------সিঙ্গাপুর ভ্রমন অভিজ্ঞতা------ Singapore
মাত্র ৩০০০০ ত্রিশ হাজার টাকায় ৩ রাত ৪ দিন (বিমান ভাড়া,হোটেল,খাবার ও ট্রান্সপোর্ট) মার্চ ২০১৯ একসাথে ঘুরে এলাম দুই দেশ, ------সিঙ্গাপুর ও মালেয়শিয়া------ আমার ভ্রমন প্ল্যান ছিল ১৬ তারিখ ভোরে বাংলাদেশ বিমানে সিঙ্গাপুর, ১৯ তারিখ দুপুরে সিঙ্গাপুর থেকে মালেয়শিয়া। মালেয়শিয়া থাকব ১০ দিন জহুরবারু ২দিন কুয়ালালামপুর ৫দিন লাংকাউয়ি ৩দিন। ২৯ তারিখ রাতে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকা আবার বাংলাদেশ বিমানে । ট্রাভেল এজেন্ট এর নিকট থেকে ঠিকেট কাটি। ঢাকা টু সিঙ্গাপুর -- ১৩০০০ টাকা সিঙ্গাপুর টু মালেয়শিয়া --- বাই বাস মালেয়শিয়া টু ঢাকা ১২০০০ টাকা (অনেক সময় আরও কমে ও পাওয়া যায়) মোট ২৫০০০ টাকা কোন দেশ ভ্রমনের পূর্বেই মাথায় যেটা আনতে হয় তা হল ভিসা। এই দুই দেশ ভ্রমনের ক্ষেত্রে আমাদের ভিসা লাগবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশী সবুজ পাসপোর্ট ধারীদের ভিসা দিতে চায় না,আপনার প্রপাইল যদি মোটামুটি ভাল হয় ইনশাআল্লাহ ভিসা পেয়ে যাবেন ভিসার জন্যে আমার মোট খরচ হয়েছিল দুই দেশে ৯০০০ টাকা।সকল ইনভাইটেশন সহ। সিঙ্গাপুর ৪০০০ টাকা এম্বাসীর রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী) ছবি ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, সলভেন্সি সার্টিফিকেট, ভিজিটিং কার্ড ও প্যাড বাকিটা ওরাই করে নিয়েছে। মালয়েশিয়ায় ভিসা পেতে প্রায় ১১ দিন ও সিঙ্গাপুর এর ভিসা পেতে ১০ দিনের মত সময় লেগেছে। বলে রাখা ভাল মালয়েশিয়ায় স্টীকার ভিসা দিলেও সিঙ্গাপুর আপনাকে ই-ভিসা দিবে৷ এরপর আসে যাত্রার দিন। ১৬ তারিখ সকাল ৮ টা তেই ফ্লাইট ছিল সিঙ্গাপুর এর। ভোরেই এয়ারপোর্টে পৌছিয়ে যাই এবং আমার আরেক ভ্রমনসঙ্গী জনাব আতিক ফয়সল খান ভাইয়ের সাথে এয়ারপোর্টে মিলিত হই। বলে রাখা ভাল এই ট্যুরের জন্যেই অনলাইন থেকেই আমাদের পরিচয় ও সেদিন এয়ারপোর্টেই আমাদের প্রথম দেখা। বিমান পেয়েছিলাম বহরে নতুন যোগ হওয়া ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। তাই ভ্রমনটাও ছবি দেখতে দেখতে কাটিয়ে দেই। দুপুরে সিঙ্গাপুর এয়ারপোর্টে নামি এবং কোন প্রকার প্রশ্ন ছাড়াই ইভেন ভিসা দেখা ছাড়াই ইমিগ্রেশন পার হই। বলে রাখা ভাল বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এ আন্তাজেই কিছু প্যারার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন কি করি, টাকা কই পাইসি, কোথায় ব্যবসা, এইটা কোথায় ইত্যাদি। তো দুপুরেই টার্মিনাল ১ থেকে বের হয়ে মনোরেলে করে টার্মিনাল ২ তে যাই ও ৩ দিনের জন্যে ট্রাভেল পাস কিনে নেই যা বাস, মেট্রো ও এল আর টি তে এই তিনদিনের জন্যে আনলিমিটেডভাবে ব্যাবহার করা যাবে। দাম মাত্র ৩০ ডলার। যার মধ্যে ১০ ডলার ডিপোজিট ফি, মেয়াদ শেষের পর কার্ড ফেরত দিলে টাকা দিয়ে দিবে। এম আরটি বা মেট্রো ধরে আমরা মোস্তফা সেন্টারের মেট্রো স্টেশন ফেরার পার্কে নামি। সেখানে বাসমতি রেস্টুরেন্ট এ দুপুরের খাবার খেয়ে ওইখানের এক প্রবাসী ভাইয়ের পরিচালিত রুম ভাড়া নেই। এবার ফ্রেশ হয়ে ঘুম দেই। বিকেলে উঠে চিন্তা করি কই যাওয়া যায়। অনেক ভেবে চলে গেলাম মেরিনা বে তে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওখানে কাটালাম। আসলে রাতে ওখানে না থাকলে এর আসল সৌন্দর্য বোঝা সম্ভব না। এদিকে মেরিলিয়ান সংস্কারকাজ এর জন্যে বন্ধ থাকায় ওটার সামনে ছবি তুলতে পারলাম না। যদিও পরে সে দুঃখ আমার পুষে যায়। সারা বিকেল ঘুরে জার্নির দখলে আসলে অনেক টায়ার্ড হয়ে যাই এবং রাতে আবার বাসমতি রেষ্টুরেন্টে খেয়ে সেদিনের মত ভ্রমন সমাপ্ত করি।
এবার দ্বিতীয় দিন।
এদিন প্রথমে চলে যাই প্রিয় নেতা আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী জনাব ওবায়দুল কাদের এমপি স্যারকে দেখতে, মাউন্ট এলিজাবেথ হসফিটালে।সেখানে উনার পি এস এর কাছে থেকে সাক্ষাতের সিডিউল নিয়ে চলে যাই ইউনিভার্সাল স্টুডিওতে, এবং রাতে নাইট সাফারি দেখতে যাই। বলে রাখা ভাল কেও যদি সিঙ্গাপুর এ গিয়ে এসব যায়গায় যেতে চায় তবে কারোসেল নামক অ্যাপ নামিয়ে সেখান থেকে টিকেট কাটা ভাল। চীপে পাওয়া যায়।এই এক জায়গার টিকেট প্রাইস ৪৭ ডলার কিন্তু আমি কারোসেল ৩০ ডলারে কাটি৷ সারা দিন আমি ইউনিভার্সাল ও সান্তোসার বীচে কাটাই ও দুপুরে আবার হোটেলে ফিরে আসি। ভাল কথা - সান্তোসায় যাবার জন্যে এল আর টি তে উঠতে হয় (মনোরেল) যা ভিভো মার্ট থেকে ছাড়ে। আমরা সেই এল আর টিতে ও আমাদের পাস ব্যাবহার করে উঠেছি আমাদের বাড়তি কোন খরচ হয়নি। তবে কেও টিকেট কাটলে মেবি ৪ ডলার করে আসা যাওয়া খরচ পড়বে ( একসাথে আসা যাওয়ার টিকেট সেল হয় ৪ ডলার)। বিকেলের পর সান্তোসা থেকে এসেই খাওয়া দাওয়া করে দৌড়ের উপর চলে যায় খাতিব মেট্রো স্টেশনে এম আর টি দিয়ে৷ সেখান থেকেই সিঙ্গাপুর জু এর বাস ছাড়ে আর সিঙ্গাপুর জু এর ভিতরেই নাইট সাফারি। এখানেও বাসে আমাদের টাকা লাগে নাই কার্ড থাকার কারনে। সন্ধ্যার মধ্যেই সাফারি ওয়ার্ল্ড এ চলে যাই এবং নাইট সাফারি ও ক্রিয়েচার অফ দা নাইট উপভোগ করার পর আবার রাত ১২ টার মধ্যেই হোটেলে ফেরত আসি। তৃতীয় দিনে আসলে আমরা দুপুরের পরই ঘুরতে বের হই। সিঙ্গাপুর অনেক গরম, আমাদের দেশের চাইতেও। তাই সেদিন গরম বেশি থাকায় বিকেলে বের হই। বিকেলে বের হয়ে আমরা প্রথমে হার্বারফ্রন্ট মেট্রো স্টেশনে যাই সিঙ্গাপুর এর বাগান বলে খ্যাত গার্ডেন অফ দা বে দেখার জন্যে। এখানে ঢুকতে টাকা লাগে না। তবে উপরের ব্রীজে ও দুইটা ফ্লাউয়ার ডোমে ঢুকতে ২০ ডলার করে লাগে। জায়গাটা আসলেই দেখার মত সুন্দর ও অনেক বড়। আসার সময় দেখলাম ওরা জায়গা আরো এক্সপান্ড করছে। গার্ডেন অফ দা বে থেকে চলে গেলাম চায়নাটাউন। ওইখানে হালকা খাওয়া দাওয়া করে আমরা ইন্ডিয়ানদের এরিয়া বলে খ্যাত লিটল ইন্ডিয়াতে চলে যাই। সেখানে রাতে খেয়ে দেয়ে আমরা হোটেলে এসে পড়ি। এটা ছিল সিঙ্গাপুর এ আমাদের শেষ রাত। সকালে উঠে নাস্তা করে আমি সেদিন আমাদের এলাকার কিছু দেশী প্রবাসী ভাইদের সাথে সাক্ষাৎ করি। দুপুরে আমি ও আমার ভ্রমনসঙ্গী চলে যাই এয়ারপোর্টে। এয়ারপোর্ট হতে আমি চলে যাই মালেয়শিয়া (জহুরবারু তে,সেখানে আমাদের এলাকার অনেক প্রবাসী থাকে) আমার ভ্রমনসঙ্গী আতিক ভাই চলে যায় ইন্দোনেশিয়া বালিতে। যদিও আমরা পরে এসে আবার মালয়েশিয়া তে মিলিত হইছি। বাট সে গল্প পরে আরেক পর্বে বলব। এখানে যত যায়গায় ডলার এর কথা বলা হয়েছে সব সিঙ্গাপুর ডলার। কেও আমেরিকান ডলার বলে ভুল করবেন না। আর আমার সিঙ্গাপুর এ আসার পর থেকে খাওয়া, ঘোরাঘুরি, এন্ট্রি টিকেট, হোটেল সহ সব মিলিয়ে মাত্র ২০০ সিঙ্গাপুরি ডলার খরচ হয়েছে যা আমার কাছেই অবিশ্বাস্য লেগেছে। ৪ দিনের খরচ এটাই। জনপ্রতি মাত্র ২০০ সিঙ্গাপুরি ডলার। ২০০×৬৫=১৩০০০ টাকা প্ল্যান ছাড়া খরচ করলে হয়ত ৪০০ ডলারের উপরে লাগত,আমরা ২ জন হওয়ায়, সব কিছু শেয়ার করায় কম লেগেছে। বলে রাখা ভাল- ব্যাক্তিগত খরচ ও কেনাকাটা আলাদা। খাবার আমার কাছে মনে হয়েছে বাংলা খাবার এর দাম অন্যান্য দেশ যেমন থাইল্যান্ড এর তুলনায় সিঙ্গাপুর এ অনেক কম এবং পরিমানে অনেক বেশি দেয়। তবে হোটেল ভাড়া বেশী,সব সময় চেষ্টা করবেন দুইজন একসাথে ট্রাভেল করার, তাতে অনেক খরচ কমে যাবে,হোটেলে একজন থাকলে যে ভাড়া দুইজন থাকলে ও সেইম। আমার কাছে বাসমতি রেস্টুরেন্ট ভাল লেগেছে। আপনারা ট্রাই করে দেখতে পারেন। ওখানে ফখরুদ্দিন এর কাচ্চির শাখাও পেয়েছিলাম। পরের পর্বে ইনশাআল্লাহ মালয়েশিয়া নিয়ে বলব। ******সিঙ্গাপুরের সৌন্দর্য বা তাদের কালচার নিয়ে লিখার ভাষা আমার জানা নাই,যে সেই দেশে যাবে সেই একমাত্র বুঝবে সিঙ্গাপুর কেমন****** খরচ---- বিমান ভাড়া দুই দেশে ২৫০০০÷২ = ১২৫০০ খরচ-সিঙ্গাপুরি ডলার ২০০ × ৬৫ =১৩০০০ ভিসা খরচ ------------------------------=৪০০০ মোট _-----------------------------------২৯৫০০ এটা আমার ব্যাগতিগত মতামত, ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। মুলত বিদেশ ভ্রমনে অন্যদের উৎসাহিত করাই আমার এই পোষ্টের মুল লক্ষ্য-- আমার ভ্রমণ অভিজ্ঞতা আস্তে আস্তে শেয়ার করব-বিস্তারিত জানতে আমার পেইজে লাইক দিয়ে সাথে থাকুন।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |