বাঙালি অথচ শান্তিনিকেতনে যাননি এমন মানুষ খুবই কম দেখা যায় । তবে অনেকের কাছেই শান্তিনিকেতনে ভ্রমণ মানে শুধুমাত্রই বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা, সাথে উত্তরায়ন মিউজিয়াম আর বড়জোর খোয়াইয়ের হাট । কেউ কেউ দুদিনের ছুটিতে একযাত্রায় তারাপীঠ-শান্তিনিকেতন-বক্রেশ্বরের ঝোড়ো ট্রিপ করেন । ফলে শান্তিনিকেতনের অনেক কিছুই অদেখা থেকে যায় । আমার পরামর্শ, যাঁরা নিরিবিলিতে দুদিন এই শান্তির ঠিকানায় পাড়ি দিতে চান, তাঁরা এই ট্রিপের সঙ্গে অন্য কোনো জায়গা না জড়িয়ে শুধুই যদি শান্তিনিকেতনে কাটান তবে একটা স্বপ্নের ভ্রমণ হতে পারে ।
ছুটি থাকুক না থাকুক শান্তিনিকেতনে ভালো করে ঘোরার জন্য একটা শুক্রবার বাছুন যাত্রা দিন হিসাবে । ভোরের গণদেবতা এক্সপ্রেস ধরে সাড়ে আটটার মধ্যে চলে আসুন বোলপুর স্টেশনে । রিক্সা বা টোটো ধরে চলুন আপনার আগে থেকে বুক করে রাখা হোটেল বা লজে । আর যদি আগে থেকে বুকিং করা না থাকে তবে ভুবনডাঙার মাঠের কাছ থেকে শুরু করে রতন পল্লী, শ্যামবাটি-গোয়ালপাড়া, সোনাঝুরি, প্রান্তিক স্টেশনের কাছাকাছি বিভিন্ন মানের হোটেল-লজ থেকে আপনার পছন্দমতো ঘর বেছে নিন । বোলপুর স্টেশনের কাছেও অনেক হোটেল আছে, সেগুলোর ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম, তবে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাস থেকে দূরত্ব বেশি । হোটেলে লাগেজ রেখে একটু ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ও ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়ুন কবিতীর্থ দর্শনে । পারলে একজন গাইড নিয়ে নিন । অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবেন ওঁদের কাছ থেকে । অবশ্য গাইড না নিয়ে নিজেরাও ঘুরতে পারেন । একে একে দেখে নিন ছাতিমতলা, উপাসনাগৃহ, আম্রকুঞ্জ, তিনপাহাড়, শালবীথি, কালোবাড়ি, নতুন বাড়ি বা মৃণালিনী দেবী আনন্দ পাঠশালা, খড়ের তৈরি নতুন বাড়ি, গৌরপ্রাঙ্গন ও ঘন্টাতলা, সিংহসদন, ছোটো কালো বাড়ি বা চৈতি ইত্যাদি । বিশেষ অনুমতি নিয়ে দেখা যেতে পারে সংগীত ভবন, কলাভবন, মালঞ্চ, নাট্যঘর, নন্দন । ছাতিমতলা বর্তমানে ঘেরা , সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই । এর দক্ষিণ দিকে বকুলবীথি-র অবস্থান । শান্তিনিকেতনের বাড়িটি বর্তমানে হেরিটেজ বিল্ডিং, এর সামনে রামকিংকর বেজের তৈরি শিল্পকীর্তি অনির্বাণ শিখা-র অবস্থান । আম্রকুঞ্জে বিশ্বভারতীর সমাবর্তন উৎসব অনুষ্ঠিত হয় । কালো বাড়ি নন্দলাল বসুর স্মৃতিবিজড়িত । কলাভবনের বিখ্যাত মুর্তিগুলি অবশ্যই দেখে নেবেন । গান্ধীজী-র ডান্ডি অভিযান, সাঁওতাল রমণী আর কলের বাঁশি এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য । বিশ্বভারতীর মূল আকর্ষণ উত্তরায়ণ মিউজিয়াম । টিকিট কেটে ঢুকে পড়ুন এখানে । অনেকগুলি বাড়ি রয়েছে এই প্রাঙ্গনে—বিচিত্রা, উদয়ন, শ্যামলী, কোনার্ক, পুনশ্চ ও উদিচী । রবীন্দ্রভবন বিচিত্রায় দেখুন রবীন্দ্রনাথের ব্যবহৃত নানান সামগ্রী, উপহার, সম্মান-স্মারক, নোবেলের রেপ্লিকা ইত্যাদি । আর রয়েছে কবিগুরুর ব্যবহৃত গাড়ি ও কয়েকটি বাড়ি । এখানে সবকিছু ভালোভাবে দেখতে দেখতেই বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাবে । হোটেলে ফিরে স্নান-খাওয়া সেরে আবার বেরিয়ে পড়ুন । পায়ে পায়ে হেঁটে দেখে নিন বেণুকুঞ্জ, চীনা ভবন, হিন্দি ভবন, বইঘর “সুবর্ণরেখা”, শিল্পসামগ্রীর বিক্রয়ভান্ডার “আমার কুটীর” ইত্যাদি । সময় বা ইচ্ছা থাকলে অমর্ত্য সেনের বাড়ি “প্রতীচী”-ও দেখে নিন । ক্লান্ত হয়ে পড়লে একটি বিশ্রাম নিন, চা-এর দোকান যত্রতত্র নেই , তবে যেখানে পাবেন একটু চা-পান করে নিন ।
পরেরদিন শনিবার সকালে প্রকৃতিভবন ঘুরে দশটার পরে চলে আসুন বল্লভপুর অভয়ারণ্য তথা ডিয়ারপার্কে । প্রায় একশোটি চিতল হরিণের পাশাপাশি ময়ূর, বেজি, সাপ, শিয়ালের বসবাস এই শাল-পিয়াশাল-মহুয়া-আকাশমণি-র জঙ্গলে । ওয়াচটাওয়ারে উঠে পাখির চোখে পুরো জঙ্গলটাই একনজরে দেখে নিতে পারেন ।
দুপুরে তিনটে-সাড়ে তিনটেয় বেরিয়ে পড়ুন কোপাই নদী দেখে খোয়াই-র উদ্দেশ্যে । শনিবারেই বসে খোয়াই-র হাট । স্থানীয়দের তৈরি শিল্পকর্মের পাশাপাশি সাঁওতালি নাচ, বাউল গানের আসর, পিঠে-পুলি-দই...কোথা দিয়ে যে সময় পেরিয়ে যাবে, টেরই পাবেন না । রবিবারের সকালটা রাখুন শ্রীনিকেতন আর কংকালীতলা দর্শনের জন্য । মনে রাখবেন : বুধবার শান্তিনিকেতনে সমস্ত কিছুই বন্ধ থাকে । তাই ভুলেও বুধবারটা কখনওই শান্তিনিকেতনে ঘোরার জন্য রাখবেন না । পৌষমেলা আর বসন্ত উৎসবের সময় অনেক আগে থেকেই সমস্ত হোটেল-লজ বুকড্ হয়ে থাকে । তাই এ সময়ে গেলে আগে থেকে বুকিং অবশ্যই করে রাখবেন । যাওয়া-আসা : এখন করোনা আবহে বেশিরভাগ ট্রেনই বন্ধ । স্বাভাবিক অবস্থায় বোলপুরে যাবার জন্য গণদেবতা (সকাল 6-05) ও শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস(সকাল 10-10), রাজগীর (সকাল 11-10), জয়নগর(সকাল 7-15), বিশ্বভারতী প্যাসেঞ্জার(বিকাল 4-40)আছে হাওড়া থেকে । ফেরার সময় এই ট্রেনগুলির মধ্যে গণদেবতা (বিকাল 6-25) ও শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস(দুপুর 1-10)ধরাই সবচেয়ে ভালো । তবে এখন শান্তিনিকেতনে যাবার জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবস্থা করে যাওয়াই ভালো, তবে এস বি এস তি সি-র বাসেও বোলপুরে যেতে পারেন । কোথায় থাকবেন : অজস্র থাকার জায়গা রয়েছে শান্তিনিকেতনে ও আশেপাশে । বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী বেছে নিন আপনার রাত্রিযাপনের ঠিকানা ; WBTDC এর ট্যুরিস্ট লজ (033-22488271), পৌষালি (9434142454) রাঙামাটি ট্যুরিস্ট লজ (0-3463-252305), সারদা লজ (0-3463-252305), আজকাল স্টাফ রিক্রিয়েশন ক্লাবের হলিডে হোম (033-30110852 / 9830189481) ইত্যাদি এর মধ্যে কয়েকটি ।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |