পৌষালি ডাকে শান্তিনিকেতন।
বলছি কি জানলা টা একটু বন্ধ করবেন। সহ যাত্রীনি টি বেশ বিরক্ত স্বরে বললেন কেন। বললাম আমার একটু ঠান্ডার সমস্যা। ও বলে দিলেন জানলা টা বন্ধ করে বেশ রাগত ভাবে। ততক্ষনে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস নৈহাটি ছেড়ে দিয়েছে। গন্তব্য শান্তিনিকেতন। তবে একটু ঘুরে। ভায়া আসানসোল। রাত 9টার ট্রেন পৌছল সাড়ে নয়টায়। ট্রেন থেকে নেমেই বুঝলাম রাঢ় বঙ্গের শীত কি জিনিষ। তাপমাত্রা 10digree. অনুভুত হচ্ছে আরও কম। কাপতে কাপতে উঠলাম ভাইয়ের গাড়ীতে। বাড়ী পৌছে রাতের খাবার খেয়ে আড্ডা শুরু চার জনের। সস্ত্রীক আমি ও সস্ত্রীক ভাই। ঠিক হল পরের দিন মাইথন যাবো। শুতে যাবার সময় দেখলাম ঘড়ির কাঁটা বারো ছুঁইছুঁই। পরের দিন কল্যানীশ্বরি হয়ে মাইথন ড্যাম। মাইথনে ঘোরার জায়গা বলতে প্রধানত মাইথন ড্যাম। শীতে মাইথন ড্যামকে সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো হয়। মজুমদার নিবাসের সামনেই রয়েছে বরাকর নদীর বুকে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা। মাইথন ড্যামের পাশেই রয়েছে ডিয়ার পার্ক। এছাড়াও রয়েছে মিলেনিয়াম পার্ক। শীতকালে পুষ্পমেলার আয়োজন করে ডিভিসি। মাইথন ড্যাম পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডের সীমানায় ঢুকলে মিলবে বোটিং-এর আরও ব্যবস্থা। একটু এগিয়ে ড্যামের রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে মিলবে বরাকর নদীর বিস্তীর্ণ পাড়, যেখানে গিয়ে বসলে বরাকরের চঞ্চল ঢেউ মন ভরিয়ে দেবে। বরাকর নদীর বুকেই রয়েছে চামচ দ্বীপ,ডিভিসি সবুজ দ্বীপে পার্কও তৈরি করেছে। এই দুই দ্বীপেই পৌঁছতে হয় বোটিং করে। মাইথনে রয়েছে আদি কল্যাণেশ্বরী মন্দির। ডিভিসি-র হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রজেক্ট। এই পাওয়ার স্টেশনে ঢুকতে গেলে কলকাতায় ডিভিসি অফিস থেকে অথবা মাইথনে ডিভিসি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। সমতলভূমিতে এটাই ছিল দেশের প্রথম হাইড্রোলিক পাওয়ার প্রোজেক্ট। ইচ্ছে করলে দেখে আসতে পারেন খোলামুখের কয়লা খনিও। এখানে এলে দুরে পরে থাকে কর্মজীবনের শত ব্যস্ততা। ছুটির আকাল। এখানে স্বচ্ছ নীলাকাশ আর উজ্জ্বল রোদ্রের ছটায় খেলা করে জলের কলকাকলি, সকালে থাকে হালকা কুয়াশার ঘেরাটোপ, এই রকম চিন্তা মনে হলে বেরিয়ে পড়তেই পারেন মাইথনের পথে। পরের দিন সকাল সকাল যাত্রা শুরু করলাম শান্তিনিকেতনের উদ্দেশ্য। পৌষ মেলা যে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। যথা সময়ে পৌছলাম শান্তিনিকেতন। ১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৫০ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কুড়ি জন অনুগামীকে নিয়ে রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের থেকে ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন। এটিই শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের মূল ভিত্তি। ১৮৯১ সালের ২১ ডিসেম্বর (১২৯৮ বঙ্গাব্দের ৭ পৌষ) শান্তিনিকেতনে একটি ব্রাহ্মমন্দির স্থাপিত হয়। ১৮৯৪ সালে ব্রাহ্মমন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী স্মরণে মন্দিরের উল্টোদিকের মাঠে একটি ছোটো মেলা আয়োজন করা হয়েছিল। পরবর্তীকালে শান্তিনিকেতনের সেই পৌষমেলা শুধুমাত্র বীরভূম জেলার নয়, অন্যান্য অঞ্চলের পর্যটকেদেরও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে। এক সময়ে এ মেলার নাম ছিল ভুবনডাঙার মেলা। এখন শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা নামে এক ডাকে চেনে গোটা বিশ্ব। পরে মেলা উঠে আসে পূর্বপল্লির মাঠে। এখন অবশ্য আর কোনও গণ্ডি নেই। পৌষ মেলা চলে গোটা শান্তিনিকেতন জুড়েই।ব্রহ্মোপাসনার মাধ্যেমে মেলার সূচনা হয়ে প্রতিটি দিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মেতে ওঠে পৌষের মেলা। এ মেলার বড় বিশেষত্ব হস্তশিল্প ও গ্রামীণ কৃষ্টির উপস্থিতি। সেই সঙ্গে ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশেল। মাটির পুতুল, ডোকরা, বাঁশি, ডুগডুগি, চর্মশিল্প, একতারা— কী নেই সেখানে! রীতি মেনে বৈতালিককের গান, সানাইয়ের সুর, ছাতিমতলায় উপাসনা এসব তো আছেই, সেই সঙ্গে সাংস্কৃতিক মঞ্চে রায়বেশে, মুখোশনৃত্য, আলকাপ, রণপানৃত্য, ছৌ নাচও হবে। আর বাউল-ফকিরের গান তো থাকবেই। এই সব ঘুরে বেরানোর জন্য 2দিন খুবই কম। কিন্তু ওই যে অফিস বলে যে বস্তু টা আছে সে চোখ রাঙিয়ে বলছে না ফিরলে কিন্তু কপালে দুঃখ আছে। অতঃপর আর কি পরের দিন যিশুর জন্মদিনে ,কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর প্রয়ানের বেদনাকে সঙ্গী করে শান্তিনিকেতন ছাড়লাম। কিন্তু শান্তিনিকেতনের পৌষালি ডাক কানে বাজছে পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে আয়রে চলে আয় আয় আয়........
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |