মাত্র ২৬ হাজার টাকা খরচ করে ৪ রাত ৫ দিন ঘুরে আসতে পারেন থাইল্যান্ড থেকে
(আমরা গিয়েছিলাম ২০১৮ তে,আমার অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের ধারনা দেওয়া,২ জন একসাথে ট্যুর করতে হবে-এটা বাংলাদেশীদের জন্য,ইন্ডিয়ানদের স্বম্ভবত ভিসা লাগেনা) ১ মাস আগে নিজ ক্রেডিট বা ফ্রি পেইড কার্ড দিয়ে বিমান টিকেট কেটে রাখলে ১২ হাজারে রিটার্ন টিকেট পেয়ে যাবেন thai lion রাত ১ঃ৩০ মিনিটে ফ্লাইট। যাবার আগে অবশ্যই, হোটেল বুকিং,বিমান রিটার্ন কনফার্ম টিকিট,পাসপোর্টে ডলার এনডোর্সমেন্ট করে নিবেন,নতুবাঃ- বাংলাদেশ /থাইল্যান্ড ২ ইমিগ্রেশনেই ঝামেলা করতে পারে। * হোটেল বুকিং Booking.com/Agora.com সহ অনেক সাইট থেকে নিজেই করে নিতে পারবেন কোন পেমেন্ট ছাড়াই। * ডলার এনডোর্সমেন্ট যেকোনো মানি এক্সচেঞ্জ থেকে করতে পারবেন। যথাসময়ে এয়ারপোর্টে চলে যাবেন,বোডিং কার্ড নিয়ে ইমিগ্রেশনের সব ফর্মালিটিজ শেষ করে ফ্লাইটের অপেক্ষা। সময় হলে নির্দিষ্ট গেট দিয়ে প্লেনে উঠে পরুন। সময় মতো প্লেন ছাড়লে থাই সময় ৫.৩০ মিনিটে আপনি ব্যাংককের ডংমেং এয়ারপোর্টে নামবেন, এখানে ইমিগ্রেশন খুবই সহজ। কাউন্টারে পাসপোর্ট দেয়া মাত্রই সিল মেরে দিবে। এরপর আপনি চলে যাবেন পাতায়া তবে আপনাকে এয়ারপোর্টে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে কারণ বাস ছাড়ে সকাল ৭টা থেকে। সকাল ৭টা থেকে মোচিট বাসস্টান্ড যাওয়ার বাস পাবেন ভাড়া ৫০ টাকা। মোচিট বাসস্টান্ড থেকে পাতায়া যাওয়ার বাস ছাড়ে। মোচিট থেকে পাতায়া বাস ভাড়া ৩২৫ টাকা সময় লাগবে ২ ঘন্টা প্রায়। থাইল্যান্ডের অপরুপ সৌন্দর্য দেখতে দেখতে চলে যাবেন পাতায়া। পাতায়া বাসস্টান্ড নেমে চলে যাবেন বিচ রোড কিংবা,সেকেন্ড রোডে ভাড়া ৫০ টাকা। বিচ রোডের /সেকেন্ড রোডে ১৫০০ টাকার মধ্যেই মুটামুটি মানসম্মত হোটেল পেয়ে যাবেন, অনাহাসে ২ জন থাকতে পারবেন। এখানে অনেক বাংগালী খাবার হোটেল পাবেন তবে থাইল্যান্ডের স্ট্রিট ফুডগুলো অনেক সস্তা এবং মজাদার।সকালের নাস্তা সহ ২ বেলা খাবার ১২০০ টাকার মধ্যেই হয়ে যাবে। সেখানে মটর সাইকেলে ভাড়ায় পাওয়া যায়,প্রতিদিনের ভাড়া ৫০০ টাকা,২ দিনের জন্য ভাড়া নিয়ে নিন। চলে যেতে পারেন ফ্লোটিং মার্কেট বা ভাসমান বাজার,টাইগার পার্ক,জমবিত বিচ সহ পুরো পাতায়া ঘুরে বেড়ান। সকালে চলে যাবেন- কোরাল আইল্যান্ডে, অস্বম্ভব সুন্দর বিচ।সেখানে লোকাল স্পিডবোটে চলে যাবেন,আসা যাওয়া ভাড়া ৩০০ টাকা, প্যাকেজে গেলে ১৫০০ টাকা লাগবে। রাতে চলে যাবেন- ওয়াকিং ষ্টেট এ। সেখানে সারারাত ডিস্কো ক্লাব ড্রিংক চলে। যারা এইসব পছন্দ করেন, তাদের জন্য পাতায়া স্বর্গ রাজ্য। সেখানে ২ রাত থেকে বিকালে চলে আসেন থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। ব্যাংককে সই ৩- নানা প্লাজার আসে পাশে প্রচুর থাকার/খাবার হোটেল পাবেন,ভাড়া পাতায়ার সমানই। ব্যাংককে মন মত ঘুরে বেড়ান।লোকাল ট্রান্সপোর্ট ব্যাবহার করলে ২ দিনে জনে ৫০০ টাকার উপরে লাগবেনা। ৫ম দিনঃ নির্দিষ্ট সময় এয়ারপোর্টে চলে যান ট্রেনে যেতে পারেন খরচ হবে ২৫০ টাকা। খরচ * হোটেল ভাড়া ৬০০০÷২=৩০০০ টাকা জনে *সব ট্রান্সপোর্ট ভাড়া-২০০০টাকা * খাবার ৪৮০০ টাকা *বিমান ভাড় ১২০০০ টাকা *ভিসা খরচ ৪২০০ টাকা ----------------------------------- মোট খরচ ২৬০০০ টাকা। ব্যাক্তিগত খরচ কেনাকাটা ক্লাবে মাস্তি,এই খরচ ভিন্ন এটা আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন অন্যদের বিদেশ ভ্রমনে উৎসাহিত করাই আমার এই পোস্টর মুল লক্ষ্য।
0 Comments
------সিঙ্গাপুর ভ্রমন অভিজ্ঞতা------ Singapore
মাত্র ৩০০০০ ত্রিশ হাজার টাকায় ৩ রাত ৪ দিন (বিমান ভাড়া,হোটেল,খাবার ও ট্রান্সপোর্ট) মার্চ ২০১৯ একসাথে ঘুরে এলাম দুই দেশ, ------সিঙ্গাপুর ও মালেয়শিয়া------ আমার ভ্রমন প্ল্যান ছিল ১৬ তারিখ ভোরে বাংলাদেশ বিমানে সিঙ্গাপুর, ১৯ তারিখ দুপুরে সিঙ্গাপুর থেকে মালেয়শিয়া। মালেয়শিয়া থাকব ১০ দিন জহুরবারু ২দিন কুয়ালালামপুর ৫দিন লাংকাউয়ি ৩দিন। ২৯ তারিখ রাতে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকা আবার বাংলাদেশ বিমানে । ট্রাভেল এজেন্ট এর নিকট থেকে ঠিকেট কাটি। ঢাকা টু সিঙ্গাপুর -- ১৩০০০ টাকা সিঙ্গাপুর টু মালেয়শিয়া --- বাই বাস মালেয়শিয়া টু ঢাকা ১২০০০ টাকা (অনেক সময় আরও কমে ও পাওয়া যায়) মোট ২৫০০০ টাকা কোন দেশ ভ্রমনের পূর্বেই মাথায় যেটা আনতে হয় তা হল ভিসা। এই দুই দেশ ভ্রমনের ক্ষেত্রে আমাদের ভিসা লাগবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশী সবুজ পাসপোর্ট ধারীদের ভিসা দিতে চায় না,আপনার প্রপাইল যদি মোটামুটি ভাল হয় ইনশাআল্লাহ ভিসা পেয়ে যাবেন ভিসার জন্যে আমার মোট খরচ হয়েছিল দুই দেশে ৯০০০ টাকা।সকল ইনভাইটেশন সহ। সিঙ্গাপুর ৪০০০ টাকা এম্বাসীর রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী) ছবি ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি সার্টিফিকেট, ভিজিটিং কার্ড ও প্যাড বাকিটা ওরাই করে নিয়েছে। মালয়েশিয়ায় ভিসা পেতে প্রায় ১১ দিন ও সিঙ্গাপুর এর ভিসা পেতে ১০ দিনের মত সময় লেগেছে। বলে রাখা ভাল মালয়েশিয়ায় স্টীকার ভিসা দিলেও সিঙ্গাপুর আপনাকে ই-ভিসা দিবে৷ এরপর আসে যাত্রার দিন। ১৬ তারিখ সকাল ৮ টা তেই ফ্লাইট ছিল সিঙ্গাপুর এর। ভোরেই এয়ারপোর্টে পৌছিয়ে যাই এবং আমার আরেক ভ্রমনসঙ্গী জনাব আতিক ফয়সল খান ভাইয়ের সাথে এয়ারপোর্টে মিলিত হই। বলে রাখা ভাল এই ট্যুরের জন্যেই অনলাইন থেকেই আমাদের পরিচয় ও সেদিন এয়ারপোর্টেই আমাদের প্রথম দেখা। বিমান পেয়েছিলাম বহরে নতুন যোগ হওয়া ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। তাই ভ্রমনটাও ছবি দেখতে দেখতে কাটিয়ে দেই। দুপুরে সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে নামি এবং কোন প্রকার প্রশ্ন ছাড়াই ইভেন ভিসা দেখা ছাড়াই ইমিগ্রেশন পার হই। বলে রাখা ভাল বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এ আন্তাজেই কিছু প্যারার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন কি করি, টাকা কই পাইসি, কোথায় ব্যবসা, এইটা কোথায় ইত্যাদি। তো দুপুরেই টার্মিনাল ১ থেকে বের হয়ে মনোরেলে করে টার্মিনাল ২ তে যাই ও ৩ দিনের জন্যে ট্রাভেল পাস কিনে নেই যা বাস, মেট্রো ও এল আর টি তে এই তিনদিনের জন্যে আনলিমিটেডভাবে ব্যাবহার করা যাবে। দাম মাত্র ৩০ ডলার। যার মধ্যে ১০ ডলার ডিপোজিট ফি, মেয়াদ শেষের পর কার্ড ফেরত দিলে টাকা দিয়ে দিবে। এম আরটি বা মেট্রো ধরে আমরা মোস্তফা সেন্টারের মেট্রো স্টেশন ফেরার পার্কে নামি। সেখানে বাসমতি রেস্টুরেন্ট এ দুপুরের খাবার খেয়ে ওইখানের এক প্রবাসী ভাইয়ের পরিচালিত রুম ভাড়া নেই। এবার ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেই। বিকেলে উঠে চিন্তা করি কই যাওয়া যায়। অনেক ভেবে চলে গেলাম মেরিনা বে তে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওখানে কাটালাম। আসলে রাতে ওখানে না থাকলে এর আসল সৌন্দর্য বোঝা সম্ভব না। এদিকে মেরিলিয়ান সংস্কারকাজ এর জন্যে বন্ধ থাকায় ওটার সামনে ছবি তুলতে পারলাম না। যদিও পরে সে দুঃখ আমার পুষে যায়। সারা বিকেল ঘুরে জার্নির দখলে আসলে অনেক টায়ার্ড হয়ে যাই এবং রাতে আবার বাসমতি রেষ্টুরেন্টে খেয়ে সেদিনের মত ভ্রমন সমাপ্ত করি।
এবার দ্বিতীয় দিন।
এদিন প্রথমে চলে যাই প্রিয় নেতা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি স্যারকে দেখতে, মাউন্ট এলিজাবেথ হসফিটালে।সেখানে উনার পি এস এর কাছে থেকে সাক্ষাতের সিডিউল নিয়ে চলে যাই ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে, এবং রাতে নাইট সাফারি দেখতে যাই। বলে রাখা ভাল কেও যদি সিঙ্গাপুর এ গিয়ে এসব যায়গায় যেতে চায় তবে কারোসেল নামক অ্যাপ নামিয়ে সেখান থেকে টিকেট কাটা ভাল। চীপে পাওয়া যায়।এই এক জায়গার টিকেট প্রাইস ৪৭ ডলার কিন্তু আমি কারোসেল ৩০ ডলারে কাটি৷ সারা দিন আমি ইউনিভার্সাল ও সান্তোসার বীচে কাটাই ও দুপুরে আবার হোটেলে ফিরে আসি। ভাল কথা - সান্তোসায় যাবার জন্যে এল আর টি তে উঠতে হয় (মনোরেল) যা ভিভো মার্ট থেকে ছাড়ে। আমরা সেই এল আর টিতে ও আমাদের পাস ব্যাবহার করে উঠেছি আমাদের বাড়তি কোন খরচ হয়নি। তবে কেও টিকেট কাটলে মেবি ৪ ডলার করে আসা যাওয়া খরচ পড়বে ( একসাথে আসা যাওয়ার টিকেট সেল হয় ৪ ডলার)। বিকেলের পর সান্তোসা থেকে এসেই খাওয়া দাওয়া করে দৌড়ের উপর চলে যায় খাতিব মেট্রো স্টেশনে এম আর টি দিয়ে৷ সেখান থেকেই সিঙ্গাপুর জু এর বাস ছাড়ে আর সিঙ্গাপুর জু এর ভিতরেই নাইট সাফারি। এখানেও বাসে আমাদের টাকা লাগে নাই কার্ড থাকার কারনে। সন্ধ্যার মধ্যেই সাফারি ওয়ার্ল্ড এ চলে যাই এবং নাইট সাফারি ও ক্রিয়েচার অফ দা নাইট উপভোগ করার পর আবার রাত ১২ টার মধ্যেই হোটেলে ফেরত আসি। তৃতীয় দিনে আসলে আমরা দুপুরের পরই ঘুরতে বের হই। সিঙ্গাপুর অনেক গরম, আমাদের দেশের চাইতেও। তাই সেদিন গরম বেশি থাকায় বিকেলে বের হই। বিকেলে বের হয়ে আমরা প্রথমে হার্বারফ্রন্ট মেট্রো স্টেশনে যাই সিঙ্গাপুর এর বাগান বলে খ্যাত গার্ডেন অফ দা বে দেখার জন্যে। এখানে ঢুকতে টাকা লাগে না। তবে উপরের ব্রীজে ও দুইটা ফ্লাউয়ার ডোমে ঢুকতে ২০ ডলার করে লাগে। জায়গাটা আসলেই দেখার মত সুন্দর ও অনেক বড়। আসার সময় দেখলাম ওরা জায়গা আরো এক্সপান্ড করছে। গার্ডেন অফ দা বে থেকে চলে গেলাম চায়নাটাউন। ওইখানে হালকা খাওয়া দাওয়া করে আমরা ইন্ডিয়ানদের এরিয়া বলে খ্যাত লিটল ইন্ডিয়াতে চলে যাই। সেখানে রাতে খেয়ে দেয়ে আমরা হোটেলে এসে পড়ি। এটা ছিল সিঙ্গাপুর এ আমাদের শেষ রাত। সকালে উঠে নাস্তা করে আমি সেদিন আমাদের এলাকার কিছু দেশী প্রবাসী ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করি। দুপুরে আমি ও আমার ভ্রমনসঙ্গী চলে যাই এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্ট হতে আমি চলে যাই মালেয়শিয়া (জহুরবারু তে,সেখানে আমাদের এলাকার অনেক প্রবাসী থাকে) আমার ভ্রমনসঙ্গী আতিক ভাই চলে যায় ইন্দোনেশিয়া বালিতে। যদিও আমরা পরে এসে আবার মালয়েশিয়া তে মিলিত হইছি। বাট সে গল্প পরে আরেক পর্বে বলব। এখানে যত যায়গায় ডলার এর কথা বলা হয়েছে সব সিঙ্গাপুর ডলার। কেও আমেরিকান ডলার বলে ভুল করবেন না। আর আমার সিঙ্গাপুর এ আসার পর থেকে খাওয়া, ঘোরাঘুরি, এন্ট্রি টিকেট, হোটেল সহ সব মিলিয়ে মাত্র ২০০ সিঙ্গাপুরি ডলার খরচ হয়েছে যা আমার কাছেই অবিশ্বাস্য লেগেছে। ৪ দিনের খরচ এটাই। জনপ্রতি মাত্র ২০০ সিঙ্গাপুরি ডলার। ২০০×৬৫=১৩০০০ টাকা প্ল্যান ছাড়া খরচ করলে হয়ত ৪০০ ডলারের উপরে লাগত,আমরা ২ জন হওয়ায়, সব কিছু শেয়ার করায় কম লেগেছে। বলে রাখা ভাল- ব্যাক্তিগত খরচ ও কেনাকাটা আলাদা। খাবার আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলা খাবার এর দাম অন্যান্য দেশ যেমন থাইল্যান্ড এর তুলনায় সিঙ্গাপুর এ অনেক কম এবং পরিমানে অনেক বেশি দেয়। তবে হোটেল ভাড়া বেশী,সব সময় চেষ্টা করবেন দুইজন একসাথে ট্রাভেল করার, তাতে অনেক খরচ কমে যাবে,হোটেলে একজন থাকলে যে ভাড়া দুইজন থাকলে ও সেইম। আমার কাছে বাসমতি রেস্টুরেন্ট ভাল লেগেছে। আপনারা ট্রাই করে দেখতে পারেন। ওখানে ফখরুদ্দিন এর কাচ্চির শাখাও পেয়েছিলাম। পরের পর্বে ইনশাআল্লাহ মালয়েশিয়া নিয়ে বলব। ******সিঙ্গাপুরের সৌন্দর্য বা তাদের কালচার নিয়ে লিখার ভাষা আমার জানা নাই,যে সেই দেশে যাবে সেই একমাত্র বুঝবে সিঙ্গাপুর কেমন****** খরচ---- বিমান ভাড়া দুই দেশে ২৫০০০÷২ = ১২৫০০ খরচ-সিঙ্গাপুরি ডলার ২০০ × ৬৫ =১৩০০০ ভিসা খরচ ------------------------------=৪০০০ মোট _-----------------------------------২৯৫০০ এটা আমার ব্যাগতিগত মতামত, ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। মুলত বিদেশ ভ্রমনে অন্যদের উৎসাহিত করাই আমার এই পোষ্টের মুল লক্ষ্য-- আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আস্তে আস্তে শেয়ার করব-বিস্তারিত জানতে আমার পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।
মাত্র-৫০২০০-টাকায় ৪ দেশের বিমান ঠিকেট। ইন্ডিয়া-শ্রীলঙ্কা - দুবাই- ইজিপ্ট
ভ্রমনঃ- ফেব্রুয়ারি ২০২০ ভাবলাম যেহেতু বাংলাদেশ থেকে টিকিটের দাম বেশি,তাহলে ইন্ডিয়া হয়ে যাব।নিজের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সবগুলো টিকেট কাটলাম। আগরতলা টু দিল্লি ---৫১০০(ইন্ডিগো) দিল্লি টু দুবাই --- ৮৬০০(শ্রীলঙ্কা ট্রানজিট-শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস) দুবাই টু ইজিপ্ট ১৩৫০০(ইজিপশিয়ান এয়ারলাইনস) ইজিপ্ট টু ঢাকা ২৩০০০(এয়ার এরাবিয়া এয়ারলাইনস) টিকেট কাটার পর পরলাম মহা চিন্তায়,প্রায় ট্রাভেল গ্রুপেই দেখি অনেকে পোস্ট করে ইন্ডিয়া থেকে নাকি বাংলাদেশিদের ফ্লাই করতে দেয় না। যেহেতু টিকেট করে ফেলেছি,ভয়ে ভয়ে চলে আসলাম আগরতলা, সেখানে ২ দিন থেকে দিল্লি। অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল,দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজারে যাব,সেখান সহ কয়েকটি দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে যথাসময়ে দিল্লি এয়ারপোর্টে চলে গেলাম, ফ্লাইট হলো শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনস। যখন বোডিং নিয়ে চেক ইন করব তখন একটি মেয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলো, যা যা ইমিগ্রেশন অফিসার করে,পরে বোডিং দিয়ে দিল,সাথে আমার এক ফ্রেন্ড ছিল,তাকে পাটিয়ে দিল,ইন্ডিয়া কাস্টমস অফিসারের কাছে, তাকে কাষ্টমস অফিসার বিভিন্ন প্রশ্ন করে ডলার চেক করে ছেড়ে দিল। ওর ট্রাভেল হিষ্ট্রি ছিল-ইন্ডিয়া,নেপাল, চায়না,কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, এর বাহিরে আমার ইন্দোনেশিয়া, মালেয়শিয়া, সিগঙ্গাপুর ও ভিয়েতনাম ছিল। পরে আসলাম ইমেগ্রেশনে,বারবার মনে পড়ছিল,ট্রাভেল গ্রুপের বিভিন্ন ফ্রেন্ডের কমেন্টের কথা, সত্যি কি ঝামেলা করবে। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের কাছে কিছুই দেখতে চায়নি,শুধু জিজ্ঞেস করছে কবে ইন্ডিয়া আসছি,কোন হোটেলে ছিলাম, তারপর সীল মেরে ছেড়ে দিল।যথাসময়ে ফ্লাইট হলো। ফ্লাইট -দিল্লি টু কলম্বো, ট্রানজিট ২৩ ঘন্টা, পরদিন বিকালে কলম্বো টু দুবাই ফ্লাইট। দেশ থেকেই শ্রীলঙ্কার ট্রানজিট ETA নিয়ে আসছি,খুব ইচ্ছে ছিল ট্রানজিট ভিসা নিয়ে শ্রীলঙ্কাটা ও সিটি ট্যুর করব। করতে ও পেরেছিলাম, কোন সমস্যা হয়নি। পরদিন বিকালে দুবাই চলে গিয়েছিলাম কোন ঝামেলা ছাড়াই।সেখানে ৭দিন থেকে মিসর চলে যাই,সেখানে ৪ দিন থেকে যথা সময়ে দেশে ফিরে আসি। আমারা যারা কম টাকায় ঘুরতে চাই,আশা করি তাদের উপকারে আসবে।
শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ শেষ করে আমরা যাত্রা করলাম মালদ্বীপ। এখানে আমরা দুটো দ্বীপে ঘুরবো। প্রথম "Ukulhas" ও দ্বিতীয় "Maafushi"।
মালদ্বীপ বা মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্র ভারত মহাসাগরের একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম মালে। দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক জোট সার্ক এর সদস্য। অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ দেশ বিশ্বের সবচেয়ে নিচু দেশ। পর্যটনের জন্য বিখ্যাত এই দেশ এক হাজার দুই শ’রও বেশি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত। আমরা শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে এসে পৌঁছলাম মালে এয়ারপোর্টে। উকুলহাসে যে ভিলাতে আমাদের বুকিং ছিল তারা আগেই জানিয়ে দিয়েছিল যে তারা কোন কাউন্টারে আমাদের জন্য অপেক্ষা করবে। এয়ারপোর্ট থেকে বেরলেই মালে বোট জেটি। ভিলার রিপ্রেজেন্টেটিভ আমাদের স্বাদর অভ্যর্থনা করে নিয়ে গেল স্পীড বোটে, যেটাতে করে আমাদের প্রায় দেড় ঘন্টা ভারত মহাসাগরের ওপর মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে করতে পৌঁছলাম Ukulhas দ্বীপে। Ukulhas তার পরিচ্ছন্নতা, ভাল রক্ষণাবেক্ষণ,বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের জন্য সুপরিচিত এবং Republic of Maldives ইতিহাসে প্রথম পদ্ধতিগতভাবে পরিচালিত দ্বীপ হিসাবে পরিচিত হয়। Ukulhas প্রতি বছর বিভিন্ন পরিস্কার এবং রোপণ প্রোগ্রাম পরিচালনা করে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র এবং জীববৈচিত্র্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সচেতনতা প্রোগ্রাম আয়োজন করে। মালদ্বীপ প্রজাতন্ত্রের পরিবেশগত ভূমিকা মডেল দ্বীপ হিসাবে স্বীকৃত হওয়ার কারণে, ২018 সালে দ্বীপের পরিবেশ রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য অসামান্য পরিষেবাগুলির জন্য Ukulhas গ্রীন লিফ পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। এই দ্বীপের আয়তন ১.০২৫কিমি * ০.২২৫কিমি এবং জনসংখ্যা বিদেশি সমেত ১০০০ এর একটু বেশি। দ্বীপের বীচ একেবারে সাদা বালিতে ঢাকা।
খুব কম ট্যুরিস্টের মুখেই শোনা যায় মালদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে উকুলহাস দ্বীপের কথা। কারণ এখানে ভারতীয় ট্যুরিস্টদের আনাগোনা খুবই নামমাত্র। আমরা এখানে যে ভিলাতে উঠেছিলাম সেখানে কর্মচারীদের মধ্যে বাংলাদেশের ছেলেদের সংখ্যাই বেশি। আমাদেরও বেশ ভালো লাগলো নিজেদের ভাষায় কথা বলতে পারায়, তবে ওদের যে আমাদের চেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটা বুঝতে পারলাম আমাদের বিদায় পর্বে ওদের চোখগুলো চিকচিক করে ওখায়। বিদেশে একটি ছোট দ্বীপে মাত্র দু'দিনের মধ্যে এত আন্তরিকতা আমরাও বুঝে উঠতে পারিনি। ওরা বহুদিন পরে নিজেদের ভাষা জানা ট্যুরিস্ট পেয়ে ভীষনভাবে খুশী হয়েছিল।
যাক ওখান থেকে আমরা এলাম বহু পরিচিত "মাফুসী" দ্বীপে। এটা অনেকটাই শহরের মত। এখানে সব দেশের লোকেরা আসে, ভারতীয় ট্যুরিস্টও অনেক। উকুলহাসের য়ত শান্ত নির্জন একটা দ্বীপ থেকে যেন এসে পড়লাম পুরীর স্বর্গদ্বারে। মাফুসী দ্বীপ মালদ্বীপের বৃহত্তম দ্বীপপুঞ্জ। এটা অবশ্যই মালদ্বীপের সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থানীয় দ্বীপ। এটি ম্যাল থেকে 27 কিলোমিটার দূরে কাফু এটল এ অবস্থিত। আকার 1270 * 265 মি। দ্বীপ নিজেই একটি elongated ফর্ম আছে। দ্বীপে 2700 মানুষ বাস। ইহা সত্যিই আশ্চর্যজনক যে কিভাবে এই ক্ষুদ্র দ্বীপে এত মানুষ বাস করতে পারে, ঠিক সেইভাবেই অন্যান্য স্থানীয় দ্বীপগুলিতেও। কিন্তু কখনই মনে হয়না যে দ্বীপগুলোয় অধিক জনসংখ্যা।
আমাদের বিদেশ ভ্রমণের পর্ব এবার শেষ করছি। শুরু করেছিলাম শ্রীলঙ্কা দিয়ে আর শেষ করছি মালদ্বীপ ঘুরে। এই প্রথম সাহস করে প্রায় ১৫ দিনের বিদেশ ভ্রমণের মানে দুটি দেশের প্রোগ্রাম করলাম তাই একটু চিন্তায় ছিলাম। কিন্তু ভীষণ সুন্দর ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে আমাদের ভ্রমণ শেষ করছি।
আজ আমাদের দ্বিতীয় ও শেষ দিন "মাফুসী" দ্বীপে। এখানে অনেক বড় ছোট হোটেল/রিসর্ট আছে। বেশ শহরের মত। প্রচুর ট্যুরিস্টদের আনাগোনা এখানে। খাওয়া দাওয়ার রেস্টুরেন্টের অনেক অপশন আছে। বেশীরভাগ হোটেল/রিসর্টে কমপ্লিমেন্টারী ব্রেকফাস্ট থাকে। এখানে USD না ভাঙ্গালেও চলে। স্পীড বোটে মালে এয়ারপোর্ট থেকে দুরত্ব প্রায় ৩০-৩৫ মিনিট। কোন সিম কার্ড নেওয়ার দরকার পড়ে না। স্পীড বোট, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট সব জায়গায় WiFi পাওয়া যায়।
কয়েকজন বন্ধুর পোষ্টিং পড়ে মনে হলো এবার কাছাকাছি দেশের বাইরে নিজেরা একটা ভ্রমণসুচী তৈরী করলে কেমন হয়। তাই আমার সকল ভ্রমণসঙ্গীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলাম শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ সফরের একটা প্রোগ্রাম করলে মন্দ হয় না।
প্রথমেই বিভিন্ন গ্রুপে সার্চ করে কয়েকটি পোষ্টিং পড়লাম এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করে একটা আইডিয়া পেলাম। প্রথমেই ফ্লাইট বুকিং সেরে ফেললাম Goibibo সাইট থেকে। আমরা স্পাইস জেটে এলাম চেন্নাই আবার ওখান থেকে ওই একই এয়ারলাইন্সে কলম্বো। শ্রীলঙ্কায় আমরা ছয় দিন থাকবো তারপর শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সে করে মালদ্বীপ যাব সেখানে উকুলহাস দ্বীপে দুই দিন আর মাফুসী দ্বীপে দুই দিন। শ্রীলঙ্কায় পরপর ছয়টি জায়গা যেমন ক্যান্ডি, নিউয়েরা এলিয়া, এলা, মিরিসা, আন এওয়াটুনা ও নেগোম্বো ছয় রাতের জন্য এবং মালদ্বীপে দুটো দ্বীপে Booking.com এর মাধ্যমে হোম ষ্টে/ গেষ্ট হাউজ/ হোটেল/ রিসর্ট বুকিং সেরে ফেললাম। আমরা পুরো শ্রীলঙ্কা ভ্রমণের জন্য Trip advisor এর মারফত একটি ১৭ আসন বিশিষ্ট গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। আমাদের প্রথম গন্তব্য স্থল “ক্যান্ডি”। প্রতিটি ছবির সাথে স্পটগুলির বর্ননা দেওয়া আছে। এরপরও যদি কারও কোন জিজ্ঞাসা থাকে নিশ্চয়ই করবেন হয়ত সবসময় সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পাবেন না কারণ সারাদিন ঘুরে যখন হোটেলে ফিরব তখন চেষ্টা করব সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে।
ক্যান্ডি:
ক্যান্ডি শ্রীলঙ্কার একটি বড় শহর। এটির চারপাশ সুন্দর পাহাড়ী ভ্যালি ঘেরা ,চা বাগান এবং বৈচিত্র্যপূর্ন রেনফরেস্টের আবাসস্থল। শহরটির হৃদয় হল সুন্দর ক্যান্ডি লেক (বোগাম্বারা লেক), যা হেঁটে বেড়ানোর জন্য জনপ্রিয়। ক্যান্ডি পবিত্র বৌদ্ধ ধর্মের জন্য বিখ্যাত। সোনালী ছাদে তৈরি মন্দির শ্রীলংকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ উপাসনালয় - বুদ্ধের একটি দাঁত। পূজার সময় কড়া প্রহরায় থাকা ঘরটি দর্শনার্থী ও ট্যুরিস্টদের জন্য খোলা হয় তবে সত্যিকারের দাঁত দেখা যায় না। যাই হোক, এটি একটি দাগোবা (স্টুপ) মতো সোনার কাসকেটে রাখা হয়। নুওয়ারা এলিয়া: Nuwera elliya শ্রীলংকা কেন্দ্রীয় প্রদেশের পাহাড়ি দেশের একটি শহর। এর নাম মানে "সমতল (টেবিল ভূমি) শহর" অথবা "আলোর শহর"। একটি সুন্দর দৃশ্যমান এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ জলবায়ু। এটি 1,868 মিটার (6,128 ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত এবং শ্রীলংকাতে চা উৎপাদনের জন্য এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান বলে মনে করা হয়। শ্রীলংকার সবচেয়ে লম্বা পর্বত পিদুরুতালগালা এই শহরকে পরিবেষ্টিত করে। Nuwera elliya শ্রীলংকার সবচেয়ে শীতল এলাকার জন্য পরিচিত।
সত্যিই নুওয়ারা এলিয়ার সৌন্দর্য ভুলতে পারবো না। তাই আজ ওই জায়গা ছাড়ার আগে আবার গেলাম সেই লেকের ধারে এবং সুন্দর লেকটি উপভোগ করার জন্য মোটর বোট রিসার্ভ করে আধঘন্টা ঘুরে নিলাম।
তারপর বাধ্য হয়ে সুন্দর এই শহর ছেড়ে রওনা দিলাম আরো একটি পাহাড়ি শহর "এলা" র উদ্যেশ্যে। পথে ছোটবেলার রামায়ণ পড়া বা প্রসিদ্ধ রামায়ণ সিরিয়াল দেখে জানা সেই "অশোক বাটিকা" দেখলাম। এই স্থানেই সীতা দেবীকে লংকার রাজা রাবন বন্দী করে রেখেছিলেন। এবার আমারা এলা শহরের দিকে এগোলাম। Ella সিংহলী ভাষায় "জল প্রপাত। এটি কলম্বোর প্রায় ২00 কিলোমিটার (120 মাইল) পূর্বে এবং সমুদ্রতল থেকে 1,041 মিটার (3,415 ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত। এলাকায় প্রচুর সমৃদ্ধ জৈব-বৈচিত্র্য রয়েছে, যা প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিদ এবং প্রাণিসম্পদ দিয়ে ঘন। এলা পাহাড়ের বন এবং চা গাছের আচ্ছাদন সহ পাহাড় দ্বারা বেষ্টিত। শহরটি তার উচ্চতার কারণে পার্শ্ববর্তী নিম্নভূমির তুলনায় শীতল জলবায়ু রয়েছে। এখানে একটি দ্রষ্টব্য স্থান হল "Nine Arches Bridge". জনপ্রিয় গুজবগুলি ইঙ্গিত দেয় যে যখন সেতু নির্মাণ শুরু হয়, ইউরোপের সাম্রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয় এবং এই সাইটের জন্য বরাদ্দ করা ইস্পাত যুদ্ধক্ষেত্রে ব্রিটেনের যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিতে পুনরায় বরাদ্দ করা হয়। ফলস্বরূপ, কাজটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যার ফলে স্থানীয়রা পাথর ইট এবং সিমেন্ট দিয়ে সেতু নির্মাণ করে, কিন্তু ইস্পাত ছাড়া।
আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগন্জ...
চাঁপাইনবাবগন্জ... আম আর আম। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা আম। রাস্তার দুই ধারে যত দূর চোখ যায়, কেবলই আমের বাগান। ইচ্ছা করলেই মাটিতে দাঁড়িয়ে, এমনকি শুয়ে-বসেও ছোঁয়া যায়। চাইলে দু-একটা পেড়ে খেতেও পারবেন। যাঁরা এই অভিজ্ঞতা নিতে চান, তাঁরা এখনই চলে যেতে পারেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের বাগানে। প্রখর এই রোদেও ছায়াঘেরা বাগানগুলোতে পাবেন স্নিগ্ধ, শান্তিময় এক পরিবেশ। দেখবেন বিস্তৃত বাগানে একের পর এক গাছ থেকে পাড়া হচ্ছে আম। ঝুড়িতে করে নিয়ে সেই আম তোলা হচ্ছে ভ্যানে। এরপর সেই ভ্যান যাচ্ছে হাটে। সেখানে সারি সারি মানুষ মণকে মণ আম বিক্রি করছেন। তবে ৪০ কেজিতে নয়, এখানে ৪৫ বা ৪৮ কেজিতে মণ ধরা হয়। কারণ, কিছু আম নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এখানকার শিবগঞ্জ উপজেলাকে বলা হয় আমের রাজধানী। রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সড়কপথে ঘণ্টা দেড়েক লাগবে। একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুরোটাই নাকি ছিল আমের বাগান। এখনো শহরের আদালতপাড়া, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং কলেজের পুরো অংশই আমবাগান। শহরটা ঘুরলে মনে হবে, আমবাগানের মধ্যেই যেন মানুষের বসতি। সদর উপজেলা ছাড়াও শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর- এই উপজেলাগুলোও আমবাগানের মধ্যে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে বের হয়ে মহানন্দা সেতু পেরিয়ে শিবগঞ্জের দিকে রওনা দিলে রাস্তার দুই পাশে চোখে পড়বে হাজার হাজার আমের বাগান। শহর থেকে শিবগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সঙ্গে গাড়ি থাকলে আধা ঘণ্টারও কম সময়ে পৌঁছে যেতে পারবেন। রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়বে আমের ভ্যান, আমের গাড়ি, মানুষের হাতে আম, মাথায় আম।
শিবগঞ্জের সেনের বাগান, মোজাফফর মিয়াদের বাগান, কানসাটের রাজার বাগান, কানসাটের পাগলা নদীর পশ্চিম পারের চৌধুরীদের বাগানসহ আরও অনেক নামকরা আমের বাগান রয়েছে। চাইলে রাস্তার পাশের যেকোনো আমবাগানে ঢুকে যেতে পারবেন।
সারা বছর আমবাগানগুলোতে ব্যস্ততা থাকলেও এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই—এই সময়টা আমবাগানে ঘোরার জন্য ভালো সময়। কারণ, চাইলে এই সময়ে আম খেতেও পারবেন। শিবগঞ্জে এসে আপনি যেকোনো বাগানে ঘুরতে পারবেন। বিশ্রাম নিতে পারবেন আমবাগানের মধ্যে থাকা ছোট্ট ঘরে। আমবাগান তো ঘুরলেন, আমের হাটে যাবেন না? শিবগঞ্জ ঘুরতে এসে কানসাট না যাওয়াটা বিশাল বোকামি। কানসাটেই সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমের হাট। এখানে যত দূর চোখ যায়, দেখবেন আমের বেচাকেনা। ফজলি, ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, বোম্বাই, লক্ষ্মণভোগ, ফনিয়া, হিমসাগরসহ শত শত প্রজাতির আম। কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই দেখবেন হাটে গাড়ি ঢুকছে, বের হচ্ছে, লোকজন আসছে-যাচ্ছে, মনে হবে এ যেন আমের স্বর্গ। দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে হাটের পাশের ছোট দোকানগুলোতে বসে খেতে পারবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত কালাই রুটি। এই হাট থেকে যত খুশি আম কিনতে পারবেন। শিবগঞ্জ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই সোনামসজিদ স্থলবন্দর। চাইলে সেখানেও একবার ঘুরে আসতে পারেন।
বয়স বড় কম হল না। আমার জীবনে জড়িয়ে থাকা নানা স্মৃতি, দর্শন, চিন্তা আমাকে পেছনে টানে । আপনাদের বিচারে তাদের কী মূল্যায়ন হবে তা জানি না। জীবনের প্রতি, পুরনো সবকিছুর প্রতি আমার দুর্মর ভালোবাসাই বোধহয় আমাকে ঘর থেকে বারবার বাইরে বার করে দেয় ! পুরস্কার বা তিরস্কার তাই বাহুল্য মাত্র।
শেকড়ের টানে ঘুরে এলুম বাংলাদেশ 12রাত 13 দিন ! গত 19 সেপ্টম্বর আমরা 20 জন সিনিয়র সিটিজেন কলকাতা থেকে গাড়ী নিয়ে পৌঁছে গেলাম পেট্রাপোল ! সকাল 10টায় ! ওখান থেকে বেনাপোল হেঁটে এসে তিনটে গাড়ী নিলাম ! Toyota Japanese 10seater AC গাড়ী ! প্রথমে যশোরে ! ওখানে মাইকেল মধুসুদন এর বাড়ী ও মিউজিয়াম ! কপোতাক্ষ নদীর তীরে ! তার পরের দিন যশোর থেকে গড়াই নদীর ব্রিজ পেরিয়ে ফরিদপুর ..রাজাবাড়ী জিলা দিয়ে গোয়ালন্দ ঘাটে আসলাম ! তারপর ফেরীঘাটে গাড়ী শুদ্ধ পদ্মা নদী পার হয়ে এলাম পাটুরিয়া ঘাট ঢাকার দিকে ! ফেরী ঘাটে পদ্মার ইলিশ খেলাম ! ওখান থেকে গেলাম মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকা city ! দেখলাম রমনা কালীবাড়ী ; ঢাকেস্মরি দুর্গা ; মুজিবরের বাড়ী / মিউজিয়াম ; 21শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন শহীদ স্মৃতি ; বাংলার স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি . দেখলাম নজরুল সমাধি ও national মিউজিয়াম ! ঢাকায় দুই দিন থাকার পর রওনা দিলাম নারায়ণগঞ্জ হয়ে মেঘনা নদী cross করে মুন্সীগঞ্জ হয়ে গোমতী নদী পেরিয়ে এলাম কুমিল্লা ! এখানে দেখলাম ময়নামতি -শালবন বিহারে খননে প্রাপ্ত আনু 8ঠ 12ঠ century - ফোস্সীল wood; বেলে পাথরের তারা মূর্তি , most impressive archaeological site শালবন বিহারি , ময়নামতি মিউজিয়াম ; খনন কার্য যেখানে Buddhism এর প্রচুর নিদর্শন পাওয়া যায় ! তারপর চট্টগ্রাম হয়ে কস্কবাজার ! তারপর গেলাম বন্দরবন ও রাঙ্গামাটি ;হিমচড়ি সমুদ্র সৈকত ; 100 ফুট শায়িত বুদ্ধ ; রাংউ রংকুট বোনাআশ্রম যেখানে সম্রাট অশোক এবং হিউনসাং 238 খৃস্টাব্দে এসেছিলেন আর বপন করেছিলেন একটা বট গাছ যার বয়স এখন 1400 বছর ! বিশাল বট গাছ দেখলাম ! কস্কবাজার তিনদিন থেকে রওনা দিলাম চট্টগ্রাম ! দেখলাম .আদিনাথ মন্দির শিব ও অস্ট্ভুজা সাদা দুর্গা মৈনাক পর্বত এর উপর! মহেশখালী উপজেলায় ! সেখানে ভোগ খেলাম দেখলাম রামকৃষ্ণ আশ্রম ; তারপর চিত্তেস্বর কালী মন্দির ! রামঠাকুর আশ্রম ! দেখলাম পতেঙ্গা sea বিচ !
তারপর ..
রাঙ্গামাটি in.রাঙ্গামাটি জিলা ! কাপ্তাই লেক নৌকো ভ্রমণ করলাম দেখলাম চাকমা ভিলেজ ! প্রায় 4 ঘন্টা ভ্রমণ নৌকোয় ! চট্টগ্রাম এ তিনদিন থেকে রওনা দিলাম . চট্টগাম থেকে ঢাকা ভায়া কুমিল্লা 130 km ; গোমতী নদীর সেতু ; মুন্সীগঞ্জ ; নারায়ণগঞ্জ মেঘনা সেতু হয়ে এলাম বারুদী ! লোকনাথ বাবা আশ্রম ! সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ জিলা ! সেখানে বাবার ভোগ খেলাম ! জায়গাটা দারুণ মনোরম ! তারপর দেখলাম জ্যোতিবসুর বাড়ী ! ঢাকা থেকে আবার আগের মতো গোয়ালন্দ ফেরী পার হয়ে রাজবাড়ী হয়ে এলাম কুস্ঠিয়া তে ! সেখান থেকে শিয়ালদহ কবির কুঠিবাড়ি ! কবির নানা ব্যবহার করা জিনিস ; বকুল বন ; নানান দুস্প্রাপ্য ছবি ! বকুল তলায় গান শুনলাম ! কবির ব্যবহার করো হাউসবোট; কুয়ো ইত্যাদী ! তারপর গেলাম লালন ফকিরের সমাধি আর আখড়া ! জায়গাটা সবাইকে আকর্ষণ করবে ! সেখানে বাউল গান শুনলাম ! তারপর সেখান থেকে আবার যশোর এ এলাম ! সেখান থেকে গাড়ী করে বেনাপোল ! তারপর আর কী ? সফর শেষে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পুরোনো শিকড় স্মৃতিগুলো ছিঁড়ে ফিরে এলাম কল্লোলিনী কলকাতায় ! বাংলাদেশে গ্রামীণ রাস্তা খুবই খারাপ ! ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া বাকী জায়গা গুলো সবুজের রমরমা ! মাঠে মাঠে ধান আর কাশফুল ; টিনের চাল ; আর নদী ! শহরের আভিজাত্য ও আধুনিকতা চোখে পড়ল না ! জানি না এটা আর্শীবাদ না অভিশাপ ? নমস্কার ! যদিও দেশে এখন রাত। এখানে দিন। World Photography Day 'র কিছু ক্যাপচার। ( ক্যামেরা ছিল,Canon 1300 D)। ইউ,এস,এ, ছাড়া ও ইউ,কে,ইউরোপ দেখা র সৌভাগ্য হয়েছিল। ছেলের কর্মস্থানে গিয়ে । Post By:- Sandhya Dey
লাসায় চারদিন জামাল ভড় লাসাভ্রমনের শুরুতেই বিপত্তি । কোলকাতা থেকে ইস্টার্ন চায়নার বিমান প্রায় এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ায় কুনমিঙে পঞ্চাশ মিনিট পরে বিমান পৌঁছানয় কুনমিঙ থেকে লাসার সংযোগকারী বিমান কুনমিঙ ছেড়ে চলে । কুনমিঙে আমাদের দো-ভাষী লিউ জিঙ ইস্টার্ন চায়নার কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে বিকেলের উড়ানে আমাদের বাইশজনের ব্যবস্থা করে দেয় । ফলে অহেতুক ছঘণ্টা কুনমিঙে অলসভাবে সময়কাটানো ছাড়া গত্যন্তর ছিল না । স্থানীয় সময় বিকেল সাড়েচারটায় কুনমিঙে বিমানে চড়ে আড়াই ঘণ্টার উড়ানে লাসায় যখন নামলাম তখন চীনের ঘড়িতে ছটা । রোদ-ঝলমলে লাসার আকাশ তখনও । বিমানেই ঘোষণা করে দিয়েছিল বাইরের তাপমাত্রা আঠার । লাসার দো-ভাষী তথা গাইড সোনম ও তেনজিং বিমানবন্দরের লাউঞ্জে অপেক্ষা করছিল । তিন-তারকা যুক্ত হোটেল লাসা কিচেনের অদূরে গাড়ি থামিয়ে আমাদের যার-যার ঘরে তুলে দেওয়ার আগেই তেনজিং বলে দিয়েছিল রাতে তাপমাত্রা এক বা দুইয়ে নামবে । ওদেশে আবহাওয়া দপ্তরের আগামবার্তা যা বলে তাই যে হয় সেটা ওদেশে তেরদিন অবস্থানকালে মিলে যেতে দেখেছিলাম । লাসায় দেরিতে পৌঁছানোর ফলে আবহাওয়ার সাথে খাপখাওয়ার সময় আমাদের কমে গেল । পৃথিবীর অন্যতম উঁচু শহর লাসায় শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত কোন অসুবিধায় পড়ব না তো --এরকম একটা ভয় অনেকের মনে কাজ করছিল । আমাদের লাদাক ভ্রমনকালে আমার স্ত্রী এরকম একটা অসুবিধায় পড়েছিল । পৃথিবীর উচ্চতম সড়ক খার্দুঙলায় (১৮৩৬০ ফুট) আমার ভ্রমনসাথী শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত কষ্টে পড়লে সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছিল । ওখানে ডায়ামক্স ট্যাবলেট দিয়েছিল । ফলে লাসায় যাওয়ার একদিন আগে থেকেই ঐ ট্যাবলেট খেতে শুরু করায় লাসায় নেমে কোন অসুবিধায় পড়েনি । আমাদের দলের উনাশি বছরের ভৌমিকবাবু প্রথমদিকে একটু অসুবিধায় পড়লেও ওষুধে পরে সামলে নিয়েছিলেন । তবে অশোকবাবুকে দেখলাম একটু কাহিল অবস্থায় । মুখে যদিও বলছিলেন ঠিক আছেন কিন্তু মন্থরগমন ও ঘনঘন বিশ্রামে সেটা বোঝা যাচ্ছিল । লাসা শব্দের অর্থ ভগবানের দেশ । অবশ্য তিব্বতীয় লিপিতে লাসাকে রা-সা বলা আছে । রা-সা মানে অজা-অবিদের স্থান । অর্থাৎ ভেড়াছাগলদের চারণভূমি । চতুর্দিকে পর্বতবেষ্টিত , মধ্যে সমতলভূমি --অজা-অবিদের উপযুক্ত চারণভূমি বটে । দেখলে মনে হবে প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত । লাসানদীর দক্ষিণতীরে শহরটি ছড়িয়ে আছে । পৃথিবীর ছাদ নামে পরিচিত পামির গ্রন্থিমালায় অবস্থিত । তিনহাজার ছশ পঞ্চাশ মিটার বা বারহাজার ফুট উচ্চতার শহর লাসা পৃথিবীর ছাদে অবস্থিত । তিব্বতের সবচেয়ে জনবহুল শহর শিনিঙয়ের পর এই লাসাতেই জনসংখ্যা বেশি । লাসায় গাছপালা খুবই কম । বর্তমানে যেসব শ্যামলিমার দেখা মেলে তা বিগত ত্রিশচল্লিশ বছরে সৃজিত । পরিকল্পিত শহর । প্রশস্ত সড়ক । সড়কের পাশে পুষ্পতরুবৃক্ষ । মনে হবে পুষ্পমেলা বসেছে । নয়নাভিরাম দৃশ্যাবলী । লাসায় আমাদের প্রথম দ্রষ্টব্য ছিল পোটালা প্রাসাদ । সপ্তম শতকে নির্মিত এই প্রাসাদের নির্মানশৈলী এক বিস্ময় । একে তো লাসা উচ্চমালভূমিতে অবস্থিত তার উপর আবার এক উঁচু পাহাড়ের উপর দুর্গসম প্রাসাদটি অবস্থান । ফলে প্রাসাদের শীর্ষদেশ অবধি আরোহন এক দুরূহ কষ্টসাধ্য ব্যাপার । মনোবল ও হাঁটুর জোর দুটোরই দরকার । কথিত আছে তিব্বতীয় প্রাচীন রাজা সঙৎসেন গিয়ালপোর একাধিক স্ত্রীর মধ্যে দুজন ছিলেন নেপালী । সেই তাঙ বংশীয় দুই নেপালী স্ত্রীর জন্য রাজা এই প্রাসাদ নির্মান করেন । পরবর্তীকালে পঞ্চম দালাই লামার সময়ে এই দুর্গটি সংস্কৃত হয় । সংস্কারে সময় লেগেছিল তিন বছর । সপ্তম দালাই লামার আমল সতেরশ পঞ্চান্ন থেকে এখানেই ছিল শীতকালীন প্রাসাদ । চতুর্দশ দালাই লামা তেনজিঙ গিয়াসতো তিব্বত ছেড়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন ১৯৫৯ সালে । চীন তিব্বত ১৯৫০ সালে টিবেট অটোনমাস রিজিয়ন গঠন করে কিন্তু ১৯৫৯এ তিব্বতীরা আন্দোলন শুরু করলে দালাই লামা ভারতে চলে আসেন । কী নেই এই পোটালা প্রাসাদে ? বৌদ্ধমন্দির , রাজপ্রাসাদ , বহুজনের আবাসস্থল ও প্রশাসনিক করণ --সব মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক কক্ষ । সপ্তদশ শতক থেকে প্রত্যেক দালাই লামার কাছে এটাই তিব্বতের জ্ঞহোয়াইট হাউসঞ্চ । এটাই রাজনৈতিক ভবন । এখানে রক্ষিত আছে তিব্বতীয় অসংখ্য দুষপ্রাপ্য অমূল্য সম্পদ ।আর আছে এখানে প্রয়াত দালাই লামাদের সমাধি । তিব্বতের দ্বার বহির্বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার পর পর্যটকরসিকরা যে-হারে এখানে ভ্রমন করেছেন চীনের অন্যত্রে তেমন একটা করেননি । এই প্রাসাদের চতুর্দিকের পরিধিতে ধার্মিক বৌদ্ধরা শুয়ে পড়ে গণ্ডি কাটে । প্রাসাদকক্ষের অভ্যন্তরে ছবিতোলায় নিষেধ থাকলেও বাইরে কোন মানা নেই । প্রাসাদের সর্বোচ্চ স্থানে উঠলে লাসা শহরের সম্পূর্ন দৃশ্য অবলোকন করা যায় । পোটালা প্যালেসের এক কিলোমিটার পশ্চিমে নরবুঙলা সামার প্যালেস আপাতত সংস্কারের জন্য বন্ধ আছে বলে আমাদের দেখা হয়নি । বর্তমানে এখানে একটা মিনি চিড়িয়াখানা আছে । এছাড়া লাসা মিউজিয়াম অন্যতম দর্শনীয় । এই মিউজিয়ামে ত্রিপিটক থেকে শুরু করে বিভিন্ন বৌদ্ধলিপি , তিব্বতীয় তৈজসপত্র ও প্রাচীন অস্ত্রশস্ত্র ছাড়াও বহু মূল্যবান জিনিস সংরক্ষিত আছে । পরের দিন আমরা গেলাম লাসার আর এক দর্শনীয় স্থান জোখাঙ মন্দির দেখতে । বিশাল চত্বর জুড়ে এই মন্দির । বৌদ্ধদের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান । বার্খোর স্কয়ারের মুখ করে এই মন্দিরটি অবস্থিত । এই পবিত্র মন্দিরটিও তেরশ বছরের পুরানো । চারতলাবিশিষ্ট এই মন্দিরটিতে শাক্যমনি বুদ্ধের মূর্তি আছে ও এটি উপাসিত হয় । বৌদ্ধরা এই মন্দিরের চারপাশে ঘড়ির কাঁটার মতো প্রদক্ষিণ করে । এই প্রদক্ষিণ করাকে জ্ঞকোরাঞ্চ বলা হয় । মন্দিরের বাইরে বার্খোর স্ট্রীটে বিশাল বাজার । সেই বাজারে পসরা সাজিয়ে বসে আছে তিব্বতীরা যাদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলা । কী নেই সেই বাজারে ? তিব্বতীয় হস্তশিল্প থেকে সমগ্র চীন তথা বহির্বিশ্বের সব কিছুই পাওয়া যায় । তিব্বতীয় খাবার পরখ করার পক্ষে এটা খুবই উৎকৃষ্ট স্থান । সবসময় এই বাজার গমগম করছে লোকের ভিড়ে । লাসায় একদিন গাইডছাড়া যে প্রবল ভাষাসমস্যায় পড়েছিলাম সেটা না বলে পারছিনে । একদিন বৈকালিক প্রার্থনা সেরে লাসার প্রধান মসজিদ থেকে বেরিয়ে দেখি একদল লোক চা খাচ্ছে । কিন্তু চায়ের দোকানটা যে কোঠায় তা ঠাহরে এলো না । তাই পরিষ্কার ধীর উচ্চারনে ইংরাজিতে জিজ্ঞাসা করলাম কোথায় চা পেতে পারি । বোঝা তো দূরের কথা আমি যেন ভিন গ্রহের ভিনভাষায় ওদের সাথে কথা বলছি এমন ভাবে তাকাতে লাগলো । চা-চিনি-চামচ চীনা শব্দ জানা ছিল বলে জ্ঞচাঞ্চ জ্ঞচায়েঞ্চ জ্ঞচিয়াঞ্চ সব বলেও যখন কোন কাজ হলো না তখন কল্পিত চায়ের কাপ হাতে ধরে ইশারায় চা-পান করার অভিনয় করতে লাগলাম । দেখলাম এতেই কাজ হলো । একজন ছুটে গিয়ে বড় এক গ্লাসে চা এনে হাতে ধরিয়ে দিল । মুখে দিলাম । দুধ-চিনি ছাড়া মাখন মিশ্রিত গ্রিনটি । সম্পূর্ন ভিন্নস্বাদের । দাম পরিশোধ করতে যেই একটা দশ ইউয়ানের নোট হাতে দিতে গেলাম অমনি দেখি আমার হাতটা ধরে আমার পকেটেই ঢুকিয়ে দিল । আমার লাসা ভ্রমনের অন্যতম কারন স্কাইট্রেন চড়া । বিশ্বের অন্য কয়েকটি দেশে স্কাইট্রেন থাকলেও লাসা থেকে শিয়ান পর্যন্ত এই ট্রেনে চড়ার আনন্দই আলাদা । আমাদের গন্তব্যও তাই । আগে থেকেই জানতাম তেত্রিশ ঘন্টা এই স্কাইট্রেনে চড়ে আমরা টেরাকোটার শহর শিয়ান যাব । লাসা ট্রেনস্টেশানে যথাসময়ের পূর্বেই পৌঁছলাম । তেনজিংনাম্নী মহিলা গাইড আগেই বলে দিয়েছিল এই ট্রেনে লটবহর থেকে যাত্রীদের সম্পূর্ন পরীক্ষা করে দেখা হয় কোন অনিষ্টকর বস্তু সঙ্গে আছে কি না । আমাদের বাইশজনের দলের লোকের যাতে দেরি না হয় সেজন্য গাইড সোনম আগে থেকেই ব্যবস্থা করে রেখেছিল । ফলে কোন বেগ পেতে হয়নি । নির্ধারিত সময়েই ট্রেন ছাড়লো । তেত্রিশঘন্টা এই ট্রেনে থাকতে হবে আমাদের । একটা অদম্য আগ্রহ ছিল । ট্রেনে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয় । প্রত্যেক কুপে ও করিডোরে অক্সিজেন নির্গমনের ব্যবস্থা আছে । কোন যাত্রী অক্সিজেনের ঘাটতি অনুভব করলে ওখানে দাঁড়ালে অতিরিক্ত অক্সিজেন পাবে । ঘুমকে বোতলবন্দি করে রেখে বাইরে তাকিয়ে থাকলাম । একসময় এলো নাগচু স্টেশান । প্লাটফর্মেই লেখা আছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নাগচুর উচ্চতা । চৌদ্দহাজার ছশ উনচল্লিশ ফুট ।আগ্রহ ছিল কখন আসবে তাঙগুলা পাস । ষোলহাজার ছশ চল্লিশ ফুট উচ্চতায় এই পাসের উপর দিয়ে ট্রেন যাবে । একটু নেমেই ঐ নামে একটা স্টেশানও আছে । পৃথিবীর সর্বোচ্চ রেলস্টেশান । আগে আমরা গর্ব করতাম ঘুম রেলস্টেশান নিয়ে । সেই গর্বও আমাদের চূর্ণ । এর পরের আকর্ষণ ছিল ফেঙহুয়োশান টানেল । ষোলহাজার তিরানব্বই ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই টানেলের দৈর্ঘ চারহাজার নশ পাঁচ মিটার । পৃথিবীর সর্বোচ্চে ও দীর্ঘতম টানেল । যে-সব স্টেশানে ট্রেন একটু বেশিক্ষণ থামে সেখানে নামছিলাম । ঝাঁচকচকে প্লাটফর্ম । শেষরাতের বোধহয় একটু তন্দ্রা এসেছিল । অধ্যাপক নন্দীবাবুর ডাকে ধড়মড় করে উঠে পড়লাম । বাইরে তাকিয়ে দেখি রাক্ষসতাল হ্র্রদ । এই লেকের পাশ দিয়েই মানস সরোবর যাওয়ার পথ । রেললাইনের অদূরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এই লেক । এমন নৈসর্গিক ও নয়নাভিরাম লেক আগে কখনো দেখিনি । চোখফেরানো দায় । পলক পড়তে চায়না । হিন্দুপুরানে কথিত মানস সরোবরের সাথে এই রাক্ষসতাল লেকের সংযোগ ঘটিয়েছে গঙ্গা ছু নামে একটি নদী । পুরাকালের ঋষিরা এই লেকে নির্মলজল সরবরাহের জন্য এই নদীর সৃষ্টি করেন । অবশ্য বৌদ্ধশাস্ত্রানুযায়ী ভিন্ন কিংবদন্তী । মানস সরোবর সূর্যের আকৃতিবিশিষ্ট আর রাক্ষসতাল অর্ধাচন্দ্রাকার আকৃতিবিশিষ্ট । যা হোক শেষ অবধি এই নৈসর্গিক দৃশ্যাবলী উপভোগ করতে করতে কখন যে টেরাকোটার শহর শিয়ান পৌঁছলাম তা খেয়ালই করিনি । Post By:- Jamal Bhar
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |