ঘুরে আসুন পোড়ামাটির শহর বিষ্ণুপুর
বিষ্ণুপুর : বাঁকুড়া জেলার অন্তর্গত , চোখ জুড়ানো টেরাকোটার মন্দিরের শহর এই বিষ্ণুপুর। অতীতে মল্লভুমের ( বাঁকুড়া, বর্ধমান, মেদিনীপুর, কিছুটা মুর্শিদাবাদ আর বিহারের ছোটো নাগপুরের কিছু অংশ) মল্ল রাজাদের রাজধানী ছিল এই শহর। এই রাজাদের আমলেই গড়ে ওঠে বিষ্ণুপুরের এই জগদ্বিখ্যাত মন্দির গুলি। ষোড়শ থেকে অষ্টাদশ শতকে এই সব মন্দির গুলি তৈরী হয়। বিষ্ণুর উপাসক মল্লরাজাদের পৃষ্ঠ পোষকতায় স্থাপত্যের উন্নতির সাথে সাথে সঙ্গীত চর্চা ( বিষ্ণুপুর ঘরানা) , বয়ন শিল্প ( যার পরবর্তী ফলস্বরূপ বাংলার বিখ্যাত বালুচরী, স্বর্ণচরী শাড়ি ), মৃৎশিল্প ইত্যাদির চরম উন্নতি হয়েছিল। এখানকার অসাধারণ নক্সা ও কারুকার্য করা দশ অবতার তাস আর পোড়ামাটির ঘোড়া, পোড়ামাটির বিভিন্ন সামগ্রী আর শাঁখাও বিখ্যাত। ১৯৯৮ সাল থেকে বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরগুলি ইউনেস্কো ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলি দুই ঘরানায় তৈরি। এর মধ্যে মদনগোপাল, নন্দলাল, রাধা গোবিন্দ, রাধা মাধব, লালজী মন্দিরগুলি ল্যাটেরাইট পাথরে গড়া আর মদনমোহন, মুরলী মোহন, জোড় বাংলা, শ্যামরাই ইটের তৈরি। বিষ্ণুপুরের প্রথম দর্শনীয় স্থান বিখ্যাত রাসমঞ্চ, যা ঝামাপাথরের তৈরি, যার উচ্চতা ৩৫ ফুট,চওড়ায় ৮০ ফুট, দেখতে পিরামিড আকৃতির। রাস মঞ্চের অনেকগুলি চওড়া খিলান যুক্ত বারান্দা অপূর্ব দেখতে লাগে। একটি বড়ো বেদীর উপর এই রাস মঞ্চ রয়েছে। এটি বাস স্ট্যান্ডের কাছে বিষ্ণুপুর কলেজে যাওয়ার পথে পড়বে। এটি কোনো মন্দির নয়, এতে কোনো বিগ্রহ নেই, সেকালে এখানে মহা সমারোহে রাস যাত্রা হতো। রাস উৎসবের সময় বিষ্ণুপুর শহরের যাবতীয় রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ এখানে আনা হত। ১৬০০ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত এখানে রাস উৎসব আয়োজিত হতো। এখান থেকেই ক্রমে রাসযাত্রা বাঁকুড়া, মেদিনীপুরে ছড়িয়ে পড়ে। মল্লরাজা বীর হাম্বীর আনুমানিক ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে এই মঞ্চটি নির্মাণ করেন। রাস মঞ্চের কাছেই দলমাদল কামান। ২৯৬ মণ ওজনের ১২ ফুট লম্বা এই মাকড়া পাথর গলানো লোহার তৈরি কামানটিতে এত বছরেও রোদ,জল বৃষ্টিতে মরচে পড়েনি। শোনা যায় যে, শত্রুদের হাত থেকে বিষ্ণুপুরকে রক্ষা করার জন্য মল্ল রাজাদের কুলদেবতা মদনমোহন নিজেই শত্রুদের উপর কামান দেগেছিলেন। এর পাশেই রয়েছে ছিন্নমস্তার মন্দির। আর তারপরই আছে যোগেশচন্দ্র পুরাকীর্তি ভবন। এই সংগ্রশালাটিও যথেষ্ঠ আকর্ষণীয়। পাল, সেন, মল্ল, মুঘল যুগের নানান পুরাকীর্তি, পুঁথি, নক্সা,মূর্তির নিদর্শন দেখতে পাবেন। এরপর বিষ্ণুপুর কলেজ ছাড়িয়ে চলে আসুন লাল ইটের স্তূপ, এক সময়ের গুম ঘরে, যার বেশির ভাগ অংশ এখন জঙ্গলে ভরে গেছে। একটু এগিয়ে এবার দেখবেন পাঁচ চূড়া বিশিষ্ঠ শ্যামরাই মন্দির। সমস্ত মন্দির জুড়ে রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত আর তৎকালীন সমাজ জীবনের পোড়ামাটির অপরূপ ভাস্কর্য। ১৬৮৩ সালে মল্লরাজ রঘুনাথ সিংহ এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। শ্যাম রাইয়ের কাছেই রয়েছে রাধা শ্যাম মন্দির। এই মন্দিরে আজও পুজো হয়। মন্দিরে রয়েছে রাধে শ্যাম, গৌর নিতাই আর জগন্নাথের মূর্তি। মন্দিরের সামনে সুন্দর নহবৎখানা, এক সময় নিত্য নাচগানের আসর বসতো। মন্দিরের চতুষ্কোণ ছাদের চূড়া গম্বুজের মতো। মন্দিরের অন্দরমহলে আছে তুলসিমঞ্চ, নাট মঞ্চ আর রান্নাঘর। রাধা শ্যাম মন্দিরের পরেই রয়েছে মল্ল রাজ দেব সিংহের জোড় বাংলা মন্দির। মন্দিরটি পরস্পর সংযুক্ত দুটি দোচালা কুটিরের সমন্বয়ে গঠিত। সংযুক্ত অংশের মধ্যস্থলে একটি চারচালা শিখর রয়েছে। তাই একে জোড় বাংলা বলা হয়। মন্দিরের দেওয়ালে রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনী, সামাজিক জীবনযাত্রা ও শিকারের দৃশ্য অপূর্ব টেরাকোটার কারুকার্যে চিত্রিত। এই মন্দির কৃষ্ণরায় মন্দির বলেও পরিচিত। রাধা শ্যাম মন্দিরের বিপরীতে রয়েছে বিষ্ণুপুরের প্রাচীন মন্দির, ৯৯৭ সালে মল্লরাজা জগৎমল্ল -এর তৈরী মন্দির, মৃন্ময়ী মাতার মন্দির। এই মন্দিরে পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে প্রাচীন দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এই মন্দিরের পিছনে মল্লরাজাদের রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ বর্তমান। এই মন্দিরের উত্তর -পূর্ব কোণে রয়েছে লাল জিউর মন্দির। এই মন্দির ছাড়িয়ে একটু গেলে পড়বে দূর্গের তোরণ দ্বারের মতো মাকড়া পাথরের বড়ো পাথর দরজা আর ছোটো পাথর দরজা। বড়ো দরজা ছাড়িয়ে কিছুটা দূরে পড়বে মদনমোহন মন্দির। ১৬৯৪ সালে, মল্লরাজা দুর্জন সিংহ এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেন। এই মন্দিরটির ছাদ চৌকো ও বাঁকানো, কিনারা বাঁকযুক্ত ও মধ্যে গম্বুজাকৃতি শীর্ষ বর্তমান। মন্দিরের দেওয়ালে পোড়ামাটির কৃষ্ণলীলা, দশাবতার ও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনীর বিভিন্ন দৃশ্য ভাস্কর্যের মাধ্যমে রূপায়িত।এই মন্দিরেও পুজো হয় রাধা কৃষ্ণের। এরপর দেখে নেবেন , বিষ্ণুপুরের একমাত্র শিব মন্দির মল্লেশ্বর। এছাড়াও মন্দিরের শহরে আরও অনেক প্রাচীন মন্দির দেখতে পাবেন। মন্দির ছাড়াও মল্ল রাজাদের মহান কীর্তি এখানকার বড়ো বড়ো দিঘি, লাল বাঁধ, কৃষ্ণ বাঁধ, যমুনা বাঁধ, কালিন্দী বাঁধ, পোকা বাঁধ, শ্যাম বাঁধ দেখতে পাবেন। মন্দির দর্শন শেষ হলে, চলে আসুন বড়ো কালিতলায়, পাটরা পাড়ায়। এখানে তৈরী হিয় বিখ্যাত বালুচরী শাড়ি। তবে, মল্লভূম সিল্ক সেন্টার থেকে শাড়ি কেনাই ভালো। বিষ্ণুপুর গেলে অবশ্যই কিনতে ভুলবেন না এখানকার দশবতার তাস, এই তাসের খেলা মল্ল রাজারা খেলতেন এক সময়। কাপড় শুকিয়ে জোড়া দিয়ে গোলাকৃতি এই তাস গুলোয় আঁকা হয় বিষ্ণুর দশবতারের বর্ণময় অপরূপ চিত্র। 120 সেটের এই তাস সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। আর যদিও বাঁকুড়ার পাঁচ মুড়ায় তৈরী হয়, তবুও বিষ্ণুপুরের নিদর্শনের স্মৃতি বিখ্যাত টেরাকোটার ঘোড়াও কিনবেন মনে করে। এছাড়া , পুরাণের কাহিনীর সূক্ষ্ম কারুকার্য করা শাঁখ আর শাঁখা কিনতেও পারেন। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এখানে একটি মেলার আয়োজন করা হয়। শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলার মত এটিও খুব বিখ্যাত মেলা। তবে এই মেলা দেখতে হলে, আগে থেকে বিষ্ণুপুরের হোটেল বুকিং করে নেওয়া ভালো,না হলে থাকার জায়গা পাওয়া খুব মুশকিল, হোটেল ওই সময় পাওয়া যায়না বললেই চলে। বিষ্ণুপুর থেকে কাছাকাছি ঘুরে নেওয়া যায় কংসাবতী নদীর উপর ড্যাম মুকুটমনিপুর, ঝিলিমিলি, মা সারদার জন্মস্থান জয়রামবাটি, শ্রী রামকৃষ্ণের জন্মস্থান কামারপুকুর। কিভাবে যাবেন : হাওড়া থেকে খড়গপুর হয়ে বাঁকুড়ার পথে বিষ্ণুপুর। দূরত্ব ২০০ কিমি, সময় লাগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা। কলকাতা থেকে বাঁকুড়ার ট্রেনগুলি যায় বিষ্ণুপুর। আরামবাগ স্টেশনে নেমে কামারপুকুর, জয়রাম বাটি দর্শন করেও বাসে বা ট্রেকারে যাওয়া যায় বিষ্ণুপুর। কলকাতা থেকে সড়কপথে ধর্মতলা থেকে সরকারি, বেসরকারি বাস যায় বিষ্ণুপুর, সময় লাগে ৫ ঘণ্টা। বিষ্ণুপুর পৌঁছে রিক্সা/অটো/টোটো ভাড়া করে দেখে নেওয়া যায় 3 থেকে 4 ঘণ্টায় বিষ্ণুপুরের দর্শনীয় স্থানগুলো। কোথায় থাকবেন : এখানে প্রচুর হোটেল আছে। WBTDC এর বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজ 03244- 252013, বেসরকারি হোটেল উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- উদয়ন লজ : ০৩২৪৪-২৫২২৪৩ মোনালিসা লজ : ০৩২৪৪-২৫২৮৯৪, ৮১৪৫৬৮৪১৪১ হোটেল লক্ষ্মী পার্ক : ০৩২৪৪ ২৫৬৩৫৩ হোটেল অন্নপূর্ণা : ৭৪০৭৫০৪০০০, ৭৪০৭৫০৫০০০ তথ্য সূত্র: উইকিপিডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা © কলমে : মিতা মন্ডল ছবি : Wikipedia, Google থেকে সংগৃহীত
0 Comments
ছোট্ট ভ্রমণ
"""""""" আমি তো জঙ্গল ঘুরতেই বেশি ভালোবাসি।আপনাদের মধ্যে জঙ্গল যারা ঘুরতে ভালোবাসেন ছোট্ট ছুটিতে কাছাকাছির মধ্যে ঘুরে আসতেই পারেন জয়পুর। বর্তমানে থাকার জায়গাও আছে সরকারি লিজে চলা বনলতা রিসর্টে। যদি ওখানে নাও থাকতে চান সামনেই কিছুটা দুরেই আছে পুরোনো ঐতিহাসিক টেরাকোটার কাজ যুক্ত মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর। একসাথে জয়পুর_বিষ্ণুপুর ভ্রমণও করতে পারেন। যদিও আমার এ পর্বে শুধুমাত্র জয়পুরের জঙ্গল। আরামবাগের দারকেশ্বর নদের ব্রীজ পেরেলেই রাস্তাটা দুদিকে ভাগ হয়ে গেছে,বাঁ দিকে সোজা কামারপুকুর। কামারপুকুর চটি থেকে বাঁ দিকের রাস্তা আরেক ছোট ভ্রমনের গড়মন্দারন হয়ে সোজা মেদিনীপুর। কামারপুকুর চটি থেকে সোজা রাস্তাটা কামারপুকুর-জয়রাম বাটি হয়ে বাঁকুড়ার দিকে চলে গেছে। আর দারকেশ্বরের ব্রীজ পেরোলেই ডানদিকের রাস্তাটা কোতলপুর-জয়পুর-বিষ্ণুপুর হয়ে বাঁকুড়ার দিকে। না আর এগিয়ে লাভ নেই,আপাততো থামলাম জয়পুরেই! অতি মনোরম এই জয়পুরের রাস্তা,দুধারে বড় বড় গাছ প্রায় সারাক্ষনই ছায়াঘন পরিবেশ তৈরি করে রাখে।মাঝে চকচকে পিচের রাস্তা অনেক দুর পর্যন্ত দৃষ্টি গোচর হয়। হয়তো এমন সময়ে আপনি গেছেন নজরে এলো হাতির দল রাস্তা পারাপার করছে! দুধারে দাঁড়িয়ে গেছে পথ চলতি মানুষ ও যানবাহন!! সেই চকচকে পিচের রাস্তার ডায়ে বাঁয়ে হঠাৎই হঠাৎ দেখবেন লাল মোরামের কাকুড়ে পথ ঐ সবুজ বনানীর মাঝখান ভেদ করে অরণ্যের গভীরে চলে গেছে। কোথাও কোথাও লম্বা খাল দুপাশের জঙ্গলের ধার দিয়ে বয়ে চলেছে।পথ অনেক জায়গায় উঁচু নিচু সরু হয়ে গেছে,সেই সরু রাস্তার পাশ দিয়েই হঠাৎ ঢালু পথ নেমে গেছে দুরের কোনো গাঁয়ের দিকে। প্রথমবার যখন এই জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করেছিলাম,তখন সত্যিই জানতাম না,কি মারাত্মক ভুল করেছিলাম! যেকোনো সময়েই বিপদের মধ্যে পরতে পারতাম,খুব একটা নজরদারিও ছিলনা তখন এই জায়গায়। রিসর্ট বা কোনো থাকার জায়গাও ছিল না,শুধু ছিল ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিস ও তাদের ব্যাবস্থাপনা। জঙ্গল অঞ্চল ঘোরা বা ভেতরে ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বা বুঝিয়ে বলারও কেও ছিলোনা। রাস্তার সাইডে গাড়ি রেখে মাথার থেকেও উঁচু ঘন ঝোপঝাড়ের জঙ্গলকে দুহাতে সরাতে সরাতে ঢুকে গেছিলাম ঐ বুনো পথে সঙ্গী কয়েকজন মহিলা। ভেতরে একটা খালি মতন জায়গায় টিফিনবক্সে আনা খাবার দাবার। ইচ্ছে বনের মধ্যে বনভোজন। এ জঙ্গল কিন্তু হাতির করিডর,হরিণ এখানকার সাধারণ আবাসিক। কখনও কখনও হাতির দল বা দলছুট হাতি থেকেও যায়।ময়ূর ও নানা ধরনের পাখির বাসভুমি এই জয়পুরের জঙ্গল। আক্রমনাত্মক মারাত্মক বনশূয়োরের থেকে সাবধান,ওরা কিন্তু এখানে স্বাভাবিক ভাবেই বিচরণ করে!আর ঐ ঝোপঝাড়ে বিষধর সাপ তো সাধারণ ব্যাপার।
যাই হোক ঢুকে যখন পড়েছি,ঐ ছোট্ট নদীর মত ক্যানেলের পারে খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে বসে গল্প করছি,হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে খরখর সরসর পাতা ও ডাল সরানোর আওয়াজ!ব্যাস সবাই সচকিত চোখে তাকিয়ে ,যদি খারাপ কিছু হয় আমাদের কিচ্ছু করার নেই!!অনেকক্ষণ পর একপাল শূয়োর!আরে না না বনশুয়োর না,ঘোঁত ঘোঁত করে সামনে আমাদের মত অচেনাদের দেখে চমকে উঠে থমকে দাঁড়িয়ে অবজ্ঞার সুরে পাশকাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেল !!
পেছনে জঙ্গল ঠেলে বেড়িয়ে এলো তাদের পরিচালক এক আদিবাসী মানুষ!!সামনের কোনো গ্রামের বাসিন্দা,জঙ্গলে শূয়োর চরাতে এসেছেন। ঐ মানুষটিই আমাদের সতর্ক করে জঙ্গল ছাড়তে বল্লেন,আমরা যেন আর একেবারেই দেরি না করে যে পথে এসেছি সেই পথ দিয়েই ফিরে যাই,এখন জঙ্গলে হাতি আছে! আর অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে ফিরে যেতে বলে এগিয়ে চলে গেলেন! সবকিছু তাড়াতাড়ি গুটিয়ে নিয়ে আবার সেই ঘন ঝোঁপঝাড় দুহাতে সরাতে সরাতে তাড়াহুড়ো তে বেশ কিছু কাঁটার আঁচরে গা হাত পা ছড়িয়ে রাস্তায় ফিরে এসে স্বস্তি বোধ করলাম। আজ যেখানে বনলতা রিসর্ট তার ঠিক কিছুটা আগেই ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিস! সেই অফিসের বাঁ দিকে মোরামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে একটা নালার ওপারে হরিণদের সাথে দেখা করে ফিরে চল্লাম। জয়পুরে ওয়াচ টাওয়ার আছে।আছে বহুদিনের পুরোনো একটা রানওয়ে। আর আছে জঙ্গলের ভেতরে কিছু স্হানিয় মানুষদের গ্রাম। যেতেই পারেন ছোট্ট একটা ঘোরার জন্য আদর্শ জায়গা এই জয়পুরে।।
কোতুলপুর - বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর সাব ডিভিশনে একটি অল্পখ্যাত গ্রাম। মাঝে মাঝেই যেমন একটু বেরিয়ে পড়ি - জানা অজানা কোনো স্থান বা মন্দিরের খোঁজে, তেমন ভাবেই জানুয়ারির এক রবিবারে কলকাতা থেকে সোজা গাড়ি নিয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম বিষ্ণুপুর থেকে মোটামুটি তিরিশ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামটিতে। যাঁরা ভ্রমণে বেরোন - তাঁদের অনেকেরই পছন্দের জায়গা ওই বিষ্ণুপুর, যা বিখ্যাত তার অসাধারণ টেরাকোটা মন্দিরগুলির জন্যে। আমাদের এবারের ভ্রমণে কিন্তু আমরা বাদ দিয়েছিলাম সেই বিষ্ণুপুরকেই - কারণ বিষ্ণুপুর আছে আর থাকবে তার মহিমা নিয়ে, সেখানে গেলে আমাকে থাকতে হবে অন্তত তিনটে দিন - সব কিছু মোটামুটি ভাবে দেখতে ও জানতে গেলে। কিন্তু এবারের যাত্রা মাত্র একদিনের, কলকাতা থেকে সকালে বেরিয়ে রাতেই ফিরে আসা - তাই বিষ্ণুপুরের পরিবর্তে বেছে নেওয়া হয়েছিল অল্পখ্যাত এই কোতুলপুর, সেই সঙ্গে কাছের গোকুলনগর আর জয়পুরকেও। লিখতে বসে আজ প্রথমেই তাই বলবো এই কোতুলপুরের কথাই।
বাংলার অনেক ছোট গ্রামেই হঠাৎ করে এমন কিছু মন্দির বা স্থাপত্য চোখে পড়ে, যে প্রথম দর্শনেই একটু চমকে যেতে হয়। কোতুলপুরে এমনই একটি বিশাল তোরণের সামনে যখন নামলাম - তখন মনে হলো যেন কোনো বিশাল প্রাসাদ বা দুর্গের তোরণদ্বার। দুদিকে তিনটি করে মোট ছটি থামের ওপর দাঁড়িয়ে এই অর্ধচন্দ্রাকৃতি তোরণ - তার দুদিকে বিস্তৃত wings বা তোরণটির বর্ধিত অংশ - যেগুলিকে আসলে দোতলা বাড়ীই বলা যায়। তোরণের অবস্থা জীর্ণ, অনেক জায়গায় পলেস্তারা খসে ইঁট বেরিয়ে পড়েছে, তবু সহজেই অনুমান করা যায় - একসমযে কি বৈভবের নিদর্শন ছিল এই তোরণ। তোরণটি সেই সময়ে ছিল এখানকার তদানীন্তন জমিদার নিরঞ্জন ভদ্রের খাস তালুকে প্রবেশের ঠিকানা, এখনও সেটির মাথার ওপরে একটি ভগ্ন ফলকে “ ভদ্র” লেখাটি পড়া যায়, বাকি অংশ বিলুপ্ত। তোরণের বাইরে একটু দূরে প্রাচীন একটি ঠাকুরদালান, আর সামনেই দুদিকে দুটি করে চারটি অপেক্ষাকৃত নতুন শিবমন্দির - যেগুলি কিন্তু এই প্রাচীন তোরণের মহিমার সঙ্গে অনেকটাই সামঞ্জস্যহীন।
তোরণ দিয়ে এবার ভেতরে প্রবেশের পালা। না , কোনো বাড়ীর মধ্যে নয় - সেটির ভেতর দিয়ে রাস্তা গেছে গ্রামের আরো ভেতরে। তোরণ দিয়ে ঢুকেই বাঁ দিকে একটু দূরে একটি সুন্দর সাদা রাসমঞ্চ, সামনে একটি দুর্গাদালান, আর ডানদিকে পরপর দুটি স্থাপত্য - প্রথমে পাথরের তৈরি একটি গিরি গোবর্ধন মন্দির, আর তার পাশেই একটি ছোট নবরত্ন দোলমঞ্চ। আবার সেই দোলমঞ্চের পরেই একটি বড় পঞ্চরত্ন মন্দিরের চূড়ো। দুর্গাদালানের এক কোণে একটি ফলক, যা থেকে জানা যায় ১৮৮০ সালের দুর্গা সপ্তমীর দিন শ্রী রামকৃষ্ণের এই গ্রামে পদার্পণের কথা। ডান দিকে পাথরের গিরিগোবর্ধন মন্দিরে বেশ কিছু মূর্তি - আছে দুদিকে দুজন দ্বারপাল, ওপরে যশোদা-কৃষ্ণ, গরুড় বাহন বিষ্ণু, দুপাশের প্যানেলে দশাবতার এই ধরণের অনেক টেরাকোটা মূর্তি। এই দুটি মন্দির ছাড়িয়ে পরে যে বড় পঞ্চরত্ন মন্দির - সেটিই এখানকার মূল মন্দির, ভদ্রদের কুলদেবতা শ্রীধর জীউ মন্দির। বাইরের রাস্তা থেকে কিছু বোঝা না গেলেও, ভেতরে ঢুকে সামনে গিয়ে দাঁড়ালে দেখা যায় প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন এই মন্দিরের কাজ গুলি। একটি ছোট প্রাঙ্গণের মাঝখানে উঁচু বেদীর ওপর তিন খিলানের তিরিশ ফুট উঁচু এই পঞ্চরত্ন শ্রীধর মন্দির - তার সামনের অংশে টেরাকোটার অজস্র কাজ।নীচের দিকে ফুলের অলংকরণ, ওপরের প্যানেলের বাঁদিক থেকে যথাক্রমে রাম রাবণের যুদ্ধ, কৃষ্ণের মথুরা পরিত্যাগ, গোপিনীদের বস্ত্রহরণ - এমন অনেক ছবি দেখতে পাওয়া যায়। ভেতরের দালানে কিছু ফ্রেসকোর কাজ - সেগুলোও আকর্ষণীয়। এছাড়া আছে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা ফলক - তার পাঠোদ্ধার বর্তমানে একটু কষ্টকর হলেও শতাব্দ ১৭৫৪, ১৭৫৫ আর বঙ্গাব্দ ১২৩৯ আর ১২৪০ কিন্তু এখনো পড়া যায় ।
নিরঞ্জন ভদ্রের পারিবারিক এই মন্দির ছাড়িয়ে এবার পাশেই ভদ্র পরিবারের আর এক শরিক সুধাকৃষ্ণ ভদ্রের বাড়ী। তবে তার আগে, শ্রীধর মন্দির থেকে বেরিয়েই বিপরীত দিকে একটা বিশাল প্রাসাদের আভাস। শুধু পড়ে আছে একটা ভাঙা দেওয়াল আর খোলা আকাশের নীচে একটা সিঁড়ি বয়ে একটা ভাঙা ছাতের ওপরে উঠে যাওয়া - বোঝা যায় এককালে এখানে একটি বিশাল বাড়ী ছিলো - যা আজ সম্পূর্ণই নিশ্চিহ্ন। সুধাকৃষ্ণ ভদ্রের বাড়ীর প্রবেশদ্বারের বাইরেও চারটি শিবমন্দির - প্রায় ধ্বংস প্রাপ্ত। বাড়ীর ভেতরে আবার একটি রাসমঞ্চ, ঠাকুর দালান আর চারটি শিবমন্দির। কিন্তু এই বাড়ির এলাকার সবচাইতে দর্শনীয় হলো একটি দোতলা বাড়ী। আসলে বাড়ীর মত দেখতে হলেও এটি কিন্তু আদতে একটি দোতলা মন্দির - কোনো বাসস্থান নয়। মন্দিরের ছাদ থেকে শুরু করে নীচ অবধি পাশে, মাঝখানে, বারান্দায় - ছোট ছোট টেরাকোটার কাজ । হয়তো খুব উন্নত নয় , কিন্তু অলংকরণ এমন ভাবে করা যাতে সেই বাড়ী বা মন্দিরের দোতলা চরিত্র নষ্ট না হয়। ছোট ছোট টেরাকোটার কাজ, দেবদেবীর মূর্তি, তার মধ্যেই আবার অনেক মূর্তিতে সাহেবী মুখ আর পোশাকের আদল। সব মিলিয়ে বেশ নতুনত্ব। বাড়ীর বাইরেই একটি বড় পুকুর, সেই পুকুরের ওপর দিক থেকে এখানকার চারটি শিবমন্দিরের অবস্থান বোঝা যায়। কোতুলপুর নিয়ে লিখতে গিয়ে অনেকটা বড় হয়ে গেল। আসলে আমাদের বাংলার একটি গ্রামের প্রায় অখ্যাত আর অবহেলিত কিছু মন্দির - তারাই যে উঠে আসতে চাইলো আমার লেখার মধ্যে দিয়ে। পেরিয়ে গেলাম প্রায় আড়াইশো বছর - যখন এ গ্রাম ছিল হয়তো অনেক বর্ধিষ্ণু, কোলাহল আর রাজকীয় মহিমায় ভরপুর। আজ সে সবই ইতিহাস - অপেক্ষায় থাকে হয়তো আমাদেরই মতো কোনো অনুসন্ধিৎসু পথিকের। ভ্রমণ পরিচালনা ও তথ্য সহায়তা - ইতিহাসসন্ধানী ব্লগার অমিতাভ গুপ্ত।
গোকুলনগর। বাংলার আর একটি অল্পখ্যাত গ্রাম, কিন্তু এবারে এটি বাঁকুড়ায়। আর এখানেই আছে এই জেলার সবচাইতে বড় পাথরের মন্দির - গোকুলচাঁদ মন্দির। চারপাশের ধূ ধূ মাঠের মধ্যে একেবারে একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ল্যাটেরাইট পাথরের এই বিশাল মন্দিরটি - তার দুর্গের মত প্রাকারের মধ্যে বন্দী হয়ে। চারপাশে উঁচু পাথরের প্রাচীর - তার ভেতরে এক পাশে এই মন্দির আর অন্যদিকে তেমনই বিশাল নাটমন্দির। প্রাচীরের বাইরেই আর্কিওলজিকাল সার্ভের বোর্ড জানিয়ে দিচ্ছে - এই মন্দিরের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা - যেটি তৈরি হয়েছিল ১৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে মল্লরাজ প্রথম রঘুনাথ সিংহের আমলে। প্রাচীরের গায়ে ভিতরে যাওয়ার জন্য খিলানাকৃতি প্রবেশ পথ, তার পাশেই প্রাচীরের সেই গায়েই স্তম্ভের আভাস। ভেতরে ঢুকলে ডানদিকে একটি উঁচু বেদী বা প্লাটফর্মের ওপর সেই মন্দির, বা দিকে নাটমন্দির। প্রায় পঁয়তাল্লিশ ফিট উঁচু মন্দিরটি পঞ্চরত্ন, মাঝখানের সবচাইতে উঁচু শিখরটি অষ্টভুজাকৃতি, চার কোণের চারটি ছোট শিখর কিন্তু আবার চতুষ্কোণ আকৃতির। মন্দিরটি চওড়া বেদীর মাঝখানে, তার চারপাশেই পরিক্রমার রাস্তা সেই বেদীর ওপর দিয়েই।মন্দিরের সামনে আর দুই পাশে তিন খিলানের বারান্দা। পাথরের মন্দিরের গায়ে অনেক ছোট ছোট মুর্তির কাজ, তবে দীর্ঘদিনের ব্যবধানে প্রাকৃতিক অবক্ষয়ের ছাপ তাদের ওপর স্পষ্ট। তবু তার মধ্যেই চেনা যায় দশাবতারের মূর্তিকে, কিন্তু পড়া যায়না ওপরের প্রতিষ্ঠা ফলকটিকে। মন্দিরের মধ্যে কোনো মূর্তি নেই, শোনা যায় মূল মূর্তি নাকি বিষ্ণুপুর রাজবাড়িতে। বিপরীত দিকের নাটমন্দিরের মাথার মাঝখানের চাল অনেকদিন আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে, তবু একটি সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যাওয়া যায় ছাতের প্রান্তের অংশে। আর সেখানে উঠলে খুব ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা যায় সমস্ত এলাকাটি। নাটমন্দির আর মন্দিরের মাঝখানে আর একটি অনেকখানি খোলা উঁচু বেদী, তারপর পাথরের একটি তুলসী মঞ্চ - সেই বেদী আর মন্দিরের মাঝখানে। নাটমন্দিরের দুদিকে তিনটি করে খিলান, দুপাশে ভেতরে যাওয়ার বিশাল প্রবেশপথ। নাটমন্দির এমনভাবে তৈরি যে মন্দিরের দিকের মাঝখানের খিলানের ভেতর থেকেই পুরো মন্দিরটি দেখা যায়। আর নাটমন্দিরের ছাদে উঠলে দেখা যায় মন্দির প্রাচীরের বাইরে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেত। মাঠ আর সবুজের মাঝখানেই দাঁড়িয়ে আছে একাকী এই মন্দির।
শোনা যায়, গোকুলনগর গ্রামে আরো বহু মন্দির ছিল একসময়, যা নাকি ধ্বংস হয়েছিল কালাপাহাড়ের আক্রমণে, শুধু এই মন্দিরটিই কোনোভাবে টিঁকে গেছে। গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় দীর্ঘদিন পড়ে থাকতো বিভিন্ন সব মূর্তি, পরে সেগুলির স্থান হয় বিভিন্ন মিউজিয়ামে। এখনো খোলা আকাশের তলায় কিছু শিবলিঙ্গ এখানে ওখানে দেখতে পাওয়া যায়। এমনই একটি আধভাঙা বরাহ মূর্তি আছে এই গোকুলনাথ মন্দির থেকে বেশ কিছুটা দূরে - কিছুটা জঙ্গলের মধ্যে। মুর্তির কোমরের নীচের অংশটি মাটিতে প্রোথিত, ওপরের হাতগুলি ভাঙা। তবে মুখ আর মাথার শিরস্ত্রাণ অক্ষত। চারপাশে ভাঙা পাথরের চিন্হ দেখে মনে হয়, এখানেও হয়তো একটি মন্দির ছিল আগে, যা এখন ধূলিসাৎ। কোন রকমে একটি সাময়িক ছাউনি গ্রামের লোকেরা করে দিয়েছেন মাটিতে প্রোথিত সেই সুপ্রাচীন বরাহ মুর্তির ওপরে। আবার একটু দূরে আছে আর একটি মন্দির, সেটি নতুন ভাবে করা, কিন্তু তার মূর্তিগুলি প্রাচীন। ভেতরে দুটি মূর্তি - তার মধ্যে একটি বরাহ মূর্তি। কিন্তু তার বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল যে সেটি স্ত্রী বরাহ মূর্তি - যা কিন্তু খুব বেশী দেখা যায় না। বাংলার অনেক অঞ্চলেই এই ভাবে অনেক সম্পদ, অনেক মণি মাণিক্য ছড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে খোঁজ পাই, হঠাৎ করে পৌঁছে যাই এক বর্ণময় অতীতে - এই সব চিহ্নের পথ ধরে। অতীত কথা বলে ওঠে বর্তমানের কানে, বর্তমান ঘুরে বেড়ায় অতীতে। তবু এক সময়ে সেখান থেকে আবার ফিরে আসতে হয় সেই আলো ঝলমল বর্তমানেই, অতীত পড়ে থাকে তার নিজস্ব আলো হারানো অন্ধকারে। ভ্রমণ সঙ্গী ও তথ্য সূত্র - ইতিহাস সন্ধানী ও ব্লগার - অমিতাভ গুপ্ত। অন্যান্য সূত্র - সোমেন সেনগুপ্ত - দি টেলিগ্রাফ
হঠাৎ শনিবার ছুটি পেলাম আগের রাতে ভাবলাম বাইক নিয়ে কোথাও গেলে কেমন হয়??? কাউকে কিছু না বলে you tube এ সার্চ করলাম পছন্দ হলো মন্দির নগর বিষ্ণুপুর, তার প্রধান কারন জয়পুর জঙ্গল আর টেরাকোটা শিল্প নিজের চোখে দেখা এবং অবশ্যই শনিবার এর পোড়ামাটির হাট!!! গুগুল ম্যাপ বলছে যেতে হবে 134 Km !!! সকাল 6.34মিনিটে এ বাড়ি থেকে বাইক স্টার্ট দিলাম 80km গিয়ে আরামবাগ পৌঁছলাম 8.35 মিনিটে সেখানে চা - টিফিন খেয়ে বাইকে পেট্রোল নিয়ে 9.10মিনিটে জার্নি স্টার্ট করলাম, দ্বারকেশ্বর নদী পার হয়ে কোতুলপুর -আরামবাগ রোড ধরলাম এখনও যেতে হবে 54 km!!! কোতুলপুর এর পর রাস্তার দুইধারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে দেখতে এগোতে থাকলাম তারপর এলো জয়পুর জঙ্গল সেখানে দাঁড়িয়ে ফটো সেশন করলাম 1st টাইম জঙ্গল এরমধ্যে বাইক চালানো স্মরণীয় করে এগিয়ে যেতে থাকলাম বিষ্ণুপুর এর দিকে...
10.45 মিনিটে পা রাখলাম বিষ্ণুপুর এর মাটিতে... এক জীবন্ত ইতিহাসের সাক্ষী থাকলাম সারাটাদিন...এখানকার মন্দির গুলো সবই পোড়ামাটির আর টেরাকোটা কাজ,শিল্পীরা কত নিপুন হাতে এগুলো তৈরি করেছে তা অবাক চোখে দেখলাম Iআমার চোখে সেরা লাগলো রাসমঞ্চ l দুপুরের লাঞ্চ করে গেলাম জোড় মন্দির প্রতি শনিবার এখানে পোড়ামাটির হাট বসে সেই হাট এ কতরকম পোড়ামাটির জিনিস দেখলাম,তারসাথে আদিবাসী নাচ আর ধামসা ও মাদল বাউল গান,অসাধারণ কাটলো পুরো দিনটা l 3.30P. M এ বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি স্টার্ট দিলাম ফিরবো গ্রামের বাড়ি তাই দূরত্ব একটু কম 107K. M!!! পথে আরামবাগ এ দাঁড়িয়ে একটু চা বিরতি করে সোজা বাড়ি পৌঁছলাম 6.45P.M... একটি ভ্রমণ গ্রুপে প্রথম গনগনি,বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সম্পর্কে জানতে পারি।লাল-কমলা-সবুজ মেশানো অদ্ভুত ভূমিরূপের প্রেমে পড়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের গনগনির পথে পা বাড়িয়ে দিলাম। ২৭শে ডিসেম্বর,সকাল ৭টা ৫৫মিনিটে সাঁতরাগাছি থেকে আরণ্যক এক্সপ্রেসে চেপে আমারা আমাদের যাত্রা শুরু করি। যদিও আমাদের আরণ্যক এক্সপ্রেসে যাওয়ার কথা ছিল না,সকাল ৬টা ২৫ এর রূপসী বাংলা করে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু,ওলা ক্যাবের উপর অগাধ বিশ্বাস রাখার দরুণ আর সাঁতরাগাছি ব্রিজে ট্র্যাফিক জ্যামের জন্য আমরা ট্রেন মিস করি। আমরা সকাল ১১টায় গড়বেতা স্টেশনে নেমে টোটো ধরে(ভাড়া জনপ্রতি ২০টাকা) আগে থেকে বুক করে রাখা আপ্যায়ন লজে উঠি।হোটেলের রুম মোটামুটি পরিচ্ছন্ন (এসি ও গিজার আছে)।এরপর হোটেলে ভাত,ডাল,সবজি,মাছ,চাটনি খেয়ে একটি গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ি গনগনির উদ্দেশ্যে (আমরা ছ'জন ছিলাম,সুমো ভাড়া নিই ৪০০টাকায়,এমনিতে টোটো ভাড়া ১০০-১৫০টাকা)। প্রথমে আমরা বিখ্যাত সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে যাই।মন্দিরে দুপুর ১টার মধ্যে ভোগ খাওয়ার (জনপ্রতি ৫০টাকা) আছে।ওড়িশার স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত মন্দিরটি এবং মন্দিরের মাতার বিগ্রহটি অপূর্ব।বিগ্রহের ছবি তোলা নিষেধ। এরপর আমাদের গন্তব্য দ্বাদশ শিবালয় নামের একটি বহু প্রাচীন শিবমন্দির। মন্দিরে ১২টি শিবের পৃথক মন্দির,একটি জলাশয়(রক্ষণাবেক্ষণের অভাব পরিলক্ষিত) আছে। এরপর আমাদের গন্তব্য গনগনি।গনগনি পৌঁছে বুঝতে পারলাম কেন আমেরিকার অ্যারিজোনার গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের সাথে গনগনির তুলনা করা হয়। শিলাবতী নদীর ক্ষয় কার্যের ফলে তৈরি প্রায় 70 ফুট নিচু গিরিখাত এক অসামান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে।লাল ল্যাটেরাইট পাথর আর মাটি বাতাস আর জলের ক্ষয়কার্যের ফলে নানারূপের প্রাকৃতিক ভাস্কর্য তৈরি করেছে। লালমাটি,শিলাবতী নদী,ইউক্যালিপটাস আর আকাশমনি গাছের জঙ্গল যেন শিল্পীর তুলির টানে পটে আঁকা সুন্দর ফ্রেম। যাওয়ার সময় লালমাটির আঁকাবাঁকা পথের দুদিকে ঘন জঙ্গল।গিরিখাত এর নিচে নামার জন্য রয়েছে আঁকা বাঁকা সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে একেবারে নদীর তটে পৌঁছে যেতে পারেন কিংবা হারিয়ে যেতে পারেন গিরিখাত এর গুহায়। চারপাশে শুধু গুহা,ভাঙা দুর্গ বা অদ্ভুত ভূমিরূপ।কথিত আছে,ভীম ও বকাসুরের যুদ্ধের সময় দুই যোদ্ধার পদচালনায় এখানের এইরূপ ভূমির প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্যের উদ্ভব হয়েছে। আমরা গনগনির সূর্যাস্তর লাল রং মেখে হোটেলে ফিরে এলাম।রাতে হোটেল থেকে পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথের দূরে একটি খাওয়ার হোটেলে(সস্তা কিন্তু ভালো গুণমানের)রাতের খাওয়ার খেলাম।
পরদিন সকালে টিফিন খেয়ে ভাড়ার গাড়ি(১৫০০টাকা;ওমনি নিলে ১২০০টাকা)করে বিষ্ণুপুরের দিকে রওনা দিলাম।প্রায় আধঘণ্টা লালমাটির রাস্তায় চলার পর আমরা পৌঁছলাম বিষ্ণুপুরে। প্রথমে গেলাম রাসমঞ্চে।ওখানে টিকিট কাটতে হলো।ঐ টিকিট দেখিয়ে সব মন্দিরে যাওয়া যাবে।
আমরা রাসমঞ্চ,রাধামাধব মন্দির,শ্যামরাই এর মন্দির,পাথর দরজা, মদনমোহন মন্দির, লালজী মন্দির,ছিন্নমস্তার মন্দির,দলমাদল কামান,মা মৃন্ময়ীর মন্দির,জোড় বাংলা মন্দির প্রমুখ মন্দির দেখলাম। প্রত্যক্ষ করলাম প্রতিটি মন্দিরের গায়ে টেরাকোটা শৈলীতে নির্মিত মহাভারত, রামায়ণ,বৌদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন চিত্র। মধ্যাহ্নভোজন করলাম ছিন্নমস্তা মন্দিরের কাছের বিরিয়ানি হাউসে।পোড়া মাটির জিনিসপত্র কেনাকাটাও পথের পাশের দোকানে করলাম। বাঁকুড়ার মল্লরাজাদের তৈরি পোড়া মাটির টেরাকোটা শৈলীর ল্যাটেরাইট বা মাকড়া পাথরের অপূর্ব ভাস্কর্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেছিলাম ইতিহাসের পাতায়।আজ মল্লরাজারা নেই, কিন্তু তাঁদের সময়ে তৈরি সেই অপূর্ব ভাস্কর্য আজো দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে।তবে তারা আজ বৃদ্ধ, জীর্ণ, জরাগ্রস্ত। সন্ধ্যার বিষন্নতা মেখে ফিরে এলাম আবার গড়বেতার হোটেলে।সেদিন রাতটা হোটেলে কাটিয়ে পরদিন সকাল ৭টা ৫০মিনিটের হাওড়া সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেস গড়বেতা স্টেশন থেকে ধরে হাওড়া ফিরে এলাম আর সাথে নিয়ে এলাম একমুঠো গনগনি আর বিষ্ণুপুরের সুন্দর স্মৃতি। তবে গনগনিতে বহু থার্মোকলের ব্যবহৃত থালা,বোতল পড়ে থাকতে দেখলাম যা পরিবেশ দূষণ করছে। এসম্পর্কে আমাদের নিজেদের সচেতন থাকা উচিত।
কিভাবে যাবেন:
রেল বা সড়ক দুভাবেই গড়বেতা যাওয়া যায়। সাঁতরাগাছি থেকে রুপসী বাংলা এক্সপ্রেস (সকাল 6.30), শালিমার থেকে( সকাল 7.45) আরন্যক এক্সপ্রেস এ চেপে গড়বেতা নামতে হবে । গড়বেতা থেকে টোটোতে দশমিনিটে গড়বেতা। যদি সেদিনই ফিরতে চান বিকেল ৩টে ২০তে আরণ্যক এক্সপ্রেস আছে গড়বেতা স্টেশন থেকে। গড়বেতা থেকে বিষ্ণুপুর ট্রেনে করেও যাওয়া যায়।ট্রেনে কুড়ি মিনিট সময় লাগে। থাকার ব্যবস্থা: গনগনিতে থাকার ব্যবস্থা নেই।গড়বেতাতে থাকতে হবে।সোনাঝুরি গেস্টহাউস (৯৫৪৭৫১৪০৩০),আপ্যায়ন লজ(৮৩৪৮৬৯৪৮০১), শ্যামভবন ধর্মশালা (৯৮৩২৭৪২২৯৩) এ থাকার ব্যবস্থা আছে।ভাড়া ৫০০/১০০০টাকার মধ্যে। আজকে আমি নিয়ে যাচ্ছি অতীতের মল্লরাজা দের দেশ ও বর্তমানের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর।। বিষ্ণুপুর কে বলা হয় মন্দির নগরী।। টেরাকোটার কাজ করা মন্দিরগুলো এক কথায় অসাধারণ ও অপুর্ব।। সাঁতরাগাছি,শালিমার স্টেশন থেকে ভোর বেলার রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস, রাজ্য রাণী এক্সপ্রেস, ও আরণ্যক এক্সপ্রেস ধরে সরাসরি চলে আসুন বিষ্ণুপুর স্টেশন।। বিষ্ণুপুরের মন্দির ঘুরতে সময় লাগে তিন থেকে চার ঘণ্টা।। তাই থাকার প্রয়োজন হবে না।। যদিও থাকার জন্য হোটেল, লজ, রিসোর্ট সবই আছে।। লোকজনের সংখ্যা বেশি হলে একটা অটো, ট্রেকার, বা গাড়ি রিজার্ভ করে নিন।। প্রথমে চলে আসুন বিষ্ণুপুরের বিখ্যাত ছিন্নমস্তিকা দেবীর মন্দির।। ভক্তিভরে মায়ের পুজো দিন, দর্শন করুন।। মন্দিরের দুই দিকে রয়েছে শিব মন্দির ও রাধাকৃষ্ণ মন্দির।। এই মন্দির থেকে সামান্য এগোলেই দেখা যাবে দলমাদল কামান।। আরো কিছুটা এগোলেই মহাকালীকা ও অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দির।। এবার একটা হোটেলে বসে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন।। তারপর শুরু করুন টেরাকোটার মন্দির দেখা।। এবার একে একে পর পর দেখবেন-- রাসমঞ্চ, কালাচাঁদ মন্দির, লালজি মন্দির, গুমঘর, জোড়াবাংলা মন্দির, শ্যামরায়ের মন্দির, মল্লেশ্বর শিব মন্দির, মদনমোহন মন্দির, রাধেশ্যাম মন্দির, মুরলীমোহন মন্দির, মৃন্ময়ী দুর্গা মন্দির, সর্বমঙ্গলা মন্দির, রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষ, পাথরের রথ, রাজবাড়ীর দুটি পাথরের সিংহদ্বার, শ্রীধর মন্দির, মদনগোপাল মন্দির, রাধাগোবিন্দ মন্দির, রাধামাধব মন্দির, রাধালাল জিউ মন্দির, পাটপুর মন্দির, ষাঁড়েশ্বর শিব মন্দির (এটা কিছুটা দূরে), নন্দলাল মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও রেলস্টেশনের কাছে দক্ষিণা কালী ও রামেশ্বর শিব মন্দির।। বিষ্ণুপুরে মন্দিরের অভাব নেই।। তার কিছু তালিকা তুলে ধরলাম।। সন্ধ্যা ৫:৩০ এর হাওড়াগামী ডাউন রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ধরে কোলকাতা ফিরে আসা যায়,, নাহলে বিষ্ণুপুর থেকে ধর্মতলাগামী বাস ধরেও চলে আসা সম্ভব।। একটু জার্নি হবে, এটাই যা কষ্টের।। Post By-Anupam Chakraborty
প্রকৃতি আর ইতিহাসের হাতছানি দুদিনের ছোট্ট ছুটিতে ঘুরে এলাম "মন্দিরের শহর" বিষ্ণুপুর আর প্রাণ ভরে শ্বাস নিলাম জয়পুরের জঙ্গলে। প্রাচীন বাংলার মল্ল রাজার আমলে নির্মিত গোকুল চাঁদ মন্দির,রাসমঞ্চ,জোড় বাঙলা মন্দির,বড় দরজা সহ আরো অনেক গুলো মন্দির ঘুরে দেখলাম সারাদিন ধরে। সেই সময়কার শিল্পী দের শিল্প ভাবনার সাক্ষী মন্দিরের প্রতিটি দেওয়াল। সূক্ষ্ম কারুকার্য আর স্থাপত্য শৈলী ছুঁয়ে যায় হৃদয়কে। বিকেলে লালগড় প্রকৃতি উদ্যানের ওয়াচ টাওয়ার থেকে দেখলাম গোধূলির আলোয় মাখা বিষ্ণুপুর আর জয়পুরের জঙ্গল । পরদিন বৃষ্টি ভেজা সকালে বেরিয়ে পড়লাম জয়পুরের জঙ্গল এর উদ্দেশ্যে। জঙ্গলের আশেপাশে ঘুরে বেড়ালাম নাম না জানা অসংখ্য গাছের মাঝে। এরপর গেলাম জয়পুরের অন্যতম আকর্ষণ "বনলতা রিসর্ট" - বিশাল এলাকা জুড়ে সাজানো গোছানো সুন্দর থাকবার ঠিকানা।বেশ কিছুটা সময় রিসর্ট এ কাটিয়ে খাওয়া দাওয়া করে গেলাম সমুদ্রগড় - বিশাল অঞ্চল জুড়ে গড়ে ওঠা দিঘি। দিঘির পাড়ে সূর্যাস্তের শেষ আলোর সাথেই শেষ হলো আমার এবারের বেড়ানো।। Post By:-Arijit Paul
বিষ্ণুপুর। বাড়ির কাছের জায়গা বলে এতদিন বাঁচিয়ে রেখেছিলাম। আজ সুযোগ পেয়ে কিছু মন্দির ঘোরা হলো। মেদিনীপুর থেকে বিষ্ণুপুর, মাত্র কয়েকটা স্টেশন পেরোলেই। টেরাকোটার অপূর্ব নিদর্শন এই বিষ্ণুপুর এ পা রাখলেই বোঝা যায়। কয়েকটা মাত্র মন্দির দেখার সুযোগ হলো। মদন মোহন মন্দির, জোড় বাংলো, পাঁচ চুড়ো, গুম ঘর। এতেই এক বেলা শেষ। বাংলার এই প্রাচীন নিদর্শন গুলি হারিয়ে যাওয়ার পথে। টেরাকোটার নিদর্শন এক পলকে দেখা সম্ভব নয়। হাতে সময় নিয়ে এক এক করে দেখে যান টেরাকোটা মন্দিরের শহর বিষ্ণুপুর।। Post By:- Amit Mallick
মন্দিরের শহর বিষ্ণুপুর ও মুকুটমনিপুর ভ্রমণ ঐতিহাসিক মন্দিরের প্রতি আমার আগ্রহ অনেকদিনের। ছোট বড় প্রায় 100 টি প্রাচীন মন্দির সম্বলিত শহর বিষ্ণুপুরের বহু কাহিনী আমার মনকে বারবার টানতো। তাই এক শনিবার সকালে আমি (সুমন) ও বন্ধু সৌরভ আচার শালিমার স্টেশন থেকে সকাল 7.45 এ আরণ্যক এক্সপ্রেসে চড়ে 11 টা নাগাদ পৌঁছে গেলাম বিষ্ণুপুর স্টেশনে। স্টেশন থেকে রিকশায় করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারি লজে পৌঁছে স্নান ও দুপুরের আহার সেরে একটা রিকশায় করে বেরিয়ে পড়লাম মন্দির দর্শনে। বিষ্ণুপুরের মাঝখানে পরে কলেজ রোড। সেখানেই রয়েছে রাসমঞ্চ। এর নিচের বেদী মাকরা পাথরের তৈরী আর উপরের স্থাপত্য ইঁটের।রাসমঞ্চ থেকে সোজা গিয়ে বাঁদিকে পড়বে মদনমোহন মন্দির। মন্দিরের দেওয়ালে পশু পাখি, কৃষ্ণলীলা, দশাবতার ও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনী ভাস্কর্যে রূপায়িত হয়েছে। একটু এগিয়ে শ্যাম রায় মন্দির (পঞ্চরত্ন মন্দির), মৃন্ময়ী মন্দির, বড় পাথর দরজা, ছোট পাথর দরজা, রাধা শ্যাম মন্দির, জোড় বাংলা (দুটি পাশাপাশি দোচালা কুটিরের সমন্বয়ে তৈরী এই মন্দির টি। এই কৃষ্ণরায় মন্দির নামে পরিচিত হলেও বাংলা স্থাপত্য অনুযায়ী একে জোড় বাংলা মন্দির বলা হয়),রাধা লাল জিউ মন্দির, পাথরের রথ (এর নিচের দিকটি রস মঞ্চের ন্যায় এবং উপরের দিকটি অন্যান্য মন্দিরের মতো) ও গুমঘর। প্রত্যেকটি মন্দিরই খুবই সুন্দর ও ভালো করে দেখতে গেলে সময় লাগবে। এরপর গেলাম মিউজিয়াম। এখানে পাল ও সেন যুগের, মুঘল আমলের বহু প্রাচীন মুদ্রা, মূর্তি, পুঁথি, পট, কৃষিজাত দ্রব্য ইত্যাদি সংগ্রহ রয়েছে। এটি সকাল 10 টা থেকে সন্ধ্যে 6 টা পর্যন্ত খোলা থাকে। টিকিট 10 টাকা। টুরিস্ট লজ থেকে সোজা মিউজিয়াম এর দিকে গেলে মিউজিয়াম থেকে বাঁদিকে পড়বে লাল বাঁধ সর্বমঙ্গলা মন্দির। এরপর চা মুড়ি খেয়ে গেলাম দলমাদল পাড়া। সেখানে রয়েছে কামান ও ছিন্নমস্তা মন্দির। আরো এগিয়ে গেলে বা দিকে নন্দলাল মন্দির, রাধামাধব মন্দির, কালাচাঁদ মন্দির, ও লালগড় পড়বে।এছাড়াও অন্যান্য মন্দির গুলি হলো কৃষ্ণ বলরামের মন্দির, মহাপ্রভু মন্দির, মদন গোপাল মন্দির ইত্যাদি। মন্দির দর্শন করে হোটেলে ফিরে ডিনার করে শুয়ে গেলাম।পরেরদিন সকালে উঠে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট খেয়ে হোটেল চেক আউট করে একটা ইন্ডিকা গাড়ি নিয়ে চলে গেলাম মুকুটমনিপুর। ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কংসবতী ড্যাম , পরেশনাথ পাহাড় ও মন্দির এবং ডিয়ার পার্ক দেখে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বাংলোতে লাঞ্চ করে গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিলাম স্টেশনের উদ্দেশ্যে। 5.30 টার রূপসী বাংলা এক্সপ্রেসে উঠে হাওড়া নামলাম রাত 9.30 টার সময়ে। বিষ্ণুপুর পশ্চিমবঙ্গ ট্যুরিস্ট লজ +91-9732100950 [email protected] Post By:- Suman Datta
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |