৫ ই ডিসেম্বর ২০২০ সকালে হঠাৎ আমাদের মাথায় উঠলো বাই তো কংকালীতলা যাই। কয়েকদিন ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল আমাদের যে মোটর সাইকেলের হেলমেটে ক্যামেরা লাগিয়ে কোথাও গেলে কেমন হয়? আমার ৫ বছরের মেয়ের কৌতুহল সব থেকে বেশি ছিল। তাই ছোটো করে শুরু করে ফেললাম কংকালীতলা মন্দির ভ্রমণ।
বোলপুর স্টেশন থেকে ৯ কিলোমিটার (লাভপুর রোড হয়ে) অথবা ১১ কিমি (শ্যামবাটি- প্রান্তিক রোড হয়) দূরে কোপাই (শাল নদী) নদীর তীরে শক্তিপীঠ কঙ্কালীতলা মন্দির। আমরা সকাল ৮ টায় বোলপুর শান্তিনিকেতন স্টেশন থেকে বাইকে আমাদের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বোলপুর স্টেশন - বোলপুর চৌরাস্তা - শান্তিনিকেতন - শ্যামবাটী - প্রান্তিক হয়ে পৌছে গেলাম কংকালীতলা মন্দির। তন্ত্রচূড়ামনির মতে, এটি ২৮ নং সতীপীঠ। প্রাচীনকালে এই জায়গাটি কাঞ্চি নামে প্রসিদ্ধ ছিল। তন্ত্রচূড়ামনিতেও এই স্থানের উল্লেখ আছে। পীঠ নির্ণয়তন্ত্রে বলা হয়েছে এখানে দেবীর কংকাল পড়েছিল এবং এটি দেবীর একান্নতম পীঠ। কিন্তু ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ অনুযায়ী, বলা হয়েছে এখানে দেবীর কাঁখ বা কাঁকাল বা কটিদেশ পতিত হয় এবং এটি দেবীর আঠাশতম পীঠ। সম্ভবত: কাঁকাল থেকেই কংকালীতলা নাম হয়েছে। তবে এই শক্তিপীঠ নিয়ে শাস্ত্র ও জনগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এখানে দেবীর নাম "দেবগর্ভা"। কোপাই নদীর তীরে কুন্ডের মধ্যে দেবীর অধিষ্ঠান। কুন্ডের পাশের মন্দিরে দেবী পটে অর্থাৎ ছবিতে কালীরূপে পূজিতা হন। এখানে ভৈরবের নাম "রুরু"। মন্দির প্রবেশের আগেই লাইন দিয়ে পূজো দেওয়ার ডালা গ্রহনের জন্য অনেক দোকান আছে। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। এখান থেকে একটি দোকান থেকে পূজার ডালা নিয়ে লাইন দিল মা ও মেয়ে। সুন্দরভাবে পূজো দিয়ে কিছুক্ষণ মন্দিরের চারপাশ ঘুরে নিলাম। মন্দির চত্বরে এক বাউল বন্ধু সুন্দর বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন।
মন্দিরের পাশেই যে কুন্ড টি আছে, বলা হয় সেখানেই দেবীর কংকাল পড়েছিল। এখনও সেখানে কিছু পাথর আছে। ওগুলোকে দেবীর দেহাংশ মানা হয়। এই কুন্ডের জল কখনো নাকি শুকায় না। পাশেই শ্মশান আছে। এখানে নাকি গুপ্ত তন্ত্র সাধনা হয়। বর্তমানে এই শ্মশান টি ইলেকট্রিক চুল্লীতে পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এরপর মন্দিরের পাশে ভোগ মন্দির টি ঘুরে দেখলাম। এখানে ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয় ভক্তদের জন্য। সাধারণ দর্শনার্থীরাও ভোগের প্রসাদ পেতে পারেন কুপন স়ংগ্রহের মাধ্যমে। এর পাশেই বয়ে চলেছে কোপাই নদী বা শাল নদী। এরপর আমরা মন্দির থেকে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রান্তিক স্টেশন এ দেখি রেলগেট পড়ে আছে। অগ্যতা কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম। এই সুযোগে আমার মেয়ে লকডাউনের জন্য ভূলতে বসা রেলগাড়ির দর্শন করতে পারলো। ও কিন্তু খুব আনন্দ করলো এই করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত ধরনের সতর্কতা মেনে। আমার ছোট্ট মেয়ের বানানো ভ্লগটি কেমন লাগলো জানাবেন। ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও সাবস্ক্রাইব করবেন
0 Comments
পুরুলিয়ার জয়চন্ডী পাহাড়ে যারা গিয়েছেন তারা নিশ্চয়ই দেখেছেন,পাহাড়ের মাথায় ওঠার মাঝখানে, সিড়ির পাশে ইটের তৈরি গোলাকার গম্বুজ। এটা কি?এই গম্বুজ নিয়ে নানা মত। কেউ বলেন ওয়াচ টাওয়ার,কেউ বলেন সিমাফোর টাওয়ার। তবে হ্যাঁ এটি সিমাফোর টাওয়ার।১৮৩০--৩৩ সালে তদানীন্তন ভারত সরকার খবর পাঠানোর জন্য কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম থেকে বোম্বাই (মুম্বাই) পর্যন্ত ৮ মাইল অন্তর অন্তর ১০০ ফুট উঁচু এই টাওয়ার গুলো তৈয়ারী করেছিলেন। টাওয়ার গুলো ফোর্ট উইলিয়াম থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম দিকে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া জেলাকে অতিক্রম করেছে।
সিমাফোর পদ্ধতি হল, প্রথম টাওয়ার থেকে দৃশ্যমান সাংকেতিক নির্দেশ পাঠানো হতো দ্বিতীয় টাওয়ারে দ্বিতীয় টাওয়ার সেটা দেখে তৃতীয় টাওয়ারে, এই ভাবেই কিছুক্ষণের মধ্যেই সঠিক জায়গায় খবর পৌঁছে যেত। উন্নত প্রযুক্তির তারবার্তা প্রেরনের উপায়টি আবিষ্কার হলে, মাঝপথে এই প্রকল্প পরিত্যাক্ত হয়। এই টাওয়ার গুলোতে একটি টাওয়ার থেকে আর একটি টাওয়ারের ওয়াচ বা নজর রাখতে হতো,তাই এগুলোকে ওয়াচ টাওয়ার বা নজর মিনার বলা যেতেই পারে। তবে সিমাফোর ওয়াচ টাওয়ার বললে মনে হয় সঠিক। ধন্যবাদ।
আজ বিশ্বকর্মা পুজো +মহালয়া 17.09.2020 ভোর সাড়ে চারটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে। আগের রাতে ভাত রুটি সব রেডি করে রেখেছিলাম। বাইকে 314 কিলোমিটার পেরিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে পৌঁছাতে সাড়ে এগারোটা।জীবনে প্রথম পাহাড়ে বাইক চালানো। সঙ্গে পুরুলিয়ার বন্ধু প্রণয় মাহাত । ঐ গাইড। ভাত খেয়ে চললাম upper dam এ। ছবি তোলা হল। পাশে কাশফুলের উপত্যকা আর চাঁদি ফাটা রোদ। গেলাম lower dam এ। একদম ফাঁকা। সারা পাহাড়ে মনে হয় শুধু আমরাই। কিছু লোকাল ছেলে বাইক নিয়ে ছুটোছুটি করছে। ওখান থেকে বহু প্রতীক্ষিত বামনী ঝর্না। সব ক্লান্তি দূর হল। শুধু আমরাই। তিনটে স্থানীয় ছেলে স্নান করছিল। শীতের সময় নাকি মেলার মত লোক হয়। গামছা উপরে ব্যাগে রেখে নেমে পড়েছিলাম। স্নান আর করা হলো না। যাই হোক ওখানেই দুটো বেজে গেল।ওখান থেকে মার্বেল লেক । এবার সীতাকুণ্ড, মাটির নিচে থেকে ধীর গতিতে অনবরত বরফ ঠান্ডা জল নির্গত হচ্ছে। ফিরতে হবে সময় কম।বাড়ির পথ ধরলাম।আহাড়রা নামক এক জায়গায় ঐ বন্ধুর মাসতুতো শালা কেজি দুই তিন আখের গুড় উপহার দিল। ও প্রথম থেকেই সঙ্গে ছিল। এবারে বাড়ির পথে। পুরুলিয়া টাউন থেকে বেরিয়ে সঙ্গে থাকা ময়দার রুটি আর কলা খেয়ে বাইক ছোটালাম,তখন পাঁচ টা।যেতে হবে 250 km . কিছু দূর যাওয়ার পরই টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। প্রায় দশ কিমি যাওয়ার পর রেনকোট পরে নিলাম। পানাগড় অবধি বৃষ্টি পেয়েছি। তখন রাত পৌনে নয়টা।প্রায় সাড়ে নটার সময় বর্ধমান এসে বুকে বল পেলাম।মিষ্টি কিনে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আস্তানায়। মোট 670 km . পায়ের মাংস পেশিতে খুব ব্যথা,ততোধিক আনন্দ।
মৌসুনী নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলার নেই, ইতিমধ্যে অনেকেই অনেক পোস্ট করেছেন।
কিছুটা লকডাউনের একঘিয়েমি থুরি একঘিয়েমি টা ঠিক আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যেহেতু আমি একজন সাস্থ্যকর্মী । সেই Covid এর শুরু থেকেই PPE, GLOVES, MASK, FACESHIELD পরতে পরতে একরকম হাঁপিয়ে উঠেছিলাম। তাই শারীরিক ও মানসিক অবসাদ দুর করতেই কাছেপিঠে মৌসুনীটাই বেছে নিলাম। আমাদের Booking ছিল Monk Backpackers এ কিন্তু শেষ মুহূর্তে যাবার দিন ট্রেনে চেপে খুব বাজে অভিজ্ঞতা হয়, ওনারা ফোন করে জানায় কটেজ দিতে পারবেন না। যাইহোক শেষমেশ আনন্দধারা ও আনন্দমহল আমাদের আতিথেয়তার কোনও এুটি রাখেননি। একদম Sea-Beach এর ধারেই মনোরম পরিবেশে অসাধারণ ক্যাম্প। আপনারাও দেখে আসতে পারেন। রিজার্ভ বাজার,শুভলং,লংগদু,দূপছড়ি,মারিশ্যা,বাঘাইছড়ি, মাদরাসা পাড়া,উগলছড়ি ||রাঙ্গামাটি - Faisal Mahmud12/10/2020
২ য় দিন
রিজার্ভ বাজার,শুভলং,লংগদু,দূপছড়ি,মারিশ্যা,বাঘাইছড়ি, মাদরাসা পাড়া,উগলছড়ি ||রাঙ্গামাটি|| তারিখ-২ ডিসেম্বর ২০২০ আমি পরবর্তী দিন কি করবো সেটা নিয়ে খুবই অস্হির থাকি, কি??কখন??কিভাবে?? এ প্রশ্ন গুলো তখন মাথায় ঘুরতে থাকে। রাঙ্গামাটি পাহাড়ে সমতলে সুনসান নিরব একটা শহর, রাত গভীর হওয়ার সাথে সবকিছু একদম নিরব নিস্তব্ধ। রাঙ্গুনিয়া ঘুরে শরীর কিছুটা দূর্বল হয়ে গেছিলো রাঙ্গামাটি শহরে এক রাত ঘুমিয়ে সেটা ঠিক করে নিলাম, আমি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই খুব এক্সাইটেড ছিলাম, উদ্ভূত একটা কিছু অপেক্ষা করছে আমার জন্য যেটা দেখার জন্য আমার মন বেকুল হয়ে আছে সেই রাত থেকে। সকাল ৬ টার কিছুক্ষণ পর হোটেল থেকে বের হয়ে সরাসরি রিজার্ভ বাজারের উদ্দেশ্য একটা সিএনজি নিলাম, হালকা শীত চারদিকে ঘন কুয়াশা কি এক মনোরম পরিবেশ আহা সে কি যে পরিবেশ। সিএনজি শহর ছেড়ে এগিয়ে যাচ্ছে রিজার্ভ বাজারের দিকে, রিজার্ভ বাজারের আগ মূহুর্তে রাস্তার দু পাশের পরিবেশ আপনাকে বিমোহিত করে ছাড়বে খুব সকালে। রিজার্ভ বাজার পৌছে গেলাম তখনও আমি বুঝতে পারি নাই কি অপেক্ষা করতেছে আমার জন্য, রিজার্ভ বাজার সকালের নাস্তা করে নিলাম তারপর সোজা চলে গেলাম লঞ্চ ঘাটে, লঞ্চ ঘাটে এসেই দেখি কাপ্তাই হ্রদে এক অংশে এই রিজার্ভ বাজার, হ্রদের পানির ছুয়ে দাড়িয়ে আছে শত শত দোকান, হোটেল আমি এসব দেখে মনটা খারাপ করে ফেললাম হায়রে এখানে রাতে বারান্দায় এসে চা খাওয়ার ফিলটা কি যে মিছ করলাম আহারে। যাইহোক একটা বুকভরা আর্তনাদ নিয়ে লঞ্চের টিকেট কেটে ফেললাম বাঘাইছড়ির, ওখানের ঘাটের নাম সবাই মারিশ্যা নামে চিনে। আমি সিদ্ধান্ত নিছিলাম বাঘাইছড়ি হয়ে সরাসরি সাজেক যাবো যেটা হবে নৌপথে সাজেক ভ্রমণ, লঞ্চ ছাড়লো সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটে,লঞ্চে যাত্রির ৭০% ছিলো পাহাড়ী উপজাতি বাকিরা বাঙালি টুরিস্ট বলতে আমি একজনই ছিলাম যা মনে হলো। লঞ্চ যখন ছাড়লো তখন রোদ উঠে উঠে ভাব সামনে কোন মেঘ নাই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে আমি একটু মনোবল হারিয়ে ফেললাম, কিন্তু লঞ্চ যখন পাহাড়ের কাছাকাছি যেতে ছিলো মেঘ এবং কুয়াশা দুটাই বাড়তে ছিলো, এই সুন্দর মনোরম পরিবেশ শুধু শীতের সময় পাওয়া যায় এছাড়া আর কখনও পাওয়া যায় নাহ। আমি বহুবার পাহাড়ে গেছি কিন্তু এরকম ফিল কখনো পাই নাই, নদী পথে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ তার উপর শীতের সকাল। মনে মনে ভাবতেছিলাম একদিন অনেক টাকা হবে আমি পাহাড়ের চূড়ায় একটা জুম ঘর বানাবো সেখানে মাসে ২/১ বার এসে থাকবো আমি রং চা বানিয়ে খাবো এখানে বসে আমি বূহ্য রচনা করবো। যাইহোক এসব অসম্ভব কল্পনা করতে করতে পৌছে গেলাম শুভলং সেনাবাহিনী ক্যাম্পে, তখনও পাহাড় মেঘে আচ্ছন্ন কি এক উদ্ভূত পরিবেশ। শুভলং অতিক্রম করার পর আস্তে আস্তে পাহাড় সড়ে যাচ্ছিলো দূর থেকে বহুদূর, হ্রদের পরিধি বাড়তেছিলো নদী থেকে সাগরের মত, সূর্য়ের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছিলো লঞ্চের আনাচে কানাচে তখন মনে হবে আপনি এখন টাঙ্গুয়ার অথবা নিকলী হাওরে আছেন , পাহাড়,হ্রদ, হাওর,স্হল সবকিছুর ফিল আমি একসাথে উপভোগ করতেছিলাম। ৩/৪ ঘন্টা এভাবে নিজের মনকে উপভোগ করার পর একটু বিশ্রামের খোজে চলে গেলাম, এভাবে করতে করতে প্রায় ৭ ঘন্টা পর লন্চ এসে পৌছালো মারিশ্যা ঘাটে। বসু ভাই আগে থেকেই তার এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে বলে রাখছিলো আমি আসবো, সেই বন্ধুর নাম ইমন পরবর্তীতে সেও আমার বন্ধু হয়ে গেছিলো। ইমন ভাই আমাকে রিসিভ করে তার বাসায় নিয়ে গেলো আমি ফ্রেশ হয়ে তার বাসায় দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম তারপর কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে তার সাথে হাটতে বের হলাম। আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখি আমি যে জায়গাটায় ছিলাম এটার নাম হলো মাদরাসা ব্লক এ জায়গা থেকে মাত্র ২০/২৫ মিনিটের পথ পের হলেই জেএসএস,জেএসএস সংস্কার,ইউপিডিএফ,গনতান্ত্রিক এর ঘাটি প্রায় সময়ই এখানে দুপক্ষের গোলাগুলি হয়। যাইহোক এসব পাহাড়ী ইতিহাস নিয়ে আরেকদিন বলবো। ইমন ভাইয়ের সাথে হাটা শুরু করলাম ভাই পারবেন তো হাটতে এত পথ??আমি বললাম আমার অভ্যাস আছে সমস্যা নাই। আমরা হাটতে হাটতে লাম্বাছড়া বাজারে গেলাম যাওয়ার পথে আরো ৩/৪ টা চাকমা পাড়া অতিক্রম করলাম। পাহাড়িদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ আলাদা তাদের মধ্যে এখনো সামাজিক ঐক্যের একটা বন্ড আছে যেটা এখন অন্য সমাজ ব্যবস্হায় পাওয়া যায় নাহ। পাহাড়িরা সাধারণ চুপচাপ স্বভাবের তারা অতিরিক্ত কথা বলে নাহ। আমরা হাটতে হাটতে ইমন ভাইয়ের পরিচিত কিছু চাকমা বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিলাম, তারপর দার্জিলিং পাড়া নামাক একটা জায়গায় আসলাম তখন মাগরিবের সময় হয়ে গেছে, এ জায়গায়টা দু পাহাড়ের সমতলে অবস্হিত একটা খোলা জায়গা, বৃষ্টির সিজনে চারিপাশ পানিতে থৈথৈ করে। দার্জিলিং পাড়া হয়ে আমরা সরাসরি চলে আসলাম ইমন ভাইয়ের বাসায় ওখান থেকে আমি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে পরলাম এবার আমার রাত্রি যাপনের পালা, বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের পাশেই অবস্হিত পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউজ, ইমন ভাই আামর জন্য আগে থেকেই ওটার ১ টা বিশাল রুম রেডি করে রাখলেন, আমি ওখানে গেলাম গিয়ে প্রথমে গোসল করে নিলাম তখন রাত ৯ টা বাজে গোসল করে ইমন ভাইরে কল দিলাম ওনি আসলো তারপর জসিম ভাই নামে আরেকজন আসলো তারে নিয়ে রাতে আবার বের হলাম পাহাড় দর্শনের। রাত বাজে ১১ টা আমরা তখন ফিরলাম রেস্ট হাউজে, তারাও আমার সাথে আসলো রেস্ট হাউজে, গল্প করতে করতে সময় কাটিয়ে দিলাম তারপর ২ টার কিছুক্ষণ পর সবাই ঘুমিয়ে পরলাম।
ময়নাগড় বাংলার আনাচে কানাচে কত মাণিক্য ছড়িয়ে আছে তা আমরা বাঙালিরাও বলতে পারবো না। লকডাউনের পরে আমরা তাই বাংলার এদিক ওদিক খুজে বেরিয়েছি, এবার ছিল ময়নাগড়।সেইমত প্ল্যান আর আবার আমরা নারী বাহিনী একসাথে,২৫ জন মিলে কলকাতা থেকে গাড়ি নিয়ে সকাল সকাল গাড়িতে ব্রেকফাস্ট সেরে নিয়েছি।কোলাঘাট হয়ে নন্দকুমার রাস্তা ধরে নিমতৌড়ি মোর থেকে ডানদিকে ২০ কিমি গেলে ময়নাগড়। ময়নাগড় বাংলার এক হেরিটেজ জায়গা কিন্তু অবহেলিত, দুটি পরিখা একে ঘিরে রেখেছে, মাঝের সেই দ্বীপে ৬/৭ পরিবারের বাস। আবার ধর্মমঙ্গল খ্যাত লাউসেনের এটি রাজধানী,জলদস্যুর হাত থেকে বাঁচাতে এই দুটি পরিখা কালিয়াদহ আর মাকরদহর সৃষ্টি হলেও একসময় জলদস্যুর কবলে যায় এই গড়। উড়িষ্যার রাজা মহীপাল এরপর এই দুর্গ দখল করেন আর বাহুবলীন্দ্র উপাধি পান,এখন যে কটা পরিবার বসবাস করেন, সবাই রাজপরিবারের অংশ এবং এই উপাধি বহন করছেন। চারপাশ টা নারকেল গাছে ঘেরা, একটা সুন্দর তোরণ, তারপর ভটভটি চেপে গড়ের পাড়ে। যেতে যেতেই দেখলাম সবার বাড়ির সামনে নিজস্ব নৌকা বাঁধা, নৌকা গোল করে পরিখার চারিদিকে ঘুরিয়ে দেবে, ভাড়া ২০/৫০ পার হেড সেটা কজন লোক, নৌকার সাইজ আর বিশেষ দিন হলে কম বেশি হয়। গড়ের মাঝে ৫০০ বছরের পুরনো লোকেশ্বর শিব মন্দির আর রাধেশ্যাম জিউর পঞ্চচূড়া মন্দির, সতীরাণী ঘাট আছে। প্রতিবছর ধূমধাম করে রাস হয়,মেলা বসে,তবে এবার তেমন কিছু হবে না। চারদিক গাছগাছালিতে ভরা, ভাঙা গড়ের দেওয়াল থেকে নতুন বাড়ির দেওয়াল তোলা হয়েছে।ফিরে এলাম আবার নৌকায়, নিত্য কাজের জন্য মেয়েরাও ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে এপার ওপার করছে। আমরা ক্রমশ দূরে যেতে লাগলাম ময়নাগড় কে ফেলে আর অনেক সুন্দর স্মৃতি নিয়ে।
পূজো ছুটি হোক কিংবা গরমের ছুটি, আবার কখনো এদিক ওদিক ম্যানেজ করা দুদিনের ছুটি।দার্জিলিং আমরা সবসময়ই যাই। আমাদের ভ্রমনপিপাসু মানুষের কাছে এ যেন ঠিক মামাবাড়ি। একদম নিজের। যখন তখন চলে যাওয়া যায়। আজকাল এই মামাবাড়ির আশেপাশে মেঝোমামা, সেঝোমামার মতন গড়ে হয়েছে হাজারো স্পট। যেখানে প্রকৃতি উজাড় করে দিয়েছে নিজের সৌন্দর্য। ঠিক তেমনই একটা জায়গা 'লামাহাটা ইকো পার্ক'। যেখানে সারাবেলা চলে মেঘ আর কুয়াশার খেলা। পাইন সারির মধ্যে দিয়ে আঁকাবাকা পাথরে বাধাঁই পথ দিয়ে উঠে যাওয়া যায় অনেকটা উঁচুতে। সেখানে শান্ত স্নিগ্ধ পুকুরের পাশে বসে কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাটা দিন। আলো-আধাঁরির এই পরিবেশে গিয়ে ভূলে যাওয়া যায় জীবনের সবটুকু। হারিয়ে যেতে হয় এক অন্য জগতে।
আপনি চাইলে দার্জিলিং বেরাতে এসেও এখানে কাটিয়ে যেতে পারেন একটি দিন বা দিনের কিছুটা সময়।আবার এখানে দুদিন থেকেও আশেপাশের দু-একটি জায়গা ঘুরে দেখতে পারেন। শিলিগুড়ি অথবা এনজেপি থেকে গাড়ি বুক করে নিতে পারেন। আবার দার্জিলিং এর শেয়ার গাড়িতে উঠে জোড়বাংলো নেমে লামাহাটার শেয়ার গাড়ি নিয়ে নিতে পারেন।অথবা দার্জিলিং থেকে আসার পথে জোড়বাংলোতে নেমে লামাহাটার গাড়ি নিতে পারেন। শিলিগুড়ি-জোড়বাংলো-২০০/- জোড়বাংলো-লামাহাটা-১০০/- ইকো পার্কের টিকিট-১০/-(জনপ্রতি)
কথায় আছে না 'উঠ্ ছুড়ি তোর বিয়ে' , আমাদের এইবারের বেড়ানোটাও অনেকটা সেই রকম, বেড়ানো না বলে বরং দৈনিক সফর বললেই ব্যাপারটা সঠিক হবে। করোনা আবহে স্বাস্থ্যের হারিকিরির সাথে সাথে যেন মনোরোগের মহামারী চলছে। গৃহবন্দী অবস্থায় আতঙ্কের সাথে যুঝতে যুঝতে সকলের এখন 'দেহ পট সনে নট সকলি হারায় ' অবস্থা। তাই প্রথম প্রস্তাবেই ফুটন্ত তুবড়ির মতো ছিটকে বেরিয়ে এলো উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা ও আবেগের সংমিশ্রণের আহ্লাদিত ককটেল, বিশেষ করে সেটা যদি আপামর বাঙালির অন্যতম তীর্থক্ষেত্র শান্তিনিকেতন হয়।অতঃকিম! 'পথে এবার নামো সাথী' অথবা হালের 'জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা' জাতীয় আবেগের আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ আর তার সাথে সাথে আমাদের একদিনের এই অসম্ভব ভালো লাগায় ভরে থাকা , প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে এক সুখযাপনের এই ষোলটি ঘন্টা । বেহিসেবি কয়েকটি ঘন্টা প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলাম , লাল মাটির পথের ধূলো মাখলাম, সোনাঝুরির হাটে হেঁটে হেঁটে জীবনের এই প্রায় মধ্যগগনের পায়ের পাতাগুলো ফুলিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া হাঁটুর ব্যথা করালাম, হাতে গাওয়া ঘিয়ের গন্ধ শুকতে শুকতে হাটের বেচাকিনির সাথে সাথে ধামসা মাদলের তালে নেচে উঠলাম আর সকল রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতার নাকে ঝামা ঘষে প্রজাপতি হয়ে উড়ে ফিরলাম রঙ বেরঙের পাখনা মেলে। ছন্দপতন কি একটুও নেই? আছে আছে। যেন সেই চাঁদপানা মুখে একটা কালো টিকা....আরে ইয়ার নজর না লাগে!! বঞ্চিত রইলাম কবিগুরুর ছোঁয়া থেকে। উনি যেন গোঁসা করেছেন, হাবুদের তালপুকুরে যেতে দিলেন না । লিচু চুরির সেই গল্পের লিচু গাছ বেপাত্তা।
'বসে ছিলেম ছাতিমবনে রোদ ছিটোনো শান্তিনিকেতনে' বলার যো নেই। ফসিলস্ গুলো একাকী গুমরোচ্ছে আর সাথে আমরাও। হাজারবার দেখেও যে আশ মেটে না। শেষ বেলায় দিগন্তে কমলা সূর্যের সাথে মেঠো বাউলের বিষাদ মাখা উদাস সুরে যেন আমাদের একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস আর তার সঙ্গেই মিশে রইলো আবার আসব ফিরের অঙ্গীকার। শেষবেলায় মনের মতো করে কঙ্কালীতলায় মায়ের দর্শনে ষোলকলা পূর্ণ হলো। এবার ফেরার পালা মাটির টানে , সাথে চললো গাড়ির মধ্যেই প্রচুর আড্ডা গান খুনসুটি , আর হ্যাঁ, অবশ্যই খাওয়া দাওয়া, বাঙালির রসনা তৃপ্তি ছাড়া বেড়ানো জমে! সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, আমাদের পাগলামিতে বিগড়ে যাবেন না।
অপরূপা শিবখলা
হারে রে রে রে রে,আমায় ছেড়ে দে রে,দে রে.. ভেবেছিলাম টয় ট্রেনে করে যাবো।নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি পৌছাব অটো ধরে।ওখান থেকে সকাল ৯:৩০ এর টয় ট্রেনে করে সুকনা -রংটন হয়ে পৌছাব শিবখলায়।রংটং এ নেমে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যাবো শিবখলায়।কিন্তু বিধি বাম,পেলাম না সংরক্ষিত টিকিট।তাই বাধ্য হয়ে ট্রেনে করে নিউ জলপাইগুড়ি আর ওখান থেকে শিবখলা। আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসি আমি উন্মনা হে হে সুদূর,আমি উদাসী এ যেন এক স্বর্গীয় ভূমি।জলের কলধ্বনি, পাখির কুজন আর এক অপার সৌন্দর্যে ভরপুর শিবখোলা।কাছেই একটা শিব মন্দির আছে।নেপালি ভাষায় খোলা শব্দের অর্থ নদী।তাই জায়গাটার নাম হয়েছে শিবখোলা।এখানে পৌঁছে গেলাম নদীর সাথে কথা বলতে।তার চোখের ইশারায় তার হাত ধরলাম।তার স্পর্শে শরীর জুড়িয়ে গেল-কলকল হাসে সে আমাকে এদিক ওদিক করে দিলো।প্রানভরে তার সাথে কথা বলে চলে এলাম ক্যাম্পে।--- সে কোন বনের হরিণ ছিল আমার মনে.. কে তারে বাঁধলো অকারণে। দুপুরের খাবার খেয়ে পায়ে পায়ে চলে এলাম নদীর ওপারে বিশ গাঁও তে.. এখন অবশ্য২০টি পরিবার নেই-বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬০টি পরিবারে।এক গ্রাম্য পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করলো।এখানে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে যার নামকরণ করা হয়েছে নেতাজির আই. এন.এ(ইন্ডিয়া ন্যাশনাল আর্মি)-র নামে।গ্রাম ঘুরে চলে গেলাম কাছের শিব মন্দিরে।এখানে সন্ধ্যা পুজোটা উপভোগ করতে পারলাম না কারণ চলে এলাম নুরবং ট্রি ফ্যাক্টরিতে।ফ্যাক্টরি বন্ধ ছিল তাই চা বাগানকে আশ মিটিয়ে দেখলাম।অজানা পোকারা মহাআনন্দে তাদের গান গেয়ে চলেছে।সন্ধ্যা নামছে আর তার সঙ্গে টিপ টিপ করে বৃষ্টিও পড়ছে।টেন্টয়ে পৌঁছাতেই ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।ওঃ--কি দারুণ!!নদীর কলধ্বনি আর বৃষ্টির উল্লাস মিলেমিশে এক হয়ে গেল। ..ও কি এল, ও কি এল না,বোঝা গেল না ও কি মায়া কি স্বপনছায়া,ও কি ছলনা.. অন্ধকার নেমে এলো।টেন্ট এর সামনে ঢাকা বারান্দায় বসে উপভোগ রাতের সৌন্দর্য।জোনাকি পোকা উড়ে চলেছি এদিন ওদিক আর আমরা চারজন-শুভজিৎ, বাবুলালদা, স্যামুয়েলদা আর আমি দেখে চলেছি রাতের সৌন্দর্য।এর মধ্যে চলেছে আমার মোবাইলে রবীন্দ্রসংগীত. "ভালোবাসি ভালোবাসি এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি "উফঃ!কি নিদারুন ভালোবাসায় পড়ে গেলাম এই অন্ধকারকে ঘিরে। "গহন ঘন ছাইল গগন ঘনাইয়া স্তিমিত দশ দিশি, স্তম্ভিত কানন সব চরাচর আকুল.." প্রসঙ্গত বলে রাখি দুই পোষ্য --একটি খয়েরিি আর একটি কালো কুকুর ভীষণ ভালোবাসল আমাকে।খয়েরিটা(সোনা-আমার দেওয়া নাম) তো মুখ দিয়ে কত কথা বললো আর কালোটা(বাবু-এটাও আমার দেওয়া নাম)-সে তো আমায় ছাড়বেই না। "ওলো সই ওলো সই আমার ইচছা করে তোদের মতন মনের কথা কই" টেন্টগুলো সব নদী মুখো আর মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ সংকটুয়ারীর ধারে।সেইজন্য পোকামারার ওষুধ ও মশার কয়েল অতি অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন--টর্চ ও সাথে থাকা প্রয়োজন।সকাল হতেই নদীর সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম আবার।ছোটবড় পাথরগুলোর মধ্যে ছোট পাথরগুলোকে বিশ্বাস করা ভালো।একটা ছোট্ট বাঁশের ব্রীজ সৌন্দর্যকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে।এখানে অনেক পাখিও দেখা যায়।ভাগ্য ভালো থাকলে বিরল রুফস নেকড হর্ন বিল দেখা যেতে পারে।এছাড়া আছে ইউহিনা, স্কেলি থ্রাস, উডপিকার,কালো বুলবুলি,ছাইরঙা স্রাইক,স্পটেড ঈগল, মাগপাই,মিনিভেট,মিনলা,ড্রনগো, কিংফিশার, রবিন..আরো কত কি!! আকাশের অবস্থা ভালো নয় কিন্তু এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে মন চায় না তবু যেতে হবে।তবে বলবো এখানে ২দিন অন্ততঃ থাকুন।সকালে সৌন্দর্য উপভোগ করে টেন্ট ছাড়লাম।যাবো এবার অহলদাড়া তে।ড্রাইভারজিকে 300/-টাকার চুক্তিতে মালদিরাম সানরাইজ পয়েন্ট এ নিয়ে গেলেও আকাশ কালো মেঘে ঢাকা ছিল বলে দেখতে পেলেন না সূর্য।।ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো বলে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গেলাম।গাড়ি চললো আরেক সুন্দর জায়গায়..অহলদারাতে। "গগন সঘন অব,তিমির মগণ ভব তড়িত চকিত অতি,ঘোর মেঘরব. যাওয়া..থাকা: আমরা NGP থেকে ১৮০০/-টাকার চুক্তিতে শিভাখলা পৌছাই।ব্যাবস্থা করে দেন শিবখলার টেন্ট মালিক D. P. Prodhan(7076012314/8388842341)।এখানে টেন্ট এর ভাড়া 900/-per day per head থাকা খাওয়া সমেত।এখানে বাঁশের তৈরি 2টি double bed room cottage আছে, সঙ্গে attached toilet আর 3টি চার বেডেড laxury tent, সঙ্গে attached toilet। প্রকৃতিপ্রেমী হলে আমি নিশ্চিত এই শিবখলার সৌন্দর্যে আপনি পাগল হয়ে যাবেন।এ যে এক অপার্থিব সৌন্দর্যের হাতছানি।..বিদায় শিবখলা..তোমাকে ভুলবো না। ..তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে...
2020.. এই একটা বিদঘুটে বছর একটা, কিন্তু তাতে আমার ঘোরা থামে নি, এই বছরেও ঘুরবার নেশা একই রয়েছে, তা সে অফিসের কাজেই হোক বা নিজের ইচ্ছা তেই ঘোরা হোক, ভুটান দিয়ে শুরু, 2 বার মন্দারমণি, গ্রামের বাড়ি, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি, কাঁকড়াঝোর, শান্তিনিকেতন, ডুয়ার্স, এবং অবশেষে পুরুলিয়া, অযোধ্যা... এটাই শেষ কিনা বলা যাচ্ছে না, কারণ এটা লিখতে লিখতে অফিসের ফোন, দেওঘর যেতে হবে, ফ্যাক্টরি ভিসিট এ, যাই হোক এর আগের লেখা ছিল আমার গ্রামের বাড়ি এবং বেলপাহাড়ি তে বাইকে..
এবার ও সেই বাইক নিয়েই গেলাম পুরুলিয়া, আমাদের একটা গ্রুপ আছে নাম তার THERIDERKOLKATA আমরা যেখানেই বাইক নিয়ে বেড়াই চেষ্টা করি সকাল সকাল যাত্রা শুরু করতে, সেই মতো এবারও সবাই রেডি হয়ে যাই কারণ আমাদের মিটিং পয়েন্ট ছিল ডানকুনি টোল প্লাজা তে ভোর 3:30 এ.. কিন্তু বাধ সাধলো হঠাৎ বৃষ্টি, তাই অপেক্ষা করতে হলো, কিন্তু বৃষ্টি কমবার নাম নেই, কিন্তু আমরাও rider একটু পাগল টাইপের হই, অপেক্ষা করতেই থাকলাম, অবশেষে বৃষ্টি কমলো, সাথে সাথে আমরাও শুরু করে দিলাম যাত্রা, যদিও অনেকটাই দেরি হয়ে গেছিলো পৌঁছাতে ডানকুনি, আমাদের নিয়ম অনুযায়ী 80-90 স্পিড এ পৌঁছে গেলাম শক্তিগড়, প্রাতরাশ টা সারলাম লুচি আর তরকারি সাথে লাংচা, অল্প জিরিয়ে আবার শুরু করলাম, এবার পৌঁছলাম দুর্গাপুর ব্যারেজ, কারণ বাইকে গুলো কেও একটু রেস্ট দিতে হবে সাথে আমাদের কোমর কে, তাই একটু চা পানের বিরতি, সেটা সেরেই আবার শুরু করলাম যাত্রা পুরুলিয়া র উদ্দেশ্যে, পুরুলিয়া টাউন এ এসে পৌঁছলাম যখন তখন প্রায় দুপুর 2:30 টা.. দুপুরের লাঞ্চ টা রাস্তার ধারেই একটা হোটেল এ সারলাম, ভাত, ডাল, আলুভাজা, কুন্ডলি ভাজা, ডিম এর অমলেট, রুটি এবং তড়কা, তারপর আবার শুরু হলো যাত্রা কারণ আমাদের এবার পৌঁছাতে হবে পাখি পাহাড়, রাস্তা এক কোথায় মাখন, কখনো কখনো 120-125 এ স্পিড উঠেছে, তবে পুরো টাই 80-90 স্পিড এ... পৌঁছে গেলাম পাখি পাহাড়, ইচ্ছা ছিল একটু off route ride traial তাই বাইকে নিয়ে জঙ্গল এ ঢুকে গেছিলাম, কিছু ক্ষণ সময় কাটাতেই নেমে এলো অন্ধকার, তাই আবার যাত্রা শুরু হলো অযোধ্যা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে, লোয়ার ড্যাম, আপার ড্যাম অতিক্রম করে চলে এলাম অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে, যত বার গ্রাম এ যাই ততবার অবাক হই এদের ব্যবহার দেখে, আলুর চপ আর ডিমের চপ খেলাম মুড়ি দিয়ে, পয়সা দেবার সময় দোকান দার কোনো হিসাব করলেন না, বলে দাদা বাবু আপনাদের যা ভালো মনে হয় দিন, প্রতি চপ 5 টাকা করে, আমাদের শহরে এরকম মানুষ খুঁজতে লণ্ঠন নিয়ে বেড়াতে হবে, ঠিক করলাম রাত এ দেশী মুরগি দিয়ে রুটি খাবো, কথামতো সেই চপ এর দোকান এর দাদা কেই দিলাম রান্না করতে, যথাযত রান্না হলো সুস্বাদু সাথে 50 টা রুটি 6 জন এর, খেয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম কারণ পরদিন ভোর 4 টে উঠে তৈরী হয়ে বেড়াতে হবে, মুরুগামা র জন্য, এক কোথায় অপরূপ সুন্দর, যাবার রাস্তা ও খুব ভালো, পাহাড়ে রাস্তায় বাইকে যাবার অভিজ্ঞতা, সেখানে কিছু ক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে গেলাম বামনী ফলস, মার্বেল লেক, ঘুরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা, মাঝে একটা কথা তো বলাই হলো না, মাঝ পথে একটা টিলা তে বাইকে উঠে নিজেরা ম্যাগি বানিয়ে খেলাম, আমরা স্টোভ, কেরোসিন, প্লেট, চামচ নিয়েই গেছিলাম, প্রাতরাশ টা এভাবেই হলো, খুব বেশি লিখলাম না এবার, কিছু তথ্য দিয়ে দিলাম, |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |