বালি হাওড়া থেকে বাইক চালিয়ে ঘুরে এলাম ভুটান( ফুটসিলিং, থিম্পু, পারো, পুনাখা)।
পারমিট বানানোর জন্য একদিন ফুটসিলিং থাকতে হবে। সকাল দশটার সময় অফিসে যেতে হবে। অফিসটা বড় গেট দিয়ে ঢুকে ডানদিকে। ফর্ম নিয়ে ফিলাপ করে ডকুমেন্ট এর (ভোটার কার্ডের) জেরক্সের সাথে জমা দিতে হবে। ২০০ টাকা করে প্রতিদিন বাইক পারমিশনের জন্য জমা দিতে হবে ।ওরাই টাকা নিয়ে চালান কেটে নেবে। ডকুমেন্টস এর জন্য লাগবে, ভোটার আই কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পলুশন পেপার, ইনসোরেন্স, বাইকের ব্লু বুকের জেরক্স আর ১ কপি ফোটো। ঘন্টা 2/3 টের মধ্যে ওরা পারমিট দিয়ে দেবে। ওই পারমিট আর ১ কপি ফোটো নিয়ে পাশের কাউন্টারে দেখালে ভুটান সিম নেওয়া যাবে। এবার এই দুটো পারমিটের ৫/৬ টা কপি জেরক্স করে রাখতে হবে। এখানে শুধু থিম্পু আর পারোর পারমিশন হবে। পুনাখা, হা, আরো বাকি যায়গার পারমিশন থিম্পুতে হবে। পারমিশন অফিস শনি ও রবিবার বন্ধ থাকে। সেই বুঝে প্ল্যান করতে হবে। সব শেষে একটা কথাই বলবো প্রোগ্রাম লেংদি হয় হোক..সবার আগে কিন্তু নিজের জীবন৷ হাইওয়েতে একটা ভূল মানেই.......
0 Comments
দুজন মিলে বেরিয়ে পড়েছিলাম...ভূটানের উদ্দেশ্যে..কাঞ্চন কন্যার টিকিট নেই...চল অগতির গতি শতাব্দী তে....
রাত ১১ টায় NJP...তে নামলাম....কোথায় থাকব এত রাত্রে...ত্রিরুপতি তে ফোন করলাম...ঘর নেই...প্রধান লজে ও ঘর নেই...স্টেশানে নামার পর দেখি এক মুখচেনা গরীব দালালের সঙ্গে দেখা...বলল চলুন ঘরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি...ত্রিরুপতি লজের রো র একেবারে শেষ একটা লজে ঘরের ব্যবস্থা করে দিল..,, পরের দিন ভোর ৫ টা তে টিকিট কাউন্টারের সামনে....njp to হাসিমারার টিকিট কাটলাম...৭:৩০ টা তে কাঞ্চন কন্যা এল...ফাঁকা ট্রেন....চললুম প্রকৃতির মাঝখান দিয়ে... হাসিমারা তে নেমে...লাইন টপকে অটোতে ৩০ টাকা ভাড়া দিয়ে জয়গাঁও...ভাত খেয়ে...গেট টপকে....ফুটশিলিং....(পারমিট কলকাতা থেকে করে গেছিলুম)ট্যাক্সি স্ট্যান্ড হেঁটেয়ই মেরে দিলাম....বৌ এর গজগজানি শুনতে শুনতে....কিপটে টিপটে বলে খুব গাল দিল.... তারপর গাড়ি ভাড়া....পুরো গাড়ি নিলে ২৪০০ থিম্পু....ইনোভা....ভাবলাম শেয়ারে যাব...কিছুক্ষন অপেক্ষা করার পর কাউকে পেলাম না...তখন দুপুর দুটো....চল পুরো গাড়ি নিয়ে....পুরো রাস্তা টাতে বার তিনেক চেকিং....কফি ব্রেক...সারথী বন্ধু হয়ে গেল....উনার থলি থেকে আপেল খেতে খেতে...৭ টার সময় থিম্পু....হোটেল..ট্রাভেল সিম সবকিছুর ব্যবস্থা সারথীই ঠিক করে দিল....লজ টা স্টেডিয়ামের পাশে...ছিল....১২০০ টাকা করে...ঝক ঝকে....রুম..পরে শুনেছিলাম কলকাতা থেকে ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে বুক করে যাওয়া ঐ লজের ভাড়া ১৮০০/ টাকা.....লজের রেস্টুরেন্ট টা অসাধারন ছিল..... পরের দিন ভোর বেলায় থিম্পুর রাস্তায়....একটা ট্যাক্সি কে পাকড়াও করলাম ...,সাইড সিইং এর জন্য.....দেখলাম যে সব ট্যাক্সি গুলো একই ভাড়া বলছে....ভারতের লোক হয়ে একটু অবাক হলাম..... সকাল ৯ টায় থিম্পুর ইমিগ্রেশান কাউন্টারে র সামনে লাইন দিলাম.....পুনাখার পারমিটের জন্য..... পরের দিন পুনাখা ....রিসর্ট গাড়ি বুক করেছিলাম থিম্পু থেকেই..... পুনাখা তে এক রাত্রি থেকে পরের দিন পারো....পারো শহর থেকে খানিকটা উঁচুতে....পারো হসপিটালের পাশের এক রিসর্টে ছিলাম....পারো তে গিয়েই বুক করেছিলাম..... সেইদিনই পারো ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে একটা গাড়ি নিয়ে পারো সাইড সিন....দুপুরে ভেজ থুকপা...কারন গাড়ির সারথী বলে দিয়েছিল....ওখান কার মাছ মাংস সব শিলিগুড়ি থেকে আসে...ভূটানের মাটিতে প্রানী হত্যা করলে লামা রা ধরে ঠ্যাঁঙ্গাবে..... পরের দিন চেলালা পাস সকাল বেলা....সারাদিন পারো র নদীর ধারে ঘোরাঘুরি পরের দিন.... টাইগার_নেস্ট.....বাঙালি পর্যটক রা ভয় দেখালো..এক নন বেঙ্গলি দম্পতি তিন বছরের বাচ্চা কে নিয়ে যাচ্ছে দেখে আমরাও চললুম..... .৩-৩:৩০ ঘন্টা লাগল ....অসাধারন অভিজ্ঞতা..,..ঠিক যেমন অভিজ্ঞতা হয়েছিল.....রিশপ থেকে পায়ে হেঁটে লাভা পর্যন্ত আসাতে.... পরের দিন পারো থেকে হাসিমারা.....দুপুর দুটোয় একটা লোকাল ট্রেন ধরে njp....পরের দিন ভোর ৫:৩০ তে শতাব্দী ধরে ঘরের ছেলে র ঘরে ফেরা.....শ্বাশুড়ির উৎকন্ঠার অবসান..... পুরো ঘোরাঘুরি টা করেছিলাম পুরো ক্যাশ টাকা নিয়ে.....৫০০ টাকার নোট চলত....ওখান কার লোকেরা এত সৎ.....ভাবতে অবাক লাগে.....সমস্ত গাড়ি ভাড়া ফিক্সড.....কেউ বেশিও নেয় না কমও নেয় না...... কাঞ্চন কন্যার রিজার্ভেশান পেলে ভালহত.....অনেক খরচ কমে যেত.... ভূটানের সব থেকে বড় আকর্ষন নীল আকাশ আর মানুষদের সততা......
---------রাজার দেশ--------
সে এক ভারি আজব দেশ/রাজা মন্ত্রী আছেন বেশ। সত্যিই রাজার দেশ। আজব দেশ কিনা জানিনা,তবে অপূর্ব সুন্দর এ দেশ। ভুটান। ট্রেনে প্রথমে হাসিমারা। ওখান থেকে জয়গাঁ। এখান থেকেই দেখা যায় ভুটানের বিশাল প্রবেশদ্বার । ওপারে ফুন্টশোলিং। ভুটানে থাকার জন্য এখান থেকেই অনুমতি পত্র নিতে হয়। অনুমতি পত্র হাতে নিয়ে কিছুটা সময় থাকায় কাছেই একটা বৌদ্ধ গুম্ফা ঘুরে নিলাম।রাতটা জয়গাঁতে কাটিয়ে পরদিন পারো যাওয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলাম। চলার পথের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে চোখ জুরিয়েযায়|রাস্তা গুলো এত পরিষ্কার যে একটা পাতাও পরে থাকতে দেখা যায়না|প্রায় বিকেল বেলায় গিয়ে পৌছালাম পারোতে। ছবির মত সুন্দর শহর। মনে হচ্ছিল ভগবান অনেক সময় নিয়ে সযত্নে এই শহর সৃষ্টি করেছেন।দূষণমুক্ত শহর।চারদিকে অক্সিজেনের সম্ভার। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পারো ছু। ছু কথার অর্থ নদী। সন্ধ্যাবেলা পায়ে হেটে চারপাশে ঘোরা যায়। কমলালেবু গাছ,আপেল বাগান দেখলাম। আর দেখলাম National Museum,Paro Taktsang,Paro Dzong,Paro International Airport,Chele la pass.চেলেলা তে খুব ঠান্ডা হাওয়া বয়|এখানে দুদিন প্রাণ ভরে বাতাস নিয়ে চললাম রাজধানী থিম্পুর দিকে। খুব Decipline মেনে চলে এরা। কোথাও ট্রাফিক সিগন্যাল নেই তবু গাড়ি গুলি নিয়ম মেনে চলে। কাওকে রাস্তা পার হতে দেখলে গাড়ি-চালক নিজেই গাড়ি থমিয়ে দেয়।এখানে দেখলাম Chorthen Monestry,Buddha Monestry,point view,Buddha point,Thimpu Dzong,National Library,Takin preserve,Dochula.Takin ভুটানের জাতীয় পশু| আমারা স্হানীয় পোশাক পরে স্হানীয় নৃত্য শিল্পীদের সাথে আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছিলাম। স্হানীয় বাজারে বেশ সুন্দর জিনিস পাওয়া যায়। তবে দরদাম করে নিতে হয়। এককথায় রাজার দেশ ভুটান অবর্ণনীয় । তাকশাং সিদ্ধার্থ সিংহ রায় ভুটান ভ্রমনের তৃতীয় দিনে আমাদের গাড়ি ছুটল সেই বহু প্রতীক্ষিত স্থানের দিকে। যাকে নিয়ে এতদিন স্পেকুলেট করেছি। চিন্তা করেছি, ভাবনা করেছি কি করে টাকে জয় করব এখন আর কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সে আমাদের সামনে আসবে। বলতে বলতেই গাড়ি এসে থামল একটা জায়গায়। হ্যাঁ। এখান থেকেই শুরু হয় তাকশাং মনাস্টেরি তে যাওয়ার ট্রেকিং কাম হাইকিং। তাকশাং মঠ কে অনেকে টাইগার’স নেস্ট বা বাঘের গুহা বলে। ভুটানে বৌদ্ধ ধর্ম কথা অনুযায়ী গুরু পদ্ম সম্ভব যিনি এই অঞ্চলে গুরু রিনপোচে নামে বেশী পরিচিত তিনি একবার সুদুর তিব্বত থেকে এক উরন্ত বাঘের পিঠে চেপে এখান কার পাহাড়ের উপর এক গুহায় এসেছিলেন এবং সেখানেই অনেক দিন ধরে তপস্যা করেন। এই বাঘ আবার যে সে বাঘ ছিল না। ইনি হলেন গুরু রিনপোচের এক কনসর্ট বা সঙ্গিনী। আর এই থেকেই ঐ গুহার নাম হয় টাইগার’স নেস্ট। সেই গুহার পাশেই গড়ে উঠেছে এক বিশাল মঠ, তাকশাং। এই তিব্বতি শব্দের মানেই হল বাঘের গুহা। শুনেছি খাড়া সুউচ্চ পাহাড়ের গায়ে এই মঠ এমন ভাবে ঝুলে আছে যে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। অনেক টা দুর্গম ও কষ্ট সাধ্য রাস্তা পেরিয়ে তবে ঐ অভীষ্ট স্থানে পৌছোতে হয়। গতকালের শোচনীয় অভিজ্ঞতা এখন মনে টাটকা। তাই শেষ পর্যন্ত পৌছতে পারব কিনা জানি না। তবে কর্তৃপক্ষ বুদ্ধি করে মঠে ঢোকার টিকিট কাউন্টার টা নিচেই রেখেছে। অর্থাৎ যদি টিকিট কাটার পর কেউ মঠ অবধি পৌছতে না পারে তাহলে ৫০০ টাকা জলে গেল। হ্যাঁ, ঐ মঠে ঢোকার প্রবেশ মুল্য ৫০০ টাকা। অবশ্য আমাদের দেশেও তাজমহলের প্রবেশ মুল্য হাজার টাকা বিদেশীদের জন্য। একটা সুলভ শৌচালয়ে যেতে হল জল বের করার জন্য। সেখানে প্রবেশ মুল্য ১০ টাকা। অতঃপর আমরা গুরু রিনপোচের নাম নিয়ে রওনা দিলাম। সংগে একটা করে বাঁশের লাঠি। ৫০ টাকা দিয়ে ভাড়া করা। তখন সকাল ৯ টা বাজে। কয়েক জন বিদেশির পিছন পিছন যাত্রা শুরু করলাম, কিন্তু অচীরেই তারা লম্বা লম্বা পা ফেলে আমাদের ছারিয়ে চলে গেল। প্রথম খানিক টা রাস্তা টা সমতল ই ছিল, বেশ উৎফুল্ল হয়ে হাঁটছিলাম। কিন্তু একটু পরেই শুরু হল চড়াই, জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। সেখানে আবার রাস্তা বোঝা দায়। পথ ভুল করে অন্য দিকে না চলে যাই। তাহলে একটা কেলেংকারিয়াস কাণ্ড হবে। সামনে চলা অন্যান্য লোক দের ফলো করে চললাম। এর মধ্যে আবার ঘোড়া দের উৎপাত। রাস্তার মাঝামাঝি একটা ক্যাফেটেরিয়া আছে। সেই অবধি ঘোড়ায় চড়ে যাওয়া যায়। তাই অনেকে ঘোড়ায় চড়ে চলেছে। সেই ঘোড়া গুলো শুধু গায়ের উপর চলে আসছে। কি বিপদ। এই চড়াই রাস্তায় ধাক্কা খেলে গড়িয়ে পড়বো যে নিচে। সাবধানে ঘোড়া বাঁচিয়ে চলতে লাগলাম। আস্তে আস্তে রাস্তা খাড়াই হতে লাগল। আমি আর টুবাই কেরামতি দেখাবার জন্য জোরে জোরে হাঁটছিলাম। জয় দা আর অরিন্দম পিছিয়ে পড়েছে। কিন্তু এই খাড়াই বেয়ে কিছুক্ষন চলার পরই হাঁপিয়ে পড়লাম। দাঁড়িয়ে পড়তে হল। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলাম। এই জায়গা টায় গাছের ছাওয়া নেই। রোদ পরছে। খাদের পাশ থেকে অনেক নিচের কার পারকিং টা দেখা যাচ্ছে। এক জন প্রচণ্ড মোটা বিদেশী মহিলা আমাদের সামনে ওঠার প্রানপন চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার সঙ্গী রা টাকে উৎসাহ দিচ্ছে। এই করতে করতে জয় দা আর অরিন্দম চলে এল। জয় দা ঠিক আছে। অরিন্দমের অবস্থা আমাদেরি মত। একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার ওঠা শুরু হল। একটু উঠি, একটু দাঁড়াই। এই করেই এগচ্ছি। এক টানা ওঠার ক্ষমতা নেই। বাকি যাত্রী রাও তাই করছে। যারা আমাদের টপকে গট গট করে এগিয়ে যাচ্ছে, কিছু টা এগিয়ে দেখি তারাই আবার ছড়িয়ে বসে হাঁপাচ্ছে। এরকমই চলছে। এর মধ্যে এক বাঙালি ভদ্র লোক নিজে যেচে আলাপ করলেন। ওনার বাড়ি শ্যাম নগর। বয়স ষাটের উপর। কিন্তু এখনও ফিট। ছেলের সঙ্গে এসেছেন। ছেলের ছবি তোলার সখ। সে তার এস এল আর নিয়ে এগিয়ে গেছে। উনি নিজের মত হাঁটছেন। উনি আমাদের হাল হকিকত জানলেন। নিজের কথাও বললেন। আমরাও বিশ্রাম নিতে নিতে ওনার সাথে একটু গল্প করলাম। তারপর আবার এগলাম। একটা জায়গায় চলার পথ ছেড়ে অনেকে শর্টকাট নিচ্ছে দেখে আমিও সে পথে গেলাম। অর্ধেক টা উঠেই বুঝলাম যে ভুল করেছি। এত খাড়াই দিয়ে ওঠা আমার কম্ম নয়। কিন্তু শর্টকাট এর মজা হল একবার সে পথে এগোলে আর ফেরার উপায় নেই। তাই কোনো মতে আঁচড়ে পিছড়ে উঠলাম। ওঠার পর দেখি বুক টা হাপরের মত ওঠা নামা করছে। একটা কল লাগানো ছিল সামনে। গিয়ে ঢক ঢক করে অনেক টা জল খেয়ে নিলাম, চোখে মুখেও জল দিলাম, তারপর একটু শান্তি পেলাম। সামনে তাকিয়ে অনেক লোক দাঁড়িয়ে ছবি তুলছে। কারন পথ চলা শুরু করার পর এখান থেকেই প্রথম তাকশাং এর ঝলক দেখা যায়। দেখলাম পাহাড়ের গায়ে কিভাবে ম্যাজিক এর মত ঝুলে আছে মঠ টা। এখান থেকে এত ছোট দেখাচ্ছে। তার মানে আরও কত না জানি চড়াই উঠতে হবে। ভেবেই আমার মনোবল কমে গেল। আবার দেখা হয়ে গেল ঐ ভদ্র লোকের সাথে। এবারে ওনার ছেলের সাথেও আলাপ হল। ২৭-২৮ বছর বয়স। গলায় এস এল আর ঝুলছে। একটু একটু বিজ্ঞ বিজ্ঞ ভাব। ভদ্র লোক কে দেখে ভাবলাম, উনি যদি এই বয়সে ওঠার কথা ভাবতে পারেন তাহলে আমি কেন পারব। আর তাই আবার নতুন উদ্দমে পথ চলা শুরু করলাম। পারতেই হবে। আবার কখনও থামি কখনও চলি। কোথাও বেশী ক্লান্ত হয়ে গেলে দু মিনিট বসে জিরিয়ে নি। এইভাবে উঠতে লাগলাম। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পথ। কখনও পাহাড়ি ঝরনা টপকে চলা, কখনও বাঁ গাছের গুড়ি কাটিয়ে চলা। মাঝে মধ্যে দু একটা জায়গায় সিঁড়ি ভাঙা। তবে শর্টকাট এর প্রলোভনে আর পা দিই নি। চলা পথের রাস্তা তাই চলেছি। কিছুক্ষণ চলার পর একটা খোলা জায়গায় এসে পড়লাম। এখান থেকে তাকশাং বেশ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। আগের বার যত ছোট লাগছিল, এখানে তার থেকে অনেক টা বড় লাগছে। তার মানে বেশ অনেক টা উঠে এসেছি। মন টা খুশি তে ভরে উঠল। ফাঁকা জায়গা টায় একটা ছাউনির নিচে স্ট্যান্ডের উপর কত গুলো জপ যন্ত্র। আশে পাশে বেশ কিছু বেঞ্চ ও আছে। আমরা দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে লাগলাম। ইতিমধ্যে সেই ভদ্র লোক আর তার ছেলেও এসে হাজির হল। ওনাদের সাথেও কিছু ছবি তোলা হল। একটু বিশ্রাম নেওয়ার পর আবার প্রস্থান। এবার একেবারে মঠের সামনে গিয়ে থামব। ঐ খান থেকে একটা রাস্তা একটু নিচে ক্যাফেটেরিয়া তে গিয়ে ঢুকেছে আর একটা রাস্তা উপরের দিকে চলে গেছে। আমরা উপরের রাস্তা ধরলাম। ক্যাফেটেরিয়ার পর থেকে রাস্তা আরও খারাপ হয়েছে। যেমন চড়াই, তেমনি সরু। কোথাও দু জন এক সাথে চলার যো নেই। উপর থেকে কেউ নেমে আসলে এক পাশে সরে গিয়ে টাকে রাস্তা দিতে হচ্ছে। রাস্তার অবস্থাও খুব খারাপ। গ্রামের মেঠো রাস্তার মত। এবড়ো খেবড়ো। ধুলো ভর্তি। যথা সম্ভব খাদের ধার থেকে দূরে চলার চেষ্টা করলাম। রাস্তা এত খাড়াই যে দু পা যেতে না যেতেই হাঁপিয়ে পড়ি। চলা কম আর দাঁড়ানোই বেশি হচ্ছে। এই রকম করে কখন পৌছোবো কে জানে। মাঝে মাঝে জেদ করে তাড়াতাড়ি ওঠার চেষ্টা করে দেখছি দম আটকে আসছে। মনে হচ্ছে যেন হার্ট ফেল হয়ে যাবে। জানি না হৃৎপিণ্ডের ধমনি তে কত ধুলো জমেছে। বেশি শরীরের শক্তি দেখাতে গিয়ে যদি ধমনি আটকে যায় তাহলে এই জীবন টা তাকশাং এর পথেই ফেলে যেতে হবে। আমি তো বৌদ্ধ নই হিন্দু। তাই তাকশাং এর পথে পটল তুললে কোনও পুন্য হবে কিনা জানি না। মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আর কাজ নেই, এখানেই সটান শুয়ে পড়ি। নেহাত ই চক্ষু লজ্জার ভয়ে কাজ টা করতে পারছি না। তবে এইভাবে আর কিছু ক্ষন চললে চক্ষু লজ্জা আর কত টুকু অবশিষ্ট থাকবে টা জানি না। আর পারছি না। শরীরে আর শক্তি নেই। ক্লান্ত অবসন্ন শরীর টা কে কোনো মতে মনের জোরে টেনে নিয়ে চলেছি। তবে আর কতক্ষন পারব তা জানি না। আর কয়েক টা পা। জগদ্দল পাথরের মত ভারী হয়ে আসা পা দুটো আর সেই সঙ্গে বুনো অবাধ্য ঘোড়ার মত প্রানপনে ছুটতে থাকা আমার আদি অকৃত্তিম হৃদপিন্ড টা কে কাতর ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু হৃদপিন্ড টা মনে হচ্ছে যেন বুকের খাঁচা ভেঙ্গে ছুটে বেরিয়ে আসবে। একটু জল। জল ই জীবন। ছোটোবেলা থেকে পড়ে আসা এই আপাত নিরীহ কথা টার মানে আজ বুঝতে পারছি। শরীরের প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অনুভব করছি। একটু জল না পেলে যে তেষ্টায় বুক ফেটে মরে যাব। কিন্তু বাঁক ঘুরতেই গল্প টা বদলে গেল। চোখের সামনে কালো পরদা সরে নাটকীয় ভাবে সে আবির্ভূত হল আমার চোখের সামনে। সব কষ্ট ভুলে নির্নিমেষ দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম তার দিকে। ঐতো পথের সব দূ্র্লংঘ্য বাধা অতিক্রম করে আমি এসে দাড়িয়েছি তার সামনে। তাকে দেখব বলে। এখন সে আমার এত কাছে। আর কয়েক টা পা। আর কয়েক টা পা ফেলেই পৌঁছে গেলাম এ পথের সবচেয়ে উচু জায়গায়। তাকশাং ভিউ পয়েন্ট। ওখানে গিয়ে আসল কাণ্ড টা বুঝতে পারলাম। আমরা এতক্ষণ যে পাহাড়ে চড়ছিলাম, সেখানে ঐ মঠ নেই। মঠ আছে পাশের একটা খাড়াই পাহাড়ে। কিন্তু সে পাহাড়ের গা এতই খাড়াই আর এতই মসৃণ যে তাতে সরাসরি চড়ার কোনো উপায় নেই। তাই এই পাহাড়ে চড়ে সেখান থেকে সিঁড়ি দিয়ে অনেক টা নিচে নেমে তারপর সেখান থেকে আবার সিঁড়ি বেয়ে ঐ পাশের পাহাড়ে উঠতে হবে। সে যাই হোক এ পথে এটাই সবচেয়ে উঁচু জায়গা। পারোর উচ্চতা ২২০০ মিটার আর তাকশাং ৩১০০ মিটার। তার মানে ২ ঘণ্টায় আমরা ৯০০ মিটার মানে প্রায় ১ কিলো মিটার চড়েছি। ভাবা যায়?! এখন থেকে তাকশাং কে অন্যবদ্য লাগছে। মনে হচ্ছে যেন কোনও রুপকথার দুনিয়ায় চলে এসেছি। পাহাড়ের মাথায় ঐ মায়াবী ক্যাসল, যেখানে দুষ্টু ডাইনী অচীন দেশের রাজ কন্যা কে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে। আর রাজকন্যা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে তার প্রিন্স চারমিং এর যে তাকে এই বন্দী দশা থেকে উদ্ধার করবে। আমি এসে গেছি রাজকন্যা। আর একটু অপেক্ষা কর। একটা ধর্মীয় স্থানে দাঁড়িয়ে গ্রীম ব্রাদার্স এর রুপ কথার গল্প মনে করা টা শুধু অনুচিত নয় হাস্যকরও বটে। কিন্তু আমাদের সামনে দুই ভারতীয় রাজকন্যা কে ভিউ পয়েন্ট এ দাঁড়িয়ে মুখে পাউট এনে ছবি তুলতে দেখে এই মেটাফর টা অটোমেটিক মাথায় চলে এল। সত্যি বলছি। আমাদের মতন শ্রেক এর জীবনে ফিওনা আসে না। তাই আমার দুই রাজকন্যাও উড়ে গেল একটু পরে। কি আর করব। মনের দুঃখে কয়েক টা সেলফি তুলে ফেললাম তাকশাং এর সামনে দাঁড়িয়ে। দূর থেকে দেখে মঠ টা মনে হচ্ছে যেন একটা খেলনার বাড়ি। কেউ আঠা দিয়ে পাহাড়ের গায়ে লাগিয়ে দিয়েছে। কারন আঠা ছাড়া একটা এত্ত বড় বাড়ি ওরকম পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকতে পারে না। এও প্রকৃতির এক খেলা। যেমন বীরভুমের দুবরাজপুরের মামা ভাগ্নে পাহাড়ে ঐ বিশাল পাথরের চাই কি এক অদ্ভুত ম্যাজিকে যুগের পর যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছে এক ভাবে। আমরা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে পা দুটো কে একটু রেস্ট দেওয়ার পর এগোলাম সিঁড়ির দিকে। পাহাড়ে ওঠা কষ্টকর বটে, কিন্তু নামা আরো বিপজ্জনক। মুহূর্তের ভুলে পা পিছলে অনেক গড়িয়ে পড়তে পারে যে কেউ। তাই অতি সাবধানে এক পা এক পা করে সিঁড়ি নামতে নামতে একেবারে নিচে পৌছোলাম। শুনেছি ওঠা নামা মিলিয়ে ৯০০ সিঁড়ি আছে। এক দম নিচে একটা ছোট ঝরনা। নাম ডাকিনী ফলস। ঝরনার ধারে দাঁড়িয়েও ছবি তোলা হল। অতঃপর সিঁড়ি চড়া। আবার সেই যন্ত্রণা। বুক ধড়ফড়ানি, হাপানি, পায়ে খিল ধরে যাওয়া। তবে বেশি সিঁড়ি নয়। তাই দু তিন বার দাঁড়িয়ে উঠে গেলাম। একদম শেষের দিকে বাঁ দিকে একটা পথ উঠে গেছে একটা সরু গুহা মুখে। ওটাই হল আসল গুহা। কিন্তু পথের সিঁড়ি গুলো সরু আর বিপজ্জনক ভাবে ভাঙা। তাই ও পথে যাওয়ার রিস্ক নিলাম না। সোজা পথে গিয়ে তাকশাং এর মূল ফটক এর সামনে হাজির হলাম। এখানে আমাদের চেকিং হবে। ব্যাগ, মানি ব্যাগ, ক্যামেরা সব জমা রাখতে হবে। ক্লোক রুমে গিয়ে সব রাখলাম। টিকিট দেখালাম। তারপর একটা ১৫-১৬ বছরের বাচ্চা মেয়ে গাইড হয়ে আমাদের সঙ্গে মঠের ভিতরে ঢুকল। সঙ্গে আর এক কাপল। মেয়ে টি প্রথমে আমাদের নিয়ে গেল একটা মস্ত পাথরের চাই এর কাছে। এটা নাকি একটা উইশিং স্টোন। পাথরের গায়ে একটা ছোট্ট খোঁদলে চোখ বুজে যে আঙ্গুল ঠেকাতে পারবে তার মনস্কামনা পূর্ণ হবে। সবাই চেষ্টা করল। জয় দা আর অরিন্দমের বাইরে পড়ল। আমার আঙ্গুল লাগল খোদলের বর্ডারে। একদম কান ঘেঁসে বেরিয়ে গেল। এটাই আমার লাইফ স্টোরি। আমার সব প্রচেষ্টাই এরকম কান ঘেঁসে বেরিয়ে যায়। কিন্তু টুবাই এর লাগল। একদম বুল’স আই। গুরু রিনপোচে নিশ্চয়ই ওর মনোবাঞ্ছা পুরন করবেন। এরপর আমরা গেলাম অন্য একটা ঘরে। সেখানে জানলাম গুরুর আট রূপের কাহিনী। তার মধ্যে সব চেয়ে ইন্টেরেস্টিং হল তার রাগী রুপ। যখন তিনি ভুটানে এসেছিলেন তখন চারিদিকে অধর্ম অন্যায় এ ভরে গেছিল। এই রাগী রুপ ধরেই তিনি অধর্মের বিনাশ করেন। অনেক টা আমাদের ভগবান বিষ্ণুর বিভিন্ন অবতারের মত। বৌদ্ধ ধর্ম যে হিন্দু ধর্ম দ্বারা খুবই প্রভাবিত তা ভালই বোঝা যায়। আর তা হবেই না বা কেন? ভগবান বুদ্ধও তো প্রথম জীবনে হিন্দুই ছিলেন। যাই হোক সেই রাগী রূপের মূর্তি দেখিয়ে মেয়ে টি জিজ্ঞেস করল যে ক্যাফেটেরিয়া থেকে তাকশাং এর দৃশ্য আমাদের মনে আছে কিনা। ও বলার পর আমরা রিয়েলাইজ করলাম যে তাকশাং মঠ ও তৎসংলগ্ন পাহাড়ের গা সব মিলিয়ে গুরু রিনপোচের এই রাগী মুখের আদলই তুলে ধরে। কিন্তু এও কি সম্ভব? এক যদি না দূর থেকে তাকশাং এর ঐ রুপ দেখেই কোন ধার্মিক শিল্পীর মনে গুরুর এই মুখের আদল প্রথম মনে আসে। তারপর ঐ ভাবেই গুরুর মুখ গড়া হয়। তারপর যুগ যুগ ধরে চলতে চলতে গল্প তা স্রেফ উলতে গেছে। অসম্ভব নয়। অবিশ্বাসী মন। তাই মেয়েটির সরল বিশ্বাসের সাথে একাত্ত্ব হতে পারলাম না। মন ঠিক একটা যুক্তি বার করে নিল। বিশ্বাস যে মায়া মৃগ। সহজে খুজে পাওয়া যায় না। কিন্তু যার কাছে ধরা দেয় সে অমৃতের সন্ধান পায়। যেমন মেয়ে টি পেয়েছে। এরপর মেয়ে টি আমাদের আরো অন্যান্য ঘরে নিয়ে গেল আর গুরুর আরো অনেক শান্ত সমাহিত রূপের মূর্তি দেখাল। কিন্তু আমার মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগল গুরুর ঐ রুদ্র রুপ। সবশেষে মেয়ে টি এক খোলা ব্যালকনির ধারে নিয়ে গেল। এখান থেকে সমস্ত পারো উপত্যকা চবির মত দেখাচ্ছে। রুপোলী রেখার মত নদী আর তার দুধারে সবুজের গালিচা পাতা বিস্তীর্ণ চাষের জমি। যেন দেব ভূমে এসে পড়েছি। দু চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছিলাম। আর সেই সঙ্গে ভাবছিলাম এখন আমরা গুরুর সেই রুদ্র মুখের এক চোখের মনি তে দাঁড়িয়ে আছি। ভেবেই গায়ে কাঁটা দিল। অনেক ক্ষন ধরেই আকাশে মেঘ জমছিল। আর সেই সঙ্গে হাল্কা হাল্কা মেঘের গর্জন। আমরা মঠের ভেতরে থাকতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছিল। মঠের এদিক থেকে ওদিক যাওয়ার পথে একটু আধটু ভিজেওছি। এখন বৃষ্টি টা ধরে এসেছে। সেই সঙ্গে মেঘের আড়াল সরে আকাশে আবার রোদের দেখা মিলেছে। আমরা চিন্তিত হলাম। বৃষ্টি তে যদি ঐ মাটির রাস্তা ভিজে পিচ্ছিল হয়ে যায় তবে নামবো কি ভাবে। পিছলে পড়লে তো বড় সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যাই হোক সেরকম বৃষ্টি হয় নি। আমাদের দ্রুত নিচে নেমে যেতে হবে আবহাওয়া খারাপ হওয়ার আগেই। আমরা বাইরে বেরিয়ে নিজেদের জিনিষ পত্র কালেক্ট করলাম। ঐ গাইড মেয়ে টি কে খুজছিলাম ছবি তোলার জন্য। কিন্তু সে অন্য ট্যুরিস্ট দের সাথে ভেতরে চলে গেছে। অন্য গাইড দের মত ওকেও আমরা টিপস দিয়েছি। মেয়ে টির বাড়ি ঐ পাশের পাহাড়ে। ওখান থেকে এত টা পথ হেঁটে ও আসে এখানে। পড়াশোনাও করে অনেক দুরের স্কুলে হেঁটে গিয়ে। কি কষ্টের জীবন অথচ সব সময় হাসি মুখ। কত কিছু সেখার আছে এই মানুষ গুলোর কাছ থেকে। ইতিমধ্যে আমাদের শ্যাম নগরের ভদ্র লোক ও অনার ছেলে চলে এসেছে। ওরা মঠে ঢুকলেন আর আমরা বেরলাম। এতে অহংকার করার কিছু নেই কারন আমরা যখন ধুকেছি তখন যে বিদেশি যুগলের সাথে আমরা হাঁটা শুরু করেছিলাম তাদের বেরতে দেখেছি। একবার শেষবার তাকিয়ে নিয়ে আমরা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে শুরু করলাম। সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে ডাকিনী ফলসের পাশ দিয়ে আবার সিঁড়ি বেয়ে ওঠা। অবশেষে ভিউ পয়েন্ট এ পৌছোলাম। অনেক গুলো সিঁড়ি বেয়ে হাঁপিয়ে গেছিলাম তাই এখানে একটু বিরতি। দেখলাম যে মোটা মহিলা কে অনেক আগে পিছনে ফেলে আমরা এগিয়ে এসেছিলাম, তিনি এখন ভিউ পয়েন্ট এ পৌছেছেন। সত্যিই ইচ্ছে থাকলে মানুষ কিই না করতে পারে। একটু জিরোবার আবার হাঁটা। এবার আর চড়াই নেই, শুধুই উতরাই। তাই কষ্ট আর নেই, শুধু সাবধানে দেখে শুনে নামলেই হল। আমি সবাই কে তাড়া দিলাম। বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে, তাছাড়া তাড়াতাড়ি নামতে পারলে আরো কিছু দেখা যাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। আমার সহযাত্রী রা তখন যুদ্ধ জয়ের আনন্দে গল্পে মশগুল। অগত্যা আমিই এগলাম। যদি আমাকে দেখে পায়ের গতি বাড়ায়। কিন্তু বৃথা আশা। আমি তো আর কোনো নেভার ল্যান্ডের রাজ কন্যা নই যে আমার পিছু পিছু ওরা ছুটতে ছুটতে আসবে। আমি তর তর করে নামতে অচিরেই ক্যাফেটেরিয়ায় পৌঁছে গেলাম। তারপর ১ বোতল জল ৭০ টাকা দিয়ে কিনে সেই জপ যন্ত্র টার সামনের বেঞ্চে বসে তাকশাং এর দিকে আনমনে চেয়ে রইলাম। প্রায় ২০ মিনিট পরে দেখলাম আমার সহ অভিযাত্রী রা এভারেস্ট জয় করে ফিরছেন। দেরী হওয়ার কারন জিজ্ঞেস করলে জানলাম পথে এক জায়গায় আমার সাথে দুরত্ত্ব মেক আপ করার জন্য শর্ট কাট নিতে গিয়ে নিজেরাই রান আউট হওয়ার জোগাড় হয়েছিল। অতি কষ্টে উইকেট বেঁচেছে। কি আর বলব। আবার এগলাম। অরিন্দম কোনো এক অসামান্য কারনে উতরাই এর সময়ও হাঁপাচ্ছে। ফিজিক্স এর কোন ল দিয়ে এর ব্যাখ্যা হয় জানি না। অবশেষে ৩ টে নাগাত আমরা ফাইনালি নিচে নেমে এলাম অক্ষত শরীরে। ক্যাফেটেরিয়া টে বসেই উত্তম কে ফোন করে দিয়েছিলাম। ও সঠিক সময়ে চলে এসেছিল। গেটে হাতের লাঠি খানা জমা দিয়ে আমরা গাড়ি তে উঠলাম। পিছনে পড়ে রইল তাকশাং আর গুরু রিনপোচের রুদ্র রুপ। শুধু স্মৃতি তে রয়ে গেল যুদ্ধ জয়ের অনাবিল আনন্দ। আমরা পেরেছি। Post By:- Sid Ray
চেলেলা পাস (Chele la pass).. ভূটানের গপ্প বলছি আপনাদের ক'দিন ধরে।আজ বলব চেলেলা পাস-এর কথা।ভূটানের সর্বোচ্চ গাড়ি চলাচলযোগ্য রাস্তা এই চেলেলা পাস(highest motorable pass)।১৩০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই রাস্তাটি সংযোগ ঘটিয়েছে পারো ভ্যালী ও হা'ভ্যালীর। আমরা পারো থেকে প্রায় সকাল ৮ টা নাগাদ যাত্রা শুরু করলাম চেলেলা পাসের উদ্দেশ্যে।আমাদের টুর অপারেটর দাদা বলেই দিয়েছিলেন যে আজ জ্যাকেট বা গরম মোটা সোয়েটার ও টুপি সাথে নিতে!কারন এই ক'দিন ভূটানে একমাত্র রাত্রে ছাড়া খুব বেশি ঠান্ডা পাইই নি আমরা। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা ধরে আমাদের ছোট্ট জাপানি বাস চেলেলাতে পৌঁছল প্রায় ৩ ঘন্টা পরে।চেলেলার একদম হায়েস্ট পয়েন্টে পৌঁছে গেলাম।বাস থেকে নামতেই ঠান্ডার কামড় খেলাম।বেশ ভাল ঠান্ডা!প্রায় ৫-৬ ডিগ্রী হবে!জ্যাকেট আর টুপি পরে ফেলেছি,,,কিন্তু গ্লাভস পরতে মন চাইল না!কারন সাধের ক্যামেরার শাটার ঠিকঠাক কন্ট্রোল করতে পারব না যে! চারিদিকে নাম না জানা উঁচু উঁচু পাহাড়,,,দূরে দেখা যাচ্ছে ভূটানের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট জোমোলহারি।হঠাৎ কোথা থেকে চলে এল কালো কুচকুচে মেঘরাশি!ঢেকে গেল জোমোলহারি!হারিয়ে গেল মেঘের আড়ালে! অন্যদিকে দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সুন্দরী হা'ভ্যালী!শুনেছি হা'ভ্যালী এক কথায় স্বর্গ!আমাদের ভ্রমণসূচীর মধ্যে হা'ভ্যালী ছিল না।তাই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মত দূর থেকে হাঁ করে হা'ভ্যালী দেখা ছাড়া আর উপায় ছিল না। চেলেলা'র ওই ২-৩ ঘন্টা ছিল স্বপ্নের মত!পাহাড় আর আকাশ যেন এসে গিয়েছিল আমাদের হাতের মুঠোয়! ©অরিন্দম Post By:- Arindam Patra
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |