এবার ভেরেটার
শুরুটা হলো কলকাতা স্টেশন থেকে, কলকাতা - যোগবাণী এক্সপ্রেস এ, চব্বিশে ডিসেম্বর, রাত আঁট টা পঞ্চান্ন তে | গন্তব্য যোগবাণী | দূরত্ব বেশি না হলেও সাধারণ মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন এ যোগবাণী পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় চৌদ্দ ঘন্টা পাঁচ মিনিট | যোগবাণী পৌঁছে গেলাম সঠিক সময়ের সামান্য আগেই | স্টেশন থেকে দুটো মারুতি ওমনি তে দশ জন মিলে সওয়ার হলাম | যোগবাণী স্টেশন কমপ্লেক্স এর বাইরে বেরোতেই ওয়েলকাম টু নেপাল | ভারত - নেপাল সীমান্ত কে পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে চললাম আমাদের মূল গন্তব্যের পথে | যাচ্ছি ভেরেটার | ভেরেটার কথার অর্থ ভেড়া চারণ ক্ষেত্র | কথিত আছে এই পুরো অঞ্চল টি এই ভেড়া চারণভূমি হিসেবেই ব্যবহৃত হতো, এবং গোটা এলাকার উপর নজরদারি চালানো হতো চার্লস পয়েন্ট থেকে | ভৌগোলিক ভাবে ভেরেটারের অবস্থান এরকম - 26.8718° N, 87.3265° E | বিরাটনগর, ইটাহারি, ধরন পেরিয়ে এগোতে থাকলাম কাঙ্ক্ষিত উদ্যেশে | পথে চলতে চলতে একবার চা বিরতি ও হলো | ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই দুটো কুড়ি নাগাদ পৌছালাম ভেরেটার | গিয়ে উঠলাম ড্রিমস হোটেল এন্ড ইন এ | আগে থেকেই বুকিং করা ছিল পূর্বপরিচিতি থেকেই | গাড়ি থেকে নামা মাত্রই ভালোভাবে টের পাওয়া গেল যে ঠান্ডা বাবাজি বেশ কোমর বেঁধেই এসেছেন | সবাই নিজের নিজের রুম এ গিয়ে স্নান সেরে সেজেগুজে তৈরী | অসময় মধ্যাহ্নভোজ সারলাম গরম ভাত আর দেশী মুরগির ঝোল দিয়ে | কেউ কেউ দিবানিদ্রামগ্ন হলো আর আমরা কয়েকজন বেরিয়ে পড়লাম আশেপাশে একটু হেঁটে ঘুরে আসার জন্য | ঝোড়ো হওয়ার দাপটে ঠান্ডা বেশ ভালোই ছিল | অন্ধকার নেমে এলো, আমরাও হোটেলে ফিরে এলাম | শরীরে ক্লান্তি থাকার দরুন সকলেই একটু তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম | মোবাইল এ টেম্পারেচার দেখলাম চার ডিঃ | দ্বিতীয় দিন তাড়াতাড়ি প্রাতরাশ সেরে রওনা দিলাম | গন্তব্য হিলে | হিলে জায়গাটি ভেরেটারের থেকেও বেশ খানিক টা উঁচুতে | স্বাভাবিক ভাবেই তাপমাত্রা ওখানে আরো কম | বারোটা নাগাদ পৌঁছালাম হিলে তে | বেশী উচ্চতার কারণে ঠান্ডাও যেমন বেশী তেমনি চারপাশের পরিষ্কার ভিউ পাওয়া যায় | গাড়ি থেকে নেমেই মন ভরে গেল ঠান্ডায় | উপরি পাওনা ছিল মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও হিমালয়ান শ্রেণীর মাউন্ট মাকালু, মাউন্ট কুম্ভকর্ণ এবং দ্যা গ্রেট মাউন্ট এভারেস্ট এর পরিষ্কার দর্শন পাওয়া | যদিও বেশিক্ষন সেই সৌভাগ্য বজায় থাকেনি, মিনিট খানেকের মধ্যেই আকাশ মেঘলা হওয়ার কারণে | তবুও এভারেস্ট দর্শন মন ভরিয়ে দিলো | আবার গাড়িতে উঠে পৌঁছালাম হোটেল হরাইজন | ওখান থেকে চারপাশের স্পষ্ট দৃশ্য মন ভরালো আবার | খানিক্ষন ফটোসেশন চলার পর রওনা দিলাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে | এলাম টেমর নদীর পারে | আহা, কি দারুন প্রকৃতির খেলা | মনে হলো যেন পুরোটা একদম সাজানো, প্রকৃতি মন ভরে তার সর্বস্ব উজাড় করে সাজিয়েছে | পাহাড়ি নদী সবসময়েই নজর কাড়ে, কিন্তু এ যেন এক অভাবনীয় সৌন্দর্য | নিজের খেয়ালে দৃঢ় প্রত্যের সাথে বয়ে চলেছে টেমর নদী দু পাশের পাহাড় ভেদ করে সে তার নিজের গতিপথ বেছে নিয়েছে আর সেই পাহাড়গুলিও তাতে কোনো আপত্তি করেনি, বরং আরও সাহায্য করছে, টেমর নদী কে ঢেলে সাজাতে তারাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ | আমরাও সেই প্রতিজ্ঞার প্রত্যখ্যদর্শী হতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করলাম | ঘড়ির কাঁটা বলছে তখন তিনটে | প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মন ভরিয়ে আমরা চললাম পরবর্তী স্থানে | গাড়ি এসে থামলো নমস্তে ফলস | সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো লাঞ্চ সেরেই নমস্তে ফলস দেখতে যাওয়া হবে | সেই অনুযায়ী পাশের একটি হোটেল এ মোমো আর নুডলস দিয়ে লাঞ্চ সেরে রওনা হলাম ফলস এর দিকে | কিন্তু বাধ সাধলো প্রকৃতি নিজেই | খানিক টা যাওয়ার পরই জানা গেল ধস নামার ফলে রাস্তা বন্ধ আছে এবং দেখা ও গেল যে মেরামতির কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় | কিছুটা নিরাশ হয়েই ফিরতে হলো | বাধ্য হয়েই নমস্তে ফলস কে নমস্তে জানিয়ে বিদায় নেওয়া হলো সেখান থেকে | সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ায় বোঝা গেল হাতে সময় কম তাই হোটেলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো | হোটেল এ ফিরে চা বিরতির পর সবাই নিজের রুম এ | সন্ধ্যে টা আড্ডা গল্পের মাধ্যমে কাটলো | তৃতীয় দিন টা ছিল একটু স্পেশাল, কারণ টা পরে বলছি | যথারীতি তারাতারি প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পৌঁছে গেলাম বুড়া সুব্বা ও গৌরী মাতা মন্দির এ | আঞ্চলিক কথোপকথন থেকে বোঝা গেল যথেষ্ট জাগ্রত এই মন্দির | আসেপাশে ঘুরে, পুজো দিয়ে আমরা গেলাম পরবর্তী গন্তব্য, দন্তকালী মন্দিরে | পুরান মতে এটা একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ | মিথ অনুযায়ী সতীর দাঁত পড়েছিল এখানে | গর্ভগৃহ দর্শনে সেকথা সোনা গেল পুরোহিত মশাইএর কথায় | জোরালো অনুরোধে পুরোহিত মশাই দেখালেন ও সেই দাঁত | (বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর) যাই হোক, দর্শনের পর মন্দির প্রস্থান করে এগিয়ে যাওয়া হলো পরবর্তী স্থানের দিকে | গেলাম বাবা পিণ্ডেশ্বর মন্দির এ | এখানে পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির উদ্যেশে পিণ্ড দান করা হয় | রুদ্রাক্ষ গাছের জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দির টি | দর্শন সেরে আমরা চললাম বিষ্ণুপাদুকা মন্দিরের পথে | আগের মন্দির মন্দির গুলি কাছাকাছি ছিল | কিন্তু বিষ্ণুপাদুকা মন্দির সম্পূর্ণ অন্য দিকে | ওখানে পৌঁছানো টা একটা এক্সপেডিশন এর চেয়ে কোনো অংশে কম নয় | একটি শুকনো নদীবক্ষের উপর দিয়ে এগিয়ে চললো গাড়ি, পথ আরও দুর্গম হয়ে উঠলো নদীবক্ষ পার হতেই | পথে কোথাও পুরোনো ধসের চিহ্ন প্রকট আবার কোথাও পুরোটাই মেঠো পথ | পাহাড়ি অঞ্চলে মেঠো পথ যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম | খাঁড়া চড়াই, মাটির রাস্তা, সামান্যতম ভুলের ও কোনো ক্ষমা নেই | তাই ড্রাইভার সাহেব খুব সাবধানতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেলেন আমাদের | পৌঁছালাম বিষ্ণুপাদুকা মন্দির এ | ছোট্ট একটি মন্দির, ভেতরে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর পাদুকাদ্বয়, এছাড়াও আছে বিভিন্ন মূর্তি | জায়গাটির সৌন্দর্য ও কম নয় | মন্দিরের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে একটি ঝুলন্ত সেতু, সেতুটির কার্যকারিতা বিশেষ জানা নেই | তবে দারুন কিছু ছবি তোলা যায় সেতুটির উপর থেকে | ওখান থেকে আমরা ফিরলাম আবার সেই ভয়ঙ্কর কিন্তু সুন্দর পথ ধরেই | এলাম ধরন, ধরনে নুডলস, মোমো, থুকপা, চিল্লি চিকেন সহযোগে লাঞ্চ সেরে এগিয়ে এগিয়ে চললাম আমাদের বহুপ্রতীক্ষিত গন্তব্য আত্মা বস্তে ঘর এর উদ্যেশ্যে | বেশ খানিক টা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়, বেশ খাড়াই | উঠলাম, উঠতে উঠতে বীভৎস ঠান্ডার সম্মূখীন হলাম, সাথে প্রবল বেগে হাওয়া, যেন যেখানে লাগছে কেটে নিচ্ছে, অবশ হয়েযাচ্ছে | উপরে উঠে দেখলাম একটি ছাদহীন পাথুরে ঘরে | স্থানীয় একজনের কাছে জানা গেল, কোনো এক সময় ভূমিকম্পের ফলে একশো চার জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের এখানে সমাধিস্থ করা হয়েছে | ওখান থেকে সামান্য কিছুটা নামলেই রয়েছে একটি বুদ্ধ সাধনাগৃহ | আবার আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে প্রবল ঠান্ডায় অসম্ভব সুন্দর ভাবে পাহাড়ের কোলে সূর্যের ঢলে পড়ার সাক্ষ্যি হলাম | তারপর নেমে এলাম গাড়ির কাছে, উঠে পড়লাম, চলে এলাম হোটেল হোটেল এ | হোটেল হোটেলে ফিরে সকলেই প্রস্তুতিতে লেগে পড়লো | আগেই বলেছি যে তৃতীয় দিন টা একটি স্পেশাল দিন ছিল, কারণ সাতাশে ডিসেম্বর আমাদের টিম এর একজন, প্রবীর দার জন্মদিন | সামান্যতম ভাবে সেলেব্রেশন হলো | কেক কাটাও হলো, যদিও বার্থডে কেক নয়, বড়দিনের কেক দিয়েই পালন করা হলো প্রবীর দার জন্মদিন | আমাদের চমকে আপ্লুত হয়ে বার্থডে বয় আমাদের রিটার্ন গিফট এর ঘোষণা করলেন, পরের দিন উনি আমাদের মটন বার্বিকিউ খাওয়াবেন | জন্মদিন পালনের পর ডিনার সেরে সবাই ঘরে ফিরলাম | চতুর্থ দিন ছিল ছুটির দিন | আনন্দে ছুটি কাটানো, কোথাও বেরোনোর তারা নেই, সেই আনন্দে সকলেই লেট রাইজার হয়ে গেল | ঘুম থেকে উঠে, কোনো কাজ নেই, কোনো তারা নেই তাই নিজেই একটু কেজো হওয়ার চেষ্টা করলাম | সবাই কে ডেকে নিয়ে একটু হাঁটতে বেরোলাম, হেঁটে গেলাম ভেরেটার চক পর্যন্ত | রাস্তায় দেখলাম অপূর্ব এক শঙ্খ মন্দির | পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য প্রবীর দার কাছে শুনেছিলাম চার্লস পয়েন্ট এর কথা | চক পর্যন্ত গিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো সেটার কথা, সবার কাছে প্রস্তাব রাখলাম, কেউ খুব একটা আগ্রহ দেখলোনা বুঝে নিজেই হাঁটা লাগলাম পুলিশ চৌকি তে খোঁজ নিয়ে, সবার অজান্তেই | কেউ জানেনা আমি কোথায় গেছি, চার্লস পয়েন্ট পৌঁছানোর জন্য রাস্তায় কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করেছি ঠিক রাস্তায় যাচ্ছি কিনা সেটা জানার জন্য আর তাঁদের কাছে জানতে চাইলাম ওনাদের কতক্ষন লাগে ওখানে পৌঁছাতে, তাঁদের সময়ের দ্বিগুন সময় লাগবে ধরে নিয়ে চলা শুরু করলাম, কিন্তু দ্বিগুন সময়ের বেশ কিছুটা আগেই পৌঁছে গেলাম চার্লস পয়েন্ট এ | এই জায়গাটি আঞ্চলিক ভাবে ভিউ টাওয়ার নামেও পরিচিত | যাই হোক, উপরে উঠে নিচে থাকা আমাদের সাথে আসা দুইজন কে চিৎকার করে ডাকলাম, তারাতো অবাক | আমি ই যে ডাকছিলাম সেটা বুঝতেই তাঁদের সময় লাগলো, তারপর দেখলাম সবাই একে একে এসে পৌছালো চার্লস পয়েন্ট | এই চার্লস পয়েন্ট হলো ওই অঞ্চলের সর্বোচ্চ স্থান, ওখান থেকেই নাকি গোটা ভেরেটারের উপর নজর রাখা যায়, নিজেও বুঝতে পারলাম কথাটা সত্যি, ওই পয়েন্ট থেকে তিনশো ষাট ডিগ্রি পরিষ্কার দেখা যায়, স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেল ভেরেটার নামকরণ নিয়ে | ভেরেটার শব্দের মানে হলো ভেড়া চারণ ক্ষেত্র, আর সেই থেকেই নাকি ওই জায়গাটির নামকরণ | ফিরে এলাম হোটেলে | লাঞ্চ সেরে ঘুম, ঘুম থেকে উঠে বীভৎস ঠান্ডা | একেবারে হাড় কাঁপিয়েছে | সাতাশ তারিখ রাত থেকেই ঠান্ডা বাড়ছিল আর আঠাশ তারিখ সেটা পূর্ণতা পায় | ব্যাপক সেই ঠান্ডার মধ্যে মটন বার্বিকিউ বানানো হলো হোটেলের ছাদে | দারুন হয়েছিল | সারা সন্ধ্যে আড্ডা মেরে কাটিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়া হলো | পরদিন ফেরা | ঊনত্রিশে ডিসেম্বর ছিল আমাদের ফেরা |ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে হোটেলের ব্যালকনি তে এসে চোখ ধাঁধিয়ে গেল, দৌড়ে গিয়ে বাকিদের বললাম ''এমন দৃশ্য আর জীবনে পাবেনা...'' বলেই ছুট্টে ছাদের উপরে জলের ট্যাংক এর উপর গিয়ে দাঁড়ালাম, যা দেখলাম টা ভাষায় প্রকাশে অপারগ আমি, মনে পড়লো সেই বিখ্যাত উক্তি '' আহা ! কি দেখিলাম, জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না...'' | আগেরদিন রাত এ বৃষ্টি হওয়ার জন্য আকাশ পরিষ্কার, তাতে মাউন্ট মাকালু, মাউন্ট কুম্ভকর্ণ, মাউন্ট এভারেস্ট আরও অন্যান্য পর্বত শৃঙ্গ এক ফ্রেম এ চমৎকার ভাবে দেখা যাচ্ছে | সূর্যের প্রথম আলোয় আরও মায়াবী লাগছিলো | ঠান্ডায় হাত পা কাঁপছিলো তাও ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না | অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম ওই ট্যাংক এর উপর, তারপর বাধ্য হয়ে নেমে এলাম ফেরার ট্রেন এর তারা ছিল বলে | তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম, পথেই প্রাতরাশ সারা হলো ধরনে | পৌঁছে গেলাম যোগবাণী | স্টেশন এ পৌঁছে লাঞ্চ করে ট্রেন এ উঠলাম, একরাশ মন খারাপ নিয়ে | দুপুর দুটো পঁয়ত্রিশ এ যোগবাণী এক্সপ্রেস যোগবাণী ছেড়ে আসলো | রাত তিনটে কুড়ি তে নেমে গেলাম কলকাতা স্টেশন | বিঃ দ্রঃ নেপাল এ ভারতীয় সিম কার্ড চলে না, ওখানকার সিম কিনতে পারেন, সম্পূর্নই নিজস্ব দায়িত্বে | যোগাযোগের ভরসা হোটেলের wi-fi | ভেরেটার এ কেনাকাটা করার মতো তেমন কিছু নেই, মোটামুটি সবকিছুই শিলিগুড়ি বা ভারতের থেকে যায় | শুধু সিগারেট টা ওখানকার, আর কেনার জন্য রইলো নেপালি টুপি আর একধরণের বিস্কুট, যার নাম ধানকুটা বিস্কুট, এই বিস্কুট ভেরেটার চক এই একমাত্র পাওয়া যায় (শোনা কথা) | সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো টাকাপয়সার বেপার | নেপাল এ ভারতীয় মুদ্রায় সর্বোচ্চ একশো টাকার নোট ই বৈধ | এছাড়া Nepal Currency আর Indian Currency এর মধ্যে একটা পার্থক্য আছে... I.C তে 100 টাকা হলো N.C তে 160 টাকার সমান | নেপাল এ কোনো জিনিস কেনার সময় বা বিল দেওয়ার সময় এই NC আর IC বেপার টা খেয়াল রাখতে হবে | ভারতীয় মুদ্রা তে পেমেন্ট করার সময় মনে রাখবেন নেপালি মুদ্রায় যে মূল্য হবে সেই সংখ্যা কে 1.6 দিয়ে ভাগ করলে যে উত্তর আসবে সেটি আপনাকে দিতে হবে... যেমন- একটি নেপালি টুপির দাম NC তে 300 টাকা, তাহলে আপনি IC তে দেবেন (300/1.6)=187.5 টাকা | আবার যদি আপনি NC তে 40 টাকা ফেরত পান তাহলে আপনি IC তে পাবেন (40/1.6)=25 টাকা |
0 Comments
Joto Kandu Kathmandu!!!
গত ২৯ এ October, কাজের সুত্র ধরে পৌছে গেলাম এই সুন্দর শহরে! খুব পরিস্কার এই শহর! অনেক কিছুই ঘুরে দেখার আছে, যেমন বাবা পশুপতি নাথের মন্দির, দরবার, monastery ইত্যাদি। অনেক hotel আছে কিন্তু যদি একটু অন্য স্বাদ পেতে চান তাহলে থাকতে পারেন Hotel Yak n Yeti, হোটেল এর ফটো দেওয়া রইলো, যেমন ভালো আপায়ন তেমন খাবার। সব মিলিয়ে নিরাশ হতে হবেনা, কথা দিলাম। দুদিন কাটিয়ে চলে আসুন Pokhra, অন্নপূর্ণা range দেখে ঘুম থেকে উঠে বেরিয়ে পড়ুন। আহ! দারুণ লাগবেই, নিসন্দেহে!!! দুপুরে লাঞ্চ করুন Fish tail e,দারুন মনরম। Pokhra থাকতে হলে থাকতে পারেন Hotel Shangrilla তে! পুরো trip টা এক week এর। ঘুরে আসুন, মন ভালো হয়ে যাবেই যাবে! গত ৩০শেসেপ্টেম্বর দুপুরে মিথিলা এক্সপ্রেস এ চড়ে নেপাল ভ্রমন শুরু হল।প্রথমে যাব মুক্তি নাথ দর্শনে।প্রথম গন্তব্য তাই রক্সৌল।পরদিন সকাল দশটা নাগাদ মোটামুটি রাইট টাইমে ট্রেন রক্সৌল পৌঁছল।যন্ত্রনার শুরু হল।কোন গ্ৰামের রাস্তাও বোধহয় এতো খারাপ হয়না।গ্ন্তব্য বীরগঞ্জ,একমাত্র টাঙা ই যাবে বীরগঞ্জ পর্যন্ত,অটো সীমান্তে গিয়ে ছেড়ে দেবে,ফের আর একটি অটো বীরগঞ্জ এর বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যাবে,তাই একবারে যাব বলে টাঙাতেই উঠে বসলাম।বাপরে কী রাস্তা,প্রতি মূহুর্তে মনে হচ্ছে টাঙা থেকে পড়ে যাব আর তেমনি জ্যাম,বিহারের প্রশাসন কে প্রনাম করে কোনরকমে প্রান হাতে করে পোখরা যাবার বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছলাম,ভাড়া দুশো টাকা।পরের পর্বে পোখরা যাবার দুঃস্বপ্নের যাত্রা বলব।
টাঙা চড়ে প্রান হাতে ফিরে পেয়ে অবশেষে বীরগঞ্জের বাস স্ট্যান্ডে হাজির হলাম,টাঙাওলা কে দুশো টাকা দিয়ে বিদায় করে সামনেই পোখরা যাবার বাস দেখে পাতা করলাম কখন ছাড়বে কত ভাড়া ইত্যাদি,এখন মাঝে মাঝে হিন্দি কথা বেরিয়ে যাবে ,ক্ষমা করবেন।এখান থেকে শুরু হল নেপালি মানি আর ইন্ডিয়ান মানির হিসাব নিকাশ,সোজা কথায় মোবাইল বার করুন আর নেপালি মানিকে ১.৬ দিয়ে ভাগ করুন তাহলেই বুঝতে পারবেন কত টাকা দিতে হবে,ওদের সাহায্য লাগবেনা,ওদের ওপর নির্ভর করলে হিসাব ভুল বলতে পারে , আপনি নিজে হিসাব করলে ওরা মেনে নেবে কিছূ তর্ক করবে না,যদি দুচার টাকা হিসাবে আসে তো সোজা বলে দিন দিতে পারব না,কারন ওখানে ইন্ডিয়ান কয়েন চলেনা।
বাসের ভাড়া ৩৫০টাকা,পার হেড, বীরগঞ্জ টু পোখরা।বলল না,দশ ঘন্টা লাগবে।ভালো বাস,এসি নয় কিন্তু। এবার বাস চলল আপ ডাউন লেফট রাইট হেলতে দুলতে,নড়তে নড়তে কী ভীষন রাস্তা,বুঝলাম এখানেও বিহারী মার্কা প্রশাসন,নির্বিকার।গাড়ী চলল শম্বুক গতিতে,আতঙ্কিত আমরা জিগেস করলাম এরকম চললে কখনোই পৌঁছব?আমাদের বলা হল বেফিকর রহিয়ে ঠিক পৌঁছে জায়েগা রাস্তা নহী দেখা কি ৎ না খারাব।অগত্যা পড়েছি মোগলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। সাথে সাথে চলেছে ত্রিশুলি নদী,ধূলোর জ্বালায় জানলা খোলার উপায় নেই।অনেকটাই যাবার পর রাস্তা ভালো পাওয়া গেল,ভাবলাম এবার টানবে,হা ভগবান রাস্তা বেদম জ্যাম,হাজার হাজার শ্রী শুধু যাচ্ছে আসছে,সঙ্গে চলেছে কন্ডাক্টরের হাঁক,পোখড়া জায়গা পোখড়া?
অতি ধূলিমলিন ও জঘন্য রাস্তা দিয়ে পোখরা যাত্রা শুরু হল,পার হেড ৩৫০টাকা আই সিতে,বাস প্রায় লোকাল,ডেকে ডেকে লোক তুলছে, শম্বুক গতিতে,কিছুটা খারাপ রাস্তা ও অনেকটাই লরীর জ্যামের জন্য।অবশেষে এক জায়গায় লাঞ্চ ব্রেক।
নেপালি থালি ভেজ,দাম তিনশো টাকা,ঘাবড়াবেন না,আই সি তে সেটা একশো আশি হল,সঙ্গে ডিমের অমলেট,আধা ঘন্টা ব্রেক । পাশে ত্রিশুলি নদী ও চলেছে,বেশ স্রোত আছে,অনেকে র্যাফটিং ও করছে।দেখতে দেখতে চোখে ঘুম,অন্ধকার ও হয়ে এলো।আর লরীর স্রোত বয়ে চলেছে,এতো লরী?আর কত দূর?আ জায়েগা,ঘাবড়াও মৎ।আর ধৈর্য্য থাকছে না, রাত্রি নটায় গাড়ীর স্টাফরা খেতে নামল,তারা লাঞ্চ করেনি,এখন দুধের দিয়ে চিঁড়ে খাবে।অগত্যা,ধৈর্য্য ধরে থাকো।সকাল সাড়ে দশটায় বাস ছেড়ে একশো স্টপেজ দিয়ে অবশেষে রাত সাড়ে দশটার সময় পোখরা পৌঁছলাম।কত ঘন্টা হল? সব গুলিয়ে গেছে।সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে আইসি তে তিনশো,পনের মিনিট দূরে হোটেল ডিপ্লোম্যাট,আগে থেকে নেটে বুক করা। ভালো হোটেল,ওরা বলল তাড়াতাড়ি পাশের খাবার দোকানে খেয়ে নিন,নাহলে বন্ধ হয়ে যাবে।ভালো খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে সোজা বিছানায়।কালকের কথা আবার কালকে।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে বেড টি খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম,আমাদের হোটেল লেকের কাছেই,তাই হাঁটতে হাঁটতে ফেওয়া লেকের কাছে চলে এলাম।কি বিশাল লেক,লেকের মাঝে দ্বীপের মত একটি মন্দির,সবাই দেখি লাইফ জ্যাকেট পরে নৌকোয় করে যাচ্ছে,আমরাও পত্রপাঠ চললাম,বরাহ দেবতার মন্দির,নিজে নিজে পূজো কর,ভালো ব্যবস্থা,বরাহ অবতারের মূর্তি,আমি তো বুঝতেই পারিনি,ভাবছি কোন দেবী র মূর্তি,মা মা করে ডেকে ফেলেছি,তারপর মাঝির কাছে শুনে কি ফ্যাসাদ।একটু মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে হাতে ছ্যাঁকা খেয়ে ফিরে এসে চান টান করে খেতে বেরোলাম।প্রসঙ্গত,আমাদের হোটেলে প্রাতঃরাশ ছাড়া কিছু মিলবে না,নো চিন্তা,পাশেই খাওয়ার হোটেল,নেপালি সিম নিতে একটু সময় লাগল, পাসপোর্ট ছাড়া দেবেনা।লোকাল কলের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।ও মা সিম ভরতে না ভরতে পুরো ডাটা শেষ।ওরা বলল আপনার যা যা আ্যপস চালু ছিল,তাতেই ডাটা খেয়ে নিয়েছে।আবার রিচার্জ করে পয়সা ভরতে হল।ডাটা কে মারো গুলি,সব হোটেলেই ফ্রী ওয়াই ফাই,তো হোটেলে বসে আমরা ইন্ডিয়ান সিমের ডাটার শ্রাদ্ধ করতে লাগলাম।বিকালে সাইট সিয়িং এর জন্য গাড়ী বুক করে খেয়ে দুপুরে বিশ্রাম।ওমা ,আকাশ কালো করে ঝপাঝপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল,থামেনা,মেঘ মোটে নড়েনা,এখানে মেঘ উড়ে উড়ে চলে যায়, বৃষ্টি ও উধাও হয়ে,ওখানে মেঘ মোটে ওড়েনা।কি করে সান সেট দেখব।মনকে বোঝালাম,আর কত জায়গার সানসেট দেখবি?সেই একি সান,আর একি সেট।আমাদের বাড়ির ছাদে এক একদিন অপরূপ সানসেট হয়,ফ্রীতে পাই বলে দাম দিই না।দরকার নেই সারানকোট গিয়ে সানসেট দেখার। বৃষ্টি কমতে বুদ্ধ পিস প্যাগোডা দেখতে গেলাম।
প্যাগোডার পাদদেশে এসে দেখি দুশো সিঁড়ি চড়তে হবে, সঙ্গে ঝেঁপে বৃষ্টি। ছাতা মাথায় দিয়ে মরিয়া হয়ে উঠতে লাগলাম,যা থাকে কপালে।এরপর কি হল?কালকে বলব।
Post By-Arpita Ghosh
From hwh reach Gorakhpur. From Gorakhpur station take a cab to Lumbini via Kapilvastu, Kingdom of Sudhadhana, father of Lord Buddha. One can fly from Kathmandu to Bhairawa and reach Lumbini. Post By:- Mitil Samanta Chaudhury
পোখরার এক বিকেলবেলা(An evening in Pokhara).. ©অরিন্দম "ये शाम मस्तानी, मदहोश किये जाए मुझे डोर कोई खींचे, तेरी और लिए जाए".. সালটা ২০১৪,পুজোর পরে আমাদের লাইফের প্রথম বড় ট্রিপে বেরিয়ে পড়েছিলাম সাহসের থলিতে ফুঁ দিয়ে।গন্তব্য নেপাল আর ভরসা এক বিখ্যাত টুর এজেন্সি। এর আগে ছেলেকে নিয়ে কখনোই দূরে কোথাও যাইনি সেভাবে,তাই চিন্তা লেগেই ছিল।যাই হোক,,,মিথিলা এক্সপ্রেসের লেট করা,বীরগঞ্জের জমাট জ্যাম,পথের ক্লান্তি,এসব নিয়ে চলতে চলতে পৌঁছলাম চিতোয়ান ফরেস্ট।ফরেস্ট সাফারি বাদ দিলাম ছেলের জন্য,ভোরে উঠতে না পারার জন্য। পরের গন্তব্য ছিল পোখরা।এতক্ষণ পর্যন্ত নেপাল আমার একদম ভালই লাগছিল না,,,,পোখরায় এসে ছবিটা পালটে গেল।এরকম ঝাঁ চকচকে শহর খুব কম দেখা যায়!যেদিকে তাকাই মাথা ঘুরে যায়,,,,জটায়ুর ভাষায় চোখ ধাঁধিয়ে যায়।যদিও "যত কান্ড কাঠমান্ডু" গপ্পে পোখরার একটিবার নামোল্লেখ ছাড়া আর কিছুই ছিল না! প্রথম দিন পোখরা শহরের এক চক্কর মেরে,বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির,ডেভিস ফলস,মহেন্দ্র গুহা ইত্যাদি ঘুরে ফিরলাম বেশ বেলা করেই।ক্লান্তি পেড়ে ফেলছিল আমাদের,,,,তাই স্বাভাবিকভাবেই চোখ লেগে এসেছিল। কিন্তু ঘুমটা যখন ভাঙ্গল,তখন বিকেল পাঁচটা।হোটেলের একদম পাশেই রাস্তা পেরিয়ে ফেওয়া লেক।এসে অবধি যাওয়া হয়ে ওঠেনি।অলসভাবে এগোলাম লেকের দিকে,,,,,পৌঁছেই চমকে গেলাম!এরকম সৌন্দর্য,এত অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ!মন ভরে গেল..! কিন্তু দেরী করে আসার সুবাদে লেকে বোটিং বন্ধ হয়ে গেছে।বিকেল ৫ টা'র পরে আর বোট বুক করা যায় না।তাই আফসোস হল খুব।অগত্যা কি আর করা!তখন বিকেলের সূর্য্য অস্ত যাচ্ছে ধীরেধীরে।অন্নপূর্ণা রেঞ্জের "মাচ্ছাপুছরে" ও অন্যান্য নাম না জানা শৃঙ্গ গুলো সেই আলোয় রাঙা হয়ে উঠেছে। চারিদিকে প্রচুর দেশের মানুষজন।এশিয়ান,ইউরোপিয়ান,আমেরিকান,,,,,,আরো কত রকম যে ভিনদেশী মানুষ!প্রায় সবার হাতেই দামী ক্যামেরা,,,,সেই সানসেট,সেই বিকেলের ছবি ক্যামেরাবন্দী করতে ব্যাস্ত সবাই।আর আমার হাতে সোনির একটা সাইবারশট ডিজিটাল ক্যামেরা। ওই নিয়েই কপাল ঠুকে লেগে পড়লাম চেষ্টায়,,,যদি ক'টা ভাল ফ্রেম ক্যামেরাবন্দী করতে পারি!তখনো পর্যন্ত ক্যামেরা বা ছবি তোলা নিয়ে অত উৎসাহী ছিলাম না।কিন্তু পোখরার ওই একটা মনোরম সুন্দর বিকেল,,,,প্রকৃতির প্রতি আমাকে আকৃষ্ট করে তুলেছিল।সিরিয়াসলি ছবি তোলার চেষ্টা তারপর থেকেই আমি শুরু করি। ©অরিন্দম Post By:- Arindam Patra
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |