3 দিনের জন্য একদম পারফেক্ট ট্যুর। বর্ধমান থেকে গিরিডি 5 ঘন্টার রাস্তা। গিরিডিতে থাকতে পারেন। কয়েকটা হোটেল আছে। আমরা ছিলাম রিসোর্ট উৎসব উপবন(ফোন নম্বর- 09263635810)। খুবই ভালো হোটেল কাম রিসোর্ট। ভাড়া 1500/রুম। খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা এখানেই আছে। আছে বারও। গিরিডিতে দেখার মতো জায়গা বলতে উশ্রী জলপ্রপাত, খাণ্ডলী লেক ও পাহাড়। উশ্রী বড় জলপ্রপাত নয়, তবে ভালো লাগবে। পরিবেশটা সুন্দর। খাণ্ডলী খুব সুন্দর জায়গা। লেক ও পাহাড় মিলিয়ে বেশ সুন্দর। পাহাড়ের ওপরে অনেকটাই ওঠা যায়। এরপর আসুন পরেশনাথ পাহাড়। গিরিডি থেকে মধুপুর হয়ে পরেশনাথ যাওয়ার রাস্তাটা বেশ সুন্দর। জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ি রাস্তা। পরেশনাথ পাহাড়ের ওপরে বাইক নিয়ে উঠতে বারণ করবে স্থানীয় পুলিশ। হেঁটে উঠলে প্রায় 11 কিলোমিটার। তবে শুনেছি বাইক নিয়ে অনেকেই ওঠে। সেখান থেকে তোপচাঁচী পাহাড় ও ড্যাম 1 ঘন্টার রাস্তা। এই জায়গাটি অপূর্ব। বেশ সুন্দর লাগবে। বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়। হাতে আর একদিন সময় থাকলে চলে যান পত্রাতু ভ্যালি। প্রায় 180 কিলোমিটার। অসাধারণ জায়গা সেটাও।
0 Comments
আগেরবছর ঠিক এইসময় ঘুরতে গিয়েছিলাম টাটানগর-জামশেদপুর। বাবা মায়ের খুব একটা ইচ্ছে ছিল না, শুধু বলছিল - "ওখানে তো সেরকম কিছুই নেই, কি দেখতে যাবো?" কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। সব জায়গাতেই কিছু না কিছু দেখার আছেই। আর আমার তো ঘোরাঘুরি হলেই হল। অনেক বলেকয়ে রাজি করালাম।
আমার শুক্রবার একটা পরীক্ষা ছিল, পরীক্ষা দিয়েই সেদিনই সন্ধেবেলা সাড়ে আটটার ট্রেন, সাঁতরাগাছি-হবিবগঞ্জ এক্সপ্রেস, তাতে চড়ে রওনা দিলাম টাটানগরের পথে। পৌঁছলাম রাত বারোটায়। ওখানে সারারাতই মোটামুটি টোটো বা অটো থাকে, তাই চাপ হয়নি হোটেলে পৌঁছাতে। আমাদের হোটেল ছিল সাকচিতে, একদম রাস্তার ওপরে। হোটেলে বলে রাখা ছিল, তাই অত রাতেও সব ব্যবস্থা সুষ্ঠভাবে করে রাখা হয়েছিল। গিয়ে শুধু ফ্রেশ হয়ে লম্বা ঘুম দিলাম। বেশ ঠান্ডা ছিল রাতে। একঘুমে রাত কাটিয়ে পরেরদিন শনিবার চান খাওয়া সেরে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম প্রথম দিনের ঘুরুঘুরু সারতে। হোটেল থেকেই গাড়ি বুক করা হয়েছিল। ডিমনা ড্যাম, ডিমনা লেক, দলমা পাহাড় (যেট দলমা অভয়ারণ্য নামেও পরিচিত), টাটা স্টিল জুলজিকাল পার্ক, জয়ন্তী সরোবর(ছবি তুলিনি), জুবিলি পার্ক, সাঁইবাবা মন্দির আর কালীবাড়ি দেখে প্রথম দিনের ঘোরাঘুরি পর্ব শেষ হল। দ্বিতীয় দিন রবিবার হোটেলের সামনের অটো স্ট্যান্ড থেকে অটো বুক করে ভুবনেশ্বরী মন্দির, সূর্য মন্দির, সূর্য মন্দির পার্ক, রঙ্কিণী দেবী মন্দির আর সাকচি গুরুদ্বার ঘুরে পেটপুজো করে বিকেল পাঁচটা নাগাদ উঠে পড়লাম বাড়ি ফেরার ট্রেনে, হাওড়া-বড়বিল এক্সপ্রেস।
বিঃ দ্রঃ ১. ওখানে হুডকো লেক আর চান্ডিল লেকও রয়েছে, সেগুলোও খুব সুন্দর। কিন্তু সময়ের অভাবে যাওয়া হয়নি। আমি বলবো টাটাতে গেলে অন্তত তিনদিন সময় নিয়ে যেতে। আমাদের বিশেষ কারণে তাড়াহুড়ো করে চলে আসতে হয়েছিল।
২. ট্রাইবাল কালচার সেন্টার, জে.আর.ডি টাটা স্পোর্টস কমপ্লেক্স আর রুসি মোদি সেন্টার ফর এক্সেলেন্স - এই জায়গাগুলো বাইরে থেকে দেখেছি। সামনাসামনি দেখার বা ছবি তোলার সুযোগ হয়নি। এগুলোও ওখানকার বিখ্যাত জায়গা, দেখে আসতে পারেন যদি খোলা থাকে। ৩. মন্দিরগুলো কিন্তু বেলা 12টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়, খোলে আবার বিকেল 4টের পর। আর মন্দিরগুলো কিন্তু খুব কাছাকাছি নয়, বেশ খানিকটা দূরে দূরেই। তাই সময় নিয়ে বেরোনোই ভালো। ৪. আমরা যেহেতু গতবছর গিয়েছিলাম কোভিডের পর এবছর কি অবস্থা জানিনা। তাই যাওয়ার আগে একটু খোঁজখবর নিয়ে যাবেন। দু-তিন দিনের ট্রিপে টাটানগর-জামশেদপুর ঘুরে আসতেই পারেন। আশা করি ভালোলাগবে। ছিমছাম হলেও বেশ সুন্দর। আগে থেকে একটু প্ল্যান করে গেলে ঘুরতে সুবিধা হবে।
একদিনের সফরে (মেসেঞ্জর, বাসুকিনাথ, ত্রিকুট পাহাড়, তপোবন, নও লাক্ষা মন্দির, বৈদ্যনাথ ধাম)
মুর্শিদাবাদ থেকে যাত্রা শুরু করে সাইথিয়া হয়ে যাওয়া দুমকার পথে। পথিমধ্যে দেখা পাওয়া মেসেঞ্জর ড্যাম। কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই মনোরম পরিবেশ মন ছুঁয়ে যাবে।চারিদিকের বিস্তৃত জলরাশি আর পাহাড় সকালের রোদে মাখামাখি। শোনা যাবে পাহাড়ি টিয়াদের কিচির মিচির। মেসেঞ্জর কে বাম হাতে ফেলে এগিয়ে যাওয়া দেওঘর এর উদ্দেশ্যে। এবার ডানহাতে দেখা পাওয়া বাসুকিনাথ ধাম। বাবার মন্দিরে দর্শন করে এগিয়ে যাওয়া ত্রিকুট পাহাড় এর দিকে। চাইলে পায়ের জোরে ঘুরে দেখা যেতেই পারে তবে মনের জোরে ভরসা করে রোপওয়ে (টিকিট মূল্য-১৩০/-) তে করে উঠে যাওয়া যাবে পাহাড়ের চূড়ায় ছয়টি মনোরম লোকেশনে ছবি তোলার আহ্বান এ সাড়া না দিয়ে চলে না। তবে বাঁদর (langoor) এর উপদ্রব থেকে হাতে লাঠি বা গাইড নিয়ে নিতে হবে। এক ঘন্টা দেখে আবার নিচে নেমে আসা। এরপর এগিয়ে চলা দেওঘর এর দিকে। বাবার মন্দির নামেই পরিচিত বৈদ্যনাথ ধাম। যে কোনো পান্ডার সহযোগে পূজো দেওয়া যায়। নিচ থেকে ওপর এ উঠে আবার নিচে নেমে বাবার দর্শন ও মাতা পার্বতীর মন্দির। উপরে উঠতে হলেও সিঁড়ি ভাঙ্গার কষ্ট নেই। দেওঘর এর বিখ্যাত প্যারা সন্দেশ খেয়ে দেখা যেতে পারে। এরপর দেওঘর এ পাওয়া যাবে নও লাক্ষা মন্দির। মন্দির নির্মাণে নয় লক্ষ টাকা খরচ হওয়ার জন্যই এই নামকরণ। এর খুব কাছেই রয়েছে তপোবন। মা লক্ষ্মীর মন্দির ও সুড়ঙ্গ দিয়ে হনুমান মন্দির দর্শন। এছাড়াও রয়েছে নন্দন পার্ক এর দৃশ্য। ছোটদের জন্য বেশ পছন্দের জায়গা। আর রয়েছে অনুকূল ঠাকুরের সৎসঙ্গ আশ্রম। প্রত্যেকটি জায়গাতে অল্প সময় অতিবাহিত করলেই ঘুরে নেওয়া যাবে এই কটি দর্শনীয় স্থান। ফেরার সময় রাতের দূমকার জঙ্গল আপনাকে জঙ্গলে রাত্রিকালীন পরিবেশের স্বাদ দিয়ে যাবে। দেবিকা শুধু একটা নাম
একদিনে 500km Ride?? শুনেই তো বুক টা ধড়াস করে উঠেছিল। কারণ long ride এর experience সেরকম নেই, আর Bike ও সেরকম Touring friendly নয়। যাইহোক দূগগা দূগগা করে বেরিয়ে পড়লাম 20th সেপ্টেম্বর। গন্তব্য Massanjore Dam, Jharkhand. গেছিলো কলকাতার 2 টি riding গ্রুপ। Group of Divine Souls আর Gear Heads Kolkata. প্রায় 20 জন. রুট টা ছিল - Dankuni - Burdwan - Guskhara - Bolpur - Suri - Massanjore. রাস্তা বেশির ভাগ এ ভালো ছিল, specially বোলপুর আর Guskhara র গ্রাম এর রাস্তা দেখলে মনে হয় এই জন্যই তো আসা। Jharkhand এর scenic beauty অসাধারণ। 5.30am এ স্টার্ট করলাম, পৌঁছলাম 12 তার আগে, বেশ অনেক গুলো halt ছিল। অল্প বিস্তর খেয়ে ছুটলাম Dam এর দিকে। নামলাম নিচে. একটি মাত্র গেট খোলা. জল আছে, অল্প, নামলাম, হাঁটু পর্যন্ত হবে, পুরো তা পার ও করলাম, সঙ্গে একজন adventure lover K পেয়েছিলাম বলেই সম্ভব হল। যাইহোক একগাদা ছবি তুলে রওনা দিলাম 2.45 এ। পেট্রোল লাগতো না, তাও একটু নিয়ে নিলাম, 2 টাকা দাম কম যে। অন্ধকার হয়ে আসায় Guskhara - Burdwan পেরোতে বেশ কষ্ট হয়েছিল। NH2 তো গর্তেই ভর্তি। যাই হোক বাড়ি পৌঁছলাম 10.15pm. সাংঘাতিক tired. ভবিষ্যৎ এ আরো ট্রিপ হবে।
সে এক সময় ছিলো ! আহা ভাবলেই আহ্লাদে গলে যেতে ইচ্ছে করে ! আমরা দেখতাম, লোকের খিদে পায় , ঘুম পায়, তেষ্টা পায়, আমাদের থেকে থেকে বেড়ানো পায় ! 2012 সাল তখন | বৈকালিক চায়ের আড্ডায় আমার বাড়িতে দুই প্রাক্তন ছাত্র তথা আমার ডানহাত-বামহাত সোমনাথ-সৌমাল্য এবং দাদাস্থানীয় ভোলাদা । চায়ে চুমুক দিতে দিতে হঠাৎই মনে হলো অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়নি ! সুতরাং চা উঠলো মাথায় ! আমাদের তখন বেড়ানোতে পেয়েছে, পকেট প্রায় গড়ের মাঠ কিন্তু ছোটো খাটো একটা ট্যুরে তো যেতেই হবে । অতএব যেমনি ভাবা তেমনি কাজ ! ঝটপট জায়গা ঠিক হয়ে গেলো !
ট্রেনের টাইম টেবিলে দেখলাম ভোর রাতে আড়াইটের সময়ে হাওড়া থেকে একটা প্যাসেঞ্জের ট্রেন ছাড়ে হাওড়া থেকে, খড়্গপুর লোকাল হিসাবে যায় কিন্তু মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে ওটাই আবার টাটানগর প্যাসেঞ্জের হয়ে রওনা হয় । কিন্তু সমস্যা হলো, হাওড়ার পরে প্রথম স্টপেজ সাঁতরাগাছি, তাই ওই ট্রেন ধরতে হলে রাতে আড়াইটের মধ্যেই সাঁতরাগাছি পৌঁছতে হবে, নতুবা পরের ট্রেন ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরতে হবে, তাতে ভাড়াও বেশি আবার পৌঁছতেও অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে ! পকেট ও সময় দুইয়ের কথা ভেবেই আমার সঙ্গীরা ওই মাঝরাতের ট্রেন ধরাতেই সায় দিলো ! রাত নটার সময় আড্ডা ভাঙলো আর কয়েকঘন্টা পরেই আমাদের যাত্রা শুরু.... গন্তব্য ইতিহাসের ধল রাজাদের পীঠস্থান-- ধলভূমগড় | আমার বাড়ি থেকে সাঁতরাগাছি স্টেশনের দূরত্ব মাত্র দুই কিমি, ছাত্র সৌমাল্যও আমার পাশেই থাকে, আরও এক ছাত্র সোমনাথ থাকে স্টেশন থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে কিন্তু ভোলাদার বাড়ি তো কাসুন্দিয়ায় ! ভোলা দা বললো, "কুছ পরোয়া নেহি ! আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো" । সুতরাং পরেরদিন মাঝরাতে আমরা চার ভ্রমণ পাগল হাজির হলাম সাঁতরাগাছি স্টেশনে । ট্রেন প্রায় গড়ের মাঠ, তাই বাকি ঘুমের কিছুটা ট্রেনেই সেরে নিলাম সকলে| ধলভূমগড়ে ট্রেন পৌঁছলো প্রায় সকাল সাতটায় ।
স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে চা-বিস্কুট, গরম গরম কচুরি আলুর তরকারি আর বড় মাপের জিলিপি দিয়ে জলযোগ সেরেই, দরদাম করে একটা বড় ডিজেল অটো ঠিক করে ফেললাম ! তাতে সওয়ার হয়ে প্রথমেই গেলাম এখানকার প্রসিদ্ধ ধল রাজাদের প্রাচীন দূর্গা মন্দিরে ! কালো কষ্টি পাথরের তৈরি অভিনব দূর্গা প্রতিমার অসাধারণ রূপ! নিত্য পুজো তো হয়ই, তাছাড়া দুর্গাপূজা ও বাসন্তী দূর্গাপূজায় জাঁকজমক করে পুজো হয়ে থাকে, বিশেষতঃ শারদীয়া দুর্গাপূজায় ! মন্দিরের ভিতরের দিকে গর্ভগৃহের প্রবেশদ্বারের দুইদিকে রয়েছে সিংহের এবং হস্তীর মূর্তি ।
পাশেই রয়েছে একটি শিব মন্দির, যেখানে তিনটি ভাঙা শিবলিঙ্গ রয়েছে । মন্দিরের পূজারী বললেন, মুঘল যুগে শের শাহের আমলে কিছু মানুষ অকারণে স্থানীয় হিন্দু মন্দিরগুলির সমস্ত মূর্তি ভাঙা শুরু করে, সেই ভাংচুর থেকে রেহাই পায়নি এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ গুলিও ! কিন্তু যারা এই শিবলিঙ্গ গুলি ভেঙেছিলো, কোনো অজ্ঞাত কারণে কয়েকদিন পরেই তারা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে ! ফলে বাকি মন্দিরগুলো এবং স্থানীয় অন্যান্য মন্দিরগুলোও রেহাই পায় ভাংচুরের হাত থেকে । এই মন্দিরে স্থানীয়দের বিবাহ হয় প্রায়ই, এবং স্মারক হিসাবে বরের টোপর রেখে দেওয়া হয় মন্দিরে । সম্রাট শের শাহ এর কানে এই খবর পৌঁছলে তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং স্থানীয় মানুষের কাছে অবিলম্বে ক্ষমা চেয়ে ওই ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলি পুনর্নির্মানের আদেশ দেন তাঁর স্থানীয় প্রতিনিধিদের ! সে সময়ে মন্দিরের পূজারী স্বপ্নাদেশ পান যে, শিবলিঙ্গগুলির কোনোরকম প্রতিস্থাপন না করে ভাঙা অবস্থাতেই পুজো চালু থাকে যেন ! ফলে, মন্দিরের পুনর্গঠন হলেও মূর্তি বা শিবলিঙ্গগুলি একই অবস্থায় রয়ে যায় ।
এই মন্দিরের আশেপাশে আরও কয়েকটি মন্দির এবং রাসমঞ্চ আছে, সেগুলো ঘুরে দেখে রওনা দিলাম স্থানীয় শিল্পগ্রাম আমাডুবি-র দিকে ! আমাডুবি শিল্পগ্রামে বেশ কয়েকঘর শিল্পীর বসবাস ! পাশাপাশি ঝাড়খন্ড ট্যুরিজম এর শিল্পকেন্দ্র তখন সদ্য তৈরি হয়েছে, যেখানে পর্যটন ও শিল্পকলার বিকিকিনি একসাথে করা যাবে অদূর ভবিষ্যৎ-এ এমন কথা শুনে এসেছিলাম ! আট বছর আগের কথা, তাই এখন কি পরিস্থিতি সেটা জানা নেই, তবে যেটুকু ব্যবস্থাপনা দেখেছিলাম , বেশ ভালো লেগেছিলো ।
বিহারের মধুবনী শিল্প এবং বাংলার পট শিল্পের চর্চা এই গ্রামের বিশেষত্ত্ব বলে জানলাম স্থানীয়দের কাছে | এখান থেকে বেরিয়ে পাড়ি দিলাম পরিত্যক্ত ব্রিটিশ আমলের এয়ারবেস এর রানওয়ে দেখতে এবং তারপরে গ্রামের লাল মাটির রাস্তা ধরে সুবর্ণরেখা দেখতে | বর্ষার জলে তখন সুবর্ণরেখা টইটুম্বুর ! এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোটো ছোটো টিলা আর শারদ প্রকৃতির মাঝে সুন্দরী সুবর্ণরেখা.... ঘরে ফিরতে কি আর মন চায় ! সেই সাতসকালে চা জলখাবার খেয়েছিলাম, স্নান হয়নি, ঘেমো গরমের মধ্যেও স্টেশনের কাছের শালবন ঘুরে নিলাম একঝলক ! এরপরে স্নান খাওয়া সেরে দুপুর একটার ঘাটশিলা লোকাল ধরে বাড়ির পথে রওনা দিলাম । তথ্যমিত্রঃ ধলভূমগড় হাওড়ার দিক থেকে টাটানগরের দিকে যেতে ঘাটশিলার আগের স্টেশন । সব ট্রেন থামে না , তবে যেহেতু ঘাটশিলা থেকে দূরত্ব মাত্র ৮ কিমি, তাই ঘাটশিলায় নেমে সহজেই এখানে আসা যায় । এখন অবশ্য ট্রেন বন্ধ আছে, কিন্তু হাওড়া-বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস রোজই স্পেশাল ট্রেন হিসাবে হাওড়া থেকে চলছে । তাই প্রাইভেট গাড়িতে না যেতে পারলেও উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ট্রেনেও যাওয়া যায় একবেলার জন্য । এখানে থাকার মতো জায়গা বিশেষ নেই, তবে বনবাংলোর বুকিং পাওয়া যায় । আমাডুবিতে শিল্পীদের বাড়িতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে এছাড়া শিল্পগ্রামের গেস্ট হাউসে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন । রাত কাটানোর ইচ্ছে হলে অবশ্য ঘাটশিলাতেই কাটাতে পারেন কিম্বা গালুডিতে । সেক্ষেত্রে পুরদস্তুর দুরাত্রি তিনদিনের সফরে ফুলদুংরি পাহাড়, বিভুতিভূষণের বাড়ি, অপুর পথ , বুরুডি লেক, ধারাগিরি ফলস, জাদুগোড়ার জাগ্রত রঙ্কিণী মায়ের মন্দির, গালুডি ড্যাম, সুবর্ণরেখা নদী , নারোয়া ফরেস্ট ইত্যাদি জায়গা ঘুরে দেখে নিতে পারেন । তবে একবেলার বা একদিনের ট্যুরের জন্য শুধুমাত্রই ধলভুমগড় আদর্শ ।
রোজকার গতে বাঁধা জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম খুব। হাতে ছুটির সংখ্যাও কম তাই দূরে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। অগত্যা একটু অক্সিজেনের খোঁজে তিন হুজুকে মিলে বললাম, "চলো, let's go". আমাদের কর্মক্ষেত্র জামশেদপুরই আমাদের exploration এর ঠিকানা। এই জামশেদপুরের নামের সাথেই কিছু জায়গার নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তার মধ্যে একটি হলো জুবিলী পার্ক। দক্ষিণ ভারতের মাইসোরের বৃন্দাবন গার্ডেন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে 1958 সালে এই জুবিলী পার্কের উদ্বোধন করেন জামশেদ জী টাটা। বর্তমানে এই পার্কের তত্ত্বাবধানে রয়েছে Tata Steel. এই পার্কের উদ্দেশ্যেই ছুটলাম তিন ভ্রমনপ্রিয় মানুষ। মাত্র 30 টাকা মাথাপিছু টিকিটের বিনিময়ে সোজা ঢুকে পড়লাম জুবিলী পার্কের Zoological Garden. রবিবার থাকায় ভিড়টা বেশি। কিন্তু তাতে আমাদের উৎসাহে এতটুকু কমতি নেই। প্রথমেই ঢুকে পড়লাম বাঁদরের রাজত্বে। বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁদর দেখার সাথে সাথে চললো selfie এর বাঁদরামিও। সেখান থেকে এসে পড়লাম পাখিদের সংসারে। এরপর আধ ঘন্টাটাক "Kachhua Stall" এ বসে গরম গরম কফির সাথে চললো photosession ও আড্ডা। আমাদের দলের passionate photographer Amitava সাথে আমরা দুজন (আমি আর Ranita) non-paid model এবার রওনা হলাম বাঘমামার উদ্যেশ্যে। চিতা ও সাদা বাঘের সাথে সামনা সামনি মোলাকাত হলেও সাদা বাঘের হারগিলগিলে চেহারা মনটা দমিয়ে দিলো। এরপর গুটি গুটি পায়ে চললাম পশুরাজ সিংহের উদ্দেশ্যে। দুই পশুরাজ তখন দিবানিদ্রা দিচ্ছেন গাছের ছায়ায়। গুনগুনিয়ে উঠলাম,
"কথা বলোনা, কেউ শব্দ করোনা, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেননা..." এরপর ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এসে পড়লাম হরিণদের ডেরায়। কত তাদের বাহার !! কেউ সাদা তো কেউ কালো, কেউ ধূসর তো কেউ বাহারি শিং এর পসরা নিয়ে হাজির। সমস্ত জায়গাতেই প্রাণোচ্ছলতাকে সাক্ষী রেখে তারা অবাধে বিচরণ করছে। মনটা ভালো হয়ে গেল ! এরপরের প্ল্যান জুবিলী লেকের জলে নৌকোবিহারের। চার যাত্রীবাহী নৌকা মাত্র 60/- টাকা শুনে যেন ঝাঁপিয়ে পড়লাম। জুবিলী লেকের ঠান্ডা পরিষ্কার জল, লেকের ধরে ফুটে থাকা শালুকের সম্ভার আমাদের জলবিহারকে আরও মনোরম করে তুলল। এদিকে ঘড়ির কাঁটা তখন আড়াইটার ঘর ছুঁই ছুঁই। পেটের ভেতর ছুঁচো গুলোও জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি। নৌবিহারের শেষে জুবিলী পার্ককে তখনকার মতো বিদায় জানিয়ে মনে একরাশ ভালোলাগা নিয়ে মোবাইলে Zomato on করে ছুটলাম পেটপুজোর উদ্দেশ্যে। জুবিলী পার্কের বাকি অংশগুলোর গল্প অন্য কোনোদিন শোনাবো। লেন্সে : Amitava
শুক্রবার, সন্ধ্যা ৭.৩০,বাড়িতে বসে কম্পিউটার এ প্রয়োজনীয় কিছু কাজ করছিলাম। হঠাৎ এক বহু পুরানো বন্ধুর ফোন,Facebook,Whats App এর যুগেও দীর্ঘ দিন যোগাযোগ এর বাইরে ছিলাম আমরা। যাইহোক ৫ -৭ মিনিট কথা বলার পর পর ই উঠে এলো পুরোনো নেশার কথা। হোতেপারে পারে টেলিপ্যাথি,বলতে পারবো না। কথা প্রসঙ্গে উপলব্ধি করলাম বিগত ১০-১৫ দিন যাবৎ আমরা উভয়েই পুরানো নেশার টানে আচ্ছন্ন হয়ে আছি।
ঠিক হলো আগামী কাল ম্যাসাঞ্জোরে (ঝাড়খন্ড) যাবো।তৎক্ষণাৎ youth hostel অনলাইন এ বুক করলাম প্রায় ৭০০ টাকার বিনিময়। কিন্তু সেই মুহর্তে বাবুঘাট পৌঁছে বাস ধরার সময় বা সুযোগ কোনোটাই নেই। ঠিক করে ফেললাম পরের দিন ভোর ৫ টার সময় দেখা করবো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় ও যে যার বাইক নিয়ে যাব। ডানকুনি টোল প্লাজা পেরিয়ে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে যাত্রা শুরু করলাম। বাইকের গতি ৫০ থেকে বাড়তে বাড়তে ১০০ পেরিয়ে যাচ্ছে, রাস্তা শুধু রাস্তা নয় যেন হাতে বোনা নিখুঁত কার্পেট। google map অনুসারে কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ২৩৫ থেকে ২৫০ কিলোমিটার এর মতন। বর্ধমান থেকে বীরভূম ঢোকার রাস্তায় একটু বিরতি নিলাম আখের রস খাবো বলে, অসাধারণ তার মিষ্টি স্বাদ। প্রায় ৬ কিলোমিটার অতিক্রম করবার পর মনে হলো আরও এক গ্লাস করে খেলে ভালোহতো। আর তাই যেমন ভাবনা তেমনি কাজ। যাচ্ছি মঙ্গলকোট, পাড়ুই থানা পেরিয়ে , রাজ্য রাজনীতির বহু চর্চিত নাম। বীরভূম এর মহম্মদ বাজার থেকে বেশ কিছুটা এগোলে শুরু হলো দুমকা-সিউড়ি হাইওয়ে,অসাধারণ এক কথায়। ৪ বছর আগে এই রাস্তা হয়েই দেওঘর থেকে তারাপীঠ গেছিলাম, অসম্ভব বাজে খানাখন্দ পূর্ণ ছিল। যতো এগোচ্ছি প্রকৃতি ও পরিবেশের আকর্ষণ তত অনুভব করছি। অনুচ্চ পাহাড় ও তীব্র দাবদাহের মধ্যেও দূরে মেঘের ঘনঘটা শরীরের থেকে মন কে ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বেলা ১০.৩০ নাগাদ youth hostel এ পৌছালাম। একটি ছোট্ট টিলার উপরে অবস্থিত হোটেল, ভারি সুন্দর অবস্থানে অবস্থিত হোটেল টি। হোটেল থেকেই দৃশ্যমান অনুচ্চ বিস্তীর্ন টিলা ও দিগন্ত বিস্তৃত বিপুল জলরাশি। জামা কাপড় পরিবর্তন করেই দুজনে ছুট লাগলাম স্নান করবার জন্য। ঠান্ডা ও পরিষ্কার জলরাশি ক্লান্ত দেহে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করলো। ৩ ঘন্টা স্নান করার পর পেটের টানে হাজির হলাম স্থানীয় একটি হোটেলে। তৃপ্তি করে মাংস ভাত ও হোটেল মালিক নিজে ভ্রমণ প্রিয় তৎসহ বাইক প্রেমী হওয়াতে অতিরিক্ত আন্তরিকতা সাথে ঘরে পাতা টক দই পড়লো পাতে। বিকেল এর দিকে ড্যামের নিচে বশে চা পকোড়া সহযোগে আড্ডাটা বেশ জমে উঠেছিল বাধ সাধলো ড্যামের রক্ষীরা। যাইহোক একটু উপরে উঠে একটি পাথর খন্ডের উপর আমরা বসলাম ,কিছুক্ষন এর মধ্যে পাশে বসা এক আদিবাসী শিক্ষক ও তার পরিবার এর সাথে আমাদের বেশ ভাব জমে গেলো। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম এই ম্যাসাঞ্জোর ড্যামের গুরুত্ব ও তাদের জীবনে ড্যামের আর্থ-সামাজিক প্রভাব এর কথা। পরদিন রবিবার ওই একই হোটেল এ প্রাতঃরাশ সেরে হোটেল মালিক এর সাথে ঘন্টা দুয়েক নির্ভেজাল আড্ডা দিয়ে কলকাতার পথে যাত্রা শুরু করলাম।
পরেশনাথের পথে
পরেশনাথ পাহাড় বা মারাং বুরু ঝাড়খন্ড রাজ্যের সর্ব্বোচ পাহাড়। এই পাহাড়ে জৈন ধর্মাবলম্বী চব্বিশ জন তীর্থাঙ্কারের মধ্যে কুড়ি জন মতান্তরে ২৩জন এই স্থানে মোক্ষ লাভ করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়।২৩তম জৈন তীর্থাঙ্কর পার্শ্বনাথ স্বামী ১০০ বছর বয়সে শ্রাবণ মাসের শুক্লা অষ্টামীতে এই পাহাড়ের এসে দেহ রাখেন। তার নামানুসারে পাহাড়টির নাম পরেশনাথ।জৈন পুঁথিতে জায়গাটির নাম মধুবন, পাহাড়টিকে বলা হয় শ্রীসম্মেত শিখর।পাহাড় চূড়ায় মন্দির ১১কি,মি হাঁটা পথ শিখরে মন্দির দেখে নিচে নেমে আসতে ১০ থেকে ১২ ঘন্টা সময় লাগে।রাত ২টো থেকে দর্শনার্থীরা হাঁটা আরম্ভ করে।আর আছে দোলা,চারজন বাহক ১জনকে চেয়ারে বসিয়ে পাহাড় চূড়ায় মন্দির দেখিয়ে আনে দক্ষিনা ৪ হাজার টাকা। বাইকে ১জনের ভাড়া ১২০০শ টাকা। পাহাড়ের ৪ কি,মি ও ৬ কি,মি ওপরে আছে অনেক মন্দির। সমতলে থাকার জন্য প্রচুর ধর্মশালা ও হোটেল আছে।
আমার জন্মের পর থেকে আমার ছোটদিদাকে (৭৮) কখন নিজ চোখে দেখিনি কারন তার বাড়ি রাওরকেল্লা থেকে ৩০ কিমি দূর বিরমিত্রপুরে। বহুবার ট্রেনে যাবার চেস্টা করেও হয়ে ওঠেনি। আমার মা অনেকবার বলেছে নিয়ে যাবার জন্য, কিন্তু পরিস্তিতির চাপে সেটাও হয়ে ওঠে নি। তাই এবার পুজা টুরের প্রসংগ উঠতে তাই আর কিছু না ভেবে ঠিক করে ফেললাম, রাওরকেল্লা যাব, কিন্তু যাব জামসেদপুর হয়ে আর ফিরব রাচী হয়ে আমার ২০১৭ সালে কেনা হুন্ডাই ইওন নিয়ে,( ২০৯৮৫কিমি চালান হয়ে গেছে লাইসেন্স(২০১৭ মার্চ) পাবার পর থেকে) সাথে যাবে মেয়ে(৮) বউ, বাবা(৭২) মা(৬৮)। যাত্রা আরম্ভ হবে মহাঅস্টমীর দিন পুস্পাঞ্জলী দেবার পর, ১০টা নাগাদ।
১৭/১০/২০১৮- আমার আন্দাজ ছিল ১১টার আগে কিছুতেই পুস্পাঞ্জলী দিয়ে বের হবা সম্ভব নয়, কিন্তু দেখা গেল ৯-৩০শের মদ্ধে সবাই রেডি, পুস্পাঞ্জলী দিয়ে। আমিও সাথে সাথে গাড়ি বের করে নিয়ে, ১০-১০ য়ে যাত্রারম্ভ করলাম জামসেদপুরের ডিমনা লেক এর উদ্দেশ্যে। এরপর kolaghat য়ে ১১টা নাগাদ ভারী ব্রেকফাস্ট করে (পথে যদি লাঞ্চ না পাওয়া জায়) খরগপুর হয়ে ঝাড়্গ্রামের কনকদুরগা মন্দিরের সামনে এলাম, তখন সেখানে অন্তত ১০০০০ মানুষের ভিড় সাথে রাস্তার দুপাশে গাড়ি, মন্দিরের পারকিং ওব্দি যাওয়াই দুস্কর, তাই আমি গাড়ি না থামিয়ে এগিয়ে চল্লাম, বেলপাহাড়ির দিকে ( আসলে আমি ১মাস আগে জখন এই মন্দিরে এসেছিলাম তার গল্প বাড়িতে করেছিলাম তাই তারা পুজার সময় এই মন্দির দেখার প্লান করে রেখেছিল), এরপর বাশপাহাড়ি ভুলাভেদা, ঝিলিমিলি, বান্দোয়ান হয়ে বিকেল ৪টে নাগাদ এসে পউছলাম ডিমনা লেক। এখানে কিছু ফটো তুলে নিয়ে আমরা চল্লাম আমাদের বুক করে রাখা hotel holidai inn. সেখানে ৫-৩০পিএম নাগাদ চেক ইন করে লাঞ্চ/টিফিন করে নিয়ে সন্ধা ৭ টা নাগাদ জুবিলি পার্ক টা একটা অটো করে একটু ঘুরে নিয়ে, রাতের খাবার খেয়ে ঘুমের দেশে। ১৮/১০/১৮- আজ আমরা সকাল ১০টা নাগাদ জামসেদপুর থেকে বেরিয়ে পথে নিজেরা ব্রেকফাস্ট খেয়ে, গাডিকে তার খাবার দিয়ে চল্লাম চান্ডিল ড্যাম। এখানে কিছুখন ছবি তুলে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম আমাদের মূল গন্তব্য বীরমিত্রপুরের উদ্দেশ্যে। এরপর চান্ডিল থেকে টামার ওব্দি, রাচি টাটার রাস্তা এলাম গাড়ির গতি ১০০কিমি/প্রতি ঘ্নটা নিচে না নামিয়ে, রাস্তা এতই ভাল, কিন্তু টামার থেকে খুতি মাত্র ৪৫ কিমি আস্তে সময় লাগল ২ঘন্টা কারন সেখানে পাহাড কেটে রাস্তার কাজ চলছে, কাজের লোকরা আমার ছোট ইওন গাড়িটা দেখে বলাবলি করছিল, এই রাস্তায় sumo quails innova আসতে ভয় পায়, আপনি এই পুচকি গাড়িনিয়ে জেতে পারবেন না, আপনি লোটাং হয়ে জান, কিন্তু সেটা করতে গেলে আমাকে আরো ২ঘন্টা ঘুরতে হবে, তাতে বীরমিত্রপুর যেতে রাত ১০টা বেজে যাবে, আর আমাদের থাকার স্পেশাল জায়গা, রানী সতি দাদি মন্দির বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আমি ভাবলাম যাই হক আমি এই রাস্তাতেই যাব, ভাবতে পারবেন না খাদের দিকে গাড়ি প্রায় ৪৫ ডিগ্রি হেলে সবাই ভগবানকে ডাকছে, আমি মাথা খাটিয়ে গাড়িকে বার করার চেস্টা করছি ১০কিমি / প্রতি ঘন্টা স্পিডে। মাথায় রাখবেন আমার গাড়িচালাতে শেখা মাত্র ১.৫ বছর আগে, সাথে মবাইল নেটওয়ার্ক নেই। অবশেষে খুতি খুব ভাল রাস্তা পেয়ে,, ৫মিনিট দাড়াতে গিয়ে দেখলাম হাটুটাতে যেন জোর পাচ্ছিনা, বুঝলাম মনের জোরে রাস্তাটা পার হয়েছি বটে কিন্তু কিন্তু...... এরপর আমরা দুপুর ৩-৩০ নাগাদ লাঞ্চ করে নিয়ে, মাত্র ১.৫ঘন্টাতে পার হলাম ১১৫কিমি রাস্তা। খুতি থেকে সিমডেগা। এরপর সিমডেগা থেকে বীরমিত্রপুর ৫০কিমি রাস্তা ১ ঘন্টাতে পাড় হলাম, কিছুটা !!!! খারাপ রাস্তাদিয়ে(২-৩ ফুট মাপের গভীর গরত)। এবার৬টা নাগাদ রানী সতি দাদি মন্দিরের আমাদের ঘরে ধুকে পরিবেশ ও ঘরের সাইজ দেখে আমরা পুরো অবাক, এরপর আরতি দেখে বাইরে বেরিয়ে বীরমিত্রপুরের কিছু দুর্গা ঠাকুর দেখে নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমের দেশে। ১৯/১০/২০১৮- আজ বিজয়া দশমী , আর রাওরকেল্লা তে দশেরা, দশেরাতে রাবন দহন দেখার ইচ্ছে আমার অনেকদিনের, তাই আমার বীরমিত্রপুরের সিস্টার চাদনীকে বলা ছিল আরকিছু দেখা হক বা না হক এটা দেখতেই হবে, বলেছিল, দাদা, একদম চাপ নিস না, This Is the main festival of Birmitrapur, যাই হক, এবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দিদাকে তার বাড়ি থেকে আমার গাড়ি করে নিয়ে এলাম রানী সতি মন্দিরে আমাদের ঘরে, আমার বাবা মা কে বল্লাম, আজ তোমাদের রেস্ট। কারন বাবা মার বয়স ৭২ আর ৬৮, রেস্ট চাই, না হলে ফিরতে অসুবিধা হবে। এরপর আমার বোন কে সাথে নিয়ে আমরা রাওরকেল্লা উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে, পথে ব্রেকফাস্ট করে প্রথমে বেদব্যাস মন্দির ও পরে হনুমান ভাটিকা,৭৪.৯ফুট উচ্চতার হনুমান স্টাচু ও লাগোয়া মন্দির দেখে, প্রচন্ড গরমের কারনে(গাড়িতে এসি থাকলেও) রাওরকেল্লা ভ্রমন সমাপ্ত করে, একটি এসি রেস্তোরাঁর দুপুরের খাবার খেয়ে বীরমিত্রপুর ফিরে এসে দিদার সাথে কিছুখন আড্ডা দিয়ে, বিকেল নাগাদ গাড়ি নিয়ে আবার বেড়িয়ে, প্রথমে অরবিন্দ আশ্রম দেখে নিয়ে এলাম বীরমিত্রপুরে ২৫ ফুট উচ্চতার হনুমান ভাটিকা এবং তথসংলগ্ন জগন্নাথ মন্দির দেখে নিয়ে, গাড়ি সেখানেই রেখে পায়ে হেটে দেখতে এলাম রাবন দহন অনুস্টান, প্রথমে প্রায় ১ঘন্টI বিভিন্নভাবে বিকট শব্দে, শব্দ বাজী ও আতসবাজি ফাটার পর, মুল রাবন দহন(পুরোটাই ভিডিওতে আছে) দেখে নিয়ে পারকিং থেকে গাড়ি বের করে, রানী সতি মন্দির আসতে গিয়ে দেখলাম ঠাকুর বিসরজন শুরু হয়ে গেছে, কিন্তু আমার সিস্টার এবং স্থানীয় পুলিশের হেল্পে( আমার WB নাম্বারপ্লেট দেখে, Tourist) আমরা খুব তারাতারি রানী সতি মন্দিরে এসে, বাইরে রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে, দিদা ও মাসিকে গাড়িতে তুলে তাদের বাড়ি দিয়ে এসে( এখেত্রেও স্থানীয় পুলিশের হেল্পে) আমরা রাত ৯টা মধ্যে রানী সতি মন্দিরে ফিরে এসে একটু গল্প করে নিয়ে সবাই মিলে ঘুমের দেশে। কাল জেতে হবে রাচি, সিমডেগা ওব্দি সেই খারাপ রাস্তা দিয়ে। ২০/১০/১৮- আজ সকাল ৮টা নাগাদ বীরমিত্রপুরকে বিদায় জানিয়ে সিমডেগা এসে, ব্রেকফাস্ট খেয়ে নিয়ে, গাড়ি খুতি হয়ে চল্ল রাচীতে আমাদের বুক করে রাখা হোটেল নটরাজ তে। পথের মাঝে সান টেম্পেল ও দশম falls দেখে দুপুর ৩টে নাগাদ হোটেলে এসে, একটু বিশ্রাম করে নিয়ে ঘরের বারান্দায় দাড়িয়ে দুর্গা ঠাকুরের বিসরজন দেখে, রাতের খাবার নিয়ে আসতে গিয়ে রিক্সায় রাচী শহরটা একটু ঘুরে নিয়ে, হোটেলে ফিরে রাতের খাবার খেয়ে নিয়ে আজকের মতন দিন শে। ২১/১০/১৮- আজ সকাল ৯টা নাগাদ ঘর ছেড়ে দিয়ে একটু ব্রেকফাস্ট খেয়ে নিয়ে, এলাম রক গাডেন দেখতে। প্রায় ১ঘন্টা সেখানে থাকার পর, আবার গাড়িতে উঠে পত্রাতু ভ্যালিতে কিছু ছবি তুলে নিয়ে এলাম পত্রাতু ড্যামে, boating. করতে, ২৫০ টাকা ভাড়ায় একটি শিকারাতে চেপে প্রায় ১ঘন্টা ঘুরে বেড়ালাম, প্রায় স্বছ নীল জলের লেকটিতে। এরপর আমরা বাড়ি ফেরার রাস্তা ধরলাম, বোকারো স্টিল সিটির একটু আগে প্রায় ৩টে নাগাদ লাঞ্চ খেয়ে নিয়ে, ধানবাদ, দুর্গাপুর হয়ে শক্তিগড়ে একটু টিফিন খেয়ে এবং রাতের খাবার সাথে নিয়ে, যখন ৮টা মন্দিরতলা শিবপুর এলাম, তখন বিসরজনের শোভাযাত্রা শুরু হয়ে গেছে, মানে বাড়ি ওব্দি গাড়ি নিয়ে যেতে হলে রায় ১২টা ওব্দি বসে থাক। বাবা মা মেয়ে কে মন্দিরতলায় নামিয়ে দিয়ে বল্লাম পায়ে হেটে চলে যাও, এরপর গাড়িকে অনেক কস্টে, পুলিশের হেল্পে গ্যারেজ ওব্দি গিয়ে, রেখে, পায়ে হেটে নিজ বাড়ি। পুনশ্চ- লাগেজ সারারাত গাড়িতেই ছিল পরদিন টোটো করে বাড়ি এনেছিলাম। Total kilometres travelled - 2179 in 5 days আমি এই গ্রুপের একজন সদস্য। জানিনা আমার লেখা গ্রহনযোগ্য হবে কি না। কাজের সূত্রে ২দিনের জন্য আমার গীরিডি যাবার সুযোগ হয় আর সেই সঙ্গে এখানকার দ্রষ্টব্য স্থান গুলো ঘুরে নেওয়া। এখান থেকেই আমি দেওঘর ঘুরে বাড়ি ফিরি। আমার দ্রষ্টব্য স্থান গুলো হল - ঊশ্রী ঝর্না, পরেশনাথ মন্দির, খান্ডলি ড্যাম্, তপোবন, নলখ্যা মন্দির, ত্রিকুট পাহাড়,বাবা বৈদ্যনাথ ধাম, সৎসঙ্গ আশ্রম, নন্দন পাহাড় ও রামকৃষ্ণ আশ্রম ইত্যাদি। কলকাতা থেকে ট্রেনে সরাসরি গীরিডি আসুন। এখান থেকে গাড়ি নিয়ে পরেশনাথ ও ঊশ্রী ঝর্না দেখে বিকালে দেওঘর চলে আসুন। ২য় দিন দেওঘর ঘুরে নিয়ে রাতে অথবা পরদিন সকালে বাড়ি ফিরুন। আমার ক্যমেরায় তোলা কয়েকটি ছবি পোস্ট করলাম। Post By- Pabitra Kanti Kayal
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |