একদিনের জন্য ঘুরে আসুন বেলুড় মঠ দক্ষিণেশ্বর . শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ দেবের উপাসনা গৃহ আর শ্রী বিবেকানন্দ নির্মীত মঠ . আমাদের প্রথম গন্তব্য ছিল বেলুড় মঠ. গাড়ি পার্ক করে গিয়ে দেখি গেট বন্ধ. খুলবে বিকাল 4 টে. লঞ্চে করে পৌঁছে গেলাম দখিণেস্র. আগের মোটর চালিত বোট বদলে এখন আধুনিকতার ছোঁয়া . পৌঁছে দেখি কালি মন্দির পুরোপুরি কর্পোরেট. ঝাঁ চকচকে skywalk. লাইন দিয়ে কাউন্টার. মোবাইল ব্যাগ জুতা সব জমা দিয়ে ঢুকতে হবে. সময় কম থাকার কারণে বাইরে থেকেই প্রণাম জানালাম মা কে . একে আজ কালীপুজা তায় বেজার ভীড়. পাশের পুকুর টা মনোরম. টিফিন করে আবার লঞ্চে ফিরে গেলাম বেলুড় মঠ . বেলুড় মঠ কিন্তু খুব বেশি পরিবর্তিত হয় নি . মাতৃ মন্দির, মূল মন্দির একই আছে . গঙ্গা পারে মনোরম পরিবেশে বসে থেকে সব মন্দিরে প্রণাম সেরে হাজির হলাম মূল মন্দিরে. বিকাল 5:35 থেকে আরতি শুরু. আত্মার সাথে মিলন ওই খণ্ডন ভব-বন্ধন জগ-বন্দন বন্দি তোমায় সোনায়. গায়ের রোম খাঁড়া হয়ে যায় , সময় শেষ হয়ে যায় . এবার ফেরার পালা. তোমার চরণে মাথা ঠেকাতে আবার যেন আসি প্রভূ.
0 Comments
কোচবিহারের কিছু কথা---
অফিসের কাজে তিন দিনের জন্য গিয়েছিলাম কোচবিহার। ট্রেনেই যেতে যেতে খসড়াটা করে ফেললাম চার সহকর্মী। কাজের ফাঁকে এক দিন বের করে কোথায় ঘুরে আসা যায়। যা দেখলাম বক্সা জয়ন্তী রাজাভাতখাওয়া সাথে যদি বোনাস হিসেবে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে একটা সাফারি ম্যানেজ করা যায় মন্দ হয় না। নিউ কোচবিহার স্টেশনে নামলাম যখন ভোর 3টে। VIP ওয়েটিং রুম এখানে খোলা থাকে না। Enquiry অফিসে বললে খুলে দেয় AC টিকেট থাকলে। একটু সময় কাটিয়ে ফ্রেশ হয়ে রওনা দিলাম অতিথিনিবাসের উদ্দেশ্যে। তিন দিন ওখানেই থাকার ব্যবস্থা। রুমের নাম কালজানি। সব রুম গুলোই উত্তরবঙ্গের এক একটি নদীর প্রতীকী। ছিমছাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বেশ ভালোই লাগলো। পুরো কোচবিহার শহর জুড়েই এক রাজকীয় ছোঁয়া। বেশির ভাগ প্রশাসনিক ভবনগুলিই পুরণোদিনে রাজবাড়ীর দপ্তর ছিল বলে মনে হয়। কাজ সেরে সন্ধ্যে বেলাই এসে একটা গাড়ি বুক করে নিলাম পরেই দিনের জন্য। কোচবিহার থেকে সোজা জলদাপাড়া ওখানে 3টের সাফারির টিকিট বুক করে বেরিয়ে যাবো বক্সা টাইগার রিজার্ভ। দরদাম করে ঘুর পথে একটু হেঁটে ফিরে এলাম কোচবিহার রাজবাড়ীর সামনে দিয়ে। সকালে বেরিয়ে পড়লাম ডুয়ার্সের উদ্যেশে। কোচবিহারের রাস্তা ঘাট প্রশংসার দাবি রাখে। পিচকালো রাস্তার ওপর দিয়ে আমাদের swift dzire ছুটে চলেছে এক শৃঙ্গ্ গন্ডারের প্রাকৃতিক বাসস্থানের দিকে। জলদাপাড়া অভয়ারণ্য পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে 216 বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। এরই সংলগ্ন চিলাপাতা আর বক্সা টাইগার রিজার্ভ। চিলাপাতা বুক চিরে রাস্তা চলে এলো জলদাপাড়াতে। সাফারির জীপ বুক করে পরোটা ঘুগনি রসগোল্লা সহযোগে প্রাতরাশ করে বেরিয়ে পড়লাম বক্সার উদ্যেশে। বক্সার এন্ট্রিতে টিকিট কেটে ঢুকলাম বক্সার বুকে। অরণ্যের নিস্তব্ধতা ভেঙে গাড়ি এসে দাঁড়ালো রাজাভাতখাওয়া মিউজিয়ামে। এরপর জয়ন্তী। দূরের পাহাড়ের সারির হাতছানি। স্থানীয়রা বলে "ভুটান দেশের ভুটান পাহাড়". ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর দূরে জঙ্গলের ভেতরে কোনো অজানা মন্দিরের অনবরত বেজে চলা ঘন্টা। চালককে জিগ্যেস করতে বললো "দাদা ওটা একটা পোকা আসে।" গাড়ি এসে থামল জয়ন্তীর তীরে জয়ন্তী গ্রামে। ঠিক যেমন ছবিতে দেখা। একটি শীর্ণ নদী, সাদা বালির চর, সবুজে মোড়া, পাহাড় নীল আকাশ। এখানে একরাত থাকার এক রাশ আশা নিয়ে ফিরে এলাম। দুপুরে "কাতল" মাছের ঝোল ভাত খেয়ে জলদাপাড়া ঢুকলাম পৌনে তিনটে নাগাদ। সাফারির গাড়ি নম্বর চারে চেপে বসলাম। গাইড ড্রাইভার ছাড়াও আমরা 6 জন। জঙ্গলের শুরুতেই স্বাগত জানালো একাকী এক বার্কিং ডিয়ার। দূরে ডেকে চলে যাচ্ছে জলদাপাড়ার খ্যাতনামা Malabar pied hornbill. চারিদিকে ময়ূরের চারণভূমি। সর্বমোট চারটে ভিউ পয়েন্ট। প্রথম ভিউ পয়েন্টেই দেখা মিললো greater one-horned rhinoceros বা great Indian rhinoceros এর। পিঠের উপর এক নীলকন্ঠ আর ফিঙেকে বহন করে সাভানা ঘাসের ভোজনে ব্যস্ত মহারাজ। Elephant Safari তে ব্যবহৃত কিছু হাতির দেখা মিললেও বুনো হাতির দেখা পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ভিউ পয়েন্টে এসে দেখা পেলাম বুনো শুয়োর আর Red-watted Lapwing এর। হটাৎ খবর এক যে তৃতীয় ভিউ পয়েন্ট অর্থাৎ হলং বাংলোতে বাইসনেরা সদলবলে এসেছে। গিয়ে দেখি ঠিক তাই। পরিখার এপাশ থেকে বসে দেখা যাচ্ছে বাইসনের দল আর এক জোড়া ময়ূর। হলং বাংলোর মহিমাটা আজ পুরোটা বুঝতে পারলাম। চতুর্থ ভিউ পয়েন্টটা শুধুমাত্র সন্ধ্যের সাফারিতে দেখানো হয়। আসামের বিহু নাচ। 5 টে লোকনৃত্য পরিবেশিত হয়। জীবনের একটা স্মরনীয় সন্ধ্যে কাটিয়ে ফিরে এলাম কালজানি তে। পরের দিন সকালে গিয়েছিলাম কোচবিহার প্যালেস আর মদন মোহন মন্দির। ফিরতে ফিরতে অর্ধাঙ্গিনীর "কেমন ঘোরা হলো?" এর উত্তরে একটু তাই কবিসত্ত্বা জাগিয়ে লিখেই ফেললাম, আমার ভ্রমনাক্রান্ত মন, বিষন্ন হয়েছে যখন। আমি ঘুরেছি আমি দেখেছি, এক পাহাড়ের কোলে নদী আর মেঘেদের মাঝে জীবন। টুকিটাকি তথ্য :- 1. কোচবিহার গেলে থাকতে পারেন জেলা পরিষদ গেস্ট হাউসে অর্থাৎ অথিতিনিবাসে। বুকিং লিঙ্ক http://www.coochbeharzillaparishad.in রুম- Rs. 450/- to Rs. 1500/- বুকিং অনলাইনে। 2. হলং বুকিং অনলাইন। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে থেকে করতে হয়। Wildlife valo lagle lifetime experience guaranteed. এছাড়া জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে।https://www.wbtdcl.com 3. বক্সা , জয়ন্তীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। বক্সার entry fee Rs 100/- জন প্রতি। car 300/- (প্রতিদিন) Bike 20/-(শনি রবি বন্ধ) ।wild animal হাতি ছাড়া পাওয়া চাপের। 4 . জলদাপাড়াতে সম্ভাবনা বেশি। *3টের সাফারি recommanded। Rs. 2400 per জীপ ছয়জন max। পরিচয়পত্রের xerox must। 5. phuentsholing(ভুটান) ও কোচবিহার থেকে ঘোরা যায় । পরিচয় পত্র রাখবেন। 6. কোচবিহার রাজবাড়ী 10 টা 5 টা খোলা। টিকিট Rs. 25/-
"টিলায় ভিলায় শিমুলতলায়"
।। আরোগ্য নিকেতন।। """""""""'"'""""" "এই ওঠ!-ওঠ!-ওঠ!-আর বলবেন না!! এই ভাবেই আমাকে রোজ ওকে ওঠাতে হয়"!!! ----না, না এটা আমার কথা নয়।আমি বলছি সেই মহাপুরুষ "বিরিঞ্চি বাবা"র কথা! এখনো মনে পরলো না!তাহলে একটু খোলসা করেই বলি। ১৯৬৫সালে সত্যজিৎ রায় যে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন"মহাপুরুষ"সেই বিরিঞ্চি বাবা। তিনি রোজ সূয্যি মামাকে এই ভাবেই ঘুম ভাঙ্গিয়ে তুলতেন।সেই চলচ্চিত্রের সুটিং হয়েছিল এই শিমুলতলাতেই। আজ আমার কলমে বাঙ্গালীর সেই বিখ্যাত পশ্চিম শিমুলতলার কথাই বলতে এসেছি। ছবি তোলার নেশা সেই সময় আমার ছিল না বললেই চলে। তাই ছবি সেরকম দিতে পারলাম না।কয়েকটা সংগ্রহ করে তাই দিয়ে দিলাম। কিন্তু ঘোরার নেশা ওই যে কথা আছেনা! ---- "উঠলো বাই তো কটক যাই"। এই বাক্যটিকে যৌবনে একেবারে আপ্তবাক্য মেনে চলতাম। ব্যাগ প্রায় গোছানোই থাকতো,শুধু মনের মত সঙ্গী পাওয়ার অপেক্ষা।পেলেই ওয়ান-টু-থ্রী। সেবার পাঁচজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম হোলিটা এবার কাটাবো শিমুলতলায়।ব্যাস!নির্দষ্ট দিনে ট্রেন ধরে ফেললাম।রেল কলোনীর ছেলে হওয়ার সুবাদে চালক থেকে গার্ড,টিকিট পরীক্ষক সবাই কাকু। ওনারাও আমাদের এই বাউন্ডুলেপনাকে একটু বেশিই প্রশ্রয়ও দিতেন। গার্ডভ্যানে চেপে প্রায় অন্ধকার থাকতে থাকতেই পৌঁছে গেলাম শিমুলতলা। সূর্য তখনও উঠেনি।আধো অন্ধকারে ডুবে ছোট্ট ষ্টেশনের বাঁ দিকে একটা জায়গায় কয়েকজন লোক আগুন তাপছে। আমাদের মধ্যে এক বন্ধু আগে এখানে এসেছিল,সেই নিয়ে চললো। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আস্তে আস্তে জেগে উঠতে শুরু করেছে শিমুলতলা।একটা বড় মাঠের মত জায়গা,শেষ মাথায় দূরে একটা স্কুল বাড়ি। রেল গেটের কাছে চা এর দোকানে চা খেয়ে পাশের ডেকরেটারের দোকানে পৌঁছে বন্ধু খোঁজ চাইলো "বিরিঞ্চি"র। না,না,এই "বিরিঞ্চি" সেই "বিরিঞ্চি" নয়!! এ এক বাংলোর কেয়ারটেকার।যথাসময়ে তাকে পাওয়া গেল,ডেকোরেটরের দোকানে প্রয়োজনীয় লেপ কম্বল, হ্যাজাক,বাসন কোসন এর অর্ডার দিয়ে চললাম "বিরিঞ্চির" সাথে। শাল ,সেগুন,মহুয়া,পলাশ, শিমুল ঘেরা লাল মোড়ামের পথ ধরে নির্দিষ্ট ঠিকানায়। ওরে বাবা!এতো দেখছি পেল্লায় বাংলো। বড় গেট,উঁচু পাঁচিল ঘেরা,কয়েক বিঘা জায়গা জুড়ে। রয়েছে হরেক রকমের ফল ফুলের গাছ। আর একটা বড় পাড় বাঁধানো গভীর কুয়ো। এর জলেই খাওয়া রান্না মায় স্নান করা। আপাতত স্নান করেই রাতের ক্লান্তি মিটিয়ে নিলাম। সারা রাতই প্রায় ঘুম হয়নি,ডেকোরেটরের মাল পোঁছাতেই একটু গড়িয়ে নেওয়ার ইচ্ছে হোলো। বিরিঞ্চিও চলে গেলো টিফিন ও বাজার আনতে। রান্না বান্না সব ওই করবে।চারদিকে এই রকম আরও কয়েকটা পেল্লায় পেল্লায় বাংলো। কোনো কোনো টার ভেতরে মানুষের সারা পেলাম,একটাতে দেখলাম দুটো বাচ্চা ছেলে ব্যাটমিনটন খেলছে।ঘোরার লোক ঐআমাদেরই মত আর কি!! এই বাড়ি গুলো সব কলকাত্তাইয়া বাবুরা স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য এক সময় তৈরি করেছিলেন। উনিশ শতকে ১৮৫৪ সালে হাওড়া--রানীগঞ্জ ট্রেন চলাচল পরেই কলকাতার বাবুদের স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য পশ্চিমে যাওয়ার তাগিদ থেকেই মধুপুর-গিরিডি-শিমুলতলায় যা একসময় সাঁওতাল পরগনাই ছিল,সেইসব জায়গায় এই বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি তৈরি করিয়েছিলেন। ইংরেজরা যদি দেরাদুন-মুসৌরি-ডালহৌসি যেতে পারে তাহলে সেই সময়ের বাঙালি বাবুরাই বা পিছিয়ে থাকবেন কেন! স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য যেমন এখানকার জল ও জলহাওয়া উপযোগী,তেমনই ছিল "ড্যাম চিপ"এখানকার সব জিনিসপত্র। সেই ড্যাম চিপ কথা থেকেই হয়তো "ড্যাঞ্চি বাবু" কথাটার প্রবর্তন। এক সময় এই সব জায়গা কে বাঙ্গালীর "আরোগ্য নিকেতন"ও বলা হোতো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও দেখার মধ্যে এখানে আছে নলডাঙ্গার রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ। পাথরের ওপর দিয়ে তির তির কোরে বয়ে চলা চলা সুন্দর সুন্দর পাহাড়ি ঝোড়া।খুব সুন্দর লাগবে যখন আপনি লাট্টু পাহাড়ের ১০০০ফুট উচ্চতায় ওপর দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য দেখবেন। পূর্নিমার চাঁদ উঠেছে! আমরা চাদর পেতে সামনের বারান্দায় গিয়ে বসলাম টিফিন সহযোগে,ওদিকে হ্যাজাক জ্বালিয়ে রাতের খাবার তৈরিতে ব্যাস্ত বিরিঞ্চি,ঘরে ঘরে মোমবাতি।দুরের গ্রাম থেকে ভেসে আসছে হোলির গানের সুর আর বাজনার আওয়াজ।হোলি যে এসে গেছে দোরগোড়ায়। মনে পরে গেল এই শিমুলতলাতেই সুটিং হওয়া তরুন মজুমদারের সেই বিখ্যাত ছবি "দাদার কীর্তি"তে শক্তি ঠাকুরের গাওয়া সেই গান:- "এলো রে এলো রে এলো হোলি এলো রঙ্গে রঙ্গে মন প্রান রাঙ্গা রাঙ্গা হোলো রে" শুনেছিলাম শিমুলতলায় ভুত আছে। রাতে খেতে বসে বিরিঞ্চি কে জানতে চাইলে ও বললো :- "ইহা ভুত ক্যাহা রহেগা,আদমী রহেনে কে লিয়ে জায়গা কম পর রাহ্যা হয়,তব্ হ্যাঁ! জঙ্গল পার্টি জরুর হ্যায়,আপ লোগ ফিকর মত কিজিয়েগা ,হ্যাম হ্যায় না"।। পরের দিন ভোরবেলায় উঠে চলে এলাম ঐ পাহাড়ি ঝোড়াটার কাছে,পা ভিজিয়ে ওকে বন্ধু কোরে এগিয়ে গেলাম বিরিঞ্চিদের গ্রামে। সারাদিন বাংলোর বারান্দায় ও সামনের রাস্তায় হোলির আনন্দে মেতে মনটাকেও সেই রঙ্গে রঙ্গিন করে রাতে আবার ট্রেন ধরলাম। বিদায় শিমুলতলা।
তার কথা অনুযায়ী আমরা বেরিয়ে পড়লাম 'Mankardadian Waterfalls' এর পথে ... কোথাও বা মসৃণ , কোথাও বা চড়াই - উৎরাই পথ পেরিয়ে পৌঁছলাম 'মানকরদিয়য়'. রুক্ষ লাল মাটির ওপর দিয়ে যত উপরে উঠতে থাকি - দু- চোখ জুড়িয়ে যেতে থাকে - সবুজ পাহাড় আর জঙ্গলে ঘেড়া - স্শ্বেত শুভ্র ঝর্ণার জল আর তার নীচে নুড়ি পাথর বিস্তৃত ঝরে পড়া ঝর্ণার সবুজ জল এর দিকে চেয়ে ...কিছুতেই আসতে ইচ্ছে করছিলো না. বিকেল গড়িয়ে যখন 4:30-টে - ড্রাইভার সাহেব বকাবকি করলেন গাড়িতে উঠে পরার জন্য .. জায়গাটি মাওবাদী অঞ্চল ও জঙ্গলের পথ তাই সূর্যের আলো থাকতে থাকতে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন ..
গাড়ী করে যেতে লাগলাম ... খানিকটা পথ এসে চোখে পড়লো কোথাও ভূট্টা , কোথাও বা ধান চাষের ক্ষেত , দু একটি মানুষ গরু -মোষ চড়িয়ে ফিরছে নিজের খেয়ালে .. ড্রাইভারজি গাড়ি থামিয়ে নামলেন ভুট্টা কিনতে ... সেই দেখে আমরা ও নামলাম ... ড্রাইভেরজি ইশারা করলেন এটি- ই হলো সেই 'ট্রাইবাল ভিলেজ ' .. কী অদ্ভুত সরল জীবনযাত্রা এদের ... বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে এদের কোনো দেনা-পাওনা নেই ... নিজেদের রুক্ষ - খেটে খাওয়া জীবন এর প্রতি-ই এরা নিবেদিত প্রাণ ... ভাবা যায়!! 2 কেজি. ভুট্টার দানা মাত্র 32/- টাকায় বস্তাবন্দি করে গাড়িতে তুললাম .. (আমরা যারা শহরের শপিং মল থেকে ভুট্টা কিনি তাদের অত্যন্ত লজ্জা বোধ হবে বৈকি.. সত্যের মুখে দাঁড়ালে সাজানো জীবনযাত্রা ফিকে মনে হতে বাধ্য ) পুচকি একটা শ্যামবর্ণা মেয়েকে যেই বললাম আমার সাথে ছবি তুলতে সে তার কি হাসি .. গোল-গোল ছোটো-ছোটো হাতগুলো মাথায় দিয়ে চুল ঠিক করে নিলো ... হঠাৎ কোথা থেকে একটা আদিবাসী দিদা এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো "এতো ভুট্টার দানা নিয়ে গিয়ে কি করবে ?" আমি বললাম , " কি আর করবো খাবো !" তখন ছুটে ছুটে গিয়ে আমার জন্য চারটে আস্ত ভূট্টা এনে দিয়ে বললো -'পুড়িয়ে খেয়ো'.. আমার 'বাবা' জিজ্ঞেস করলেন ''ইসকে লিয়ে কীটনা মা জি ?" বললো - "আইসে হি দিয়া বাবু , পেয়ার সে .. মন কিয়া ইসিলিয়ে , পায়সা কুছ নাহি চাহিয়ে " - শুনে মন টা এক মিশ্র অনুভূতিতে ভোরে গেলো .. আর দিদা র পাশের আদিবাসী দাদু টা বললো -'আর একটু সকাল সকাল এলে আরো ভালো ভুট্টা দিতে পারতাম..ক্ষেত থেকে তুলেছিলাম সব বিক্রি হয়ে গেছে' .. মনে মনে ভাবলাম -সত্যিই গো তোমাদের ভালোবাসা বোঝা এত সহজ কথা নয় .. আমরা শহুরে মানুষ এত টাটকা নির্ভেজাল ভালোবাসা পাই কোথায় ! যে চিনতে পারবো ! বোঝা তো দূর ... একরাশ সারি করে দাঁড়িয়ে থাকা কালো কালো মিষ্টি হাসিমুখগুলো কে হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে উঠে পড়লাম গাড়িতে ... আর মনে মনে বললাম - থাকো থাকো তোমরা বেশ এমনটাই থাকো ... এতখানি নির্ভেজাল ভালোবাসা পৃথিবীর কোনো কোনো কোণে বেঁচে আছে বলেই না ... তোমাদের এই অজানা- অচেনা পৃথিবীতে এইটুকু সময় কাটানো, আমাদের মনের খানিকটা দূষণ মুক্ত করতে সক্ষম হয় ... গাড়ি ছুটে চললো আদিবাসী গ্রাম এর পথ পেরিয়ে শহুরে যান্ত্রিকতার টানে .. আবার জীবন যুদ্ধের ইঁদুর দৌড়ে নেমে পড়ার ব্যাস্ততা ফুটে উঠলো সকলের মধ্যে ... গাড়ি ছুটে চললো স্টেশনের দিকে ... শুধু সঙ্গে চলতে লাগলো পড়ন্ত সূর্যটা ...আর পড়ন্ত সেই সূর্য পৃথিবীকে দিনের শেষ আলো দিতে- দিতে আর ডুবতে-ডুবতে বলতে লাগলো - "এ শুধু ব্যাস্ত জীবনের ফাঁকে দু দিনের ছুটি কাটানোর ভ্রমণ নয় রে ! কোনো কোনো ভ্রমণ অন্তরের শিক্ষা কেও আলোকিত করে তোলে !" আর তাই জন্যই এই এক - ই পৃথিবীতে এক-ই সূর্য রোজ নতুন করে ওঠে , মানুষ এর মধ্যে কিছু নতুন ,সুস্থ পরিবর্তনের আশায় ... ? কিভাবে যাবেন : হাওড়া/কলকাতা শালিমার/ অথবা সাঁতরাগাছি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ব্রহ্মপুর স্টেশন এ যেতে হবে . পুরী থেকে যদি যান তবে এ ও আগে ব্রহ্মপুর স্টেশন এ পৌঁছে , ট্যাক্সি অথবা যে কোনো গাড়ি করে তপ্তপানী যেতে হবে . কোথায় থাকবেন : অতি অবশ্যই OTDC এর পান্থনিবাস এ থাকবেন . স্বল্প খরচে মনোরম পরিবেশে থাকা - খাবার ব্যবস্থা পাবেন .
PANTHANIVAS TAPTAPANI
Pudamari, Ganjam - 761014 Phone: 06816-255031,06814-211631 email: [email protected] Suite @ Rs.3960/- Log [email protected]/- AC [email protected]/- AC [email protected]/- Non AC [email protected]/- Non AC [email protected]/- N.B. : The tariff includes complementary Bed Tea & Breakfast. GST as applicable Extra Bed AC @ Rs.450/- only. Extra Bed Non - AC @ Rs.250/- only. Complimentary Breakfast for the extra person. https://www.otdc.in/taptapani.html
এবার এসেছি সারান্ডায়(২৩ থেকে ২৬শে জানুয়ারি)। সাতশো পাহাড়ের দেশ থেকেই সারান্ডা শব্দের উৎপত্তি। তারই অংশ কিরিবুরু আর মেঘাতুবুরু। হো ভাষায় মেঘাতুবুরু কথার অর্থ জমাট বাঁধা মেঘেদের মতো জমাটি বুরু অর্থাৎ জঙ্গল। তেমনই ছিল কিরিদের বুরু অর্থাৎ পোকাদের জঙ্গল কিরিবুরুতে। যমজ দুই গঞ্জ শহরের অবস্থান পাশাপাশি একই শৈলশিখরে সারান্ডার জঙ্গলে। মেঘাতুবুরুতে বোকারো স্টিল আর কিরিবুরুতে কিরিবুরু আয়রন ওর কোম্পানির কারখানায় পাথর গুঁড়িয়ে লোহা মেলে। সেই লোহা যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন ইস্পাত প্রকল্পে।
সারন্ডা বন সীমান্ত উভয় রাজ্য ওড়িশা ও ঝাড়খন্ড সীমান্তে অবস্থিত। সারন্ডা মানে হঠাৎ এই ঘন বনভূমির মধ্যে বিশাল সংখ্যক হাতির উপস্থিতির কারণে হাতির নাম পাওয়া যায়। সেইল (স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড) কর্তৃক পরিচালিত আয়রন ওরস্ খনিগুলির উপস্থিতির কারণে ঝাড়খন্ডে অবস্থিত কিরিবুুরু এবং মেঘহাতুবুরু সারান্ডা বন বরাবর সবচেয়ে পরিচিত গন্তব্যস্থল। যদিও এই জায়গায় পর্যটনের সাথে সম্পর্কিত ইন্টারনেটে খুব কম তথ্য উপস্থিত থাকার কারণে, প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের প্রথমে কিছুটা সংগ্রাম করতে হয়েছিল। এখানে আমরা এসেছি সকালে হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেসে মনোহরপুর ষ্টেশনে, মনোহরপুর গঞ্জ শহরটি বেশীরভাগ খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বাস। এখানে আমাদের জন্য রিসর্ট থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল। এখানে আমরা উঠেছি “সন্তুর গেস্ট হাউসে”। মনোহরপুর গঞ্জের মধ্যে একটা সুন্দর রিসর্ট। রিসর্টের তত্বাবধায়ক/অধিকর্তী শ্রীমতী মঞ্জুষা গাঙ্গুলি। এত সুন্দর তার অতিথি আপ্যায়ন যেটার কোনো তুলনা হয়না। পুরোপুরি ঘরোয়া পরিবেশে থাকা ও খাওয়া। প্রায় দুই একর জমির ওপর সবরকম গাছগাছালি দিয়ে সাজানো এই রিসর্ট। কাছাকাছি ঘোরার জায়গা কিরিবুরু ও মেঘাতুবুরু জঙ্গলের ভেতরে সুন্দর কয়েকটা ফলস্ ও কোয়েল নদী ও কোয়েনা নদীর সঙ্গম এবং কোয়েল নদী ও কোরা নদীর সঙ্গম। যারা প্রকৃতি প্রেমিক তাদের কাছে এটি একটি সুন্দর জায়গা। আবার যারা একসাথে ১২-১৩ জনের গ্রুপে বেড়ানো পছন্দ করেন তাদের কাছে রিসর্টে বসে আড্ডা মেরে সময় কাটানোর পক্ষে দারুন জায়গা। একসাথে ২০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রথম দিন আমরা এখানে “শমিজ আশ্রম”(শঙ্করাচার্যের আশ্রম) দেখতে গেলাম, যেখানে কোয়েল ও কোরা নদীর সঙ্গমস্থল। দ্বিতীয় দিন মেঘাতুবুরু ও কিরিবুরুর জঙ্গলের ঘুরে ঝিঙরি ফলস্ ও পাচরি ফলস্ দেখে এলাম। খুব ভালো লাগে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে।বিকেলে কিরিবুরুতে “SAIL” এর এলাকার ভেতরে সুন্দর একটা সান সেটা ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অপূর্ব। তৃতীয় দিন যাওয়ার কথা ছিল থোলকাবাদ কিন্তু CRPF এর অনুমতি না পাওয়ার দারুন সারাদিন রিসর্টে জমিয়ে আড্ডা হল ও বিকেলে মনোহরপুর গঞ্জ ঘুরে দেখলাম। চতুর্থ দিন আজ (২৬শে জানুয়ারি) ইস্পাত এক্সপ্রেসে ফিরে এলাম।
"বয়স হোক আট কিংবা আশি ।
চলো সময় পেলেই ঘুরে আসি ।।" বাঙালি আর ভ্রমণ একে অপরের পরিপূরক।বাঙালি ঘুরতে ভালোবাসে না এই রকম খুঁজে পাওয়া মুশকিল।আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তাই 26 শে জানুয়ারির ছুটিতে মোট 6 বন্ধু বেড়িয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে।কলকাতা থেকে গেছি 3 জন আর বাকি 3 জন ওখানকারই।সকাল 6.55 এর হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেস এ উঠে পড়লাম আমরা তিনজন। ঠিক 9.20 তে নেমে পড়লাম ঝাড়গ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ।সেই দিনের আকাশ বেশ কুয়াশাচ্ছন্ন। সেই দেখে মন খানিকটা বিষণ্ণ ।পাহাড় এ যাবো কিন্তু চারপাশ পরিষ্কার না থাকলে হয়?? যাই হোক এই সব ভাবতে ভাবতে বন্ধুর ফোন আসে । ওরাই ওখানে আগে থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে রেখেছিল ।আমরা যেতেই স্টেশনে টিফিন সেরে ঠিক 10টার সময় বেড়িয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে ।সেই কলেজের পর দেখা বাকি 3 জনের সাথে । শুরু হলো মজা, ঠাট্টা। সাথে জানলা দিয়ে দেখতে থাকলাম গোটা ঝাড়গ্রাম কে । অনেকে একে জঙ্গল মহল বলে। তাই বটে চারপাশ শুধু শাল আর শাল গাছের সারি। কোন সিনেমার চেয়ে কম নয় ।মাঝে মাখনের মত রাস্তা আর দুপাশে শালের বন ।গাড়ি 90 এর কম যায় না।। মাঝে বাধ্য হলাম ড্রাইভার কাকুকে থামিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি তুলতে।এই ভাবে ঢুকে পড়লাম বেলপাহাড়ি। ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি প্রায় 45 কিমি । তবে আমাদের প্রথম গন্তব্য গাডরাসিনি পাহাড় । সেখান থেকে আরো 12 কিমি প্রায় । পাহাড়ি রাস্তায় একে বেঁকে পৌঁছালাম গাডরাসিনি ।গাড়ি থেকে নেমে প্রায় 30 মিনিট এর একটা ছোট ট্রেক। উঠতে হবে পাহাড়ের চূড়ায় । পাথুরে মাটি আর বেশ চড়াই রাস্তাটা। তবে রোমাঞ্চ প্রতি পদে পদে। শেষে চড়লাম শিখরে ।ততক্ষনে আকাশ একটু পরিষ্কার হয়েছে। সুদূর ঘাটশিলা দেখা যায় ওই চূড়া থেকে । খানিকক্ষণ থেকে ছবি তুলে নেমে এলাম নীচে । যাদের পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা নেই তাদের কাছে এটা একটা নতুন রোমাঞ্চের জায়গা। পাহাড় থেকে নেমে আবার গাড়িতে উঠলাম । এবার আমাদের পরের গন্তব্য ধান্দারানী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যার তুলনা হয়না ।একদিকে বাঁধ । অন্য দিকে জল আর পাহাড় । জলে দেখা যাচ্ছে বালি হাঁস । যে পাখি আজ প্রায় বিরল ।সেখানে খানিক ক্ষণ দেখে আবার ফিরে এলাম বেলপাহাড়ি।সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা হলাম ঘাঘরা । ছোট্ট একটা জলপ্রপাত ।দূর থেকে বয়ে আসা ছোট নদী বড়ো বড়ো কঠিন শিলায় ধাক্কা খেয়ে মাঝ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ।এক মায়াবী পরিবেশ ।প্রকৃতির কি অপরূপ সৃষ্টি ।সত্যি চাক্ষুস না করলে কত কি না দেখাই থেকে যেত । সেখান থেকে গেলাম তারাফেনী ।একই একটি বাঁধ । শীতকাল বলে জল প্রায় নেই বললে চলে তবে বর্ষায় এক ভয়ংকর ব্যাপার তৈরি হয় ।পাশে আছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস প্রকল্প ।সব দেখে শেষে বেড়িয়ে পড়লাম এবার ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে । রাস্তায় একটা জায়গায় নেমে চা , চপ খেয়ে আর কেজি 2 মাংস কিনে ফিরলাম বন্ধুর বাড়ি । না আমরা কোনো হোটেলে থাকিনি ছিলাম বন্ধুর বাড়িতে তবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি 700-2000 সব রকমের হোটেল আছে ওখানে । রাতের বন্ধুর বাড়িতে জমিয়ে রান্না করলো আমার বন্ধু সায়ান্তন। খেয়ে এবার ঘুমানোর পালা তবে ঘুম আর আসে কই ?? যা দেখলাম সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু হলো সবার মধ্যে ।পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার টিফিন সেরে বেড়িয়ে পড়লাম ঝাড়গ্রাম ঘুরতে। সকাল 10টায় একটি টোটো ভাড়া করে চারপাশ ঘুরে ফেললাম । দেখালাম চিলকিগড় কনকদুর্গা মন্দির , বন্ধুরা মিলে boating ও করে ফেললাম কিছুক্ষন । পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডুলুং নদী,কি অপরূপ । যদিও এখন হেটে পার করা যায় ।তবে বর্ষায় নৌকায় পার হতে হয় ।এই সব দেখে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী ও ডিয়ার পার্ক দেখে ফিরলাম বন্ধুর বাড়ি তখন দুপুর 2 টো। দুপুরের খাবার খেয়ে 3 টের সময় বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে ।সেদিন ট্রেনের অসুবিধা থাকায় বাসে করে ফিরতে হলো বাড়ি। তবে হ্যা যারা বলে ঝাড়গ্রাম মানে মাওবাদী তাদের উদ্দেশ্যে বলবো ঝাড়গ্রাম মানে প্রকৃতি, বিশুদ্ধ অক্সিজেন,পর্যটনের আনন্দতীর্থ । পাহাড় হোক কিংবা জঙ্গল খেয়াল রাখবেন প্লাস্টিক জাত দ্রব্য একদম ব্যবহার না করাই ভালো ।এগুলো আমাদের সম্পদ। দেখাশোনা করা,ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের এই । বলে রাখি গাড়ির ভাড়া নিয়েছিল 2500 টাকা এবং টোটো ভাড়া নিয়েছিলো 650 টাকা। আশাকরি সবাই যাবেন ঘুরতে । **কিছু ছবি পোস্ট করছি আমাদের এই ছোট্ট দুদিনের ট্রিপের***
বাঙালীরা বরাবরই হুজুগে এবং ভ্রমণপ্রিয়| আমরাও তার ব্যাতিক্রম নই| সম্প্রতি, 20.09.18 ইং কিছু স্কুলের বন্ধুদেরকে নিয়ে ঘুরে আসলাম যমুনাদিঘী -ভাল্কিমাচান, সাথে ছিল সজল, দেবরাজ, কৌশিক,আরো তিন বন্ধু যাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু শেষ মূহুর্তে কিছু সমস্যা এসে পড়াতে তারা আর যেতে পারেনি ….. আড্ডাবাজদের এই আড্ডামুখর ট্যুর টাকে আরো আনন্দময় করে তুলতে মাঝপথে যোগ দিয়েছিল প্রকাশ ।
মছলন্দপুর থেকে সকল 05:35 এর ট্রেন ধরে পৌছে গেলাম বিরাটি সজলের ফ্ল্যাটে এক কাপ চা খেয়ে সাতটা নাগাদ সজলের স্যান্ট্রো নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ডানকুনি পার হয়েই গাড়ি উড়তে শুরু করল, চার চাকার গতি বাড়ছে ধীরে ধীরে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আমাদের আড্ডা। গাড়ীর গতি আর আমাদের আড্ডায় পরিবেশ জমজমাট আর বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি। বর্ধমানের আগে এক জায়গায় দাড়ালাম সকালের টিফিন করার জন্য। লুচি, আলুর তরকারি আর আচার দিয়ে পেট পূজো করলাম এগুলো কৌশিক বাড়ি থেকে নিয়ে এসছিলো কৌশিকের বউ অপর্না আমাদের সবার জন্যে পাঠিয়েছিল। দূর্গাপুর এক্সপ্রেস ধরে গুসকরার মোড়। এখান থেকে ডানদিকে টার্ন করে 13-14 কিমি দুরের অভিরামপুর বাজার। ওখান থেকে বাঁ দিকে 2-3 কিমি রাস্তা পার করে বাঁ দিকে West Bengal Fisheries Development এর কমপ্লেক্স। www.wbsfdc.com ওয়েব সাইট থেকে আগেই অনলাইন বুকিং করা ছিল যমুনাদিঘীর আম্রপালি বাংলো,বাংলোর ম্যানেজারের ফোন নম্বর -9434154833 (সুব্রত গুহ)।অফিস ঘরে বুকিং এর কাগজপত্র এবং পরিচয় পত্র দেখিয়ে এন্ট্রি সেরে চলে এলাম আমাদের জন্যে নির্ধারিত রুমে। এখানে 8 টা ডবল বেডের Ac ঘর, 1 টা তিন বেডের Ac আর কিছু Non Ac ঘর আছে।Ac ঘর Rs 1200/-, তিন বেডের Ac বেড প্রতি Rs 450/- ,তিন বেডের Non Ac Rs 800/- । একটু ফ্রেশ হয়েই আমরা জয়গাটা পরিক্রমায় বের হলাম। এখানে আছে মাছেদের প্রজনন কেন্দ্র আর অনেক গুলো মাছ ভরা দিঘী, আম কাঁঠালের ছাওয়ায় ঘেরা। আমরা অপেক্ষা করছিলাম প্রকশের জন্য কিন্তু প্রকাশ ফোনে জানিয়ে দিল চারটের আগে আসতে পারবে না। অগত্যা আমরা ডাইনিং হলের দিকে পা বাড়ালাম।আগেই ফোনে খাবারের অর্ডার নিয়ে নিয়েছিলো।খাবার দাবার মান বেশ ভালোই l কাতলা মাছ দিয়ে মিল Rs 100 /-, চিকেন মিল Rs120/-।দুপুরের খাওয়াটা সেরে একটু বিশ্রাম নিতে নিতে ঠিক চারটের সময় প্রকাশ হাজির। সাড়ে চারটে নাগাদ নিজেদের গাড়িতে করে চারিদিকে গাঢ় সবুজ ধানে ভরা ক্ষেত পেরিয়ে ভাল্কিমাচান পৈছেলাম,আম্রপালি থেকে ভাল্কিমাচানের দূরত্ব কম বেশি 6-7 কিমি হবে। এই ভাল্কিমাচান জায়গাটা প্রধানতঃ মহুয়ার এক ঘন জঙ্গল যেখানে এক সময় অনেক ভালুক দেখা যেত যারা মহুয়ার মধু খেতে এখানে আসতো । এখন আর তাদের খুব একটা দেখা যায় না ।এখানে আছে একটা লম্বা 4 টি উঁচু পিলার এর মতন স্থাপত্য, যার নীচে গোপন সুড়ঙ্গ আছে যার মুখটি একটি লোহার রেলিঙের মতন ব্যারিকেড করে পেতে দেওয়া আছে। ইংরেজ আমলে স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীরা ওই সুড়ঙ্গ ব্যবহার করতেন বলে জানা যায় ।সন্ধ্যা নেমে গেছে। তাই কিছুটা সময় এখানে কাটিয়ে ফেরার পালা।এখান থেকে অভিরামপুর বাজারে পৌঁছে কিছু টুকিটাকি কেনাকাটা করতে করতে প্রবল বেগে বৃষ্টি নামল আর দেরী না করে সোজা ফিরে এলাম রুমে। একটু ফ্রেশ হয়েই আবার বসলো জমাটিয়া আড্ডা, আড্ডা আর আড্ডা। বৃষ্টি ততোক্ষণে বন্ধ হয়ে গেছে ।রূমের সামনে বসে আড্ডা মারার সুন্দর ছিমছাম ব্যবস্থা আছে। সেখানে বসেই আড্ডা দিতে দিতেই গরম গরম চিকেন পকোড়া সহযোগে গল্পগুজব চললো।চিকেন কষা আর গরম গরম রুটি দিয়ে রাত্রের খাবার খেয়ে এবার ঘুমাতে যাবার পালা। সারাদিনের ঘোরাঘুরি ক্লান্ত সকলে। কখন যে ধীরে ধীরে একে একে সবাই নরম বিছানার আদরে ঘুমের দেশে চলেগেলাম কেউ বুঝতেই পারিনি। পরদিন ভোর 5 টায় ঘুম থেকে উঠে আবার বেরিয়ে পরলাম। বিরাট জায়গা। দিঘী গুলোতে ছোটো বড় সব সাইজের রুই কাতলা সহ নানা রকমের মাছ আছে জলের মধ্যে মছের এর লাফালাফি দেখার মত, মনে হচ্ছে জল ফুটছে।রুমে ফিরে এসে জমিয়ে চা পান করে সবাই সকাল সকাল স্নান সেরে নিলাম ।লুচি/রুটি আর আলুর তরকারির সাথে একটা করে ডিমের আমলেট খেয়ে এবার গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম ডোকরা শিল্পের গ্রাম দেখতে। গুসকরার দিকে যেতে ডোকরা শিল্পের গ্ৰাম ,যমুনাদীঘি থেকে প্রায় 8 কিমি দূরে দারিয়াপুরে ডোকরা গ্ৰামে পৈছেলাম।ডোকরা হল "হারনো মোম ঢালাই" পদ্ধতিতে তৈরি একটি শিল্প কর্ম। এই শিল্পের ইতিহাস প্রায় 4000 হাজার বছরের পুরানো।ডোকরার নানা গয়না, দেবতার মুর্তি ও ঘর সাজাবার বিভিন্ন জিনিষ তৈরি করে। ডোকরা শিল্পের কাজ Rs 50/- থেকে শুরু করে Rs 10000/- পর্যন্ত আছে । দারিয়াপুরে ডোকরা গ্ৰামে থেকে ফিরে এসে প্রকাশ আর দেরি করলো না ও রওনা দিল ওর অফিসের কাজে শান্তিনিকেতন এর উদ্দেশ্যে।আম্রপালি কমপ্লেক্সে প্রবেশদ্বারের মুখেই শান্তিনিকেতনের শাড়ি, গয়না, ঘর সাজানোর জিনিস এছাড়া ডোকরা সামগ্রীও কেনাকাটা করার ব্যবস্থা রয়েছে। এখন থেকে দুই একটা জিনিস কিনে ফেললাম। তারপর দুপুরের খেয়ে দেয়ে বাড়ি ফেরার পালা। অনেকটা মজার স্মৃতি আর স্নিগ্ধ প্রাণবায়ু নিয়ে ফিরে এলাম যা স্মৃতির ফ্রেমে থেকে যাবে চিরদিন....কথায় বলে, 'দিন যায় কথা থাকে'। কথা থাকুক বা নাই থাকুক ফেলে আসা অতীত দিনগুলোর স্মৃতি চিরদিন হৃদয়ের মানসপটে অমস্নান হয়ে থাকবে। সব ছবি মোবাইলে তোলা **প্লাস্টিক পদার্থের নিয়মিত ব্যবহার দূষণের মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। অপচনশীল এ পদার্থ পরিবেশে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করছে। ফলে মাটি, জল দূষিত হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্টকারী প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বর্জন করুন..পরিবেশ রক্ষা করার দায়িত্ব আমার আপনার আমাদের সকলের**
পৌষালি ডাকে শান্তিনিকেতন।
বলছি কি জানলা টা একটু বন্ধ করবেন। সহ যাত্রীনি টি বেশ বিরক্ত স্বরে বললেন কেন। বললাম আমার একটু ঠান্ডার সমস্যা। ও বলে দিলেন জানলা টা বন্ধ করে বেশ রাগত ভাবে। ততক্ষনে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস নৈহাটি ছেড়ে দিয়েছে। গন্তব্য শান্তিনিকেতন। তবে একটু ঘুরে। ভায়া আসানসোল। রাত 9টার ট্রেন পৌছল সাড়ে নয়টায়। ট্রেন থেকে নেমেই বুঝলাম রাঢ় বঙ্গের শীত কি জিনিষ। তাপমাত্রা 10digree. অনুভুত হচ্ছে আরও কম। কাপতে কাপতে উঠলাম ভাইয়ের গাড়ীতে। বাড়ী পৌছে রাতের খাবার খেয়ে আড্ডা শুরু চার জনের। সস্ত্রীক আমি ও সস্ত্রীক ভাই। ঠিক হল পরের দিন মাইথন যাবো। শুতে যাবার সময় দেখলাম ঘড়ির কাঁটা বারো ছুঁইছুঁই। পরের দিন কল্যানীশ্বরি হয়ে মাইথন ড্যাম। মাইথনে ঘোরার জায়গা বলতে প্রধানত মাইথন ড্যাম। শীতে মাইথন ড্যামকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। মজুমদার নিবাসের সামনেই রয়েছে বরাকর নদীর বুকে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা। মাইথন ড্যামের পাশেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক। এছাড়াও রয়েছে মিলেনিয়াম পার্ক। শীতকালে পুষ্পমেলার আয়োজন করে ডিভিসি। মাইথন ড্যাম পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের সীমানায় ঢুকলে মিলবে বোটিং-এর আরও ব্যবস্থা। একটু এগিয়ে ড্যামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে বরাকর নদীর বিস্তীর্ণ পাড়, যেখানে গিয়ে বসলে বরাকরের চঞ্চল ঢেউ মন ভরিয়ে দেবে। বরাকর নদীর বুকেই রয়েছে চামচ দ্বীপ,ডিভিসি সবুজ দ্বীপে পার্কও তৈরি করেছে। এই দুই দ্বীপেই পৌঁছতে হয় বোটিং করে। মাইথনে রয়েছে আদি কল্যাণেশ্বরী মন্দির। ডিভিসি-র হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট। এই পাওয়ার স্টেশনে ঢুকতে গেলে কলকাতায় ডিভিসি অফিস থেকে অথবা মাইথনে ডিভিসি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। সমতলভূমিতে এটাই ছিল দেশের প্রথম হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্ট। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন খোলামুখের কয়লা খনিও। এখানে এলে দুরে পরে থাকে কর্মজীবনের শত ব্যস্ততা। ছুটির আকাল। এখানে স্বচ্ছ নীলাকাশ আর উজ্জ্বল রোদ্রের ছটায় খেলা করে জলের কলকাকলি, সকালে থাকে হালকা কুয়াশার ঘেরাটোপ, এই রকম চিন্তা মনে হলে বেরিয়ে পড়তেই পারেন মাইথনের পথে। পরের দিন সকাল সকাল যাত্রা শুরু করলাম শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্য। পৌষ মেলা যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যথা সময়ে পৌছলাম শান্তিনিকেতন। ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কুড়ি জন অনুগামীকে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের থেকে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। এটিই শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের মূল ভিত্তি। ১৮৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৯৮ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) শান্তিনিকেতনে একটি ব্রাহ্মমন্দির স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালে ব্রাহ্মমন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে মন্দিরের উল্টোদিকের মাঠে একটি ছোটো মেলা আয়োজন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনের সেই পৌষমেলা শুধুমাত্র বীরভূম জেলার নয়, অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকেদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এক সময়ে এ মেলার নাম ছিল ভুবনডাঙার মেলা। এখন শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা নামে এক ডাকে চেনে গোটা বিশ্ব। পরে মেলা উঠে আসে পূর্বপল্লির মাঠে। এখন অবশ্য আর কোনও গণ্ডি নেই। পৌষ মেলা চলে গোটা শান্তিনিকেতন জুড়েই।ব্রহ্মোপাসনার মাধ্যেমে মেলার সূচনা হয়ে প্রতিটি দিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে পৌষের মেলা। এ মেলার বড় বিশেষত্ব হস্তশিল্প ও গ্রামীণ কৃষ্টির উপস্থিতি। সেই সঙ্গে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেল। মাটির পুতুল, ডোকরা, বাঁশি, ডুগডুগি, চর্মশিল্প, একতারা— কী নেই সেখানে! রীতি মেনে বৈতালিককের গান, সানাইয়ের সুর, ছাতিমতলায় উপাসনা এসব তো আছেই, সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক মঞ্চে রায়বেশে, মুখোশনৃত্য, আলকাপ, রণপানৃত্য, ছৌ নাচও হবে। আর বাউল-ফকিরের গান তো থাকবেই। এই সব ঘুরে বেরানোর জন্য 2দিন খুবই কম। কিন্তু ওই যে অফিস বলে যে বস্তু টা আছে সে চোখ রাঙিয়ে বলছে না ফিরলে কিন্তু কপালে দুঃখ আছে। অতঃপর আর কি পরের দিন যিশুর জন্মদিনে ,কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রয়ানের বেদনাকে সঙ্গী করে শান্তিনিকেতন ছাড়লাম। কিন্তু শান্তিনিকেতনের পৌষালি ডাক কানে বাজছে পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে আয় আয় আয়........ |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |