দিন দশেক ধরে পরিকল্পনা আমি আর স্ত্রী নর্থ বেঙ্গল যাবো বাইকে একাদশীর দিন ভোরে আর ছেলে মেয়ে আর এঞ্জেল থাকবে শশুড়বাড়ী। অষ্টমীর দিন সকাল থেকেই গলা ব্যথা। শরীর প্রচন্ড দুর্বল লাগছে। হটাৎ মনে হলো আমার কোরোনা হয়নি তো। যেই মনে হলো গলা ব্যাথা আরো বেড়ে গেলো শরীর আরও দুর্বল হতে লাগলো। বডিস্প্রে মেখে লঙ্কা মিষ্টি খেয়ে দেখলাম স্বাদ গন্ধ ঠিকই আছে। গিন্নীকে কিছু বললাম না দশমীর দিন সকাল থেকেই দেখলাম দুর্বল ভাব কেটে গেছে। যাই হোক দশমীর দিন রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাত সাড়ে তিনটিতে উঠতে হবে। একাদশীর দিন আমার আবার কিছু খাওয়া যাবে না। তাই কিছু শুকনো কাজু, খেজুর, আমন্ড, আপেল ,পেয়ারা নিয়ে নিলাম। প্রয়োজনীয় ওষুধ আর 10 প্যাকেট ORS।
সাড়ে চারটে নাগাদ ডানকুনি। ভালো ঠান্ডা সাথে কুয়াশা। বাইকের স্পীড 60 km/h। টার্গেট করলাম মোড়গ্রাম গিয়ে প্রথম ব্রেক নেবো। এরপর সোজা NH2 ধরে বর্ধমান গিয়ে ডানদিক নিয়ে একে একে ফুটিসাকো, কুলি, খড়গ্রাম, হয়ে মোড়গ্রাম পৌছালাম। মাঝে রাস্তায় এককাপ চা। রাস্তার অবস্থা খুব ভালো না।
পরের টার্গেট করলাম রায়গঞ্জ। ফারাক্কা পার হয়ে আমার champ ছুটতে লাগলো। মাঝে একটু ওর ও পেট ভর্তি করে দিলাম। ব্যাস যেই ওর পেট ভর্তি হলো অমনি ও খানাখন্দ পেরিয়ে ছুটতে লাগলো অমায়িক ভাবে 210 kg wt নিয়ে।(আমার 100kg ,গিন্নীর 75 kg আর লাগেজ 35 kg)।
রায়গঞ্জ পৌছালাম 2.30 pm। আবার একটু চিপ্স আর চা। আর ors। অসম্ভব energy দিয়েছে। এবার একটু ধন্দে পড়লাম। ভাবলাম বোতলবাড়ি ধরবো। কিন্তু চা এর দোকানের কিছু ছেলে যেতে না করলো। বললো একা আপনারা এই রুটে যাবেন না। তাই বাধ্য হয়ে শিলিগুড়ি মোড় থেকে ডালখোলা, কিষানগঞ্জ, ইসলামপুর হয়ে শিলিগুড়ি পৌছালাম রাত 9 টায়। রাস্তা অতীব জঘন্য। তারমধ্যে গুগুল বাবাজী একটু গোল গোল করে 25 km extra ঘুড়িয়ে দিলো। অবশেষে হোটেল রুমে ঢুকে খুব একটা ভক্তি আসলো না। যাইহোক একরাত কাটানোর ব্যাপার। গিন্নী শুয়ে পড়লো আর আমি পরেরদিন কোথায় যাবো সেই ঠিক করতে লাগলাম। (ক্রমশঃ)
0 Comments
-- হারিয়ে যাওয়ার গল্প --
2017 এর আগস্ট মাসে প্রচন্ড বৃষ্টিতে রেল ব্রিজ ভেঙে গিয়ে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঠিক আগের দিন আমরা (আমি/অর্ণব) নিউম্যাল পৌঁছোই। কিন্ত গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পাহাড় বন্ধ থাকায় নিরুপায় হয়ে আমাদের একরাত মূর্তিতে থাকতে হয়েছিল। মূর্তি পৌঁছে বিকেলের দিকে আমরা চলে আসি চাপড়ামারির জঙ্গলে। একপ্রান্তে মূর্তি ও অপরপ্রান্তে জলঢাকা নদীকে সীমানা চিহ্নিত করে উত্তরবঙ্গের সুবিশাল অভয়ারণ্য এই চাপড়ামারি। 960 হেক্টর ব্যাপী বিস্তীর্ণ এ বনভূমি 'Elephant Corridor' নামে পরিচিত। গগনচুম্বী ঘন শালের এই জঙ্গলে সুবিশাল বুনো হাতি ছাড়াও চিতাবাঘ, বাইসন, গন্ডার, ভাল্লুকের মতো বন্য জীবজন্তুর বসবাস। ক্রমাগত বর্ষণে অরণ্য তখন সবুজ ও সতেজ। জঙ্গলের বুক চিরে 9 কিমি দীর্ঘ সরু পিচরাস্তা চলে গেছে জলঢাকা পর্যন্ত। মাঝেমধ্যে গাড়ির যাওয়া আসা ছাড়া কোন মানুষজন নেই। বৃষ্টি ভেজা শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশ। থমথমে মেঘলা আকাশ। মাঝেমধ্যে নিস্তব্ধতা কাটিয়ে পাখির ডাক ও ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। প্রকৃতির কাছাকাছি এসে একটা ভালোলাগার আভাস পাওয়া যায়। ঘড়িতে তখন 4:00 PM। গল্প করতে করতে আমরা চলতে থাকি জলঢাকার দিকে। পথে বিলাসিতা করে ছবি তুলে কাটতে থাকে সময়। প্রায় ঘন্টাখানেক চলার পরেও জঙ্গল শেষ হয়না। শরীরে ক্লান্তি। মোবাইলে টাওয়ার না থাকায় অবস্থান বোঝার উপায় নেই। সেই সময় জলঢাকা উদ্দেশ্যে আসা একটি গাড়ির আওয়াজ পেয়ে আমরা দূর থেকে হাত দেখাই। গাড়িচালক স্থানীয় বাসিন্দা। তিনি জানান জলঢাকা সামনেই। আর বেশি পথ বাকি নেই। নিজেদের অজান্তে অনেকটাই পথ যে আমরা পেরিয়ে এসেছি তা টের পাই। ভদ্রলোক আমাদের জলঢাকা পৌঁছে দেন। আর মিনিট 5/7 একের মধ্যে যখন আমারা জলঢাকা পৌঁছোই ঘড়িতে তখন 5:15 PM। সকাল বেলায় খাওয়া-দাওয়ার প্রথম পর্ব সম্পন্ন করার পর দ্বিতীয় পর্বের আর অবকাশ হয়নি। উপরন্তু বিগত একঘন্টা পদব্রজে বিচরণের ফলস্বরূপ খিদের চোটে নাড়িভুঁড়ি হজম হওয়ার জোগাড়। জলঢাকা পৌঁছে একটা মোমোর দোকান খুঁজে পাই। পরম সুস্বাদু মোমো গোগ্রাসে গিলে খানিক শান্তি মেলে। মূর্তি থেকে আমরা হেঁটে এসেছি শুনে সে দোকানের দিদি বেশ অবাক হয় এবং তার চেয়েও বেশি অবাক হয় সেই একই পথে একই ভাবে আমরা আবার মূর্তি ফিরে যাব শুনে। মূর্তি উদ্দেশ্যে যখন আমরা রওনা হই চারিদিকে তখন বিকেলের আলো। মেঘলা আকাশের দরুন সে আলোর উজ্জ্বলতা ম্লান হলেও গাছের পাতার রং তখনও কালো হতে শুরু করেনি। কোনো না কোনো গাড়ি আবার ঠিক পেয়ে যাবো এই ভরসায় আমরা পা বাড়াই জঙ্গলের পথে। সম্ভবত দু-আড়াই কিমি পথ পার হই আনন্দেই। কিন্তু ঘড়িতে যখন প্রায় 6:35 PM তখনও কোন গাড়ির দেখা মেলে না। এদিকে সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোর আভাস ক্রমশ কমতে থাকে। অপর্যাপ্ত আলোয় ক্রমে হ্রাস পেতে থাকে দূরের দৃষ্টিশক্তি। মনের মধ্যে ক্রমশ একটা বিপদের আশঙ্কা জাগতে শুরু করে। বিপদের সে আশঙ্কা বদ্ধমূল হয় ঠিক তখন যখন আলোর অবশিষ্টাংশকে নির্মূল করে হঠাৎ নামা অন্ধকারে আমরা সম্পূর্ণরুপে দৃষ্টিশক্তি হারাই। জঙ্গলে আকস্মিক ঘনিয়ে আসা অন্ধকার যে এমন ভয়ঙ্কর হতে পারে সে সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণাই ছিল না। ধারণা যখন তৈরি হয় তখন আমরা নিরুপায়। মেঘলা রাতে অভয়ারণ্যে নেমে আসা ঘন কালো অন্ধকারে তখন সবকিছু মিলেমিশে একাকার। রাস্তাঘাট, গাছপালা, আকাশ, জঙ্গলের আর কোন পৃথক অস্তিত্ব নেই। এ জঙ্গল তখন আর ঘুরতে আসা সে জঙ্গল নয়। জনমানব শূন্য এ অরণ্য তখন দুর্ভেদ্য অন্ধকারে গ্রাস করা এক অজানা আতঙ্কের আহ্বান। সে পরিস্থিতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। হঠাৎ দিক নির্ধারণ ক্ষমতা হারিয়ে আমরা তখন দুই অসহায় অন্ধ পথচারী। সামান্য কিছু জোনাকি পোকা ছাড়া আলোর কোনো চিহ্ন নেই। এমনকি মোবাইলে আলো জ্বেলেও কোনো ফল হয়না। গাঢ় অন্ধকারে হাতের আলো কেবল পায়ের নখ স্পর্শ করে মাত্র। বোঝা যায় এ অন্ধকারে মোবাইলের আলো জ্বালা বা না জ্বালা সমান। বরং জঙ্গলে এ আলো জ্বালালে বিপদের সম্ভাবনাই বেশি। অতঃপর আন্দাজে অন্ধকার হাতড়ানোই তখন আমাদের একমাত্র উপায়। মোবাইলে টাওয়ার না থাকায় অবস্থান নির্ণয়ের চিন্তাও অমূলক। একই পথে প্রত্যাবর্তন। দিক পরিবর্তনের কোনো জটিলতাও নেই। অথচ চেনা পথেই পথ হারিয়ে দিশেহারা আমরা।
হঠাৎ এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে মনের সাহস ও মাথার বুদ্ধি দুটোই প্রায় লোপ পেলেও আমরা থেমে যাইনি। থামার কোনো উপায়ও নেই। মূর্তি আমাদের পৌঁছতেই হবে। কথা বলার মতো মানসিক পরিস্থিতিও নেই। প্রাণ সঙ্কটে পড়ে তখন বাকরুদ্ধ আমারা। নিঃশ্বাস প্রশ্বাস এর আওয়াজ স্পষ্ট। জঙ্গলের ভেতর থেকে ভেসে আসা অজানা শব্দ বাড়িয়ে দেয় হৃদস্পন্দনের গতিবেগ। বিকেলের ভালোলাগা ঝিঁঝিঁর ডাকেও ভয়ের ইঙ্গিত। মনে পড়ে একের পর এক ভয়ঙ্কর সব জীবজন্তুদের কথা। হাতি, চিতাবাঘ, বাইসন যেকোনো একটির সম্মুখ দর্শন ঘটলেই জীবন বিপন্ন। উপরন্তু বর্ষাকাল। সাপখোপ পোকামাকড় দের পারিবারিক ভ্রমণের আদর্শ সময়কাল। এদিকে আত্মরক্ষার অস্ত্র হিসেবে একটা গাছের ডালও হাতে নেই। পাশাপাশি থেকেও অন্ধকারে পরস্পরকে দেখা যায়না। পায়ের শব্দ শুনে উপস্থিতি অনুমান করতে হয়। একজোট হতে একে অপরের হাত ধরি আমারা। বিপদ ঘটলে কতটা কি করতে পারব জানিনা তবে যা করব দুজনে একসঙ্গে করব এটাই উদ্দেশ্য। পরস্পরের অনিশ্চিত অবস্থান সুনিশ্চিত হলে মনে সাহস বাড়ে কিছুটা। ইতিমধ্যে মিনিট কুড়ি (আনুমানিক) অন্ধকার হাতরানোর পরেও দৃষ্টিশক্তির বিন্দুমাত্র তারতম্য ঘটেনা। আন্দাজে যতটা সম্ভব পিচ রাস্তার ওপর থাকার চেষ্টায় মাঝে মাঝে রাস্তার ডানদিক অথবা বাঁ দিকের ঝোপজঙ্গলে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসতে হয়। অন্ধকারে হোঁচট খেতে হয় বারংবার। তবু লক্ষ্য স্থির রেখে পথ চলতে বাধ্য আমরা।
শেষ পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ে মূর্তির রিসোর্ট গুলোর আলো চোখে পড়ার পর। যদিও সে আলোর অবস্থান তখনও দু-এক কিমি দূরত্ব নির্দেশ করে। তবে গভীর জঙ্গল ততক্ষণে আমরা পেরিয়ে এসেছি। অন্ধকার নিজের ঘনত্ব কমিয়ে আমাদের দৃষ্টিশক্তি আংশিক ফেরত দিয়েছে। অনেকক্ষণ অন্ধকারে থাকার কারণে মনের ভয়টাও কেটে গেছে অনেকটাই। সাহস ফিরে পেয়ে প্রায় অন্তিমপর্যায়ে এসে এই ঘটনার সাক্ষী রাখতে খানিকটা অডিও রেকর্ডিংও করেছিলাম। অবশেষে যখন মূর্তি নদীর সেতুর উপর পৌঁছোই ঘড়িতে তখন 7:40 PM। জীবন সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেয়ে তখন ভীতি ও আনন্দ মিশ্রিত উত্তেজনায় শেষ পর্যন্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে সক্ষম আমারা। সে রাতে মাত্র দুটি মূর্তিগামী গাড়ির দেখা আমরা পেয়েছিলাম। বারংবার হাত দেখানো সত্ত্বেও তারা কেউই থামতে রাজি হয়নি। পরবর্তীকালে বুঝতে পেরেছিলাম যে না ভেবে নেওয়া একটি ভুল সিদ্ধান্ত মানুষকে কত বড় বিপদের মুখে ফেলতে পারে। আমাদের মত এমন অভিজ্ঞতা কারোর যেন কখনো না হয় এমন টাই কাম্য।
।।ছোট্ট ছুটির ফাঁকে।।
বসন্তের আগমনে বাতাস যখন হাওয়া বদলানো শুরু করলো ঠিক তখনই আমার চঞ্চল হৃদয় বড়ই ব্যাকুল হয়ে উঠলো নিজেকে হাওয়া বদলানোর তাড়নায়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ভেবে পাচ্ছিলাম না কোথায় যাওয়া যায়। সামনে দোল উৎসবের উদ্দীপনায় ভ্রমণ পীপাষু বাঙালি পর্যটকের দল মাস দুয়েক আগে থেকেই সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র গুলো দখল নিয়ে বসে আছে। না পাচ্ছি হোটেল না পাচ্ছি ট্রেনের টিকিট। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে একটা বিয়ের নিমন্ত্রণ পেলাম শিলিগুড়ি থেকে। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। ভাবলাম এ সুযোগ ছাড়া যাবে না একদিকে রথও দেখা হবে অন্য দিকে কলা ও বেচা যাবে। তাই আপাতকালীন টিকিট কেটে ১১মার্চ কাজিরাঙা এক্সপ্রেস ধরে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। বিবাহ অনুষ্ঠানটি স্থাপিত হয়েছিল আলিপুরদুয়া্র ও শিলিগুড়ি এই দুই শহরকে কেন্দ্র করে। তাই তিন দিন ওখানে নানা অনুষ্ঠান ও যাতায়াতের মধ্যে দিয়ে সময় কেটে গেল। চার দিন পর অর্থাৎ ১৬ই মার্চ বেড়িয়ে পড়ি জঙ্গল সাফারি করতে। শিলিগুড়ি থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে শালুগাড়ার অন্তর্গত সেবকের পাদদেশে নতুন করে গড়ে ওঠা বেঙ্গল সাফারি পার্কের উদ্দেশ্যে। পার্কটি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাধারণ প্রবেশমূল্য ৩০টাকা, গাড়ি সাফারির মূল্য ২০০টাকা এবং হাতি সাফারির মূল্য ৩০০টাকা। পার্কটিতে হরিণ,বানর, কচ্ছপ, বনমুরগি, ময়ূর, ভাল্লুক, লেপার্ড, কুমীর এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রজাপতি দেখতে পাওয়া যায়।
এই জায়গায় আরো একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল সেবক কালিবাড়ি। এটিও নতুন করে সেজে উঠেছে কয়েক বছর পূর্বে। আঞ্চলিক ভাবে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া এখানে বাঘপুল (Corrination Bridge) একটি দ্রষ্টব্য স্থান হিসেবে পরিচিত আছে। এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বেশ উপভোগ্য। প্রতিদিন শত শত সিকিম ও কালিম্পং গামী পর্যটকের দল এর পাশদিয়ে চলে যায় কিন্তু এগুলো দেখেন না, কেন জানি না। হয়তো খানিকটা উদাসীনতা, নয়তো বা অজানার অভাব এদের এগুলোকে বঞ্চিত করে। আমি অনুরোধ জানাচ্ছি ঘন্টা তিনেক সময় নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে অথবা যাতায়াতের পথে এগুলি দেখে নিতে। আশা করি হতাশ হবেন না।
১৭ই মার্চ শিলিগুড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি কুচবিহারের উদ্দেশ্যে। ১৬০কিমি. প্রায় ঘন্টা তিনেকের জার্নি। ট্রেন বা বাস দুভাবেই এখানে আসা যায়।আমি অবশ্য বাসেই গেছিলাম। এখানে পৌঁছে প্রথমেই চলে আসি কুচবিহার রাজপ্রাসাদে। এরপর ২৫টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকে পড়ি রাজপ্রাসাদের ভেতরে। প্রাসাদটি বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে অবস্থিত। সামনে বিশাল বড় উদ্যান তার মধ্যে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা রং বেরঙের ফুল ও গাছের সমারোহ। সমস্ত ফাঁকা জায়গা গুলো ঘন সবুজ ঘাসে ভরা তারই মধ্যে বিরাজ করছে জলে ভরা কয়েকটি পরিখা এবং দুই দিক দিয়ে যাতায়াতের জন্য বাঁধানো রাজপথ। ওপর প্রান্তে বিরাজ করছে সুন্দর কারুকার্যে ভরা সুদৃশ্য রাজপ্রাসাদটি। যাহা সকলকে একবাক্যে বিশ্বয় এনে দেয়।
প্রাসাদটির নির্মানশৈলী ইটালিয়ান স্থাপত্যের অনুকরণে গঠিত। ভিতরে সাজানো রয়েছে রাজব্্শের পূর্বপুরুষের ছবি এবং ব্্শানুক্রমিক পরিচিতির বিবরণ। এছাড়া তৎকালীন সময়ে ব্যবহিত মূদ্রা, অস্ত্র, পোশাক ও পরিধেয় অল্্কার সামগ্রী মিউজিয়ামের মাধ্যমে সং ক্ষণ করে রাখা আছে। ভারতবর্ষ স্বাধীনতার পরেও এই রাজাদের রাজত্ব বর্তমান ছিল। কুচবিহারের সেই সময়ে নাম ছিল কামতাপুররাজ্য এবং এর বিস্তৃতি ছিল অধুনা আসাম পর্যন্ত। পরে ভারত সরকার এটি অধিকার করে কামতাপুররাজ্যকে কুচবিহার ও আসামে বিভক্ত করে। এ ভাবেই সমাপ্ত হয়ে যায় কামতাপুরী রাজবাড়ীর ইতিহাস।
কুচবিহারের আরো একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল মদনমোহন মন্দির। এটি কুচবিহার রাজপ্রাসাদ থেকে ১কিমি. দূরত্বে অবস্থিত। জনমুখে শোনা যায় এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও জাগ্রত মন্দির। বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু লোক এখানে আসেন তাদের মনষ্ককামনা পূর্ণ করতে। রাসের সময় এখানে মেলা বসে এবং বহু লোকের সমাগম হয়। এভাবেই ১৭তারিখের সফর সূচী সমাপ্ত করে রাতে ফিরে আসি শিলিগুড়িতে। ১৮ই মার্চে রাতে ট্রেন ধরে ১৯ মার্চ সকালে কলকাতা ফিরে আবার নতুন উদ্দীপনায় পূর্ব কর্ম জীবনে ফিরে যাই। *** সমাপ্ত ***
কোচবিহারের কিছু কথা---
অফিসের কাজে তিন দিনের জন্য গিয়েছিলাম কোচবিহার। ট্রেনেই যেতে যেতে খসড়াটা করে ফেললাম চার সহকর্মী। কাজের ফাঁকে এক দিন বের করে কোথায় ঘুরে আসা যায়। যা দেখলাম বক্সা জয়ন্তী রাজাভাতখাওয়া সাথে যদি বোনাস হিসেবে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যে একটা সাফারি ম্যানেজ করা যায় মন্দ হয় না। নিউ কোচবিহার স্টেশনে নামলাম যখন ভোর 3টে। VIP ওয়েটিং রুম এখানে খোলা থাকে না। Enquiry অফিসে বললে খুলে দেয় AC টিকেট থাকলে। একটু সময় কাটিয়ে ফ্রেশ হয়ে রওনা দিলাম অতিথিনিবাসের উদ্দেশ্যে। তিন দিন ওখানেই থাকার ব্যবস্থা। রুমের নাম কালজানি। সব রুম গুলোই উত্তরবঙ্গের এক একটি নদীর প্রতীকী। ছিমছাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বেশ ভালোই লাগলো। পুরো কোচবিহার শহর জুড়েই এক রাজকীয় ছোঁয়া। বেশির ভাগ প্রশাসনিক ভবনগুলিই পুরণোদিনে রাজবাড়ীর দপ্তর ছিল বলে মনে হয়। কাজ সেরে সন্ধ্যে বেলাই এসে একটা গাড়ি বুক করে নিলাম পরেই দিনের জন্য। কোচবিহার থেকে সোজা জলদাপাড়া ওখানে 3টের সাফারির টিকিট বুক করে বেরিয়ে যাবো বক্সা টাইগার রিজার্ভ। দরদাম করে ঘুর পথে একটু হেঁটে ফিরে এলাম কোচবিহার রাজবাড়ীর সামনে দিয়ে। সকালে বেরিয়ে পড়লাম ডুয়ার্সের উদ্যেশে। কোচবিহারের রাস্তা ঘাট প্রশংসার দাবি রাখে। পিচকালো রাস্তার ওপর দিয়ে আমাদের swift dzire ছুটে চলেছে এক শৃঙ্গ্ গন্ডারের প্রাকৃতিক বাসস্থানের দিকে। জলদাপাড়া অভয়ারণ্য পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে 216 বর্গ কিলোমিটার অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। এরই সংলগ্ন চিলাপাতা আর বক্সা টাইগার রিজার্ভ। চিলাপাতা বুক চিরে রাস্তা চলে এলো জলদাপাড়াতে। সাফারির জীপ বুক করে পরোটা ঘুগনি রসগোল্লা সহযোগে প্রাতরাশ করে বেরিয়ে পড়লাম বক্সার উদ্যেশে। বক্সার এন্ট্রিতে টিকিট কেটে ঢুকলাম বক্সার বুকে। অরণ্যের নিস্তব্ধতা ভেঙে গাড়ি এসে দাঁড়ালো রাজাভাতখাওয়া মিউজিয়ামে। এরপর জয়ন্তী। দূরের পাহাড়ের সারির হাতছানি। স্থানীয়রা বলে "ভুটান দেশের ভুটান পাহাড়". ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক আর দূরে জঙ্গলের ভেতরে কোনো অজানা মন্দিরের অনবরত বেজে চলা ঘন্টা। চালককে জিগ্যেস করতে বললো "দাদা ওটা একটা পোকা আসে।" গাড়ি এসে থামল জয়ন্তীর তীরে জয়ন্তী গ্রামে। ঠিক যেমন ছবিতে দেখা। একটি শীর্ণ নদী, সাদা বালির চর, সবুজে মোড়া, পাহাড় নীল আকাশ। এখানে একরাত থাকার এক রাশ আশা নিয়ে ফিরে এলাম। দুপুরে "কাতল" মাছের ঝোল ভাত খেয়ে জলদাপাড়া ঢুকলাম পৌনে তিনটে নাগাদ। সাফারির গাড়ি নম্বর চারে চেপে বসলাম। গাইড ড্রাইভার ছাড়াও আমরা 6 জন। জঙ্গলের শুরুতেই স্বাগত জানালো একাকী এক বার্কিং ডিয়ার। দূরে ডেকে চলে যাচ্ছে জলদাপাড়ার খ্যাতনামা Malabar pied hornbill. চারিদিকে ময়ূরের চারণভূমি। সর্বমোট চারটে ভিউ পয়েন্ট। প্রথম ভিউ পয়েন্টেই দেখা মিললো greater one-horned rhinoceros বা great Indian rhinoceros এর। পিঠের উপর এক নীলকন্ঠ আর ফিঙেকে বহন করে সাভানা ঘাসের ভোজনে ব্যস্ত মহারাজ। Elephant Safari তে ব্যবহৃত কিছু হাতির দেখা মিললেও বুনো হাতির দেখা পাওয়া যায়নি। দ্বিতীয় ভিউ পয়েন্টে এসে দেখা পেলাম বুনো শুয়োর আর Red-watted Lapwing এর। হটাৎ খবর এক যে তৃতীয় ভিউ পয়েন্ট অর্থাৎ হলং বাংলোতে বাইসনেরা সদলবলে এসেছে। গিয়ে দেখি ঠিক তাই। পরিখার এপাশ থেকে বসে দেখা যাচ্ছে বাইসনের দল আর এক জোড়া ময়ূর। হলং বাংলোর মহিমাটা আজ পুরোটা বুঝতে পারলাম। চতুর্থ ভিউ পয়েন্টটা শুধুমাত্র সন্ধ্যের সাফারিতে দেখানো হয়। আসামের বিহু নাচ। 5 টে লোকনৃত্য পরিবেশিত হয়। জীবনের একটা স্মরনীয় সন্ধ্যে কাটিয়ে ফিরে এলাম কালজানি তে। পরের দিন সকালে গিয়েছিলাম কোচবিহার প্যালেস আর মদন মোহন মন্দির। ফিরতে ফিরতে অর্ধাঙ্গিনীর "কেমন ঘোরা হলো?" এর উত্তরে একটু তাই কবিসত্ত্বা জাগিয়ে লিখেই ফেললাম, আমার ভ্রমনাক্রান্ত মন, বিষন্ন হয়েছে যখন। আমি ঘুরেছি আমি দেখেছি, এক পাহাড়ের কোলে নদী আর মেঘেদের মাঝে জীবন। টুকিটাকি তথ্য :- 1. কোচবিহার গেলে থাকতে পারেন জেলা পরিষদ গেস্ট হাউসে অর্থাৎ অথিতিনিবাসে। বুকিং লিঙ্ক http://www.coochbeharzillaparishad.in রুম- Rs. 450/- to Rs. 1500/- বুকিং অনলাইনে। 2. হলং বুকিং অনলাইন। কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে থেকে করতে হয়। Wildlife valo lagle lifetime experience guaranteed. এছাড়া জলদাপাড়া ট্যুরিস্ট লজ রয়েছে।https://www.wbtdcl.com 3. বক্সা , জয়ন্তীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। বক্সার entry fee Rs 100/- জন প্রতি। car 300/- (প্রতিদিন) Bike 20/-(শনি রবি বন্ধ) ।wild animal হাতি ছাড়া পাওয়া চাপের। 4 . জলদাপাড়াতে সম্ভাবনা বেশি। *3টের সাফারি recommanded। Rs. 2400 per জীপ ছয়জন max। পরিচয়পত্রের xerox must। 5. phuentsholing(ভুটান) ও কোচবিহার থেকে ঘোরা যায় । পরিচয় পত্র রাখবেন। 6. কোচবিহার রাজবাড়ী 10 টা 5 টা খোলা। টিকিট Rs. 25/-
Mahal Diram ,Namta ki kau sunechen ? Jak sonen ni tahole ?.Ata Mahananda Wild Life Sanctuary ar Moddhe e Pore ,Ucchota Motamuti 4880 ft Somudratal theke .Sittong ar khub kache Kurseong ar Moddhe e pore .Ase paser ghure dekhar Sthan Latpancchar,Mongpu ,Bagora . R sathe ache Mt.Kanchangha ke khub kach theke upolobdhi korar Hatchani . Charidike Tea Garden nia satti e ak monomugdhokor poribes a Apnar Monpran Sob kichu harate baddho
অজানার সন্ধানে গৌড়বঙ্গ
প্রথমেই জানিয়ে রাখি আজ আমি আপনাদের যে জায়গাটার সম্পর্কে বলতে চলেছি সেটি কোনো টুরিস্ট স্পট নয়, সেজন্য খুব একটা ভালো নাও লাগতে পারে অনেকের। কিন্ত তবুও পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইল। 2016 সালের সেপ্টেম্বর মাস, গঙ্গা নদীর পাড় ভাঙন ও স্থানীয় মানুষদের জীবনযাত্রার কিছু তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আমরা পঞ্চানন্দপুর গ্রাম ছুটে যায়। এটি গৌড় বঙ্গের গঙ্গা তীরের ছোট্ট একটি গ্রাম। আমাদের দলের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল 7। রওনা হলাম হাটেবাজারে এক্সপ্রেস এ শিয়ালদহ থেকে রাতে। আমাদের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ছিল যারা ফারাক্কা ব্যারেজ দেখেনি , আবার অনেকের মধ্যে অজানা তথ্য সংগ্রহের আনন্দ। সব মিলিয়ে একটা চাপা উত্তেজনা। ভোর 5 টা নাগাদ ট্রেন পৌছালো মালদা স্টেশনে। সেখান থেকে প্রথমে টোটো তারপর বাসে করে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। ঘড়ির কাটা সকাল 8 টার আশপাশ, আমরা 7 জন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম তথ্য সংগ্রহের কাজে। প্রথমটা ভালো লাগলেও পরবর্তীতে সবার মনটা বিষাদে ভরে উঠলো। প্রকৃতি দেবী যেন রুষ্ট হয়ে বারংবার তান্ডব নিত্য করেছেন এই অঞ্চলে। চারিদিকে শুধুই ধ্বংসের ছাপ। বাঁচার লড়াইয়ে সদ্যজাত থেকে প্রবীণ সবাই যেন এক একজন সৈনিক এখানে। যাদের জীবনে বিনোদনের কোনো অস্তিত্ব নেই, নেই আমাদের মতোন ভ্রমণ পিপাসা। আসে শুধু বেঁচে থাকার জন্য ভগবাদের কাছে করুন আর্তি। ছোট ছোট শিশুদের প্রত্যেকটি দিনের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয় কাজের মধ্যে দিয়ে। দুমুঠো অন্য সংস্থানের জন্য প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মাঝ গঙ্গায় চলছে মৎস আহরণ। এইসব কাজের ফাঁকে পথ চলতি শিশুদের হাতে তুলে দিলাম আমাদের সাধ্য মতোন কিছু খাবার। মনে হতে লাগলো কতো যুগ পিছিয়ে এসেছি আমরা। বিকাল 3 টে, ফেরার পালা এবার। বাস ধরে পৌছালাম ইংলিশ বাজার। তারপর পায়ে হেটে স্টেশন। রাতের গৌর এক্সপ্রেস এ উঠে পড়লাম কোলকাতা ফেরার জন্য। ভোর হতেই পৌঁছে গেলাম কোলকাতা। সকালের সূর্যটা দেখে মনে হতে লাগলো একটি যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূর্য দেখলাম যেন। প্রকৃতির কাছে আমরা যেন সকলেই অসহায়, সদ্যজাত শিশু। একারনেই প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে আমাদের নতুন যুগের ভিত্তিপ্রস্তর বসাতে হবে। আর অন্যথায় হলে হয়তো চারিদিকে দেখা যাবে পঞ্চানন্দপুর গ্রাম, হয়তো থাকবেনা ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের এই গ্রূপে পোস্ট করার কিছু। ভালো লাগলে comment ও like করবেন। এবং share করে সকলকে দেখার সুযোগ করে দেবেন এই আশা রাখবো। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মেঘবাড়ি!! এনজেপি থেকে মোটে দু'ঘন্টার রাস্তা পেরোলেই পেয়ে যাবেন মেঘেদের ঘরবাড়ি। আর এ ঘরবাড়ির কোন পাকা দলিল নেই, মিউনিসিপালিটি র প্ল্যান নেই, এমনকি জমি রেজিস্ট্রেশন ও নেই। যেমন খুশি বানানো আর পরমুহূর্তে ই ভেঙ্গে আবার নতুন বানানো। হাছন রাজার কথায় " কী ঘর বানাইমু আমি শূন্যের ও মাঝার"... অবাক হচ্ছেন তো! তাহলে যে কোন দিন এনজেপি পৌঁছে একটা গাড়ি করে চলে যান ব্যাগোরা। কার্শিয়াং থেকে একটু এগিয়ে দিলারাম। ওখান থেকে ডান দিকে খাড়া চড়াই ধরে ৭২০০ ফিট উঁচুতে ব্যাগোরা। ঘন জঙ্গলের মধ্যে একটা ঘুমিয়ে পড়া নিঝুম গ্রাম। থাকার জায়গা একটাই। একটা উঁচু টিলার উপর মিসেস ডিকির হোম স্টে। বিলাসিতা পাবেন না, উষ্ণ আতিথেয়তা পাবেন, বৈভব পাবেন না, আন্তরিকতা পাবেন। পাবেন যখন খুশি চা, পাবেন সাদা মুচমুচে লুচির সঙ্গে মায়াময় আলুর তরকারি, গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের সঙ্গে অচেনা পাহাড়ি স্বাদের ডিমের ঝোল, ঠান্ডা শীতের রাতে আদুরে গরম চাপাটির সঙ্গে খুনখারাবি রঙের ফাটাফাটি স্বাদের মুর্গির কারি আর ঘনযৌবনা চাটনি। রাত গভীর হলে চারিদিকের পাহাড় গুলো মেঘে ঢেকে যাবে..দূরে পাইন গাছগুলোর মাথায় আধভাঙা চাঁদের আলো এক অলীক স্বপ্নের দেশ তৈরী করবে, আপনার মনে হবে এখুনি বুঝি পরীরা এখানে নেমে আসবে। ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া ভুলে যাবেন, ভুলে যাবেন জীবনের সমস্ত না পাওয়ার দুঃখ, মন থেকে মুছে যাবে দৈনন্দিন জীবনের গ্লানি, মান-অপমান, সাংসারিক শতেক ঝামেলার কথা। নিজেকে চিনবেন, অনুভব করবেন আপনার মধ্যের সেই সুউচ্চ মানুষটিকে । যান, ঘুরে আসুন। ফিরে এসে যদি আমাকে ফোন করে " থ্যাঙ্ক ইউ" না বলেন...কথা দিচ্ছি প্রাণের চেয়েও প্রিয় সিগারেট ও ছেড়ে দেব। বিঃদ্রঃ ... গোটা ট্যুরটাই কিন্তু নারী বিবর্জিত। ৭০০০ ফুট উঁচুতে ও যদি বউয়ের সঙ্গে ঝগড়া করতে হয়, তাহলে না যাওয়াই ভালো। ঝগড়ার আওয়াজ পেলে মেঘেরা বাপ বাপ করে দেশ ছেড়ে পালাবে। Post By-Koushik Banerjee
লাটপান্চার ভ্রমন এবার আমাদের গন্তব্য ছিল লাটপান্চার, উদ্দেশ্য পাখী দেখা আর ছবি তোলা। টিকিট তো কাটাই ছিল আগে। গত শুক্রবার আমরা দার্জিলিং মেল ধরে শনিবার সকাল 8 টায় পৌছলাম New Jalpaiguri তবে এবার আর ব্যাচেলর ট্রিপ করা যায় নি। গাড়ি নিয়ে সোজা সেবক, breakfast সেরে 1 ঘন্টায় লাটপান্চার পৌছলাম। পথে বেশ কিছু কমন species পেলাম। একটু ফ্রেশ হয়ে লান্চ সেরে গেলাম Mahananda Wildlife Sanctuary। ঘন জংগল চারদিকে, শুনশান, কিছু পাখির আওয়াজ ছাড়া কোন শব্দ নেই। গাড়ি যেখানে থামল তার পর থেকেই গভীর জংগল। আনন্দ সহকারে হাটা শুরু করতেই ড্রাইভার আর গাইড এর সতর্কবানী বেশিদূর যাওয়া যাবে না কারন ওটা কোর এরিয়া। আগের দিন নাকি রাস্তায় হাতি দেখা গেছে। BDO সাহেবকে তাড়া করেছিল। বেশ মনমরা হয়ে পড়লাম। আমার ছেলে (3 years) এর মধ্যে গাড়িতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল, আর আমরা আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগলাম। যদিও ভাল কোন ছবি পাওয়া গেল না, ঘন জংগল এর কারন এ। পরদিন ভোরবেলা আমাদের আবার জংগল যাত্রা শুরু হল, তবে শুধু ছেলেরা। উদ্দেশ্য Rufous Necked Hornbill ( Endangered) ক্যামেরাবন্দি করা। অনেক টিম ছিল সেদিন, প্রত্যেক টিম এর সাথে আলাদা আলাদা গাইড, কারন গাইড ছাড়া ওদের ডেরা খুজে পাওয়া সম্ভব না। গ্রাম ছাড়িয়ে পাহাড় বেয়ে অনেক নীচে নামার পর ঘন জংগল এর মধ্যে এক জায়গায় বসলাম। সব টিম ই জড়ো হল ওখানে। এরপর শুরু হল অনন্ত প্রতীক্ষা, কখন যে তেনারা আসবেন কেউ জানে না। কিন্তু বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হল না, একটা পাখী এসে বসল গাছের ডাল এ। তারপর আর একটা, তারপর আর একটা, মোট 4 টে পাখির দেখা পেলাম। সবাই মনের আনন্দে ছবি তুললাম। দুপুরে লান্চ এর পর আবার সবাই মিলে বের হলাম। মেন রাস্তা ধরে হাটতে লাগলাম। ছোট্ট গ্রাম টা শেষ হতেই গাছপালা শুরু হল। পাখিও পেলাম বেশ কিছু। এদিকে হোটেলে ফেরার পর সবার খুব খিদে পেয়ে গেছিল। ঠিক করলাম মোমো খাব, জিগেস করে জানা গেল একটাই দোকান আছে কিন্তু প্রায় 1 কিমি দুরে। তাতে কি, আমরা হেটেই বেরিয়ে পরলাম। চারদিক ঘুঠঘুটে অন্ধকার, টর্চ নিয়ে হাটছি, সন্ধ্যা 7 টায় মনে হচ্ছে মাঝরাত, কোনো লোকজন নেই রাস্তা ফাকা। দারুন পরিবেশ, উপরি পাওনা ঝকঝকে চাঁদের আলো, দূরে পাহাড় এর লাইট দেখা যাচ্ছে। এই 1 কিমি হাঁটা টা অনেকদিন মনে থাকবে। পরদিন সকালে আমারা আবার ছেলেরা মিলে অন্য দিকে গেলাম। উদ্দেশ্য অন্য angle থেকে ছবি তোলা। কিন্তু এদিন আর তাদের দেখাই পেলাম না কাছ থেকে। মাথার অনেক ওপর দিয়ে কিছুক্ষন ওড়াউড়ি দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হল। সেদিন রাতে আমাদের থাকার কথা ছিল অহলদাড়া, যেখান থেকে 360 degree view পাওয়া যায়, একদিকে কান্চনজন্ঘা রেন্জ আর অন্য দিকে তিস্তা। কিন্তু বেলা থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমরা রাত্রিযাপন এর প্ল্যান ক্যানসেল করলাম, গাড়ি নিয়ে ঘুরতে গেলাম কিছুক্ষন এর জন্য। পথে নামথিং লেক দেখলাম। অহলদাড়া যখন পৌছলাম তখন বেশ বৃস্টি হচ্ছে, চারদিক সাদা, প্রচন্ড ঠান্ডা হাওয়া। বেশিক্ষন ওখানে কাটানো গেল না। পরদিন আমরা ব্রেকফাস্ট করে একদম চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম গেলাম Shivkhola Adventure Camp, মনমুগ্ধকর জায়গা। অপরূপ নদীর সৌন্দর্য্য। চারদিকে উঁচু পাহাড়। কিছু সময় কাটিয়ে আমরা লান্চ সেরে New Jalpaiguri দিকে রওনা হলাম। ফেরার ট্রেন ধরতে হবে যে। Post By-Soumik Sett
নিউ জলপাইগুড়ি থেকে কম বেশি তিন ঘন্টার পথ baramangwa . উচ্চতার নিরিখে খুব বেশি না হলেও মায়াবী রূপ মন ছুঁতে বাধ্য। পাহাড়কন্যা অপেক্ষায় থাকে অতিথি আহ্বানে । আর পথ চলায় সঙ্গী পাবেন মেঘের আসা যাওয়া। সুন্দর একটি দৃশ্য দৃশ্যমান হয় যেখানে তিনকন্যা (সিকিম _ কালিংপঙ্ _ দার্জিলিং )মুখোমুখি হয় ত্রীবেনীতে। সেখানে আবার তিস্তা-রঙ্গিত হাত ধরাধরি করেছে। 😊 পথে পড়বে ক্লান্তিহীন দন্ডায়মান পাইন গাছের সারি। বুক চিরে তার চলতে গিয়ে দেখা মিলবে এক ছোট্টো সরবর , কুয়াশা আগলে রেখেছে যেন তাকে। পরিচিত সরবরের থেকে একটু অন্যরকম ; যেন অন্তহীন পথ চলা তার হারিয়ে গেছে কুয়াশার বুকে। সব শেষে মনে হয়ে যেন সব ধূসরতা মলিন হয়ে শুধু সবুজ টুকুই সত্যি হোক। Post By-Soumi Banerjee
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |