চাঁদনী চকের পরাঠেওয়ালী গলি।
দিল্লীর চাঁদনী চকের কথা হলেই প্রথমেই মনে আসে লালকেল্লা, মসজিদ,মন্দির ইত্যাদি ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্যগুলোর কথা। কিন্তু আজ আমি এগুলির কথা নয়, বলব এক গলির কথা, যার নাম 'পরাঠেওয়ালী গলি'। নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে বিষয়টা খাবার সম্পর্কিত। আমার কাছে ভ্রমণ এবং খাদ্য কিন্তু একে অপরের সাথে জড়িত। নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর সাথে স্থানীয় খাবারের স্বাদ গ্রহণ করাও আমার কাছে সমান আকর্ষনীয়। সেই কারণে এবারে বেড়িয়ে পড়েছিলাম দিল্লীর চাঁদনী চকের উদ্দেশ্যে।
চাঁদনী চকের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চললাম। চাঁদনী চককে দেখে আমাদের বড় বাজারের কথা মনে হয়। হৈ হুল্লোড়, লোকজন, মুটে,রিক্সা রাস্তার দুধারে দোকানের সারি! বেশ খানিকটা যাবার পর একটা গলির ভেতর ঢুকে পড়লাম। গুগল ম্যাপ সেই গলিতেই ঢুকতে বলছিল। কিন্তু বেশ কিছুদূর চলার পরও কোনও পরোটার দোকান দেখতে পেলাম না, দুদিকে কেবল জামা কাপড়ের দোকান। অবশেষে বাঁ হাতে ঘুরতেই দেখতে পেলাম সেই বিখ্যাত পরাঠেওয়ালী গলির! পরপর বেশ কিছু পরোটা, লস্যি,মিষ্টির দোকান। আমরা গেলাম 'পন্ডিত গয়া প্রসাদ শিব চরণ পরাঠেওয়ালার দোকানে। জানতে পারলাম প্রায় ছয় জেনারেশন ধরে শর্মারা এই দোকান চালাচ্ছেন, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৭২ এ। আমরা টেবিলে বসতেই খোপওয়ালা থালাতে আলু মটরের তরকারী,পুদিনা চাটনী, কুমড়োর একটা মিষ্টি তরকারী, তেঁতুলের চাটনী যার মধ্যে ছোট দুটো কলার টুকরো পরিবেশিত হল। টেবিলের একপাশে সবজীর আচার রাখা ছিল বড় বাটীতে। এরপর আমাদের অর্ডার অনুযায়ী চারটে পরোটা এল - পনীর, কাজু,ফুলকপি, মিক্সড ভেজ পরোটা। পরোটাগুলো বেশী বড় নয়, বাইরেটা মুচমুচে, ভেতরটা নরম। আমার সব থেকে ভালো লাগল কাজু পরোটা। খাদ্য তালিকাতে দেখলাম বহুরকমের পরোটা আছে - আলু, কপি, মূলো,ডাল এইসব পরিচিত পরোটা যেমন আছে, তেমন আছে করোলা,ভেন্ডি,কলা,খোয়া,টমেটো,পাপড় ইত্যাদি পরোটা। দাম কিছুর ৬০ এবং কিছুর ৭০। দেখলাম খোপওয়ালা অনেক গুলো বাক্সে পুর রাখা আছে। চাহিদা অনুযায়ী লেচীতে পুর ভরে বেলে ডুবন্ত ঘি তে ভাজা হচ্ছে।
শুনলাম যেহেতু এই দোকান গুলো ব্রাহ্মন পরিবার দ্বারা পরিচালিত, সেই কারণে এখানে পেঁয়াজ রসুনের ব্যবহার নেই। দোকানের মালিক বলছিলেন একসময় অনেক বিখ্যাত লোকজন এখানে পরোটা খেতে আসতেন, কিন্তু এখন আর সেই স্বর্ণযুগ নেই। এখন বেশীর ভাগই স্থানীয় লোকজন যা আসেন। যাইহোক আমরা ১২০ বছরের পরাঠেওয়ালী গলির পরোটার স্বাদ নিয়ে ফিরে চল্লাম।
1 Comment
2017 তে গিয়েছিলাম দিল্লি । একটা দিন পুরটাই রেখেছিলাম অক্ষরধাম মন্দির দেখার জন্য। পরিকল্পনা অনুযায়ী বেড়িয়ে পরলাম।নিউদিল্লি স্টেশন থেকে হলুদ লাইন ধরে চলে এলাম রাজীবচকে,সেখান থেকে ব্লু লাইন ধরে অক্ষরধাম।নেমেই অটো পাবেন। অটো সোজা পৌঁছে দেবে মন্দিরের সামনে। ভিতরে ঢোকার সময় অনেক নিয়ম,কানুন আছে। লাইনে দাঁড়িয়ে ব্যাগ, মোবাইল, ক্যামেরা সব জমা নিয়ে একটা কুপন দিয়ে দেয়, কুপন নিয়ে ঢুকে পরলাম মন্দিরের ভেতরে। দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। দুধারে গাছের সারি, মাঝখানে পরিস্কার রাস্তা, রাস্তা ধরে কিছুটা গেলে মন্দিরে ঢোকার বিশাল দরজা। ভিতরে ঢুকে সত্যিই অবাক হতে হয়। একদিকে থিয়েটার হল, মিউজিয়াম , সোজা সাদা চকচকে মার্বেলের রাস্তা চলেগেছে মন্দিরের দিকে। আমরা রাস্তার মাঝে কাপের্টের উপর দিয়ে সিঁড়ি পেরিয়ে মন্দিরে ঢুকলাম। মন্দিরের ভিতরে অপূর্ব কারুকার্য , বিশাল আকৃতির পিলার , রং বেরঙের অলঙ্কার খোচিত মূর্তি। মন্দিরের দরজার ফলকে,গায়ে, অসংখ্য হাতির মূর্তি। দেখতে দেখতে চোখ জুড়িয়ে যায়। একটির পর একটি বিশাল পিলার দেওয়া ঘর, তার ভিতরে রাম সীতা,হরেক রকম মূর্তি। মাঝখানে যে ঘরটি তার সিলিং এ পদ্মের মত কারুকার্য, স্বামীনারায়নের সোনালী রং এর চকচকে মূর্তি। এইবার এই মন্দির সম্পর্কে বলি। গিনেস বিশ্বরেকর্ড এ এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির। ভারতীয় স্থাপত্যের ধাঁচে তৈরী।বোচাসন্ন্যাসী শ্রী অক্ষর পুরুষোত্তম স্বামীনারায়ন সংস্থার গুরু প্রমুখ স্বামীর অনুপ্রেরনায় এই মন্দির তৈরী করা হয়। মন্দিরের মধ্যে রয়েছে প্রদর্শনী হল, থিয়েটার, মিউজিয়াম ফাউন্টেন, গার্ডেন অফ ইন্ডিয়া, পদ্মফুলের ধাঁচে বিশাল আকৃতির সুদৃশ্য বাগান যা যোগী হৃদয় কোমল নামে পরিচিত। মন্দির র্নিমানে স্টিল ও কংক্রিট ব্যবহার করা হয় নি। হিন্দু সংস্কৃতি ও ভারতীয় ইতিহাসকে মিলিয়ে বহু অংশে হাতির স্থাপত্য বানানো হয়েছে। প্রতিটি হাতীর স্থাপত্যের ওজন ৩০০০টন। যমুনা নদীর তীরে দামী পাথর দিয়ে মন্দিরের একাংশে স্বামীনারায়ন ও ভারতের ইতিহাস বর্নিত হয়েছে।মূল অংশ প্রায় ১৪১ফুট উঁচু,৩১৬ফুট চওড়া,৩৫৬ফুট লম্বা।৩৬৪টি পিলার,৯টিবিশাল গম্বুজ।২০,০০০ মূর্তি ও হিন্দু দেবদেবী,সাধু আচার্যদের স্থাপত্য, রাজস্থানের গোলাপী বেলে পাথর, ইতালির কারারা মার্বেল দিয়ে তৈরি। এছাড়া নারায়ন সরোবর, প্রমতী ফুডকোর্ট, আর্টসেন্টার। ক্যামেরায় এই সুন্দর স্থাপত্য নিদর্শন না ধরলেও মনের মনিকোঠায় একরাশ স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসলাম। ফুড কোর্ট এ বিভিন্ন খাবার যথার্থ দামে পাবেন। ফুচকা থেকে আইসক্রিম সবই আছে। বলে রাখি ফেরার পথে কুপন দেখিয়ে জিনিস গুলো নিতে ভুলবেন না। মন্দিরের যে দিক দিয়ে বেরোবেন সেখানে থেকে হেঁটেই মেট্রো স্টেশন চলে আসতে পারবেন। সোমবার এটি বন্ধ থাকে।যে ছবিগুলো দেব ,সবই আমার সংগৃহীত কারন ভিতরে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা আছে।
বাদশাহি কেল্লা.......আগ্রা ফোর্ট!! আগ্রার তাজমহল থেকে মাত্র ২.৫ কিমি. দূরত্বে যমুনা নদীর তিরে অবস্থিত এই কেল্লাটি মুঘল স্থাপত্যের এক অনন্য নিদর্শন। মুঘল রাজবংশের রাজকীয় আবাসস্থল ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ১৯৮২ সালে এটি UNESCO World Heritage Sight এর সম্মান পায়। লাল বেলেপাথরে তৈরী আগ্রা ফোর্টটির সম্প্রসারিত নির্মানকার্য ১৬শ শতকে আকবরের আমলে শুরু হয়। তারও অনেক পূর্বে, ১১ শতকে এই স্থানে রাজা বাদল সিং এর অধীনে একটি সামরিক দূর্গ ছিল বলে জানা যায়। সেইসময় স্থানটির নাম ছিল বাদলগড়। মুঘল সাম্রাজ্যের পূর্বে গজনীর সুলতান সিকান্দার লোদির রাজধানী ছিল আগ্রা। পাণিপথের যুদ্ধে আকবরের হাতে নিহত হয়ে তিনি সাম্রাজ্য হারান। ১৫২৬ সালে দিল্লি জয়ের পরে বাবর এখানে অবস্থান করেন। পরবর্তীকালে হুমায়ুনের রাজ্যাভিষেক হয় পুরানো দূর্গে। ১৫৪০ থেকে ১৫৫৫ পর্যন্ত এই দূর্গ শের শাহ এর দখলে থাকে। পরে হুমায়ুন পুনরায় দূর্গ পুনরুদ্ধার করেন। এরপরে বিভিন্ন সময়ে আগ্রা ফোর্ট বিভিন্ন শাসকের হস্তান্তর হয়.....! সম্রাট আকবরের পরে জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও ঔরঙ্গজেব এর আমলে ফোর্টে বহু নতুন স্থাপনা নির্মিত হয়। প্রায় ২.৫ কিমি আয়তনের এই বৃহৎ প্রাঙ্গণের উত্তর দিকের বেশ কিছুটা অংশ ভারতীয় সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে থাকলেও প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলি পর্যটকদের জন্য প্রতিদিনই খোলা থাকে। (এই পোষ্টে আগ্রা ফোর্ট ও তার প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলির ছবি দেওয়া হল। নাগিনা মসজিদের প্রবেশ পথ বন্ধ থাকায় ছবি দেওয়া সম্ভব হল না....) Post By:-সংহত সাঁতরা
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |