অপরূপা শিবখলা
হারে রে রে রে রে,আমায় ছেড়ে দে রে,দে রে.. ভেবেছিলাম টয় ট্রেনে করে যাবো।নিউ জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়ি পৌছাব অটো ধরে।ওখান থেকে সকাল ৯:৩০ এর টয় ট্রেনে করে সুকনা -রংটন হয়ে পৌছাব শিবখলায়।রংটং এ নেমে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে যাবো শিবখলায়।কিন্তু বিধি বাম,পেলাম না সংরক্ষিত টিকিট।তাই বাধ্য হয়ে ট্রেনে করে নিউ জলপাইগুড়ি আর ওখান থেকে শিবখলা। আমি চঞ্চল হে, আমি সুদূরের পিয়াসি আমি উন্মনা হে হে সুদূর,আমি উদাসী এ যেন এক স্বর্গীয় ভূমি।জলের কলধ্বনি, পাখির কুজন আর এক অপার সৌন্দর্যে ভরপুর শিবখোলা।কাছেই একটা শিব মন্দির আছে।নেপালি ভাষায় খোলা শব্দের অর্থ নদী।তাই জায়গাটার নাম হয়েছে শিবখোলা।এখানে পৌঁছে গেলাম নদীর সাথে কথা বলতে।তার চোখের ইশারায় তার হাত ধরলাম।তার স্পর্শে শরীর জুড়িয়ে গেল-কলকল হাসে সে আমাকে এদিক ওদিক করে দিলো।প্রানভরে তার সাথে কথা বলে চলে এলাম ক্যাম্পে।--- সে কোন বনের হরিণ ছিল আমার মনে.. কে তারে বাঁধলো অকারণে। দুপুরের খাবার খেয়ে পায়ে পায়ে চলে এলাম নদীর ওপারে বিশ গাঁও তে.. এখন অবশ্য২০টি পরিবার নেই-বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬০টি পরিবারে।এক গ্রাম্য পরিবেশ আমাদের মুগ্ধ করলো।এখানে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে যার নামকরণ করা হয়েছে নেতাজির আই. এন.এ(ইন্ডিয়া ন্যাশনাল আর্মি)-র নামে।গ্রাম ঘুরে চলে গেলাম কাছের শিব মন্দিরে।এখানে সন্ধ্যা পুজোটা উপভোগ করতে পারলাম না কারণ চলে এলাম নুরবং ট্রি ফ্যাক্টরিতে।ফ্যাক্টরি বন্ধ ছিল তাই চা বাগানকে আশ মিটিয়ে দেখলাম।অজানা পোকারা মহাআনন্দে তাদের গান গেয়ে চলেছে।সন্ধ্যা নামছে আর তার সঙ্গে টিপ টিপ করে বৃষ্টিও পড়ছে।টেন্টয়ে পৌঁছাতেই ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল।ওঃ--কি দারুণ!!নদীর কলধ্বনি আর বৃষ্টির উল্লাস মিলেমিশে এক হয়ে গেল। ..ও কি এল, ও কি এল না,বোঝা গেল না ও কি মায়া কি স্বপনছায়া,ও কি ছলনা.. অন্ধকার নেমে এলো।টেন্ট এর সামনে ঢাকা বারান্দায় বসে উপভোগ রাতের সৌন্দর্য।জোনাকি পোকা উড়ে চলেছি এদিন ওদিক আর আমরা চারজন-শুভজিৎ, বাবুলালদা, স্যামুয়েলদা আর আমি দেখে চলেছি রাতের সৌন্দর্য।এর মধ্যে চলেছে আমার মোবাইলে রবীন্দ্রসংগীত. "ভালোবাসি ভালোবাসি এই সুরে কাছে দূরে জলে স্থলে বাজায় বাঁশি "উফঃ!কি নিদারুন ভালোবাসায় পড়ে গেলাম এই অন্ধকারকে ঘিরে। "গহন ঘন ছাইল গগন ঘনাইয়া স্তিমিত দশ দিশি, স্তম্ভিত কানন সব চরাচর আকুল.." প্রসঙ্গত বলে রাখি দুই পোষ্য --একটি খয়েরিি আর একটি কালো কুকুর ভীষণ ভালোবাসল আমাকে।খয়েরিটা(সোনা-আমার দেওয়া নাম) তো মুখ দিয়ে কত কথা বললো আর কালোটা(বাবু-এটাও আমার দেওয়া নাম)-সে তো আমায় ছাড়বেই না। "ওলো সই ওলো সই আমার ইচছা করে তোদের মতন মনের কথা কই" টেন্টগুলো সব নদী মুখো আর মহানন্দা ওয়াইল্ড লাইফ সংকটুয়ারীর ধারে।সেইজন্য পোকামারার ওষুধ ও মশার কয়েল অতি অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন--টর্চ ও সাথে থাকা প্রয়োজন।সকাল হতেই নদীর সাথে নিজেকে বিলিয়ে দিলাম আবার।ছোটবড় পাথরগুলোর মধ্যে ছোট পাথরগুলোকে বিশ্বাস করা ভালো।একটা ছোট্ট বাঁশের ব্রীজ সৌন্দর্যকে আরেকটু বাড়িয়ে দিয়েছে।এখানে অনেক পাখিও দেখা যায়।ভাগ্য ভালো থাকলে বিরল রুফস নেকড হর্ন বিল দেখা যেতে পারে।এছাড়া আছে ইউহিনা, স্কেলি থ্রাস, উডপিকার,কালো বুলবুলি,ছাইরঙা স্রাইক,স্পটেড ঈগল, মাগপাই,মিনিভেট,মিনলা,ড্রনগো, কিংফিশার, রবিন..আরো কত কি!! আকাশের অবস্থা ভালো নয় কিন্তু এই জায়গা ছেড়ে চলে যেতে মন চায় না তবু যেতে হবে।তবে বলবো এখানে ২দিন অন্ততঃ থাকুন।সকালে সৌন্দর্য উপভোগ করে টেন্ট ছাড়লাম।যাবো এবার অহলদাড়া তে।ড্রাইভারজিকে 300/-টাকার চুক্তিতে মালদিরাম সানরাইজ পয়েন্ট এ নিয়ে গেলেও আকাশ কালো মেঘে ঢাকা ছিল বলে দেখতে পেলেন না সূর্য।।ঝমঝম করে বৃষ্টি শুরু হলো বলে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে গেলাম।গাড়ি চললো আরেক সুন্দর জায়গায়..অহলদারাতে। "গগন সঘন অব,তিমির মগণ ভব তড়িত চকিত অতি,ঘোর মেঘরব. যাওয়া..থাকা: আমরা NGP থেকে ১৮০০/-টাকার চুক্তিতে শিভাখলা পৌছাই।ব্যাবস্থা করে দেন শিবখলার টেন্ট মালিক D. P. Prodhan(7076012314/8388842341)।এখানে টেন্ট এর ভাড়া 900/-per day per head থাকা খাওয়া সমেত।এখানে বাঁশের তৈরি 2টি double bed room cottage আছে, সঙ্গে attached toilet আর 3টি চার বেডেড laxury tent, সঙ্গে attached toilet। প্রকৃতিপ্রেমী হলে আমি নিশ্চিত এই শিবখলার সৌন্দর্যে আপনি পাগল হয়ে যাবেন।এ যে এক অপার্থিব সৌন্দর্যের হাতছানি।..বিদায় শিবখলা..তোমাকে ভুলবো না। ..তবু মনে রেখো যদি দূরে যাই চলে...
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |