।।ছোট্ট ছুটির ফাঁকে।।
বসন্তের আগমনে বাতাস যখন হাওয়া বদলানো শুরু করলো ঠিক তখনই আমার চঞ্চল হৃদয় বড়ই ব্যাকুল হয়ে উঠলো নিজেকে হাওয়া বদলানোর তাড়নায়। কিন্তু কয়েক দিন ধরে ভেবে পাচ্ছিলাম না কোথায় যাওয়া যায়। সামনে দোল উৎসবের উদ্দীপনায় ভ্রমণ পীপাষু বাঙালি পর্যটকের দল মাস দুয়েক আগে থেকেই সমস্ত পর্যটন কেন্দ্র গুলো দখল নিয়ে বসে আছে। না পাচ্ছি হোটেল না পাচ্ছি ট্রেনের টিকিট। এমতাবস্থায় হঠাৎ করে একটা বিয়ের নিমন্ত্রণ পেলাম শিলিগুড়ি থেকে। এ যেন মেঘ না চাইতেই জল। ভাবলাম এ সুযোগ ছাড়া যাবে না একদিকে রথও দেখা হবে অন্য দিকে কলা ও বেচা যাবে। তাই আপাতকালীন টিকিট কেটে ১১মার্চ কাজিরাঙা এক্সপ্রেস ধরে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। যথা সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে গেলাম। বিবাহ অনুষ্ঠানটি স্থাপিত হয়েছিল আলিপুরদুয়া্র ও শিলিগুড়ি এই দুই শহরকে কেন্দ্র করে। তাই তিন দিন ওখানে নানা অনুষ্ঠান ও যাতায়াতের মধ্যে দিয়ে সময় কেটে গেল। চার দিন পর অর্থাৎ ১৬ই মার্চ বেড়িয়ে পড়ি জঙ্গল সাফারি করতে। শিলিগুড়ি থেকে মাত্র কয়েক মাইল দূরে শালুগাড়ার অন্তর্গত সেবকের পাদদেশে নতুন করে গড়ে ওঠা বেঙ্গল সাফারি পার্কের উদ্দেশ্যে। পার্কটি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। সাধারণ প্রবেশমূল্য ৩০টাকা, গাড়ি সাফারির মূল্য ২০০টাকা এবং হাতি সাফারির মূল্য ৩০০টাকা। পার্কটিতে হরিণ,বানর, কচ্ছপ, বনমুরগি, ময়ূর, ভাল্লুক, লেপার্ড, কুমীর এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রজাপতি দেখতে পাওয়া যায়।
এই জায়গায় আরো একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল সেবক কালিবাড়ি। এটিও নতুন করে সেজে উঠেছে কয়েক বছর পূর্বে। আঞ্চলিক ভাবে এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এছাড়া এখানে বাঘপুল (Corrination Bridge) একটি দ্রষ্টব্য স্থান হিসেবে পরিচিত আছে। এই জায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বেশ উপভোগ্য। প্রতিদিন শত শত সিকিম ও কালিম্পং গামী পর্যটকের দল এর পাশদিয়ে চলে যায় কিন্তু এগুলো দেখেন না, কেন জানি না। হয়তো খানিকটা উদাসীনতা, নয়তো বা অজানার অভাব এদের এগুলোকে বঞ্চিত করে। আমি অনুরোধ জানাচ্ছি ঘন্টা তিনেক সময় নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে অথবা যাতায়াতের পথে এগুলি দেখে নিতে। আশা করি হতাশ হবেন না।
১৭ই মার্চ শিলিগুড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ি কুচবিহারের উদ্দেশ্যে। ১৬০কিমি. প্রায় ঘন্টা তিনেকের জার্নি। ট্রেন বা বাস দুভাবেই এখানে আসা যায়।আমি অবশ্য বাসেই গেছিলাম। এখানে পৌঁছে প্রথমেই চলে আসি কুচবিহার রাজপ্রাসাদে। এরপর ২৫টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢুকে পড়ি রাজপ্রাসাদের ভেতরে। প্রাসাদটি বেশ অনেকটা জায়গা জুড়ে অবস্থিত। সামনে বিশাল বড় উদ্যান তার মধ্যে সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা রং বেরঙের ফুল ও গাছের সমারোহ। সমস্ত ফাঁকা জায়গা গুলো ঘন সবুজ ঘাসে ভরা তারই মধ্যে বিরাজ করছে জলে ভরা কয়েকটি পরিখা এবং দুই দিক দিয়ে যাতায়াতের জন্য বাঁধানো রাজপথ। ওপর প্রান্তে বিরাজ করছে সুন্দর কারুকার্যে ভরা সুদৃশ্য রাজপ্রাসাদটি। যাহা সকলকে একবাক্যে বিশ্বয় এনে দেয়।
প্রাসাদটির নির্মানশৈলী ইটালিয়ান স্থাপত্যের অনুকরণে গঠিত। ভিতরে সাজানো রয়েছে রাজব্্শের পূর্বপুরুষের ছবি এবং ব্্শানুক্রমিক পরিচিতির বিবরণ। এছাড়া তৎকালীন সময়ে ব্যবহিত মূদ্রা, অস্ত্র, পোশাক ও পরিধেয় অল্্কার সামগ্রী মিউজিয়ামের মাধ্যমে সং ক্ষণ করে রাখা আছে। ভারতবর্ষ স্বাধীনতার পরেও এই রাজাদের রাজত্ব বর্তমান ছিল। কুচবিহারের সেই সময়ে নাম ছিল কামতাপুররাজ্য এবং এর বিস্তৃতি ছিল অধুনা আসাম পর্যন্ত। পরে ভারত সরকার এটি অধিকার করে কামতাপুররাজ্যকে কুচবিহার ও আসামে বিভক্ত করে। এ ভাবেই সমাপ্ত হয়ে যায় কামতাপুরী রাজবাড়ীর ইতিহাস।
কুচবিহারের আরো একটি উল্লেখযোগ্য স্থান হল মদনমোহন মন্দির। এটি কুচবিহার রাজপ্রাসাদ থেকে ১কিমি. দূরত্বে অবস্থিত। জনমুখে শোনা যায় এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও জাগ্রত মন্দির। বিভিন্ন জায়গা থেকে বহু লোক এখানে আসেন তাদের মনষ্ককামনা পূর্ণ করতে। রাসের সময় এখানে মেলা বসে এবং বহু লোকের সমাগম হয়। এভাবেই ১৭তারিখের সফর সূচী সমাপ্ত করে রাতে ফিরে আসি শিলিগুড়িতে। ১৮ই মার্চে রাতে ট্রেন ধরে ১৯ মার্চ সকালে কলকাতা ফিরে আবার নতুন উদ্দীপনায় পূর্ব কর্ম জীবনে ফিরে যাই। *** সমাপ্ত ***
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |