শান্তিনিকেতনের সাথে আমার পরিচয়ের শৈশবকাল চলছে সবে। পড়াশোনার সূত্রেই বিশ্বভারতীতে প্রতি সপ্তাহান্তে ফিরে ফিরে আসা। কিন্তু সপ্তাহান্ত কেন?? আসলে এখানকার নিয়মটা বড় মজার। সবখানে যখন শুক্রবারে সপ্তাহ শেষের বাদ্যি বাজে, ঠিক তখনই বিশ্বভারতীর কলা-বিদ্যা-শিক্ষা-বিনয় ভবন মুখরিত হয় ছাত্রছাত্রীদের কলোকল্লোলে। আর সপ্তাহ শেষ মঙ্গলবারে। এখানে অন্যরকম সবকিছুই। আরো অন্যরকম এখানকার উদ্ভাস-উচ্ছ্বাস ও স্ফূরন। শান্তিনিকেতনের এই রূপ-রস-গন্ধের মাঝে মূল আকর্ষণ কিন্তু হল বছরব্যাপী নানা উৎসব...নির্দিষ্ট সময় অন্তর রঙীন হয়ে ওঠা যেন এখানকার মানুষদের স্বভাবজাত। শান্তিনিকেতনের দোলউৎসব বা পৌষমেলা তো বহুলপ্রচলিত, এছাড়াও স্বল্পশ্রুত অনুষ্ঠান যেমন হলকর্ষণ বা বনমহোৎসব বা মহালয়ার দিনে আনন্দবাজারও কম উপভোগ্য নয়। গত ৮ই অক্টোবর ছিল মহালয়া আর ছিল আনন্দবাজার। এবারে যার অমোঘ আকর্ষণে আমি ক্লাস না থাকলেও ছুটে এসেছি বোলপুরে। বিশ্বভারতী আমাদের বড় তাড়াতাড়ি আপন করে নিয়েছে। যাইহোক বিকেল ৫.৩০-এর মধ্যে আমরা সেজে গুজে হাজির গৌড়প্রাঙ্গনে। সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য দিনটি একেবারে অন্যরকম। এই আনন্দঘন বাজারে প্রতি বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের হাতে বানানো খাবারের বা হাতের কাজের পসরা সাজিয়ে বসে। প্রত্যেক স্টলের আলাদা নাম দেওয়া হয়... যেখানে ক্রেতা সতীর্থ বা শিক্ষক-শিক্ষিকারা। দই-ফুচকা, পাপড়ি চাট,চা-কফি, মালপোয়া,কাজু লস্যি, পনীর পকোড়া, দুধ পুলি ,নারকোলের সন্দেশ, চপ এমন আরো কত কি লোভনীয় ছিল সারা মেলা জুড়ে !!!!!! এ সবে মুন্সিয়ানা ছিল না, ছিল অনেকটা ভাল লাগা তাই প্রচেষ্টা ছিল বড় আন্তরিক। পাঠভবনের ছোট্ট ছোট্ট বাচ্চারা অপটু হাতে বিক্রি করছিল ছোলামাখা বা হাতের কাজের জিনিস..কেউ না নিলে তাদেরও হচ্ছিল মন খারাপ। লাভ-লোকসানের ভ্রূকুটি নয় বরং নির্ভেজাল আনন্দই এই মেলাকে মাতিয়ে রাখে। কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য নেই বলেই এই মেলা এতটা সফল।প্রসঙ্গত উল্লেখ্য এই মেলা থেকে লাভ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ জনকল্যাণমূলক কাজেই ব্যবহৃত হয়। ঢোল বাজিয়ে মেলার শুরু ও শেষ দুই-ই করা হয়। সব মিলিয়ে নিত্য সন্ধ্যের শান্ত গৌড়প্রাঙ্গন প্রাণপ্রাচুর্য্যে ভরে ওঠে এইদিন। তাই মহালয়ার সময়ে কেউ যদি শান্তিনিকেতনের কাছাকাছি থাকেন তাঁর জন্য গৌড়প্রাঙ্গনে "আনন্দবাজার" অবশ্য দ্রষ্টব্য (প্রবেশ অবাধ)। তনিমা তানিয়া পাল। Post By-Tanima Tania Paul
0 Comments
TARAPITH, SANTINIKETAN, MOOLUTI TOUR... 5-8-18 আজ সকালে ঘুম থেকে উঠতেই, মায়ের তলব, বল্ল আমাদের তারাপিঠ নিয়ে জাবি, এই সপ্তাহে??? আমি আকাশ থেকে পরলাম কারন৷ ১. মেয়ের স্কুলের এক্সাম বুধবার অব্ধি আবার রবিবার মেয়ের ড্রয়িং এক্সাম। মানে tarapith গেলে thusday. গিয়ে Saturday ফিরে আস্তে হবে, weekday tour...৷ ২. মা(৬৫) চট করে এরাম বায়না করে না। বাবা(৭২) ও দেখলাম মাকে সাপোর্ট করছে। বউকে বলতে সেও রাজি যাবার জন্য। এরপর, অফিসেও এক দরখাস্তে ছুটি মঞ্জুর। একেই বলে মা তারার ডাক। ৯-৮-১৮ আজ সকাল ৮টা নাগাদ বাড়ি থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে প্রথমে শক্তিগড়ে ব্রেকফাষ্ট খেয়ে ইলামবাজার সিউড়ি হয়ে, আমাদের অনলাইনে বুক করে রাখা Hotel Yashoda International (আগেও ৩বার থেকেছি) আসলাম বেলা ১২;৩০ নাগাদ। এরপর লাঞ্চ করে, একটু ভাতঘুম দিয়ে বিকেলে মন্দিরে সন্ধা আরতি দেখে নিয়ে, রাতের খাবার খেয়েনিয়ে আজকের মতন দিনের সমাপ্তি। ১০-৮-১৮ আজ সকাল ৫টা নাগাদ ঘুমথেকে উঠে সকাল ৬টা নাগাদ মন্দিরে গিয়ে পুজা দিয়ে ৭;৩০ নাগাদ হটেলে ফিরে, আবার ১০;৩০ নাগাদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে, প্রথমে নলহাটি গিয়ে মা নলহাটেশ্বরির পুজা দিয়ে, আমরা রামপুরহাট-দুমকার রাস্তা দিয়ে ঝাড়খন্ড গিয়ে মা মউলিখা (moulikha) , (উনি তারামা এর sister), পুজাদিয়ে, ৩টেনাগাদ হটেলে ফিরে নিজেদের পেট পুজা করে দিবানিদ্রা দিলাম। এর পর বিকেলে আবার তারামার আরতি দেখে, রাতের খাবার খেয়ে, ঘুমের দেশে। ১১-৮-১৮ আজ আমরা সকাল ১১টা নাগাদ তারাপিঠ থেকে বেড়িয়ে সাইথিয়া হয়ে শান্তিনিকেতনে এসে প্রথমে kopai নদী, তারপর কনকালিতলার মন্দির দেখে নিয়ে, এলাম সোনাঝুরির(khoyai) হাটে। হাট বসে বেলা ৩টে থেকে সানসেট অব্ধি। কিছু কেনাকাটা ও ঘোরাঘুরির পর, শান্তিনিকেতনে দুপুরের খাবার খেয়ে নিয়ে, ১০৮ শিব মন্দির, Burdwan দেখে বাড়ি ফিরলাম ৭;৩০ নাগাদ। একটা কথা- একে শ্রাবন মাস তার ওপর আমাবস্যা বলে, দলে দলে মানুষ দেওঘরে বাবা(শিব) র পুজা দেবার পর, মা তারার পুজা দিতে আসছিল গাড়ি বাসে করে, তাই প্রচুর ভীড়। Total km travelled-675km Post By- Sukanta Banerjee
"ছুটির আশ্রম " সাল টা সম্ভবত 1860 হবে, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ প্রখর রোদে বোলপুরে যাচ্ছিলেন,ছাতিম গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন,সামনের বিস্তৃত খাঁ খাঁ মাঠ দেখে তিনি ঠিক কি ভেবেছিলেন তা আমাদের জানা নেই। এরপর যা করেছিলেন, তা আমাদের সবার জানা। রবীন্দ্রনাথ পিতার অসমাপ্ত কাজ কে সমাপ্ত করেন।দেবেন্দ্রনাথ যে শান্তির নিকেতন তৈরির কাজ শুরু করেন, রবীন্দ্রনাথ তাকে তপোবনের আকার দেন। এ একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধি, কোনো ভ্রমণ কাহিনী নয়, বর্ষায় অপরুপা শান্তিনিকেতনে হঠাৎ করেই যাওয়া আমাদের। প্রকৃতি এখানে উদার হাতে বর্ষা কে আহ্বান জানায়,দৃপ্ত ভঙ্গিতে বরন করে নেয়। গ্রহণ করা তোমার কাজ। কোপাই, খোয়াই, সোনাঝুরি,শ্রীনিকেতন,পাঠভবন, উপাসনা গৃহ,ছাতিমতলা,আম্রকুঞ্জ, আশ্রম বিদ্যালয়, ভুবনডাঙা, রতনপল্লি, সাঁওতালি গ্রাম এগুলো শান্তিনিকেতনের প্রাণভোমরা। ওহ্ ভুলে গেছি কঙকালিতলা (দেবীর একান্ন পিঠের একটি)সেও এই তালিকায় আছে। দীর্ঘ ইউক্যালিপ্টাস গাছের নিচে প্রতি শনিবার খোয়াই এর হাট এখন অন্যতম আকর্ষণ।যতদূর জানি এর নিয়ন্ত্রণ এখন পর্যন্ত সাঁওতাল সম্প্রদায়ের হাতেই।বাউলের গান, সাঁওতালি নাচ, মাদল,একতারা, খোল করতাল,ছিনাথ বহুরুপীদের আনাগোনা, হরেক রকম পসরার বিকিকিনি, লালমাটির মাঝে বসে দরদাম- -"হাট বসেছে শুক্রবারে" মনে করাবে । শ্রীনিকেতন- পল্লি উন্নয়ন সমিতি বা গ্রামীণ স্বনির্ভর প্রকল্প, কবিগুরুর স্বপ্নের প্রকল্প। সম্ভবত 1921এ কবি আমেরিকা গিয়ে এলম্ হাস্ট এর সঙ্গে পরিচিত হন। এই ইংরেজ যুবক কবির কাজে যুক্ত হন। সুরুল গ্রাম কে কেন্দ্র করে এই প্রকল্প শুরু হয়, পরে সুরুল কৃষি সমিতির নাম পাল্টে ' শ্রী নিকেতন গ্রামোন্নয়ন সমিতি ' করা হয়। এখানেই গড়ে ওঠা " আমার কুঠি " স্থানীয় গ্রামীণ হস্ত শিল্পের অভূতপূর্ব নিদর্শন। 1927 এ বিশ্ব ভারতী সমবায় কেন্দ্রীয় ব্যঙ্ক গড়ে ওঠায় শ্রীনিকেতন নিজের ছন্দে এগিয়ে চলে। কবির মূল ভাবনা গ্রামবাসীরা যাতে নিজেরাই নিজেদের সমবেত চেষ্টায় আত্মনিভর্রশীল হতে পারে, সফল হয়। শান্তিনিকেতন আসলে অনুভবের জায়গা, আমার লেখার শিরোনাম দিয়েছি- "ছুটির আশ্রম "। ছুটি আসলে কবি পত্নী মৃণালিনী দেবীর আদরের নাম, যে নামে কবি ওনাকে ডাকতেন।মিউজিয়ামে কয়েকটি ছবি ছাড়া ওনাকে আলাদা করে খুঁজে বের করা অসম্ভব। কিন্তু সত্যি কি তাই ? আশ্রম বিদ্যালয় তৈরীর প্রথম দিন থেকেই কবির পাশে ছিলেন তাঁর আদরের ছুটি। ভাবতে অবাক লাগে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সুখের জীবন ছেড়ে পাঁচটি নাবালক সন্তানের জননী চলে এসেছেন শান্তিনিকেতনের রুক্ষ পরিবেশে, শুধুমাত্র স্বামীর স্বপ্ন কে সফলভাবে সম্পন্ন করতে।খুলে দিয়েছেন গায়ের সব গয়না, বিদ্যালয়ের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের তিনি দেখাশোনা করতেন। বাবা মা ছেড়ে আসা ছোট ছোট শিশুরা মায়ের ভালোবাসা পেতো কবির ' ছুটির ' কাছে । সহধর্মিনী বোধহয় একেই বলে। বিদ্যালয় তৈরীর এগারো মাস পরেই তিনি জীবন থেকে ছুটি নেন্। হলুদ সাদা ইউনিফর্ম পরা বাচছা গুলোকে দেখতে দেখতে তাঁর কথা মনে আসতে বাধ্য ।আরও কিছু দিন যদি তিনি থাকতেন আশ্রম পরিকল্পনা আরও হয়তো সার্থক হোতো ।কবি নিজেই বলেছেন, " আমি তাদের সব দিতে পারি মাতৃ সেনহ তো দিতে পারি না " আসলে কবির "ছুটি" মিশে আছেন ছাতিম, পলাস,বকুল,চাঁপা আরও নাম না জানা আশ্রম বিদ্যালয়ের অগণিত ফুলের সুরভির মধ্যে,যাকে দেখা যায় না, কিন্তু সপর্শ করা যায়, অনুভব করা যায়,ভালোলাগা ও ভালোবাসায় মন ভরে ওঠে। কবি নিজেই এক জায়গায় লিখেছেন ' মহাপুরুষের ইতিহাস তাঁর বাইরের কাজে স্থায়ী হয়, আর মহৎ নারীর ইতিহাস তাঁর স্বামীর কাজে স্থায়ী হয়, এবং সেখানে তাঁর নাম উললেখ মাত্র থাকেনা।' কবির "ছুটির আশ্রম "তারই প্রতিফলন ।।। Post By:- Krishna Deb Paul
ll সুরুলের সরকার বাড়ি ll মুহূর্তসঞ্চয়ন-লিখন-উপস্হাপনা : শুভজিৎ দে ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~ লালমাটির দেশ বীরভূম , আর সেই বীরভূম অন্তর্গত বোলপুরের থেকে ৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই সুরুল গ্রাম l মূলত বাগদি-ডোম-বাউরি সম্প্রদায়ের লোকজন এর বাস এই সুরুলে l আর সেই গ্রাম আলো করে অবস্থিত সুরুলদের সরকার বাড়ি ওরফে সুরুল রাজবাড়ি বা সুরুলের জমিদারবাড়ি l মাঝখানে নাটমন্দিরকে রেখে চতুষ্কোণ রাজবাড়ি। সরকার এদের বংশোভূত পদবি নয়, ইংরেজদের থেকে সম্মানে পাওয়া 'সরকার' পদবীটি । এদের আসল পদবী ঘোষ। আর বোলপুর আদি নিবাসও নয়। অষ্টাদশ শতকের প্রথম দিকে ভরতচন্দ্র সরকার বর্ধমানের নীলপুর থেকে সুরুলে আসেন গুরুর বাড়িতে থাকতে। গুরু বাসুদেব ভট্টাচার্যের বাড়িতে দীর্ঘসময় সস্ত্রীক থাকেন ভরতচন্দ্র। সেখানে তাঁদের একটি পুত্রসন্তানেই জন্ম হয় ,নাম রাখা হয় – কৃষ্ণহরি। এভাবে সময়ের হাতধরে সুরুলেই পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করেন সরকার পরিবার। কৃষ্ণহরির ছেলে শ্রীনিবাস ইংরেজদের সঙ্গে ব্যবসা করে সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন সে যুগে। মূলত ছিল জাহাজের পাল তৈরির কাপড়ের ব্যবসা আর নীল চাষের ব্যবসা। ভরতচন্দ্রের আমল থেকেই শুরু হয়েছিল সরকারবাড়ির দুর্গাপুজো। পরে তার ছেলেদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগাভাগি হলে ছোটো তরফের বাড়িতেও আলাদা করে শুরু হয় অকালবোধন। প্রায় ২৮৫ বছরের পুরোনো এই সুরুল রাজবাড়ির পুজো l আজ ও তা সমান উদ্দীপনায় পাল্পন করা হয় l রথের দিনে হয় কাঠামোর পুজো আর ৫ প্রজন্ম ধরে এই বাড়িতে একই শিল্পীর পরিবার মা দূর্গা নির্মাণ করে আসছেন l পারিবারিক স্বর্ণালংকারে সাজানো হয় মা কে l শোনা যায় , ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে সুরুলের রাজপরিবারের সম্পর্ক বরাবর ভালোই ছিল। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের জমির বেশ অনেকটা পেয়েছিলেন রাজ পরিবারের কাছ থেকেই। রবীন্দ্রনাথ আর রথীন্দ্রনাথের নিয়মিত যাতায়াত ছিল সরকারবাড়িতে। এই রাজবাড়ির অপর একটি ইতিহাস আছে যেটি বেশ অন্যরকম। হীরক জয়ন্তী, প্রতিশোধ, দেবদাস, পদি পিসির বর্মী বাক্স, সমাপ্তি, বলিদান, গহনার বাক্স থেকে হাল আমলের ‘বোস ডেড অর এলাইভ’ এর মতো সিনেমার শুটিংস্থল এই রাজবাড়ি। বাদ যায়নি বাংলা টিভি সিরিয়ালও । তুমি রবে নীরবে, লালু ভুলু, রাখিবন্ধন থেকে হাল আমলের রানী রাসমণি। ঠিকানা সেই সুরুল রাজবাড়ি। পথনির্দেশ : বোলপুরে থেকে টোটো এ, সময় নেবে ২০মি মতো, সবাইকে ওখানে চেনে এই নামে Post By:- শুভজিৎ দে
শান্তিনিকেতন বাউলের মন ভোলানো সুর , কোপাই আর বাঁকা চলন আর শাল পিয়ালের ছায়া - এক কথায় এই হলো শান্তিনিকেতন | শান্তিনিকেতন এর সোনাঝুরি তে কাটানো একটা দিন কখন কেটে গেলো তা টের পেলাম না I আমরা সোনাজুরির হাটের সামনেই রাধে শ্যাম রিসোর্টে থাকায় বিকেলের হাট দেখার চিন্তা রইলো না I আমরা সকাল সকাল চলে গেলাম কঙ্কালীতলা মন্দির এ মায়ের পুজো দিতে I সেখানে দুপুরের ভোগ এর ও ব্যবস্থা ছিল সে দিন I পাশেই বাউল গান I কিছুক্ষন সেখানে থেকে আমরা চললাম মিউজিয়াম আর বিশ্ব ভারতী দর্শনে I এখানে উপাসনা গৃহ , তালুকদার বাড়ি, কলাভবন, সঙ্গীতভবন, মিউজিয়াম, নন্দন আর্টগ্যালারী অনেক কিছুই দেখা যায় তাই আলাদা করে এর গুরুত্ব বা সেই বিষয়ে কোনো তথ্য তুলে ধরার ধৃষ্টতা রাখছি না। সেখান থেকে গেলাম বল্লভপুর অভয় অরণ্য I বেশ কিছু হরিণ এর দেখা মিললো এখানে I সেখান থেকে সৃজনী শিল্প গ্রাম I এখানে এ আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম I এরপর টোটো ছুটে চলল কোপাই নদীর ধার দিয়ে I কাছেই রয়েছে পলাশবনি গ্রাম I ইতি মধ্যে বিকেল হয়ে যাওয়ায় আমরা সোনাঝুরির হাঁটে চলে এলাম I সেখানে ততক্ষনে প্রচুর মানুষ তাদের পসরা সাজিয়ে বসেছেনI রয়েছে বাউল গান ও I সন্ধ্যা হতেই সেই মেলা শেষ হয়ে গেলো I রয়ে গেলো শুধু বাউল এর সুর যা সব সময়ের জন্য মনে গেথে রইলো ** নিকটতম স্টেশন - প্রান্তিক Post By:- মৈত্রেয়ী সমাদ্দার
অচেনা খাম. ( বোলপুর ভ্রমণ )........ রবিবারের আড্ডায় হঠাৎ ঠিক হলো এই প্রথম শীতে ছোট খাটো ভাবে একটা winter camp হয়েযাক l অনেক মতামতের পরে স্থির হলো শান্তিনিকেতন যাওয়ার l এই সময় শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ট্রেন এ যে টিকেট হবে না তা এই ভ্রমণ নেশাগ্রস্ত মানুষ গুলো জানে, তাই train এর টিকেট গুলো হলো সিউড়ি এক্সপ্রেস এ যাবার ও বিশ্ব ভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার এ ফেরার, দুটো গাড়িরই ভাড়া ২৯০ টাকা করে AC chair car . সকাল ৮.৩৫ এ সিউড়ি এক্সপ্রেস হাওড়া থেকে ছাড়লো এবং ১২ তার পরিবর্তে ১২.২৫ এ শান্তিনিকেতন পিছালো l স্টেশন থেকে দুটো টোটো নিলাম ভাড়া ২০ টাকা মাথাপিছু, গন্তব্য santiniketan international guest house l তিন কিলোমিটার পথ 20 মিনিটে পেরিয়ে যখন পৌঁছালাম তখন আমাদের সকলেরই বেশ খিদে ও ক্লান্তি লাগছিলো l এখানে এসে এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে পড়লাম, জানতে পারলাম যে আমাদের book করা ঘর অন্য লোক কে দিয়ে দিয়েছে l আমাদের থেকে ভাড়া নিয়ে রশিদ দেবার পরেও কি করে অন্য ব্যক্তি কে সেই ঘর দিয়ে দেয় এটা আমরা বুঝতে পারলাম না l সারা ভারতবর্ষ ঘুরেছি, অনেক সরকারি গেস্ট হাউস এ থেকেছি কিন্তু এই বাংলায় এবং বিশ্ব ভারতীর মতো একটা সংস্থা ও সর্বোপরি যার নাম international guest house , সেখানে এমন বিশৃঙ্খলতা দেখে সত্যি সত্যি মর্মাহত হলাম l এটা বিশৃঙ্খলতা না অসাধু চক্রের শিকার তা বুঝলাম না l আমাদের গ্রুপ এর এক দাদা, ওনার নাম সুন্দর চৌধুরী, উনি আগেই এই বুকিং করেছিলেন l ভদ্রলোক খুব অপ্রস্তুত ও বিব্রত বোধ করছিলেন, ওনার স্ত্রী রিতু দিদি ও খুব লজ্জা পাচ্ছিলেন.কিন্তু আমরা একদমই সুন্দরদাকে দোষী ভাবছিলাম না l মনে মনে সকলে এই dirty system কে ধিক্কার জানিয়ে অনত্র থাকার জন্য প্রস্তুত হলাম l অবশেষে শ্যামবাটিতে Birbhum Guest House এ জায়গা পেলাম , ম্যানেজার অসীম বাবু আমার পূর্ব পরিচিত l অত্যন্ত ভদ্র ও ভালো প্রশাসক, ছোট্ট গেস্ট হাউসটাকে ভালো খাবার, সুন্দর ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ন্যায্য মূল্যের মধ্যে বেঁধে রেখেছেন l সামনেই বাজার , সকালের লোকাল মাছের মেলা বসে l আপনার মন চাইলে নিজের ইচ্ছা মতো মাছ কিনে হোটেলে দিলে ওরা অতি সামান্য খরচ নিয়ে আপনার মনের মতো পদ আপনাকে রেঁধে দেবে lএই শ্যামবাটির বৈশিষ্ট হলো, এখান থেকে খোয়াইয়ের হাট , কঙ্কালী তলা , কোপাই নদী, আমার kuthi সায়ার বীথি ও বিশ্ববাংলা হাট খুব কাছে l এখন শ্যাম বাটিতে অনেক হোটেল হয়েছে যেমন মালঞ্চ, মনোরমা , নটরাজ, শান্তিনিকেতন রিসর্ট ও স্টিল অথরিটি এর গেস্ট হাউস আছে l ভাড়া ৪৫০ টাকা থেকে ২২০০ টাকা DAB l বোলপুর স্টেশন থেকে ৩.৫০ কিমি আর প্রান্তিক স্টেশন থেকে ১.৫০ কিমি হবে lতবে খাবার দাবারের কোয়ালিটি ও টেস্ট ভালো বীরভূম গেস্ট হাউস এর l গনেশ নামের রাঁধুনির হাতে যেন জাদু আছে l দাম ও খুব সস্তা , যেমন মাছ বা চিকেন ভাত সাথে সবজি ভাজা,ডাল চাটনি ও পাঁপড় ১২০ টাকা পেট চুক্তি আর নিরামিষ ভাত ৭০ টাকা নিরামিষ রুটি ৬০ টাকা l তবে হাঁ খরচ একটু বেশি হলেও রাম শ্যাম রিসর্ট, সোনাঝুরি, এর খাবারের কোয়ালিটি অসাধারণ l এখন আর শান্তিনিকেতন থেকে ৭ কি মি ড্রাইভ করে বনলক্ষী যেতে হয়না l ১২০ টাকায় নিরামিষ থালা প্রায় ১১ পদে সমৃদ্ধ থাকে আর আমিষ থালায় ২৫০ থেকে শুরু l নিজেদের চাষের জৈব সার এর সবজি l ভারী সুন্দর এর পরিবেশ l কাঁসার থালা বাটি গ্লাস এ খাবার সাজিয়ে দেয় , আর থাকার ভাড়া ১৬০০ থেকে শুরু. ভুবন ডাঙ্গার একটা কাপড় জামার দোকান থেকে আজ এরা কত বড় জায়গায় পৌঁছেছে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হয়না l আরে এতক্ষন আপনাদের সাথে আমাদের এই winter camp এর সদস্যেরই পরিচয় হলো নাতো l এবার বলি আমায় নিয়ে আমাদের এই টীম এ ৮ জন ছিলাম l আমাদের ঘোরা পাগলদের একটা টীম আছে যা "Gang " নাম এ পরিচিত. এর ৪২ জন সদস্য ও সদস্যা l আজকের টীম -- "শ্রীলিপি দিদি , যার কথা শুরুতেই বলা উচিত , এই শ্রীলিপি দিদি অসম্ভব ভালো গান করেন ও গোটা টিমটাকে সর্বক্ষণ জমিয়ে রাখেন l কল্পনাদি, একটু গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ হলেও খুব ভালো মনের ও ভালো সুরেলা গলার l খুবই শান্ত মনের l সুন্দর দাদা, ওনার গান শুনলে মনটা যেন ভোরে যায় , সরলতা কাকে বলে তা ওনাকে দেখলেই বোঝা যায়, মানুষটা বড্ডো ভালো l ঋতুদি , খুব ঠান্ডা মানুষ , যেন শীতকালের ই একটা রূপ l ভালো গানের কণ্ঠ ও ভালো ভালো খাবার পরিবেশক l মেঘরাজ, খুব হাসি খুশি একটা চরিত্র, অবাঙালি হলেও রবিঠাকুর ওনার সারা মন জুড়ে, খুব ভালো সুরের দখল ওনার কন্ঠে l চূর্ণী দিদি , যেমন ওনার গানের গলা তেমন ওনার মিশুকে স্বভাব , এইবার আসছি শতদ্রু দিদি মানে আমি এনাকে ব্রাম্হনি বলে ডাকি,ভালো কবিতা লেখেন ও পাঠ করেন তার সাথে আছে ভারত নাট্টাম এর জাদু. তবে শুকনো পথেও আছাড় খান l বার বার যার কথা মনে হচ্ছে সে হলো গিয়ে দীপ , হাঁ ২০ বছরের একটি ছেলে, বিশ্বভারতী থেকে লেখা পড়া করে এখন টোটোর মালিক ও চালক l একেই বলাযায় সততার প্রতীক l আমার টাকার থলি ও ছাতা ওর টোটো তে ফেলে চলে এসেছিলাম, রাত্রি ১০.৩০ এ আমার হোটেলে এসে সব কিছু ফেরত দেয় l ফোন গুলো ওই ব্যাগে ছিল তাই ও যোগাযোগ করতে পারছিলো না l আমি ওকে টাকা দিয়ে ছোট করিনি , তবে হাঁ যখন ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলাম তখন বীরভূমের সেধো মাটির একটা সরলতার গন্ধ প্রানটাকে জুড়িয়ে দিলো l আমিও এই লালমাটির দেশের লোক তাই ভুলে যাওয়া মুছে যাওয়া লালমাটির ধুলো গুলো আমার সারা শরীর জুড়ে লেপ্টে গেল l পরেরদিন ওর বাড়িতে গেছিলাম, ওর দিদার হাতে চুপটি করে ৫০০ টাকা দিয়ে বললাম যে আপনাদের জন্য একটু ফল মিষ্টি আনার ইচ্ছা ছিল তাই এটা, যদি নেন আমার ভালো লাগবে l আমি পরে আবার দীপের কথায় আসছি l খোয়াই এর হাট এখন কেমন জানি দিনকেদিন একটা শহুরে রূপ নিচ্ছে l সোনাঝুরির এক কোনে পরে থাকা শুধু শনিবারের হাট এখন রোজের হাট এ পরিণত হয়েছে l হাটের ব্যাপ্তি দিনকেদিন বেড়েই চলেছে l আর সবথেকে খারাপ লাগে যখন দেখি সোনাঝুরির ক্যানেলের ধারের লালমাটির পথটা কালো পিচে মুড়ে গেছে l এখন বোলপুরের রাঙামাটির পথ দেখতে গেলে যেতে হবে আমার কুঠি যাবার রাস্তা বল্লভপুর জঙ্গলের সেই পথটাই পরে আছে l আমার কুঠির মনির দোকানের মনমাতানো চা এর টানেই আমি বোলপুর গেলে অবশ্যই মনির দোকানে যাই l প্রদীপ বাউল মারা গেলেন l ও হাঁ আপনারা প্রদীপ বাউল কে কি করে চিনবেন,তবে যারা বারে বারে বোলপুরে যায় তারা নিশ্চই এই প্রদীপ বাউলের নামে না হলেও ওনার মুখের ছবি দেখলে চিনতে পারবেন, যিনি আমারকুঠিরের সামনে খিরিশ গাছের নিচে বসে সকlল থেকে সন্ধ্যা অবধি একনাগাড়ে গান গেয়ে সকলের মনে আনন্দ দিতেন l ভোর রাত্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিশব্ধে চলে গেল l সব থেকে দুঃখের বিষয় হলো যে এই বোলপুর শান্তিনিকেতনে এতো সনামধন্য মানুষজনের আসাযাওয়া ও বসবাস তবুও এখানে আজ অবদি কোনো বড়োসড়ো রোগের চিকিৎসা মেলেনা l বিশেষ করে হার্ট বা সেরিব্রাল নামক ভয়ঙ্কর অসুখের চিকিৎসা পাওয়া যায়না l এখানে যেভাবে হোটেল ব্যবসা ও ইমারত ব্যবসা প্রসারিত হচ্ছে , সেখানে একটা ভালো নার্সিং হোম বা হাসপাতাল হয়না কেন? বোলপুর শান্তিনিকেতনে এখন অনেক কিছুর রূপে রূপসী, যেমন আমাদের মন্দির, গুরুদেবের অস্তিত্ব যেখানে আজও প্রতি মুহূর্তে বিরাজ করেন l এই বিশ্বভারতী ছাড়াও হয়েছে বিশ্ববাংলা হাট , খোয়াইয়ের হাট , সায়ার বীথি,সৃজনী গ্রাম, কঙ্কালীতলা,আমার কুঠি, কোপাইয়ের পার , সোনাঝুরির পথ, প্রকৃতি ভবন ,বল্লভপুর জঙ্গলে eco park যেখানে সায়ার বীথির মতো জলকেলী করা যায়, আছে ডিয়ার পার্ক আর আছে সরলতায় ভরা আদিবাসী গ্রাম, প্রান্তিকের ধারের বাউল আখড়া l আবার যদি ভূতের বাড়ির ভুতুড়ে রূপ দেখতে চান তবে চলে আসুন রাইপুর গ্রামের পুরোনো জমিদারের বাড়ি l বহু বাংলা সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের শুটিং এখানে হয়েছে ও হয় l আমি তাই বলি "বারে বারে বোলপুর" l এবার শেষ করবো আমার লেখা, আমাদের ট্রেনের সময় ছিল সকাল ৬.২৬ এ তাই আগের দিন রাত্রে দীপ কে ফোন এ অনুরোধ করলাম সকাল পাঁচটায় আমাদের হোটেলে আসতে l ভাড়ার কথা চিন্তা করতে বারণ করলাম l ঠিক সকাল ৫টার সময় দীপ এসে হাজির আর ৫.৩০ এ স্টেশন l দীপ ও ওর বন্ধু আমাদের মালপত্র স্টেশন নামিয়ে দিলো , আমি ওকে ১৫০ টাকা করে আটো পিছু দিলাম কিন্তু ও ১২০ টাকা করে নিয়ে বাকিটা ফেরত দিয়ে চলে গেল l বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার 20 মিনিট দেরিতে স্টেশনে ঢুকলো. আমাদের কিন্তু এই ভর্তি ট্রেনেও কখনো মনে হলো না অন্যান্ন যাত্রীদের অপরিচিত l টুকটাক খাওয়া দাওয়া শুরু হলো সাথে গান সবাই যখন গান গাইছি তখন আমাদের পাশের আসনে বসা একটি ছোট্ট মিষ্টি মেয়ে আমাদের অচেনা ভেবেও আমাদের সাথে গলা মিলিয়ে গাইতে লাগলো " কতবার ভেবেছিনু আপনা ভুলিয়া তোমার চরণে দিব হৃদয় খুলিয়া। চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি গোপনে তোমারে, সখা, কত ভালোবাসি। ভেবেছিনু কোথা তুমি স্বর্গের ... " দেখে খুব ভালো লাগলো. সরলতা এখনো মরে যায়নি l বোলপুরে বাপের বাড়ি, একটা মিষ্টি বাচ্চা কে নিয়ে কোলকাতায় ওর বরের কাছে যাচ্ছে. খুব মিষ্টি ওর কণ্ঠ ও সুরের দখল l ওর নামটা হচ্ছে পূর্বl মুখার্জী l এবার টিকিট চেকার এলেন, আমি আমার ব্যাগ থেকে টিকিট বার করতে গেছিলাম তখন বুঝলাম ব্যাগের মধ্যে একটা অচেনা খাম l চেকার যাবার পরে কৌতূহল বসতো ক্ষlম টা খুললাম , খুব অবাক হলাম , খামে ৫০০ টাকা আর একটা চিরকুট তাতে লেখা " কাকু মাফ করবেন টাকাটা নিতে পারলামনা কারণ কোনো অনুদান আমরা নিতে পারিনা , পদবীতে আটকে গেছে l কাকু আমাদের খিদে পায় আমরাও তো গরিব কিন্তু কেন বলুনতো সরকারি নিয়মে আমরা অনুদান পাবনা ? আমাদের সম্ভ্রান্তের তকমা লাগিয়ে বঞ্ছিত করা হচ্ছে নয় কি? পেটের জ্বালা তো সবাইকেই দিয়েছেন সৃষ্টি কর্ত্তা,তবে আমার খিদেটা কেন মূল্যহীন? যেদিন সরকারি ভাবে আমার দারিদ্রতা স্বীকৃতি পাবে সেদিন ই আমি অনুদান কে হয়তো দয়া মেনে নেবো না l স্বামীজী, মহাত্মাজী, গুরুদেব , কাজী সাহেব, রামমোহন রায় , বিদ্যাসাগর মহাশয় এনারা সমাজটাকে শ্রেণী বিভাজন মুক্ত করবার লড়াই করে ছিলেন,আর কারা যেন সেই সমাজকেই ধর্মে বিভাজন , জাতিতে বিভাজন ও পদবিটাতেও বিভাজন করলো l কাকু খিদে জিনিষটা তো সবার পেটে একই সুরে চিৎকার করছে , তবে আমাদের চিৎকার কেন গুরুত্বহীন বলতে পারেন."??? দ্বীপের কথা ভাবতে ভাবতে কখন হাওড়া পৌছালাম জানিনা l সবাইকে বিদায় জানিয়ে এই যাত্রাটা শেষ করলাম l যখন আমার গাড়ি এই শহরের ভিড়ে হারিয়ে গেল তখন আমি দীপের দেওয়া চিরকুটটা গাড়ির জানালা দিয়ে উড়িয়ে দিলাম ২ কোটি মানুষের এই শহরের শরীরে ll Post By:- Parthamoy Chatterjee
রথের দিন ভোর ভোর বেড়িয়ে পড়াই ঠিক ছিল। কিন্তু বাধাটা এইভাবে আসবে ভাবতে পারিনি। গ্যারেজ থেকে গাড়ি বের করতে গিয়ে চাবি ঘুরিয়ে দেখি গাড়ি কোনো সাড়া দিচ্ছে না। আকাশ ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি। একেতেই একজন আগের দিন যাওয়া বাতিল করেছে হঠাৎ করে বাড়ির বাকি সদস্যেরা ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায়। সেই ছিল এই যাত্রার মুখ্য গাড়ির চালক। আমি সহযোগী মাত্র। কিন্তু সেই গুরু দায়িত্ব আমার কাঁধে চলে আসবে কখনও ভাবিনি। তাই একটা চাপা টেনশনও কাজ করছিল। কিন্তু গাড়িটা এভাবে অসহযোগিতা করবে জানা ছিল না। অগত্যা তাকেই ভোরবেলা ঘুম ভাঙিয়ে পরিত্রাতার ভুমিকাই নিয়ে আসতে হল। আসলে কোনো ভাবে গাড়ির ব্যাটারি চার্জ শূন্য হয়ে গিয়েছিল। উপায় কী? পরিত্রাতা তার গাড়ির ব্যাটারি খুলে আমার গাড়িতে লাগিয়ে দেওয়ার পর রওনা হলাম, মাথা ভরা চাপ নিয়ে। কিন্তু গাড়ি যখন বর্ধমান যাওয়ার বাদশাহী রোডে উঠল, তখন সেই চাপ কেথায় যে চলে গেল নিজেও জানি না। এত সুন্দর আর নিরিবিলি রাস্তা গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে আছি, আর গাড়ি ছুটছে তার আপন খেয়ালে। আমরা ৮.৩০ নাগাদ বহরমপুর থেকে যাত্রা শুরু করেছিলাম। মঝে দুতিন বার থেমে (চা জল খাবার খাওয়ার জন্য) ভাল্কিমাচানের অরণ্যসুন্দরীতে পৌঁছালাম দুপুর একটা নাগাদ। রুম আমরা আগে থেকেই বুক করে রেখেছিলাম। আমাদের এক সদস্য কোলাঘাট থেকে ট্রেনে করে আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। পৌঁছে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সবাই স্নান সেরে নিলাম। সেই ভোরবেলা থেকে যা গিয়েছে আর এতটা পথ জার্নি করার পর মাথায় জল পরার সঙ্গে সঙ্গে পেট জানান দিতে শুরু করল যে তাকে শান্ত করতে হবে। চলে গেলাম অরণ্য সুন্দরীর ডাইনিং রুমে। সকালে ফোনে বলে দিয়েছিলাম কী খাবো। সেই অনুযায়ী ভাত ডাল আলু ভাজা মাছ চাটনি আর পাঁপড় ভাজা সহযোগে দুপুরের খাওয়া সাঙ্গ করলাম। খেয়ে উঠে বেরোলাম জঙ্গলটা ঘুরতে, দেখতে। এখানে বলে রাখা ভালো অরণ্য সুন্দরীর আশেপাশে দুই-তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো জন বসতি নেই। জঙ্গলের মধ্যে জঙ্গল সুন্দরী কেবল অরণ্য সুন্দরী। যাইহোক পায়ে পায়ে আমরা পৌঁছালাম জঙ্গলের মধ্যে। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা চারিদিকে বিরাজমান। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি হয়ে গেছে। আর বাতাস বইছে বেশ জোরে। শরতের(যদিও এটা শরৎ নয়) মেঘের ভেলা নীলাকাশ জুড়ে। সবুজ নীল আর সাদায় চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে চেনা অচেনা পাখির ডাকে কান হয়ে উঠছে চঞ্চল। গাছপালার ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বাতাস বয়ে যাওয়ার শব্দ, পাতা থেকে জল ঝরে পড়ার সুমিষ্ট আওয়াজ যে মূর্ছনা জাগিয়ে তুলছে তাতে মন যেন কোন এক অলীক পুরীর স্বর্গ রাজ্যে পৌঁছে গেছে। নিস্তব্ধতারও যে একটা ভাষা আছে, এখানে না এলে বোঝা যাবে না। এই বনে কোনো বন্য প্রাণীর দেখা পাওয়ার বাসনা থাকলে সেটা ভুলে যেতে হবে। কোনো এক সময় জমিদারী আমলে মাচান(ইঁটের তৈরী মিনার) তৈরী করে মহুয়া ফল খেতে আসা ভাল্লুক শিকার ছিল জমিদারদের অবসর বিনোদনের একটা উপায়। সেই অনুসারেই নাম ভাল্কিমাচান। কিন্তু কাল স্রোতে সেই জমিদরীও নেই, নেই ভাল্লুক বা কোন বন্য প্রাণী। কিন্তু যা আছে, সেটা হল শহুরে জীবনের কোলাহল ছেড়ে মন চোখ আর কানের আরামের উপকরণের ঠাস বুনোট। যদি নিস্তব্ধতাকে উপভোগ করতে চান, তাহলে ভাল্কি হল সেই স্থান। বেশ কিছুটা সময় জঙ্গলের গন্ধ স্পর্শ গায়ে মেখে রুমে ফিরে এলাম। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম শান্তিনিকেতনের খোয়াই বনের হাট দেখতে। যেহেতু শনিবার আর হাট ওইদিনেই বসে তাই মাত্র ৩৫ কিমি দূরের গন্তব্যটিকে বাদ দিতে পারলাম না আমরা সবাই। গাড়ি নিয়ে এক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম খোয়াই হাটে। খোয়াইয়ের তীরে শনিবার করে বসে এই হাট। তবে গ্রামের হাট বলতে যা বুঝি, এই হাট সেইরকম নয়। শান্তিনিকেতনি পসরায় সেজে ওঠে এই হাট। আর সঙ্গে বাউল গান আর আদিবাসী নৃত্য উপরি পাওনা। ঘুরে ঘুরে ছবি তুলে আর মনটাকে ছেলেমানুষি করে রাত ৮.৩০ নাগাদ ফিরলাম অরণ্য সুন্দরীতে। রাতে খেয়ে দেয়ে এক প্রস্থ বন ভ্রমণ সেরে ঘুমের দেশে পাড়ি। একটা উপলব্ধি হলো যদি রাতটা পূর্ণিমা রাত হতো তাহলে বনের সৌন্দর্যের আর একটা দিক আমরা উপভোগ করতে পারতাম। রাত ১০টার মধ্যে অরণ্য সুন্দরীর মূল দরজা বন্ধ করে দেয়, তাই তার মধ্যেই ফিরে আসতে হল। এখানে আর একটা জিনিস উল্লেখ করা দরকার অরণ্য সুন্দরী লাগোয়া একটি পার্ক আছে, গাছপালা দিয়ে ঘেরা একটি পুকুরকে মাঝখানে রেখে। সেখানে বসেও সময়টা ভালো কাটানো যায়। পরদিন সকালে উঠে বাড়ি ফেরার পালা। তবে জ্যোৎস্না রাতের মায়াবী বনের সান্নিধ্য পেতে আবারও আসব ভাল্কিমাচানে, এই ইচ্ছেটাকে মনে মনে লালিত করে রওনা দিলাম বাড়ির পথে। কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য- ভাল্কিমাচান অরণ্য সুন্দরীর যোগাযোগ নম্বর- ৯১৫৩৪২০১৩৩ অরণ্য সুন্দরী ছাড়াও থাকতে পারেন অরণ্য সুন্দরী থেকে ছয় কিমি দূরে যমুনাদীঘিতে প:ব: ফিসারি ডেভেলপমেন্ট করপরেশন লিমিটেডের আম্রপালী কমপ্লেক্সে। অনলাইনে বুক করা যায়। ** কাছাকাছি স্টেশন: হাওড়া ডিভিসনের গুসকারা। আসানসোল ডিভিসনের মানকর। দুটি স্টেশন থেকে ভাল্কিমাচান কম বেশি ১৫ কিমি। Post By:- সুব্রত পাল
কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে কবিগুরুর শান্তিনিকেতন ও বোলপুর ভ্রমণ আলতো পায়ে হেমন্ত যখন একটু একটু করে চলে যেতে শুরু করেছে তখন গিয়েছিলাম শান্তিনিকেতনে, নভেম্বরের শেষ দিকে। ঝরে পড়া শিশিরের সঙ্গে শান্তিনিকেতনের ছাতিমতলা, বকুলবীথি, আম্রকুঞ্জ, ঘণ্টাতলা, নতুন বাড়ি, কালোবাড়ি, সিংহ সদন, শান্তিনিকেতন ভবন, কাচের মন্দির ইত্যাদির সঙ্গে হারিয়ে গিয়েছিলাম অন্য এক ভুবনে। এই সময়ে শান্তিনিকেতনের হিমেল বাতাস দেয় অনাবিল এক প্রশান্তি, খোয়াই বনের ফাঁকফোকড় গলিয়ে পড়ে কুয়াশা। বিকেল হতেই কুয়াশার চাদর মুড়ি দিতে শুরু করে পুরো শান্তিনিতেকন। লাল মাটির রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে তখন মনে পড়ে.. ‘ আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে '... প্রতিবারের ন্যায় আবারও আমি (সুমন) ও আমার IBM এর বন্ধু অর্পিতা, পায়েল, মৌমিতা ও চিত্রদীপ এক শুক্রবারে অফিসের পর সন্ধ্যা 8.30 এ শিয়ালদহ স্টেশন থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে চেপে রাত 11.15 পৌঁছে গেলাম বোলপুর স্টেশনে।সেখান থেকে অটোয় চেপে 20 মিনিটে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্য বসুন্ধরা হোটেলে। হোটেলে গিয়ে ডিনার করেই পরিশ্রান্ত শরীরে ঘুম দিলাম পরেরদিন সকালের Sight-seeing এর অপেক্ষায়। পরেরদিন সকালে একটি ইনোভা গাড়িতে আমরা বেরিয়ে পড়লাম নিকটবর্তী পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। প্রথমেই গেলাম বোলপুর থেকে 30 কিমি দূরের সতীপিঠ ফুল্লরায়।লোকবিশ্বাস অনুসারে, ফুল্লরায় সতীর নিচের ঠোঁটটি পড়েছিল। এই মন্দিরে কোনও বিগ্রহ নেই। সিন্দুরচর্চিত কচ্ছপাকৃতি শিলাখণ্ডই দেবীর প্রতিভূ। এই মন্দিরের পাশে একটি বিরাট পুকুর আছে। কিংবদন্তি অনুসারে, শ্রীরামের দুর্গাপূজার সময় হনুমান এই পুকুর থেকেই ১০৮টি পদ্ম সংগ্রহ করেছিলেন। ফুল্লরা ভারতের ৫১টি শক্তিপীঠেরঅন্যতম বলে কথিত আছে। ফুল্লরা থেকে গেলাম শক্তিপীঠ কংকালীতলা। বীরভূমের কোপাই নদীর তীরে এই শক্তিপীঠটি অবস্থিত। মা-এর একান্ন পীঠের একটি এটি। পুরাণ মতে দক্ষযজ্ঞে আমন্ত্রণ না পাওয়ায় শিব কুপিত হন। পার্বতী স্বামীর অপমান সহ্য করতে না পেরে দেহত্যাগ করেন। তখন দেখা যায় শিবের প্রলয় তাণ্ডব। স্ত্রীর মৃত শরীর নিয়ে দেবাদিদেব মহাদেবের সেই তাণ্ডবে দেবীর খন্ড খন্ড দেহ পড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এই কংকালীতলায় দেবীর কোমরের কঙ্কাল পড়েছিল। সেখান থেকেই নাম হয়েছে কংকালীতলা। কথিত আছে, এই শক্তিপীঠে দেবী খুবই জাগ্রত। ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন তিনি। রক্তরঞ্জিত দেবীর মূর্তি। ভোগ প্রসাদেরও ব্যবস্থা করা হয় ভক্তদের জন্য। সাধারণ দর্শনার্থীরাও ভোগের প্রসাদ পেতে পারেন। বোলপুর শহর থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে অবস্থিত এই শক্তিপীঠ। এরপর আমরা গেলাম প্রকৃতি ভবন নেচার আর্ট মিউজিয়াম। অপূর্ব সুন্দর বিভিন্ন ধরনের কারুকার্য ও খোদাই শিল্পের অপূর্ব সম্ভার দেখে মন ভোরে যায়।এরপর গেলাম শান্তিনিকেতন থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত 'আমার কুটির'। নানা জিনিসের পসরা সজ্জিত এই প্রতিষ্ঠানকে হস্তশিল্পের কার্যালয় হিসেবে গণ্য করা হয়। পথিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্যান্টিনে কাঁসার থালায় মাছ ভাত খেয়ে রওয়ানা দিলাম বোলপুরে শান্তিনিকেতনের খুব কাছে 'সৃজনী শিল্পগ্রাম' নামক আরেকটি দর্শনীয় স্থানে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যগুলোর মানুষের জীবনযাত্রা, শিল্প সংস্কৃতির এক অপূর্ব সহাবস্থান রয়েছে এখানে।এরপর গেলাম রবি ঠাকুরের সেই বিখ্যাত ছড়া ‘আমাদের ছোট নদী’ র কোপাই নদীর ধারে। বিকেল বেলাটা সেখানে কাটিয়ে চলে এলাম অপূর্ব সুন্দর খোয়াই এর হাটে যা প্রতি শনিবার বসে। বিভিন্ন জিনিসের স্বল্পমূল্যে এত ভালো পসরা আপনাকে আকৃষ্ট করবেই। সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় সেদিনের মতো হোটেল ফিরে এসে আড্ডা সহযোগে গরম রুটি , চিকেন কষা আহার করে শুতে গেলাম পরেরদিনের বিশ্বভারতী দেখার প্ল্যান বানিয়ে। পরেরদিন সকালে প্রাতরাশ সেরে চলে গেলাম শান্তিনিকেতন ভবন ও বিপরীতদিকে অবস্থিত মিউজিয়ামে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৬৩ সালে শান্তিনিকেতন ভবনটি তৈরি করেন।দেবেন্দ্রনাথ তিনটি স্ট্রাকচারে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ভবনটি একদিক থেকে দেখলে মনে হচ্ছে মন্দির, অন্য দিক থেকে দেখলে মসজিদ, আরেক দিক থেকে দেখলে গির্জা। বাড়িটির উপরদিকে খোদাই করা আছে ‘সত্যাত্ম প্রাণারামং মন আনন্দং’। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এইবাড়ির একতলায় ধ্যানে বসতেন। বর্তমানে ভবনটি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হয়।পাশেই রয়েছে কাচের মন্দির। রঙিন বেলজিয়ামের কাচ আর মার্বেল পাথরের এই মন্দির ১৮৯২ সালে উদ্বোধন হয়। প্রতি বুধবার সকালে ব্রাহ্ম সমাজের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসাবে এই মন্দিরে উপাসনা করা হয়। গাছের তলায় যে বেদীগুলো আছে তাতে বসেই চলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাকার্যক্রম। এই জায়গাটার নাম হচ্ছে বকুল বীথি। ছাতিম তলা হচ্ছে শান্তিনিকেতনের মূল জায়গা। এখান থেকেই শান্তিনিকেতনের সৃষ্টি। বর্তমানে জায়গাটিতে ঘেরা রয়েছে । বছরে মাত্র দুইবার খোলা হয় এই ছাতিম তলা। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পাঁচ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এই ছাতিম তলায় পাঠদান শুরু করেন। যার নাম দেন বিশ্বভারতী বিদ্যালয়। এরপরে দেখলাম কালো বাড়ি। মাটির তৈরি, দেয়ালে রয়েছে শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু ও ভাস্কর রামকিঙ্কর বেইজের বিভিন্ন কারুকাজ। রবিঠাকুরের সহজপাঠে রয়েছে দেয়ালের সেইসব চিত্র। যেমন, তিনটে শালিক ঝগড়া করে/রান্নাঘরের চালে, অমল ও দইওয়ালা ইত্যাদি। “তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে...” সে তাল গাছও দেখা গেল মাটির এক বাড়ির মাথা ফুঁড়ে দাঁড়িয়ে আছে। রবি ঠাকুর নাম দিয়েছিলেন, তালধ্বজ বাড়ি।এইরকম করে গল্প শুনে শুনে হেঁটে হেঁটে ঘুরে দেখলাম শান্তিনিকেতন। দেখলাম ইন্দিরা গান্ধীর হোস্টেল। হাঁটতে হাঁটতে প্রতিমুহূর্তে যখন মনে করছিলাম এখানে এক সময় হেঁটে বেড়িয়েছেন রবিঠাকুরও, নিজের অজান্তেই গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছিল।সঙ্গীত ভবনের পাশ দিয়ে যখন হেঁটে যাবেন বিভিন্ন রকমের সুর ও সঙ্গীতযন্ত্রের শব্দে আপনি হবেন বিমোহিত। দেখবেন সেখানে রয়েছে রামকিঙ্কর বেইজের করা বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘কলের বাঁশি।’ দুই সাঁওতাল রমণীর কারখানায় কাজে যাওয়ার দৃশ্য। শান্তিনিকেতনে ঢোকার আগে শিল্পী প্রফেসর সেলিম মুন্সীর গ্যালারি ‘নীহারিকা’ থেকে নান্দনিক ভাস্কর্য এবং নানাচিত্রকর্ম দেখে নিতে পারেন। শান্তিনিকেতনের উপর করা অনেকগুলো কাজের প্রদর্শনীও দেখা যাবে এখানে। গ্যালারির সামনের রাস্তা ধরে এগোলে বেশ কয়েকজন শিল্পীর বাসস্থান চোখে পড়বে। আরো সামনে এগোলেই চোখে পড়বে বিশাল মাঠ, প্রতিবছর এখানেই বসন্ত উৎসবের আয়োজন করা হয়। মিউজিয়ামে সংরক্ষিত বিভিন্ন নথি, ছবি ও রবিঠাকুরের ব্যাবহার করা দ্রব্য আপনাকে বিমোহিত করবে। এছাড়া রবি ঠাকুরের জন্য তৈরি করা বাসস্থানগুলো ঘুরে তাঁর বিভিন্ন স্মৃতিচিহ্ন দেখে নিতে পারেন। জীবদ্দশায় রবি ঠাকুর পুনশ্চ, কোনার্ক, উদীচী, শ্যামলী এবং উদয়ন-এই পাঁচটি বাড়ি ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে শ্যামলী সম্পূর্ণ মাটির ঘরের আদলে বানানো। কোনার্ক নামের বাড়িটির ডিজাইন কবিগুরু নিজে করেছিলেন। তবে বাড়িগুলোর মধ্যে উদয়ন সবচেয়ে বড়। এর আসবাবপত্রে প্রাচীন বৌদ্ধস্থাপত্যের ছাপ খুঁজে পাবেন। দুপুরে ক্যান্টিনে আহারের জন্যে কিছুটা সময় বাদ দিলে আমরা বিকাল অবধি সারাক্ষন বিশ্বভারতী ও মিউজিয়াম টাই ঘুরে ঘুরে দেখলাম ও নতুন জ্ঞান আহরণ করলাম। এরপর হোটেল হয়ে সন্ধ্যা 6.30 এর গণদেবতা এক্সপ্রেসে চড়ে রাত 10 টায় হাওড়া পৌছালাম , পিছনে ফেলে এলাম আবার কোনো এক সময়ে ওখানে যাওয়ার আকর্ষণকে, "গ্রাম ছাড়া ওই রাঙামাটির পথ " Post By:- Suman Datta
নমস্কার বন্ধুরা এই গ্রুপে আমার এটি প্রথম পোস্ট । অনেকের অনেক লেখা ও ছবি দেখে আমারও ইচ্ছে হলো আমার তোলা কিছু ছবি ও কথা আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। আমরা সকলেই জানি মা সতীর একান্নটি পীঠ।তার মধ্যে একটি অন্যতম পীঠ হল দেবী ফুল্লরা মায়ের মন্দির। এখানে দেবীর ঠোঁট পড়েছিল। আমি এই গ্রূপের একজন সদস্য হয়ে এই মন্দির সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সাথে ভাগ করতে চাই। গত 13ই জুলাই আমরা স্বপরিবারে বোলপুরে অবস্তিত নবগ্রাম বাবুপাড়ায় দেবীর মন্দিরে আয়োজিত এক সেবামূলক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছলাম, তখন সূর্য অস্তাচলে। চারিদিকের অন্ধকার শান্ত পরিবেশ , সঙ্গে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক সবমিলিয়ে এক মনোরম পরিবেশে। আমরা প্রথমেই দেবীর দর্শন করে মন্দিরের চারিপাশটা একটু ঘুরে দেখলাম। সরকার অনুমোদিত গেষ্ট হাউস "উপাসনা ভবন" এ আমাদের থাকার আয়োজন করা হয়েছিল। খুবই সামান্য কিছু খাওয়া দাওয়া ব্যবস্থা সেখানেই করা ছিল কিন্তু অসাধারন আতিথেওতায় মন ভরে গেল। 14ই জুলাই অনুষ্ঠানের দিন। ভোর সাড়ে 4টে নাগাদ ঘুমটা হঠাৎই ভেঙে যাওয়ায় আমার সঙ্গী মানে আমার ক্যামেরাটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কিছু ছবির সন্ধানে। ভোরের গ্রাম্য পরিবেশের সাথে অনেকেই হয়তো পরিচিত কিন্তু আমার কাছে এই পরিবেশ একবারেই নতুন ও অচেনা। আর তাই অচেনা কে চিন্তে গিয়েই আমি গ্রাম্য পরিবেশকে উপলব্ধি করলাম। সারা দিনে মন্দিরের কাজ, পুজো, সেরে মূল অনুষ্ঠানে যোগদান করলাম। অনুষ্ঠানটি হলো এখানকার কিছু দুঃস্থ মানুষ যারা দুবেলা দুমুঠো খাদ্যের অভাবে দিন কাটায়, তাদের জন্য কিছু যৎসামান্য খাদ্যের আয়োজন করা হয়েছিল। সর্বশেষে কিছু অসাধারণ মুহূর্ত , অনেক আনন্দ, কিছু ছবি ও মনে অনেক শান্তি নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। Post By:- Tanmoy Ghosh
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |