আজ বিশ্বকর্মা পুজো +মহালয়া 17.09.2020 ভোর সাড়ে চারটার দিকে বেরিয়ে পড়লাম দুজনে। আগের রাতে ভাত রুটি সব রেডি করে রেখেছিলাম। বাইকে 314 কিলোমিটার পেরিয়ে অযোধ্যা পাহাড়ে পৌঁছাতে সাড়ে এগারোটা।জীবনে প্রথম পাহাড়ে বাইক চালানো। সঙ্গে পুরুলিয়ার বন্ধু প্রণয় মাহাত । ঐ গাইড। ভাত খেয়ে চললাম upper dam এ। ছবি তোলা হল। পাশে কাশফুলের উপত্যকা আর চাঁদি ফাটা রোদ। গেলাম lower dam এ। একদম ফাঁকা। সারা পাহাড়ে মনে হয় শুধু আমরাই। কিছু লোকাল ছেলে বাইক নিয়ে ছুটোছুটি করছে। ওখান থেকে বহু প্রতীক্ষিত বামনী ঝর্না। সব ক্লান্তি দূর হল। শুধু আমরাই। তিনটে স্থানীয় ছেলে স্নান করছিল। শীতের সময় নাকি মেলার মত লোক হয়। গামছা উপরে ব্যাগে রেখে নেমে পড়েছিলাম। স্নান আর করা হলো না। যাই হোক ওখানেই দুটো বেজে গেল।ওখান থেকে মার্বেল লেক । এবার সীতাকুণ্ড, মাটির নিচে থেকে ধীর গতিতে অনবরত বরফ ঠান্ডা জল নির্গত হচ্ছে। ফিরতে হবে সময় কম।বাড়ির পথ ধরলাম।আহাড়রা নামক এক জায়গায় ঐ বন্ধুর মাসতুতো শালা কেজি দুই তিন আখের গুড় উপহার দিল। ও প্রথম থেকেই সঙ্গে ছিল। এবারে বাড়ির পথে। পুরুলিয়া টাউন থেকে বেরিয়ে সঙ্গে থাকা ময়দার রুটি আর কলা খেয়ে বাইক ছোটালাম,তখন পাঁচ টা।যেতে হবে 250 km . কিছু দূর যাওয়ার পরই টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। প্রায় দশ কিমি যাওয়ার পর রেনকোট পরে নিলাম। পানাগড় অবধি বৃষ্টি পেয়েছি। তখন রাত পৌনে নয়টা।প্রায় সাড়ে নটার সময় বর্ধমান এসে বুকে বল পেলাম।মিষ্টি কিনে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ আস্তানায়। মোট 670 km . পায়ের মাংস পেশিতে খুব ব্যথা,ততোধিক আনন্দ।
0 Comments
2020.. এই একটা বিদঘুটে বছর একটা, কিন্তু তাতে আমার ঘোরা থামে নি, এই বছরেও ঘুরবার নেশা একই রয়েছে, তা সে অফিসের কাজেই হোক বা নিজের ইচ্ছা তেই ঘোরা হোক, ভুটান দিয়ে শুরু, 2 বার মন্দারমণি, গ্রামের বাড়ি, ঝাড়গ্রাম, বেলপাহাড়ি, কাঁকড়াঝোর, শান্তিনিকেতন, ডুয়ার্স, এবং অবশেষে পুরুলিয়া, অযোধ্যা... এটাই শেষ কিনা বলা যাচ্ছে না, কারণ এটা লিখতে লিখতে অফিসের ফোন, দেওঘর যেতে হবে, ফ্যাক্টরি ভিসিট এ, যাই হোক এর আগের লেখা ছিল আমার গ্রামের বাড়ি এবং বেলপাহাড়ি তে বাইকে..
এবার ও সেই বাইক নিয়েই গেলাম পুরুলিয়া, আমাদের একটা গ্রুপ আছে নাম তার THERIDERKOLKATA আমরা যেখানেই বাইক নিয়ে বেড়াই চেষ্টা করি সকাল সকাল যাত্রা শুরু করতে, সেই মতো এবারও সবাই রেডি হয়ে যাই কারণ আমাদের মিটিং পয়েন্ট ছিল ডানকুনি টোল প্লাজা তে ভোর 3:30 এ.. কিন্তু বাধ সাধলো হঠাৎ বৃষ্টি, তাই অপেক্ষা করতে হলো, কিন্তু বৃষ্টি কমবার নাম নেই, কিন্তু আমরাও rider একটু পাগল টাইপের হই, অপেক্ষা করতেই থাকলাম, অবশেষে বৃষ্টি কমলো, সাথে সাথে আমরাও শুরু করে দিলাম যাত্রা, যদিও অনেকটাই দেরি হয়ে গেছিলো পৌঁছাতে ডানকুনি, আমাদের নিয়ম অনুযায়ী 80-90 স্পিড এ পৌঁছে গেলাম শক্তিগড়, প্রাতরাশ টা সারলাম লুচি আর তরকারি সাথে লাংচা, অল্প জিরিয়ে আবার শুরু করলাম, এবার পৌঁছলাম দুর্গাপুর ব্যারেজ, কারণ বাইকে গুলো কেও একটু রেস্ট দিতে হবে সাথে আমাদের কোমর কে, তাই একটু চা পানের বিরতি, সেটা সেরেই আবার শুরু করলাম যাত্রা পুরুলিয়া র উদ্দেশ্যে, পুরুলিয়া টাউন এ এসে পৌঁছলাম যখন তখন প্রায় দুপুর 2:30 টা.. দুপুরের লাঞ্চ টা রাস্তার ধারেই একটা হোটেল এ সারলাম, ভাত, ডাল, আলুভাজা, কুন্ডলি ভাজা, ডিম এর অমলেট, রুটি এবং তড়কা, তারপর আবার শুরু হলো যাত্রা কারণ আমাদের এবার পৌঁছাতে হবে পাখি পাহাড়, রাস্তা এক কোথায় মাখন, কখনো কখনো 120-125 এ স্পিড উঠেছে, তবে পুরো টাই 80-90 স্পিড এ... পৌঁছে গেলাম পাখি পাহাড়, ইচ্ছা ছিল একটু off route ride traial তাই বাইকে নিয়ে জঙ্গল এ ঢুকে গেছিলাম, কিছু ক্ষণ সময় কাটাতেই নেমে এলো অন্ধকার, তাই আবার যাত্রা শুরু হলো অযোধ্যা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে, লোয়ার ড্যাম, আপার ড্যাম অতিক্রম করে চলে এলাম অযোধ্যা পাহাড়ের উপরে, যত বার গ্রাম এ যাই ততবার অবাক হই এদের ব্যবহার দেখে, আলুর চপ আর ডিমের চপ খেলাম মুড়ি দিয়ে, পয়সা দেবার সময় দোকান দার কোনো হিসাব করলেন না, বলে দাদা বাবু আপনাদের যা ভালো মনে হয় দিন, প্রতি চপ 5 টাকা করে, আমাদের শহরে এরকম মানুষ খুঁজতে লণ্ঠন নিয়ে বেড়াতে হবে, ঠিক করলাম রাত এ দেশী মুরগি দিয়ে রুটি খাবো, কথামতো সেই চপ এর দোকান এর দাদা কেই দিলাম রান্না করতে, যথাযত রান্না হলো সুস্বাদু সাথে 50 টা রুটি 6 জন এর, খেয়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম কারণ পরদিন ভোর 4 টে উঠে তৈরী হয়ে বেড়াতে হবে, মুরুগামা র জন্য, এক কোথায় অপরূপ সুন্দর, যাবার রাস্তা ও খুব ভালো, পাহাড়ে রাস্তায় বাইকে যাবার অভিজ্ঞতা, সেখানে কিছু ক্ষণ সময় কাটিয়ে চলে গেলাম বামনী ফলস, মার্বেল লেক, ঘুরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা, মাঝে একটা কথা তো বলাই হলো না, মাঝ পথে একটা টিলা তে বাইকে উঠে নিজেরা ম্যাগি বানিয়ে খেলাম, আমরা স্টোভ, কেরোসিন, প্লেট, চামচ নিয়েই গেছিলাম, প্রাতরাশ টা এভাবেই হলো, খুব বেশি লিখলাম না এবার, কিছু তথ্য দিয়ে দিলাম,
বেশ কয়েক বছর ধরে ই অন্তর্জাল দুনিয়ায়, পলাশ রাঙ্গা পুরুলিয়ার ছবি ভেসে উঠছিল। সামনে থেকে চাক্ষুষ করার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠছিল না। ভাই, বোন সবাই মিলে, কোথাও যাবার পরিকল্পনা হতেই, পুরুলিয়া হলো, প্রথম পছন্দের। সবার সহমতে, তৈরি হলো, 'বাসন্তিয়া পুরুলিয়ার' রূপ পরিদর্শন এর পরিকল্পনা।
ছোট, বড় মিলে সদস্য সংখ্যা 21 জন। সেই মতোন, টিকিট, ও ঘরের ব্যবস্থা করা হল। অবশেষে যাত্রা র দিন এলো। হাওড়া থেকে রাত এগারো টায় ট্রেন। চক্রধরপুর লোকাল। প্রায় প্রতিটি স্টেশন ই দাঁড়িয়ে, ধীরে, ধীরে এগোতে লাগলো ট্রেন টি। ভোর বেলা জানলা দিয়ে সূর্যের রক্তিম আলো ঢুকতে লাগলো। জানলা দিয়ে বাইরে চোখ রাখতে ই, বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। ট্রেন থেকে যতদূর চোখ প্রসারিত হচ্ছে, শুধু লাল পলাশের মেলা।লাল পলাশের উপর, সূর্যের প্রথম কিরণ পরে তা আরও অপরূপ হয়ে উঠেছে। সেই সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে, সেই সৌন্দর্য উপলদ্ধি করলাম।বেশ কিছুক্ষণ পরে, সেই সৌন্দর্য উপলদ্ধি করার চেষ্টা করলাম মাত্র।বারাভূম স্টেশনে ঢুকতে, প্রায় সাত টা বেজে গেল এই স্টেশন টি বেশ চমৎকার।পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন, বাইরে , ছৌ নাচের মূর্তি সাজানো আছে।ভাড়া করা গাড়িতে, রওনা হলাম গেস্ট হাউসের উদ্দেশ্যে, জ্যোতি গেস্ট হাউস। এখানেও পথ প্রসারিত হয়েছে, পলাশ আবৃত, দুধারে জঙ্গলে র মধ্যে দিয়ে। গেস্ট হাউসে পৌঁছে, একটু বিশ্রাম ও জল খাবার খেয়ে, ভাড়া করা গাড়িতে, পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ঘুরে দেখার জন্যে বেড়িয়ে পরলাম। প্রথমেই গেলাম পাখি পাহাড়। এই অঞ্চল টা, শাল,সেগুন, আর পলাশ গাছে পরিব্যক্ত।সারা পাহাড় জুড়ে কোনো শিল্পী দল উড়ন্ত পাখির চিত্র খোদাই করে চলেছেন।পাখি পাহাড়ের ঠিক সামনেই, দুটি কুসুম গাছ, যেন এখানে, আগত অতিথি দের রক্তিম অভ্যুর্থনা জানাচ্ছে। আসে,পাশে,কিছু পলাশ গাছ, ও রক্তিম সাজে সজ্জিত। কিছুটা সময় কাটিয়ে, পরবর্তী গন্তব্যে র জন্য, বেড়িয়ে পরলাম। পথে পলাশের শোভা, মন কে ভীষন ভাবে উৎফুল্ল করে তুলেছে। যা দেখতে আসা, তা সার্থক। চোখ, মন ভরে গেছে, পলাশের সৌন্দর্য এ।আরেকটু সামনে থেকে, স্মৃতির খাতায়, কিছু রূপ, কিছু মুহূর্ত কে ক্যামেরা বন্দী করতে, একটা পলাশ বনের সামনে গাড়ি দাঁড় করানো হলো। পাহাড়ের প্রান্ত দিয়ে, একদল গো পালক দল, তাঁদের পোষ্য নিয়ে পথ চলেছেন।প্রতিটি পলাশের ডাল কে অক্ষত রেখে, শুধুমাত্র পলাশের রূপ কে, কিছুটা ক্যামেরা বন্দী করার চেষ্টা করলাম মাত্র। কিছুটা সময় কাটিয়ে, পরবর্তী গন্তব্যে র জন্য রওনা হলাম। পরবর্তী গন্তব্য পারডি ড্যাম। যখন এখানে এসে নামলাম, তখন হঠাৎ ই একরাশ মেঘ এসে সূর্য কে ঢেকে দিয়ে গেল। মেঘলা আকাশ, ফাগুন হাওয়া ও পারডি ড্যাম, সব অবসাদ, ক্লান্তি, এক নিমেষেই ভুলিয়ে দিল। কিছু স্থানীয় মানুষের জীবন প্রণালী ও লক্ষ্য করলাম। সময়ের স্বল্পতার জন্য, ইচ্ছে থাকলেও বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না, এখানে। পরবর্তী গন্তব্য খয়রাবেড়া ড্যাম। খয়রাবেড়া ড্যাম অঞ্চল টির ব্যাপ্তি, অনেক টা অঞ্চল জুড়ে। এখানে ও প্রথমে ই অভ্যর্থনা জানাচ্ছে বড় একটা শিমুল গাছ, তার লাল ফুলের ডালি নিয়ে। জলাধারে জল অনেকটা ই কমে এসেছে। কিছু পাখির দেখা মিলল।চারদিকের শোভা অতি মনোরম। দেখতে, দেখতে অনেকটা বেলা হয়ে গেল। পথে পড়ল চারিদা গ্রাম। যা মুখোস তৈরি গ্রাম নামে পরিচিত। রাস্তার উপরেই বিভিন্ন দোকানে, শিল্পীরা ছৌ নাচের ও অন্যান্য মুখোশ তৈরি করে চলেছেন। কিছুটা সময় কাটিয়ে, গেস্ট হাউস এ ফিরে যাবার পালা। গেস্ট হাউসে এ ফিরে খাবার খেয়ে, বিশ্রাম নিয়ে, বিকালে, পায়ে, পায়ে হেঁটে আসে, পাশ টা একটু ঘুরে বেড়ালাম।পাহাড়ের কোলে একদল ছেলে মাঠে খেলা করছে। রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকা, পলাশ গাছের ফুল, কালো পিচ রাস্তার উপর যেন কার্পেট বিছিয়ে দিয়েছে। পলাশ গাছ টার ঠিক পিছনের মাঠেই হঠাৎ করে সূর্য ডুবে গেল। পূর্ণিমা একদম কাছে। তাই উজ্জ্বল চাঁদের জোৎস্নাধারায়, গেস্ট হাউসের ছাদটি, একবারে আলোকিত হয়ে গেল। ছাদেই চললো আড্ডা, আর গল্প। ঠিক কত রাতে আড্ডা টি ভেঙ্গেছিল, ঠিক মনে নেই।
গেস্ট হাউসের অন্যতম সদস্যা, আমার বেশ বন্ধু হয়ে গেল।ঠিক হলো, সে আমাকে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল টা ঘুরে দেখাবে। সেই মতন অনুমতি ও পাস হয়ে গেল। পরের দিন সকালে, আমরা বেড়ানোর সময়ে, আমার দুই দিদি ও আমাদের সঙ্গী হলো। চারজন মিলে বেরোলাম পার্শ্ববর্তী অঞ্চল টা ঘুরে বেড়ানোর জন্য। সকলের স্নিগ্ধ হওয়ায়, শান্ত পরিবেশে, কেমন যেন একটা স্বাধীনতার অনুভূতি। কিছুক্ষনের জন্য সব পিছুটান ভুলে গেলাম। পাহাড়ের প্রান্ত দেশে, পলাশের বিশাল ব্যাপ্তি। গাড় সবুজের মধ্যে, রক্তিম পলাশের শোভা বর্ণনাতীত। এখানে বেশ কিছু চন্দন গাছ ও বেশ কিছু মহুয়া গাছ দেখতে পেলাম। একটা তীব্র গন্ধের অনুভূতি, মহুয়া গাছের উপস্থিতি কে জানান দিচ্ছে। কিছুক্ষণ কাটিয়ে, গেস্ট হাউস এর দিকে ফিরে গেলাম। জলখাবার খেয়ে তৈরি হলাম, অযোধ্যা পাহাড় ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ঘুরে দেখার জন্য।
দেখলাম টুর্গা ড্যাম, অপার ড্যাম ও লোয়ার ড্যাম। বেশ কিছু মুহূর্ত, ক্যামেরা বন্দি করে, তারপরই গেলাম রাম মন্দির। এখানকার পরিবেশ ও খুব স্নিগ্ধ, মনোরম। যা মন কে একটু শান্তি প্রদান করলো। রাম মন্দিরের ভিতরে কিছু লেখা, এখানকার আর্থ সামাজিক দিকের অপর চিত্র তুলে ধরলো। দেওয়ালে স্পষ্ট লেখা আছে, " এখানকার বাচ্ছাদের হাতে টাকা তুলে দিয়ে, এদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করবেন না।" এরপরই গেলাম বহু প্রতীক্ষিত মুরগুমা ড্যাম এ। এখানে যাওয়ার রাস্তাটি ভারী সুন্দর।যা কোন ভাবেই ব্যক্ত করার ক্ষমতা আমার নেই। পাহাড়, জঙ্গলে ভরা দুই দিকের রাস্তা। র তারই মধ্যে লাল পলাশের হাতছানি। মুরগুমা যখন পৌঁছালাম, তখন বেলা অনেক। এখানেও জলাধারে জল খুব ই কম হয়ে গেছে। অঞ্চল টির ব্যাপ্তি অনেকটা। দূরে পাহাড়ের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা পলাশ গাছ, এই অঞ্চলের শোভা কিছু বাড়িয়েছে। জলাশয়ের জলে কোথাও স্থানীয় মানুষ, ও কোথাও গবাদিপশু তপ্ত দ্বিপ্রহরিক সান্দ্রতা নিতে ব্যাস্ত। কিছুটা সময় কাটিয়ে, রওনা হলাম, পরবর্তী গন্তব্যে র জন্য। মুরগুমা থেকে পরবর্তী গন্তব্য, বামনি ফলস। এখানে বেশ অনেকটা কষ্ট করে নীচে নেমে, তবে এখানের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। পাহাড়ি জল ধারা , অনেকটা উঁচু থেকে নিচে নেমে আসছে। ছোট রাও বেশ সছন্দে নীচে নেমে, এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পিছু পা হয় নি। এখানেও কিছুটা সময় কাটিয়ে, কষ্ট করে উপরে উঠে, পরবর্তী গন্তব্যে র জন্য গাড়িতে উঠে বসা। এরপর গন্তব্য, মার্বেল লেক, যা blue lake নামে ও পরিচিত। চারধারে পাহাড় আবৃত শান্ত জলাশয়, এক কথায় অনবদ্য । জলাশয়ের শীতল জলের , অনুভূতি, মনকে প্রশান্তি প্রদান করল। এখানে পুরুলিয়ার অন্যতম জীবন চিত্র প্রদর্শিত হলো। দেখলাম, বেশ কিছু রমনী, অনেক দূর থেকে,অনেক টা কষ্ট করে পানীয় জল সংগ্রহ করে আনছেন। জানলাম, অন্তত 1 km দূর থেকে এই জল বহন করে নিয়ে আসা। তাই এখানে এতটুকু পানীয় জল অপচয়, খুবই পীড়াদায়ক। যাই হোক, তখন ঘড়িতে, দুপুর গড়িয়ে, বিকাল হওয়ার মুখে। তাই গেস্ট হাউসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম।
( ছৌ নৃত্য দেখা, যা জীবনের অপর সঞ্চয়)
গেস্ট হাউসে খাবার সেরে, একটু বিশ্রাম নিয়ে, আবার বাইরে টা একটু পায়ে পায়ে ঘুরে দেখা। জঙ্গলে, গাছের ফাঁক দিয়ে ফাগুনী পূর্নিমা র চাঁদের আলো, চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্যামেরা বন্দি করার চেষ্টা করলাম মুহূর্ত টি। এবার গেস্ট হাউসে ফেরার পালা। আজ গেস্ট হাউসের অলিন্দে, বাংলার ঐতিহ্য মন্ডিত, লোকনৃত্য 'ছৌ' এর আয়োজন করা হয়েছে। ফাগুনী পূর্ণিমার জোৎস্না ধারায়, পাহাড়ের প্রান্ত দেশে, জঙ্গল আবৃত মাঠে, পরিবেশিত হবে ছৌ নৃত্য। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান টির ব্যবস্থাপনায়, ধরমবীর প্রামানিক স্যার। সন্ধ্যের একটু পরেই প্রায়, কুড়ি, বাইশ জনের একটি দলের, মিলিত প্রচেষ্টায় সম্প্রচারিত হল ছৌ নৃত্য। এর আগে, কখনও সামনে থেকে দেখার সুযোগ হয় নি, এই নৃত্য শিল্পের, তাই মন আজ উত্তেজনায় ভরপুর। আমাদের দর্শকদের বসার ঠিক সামনে ই বাজনদার দের বসার ব্যবস্থা হলো। মাঠের অপর প্রান্তে, আছেন ছৌ নৃত্য শিল্পীগণ। ছোট শিল্পী রাও এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করবে। আর আছেন দুইজন মহিলা নৃত্য কুশলী। মাঠের এই প্রান্তে আছেন, ছৌ নৃত্য সঞ্চালক ব্যক্তি। অনুষ্ঠান শুরু হলো, বাজনদার দের বাজনার মধ্যে দিয়ে। ছৌ মুখোশ, ও পোশাক পরে, একের পর এক, কখনো একসাথে চার , পাঁচ জন অসাধারণ নৃত্য পরিবেশন করলেন। চোখ, প্রাণ জুড়িয়ে গেলো, সার্থক পুরুলিয়া সফর। আসে পাস থেকে, অন্যান্য গেস্ট হাউস থেকে ও অনেক দর্শক সমবেত হলেন, এই নৃত্য শিল্প দেখার জন্য। দুটি পর্বে অনুষ্ঠিত হলো, এই নৃত্য শিল্প। একটি, মহিষাসুর মর্দিনী, অপরটি রামায়ণ কথা কেন্দ্রিক। প্রায় ঘন্টা তিনেক ধরে চললো এই নৃত্য পরিবেশন। অনুষ্ঠান শেষে, মাঠে নেমে, শিল্পী দের কাছে, গিয়ে যা দেখলাম, তা একরকম বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। এত ভারী মুখোশ, পোশাক পরে, কিভাবে এরকম নৃত্য পরিবেশন করা যায়, সত্যিই বুঝে পেলাম না। অসুরের মুখোশ ও পোশাক ই মনে হলো সর্বাধিক ভারী। যে শিল্পী এই মুখোশ, ও পোশাক পরে নৃত্য পরিবেশন করেছেন, আমাদের আনন্দ প্রদান করেছেন, তাঁর নাকের উপরে অনেকটা ছাল উঠে গেছে, মুখোশের ভারে। সত্যিই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। কি বলবো, কিছু বুঝেই উঠতে পারলাম না। যাই হোক অনুষ্ঠান শেষে সব শিল্পী, কলা কুশলী চলে গেলেন। এই পরিবেশে ছৌ নৃত্য দেখার সুযোগ, জীবনের অপর সঞ্চয় হয়ে রইলো। সেই দিন ই আমাদের পুরুলিয়া সফরের শেষ রাত। পরের দিন সকালে, জল খাবার খেয়ে, বেড়াবো এমন সময় আবিরের রঙে ভরে গেলাম। আবিরের রং সাথে করেই ঘরে ফেরার পালা। আবার বারাভূম স্টেশন, এবং সেখান থেকে রাঁচি ইন্টারসিটি তে হাওড়া অবশেষে ঘরে ফেরা। পুরুলিয়া সফর এই ভাবেই শেষ হলো। |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |