লিয়ে লিন, লিয়ে লিন, লিয়ে লিন, লেবু লজেন্স, লেবু লজেন্স। আমার এই লেবু লজেন্সে মন ভালো করার ওষুধ দেওয়া আছে, শুধু টপ করে মুখে ফেলুন আর মন ভালো। একটা পাঁচ তিনটে দশ, যত চুষবেন তত রস, না নিলে আপনার লস। লিয়ে লিন, লিয়ে লিন।
আহা যদি সত্যি এইরকম হতো। অথবা ধরুন আপনি কোনো ডাক্তারের কাছে গেলেন তিনি খস খস করে প্রেসকিপসান লিখে দিলেন Peace of mind 500 tablet দিনে একটা করে দুবেলা খাওয়ার পর। ব্যাস হয়ে গেল, আপনি পাঁচ দিনের একটা কোর্স কমপ্লিট করে নিন আর আপনার সমস্ত ক্লান্তি দূর। আবার ফুরফুরে মেজাজে। কিন্তু হায় ভগবান এই ওষুধ ও নেই আর এইরকম ডাক্তার ও নেই। সত্যিই কি নেই? আছে মশাই আছে, সে হলো প্রকৃতি ডাক্তার। এনার কাছে যদি নিজেকে সঁপে দিতে পারেন আর এনার দেওয়া ওষুধ শুদ্ধ বাতাস, সবুজের সমারোহ, বিস্তির্ণ রঙিন জলরাশি, নীল আকাশ যদি অনুভব করতে পারেন তবে আপনার মনের সমস্ত ক্লান্তি দূর হতে বাধ্য। যদিও এই ডাক্তারের কাছে পৌঁছাতে কখনো কম কখনো বেশি ফিজ দিতে হয়। কিন্তু কি করা যায় এতো কঠিন রোগের চিকিৎসা করতে গেলে একটু গাঁটের কড়ি তো খরচ করতেই হবে। আন্দামান ভ্রমণের প্রথম দিন অতি উচ্ছাসে যখন সেলুলার জেলে পৌছালাম, আমরা তখন নিজেদের মধ্যে হাসি ঠাট্টায় মত্ত। কিন্তু সন্ধ্যে নামতেই লাইট এন্ড সাউন্ড শো দেখার সময় বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের করুন পরিস্তিতির কথা শুনতে শুনতে একটু আগের হাসি ঠাট্টার জন্য নিজেদের ভীষণ অপরাধি বলে মনে হচ্ছিল। হ্যাভলক পোর্ট ব্লেয়ার থেকে গ্রীন ওসান ক্রুজে করে আমাদের যাত্রা শুরু হলো হ্যাভলক এর উদ্দেশ্যে। যাত্রা পথে ডেকের উপরেই চললো নাচ গানের পালা। ঘুরতে বেরোলে মনটা কেমন যেন বাচ্চা হয়ে যায়, এক আশি উর্ধ্ব দাদু ও সেই নাচের আসরে যোগ দিলেন। হোটেলে কোনো রকম লাগেজ রেখেই ছুটলাম জলের তলার দুনিয়া দেখতে। হ্যাভলকের স্কুবা ডাইভিং এর কথা অনেক আগে থেকেই শোনা ছিল কিন্তু জলে নামার পর যা শুনে ছিলাম তার থেকে অনেক বেশি পেলাম। আমি আগেও পাটায়া তে জলের তলার দুনিয়া দেখেছি কিন্তু এখানের অভিজ্ঞতা সম্পুর্ন অন্যরকম। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী যখন আপনার শরীর স্পর্শ করে যাবে এই রঙিন দুনিয়া আপনাকে নস্টালজিক করে তুলবেই। লাঞ্চ করে আমাদের গন্তব্য কালা পাথর বিচ আর রাধানগর বিচ। জলের রঙের কত রকমফের হতে পারে তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবেনা। রাধানগর বিচে সূর্যাস্তের সময় স্নান করার এই অভিজ্ঞতা মনে হয় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনে থাকবে। আমাদের হোটেলের প্রাইভেট বিচে পুর্নিমার রাতে আমরা যখন গা এলিয়ে বসে আছি এক সদ্য বিবাহিত যুবক যুবতী ক্যান্ডেল লাইট ডিনার সারছে। সে এক অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। নীল সার্থক নাম করন। জেটি থেকে যেতে যেতেই বুঝতে পারলাম এর থেকে ভালো নাম বোধহয় আর হতে পারতো না। ভরতপুর বিচে গ্লাস বোটম বোটে ঘোরার পর আমরা চড়ে বসলাম প্লাস্টিকের তৈরি ভাসমান সেতুর উপর। এক একটা ঢেউ যখন সেতুটি দুলিয়ে দিয়ে যাচ্ছিল সেই ছোট বেলার ঢেঁকি চড়ার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। লাঞ্চ সেরে আমাদের গন্তব্য হলো ন্যাচরাল কোরাল বিচ আর লক্ষনপুর বিচ। প্রকিতির আরেক অনবদ্য সৃষ্টি। রস এন্ড স্মিথ (ডিগলীপুর) কখনো রোমান্টিক সুরে কাউকে গালাগাল দিতে শুনেছেন? এ এক এমন জায়গা যেখানে খিটখিটে বুড়ো, দজ্জাল বউ, বেরসিক বর, অকালপক্ক ছেলে মেয়ে সবার মনে রোম্যান্স জাগবেই। এই বিস্তৃত রঙিন জলরাশির সাথে আকাশের মিলে যাওয়া দেখতে দেখতে চরম আন রোমান্টিক মনেও কুছ কুছ হোতা হ্যায় হতে বাধ্য। এমনকি গালাগালি টাও রোমান্টিক সুরে বেরোবে। আমার মতে আন্দামানের সেরা অভিজ্ঞতা স্মিথের সবুজ জলে স্নান করা। গলা জলে দাড়িয়ে আপনি নিজের পায়ের পাতা পরিস্কার দেখতে পারবেন এতটাই স্বচ্ছ এখানের জল। দুরত্ব, খরচ, সময় ইত্যাদি কারণে খুব বেশি লোক জন না আসায় এখানের বিচ আরও বেশি আকর্ষণীয় ও মোহময়। আর হ্যাঁ এখানে আসার আগে আপনাকে পেরোতে হবে বরাটাং এর জারোয়া দের জঙ্গল, লাইম স্টোন কেভ ইত্যাদি। জারোয়া বলতে আমরা যা বুঝি বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক তা নয়। আধুনিকতার ছোঁয়ায় তারাও এখন সানগ্লাস, জিন্স এসব পড়তে শুরু করেছে। এখানের আরেকটি আকর্ষণ হলো ম্যানগ্রোভ ওয়াক ওয়ের মধ্যে দিয়ে হেঁটে ধনি নালা বিচে পৌঁছান। পোর্ট ব্লেয়ার যেখান থেকে আমরা যাত্রা শুরু করে ছিলাম আজ যাত্রার অন্তিম লগ্নে আমরা যখন নর্থ বে আর ভাইপার আইল্যান্ড যাওয়ার জন্য জেটিতে অপেক্ষা করছি এই ট্যুরের সবথেকে স্মরনীয় মূহুর্তটি ঘটে গেল। ছাব্বিশে জানুয়ারি হওয়ার জন্য জেটিতে প্রচুর ভিড় আমরা আমাদের বোটের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি হঠাৎ আমার এক বন্ধু জন গন মন অধিনায়ক জয় হে ... গাইতে শুরু করলো আমরা সবাই তার সাথে গলা মেলালাম। প্রজাতন্ত্র দিবসের জন্য সবার মনেই একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শুনে সেখানে উপস্থিত আরো প্রায় একশো লোক আমাদের সাথে গলা মেলাতে শুরু করলো। গানের শেষে বন্দেমাতরম ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠলো চারিদিক। প্রথম দিন সেলুলার জেলে আমরা হাসি ঠাট্টা করে যে পাপ করে ছিলাম আজ মনেহয় তার প্রায়শ্চিত্ত করলাম। মনে একটা অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছিলাম। নর্থ বে তে গিয়ে যে দুটি প্রধান আকর্ষণীয় জিনিস আমরা করলাম তার একটি সি ওয়াকিং আর অন্যটি সাবমেরিনে করে কোরাল সাফারি। যারা স্কুবা ডাইভিং অথবা সি ওয়াকিং করতে ভয় পান তারা অবশ্যই এই কোরাল সাফারি করবেন। পরের দিন সকালে আন্দামানকে বিদায় জানিয়ে বলে এলাম আর কিছু না হোক শুধু মাত্র স্মিথ আইল্যান্ডে স্নান করার জন্য আবার কোন দিন ঠিক ফিরে আসব। আসবই।
0 Comments
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |