ছোট্ট ভ্রমণ
"""""""" আমি তো জঙ্গল ঘুরতেই বেশি ভালোবাসি।আপনাদের মধ্যে জঙ্গল যারা ঘুরতে ভালোবাসেন ছোট্ট ছুটিতে কাছাকাছির মধ্যে ঘুরে আসতেই পারেন জয়পুর। বর্তমানে থাকার জায়গাও আছে সরকারি লিজে চলা বনলতা রিসর্টে। যদি ওখানে নাও থাকতে চান সামনেই কিছুটা দুরেই আছে পুরোনো ঐতিহাসিক টেরাকোটার কাজ যুক্ত মন্দির নগরী বিষ্ণুপুর। একসাথে জয়পুর_বিষ্ণুপুর ভ্রমণও করতে পারেন। যদিও আমার এ পর্বে শুধুমাত্র জয়পুরের জঙ্গল। আরামবাগের দারকেশ্বর নদের ব্রীজ পেরেলেই রাস্তাটা দুদিকে ভাগ হয়ে গেছে,বাঁ দিকে সোজা কামারপুকুর। কামারপুকুর চটি থেকে বাঁ দিকের রাস্তা আরেক ছোট ভ্রমনের গড়মন্দারন হয়ে সোজা মেদিনীপুর। কামারপুকুর চটি থেকে সোজা রাস্তাটা কামারপুকুর-জয়রাম বাটি হয়ে বাঁকুড়ার দিকে চলে গেছে। আর দারকেশ্বরের ব্রীজ পেরোলেই ডানদিকের রাস্তাটা কোতলপুর-জয়পুর-বিষ্ণুপুর হয়ে বাঁকুড়ার দিকে। না আর এগিয়ে লাভ নেই,আপাততো থামলাম জয়পুরেই! অতি মনোরম এই জয়পুরের রাস্তা,দুধারে বড় বড় গাছ প্রায় সারাক্ষনই ছায়াঘন পরিবেশ তৈরি করে রাখে।মাঝে চকচকে পিচের রাস্তা অনেক দুর পর্যন্ত দৃষ্টি গোচর হয়। হয়তো এমন সময়ে আপনি গেছেন নজরে এলো হাতির দল রাস্তা পারাপার করছে! দুধারে দাঁড়িয়ে গেছে পথ চলতি মানুষ ও যানবাহন!! সেই চকচকে পিচের রাস্তার ডায়ে বাঁয়ে হঠাৎই হঠাৎ দেখবেন লাল মোরামের কাকুড়ে পথ ঐ সবুজ বনানীর মাঝখান ভেদ করে অরণ্যের গভীরে চলে গেছে। কোথাও কোথাও লম্বা খাল দুপাশের জঙ্গলের ধার দিয়ে বয়ে চলেছে।পথ অনেক জায়গায় উঁচু নিচু সরু হয়ে গেছে,সেই সরু রাস্তার পাশ দিয়েই হঠাৎ ঢালু পথ নেমে গেছে দুরের কোনো গাঁয়ের দিকে। প্রথমবার যখন এই জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করেছিলাম,তখন সত্যিই জানতাম না,কি মারাত্মক ভুল করেছিলাম! যেকোনো সময়েই বিপদের মধ্যে পরতে পারতাম,খুব একটা নজরদারিও ছিলনা তখন এই জায়গায়। রিসর্ট বা কোনো থাকার জায়গাও ছিল না,শুধু ছিল ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিস ও তাদের ব্যাবস্থাপনা। জঙ্গল অঞ্চল ঘোরা বা ভেতরে ঢোকার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া বা বুঝিয়ে বলারও কেও ছিলোনা। রাস্তার সাইডে গাড়ি রেখে মাথার থেকেও উঁচু ঘন ঝোপঝাড়ের জঙ্গলকে দুহাতে সরাতে সরাতে ঢুকে গেছিলাম ঐ বুনো পথে সঙ্গী কয়েকজন মহিলা। ভেতরে একটা খালি মতন জায়গায় টিফিনবক্সে আনা খাবার দাবার। ইচ্ছে বনের মধ্যে বনভোজন। এ জঙ্গল কিন্তু হাতির করিডর,হরিণ এখানকার সাধারণ আবাসিক। কখনও কখনও হাতির দল বা দলছুট হাতি থেকেও যায়।ময়ূর ও নানা ধরনের পাখির বাসভুমি এই জয়পুরের জঙ্গল। আক্রমনাত্মক মারাত্মক বনশূয়োরের থেকে সাবধান,ওরা কিন্তু এখানে স্বাভাবিক ভাবেই বিচরণ করে!আর ঐ ঝোপঝাড়ে বিষধর সাপ তো সাধারণ ব্যাপার।
যাই হোক ঢুকে যখন পড়েছি,ঐ ছোট্ট নদীর মত ক্যানেলের পারে খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে বসে গল্প করছি,হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে খরখর সরসর পাতা ও ডাল সরানোর আওয়াজ!ব্যাস সবাই সচকিত চোখে তাকিয়ে ,যদি খারাপ কিছু হয় আমাদের কিচ্ছু করার নেই!!অনেকক্ষণ পর একপাল শূয়োর!আরে না না বনশুয়োর না,ঘোঁত ঘোঁত করে সামনে আমাদের মত অচেনাদের দেখে চমকে উঠে থমকে দাঁড়িয়ে অবজ্ঞার সুরে পাশকাটিয়ে সামনে এগিয়ে গেল !!
পেছনে জঙ্গল ঠেলে বেড়িয়ে এলো তাদের পরিচালক এক আদিবাসী মানুষ!!সামনের কোনো গ্রামের বাসিন্দা,জঙ্গলে শূয়োর চরাতে এসেছেন। ঐ মানুষটিই আমাদের সতর্ক করে জঙ্গল ছাড়তে বল্লেন,আমরা যেন আর একেবারেই দেরি না করে যে পথে এসেছি সেই পথ দিয়েই ফিরে যাই,এখন জঙ্গলে হাতি আছে! আর অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করে ফিরে যেতে বলে এগিয়ে চলে গেলেন! সবকিছু তাড়াতাড়ি গুটিয়ে নিয়ে আবার সেই ঘন ঝোঁপঝাড় দুহাতে সরাতে সরাতে তাড়াহুড়ো তে বেশ কিছু কাঁটার আঁচরে গা হাত পা ছড়িয়ে রাস্তায় ফিরে এসে স্বস্তি বোধ করলাম। আজ যেখানে বনলতা রিসর্ট তার ঠিক কিছুটা আগেই ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিস! সেই অফিসের বাঁ দিকে মোরামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গিয়ে একটা নালার ওপারে হরিণদের সাথে দেখা করে ফিরে চল্লাম। জয়পুরে ওয়াচ টাওয়ার আছে।আছে বহুদিনের পুরোনো একটা রানওয়ে। আর আছে জঙ্গলের ভেতরে কিছু স্হানিয় মানুষদের গ্রাম। যেতেই পারেন ছোট্ট একটা ঘোরার জন্য আদর্শ জায়গা এই জয়পুরে।।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |