অনেকদিনের ইচ্ছে কোন এক রাজবাড়ীতে কয়েকদিন এসে থাকবো….খোঁজাখুজির পর ইটাচূনা রাজরাড়ীর সন্ধান পেলাম। যথারীতি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলাম এবং ওদের কথামতো দুটো ঘর বুক করলাম। আমরা পাশাপাশি ঘর পেলাম- বড়মা ও মেজমা.... ওদের ঘরের নামকরন দেখে বেশ মজা লেগেছিল। পরে অবশ্য খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম অতীতে যে বা যারা যে ঘরে থাকতো সেইহিসেবে নাম রেখেছে। বেশ একটু রোমাঞ্চকর ব্যাপার হাজার হউক ৩০০ বছরের পুরানো রাজবাড়ী কেমন যেন একটা গা ছমছম ভাব।
আমরা চারজন দুই রাত্রির (২১/২২ সেপ্টেম্বর ২০১৮)জন্য বুক করেছিলাম। যতটুকু আশা নিয়ে গিয়েছিলাম তার তুলনায় অনেক বেশিই পেয়েছিলাম। যাদের যাবার ইচ্ছে চলে যেতে পারেন আমার মনেহয় নিরাশ হবেন না। তবে ঘর অনেক আগে থেকে বুক করার চেষ্টা করবেন। ঘর পাওয়া মনেহয় একটু কঠিন হয়। খরচ ও সাধ্যের মধ্যে আর বেশী দূরও নয় ....গ্রাম - ইটাচূনা,পুলিস ষ্টেশন পান্ডুয়া, জিলা হুগলী। ফটোর সাথে আরো দুটো ফটো কপি দিয়েছি যা আপনাদের যত জিজ্ঞাসার সব উওর পেয়ে যাবেন আশাকরি।
0 Comments
এর আগে অনেক বন্ধু ইটাচুনা রাজবাড়ী নিয়ে পোস্টিং করেছেন তবু আমি আমার কিছু ছবি ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। আজ সকালে হাওড়া স্টেশন থেকে হাওড়া বর্ধমান লোকাল ধরে খন্যান স্টেশন নেমে টোটো করে ১০ মিনিটের পথ ইটাচুনা রাজবাড়ী এলাম। প্রথমেই আমাদের অভ্যর্থনা করা হল একটা সুন্দর পানীয় দিয়ে। আমরা ১২ জন সদস্য ছিলাম, যার জন্য ৬ বেডের "বিলাস মঞ্জরী", ৪ বেডের "জ্যেঠা মশাই ও কাকা বাবু" এবং ২ বেডের মাটির ঘর "অপরাজিতা" বুক করেছিলাম। খাওয়া দাওয়ার কোনো তুলনা নেই। এটা হোটেল নয়, তাদের অতিথি হিসেবে আমাদের আপ্যায়ন করা হল।
পৃথিবী এখন অসুস্থ, বিগত সাত মাস ব্যাপী এই লড়াই আমাদের দুর্বল করে দিলেও,মনোবলে চিড় ধরাতে পারেনি। বাঙালীর পায়ের তলায় সর্ষে,মাঝে কিছুদিনের বিরতি থাকায় কিছুতেই শান্ত হতে পারছিলাম না।মাঝে মাঝে পাগলের মতো ভিড়, দমবন্ধ ইটকাঠ, পাথর আর কংক্রিটের শহর থেকে মন পাড়ি দেয় অন্য কোথাও।
সপ্তাহশেষে যৎসামান্য তল্পিতল্পা নিয়ে কোনওক্রমে পালিয়ে যাওয়ার বাসনায়,দ্বিচক্রযানটি নিয়ে মুখে মাস্ক এঁটে,বেরিয়ে পড়লাম গিন্নিকে নিয়ে,গন্তব্য এবার ইটাচুনা।প্রতি দিনের ছাপোষা জীবন আর তুচ্ছতাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়ে এক ছুট্টে চলে গেলাম ইতিহাস মোড়া ইটাচুনা রাজবাড়িতে। যান্ত্রিক আধুনিকতাকে সটান ছুড়ে ফেলে রাজকীয় দিনরাত কাটানোর বাসনাতেই পৌছে গেলাম ঘন্টা দেড়েকের রাস্তা ইটাচুনা( আমার বাসস্থান হাওড়া থেকে ৬২ কিমি)।জনঅরণ্য থেকে খানিক দূরেই হুগলির ইটাচুনা রাজবাড়ি প্রস্তুত আভিজাত্যের চাদরের মোড়কে সাদরে অভ্যর্থনা জানাতে। 'খোকা ঘুমলো পাড়া জুড়লো, বর্গী এল দেশে’ চৌথ আদায়ের জন্য বর্গীরা(মারাঠা সৈন্য) প্রায়ই হানা দিচ্ছে।সেইসময় প্রচুর ধনসম্পত্তি করে কুন্দ্রা রাজা বংগদেশে থেকে যান।এই কুন্দ্রা থেকেই পরবর্তী কালে কুন্ডু পদবী তে রুপান্তর হয়।সাফল্য নারায়ণ কুণ্ডুর বংশধররা ১৭৬৬ সালে এই রাজবাড়ি তৈরি করেন। বর্গীদের বাড়ি বলে স্থানীয়। মানুষ একে বর্গীডাঙাও বলেন।শহরের সীমানা ছাড়িয়ে গাছগাছালি মেঠো পথ, মাইলের পর মাইল সবুজে মোড়া চাষের জমি, কলোচ্ছ্বাসরত শিশুর দল চোখ জুড়িয়ে অদ্ভূত প্রশান্তি দেয় হৃদয়কে। পথ শেষ হয় রাজবাড়ির বিশাল ফটকে। গেট ছাড়িয়ে ভিতরে পা দিলে কেমন যেন গা ছমছম করে ওঠে। লোকলস্কর পাইক বরকন্দাজ— কালের নিয়মে সেই অতীত জৌলুসের কিছুই আর অবশিষ্ট নেই এখন। তাও পুরনো দেওয়ালের প্রাচীন গন্ধ, উঁচু কড়িবরগার ছাদ, আল্পনা দেওয়া বিরাট নাটমন্দির, প্রাঙ্গন জুড়ে বিরাট বিরাট বাতিস্তম্ভ, প্রকাণ্ড ঝাড়বাতি দিয়ে সাজান ইতিহাসের গন্ধমাখা সুবিশাল বৈঠকখানা মুহূর্তে অন্য এক জগতের দরজা খুলে দেয় চোখের সামনে। কাছারি বাড়ি, হিসাবের ঘর, বাজার সরকারের ঘর পেরিয়ে তবে অন্দরমহলে পা।বাড়ির মেয়েরা যাতে অন্দরের জানলা খুলে বাইরেটা দেখতে পান, অথচ তাঁদের কেউ দেখতে না পায় সেই ব্যবস্থা করা ছিল অলিন্দে ছোট ছোট জানলা করে। বাড়ির সবই সাবেক প্রথার। বড়কর্তা মেজোকর্তার সারিবদ্ধ ঘর, বিবর্ণ বহু পুরনো আসবাবপত্র, বিরাট সিন্দুক,কারুকার্যমণ্ডিত পালঙ্ক সবই। বাড়ির লম্বা নিঃঝুম অলিন্দ, জানলা দিয়ে ডিঙি মেরে দেখা বাইরের সবুজের সমারোহ, খিড়কির পুকুরে নুয়ে পড়া গাছ— সবই বড় মায়াবী, মনকেমন করা। অতিথিদের জন্য মোট ১৭ টি ঘর আছে,সাবেক প্রথা মেনে যার ঘর তার নামেই ঘরের নামকরণ- বড় বৌদি,ছোট বৌদি,কাকাবাবু,ছোট পিসিমা ইত্যাদি।বর্তমানে ঠাকুমার ঘরটি সারিয়ে দেবপ্রভা নামকরণ করা হয়েছে(৬ জন ব্যক্তির এক সাথে থাকার ব্যাবস্থা আছে) এছাড়া রাজবাড়ির পিছনে কুটিরেও থাকা যায়। আমরা বড় বৌদির ঘরে ছিলাম,খাট,বিছানা থেকে আলমারী,দেরাজ,টেবিল ল্যাম্প কার্পেটে ইতিহাস মোড়া।মোট দুটি ঘর-একটি শয়ন কক্ষ অপরটি স্নান ঘর।ঘর সংলগ্ন বারান্দায় হাঁটলে নিজের নিঃশ্বাস ও বাতাসে ধ্বনিত হয়,মাঝে মাঝে শুধু কপোত- কপোতিরা ডানা ঝাপটে আপনায় চমকে দিতে পারে। প্রতিদিন বিকেল ৪.৩০ টায় গাউড আসেন অতিথিদের বাড়ী ঘুরিয়ে দেখান,ইতিহাস নিয়ে আলোকপাত করেন।পাকশালা,বাগান,পিছনের বাগান,রাজবাড়ীর জলাশয় এবং সবশেষে স্বপ্নের সিড়ি বেয়ে ২০ বিঘা প্রাসাদের ছাদ।ছাদটি বড়ই মনোরম। প্রকাণ্ড ছাদে দিনের বেলা তুমুল হাওয়া আলোড়িত করে যায়। রাতের নিবিড় অন্ধকার ঠাণ্ডা শিরশিরে স্রোত বইয়ে দেয় বুকের ভিতর দিয়ে। আকাশের দিকে তাকালে মনে হয় নক্ষত্রের রাত বুঝি একেই বলে। যেন নিকষ অন্ধকারে হিরের টুকরো ছড়িয়ে রেখেছে কেউ। স্ট্রিট লাইট বিচ্ছুরিত শহুরে জীবনে এমন রাত তো আসে না!ঠিক সন্ধ্যা ৬টায় সন্ধারতির ঘণ্টাধ্বনি ভেসে আসে রাজবাড়ির ঠাকুরদালান থেকে। ইতিহাস থেকে জানা যায় কুন্দ্রারা শিবের উপাসক ছিলেন,তাই রাজবাড়ীর বিপরীতে শিবলিংগ প্রতিষ্ঠিত আছেন। তার কিছুদূরেই দূর্গামন্দিরও আছে।পরবর্তীকালে এনারা শ্রীকৃষ্ণের পূজা চালু করেন এবং শ্রীধর জিউ(নারায়ণ) এর নিত্য পূজা চালু হয়,দিনে তিনবার ঠাকুরের আরতি হয়-সকাল ৬টা,সকাল ১০ টা আর সন্ধ্যা ৬টায়।আরতি দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সন্ধ্যা ৭ টার দিকে এক বাঁশুরিয়া পাশের গ্রাম থেকে রোজ বাঁশি বাজাতে আসেন রাজবাড়িতে। তাঁর নিমগ্ন বাঁশির মন খারাপ করা মেঠো সুর ভেসে যায় হাওয়ায়। খেলা করে নিস্তব্ধ বাড়ির আনাচ কানাচে।চা ঘরে চায়ে চুমুক দিতে দিতে মনটা খারাপ হয়ে যায়। সন্ধ্যায় বৈঠকখানার সেই প্রকাণ্ড ঝাড়বাতি ইতিহাস কে আকড়ে টিকে আছে।
রাজবাড়ির খাওয়ার ব্যবস্থাও রাজকীয়। অথেনটিক বাঙালি রান্না বলতে যা বোঝায়, পাওয়া যায় এখানে। বনেদি জমিদার বাড়ির অন্দরসজ্জায় সজ্জিত ঝকঝকে কাঁসার থালাবাটিতে পরিবেশিত এই খাবারের স্বাদ মুখে লেগে থাকবে বহু দিন।আধুনিকতায় মোড়া রুম সার্ভিস নয়,খাঁটি বাঙালি আদপে একসাথে বসে একতলায় পাকশালার পাশেই খাওয়ার ব্যবস্থা আছে।ভাত,ডাল থেকে শুরু করে কোপ্তা,ছানার ডালনা হোক কি চিংড়ি,ভেটকি বা দেশী মুরগীর ঝোল।শুধু আগের দিন রাত্রে জানিয়ে দিতে হবে পছন্দের তালিকা।
নিবিড় সবুজ আর বিস্মৃত ঐতিহ্যের মখমলি গন্ধ বুকে ভরে রাত কাটিয়ে এ বার ঘরে ফেরার পালা।আবার ইতিহাসের পাতা থেকে বেড়িয়ে কংক্রিটের রাস্তায় রোজকার দিনযাপন... কীভাবে যাবেন গাড়িতে গেলে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে এক ঘণ্টা ড্রাইভ করে যান। আজাদ হিন্দ ধাবা এবং হিন্দুস্থান হোটেলকে বাঁদিকে রেখে তার পরের বাঁ দিকের রাস্তা ধরুন। ব্রিজের তলা দিয়ে ডান দিকে গিয়ে পৌঁছে যান বোসিপুর। সেখান থেকে ১৯ কিলোমিটার আরও ড্রাইভ করে পৌঁছে যান হালুসাই। যেখান থেকে ১০ মিনিটের দূরত্বে ইটাচুনা রাজবাড়ি। ট্রেনে গেলে বর্ধমানগামী যে কোনও (ভায়া মেন লাইন) ট্রেন ধরুন। অথবা হাওড়া থেকে মেমারি-পাণ্ডুয়া লোকালও ধরতে পারেন। ট্রেনে প্রায় দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে যেতে। ব্যান্ডেল ছাড়িয়ে আরও গোটাতিনেক স্টেশনের পর আসবে খন্যান। সেখানে নেমে ভ্যান/রিকশা/অটোয় মিনিট দশেকের পথ ইটাচুনা রাজবাড়ি। কোথায় থাকবেন থাকার ব্যবস্থা রাজবাড়ির অন্দরমহলেই। বিলাসবহুল ঘর থেকে মাটির কুঁড়েঘর— সব রকমের ব্যবস্থাই রয়েছে। বিলাসিতার মাপকাঠির নিরিখে ভাগ করা সবক’টা ঘর। সবচেয়ে দামি ঘর বিলাস মঞ্জরীতে যেমন থাকতে পারবেন পাঁচজন। শোয়ার ব্যবস্থা বিরাট পালঙ্কে! পাশাপাশি খড়ের ছাউনি দেওয়া কুটিরেও রাত কাটাতে পারেন ইচ্ছে হলে। ঘরের নামগুলো ভারী সুন্দর। গিন্নিমা, ছোট বৌদি, কনকলতা, ঝুমকোলতা ইত্যাদি। ঘর ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৮৪০০ পর্যন্ত। এসি, নন এসি— দু’রকমের ঘরই পাবেন। তবে সপ্তাহান্তে ঘর ভাড়া বেশি। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এসি ঘর পাওয়া যাবে না। আগে থেকে ঘর বুক করে রাখার জন্য ইটাচুনা রাজবাড়ির অফিশিয়াল ওয়েবসাইট দেখতে পারেন। *গাড়ি পার্কিং রাজবাড়ীর মধ্যে করা যায়,তবে জায়গা না পাওয়া গেলে প্রাসাদের বাইরে নিজ দায়িত্বে রাখতে হয়।
ইটাচুনা রাজবাড়ী। গত কয়েকবছর ধরে খুবই জনপ্রিয় হয়ে ওঠা একটি ভ্রমণকেন্দ্র। অবশ্যই একটু অন্য রকমের ভ্রমণ - কলকাতা থেকে প্রায় ৬৬ কিলোমিটার দূরে খন্যান স্টেশন থেকে টোটো করে মিনিট দশেকের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া আড়াইশো বছরের প্রাচীন বিশাল এক প্রাসাদে অনেকটা জমিদারী স্টাইলে থাকা। ইতিহাস বলছে, এই জমিদারবাড়ীর ( প্রচলিত ভাবে এটিকে রাজবাড়ী বলা হলেও আসলে এটি একটি বিশাল জমিদারবাড়ী ) পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন মারাঠা থেকে অষ্টাদশ শতাব্দীতে মারাঠা আক্রমণকারী বা বর্গী হিসেবে। সেই সময়ে এঁদের পদবী ছিলো কুন্দন। কিন্তু পরে মারাঠা বর্গীর এই অংশটি যুদ্ধ ছেড়ে বাংলাকেই তাদের স্থায়ী নিবাস হিসেবে বেছে নেন, নিজেদের একাত্ম করে তোলেন এখানকার ভাষা, সংস্কৃতি আর আচারের সঙ্গে, নিজেদের কুন্দন পদবীকে পরিবর্তিত করে নেন বাঙালীদের মধ্যে প্রচলিত কুন্ডু-তে। এখানে তাঁদের জমিদারী স্থাপিত হয়, আর সেই জমিদারীর সূত্রেই ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এখানকার এই বিশাল বাড়ী, ১৭৬৬ সালে সাফল্য নারায়ণ কুন্ডুর সময়ে যা অসাধারণ এক বহু মহলা প্রাসাদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে, সেই বিশাল প্রাসাদটির একটি অংশ হোম স্টে হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে অতিথিরা অনেকটা সেই পুরোনো দিনের রাজকীয় স্টাইলেই থাকার সুযোগ পান। অনেকগুলি ঘর আছে এখানে, যেগুলি অভিনব ভাবে পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের নামে নামকরণ করা হয়েছে - ঠাকুমা, গিন্নি মা, বড়ো মা, মেজ মা, বড় পিসি, ছোট পিসি, বড় বৌদি, ছোট বৌদি - ইত্যাদি। আধুনিক সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি বহু ঘরে আছে পুরোনো দিনের অ্যান্টিক আসবাব, যাতে ফেলে আসা দিনের রাজকীয় ভাবে থাকার আমেজটি বেশ ভালো ভাবেই উপলব্ধি করা যায়। এগুলি ছাড়াও গ্রামের মধ্যে অবস্থিত বলে, গ্রামের মাটির বাড়ীর স্বাদ দেওয়ার জন্যে রাজবাড়ীর বাগানে, কয়েকটি মাটির বাড়ীও আছে ইচ্ছুক অতিথিদের জন্যে। আগামী দু তিনটি পর্বে, আমরা ঘুরে দেখবো সেই রাজবাড়ীর বিভিন্ন মহল - যতটা সম্ভব।
এই প্রাসাদটি প্রায় কুড়ি বিঘা এলাকা নিয়ে অবস্থিত। তার মধ্যেই আছে, বাহির মহল বা কাছারি মহল, অন্দরমহল, ঠাকুরদালান, বাগান, খিড়কিমহল, ইত্যাদি।একদিকে যেমন বিশাল প্রাসাদের রাজকীয় আভিজাত্য, তেমনই বাইরে সুন্দর করে সাজানো বাগান, গ্রামের গন্ধ মাখা নানা ধরনের গাছ গাছালি, পুকুর, পোষা হাঁস, মুরগি, পায়রা, খরগোশের অবাধ বিচরণ। আবার অপূর্ব সুন্দর ঠাকুরদালানে আড়াইশো বছর ধরে চলে আসা শ্রীধর জীউয়ের পুজো। পুরনো দিনের সমস্ত সৌন্দর্য আর আভিজাত্যকে বাঁচিয়ে রেখে এযুগের মানুষের কাছে মেলে ধরার এক অসাধারণ প্রয়াস। বিস্মিত, বিহ্বল মনের ভরে যাওয়ার উপকরণ সর্বত্র । বাড়ীটি ও তার চারপাশ ঘুরে দেখতে,অনুভব করতে সময় লাগে, ঝড়ের বেগে তা হয় না। কারণ সময় এখানে থেমে আছে আড়াইশো বছর ধরে, পুরনো দিনের সেই জৌলুসকে, সেই সময়ের গন্ধকে অনুভব করতে আমাদেরও কিছুটা সময় দিতে হয় বৈ কি। আর সেইজন্যেই, একদিনের ভ্রমণে, যতটুকু দেখতে পেরেছি, সেটাই এখানে ধরে রাখতে চেয়েছি ক্যামেরার চোখ দিয়ে ধীরে ধীরে, হাতে একটু সময় নিয়ে - একাধিক পর্বের মাধ্যমে। আজ প্রথম পর্বে আমরা দেখবো বাড়ীর মূল অংশ, পরেরদিন দেখা যাবে ঠাকুরদালান এবং বাগানের বিভিন্ন এলাকা, শেষ পর্বে দেখবো বাড়ীর বাইরের কিছু মন্দির আর এখানকার খাওয়াদাওয়া। গেট দিয়ে বাড়ীর চত্বরে ঢুকলেই সামনেই সেই বিরাট বাড়ি, ইংরেজি “u” অক্ষরের আদলে। সামনে ফুলের নকশা কাটা সুসজ্জিত একটি সাদা তোরণ, আর তার দুপাশে লাল রঙের বাহির মহল। তিনদিকেই একতলা আর দোতলায় টানা বারান্দা। ডানদিকের মহলে একতলায় বারান্দা দিয়ে ঢুকে একটি বিরাট হল ঘর, তার মধ্যে দুটি বিশাল বিছানা, পুরোনো দিনের ইজি চেয়ার, বিশাল সেক্রেটারিয়েট টেবিল, সোফা, অনেকগুলি চেয়ার । মাথার ওপরে বিশাল ঝাড়বাতি, আর পেছন দিকে সিলিং থেকে টাঙানো পুরোনো দিনের দুটি টানা পাখা। সঙ্গে ছেলেদের ও মেয়েদের জন্যে আলাদা আলাদা টয়লেট। জানা গেল, অতীত কালে এটিই ছিল এদের মূল কাছারি অফিস, বর্তমানে কোনো বড় গ্রূপ সারাদিনের জন্য গেলে এটি তাদের ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পাশেই একটি ঘরে খাবার ব্যবস্থা, আর অন্যদিকে আরেকটি ঘরে কিছু হাতে আঁকা ছবির প্রদর্শনী ও বিক্রির ব্যবস্থা। খাবার ঘরের কথা বলেছি, খাওয়ার কথাও বলবো, কিন্তু তার আগে দেখে আসি বাড়ীর ওপরের অংশ।
আগেই বলেছি, বাড়ীর দোতলাতেও টানা বারান্দা, আর সেই বারান্দার পাশেই বিভিন্ন ঘর, রাতের অতিথিদের থাকার জন্যে। এখানে যাঁরা বেড়াতে আসেন, তাদের ওই বাড়ীর পক্ষ থেকেই সমস্ত বাড়ীটি ঘুরিয়ে দেখানো হয়, তাই সেই প্রদর্শকের সঙ্গেই চলতে হয়, নয়তো প্রথম প্রথম বাড়ীটি কিন্তু একেবারেই একটি গোলকধাঁধার মত লাগে, এত বড় বাড়ীতে প্রদর্শক ছাড়া সবটা নিজে নিজে ঘুরে দেখা সত্যিই বেশ কঠিন। তা ছাড়া, যাঁরা সারাদিনের জন্য যান, তাঁদের সব জায়গায় প্রবেশাধিকার থাকেনা, প্রদর্শক যতটুকু দেখান, সেটুকু দেখেই তাঁদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। সেই তুলনায় কিন্তু যাঁরা রাত্রিবাস করেন, তাঁদের ঘুরে দেখার সুযোগ একটু বেশী।
দোতলার বারান্দা গুলিও খুব সুচারুভাবে সাজানো - পুরোনো দিনের আসবাব, দেওয়ালে পুরোনো দিনের ছবি, কোথাও বা দেওয়ালে টাঙানো কার্পেট। তবে বিশেষ আকর্ষণ হলো, একতলার মতোই দোতলার আর একটি বিরাট ঘর, পুরোনো দিনের আসবাবে ভরা। আছে পুরোনো সোফা, পাথরের সেন্টার টেবিল, রাজপুরুষকে বয়ে নিয়ে যাওয়ার তাঞ্জাম, আগেকার দিনের টেলিফোন, হুঁকো স্ট্যান্ড ইত্যাদি। সেই সঙ্গে আছে এই বংশের বংশতালিকা। এখানেও আছে মাথার ওপরে বিশাল ঝাড়বাতি, পায়ের তলায় পার্সিয়ান কার্পেট।। তবে এই ঘরটির তফাৎ হলো, যে এটি নীচের ঘরের মতো কারোকে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না, দর্শকদের ঘুরিয়ে দেখিয়ে আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবার ছাত। তিনতলার ওপরে বাড়ীর বিশাল ছাত। সেই ছাতে উঠলে একদিকে যেমন বাড়ীর বার মহল আর ঠাকুরদালানকে ওপর থেকে দেখা যায়, তেমনি অন্য দিকে দেখা যায় - অন্দরমহলের একটি অংশ। ওপর থেকে দেখা সেই অংশটিকেও ভারী চমৎকার লাগে। তবে, যাঁরা day tourist বা শুধু দিনের বেলাতেই এখানে ভ্রমণের জন্য যান, তাঁদের কিন্তু এই অন্দরমহলে প্রবেশের অধিকার নেই। আর তাই ওপর থেকেই দেখে নিতে হয় রাজবাড়ীর এই অংশের সৌন্দর্যটুকু। দিনের বেলায় রাজবাড়ীর যা রূপ, সন্ধ্যেবেলায় তা কিন্তু অনেকটাই আলাদা । সমস্ত বারান্দা জুড়ে যখন আলো জ্বলে ওঠে, ঠাকুরদালান ঝলমলিয়ে ওঠে ঝাড়বাতি আর পুরনো দিনের লোহার কারুকাজ করা স্ট্যান্ডের আলোয়, তখন এই রাজবাড়ী হয়ে ওঠে আরও মোহময়, আরও মায়াবী - আড়াইশো বছরের বুক থেকে উঠে আসা এক ইতিহাসের মতো - রহস্যময়, কিন্তু যার আকর্ষণ অমোঘ । মোটামুটি এই হলো ইটাচুনা রাজবাড়ীর বারমহলের কথা। পরেরদিন আমরা দেখবো এঁদের বাগান, আর ঠাকুরদালান।
ইটাচুনা রাজবাড়ীর মূল অংশ নিয়ে আগের দিন বলেছি। আজ বলবো, এখানকার ঠাকুরদালান আর বাড়ী সংলগ্ন বাগানের কথা।
ঠাকুরদালান - ইটাচুনা রাজবাড়ীর একটি অত্যন্ত সুন্দর অঙ্গ হচ্ছে এখানকার ঠাকুরদালানটি। বাইরের গেট দিয়ে মূল বাড়ীর চত্বরে প্রবেশ করার সময়েই দেখা যায়, তিনপাশের লাল বারান্দার মাঝখানে সাদা থাম আর তার সঙ্গে সাদা রঙের পঙ্খের সুন্দর কাজ করা তোরণ - সেটিই ঠাকুরদালানে যাওয়ার পথ। তোরণের একেবারে ওপরে ছাতের কাছে লেখা - “ শ্রী শ্রী শ্রীধর জিউ কৃপাহি কেবলম, তার একটু নীচে দোতলার বারান্দার ওপরে লেখা - “ ১৭৬৬ সালে সাফল্য রাম কুন্ডু মহাশয় কর্তৃক স্থাপিত “, তার আরো নীচে একতলার প্রবেশপথের ওপর - “ ১৮৯৪ সালে শ্রী নারায়ণ কুন্ডু মহাশয় কর্তৃক পুনস্থাপিত “ এবং তার নীচেই সুপরিচিত পিতৃমন্ত্র। লালের সঙ্গে সাদার মেলবন্ধনে এই দারুণ সুন্দর তোরণটি প্রথম থেকেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আর এই তোরণ দিয়েই প্রবেশ করা যায়, এখানকার এই ঠাকুরদালানে। তোরণে যা লেখা আছে, তাতেই বোঝা যায় এই মন্দির শ্রীধরজিউ-এর নামে উৎসর্গীকৃত। এই বংশের আদি মারাঠী পুরুষেরা শৈব হলেও, বাংলায় এসে তারা কিন্তু স্থানীয় বিশ্বাস অনুযায়ী বৈষ্ণবমতকেই প্রাধান্য দেন - যার ফলশ্রুতি এই ২৫২ বছরের পুরোনো মন্দির। অর্ধচন্দ্রাকৃতি তিন খিলানের এই মন্দির, আর এখানেও লাল সাদার সুন্দর মিশ্রণ। বাইরের মূল দেওয়াল লাল রঙের, তার ওপরে সাদা রঙের দেবদেবীর মূর্তি। থাম আর থামের ওপরের কাজও সাদা রঙেরই। মন্দিরের তিনদিক ঘিরে লাল রঙের বাড়ী ও বারান্দা। ওপরের বারান্দায় চিক ঝোলানোর জায়গা, যে চিকের আড়াল থেকে বাড়ীর মহিলারা দেখতেন ঠাকুরদালানের বিভিন্ন উৎসব, বা এখানে সেই সময়ে হওয়া যাত্রা বা কবিগান। সামনের পুরো প্রাঙ্গণটি জুড়ে সুন্দর লোহার কাজ করা বাতিস্ট্যান্ড। জানা গেল, এই পরিবারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম ওঠাপড়া হলেও, আড়াইশো বছর ধরে চলে আসা এই শ্রীধরদেবের পূজো কখনোই বন্ধ হয়নি। আজও ত্রিসন্ধ্যায় পূজো হয় এখানে, বিশেষ করে সূর্য ডোবার পর, আলোকমালায় সজ্জিত এই ঠাকুরদালানে সন্ধ্যার আরতি সত্যিই দেখার মতো। পুরোনো দিনের মতো আজও এখানে মহাসমারোহে পালিত হয় জন্মাষ্টমী আর দোলযাত্রা। বসন্তকালে সেই দোল উৎসবে শতাব্দী প্রাচীন এই মন্দিরে তখন যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার হয় - অতীতের বসন্ত এখনকার বসন্তের সঙ্গে তার রঙীন হাত মেলায়।।
বাগান - ঠাকুরদালান থেকে পাশেই একটি রাস্তা দিয়ে গিয়ে পড়া যায়, এখানকার বাগানে। বাড়ীর ভেতরে যেখানে রাজকীয় বৈভব, এখানে এই বাগানে, কিন্তু তখন শুধুই প্রকৃতির সঙ্গে মাখামাখি। প্রথমেই একটি ছাউনি, যেটাকে এঁরা বলেন “ চা-ঘর”। আগে যা ছিল এঁদের গোশালা, সেটিকেই এখন পরিবর্তিত করা হয়েছে, চারদিক খোলা এই চা ঘরে। সন্ধ্যের পর এখানে, এই বাগানে, অতিথিদের আড্ডা বসে। একপাশে আছে, জমিদারী আমলের বিরাট দাবার বোর্ড, যা আগে ছিল পাথরে বাঁধানো । এর ঘুঁটিগুলি সব কাঠের। বাগানে একটু ঘুরলেই চোখে পড়বে, আমলকি, হরীতকী, কর্পূর, ডালচিনি প্রভৃতি গাছের সঙ্গে সঙ্গে আরো অনেক নাম না জানা ফলের আর ফুলের গাছ। চলার সময় নিজের মনেই সঙ্গ দেবে এদের পোষা হাঁস, মুরগী, পায়রা, খরগোশের দল। একটু দূরেই এক বিরাট পুকুর, সেই পুকুরে আগে খেলা করত বিশাল সব মাছেরা, পুকুরের ঘাটে এসে বসতেন অন্তঃপুরবাসিনী মহিলারা। এই বাগানের মধ্যেই ওই পুকুরের পাশে আছে চারটি মাটির বাড়ী, যার সঙ্গে ভেতরের রাজবাড়ীর জৌলুসের কোনো মিল নেই, বরং তাদের মধ্যে আছে গ্রামবাংলার নিজস্ব শৈলীর ছোঁয়া। আর এদের নামও বাংলার বিভিন্ন ফুলের নামে, ভেতর বাড়ীর মতো কোন মানুষের নামে নয়। । বাগানের আর এক কোণে খাঁচায় আছে বন মুরগী ও টার্কি, আবার তাদের সঙ্গেই আছে এখানকার এক প্রিয় কুকুর “গুণ্ডা”র কবর। এখানে, এই কটেজ গুলিতে যাঁরা থাকবেন, তাঁরা রাজবাড়ীতে এসেও রাজকীয় বিলাসের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে খুঁজে পাবেন গ্রাম বাংলার একান্ত নিভৃত পরিবেশকে। বাড়ীর ভেতরে আর বাগানে - দু ধরণের থাকার জায়গার দুরকমের বৈশিষ্ট্য, একটির সঙ্গে আরেকটির হয়তো মিল নেই, কিন্তু এই দু ধরণের থাকার ব্যবস্থা নিয়েই এই ইটাচুনা রাজবাড়ী, এটাই এখানকার বিশেষত্ব ।
ইটাচুনা রাজবাড়ীর ভেতরের ব্যবস্থা আমরা মোটামুটি দেখে নিয়েছি, ঘুরে দেখেছি প্রায় পুরো বাড়ীটিই - এর আগের দুটি পর্ব জুড়ে। এখন এই শেষ পর্বে আমরা দেখবো এঁদেরই একটি প্রায় পরিত্যক্ত শিব মন্দির, আর সেই সঙ্গে জেনে নেব এখানকার খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা।
শিবমন্দির - ইটাচুনা রাজবাড়ীর চৌহদ্দির বাইরে, মেন গেট-এর ঠিক বিপরীতে, রাস্তার ওপরেই আছে এঁদেরই একটি শিবমন্দির - যা আজ প্রায় পরিত্যক্ত। সেই মন্দিরে আছে একটি অদ্ভূত দর্শনের শিবমূর্তি - জটাজুটধারী মনুষ্য আকৃতির সেই শিব বসে আছেন এক পা মুড়ে একটু বিচিত্র ভঙ্গীতে, মাথার জটা পৈতের মতো বুকের ওপর নেমে এসেছে, হাতে কবচকুণ্ডল, কাঁধের ওপরে ফণা তোলা সাপ। সব মিলিয়ে মূর্তিটি বেশ বিচিত্র আর বিরল। রাজবাড়ীর গাইডের মুখে জানা গেল, বহু বছর আগে এই বংশের কেউ একজন স্বপ্নাদেশে এই মূর্তির সন্ধান পেয়েছিলেন বিহারের গিরিডির এক জঙ্গলে। কিন্তু এখানে নিয়ে এসে এই মন্দিরে ওই মূর্তি প্রতিষ্ঠা করার দিনেই সেই প্রতিষ্ঠাতার মৃত্যু ঘটে। তাই তখন থেকেই এই মূর্তির কোনো পূজা আর হয় না, এবং মন্দিরটিও পরিত্যক্ত হয়। এর আগে “ প্রায় পরিত্যক্ত” কথাটি ব্যবহার করেছি। তার কারণ, ওই মূর্তি আর ওই মন্দিরে পূজা বন্ধ হবার বহু পরে স্থানীয় মানুষেরা এই মন্দিরের সামনের বারান্দায় একটি শিবলিঙ্গ স্থাপন করে তাঁর পূজা শুরু করেন। এটিও কিছুটা অভিনব ব্যাপার, কারণ সব মন্দিরেই দেবতা থাকেন মন্দিরের গর্ভগৃহে, কিন্তু এখানে সেই পূজো হচ্ছে গর্ভগৃহের বাইরে, বারান্দার চলনপথে। অথচ, মন্দিরের ভেতরে, জঙ্গল থেকে পাওয়া এখানকার আদি মূর্তিটি বসে আছেন একাকী, ভাঙাচোরা অন্ধকার ঘরে, কোনোরকমের পূজা থেকে বরাবরের জন্য বঞ্চিত হয়ে।
ইটাচুনা রাজবাড়ীর খাওয়াদাওয়া - সবশেষে বলি, এখানকার খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে। সকালের জলখাবার থেকে শুরু করে দুপুরের মধ্যাহ্নভোজ হয়ে রাত্তিরের নৈশভোজ বা ডিনার, এখানে সব খাবারই পরিবেশিত হয়, পুরোনো দিনের বাঙালী ঘরানায়, কাঁসার থালা, বাটী, গ্লাস ব্যবহার করে। সকালে লুচি, আলুরদম, দুপুর আর রাত্তিরে কাঁসার থালার মাঝখানে সরু চালের ভাত, তারপর সেই ভাতকে ঘিরে বিভিন্ন কাঁসার বাটিতে বিভিন্ন তরকারী, সঙ্গে ডাল, মাছ, মাংস। শেষ পাতে চাটনী, দই বা মিষ্টি। সব মিলিয়ে বেশ এলাহী ব্যাপার। খাবার বেশ সুস্বাদু, কিন্তু তার স্বাদ অনেক বেড়ে যায় ওই পরিবেশ আর পরিবেশনের জন্যে। আড়াইশো বছরের প্রাচীন জমিদার বাড়ীতে, আগেকার দিনের মতো কাঁসার থালা বাটিতে খাওয়া, সব মিলিয়ে এই অভিজ্ঞতার সামগ্রিক স্বাদ কিন্তু একেবারেই আলাদা।
মোটামুটি এই হল এই রাজবাড়ী ভ্রমণের গল্প। সব কিছু ভাল ভাবে ঘুরে দেখতে আর জানতে একটু সময় লাগে, আর তাই তিন পর্বে আলাদা আলাদা করে ঘুরে দেখালাম এই বাড়ীটি, আর সামনের শিবমন্দির। এ ছাড়া, বাড়ীর বাইরে ঠিক পাশেই - প্রবুদ্ধ ভারত সঙ্ঘ নামে রামকৃষ্ণদেবের একটি সাধারণ মন্দির আছে, আর তার বিপরীত দিকে মাঠের মধ্যে আছে একটি ফাঁকা দুর্গা দালান, যেখানে দুর্গা পুজোর সময় মূর্তি গড়িয়ে সর্বজনীন পুজোর আয়োজন করা হয়। আগ্রহী ব্যক্তিরা এক ফাঁকে ঘুরে নিতে পারেন এই রামকৃষ্ণ মন্দিরটিকেও । ইটাচুনা রাজবাড়ী একদিনের ছুটি তে ঘোরার একটা ভালো জায়গা | এখানে অনেকে লিখেছেন বোধাই,অামার অাগে এই জায়গাটা নিয়ে | আমার এটা 1st লেখা,আর আমি আপনাদের New Member,তাই খারাপ হলে কিছু মনে করবেন না | আমি এই 6-7th Oct গেছিলাম । যাবার সময় Howrah থেকে যেকোন লোকাল Train, Burdwan,Pandua বা Memari গামী ,ধরে নামতে হবে Khanyan Station(Next to Talandu,Journy 1.15min from Howrah) | তারপর Toto ধরে রাজবাড়ী (Fare Rs.10/Per Head,Reserve Rs.50 only) | আমরা ছিলাম বড় বৌদি এর ঘরে |তার কিছু ছবি দিলাম নিচে | এটা এখান কার সব থেকে ভাল ঘর দুজন থাকার |সব কটা পুরান আসবাব এটাটে আছে | এটার ভাড়া একটু বেশি ( With Tax Rs.4950 ) | এছারাও অনেক ঘর আছে কম থেকে বেশি | এছারাও রয়েছে Mud Housh (Rent Without Tax Rs.1700 ) | খাবার আলাদা ( Per Head Breakfast + Lunch + Dinner =Rs.475,+18% GST).খাবার পুরটায় Veg Item,Non veg নিলে আলাদ | Snacks আলাদা নিতে হবে | Rate Chart নিচে দিলাম আপনারা দেখে নেবেন দরকার মতো | খাবার সময় খুব বাধাধরা | একদিন পারলে ঘুরে আসুন,খুব ভাল কাটবে | For Booking Search in Google,Type "Itachuna Rajbari".From Their open their official page and Contact them for Availability and Transfer Fund for Confirm Booking.Their Official website is - " www.itachunarajbari.com". (Full Details of Room Tariff,Menu Card & Booking Contact Detais in Seen Below in Picture) Post By-Debasis Karmakar
সেই রাজাও নেই, রানীও নেই, আরেবাবা রাজতন্ত্র ই তো নেই ।পড়ে আছে শুধু রাজ্যপাট । রাজবাড়ির অলিন্দে নানা ইতিহাস ।দিল্লী আগরা বা রাজপুতানা গিয়ে মুঘল বা রাজপুতদের যে বিলাসিতা আমরা দেখি,তার সঙ্গে আমরা নিজেদের মেলাতে পারিনা, বাংলাদেশে বেশিরভাগ রাজবাড়ি ও নবাবী মহলের থেকেও খানিকটা আলাদা এই ইটাচূনা রাজবাড়ি টি।
গাইড আপনাকে শোনাবে কুন্ডু রাজার রাজতন্ত্রর গল্প ।প্রশস্ত নাট মন্দির পেরিয়ে ক্রমশ যখন অন্দরে প্রবেশ করবেন, একটা হাড়হিম করা, পেট গুড়গুড় করা ভালোলাগা তৈরী হতে থাকে। রাজবাড়ির প্রতিটি কর্মচারি সর্বক্ষণ প্রস্তুত আপনাকে স্বাগত জানাতে ।তার প্রমান দেবে welcome drink নামে অতি সুস্বাদু এক পানীয়। সৌভাগক্রমে যদি বিলাসমঞ্জরী তে জায়গা পাওয়া যায় তবে রাজার জীবন উপভোগ কে আটকায়? কাঁশার থালায় সুন্দর করে সুস্বাদু খাবার খেতে খেতে সত্যি নিজেকে রাজা মনে হতে বাধ্য। হাতের ঘড়ি ঢুকিয়ে রাখুন, নাট মন্দির থেকে প্রতি ঘন্টায় ঢঙ ঢঙ করে সময় জানাচ্ছে ।বিকেলে একটু কেরাম বা টেবিল টেনিস বা ব্যাডমিনটন খেলে একে একে রাজবাড়ি ঘুরতে থাকুন গাইডের সাথে ।নাটমন্দিরে সনধা আরতির পর চা ঘরে চা খেতে খেতে সময় টাকে সপর্শ করুন ।রাতে আবার সেই অসাধারণ রন্ধন শিল্পের উপভোগ করুন সুন্দর পরিবেশনের সাথে । গা ছমছমে রাজবাড়ি কে একটু বেশী রাতে পরখ করার ইচ্ছে টা কেনো বাদ দেবেন ?আমরা কিন্তু কোনো ভুত দেখিনি, কিন্তু অসংখ্য ঝিঝি পোকার ডাক, নাম না জানা অনেক অদ্ভুত সব পশুদের ডাক, সবুজ বনানীর মাঝে গভীর রাতে একটু গায়ে শিহরণ তো জাগবেই। Mud house এই রাজবাড়ির এক অন্যতম আকর্ষণ, আপনার বাড়ির উঠোনে রাজহাঁস, খরগোশ চরে বেড়াচ্ছে, বারান্দায় ঝুমকো লতা, জবা ফুল ফুটে আছে ।এরই মাঝে রাজকর্মচারী হাতে সকালের চা ও সংবাদ পত্র নিয়ে হাজির । ঐতিহ্য, আধুনিকতা, গ্রামীণ সভ্যতা সর্বোপরি রাজকীয়তা আপনাকে স্বাগত জানাতে বর্ণিল সাজে উপস্থিত । খরচ হয়তো একটু বেশী, আসলে দৈনন্দিন জীবনের একটু কাটছাঁট করে একদিন এই আনন্দ নেওয়াই যায় ।আরেবাবা আমাদের মনের ভীতর রাজা সাজার একটা বাসনা তো থাকেই ।।।।।
Post By:- Krishna Deb Paul
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |