৫ ই ডিসেম্বর ২০২০ সকালে হঠাৎ আমাদের মাথায় উঠলো বাই তো কংকালীতলা যাই। কয়েকদিন ধরে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল আমাদের যে মোটর সাইকেলের হেলমেটে ক্যামেরা লাগিয়ে কোথাও গেলে কেমন হয়? আমার ৫ বছরের মেয়ের কৌতুহল সব থেকে বেশি ছিল। তাই ছোটো করে শুরু করে ফেললাম কংকালীতলা মন্দির ভ্রমণ।
বোলপুর স্টেশন থেকে ৯ কিলোমিটার (লাভপুর রোড হয়ে) অথবা ১১ কিমি (শ্যামবাটি- প্রান্তিক রোড হয়) দূরে কোপাই (শাল নদী) নদীর তীরে শক্তিপীঠ কঙ্কালীতলা মন্দির। আমরা সকাল ৮ টায় বোলপুর শান্তিনিকেতন স্টেশন থেকে বাইকে আমাদের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমরা বোলপুর স্টেশন - বোলপুর চৌরাস্তা - শান্তিনিকেতন - শ্যামবাটী - প্রান্তিক হয়ে পৌছে গেলাম কংকালীতলা মন্দির। তন্ত্রচূড়ামনির মতে, এটি ২৮ নং সতীপীঠ। প্রাচীনকালে এই জায়গাটি কাঞ্চি নামে প্রসিদ্ধ ছিল। তন্ত্রচূড়ামনিতেও এই স্থানের উল্লেখ আছে। পীঠ নির্ণয়তন্ত্রে বলা হয়েছে এখানে দেবীর কংকাল পড়েছিল এবং এটি দেবীর একান্নতম পীঠ। কিন্তু ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ অনুযায়ী, বলা হয়েছে এখানে দেবীর কাঁখ বা কাঁকাল বা কটিদেশ পতিত হয় এবং এটি দেবীর আঠাশতম পীঠ। সম্ভবত: কাঁকাল থেকেই কংকালীতলা নাম হয়েছে। তবে এই শক্তিপীঠ নিয়ে শাস্ত্র ও জনগণের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। এখানে দেবীর নাম "দেবগর্ভা"। কোপাই নদীর তীরে কুন্ডের মধ্যে দেবীর অধিষ্ঠান। কুন্ডের পাশের মন্দিরে দেবী পটে অর্থাৎ ছবিতে কালীরূপে পূজিতা হন। এখানে ভৈরবের নাম "রুরু"। মন্দির প্রবেশের আগেই লাইন দিয়ে পূজো দেওয়ার ডালা গ্রহনের জন্য অনেক দোকান আছে। কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। এখান থেকে একটি দোকান থেকে পূজার ডালা নিয়ে লাইন দিল মা ও মেয়ে। সুন্দরভাবে পূজো দিয়ে কিছুক্ষণ মন্দিরের চারপাশ ঘুরে নিলাম। মন্দির চত্বরে এক বাউল বন্ধু সুন্দর বাঁশি বাজিয়ে চলেছেন।
মন্দিরের পাশেই যে কুন্ড টি আছে, বলা হয় সেখানেই দেবীর কংকাল পড়েছিল। এখনও সেখানে কিছু পাথর আছে। ওগুলোকে দেবীর দেহাংশ মানা হয়। এই কুন্ডের জল কখনো নাকি শুকায় না। পাশেই শ্মশান আছে। এখানে নাকি গুপ্ত তন্ত্র সাধনা হয়। বর্তমানে এই শ্মশান টি ইলেকট্রিক চুল্লীতে পরিবর্তন করা হচ্ছে।
এরপর মন্দিরের পাশে ভোগ মন্দির টি ঘুরে দেখলাম। এখানে ভোগ প্রসাদের ব্যবস্থা করা হয় ভক্তদের জন্য। সাধারণ দর্শনার্থীরাও ভোগের প্রসাদ পেতে পারেন কুপন স়ংগ্রহের মাধ্যমে। এর পাশেই বয়ে চলেছে কোপাই নদী বা শাল নদী। এরপর আমরা মন্দির থেকে রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রান্তিক স্টেশন এ দেখি রেলগেট পড়ে আছে। অগ্যতা কিছুক্ষন অপেক্ষা করলাম। এই সুযোগে আমার মেয়ে লকডাউনের জন্য ভূলতে বসা রেলগাড়ির দর্শন করতে পারলো। ও কিন্তু খুব আনন্দ করলো এই করোনা পরিস্থিতিতে সমস্ত ধরনের সতর্কতা মেনে। আমার ছোট্ট মেয়ের বানানো ভ্লগটি কেমন লাগলো জানাবেন। ভালো লাগলে অবশ্যই লাইক ও সাবস্ক্রাইব করবেন
0 Comments
কথায় আছে না 'উঠ্ ছুড়ি তোর বিয়ে' , আমাদের এইবারের বেড়ানোটাও অনেকটা সেই রকম, বেড়ানো না বলে বরং দৈনিক সফর বললেই ব্যাপারটা সঠিক হবে। করোনা আবহে স্বাস্থ্যের হারিকিরির সাথে সাথে যেন মনোরোগের মহামারী চলছে। গৃহবন্দী অবস্থায় আতঙ্কের সাথে যুঝতে যুঝতে সকলের এখন 'দেহ পট সনে নট সকলি হারায় ' অবস্থা। তাই প্রথম প্রস্তাবেই ফুটন্ত তুবড়ির মতো ছিটকে বেরিয়ে এলো উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা ও আবেগের সংমিশ্রণের আহ্লাদিত ককটেল, বিশেষ করে সেটা যদি আপামর বাঙালির অন্যতম তীর্থক্ষেত্র শান্তিনিকেতন হয়।অতঃকিম! 'পথে এবার নামো সাথী' অথবা হালের 'জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা' জাতীয় আবেগের আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ আর তার সাথে সাথে আমাদের একদিনের এই অসম্ভব ভালো লাগায় ভরে থাকা , প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে এক সুখযাপনের এই ষোলটি ঘন্টা । বেহিসেবি কয়েকটি ঘন্টা প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিলাম , লাল মাটির পথের ধূলো মাখলাম, সোনাঝুরির হাটে হেঁটে হেঁটে জীবনের এই প্রায় মধ্যগগনের পায়ের পাতাগুলো ফুলিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া হাঁটুর ব্যথা করালাম, হাতে গাওয়া ঘিয়ের গন্ধ শুকতে শুকতে হাটের বেচাকিনির সাথে সাথে ধামসা মাদলের তালে নেচে উঠলাম আর সকল রকম শারীরিক প্রতিবন্ধকতার নাকে ঝামা ঘষে প্রজাপতি হয়ে উড়ে ফিরলাম রঙ বেরঙের পাখনা মেলে। ছন্দপতন কি একটুও নেই? আছে আছে। যেন সেই চাঁদপানা মুখে একটা কালো টিকা....আরে ইয়ার নজর না লাগে!! বঞ্চিত রইলাম কবিগুরুর ছোঁয়া থেকে। উনি যেন গোঁসা করেছেন, হাবুদের তালপুকুরে যেতে দিলেন না । লিচু চুরির সেই গল্পের লিচু গাছ বেপাত্তা।
'বসে ছিলেম ছাতিমবনে রোদ ছিটোনো শান্তিনিকেতনে' বলার যো নেই। ফসিলস্ গুলো একাকী গুমরোচ্ছে আর সাথে আমরাও। হাজারবার দেখেও যে আশ মেটে না। শেষ বেলায় দিগন্তে কমলা সূর্যের সাথে মেঠো বাউলের বিষাদ মাখা উদাস সুরে যেন আমাদের একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস আর তার সঙ্গেই মিশে রইলো আবার আসব ফিরের অঙ্গীকার। শেষবেলায় মনের মতো করে কঙ্কালীতলায় মায়ের দর্শনে ষোলকলা পূর্ণ হলো। এবার ফেরার পালা মাটির টানে , সাথে চললো গাড়ির মধ্যেই প্রচুর আড্ডা গান খুনসুটি , আর হ্যাঁ, অবশ্যই খাওয়া দাওয়া, বাঙালির রসনা তৃপ্তি ছাড়া বেড়ানো জমে! সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, আমাদের পাগলামিতে বিগড়ে যাবেন না।
বাঙালি অথচ শান্তিনিকেতনে যাননি এমন মানুষ খুবই কম দেখা যায় । তবে অনেকের কাছেই শান্তিনিকেতনে ভ্রমণ মানে শুধুমাত্রই বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা, সাথে উত্তরায়ন মিউজিয়াম আর বড়জোর খোয়াইয়ের হাট । কেউ কেউ দুদিনের ছুটিতে একযাত্রায় তারাপীঠ-শান্তিনিকেতন-বক্রেশ্বরের ঝোড়ো ট্রিপ করেন । ফলে শান্তিনিকেতনের অনেক কিছুই অদেখা থেকে যায় । আমার পরামর্শ, যাঁরা নিরিবিলিতে দুদিন এই শান্তির ঠিকানায় পাড়ি দিতে চান, তাঁরা এই ট্রিপের সঙ্গে অন্য কোনো জায়গা না জড়িয়ে শুধুই যদি শান্তিনিকেতনে কাটান তবে একটা স্বপ্নের ভ্রমণ হতে পারে ।
ছুটি থাকুক না থাকুক শান্তিনিকেতনে ভালো করে ঘোরার জন্য একটা শুক্রবার বাছুন যাত্রা দিন হিসাবে । ভোরের গণদেবতা এক্সপ্রেস ধরে সাড়ে আটটার মধ্যে চলে আসুন বোলপুর স্টেশনে । রিক্সা বা টোটো ধরে চলুন আপনার আগে থেকে বুক করে রাখা হোটেল বা লজে । আর যদি আগে থেকে বুকিং করা না থাকে তবে ভুবনডাঙার মাঠের কাছ থেকে শুরু করে রতন পল্লী, শ্যামবাটি-গোয়ালপাড়া, সোনাঝুরি, প্রান্তিক স্টেশনের কাছাকাছি বিভিন্ন মানের হোটেল-লজ থেকে আপনার পছন্দমতো ঘর বেছে নিন । বোলপুর স্টেশনের কাছেও অনেক হোটেল আছে, সেগুলোর ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম, তবে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস থেকে দূরত্ব বেশি । হোটেলে লাগেজ রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ও ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ুন কবিতীর্থ দর্শনে । পারলে একজন গাইড নিয়ে নিন । অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন ওঁদের কাছ থেকে । অবশ্য গাইড না নিয়ে নিজেরাও ঘুরতে পারেন । একে একে দেখে নিন ছাতিমতলা, উপাসনাগৃহ, আম্রকুঞ্জ, তিনপাহাড়, শালবীথি, কালোবাড়ি, নতুন বাড়ি বা মৃণালিনী দেবী আনন্দ পাঠশালা, খড়ের তৈরি নতুন বাড়ি, গৌরপ্রাঙ্গন ও ঘন্টাতলা, সিংহসদন, ছোটো কালো বাড়ি বা চৈতি ইত্যাদি । বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেখা যেতে পারে সংগীত ভবন, কলাভবন, মালঞ্চ, নাট্যঘর, নন্দন । ছাতিমতলা বর্তমানে ঘেরা , সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই । এর দক্ষিণ দিকে বকুলবীথি-র অবস্থান । শান্তিনিকেতনের বাড়িটি বর্তমানে হেরিটেজ বিল্ডিং, এর সামনে রামকিংকর বেজের তৈরি শিল্পকীর্তি অনির্বাণ শিখা-র অবস্থান । আম্রকুঞ্জে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসব অনুষ্ঠিত হয় । কালো বাড়ি নন্দলাল বসুর স্মৃতিবিজড়িত । কলাভবনের বিখ্যাত মুর্তিগুলি অবশ্যই দেখে নেবেন । গান্ধীজী-র ডান্ডি অভিযান, সাঁওতাল রমণী আর কলের বাঁশি এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য । বিশ্বভারতীর মূল আকর্ষণ উত্তরায়ণ মিউজিয়াম । টিকিট কেটে ঢুকে পড়ুন এখানে । অনেকগুলি বাড়ি রয়েছে এই প্রাঙ্গনে—বিচিত্রা, উদয়ন, শ্যামলী, কোনার্ক, পুনশ্চ ও উদিচী । রবীন্দ্রভবন বিচিত্রায় দেখুন রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত নানান সামগ্রী, উপহার, সম্মান-স্মারক, নোবেলের রেপ্লিকা ইত্যাদি । আর রয়েছে কবিগুরুর ব্যবহৃত গাড়ি ও কয়েকটি বাড়ি । এখানে সবকিছু ভালোভাবে দেখতে দেখতেই বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাবে । হোটেলে ফিরে স্নান-খাওয়া সেরে আবার বেরিয়ে পড়ুন । পায়ে পায়ে হেঁটে দেখে নিন বেণুকুঞ্জ, চীনা ভবন, হিন্দি ভবন, বইঘর “সুবর্ণরেখা”, শিল্পসামগ্রীর বিক্রয়ভান্ডার “আমার কুটীর” ইত্যাদি । সময় বা ইচ্ছা থাকলে অমর্ত্য সেনের বাড়ি “প্রতীচী”-ও দেখে নিন । ক্লান্ত হয়ে পড়লে একটি বিশ্রাম নিন, চা-এর দোকান যত্রতত্র নেই , তবে যেখানে পাবেন একটু চা-পান করে নিন ।
পরেরদিন শনিবার সকালে প্রকৃতিভবন ঘুরে দশটার পরে চলে আসুন বল্লভপুর অভয়ারণ্য তথা ডিয়ারপার্কে । প্রায় একশোটি চিতল হরিণের পাশাপাশি ময়ূর, বেজি, সাপ, শিয়ালের বসবাস এই শাল-পিয়াশাল-মহুয়া-আকাশমণি-র জঙ্গলে । ওয়াচটাওয়ারে উঠে পাখির চোখে পুরো জঙ্গলটাই একনজরে দেখে নিতে পারেন ।
দুপুরে তিনটে-সাড়ে তিনটেয় বেরিয়ে পড়ুন কোপাই নদী দেখে খোয়াই-র উদ্দেশ্যে । শনিবারেই বসে খোয়াই-র হাট । স্থানীয়দের তৈরি শিল্পকর্মের পাশাপাশি সাঁওতালি নাচ, বাউল গানের আসর, পিঠে-পুলি-দই...কোথা দিয়ে যে সময় পেরিয়ে যাবে, টেরই পাবেন না । রবিবারের সকালটা রাখুন শ্রীনিকেতন আর কংকালীতলা দর্শনের জন্য । মনে রাখবেন : বুধবার শান্তিনিকেতনে সমস্ত কিছুই বন্ধ থাকে । তাই ভুলেও বুধবারটা কখনওই শান্তিনিকেতনে ঘোরার জন্য রাখবেন না । পৌষমেলা আর বসন্ত উৎসবের সময় অনেক আগে থেকেই সমস্ত হোটেল-লজ বুকড্ হয়ে থাকে । তাই এ সময়ে গেলে আগে থেকে বুকিং অবশ্যই করে রাখবেন । যাওয়া-আসা : এখন করোনা আবহে বেশিরভাগ ট্রেনই বন্ধ । স্বাভাবিক অবস্থায় বোলপুরে যাবার জন্য গণদেবতা (সকাল 6-05) ও শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস(সকাল 10-10), রাজগীর (সকাল 11-10), জয়নগর(সকাল 7-15), বিশ্বভারতী প্যাসেঞ্জার(বিকাল 4-40)আছে হাওড়া থেকে । ফেরার সময় এই ট্রেনগুলির মধ্যে গণদেবতা (বিকাল 6-25) ও শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস(দুপুর 1-10)ধরাই সবচেয়ে ভালো । তবে এখন শান্তিনিকেতনে যাবার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা করে যাওয়াই ভালো, তবে এস বি এস তি সি-র বাসেও বোলপুরে যেতে পারেন । কোথায় থাকবেন : অজস্র থাকার জায়গা রয়েছে শান্তিনিকেতনে ও আশেপাশে । বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন আপনার রাত্রিযাপনের ঠিকানা ; WBTDC এর ট্যুরিস্ট লজ (033-22488271), পৌষালি (9434142454) রাঙামাটি ট্যুরিস্ট লজ (0-3463-252305), সারদা লজ (0-3463-252305), আজকাল স্টাফ রিক্রিয়েশন ক্লাবের হলিডে হোম (033-30110852 / 9830189481) ইত্যাদি এর মধ্যে কয়েকটি ।
দুপুর দেড়টা নাগাদ শান্তিনিকেতনের সোনাঝুড়ি হাটের দিকে যাত্রা। ক্যানেল পাড় সংলগ্ন রাস্তা ধরে এগোনোর সময় নজরে এলো, মেয়েরা বাইসাইকেলের ক্যারিয়ারে পণ্যসামগ্রী নিয়ে হাটের দিকে যাচ্ছে।
আক্ষরিক অর্থেই এটি হাট। কোথাও কোনো স্থায়ী ঘর নেই। নেই অস্থায়ী ঘর কিংবা সামিয়ানাও। কেউ ত্রিপল, কেউ চট, কেউবা মাটিতে কাপড় বিছিয়ে পসরা সাজিয়ে বসেছেন। গ্রাম-গঞ্জের বাজারের সঙ্গে এর কোনো মিল নেই। সওদার মধ্যে কাপড় ও সাজগোজের জিনিসের আধিক্য বেশি। তবে নান্দনিক শো-পিস, খেলনা, মনোহরি সামগ্রী ও তৈজসপত্রও রয়েছে। তবে প্রচলিত বাজারের চেয়ে ভিন্ন ঢংয়ের। এখানে অনেক কিছুই পাওয়া যায় যা আর কোথায় চোখে পড়বে না। যেহেতু আমরা সোমবার এই হাটে এসেছি তাই হাটে ক্রেতা রয়েছে তবে গিজগিজ নেই। অধিকাংশই দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন। আসল হাট শনিবার জমে ওঠে। সূর্য যতো পশ্চিমে ঢলে পড়ে ততোই জমে ওঠে হাট। ঢোকার সময়ই কানে ভেসে আসছিল ঢোল আর মাদলের শব্দ। হাটের একপাশে সাঁওতাল দল মাদলের তালে তালে নাচে মগ্ন। গোল হয়ে নাচ চলছে। মাঝখানে গামছা পাতা, নাচ দেখে যার ভালো লাগছে টাকা দিয়ে যাচ্ছেন।
পৌষালি ডাকে শান্তিনিকেতন।
বলছি কি জানলা টা একটু বন্ধ করবেন। সহ যাত্রীনি টি বেশ বিরক্ত স্বরে বললেন কেন। বললাম আমার একটু ঠান্ডার সমস্যা। ও বলে দিলেন জানলা টা বন্ধ করে বেশ রাগত ভাবে। ততক্ষনে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস নৈহাটি ছেড়ে দিয়েছে। গন্তব্য শান্তিনিকেতন। তবে একটু ঘুরে। ভায়া আসানসোল। রাত 9টার ট্রেন পৌছল সাড়ে নয়টায়। ট্রেন থেকে নেমেই বুঝলাম রাঢ় বঙ্গের শীত কি জিনিষ। তাপমাত্রা 10digree. অনুভুত হচ্ছে আরও কম। কাপতে কাপতে উঠলাম ভাইয়ের গাড়ীতে। বাড়ী পৌছে রাতের খাবার খেয়ে আড্ডা শুরু চার জনের। সস্ত্রীক আমি ও সস্ত্রীক ভাই। ঠিক হল পরের দিন মাইথন যাবো। শুতে যাবার সময় দেখলাম ঘড়ির কাঁটা বারো ছুঁইছুঁই। পরের দিন কল্যানীশ্বরি হয়ে মাইথন ড্যাম। মাইথনে ঘোরার জায়গা বলতে প্রধানত মাইথন ড্যাম। শীতে মাইথন ড্যামকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। মজুমদার নিবাসের সামনেই রয়েছে বরাকর নদীর বুকে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা। মাইথন ড্যামের পাশেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক। এছাড়াও রয়েছে মিলেনিয়াম পার্ক। শীতকালে পুষ্পমেলার আয়োজন করে ডিভিসি। মাইথন ড্যাম পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের সীমানায় ঢুকলে মিলবে বোটিং-এর আরও ব্যবস্থা। একটু এগিয়ে ড্যামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে বরাকর নদীর বিস্তীর্ণ পাড়, যেখানে গিয়ে বসলে বরাকরের চঞ্চল ঢেউ মন ভরিয়ে দেবে। বরাকর নদীর বুকেই রয়েছে চামচ দ্বীপ,ডিভিসি সবুজ দ্বীপে পার্কও তৈরি করেছে। এই দুই দ্বীপেই পৌঁছতে হয় বোটিং করে। মাইথনে রয়েছে আদি কল্যাণেশ্বরী মন্দির। ডিভিসি-র হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট। এই পাওয়ার স্টেশনে ঢুকতে গেলে কলকাতায় ডিভিসি অফিস থেকে অথবা মাইথনে ডিভিসি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। সমতলভূমিতে এটাই ছিল দেশের প্রথম হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্ট। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন খোলামুখের কয়লা খনিও। এখানে এলে দুরে পরে থাকে কর্মজীবনের শত ব্যস্ততা। ছুটির আকাল। এখানে স্বচ্ছ নীলাকাশ আর উজ্জ্বল রোদ্রের ছটায় খেলা করে জলের কলকাকলি, সকালে থাকে হালকা কুয়াশার ঘেরাটোপ, এই রকম চিন্তা মনে হলে বেরিয়ে পড়তেই পারেন মাইথনের পথে। পরের দিন সকাল সকাল যাত্রা শুরু করলাম শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্য। পৌষ মেলা যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যথা সময়ে পৌছলাম শান্তিনিকেতন। ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কুড়ি জন অনুগামীকে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের থেকে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। এটিই শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের মূল ভিত্তি। ১৮৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৯৮ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) শান্তিনিকেতনে একটি ব্রাহ্মমন্দির স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালে ব্রাহ্মমন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে মন্দিরের উল্টোদিকের মাঠে একটি ছোটো মেলা আয়োজন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনের সেই পৌষমেলা শুধুমাত্র বীরভূম জেলার নয়, অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকেদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এক সময়ে এ মেলার নাম ছিল ভুবনডাঙার মেলা। এখন শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা নামে এক ডাকে চেনে গোটা বিশ্ব। পরে মেলা উঠে আসে পূর্বপল্লির মাঠে। এখন অবশ্য আর কোনও গণ্ডি নেই। পৌষ মেলা চলে গোটা শান্তিনিকেতন জুড়েই।ব্রহ্মোপাসনার মাধ্যেমে মেলার সূচনা হয়ে প্রতিটি দিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে পৌষের মেলা। এ মেলার বড় বিশেষত্ব হস্তশিল্প ও গ্রামীণ কৃষ্টির উপস্থিতি। সেই সঙ্গে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেল। মাটির পুতুল, ডোকরা, বাঁশি, ডুগডুগি, চর্মশিল্প, একতারা— কী নেই সেখানে! রীতি মেনে বৈতালিককের গান, সানাইয়ের সুর, ছাতিমতলায় উপাসনা এসব তো আছেই, সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক মঞ্চে রায়বেশে, মুখোশনৃত্য, আলকাপ, রণপানৃত্য, ছৌ নাচও হবে। আর বাউল-ফকিরের গান তো থাকবেই। এই সব ঘুরে বেরানোর জন্য 2দিন খুবই কম। কিন্তু ওই যে অফিস বলে যে বস্তু টা আছে সে চোখ রাঙিয়ে বলছে না ফিরলে কিন্তু কপালে দুঃখ আছে। অতঃপর আর কি পরের দিন যিশুর জন্মদিনে ,কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রয়ানের বেদনাকে সঙ্গী করে শান্তিনিকেতন ছাড়লাম। কিন্তু শান্তিনিকেতনের পৌষালি ডাক কানে বাজছে পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে আয় আয় আয়........ আবার তীর্থযাত্রায়। আবার সেই বীরভূম। আজ নানুর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে ঊচকরণ গ্রামের চারটি শিবমন্দির দেখে এলাম। আজও একবার পৌষমেলায় ঘুরে এলাম।
স্থানীয় ধনী পরিবারের হরেন্দ্রনাথ সরখেল কর্তৃক ১৭৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই চারটি চারচালা মন্দিরের টেরাকোটার কাজ এককথায় অসাধারণ, আরও এই কারনে যে এই কাজগুলি খুব ভালো অবস্থায় আছে। কয়েকটি অসাধারণ টেরাকোটা ফলকের ছবি দেখাচ্ছি, পরে বিস্তারিত লিখবো। ১) হরিহর মূর্তি। ২) অর্ধনারীশ্বর (হরগৌরী)। ৩) ঢেকিতে উপবিষ্ট নারদ। ৪) শ্মশান কালী ও সিদ্ধেশ্বরী কালী পাশাপাশি। ৫) চার মাথা যুক্ত ব্রহ্মা (টেরাকোটায় সাধারণতঃ তিনটি মাথা দৃশ্যমান থাকে)। ৬) যুদ্ধরত রাবণের একটি মাথা তিরবিদ্ধ অবস্থায় মাটিতে পড়ে (অনেকে দুটি মাথা বললেও দ্বিতীয় মাথাটি খুব সম্ভবতঃ রাবণের নয়, কারন রাবণের ঘাড়ে ৯টি মাথা দেখা যাচ্ছে)। ৭) টোপর পরা বর-বউ পাশা খেলছে (সম্ভবতঃ স্ত্রী-আচারের অংশ)। ৮) গরুড়ের পিঠে নারায়ণ (খগেন্দ্র রূপে)। ৯) ষড়ভূজ গৌরাঙ্গ। প্রথমে নানুর যান। বোলপুর থেকে কাটোয়া যাওয়ার রাস্তায় বোলপুর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে নানুর (ওখানে গেলে চণ্ডীদাসের ভিটে ও বাশুলী মন্দির দেখতে ভুলবেন না)। নানুর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে উচকরণ গ্রাম। নানুর থেকে টোটো রিজার্ভ করে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো, কেননা গ্রামের মধ্যে ঢুকতে গেলে টোটোই সেফ অপশন।
লেট লতিফ
!! শান্তিনিকেতন ট্যুর!! !! Shantiniketan Tour!! আমরা বাঙালিরা একটু late এ চলি সব বিষয়ে সঙ্গে আমাদের সরকারী যাতায়াত ব্যবস্থাও। একে অন্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ঠিক হয়েছিল আমরা দুই বন্ধু দু দিনের জন্য শান্তিনিকেতন ঘুরতে যাবো 10 ই নভেম্বর শনিবার। আমার বন্ধু আসবে উলুবেরিয়া থেকে আর আমি একটি বিশেষ কারণে চন্দননগর এসেছি সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু হবে। কথা ছিল যে আমরা দুই বন্ধু ব্যান্ডেল এই মিট করব। আমার বন্ধু উলুবেরিয়া থেকে হাওড়ায় এসে হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল গামী লোকাল এ উঠবে আর আমি চন্দননগর থেকে ব্যান্ডেল তিনটে স্টপেজ চলে যাব. রিজার্ভেশন এর কোন গল্প নেই তাই প্ল্যান ছিল 8:40 a.m. এর মাতারা এক্সপ্রেস ধরবো ব্যান্ডেল থেকে। কিন্তু ওই যে আমরা লেট লতিফ। উলুবেরিয়া থেকে যে লোকাল ট্রেনটি আমার বন্ধুর ধরার কথা ছিল সেটা যথারীতি ও মিস করেছে অগত্যা পরে ট্রেনে আসছে, কিন্তু সাউথ ইস্টার্ন এর বিখ্যাত অলিখিত হল্ট স্টেশন টিকিয়াপাড়ার হাওড়ার মাঝখানে, সেখানে ট্রেনটি ঝুলিয়ে দেয় এবং প্রায় আধঘন্টা পরে হাওড়া স্টেশন পৌঁছায় এবং হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল এ আসার যে ট্রেনটা ধরার কথা ছিল সেটাও মিস হয় তারপরে কাটোয়া লোকাল ধরে সে ব্যান্ডেলে এসে পৌছালো। ততক্ষণে মাতারা এক্সপ্রেস ব্যান্ডেল ছেড়ে চলে গেছে আমরা দুই বন্ধু ব্যান্ডেল এসে বসলাম। শুরু হলো Plan B - ব্যান্ডেল থেকে বর্ধমান লোকাল এ করে বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে বর্ধমান থেকে কলকাতা হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ধরবো ঠিক করলাম। ব্যান্ডেল থেকে নটা পাচের বর্ধমান লোকাল এ যাত্রা শুরু হলো পথে যেতে যেতে ট্রেন লেট করা শুরু করলো একটা সময় দাড়িয়েই গেল। এইদিকে আমরা App এ লাইভ ট্রেন স্ট্যাটাস চেক করে চলেছি। এই করে প্রায় সময়ের 20 মিনিট পরে বর্ধমান পৌছালাম। ততক্ষণে কলকাতা হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস এর ছেড়ে চলে গেছে বর্ধমান স্টেশন থেকে। অগত্যা Plan C - পিছনেই ছিল হাওড়া সিউড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই আমরা উঠে পড়লাম দেখলাম যে মোটামুটি বসার জায়গা আছে. ট্রেন ছাড়লো... এক ঘণ্টার মধ্যে বোলপুর শান্তিনিকেতন পৌছে দিল। স্টেশন থেকে শেয়ার টোটো করে লজের মোড় গেলাম যেহেতু আমাদের কোন হোটেল বা লজ বুক করা ছিল না সেই কারণে শুরু হলো হোটেল বা লজ খোঁজা। কম দামে লজ খুঁজতে খুঁজতে বেশ বেগ পেতে হলো অবশেষে একটা ভালোই লজ খুঁজে পেলাম - শান্তিনিকেতন লজিং সেন্টার এটা ভুবনডাঙ্গা তে ₹600/- বিনিময়ে। এদিকে হোটেল খুঁজতে খুঁজতে পথেই আমরা একটা করে রাবড়ি খেয়েছিলাম খুব সুস্বাদু কর আমাদের দু দিনের ট্যুরে আমরা গোটা ছয়েক রাবরি খেয়েছি। Hotel এ CheckIn করে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে shared toto করে বেরিয়ে পড়লাম। সোনাঝুরির হাটে পৌছেই আগে সোজা চলে গেলাম রাম শ্যাম ভিলেজ রিসোর্ট এ। এই গ্রুপে রিসোর্টের প্রচুর নাম শুনেছি তাই লোভ সামলাতে পারলাম না। খাবারের অর্ডার দিলাম। আহা! কি স্বাদ! মনে রাখার মতো বিশেষ করে গাওয়া ঘি. মিল সিস্টেম বা আমরা যাকে থালি বলি। পেটে ছুঁচো ডন মারছিল, পেট পুরে খাওয়া দাওয়া হল, তারপরে শুরু হলো আমাদের সোনাঝুরি হাট পরিক্রমা। জঙ্গলের মধ্যে লাল মাটির ওপর এই হাটের বেচা কিনি সঙ্গে মাদলের তালে ধামসা নাচ খুব এনজয় করলাম সঙ্গে বাড়ির মহিলা আর ঘর সজ্জার জন্য কিছু কেনাকাটি। সঙ্গে অবশ্যই রাবড়ি আবার। সন্ধ্যে হয়ে আসছে এই সময় দেখতে চললাম প্রকৃতি ভবন। মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। মধ্যে ফসিলস গুলো দেখতে দেখতে কানে এলো সাঁওতালি ভাষায় কবিগুরুর গান। দেখলাম একজন শিক্ষক কে ঘিরে ধরে কিছু গ্রামের ছেলেমেয়েরা গান করছে। প্রকৃতি ভবন খোলা থাকে পাঁচটা পর্যন্ত আমরা যখন গিয়েছি তখন পাঁচটা বেজে পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে তাই ওই ভদ্রলোককে যিনি গান শেখাচ্ছিলেন ওনাকে রিকোয়েষ্ট করতে উনি আমাদের প্রকৃতি ভবনের তিনটে গ্যালারি দেখার সুযোগ করে দিলেন টিকিটের বিনিময়ে। টিকিটের ডিটেলস আমি নিচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে দেব। ফেরার তাড়া আছে, চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে, তাই বেশি সময় নষ্ট না করে ওখান থেকে আমরা বেরিয়ে এলাম আবার সোনাঝুরি হাট এর কাছে। ওখান থেকে এক টোটো ওলা কে পেলাম যার টোটো করে চলে এলাম লজের মোর আমাদের লজে. এই টোটো ওলা নাম হলো সঞ্জয়, কম বয়সী অবাঙালি ছেলে একে আমরা ঠিক করলাম পরের দিনের শান্তিনিকেতন ট্যুরের জন্য ₹650/- বিনিময়। অসম্ভব পায়ের যন্ত্রণা হচ্ছিল আসলে এতটা হাঁটার অভ্যাস নেই তাই একটু ফ্রেশ হয়ে pain blam লাগিয়ে নিলাম। হোটেল একটু রেস্ট নিয়ে বেরোলাম ডিনার করতে। ইচ্ছা ছিল বিশ্বভারতীর উল্টোদিকে এস বি আই ব্যাঙ্ক এর সামনে প্রচুর মোমোর দোকান বসে ওখানে মোমো, ফুচকা খাব তারপর ডিনার করে লজে ফিরব। একটু রাত হয়ে যাওয়াতে মোমো পেলাম না তাই রাস্তা দিয়ে হাটাহাটি করতে করতে চলে গেলাম আপনজন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এ সেখানে রুটি তরকা সহযোগে ডিনার করে লজে ফিরে এলাম। একটু টিভি দেখে তারপর লম্বা ঘুম।
11 ই নভেম্বর অর্থাৎ রবিবার। সকালে ওঠার কোন তাড়া ছিল না কারণ এবারের ট্রিপ এ আমরা কঙ্কালীতলা বাদে রেখেছিলাম। ধীরে সুস্থে উঠে বাইরে এ ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম হোটেল এর উল্টো দিকেই গরম গরম লুচি আর ঘুগনি পাওয়া যাচ্ছিল। তারপর একটু ঘোরাঘুরি করলাম রাস্তার উপরে দেখলাম বেশ মাছের বাজার সবজির বাজার বসেছে ঘুরে নিলাম কারণ সন্ধ্যেবেলা আর ঘোরার সুযোগ থাকবে না, ফেরার তারা থাকবে সন্ধ্যায় ট্রেন। কিন্তু একটি মিষ্টির দোকানে দই খেতে ভুললাম না, তারপর সোজা হোটেলের দিকে যেতেই দেখি সঞ্জয় মানে আমাদের টোটো ওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। 9 a.m. টাইম দিয়েছিল কিন্তু সে পৌনে নটার সময় হাজির। একটু wait করতে বলে আমরা হোটেলে এ ঢুকে গেলাম। আধ ঘন্টায় ready হয়ে হোটেল থেকে Checkout করলাম আর রিসেপশনে আমাদের লাগেজ গুলো রেখে দিলাম বললাম চারটার সময় এসে লাগেজগুলো কালেক্ট করে নেব।
সকাল 9.30 তে বেরিয়ে বিশ্বভারতী বাইরের রাস্তা ধরে সঞ্জয় এর সাথে গল্প করতে করতে এলাম সৃজনি গ্রাম এ। সঞ্জয় খুব লাজুক ছেলে যেহেতু ও হিন্দি ভাষী তাই আমাদের যাত্রার পরবর্তী পর্যায়ে ওর লাজুকপনা দেখে ওর নামই আমরা শর্মাজি দিয়ে দিলাম। সৃজনি গ্রাম এ অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ একতারা সুরে সকালের শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ দারুণ লাগলো ঘুরতে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য গুলোর সংস্কৃতি তুলে ধরেছে। সঙ্গে শিল্পীরা তাদের কাজ করে চলেছে। তারপর এগিয়ে চললাম আমার কুটির এর দিকে। কিছুটা গিয়ে লাল মাটির রাস্তায় উঠলাম, চারিদিকে জঙ্গলে ঘেরা। অদ্ভূত অনুভূতি। আমার কুটির হলো showroom. শান্তিনিকেতন শিল্পকলার সুন্দর collection. আমরা দুই বন্ধু কিছু কেনাকাটা করলাম। সাথে ছোট্ট Exhibition hall দেখে চললাম কোপাই নদীর পাড়। ইচ্ছা হয়েছিলো আমার কুটির হসেল ঘর এ lunch করার। কিন্তু আগেই প্ল্যান করে ছিলাম Kasahara তে আজকের lunch করব আর সবে 11.30p.m. তাই হেসেল ঘর, eco Park ফেলে চললাম কোপাই নদীর পাড়। পথে প্রকৃতি ভবন, সোনাঝুরি হাট এ আর ঢুকলাম না। রবিবার এ এর হাট সবে সাজছে, মাদলের তালে ধামসা নাচ চলছে। পৌঁছলাম গ্রাম্য কোপাই নদী। আমাদের কেনাকাটা জিনিস গুলো সঞ্জয় এর toto র cabin এ রেখে দিতে বলে আমরা হেঁটে ঘুরতে গেলাম। নদীর ওপর ব্রিজ টা নতুন করেছে মনে হলো.. মিনিট দশেক time কাটিয়ে চললাম বিশ্ববাংলা হাট। আমার মতে কোপাই নদী দেখতে হলে পরন্ত বিকালে আসুন। আরো ভালো লাগবে তারপর সন্ধের সময়ে বিশ্ববাংলা হাট। আমরা পৌঁছলাম 12.30 p.m. Security guard বললো 1p.m. খুলবে। একটু request করে ভিতরে ঢুকলাম.. কয়েক জন দোকানি পসরা নিয়ে বসেছেন, কেউ কেউ Batik এর কাজ করছেন, পট চিত্রের সুন্দর collection. এরপর চললাম বিশ্বভারতী. সঞ্জয় museum এর সামনে ছেড়ে দিলো আর বললো আমাদের দেখা হয়ে গেলে Call করতে, lunch করাতে নিয়ে যাবে। কারণ বিশ্বভারতীর ভিতর toto চলে না, হেঁটে ঘুরতে হয়। আমরা আশ্রম এর ভিতরে গিয়ে শান্তিনিকেতন গৃহ, এবং আসে পাশের চারিদিকে টা ঘুরে বেড়াতে ভালোই লাগলো। বাকি স্পট গুলো দেখে চলে গেলাম পেট পূজা করতে kasahara the cafe তে। সার্ভিস খুব slow. Thali system হলেও extra charge করে second service এর জন্য। তিনটে নাগাদ চললাম রবীন্দ্র ভবন meuseum. বেশ ভালো লাগলো, এক ঘন্টা থেকে বেরিয়ে পড়লাম কলা ভবন এর উদ্দেশ্য, সাথে একটা করে রাবড়ি খেলাম। চললাম কলা ভবন, এর ভিতর খুব সুন্দর, দেওয়ালের কারুকার্য মনমুগ্ধ করে। এই দিকে ঘড়ির টাইম এগিয়ে চলেছে, শর্মা জি কে ফোন লাগলাম মনে আমাদের toto driver Sanjay. আমাদের pickup করে নিয়ে সোজা হোটেল এ। আগেই বলেছিলাম সকালে হোটেল reception এ luggage রেখে check out করে ছিলাম, তাই শর্মা জি কে একটু wait করিয়ে হোটেল থেকে luggage নিয়ে সোজা station 5 টায়। শর্মা জি কে পাওনা মিটিয়ে ছেড়ে দিলাম সাথে বকসিস ও দিলাম ₹50/- ওর ব্যবহারের জন্য। কারণ আগেই শুনেছিলাম সারাদিনের Tour এ minmum ₹700/- টাকা নেয়। তাই মনে হল ₹650/- বদলে ₹700/- দিলে ও খুশি হবে আর আমরাও আনন্দ পাব। কেলেঙ্কারি ঘটলো একটু পরে যখন মনে পড়লো শর্মা জির toto র cabin এ আমাদের কেনা জিনিস গুলো রয়ে গাছে. সঙ্গে সঙ্গে phone লাগালাম, phone ও receive করে না, মনে সব শহুরে চিন্তা ভাবনা গুলো আসতে থাকলো. একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে থাকলাম toto দের ভিড়ে, খুঁজে ও পেলাম... নতুন আবার passanger খুঁজছে, গিয়ে বলতে সঙ্গে সঙ্গে জিভ কামড়ে ওর ছোট্ট pouch থেকে মোবাইল বের করে ক্ষমা চাইতে থাকলো, বুঝলাম গাড়ি ঘোড়ার আওয়াজ এ শুনতে পাইনি। চোখে মুখে পরিষ্কার লজ্জা আর আফসোস এর ছাপ। আমি ওকে আশ্বস্ত করে বললাম "फिर आएंगे तो तुमको ही स्टेशन से ले जाना पड़ेगा पूरा शांतिनिकेतन घुमाना पड़ेगा" শর্মাজি ওরফে আমাদের সঞ্জয় কে বিদায় জানালাম, আমরা স্টেশনের ভেতরে এসে ঢুকে বসলাম, Sahid Express যথাসময়ে এল কিন্তু ওই যে লেট লতিফ, সেটা তো আর পিছু ছাড়ে না ট্রেন তো এলো কিন্তু পথে চলতে চলতে দাঁড়িয়ে গেলো হাওড়া পৌঁছতে পৌঁছতে ন 'টা বাজানো। তারপর বাড়িতে পৌঁছলাম। সুন্দর একটা ছোট্ট যাত্রা শেষ হল।
এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব যেগুলো শান্তিনিকেতন ঘোরার জন্য আপনাদের কাজে লাগতে পারে -
1. যারা প্রথমবার যাবেন শান্তিনিকেতন আর আগাম হোটেল বুকিং ছাড়া, কখনোই টোটো ওয়ালা কে শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতী যাব বলবেন না তাহলে ওরা উল্টোপাল্টা ভাড়া বলবে। বলবেন লজের মোড় যাবো। ভাড়া নেবে ₹10/- লজের মোর হল বিশ্বভারতী থেকে একটা স্টপেজ আগে ওখান থেকে বিশ্বভারতী কাছাকাছি লজ গুলো শুরু হয়। 2. লজের মোড় থেকে সোনাঝুরি হাট টোটো ভাড়া ₹20/- প্রতিজন. আসার সময়ে ও একই rate. 3. প্রকৃতি ভবন এর entry fee ₹20/-, সময় সন্ধে 5 টা পর্যন্ত। 4. সৃজনি গ্রাম entry fee ₹20/- সময় 9:30a.m. - 5:30p.m. 5.শান্তিনিকেতন গৃহ - entry fee নেই. সময় 1p.m. -5:30p.m. 6. রবীন্দ্র ভবন meuseum. টিকিট ₹50/- সময় 8a.m - 1p.m. এবং 2p.m. - 5:30p.m. 7. বিশ্ববাংলা হাট - entry fee নেই, সময় শুরু 2p.m. থেকে। 8. শান্তিনিকেতন এর tour এ সারাদিনের জন্য toto book করার দরকার পড়ে না। Sight seen গুলো আগে সেরে toto ছেড়ে দিতে পারেন বিশ্বভারতী তে ঢোকার আগে। কারণ বিশ্বভারতী টা আপনাকে পায়ে হেঁটে ঘুরতে হবে. তাই সারাদিনের জন্য toto রিজার্ভ করে অযথাই পয়সা নষ্ট হয়। ওই পয়সায় আপনি চাইলে বিশ্বভারতী কে আরো ভালোভাবে জানার জন্য Guide নিতে পারেন। 9. খাওয়া দাওয়া - কোনো একটা দুপুরের খাওয়া রাম শ্যাম ভিলেজ রিসোর্ট এ must. দাম টা একটু বেশি। Recently দাম টা বেড়েছে (Mutton Thali ₹350/-, Vej Thali - ₹130/-). But first service, varieties of food and obviously very tasty food. Meal/ Thali system, যতো খুশি খান। খেলে ...স্বাদ টা অনেক দিন মনে থাকবে। বিশ্বভারতী র ভিতর Kasahara, the cafe তে Hut type এর arrangement. Students এর ভিড় টা বড্ড বেশি. Service খুব late. Menue বা Rate chart এ তে Thali উল্লেখ থাকলেও extra ভাতের জন্য ও charge করে। খাবারের স্বাদ মোটামুটি ঠিকঠাক। তবে না খেলে কিছু মিস করবেন না। আমি personally Recommend করব না. বিশ্বভারতীর canteen এ যদি খেতে হয় তাহলে বোলপুর শান্তিনিকেতন Road এর side এ সর্বসাধারণ এর জন্য একটা canteen আছে যেটা Chinese Language department এর পাশে।
ক্লাস শেষ করে স্টাফরুমে আসতেই দেখলাম সঞ্চিতাদি এবং অনামিত্রাদি বেরোবার তোড়জোড় করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম “এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছো?”
-“টিকিট কাটতে রে।” - “কোথাও ঘুরতে যাচ্ছা?” - “শান্তিনিকেতন যাবো,তুই যাবি আমাদের সঙ্গে,ঘুণ্টু তো অনেকবার বলেছে তোকে?” ঘুণ্টু অনেকবার করে অনুরোধ করেছে বটে, কিন্তু তখন তেমন একটা পাত্তা দিই নি। এমনিতেই কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে আমি একপায়ে রাজি,এটা আবার কবিগুরুর কর্মক্ষেত্র। তাই সঞ্চিতাদির বলামাত্রই, আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলাম “আমিও যাব।” এইভাবে শান্তিনিকেতন যাত্রার প্রস্তুতি শুরু আমার, জীবনে প্রথমবারের জন্য। ৩রা নভেম্বর ঘুমটা ভাঙলো ভোর পাঁচটার কিছু আগেই, অত্যুৎসাহে সারারাত ঘুমই হয়নি। তখন নতুনের আনন্দে রক্ত টগবগ করে ফুটছে, তাই অত ভোরেও স্নান করতে কোনো সমস্যা হল না। ঠিক ছিল সকাল সাড়ে সাতটায় আমরা সাতজন অর্থাৎ আমি, সৌরভ স্যার, মোহিত, অনামিত্রাদি, অরূপদা, সঞ্চিতাদি এবং ঘুণ্টু(সঞ্চিতাদিদের ছেলে) টালিগঞ্জের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দেখা করব। অটোবিভ্রাটে আমার পৌঁছাতে ১০ মিনিট দেরী হল, গিয়ে দেখি সবাই এসে গেছে, আমি লেট। যাই হোক, এরপর আমরা দুটো ট্যাক্সি নিয়ে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম- শুরু হল শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্যে আমাদের বহু কাঙ্খিত যাত্রা।ট্যাক্সিতে যেতে যেতে মনে হল এতবছরের চেনা কলকাতাও যেন নতুন এক অচেনা রূপে ধরা দিচ্ছে। হাওড়া যখন পৌঁছালাম, ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজতে যায়। স্টেশনে পৌঁছেই চটপট কয়েকটি সেলফি তুলে নিলাম, সেগুলিকে যথারীতি ফেসবুকে পোস্টও করে দিলাম। এরপর সকলে মিলে প্রাতঃরাশ সেরে নিলাম স্টেশনেই, কেউ কেউ খেল লুচি,আবার কেউ কেউ ইডলি। এরপর আমাদের দলের লিডার অরূপদা ওনার ক্যামেরায় আমাদের কিছু ছবি তুলে দিলেন। এইরকম করতে করতেই হঠাৎ শুনতে পেলাম রেলের সেই সুরেলা কণ্ঠী বলে উঠলেন “শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ১০টা বেজে ১০ মিনিটে ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে।” যেই না শোনা, আমি আর ঘুণ্টু প্রায় দৌড়ে চলে গেলাম ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। আমাদের সিট রিজার্ভড ছিল C2 বগিতে। ট্রেনের দরজা খোলার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকলাম, আর তর সইছিল না। মনে পড়ে গেল কবিগুরুর কবিতা “এ প্রাণ, রাতের রেলগাড়ি, দিল পাড়ি….” আমি বসেছিলাম জানালার ধারেই,পাশে মোহিত। যথাসময়ে ট্রেন ছাড়লো,সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে কংক্রিটের জঙ্গল মুছে গিয়ে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ বনানীর দেখা মিলল। বাইরের উন্মুক্ত প্রকৃতিকে প্রায় হাঁ করে গিলতে লাগলাম,সেই সাথে ট্রেনের ভিতরেই ভাঁড়ের চা, ঝালমুড়ি, চিপস সহযোগে মুখ চলতেই লাগল। একটা জিনিস বেশ পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, হাওড়া থেকে শান্তিনিকেতন Air Conditioner Chair Car কোচের ভাড়া ৩০০ টাকা কেন। সারা কামরা ঝকঝক তকতক করছে, কিছুক্ষণ পরপরই সাফাইকর্মীরা এসে সবকিছু পরিষ্কার করে দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে মনেই হচ্ছিল না ট্রেনে আছি,বেশ ভালো অভিজ্ঞতা। এইভাবে চলতে চলতে বেলা ১টা নাগাদ অবশেষে পৌঁছালাম সেই পবিত্রভূমিতে অর্থাৎ বোলপুর স্টেশনে। ট্রেন মাঝে মাত্র ২টি স্টেশন বর্ধমান এবং গুসকরায় দাঁড়িয়েছিল ২-৩মিনিটের জন্য। বোলপুর স্টেশনের বাইরে আমাদের জন্য টোটো অপেক্ষা করছিল, অরূপদা সবকিছু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন। টোটোচালক ভদ্রলোকের কথা আলাদা করে বলতেই হয়, এনার নাম ছোটকাদা, নিপাট ভালোমানুষ,অত্যন্ত সাদাসিধা।আমরা গোটা শান্তিনিকেতন এনার টোটো করেই টো টো করে ঘুরব,এইরকমই কথা হয়েছিল। তো ছোটকাদা আমাদের স্টেশন থেকে সরাসরি নিয়ে আসলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম’'-এর পর্যটক আবাসে। আমাদের রুম আগে থেকেই বুক করা ছিল, দুটি Double bedded A.C Room যার প্রতিটির ভাড়া ১৫০০ টাকা, এবং একটি Single Bedded A.C. Room যার ভাড়া ১৩৫০ টাকা।সাধারণত সরকারি কোনো জায়গা বলতে যা বোঝায়, শান্তিনিকেতনের এই সরকারি পর্যটক আবাস কিন্তু একেবারেই সেরকম নয়,এটি রীতিমত কেতাদুরস্ত। সবদিক অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। একদিকে আছে লজ, অন্যদিকে কটেজ। আর সামনেই বেশ বড়সড় সাইজের মাঠ। ঘরে এসে দেখলাম এই ঘর যে কোনো তিনতারা হোটেলকে অনায়াসে টেক্কা দিতে পারে। তবে সবথেকে ভালো লাগলো যে জিনিসটি সেটি হল, এখানে প্রতিটি ঘরের নাম কবিগুরুর কোনো না কোনো লেখার নামে নামাঙ্কিত। হোটেলে এসেই আমরা চটজলদি স্নান সেরে পড়িমরি করে কিছু মুখে গুঁজে বেড়িয়ে পড়লাম শান্তিনিকেতন ভ্রমণে।সেইদিন দুপুরের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, আলুভাজা, মোচার তরকারী আর মাছ, রান্নার গুণগত মানও বেশ ভালো ছিল।টোটোতে আসতে আসতেই ছোটকাদার সাথে ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল আমরা ওইদিন কোথায় কোথায় ঘুরব।কথায় কথায় বুঝতে পারলাম ওইদিন আর বিশ্বভারতী যাওয়া হচ্ছে না, মনটা একটু খারাপই লাগছিল। শান্তিনিকেতন এলাম কিন্তু বিশ্বভারতী দেখবো না?নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেই ভুল ভাঙলো যখন ছোটকাদা আমাদের নিয়ে এলেন কোপাই নদীরে তীরে। ছোটকাদার যোগাযোগ নম্বর - 9933154828 |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |