গত ৩০শেসেপ্টেম্বর দুপুরে মিথিলা এক্সপ্রেস এ চড়ে নেপাল ভ্রমন শুরু হল।প্রথমে যাব মুক্তি নাথ দর্শনে।প্রথম গন্তব্য তাই রক্সৌল।পরদিন সকাল দশটা নাগাদ মোটামুটি রাইট টাইমে ট্রেন রক্সৌল পৌঁছল।যন্ত্রনার শুরু হল।কোন গ্ৰামের রাস্তাও বোধহয় এতো খারাপ হয়না।গ্ন্তব্য বীরগঞ্জ,একমাত্র টাঙা ই যাবে বীরগঞ্জ পর্যন্ত,অটো সীমান্তে গিয়ে ছেড়ে দেবে,ফের আর একটি অটো বীরগঞ্জ এর বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যাবে,তাই একবারে যাব বলে টাঙাতেই উঠে বসলাম।বাপরে কী রাস্তা,প্রতি মূহুর্তে মনে হচ্ছে টাঙা থেকে পড়ে যাব আর তেমনি জ্যাম,বিহারের প্রশাসন কে প্রনাম করে কোনরকমে প্রান হাতে করে পোখরা যাবার বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছলাম,ভাড়া দুশো টাকা।পরের পর্বে পোখরা যাবার দুঃস্বপ্নের যাত্রা বলব।
টাঙা চড়ে প্রান হাতে ফিরে পেয়ে অবশেষে বীরগঞ্জের বাস স্ট্যান্ডে হাজির হলাম,টাঙাওলা কে দুশো টাকা দিয়ে বিদায় করে সামনেই পোখরা যাবার বাস দেখে পাতা করলাম কখন ছাড়বে কত ভাড়া ইত্যাদি,এখন মাঝে মাঝে হিন্দি কথা বেরিয়ে যাবে ,ক্ষমা করবেন।এখান থেকে শুরু হল নেপালি মানি আর ইন্ডিয়ান মানির হিসাব নিকাশ,সোজা কথায় মোবাইল বার করুন আর নেপালি মানিকে ১.৬ দিয়ে ভাগ করুন তাহলেই বুঝতে পারবেন কত টাকা দিতে হবে,ওদের সাহায্য লাগবেনা,ওদের ওপর নির্ভর করলে হিসাব ভুল বলতে পারে , আপনি নিজে হিসাব করলে ওরা মেনে নেবে কিছূ তর্ক করবে না,যদি দুচার টাকা হিসাবে আসে তো সোজা বলে দিন দিতে পারব না,কারন ওখানে ইন্ডিয়ান কয়েন চলেনা।
বাসের ভাড়া ৩৫০টাকা,পার হেড, বীরগঞ্জ টু পোখরা।বলল না,দশ ঘন্টা লাগবে।ভালো বাস,এসি নয় কিন্তু। এবার বাস চলল আপ ডাউন লেফট রাইট হেলতে দুলতে,নড়তে নড়তে কী ভীষন রাস্তা,বুঝলাম এখানেও বিহারী মার্কা প্রশাসন,নির্বিকার।গাড়ী চলল শম্বুক গতিতে,আতঙ্কিত আমরা জিগেস করলাম এরকম চললে কখনোই পৌঁছব?আমাদের বলা হল বেফিকর রহিয়ে ঠিক পৌঁছে জায়েগা রাস্তা নহী দেখা কি ৎ না খারাব।অগত্যা পড়েছি মোগলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। সাথে সাথে চলেছে ত্রিশুলি নদী,ধূলোর জ্বালায় জানলা খোলার উপায় নেই।অনেকটাই যাবার পর রাস্তা ভালো পাওয়া গেল,ভাবলাম এবার টানবে,হা ভগবান রাস্তা বেদম জ্যাম,হাজার হাজার শ্রী শুধু যাচ্ছে আসছে,সঙ্গে চলেছে কন্ডাক্টরের হাঁক,পোখড়া জায়গা পোখড়া?
অতি ধূলিমলিন ও জঘন্য রাস্তা দিয়ে পোখরা যাত্রা শুরু হল,পার হেড ৩৫০টাকা আই সিতে,বাস প্রায় লোকাল,ডেকে ডেকে লোক তুলছে, শম্বুক গতিতে,কিছুটা খারাপ রাস্তা ও অনেকটাই লরীর জ্যামের জন্য।অবশেষে এক জায়গায় লাঞ্চ ব্রেক।
নেপালি থালি ভেজ,দাম তিনশো টাকা,ঘাবড়াবেন না,আই সি তে সেটা একশো আশি হল,সঙ্গে ডিমের অমলেট,আধা ঘন্টা ব্রেক । পাশে ত্রিশুলি নদী ও চলেছে,বেশ স্রোত আছে,অনেকে র্যাফটিং ও করছে।দেখতে দেখতে চোখে ঘুম,অন্ধকার ও হয়ে এলো।আর লরীর স্রোত বয়ে চলেছে,এতো লরী?আর কত দূর?আ জায়েগা,ঘাবড়াও মৎ।আর ধৈর্য্য থাকছে না, রাত্রি নটায় গাড়ীর স্টাফরা খেতে নামল,তারা লাঞ্চ করেনি,এখন দুধের দিয়ে চিঁড়ে খাবে।অগত্যা,ধৈর্য্য ধরে থাকো।সকাল সাড়ে দশটায় বাস ছেড়ে একশো স্টপেজ দিয়ে অবশেষে রাত সাড়ে দশটার সময় পোখরা পৌঁছলাম।কত ঘন্টা হল? সব গুলিয়ে গেছে।সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে আইসি তে তিনশো,পনের মিনিট দূরে হোটেল ডিপ্লোম্যাট,আগে থেকে নেটে বুক করা। ভালো হোটেল,ওরা বলল তাড়াতাড়ি পাশের খাবার দোকানে খেয়ে নিন,নাহলে বন্ধ হয়ে যাবে।ভালো খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে সোজা বিছানায়।কালকের কথা আবার কালকে।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে বেড টি খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম,আমাদের হোটেল লেকের কাছেই,তাই হাঁটতে হাঁটতে ফেওয়া লেকের কাছে চলে এলাম।কি বিশাল লেক,লেকের মাঝে দ্বীপের মত একটি মন্দির,সবাই দেখি লাইফ জ্যাকেট পরে নৌকোয় করে যাচ্ছে,আমরাও পত্রপাঠ চললাম,বরাহ দেবতার মন্দির,নিজে নিজে পূজো কর,ভালো ব্যবস্থা,বরাহ অবতারের মূর্তি,আমি তো বুঝতেই পারিনি,ভাবছি কোন দেবী র মূর্তি,মা মা করে ডেকে ফেলেছি,তারপর মাঝির কাছে শুনে কি ফ্যাসাদ।একটু মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে হাতে ছ্যাঁকা খেয়ে ফিরে এসে চান টান করে খেতে বেরোলাম।প্রসঙ্গত,আমাদের হোটেলে প্রাতঃরাশ ছাড়া কিছু মিলবে না,নো চিন্তা,পাশেই খাওয়ার হোটেল,নেপালি সিম নিতে একটু সময় লাগল, পাসপোর্ট ছাড়া দেবেনা।লোকাল কলের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।ও মা সিম ভরতে না ভরতে পুরো ডাটা শেষ।ওরা বলল আপনার যা যা আ্যপস চালু ছিল,তাতেই ডাটা খেয়ে নিয়েছে।আবার রিচার্জ করে পয়সা ভরতে হল।ডাটা কে মারো গুলি,সব হোটেলেই ফ্রী ওয়াই ফাই,তো হোটেলে বসে আমরা ইন্ডিয়ান সিমের ডাটার শ্রাদ্ধ করতে লাগলাম।বিকালে সাইট সিয়িং এর জন্য গাড়ী বুক করে খেয়ে দুপুরে বিশ্রাম।ওমা ,আকাশ কালো করে ঝপাঝপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল,থামেনা,মেঘ মোটে নড়েনা,এখানে মেঘ উড়ে উড়ে চলে যায়, বৃষ্টি ও উধাও হয়ে,ওখানে মেঘ মোটে ওড়েনা।কি করে সান সেট দেখব।মনকে বোঝালাম,আর কত জায়গার সানসেট দেখবি?সেই একি সান,আর একি সেট।আমাদের বাড়ির ছাদে এক একদিন অপরূপ সানসেট হয়,ফ্রীতে পাই বলে দাম দিই না।দরকার নেই সারানকোট গিয়ে সানসেট দেখার। বৃষ্টি কমতে বুদ্ধ পিস প্যাগোডা দেখতে গেলাম।
প্যাগোডার পাদদেশে এসে দেখি দুশো সিঁড়ি চড়তে হবে, সঙ্গে ঝেঁপে বৃষ্টি। ছাতা মাথায় দিয়ে মরিয়া হয়ে উঠতে লাগলাম,যা থাকে কপালে।এরপর কি হল?কালকে বলব।
Post By-Arpita Ghosh
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |