ে চলাচল করে সেই রাস্তায় গিয়ে পড়লাম। এই জায়গাটা থেকে আবার সোজা চলে গেলে আরও গভীর জঙ্গল। আমরা এগিয়ে চললাম আরও গভীরের দিকে। যতদূর মনে হয় তেলাকুচের ফুল হলুদ রঙের হয়, এই ফুল সারা পথ জুড়ে ফুটে থাকে দেখা গেল। আর এর যে ফল সেগুল বেশ লাল লাল এবং বড়। আমরা অনেকটা ভিতরে ঢুকে গিয়ে দেখলাম এখানে আর একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে। কিন্তু পাশেই গাছে উঁচুতে মৌমাছির চাক, ভনভন করছে। ওয়াচ টাওয়ারে জং ধরে গেছে, লতায় পাতায় জড়িয়ে ধরেছে, তাও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যায়। আমরা দুই জন ছিলাম একসাথে উঠেছি, তবে আপনারা যদি যান দেখে শুনে উঠবেন। তবে বেশ শক্ত দেখলাম, ভেঙে যাওয়ার চান্স যদিও নেই। এখানেও এত জঙ্গল যে চারপাশে জংগল ছাড়া কিছু বেশি দেখা গেল না, পাশেই মৌমাছির চাকটা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছিল, অনেকটা বড়। একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন এখানে কিন্তু বেশ মশা আছে, ছোট ছোট কামড়ালে দেখলাম ফুলে যাচ্ছে। তবে এইটুকু বোঝা গেল এখানে শেয়াল আর ভামও আছে। আবার সেই জঙ্গল পথ দিয়ে আমরা ফিরে চললাম আমরা যেখানে এসেছিলাম সেইখানে। মাঝ পথে কিছুক্ষণের বিশ্রাম একটি দালানে। মাঝি ভাই আমাদের বলে দিয়েছিল ফেরত যাওয়ার ২০ মিনিট আগে আমাদের ফোন করতে, তাই করে দিলাম। আমরা জঙ্গলে ঢুকেছিলাম বাঁ দিক দিয়ে তাই ডান পাশে কাত গুলো ভাঙ্গাচোরা কটেজ আছে সেগুলো দেখা হয়নি। চললাম সেদিকে। এখানে উম্পুনের সময় অনেক গাছ ভেঙে পড়েছে, আবার অনেক জঙ্গলও হয়ে গেছে, সেগুলি পরিস্কার করার জন্য লোক লাগান হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম এই কটেজ গুলোতে আগে খাট ছিল কিন্তু এখন সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। এখানে সারিবদ্ধ ভাবে প্রায় ১০ টি মত কটেজ আছে, সব গুলোতে ওঠার পথ একদম ভেঙে গিয়েছে, আবার যেটাতে উঠা যাচ্ছে সেটাতে হয়ত বারান্দা ভাঙ্গা। এবার আমরা চললাম চড়ের দিকে। যেতে গিয়ে চোখে পড়ল হাতি আর জিরাফের statue। দোলনাও আছে। আর একটু এগোতেই দেখলাম মাঝি ভাই আমাদের নিতে এসেছে। আমরা যখন দ্বীপ ছাড়লাম তাখন বাজে প্রায় পৌনে ১২ টা। পাড়ে এসে মাঝির টাকা মিটিয়ে জানতে চাইলাম এখানে দেখার মত আর কিছু আছে কিনা। মাঝি ভাই বলল, কাছেই ২ মিনিট মত এগোলেই পড়বে সিদ্ধেশরি মন্দির। তার কথা মত বেশ কিছুটা এগিয়েই একটা পুকুরের পাড়ে পড়ল সেই মন্দির। এই মন্দিরের দুই পাশে ছোট ছোট ছটি করে মন্দির আছে। এই গুলির একটিতে আছেন গণেশ ঠাকুর, অন্য গুলিতে আছে শিব লিঙ্গ। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়েই পাশেই গেলাম একটি পুরানো রাজ বাড়িতে। যদিও কেও থাকে না এখন। দোতলা রাজবাড়িতে উপরের তলায় ঘাস, আগাছা জন্মে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু একতলায় সদর দরজার মুখোমুখি কোন পূজার প্রস্তুতি চলছে দেখলাম। মাঝ খানে আবার এক সময় হাড়িকাঠে বলি হত দেখলাম। এখান থেকে আমরা ধরলাম বাড়ীর পথ। শেষে একটা কথা বলি, এটি পিকনিক স্পট হলেও একসময় এখানে লোকে ছুটি কাটাতেও আসত। তাই অন্তত একবেলা এখানে কাটিয়ে গেলে খারাপ লাগবে না। মনটাও ফ্রেশ হয়ে যাবে। বাংলায় লেখার সময় ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
বাঁকিপুট : The Virgin Beach
লকডাউন এ বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম, অতএব গন্তব্য দেশের বাড়ি (কাঁথির কাছে)। সেখান থেকে গুগল ম্যাপে হঠাৎই খোঁজ পেলাম বাঁকিপুট এর। দেখলাম, বেশি দূর নয় অতএব বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম দুই ভাইকে সঙ্গী করে। গুগল ম্যাপের নেভিগেশন ধরে প্রায় এক ঘন্টা যাওয়ার পরে আমরা পৌছে গেলাম বাঁকিপুট। আমরা এসেছিলাম রসুলপুরের দিক থেকে, আর আপনারা যারা কলকাতা থেকে আসবেন তারা কাঁথি হয় ঢুকলে সুবিধা হবে। কাছেই আরো কিছু tourist attraction আছে যেমন কপালকুণ্ডলা মন্দির, দারিয়াপুর লাইট হাউস, পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দর এছাড়া জুনপুট ও বগুড়ান জলপাই সমুদ্র সৈকত তো আছেই। বাঁকিপুট আমার ভীষণ ভালো লেগেছে, অদ্ভুত সুন্দর নিরিবিলি শান্ত একটা সমুদ্র সৈকত.. এই পোস্টে কিছু ছবি দিলাম
সবার দার্জিলিং বা সিকিম ঘুরতে যাওয়ার হিড়িক দেখে একটু কাছাকাছি অথচ অন্যরকম কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে প্ল্যান করে ফেললাম ঝাড়গ্রামে যাওয়ার। 'উঠলো বাই তো ঝাড়গ্রাম যাই' - খানিকটা এভাবেই আমাদের ঝাড়গ্রাম যাওয়া আসার টিকিট কাটা, ঘোরাঘুরির প্ল্যান সব ঠিক হয়ে গেল। বাবার এক বন্ধুর ওখানে চেনাজানা, তাঁর সূত্রেই ওখানে হোটেল আর গাড়ির ব্যবস্থাও খুব সুন্দরভাবে হয়ে গেল।
দেখতে দেখতে বেরোনোর দিন চলে এলো। বিকেল সাড়ে পাঁচটার টাটা-হাওড়া ফেস্টিভাল স্পেশাল ট্রেনে (আপাতত ইস্পাত এক্সপ্রেসের নতুন নাম) চড়ে বসলাম। আটটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম ঝাড়গ্রামে, সেখানে গাড়ি অপেক্ষা করছিল। স্টেশন থেকে মিনিট দু তিনেকের রাস্তা 'ডুলুং গেস্ট হাউস' অর্থাৎ আমাদের হোটেলের। ট্রেনে উঠে ফোন করে রাতের খাবারের কথা বলে দেওয়া হয়েছিল, তাই রাতে গরম গরম খাবার পেতে কোনো অসুবিধা হয়নি। খেয়েদেয়ে লম্বা ঘুম দিলাম, পরেরদিন সকাল থেকে প্রচুর ঘোরাঘুরি করতে হবে যে.. প্রথম দিন: প্রথম দিন সকাল নটা নাগাদ গাড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম গড়রাসিনী(গাড়রাসিনীও বলে) পাহাড় দেখতে, বেশ খাড়াই পাথুরে পথ। ওখানে বাসুদেব মন্দির, শিব মন্দির আর একটা ছোট গুহা রয়েছে (ঢোকা যায়না যদিও)। পাহাড়ের মাথা থেকে আশেপাশের দৃশ্য দারুণ উপভোগ্য। এরপর একে একে দেখলাম খান্ডারানি ড্যাম, ঘাঘরা নদী আর তারাফেনি ব্যারেজ। একেকটা জায়গা একেকরকম ভাবে সুন্দর। ঘোরাঘুরি সেরে সন্ধের মধ্যে হোটেলে ঢুকে পড়লাম। তারপর এমনি বেরিয়ে কাছাকাছি মার্কেটে একটু ঘুরে বেড়িয়ে এলাম। সেদিনের মত ঘোরা শেষ। দ্বিতীয় দিন: দ্বিতীয় দিন প্রথমে ঘুরতে গেলাম ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ি, যেখানে 'দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন' মুভির শুটিং হয়েছিল। পারমিশন ছাড়া ঢুকতে দেওয়া হয়না, তাই বাইরে থেকে দেখেই মন ভরাতে হল। এরপর গেলাম চিল্কিগড়, সেখানে একে একে দেখা হল কনকদুর্গা মন্দির, ডুলুং নদী আর চিল্কিগড় রাজবাড়ি। প্রত্যেকটা জায়গাই অপূর্ব! চিল্কিগড় রাজবাড়িতেও দুর্গেশগড়ের গুপ্তধন মুভির কিছু অংশের শুটিং হয়েছিল। চিল্কিগড়ের পাট চুকিয়ে রওনা দিলাম বেলপাহাড়ি। একে একে দেখে নিলাম জঙ্গলমহলের ঘন জঙ্গল, তপোবন (বাল্মীকি আশ্রম, তিলক পাহাড় আর সীতানালা), অতি প্রাচীন রামেশ্বর মন্দির আর সুবর্ণরেখা নদীর তীর হাতিবাড়ি এলাকা। এই জায়গাটা ওড়িশার বর্ডার এলাকার মধ্যে পড়ে, যদিও দেখে বিশেষ বোঝা যায়না। সেদিনের ঘোরাঘুরি এতটাই বেশি ছিল যে কেন্দুয়া পাখিরালয় দেখার আগেই সন্ধে নেমে গিয়েছিল, তাই যাওয়া হয়ে ওঠেনি। সেদিনের মত ঘোরাঘুরি সাঙ্গ করে হোটেলে ফিরলাম। তৃতীয় দিন: তৃতীয় দিন একটু বেলা করে বেরিয়ে টোটো বুক করে দেখতে গেলাম কংসাবতীর তীর সাতপাটি। কি সুন্দর জায়গা! ফেরার পথে ডিয়ার পার্ক বন্ধ থাকায় (বৃহস্পতিবার করে বন্ধ থাকে) বাইরে থেকেই দেখে চলে আসতে হল। এরপর গেলাম কন্যাডুবি তারা মায়ের মন্দির আর তার সংলগ্ন নার্সারি দেখতে। অপূর্ব জায়গা! সবশেষে গেলাম সাবিত্রী মন্দির দেখতে, ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির আরাধ্যা দেবী। পিছনেই আছে একটা জলাশয়, সেখান থেকে নাকি মল্লরাজাদের আমলের বহু পুরোনো নিদর্শন পাওয়া গিয়েছিল। সাবিত্রী মন্দির পাঁচটায় খোলে, তাই অপেক্ষা করতে গিয়ে কৃশ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান দেখা হয়নি, সন্ধে হয়ে গিয়েছিল। পরেরদিন সকালে সাড়ে সাতটার টাটা-হাওড়া ফেস্টিভাল স্পেশাল ধরেই হাওড়া এলাম সাড়ে দশটা নাগাদ। বিঃ দ্রঃ ১. ঝাড়গ্রাম দেখতে গেলে যাওয়া আসা মিলিয়ে চার পাঁচ দিন হাতে নিয়ে আসবেন। ২. স্নিকার বা পাম্প শু পরতে পারলে সবচেয়ে ভালো, না থাকলে কিটো। একদম ফ্ল্যাট স্যান্ডেল না পরাই ভালো। ৩. বেলপাহাড়িতে খাবারের দোকান একেবারেই তেমন ভালো না। মন খুঁতখুঁত করলেও উপায় নেই, ওখানেই লাঞ্চ করতে হবে। ৪. কিছু কিছু জায়গা খুবই ফাঁকা, তাই সাথে শুকনো খাবার আর জল অবশ্যই রাখবেন। ৫. বেলপাহাড়ি আর তপোবন যাওয়ার পথে সেভাবে কোনো টয়লেট নেই, পেট্রোল পাম্পের টয়লেটই ভরসা। নইলে জঙ্গলে কাজ সারা ছাড়া উপায় নেই। ৬. তারাফেনি ব্যারেজের উল্টোদিকে একটা খড়ের চালা দেওয়া ঝুপড়িতে খেজুর গুড় আর পাটালি বিক্রি হয়, বেশ ভালো খেতে। চাইলে কিনতে পারেন। বেলপাহাড়িতেও পাওয়া যায়, তবে তার স্বাদ অতটা ভালো না। ৭. কৃষ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান ঘুরতে বেশ সময় লাগে, তাই ওইদিন দূরে যাওয়ার প্রোগ্রাম রাখবেন না। আর যদি যান তাহলে কৃষ গার্ডেন আর ভেষজ উদ্যান দেখে বেরোবেন। ৮. কনকদুর্গা মন্দিরে প্রবেশমূল্য ১০ টাকা প্রতিজন।
চলুন ঘুরে আসি বাংলাদেশ এর তৃতীয় সর্ববৃহত পর্বতশৃঙ্গ(৩,২৩৫ ফুট) "কেওক্রাডং" থেকে!
প্রকৃতির অদ্ভুত রোমাঞ্চকর এক জায়গা!সর্বপ্রথম বান্দরবান থেকে রুমা সেখান থেকে বগালেক,বগালেক থেকে ট্রেক করে দার্জিলিং পাড়া আর দার্জিলিং পাড়া থেকে কেওক্রাডং বগালেক থেকে কেওক্রাডং ট্রেক করার পথে লতা ঝর্ণা আর চিংড়ী ঝর্ণা স্বাগতম জানাবে। যদিও যাতায়াত পথ ও ট্রেকিং একটু বেশি কিন্তু কেওক্রাডং এর চূড়ায় উঠার পর সব ক্লান্তি হার মেনে যায়। ট্রেক করার সময় পাহাড়ি লেবুর শরবত,পাহাড়ি কমলা,ক্যালসিয়াম টি,পাহাড়ি কলা এই ঠান্ডার মধ্যে পাহাড়ের সৌন্দর্য আর একটু বাড়িয়ে দেয়। কেওক্রাডং এ থাকার ব্যাপার এ বলি কটেজ যাবার আগে বুকিং দিয়ে তারপর যাওয়া ভালো নাহলে দার্জিলিং পাড়ায় থাকা লাগে যেখান থেকে কেওক্রাডং এর চূড়া ট্রেক দূরত্ব ৩০ মিনিট। শীতটাকে আর একটু প্রাণবন্ত করতে আর যান্ত্রিক গতিময়তা কাটিয়ে কেওক্রাডং এ সূর্যদয় ও সূর্যাস্ত দেখে আসুন।।
এবছর পুজোর পর বেরিয়ে পরেছিলাম বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে, 2 রাত 3 দিনের জন্য। অত্যন্ত দ্বিধার সাথেই স্বীকার করছি, সিকিম থেকে আন্দামান ইত্যাদি ঘুরে বেড়োলেও আমার অবস্থা ওই 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া'... শিশির বিন্দু না দেখা অবস্থা। সেই কারণে তো বটেই, আর তার সাথে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বেছে নিয়েছিলাম এই ট্রিপটা।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, গনগনি, মুকুটমণিপুর ইত্যাদি বাংলার মনিমুক্তার খবর তো সকলেই রাখে, কিন্তু এর সাথে আমরা জুড়ে নিয়েছিলাম একটি 'অফ-ট্রাক স্পট', বাঁকুড়ার বিকনা গ্রাম। প্রসঙ্গত এব্যাপারে আমি এই গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞ, কেননা এই গ্রামের কথা আমি এই গ্রুপেই জানতে পারি। ডোকরা শিল্পের প্রতি আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই, স্বাভাবিকভাবেই নিজের চোখে শিল্পীর শিল্পচর্চা দর্শনের সুযোগ ছাড়তে চাইনি। কিন্তু মুশকিল হল বিষ্ণুপুর পৌঁছেও যাকেই বিকনা গ্রামের কথা জিজ্ঞেস করি, আকাশ থেকে পরে। বুঝলাম পাঁচমুড়া গ্রামটি বেশ পরিচিত হলেও এখনও তেমন পরিচিতি পায়নি বিকনা। অগত্যা লাঞ্চ সেরে 'জয়বাবা গুগলনাথ' বলে বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে বিকনার উদ্দেশ্যে। বিষ্ণুপুর থেকে বিকনা যেতে সময় লাগলো ঘণ্টাখানেকের একটু বেশি। পিচঢালা রাস্তা থেকে তণ্বী রাঙ্গামাটির পথ খানিকটা গিয়ে মিশেছে তারই আরেক সহোদরার সাথে। তার দুই পাশেই গুটিকয়েক পরিবার বংশপরম্পরায় ধরে রেখেছে এই সুপ্রাচীন শিল্পকে। গালা আর মোমের সন্নিবেশে এবং দক্ষ হাতের কারসাজিতে আকার নিচ্ছে লকেট, বালা, পালকি, আদিবাসী, পেঁচা, ঘোড়া থেকে শুরু করে দেবদেবীর মূর্তি পর্যন্ত। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজের কারিগরি দেখতে দেখতে সময় কখনই যথেষ্ট মনে হবে না। সকলেই নিজেদের বাড়ির সামনে সাজিয়ে রেখেছেন তাদের শিল্পের পসরা, পড়ন্ত সূর্যের আলোয় যা সোনার মত ঝিলমিলিয়ে উঠছে। আমরাও সংগ্রহ করে এনেছি আমাদের সাধ্যমত কিছু, হাসিমুখগুলিকে কথা দিয়ে এসেছি পরেরবার বাঁকুড়া গেলে বিকনা গ্রামে আরেকবার পদার্পণ বাদ পরবে না। সাথে রইল কিছু ছবি আর অনুরোধ, বিষ্ণুপুর গেলে অবশ্যই যান একবার, নিরাশ হবেন না। প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা শুধু শিল্পীদেরই নয়, আমাদেরও সমান দায়িত্ব। ©Pallabi Saha
|| বিশাখাপত্তনম ও আরাকু ভ্যালি ভ্রমণ ||
কম সময়ের শ্রেষ্ঠ ঠিকানা। আমাদের ও হাতে সময় ছিলো খুবই কম, এই কম সময়ে মানে যাওয়া আসা নিয়ে পাঁচ দিনে কোথাও যাওয়ার কথা ভাবতে ভাবতে বেড়িয়ে পড়লাম ভাইজ্যাকের উদ্দেশ্যে। হাওড়া থেকে 14:40এ করমন্ডল এক্সেপ্রসে বিশাখাপত্তনাম মানে ভাইজ্যাকের উদ্দেশ্যে। পরের দিন ভোর 4:00টে পৌঁছালাম ভাইজ্যাকে। পৌঁছে একটু রেস্ট করে ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পড়লাম ভাইজ্যাকের আশপাশটা ঘুরে নিতে। সেদিনের খাতায় ছিলো ● INS Kurusura Submarine Museum :- এটা বিশেষ দ্রষ্টব্য সাবমেরিন মিউজিয়াম । (ফোন ক্যামেরার কোনো টাকা লাগে না তবে ক্যামেরার চার্চ লাগে) ● Rishikonda Beach :- ভাইজ্যাকের অন্যতম বীচ। এখানে স্নান করা যায়। ● Rama Krishna Beach :- যা আর কে বীচ নামে পরিচিত। সুন্দর পরিবেশ। দূরে দৃশ্যমান ডলফিন নোস। ● Kailasagiri :- এখান থেকে ভাইজ্যাক শহরটা বেশ ভালো ভাবে দেখা যায়। এছাড়া রয়েছে শিব ও দুর্গার মূর্তি। ● Visakha Museum :- এটি সমস্ত জাহাজের একটা মিউজিয়াম। ● Ramanaidu Film Studios :- অনেক সিনেমার শুটিং এখানে হয়। ভিউ আর দেখার বেশ ভালো জায়গা। সেদিনের মতো ঘোরা শেষ এবার হোটেলে এসে লম্বা ঘুম । আবার পরের দিন তোড়জোড়। পরের দিনে গিয়েছিলাম আরাকু ভ্যালি। সকাল বেলা রওনা হলাম আরাকু ভ্যালি। যাওয়ার সময় ট্রেনে গিয়েছিলাম। গাড়ি বুক করে ট্রেনে গিয়েছিলাম। গাড়ি আরাকু স্টেশনে অপেক্ষা করছিল আমরা ট্রেন থেকে নেমে তারপর পুরো আরাকুটা গাড়ি করে ঘুরে একেবারে ভাইজ্যাক এ ফিরে আসি, ট্রেন ও গাড়ি দুটো পথের মজাই উপভোগ করি। বৃষ্টির দিনে আরাকু ভ্যালিতে গাড়ি করে চলার পথের ভিডিও এই লিঙ্কে https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=449250602624856&id=200211414195444
ট্রেনে চলার পথে অনেক সুন্দর দৃশ্য এছাড়া রয়েছে অনেক টানেল। ভাগ্য ভালো থাকলে কাটিকী ঝর্না দেখার সুযোগও মিলতে পারে। সারাদিনে ঘুরে নিলাম :-
● Araku Tribal Museum :- বেশ সুন্দর একটা সাজানো জায়গা সেখানকার আঞ্চলিক অবস্থার ও একটা চিত্র তুলে ধরা আছে। ● Katiki Falls :- এটা জিপে করে যেতে হয় বেশ অনেকটাই পথ যদিও যাইনি। ট্রেনে যেতে যেতেও দেখতে পাওয়া যায়। ● Coffee plantation :- কফি গাছের চাষ। ● Borra Caves :- চুনা পাথরের গুহা। অনেক স্ট্যালাগটাইট স্ট্যালাগমাইট এর দর্শন মেলে। বেশ অনেকটা সিঁড়ি দিয়ে নেমে নীচে যেতে আর উপড়ে উঠতে হয়। ভিতরে অল্প আলো আছে আর বয়ে যাচ্ছে নদী। আর অবশ্যই bamboo chicken এর স্বাদ নিতে ভুলবেন না। এসবের মাঝে নিজের ঝুলিতে নিলাম কফি আর একগুচ্ছ ছবি। সেদিনের মতো ভাইজ্যাকে হোটেলে ফিরে আসা। পরের দিন, হিসেব মতো এটা ছিলো তৃতীয় দিন মানে আমাদের ভ্রমণের শেষ দিন, সেদিনই ছিলো ফিরে আসার ট্রেন। তাই দেরি না করে সকাল সকাল চলে গেলাম ● Vizag Port :- পোর্ট অঞ্চল। অনেক শুটকি মাছের দর্শন মিলবে। ● Simhachalam Temple, ● Light house,● Dolphin's Nose, ●Tenneti Park, ● Yarada beach:- বিশেষ ভাবে দ্রষ্টব্য জায়গা। সব বিচের মধ্যে সেরা। যেনো সমুদ্রের জল পাথরে ও পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পরে। ঘোরাঘুরি সেরে একটু কেনাকাটা করে সোজা হোটেলে। জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে রাতের খাওয়া সেরে স্টেশনের দিকে রওনা দিলাম। রাত দশটা, করমন্ডল এক্সেপ্রস, পরেরদিন সকালে ট্রেন প্রায় সময় মতোই এলো। নীচে রইল এই ভ্রমণের কিছু ছবি Pûjã Řõÿ
বহুদিন পর একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচার জন্য গেছিলাম গুরদুম ও চিত্রে । আর ফেরার সময় ঘুরে এলাম আমার প্রিয় শহর দার্জিলিং। দার্জিলিং বহুবার গেছি তাই সেই নতুন কিছু বলছি না। তবে গুরদুম ও চিত্রে তে backpackers camp এ থাকার নতুন অভিজ্ঞতা মনে রাখার মতো। প্রথমে njp থেকে গাড়ি নিয়ে সোজা চলে গেলাম গুরদুম। গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে বেশ খানিকটা রাস্তা চোরাই উঠে পৌছালাম এই ছোট্ট সুন্দর গ্রামে। ক্যাম্পটি দেখে অসাধারণ লাগলো। কিছু টেন্ট ও দুটো campers van । সাথে homestay এর ব্যবস্থাও ছিলো। আমরা ছিলাম homestay এর রুমে। চারদিকে সবুজে ভরা গাছ পালা , গাঁদা ফুল ফুটে রয়েছে, দূরে দেখা যাচ্ছে মেঘেদের মাঝে পাহাড়, আর আমাদের হোস্ট দের আতিথেয়তা , সব মিলিয়ে মন খুশি করে দেওয়া এক পরিবেশ। একটু সন্ধে হতে টেন্ট এর পাশে ক্যাম্প চেয়ার এয় বসে শুরু হলো barbeque । বেশ ঠান্ডার মধ্যে আগুন এর পাশে বসে চিকেন খেতে খেতে আর নগেন ভাইয়া ( ক্যাম্পের ইনচার্জ ও গাইড) এর ট্রেক এর গুল্প শুনতে শুনতে কখন যে সময় পেরিয়ে গেলো বোঝা গেলো না। গুরদুম এ রাত টা কাটিয়ে পরেরদিন সকালে বেড়িয়ে পড়ি চিত্রে এর জন্য ৫কিমি ট্রেকে। সেটা নাহয় পরের পোস্ট এ লিখছি। আপাতত রইলো গুরদুম এর কিছু ছবি। কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্স এ জিজ্ঞেস করতে পারেন।
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |