ক্লাস শেষ করে স্টাফরুমে আসতেই দেখলাম সঞ্চিতাদি এবং অনামিত্রাদি বেরোবার তোড়জোড় করছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম “এত সকাল সকাল কোথায় যাচ্ছো?”
-“টিকিট কাটতে রে।” - “কোথাও ঘুরতে যাচ্ছা?” - “শান্তিনিকেতন যাবো,তুই যাবি আমাদের সঙ্গে,ঘুণ্টু তো অনেকবার বলেছে তোকে?” ঘুণ্টু অনেকবার করে অনুরোধ করেছে বটে, কিন্তু তখন তেমন একটা পাত্তা দিই নি। এমনিতেই কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে আমি একপায়ে রাজি,এটা আবার কবিগুরুর কর্মক্ষেত্র। তাই সঞ্চিতাদির বলামাত্রই, আমি সঙ্গে সঙ্গে বলে দিলাম “আমিও যাব।” এইভাবে শান্তিনিকেতন যাত্রার প্রস্তুতি শুরু আমার, জীবনে প্রথমবারের জন্য। ৩রা নভেম্বর ঘুমটা ভাঙলো ভোর পাঁচটার কিছু আগেই, অত্যুৎসাহে সারারাত ঘুমই হয়নি। তখন নতুনের আনন্দে রক্ত টগবগ করে ফুটছে, তাই অত ভোরেও স্নান করতে কোনো সমস্যা হল না। ঠিক ছিল সকাল সাড়ে সাতটায় আমরা সাতজন অর্থাৎ আমি, সৌরভ স্যার, মোহিত, অনামিত্রাদি, অরূপদা, সঞ্চিতাদি এবং ঘুণ্টু(সঞ্চিতাদিদের ছেলে) টালিগঞ্জের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে দেখা করব। অটোবিভ্রাটে আমার পৌঁছাতে ১০ মিনিট দেরী হল, গিয়ে দেখি সবাই এসে গেছে, আমি লেট। যাই হোক, এরপর আমরা দুটো ট্যাক্সি নিয়ে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম- শুরু হল শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্যে আমাদের বহু কাঙ্খিত যাত্রা।ট্যাক্সিতে যেতে যেতে মনে হল এতবছরের চেনা কলকাতাও যেন নতুন এক অচেনা রূপে ধরা দিচ্ছে। হাওড়া যখন পৌঁছালাম, ঘড়িতে সাড়ে আটটা বাজতে যায়। স্টেশনে পৌঁছেই চটপট কয়েকটি সেলফি তুলে নিলাম, সেগুলিকে যথারীতি ফেসবুকে পোস্টও করে দিলাম। এরপর সকলে মিলে প্রাতঃরাশ সেরে নিলাম স্টেশনেই, কেউ কেউ খেল লুচি,আবার কেউ কেউ ইডলি। এরপর আমাদের দলের লিডার অরূপদা ওনার ক্যামেরায় আমাদের কিছু ছবি তুলে দিলেন। এইরকম করতে করতেই হঠাৎ শুনতে পেলাম রেলের সেই সুরেলা কণ্ঠী বলে উঠলেন “শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ১০টা বেজে ১০ মিনিটে ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে।” যেই না শোনা, আমি আর ঘুণ্টু প্রায় দৌড়ে চলে গেলাম ১২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে। আমাদের সিট রিজার্ভড ছিল C2 বগিতে। ট্রেনের দরজা খোলার সাথে সাথে হুড়মুড়িয়ে ভিতরে ঢুকলাম, আর তর সইছিল না। মনে পড়ে গেল কবিগুরুর কবিতা “এ প্রাণ, রাতের রেলগাড়ি, দিল পাড়ি….” আমি বসেছিলাম জানালার ধারেই,পাশে মোহিত। যথাসময়ে ট্রেন ছাড়লো,সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে কংক্রিটের জঙ্গল মুছে গিয়ে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ বনানীর দেখা মিলল। বাইরের উন্মুক্ত প্রকৃতিকে প্রায় হাঁ করে গিলতে লাগলাম,সেই সাথে ট্রেনের ভিতরেই ভাঁড়ের চা, ঝালমুড়ি, চিপস সহযোগে মুখ চলতেই লাগল। একটা জিনিস বেশ পরিষ্কার বুঝতে পারছিলাম, হাওড়া থেকে শান্তিনিকেতন Air Conditioner Chair Car কোচের ভাড়া ৩০০ টাকা কেন। সারা কামরা ঝকঝক তকতক করছে, কিছুক্ষণ পরপরই সাফাইকর্মীরা এসে সবকিছু পরিষ্কার করে দিচ্ছে। সামগ্রিকভাবে মনেই হচ্ছিল না ট্রেনে আছি,বেশ ভালো অভিজ্ঞতা। এইভাবে চলতে চলতে বেলা ১টা নাগাদ অবশেষে পৌঁছালাম সেই পবিত্রভূমিতে অর্থাৎ বোলপুর স্টেশনে। ট্রেন মাঝে মাত্র ২টি স্টেশন বর্ধমান এবং গুসকরায় দাঁড়িয়েছিল ২-৩মিনিটের জন্য। বোলপুর স্টেশনের বাইরে আমাদের জন্য টোটো অপেক্ষা করছিল, অরূপদা সবকিছু আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন। টোটোচালক ভদ্রলোকের কথা আলাদা করে বলতেই হয়, এনার নাম ছোটকাদা, নিপাট ভালোমানুষ,অত্যন্ত সাদাসিধা।আমরা গোটা শান্তিনিকেতন এনার টোটো করেই টো টো করে ঘুরব,এইরকমই কথা হয়েছিল। তো ছোটকাদা আমাদের স্টেশন থেকে সরাসরি নিয়ে আসলেন ‘পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম’'-এর পর্যটক আবাসে। আমাদের রুম আগে থেকেই বুক করা ছিল, দুটি Double bedded A.C Room যার প্রতিটির ভাড়া ১৫০০ টাকা, এবং একটি Single Bedded A.C. Room যার ভাড়া ১৩৫০ টাকা।সাধারণত সরকারি কোনো জায়গা বলতে যা বোঝায়, শান্তিনিকেতনের এই সরকারি পর্যটক আবাস কিন্তু একেবারেই সেরকম নয়,এটি রীতিমত কেতাদুরস্ত। সবদিক অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। একদিকে আছে লজ, অন্যদিকে কটেজ। আর সামনেই বেশ বড়সড় সাইজের মাঠ। ঘরে এসে দেখলাম এই ঘর যে কোনো তিনতারা হোটেলকে অনায়াসে টেক্কা দিতে পারে। তবে সবথেকে ভালো লাগলো যে জিনিসটি সেটি হল, এখানে প্রতিটি ঘরের নাম কবিগুরুর কোনো না কোনো লেখার নামে নামাঙ্কিত। হোটেলে এসেই আমরা চটজলদি স্নান সেরে পড়িমরি করে কিছু মুখে গুঁজে বেড়িয়ে পড়লাম শান্তিনিকেতন ভ্রমণে।সেইদিন দুপুরের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, আলুভাজা, মোচার তরকারী আর মাছ, রান্নার গুণগত মানও বেশ ভালো ছিল।টোটোতে আসতে আসতেই ছোটকাদার সাথে ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল আমরা ওইদিন কোথায় কোথায় ঘুরব।কথায় কথায় বুঝতে পারলাম ওইদিন আর বিশ্বভারতী যাওয়া হচ্ছে না, মনটা একটু খারাপই লাগছিল। শান্তিনিকেতন এলাম কিন্তু বিশ্বভারতী দেখবো না?নিজেকে কেমন অপরাধী মনে হচ্ছিল। কিন্তু সেই ভুল ভাঙলো যখন ছোটকাদা আমাদের নিয়ে এলেন কোপাই নদীরে তীরে। ছোটকাদার যোগাযোগ নম্বর - 9933154828
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |