মনিপুরঃ THE JEWEL OF INDIA ঘোরার জায়গা হিসাবে মনিপুর অনেকের কাছেই খুব একটা মনোরোচক নয়।কারনটা সাধারণ ভাবে দ্বিবিধ।একতো তথ্যের স্বল্পতা, দ্বিতীয়ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা।দ্বিতীয় বিষয়টা আমি যেমন দেখেছি সেটা আগে বলি।ইম্ফল এয়ারপোর্টে নেমে যতই শহরের কেন্দ্রের দিকে এগোনো যায় ততই সেনাবাহিনীর উপস্থিতির বাড়াবাড়ি চোখে লাগে।রাস্তায় সাঁজোয়া গাড়িতে টহল, মোড়ে মোড়ে সশস্ত্র বুথ নজর কাড়ে।অনেকটা কাশ্মীরের মতোই।কিন্তু তার মধ্যেই অধিবাসীদের সাধারণ শান্তিপূর্ণ জীবনপ্রবাহকে কোথাও টোল খেতে দেখি না।অন্তত আমার ২০১৮-র দিন পাঁচেকের ঝটিকা সফরে কোনো অপ্রীতিকর অবস্থার মুখোমুখি হতে হয় নি।সেই অভিজ্ঞতার ওপর ভর করে বলতে চাই যারা ঘুরতে যেতে চান তারা নিশ্চিন্তে যান।অন্তত নিরাপত্তা নিয়ে মনিপুর আপনাদের হতাশ করবে না। মনিপুর ঘোরার শুরু অবশ্যই ইম্ফল থেকে।কলকাতা থেকে ইম্ফল যাবার সবচেয়ে সহজ উপায় প্লেন।হাজার দুয়েক টাকার মধ্যে একদিকের টিকিট পাওয়া যায়। দিন ছয়েক হাতে থাকলে মনিপুর ভালোভাবে ঘোরা যায়।ঘোরার সার্কিট চারটি- ১) ইম্ফল শহর- দ্রষ্টব্যগুলি হল কাঙ্গলা ফোর্ট, শ্রী গোবিন্দজির মন্দির, ওয়ার মেমোরিয়াল,শহীদ মিনার,পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো পোলো গ্রাউন্ড, ইমা মার্কেট ইত্যাদি। ২) লোকতাক লেক ৩) উখরুল ৪) মোরে- মায়ানমারের সীমান্তবর্তী শহর।ইম্ফল থেকে বাসে ৩ ঘন্টার জার্নি।ISBT থেকে বাস পাওয়া যাবে।খুবই সিনিক জার্নি।গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা গিয়েছে।যাবার পথে পড়বে তেঙ্গনাউপাল।যেখান থেকে ইম্ফল ভ্যালিকে খুব সুন্দর দেখতে পাওয়া যায়।উৎসাহীরা একরাত্রি এখানে থাকতেও পারেন।হোটেল সহজলভ্য।মোরে থেকে লোকাল অটোতে যাওয়া যায় মায়ানমারের সীমান্তবর্তী শহর তামুতে।পাসপোর্ট লাগে না। মনিপুর সবসময়েই যাওয়া চলে।যার যেরকম সুযোগ বেরিয়ে পড়ুন।সুতরাং আর দেরি নয়।শুভস্য শীঘ্রম।চরৈবেতি চরৈবেতি-- আমার সফরঃ হাতে সময় কম আর প্লেনের টিকিট সস্তা;গরমের ছুটিতে মনিপুরে বেড়াতে আসার প্রথমিক কারণ ছিল এটাই।উত্তর পূর্বের রাজ্যগুলোর মধ্যে এর আগে আসাম,মেঘালয় ও অরুনাচল গিয়েছি।কিন্তু নাগাল্যান্ড,মনিপুর ও মিজোরাম বেড়াতে আসার কথা বললে আমরা একটু ইতস্তত করি।নিরাপত্তার কথা ভাবি।কিন্তু এবার বেড়াতে আসার আগে আমার মনে কোনো কুন্ঠা,কিন্তু, ছিল না।নিরাপত্তা জিনিষটা শামুকের খোলসে ঢুকে থাকার প্রানান্তকর চেষ্টা বলেই আজকাল মনে হয়।এই নিরাপত্তার অভ্যাস ক্রমে ক্রমে কাটিয়ে উঠতে পারলে অনেক নতুন দিগন্ত আলোকিত হয়ে ওঠে। ১লা জুন-যাত্রা শুরুঃ সকাল সাড়ে এগারোটায় উড়ান।আমরা তার ঘন্টা দেড়েক আগে উপস্থিত হলাম এয়ারপোর্টে। নিরাপত্তা তল্লাশির পর লাউঞ্জে পৌঁছে গেলাম নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই।আমাদের ইন্ডিগো এয়ারলাইন্স।১১ টা ৫ মিনিটে গেট খোলার কথা থাকলেও ১৫ মিনিট লেট হলো।প্রচুর প্লেনের একই সময় ডিপারচার থাকায় আরো কিছুটা দেরি হলো টেক অফে।প্রায় ৪৫ মিনিট লেট।যখন আমরা মাটি ছেড়ে বাতাসে উড়ছি তখন আকাশে ঘন মেঘ।টিপটিপ বৃষ্টি।কেবিন ক্রুরা জানাল যে পাইলটের নির্দেশ মতো খারাপ আবহাওয়ার জন্য আজ সিটবেল্ট সারাক্ষণই পরে থাকতে হবে।যথাআজ্ঞা।আমার জানলার ধারে একদম পাখার ওপর সিট।দেখলাম পাখার ওপর টিপটিপ বৃষ্টির ফোঁটা।ওপর থেকে নিউটাউনের ইকোপার্কটা চিনতে পারছিলাম।তারপর শহর ছাড়িয়ে মেঘেদের রাজ্যে ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলাম।হলদে,সাদা,ছাই রঙের মেঘেদের অলীক সাম্রাজ্যের ভিতর দিয়ে অনায়াস এগিয়ে যাওয়া।কলকাতা থেকে ইম্ফল ১ঘন্টা ২০ মিনিটের জার্নি।আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম দুপুর দেড়টা নাগাদ।হোটেল আমাদের আগে থেকে বুক করা নেই যথারীতি।তবে ইন্টারনেটে দেখে নিয়েছি হোটেলগুলো প্রধান তিনটে যায়গায় কেন্দ্রীভূত। তারমধ্যে প্রথম পড়ে থঙ্গল বাজার।এটা শহরের একদম কেন্দ্রস্থল।এর একদিকে কাংলা ফোর্ট অন্যদিকে ইমা মার্কেট।দুটোই ইম্ফল শহরের দুই প্রধান দ্রষ্টব্য।আমরা ফোর্টের সামনে নেমে হোটেল খুঁজতে শুরু করলাম।বাজার এলাকাটি একটু ঘিঞ্জি হওয়ায় আমাদের পছন্দ হলো না। তাই আমরা একটু এগিয়ে উপস্থিত হলাম নর্থ AOC তে।এই অঞ্চলে দু একটি বড় হোটেল আছে।মনিপুরে পরিচিত ক্লাসিক গ্রুপের হোটেল ক্লাসিক পেরিয়ে চৌমাথা থেকে বায়ে ডিমাপুরের দিকে ঘুরতেই হোটেল TAMPHA আমাদের পছন্দ হয়ে গেল।এদের বিভিন্ন মানের রুম রয়েছে ৫০০-১৪০০ -র মধ্যে।তাদেরই একটা রুমে ব্যাগ ঢুকিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়া গেল ইম্ফল শহর দর্শনে। ইম্ফলঃ যারা গরমের ছুটিতে দাবদাহের হাত থেকে বাঁচার জন্য ইম্ফল ছুটবেন তারা ভুল করবেন।কলকাতা থেকে এখানে গরম কিছু কম নেই।প্লেন থেকে নামার পরেই তেমন চামড়া পোড়ানো গরমের মুখোমুখি হলাম।তেষ্টাও পাচ্ছিল খুব।এয়ারপোর্টের ভিতর থেকেই তাই দশ টাকা অতিরিক্ত মূল্যে জল কিনলাম।এখানে তো তবু ভালো,দমদমে এই জলই দ্বিগুন ষাট টাকা মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।আর সস্তার বিমানে এখন আগে কড়ি না ফেললে জলও অমিল। ইম্ফল এয়ারপোর্ট টি ছোট্ট এবং বেশ ঘরোয়া মতো।দিকভুল হবার সম্ভাবনা নেই।বাইরে পা রাখতেই গাড়ির দালালরা আপনাকে ছেঁকে ধরবে।এয়ারপোর্টটি শহরের এক প্রান্তে। মূল শহর এখান থেকে সাত আট কিমি দূরে।কাংলা ফোর্টকে শহরের মধ্যমণি ধরলে তার ৫০০ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যেই সমস্ত হোটেল।অথচ এই সাত আট কিমি আসতেই অটো বা ট্যাক্সি ২৫০ টাকা চেয়ে বসে।তার থেকে অনেক সুলভ বিকল্প হলো একটু কষ্ট করে ১০০ মিটার হেঁটে এয়ারপোর্টের বাইরে এসে গাড়ির খোঁজ করা। দু নম্বর জাতীয় সড়ক বিমান বন্দরের পাশ দিয়ে সোজা নাক বরাবর চলে গেছে মূল শহরের দিকে।বাসে বা শেয়ার অটোতে এই দূরত্ব টুকুর জনপ্রতি মূল্য মাত্র ১০/২০ টাকা। ইম্ফল শহরের প্রধান দ্রষ্টব্য অবশ্যই কাংলা ফোর্ট।এই ফোর্ট এর সাথে মনিপুর বাসীর ঐতিহ্য,গর্ব,ও ইতিহাস জড়িয়ে।এপ্রসঙ্গে মনিপুরের ইতিহাস সম্পর্কে দুচার কথা বললে আশাকরি সহৃদয় পাঠক মনঃক্ষুন্ন হবেন না। ভারতবর্ষের ইতিহাস, ৭৫০ বছরের পরাধীনতার ইতিহাস হলেও মনিপুর একটি স্বাধীন ভূখন্ড হিসাবে দীর্ঘদিন তার অস্তিত্ব বজায় রেখেছিল।১৮৯১ সালে ইঙ্গ-মনিপুর যুদ্ধে পরাজয়ের পরেই তার অস্তিত্ব শিকল বন্দী হয়।তার আগে পর্যন্ত মনিপুরবাসী সহস্রাধিক বছরেরও বেশি সময় স্বাধীনই ছিল।মনিপুরের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে প্রামান্য দলিল চেইথারোল কুম্বাবা অনুযায়ী খ্রীষ্ট জন্মের অনেক আগে থেকেই মনিপুরের অস্তিত্ব ছিল।এরপর ৩৩ খ্রিস্টাব্দে পাখাম্বাদের রাজত্বকাল থেকে মনিপুরের রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরু এবং এই রাজনীতির পীঠস্থান অবশ্যই কাংলা ফোর্ট।শুধু রাজনীতিরই বা কেন,বহুদিন ধরে ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র হিসাবেও কাংলার গুরুত্ব অপরিসীম ছিল।আজকের কাংলা ফোর্টের যে রূপটিকে আমরা দেখতে পাই তা গড়ে উঠতে শুরু করে সপ্তদশ শতকের প্রথমার্ধে।বর্মীজ আক্রমনে এর কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পরবর্তীকালে তা পুনর্নির্মিত হয়েছে।মনিপুরবাসীর গর্ব এই কাংলা ফোর্ট ২০০৪ সালে আসাম রাইফেলসের হাত থেকে নিয়ে কাংলা ফোর্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটির হাতে তুলে দেওয়া হয়। ২৩৭ একর আয়তন বিশিষ্ট এই পার্কটি শহরের একদম প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত।সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাত্র ১০ টাকা টিকিট মূল্যে এই পার্কে প্রবেশ করা যায়।মনিপুরী স্হাপত্য রীতিতে নির্মিত মন্দির, কাংলা শাহ-এর মূর্তি,মিউজিয়াম,পুরানো গোবিন্দজির মন্দির এগুলি এখানকার দ্রষ্টব্য।ইতিহাস মনস্ক না হলেও এখানকার সাজানো গোছানো শান্ত পরিবেশ খারাপ লাগবে না। কাংলা ফোর্টের চৌমাথা থেকে বামদিক অর্থাৎ ব্রিজের দিকে দুপা এগোলেই বাম ফুটপাথে শহীদমিনার।১৮৯১ তে ইঙ্গ-মনিপুর যুদ্ধে যে সব সেনানীর প্রাণ গিয়েছিল তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই সৌধ।তার পাশেই পোলো গ্রাউন্ড।মনিপুরীরা মনে করেন পোলো খেলাটির জন্ম এখানেই।পরে ব্রিটিশরা খেলাটিকে এখান থেকে নিয়ে বাকি বিশ্বে ছড়িয়ে দেন।এই রাস্তাতেই আর একটু এগোলে মনিপুরের বিখ্যাত ইমা মার্কেট।যে মার্কেটটির পুরোটাই মেয়েদের দ্বারা পরিচালিত।মাতৃতান্ত্রিক মনিপুরী সমাজের দিকে তাকালে এতে অবশ্য অবাক হবার কিছু থাকে না।বিশ্ব মানচিত্রে মনিপুরের যেটুকু পরিচিতি তাও যে এই নারীদের কেন্দ্র করেই ( মেরি কম, শর্মিলা চানু, সরিতা দেবী ইত্যাদি) সেকথা বলাই বাহুল্য। আর আমরা কে ভুলতে পেরেছি আসাম রাইফেলসের জওয়ানদের হাতে মনোরমা নামে ৩২ বছর বয়সী একটি মনিপুরী মেয়ের নৃশংস ভাবে ধর্ষণ ও হত্যা কে কেন্দ্র করে মনিপুরী মায়েদের সেই নগ্ন প্রতিবাদ। লোকতাক লেকঃ আমাদের মনিপুর ভ্রমনের দ্বিতীয় দিনের গন্তব্য লোকতাক লেক।মিষ্টিজলের এই হ্রদটি উত্তরপূর্ব ভারতের বৃহত্তম এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ।লোকতাক লেক তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যে অনন্য কারন একমাত্র এখানেই ফুমদির দেখা মেলে এবং ভারতবর্ষের একমাত্র ভাসমান অভয়ারণ্য কেইবুল লামজাও ন্যাশনাল পার্ক এর অবস্থান ও এই হ্রদের ওপরেই। ইম্ফল থেকে লোকতাক মাত্র এক ঘন্টার পথ।কিন্তু গাড়ি ভাড়া করে যেতে গেলে ৩০০০ টাকার নীচে গাড়ি পাওয়া মুশকিল।অথচ পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সাহায্য নিলে খুব সহজেই এবং অনেক কম খরচে লোকতাক পৌঁছানো সম্ভব।ইমা মার্কেটের উল্টোদিকে ব্রিজ পার করলেই লোকতাক যাবার গাড়ি মেলে।বেসরকারি বাস ও টাটা উইঙ্গার ছাড়ছে এখান থেকে মোইরাঙ্গ এর উদ্দেশ্যে।ভাড়া ১০০ টাকা প্রতিজন।দিনে তিনটি সরকারি বাস ও আছে মোইরাঙ্গ এর উদ্দেশ্যে।ভাড়া ১০ টাকা কম শুধু নয় সিটও অনেক আরামদায়ক।তবে সরকারি বাস সংখ্যায় কম হবার ফলে বেসরকারি বাস বা টাটা উইঙ্গার এর ওপরই নির্ভর করা ভাল। মোইরাঙ্গ বাজারের একটু আগে গাড়িগুলি নামিয়ে দেয়।সেখান থেকে অল্প একটু হাঁটলেই বাজার। সেটা অতিক্রম করলে ডানদিকে ব্রিজ এবং ব্রিজ ছাড়ালে রাস্তার বামদিক থেকে থাঙ্গার গাড়িগুলি ছাড়ে।বিশাল লোকতাক লেকের পেনিনসুলার মধ্যেই একটি ছোট্ট জনপদ থাঙ্গা।লোকতাক লেকের পাশে থাকার জায়গা বলতে দুটি। একটি বিলাসবহুল সেন্দ্রা কটেজেস এবং অন্যটি মাইপাকচাও হোমস্টে( যোগাযোগ-9198563 56993)।হোমস্টেটি বাজেট ট্রাভেলারদের জন্য উপযুক্ত।প্রতিদিন প্রতিজন ১০০০ টাকার মত খরচ এখানে।থাঙ্গা গামী গাড়িতে বললেই মিনিট পনেরোর মধ্যে তারা মাইপাকচাওতে নামিয়ে দেবে।ভাড়া ১৫ টাকা প্রতিজন।যারা লোকতাক এ থাকবেন না, দিনের দিনে গিয়ে দেখে ইম্ফল ফেরত আসবেন তাদের সেন্দ্রা কটেজেস এ যাওয়া ঠিক হবে।এটি একটি বিলাসবহুল কটেজ।মূল রাস্তা থেকে উঁচুতে একটি টিলার ওপর এর অবস্থান।সামান্য মূল্যের টিকিটের বিনিময়ে এখানে প্রবেশের অনুমতি মেলে।থাঙ্গাগামী গাড়িতে ৫-৭ মিনিটেই পৌঁছে যাওয়া যায় সেন্দ্রা তে।ভাড়া ঐ একই ১৫ টাকা।সেন্দ্রা থেকে পাখির চোখে লোকতাক লেকের যে দৃশ্য চোখে পড়ে তা অপূর্ব।লেকে গোলাকার আকৃতির ফুমদিগুলির অবস্থানের জন্য লেকটি দৃষ্টিনন্দন মনে হয়।সেন্দ্রা কটেজটিও খুব সুন্দর ভাবে সাজানো।বাজেট যাদের কাছে সমস্যা নয় তাদের অবশ্যই উচিত হবে এক বা দু রাত্রি এখানে কাটিয়ে আসা। লোকতাক যাত্রায় যারা মাইপাকচাও বা সেন্দ্রা তে থাকবেন তারা বোটে করে চলে যেতে পারেন কারাঙ্গ আইল্যান্ড। লোকতাকের বুকে বোটের ওপরে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত আপনার মনিপুর ভ্রমনকে অবিষ্মরনীয় করে রাখবে। পুনরায় মোইরাঙ ফিরে হাতে সময় থাকলে চলে যান ভারতের একমাত্র ভাসমান অভয়ারণ্য কেইবুল লামজাও।মোইরাঙ থেকে কেইবুলে যাবার পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পেয়ে যাবেন।মাত্র ৩০ টাকা দর্শনী মূল্যে ঢুকে পড়ুন অভয়ারণ্যের ভিতর। ইতিহাসের সাক্ষী হতে চাইলে মোইরাঙে পায়ে পায়ে দেখে নিতে পারেন নেতাজির স্মৃতি বিজড়িত INA কমপ্লেক্স।ভারতবর্ষের স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর সেনানীদের পুনরায় একবার স্মরণ করে নিয়ে এইবার ফেরার পালা।বাস উইঙ্গার যা মেলে তাতেই ফিরে চলুন ইম্ফল। উখরুলঃ আমাদের মনিপুর ভ্রমনের ৪ দিনের ২ দিন অর্থাৎ অর্ধেকই বরাদ্দ ছিল উখরুলের জন্য।মনিপুর পাহাড়ি রাজ্য হলেও ইম্ফলে পাহাড় দুর্লক্ষ্য।পাহাড়ের স্বাদ পেতে গেলে যেতে হবে ইম্ফল থেকে ৮০ কিমি দূরে উখরুলে। ইম্ফলের ISBT( inter state bus terminus) থেকে উখরুলের গাড়ি মেলে।বাস,উইঙ্গার দুইই পাওয়া যায়।বাসের সার্ভিস কিছুটা অনিয়মিত।তবে ১ ঘন্টা অন্তর উইঙ্গার পাওয়া যায়।৮০ কিমি দূরবর্তী উখরুলের ভাড়া ২০০ টাকা,সময় লাগে আনুমানিক তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা। কিছুটা সমতলের রাস্তা পার হলেই শুরু হয় পাহাড়।এ পাহাড় ঘন সবুজ।পাহাড়ি রাস্তাটির অবস্থা যদিও খুব একটা সুবিধার নয়।তবু পথের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় প্রকৃতির সান্নিধ্যে। মনিপুরের উখরুল জেলার সদর এই একই নামধারী উখরুল।রাস্তার দুপাশে বাজার।এই বাজার উইন বাজার নামে পরিচিত।দৈনিক প্রয়োজনের যাবতীয় সামগ্রীই মিলে যায় বাজারে।গান্ধী চক অঞ্চলটিই সবচেয়ে জমজমাট।অধিকাংশ হোটেলই এই গান্ধীচকে।প্রায় সব হোটেলেরই নীচের অংশটি বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়।একদম গান্ধীচকের ওপরেই 3 in 1 হোটেল।হোটেলটি একদম নতুন।ফলে গৃহসজ্জা বেশ চকচকে।আমরা হোটেলের সবচেয়ে প্রশস্ত ঘরটি অধিকার করলাম।আসল ভাড়া ১৫০০ হলেও আমরা ২০% ডিসকাউন্টে ঘর পেলাম।তবে সমস্যায় পড়লাম দুপুরের খাবার খুঁজতে গিয়ে।উখরুলে রবিবার ছুটির দিন।ফলে রেস্টুরেন্ট তো দূর অস্ত একটি মুদির দোকানও খুঁজে পাওয়া দুঃসাধ্য।শেষে ফুটপাথে এক ফলওয়ালির কাছ থেকে ফল কিনে ক্ষুন্নিবৃত্তি করলাম। গান্ধীচক এলাকায় ৬-৭ টি হোটেল আছে।তবে ট্যুরিজমের উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি এখনো।তেমন ভালো রেষ্টুরেন্ট ও চোখে পড়ে নি।তবে ২৫ ডিগ্রী নর্থ হোটেল কাম রেষ্টুরেন্টটিতে খাবার গুনমান ভালো। উখরুল নিতান্তই আর পাঁচটা hill station এর মতোই নাকি আর কিছু বিশেষ প্রত্যাশা নিয়ে যাওয়া যায় তার কাছে?আমাদের প্রত্যাশা ধুয়ে গেছিল জলে।তবে আমাদের মতো পোড়া কপাল নয় যাদের তারা যেতে পারেন সিরুই লিলির উদ্দেশ্যে।ইম্ফল থেকে যে পথে এসেছিলেন সে পথেই ২ কিমি যাবার পর বাম হাতি রাস্তায় যেতে হবে আরো প্রায় ১৩-১৪ কিমি।নিজেদের গাড়ি না থাকলে এই ৩০-৩২ কিমি দূরত্বেরই দাম পড়বে ২০০০-৩০০০ টাকা।পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এই অঞ্চলে সুলভ নয়। সিরুই কাসঙ্গ বা সিরুই পিকই হলো সিরুই লিলির আবাসস্থল।প্রসঙ্গত জানিয়ে রাখি মনিপুরের প্রতীক এই সিরুই লিলি।মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ফুল দেখতে পাওয়া যায়।যাদের ফুলে অত ভালোবাসা নেই তারাও ৪ কিমি এই ট্রেকিং টি করতে পারেন সিরুই উপত্যকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যকে উপভোগ করার জন্য। সিরুই পিকের ঠিক উল্টোদিকে কাঙ্গখুই মাঙ্গসোর( প্রাগৈতিহাসিক চুনাপাথরের গুহা)। উখরুল থেকে ১৫ কিমি দূরে এই প্রাগৈতিহাসিক গুহাটির ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে।প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিলাসিদের পক্ষেও উচিত হবে যায়গাটিতে ঘুরে আসা।উখরুল থেকে কাঙ্গখুই গ্রাম পর্যন্ত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যায় জন প্রতি ৭০-৮০ টাকা মূল্যে।সেখান থেকে ২ কিমি পয়দল। তাহলে আর দেরি কেন? চলুন বাক্স প্যাটরা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক। Post By:- Sumit Kumar Basu
0 Comments
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |