মাত্র দিন তিনেকের জন্য মন ভালো করার জায়গা মায়াপুর। এর আগেও গেছি, তবুও আবার মায়ার টানে ঘুরে এলুম মায়াপুর। যেতে গেলে নামবেন নবদ্বীপের বিষ্ণুপ্রিয়া স্টেশনে, সেখান থেকে টোটো করে ফেরিঘাট, এখানে বলা ভালো, ফেরি ঘাটের কাছেই আছে জলখাবারের ভালো কয়েকটি দোকান। লুচি, ছোলার ডাল আর অবশ্যই নবদ্বীপের ভাঁড়ের মিষ্টি দই। লঞ্চ/নৌকায় গঙ্গা পার করে আবার টোটোয় করে একেবারে ইসকন। থাকার জন্য আছে ইসকনের নিজস্ব ভবনগুলি, আগে থেকে বুক করলে বেশি ভালো। ইসকনের ভিতরে পার্ক, অন্যান্য মন্দির, গোশালা ইত্যাদি পায়ে হেঁটে/ টোটো করে ঘুরে দেখার ব্যবস্থা আছে। নব নির্মীয়মান মন্দিরটি দেখার মতো। প্রসাদ খাওয়ার জন্য অবশ্যই আগে থেকে কুপন কেটে রাখবেন। সকাল সকাল ঘুরে নেবেন পুরো মায়াপুর এবং নবদ্বীপ টাউন। তবে হ্যাঁ, দরদাম করে নেবেন না হলে মুশকিলে পড়বেন।
0 Comments
সব ধাম একবার, মায়াপুর বারবার.. কবিগুরু ঠিকই বলেছেন - 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের ওপর একটি শিশির বিন্দু।' কবি গুরুর কথা স্মরণ করে বেরিয়ে পড়লাম কল্যাণী থেকে আশি কিলোমিটার দূরে মায়াপুর, The International Society for Krishna Consciousness (ISKCON) এর উদ্দেশ্য। রবিবার ছুটির দিনে ঠিক করা হল, সঙ্গী হিসেবে পেলাম ক্রিস কে। উদ্দেশ্য একটাই iscon এ পুজো দেওয়া আর তারই দৌলতে ঘুরে আশা।. কল্যাণী স্টেশন এ চলে এলাম সকাল সাতটায়। টিকিট কাটলাম কৃষ্ণনগর স্টেশন। ভাড়া 15 টাকা। ট্রেন এর টাইম 7.25, যথারীতি ট্রেন এ উঠলাম, মেঘলা আকাশ, আর শীতল হওয়ার স্রোত কে উপেক্ষা করে ট্রেন এগিয়ে চললো কৃষ্ণনগর এর উদ্দেশ্য। রবিবার হলেও ট্রেন এর ভিড় ছিল মোটামুটি, তার উপর কৃষ্ণের জন্মদিন বলে কথা, তাই সিট না পেয়ে, গেটের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। ট্রেন ছুটে চলেছে, রানাঘাট পেরোতেই দেখতে পেলাম লাইনের দুই দিকে কলা গাছের জঙ্গল। " ভালোই লাগছিল প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে করতে যাওয়ার মজাই আলাদা। 8.35 এ আমরা কৃষ্ণনগর এ নেমে চলে গেলাম অটো ধরতে, স্টেশন এর পাশেই অটো স্ট্যান্ড, ওখানে মায়াপুর ঘাটের অটো ধরলাম, অটো চললো ভাঙা রাস্তার উপর দিয়ে। ফাঁকা রাস্তার উপর দিয়ে ছুটে চলেছে, রাস্তার পাশে অনেক পুরোনো খিরিস গাছ রাস্তা টাকে ছাতার মতো আগলে রেখেছে। 9. 14 am এ আমরা পৌঁছে গেলাম মায়াপুর ঘাট এ। ঘাট এর এক কোণে ছোট্ট একটা টিকিট কাউন্টার, যেখানে এই অকাল এর দিনেও এক টাকার টিকিট পাওয়া সত্যই গর্বের বিষয়। টিকিট কেটে উঠে গেলাম নৌকো তে, ছোট্ট নদী, নাম জলঙ্গি। শান্ত নদী, নীল জল তার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে । ঘাট পেরিয়ে মায়াপুর এলাম, এখান থেকে iskon মন্দিরে যাওয়ার জন্য toto বাস সর্বদা মজুত। আমরা পায়ে হেঁটে এগিয়ে গেলাম iskon এর দিকে। মাঝে অনেক গুলো আশ্রম এ ঢুকে দেখতে দেখতে iskon এ ঢুকলাম। iskon এ ঢুকতে চোখ এ পরবে এক কোণে non stop হরিনাম এর একটা কুটির, এর উল্টো দিকে রয়েছে, প্রভুপাদ পুষ্প সমাধি। তার উল্টো দিকে রয়েছে বিশাল iskon মন্দির যা এখনো কাজ চলেছে, যার রূপের ছটায় জগত বিখ্যাত। তার এই পাশে মেন রাধা কৃষ্ণের মন্দির। আমরা একের পর এক মন্দির দর্শন করতে লাগলাম। এরই ফাঁকে দুপুরের খাওয়ার এর টিকিট কাটলাম। এখানে খাওয়ারের টিকিট তিন রকম এর পাওয়া যায়। এক 30 টাকার, যেখানে খিচুড়ি সাদা ভাত এর মধ্যে পরে, দুই 50 টাকার, তিন 70 টাকার। আমরা 70 টাকার দুটি টিকিট করলাম, খাওয়ার মেনু গুলো ছবি তে আপলোড করে দেবো। এর পর আমরা মেন মন্দির এ ঢুকলাম, রাধা কৃষ্ণের অপরূপ সৌন্দর্য যে কোনও মানুষের মনে ভক্তি সঞ্চার করার সাহস রাখে। এখানে পুজো দেওয়ার জন্য কাউন্টার আছে, এখান থেকে পুজো জন্য টাকা দিতে হয়, সঙ্গে নাম গোত্র দিতে হয় । পুজো 101 টাকা দিয়ে শুরু, বিভিন্ন রকম এর আছে, কুপন করার পর নির্দিষ্ট ডিস্ক থেকে, নির্দিষ্ট টাইম এ সেটা collect করতে হয়। আমি পুজো দেওয়া পর দেখলাম প্রসাদ হিসেবে রয়েছে গোটা ফল, যেমন আপেল,বেদনা, কলা, laddu, Sasha ইত্যাদি। এর পর ওখান থেকে বেরিয়ে গেলাম গোসালার উদ্দেশ্যে। এখানে যেটা অবাক লাগে যে প্রতিটি গরু র একটি particular নাম আছে, আর গরু কে প্রতিপালন করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে পাওয়া যায় ঘি, মাখন, মিষ্টি, আরো অনেক কিছু। এর পর গেলাম গদা ভবন এ এখানে আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে, চেয়ার টেবিলে বসে, fried rice খাওয়ার মজাটাই আলাদা। সংক্ষিপ্ত বিবরণ এ এইটুকু বলবো iskon কে অনুভব করতে গেলে যেতে হবে, আর একদিন এর ট্যুর হলে iskon কে পছন্দের তালিকায় রাখা যেতেই পারে, সকাল থেকে সন্ধ্যা হলেও iscon কে দেখে শেষ করা যাবে না, আর iskon এর সন্ধ্যা আরতির কথা বললাম না। দেখতে হলে যেতেই হবে মায়াপুর। Post By-Soumen Maity
মায়াপুর ইসকন গ্রুপ এ এটা আমার দ্বিতীয় পোস্ট। প্রথম টা ছিল দিঘা নিয়ে। ভালো রেসপন্স পেয়েছিলাম তাই আজ আবার একটা পোস্ট করতে ইচ্ছে হলো। আগের পোস্ট যারা পরেছে তারা জানবেন আমাদের একটা ১২ জনের গ্রপ আছে। আমরা প্রায় কাছাকাছি ছোট খাটো ট্যুর এ বেরিয়ে পড়ি। তা এবার হটাৎ করেই ঠিক হলো ১৮ ই আগস্ট শনিবার মায়াপুর যাবো। কিন্তু যত দিন এগিয়ে আসে গ্রুপ এর সদস্য দের মধ্যে অনেকের নানা কারণে বাধা পড়তে থাকে। ট্যুর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে, কিন্তু হয়তো শ্রী কৃষ্ণের ইচ্ছাতেই আমাদের সব বাধা কেটে গেল আর যাবার আগের দিন সবাই রাজি হয়ে গেল। আমাদের বাড়ি ডানকুনি তাই আমরা ঠিক করলাম হাওড়া থেকে সকাল ৫.৩৮ এর কাটোয়া লোকাল টা ধরবো, তাই তার জন্য আমাদের ডানকুনি স্টেশন থেকে হাওড়া যাবার ১ম ট্রেন টা ধরতে হলো ভোর ৪.৫০ নাগাদ। কিন্তু রেল বিভ্রাট এর জন্য ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছিল। তাই আমরা ডানকুনি স্টেশন এরই শিয়ালদহ শাখার একটি দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন ধরে বালীহল্ট স্টেশন এ নামলাম, নেমে সিঁড়ি বেয়ে নীচে এসে বালী মেনলাইন স্টেশন এ উপস্থিত হলাম। এটি করতে গিয়ে আমাদের বেশ হয়রানি পোয়াতে হলো, রেল পার হয়েই বাচ্চা নিয়ে ব্যাগ নিয়ে এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশন এ যাওয়া কম সময়ের মধ্যে বেশ চাপের ব্যাপার। ট্রেন ফেল হওয়ার ভয় থাকে। যাক বালী স্টেশন এ পৌঁছে চা বিস্কুট খেলাম। ৫.৩৮ এর হাওড়া- কাটোয়া লোকাল বালী স্টেশন এ এলো ৫.৫৫ নাগাদ, আবার সবাই ব্যাগ ট্যাগ বাচ্ছা সামলে ট্রেন এ উঠে পড়লাম। ফাঁকা কামরা দেখে তো আমরা খুব খুশি সবাই সিট পেলাম বসার, কিন্তু ট্রেন ছাড়তেই অস্বস্থি বোধ করতে থাকলাম এক প্রকার দুর্গন্ধ এর জন্য। তার পর দুর্গন্ধ এর উৎস খুঁজতে গিয়ে যা দেখলাম তা আর বলছি না, কোনোরকমে পরের স্টেশন অবধি আমরা ওই কামরায় নাক চাপা দিয়ে বসেছিলাম। পরের স্টেশন আসতেই আমরা আবার কামরা চেঞ্জ করে অন্য একটা কামরায় উঠলাম, বলাবাহুল্য সবাই সিট পেলাম না, ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে বসে খোশ গল্প আর খাওয়া দাওয়া করতে করতে আমরা এগিয়ে চললাম বিষ্ণুপ্রিয়া স্টেশন এর উদ্যেশে। একটা জিনিষ খেয়াল করলাম, এই লাইনে প্রচুর হকার, ২ ঘন্টার ট্রেন যাতায়াত এ কামরায় হকার নেই এমন টা চোখে পড়ে নি। বিষ্ণুপ্রিয়া পৌঁছলাম সকাল ৭.৪৫ নাগাদ। ট্রেন ভাড়া লাগলো ডানকুনি থেকে বিষ্ণুপ্রিয়া ২৫/- টাকা প্রতিজন । স্টেশন থেকে নেমে টোটো গাড়ী ভাড়া করলাম ২ টো, ১০/- টাকা প্রতিজনের হিসাব এ। চললাম ফেরিঘাট এর উদ্দেশ্যে। ওখান এ গিয়ে দেখলাম ঘাট এ সরকারি লঞ্চ এবং কাঠের বড় নৌকা দুই আছে গঙ্গা পার হবার জন্য। লঞ্চ ভাড়া ৭/- টাকা প্রতিজন আর নৌকা ৩/- টাকা প্রতিজন। আমরা নৌকা তে যাবো ঠিক করলাম। ভাবলাম নৌকা একটু দুলবে এবং মহিলা বন্ধুগণ একটু ভয় পাবে, বেশ মজা হবে। কিন্তু নৌকা তো বেশ ভালো ভাবেই ভাগীরথী পর হলো একটু ও দুললো না। মাঝে দেখলাম ভাগীরথী ও জলঙ্গির মিলন। জলঙ্গির জল একটু কালচে রঙের আর ভাগীরথীর তো আমরা জানি ঘোলাটে রং। দুটো আলাদা করে বেশ ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছিল, দারুন অভিজ্ঞতা। যাক এবার নৌকা থেকে নেমে আমরা আবার টোটো গাড়ি ভাড়া করলাম, ওরা বললো ইসকন এর মেন গেট এ নামিয়ে দিলে ১০/- টাকা প্রতিজন আর একদম ভবন এ নিয়ে গেলে ২০/- টাকা প্রতিজন। বললো গেট থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার এর বেশি ভবন। তাই বিশ্বাস করে আমরা ভবন পর্যন্তই গেলাম। কিন্তু ওটা ১ কিমি ছিল না, আরামশে আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষ হেঁটে চলে যেতে পারবে। যাক আমরা যে ভবনটায় উঠলাম তার নাম গীতা ভবন। ওখান এ আমাদের বললো ৩ রকম নন- এসি ঘর আছে, ৪ বেডেড এর এটাচড বাথরুম ৮০০/- টাকা, ১০ জনের ম্যাট্রেস দেওয়া ডরমেটোরি কমন বাথরুম ৬০০/- টাকা, ৪ বেডেড কমন বাথরুম ৩৫০/- টাকা। আমরা ৩৫০/- টাকার ৩ টে ঘর নিলাম। ঘর ও বাথরুম দেখে আমরা খুব খুশি হলাম। লিখে বোঝাতে পারবো না তাই বাথরুম আর রুম গুলো কেমন ছিল সেটা ছবি তে দেখে নেবেন। যাই হোক ভোর থেকে শুরু হওয়া যাত্ৰা অবশেষে শেষ হওয়ার পর একটু রেস্ট পেলাম। সবাই ফ্রেশ হয়ে নিয়ে আড্ডা দিলাম সেলফি তুললাম তারপর আমরা ছেলেরা ইসকন কম্পউন্ড এর একটি দোকান থেকে ব্রেকফাস্ট নিয়ে এলাম। ব্রেকফাস্ট এ ছিল ধোকলা, ভেজ বার্গার, ইডলি, ভেজ চাউমিন। সবই ৩০/-, ৪০/- টাকা প্লট। আবার চললো আড্ডা, মস্করা, ঝগড়া,খুনসুটি। সকাল ১১ টার মধ্যে গীতা ভবনেই মধ্যাহ্ন ভোজের কুপন কাটলাম, ৫০/- টাকা প্রতিজন আর ৬/৭ বছরের বাচ্ছাদের দের জন্য ২৫/- টাকা প্রতিজন। ভবন থেকে আর বের হই নি, সাইড সিন এ যাই নি, মন্দির দর্শন, কৃষ্ণ দর্শন, নিমাই দর্শন, প্রভুপাদ দর্শন করবো এটাই প্লান ছিল। দুপুর ১.৩০ নাগাদ ভোগ খেতে গেলাম গীতা ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোর এ । বিশাল কম্পউন্ড একসঙ্গে ১০০০/- মানুষ ভোগ খেতে পারবে। ভোগ খেতে গেলে হাফ প্যান্ট, লুঙ্গি এবং নাইটি পড়া যাবে না। মাটিতে শতোরঞ্জিতে বসে ভোগ খেলাম গরম গরম বেগুনি, ভাত, মুগের ডাল, লাউ ঘন্ট, হাথ রুটি, পনির দিয়ে পটলের তরকারি, পায়েস। খুব চাপ করে খেয়ে ফেললাম, টেস্ট বেশ ভালোই। এর পর আবার একবার আড্ডা চললো, বাচ্চা গুলো ঘুমালো একটু। বিকেলে আর বেরোনো হয় নি। সন্ধ্যা হবার একটু আগে আমরা মন্দির এর উদ্দেশ্যে বের হলাম, ফটো তোলা হলো হাঁটতে হাঁটতে। মন্দির এ মোবাইল নিয়ে ঢোকা যায় না, তাই ১০ টাকা দিয়ে ১২ টা মোবাইল জমা রাখলাম, ফ্রী তে জুতো গুলো জমা রাখলাম। মন্দির এ প্রবেশ করলাম, মন্দির এ হাফ প্যান্ট, ওড়না ছাড়া ড্রেস না পড়ে যাওয়াই ভালো, আর মেয়েদের খোঁপা চুল মন্দির কর্তৃপক্ষ বেঁধে নিতে বলছিল। যাই হোক নিমাই এর জীবনীর উপরে দেওয়াল খোদাই করে এক শিল্প দেখলাম, দেখলাম নৃসংহ দেব এর মূর্তি, দেখলাম রাধা কৃষ্ণের মধুর প্রেম সখি দের মাঝে, নিমাই এর কীর্তন রত মূর্তি দেখলাম। আর সন্ধ্যা ৬ টায় আরতি শুরু হলো আরতির ছন্দে বুঁদ হয়ে নিজেদের মধ্যে এক নিদারুন সুখ খঁজে পেলাম। আমরা কেউ ই খুব আধ্যাতিক টাইপ নয় তবুও মন টা খুব শান্ত ও শিশুসুলভ হয়ে রইল বেশ কিছুক্ষণ। যেখানে মোবাইল জমা রেখেছিলাম আরতি শেষে সেখানে ভোগ বিতরণ হচ্ছিল সেখান এ এ লাইনে দাঁড়িয়ে প্রসাদ খেলাম। এবার একটু ঘোড়া ঘুড়ি করলাম, আমাদের ই কিছু বন্ধু প্রভুপাদ এর মন্দির দর্শন এ গিয়েছিল। তারা ফিরলে পর আমরা টুক টাক খাওয়া দাওয়া মিটিয়ে ভবন এর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রাতের ভোগ এর কুপন কাটাই ছিল, বড়ো দের ৪০/- টাকা ছোটদের ২০/- টাকা। খেলাম গরম গরম ভাত, ডাল, মিক্স সবজি, রুটি, পানির দিয়ে ঘুগনি, রসগোল্লা। রসগোল্লা টা অসাধারণ ছিল। এবার রুম এ এলাম এসে চেঞ্জ করে আবার একটু আড্ডা হলো তারপর সবাই ঘুমাতে চলে গেলাম। কথা হলো ভোর ৪.৩০ এর আরতি দেখতে যাবো। ঘুম ভাঙল ১৯ এ আগস্ট ভোর ৩.৩০ এ, সবাইকে ডাকলাম। অর্ধেক এ যেতে চাইলো না। ঘুম এ বিভোর, সারাদিন এর জার্নি তে এটাই স্বাভাবিক। আমরা ৯ জন ২ টো বাচ্চা কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, মন্দির এ গিয়ে দেখি আরতি প্রায় শেষ। মন টা খারাপ হয়ে গেল, কি আর করা যাবে। ভোরের পরিবেশ টা কিন্তু খুব ভালো লাগছিলো, তাই মন টাও ভালো হয়ে উঠলো। নরম ঘাস এ খালি পায়ে হাঁটলাম, ছোট ঝিলে এক জন লোক পদ্ম তুলছিল ডিঙি নৌকা করে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেটা উপভোগ করলাম, তর্ক লাগলো ওটা পদ্ম না শালুক এই নিয়ে। এবার রওনা হলাম গোশালার দিকে। অনেক ধরণের গরু, ষাঁড় দেখলাম। দই, ঘোল, মিষ্টি খেলাম। কিছু কেনাকাটা করলাম।আমরা ৫ জন ছাড়া সবাই ভবন এ ফিরে গেল। আমরা কচুরি, মুড়ি, সিঙ্গারা, চানাচুর নিয়ে ভবন এ ফিরলাম। সবাই মিলে মিশে ব্রেকফাস্ট সারলাম। পেট ঠিক ভরলো না তাই একটু কোথাও শুনতে হলো। এরপর আমার পুএ ত্রিশানজিত এর জন্মদিন উপলক্ষ্যে সবাই মিলে কেক কাটা হলো। কেক টা খুব ই ভালো ছিলো। হারবাল ডিম ছাড়া কেক, ইসকন এর কম্পউন্ড এর দোকান থেকেই কেনা। এর পর আবার আমরা সবাই মিলে বেরোলাম। আমরা যারা আগের দিন প্রভুপাদের মন্দির দর্শন করি নি তারা গেলাম মন্দির দর্শন এ , বাকিরা কেনাকাটা করতে গেল। মন্দির দর্শন করে বেরোলাম আকাশ তখন কালো করে এসেছে। আমাদের কিছু বন্ধু ইতি মধ্যে ভবন এ পৌঁছে গেছিলো। আমাদের কিছু কেনা কাটা করতে আরো বেশ খানিকটা দেরি হলো। তার মধ্যেই মুষল ধারে বৃষ্টি নামলো।আমরা একটা মন্দির এ দাঁড়িয়ে পড়লাম। কিছুক্ষন পর বৃষ্টি থামলো কিন্তু বৃষ্টি এতই হয়েছিল যে রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে গেছিলো। তাড়াতাড়ি হেঁটে হোটেল এ পৌঁছলাম। কুপন নেওয়াই ছিল, হাত ধুয়ে বসে পড়লাম খেতে। মেনু হলো গরম গরম কুমরোলি, ভাত, মুগের ডাল, মিক্স সবজি, রুটি, মটর পানির, পায়েস। ঠাকুরের কৃপায় আমার ছেলের জন্মদিন এ পায়েস টা ঠিক খাওয়া হলো। এর পর রুম এ চলে এলাম। যেহেতু ওই দিন এ আমার ছেলের জন্মদিন তাই ঠিক ছিল যে আমরা একটু তারাতাড়ি বাড়ি ফিরবো, তাই কেউ আর সেরকম ড্রেস চেঞ্জ এর দিকে যায় নি। একটু গল্প গুজব হাসি ঠাট্টা করে বেরিয়ে পড়লাম বিকেল ৩.১৫ নাগাদ ভবন ছেড়ে। ও ভালো কথা আমরা যে ৩ টে রুম নিয়েছিলাম তা সকাল ৮ টায় ছাড়ার কথা ছিল, কিনতু আমরা ১ টা ঘর ছেড়ে দিলাম আর ২ টো রুম রেখে দিয়েছিলাম আরো একদিনের ভাড়া দিয়ে। ভবন থেকে বেরিয়ে মেন গেট পর্যন্ত এবার হেঁটেই এলাম। ওখান থেকে ১০/-টাকা প্রতিজন দিয়ে টোটো ভাড়া করে ফেরিঘাট এ এলাম। নৌকার টিকিট কাটলাম ৩/- টাকা প্রতিজনের হিসাব এ। নৌকা তে একটু ছবি তোলা হলো। নৌকা থেকে নেমে দৌড় লাগলাম বিষ্ণুপ্রিয়া স্টেশন এ যাবার টোটো ধরার জন্য, কারণ ট্রেন ছিল বিকেল ৪.১০ এ। টোটো নিলো ১০/- টাকা প্রতিজন। স্টেশন এ পৌঁছেই তাড়াহুড়ো করে টিকেট কাটলাম হাওড়া পর্যন্ত, টিকেট এর দাম ২৫/- টাকা প্রতিজন। ট্রেন ও এসে গেলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই। আমরা সবই সাবধান এ ট্রেন এ উঠলাম, এবং বসার সিট ও পেয়ে গেলাম সবাই। একটা ছোট একতারা কিনেছিলাম। সারা রাস্তা বাজাতে বাজাতে আর ইয়ার্কি করতে করতে কখন যে বালি চলে এলো বুঝতেই পারলাম না। তার আগের স্টেশন উত্তরপাড়াতে আমাদের এক বন্ধু নেমে গেল, ওর ওখান থেকে বাড়ি পৌঁছোতে সুবিধা হবে বলে। বাকিরা বালী নেমে ওভার ব্রিজ দিয়ে কর্ড লাইন এ এসে ট্রেন এর অন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না, হাওড়া তে যে ট্রেন টা ৬.৩০ এ ছাড়ে ওটা একটু পরেই চলে এলো। আমরা ট্রেন এ উঠলাম এবং যথাসময়ে ডানকুনি এসে গেলাম। আমি এবং আরো ৩ জন বন্ধু অবশ্য ডানকুনির পরের স্টেশন গোবরা থেকেই উঠেছিলাম যাবার সময়, তাই আমরা ডানকুনি না নেমে গোবরা তে নামলাম। মন টা বেশ খারাপ হয়ে গেল, আবার খুব তারাতাড়ি এরকম আবার একদিন বেরিয়ে পড়বো।আবার আপনাদের সাথে শেয়ার করবো আমাদের অভিজ্ঞতা। ভালো থাকবেন। হরে কৃষ্ণ। Post By:- Indrajit Karmakar
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |