আমার ভালোলাগা একটি ছোট্ট সফর ---- মংপং - ইট,কাঠ, পাথরের কৃত্রিম জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এক/দুদিনের জন্য প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে এক আইডিয়াল ডেষ্টিনেশন -- মংপং। অবশ্যই যারা নৈঃশব্দ্য পছন্দ করে। এখানে নেই কোনো মানুষের কোলাহল, নেই কোনো যানবাহনের আওয়াজ ,শুধু উপভোগ করতে পারা যায় শালপাতার শিরশিরানি আর তিস্তা নদীর কুলকুল বয়ে চলা। এইভাবে প্রকৃতির মাঝে কাটিয়ে দেওয়া যায় এক/দুদিন। এখানে আসাটা খুব সহজ শিলিগুড়ি থেকে মাত্র 30 কিলোমিটার, সেবক করোনেশন ব্রিজ পেরিয়ে কিছুটা রাস্তা অতিক্রম করলেই মংপং পৌঁছে যাওয়া যায়।এখানে থাকার জন্য ফরেষ্ট নেচার কটেজ আছে, যেখানে প্রকৃতিকে একান্তে উপলব্ধি করা আর জঙ্গলের বুনো, সো়ঁদা গন্ধের অনুভবে শিহরিত হওয়ার জন্য এক কথায় অনবদ্য,যার রেশ মনের কোঠায় রয়ে যায় অনেক দিন পর্যন্ত ----------- Post By:- Subrata Bapi Biswas
0 Comments
গ্রামের নাম লেপচাখা, আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সা-জয়ন্তি ন্যাশনাল পার্ক এর একটি অংশ। এই জায়গাটিকে heaven of dooars বলা হয়, কেন বলা হয় সেটা October - December যেকোন দিন ওখানে গেলেই বোঝা যাবে। যদি সেটা পূর্ণিমার রাত হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। রাজাভাতখাওয়া থেকে প্রায় ১৫ কিমি গাড়িতে করে যাবার পর ৬ কিমি Trek. পথে পড়বে বক্সা ফোর্ট এর ভগ্নাবশেষ, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা স্বাধীনতা সংগ্রামী বন্দী বিপ্লবীদের উদ্দেশ্যে লেখা কবিতার স্তম্ভ ছাড়া আর তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। লেপচাখাতে কয়েকটি home stay আছে, আছে সন্ধ্যায় camp fire এর সুব্যাবস্থা আর নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য। সকালে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখে জটায়ুর সেই উক্তিটি মনে পড়ে যায় - "এ কোথায় এলাম মশাই "। Post By:- Atanu Santra
ভ্রমণ • . অন্যরকম চলাচল অজয় কুমার দত্ত ৮-১২-২০১৭ ভাবলাম এবার একটু অচেনা পাহাড়ে যাই। অচেনা আর কি~ সেই তো মা দুর্গার পিতৃভূমি হিমালয় ! বারবার হাত নাড়ে। তবে এবার একটু অন্য অ্যাঙ্গেলে! উত্তরবাংলায় এতগুলো পাহাড়ী গ্রাম রয়েছে যেখানে প্রকৃতি যেন উজার করে ঢেলেছে রূপের সাজি। ওরই মাঝে নিজেকে আলাদা করে চেনাল লাটপাঞ্চোর। নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে চলে যাওয়া যায় অনায়াসে গাড়ি রিজার্ভ করে। অথবা গ্যাংটক যাওয়ার যে কোন বাস বা গাড়িতে চেপে ঘন্টা দেড়েক পর নামতে হবে কালিঝোরা। সেখান থেকে বাঁদিকে খাড়াই ভাঙাচোরা পাহাড়ী পথে আরও পঁয়তাল্লিশ মিনিট দৌড়ে গাড়ি পৌঁছে যাবে এই সুন্দর লেপচা গ্রামটিতে। যেতে যেতেই অনাবিল আকাশ পাহাড় আমাদের দেখে আন্তরিক হাসলো। গ্রাম মানে গ্রামই ! দোকান চোখে পড়লো তিনচারটি~ ওই ছোটখাট All purpose shop. হোটেল কিচ্ছু নেই~ থাকতে হবে Home stay করে। আগে থেকেই বুক করে গেছলাম।মালিক খুব ভালো সহায়তাকারী মানুষ~ মুখে অমায়িক হাসি লেগেই আছে। নীচে নিজেরা থাকেন আর দোতলা তিনতলা ভ্রমণার্থী মানুষদের জন্যে। আমরা সবচেয়ে ওপরেই কোনার ঘরটা পেয়েছিলাম যার দু’দিকে বিরাট দু’টি জানালায় চোখ মেলে থাকা যায় গাছপালা ছাওয়া পাহাড়ের দিকে। আর রোদে ঝলমল ব্যালকনি তো আছেই। ঘরোয়া ভাবে তৈরী দারুণ স্বাদের খাওয়াদাওয়া মনকে খুশি করবেই। এখন আরও কয়েকজন Home stay আরম্ভ করছে দেখলাম। কয়েকটা বাড়ি পড়েই দোতলা বিল্ডিংয়ে ইংলিশ মিডিয়ম স্কুল~ ফুটফুটে ছেলেমেয়ে শিশুরা সার বেঁধে যায় আবার সার বেঁধেই ফিরে আসে বাড়িতে। প্র৳তিটি বাড়িতে টবে ফুলের বাগান~ রঙবেরঙের জানা-অজানা সব ফুল ! সূর্যাস্ত বড় সুন্দর দেখা গেল তিনতলার বারান্দা থেকে। পশ্চিমের আকাশ একদম লালে লাল। বলতে গেলে ব্যালকনিটাই View Point. ৯-১২-২০১৭ ভোর হচ্ছে। সূর্যটা মুখ বাড়াচ্ছে ধীরে ধীরে। আমাদের হর্ণবিল হোম স্টে-র বারান্দা থেকেই দেখছি পাহাড় মেঘের ফাঁক-ফোকরে সূর্যের উত্থান। আজ বেলাতে গেলাম চটকপুর। এখানে জঙ্গলের মধ্যে পাইন গাছের সারি পাশে রেখে অনেকটা নীচে নেমে গেলাম। কড়া রোদ আর ঠান্ডা হাওয়ার মিশেলে এক অদ্ভূত অনুভূতি। তারপর ওপরে অন্য রাস্তায় হেঁটে ফুলের বাগান, বাঁধাকপি মূলোর ক্ষেত~ আগে তো দেখি নি তেমন~ খুবই ভালো লাগলো। আর চলার পথে প্রকৃতি অনুপম-মনোরম- স্নিগ্ধ ! মন উদাস করে দেয়। তিনটে নাগাদ ফিরে এসে খাওয়া দাওয়া। রাস্তায় বা চটকপুরে সামান্য টিফিন ছাড়া কিছুই পেলাম না~ এত নির্জন ! ১০-১২-২০১৭ সকালে চা-টা খেয়ে গাড়ি নিয়ে গেলাম মহানন্দা অভয়ারণ্যে। ক্যামেরা বাইনোকুলার ঝুলিয়ে, জ্যাকেট টুপি জড়িয়ে এক এক্সপেডিশন~ উদ্দেশ্য পাখি দেখা। বিশেষ করে হর্নবিল বা ধনেশ পাখি দেখার খুব আগ্রহ ছিল। লাটপাঞ্চোরে আসার মূল উদ্দেশ্যই তো হর্নবিল ! হাজার পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে~ কিন্তু দেড় ঘন্টা ঘন জঙ্গলের মধ্যে ঘুরেও হর্নবিলের দেখা পেলাম না। মাঝখান থেকে পাখির খোঁজে ঊর্দ্ধমুখী হয়ে ঘাড় ব্যথা ! আরও ধৈর্য্য দরকার ছিল বুঝতে পারছি। গাইডও দরকার যে আরও গহনে নিয়ে যাবে আর রেকর্ড করা পাখির ডাক শুনিয়ে পাখি ডাকবে। কিন্তু সময় কম~ তাই ফিরে চা-জলখাবার খেয়ে আবার গাড়িতে ছুট। আজকের গন্তব্য আলহা-দারা। পথে সেলফু নামে একটা গ্রামে কমলালেবুর বাগান। প্রায় সব বাড়িতেই উঠোনে বাগানে গাছগুলি কমলায় ভরে রয়েছে। সবুজপাতা ঢেকে দিয়ে সোনারঙের ছটা। কিনতে চাইলাম~ দিল না। বলে সব গাছ নাকি লীজ দেওয়া আছে। আমাদের ড্রাইভার একজনকে খুঁজে বার করলো যে দাম চাইছে কোলকাতার বাজারের সমতুল। আমাদের ইচ্ছে নিজহাতে বেছে গোটা দশেক কমলা গাছ থেকে তুলবার। কিন্তু দেবে না ! অগত্যা লুকিয়ে দু’টো গাছ থেকে ছিঁড়েই নেওয়া হলো~ কে নিল বুঝতেই পারছো ! তারপর ঘুরে এলাম সিটং। এটা একটু নীচে। সিটংই আসলে বনেদী কমলা উৎপাদন ক্ষেত্র। কিন্তু কোন সংক্রামক রোগে গাছগুলো সব মরে যাওয়ায় এবার কমলা হয়ই নি তেমন। এছাড়া সিটংয়ে মেলে সিনকোনা গাছের দেখা। কুইনাইন্ তৈরি হয়। আর না ঘুরে আমরা সোজা চলে এলাম আহাল-দারা গ্রামে। এটি আরও অজ গ্রাম। তবে যা আছে তা বুক ভরিয়ে মন জুড়িয়ে দেয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা এখান থেকে অনেক বড় আকারে পরিষ্কার দেখা যায়। লোকে দার্জিলিং টাইগার হিলে ছোটে সানরাইজ দেখতে। কিন্তু সেখানে কাঞ্চনজঙ্ঘার মুল অংশটিই শুধু নজরে আসে। আর আহাল-দারা থেকে দেখা যায় বরফে ঢাকা পুরো কাঞ্চনজঙ্ঘা রেঞ্জটাই। আজ সূর্যাস্তে দেখলাম সাদা বরফের ওপর লাল আলোর খেলা। আর পুরোটাই আমাদের কটেজ থেকে বেরিয়ে ঠিক সামনে View Point-এ দাঁড়িয়ে ! কাল সূর্যোদয় যে কেমন হবে ভাবনাটাই রোমাঞ্চকর~ অবশ্য যদি কুয়াসা না থাকে। এছাড়া আহাল-দারা থেকে দেখা যায় তিস্তা নদী, পেডং, কালিম্পং, চটকপুর, কার্সিয়াং, সিকিম এইসব। মানে View Point-এ দাঁড়ালে দশ দিকই চোখের সামনে মেলা। এজন্য এই জায়গাকে ৩৬০ ডিগ্রীও বলেও লোকে চেনে। সন্ধ্যা নামলেই পাহাড়ী শহর-গ্রামে আলো জ্বলে ঝিকমিক করে অপরূপ দেখায়। আর আকাশ ভরা অসংখ্য তারা যা মেট্রোপলিস-এ দুর্লভ। তবে ঠান্ডা কিন্তু খুব। দিনে কড়া রোদ রাতের শৈত্য আহ্বান করে। পরদিন শেষরাতেই উঠে পড়ি। একটা মুহূর্তও যেন হারিয়ে না যায় ! আকাশ লাল হচ্ছে ! কালো মেঘ চিরে আগুনের ছটা ! আরও একটু পরে পাহাড়ের মাথা থেকে মুখ বাড়ালো লাল গোলক~ প্রথমে একটু~তারপর যেন প্রতি সেকেন্ডেই আত্মপ্রকাশ। লালে লাল আকাশ! কিন্তু শুধু ওদিকেই চেয়ে থাকলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বন্ধু~ উল্টোদিকে সমানতালে রঙ বদলে চলেছে যে কাঞ্চনজঙ্ঘা ! প্রথমে crimson বা সিঁদুর রং~ তারপর লাল ! সূর্যের তেজ আরএকটু বাড়তে কাঞ্চনচূড়ো হলো কমলার মতো রাঙা। সবশুদ্ধ মিনিট পনেরর ভেতর এপিসোড শেষ~ রিপিট টেলিকাস্ট আবার কাল ভোরে। ততক্ষণে আকাশ ঝলমল করছে মিঠে রোদে আর কাঞ্চনজঙ্ঘা বরফের আচ্ছাদনে ঝকমকে সাদা। ক্যান্টিন থেকে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ডুবে যাই অপার মুগ্ধতায়। আহাল-দারায় দাঁড়ালে মনে হয়~ স্বর্গের কত কাছে। জীবন সার্থক এই দর্শনে। আমি তো বলবো টাইগার হিলের সানরাইজ থেকে অনেকগুণ ভালো এই আহাল-দারার সানরাইজ ! অনেকে লাটপাঞ্চোর থেকেই দৌড়ে এসে ভোরের সূর্য দেখে ফিরে যায়। তিন কিলোমিটার দূরত্ব পেরোতে আধঘন্টার মতো লাগে। কিন্তু আমি বলবো~ একটা রাত অন্তত এখানে কাটানো অবশ্যই উচিত। থাকা বলতে সেই হোম স্টে। লাটপাঞ্চোরে যাদের কাছে ছিলাম~ওদেরই তিনটে কটেজে হোম স্টে আছে আহাল-দারাতে। খাওয়া-থাকা দুইই। এখান থেকে দার্জিলিং একরাত কাটিয়ে ঘরে ফেরা। সে নিয়ে আর লেখা বাড়ালাম না কারণ বাঙালির প্রিয় দি-পু-দা তো সবারই চেনা ! —————————————————————-- পথনির্দেশ~ শেয়ালদা থেকে রাত দশটার দার্জিলিং মেলে নিউ জলপাইগুড়ি সকাল আটটায়। সেখান থেকে অথবা শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি রিজার্ভ করে লাটপাঞ্চোর। অথবা গ্যাংটক গামী যে কোন বাস বা শেয়ারের গাড়িতে কালিঝোরা নেমে অন্যগাড়িতে যাওয়া যায়। এতে খরচ কম পড়বে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অর্থাৎ কালিঝোরা থেকে গাড়ি আগেই বুক করে রাখা প্রয়োজন। লাটপাঞ্চোর পরবর্তী ট্যুর সবই গাড়িতে। থাকা এবং গাড়ির জন্য সমস্ত বুকিং হোম স্টে মালিকের সঙ্গে অগ্রিম করে নেওয়াই ভালো। ©অজয় Post By:- Ajay Kumar Datta
Kamala Falls : Hidden Gem of North Bengal. #One_Day_short_Trek আজকে যে জায়গার সম্পর্কে কথা বলবো সেটা একেবারেই অফবিট এবং এই গ্রুপে এর আগে কোনদিন আলোচনা হয়নি। একেবারেই আনটাচড্ একটা জায়গা, কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অফুরান ভান্ডার। বন্ধুর মুখে প্রথম নামটা শোনার পর ইন্টারনেটেওও এর সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য পাইনি। শিলিগুড়ির থেকে ঘন্টা দেড়েকের দুরত্বে অবস্থিত এক অখ্যাত পাহাড়ি ঝর্না, কাঁচের মত স্বচ্ছ যার জল, নাম কমলা ফল্স ( স্থানীয় ভাবে বক্সিঝোরা নামে বেশি পরিচিত। ) গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে খাড়া পাহাড়ী রাস্তা, যার পরতে পরতে মিশে আছে নির্ভেজাল প্রকৃতি আর অজানাকে জানার রোমাঞ্চ। খুব বেশি লোক এখনও এর সম্পর্কে জানেনা, হয়তো তাই এখনও প্রকৃতি তার রুপ রস স্পর্শ নিয়ে অমলিন এখানে। আপনাদের জন্য কিছু ছবি ও যাত্রার আংশিক ভিডিও দিলাম সাথে। Post By:- Shantanu Roy
॥ স্বপ্নের রং সবুজ (সেবক, সামসিং ও কুমাই) ॥ [Sivok, Samsing, Kumai] গত কাল রাত্রে আমি দারুণ একটা স্বপ্ন দেখছিলাম ....... বর্ষায় চা বাগানের মধ্যে হাঁটছি। কি যে ভালো লাগছিল বলে বোঝাতে পারবো না .....কিন্তু হাঁটা টা শেষ হলো না ঘুম টা ভেঙে গেলো!!! মনে পড়ে গেল সামসিং এর কথা। ইচ্ছে হলো ছুট্টে চলে যাই। শরীর টা এখানে থাকলেও মন টা ঐ পৌঁছে গেল ওই অঞ্চলে সবুজের মাঝে। অনেকই জিজ্ঞাসা করছেন, বর্ষায় পাহাড়ে কোথায় যাবো? আবার অনেক একটু নিরিবিলি অফ বিট জায়গার খোঁজ করছেন এই সব কিছুর মিশেল ঘটিয়ে আপনাদের নিয়ে যাবো আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যার কাছে। একটা নয় তিন তিনটে! সবাই নিজের রূপে গুনে মহিমায় অনন্যা। আপনি সময় অনুযায়ী একসাথে বা বারে বারে ঘুরে আসতে পারেন এদের কাছে। তখন 1996 সাল। তখন সবে ফাস্ট ইয়ার এর পরীক্ষা শেষ হয়েছে। নতুন ক্লাস শুরু হতে কিছুদিন বাকি। মন টা উুড়ু উড়ু করছে। বুঝতে পারছি না, ঠিক কোথায় যাবো। ঘোর বর্ষা কাল চলছে। একদিন সঞ্জয়দা বললো - "পুনে হাতে তোর সময় আছে ? তাহলে চল শিলিগুড়ির দিকটা কিছুটা ঘুরে আসি।" হোটেল খরচ লাগবে না। ওটা সঞ্জয়দার অফিস বহন করবে। কারণ সঞ্জয় দা একটা অফিসিয়াল ট্যুর এ যাচ্ছে। শিলিগুড়ি তে কিছু কাজ আছে তার সাথে চালসার কাছে কোনও একটা প্লাইউড কারখানা ভিজিট করে কি সব রিপোর্ট দিতে হবে। সঞ্জয়দার থেকে এটাও জানলাম খাওয়ার খরচেরও বেশীর ভাগটা ম্যানেজ হয়ে যাবে। খরচ বলতে শুধু যাতায়াতের গাড়ীভাড়াটুকু লাগবো। অতি উত্তম প্রস্তাব। মেঘ না চাইতেই জল!! আমি তো চাতক পাখি হয়ে অপেক্ষা করছিলাম। আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে দুজনে পাড়ি দিলাম রাতের রকেট বাসে চেপে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্য। উঠলাম বিধান মার্কটের কাছে কাঞ্চনজঙ্ঘা লজে। এই হোটেলে থাকার ডবল মজা। একদম সামনেই বিধান মার্কেট। যেখান থেকে ডুয়ার্স এর নানা জায়গার বাস ছাড়ে। (এখন অবশ্য এই স্ট্যান্ডটা নেই, শহর থেকে একটু দূরে চলে গেছে।) আর একদম কাছেই হংকং মার্কেট। তখন ঐ মার্কেট যাওয়াটাই যেন একটা অ্যাডভেঞ্চার ছিল। কত রকম দেশী বিদেশী জিনিসের ছড়াছড়ি। পৌঁছানোর পর দিন সঞ্জয়দা শিলিগুড়ির মধ্যেই নানা অফিসে কাজের ব্যাপারে গেলো। সারাক্ষণ হোটেলে বসে থেকে কি করবো। হঠাৎই একা একাই বিধান মার্কেট থেকে ছেড়ে চলা মালবাজার গামী বাসে চেপে বসলাম। উদ্দেশ্য সেবক ঘুরে আসবো। দূরত্ব মাত্র 22 কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে সেবক যাবার রাস্তটা আমার বরাবরই প্রিয়। মহানন্দা অভয়ারণ্যের রাস্তাটা তো পুরো ফ্রেমে বাঁধানো ছবি। বাস 45 মিনিট পর আমাকে সেবকের কালী মন্দিরের কাছে নামিয়ে চলে গেল মাল বাজারের দিকে। বেশ কয়েকটা খাড়াই সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলাম মন্দিরে। জায়গাটা ভারী চমৎকার। কিছুক্ষণ কাটিয়ে হেঁটে এগিয়ে চললাম সেবক করোনেশান ব্রীজের দিকে। মন্দির থেকে ব্রীজ পর্যন্ত হেঁটে যেতে পাঁচ সাত মিনিট লাগে। হালকা চড়াই। হাঁটতে দারুন লাগছিল। আকাশে হালকা মেঘের চাদর। বর্ষায় চারিদিক সবুজ। নীচে খরস্রোতা তিস্তা। প্রকৃতি যেন অপরূপ সাজে সেজে উঠেছে। যেতে যেতে পথের ধারে অনেকগুলো হনুমান দেখলাম। কিছু ছবি তুললাম বটে কিন্তু সেই সব ছবি অনেক নষ্ট হয়ে গেলেও মনের দরজায় মাঝে মাঝে কড়া নাড়ে। কি মোহময়ী জগৎ। ঘন্টা দুয়েক প্রথম রাজকন্যার কাছে সময় কাটিয়ে চলে ফিরে এলাম হোটেলে। এখনও যখনই শিলিগুড়ি যাই। হাতে 2-3 ঘন্টা সময় থাকলে সেবক ঘুরতে যাই। মনটা তাজা হয়ে যায়। আপনারা সময় পেলে অবশ্যই সেবক ঘুরে আসবেন। এবার আসি দ্বিতীয় রাজকন্যার কাছে যাবার গল্পে। সেই ট্যুরে (1996) গিয়েই আমি সামসিং এর কথা প্রথম শুনেছিলাম। তখন তো এত ইন্টারনেট যুগ ছিল না। শুধু জেনেছিলাম চালসা থেকে যেতে হয়। শেয়ার জীপ চলে। চা বাগান আছে। আর কি আছে জানি না। গিয়ে দেখবো। সেবক থেকে ফিরে মন টা বেশ ফুরফুরে। বিকেলের দিকে সঞ্জয়দা এসে বলল -"পুনে, কাল চালসার কাজটা সেরে সামসিং যাবো। ভোর ভোর উঠতে হবে।" রাত্রে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। খুব ভোরে একটা রিক্সা নিয়ে চললাম শিলিগুড়ি জংশন এর দিকে। তখন ভোর 5টায় একটা ট্রেন (DEMU) শিলিগুড়ি জংশন থেকে আলিপুরদুয়ার যেতো (এখন সম্ভবত আরো ছাড়িয়ে দিনহাটা যায়)। লোকাল ট্রেন। রিজার্ভেশনের ঝামেলা নেই। একটা টিকিট কেটে চেপে বসলেই চোখের সামনে প্রায় পুরো ডুয়ার্সের ক্যানভাস হাজির। এই যাত্রাপথটা পুরোটা যেন কাব্যগাঁথা। ভালো লাগার রেশ থেকে যায় সব সময়। আমরা নামবো চালসা স্টেশনে। এই ট্রেনটা ওখানে থামে। এক্সপ্রেস ট্রেন চালসাতে থামে না। সবুজ গালিচার মত চা বাগান আর অনবদ্য সব ক্যানভাস দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে সময় কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। চলে এলাম চালসা। ঘড়িটে সবে সাড়ে ছটা বাজে। স্টেশন থেকে বেড়িয়ে ধীর লয়ে এগিয়ে গেলাম চালসার মোরের দিকে। আজ আমাদের প্রথম গন্তব্য একটা প্লাইউড কারখানা। চালসার মোর থেকে যে রাস্তাটা গরুমারার দিকে গেছে সেই রাস্তা ধরে প্রায় 2 কিলোমিটার গেলে কারখানাটা পড়বে। খুব সুন্দর রাস্তা দুইদিকে বড় বড় শাল গাছ। বর্ষার জন্য চারিদিক সবুজ আর সবুজ। কত রকম সবুজের শেড। কারখানা ভিজিট করে এবার চললাম আমাদের আজকের প্রধান গন্তব্যস্থল সামসিং। আমার স্বপ্নে দেখা দ্বিতীয় রাজকন্যার কাছে। প্রথমে চালসা থেকে শেয়ার জীপে মেটেলি। দূরত্ব প্রায় 10 কিলোমিটার। চালসা থেকে একটু যেতেই দেখলাম অনেকটা অঞ্চল জুড়ে একটা হোটেল তৈরি হচ্ছে। পরে জেনেছিলাম এ ওটাই পাঁচ তারা Sinclairs Retreat রিসোর্ট। আধ ঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেলাম। মেটেলি এই অঞ্চলের বেশ বড় হাট – মেটেলি পৌঁছে হল মুশকিল। সামসিং যাবার শেয়ার জিপে জায়গা নেই। পরের জিপ অনেক পরে। এদিকে আমাদের সব দেখে আজই সন্ধ্যার মধ্যে শিলিগুড়ি ফেরার কথা। ড্রাইভার বললো – “ সাব আভি জীপ নেহি মিলেগা। আপ লোক ছাদ মে চড় যাইয়ে।” ছাদে ইতি মধ্যে দুইজন উঠে বসে আছে। আছে একটা বড় মুরগীর ঝুড়ি। এর আগে বাসের ছাদে চেপে কয়েকবার ঘোরার অভিজজ্ঞা আছে। কিন্তু জীপের মাথায় চাপিনি কখনো। সাত পাঁচ না ভেবে চেপে বসলাম দুজনে। অদ্ভুদ অভিজজ্ঞা। সোনায় সোহাগা। শেষ মুহুর্তে একজন দুটো ভেড়া নিয়ে জীপের ছাদে। মুরগী, ভেড়া এবং আমরা সবাই চললাম সামসিং এর দিকে। মেটেলি থেকে সামসিং 14 বা 15 কিলোমিটার। পুরো রাস্তাটা অপূর্ব সুন্দর। যে কেউ প্রেমে পড়বেই। সামসিং পৌঁছে জীপ থেকে নেমেই হাঁটা দিলাম। গন্তব্য রকি আইল্যান্ড। প্রথমে পড়লো ফরেস্ট বাংলো। খুব সুন্দর জায়গা। চারিদকে বড় বড় কাঠের গুড়ির লগ রাখা আছে। তাতে আছে নানা ধরনের নাম্বার। এই সামসিং বন বাংলোটাতে দু তিনটে দিন নিশ্চিন্ত কাটিয়ে দেওয়া যায়। একটু এগিয়ে গ্রামে রাস্তার মধ্যে দিয়ে চললাম রকি আইল্যান্ডের দিকে। দবুত্ব তিন চার কিলোমিটারের মত। একদল কচিকাচার সাথে দেখা। আবদার -“ দাজু মিঠাই দো” দেখি সঞ্জয়দা পকেট থেকে পার্লে ওরেঞ্জ লজেন্স বার করে দিচ্ছে। এতক্ষণ জার্নি করলাম আমাকে একটা দেয়নি। খুব রাগ হচ্ছিল। কিন্তু লজেন্স পেয়ে ওদের নির্মল হাসিমুখ দেখে রাগ নিমেষে গায়েব। ওই মুখগুলো প্রতিটি পাহাড়েই গেলে দেখতে পাই। সঞ্জয়দা মনে হয় আমার মনের কথা বুঝতে পেরে ছিল! সবাইকে লজেন্স দেবার পর আমাকেও একটা দিলো। দুটো লজেন্স দুজনে চুসতে চুসতে এগিয়ে চললাম। একটা ঝোলানো ব্রীজ পেলাম। আপরূপ সুন্দর। আরো একটু এগিয়ে পৌঁছে গেলাম রকি আইল্যান্ড। চারিদকে কমলালেবুর গাছ। সবুজ কাঁচা লেবু হয়ে আছে। দূরে পাহাড়ের গায়ে দেখলাম পাহাড় কেটে নতুন করে জীপ রাস্তা তৈরি হচ্ছে। ওখানে তখন একটাই পরিবার বাস করতো। দুইজন বসেছিল কাঠের বাড়ির সামনে। বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম ওনাদের সাথে। বললো আমাদের থেকে যেতে। যেন কতদিনের চেনা। কত নিকট আত্মিয়। গাছ থেকে পেড়ে কয়েকটা সবুজ কমলা লেবু খেতে দিল। বড্ড টক। কিন্তু স্মৃতি হিসেবে কয়েটি নিলাম। সামনে একটা প্রাকৃতিক গুহার মত আছে। সেটা দেখলাম। সেই প্রথমবার, প্রথম নাম শোনা সামসিং এর কাছে পৌঁছে তাকে খুবই ভালোবেসে ভেলেছিলাম। পরে বেশ কয়েকবার গেছি। কোন বারেই থাকা হয়নি। চোখের দেখে দেখে চলে এসেছি। শেষ সামসিং গেছি 2016 সালের ডিসেম্বর মাসে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিছু হোটেল এবং হোম স্টে হয়েছে। কিন্তু তার রূপ এতটুকু কমে নি। তার নতুন সখী হয়েছে সান্তালাখোলা। ভূটানি ভাষায় সান্তালা অর্থ কমলালেবু এবং খোলা অর্থ নদী। নামের সাথে প্রকৃতির সাদৃশ্য আছে। এখানে আছে সুন্দর ঝুলন্ত ব্রিজ। ব্রিজ পেরিয়ে ফরেস্ট বাংলো। আশেপাশের প্রাকৃতিক শোভা অপূর্ব। আপনারা চাইলে এই বর্ষায় ঘুরে আসতে পারেন সামসিং এবং সান্তালাখোলা। থাকার খুবই সুব্যবস্থা আছে। এরপর আমি আপনাদের নিয়ে যাবো আমার তৃতীয় রাজকন্যার কাছে। আগের দুটি রাজকন্যার কথা কম বেশি সবাই জানে। কিন্তু এই রাজকন্যা একবারে নবীনা। একবারে অফ বিট ডিস্টিনেশান। কুমাই (আপার কুমারই) সামসিং রকি আইল্যান্ডর ডানদিকে পাহাড়ের মাথার উপর। আমি গিয়েছিলাম 2016 সালের শেষদিনে। বর্ষশেষের রাত্রি এবং 2017 সালের প্রথম সূর্যদোয় দেখেছিলাম এই আপার কুমারই গ্রাম থেকে। নিউ মাল জং থেকে আপার কুমাই এর দূরত্ব কমবেশী 40 কিলোমিটারের মত। এখান থেকে শেয়ার জিপ পেয়ে যাবেন। এছাড়া প্রচুর প্রাইভেট গাড়ী পাবেন যা বুক করে পৌঁছে যেতে পারেন। যদি প্রাইভেট গাড়ী বুক করেন তাহলে পরামর্শ দেবো যাবার পথে যাবার পথে মালবাজার এর হনুমান মন্দিরটা দেখে নেবেন। ভারী সুন্দর হনুমান মন্দির। দিকে মন্দিরের বাহিরে এবং ভিতরে কারুকার্য অসামান্য। মন্দির দেখে চালসা – মেটেলি হয়ে সামসিং এর রাস্তায় কিছুটা গিয়ে ডানদিকে ঘুরলেই কুমাই এর রাস্তা পড়বে। আরো একটা রাস্তা আছে চাপড়ামারি জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। দুটো রাস্তার সৌন্দর্য্য দুই রকম। দুরত্ব কম বেশী প্রায় সমান। আমরা গিয়েছিলাম টাটা সুমো করে মেটিলী হয়ে। ফিরেছিলাম চাপড়ামারি হয়ে। সামসিং থেকে কিছুটা ডানদিক বরাবর চা বাগানের মাঝের রাস্তার এগিয়ে পড়বে লোয়ার কুমাই। এখানে প্রতি সোমবার বিশাল হাট বসে। সেটা একটা দেখার জিনিস। আমরা যে দিন গিয়েছিলাম সেই দিন ছিল শনিবার। ফাঁকা হাট পেরিয়ে গাড়ী কুমাই চা বাগান পেরিয়ে বেশ কয়েকটি বাঁক পেরিয়ে আপার কুমাই এর হাট ছাড়িয়ে পৌঁছালাম আপার কুমাই এর গোর্খা হোম স্টে এর লনে। আরো কয়েকটি হোম স্টে চোখে পড়েছিল। কিন্তু এটাই প্রথম হয়েছে। আসার পথে চোখ টেনেছিল আপার কুমাই এর হাট। আজই হাট বার। পরে আপনাদের হাটে নিয়ে যাবো। কিন্তু তার আগে এই আপার কুমাই গ্রামটা ঘুরিয়ে আনি। কুমাই বর্তমানে কালিম্পং জেলার ( আগে দার্জিলিং জেলার ছিল) মধ্যে পড়ে এবং ঝালং থানার অন্তর্ভুক্ত। গ্রামটি বেশ বড়। প্রায় 10000 (দশ হাজার) লোকের বসবাস। খুবই সুন্দর ছবির মত পরিষ্কার পরিছন্ন গ্রাম। দূরে পূর্ব দিকে দেখা যায় ভূটানের পাহাড় এবং বাংলার বিভিন্ন সমভূমির বনাঞ্চল। সমতল ভূমিতে দূর থেকে জলঢাকা নদীটাকে সাপের মত দেখতে লাগে। পশ্চিম দিকে অনেকটা নীচে আছে সামসিং এবং রকি আইল্যান্ড। আমরা যে হোম স্টে তে আছি তার কর্তা এবং গৃহিনী খুবই হাসিখুশী এবং অতিথি বৎসল। ভদ্রলোকের নাম বিজয় কুমার থাপা। আগে আর্মি তে কাজ করতেন। এক সময় প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি জ্ঞানী জৈল সিং এর দেহরক্ষী ছিলেন। অবসর এর পর এখন এই হোম স্টে চালাচ্ছেন। দুপুরে ডিম এর তরকারী সহকারে ভাত খেয়ে গ্রামের কিছুটা ঘুরে দেখলাম। বিকেলের দিকে ট্রেক করে গেলাম এখান থেকে কিছুটা দূরে আরোও একটু উঁচু তে সানসেট ভিউ পয়েন্টে। এখান থেকে খুব সুন্দর সূর্যাস্ত দেখলাম এবং অনেক ছবি তুললাম। কুমাই জায়গাটা এত সুন্দর যে এখানে কয়েকটা দিন দারুণ ভাবে অবসর যাপন করা যায়। সানসেট দেখে ফিরে এলাম হোম স্টে কটেজে। কটেজটাও বেশ সুন্দর করে সাজানো। চারিদিকে রং বেরং ফুল এবং গাছ গাছালি। সন্ধ্যার পর চাইনিজ খেয়ে বন্ধু রাজেনের সাথে একটু ঘুরতে বের হলাম। বলেছিলাম হাটে নিয়ে যাবো কিন্তু গ্রাম দেখতে দেখতে ভুলেই গিয়েছিলাম। চলুন এই সন্ধ্যা বেলাই একবার হাট থেকে ঘুরে আসি। কিছুটা উৎরাই নেমে গেলাম হাটে। জমজমাট ভাবটা অনেকটা কমে এসেছে। তার মধ্যেও দেখলাম শীতকাল তাই গ্রামের লোকেরা শীতের পোশাক কেনাকাটা করছে। একটা জায়গায় মোমো বিক্রি হচ্ছিল। বেশ কয়েকটা খেয়ে নিলাম। হাটে কিছুটা সময় কাটিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হোম স্টে তে ফিরে আসছিলাম। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। কেউ যেন হাজার বাতি জ্বালিয়েছে কেউ আকাশের বুকে। আকাশে এত তারা আছে? শহরে থেকে বুঝতেই পারি না! অন্ধকার রাস্তা ধরে হাঁটতে খুব ভালো লাগছিল। রাতের পরিস্কার আকাশ দেখে আমরা মোহিত। তারাগুলি যেন কত কাছে! একটু উপরে এসে দেখলাম অনেকের বাড়িতে বর্ষ শেষের পার্টি চলছে গান ও নাচ সহকারে। একদল তরুন তরুনী দেখি রাস্তার ধারে আগুন জ্বালিয়ে ফিস্ট এর আয়োজন করছে। পোশাক এবং কথাবার্তায় ওরা বেশ আধুনিক। আমাদেরও ওদের সাথে যোগ দিতে বললো। রান্না চলছিল চিকেন থুপ্পা। হাসিমুখে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে গেলাম। রাত্রি দশটার মধ্যে চিকেন কারী সহ ডিনার সেরে তারাতাড়ি বিছানার আশ্রয় নিলাম। আগামীকাল সকালে সানরাইজ দেখবো এই কটেজের বারান্দা থেকেই। নতুন বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখলাম আপার কুমাই এর গোর্খা হোম স্টে থেকে। মন ভরে গেল। এই আপার কুমাই থেকে সানরাইজ এবং সানসেট দুটোই এত সুন্দরভাবে দেখা যায় যে বলে বোঝানো যাবে না। এই বর্ষাতেও যেতে পারেন। তখন ওখানকার পরিবেশ আরো মোহময় আরো মধুর। সঙ্গে কিছু পুরানো এবং নতুন মিলিয়ে তিন রাজ কন্যার কাছে সময় বেড়ানোর কিছু ছবি গুলি দিলাম। আমার তিন রাজকন্যাদের কেমন লাগলো জানাবেন। কি ঠিক করলেন কার কাছে যাবেন? কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যঃ * শিলিগুড়ি থেকে যে কোনও সময়ই সেবক ঘুরে আসতে পারেন। এখানে থাকার প্রয়োজন হয় না। শিলিগুড়ি থেকে দূরত্ব মাত্র 22 কিমি। আসা যাবার প্রচুর বাস আছে। * শুধু সামসিং বা কুমাই যেতে চাইলে কাঞ্চনকন্যা ধরে নিউ মাল জংশন এ নামুন। এখান থেকে সামসিং 30 কিমি এবং আপার কুমার 40 কিমি। এখান থেকে প্রাইভেট গাড়ী এবং শেয়ার জীপ বা ট্রেকার পাবেন। * সামসিং এ থাকার জন্য অনেক হোটেল হোম স্টে এবং ফরেস্ট বাংলা আছে। তবে এখানে থাকার জন্য ফরেস্ট বাংলোগুলি সবথেকে ভালো। সামসিং বনবাংলো তে ac রুম (Rs.2500-3000/-) আছে। সান্তলাখোলায় বনবাংলোর non ac কটেজ (Rs1800/-) আছে। online booking –https://www.wbfdc.com/ * এছাড়াও সামসিং এ লালিগুরাস নামে এটা একটা পিকনিক স্পট আছে। মূর্তি নদীর ধারে একটা সুন্দর জায়গা। পায়ে হেঁটে ঘুরে আসতে পারেন। * সামসিং এবং সান্তলাখোলায় Aritel এবং Vodafone এর 3G চলে (তথ্য জানুয়ারী 2017 সালের) * কুমাই তে থাকার জন্য যোগাযোগ বিজয় কুমার থাপা মোবাইল নং – 9475911125 * আমরা যখন গিয়েছিলাম তখন কুমাইতে কেবলমাত্র ভোডাফনের 3G কাজ করতো। বাকী সব 2G Network. (তথ্য জানুয়ারী 2017 সালের) (সমাপ্ত) Post By:- Purnendu Fadikar
7th june.....শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা ছাড়লো রাত ৮.৩০,,,,বেশ খুশি খুশি মনে প্রথমবার উত্তরবঙ্গ দিকে,আমরা কজন,,,,শুরুতেই বিপত্তি হারিয়ে গিয়েছে,,,,রাতের খাওয়ার,,,,অনেক কষ্টে যাকে খুঁজে পাওয়া গেল,,,,,খুব গরম থাকায় রাতে তেমন ঘুম এলোনা,,,,তার ফলে দেখলাম ফরাক্কা ব্রিজ,,,,দারুন,,,,রাত তখন ৩টে,,,তারপরই এলো বৃষ্টি,,,, হাসিমারা নামার আগে পর্যন্ত যা ছিল,,,,,ট্রেন সেবক পেরোতেই,,,,,বৃষ্টিরর মধ্যে পাহাড় নদী চা বাগান আর জঙ্গল মনটাকে ভরিয়ে দিল,,,,,8th june দুপুর ২টোয় আমরা নামলাম,,,হাসিমারা,,,,সেখান থেকে সবটাই,,,,অভিক দা,,,,গাড়ি উনি বলে দিয়ে ছিলেন,,,,,ষ্টেশন থেকে ২৫মিনিট এর মধ্যে পৌচ্ছলাম Chilapata inn- boutique home stay,,,,খুব সুন্দর ছিল আমাদের থাকার জায়গা,,,,দুপুরের লাঞ্চ সেরে আমরা চললাম ভারত আর ভুটান এর বর্ডারের Phuntsholing......আমরা ওখানে পৌচ্ছে ছিলাম বিকাল ৪.৩০টে তাই,,,,আকাশ আর আলো ঘেরা পাহাড় মন ছুঁয়ে দিল,,,,,যে যাই বলুক কয়েক ঘন্টার বিদেশ সফর বেশ সুন্দর,,,,,তার পর ফিরে আসা রাস্তায় জঙ্গলের উপস্থিতি দারুন,,, প্রায় ১ঘন্টা চিলাপাতার মেন্দাবাড়ির মধ্যে দিয়ে আসা,,,,রাতে ডিনার ছিল মন পসান্দ,,,,9th june ভোর ৪.৩০টে হাতি সাফারি,,চিলাপাতার জঙ্গলে,,,,,সে এক অদ্ভূত অভিজ্ঞতা,,,,একদিকে গভীর জঙ্গল তার মধ্যে এক বিশাল জন্তুর পিঠে বসে তার মর্জি মতো এগিয়ে পিছিয়ে যাওয়া,,নদীর মধ্যে দিয়ে যাওয়া,,,,যদিও আমার আর জয়ন্ত সৌভাগ্য সেদিন হয়েনি পশু দেখার তবে বাকি দের হয়েছিল গন্ডার,,,বার্কিং ডিয়ার,,,,,এরপর ফিরে এসে গরমে,,,বুড়ি নদীতে নিত্য,,,,,তারপর buxa tiger reserve উদ্দ্যেশে রওনা,,,,,যাত্রা পথটা সত্যি দারুন,,,,তবে পশ্চিমবঙ্গ বনদপ্তর অনেক গুলো করে টাকা নিলেও একদমই যা তা,,,,এর পর জিরো পয়েন্ট থেকে ৬ কিমি এর পা হেঁটে ওঠা,,,একটা বক্সা ফোর্ট,,,,শেষটা লেপচাখা,,,,,রাস্তাটা গরমে খুবিই কষ্ট দিয়েছিল,,,,,সবাই শেষ অবধি গেলেও আমি বক্সা ফোর্ট অবধি যেতে পেরেছিলাম,,,,তারপর প্রায় ৩ ঘন্টা আমি আর আমার ক্যামেরা একাই জঙ্গলের পথে গ্রামে ঘুরে বেরিয়েছি,,,,,সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে ফিরে এসেছি,,,,আর পাঁচজনকে যখন দেখলাম তখন বুঝলাম না গিয়ে ভালোই করেছি তবে উপরের দৃশ্যটা অসাধারন,,,,,,,এরপর আর কোনো সুখের স্মৃতি নেই,,,,ফিরে আসা আর বলে আসা আবার আসছি,,,, Post By:- Pallab Mukherjee
Post By : -Mou Nandi
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |